লেখকঃ কল্লোল মুস্তাফা
সংকটকে পুঁজি করে ব্যাবসা ফেঁদে বসার প্রতিভায় ড.ইউনুসের যে কোন জুড়ি নাই, সেটা তিনি আবারও প্রমাণ করলেন মালিক মালিক শ্রেণী কর্তৃক গার্মেন্টস শ্রমিকদের চলমান কাঠামোগত গণহত্যার (ইউনুস সাহেবের ভাষায় ‘গণমৃত্যু’) প্রেক্ষিতে মালিক শ্রেণী, সরকার এবং বিদেশী ক্রেতাদের ভাবমূর্তি সংকটের মুশকিল আসান হিসেবে ‘গ্রামীণ বা ব্র্যাক পোশাকশিল্প শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ এর প্রস্তাবনা হাজির করে। ‘সাভার ট্র্যাজেডি, পোশাকশিল্প ও বাংলাদেশ’ নামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ড.ইউনুসের প্রস্তাবনা অনুসারে রানা প্লাজার ফাটল ফেটে ভবন ধসে ইউনুস সাহেবের ভাষায় আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যে ‘বিশাল ফাটল’ধরা পড়েছে, তার সমাধান হিসেবে সিটিজেন অ্যাকশান গ্রুপ, ঘন্টায় ৫০ সেন্ট ন্যূনতম মজুরী এবং পোশাক প্রতি বিদেশী ক্রেতাদের ৫০ সেন্ট করে সহায়তায় গঠিত ‘গ্রামীণ বা ব্র্যাক পোশাকশিল্পশ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ বা ‘অন্য কোনো আন্তর্জাতিকআস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান’কে উপস্থাপন করেছেন।
ড.ইউনুসের প্রস্তাবনা অনুসারে- “এই অতিরিক্ত ৫০ সেন্ট দিয়ে যদি আমি উন্নত বিশ্বের কনজ্যুমারদের কাছে পরিচিত ও আস্থাভাজন একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় বাংলাদেশে একটি ‘গ্রামীণ বা ব্র্যাক পোশাকশিল্প শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করতে পারি, তাহলে শ্রমিকের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তার শারীরিক নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, অবসরকালীন নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সন্তানের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, সন্তানের দেখাশোনা, উপার্জন, ভ্রমণ—সবকিছু এর মাধ্যমে করা সম্ভব।……
কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান যদি বলে, এর ফলে আমার বিক্রি কমে যাবে, আমার লাভ কমে যাবে, তাদের আমি বলব, এর জন্য যাতে আপনার বিক্রি না কমে, বরং যাতে বাড়ে, সে ব্যবস্থাও করা যায়। আপনার জামায় আমরা একটা ট্যাগ লাগিয়ে দেব: এতে লেখা থাকবে From the Happy Workers of Bangladesh, with Pleasure. Workers wellbeing being Managed by Grameen অথবা BRAC অথবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান। এরসঙ্গে সুন্দর একটা লোগো থাকবে, দেখলেই বুঝতে হবে, এই কারখানার শ্রমিকেরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে, উষ্ণতার সঙ্গে, এই জামা তৈরি করে দিয়েছেন। তাঁদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য অতিপরিচিত এবং আস্থাভাজন একটি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিয়েছে। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এটা তাদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করতে পারবে।“
গার্মেন্টস এ আগুন লেগে, ভবন ধ্বসে যখন একের পর এক শ্রমিক হত্যার ঘটনা ঘটছে, যখন দেশে এবং দেশেরবাইরে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিভিন্ন কাঠামোগত সমস্যা যেমন: শ্রমিকদের ট্রেডইউনিয়ন করতে না দেয়া, কারখানার কর্মপরিবেশ রক্ষায় রাষ্ট্রের ন্যূনতম ভূমিকা না থাকা,মালিকের মুনাফাবাজিতে শ্রমিক নিরাপত্তায় অবহেলা, বিদেশী ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফারস্বার্থে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাস শ্রমিকে রুপান্তর ইত্যাদি প্রসঙ্গ যখন সামনে আসছে, যখন শ্রমিকরা সোচ্চার হচ্ছে তখন শ্রমিকের ট্রেডইউনিয়নের অধিকার কিংবা রাষ্ট্রীয়তদারকি কঠোর করার বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে বেসরকারি শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট স্থাপনের প্রস্তাবটা গার্মেন্টস মালিক, মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী শাসকদের জন্য বেশ স্বস্তি দায়কই হতেপারে!
প্রথমত, কারখানার ভবনের নকশা ঠিক আছে কিনা, ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যাবস্থা যথাযথ কিনা ইত্যাদি শ্রমিক নিরাপত্তা মূলক ব্যাবস্থা নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও আইন কানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রয়োজন। এর সাথে অর্থকড়ির সম্পর্ক সামান্যই। ফলে কোন এক গ্রামীণ শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট কে বিদেশী ক্রেতারা কাপড় প্রতি ৫০ সেন্ট করে দিলেই এই কাঠামোগত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এতদিন আমাদেরকে শোনানো হয়েছে, বেসরকারি খাত ব্যাবসা করবে, সরকারি খাত নিয়ন্ত্রণের কাজটা করবে। বেসরকারি খাতের লুটপাট আর শ্রম শোষণে শ্রমিকদের জীবন যখন বিপন্ন , সরকারিখাত যখণ মালিক শ্রেণীর স্বার্থ দেখতেই ব্যাস্ত, তখন আবার বেসরকারিখাতের নিয়ন্ত্রণের জন্য আরেক বেসরকারি খাত, শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্টের কথা বলা হচ্ছে! জনাব, ঐ শ্রমিক কল্যাণট্রাস্টকে কে নিয়ন্ত্রণ করবে?
দ্বিতীয়ত, কারখানা জিনিসটা বাংলাদেশে নতুন না, সারা দুনিয়াতেই আছে। সেসব দেশে বাংলাদেশের মতো অবহেলাজাত দুর্ঘটনা(অর্থাৎ হত্যাকান্ড) না ঘটার কারণ বেসরকারি খাতে শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠান নয়, বরং শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন। শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমেই পৃথিবীর দেশে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি মজবুত হয়েছে, মালিকরা বাধ্য হয়েছে কারখানায় নূন্যতম কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে। ইউনুস সাহেব তার লেখায় ‘দাসের মত’ শ্রমিকদের নিয়ে এত কাদুনি গাইলেন কিন্তু শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিয়ে একটা কথাও বললেন না!
তৃতীয়ত, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট শ্রমিকদের সকল মুশকিল আসান করবে, তাহলেও সমস্যা হলো তার প্রস্তাবিত এই শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট একটা ঐচ্ছিক ব্যাবস্থা যা বিদেশী ক্রেতাদের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করবে। তীব্র ব্যাবসায়িক প্রতিযোগীতার এই দুনিয়ায় সমস্ত ছোট বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইউনুসের আহবানে সাড়া দিয়ে কাপড়ের গায়ে “হ্যাপি বাংলাদেশী ওয়ার্কার” ট্যাগের বিনিময়ে কাপড় প্রতি ৫০ সেন্ট করে বাড়তি দিতে রাজী হয়ে যাবে, এটা ড. ইউনুসের স্বপ্ন বিলাস ছাড়া আর কিছু নয়। কর্পোরেট স্যোসাল রেসপন্সিবিলিটির নামে দুই একটা বড় প্রতিষ্ঠান হয়তো ইউনুসের ইমেজে আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে এই উদ্যোগে সাড়া দিতে পারে, যা নিয়ে হয় ড. ইউনুস সারা দুনিয়ায় লেকচার দিয়েও বেড়াতে পারেন। কিন্তু তিনি যখন এই দুই একটি দৃষ্ঠান্ত নিয়ে সারা দুনিয়ায় তার স্বপ্ন ব্যাবসা করবেন, তখন দেশের আনাচা কানাচে ছোট বড় কন্ট্রাক্টিং সাবকন্ট্রাক্টিং গার্মেন্টস এর শ্রমিকরা পুড়ে মরবে,ভবন ধ্বসে চিড়ে চ্যাপ্টা হবে।
চতুর্থত, দারিদ্র বিমোচন এবং কর্মসংস্থান যেমন রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব, ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে যেমন এই কাঠামোগত সমস্যার সমাধান হয় না, তেমনি কারখানায় কর্ম পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা, মজুরী ইত্যাদি সম্পর্কিত কাঠামোগত সমস্যা সমাধানেরও দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের, রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্বকে পাশ কাটিয়ে, মালিক শ্রেণীর দ্বায়িত্বকে এড়িয়ে গিয়ে কোন বেসরকারি তথাকথিত শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট এর মাধ্যমে এই কাঠামোগত সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋণ মডেলে আত্মকর্মসংস্থান কিংবা সামাজিক ব্যাবসা দিয়ে দারিদ্র বিমোচন সম্ভব হলে গ্রামের নারীদেরকে গার্মেন্টস পুড়ে কিংবা ভবন ধ্বসে মরতে আসতে হতো না, শ্রম দাস হিসেবে মানবেতর জীবন যাপন করতে হতো না।
পঞ্চমত, ইউনুস সাহেবকে ধন্যবাদ ন্যূনতম মজুরীর কথাটা তোলার জন্য । তবে তিনি যেভাবে ২৫ সেন্ট থেকে ৫০ সেন্ট বাড়ানোর কথা বলেছেন, আমরা এরকম কোন ঐচ্ছিক প্রক্রিয়ার সাথে একমত নই। আমরা মনে করি, শ্রমিকের নূন্যতম মজুরী হবে বাঁচার মতো মজুরী, ফলে একবার মজুরী যা ইচ্ছা তাই বাড়ালেই হবে না, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার দর, শ্রমিক পরিবারের আবাসন, শিক্ষা,স্বাস্থ্য ইত্যাদি বাবদ খরচ হিসেব করে সেই মজুরী নির্ধারণ করতে হবে এবং বছর বছর সমন্বয় করতে হবে।
ষষ্ঠত, ড. ইউনুস প্রস্তাবিত ‘সিটিজেন্স অ্যাকশন গ্রুপ ফর প্রটেক্টিং গার্মেন্ট ওয়ার্কার্সঅ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বার্থে কাজে আসতে পারে তবে তা ইউনুস প্রস্তাবিত বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, বিদেশী সরকার, দেশের ভেতরে মালিক ও সরকার পক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করে চিঠি লেখার মাধ্যমে সেরকম কিছু ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার কোন নাগরিক কমিটি যদি শ্রমিকদের সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেতে পারে, যদি সরকারও মালিক পক্ষের উপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে পারে তাহলেই সেটা সত্যিকার অর্থে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে নাগরিকদের তরফে দ্বায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে। কিন্তু ইউনুসের মতো শ্রমিক আন্দোলনের বিকল্প হিসেবে দাড় করাতে চাইলে নাগরিক কমিটি ওয়াচ ডগের নামে আসলে পোষা বিড়ালই হবে।
ড. ইউনুস তার প্রস্তাবনায় শ্রমিকের ‘শারীরিক নিরাপত্তা,সামাজিক নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, অবসরকালীন নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সন্তানের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, সন্তানের দেখাশোনা, উপার্জন, ভ্রমণ’- ইত্যাদি যেসব সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন, তা শ্রমিকের অধিকার, বিদ্যমান পুঁজিবাদি ব্যাবস্থায় যার ব্যাবস্থা করার দ্বায়িত্ব কারখানা মালিকের আর তদারকির দ্বায়িত্ব রাষ্ট্রের। পুঁজিবাদি রাষ্ট্রের যেখানেই এই সবের ন্যূনতম অধিকার যেখানে যতটুকু আদায় করা সম্ভব হয়েছে, তা হয়েছে শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও মালিক শ্রেণীকে বাধ্য করার মাধ্যমে, ক্রেতাদের দয়ায় কোন বেসরকারি শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে নয়। যে রাষ্ট্র ব্যাবস্থা শ্রমিকের এই ন্যূনতম অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারে না, সে রাষ্ট্রের চরিত্র আমুল পাল্টানো ছাড়া উপায় নাই।
ভবনের ফাটলে চুন-সুড়কি গুজে যেমন ভবন ধ্বস ঠেকানো যায় না, তেমনি রাষ্ট্র কাঠামোর বিশাল ফাটলেও গ্রামীণ বা ব্র্যাক পোশাকশিল্প শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠান গুজে দিয়েও রাষ্ট্র ব্যাবস্থার ধ্বস ঠেকানো যাবে না।
ব্রিটিশ এপারেল প্রাইমার্ক বা ফ্রান্সের জারা ছিল ধসে পড়া কোম্পানি গুলোর মুল ক্রেতা । লন্ডনেও বিক্ষোভ হয়েছে । নেটিভ রা দাবি করেছে প্রাইমার্ক জাতে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতি পূরণ দেয় । সচেতনতা বলতে তো এটাই হওয়া উচিত । কিন্তু ইউনুসিয় ফর্মুলায় এসব বহুজাতিক হাতিদের উপর চাপ প্রয়োগের কোন ব্যবস্থা নেই । যত চাপ সেটা সেই ভোক্তা দের উপর । ভোক্তা এবং শ্রমিক এই দুই জনই সবসময় থাকে রিসিভিং এন্ড এ । যত ঝড় ঝাপটা এদের উপর দিয়েই যায় ।
ইউনুস সাহেবের এরকম বেনিয়া আচরন নতুন কিছু নয় । নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে উনি মনসানটোর মত হাইব্রিড বীজ উৎপাদনকারী কোম্পানিকে দেশে ঢোকানোর চেষ্টা করেছিলেন । পারেন নি । পরে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মানে ওনার নোবেল প্রাপ্তির পরে আরও একবার চেষ্টা করেছিলেন । তাও পারেন নি ।তখন ডঃ ভান্দানা শিভার মত এন্টি গ্লোবালাইজেশন এক্টিভিস্ট (তাঁকে আমি সিড এক্টিভিস্ট বলি) ওনাকে দীর্ঘ চিঠিতে বুঝিয়েছিলেন এর পরিনাম কি হতে পারে । তত দিনে মনসানটোর কল্যাণে অন্ধ্র প্রদেশে বহু তুলা চাষী সর্বস্রান্ত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন । হন্তারক হিসেবে বহুজাতিক বীজ কোম্পানিটি তখন মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত । এস্টাব্লিশমেন্টের পক্ষে কাজ করা মিডিয়াও তখন বরাবরের মত যা করে ,মুখে কুলুপ এটে ছিল ।
কল্লোল মুস্তাফার লিখাটি ভাল লেগেছে । ৫০ সেন্ট দিয়ে যে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না ,মৃত্যু ঠেকান যাবে না এটা লেখক চমৎকার তুলে ধরেছেন । নোবেল লরিয়েটের বেনিয়া মগজে সেটা হয়ত ঢোকে না ।
ড. ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ থেকে পোশাক শিল্পে ব্যবসা করার ইচ্ছে হয়েছে।
সুন্দর ও যুগোপযোগি লেখাটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । বিশ্লেষণ ও মতামত বাস্তবিক ।
সহমত। বিদেশী ক্রেতারা এতটা বোকা নয় যে, ইউনুসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতকৃত পোষাকে ৫০ সেন্ট বাড়িয়ে দেবে । এ স্বপ্নে বিরিয়ানি খাওযার অবস্থা ।
ইউনুস হয়ত: বাংলাদেশ শ্রমিক আইন ২০০৬ পড়ে দেখেননি । বিদ্যমান এ আইনে সরকার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে শ্রমিকদের সমস্যার নিরসনে । মানছি অপ্রতুল আইনি ব্যবস্থা। তারপরে আমার মনে হয়..এ আইন শ্রমিকদের অনেক প্রোটেকশান দিয়েছে । শ্রম আইন ২০০৬ এ ন্যূনতম মজুরি “সহকারি অপারেটর বা হেলপারের ৩০০০ টাকা” । আজকাল এ টাকায় কোন পোষাক কর্মি পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ । ৩৩০০ টাকা কিংবা ৩৫০০ টাকার নিচে কোন পোষাক কর্মি পাওয়া যায় না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব আইন প্রয়োগ করা ও তার যথার্থ ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখভাল করা । জানি, ঠকানোর ব্যাপারটা গার্মেন্টস মালিকদের কাছে হাতের খেলা। তারপরে, বিভিন্ন বিদেশি ক্রেতাদের ”আচরণ বিধি বা কোড অব কন্ডাক্ট” বাধ্য করেছে গার্মেন্টস মালিকদের এবং শ্রমিকদের ঠকানো কিছুটা হলে ঠেকাতে পেরেছে । শ্রম আইন ২০০৬ এ শ্রমিকদের পাওনাদি ও নিরাপত্তার ব্যাপারে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে । মালিকপক্ষ রাষ্ট্রের কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠানের দুষ্টুচক্রের আর সেসব প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন দূর্নীতির সুযোগ নিয়ে থাকে। টাকায় ভবনের ছাড়পত্র মেলে,অগ্নি নির্বাপনের লাইসেন্স মেলে যথেষ্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকা সত্বেও । আইন হচ্ছে শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তার দিচ্ছে । মানার দায়িত্ব প্রত্যেক ব্যক্তির আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব তদারকির । মালিকদের আইন মানতে অনীহা কিংবা ফাঁকফোকর বের করে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার আর রাষ্ট্রের তদারকহীনতার কারণে সাম্প্রতিক অনাকাংখিত ও অমানবিক দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার ঘটে চলেছে । আইনি সুষ্ঠু প্রয়োগে এসব বন্ধ হতে পারে বলে আমি মনে করি। সেখানে ইউনুসের মত পুঁজিবাজারের স্বার্থরক্ষাকারীদের এসব বক্তব্য কুমিরের কান্না ছাড়া আর কিছুই নয় ।
পরিশেষে, আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
সেক্ষেত্রে ব্যবসাটাও সরকারের করা লাগবে যে। ব্যবসা করবে একজন, মজুরি নির্ধারণ করবে আরেকজন, এমন অর্থনীতি হয় না।
কল্লোল ভাইয়ের আরেকটা চমৎকার লেখা। আপনার লেখা সবসময়ই অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে পড়ি। মুক্তমনায় স্বাগতম।
ইনুসের মতন ব্যাবসায়ীদের মগজ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা বৃথা। ইনুসের এই বর্তমান পরামর্শের সাথে আমি মিল খুজে পাই হলমার্ক কেলেঙ্কারির। যেখানে আমাদের অর্থমন্ত্রী এ মাল এ মুহিত চুরির ঋণ ফেরত পাওয়ার জন্য আবারও ঋণ দেয়ার কথা বলছেন। আর ইনুস সাব এখানে ব্যাবসায়ীর ডাকাতি ঠিক করার জন্য আবার ব্যাবসায়ী নিয়োগের কথা বলছেন। তেলা মাথায় তেল।
আবারও স্বাগতম মুক্তমনায়। নিয়মিত আপনার লেখা পাব আশা করি।
ধন্যবাদ।
চমৎকার একটি লেখা। ইউনুস সাহেবের প্রস্তাব:
শুনতেই লাগে যেন ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। ইউনুস সাহেবের এই প্রস্তাবে দেখছি আবেগে বিগলিত হয়ে গেছেন অনেকেই। এটা আবার সাভারের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়ার কু মতলব নয় তো? তবে এই জায়গাটা ভাল লেগেছে-
ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয়তা বাড়াতে হলে শ্রমিকদের প্রশিক্ষন ব্যবস্থা ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর দিকে জোর দিতে হবে। এতে শ্রমিক তার শ্রমের ন্যায্য মূল্য আদায় করে নিতে আরো শক্তি পাবে।