২০১৩ সালের ১১ই মার্চ এ দেশের উপর একটি বিরল মুহূর্ত নেমে আসে, যখন সবাই একই সুরে কথা কয়ে উঠে, এক চোখে দেখতে শুরু অতি জীবন্ত আর জান্তব একটি ঘটনা! আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার মুখ ফুটে একই কথা: তারা একটি মহানাটক অবলোকন করেছেন। আশ্চর্য হলেও সত্য, চৌদ্দ-আঠার ভেদাভেদ লাটে উঠে, তারাও এক চোখে দেখেন ব্যাপারটা!
সত্যি বলতে কি, চৌদ্দ দলীয় জোটের সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে নেতা বা বুদ্ধিজীবী – সবাই আনন্দে আটাখানা হয়েছেন নয়াপল্টন নাটক দেখে, কারণ দেশের মানুষ বিরোধী পক্ষের সাজানো নাটক এবার হাতে নাতে ধরে ফেলেছে। বিএনপি যে নিজেরাই ককটেল ফাটিয়ে নিজেদের সমাবেশ পণ্ড করে আর পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে হরতাল দেয়ার পায়তারা খোঁজে, তা বুঝে ফেলেছে দেশবাসী! বিএনপির অফিস থেকেই পাওয়া গেছে গণ্ডায় গণ্ডায় ককটেল। আর বোকা বানানো যাবে না দেশের ১৬ কোটি দর্শককে!
ওদিকে আঠার দলীয় জোট সমর্থক, কর্মী, নেতা বা বুদ্ধিজীবীরাও আনন্দে দিশেহারা! কারণ দেশের মানুষ এবার স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করল সরকারের ফ্যাসিবাদী চেহারা। আগে জনগণকে বলে বিশ্বাস করানো যেত না, এখন তো তারা নিজের চোখেই দেখতে পেল, সাদা পুলিশের দল কি করে ককটেল ফুটিয়ে পণ্ড করে বিরোধী দলের সমাবেশ, আর নিজেদের সাপ্লাই করা ককটেলের সূত্র ধরেই কিভাবে গ্রেফতার করে বাঘা বাঘা সব লিডারকে! ১৬ কোটি চোখকে আর ফাকি দেয়া যাবে না সরকারের ভাড়াটে মিডিয়া দিয়ে! হুম!
এভাবে জাতির জন্য পরম আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করে এক সুরে কথা কইতে থাকেন আমাদের পথ ও বুদ্ধি নেতারা, এক চোখে দেখতে থাকেন একই নাটক! আমরা ষোল কোটি দর্শকও নাটক দেখে যাচ্ছি পরম সুখে, শিশুরা লেখা-পড়া ভুলে নাটক দেখছে, ব্যবসা-বাণিজ্য-কারাখানা-অফিস-আদালত সব কিছু ঝিম মেরে যাচ্ছে এ নাটকের অমোঘ আহবানে। কিন্তু কি দোষ কোমল-মতি শিক্ষার্থীদের অথবা তাদের ব্যাবসায়ী বা চাকুরে পিতা-মাতার? এমন জমজমাট নাটক যে, কেউই পারে না এর টানটান আকর্ষণকে উপেক্ষা করতে! তাকিয়ে থাকে এক চোখে! এক চোখেই কিন্তু!
তবে আমাদের সৌভাগ্য হল, এমন ‘এক চোখে দেখার’ মত ঘটনা আরো ঘটে চলেছে, আমাদের অজান্তেই! যেমন: প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীগণ জাতির উদ্দেশ্যে একটি ওয়েক আপ কল অনেক আগে থেকেই করে যাচ্ছেন, আর তা হল: বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে! আশ্চর্য হল, আঠার দলীয় জোট থেকেও কিন্তু বলা হচ্ছে একই কথা: বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর ব্লু-প্রিন্ট বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে! সরকার বা বিরোধী দলের যেকোনো সাধারণ সমর্থকের কাছে গেলেও আমরা জানতে পারব এই আপ্তবাক্য: বাংলা হবে আফগান! সত্যি এ এক অদ্ভুত মিল! যখন জাতি চরমভাবে বিভক্ত, তখন এই ঐতিহাসিক ঐক্য মুগ্ধ না করে পারে না! তবে এও কি নাটক? বা নাটক নাটক খেলা? ১৯৫৭ সনের ১৭ অক্টোবর ‘পাকিস্তান টাইমস’ পাকিস্তানে বিদ্যমান রাজনৈতিক খেলার একটি চরিত্র তুলে ধরেন, যার সাথে বোধ করি আমাদের দেশের রাজনৈতিক খেলার কিছু মিল আছে:
প্রথমত, একই মুখ বার বার দেখা যায়। দ্বিতীয়ত যে জনগণের নামে এই খেলা চলে তাদের সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। স্বচ্ছ পুরুষ্কার হচ্ছে ক্ষমতা এবং এর বেদিমূলে নীতি অথবা আনুগত্যের বিসর্জন মহানকর্ম বলে বিবেচিত হয় না। যারা এ থেকে বঞ্চিত হয় তারা এর পুনরুদ্ধারে পাগল হয়ে যায়, যারা ক্ষমতা আঁকড়ে আছে, তারা মনে করে তা টিকিয়ে রাখতে পারবে।
বাংলাদেশে যে মৌলবাদের আবাদ ঘটিয়ে একটি আফগানিস্তানের জন্ম দিতে চলেছে বিএনপি-জামাত জোট, সরকারি দলের এ পুরনো অভিযোগ সবারই জানা। কিন্তু বিরোধী জোট একই কথা বলছে কি করে? তাদের এক বুদ্ধি নেতা সম্প্রতি টকশোতে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এভাবে: বাংলাদেশ ক্রমেই বিশ্বের একটি শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। শীতল যুদ্ধ পরবর্তি সময়ে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা সাম্রাজ্য তাদের প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসলামকে আর যেখানেই ইসলামি শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াবে, নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে তাকে! তবে কোন ইসলামি দেশকে আক্রমণ করার অজুহাত হিসেবে সেখানে গোলযোগ তৈরি করা হবে সুকৌশলে, যা আজ বাংলাদেশে করা হচ্ছে, উদ্দেশ্য: ইন্দো-ইঙ্গ-মার্কিন হামলা ত্বরান্বিত করা আর বাংলাদেশের অফুরন্ত তেল-গ্যাস ছিনিয়ে নেয়া!
এট্রু খেয়াল কইরা, আঠার দলীয় সমর্থিত ‘বাংলা হবে আফগান’ তত্ত্বে একটা নীল বইয়ের অস্তিত্ব রয়েছে। এই বইয়ের চ্যাপ্টারগুলোতে ধাপে ধাপে লেখা রয়েছে, কবে ওসামা বিন লাদেনকে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে কাজে লাগান হবে, কবে তাকে দিয়ে আল-কায়েদা বানানো হবে, কবে তালেবানদের ক্ষমতায় বসানো হবে, কবে লাদেনকে দিয়ে ৯/১১ অ্যাটাক করা হবে, কবে তালেবান দমনের নামে আফগান আক্রমণ হবে, কবে সাদ্দাম দমনের নামে ইরাক আক্রমণ হবে, কবে বাংলাদেশে ১/১১ ঘটানো হবে, কবে ভারতের মনমত সরকার বসানো হবে, কবে শাহবাগ তৈরি করা হবে, কবে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষদের উস্কে দিয়ে মাঠে নামান হবে, কবে শহীদ মিনার-মন্দির-মঠ ভাংচুর হবে ভারতের সহযোগিতায়, কবে বাংলাদেশে শুরু হবে গৃহযুদ্ধ, কবে বাংলাদেশ আক্রমণ করবে ইন্দো-ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী ইত্যাদি ইত্যাদি। আশ্চর্য হলেও সত্য, এই কথিত নীল বইতে আমলনামার মতই সবকিছু আগে থেকেই লেখা রয়েছে আর এমনটাই বিশ্বাস করা হয়! স্রষ্টার আমলনামায় যাদের পরিপূর্ণ আস্থা, তাদেরই আবার অগাধ আস্থা তথাকথিত আমেরিকান নীল বইয়ের উপর। খুব মজার, তাই না?
যাহোক, এভাবে বড় দুটি জোটই কিন্তু আবারও কথা কয় এক সুরে, ঘুমন্ত জাতিকে দেয় মুহুর্মুহু অ্যালার্ম কল: বাংলা হবে আফগান, এবার হও সাবধান! চোদ্দ জোট এখন জামাত ঠেকাতে চাইছে, আর তা করতে গিয়ে দ্বারস্থ হয়েছে অন্যান্য কট্টর জামাত-বিরোধী ইসলামি দলের! সত্য যে, জামাত-বিরোধী ইসলামি দলগুলোর নীতিমালা তালেবানি নীতিমালার সাথে মিল খায় বেশি, কিন্তু তাতে কি! ওদের তো ভোট নেই! জামাতের ভোট আছে! জামাত নির্মূল হলে আঠার জোট দুর্বল হয়, আর চোদ্দ জোট ফের ক্ষমতায়! আর এভাবেই বাংলার ঘাড় থেকে ছাড়িয়ে দেয়া যায় আফগান আসর! এই হল চৌদ্দ দলের তালেবরদের তালেবান বিনাশের অভুতপূর্ব ফর্মুলা!
এদিকে, আঠার জোটও বাংলাকে আফগান হতে দিতে চায় না, কারণ তা হলে তাদের এ সম্পদপূর্ণ দেশটা যে দখলে নেবে বিধর্মীরা! তো, একটাই উপায়: দেশের পুতুল সরকারকে ক্ষমতা থেকে হঠানো! কিন্তু এ পুতুল সরকারের সাথে ইন্ডিয়ার যে মিতালি, তা তো ছুটাতেই হবে! কি করা যায়? একটু ইন্ডিয়ার বন্ধু সাজার চেষ্টা করলে কেমন হয়? সঙ্গে ওবামাকেও একটা পত্র লেখা যায়! ওবামাকে যদি নিছক বন্ধুতার ছলেই এ দেশটিকে রক্ষা করার নিমন্ত্রন জানানো যায়, তাহলে কত খুশি হবেন ওবামেরিকা, ভাবা যায়? ইন্ডিয়া আর আমেরিকাকে যদি সরকারের পাশ থেকে সরিয়ে আনা যায়, আর কি সম্ভাবনা আছে যে, আ’লিগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে পারবে? এরপর নির্বাচনে বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে আঠার জোট ক্ষমতায় এলে বাংলাকে আফগান বানানোর সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়া যাবে! পাল্টে দেয়া যাবে সো-কল্ড পশ্চিমা নীল বইয়ের চ্যাপ্টার! আঠার জোটের তালেবরদের এ আরেক অব্যর্থ প্রেসক্রিপশন তালেবান নির্মুলের!
এভাবে আবারো চরম ও বিরল এক ঐক্য পরিলক্ষিত হয় দেশের দুটো প্রধান জোটের মাঝে! চোদ্দ জোট বাংলায় আফগানি ভুত ঠেকাতে সিদ্ধান্ত নেয় জামাত নির্মূলের, সেজন্য তারা মাঠে নামিয়ে দেয় জামাত-বিরোধী ইসলামি দলগুলোকে আর তাদের খুশি রাখতে খোলে ব্লগার খতমের এক শক্তিশালী মিশন! অন্যদিকে, আঠার জোটও বাংলায় আফগানি সংকেত দূর করতে মরিয়া হয়ে দ্বারস্থ হয় ইন্ডিয়ার, ওবামাকে জানায় উদার নিমন্ত্রণ এই ছবির মত দেশে, উনি এসে যেন কিছু করেন। রক্ষা কর বাবা-ওবামা!
পরিশিষ্টঃ
২০১৪ সালের মার্চ মাস। দুই জোটের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাও ঠেকাতে পারেনি বাংলার আফগান ভবিষ্যৎ। সবুজ বাংলায় এখন শুধু রুক্ষ আর কঠিন সব পাথরের স্তূপ! মরুভূমির তপ্ত বাতাস গায়ের চামড়া পুড়িয়ে দেয়। আর খেলে না বর্ষা-বসন্তের পাগলা হাওয়া! দিগন্ত বেয়ে নামে আগুনের হলকা! সোনার বাংলা এভাবে সত্যি একদিন শ্মশান হয়ে যায়!
তারা হা-এর পাশাপাশি মাঠে নামিয়ে দেয় খা-কে
ফলে, একটি ত্রিভুজ প্রেমের দ্বন্দ্ব -সংঘাতের জটিল আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়
বাংলা বর্ণমালা ও তার জনগণ।
তবে নাটক দেখার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি,
নাট্যকারদের মতো এমন নিষ্ঠুর প্রাণী পৃথিবীতে আর নেই।
——কবি নির্মলেন্দু গুণ
:hahahee: :hahahee:
একটা কথা বলি, খুরশিদ ভাই, তারা এক একজন তেজস্বী পুরুষ, শুধু নেত্রীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালে কোমল-মতি নারীতে রূপান্তরিত হন!
খালেদা জিয়া হচ্ছেন নীতিবিবর্জিতা এক মহিলা, যাঁরা নারী নেতৃত্ব ‘হারাম` মনে করে তাঁদেরকে রাজনৈতিক সহচর বানিয়ে রাজনীতি করেন এই ‘পর্দা না করা মুসলিম` মহিলা । যাঁদের নিয়ে তিনি রাজনীতি করেন তাঁরা খালেদাকে ‘সঠিক মুসলিম` হিসেবে মনে করেন কি ? কোন মুসলিম পুরুষ নাকি নারী নেতৃত্বে চলতে পারেন না, যাঁরা মুসলিম মৌলবাদীদের সাথে রাজনীতি করেন বাংলাদেশের সেইসব বিএনপি নেতাদের প্রতি জিজ্ঞাস্য – যদি তাঁরা পুরুষ হন তাহলে কি তাঁরা খাঁটি মুসলিম ? আর যদি তাঁরা খাঁটি মুসলিম হন তবে তাঁরা কোন লিঙ্গ ?
রাজনৈতিক নাটক মঞ্চায়নের উত্তম মঞ্চ এ বাংলাদেশ। ইদানিং বখালেদা জিয়ার অসংলগ্ন বক্তব্য শুনে দুঃখিত হওয়া ছাড়া আমাদের মত সাধারণ জনগণের আর কোন গতি নেই। তবে সরকারের কাছে আরও সুদৃঢ় পদক্ষেপ আশা করছি। এখানে আবার জনগন কিন্তু ক্ষুব্ধ।
যাহোক, রম্য লেখাটিতে বাস্তবতার প্রতিফলন ভাল লাগল।
@গীতা দাস,
দিদি শুধু বেজি আমাদের হতাশ করেননাই। হতাশ করেছেন হাসিনা আপাও। কাগুজে বাঘের মতন তিনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তর্জন গর্জন দিয়ে রাজনৈতিক মাঠ গরম রাখছেন। যে কাজটি সকার খুব সহজে করতে পারে তা করতে মাত্রাতিরিক্ত জল ঘোলা করছেন তারা।মাননীয় মখা সাহেব বলেছেন সারা দেশ চাইলে জামাত নিশিদ্ধ হবে। আআমার জানতে সাধ হয় সারা দেশ ক্যাম্নে চাইলে তারা বুঝবেন যে দেশের জনতা জামাত শিবির দেখতে চায়না। চোখ থাকিতে অন্ধ যারা তাদের চোখ খু্লবো কিভাবে জানি না। ব্যাপারটা এমন যে”খালেদার দেওয়া দুঃখে কাতর আর হাসিনার দেওয়া দুঃখে পাথর”।
@গীতাদি,
অনেক ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তব্যের জন্য।
আর বিরোধী নেত্রী ইচ্ছে করেই এগুলো বলেন, যাতে জামাতের কর্মীরা রাস্তায় জান দিয়ে তার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করে দিতে পারে।
ধরুন, আ’লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনল না। তখন সরকারকে যে গণআন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে নামাবে, তেমন তরো ডেডিকেটেড কর্মী বিরোধী নেত্রীর নেই। অথচ জামাতের কর্মীদের চটিয়ে রাস্তায় নামাতে পারলে, তার ভয়ানক সুবিধে! কারণ এই কর্মীরা যে কত ডেডিকেটেড তার প্রমাণ তারা ইতিমধ্যে রেখেছে! তারা পুলিশের সাথে সমানে যুদ্ধ করে যাচ্ছে, অনেক সময় পুলিশকেও অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখা যাচ্ছে এই কর্মীদের কাছে! সুতরাং, এদের হাত ধরে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চান না বিরোধী নেত্রী।
– বাকিটুকু বলে দেই। কাজেই জাতির ক্রান্তিলগ্নে আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজাকার বদর বলে গালিগালাজ, যুদ্ধপরাধী বিচারের নামে জাতিকে বিভক্ত করা চলবে না। জামাত শিবির নিষিদ্ধের দাবী তুলে উম্মার বিভক্তি ঘটানো চলবে না।
@আদিল ভাই,
ভুল বুঝলেন কেন, বুঝলাম না! উদ্ধৃতাংশটুকু তো বিএনপি-জামাতের দর্শন, তারা এভাবেই দেখতে অভ্যস্ত এবং এই ভাবনা থেকে তাদের মাথাতেও আসে ‘বাংলার আফগান সম্ভাবনা’। কিছুদিন আগে খুব সম্ভবত বিএনপির সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ বলছিলেন, বর্তমান সময়ে যে তান্ডব, সংখ্যালঘু আক্রমন – এগুলো জামাত করতে পারে না, যেহেতু জামাতের লাভ নেই! পাকিস্তান দূরের দেশ বলে তারও লাভ নেই! একমাত্র শুধু ভারতই আ’লীগকে দিয়ে করাতে পারে এসব, যেহেতু বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র হলে তাদের খুব সুবিধে হয়, বাংলাদেশ দখল করে তেল-গ্যাস কব্জা করতে পারে! বুঝেছেন এবার? এই লাইনেই চিন্তা বিএনপি-জামাতমনাদের।
কিন্তু বিএনপিকে বেনিফিট অব ডাউট দিয়ে যদি দেশপ্রেমিকও ভাবি, সেই বিএনপি কি করে আসলে? আমেরিকাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রন জানায়। আমেরিকাকে আহবান জানিয়ে আমেরিকার হাতে থেকে বাংলাকে কি করে বাঁচাবে তারা?
অন্যদিকে, আ’লীগ সরকার জামাত নিষিদ্ধ করার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে এক দিকে, অন্যদিকে ব্লগারকে কন্ঠ চেপে ধরার আইন করতে যাচ্ছে জামাত-বিরোধী ইসলামি দলগুলোর আহবানে, যাদের দলীয় নীতিমালা কিনা আবার তালেবানদের কাছাকাছি। তাহলে বুঝুন, আ’লীগ কাদের প্রটেকশন দিচ্ছে? এদের প্রটেকশান দিয়ে তারা বাংলাকে আফগান হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবে?
আমার লেখার সামারিঃ
এরপরও আপনি ভুল বুঝলেন কেন, মাথায় ঢুকছে না!
@কাজি মামুন, 😀
এত সহজেই উত্তেজিত হলে কি চলে? রম্য রচনা লিখে অরম্য হয়ে গেলে কেমনে হবে?
নাকি এগুলি আসলেই আপনার মনের কথা, আমি ধরে ফেলেছি (এটা কিন্তু ফাজলামি)??? এনি ওয়ে, এগুলি আপনের মনের কথা এ অর্থে বলিনি।
এ কথাগুলি আর কিছুদিন পর আম জনতার তরফ থেকেই শোনা যাবে, এখন শোনা যাচ্ছে অবশ্য প্রধানত জামাতি জাতের লোকদের তরফ থেকে। দেশের গোটা পরিস্থিতিতে মার্কিন ষড়যন্ত্র গোছের কিছু তত্ত্ব আমি অন্যসূত্রেও শুনছি। যাক, এবার সিরিয়াস কথা বলি।
– এটা কবেকার সংবাদ? সংবাদ সত্য হলেও সম্ভবত স্রেফ সান্ত্বনা পুরষ্কার। আমার জানামতে আন্দোলনের উত্তাল প্রথম দিনগুলিতে জোশের ঠ্যালায় সরকারের মন্ত্রীগন জামাত নিষিদ্ধ হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার এই ধরনের চ্যাটাং চ্যাটাং বুলি আওড়ালেও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছুদিন পর সুষ্পষ্ট ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল যে কোন দল নিষিদ্ধ করা হবে না। জামাত নিষিদ্ধ করার দাবী খুব সরল নয়, তবে সরকারের ফ্লিপ ফ্লপ নীতি খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। যে সাধ্য তাদের নেই তা করার মত মিথ্যা আশা দেখানো অন্যায়।
@আদিল মাহমুদ, সরকার জামাতকে নিষিদ্ধ করবে বলে মনে হয় না। কারন তাতে বি এন পি অধিক লাভবান হতে পারে। তাছড়া সরকারের দরকার ভোট, তাতে বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার ন্যায় অন্যায় এসব বিবেচনা করতে তারা রাজি নয়। আর তা নাহলে হাসিনা কত ধার্মিক তা প্রমান করার জন্য সবাই বাস্ত হয়। লেখককে ধন্যবাদ।
@তালকানা,
জামাত নিষিদ্ধ করার দাবী শুনতে যত সরল মনে হয় বাস্তবে অনেক অনেক জটিল। এটা ঠিক যে জামাত নিষিদ্ধ হলে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভবান হবে বিএনপি, তবে সরকার শুধু এই পয়েন্টেই পিছু হটেনি।
@তালকানা,
বিষয়টা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে আইনি প্রক্রিয়া মনে হয় শুরু হয়েছে, আর অনেকের মতে, এই প্রক্রিয়াটাই নিষিদ্ধের জন্য সর্বোত্তম উপায়।
যাহোক, এই নিষিদ্ধের পেছনের উদ্দেশ্যটা আমাদের খতিয়ে দেখা দরকার। কোন মহান উদ্দেশ্য থেকে এই নিষিদ্ধ কর্ম সাধিত হবে না, এটা অবধারিত।
বরং, জামাতকে রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলার জন্য অন্তত একটা ‘নিষিদ্ধ’ ‘নিষিদ্ধ’ খেলা অন্তত নিশ্চিত করেই চলবে মনে হয়। আমার লেখায় দেখবেন, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক খেলার একটা সাধারণ চরিত্র উল্লেখিত হয়েছে।
তবে আমার পয়েন্টটা একটু খেয়াল কইরা:
সরকার জামাত-বিরোধী ইসলামি দলগুলোর (যাদের নীতিমালা তালেবানিদের সবচেয়ে কাছাকাছি) কাছে যেভাবে আত্মসমর্পণ করেছে, তাতে বাংলাদেশ যে অচিরেই একটা আফগান হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, পরিশিষ্টে সেরকম বাংলাদেশের কথাই বলা হয়েছে। এই জামাত-বিরোধী গ্রুপকে সরকার ব্যবহার করছে জামাতকে মোকাবেলা করতে, কিন্তু এরা ফ্রাঙ্কে্নস্টাইনের দৈত্য হয়ে আফগান ভুতাকারে আসর করবে না বা আছড়ে পড়বে বাংলার মাটিতে, নিশ্চিত করে বলা যায়?
@কাজি মামুন,
রাগ পড়ছে???
আমি আগে কখনো বাংলা হবে আফগান এমন শ্লোগানে তেমন চিন্তিত হইনি। অনেকটা মজাক হিশেবে নিয়েছি, এখন আর এ সম্ভাবনা তেমন হালকাভাবে নিতে পারি না। প্রবল পরাক্রমশালী সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও জামাত শিবিরের বিনা বাধায় তান্ডব, এবং তাতে দেশের আলেম সমাজ নামের ব্যাক্তিবর্গের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সমর্থন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারন যাদের এসবে সায় নেই তাদের নীরবতা আমাকে নুতনভাবে ভাবতে বাঁধ্য করেছে।
@আদিল ভাই,
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মপ্রাণ, তবে সন্দেহ নেই, তারা সহনশীল এবং অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ঐতিহাসিকভাবেই তারা অসাম্প্রদায়িক।
কিন্তু সমস্যা হয়েছে, রাজিবের কথিত লেখাগুলো পৌঁছে গেছে এমনকি বাংলার প্রত্যন্ত ঘরে ঘরে । সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অত্যন্ত সফলতার সাথে তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, সরকার বা অসাম্প্রদায়িক সামাজিক শক্তিগুলো তেমন কোন প্রতিরোধই করতে পারেনি, মানুষকে সত্যটা বোঝাতে শতভাগ ব্যর্থ তারা।
সুতরাং, যা হবার তাই হয়েছে।
রাগ করব কেন, আদিল ভাই? আমি এতই অধম যে আপনার মন্তব্যের রম্যাংশটুকু ধরতেও ব্যর্থ হয়েছি। এই আমার উচিত নয় রম্য লেখা!
@কাজি মামুন,
বাংলার অধিকাংশ লোকেই অসাম্প্রদায়িক (যদিও এর মাত্রা আপেক্ষিক, যার আলোচনা এখানে আনছি না) এতে আমার কোন সংশয় নেই। কথা হল এতে লাভ কতটা হয়েছে বা হচ্ছে? অসাম্প্রদায়িক লোকে যখন চোখ কান বুজে তাদের পরবর্তি জেনারেশনকে বিদ্যালয়ে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক শিক্ষা দেয়া মেনে নেয় তখন তাদের অসাম্প্রদায়িক ইমেজ কতটা কাজে লাগে? আপনি অসাম্প্রদায়িক কিন্তু কেউ নাস্তিক কিংবা মুরতাদ শুনলে নাক সিঁটকান সে অসাম্প্রদায়িকতায় লাভ কতটা হয়?
আমার নিজ অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে আমাদের দেশের লোকে ধর্মভীরু নয়, অনেকটা ধর্মের ভয়ে ভীরু।
এ অবস্থায় জামাত শিবির সুবিধে নেবে নাতো মহাত্ম্যা গান্ধী সুযোগ নেবে? জামাত শিবিরের দোষ কতটুকু দেব? বিষ্ঠা বিষ্ঠাই। বিষ্ঠা ভাগাড় থেকে তুলে আমাকে ত্যাক্ত করার উদ্দেশ্যে আমার বাড়ির আংগিনায় যে লোকে ফেলে আমি তাকেই গালি দেব, নাকি প্রানহীন বিষ্ঠাকে গালি দেব?
রাজীবের নামে নবীকে করা গালাগালি জাতীয় লেখার প্রতি আমার কোন সমর্থন নেই, সেসব বাক স্বাধীনতার আওতায় সম্পূর্ন ইমমিউন এটাও মানতে আমার বাধা আছে। তাই বলে এক রাজীবের ব্যাক্তিগত লেখার জের ধরে পুরো আন্দোলনে নাস্তিক্যবাদ প্রচারের কূটিল ষড়যন্ত্র এই বিশ্বাস যখন এক বড় সংখ্যক লোককে আচ্ছন্ন করে তখন আর সেখানে অসাম্প্রদায়িক জনসাধারন দিয়ে কি আশাবাদ ব্যাক্ত করব? এমন অসাম্প্রদায়িক পরিবেশের চেহারা বজায় থাকলে এই ধরনের গনআন্দোলন গড়ে তোলার আশাবাদ সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়।
@আদিল ভাই,
এইসব অসাম্প্রদায়িক কিন্তু ধর্মপ্রান মানুষেরা মনে করেন বিদ্যালয়ে ধর্মের পাঠ পেলে তাদের সন্তানদের মধ্যে নীতিবোধ জাগবে, সচ্চরিত্রবান হবে তাদের সন্তানেরা। তারা তো আর জানে না, ধর্মকে পুঁজি করে জঙ্গি তৈরি কারখানায় পাঠাচ্ছেন সন্তানদের! নাফিসের পিতা কিন্তু আজ কাঁদছে!
:hahahee: :hahahee:
আপনি পারেন বটে, আদিল ভাই!
@কাজি মামুন,
– এটা মানা যায় না। আজকালকার বাবা মারা সন্তানদের পড়াশুনার ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। বছরের পর বছর এসব গেলানো হচ্ছে অথচ তারা জানে না এটা অবিশ্বাস্য। এটা আমাদের ধার্মিক মনের সাধারন বৈশিষ্ট্য। গুনাহর ভয়ে অধিকাংশ লোকে এসব নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে চায় না, আমি আর ধর্মের কি জানি……বড় বড় আলেমগন এসব লিখে গেছে…..
আমাদের অসাম্প্রদায়িক লোকজন পহেলা বৈশাখ, রবীন্দ্র সংগীত উপভোগ করে, আবার মোল্লা আলেমরা যখন ফতোয়া দেয় গান শোনা হারাম পহেলা বৈশাখ হারাম তখনো লোকে ঘাঁড় গুজে ভক্তি ভরে সেসব শ্রবন করে। এজন্যই বলেছি যে ধর্মের ভয়ে ভীরু, আসলেই ধর্মভীরু হলে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে গান বাজনা পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠান বর্জন করত।
হেফাজতে ইসলামের মাননীয় আলেমগন শাহবাগে গানবাজনা হয়, মোমবাতি জ্বালানো হয়ে এসব ধূয়ো তুলে রাজীব ইস্যুর আগ থেকেই আন্দোলন অনৈসলামিক ফতোয়া দিয়ে আসছিল। আমাদের অসাম্প্রদায়িক জনতাকে আজ পর্যন্ত নিজেদের ষ্ট্যান্ড এসব ক্ষেত্রে পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি।
@আদিল ভাই,
আপনি হয়ত জানেন না, মুক্তমনায় যে কজনকে আমি সবচেয়ে বেশি রেসপেক্ট করি, তাদের মধ্যে আপনি পড়েন। আপনি যে ভুল বুঝেননি, এইটা রাতে দেখতে পেলে ঘুমটা আরও ভাল হত!
দল হিসেবে জামাত যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এটা তো সব সংবাদ মিডিয়াতেই এসেছে। জামাত যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে কি স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকবে?? বস্তুত, কোন দেশেই কোলাবরেটররা রাজনীতির অধিকার পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর কিন্তু জামাত নিষিদ্ধ ছিল বাংলাদেশে। লক্ষ্য কইরা, সেই সময় কিন্তু পাকিস্তান ও ভারতে জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়নি, কারণ সেখানে তারা যুদ্ধাপরাধ করেনি। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জামাত আবার রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়।
কি শুনেছেন? একটু খুলে বলবেন, আদিল ভাই?
@কাজি মামুন,
আমার প্রতি আপনার অকৃত্রিম ভালবাসা আমি টের পাইঃ), নুতন সংবাদ নহে।
– কোন আদালতে কি ‘জামাত’ নামক কোন প্রতিষ্ঠানের কোন বিচার হচ্ছে? বয়া জামাত কি ব্যাংক বীমার মত কোন প্রতিষ্ঠান যে তারা ফেল মারলে অস্তিত্ব লোপ হয়ে যায়? আমার জানামতে জামাতের কিছু টপ নেতার বিচার হচ্ছে যাদের শাস্তি হওয়া আইনের মাধ্যমেই সম্ভব। তার মানে কি জামাত দলটারই বিচার হচ্ছে? ধরেন, গত কেয়ারটেকার আমলে দুই বড় দলেরই বহু টপ নেতার নানান কীর্তিকলাপের বহু আলামত আমরা দেখছি, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল অসংখ্য; সময়ের ফেরে তাদের অধিকাংশই সেসব সফলভাবে ম্যানেজও করে ফেলেছেন সে ভিন্ন কথা। কিন্তু ধরুন, তারা সেসব ম্যানেজ করতে ব্যার্থ হয়ে সাজা ভোগ করলেন। এর ভিত্তিতে কি তাদের দলকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে?
নিষিদ্ধ করাকরির ব্যাপারটা আসলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে, সেটা আবার নিয়ন্ত্রিত হতে পারে জনমতের ভিত্তিতে, আন্তর্জাতিক চাপ নানান কিছুর ওপরও নির্ভর করে। জামাত আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করতে আসলে নির্বাহী আদেশই যথেষ্ট। দীর্ঘ প্রক্রিয়া ফক্রিয়া এসব হল টাইম পাস। হিতাকে নিষিদ্ধ করতে কেমন দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ার প্রয়োযন পড়েছিল? আগেই বলেছি যে জামাত নিষিদ্ধ করছে না বলে আমি সরকারকে দোষ দিচ্ছি না, দোষ দিচ্ছি জনতাকে ভূয়া অবাস্তব আশাবাদ দেখানোর কারনে।
আমাদের সমস্যা আসলে আমরা কেবল নিজ গন্ডির ভেতর, নিজেদের মত মানসিকতার লোকের পরিমন্ডলেই বিচরন করি, শাহবাগ আন্দোলনের প্রি-ম্যাচিওর মৃত্যুর পেছনে এটা একটা বড় কারন।
রাজাকারদের বিচার আন্তরিকভাবে চায় আবার রাজাকারমুক্ত জামাত নিষিদ্ধ না হোক এমন মতামতের ব্যাক্তিও কিন্তু দেশে খুব কম নেই। এদের কথা আন্দোলনকারীগন, সরকার কেউই আগে ভাবেনি। এবার নীচে আসুন।
– কথাটা সম্পূর্ন নয়। মুক্তিযুদ্ধের পর শুধু জামাত নয়, ধর্মভিত্তিক সব দলই তাদের স্বাধীনতা বিরোধীতার জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিল। বর্তমান দিনে লোকের সমগ্র ফোকাস কেবল জামাতের ওপর, এটা খুবই ভূল, কেবল জামাত শিবির ছাড়া সমগ্র বাংলা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি – এই ভ্রান্ত ধারনার মূল্য খুব বড় আকারে দিতে হচ্ছে। এই ভুলের কারনে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রে আসলে কারা কারা আছে তাদের শক্তি কেমন এ নিয়ে বড় আকারে ভ্রান্ত ধারনা লোকের রয়ে গেছে, যার কারনে বর্তমানে জামাতের পরোক্ষ শক্তি সকলের কাছে সারপ্রাইজ হিশেবে এসেছে। ‘৭২ সালে আইনাকারে সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছিল, কেউ একটুও আপত্তি করেনি কারন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলির চেহারা লোকে হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছিল। সে সময় কিছু দলের খারাপ কাজের জন্য ধর্মভিত্তিক রাজনীতিই কেন নিষিদ্ধ করা হবে জাতীয় মেধাবী উক্তি করার মত মানসিকতা লোকের ছিল না। এ জন্যই আমি সিরিয়াসলি ভাবি যে তালেবান গোছের কোন সরকার ক্ষমতায় আসুক, নইলে অবসেশন দূর হবে না।
আজকের বাংলাদেশের অবস্থা সেরকম নয়। এটা ৭২ নয়, ২০১৩ সাল। এটা আন্দোলনকারীগন, সরকার কেউই আগে টের পায়নি। আন্দোলনকারীগন সরল বিশ্বাসে ‘৭১ এর জোশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার দাবী তোলার পর থেকেই মূলত য়ান্দোলন ডেথবেডে উঠেছে, রাজীবের মৃত্যু পরবর্তি নাস্তিক বিষয়ক জটিলতা তারই পথ ধরে এসেছে কফিনের শেষ পেরেক হিশেবে।
বাস্তব হল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলি যতদিন থাকবে শুধুমাত্র জামাত নিষিদ্ধ করা পরিস্থিতি আরো খারাপ ছাড়া ভাল করবে না এতে আমি নিশ্চিত। জামাতের সাপোর্ট বেজ/প্রভাব এখন এত ব্যাপক যে ‘৭২ এর ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থাও ফেরা কতটা কাজে আসবে তাতেও সংশয় আছে। একা জামাত নিষিদ্ধ হলে জামাতের অসংখ্য ব্যাক আপ সংগঠন আছে যাদের দাঁড়া করানো কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র, এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন যে তখন বাংলাদেশের সংবাদ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পাকিস্তান ইরাকের মত প্রতিদিন আসবে। “অমূক শহরে বোমা বিষ্ফোড়নে এতজন নিহত……” । জামাতের এক ধরনের ব্যাক আপ সাপোর্ট বেজ হিশেবে কারা মাঠে নেমেছে সেটা তো দেখছেনই। আসলে সামগ্রিক অবস্থা শুধু হতাশাব্যাঞ্জক বললেও কম বলা হয়।
আমেরিকার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আসলে সম্পূর্ন ব্যাক্তিগত ধারনা, বলার মত নয়। আমার কাছে খুবই অবাস্তব লেগেছে।
@আদিল মাহমুদ,
না, আদিল ভাই, আমি দ্বিমত করব। প্রি-ম্যাচিওর মৃত্য হয়নি। শাহবাগ একটি ওয়েক আপ কল। যারা ভাবছে, শাহবাগ মরে গেছে, তারা ঠিকই টের পাবে, শাহবাগ কখনো মরে না। শাহবাগ কোন রাজনৈতিক দল নয়। শাহবাগ তারুণ্যকে ধারণ করে, তরুণরা সবসময় জেগে থাকে, শাহবাগ জেগে থাকবে।
নেতারা অভিযুক্ত হয়েছেন, কিন্তু তাদের দল তো অভিযুক্ত হয়নি। কিন্তু দল হিসেবে জামাত ইতিমধ্যে অভিযুক্ত হয়েছে।
প্রশ্নটা হলঃ সরকার জামাতকে নিষিদ্ধ করছে না নাকি করতে চাইছে না, তা নিয়ে। সরকারের যে এ কঠিন কাজটি করতে অনেক বেগ পেতে হবে, তা তো সবাই জানে।
আপনার দীর্ঘ মন্তব্যটির সেরা লাইন। উপরের লাইনটির ব্যাখা আবার আপনিই দিয়েছেন (নীচে কোট করা), যা খুবই যুক্তিযুক্ত।