রোজার কথা তার মনে ছিল না। বিড়ি ধরিয়ে এখন নিজেকে ভ্যাবলার মত লাগছে। এক মুরুব্বি নাকে রুমাল চেপে ভর্ৎসনার চোখে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। জয়নালের তখন মনে পরল রোজার কথা। সে বিড়িটাকে আড়াল করলো। ফেলে দিতে মন সায় দেন না। পয়সার কেনা জিনিস। বিড়ি-সিগারেটের যা দাম। ওমনি ধরিয়েই ধুম করে ফেলে দেয়া যায় নাকি। প্রথম রোজা বলে পাবলিক টং হয়ে আছে। দশ-পনেরো রোজার পর অবশ্য কেউ ফিরেও তাকাবে না। পাবলিকের তখন ঈদের জন্য হুঁস নেই। সংযমের মাস দ্রুত অসংযম হয়ে উঠবে…।
বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ কোত্থেকে এক ছেলে এসে ধমকে উঠে বলল, ইবলিশের মত সিগারেট টানতাছো মিয়া রোজামায় দিন! তোমাগো আল্লা রসূলের ডর নাই! সকালবেলাই বিড়ি ধরাইয়া বইছো…।
জয়নাল কেঁপে উঠে বিড়ি ফেলে দেয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যায় ক্যাবলার মত হাসে। হাত কচলায়…।
এই দোজগের আগুনের মত রোদ্রের মধ্যে রিকশা টেনে রোজা রাখা কষ্ট। আল্লাপাক নিশ্চয় এটা বিবেচনা করবেন। তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে বড় বিবেচক। রিকশাঅলাদের নিয়া কোরআনে নিশ্চয় কিছু লেখা আছে। ভাল দেখে একটা আলেমকে সুযোগ পেলে জিজ্ঞেস করতে হবে। আল্লার নবী তাদের কথা কিছু বলে নাই?
জোবেদা নামের একটা খারাপ মেয়েছেলে বলছিল, আমরা তো খানকি, আমরা কুনদিন বেহেস্তে যামু না।
ক্যান? তুমার তো দোষ নাই! তুমারে যে বেইচা দিছে সব দোষ তো তার। তুমি তো ইচ্ছা কইরা এই পথে আসো নাই।
জোবেদা হাসে। তুমাগো ইমাম সাবেরে জিজ্ঞাইয়ো আমাগো কামটা পাপের না সোয়াবের?
তাইলে এই লাইন ছাইড়া দেও।
লাইন ছাইড়া কি করুম? খানকিরে কেউ বিয়া করবো?
জোবেদার কথা এখনও মনে পড়ে জয়নালের। মাগী কই জানি গেছে গা। কোন মাওলানা সাবকে পেলে জোবেদার কথাটাও জিজ্ঞেস করতে হবে। … তওবা তওবা, রোজার দিনের সকালবেলাই একটা খানকি মাগীর কথা মনে আসতাছে, কি সর্বনাশের কথা! রোজার মাসেই ক্যান যে বেশি পাপের কথা মনে হয় মাইনষের বুঝি না…।
সত্য কথাই, রোজার মাসেই সবচেয়ে বেশি পাপ হয়। এই যে দুনিয়ার মানুষে হন্য হয়ে দৌড়াইতাছে, হেন আকাম নাই করতাছে, এই একটা মাস পুরা দেশটা জুড়ে দুই নম্বরী ছাড়া কথা নাই। কে কারে কামরাইয়া খাবে খালি সেই ধান্দা। তাগো মত গরীব থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি সব শালারই এক ধান্দা। ধরো মারো খাও! ক্যান? ঈদ সামনে। এক ঈদের জন্য মানুষ কেমন পাগল হয়ে যায়।
এই রোজার মাসে রিকশা চালিয়েও সুখ নাই। ঢাকা শহরে এমনিতে জ্যাম ছাড়া কথা নাই। রোজার মাসে সেই জ্যাম আরো বেড়ে যায়। আল্লার গজব নামে তখন দেশে। বিশ টাকার খ্যাপের জন্য যদি এক ঘন্টা বসে থাকা লাগে তাহলে জমা দিবে কি নিজে খাবে কি?
পথে যেতে যেতে জয়নাল খাবারের দোকানগুলোর দরজায় দরজায় কালো কালো পর্দা ঝুলতে দেখে। প্রত্যেক রমজানেই দেখে। তবু প্রথম রোজার দিন কালা পর্দা ঝুলতে দেখলে কেমন জানি একটা ডর ডর লাগে। দোকানে ঢুকতে ইতস্তত করে। চোরের মত মনে হয় নিজেরে। আজগর ভাইয়ের একটা ভাজাপুরির দোকান আছে। সকালবেলা সেখানে জয়নাল নাস্তা খায়। জিজ্ঞেস করছিল তাকে, কালো পর্দার কথা। আজগর ভাই বলল, কইতে পারি নারে জয়নাল। সবাই লাগায়, আমিও লাগাইছি…।
আজগর ভাইয়ের মত জয়নালও অতশত ভাবে না। কিন্তু যারা ভাবার তারা ঠিকই ভাবে। সেদিন তাবলিগের এক হুজুর ধরছিল রাস্তায়, বলে, মিয়া রিকশা চালায় খাও, কত রিকশাঅলা আছিল তারা সব এখন কবরে। আরো কত রিকশাঅলা যাইবো। সব রিকশাঅলারা এখন কবরে শুইয়া কাঁনতাছে । তারা কাঁনদে আর কয়, আল্লারে, আর একবার সুযোগ চাই, দুনিয়ায় গিয়া নামাজ পড়ুম। সুযোগ একবারই আসে দুনিয়ায় বুঝলা মিয়া। নামাজ পড়ো মিয়ারা। রোজা রাখো। মুখে দাড়ি কই? আল্লার রসূলের চিহ্ন কই? কোরআন পড়তে জানো? জবাব দিবা কি মিয়া? শোন, এই দুনিয়াই সব না। আমি সচিব ছিলাম। সচিবালয় চিনো তো, সেইখানে বসতাম। কত মন্ত্রীরে উঠাইছি বসাইছি। কত আরামে সুখে এখন অবসর কাটাইতে পারি। কিন্তু দেখো, ঘর ফালাইয়া এখন তোমাগো দ্বিনের দাওয়াত দেওয়ার কাজে নামছি। ক্যান? আরে মরতে হইবো তো! জবাব দিমু কি?…
সচিবালয়ে যে সব স্যারেরা থাকে জয়নাল তাদের সম্বন্ধে একেবারে জানে না বুঝে না তা নয়। এইসব বড় বড় স্যারগো বউ মাইয়াপোলাগো তো সে দেখে রাস্তায়। তাদের অনেকের গাড়ি থাকলেও সময়ে-অসময়ে তার রিকশায় প্যাসেঞ্জার হয়। তারা তার মত রোদেও পুড়ে না বৃষ্টিতেও ভিজে না। তার মত দুপুরে রাস্তার দোকানে বসে ডাল পুরি খায় না। তাদের খানার ঘরে বারো মাস ঠান্ডা থাকে। আল্লাপাক তাদের বানাইছেও সুন্দর কইরা। তার মত কালা-কুৎসিত না। তাদের সঙ্গে জয়নাল মিয়ার কোনই তুলনা চলে না।
বারোটা পর্যন্ত টানা খ্যাপ মেরে জয়নাল গাড়িটাকে একটা গাছের নিচে দাঁড়া করিয়ে একটু জিরিয়ে নিবে ভাবলো। সিটে বসে পা দুটো সটান সামনে দিয়ে বসতে যেতে যেতে তার চোখ পড়ে নিচে। প্যাসেঞ্জারের পাদানির কাছে একটা মানিব্যাগ পড়ে আছে!
…পাঁচশো টাকার বিশটা নোট, সঙ্গে কিছু খুচরো টাকা। মোট পাঁচ হাজার চারশো পঁচিশ টাকা!
জয়নাল মানিব্যাগটা কোমড়ের পিছনে লুঙ্গির সঙ্গে গুজে রাখে। চেহারায় অকারণেই একটা ভাবলেশহীনতা আনার চেষ্টা করে। গামছায় মুখটা মুছে আড়চোখে এদিক ওদিক দেখে। তারপর দ্রুত রিকশাটা নিয়ে কেটে পড়ে…।
একটা মাঝারী সাইজের ডিমঅলা ইলিশ মাছের দাম নিলো পাঁচশো টাকা। ইলিশ মাছের ডিম ভাজা বহুকাল খায়নি। গাদার মাছগুলো ভাজা আর পেটির মাছগুলো দিয়ে ঝোল, আহ্! জয়নালের ভাবতেই জিভে পানি এসে গেলো। মাছ বাজার থেকে বেরিয়ে মাংসের দোকানে গিয়ে সে একসঙ্গে দুই কেজি গরুর মাংস কিনে ফেললো। যখন সে ঘরে ফিরলো তার সঙ্গে কাঁচা বাজারসহ একটা নতুন সিলিং ফ্যান হাতে। গরমে এই কয়দিন সিদ্ধ হতে হয়েছিল। কাজের কাজ হয়েছে এই ফ্যানটা কেনায়। গরমে ছেলেমেয়েগুলো ঘুমাতে পারে না। এখন আরামে ঘুমাতে পারবে। জয়নাল নিজেও গরমে হাঁসফাঁস করে। যত বয়স বাড়ছে তত সহ্য ক্ষমতা কমছে। আগে এত গরম লাগতো না। এখন কেন জানি সব কিছু বেশি বেশি লাগে। গরম বেশি খিদা বেশি…।
জয়নালকে দেখে তার বউ হালিমার চোখ গোল গোল করে চেয়ে থাকে। বুঝতে পারে না জয়নালের মতি গতি।
মনে হইতাছে ঈদের বাজার কইরা আইছো?
কথা কম ক। জয়নাল খোশ মেজাজে বলে। মাছটারে কাট। মাংসগুলারে চুলায় বহা। বহুত খিদা লাগছে।
বস্তির মিস্ত্রি নুরু এসে ফ্যানটা লাগিয়ে দিলো। সারা ঘরে একটা খুশির হাওয়া। যেন সত্যি আজকে একটা ঈদের দিন। জয়নালের মেয়ে বলল, আব্বা, মনে হইতাছে আইজ ঈদের দিন!
জয়নাল কিছু বলে না। মনে মনে শুধু ছেলেমেয়ের এই সুখটুকু তাড়িয়ে তাড়িয়ে ভোগ করে। ছোট ছেলেটাকে দশটা টাকা দিয়েছে। সে দৌড়ে গিয়ে চিপস্ কিনে এনে খাচ্ছে। ছেলেমেয়ের মা রান্না চাপিয়েছে। ঘরে ফ্যানের বাতাস সব উড়িয়ে ফেলছে। এমন দিন তো রোজ রোজ আসে না। …
পুরো পরিবার নিয়ে জয়নাল খেতে বসল। মাছ রান্না হয়েছে ভাজা ঝোল দুই পদেরই। মাংস আর ডাল। গরম ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছের ডিম খেতে খেতে জয়নালের মনে হলো, পৃথিবীতে এর মত মজার খাবার আল্লার দুনিয়ায় আর দ্বিতীয়টি নেই। জয়নাল মুখ তুলে ছেলেমেয়ে আর বউয়ের দিকে চেয়ে দেখলো। বড় বড় গ্রাসে তারা ভাত খাচ্ছে। তাদের পাতে আজ মাছ-মাংস। প্রথম রোজায় বাজারে ব্যাজায় ভিড় ছিল। বড় বড় মানুষেরা থলে ভরে বাজারের সব মাছ-মাংস কিনে ভরে ফেলছিল। যার টাকা আছে সে কিনছে। যার নেই সে চেয়ে চেয়ে দেখছে। বড় আজব দুনিয়া!
জয়নাল সেই চেয়ে চেয়ে দেখার দলের লোক। লোকে ব্যাগ ভরে বাজার নিয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে তাদের দেখে হাঁকে, ঐ খালি যাবি? আজ সে নিজেই ব্যাগ ভরে বাজার করে হেঁকেছে তাদের মত করে, ঐ খালি, যাবি? বড় মানুষ হওয়ার আনন্দই আলাদা!
এই একটা দিনের জন্য। এমন বাবুয়ানা তো রোজ কপালে জোটবে না। জয়নাল মনে মনে আল্লাপাকের কাছে মাফ চায়। টাকাগুলো সে কুড়িয়ে পেয়েছে। মানিব্যাগে লোকটার ঠিকানা ছিল। তবু জয়নাল টাকা ফেরত দেবার কোন মতলব করেনি। এই ক’টা টাকা তার ঘরে একদিনের জন্য যে খুশি আর আনন্দের বন্যা এনে দিয়েছে আল্লাপাক নিশ্চয় তা বিবেচনা করবেন। তিনি তো সব দেখেন। তার অগচোরে জীবের কিছুই নাই। তিনি নিশ্চয় জয়নালের এই পাপটাকে মাফ করে দিবেন। জয়নাল মনে মনে আল্লার কাছে মাফ চায়।
ছেলেমেয়ে এরিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফ্যানের বাতাসে ঘুম হয়েছে জব্বর। শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে গেছে। জয়নালের হাতে বিড়ি মুখে পান। খাওয়াটা বেশির অতিরিক্ত হয়ে গেছে। চোখ দুটো এখন ঢুলু ঢুলু করছে। হালিমা ছেলেমেয়ের পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। জয়নালও আরো কিছুক্ষণ জেগে থেকে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।
ভোররাতে জয়নালের ঘুম ভাঙ্গল হালিমার চিৎকার চেঁচামেচিতে। মেয়ে তার বমির পর বমি করছে। হালিমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগার। পুরো বস্তি সে এক করে ফেললো। জয়নাল একটা স্কুটার ডেকে আনলো অনেক চেষ্টা করে। স্কুটারে করে মেয়েকে নিয়ে জয়নাল আর হালিমা ছুটলো হাসপাতালে। স্কুটারে যেতে যেতেও মেয়ে বমি করতে লাগল। ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটতে লাগলো যে কিছু বুঝে উঠার আগেই জয়নাল দেখলো সে ইমারজেন্সির বাইরে বসে আছে। চড়া রোদ উঠেছে। তার গা বেয়ে ঘাম ঝরছে…।
হালিমা কখন বিলাপ করে কাঁদছে জয়নাল খেয়াল করেনি। হালিমাকে ঘিরে ছোটখাট একটা ভিড়। জয়নাল একটু দূরে বসে ছিল। তার হাতে বিড়ি। আজ আর তাকে কেউ রোজার দিনে বিড়ি খাওয়ার জন্য খোটা দিবে না। সবাই জানে এই বুড়োটার মেয়ে একটু আগে মরেছে। ওকে আজ তাই কেউ কিছু বলবে না…।
লেখকঃ সুষুপ্ত পাঠক
দারুন হয়েছে 🙂
@মহন, (F)
লিখে কিছু বলতে চাইনা; সুধু দাড়িয়ে অভিবাদন জানাতে চাই :clap
চমৎকার লেখা :))
@এম এস নিলয়,লিখে আমিও কিছু প্রতিউত্তর জানাতে চাই না। এই নিন (F) (D) (B) যেটা খুশী নেন। সবগুলোই আপনার জন্য।
আপনার গল্পগুলো একটু অন্যরকম, আর সেজন্যই ভাল লাগে । (Y)
@তারিক, আমার লেখা কারুর ভাল লাগছে যেন খারাপ লাগার কোনই কারণ নেই। কাজেই আমি :))
ভালো হয়েছে। তবে শেষটা কেমন যেন লাগল।
@রুদ্র হুমায়ূন,পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আজই প্রথম আপনাকে পড়লাম। মুগ্ধ হলাম। চমত্কার উপস্থাপনা। কিন্তু শেষমেশ যা বুঝলাম, তা’ হলো- আমরা বোধহয় জয়নালকেই দায়ী (‘দায়ী’ বানানটা ঠিক হলো কিনা বুঝতে পারছি নে) করলাম, জয়নালও বোধহয় নিজেই নিজেকে দায়ী করলো, তার মেয়ের মৃত্যুর জন্যে। তার গতদিনের কৃত পাপের ফলেই মেয়েটার জীবন গেলো। আমাদের এবং জয়নালদের বিশ্বাসটা এমনই। ঈশ্বরের প্রতি অন্ধভক্তিই এর কারণ। এই অন্ধত্ব আমাদের এবং জয়নালদের ভেতর যতোদিন থাকবে, ততোদিন আমরা এবং জয়নালরাই অপরাধী হয়ে থাকবো। কখনো তলিয়ে দেখবো না যে, আসল অপরাধীটা কে- আমরা এবং জয়নালরা? নাকি অন্য কেউ বা, কোনো ব্যবস্থা?
@সুপণ শাহরিয়ার, এই গল্পের এটাই বোধহয় সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা। এরকম কিছুই এই গল্প বহন করে। সম্ভবত জয়নালসহ আমরা সবাই ব্যবস্থার শিকার। চমৎকার বিশ্লষণের জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
@সুষুপ্ত পাঠক,
চমৎকার। অসীম সাহেবের প্রশ্নের কারণ আছে আর অনেকেই শেষের দিকটা নিয়ে কথা তুলেছেন, তেমনি তার উত্তরে আপনার ব্যাখ্যাটাও হয়েছে চমৎকার ।
ঠিক। তবে এই গল্পে একটু বেশী হয়ে গেছে মনে হলো। ফোকাসটা যদি ঈশ্বর কিংবা তাকদির বিশ্বাসের উপর বেশী পড়ে যায় লোকে সন্দেহ করতে পারে উদ্দেশ্যটা নিয়ে। বিশেষ করে সেই সকল লেখকের গল্পে যারা ধর্মগ্রন্থের সমালোচনা করেন। বিশ্বাসের উপর এলোপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করে বা সার্জারি চালিয়ে বোধ হয় কাজ হবেনা, হোমিওপ্যাথিকের চেয়ে ধীর গতির দূর্বল কিছু বা ভাতের সাথে গুলিয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে। এলোপ্যাথিক পন্থা অনুসরণ করে আমরা বোধ হয় হেরে যাচ্ছি। কথাগুলো আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। একজন সমাজ বিজ্ঞানী বলেছিলেন- ‘অনাহারী ক্ষুধার্ত কোন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে গিয়ে তাকে প্রশ্ন করোনা, তোমার আল্লাহ কেন তোমাকে খাওয়ায় না’। আগে সে বাঁচুক, তারপর বাঁচার পথটা খুঁজে বের করা শিখুক, একদিন সে উপলব্ধি করতে পারবে, তার দুটো হাত আর মাথার বুদ্ধির নামই রিজেকদাতা আল্লাহ।
আমার মনে হয় তাড়াহুড়ো করে লেখাটা পোষ্ট করে দিয়েছেন, না হলে হালিমার মৃত্যু আর রিকসা থেকে তুলে জয়নালের টাকা নেয়ার ব্যাপারটা এত সংক্ষিপ্ত হতোনা। নিশ্চয়ই এ নিয়ে আপনার আরো কিছু বলার ছিল।
আপনার পাঠককে গল্পের ভিতরে আটকে রাখার ক্ষমতা দেখে আমি ঈর্ষান্নিত হলাম- :-X :-X
গল্প চলুক- (Y) (D)
@আকাশ মালিক,
আমার এমন একটা লেখা নাই যেটা তাড়াহুড়া করে লেখা নয়। এটা আমার স্বভাব। এই বদ স্বভাব আমার অনেক লেখাকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এইরকমই করেই আমি লিখি। এরমধ্যেই কোন কোন লেখা সবার কাছে ভাল লেগে যায়। কোনটা সমালোচনায় পড়ে যায়। হ্যাঁ, এই গল্পের শেষটা নিয়ে কথা উঠছে। সবাই হয়ত সন্দেহ করছে গল্পে আমি পাপ এবং পাপের কর্মফল দেখালাম কিনা। আকাশ মালিক, আমি কিন্তু হোমিওপ্যাথিক ঔষধই প্রয়োগ করলাম। একদিন যখন গরীব মানুষরা প্রশ্ন করতে শিখবে, কেন ঝড়ে কেবল তাদের টিনের চালাগুলোই আল্লা উড়িয়ে নিয়ে যায়? কেন বন্যায় কেবল তাদের ঘরেই পানি ঢুকে? পাপ কি শুধু তারাই একা করে? সচিবালয়ের সেই তাবলীগী হুজুর করেনি? তার ফ্যামিলি যাদের জয়নাল চেনে জানে। তবু কেন তার একদিনের সুখ সহ্য হলো না? ঈশ্বরের রমরমা বাজার তখনই কেবল মন্দা হতে পারে।…
তবু আমি বলব, এই গল্প ঠিক সচেতনভাবে সেকথা বলার জন্য লেখা হয় নাই। এই গল্প পুরোপুরি মানবিক অনুভূতির গল্প। দরিদ্র জয়নালের একদিনের বাবুয়ানি বালুর বাঁধের মত ভেঙ্গে গেলো…। তার জন্য আমার কষ্ট। এটা সেই কষ্ট প্রকাশের গল্প।
অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই আকাশ মালিক। গল্প পড়ে মন্তব্য করেছেন তাতেই আমি :rotfl:
সম্পূর্ণ গল্পটা ভালো লেগেছে, শুধু শেষ টুকু বাদে। সমাপ্তি অন্য ভাবেও হতে পারত।
@আম্মানসুরা, হয়ত। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো।তবে মনে হল হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল! :p
@আমি কোন অভ্যাগত নই, একমত।
জটিল হইছে……………………………………
@রিদম শাহারিয়ার, ধন্যবাদ।
আপনার লেখা দারুণ লাগে । ছোট গল্পের ভক্ত আমি । আপনি যখন শুরু করেন তখন একটা মেসেজ পাই । মনে হয়, নীতি-অনিয়ম, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে সমস্ত মানুষদের মানসিক দিকটা তুলে ধরতে চাচ্ছেন । কিন্তু শেষ দিকে এসে মনে হয়, কোন একটা ঘটনায় অলৌকিক কিছু ঘটে ঈশ্বর বিশ্বাসটা প্রাধান্য পেয়ে যাচ্ছে । কি জানি, এ হয়ত: আমার নির্বোধ অনুধাবন কিংবা সুক্ষ যে ইংগিতটা আমার কাছে প্রকাশ্য হচ্ছে না । যেমন, আসমানর নিচের মানুষ গল্পে :
শেষ দিকে এসে একটা অলৌকিকত্বে বিশ্বাস গেড়ে বসে যাচ্ছে । আবার এখানে,
দুটো ব্যাপার লক্ষ্য করেছি । আমার কাছে শেষদিকের মেসেজটা এখনো রহস্যময় মনে হয় । আপনার উত্তরের অপেক্ষায় আছি । ভাল থাকবেন ।
@অসীম,গল্পে আমি সচেতনভাবে কখনোই আমার বক্তব্য প্রকাশ করি না। নিজের মত প্রকাশ করার জন্য আমি প্রবন্ধের আশ্রয় নেই। আমি যে শ্রেণী আর সমাজ মানুষের চরিত্রর কথা বলি, চাই তাদের মত করে ফুটিয়ে তুলতে। যে কারণে দেখবেন সংলাপ ছাড়াও মাঝে মধ্যে গল্প কথন ভাষাতেও আমজনতার ভাষা ঢুকিয়ে দেই। তাদের মানসিক খেলাটাই বর্ণনা করি। এই চরিত্রগুলো কখনই ধর্ম, অদৃষ্ট, দৈব্য, সর্বপরি ঈশ্বর-আল্লার বাইরে অন্য কোন অবস্থান কল্পনাও করতে পারে না। তাদের দিয়ে আমি এমন কিছু করাতে চাই না যে পড়ে আপনিই বলেন, গল্পে সবই সম্ভব! আমি তাই ওদেরকে ওদের মতই রাখি।
কোরআন পুড়ে নাই বলে ইমাম সাবের চিৎকার আসলে কোরআন পুড়তে পারে না সেই দৃশ্য চিত্রিত করে না। বরং দেখায় সব পুড়ে ছারখার হয়ে যায় মানুষের বর্তমান-ভবিষ্যত অথচ তুচ্ছ কোরআন পুড়ে নাই বলে কি উল্লাস! এইভাবে এরা মরে। আমার তাই এদের প্রতি ক্ষোভ, ঘৃণা আর ভালবাসা। মোবারক দ্বিধায় পড়ে যায় সেও কি উল্লসিত জনতার কাতারে গিয়ে দাঁড়াবে কিনা। মোবারকের না যাওয়াটাই তো অস্বভাবিক। তার যে তবু যেটুকু দ্বিধা, তা আমাদের মনে করিয়ে দেয় শেকল ভাঙ্গার ভয়…।
অসীম, এত কষ্ট করে আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষত আমার বর্তমান গল্প ও পূর্বে প্রকাশিত গল্প তুলে ধরে যে বিশ্লষণ করে দেখালেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা শব্দটিই বেশি উপযুক্ত মনে করছি। আপনার প্রতি রইল আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।
পরিশেষে, সময় স্বল্পতার জন্য গুছিয়ে আর বিস্তৃত আকারে আপনার মন্তব্যের জবাবটা এই মুহূর্তে দেওয়া হলো না। পড়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ।