লেখাপড়া করে যে…
আটের দশকে আমরা যখন স্কুলের উঁচু ক্লাসের ছাত্র, তখন সাদাকালো দৈনিক পত্রিকার একটি সচিত্র সংবাদ আমাদের বৈকালিক আড্ডার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আমরা ইত্তেফাকের সাধুভাষার খবরটি থেকে জানতে পাই, নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া তো বটেই, এমনকি শিল্প বিষয়ক সব ধরণের ডিগ্রি বাদেই ‘রাশা’ নামের ঝাঁকড়া চুলের প্রায় নিরক্ষর এক যুবক ভাস্কর্য শিল্পে এশিয়ার মধ্যে গোল্ড মেডেল অর্জন করেছে!
এই অসম্ভব ঘটনাটি সে সময় আমাদের কিশোর বেলায় টারজান, ক্যাসপার দি কার্টুন শো, চার্লি চ্যাপলিন — ইত্যাদি টেলিভিশন জগতের বাইরে আমাদের বেশ খানিকটা ভাবিয়ে তোলে। আমরা স্মরণ করতে পারি, সে সময় রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের পর এই প্রথম একজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন জীবন্ত ব্যক্তিত্ব শিল্পাঙ্গনে বড়ো ধরণের স্বীকৃতি পাওয়ার ঘটনা আমাদের কচি মনে খুব বড়ো ধরণের দাগ কেটে যাবে।
তখন আমরা এই নিয়ে আরো ভাবতে থাকি, একে অপরের সঙ্গে স্কুল-কলেজের ডিগ্রীর অসারতা, তথা মুখস্ত বিদ্যার ওপর দণ্ডায়মান শিক্ষা ব্যবস্থার তেলেসমাতি একে অপরের সঙ্গে তর্কে মাতি। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে বাড়ির বড়োদের অতিষ্ট করে তুলি। ভাবনাটি ক্রমেই আমাদের মনস্তত্বে খুব ধীরে ধীরে শেকড় ছড়াতে থাকবে। বেশ কিছু পরে ভাস্কর রাশার পাশাপাশি আরো এক আইকন যোগ হবে আমাদের কাছে। তিনি নিভৃতচারি শিল্পী এসএম সুলতান।
বিদ্রোহ আজ, বিদ্রোহ চারিদিকে
জেনারেল এরশাদ সরকারের সামরিক জান্তার আমলে সময়টি ছিলো উত্তাল। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিছিল বের করলে সে সময় পুলিশি মিছিলের ওপর ট্রাক তুলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশ-ট্রাকের নীচে পিষ্ট হয়ে মারা যান সেলিম-দেলোয়ার নামে দুজন ছাত্র। আমারা স্মরণ করতে পারি, সে সময় স্কুলের দেয়ালে বেনামে কে বা কারা চিকা মেরেছিলো:
ট্রাক চাপা দিয়েছো, আন্দোলন থামেনি
ট্যাংক চাপা দিলেও আন্দোলন থামবে না
এবং
বন্যেরা বনে সুন্দর সৈন্যরা ব্যারাকে…
এইসব ঘটনা আমাদের নিত্যদিনের স্কুল জীবন, ফুটবল খেলার উত্তেজনাময় বিকেল, সন্ধ্যে বেলার নিয়মিত পাঠ ও রাতের আহারের পর টেলিভিশনের নাটক-সিনেমা-কার্টূন জগতের দৈনন্দিন ছন্দময় জীবনে একের পর এক দোলা দিতে থাকবে। স্কুলের গণ্ডি পেরুনোর পর কলেজ জীবনে পাখনা মেলার কালে, পাবলিক লাইব্রেরি, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র বা লিটল ম্যাগের আড্ডায় ঘুরে ফিরেফিরে আসে।
একের পর এক হরতাল, ঘেরাও, বিক্ষোভ, অবরোধের দারুণ অস্থির সময়ে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেনের মৃত্যু আমাদের ছাত্র রাজনীতির দিকে তাড়িত করে। আমাদের অনেকেই একে একে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে মিশে যাই। নিজেরাই হয়ে উঠি একেকজন বিদ্রোহী। …
সেই সময় আমাদের মানষপটে আরো একটি ঘটনা ঘা’ দিয়ে যায়। এরশাদ সরকার বিরোধী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গোল্ড মেডেলিস্ট ভাস্কর রাশা ঘোষণা দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজের কয়েকটি কাঁঠাল কাঠের বিশাল ভাস্কর্য শিল্প কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেন। পরদিন সংবাদপত্রে এই ঘটনার ছবি ও সংবাদ দেখে আমরা চমকে উঠি। দাউ দাউ করে পুড়তে থাকা নিজের ভাস্কর্যের সামনে একজন শিল্পীর দ্রোহ আমাদের চেতনায় বিস্ফোরণ ঘটায়।
মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে আমরা একেকটি মিছিল-সমাবেশে যোগ দিতে থাকি। দেশ জুড়ে তখন ভয়াবহ সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও, টিয়ার, গুলি, লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার। ৩৬ ঘন্টার হারতাল, ৭২ ঘন্টার হরতাল, লাগাতার অবরোধ। আমাদের সহযোদ্ধাদের অনেকেই পুলিশের লাঠির পেটায় গুরুতর আহত হয়। কেউ কেউ বুলেট শরীরে নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরায়। মিছিলে ভেতরেই গুলিতে লুটিয়ে পড়ে কেউ কেউ। আদমজীর শ্রমিক নেতা শাজাহান সিরাজ হরতালের মিছিলে পুলিশের গুলিতে খুন হন। একইভাবে মারা যান আরেক শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলাম। আমরা বোল্ড লেটারে দেয়াল লিখন পড়েছিলাম:
শোক নয়, প্রতিশোধ নেবো আজ
ঘুমাও শান্তিতে শাজাহান সিরাজ।
এবং
বিপ্লবের লাল ফুল
শহীদ কমরেড তাজুল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের কাছে পুলিশ গুলি চালালে পানি বিক্রেতা ছোট্ট পথ শিশু দীপালি সাহা মারা যায়।… কি বেদনাময় একেকটি মৃত্যুকথন! কবি লিখলেন:
দীপালি সাহা
ঘুমায় আহা
ঘুমায় ঘুম, ঘুম রে
আধফোঁটা ফুল
ফুটলো না ভুল
মরণ দিলো চুম রে।…
বোমা বানাতে গিয়ে হাত উড়ে যায় রংপুর মেডিকেল কলেজের ছাত্র শাহীন ভাইয়ের। এই শাহীন ভাইকে নিয়ে কতো স্মৃতি, কতো কথা। তিনি ঢাকায় বেড়াতে এলে আমরা ছোটখাট অসুখ নিয়ে তার দরবারে একে হাজির হতাম। হাফ-ডাক্তার শাহীন ভাই মুখে মুখে প্রেসক্রিপশন দিতেন। বেশীর ভাগ সময়ই প্যারাসিটামল। না হয় মাল্টি ভিটামিন। মুক্তোর মতো হাতের লেখা ছিলো ওনার। এক প্যাকেট গোল্ড লিফ সিগারেট, আর একটি ম্যাচের বিনিময়ে আমাদের আব্দারে কতো শত শত পোস্টার উনি রাতের পর রাত জেগে লিখে দিতেন! আর বোমা কি না তার হাতটিকেই খেয়ে নিল!
৯০ এর ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিন থেকে আমরা স্বৈরাচার বিরোধী মিছিল করার চেষ্টা করি। মিছিল ডাকসু ভবন ঘুরে লাইব্রেরির ঘেঁসে ভাষাতত্ত্ব ইন্সটিটিউট হয়ে বাইরে বের হওয়ার আগেই হাকিম চত্বরের কাছে পৌঁছালে টাশ টাশ করে একের পর এক গুলির আওয়াজ হতে থাকে। প্রায় তিন হাজারী ছাত্র মিছিল মুহূর্তেই থমকে যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব দিক থেকে একের পর এক গুলি ভেসে আসতে থাকে। কেউ একজন চিৎকার করে নির্দেশ দেন: সবাই মাটিতে শুয়ে পড়ুন! সবাই মাটিতে শুয়ে পড়ুন!
আমরা হাকিম চত্বরের মাঠে শুয়ে পড়ি। মাথার ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই শব্দে বাতাস কেটে যায় চায়নিজ রাইফেলের গুলি [পরে একজন আমাদের চেনা গোয়েন্দা সদস্য ঘটনা তদন্তে এসে আশেপাশের ভবনের দেয়ালে বিদ্ধ বুলেট দেখে জানিয়েছিলেন, সেগুলো সম্ভবত জি-থ্রি রাইফেলের গুলি; এসব অস্ত্র তখন সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর হাতিয়ার ছিলো]। এমনই উত্তেজনাকর সময়ে আমাদের কেউ কেউ বিশাল রেইন ট্রি’র গুড়িতে ঘাপটি মেরে কোমড় থেকে কাটা রাইফেল বের করে পাল্টা ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে জানান দেন: আমরাও প্রস্তুত!
গোলাগুলি থামতেই খবর আসে, জাতীয় পার্টির ক্যাডার অভি-নিরুর ছোঁড়া গুলিতে বিএমএ’র নেতা ডাক্তার মিলন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। একটি রিকশায় করে ধরাধরি করে মিলন ভাইকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। আমরাও মিছিল বাদ দিয়ে রিকশার পেছন পেছন ছুঁটে যাই। হাসপাতালে পৌঁছাতেই খবর পাই, ডা. মিলন আর নেই। আবারো আগুন ধরানো মিছিল, তুমুল শ্লোগান:
খুন হয়েছে আমার ভাই
খুনী তোদের রক্ষা নাই।আমার ভাই মরলো কেনো
খুনী এরশাদ জবাব চাই।একটা গুলি চললে
দশটা গুলি চলবে।শহীদ মিলন শিখিয়ে গেছে
লড়াই করে বাঁচতে হবে।।…
বিচারপতি, তোমার বিচার করবে যারা
এইসব রক্তপাত, আগুন ও আত্নত্যাগের পর ৪ ডিসেম্বর পতন হয় এরশাদ শাহীর। কারফিউ ভেঙে সেই রাতে উল্লাসে মাতে ঢাকা নগরী। আনন্দ মিছিলের বন্যা বয়ে যায় সর্বত্র। আমারা তখন যারা বিএ ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তারা পড়া ফেলে, অভিভাবকদের ফাঁকি দিয়েই চলে যাই জনতার মিছিলে।
হই হই রই রই
খুনী এরশাদ গেলো কই?এইমাত্র খবর এলো
খুনী এরশাদ পালিয়ে গেলো।
মিছিলের সব মুখ চেনা নয়। বেশীর ভাগই লুঙ্গী পরা আম জনতা। সবারই চোখেমুখে অন্য এক বিজয়োল্লাস। আজিমপুর থেকে রওনা হওয়া মিছিল পলাশীতে এসে দীর্ঘ হয়। পল্টনে মিছিল হয় দীর্ঘতর। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। এখানে সেখানে তখনো টায়াল জ্বলছে। মতিঝিল পৌঁছাতে পৌঁছাতে মিছিলের লোকবল সহস্র ছাড়ায়।
এরশাদের জাতীয় পার্টির সদর দফতর “আল্লাওয়ালা” ভবনে হামলা চালায় ছাত্র-জনতা। বিশাল অট্টালিকার ওপরের অফিস থেকে রাস্তার ওপর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলা হতে থাকে দামি এসি, ফ্রিজ, সোফা, টেবিল-চেয়ার। মুহূর্তের মধ্যে অফিসটির দরজা-জানালা-করিবর্গা উপড়ে যায়। কোনো লুঠপাঠ নেই। জনতা খুবই সুশৃংখলভাবে সব কিছু রাস্তায় জড়ো করে আগুন ধরায়। শীতের রাতে উত্তাপ হয় বেশ। আমরা সারারাত মিছিল করে, শ্লোগানে শ্লোগানে গলা ভেঙে ভোরবেলা চোরের মতো বাসায় ফিরি। কিন্তু আমাদের অভিভাবকেরা কপট রাগ দেখালেও আমাদের সময়ের ন্যায্য ভূমিকায় সেদিন খুশী হয়। আমাদের মধ্যবিত্ত শোবার ঘরের দরজায় তখনো শোভা পায় পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা শেষ পোস্টার: “দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে”।
পরদিন খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে আমরা আবার ছুটে যাই প্রেসক্লাব, পল্টন, মতিঝিলে। “আল্লাওয়ালা” ভবনে তখন বীর জনতা জাতীয় পার্টির সাইনবোর্ড খুলে “গণশৌচাগার” সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। কোটর উপড়ে নেওয়া চোখের মতো ভবনের দরজা-জানালাগুলো জানান দিচ্ছে, বন্দুক দিয়ে আর যাই হোক, ধানচাষ হয় না!
সেদিন আমরা একটাকা করে গুড়া রঙের প্যাকেট কিনে রং খেলেছিলাম খুব। আমাদের রঙিন সন্ত্রাসের কবল থেকে পোশাকি পুলিশও রেহাই পায়নি, চাকরির দোহাই দেওয়া সত্ত্বেও। এখানে সেখানে জটলা করে আমরা নানান গুজবে কান পেতেছি। কাড়াকাড়ি করে কিনেছি ইত্তেফাক, কি সংবাদের টেলিগ্রাম। সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ের পান দোকানে ফুল ভলিউমে শুনেছি রেডিও’র খবর, সেই বিখ্যাত কণ্ঠস্বর: আতাউস সামাদ, বিবিসি, ঢাকা।…
পরদিন ৬ ডিসেম্বর সকালে পল্টন মোড়ে বিশাল জনসমূদ্রে বিজয় সমাবেশ হয়েছিলো। বিখ্যাত সংগীত শিল্পীরা শুনিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের গান।
স্বাধীনতার শপথ
সামরিক-স্বৈরাচারের পতনের পর ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বই মেলায় ছিল ১৯৭১ এর অবহ। বাংলা একাডেমীর বই মেলার মূল চত্বরের বাইরের রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ ছোট ছোট স্টলে মিলতো বই-ম্যাগাজিন-পোস্টার-ক্যাসেটসহ রকমারি জিনিষ, এমনকি হাড়িপাতিল পর্যন্ত।
লাউড ভলিউমে ক্যাসেটের দোকানে বাজানো হয়েছিলো শেখ আব্দুল লতিফের ভরাট গলার গান:
রক্তের দামে কিনেছি বাংলা
কারো দয়ায় পাওয়া নয়…
মূল বইমেলার বাইরের ওই হট্টগোলের দোকানপাটের ভেতরে আমাদের কেউ একজন খবর এনে দেয়, ভাস্কর রাশা ছোট একটি স্টল দিয়েছেন! ওই স্টলে গেলে সহজেই খোঁজ মিলবে তার!
আমরা তখনই দলবেঁধে তার সঙ্গে দেখা করি। আমাদের চোখে-মুখের মুগ্ধতা আর বিস্ময় চাপা থাকে না। শিল্পী ছোটখাট শুকনো ধরনের মানুষ। মাথায় এক বোঝা কোকড়া, আর ঝাকড়া চুলের কারণে শরীরের তুলনায় মাথাটিকে বিশাল মনে হয়। পরনে সাদা পাঞ্জাবি-কালো প্যান্ট। তিনি তার নানান ভাস্কর্যর ছোট ছোট রেপ্লিকা বিক্রির স্টল দিয়েছেন। সেখানে তার লেখা বিদ্রোহী কবিতার বইও পাওয়া যাচ্ছে। রাশা আমাদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলেন। ভ্রাম্যমান চা বিক্রেতা ডেকে ১৫-২০ জনের বিশাল দলটিকে চা খাওয়ান।
আমরা এটা সেটা প্রশ্নে তাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলি। তিনি একেকটি ক্ষুদে ক্ষুদে ভাস্কর্য কর্ম হাতে নিয়ে এর নির্মান নেপথ্য কথা আমাদের জানান। সবই প্লাস্টার অব প্যারিসে তৈরি। আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনি ১৯৭১ এর ওপর তার অগাধ আস্থার কথা। শিল্পী বলেন, ১৯৭১ ই এদেশের সবচেয়ে গৌরবের ইতিহাস। এই গৌরবকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে আমাদের জাতীয় জীবনের কোন দামই নেই। …
নাম বিস্তৃত কবিতার বইটি শিল্পী ‘৭১ এর শহীদদের উৎসর্গ করেছিলেন, আমরা শুধু এটুকু মনে করতে পারি। আমরা এ-ও মনে করতে পারি, পুরো বইটি শিল্পীর আঁকাবাঁকা হাতের লেখাতেই মূদ্রিত। লিটল ম্যাগ ও সদ্য শুরু হওয়া বিভিন্ন সাপ্তাহিকে লেখালেখির সুবাদে মূদ্রন যন্ত্র আমাদের অপরিচিত নয়। আমরা টের পাই শিল্পীর হাতে লেখা কবিতার পান্ডুলিপি ফিল্ম
করে তা অফসেটে ছাপা হয়েছে। সমস্ত কাটাকুটি, অজস্র বানান ভুল, এমন কি প্রমিত ও কথ্য ভাষার মিশ্রণ পুরো বইটি জুড়ে। এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন রাশা নিজেই। প্রকাশক তিনিই স্বয়ং!
তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা বেশ কয়েকটি কবিতার বই সে সময় কিনি। অনেকেই পকেটের অবস্থা বুঝে কিনে ফেলি ছোটখাট রেপ্লিকা। আমার ভাগ্যে জুটে যায় “স্বাধীনতার শপথ” নামে একটি ক্ষুদে শিল্পকর্ম। সেখানে একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ওপর সারিবদ্ধ কয়েকটি কব্জিসহ হাত মুঠো করে অস্ত্রটিকে ধরতে দেখা যায়। অর্থাৎ, মুক্তিযোদ্ধারা হাতিয়ার ছুঁয়ে শপথ নিচ্ছেন, আমৃত্যু সংগ্রাম করার। …
এটাই আমার প্রতিবাদ
পর পর কয়েক দফায় বইমেলায় আড্ডা দেওয়া সুবাদে আমরা ক্রমেই রাশা ভাইয়ের প্রিয় ভাজন হয়ে উঠি। আরো পরে, সাপ্তাহিক পত্রিকার হাফ সাংবাদিক কাম রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নানান সভা-সমাবেশে রাশা ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত হয়। এরই মাঝে জাতীয় জাদুঘরে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ [এখন পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয়] প্রাঙ্গনে তার অসামান্য সৃষ্টি দেখা হয়ে গেছে।
সে সময় ঘাতক বাহিনী প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর তখনকার আমীর গোলাম আজম বিএনপি সরকারের আনুকূল্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফিরে পান। সেটি ১৯৯২ সালের কথা। প্রতিবাদে সোচ্চার হন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তার লেখা “একাত্তরের দিনগুলি” তখন প্রায় আমাদের মুখস্ত। এর গেরিলা যোদ্ধারা একেকজন জীবিত হিরোর মতোই আমাদের মানসপটে হানা দিয়ে থাকবে। সে সময় জামায়াত-শিবিরের ’৭১এর হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষন, লুণ্ঠনসহ সব অপরাধ তুলে ধরে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি সারাদেশে দুর্বার প্রচার-প্রচারণা গড়ে তোলে। শাহরীয়ার কবিরের “একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়” বইটি এই কাজে খুব সহায়ক হয়েছিল। জামায়াতী অব্যহত প্রচারণাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ’৫২র ভাষা আন্দোলনের থিসিসি লেখক, বাম তাত্বিক বদরুদ্দীন উমর প্রমাণ করেন যে, গোলাম আজম আদৌ “ভাষা সৈনিক” নন, কোনোকালে এই মৌলবাদী নেতা তা ছিলেনও না। বরাবরই তার আনুগত্য পাকিস্তান, উর্দু ও সে দেশের সামরিক জান্তাকে তোয়াজ করে চলেছে। …
আমরা ঘাদানিকের একের পর এক মিছিল-সমাবেশ-হরতাল-অবরোধে যোগ দিতে থাকি। এইসব কর্মসূচিতে ভাস্কর রাশা ভাই সতীর্থ হয়ে উঠেন। তিনি যোগ দেন সব কর্মসূচিতে– একদম সামনের সারির সৈনিক হিসেবে। পরে গোলাম আজমের প্রতীকী ফাঁসির রায় যেদিন ঘোষণা করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণআদালতের বিশাল সমাবেশে, সেদিনও রাশা ভাইকে আমরা পাই সদলবলে। …
পরে সে সময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক খবরের কাগজে তার একটি সচিত্র সাক্ষাৎকার নেই। টিএসসির বারান্দায় বসে দেওয়া কথোপকথনে ভাস্কর রাশা বলেন তার বিদ্রোহী হয়ে ওঠার ইতিকথা। শিল্পী অকপটে বলতে থাকেন, আশৈশব শিল্পের প্রতি, ভাস্কর্য কলার প্রতি তার গভীর প্রেমের কথা। … স্কুলের গণ্ডি না পেরুনোয় সুশীল সমাজ প্রথমে তাকে গ্রহণ করেনি। রিকশা পেইন্টার বা সিনেমার বিলবোর্ড আঁকিয়েরা তো আর শিল্পী নন। ওই পাতে রাশার কাপালেও শিল্পীর কদর জোটেনি। …. প্রথম দিকে তার কোনো শিক্ষাগুরুও ছিলো না। পরে বিখ্যাত ভাস্করদের কাজে অনুপ্রেরণা নিয়ে দু-একজন সতীর্থর পরামর্শ মেনে একা একাই কাজ করতে থাকেন। বেশির ভাগই কাঁঠাল কাঠের গুঁড়িতে। কিছু কাজ গড়ে ওঠে সিমেন্টে।
যেহেতু তিনি চারুকলার ছাত্র নন, তাই সে বিদ্যাপিঠে তার ঠাঁই হয়নি। নিজস্ব একটি কাজের স্থানের[ যাকে বলে স্টুডিও] অভাবে রাশা ব্যবহার করতেন বাংলাদেশ ফাইন আর্ট– বাফা’র একটি ছোট কক্ষ। এরই মধ্যে শিল্পী মহলে তার স্বীকৃতি মিলেছে। দেশে- বিদেশে জুটেছে পদক, নানা পুরস্কার। এশিয় ভাস্কর্য প্রতিযোগিতায় সব নামীদামী শিল্পীদের হটিয়ে রাশা যখন স্বর্ন পদক পান তখন রীতিমত হইচই পড়ে যায়। সরকারি-বেসরকারি মহল, মিডিয়া, শিল্পী, সুধী সমাজ একেবারে হুমড়ি খেয়ে পরে তাকে নিয়ে। … জাদুঘর কর্তৃপক্ষ চড়া দামে কিনে নেয় তার কয়েকটি অমূল্য সৃষ্টি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে শিক্ষানিকেতনটির সামনে প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিযুদ্ধের একটি নিপুন ভাস্কর্য।
কিন্তু এরই মধ্যে একটি ছোট্ট ঘটনা তাকে শিক্ষা বিরোধী প্রতিবাদী শিল্পী থেকে রীতিমত বিদ্রোহী করে তোলে। হঠাৎ করেই সরকারি একটি আদেশপত্রে জানানো হয়, ডিগ্রিধারী শিল্পীরা বাদে অপর কেউ বাফা বা শিল্প একাডেমী কোনটাই ব্যবহার করতে পারবে না। রাশা এই আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য সরকারি কর্তাদের কাছে ধর্না দেন। কিন্তু নিস্ফল হয় সবই, প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার বদ্ধমূল ধারণা থেকে কেউই বেরুতে নারাজ। তাই আদেশটি আর প্রত্যাহার হয় না। রাশা উৎখাত হন বাফা থেকে। শিল্পকলা একাডেমীর দুয়ার তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। স্টুডিও বা কাজের জায়গার অভাবে শিল্পী হয়ে পড়েন পুরোপুরি বিক্ষুব্ধ। সে সময় ব্যক্তি উদ্যোগেও ফাইন আর্টসের কোনো গ্যালারী প্রতিষ্ঠা হয়নি। কাজেই বেসরকারি সহায়তাও সহসাই মেলে না।
এরই প্রতিবাদে রাশা পত্র-পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে এক সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেন তার কয়েকটি বিশালাকৃতির কাঁঠাল কাঠের ভাস্কর্য! পরদিন সব কাগজে প্রথম পাতায় ছবিসহ বড় করে ছাপা হয় সে খবর। বিদেশী গণমাধ্যমেও খবরটি স্থান পায়। …
এইবার এরশাদ সরকারের তাঁবেদার সরকারি আমলাদের টনক নড়ে। তারা তখন রীতিমত শিল্পবোদ্ধা হয়ে ওঠেন। ওই সরকারি আদেশ প্রত্যাহার করে রাশাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বাফা’র স্টুডিও কক্ষটি। শিল্পকলা একাডেমীসহ সব সরকারি-বেসরকারি মহলে তার আরো কদর বাড়ে। …
এরপর বহু বছর তার সঙ্গে সেভাবে দেখা স্বাক্ষাত হয় না। হঠাৎ কখনো দু-একটি মেলা বা গানের অনুষ্ঠানে বা শাহবাগের বইপাড়ায় তার সঙ্গে ক্ষণিকের দেখা, কুশল বিনিময়, অল্প দু-চারটি কথায় দেশি বা বিদেশী রাজনীতি বোঝার চেষ্টা। …
আর সেদিন শাহবাগের গণবিস্ফোরণকালে সাংবাদিক সমাজও যখন সংহতি জানিয়ে সোচ্চার, প্রেসক্লাবের সামনের পথসভায় আমরা ডান-বাম-মধ্যমপণ্থী সাংবিদকরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে পথসভায় জড়ো হয়েছি, খর রোদ উপেক্ষা করে তুমুল শ্লোগানে গলা ফাটাছ্ছি:
মুক্তিযুদ্ধের প্রেসক্লাবে রাজাকারের ঠাঁই নাই, ঘাতক-রাজাকারের ফাঁসি চাই, আমাদের ধমনীতে শহীদদের রক্ত….ইত্যাদি, তখন হঠাৎ কাঁধের ওপর আলতো হাতের ছোঁয়া টের পাই। পিছন ফিরে দেখি আমাদের রাশা ভাই! হাতে একটি মাঝারি মাপের বাংলাদেশের পতাকা। সেই ঘন একরাশ ঝাঁকড়া চুল অনেকটাই আর নেই। বয়সের স্পষ্ট ছাপ চুলে, চোখে, মুখে। কোটরে ঢুকে যাওয়া ঝাঁ চকচকে চোখের জ্যোতিও এখন বুঝি ম্রিয়মান। দেহ অনেকটাই ভেঙেছে। আগের মতোই সাদাসিধে মলিন বেশবাস। শুধু বিনয়ী হাসিটি এখনো অম্লান।
মাইকে ভেসে আসা বক্তৃতার উচ্চস্বর বাঁচিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে রাশা ভাই বললেন, বিপ্লব, আমিও আপনাদের সাথে আছি। আমি জানতাম, এ দেশ একদিন জাগবেই। একাত্তরের রক্তের সঙ্গে এ দেশ শেষ পর্যন্ত বেঈমানী করতে পারে না। সাম্রাজ্যবাদীরা আসলে কাগুজে বাঘ।…
____
ছবি: ভাস্কর রাশার সঙ্গে লেখক, জাহিদ নেওয়াজ খান।
পূর্বকথা: এক
পূর্বকথা: দুই
অনেক কিছু শিখলাম
ভাস্কর রাশা বিশ্বাঙ্গনে পরিচিতি পেল কি করে?
[img]https://fbcdn-sphotos-a-a.akamaihd.net/hphotos-ak-prn1/546933_382067395206945_2130249805_n.jpg[/img]
@ডাইনোসর,
দুঃখিত, সম্ভবত এশিয়ার মধ্যে স্বর্ণপদক বিজয় তাকে বহির্বিশ্বে প্রথম পরিচিতি এনে দিয়েছে। এ বিষয়ে কাজী রহমানসহ অন্য যেসব সহব্লগার ওয়াকিবহাল, তারাই হয়তো আরো ভালো বলতে পারবেন।
__
ভাস্কর রাশা’র ফেবু পেজ থেকে [লিংক]
রাশা ভাইয়ের ষ্টুডিওতে ক বার সময় কাটাবার সুযোগ পেয়েছি। তখন তার ভাস্কর্য ‘ক্যান্সার’ খুব নাম করেছিলো। ব্যতিক্রমী অদ্ভুত একগুয়ে এই শিল্পী; একজন শিল্পী। ওর জন্য সব সময়ই অফুরন্ত শুভেচ্ছা।
এই শিল্পীকে নিয়ে লেখা দেখে ভালো লাগলো।
@কাজী রহমান,
বলেন কি! আপনারও তো তাহলে ঝুলিতে অনেক স্মৃতি। এই নিয়ে একটি পৃথক নোট প্রার্থণা করছি। অপেক্ষায় রইলাম। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
নিশ্চই। সময় সুযোগ পেলেই জানাবো। আমার ভাবনায় ‘ক্যান্সার’ ভাস্কর্যটি নির্মানকালীন সময় থেকেই ভাস্কর রাশার শিল্পগুণ নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়। বড়সড় কোন পুরস্কারের আগেই রাশার নাম ছড়ায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। বাফায় দেখেছি ওকে কাজ করতে। রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অশোক সাহা, ওর আরো কজন বন্ধু নাসিমা, স্বাতী, খোকা, শংকর ওদের কথা মনে পড়ছে হঠাৎ। জলরঙে কে যেন শখ করে আমার একটা পোট্রেট করে দিয়েছিলো; মনে পড়ছে না। ব্যতিক্রমী সময়ের কথা। চারিদিক থেকে প্রচন্ড সাংস্কৃতিক অগ্ন্যুত্পাতের ঠিক পূর্বমুহূর্তে চূড়ান্ত প্রুস্তুতি সময় সেটা।
@কাজী রহমান,
বলেন কি! আপনি এতোসব তথ্যসহ স্মৃতিকথনটি এখনো লেখেননি!! আগ্রহ আরো বাড়ছে।…
৯০এর দশকের স্মৃতিচারণ ভাল লাগল। কারণ ঐ সময়টায় আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। পড়তে পড়তে নিজের অনেক স্মৃতি উছলিয়া উঠছে।
আরও পর্ব নিশ্চয়ই আসছে!অপেক্ষায় থাকছি।
@গীতা দাস,
দিদি, সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এটি কিন্তু ‘৯০ এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের ওপর ধারাবাহিক নয়। এটি নিছকই টুকরো কথায় সোনালী দিনগুলোর নায়কদের স্মৃতিচারণ।
নোটটির প্রথম পর্বে অবশ্য ‘৯০ এর কিছু প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ আছে। সেটি তো আপনার আগেই পড়া। এর দ্বিতীয় পর্বে ভিন্ন এক নায়ক, যিনি উজ্বলতম ছিলেন আমাদের সময়ে, তার কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। সেটিও পড়ার আমন্ত্রণ জানাই।
চলুক।
@বিপ্লব রহমান,
আমাদের সময়ের নায়কেরা শিরোনামে লেখা যে আপানার সময়ের নায়কদেরই কথা এতে আমার সংশয় নেই। আমি শুধু দিপালী সাহার মৃত্যু,সেলিম দেলোয়ারের ওপরে ট্টাক তুলে দেওয়া , সর্বোপরি দেয়ালে চিকার ভাষা আমাকে আমার স্মৃতি জাগিয়ে দিয়েছিল।
যাহোক, সঙ্গে আছি।
@গীতা দাস,
অনেক ধন্যবাদ দিদি। আপনার স্মৃতিকথনটুকুও পড়ার আগ্রহবোধ করছি। লেখার জন্য বিনীত অনুরোধ রইলো।
মন্তব্যটি সংশোধন করার কোনো অপশন খুঁজে পাচ্ছি না। এখানে নায়ক বলতে আমি মূলত রাজনৈতিক নায়কদের কথা বুঝিয়েছি।
@আলসে কুড়ে,
মন্তব্য সংশোধনের প্রয়োজন নেই। আপনার বক্তব্য খুবই সরাসরি ও পরিস্কার। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের রাজনীতির নায়ক-খলনায়ক নিয়ে মুক্তমনায় বহুবার বিতর্ক করেছি। তাই আপনার ফোকাস পয়েন্টে এ ক ম ত।
অনেক ধন্যবাদ।
স্মৃতিচারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এতে ইতিহাস সংরক্ষিত থাকে। আপনাকে অভিনন্দন।
যে কাল নিয়ে এই স্মৃতিচরণ তার নায়কের প্রায় সবাই এখনও বেঁচে আছেন। কারিগরেরাও ছড়িয়েছিটিয়ে আছেন। কেউ কেউ হয়তো এখন আর আমাদের মাঝে নেই। ভাস্কর রাসা আছেন। পথ চলতে, কর্মক্ষেত্রে তাঁর সাথে দেখা হয় মাঝে মাঝে। ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় নেই তাই কথা হয় না।
এমন তুমুল বিদ্রোহের পরেও খুব বেশি দিন লাগেনি আন্দোলনের মূল চেতনাটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক দিক হারিয়ে যেতে। হয়তো কারিগরদের মনে মগজে এখনও সেই চেতনা পুরোটাই বেঁচে আছে কিন্তু নায়কেরা বেঈমানী করেছে। জাতীয় রাজনীতির মূল ধারায় সেই চেতনা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই সেখানে স্থান করে নিতে পারে নাই।
যতদূর জানি চীনারা মোঙ্গলদের কাছ থেকে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর মোঙ্গলদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন রকম প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তারা মাটির ওপরের স্থাপনা তো ধ্বংস করেছেই মাটি খুড়ে স্থাপনা ভিত উপড়ে ফেলেছে। অথচ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করি ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরেও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পুরোনো রাজনীতির ধরাবাহিকতাই জাতীয় রাজনীতির মূল ধারায় প্রবহমান।
এই সূত্র ধরে আর একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না– ৭২-এ সমাধান যে বিষয়টির সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আজও শঙ্কা কাটেনি। হ্যাঁ গত ফেব্রুয়ারিতে এক বিশাল গণজাগরণে শামিল হতে পারার আনন্দ এখনও মন থেকে মুছে যায়নি তা ঠিক। তবে একদিকে যেমন সরকারের উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছি না অন্যদিকে আন্দোলনটিও আর মনের মতো করতে পারছি না, সেই নিরাশা নিয়েই বেঁচে থাকতে হচ্ছে।
ভাস্কর রাশা প্রায়ই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এ এসে তাঁর নিজের সৃষ্ট ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। সরলভাবে হাসিমুখে কথা বলতেন সবার সাথে ।অনেকদিন তাঁকে দেখিনি।আর…..‘সাম্রাজ্যবাদীরা আসলে কাগুজে বাঘ’-বক্তব্যটি আবেগী ও ভুল।সাম্রাজ্যবাদীরা যথেষ্ট শক্তিশালী।গোটা পৃথিবীতেই।
@অগ্রদূতের চরণবন্দনা,
‘সাম্রাজ্যবাদীরা আসলে কাগুজে বাঘ’ কথাটি আবেগী হলেও নিছক ভুল নয়; বিশ্বের দেশে দেশে বহুবার সাম্রাজ্যবাদীদের পতন হয়েছে। তবে তারা নিশ্চয়ই খুব শক্তিশালী। আর ওই কথাটি প্রতিকী অর্থে বলা মনে হয়। জনতার শক্তির কাছে কঠিন পাহাড়কেও নতজানু হতে হয়, এমনকি গডজিলাকেও।
সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
বহুদিন পর ভদ্রলোকের নাম শুনতে পেলাম।
শাহবাগ গনজাগরন কেন্দ্র করে নানান মেলোড্রামার পর ভদ্রলোকের বর্তমান অনুভূতি জানতে পারলে ভাল লাগত।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার প্রতিক্রিয়া পেয়ে ভালো লাগলো। রাশা ভাইয়ের এমন ভাবনা জানা কঠিন নয়, একটি ফোন কলেই তা সম্ভব। হয়তো শিগগিরই কোনো আড্ডায় সেটিসহ আরো নানান চিন্তনের কথাও পৃথক কোনো নোটে তুলে ধরা হবে। 🙂
এরশাদ পতনের সময় আন্দোলন হয়েছিল এটুকুই শুধু বাবা, মায়ের মুখ থেকে শুনেছিলাম। আজ সেই আন্দোলন সম্বন্ধে ধারনা পেলাম।
তবে একটা প্রশ্ন আমার মনে ভীষণ ভাবে নাড়া দিচ্ছে, প্রশ্নটি হল- গোলাম আজম যখন নাগরিকত্ব পায় তখন কেন পূর্বের মতন একটা সফল আন্দোলন হয়নি?
তাহলে আজ জামাতিরা এত ক্ষমতাধর হতে পারত না।
@আম্মানসুরা,
আপনার বিনীত পাঠ ও আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ।
অতি সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি।
০১. স্বাধীনতার পর রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা, তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন, এরশাদ সরকার বিরোধী যুগপদ আন্দোলনে আ’লীগ-বিএনপি’র জামাত তোষণ, অর্থাৎ দক্ষিণপন্থার রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে জামাতকে আস্কারা দেওয়ার ধারাবাহিকতায় ‘৯০ এর পর বিএনপি শাসন আমলে গোলাম আজম নাগরিকত্ব ফিরে পান। বলা ভালো, বিএনপিকে ক্ষমতার মসনদে বসানোর ভেট হিসেবে গোলাম আজমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
০২. একটি সফল আন্দোলন, তথা যুদ্ধাপরাধ বিরোধী সফল আন্দোলন তো আর রাতারাতি গড়ে ওঠে না, এটি সম্ভবও নয়। কারণ, ১৯৭২ সালে যে কাজ সহজ ছিলো, ১৯৯২ এ বা এখন সে কাজ ততো সহজ নয়। এই দীর্ঘ কয়েক দশকে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত ভেতরে ভেতরে দেশব্যাপী অনেক শক্তি সঞ্চার করেছে। মনে করিয়ে দেই, কখনো আ’লীগ, কখনো বিএনপি’র কাঁধে ভর দিয়ে শেষ পর্যন্ত জামাত ২০০১ এ জামাত নেতারা মন্ত্রীত্ব পর্যন্ত লাভ করেছে। ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, রেটিনাসহ আরো নানান ব্যবসাপাতিতে রীতিমত ধনী এই দলটি গণমাধ্যম, ক্রীড়াঙ্গনসহ দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।
এছাড়া বছরের পর বছর ধরে পাঠ্যপুস্তক, গণমাধ্যমসহ সর্বত্র ১৯৭১ এর অর্জন ও ইতিহাসসমূহ গুলিয়ে দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে। কার পিতা বা কার স্বামীর দয়া-দক্ষিণায় বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, কে কার যে বড়ো নেতা ছিলেন, এই কুৎসিত রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং প্রপাগান্ডায় প্রজন্ম বার বার বিভ্রান্ত হয়েছে। ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে ১৯৭১ এর গৌরবময় চেতনা- সাম্য ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে একটি বৈষম্যহীন সুখি দেশ গড়ার স্বপ্ন।
০৩. ওপরের পয়েন্টদুটি বিবেচনায় নিলে বোঝা যায়, এর বিপরীতে জামাত বিরোধী সব দলমত, শ্রেণী-পেশা, ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনটি ১৯৯২ সালে সহজ ছিলো না, এ সময়ও তা আরো কঠিন। কারণ এর সঙ্গে [আগেই যেমন বলা হয়েছে] নানা শ্রেণী স্বার্থ জড়িত থাকে। তাছাড়া একক পার্টির বদলে নানা পার্টি ও সংগঠনের সম্মিলিত জোটের লড়াইটিকে শুধু স্বতস্ফূর্ততার ওপরে গড়ে তুলে খুব বেশী দূর এগিয়ে নেওয়া যায় না। এ জন্য চাই শত শত বা হাজার হাজার নয়, চাই লাখ লাখ আত্নত্যাগী রাজনৈতিক কর্মী, যাদের প্রগতিবাদী রাজনীতিতে ১৯৭১ এর চেতনায় রীতিমত প্রশিক্ষিত হওয়া চাই।
০৪. এক কথায় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের শক্তিতে ১৯৭১-৭২ এর রাজাকার নির্মূল সহজ হলেও শুধু ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে ১৯৯২ বা ২০১৩ তে রাজাকারদের নির্মূল সম্ভব নয়; তাই এই সময়ে এ জন্য চাই শহর-গ্রামাঞ্চলে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সম্মিলিত উত্থান; আর দেশপ্রেমিক সরকার তো বটেই। …
(Y)
@বিপ্লব রহমান,
বুঝলাম ‘সময় গেলে সাধন হবেনা’।
বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা নিয়ে কয়েকটা লেখা পরেছি, কিন্তু প্রত্যেকটা লেখাই ছিল পক্ষপাত দুষ্ট। নিরপেক্ষ ভাবে এ বিষয়ে কিছু লিখলে উপকৃত হব। আমার কিছু শিবির প্রেমিক ক্লাসমেট আছে। ওদের সাথে তর্কে এই বিষয়টায় আটকে যাই। আসল সত্য জানার ক্ষেত্রে কোন বই বা উৎস আছে কি?
আমার প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
@আম্মানসুরা,
এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন অনেক কিছু জানতে পারবেন। জিয়াউর রহমানের মত একটা কুলাঙ্গারের জন্ম না হলে বাংলাদেশের আজ এত অধঃপতন হতোনা। রাজনীতিবিদদের জন্যে রাজনীতিকে এমন ডিফিকাল্ট করেছে যে আজ আওয়ামী লীগ এমন কি কম্যুনিষ্টরাও হেফাজতকে তোষামোদ করে। জিয়া বাংলাদেশের জন্যে এক বেজন্মা-কুজন্মা, অশুভ-অসুর এক বিষ-বৃক্ষ ছিল।
@আকাশ মালিক,
প্রেসনোট টির শর্ত গুলো জানলে ভালো হত। প্রেসনোট অনুযায়ী গো আজম নাগরিকত্ব পায় না। ১৯৯৩ সালে নাগরিকত্ব পায়।
বিচারের রায় এ বলা হয়েছে নাগরিকত্ব পাওয়া বা না পাওয়ার ক্ষেত্রে যুদ্ধপরাধের ভূমিকা নেই। পুরাই টাস্কিত। একজন মানুষ কি অপরাধ করলে তার নাগরিকত্ব বাতিল হয় আমার জানা নেই, আপনি জানেন?
জিয়া বা তার পরিবারের এরূপ আচরণের কারণ কি? তাদের স্বার্থ কি? জিয়াও তো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, আর হানাদার দের খারাপ আচরণ বেগম জিয়াও দেখেছেন (শুনেছি, জানিনা সত্য কি না?)। :-s
@আম্মানসুরা,
খুব ভাল প্রশ্ন করেছেন।
আমার মনে হয় সে সময় আন্দোলন যারা সাধারনত শুরু করে এবং মূল চালিকা শক্তি হিশেবে থাকে সেই ছাত্রসমাজ এই ইস্যুকে আন্দোলনের পর্যায়ে নেবার প্রয়োযন বলে মনে করেনি।
এর কারন ‘৭৫ পরবর্তি শাসকদের মহিমায় ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চয়তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনেকটাই সুপ্তাবস্থায় চলে গেছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করন, বিশেষ করে রাজাকারদের ভূমিকা যথাসম্ভব গোপন করার চেষ্টা, মুসলিম জাতীয়তাবোধের জিগির জোরেশোরে ওঠা সংক্ষেপে বলা যায় সেই সুপ্তাবস্থার কারন। সে সময় আমরা রাজাকার বদর নিয়ে মাথা ঘামানোর চাইতে ভারতের নানান ষড়যন্ত্র নিয়ে চিন্তাভাবনা বেশী করতাম। মুক্তিযুদ্ধ ছিল আমাদের জন্য সল্ভড একটা ইস্যু যা নিয়ে পেছনে তাকানোর অবকাশ তেমন আছে বলে মনে করতাম না। এরশাদ আমলে ছাত্র সমাজের বড় অংশই বিএনপির প্রতি আকৃষ্ট হয় যারা নীতিগতভাবে নিজেদের জামাতিদের ভাই মনে করে।
আমি নিজেও সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোড়ায় টোকা দিতে থাকা টগবগে তরুন। গোলামদের কাজকারবার মোটামুটি জানতাম, তাও আমার মনে হয়নি এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করার তেমন কিছু আছে। গোলাম আজম সংক্রান্ত নানান খবর পত্রিকায় দেখতাম নিরাসক্তির সাথে।
আজকের দিনে গোলাম এত সহজে ছাড়া পেত না এটা নিশ্চিত। আজকের তরুন সমাজে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনেক বেশী জাগ্রত। কোন দল বা নেতা ফেতার দরকারও পড়ত না। ছাত্র জনতা মাঠে নেমে যেত।
@আদিল মাহমুদ,
আমার প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রাজাকারদের প্রতি শাসক গোষ্ঠীর এত প্রেমের কারণ কি ছিল? তাদের তো নিজ নিজ এলাকার সবাই ঘৃণা করত। তাহলে ভোটের জন্য হলেও তো তাদের দূরে রাখা উচিত ছিল। কিছু মনে করবেন না, কিছুই জানিনা তো তাই এত প্রশ্ন।
@আম্মানসুরা,
কারন খুব সোজা। রাজাকার বা স্বাধীনতা বিরোধী বলতে আমরা যাদের বুঝি স্বাধীন বাংলায় তাদেরও ভোট ব্যাংক আছে। তাদের নিজ নিজ এলাকায় বা সামগ্রিকভাবে লোকে ঘৃনা করে এমন ধারনা দূঃখজনক ভাবে পরম সত্য নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকে ঘৃনা করলেও তাদের সমর্থকও একেবারে কম নেই। আঞ্চলিক জাতীয় সব পর্যায়েই আছে। যুদ্ধের পর থেকে লোকের ঘৃনার পরিমানও কমে এসেছে, তারাও বিশেষ করে ধর্মের চাদর গায়ে পরিয়ে দিনে দিনে নিজেদের অবস্থান করে নিতে পেরেছে। ফেয়ার ইলেকশনেও এ দেশে বদর বাহিনীর সভাপতি সম্পাদকরা ও জেতে, সেটা যে কোন বিচারেই হবার কথা নয়।
‘৭৫ পরবর্তী আমলে আওয়ামী লীগই ছিল ততকালীন শাসকদের কাছে সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি যাদের জনপ্রিয়তা ‘৭১ সালের মত না আর না থাকলেও সবচাইতে বড় থ্রেট। কাজেই শত্রুর শত্রুর সাথে মিত্রতার নিয়মে আওয়ামী লীগের জাত বিরোধী হিসেবে ধর্মভিত্তিক দলগুলিকে ততকালীন সেনা শাসকরা গর্ত থেকে বার করে। গনতান্ত্রিক পরিবেশ কায়েম করা হচ্ছে এমন আবহ তৈরী করতেও রাজনৈতিক দলের প্রয়োযন ছিল। জিয়ার পরবর্তি এরশাদও একই নীতি চালিয়ে গেছে। তার আমলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের জোশে যুদ্ধপরাধী ইস্যু চলে গেছিল একেবারে আড়ালে। সেই সুযোগে যুদ্ধপরাধীরাও বড় দলগুলির কাতারে মিলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহন করে দল গোছায় ও জনমনে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা সফল ভাবে তৈরী করে নিতে সমর্থ হয়।
@আদিল মাহমুদ,
মন খারাপ হয়ে গেল। স্বার্থের জন্য মানুষ এত নিচে নামে!!!! যেখানে ৭৫ পরবর্তী শাসকেরাও যাদের বিরুদ্ধে একদা যুদ্ধ করেছিল আবার স্বার্থের জন্য তাদেরই তোয়াজ করা শুরু করেছে। আত্নসম্মান বলেও তো একটা বিষয় আছে!!! তাদের দেখি তাও নেই।
@আম্মানসুরা,
স্বার্থের জন্য নীচে নামায় খুব একটা অস্বাভাবিকত্ব নেই। তবে নিঃসন্দেহে তার মাত্রায় অস্বাভাবিকত্ব আছে।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার আলাপচারিতাটুকু মূল্যবান। অনেক ধন্যবাদ।
@ মুক্তমনা টেকনিক্যাল টিম, সাহায্য চাইছি।
অনেক চেষ্টা করেও লেখার ভেতরে দেওয়া ছবিটি লেখার সঙ্গে মাপসই [মাঝারি] মাপের করতে পারছি না, হয় খুব ছোট হয়ে যাচ্ছে, নয়তো প্রমান মাপের [এখন যেমন আছে]।
অনুগ্রহ করে ছবির আকৃতি ঠিক করে দিলে খুশী হবো।
@বিপ্লব রহমান,
এডমিনদের পাবেন কোথায়? গ্রীষ্মের চাঁদনী রাতে সবাই গেছে বনে। অপশন আছে না, ছোট-মাঝারি-বড় এটা ট্রাই করেছেন? ফটো রিজুলেশন জানা আছে? ট্রাই করেন দাদা, আল্লাহর দুয়ার এখনো বন্ধ হয় নাই।
এরশাদের আমলে বি এ। আপনি এতো ইয়ং মানুষ আগে তো জানতাম না। বহুদিন হয় পাহাড়িদের কথা কিছু শুনালেন না যে। ওদের কথা জানতে খুব মন চায়।
@আকাশ মালিক,
অ্যাডমিন/টেকি রা নিপাত যাক! নিজে যা পার্ছি, সেটাই এখন কর্ছি। ইয়া হাবিবী। :))
@বিপ্লব রহমান,
বলছিলাম না, জিস কা কয়ি নেহি উছ কা খোদা হ্যায় ইয়ারো–
খুব সুন্দর হয়েছে। আমি হলে এই জায়গাটায় আরেকটা শব্দ বসায়ে বলতাম-
হই হই রই রই
খুনী এরশাদ গেলো কই?
লেখাটা না পড়েই আগে মন্তব্য করেছিলাম। পড়ে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে এলো। আহ হারে হতভাগা জাতি, নিজের মানুষদের সম্মান দিতে শিখলোনা, সম্মান দিলো বেনে ভেসে আসা মানুষখেকো কুমীরদের।
@আকাশ মালিক,
আপনাকে ধন্যবাদ। (Y)