অশান্ত পৃথিবী ভাববাদের কারনে। আদি কাল থেকে ভাববাদীরা তাদের স্বার্থে তাদের বানানো কল্প কাহিনী গুলোকে কথিত ঈশ্বররিক হিসাবে দাবী করে, সে গুলো মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে ঈশ্বরীক প্রেরীত বা ঈশ্বরয়ের (কথিত) প্রতিনিধি হিসাবে দাবী করে সমাজে নিজেদের স্থান করে নেন। তাদের দাবীর স্বপক্ষে সমাজের মধ্যে কিছুই উজবুক শ্রেণীর মানুষকে তারা খুজে পান, যাদের সহযোগীতায় ভাববাদ প্রসার লাভ করে। গুরুরা প্রতিষ্ঠা পান সমাজে।
পৃথিবীতে প্রচলিত ভাববাদ গুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনুুসারীগন নিজ নিজ ভাববাদকে একান্ত আসল মনে করে, অন্যকে ঘৃনার চোখে দেখে বা অবজ্ঞা করেন। ভাববাদ গুলোর প্রধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে, পৃথিবীতে চলছে চরম অস্থিরতা চলছে প্রতিযোগীতা। প্রতিযোগীতা মুলতঃ নিজের প্রধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে চলে এসেছে সন্ত্রাস আর সন্ত্রাসী কার্যক্রম তথা খুন খারাপী, ধর্ষণ, লুন্ঠন। ভাববাদ গুলোর সন্ত্রাসী কার্য কলাপে পৃথিবীতে এক মানুষ আর এক মানুষের শক্ররুপে দাঁড় হয়েছে। নিজ ভাববাদ রক্ষার জন্য অনুসারীরা নিজের জীবন কে বলিদান করতে প্রস্তুত। যাহার মুল মন্ত্র ভাববাদী গুরুদের মতবাদ যাহা অনুসারীদের মধ্যে ঐশ্বরীক বানী হিসাবে চালিয়েছেন।
উদাহরণ স্বরুপ ঃ- সনাতন ধর্মে আছে যে ক্ষত্রিয় স্বজাতী, স্বর্ধম রক্ষার্থে যুদ্ধ করে, প্রাণ বির্সজন দেয়। সেই ক্ষত্রিয় সৌভাগ্যবান। সে বিনা বিচারে অনাদি অনন্তকাল স্বর্গ সুখ লাভ করবে।
ইসলামে তথা আল কোরানে নাস্তিক নাফরমান, কাফের, বেদীন, বিধর্মী মোশরেক বধে উজ্জীবিত করা হয়েছে। তাদের মতদর্শে অন্যরা ইসলামদের বা আল্লাহর শক্র তাদেরকে হত্যা করা কোন প্রকার অবৈধ কাজ নয় বরং ধর্মীয় রক্ষার কাজ আর ইসলামের শক্রকে নিধনে যুদ্ধ করলে শহীদ গাজী রুপে রোজ হাসরের মাঠে তাদের কোন বিচার হবে না সেই ব্যক্তি বিনা বিচারে শহীদ গাজী হিসাবে বেহেস্তে প্রবেশ করবে এবং অনাদি অনন্তকাল বেহেস্তে সুখ ভোগ করবে। এই বানীগুলো হতে মানুষ উগ্র মৌলবাদীতে পরিনত হয়েছে।
পৃথিবীতে প্রচলিত ভাববাদ গুলো এভাবেই মানুষকে অনুপ্রানিত করেছে, স্ব-মতার্দশকে রক্ষার নিমিত্তে।
স্ব-স্ব অনুসারীদের এই সব নির্দেশনা দিয়ে অতি মাত্রায় সন্ত্রাসীতে পরিনীত করা হয়েছে। যার ফলশ্র“তিতে পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশী মানুষ খুন, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের স্বীকার হয়েছে ও চরম ভাবে মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
আদিযুগ ও মধ্য যুগের প্রমাণ ইতিহাসে পাওয়া যায়। আদিযুগ হতে সম্প্রদায়িক শক্তি গুলোর কাছে সাধারন মানুষ ছিল অসহায়। যাহা বর্তমান সময়েও বিদ্যমান, কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। যেমনঃ- বর্তমান সময়ে সম্প্রদায়িক শক্তির কিছু অনৈতিক তথা মানবতা বিরোধী কার্যকলাপে সাধারন বিবেকবান মানুষ, প্রতিবাদী হয়েছেন।
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর অনেক দেশ সম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবং মানবতার স্বপক্ষে। মানবতা বাদী দেশ বা মানবতা বাদী মানুষ শান্তির প্রতীক। তার পরেও সম্প্রদায়িক শক্তির নির্লজ্জ উজবুক নৃত্যে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় অনেক বিবেকবান মানুষ। এত কিছুর মধ্যেও অনেক মানবতা বাদী মানুষ থেমে নেই মৃতে্যুর ঝুকি নিয়েও সোচ্চার হচ্ছে এটা আশার কথা।
সম্প্রদায়িক অপশক্তি গুলো পৃথিবী নামক গ্রহটিকে তাদের স্বার্থে সব সময় অশান্ত করে রেখেছে। মানুষকে চাপের মধ্যে রেখেছে। মানুষ যাতে স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে না পারে তার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখছে। ঐ অপশক্তি গুলো সব সময় মানবতাকে পদদলিত করেছে।
অপশক্তি গুলোর আদি বা মধ্য যুগের কর্মকান্ডের নমুনা স্বরুপ ভারত উপ-মহাদেশ বিভক্তি কালে দেখা গেছে সম্প্রদায়িক অপশক্তি গুলোর চেহারা। সাধারন মানুষকে ধর্মের নামে উস্কে দিয়ে কিভাবে তাদের ফায়দা হাসিল করেছে। এই অপশক্তির ঘৃন্য কার্যকলাপে এই উপ-মহাদেশের অগণিত মানুষ তাদের জানমাল খুয়েছিল, অগণিত নারী তাদের সন্তান হারিয়েছেন, অগণিত নারী ধর্ষিত হয়েছে, যা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।
ভারত উপ-মহাদেশ বিভক্তি কালে অগণিত সাধারন মানুষের অপরিমেয় ক্ষতি হয়। ভারতে অবস্থানরত মুসলমান এবং পাকিস্তানে অবস্থানরত হিন্দু সম্প্রদায় নিজদের জন্ম ভুমিতে সংখ্যা লঘু হয়ে দুই নম্বর নাগরিক হিসাবে বসবাস করতে থাকে, আর একের প্রতি অন্যের হিংসা বিদ্বেষ বাড়তে থাকে। ফলে সম্প্রদায়িক শক্তি লাভবান হয়। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সম্প্রদায়িকতাকে পুজি হিসাবে ব্যবহার করে, নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার প্রয়াস চালায়।
সম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তানের জন্ম হলেও পাকিস্তানের দুইটি অংশ আলাদা আলাদা ভৌগলিক পরিবেশে অবস্থিত। ভাষার দিক দিয়েও আলাদা এবং পাকিস্তানের দুটি অংশের দুরত্ব প্রায় ১১০০ শত মাইল তার পরেও এই দুটি অংশ নিয়ে পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়ছিল তা শুধু মাত্র মৌলবাদের কারনে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল মুসলমান এদের ধর্ম ইসলাম। ধর্মকে পুজি করে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি বাঙ্গালীকে শোষণ করে আর সংখ্যা গড়িষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরা তাদের ভাষা উর্দূকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার ঘোষণা দেন, ফলে ৫২ সালে ২১ ফেব্র“য়ারীর সুত্রপাত ঘটে। মুলতঃ আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ রুপকার হচ্ছে এই অমর ২১ শে ফেব্র“য়ারী। ২১ শে ফেব্র“য়ারীর শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই দিবসটি এখন আর্ন্তজাতীক ভাবে মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা বাঙ্গালীর গর্ব। গর্ব করি ভাষা শহীদ বরকত, ছালাম, রফিক, শফিক, জব্বার ও নাম না জানা আরো অনেক শহীদদের নিয়ে।
ভাষা শহীদরা বাংলাদেশের জাতীয়বীর। ভাষা আন্দোলন হতে স্বাধীনতা আন্দোলন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ধর্মকে পুজি করে এদেশীয় দালালরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের পক্ষ অবলম্বন করে, স্বাধীনতাকার্মী অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। এদেশীয় দালালরা খুন, ধর্ষণ, লুটপাটে পাকিস্তানীদের সহায়তা করে। স্বাধীনতাকামী মানুষকে তারা ইসলামের শক্র হিসাবে আখ্যায়িত করে অকথ্য নির্যাতন চালায়, হিন্দু মুসলমান হিসাবে নয়। ক্ষমতার জন্য পাকিস্তানীরা এদেশীয় দালালদের কাজে লাগায়, ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে। পাকিস্তানীরা ইসলামী মৌলবাদী তথা জঙ্গীবাদীদের জন্ম দেয়।
ভারতবর্ষে দেখা যায় হিন্দু মৌলবাদীদের হিংস্র তৎপরতা। ভারত বিভাগের পর সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর চলে হিন্দু মৌলবাদীদের ধর্ষণ, হত্যা ও লুন্ঠন। মৌল বাদের হিংস্র খেলায় মানবতা বাদীরা হয়ে যায় অসহায়। মৌল বাদীরা ক্ষমতার নেশায় এমন কোন অন্যায় কাজ করতে পারে না যাহা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।
২০০২ইং সালে ভারতের গুজরাটে সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২০০০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। এই সম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারন হচ্ছে, গুজরাটের একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে ৫৯ জন হিন্দু, তীর্থযাত্রীকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার জন্য করাদায়ী তা এখনো যানা যায় নি। কিন্তু হিন্দু মৌলবাদীরা এর জন্য সংখ্যালঘু মুসলমানকে দায়ী করে দুই হাজারের অধিক মুসলমানকে হত্যা করে। অসংখ্যা ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গুজরাটের মুসলমান সম্প্রদায় কি ঐ নারকীয় হত্যা কান্ডের বিচার পেয়েছে? সম্প্রদায়িকতার কারনে তারা আজো ভয়ভীতির মধ্যে জন্ম ভুমিতে বসবাস করছেন। এ বিষয়ে বেশী কিছু করতে গেলে আবার তাদের উপর আক্রমন নেমে আসতে পারে কিংবা আসবেও।
গুজরাটের দাঙ্গার সময়ে মুখ্য মন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ স্থানীয় নেতা। তিনি হিন্দু মৌলবাদী চেতনাকে কাজে লাগিয়ে ভারতের প্রধান মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন হতেও পারেন। নরেন্দ্র মোদির কার্যকলাপে মনে হয় তিনি উগ্র হিন্দু মৌলবাদী। বিভিন্ন তথ্যে জানা যায় এই নরেন্দ্র মোদি গুজরাট দাঙ্গার মুল নায়ক। তিনি ট্রেনে আগুন ও তীর্থযাত্রীদের হত্যার দায়ভার সংখ্যালঘু মুসলমানতের উপর চাপিয়ে দিয়ে সংখ্যাগুরুদের উস্কে দেন। সনাতন ধর্ম রক্ষার রক্ষ হিসাবে আর্বিভূত হন।
গুজরাটের ঘটনাটি ইহুদি ও নাৎসীদের মধ্যে সংখ্যাটি একটি ঘটনার কথা সরন করে দেয়। ঘটনাটি এই রুপ ১৯৩৮ইং সালের নভেম্বরে নাৎসীদের হাতে উৎপীড়িত, ইহুদি পরিবারের এক যুবক প্যারিসে একজন জার্মান কুটনৈতিক কে গুলি করে হত্যা করে, ফলে সেখানে গোটা ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালানো হয় এবং অনেককে হত্যা করা হয়, ঘরবাড়ী, ধর্মশালা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেটি ছিল ১টা পরিকল্পিত কাজ। ধর্মীয় অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে উম্মুক্ত জনতাকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঐ দাঙ্গায়। ভারতের গুজরাটের ঘটনাটিও তেমনি সুপরিকল্পিত নাটক। সস্তায় জনপ্রিয়তা লাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে মৌল বাদী রাজনীতি। এখানে দেশ প্রেমের দরকার নেই। বর্তমানে পৃথিবীতে মৌলবাদীরা খুবই তৎপর, তারা ধর্মের নামে অর্ধমের কাজ করে যেমনঃ- খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে অনুসারীগনকে বুঝানো হয়, ওরা বিধর্মী। মৌল বাদের নিকট মানবতা অসহায়, আদিকাল হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত। সম্প্রদায়িক অপশক্তি, মানুষকে পদদলিত করে, তাদের ক্ষমতা অর্থ প্রতিপত্তি লাভের জন্য একান্ত ভাবে তারা তৎপর।
পৃথিবীর সকল সংঘটিত ঘটনার মুলে ক্ষমতা, অর্থ, প্রতিপত্তি ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারন মানুষ থাকে অসহায়। প্রতিবাদের ক্ষমতা না থাকলে বাধ্য হয়ে খাঁচায় বন্দি পাখির মত পোষ মানতে হয়। আরব, মিশর, আফ্রিকা, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, স্পেন, বৃটেইন, চীন, তুরস্ক, মিয়ানমারে সংঘটিত সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কত নিরীহ মানুষকে প্রান দিতে হয়েছিল তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নাই। সব হত্যার মুলে উগ্র মৌলবাদী অপশক্তি জড়িত।
নিখুত নীল নকশার মধ্যে ঘটনা গুলোর সুত্রপাত। পর্দার আড়াল থেকে নির্দেশনা আসে। কিন্তু নাটের গুরুরা প্রচার করে থাকেন যে, ইহা মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিক্রিয়া। ঘটনার নায়কেরা সব সময়েই আজ জনতার কাঁধে নিজেদের দোষ চাপিয়ে দিয়ে সাফাই গান, তারা কোন দিন নিজেদের ঘাড়ে দোষ নেন না।
১৯৭১ইং সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকর্মী মানুষকে নির্বাচারে হত্যা করা হয়। এদেশের হাজারো মা বোন ধর্ষিত হয়, পাকিস্তানী আর্মি এবং তাদের দোসর আলবদর রাজাকারদের দ্বারা। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ৯ মাসের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনতা যুদ্ধে এত মানুষ হত্যা কখনো কোথাও দেখা যায়নি একমাত্র ভিয়েতনাম ছাড়া।
স্বাধীনতা লাভের চার বছরের মধ্যে পরাজিত শক্ররা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নিঃসংশ ভাবে হত্যা করে, পুনরায় ক্ষমতা দখল করে। এদেশের রাজনীতির অনেক পালা বদলের পর বঙ্গবন্ধু জৈষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনা বিপুল পরিমান ভোটে জয়ী হয়ে ২য়বারের মত প্রধান মন্ত্রী হন। তাঁর দেওয়া নির্বাচনী অন্যতম ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। এরই ধারা বাহিকতায় এলাকা ভিত্তিক যুদ্ধপরাধীদের তালিকা করে আর্ন্তজাতিক মানে বিচার ট্রাইবুনাল গঠন করে বিচারের কার্যক্রম শুরু এবং মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এর বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও লুটপাটের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইবুনাল তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন।
২য় পর্যায়ে জামাতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন আর এই আদেশ জন্ম দেয়, শাহবাগের ঐতিহাসিক আন্দোলনের। আন্দোলনকারী নতুন প্রজন্মের একটাই প্রশ্ন যে, কত মানুষকে হত্যা ও ধর্ষণ করলে মৃত্যু দন্ডের আদেশ হয় ?
শাহবাগ চত্বরে মানুষ জেগেছে তার অস্তিত্বের প্রয়োজনে, তারুন্য উঠেছে জেগে। শাহবাগ চত্ত্বরের প্রজ্জ্বলিত, শিখা ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বে। বিশ্ব হতবাগ ! তরুনরা ফিরছে না ঘরে। তাদের একটাই দাবী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি।
আজ মানুষ জেগেছে মাতৃভূমির সম্মান রক্ষাথের্, মানুষ জেগেছে খুনি ধর্ষক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে মুক্তি যুদ্ধের চেতনায়। মানুষ চায় যুদ্ধাপরাধীদের সর্ব্বোচ শাস্তি “ মৃত্যু দন্ড ”। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফ্ব্রে“য়ারী যেমন স্বাধীনতার মাইল ফলক, তেমনি শাহবাগ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির মাইল ফলক যাহা মৌলবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীর ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ। এত মানুষের দীর্ঘ দিনের লাগাতর অবস্থান, দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার ঘোষনা মনে হয় পৃথিবীতে বিরল। প্রতিবাদীদের সুরে সুর মিলিয়ে আমারো গাইতে ইচ্ছে হচ্ছেঃ-
১
তুই রাজাকার, তুই রাজাকার, দ্যাখরে এবার দ্যাখ,
ঘৃনার আগুনে পুড়ছে দেশ, জ্বলছে শাহবাগ,
শাহবাগের তরুন সেনা, মানে না আর কারো মানা,
বুঝে নিয়ে যত পাওনা, হিসাব শত ভাগ। ঐ
ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, খুনি ধর্ষকের ফাঁসি চাই,
ঐ দেখনা শ্লোগানে, অগ্নিবানে কাঁপছে শাহবাগ। ঐ
২
ক্ষমা নেই ক্ষমা নেই, ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই
বোনের ধর্ষক, ভাইয়ের খুনী, দেশ মাত্রিকার শত্র“ জানি॥
হৃদয় জুড়ে শপথ নেই, ফেরার কোন পথ নেই,
শাহবাগের তরুণ সেনা, বর্জ্র কন্ঠে শ্লোগান দেই।
ফুটছে ফুল শাহবাগে, বীর রাজিবের রক্তরাগে,
আয়রে তরুণ ছুটে আয়, রক্ত ছুয়ে শপথ নেই।
দেশদ্রোহী রাজাকার, এবার তুই বাংলা ছাড়।
অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ি, বাঙ্গালী সব ভাই ভাই।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম ভীরু কিন্তু সম্প্রদায়িক নয়। এদেশের মানুষ সম্প্রদায়িকতাকে ঘৃনা করেন। এদেশের হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে পথ চলেন। একে অপরকে ভাই হিসাবে সম্বোধন করেন। সামাজিক ভাবে বন্ধুত্বর সুত্রে আবদ্ধ হন। সুখ- দুঃখে একে অপরের অংশীদার হন। মৌল বাদীরা ইহা বিদ্বেষের চোখে দেখে। পৃথিবীটা উগ্র মৌলবাদের কারনে দিন দিন অশান্ত হচ্ছে। মৌলবাদীরা তাদের স্বার্থে গোলযোগ সৃষ্টি করে চলছেই। ভারত পাকিস্তান, আফ্রিকা, ইউরোপের ঘটনা সমুহ, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়া ও চীনের সংখ্যালঘু মানুষের সামাজিক অবস্থানে ইহা প্রমানিত ।
মৌলবাদীদের ধৃষ্টতা বর্তমান আধুনিক সমাজ ব্যবস্থাও কম নয় যেমন ঃ ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত আসামী মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে নিয়ে এদের ধৃষ্টতা লক্ষনীয়। আজকের এই বিজ্ঞান সচেতন সমাজেও তারা আদিমযুগের মৌলবাদী উপ্যাখ্যান তৈরী করে, এই দন্ড প্রাপ্ত আসামীকে চাঁদে দেখা গেছে মর্মে অপপ্রচার করে এবং পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। তাদের অপ-প্রয়াসে হাসতেও লজ্জা লাগে। আর একটা আমার নিজস্ব মন্তব্য এইরুপ, হয়তো বা ভারতের সনাতন পন্থি মৌলবাদীরা নরেন্দ্র মুদিকেও, শ্রী কৃষ্ণ, শ্রীরাম চন্দ্রের সাথে রথে চড়ে উড়ে বেড়ার কল্প কাহিনী তৈরী করে ভক্তদের উৎসাহিত করতে পারে, মৌলবাদীদের দ্বারা অসম্ভব কিছুই না। কারন ইহা মৌলবাদীদের চরিত্র। পৃথিবীতে কোন নিরপেক্ষ মানুষের জন্ম হয় নি। নিরপেক্ষ কথাটি ও এক প্রকার প্রতারনা। এ কথাটি দ্বারাও মানুষকে প্রতারনা করা হয়।
পৃথিবীতে প্রচলিত ভাববাদ (ধর্ম) গুলোর কারনে আজকের পৃথিবীর এই দশা। সর্বক্ষেত্রে মৌলবাদের হিংস্র থাবা। স্বাধীন মতামত প্রকাশের উগ্র মৌলবাদের নিলর্জ্জ হস্তক্ষেপ। ভাববাদী গুরুরা আদিকালে পেশী শক্তি ও উজবুক শ্রেণীর মানুষকে ব্যবহার করে সাধারন মানুষকে ছলনার মাধ্যমে ঠগিয়েছেন। আর বর্তমান সময়েও ঐ ধারাবাহিকতা চলছে। তাই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই ভাববাদ (ধর্ম) গুলো পৃথিবী হতে বিদায় নিলে পৃথিবীটা একটা শান্তি-সুখের নীড়ে পরিনত হতো। প্রতারনা তথা মহা-প্রতারনার সমাপ্তি ঘটলে মানুষ দেখতো সত্যের আলো (চলবে)।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার ঃ – বাংলার প্রক্ষাত দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের নিকট আমি কৃতজ্ঞ।
ভারত একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ । আধুনিক ভারতবাসী ধর্ম নীয়ে মাতামাতি পছন্দ করে না ।
আপনার সব কথা মানলাম, সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গার মত মূর্খামি পৃথীবিতে আর নেই। তবে আপনার কিছু কিছু কথার প্রতিবাদ না করে পারছিনা। সনাতন ধর্মে কোথাও এই দাঙ্গায় উতসাহিত করা হয় নি। আপনি যে স্বধর্মের কথা বলেছেন, তা কখনই কোন ধর্মের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গীতায় কোথাও কোন ধর্মের কথা উল্লেখ করা হয় নি। আর, এখানে স্বধর্ম বলতে বোঝানো হয়েছে মানুষের নিজ স্বভাব জাত ধর্ম। মানে আপনি আপনার যোগ্যতা আনুযায়ী যে পেশা(অবশ্যই ক্ষতিকর পেশা নয়) অবলম্বন করবেন, ঐ পেশার সংস্লিষ্ট কর্তব্যগুলোকেই স্বধর্ম বলা হয়েছে। আর স্বধর্ম রক্ষার্থে মৃত্যুর প্রসঙ্গে যা বললেন, তা হল, ধরুন কেউ পুলিশ এর চাকরি করে, তো তাকে নিশ্চিত ভাভেই সরকারের গোলামী করতে হবে, ঐ গোলামী(!!!!!!) করতে যদি তার মৃত্যু হয়, সেই মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। আর ভাই, ধার্মিকদের কিছু বাড়তি পাগলামীর(!!!!!) জন্যই ধর্ম পচারকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, এটা আমি মানি। তবে এতে ধর্ম কি দোষ করল?
আর ধর্মের বাইরে রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে পৃথীবিতে কি কম হত্যাকান্ড হয়েছে? সেগুলোকে কি বলবেন? ওগুলোর দায়ভার কে নেবে? আমি কোনও ধর্মের সাফাই গাইতে আসিনি, কারণ ধর্ম প্রচার করতে যে পাত্র অপাত্র বিচার করতে হয়, এটা আজকের অন্ধ ধার্মিকগণ ভুলেই হয়তো গেছে।
নুরুল হক সাহেব,
এই ভাবে বল্লে তো হবে না । রেফেরেঞ্চে দিয়ে বলতে হবে। ছাড়ুন রেফারেন্স।
যখন এই সমস্ত কথা সনাতন ধর্মে লেখা হয়েছিল তখন তো একটাই ধর্ম ছিল- সনাতন ধর্ম। তাহলে কোন ‘স্বর্ধম’ রক্ষার্থে যুদ্ধ করার কথা এখানে বোঝানো হছে? সনাতন ধর্মে যখন এই সব লেখা লেখি হয়েছে তখন তো ইহুদি,খ্রিস্টিান বা ইস্লাম আসে নাই।
তাহলে এই স্বর্ধম মানে কি?
আপ্নার উত্তরের আশায় রইলাম।
কিছু কিছু জায়গায় আপম্নি একপেশে ভাবে বিচার করেছেন। যেমন-
জানা গেছে ভাই। গোধ্রা ও আশে পাশের মুস্লিমরাই এর সুত্র পাত করেছিল। কি দরকার ছিল এই সব করার? আর যে সনাতন ধর্মের লোকেরা পরে ্মুসল্মান্দের নির্দয় ভাবে হত্যা করেছিল (যার জন্যে আজ ও আমি ধিক্কার বর্ষণ কোরি)তাদের মধ্যে ছিহ্নিতোরা আজ জেলের ভাত খাচ্ছে এবং অনেকের ফাঁসির রায় ঘাড়ে নিয়ে দিন কাটাছে। অনেক হিন্দু ছাড়াও পেয়ে গেছে উপযুক্ত প্রমানের আভাবে ।
আরে ভাই ভারতে তো সংখা লঘুদের সপক্ষে বিচার হয়। বাংলাদেশে (এবং পাকিস্তানে) তো লঘুদের সপক্ষে কোন বিচার হয় না। না হলে কেউ (বাংলা দেশের হিন্দু) কি চোদ্দ পুরুষ যেথায় মানুষ সেই জন্ম ভুমি ত্যগ করে নাকি? পারবেন আপনি আপ্নার মাতৃভুমিকে চির বিদায় জানাতে?
লিখে জান। শুভেচ্ছা।
নুরুল বাবু – আপনার লেখার নিম্নলিখিত অংশের সাথে একমত নই
প্রথম কথা – কারা আগুন দিয়েছিল – এ সম্পর্কে বিশদ দিলুম – আগুন লাগানোর পর হাজি-বিলাল (একজন নির্বাচিত পুরপিতা ) এবং অন্যান্যরা দমকল কে ঢুকতেও দেয়নি – পরে তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান।
দ্বিতীয়তঃ বেস্ট বেকারি, গুলবর্গা সোসাইটি সহ আরো অনেক মামলায় দোষী দের সাজা হয়েছে।
তৃতীয়তঃ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সময়ে – দশ শতাংশের কম (সমগ্র জনসংখ্যা-র) মুসলিম ছিল – আজ সেটি ১৫ শতাংশ। ভারতবর্ষের সমগ্র জনসংখ্যা-র ভিত্তিতে – এই বৃদ্ধি নেহাত কম নয় – আর খুব ভয়ভীতির মধ্যে সেটি সম্ভবপর নয়। একটি উদাহরণ দিলে হয়তঃ ব্যাপারটি সহজবোধ্য হবে – স্বাধীনতার সময়ে (পশ্চিম) পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) এ যথাক্রমে ১২ এবং ৩৩ শতাংশ হিন্দু ছিল – আজ সেই সংখ্যা গুলি ১ ও ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। The proof of pudding is in eating.
পরিশেষে – ৭০ বছরের ইতিহাস কে এরকম ভাবে গুজরাত বা বাবরি মসজিদ এর মত বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে বিচার না করলেই খুশি হতুম – ভারতীয় হিসেবে – তবে একথা ভাববেন না যে ভারতে দাংগা হাংগামা হয় না – হয় কিন্তু সেগুলি নিয়ে ও রাজনীতি হয়। ১৯৮৪ সালে ৪ থেকে ৫ হাজার শিখ হত্যা হয়েছিল – তার কথা কেউ বলে না – কারণ শিখ সম্প্রদায় সমগ্র জনসংখ্যা-র ২ শতাংশ মাত্র। সেরকম কারো সাজাও হয়নি (কারণ দাংগাটি ছিল রাজনৈতিক – সাম্প্রদায়িক নয়)।
@বকধার্মিক,
আর একটি কথা – কাল চোখে পড়েনি – গুজরাত দাঙ্গায় – ২০০০ / দুই হাজার মত সংখ্যালঘু নিধন হয়েছিল। ২০০০ হাজার (= ২ মিলিয়ন নয়)। :-O
তাতে “নমো”-র দোষ কিছুই স্খালিত হয় না যদিও – তবুও “নমো” = “টিক্কা খান” বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে – তাছাড়াও এতে উনি বেশি করে উৎসাহিত হয়ে পড়তে পারেন । 😉
@বকধার্মিক,
যে ২০০০ হাজার মানুষ দাঙ্গায় নিহত হয়েছিল তারা কিন্তু নিরিহ মুসলমানlতাদের সাথে ইসলামি জঙ্গিবাদের কোন সম্পর্ক ছিল নাl
রাজনীতির সাথে সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক রয়েছেlরাজনৈতিক চাল হিসেবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়lতাই মোটা দাগে এক দেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে আরেক দেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তুলনা করে লাভ নেইl
@জেন পার্থ,
একমত
আমি ‘ঠিক’ তুলনা করিনি – মূল লেখাটিতে একটি লাইন এর প্রসঙ্গে – দ্বিমত জানিয়েছিলুম মাত্র।
ভয়ভীতি – একটি ব্যাক্তি-নিষ্ঠ অনুভূতি – সেটি তথ্য দিয়ে নাকচ করা যায় না – তাই একটি জাব্দা তুলনা করেছি মাত্র – লাভ লোকসান এর হিসেব না করেই করেছি। এটি আপত্তিজনক মনে হলে – আমি দুঃখিত – ‘কথাটি ফেরত নিলুম’।
তবে ভারত সম্পর্কে আমার অবস্থান একই রইল – মূল লেখাটিতে ওই লাইন এর প্রসঙ্গে বলতে পারি – ভারত হচ্ছে এশিয়া-র একমাত্র (আমার জ্ঞানতঃ) – যাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্রকাশ্যে এবং সর্বসাধারণ্যে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় কে ভয়ঙ্কর হুমকি দিতে পারে – একটি অতুলনীয় বক্তব্য পেশ করলুম – যদি ভুল হয় – লিঙ্ক সহ ধরিয়ে দিলে বাধিত হব। তবে ভয়ভীতি-র প্রশ্নটি যে কাল্পনিক – তা নিশ্চয় প্রমাণ হল।
শেষে বলি – যে দেশ এ থাকি না – তার সম্পর্কে লিখতে গেলে – পল্লবগ্রাহীতা বাঞ্ছনীয় নয়। তাও আবার এইখানে। এখানে লেখার মান যাতে উন্নত হয় – সেই জন্যই আমার এই সমালোচনা।
বিশ্বাস বড় ভয়ন্কর জিনিস ,যেটা আমরা এখন বাংলার পথে প্রান্তরে অহরহ দেখতে পাচ্ছি ৷
(Y)
যেই দিনকাল এসেছে নিজের কথাগুলোকেও থার্ডপার্টি দিয়ে বলাতে হবে। 🙂
@বেঙ্গলেনসিস,
(দুঃখিত ভুল পোস্টে মন্তব্য পড়েছে।)