কয়েকদিন আগে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য জামাতী ইসলামের নেতা ও সাবেক সাংসদ রাজাকার দেলওয়ার হোসেইন সাঈদির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের প্রতিবাদে সারা দেশে চরম নৈরাজ্য ও বর্বরতা সৃষ্টি করে জামাত-শিবির। এই সহিংসতায় প্রায় ৮০ জন মানুষ মারা যায় এবং ৭ জন পুলিশ অফিসার প্রাণ দেন। সহিংসতার পাশাপাশি সারাদেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে জামাত-শিবির। রাজাকার সাঈদীর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর দেশব্যাপি সহিংসতার পাশাপাশি চলে সাম্প্রদায়িক হামলা। সাতক্ষিরা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে অন্য ধর্মের মানুষের বাড়িতে আগুন, হামলা, মন্দির লুট চলতে থাকে। এমনকি চট্টগ্রাম থেকে ধর্ষণের খবরও আসতে থাকে। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িক হামলাকে তেমন ভাবে আমলে নেয়নি বাঙলাদেশের মিডিয়া। অন্য দিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরাসরি জামাতের পক্ষ অবলম্বন করে। জামাত-বিএনপির সংসার ২০০১ থেকে। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবীতে যে গণআন্দোলনের সৃষ্টি হয় তাতে অনেকেই আশা করেছিল বিএনপি হয়তো জামাতের সঙ্গ ছাড়বে। প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনসমাবেশে মুজাহিদ, গোলাম আযম, নিজামী, সাঈদী, কাদের মোল্লাসহ আরো অনেককে নিরপরাধ বলেছিলেন। তিনি এও দাবী করেন এরা কোন যুদ্ধাপরাধ করেন নি। এখানে একটা জিনিস মনে রাখা দরকার জিয়াউর রহমানের কল্যাণেই কিন্তু এই দেশে যুদ্ধাপরাধীরা রাজনীতি করার সুযোগ পায়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা হত্যা, নারী নির্যাতন, লুট ও অগ্নিসংযোগ করে যুদ্ধাপরাধ করেছিল বঙ্গবন্ধু তাদের বিচারের জন্য ‘দালাল আইন’, ৭২-র সংবিধানে সংযোজিত করেছিলেন। দালাল আইনের আওতায় প্রায় ৩৮ হাজার পাকিস্তানি দালাল গ্রেফতার হয়েছিল। তবে এসব দালালদের ভিতর যারা শুধু নীতিগতভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের কোনো আলামত পাওয়া যায় নি তাদের বঙ্গবন্ধু ৭৩-এর ৩০ নভেম্বর সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তবে যারা হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ করেছিল তারা এই ক্ষমার আওতার বাহিরে ছিল। সাধারণ ক্ষমতার আওতায় ২৬ হাজার ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছিল। তবে ১১ হাজারের বেশি দালালের বিরুদ্ধে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকায় তাদের বিচার কার্য বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে বিদেশী প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে অঙ্গীকার নিয়ে জিয়া ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা’ ছিল এজেন্ডাসমূহের অন্যতম। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য ’৭৫-এর ৩১ ডিসেম্বর সামরিক শাসনের অধীনে বিশেষ অর্ডিন্যান্স জারি করে ‘দালাল আইন’ তুলে নেন। ফলে চল্লিশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার আমিনুর হক এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার চিকন আলীর মতন ঘৃণিত ব্যক্তিরা জেল থেকে বের হয়ে এসে শহীদ পরিবারগুলোকে উপহাস করতে থাকে। জিয়াউর রহামান দালাল আইন তুলে নেয়ার পাশাপাশি সংবিধান সংশোধন করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগীতার জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার গোলাম আযমসহ ৩৯ জন শীর্যস্থানীয় দালাল ও যুদ্ধাপরাধীর নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন। এর ফলে সৌদি আরব সহ প্রতিক্রিয়াশীল দেশে এসব ঘাতকরা পালিয়ে যায়। কিন্তু দালাল আইন রহিত হওয়ার ফলে তারা দেশ ফিরতে শুরু করে। পাকিস্তানের পাসপোর্টধারী গোলাম আযম ’৭৮ সালে অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে তিন মাসের ভিসা নিয়ে বাঙলাদেশে এসে আর ফিরে যান নি। উপরন্তু পরবর্তীতে খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন হয়ে গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত এক জোট হয়ে নির্বাচন করে। ঐ নির্বাচনে জয়ী হয় বিএনপি এবং তার-ই সাথে সাথে রাজাকারদের গাড়িতে বাঙলাদেশের পতাকা উড়তে থাকে।

২০০১ সালের ১লা অক্টোবর এর নির্বাচনের পর ব্যাপকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভোটার, সমর্থক, সদস্য, কর্মী ও নেতাদের শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি অন্যধর্মের মানুষের উপর চলে সাম্প্রদায়িক হামলা। বিশেষ করে নারীদের উপর। নির্যাতনের ঘটনা নির্বাচনের আগে ও পরে ঘটেছে। এর কারণ ছিল নির্বাচন। যদিও নির্বাচনের আগে ও পরের ঘটনা একই ধরনের ছিল কিন্তু নির্বাচনের পরের ঘটনাগুলো সংখ্যায় ও ব্যাপকতায় অনেক বেশি। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে যেসব সংবাদ ছাপা হয় তাতে বোঝাই যায় কারা এই কাজ গুলো করেছে। নির্বাচনের পরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকেরা নিজ গ্রাম ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য আশেপাশের গ্রামে আশ্রয় নেয়। অনেকে এলাকা ছাড়া থাকে। নির্বাচন পরর্বতি সময়ে গণধর্ষণ থেকে শুরু করে মানুষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুট চলতেই থাকে। আর এসব কর্মকাণ্ডে প্রকাশ্যে মদদ দেয় তৎকালীন প্রশাসন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দেশ ব্যাপী সংখ্যালঘু নারীদের উপর যে অত্যাচার হয় তার মধ্যে পূর্ণিমা নামটি আলোচিত। সাতজন মিলে এই বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণ করে। বাধ্য হয়ে মেয়ের মা’কে বলতে হয়-বাবারা তোমরা একজন একজন করে যাও। আমার মেয়েটা অনেক ছোট! দীর্ঘ ১০ বছর পর বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্যাতনের শিকার দেশব্যাপী বহুল আলোচিত উল্লাপাড়ার পূর্ণিমা রানী ধর্ষণ মামলার রায় হয়েছে। সিরাজগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ওসমান হায়দার বুধবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় প্রদান করেন। মামলার রায়ে অভিযুক্ত ১১ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার এই টাকা পূর্ণিমাকে প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ে। এ সময় দ-প্রাপ্তদের মধ্যে ৬ জন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল। ৫ জন ছিল অনুপস্থিত।

বিএনপি-জামাতের ক্যাডারদের নির্যাতনের শিকার পূর্ণিমা

২০০১ সালে নির্বাচনী পরবর্তি সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষুদ্র চিত্র।

৪ অক্টোবর ২০০১ প্রথম আলো
বরিশালে বিএনপির দখল অভিযান।

বরিশাল অফিস: সরকার গঠনের আগেই বরিশালে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দখল অভিযানে নেমেছে বিএনপি। গতকাল রাত থেকে শহরের কয়েকটি আওয়ামী লীগ অফিস ক্লাব দখল করে নিয়েছে বিএনপির ক্যাডাররা। এছাড়াও শহরে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকা থেকেও বিএনপি কর্মীদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে শহরের ভাটিখানা ও কাউনিয়া এলাকায় বেশ কিছু হিন্দু পরিবারকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকরা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

৮ অক্টোবর ২০০১ প্রথম আলো
সরিষাবাড়ীতে বিএনপির নির্বাচনোত্তর তাণ্ডব।
আ.লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সংখ্যালঘুরা ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে।

জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুর প্রতিনিধি জানা, জেলার সরিষাবাড়ীতে নির্বাচনোত্তর বিএনপির সন্ত্রাসী তাণ্ডবলীলা, লুট ও হুমকি ধামকি অব্যাহত রয়েছে। ওই সন্ত্রাসের শিকায় হয়ে অনেক আওয়ামি লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে জামালপুর শহরসহ সরিষাবাড়ির আশেপাশে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের অভিযোগ থানা পুলিশ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরিষাবাড়ীর পিংনা ইউনিয়নের বাড়ইপটল গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সুলীল চন্দ্র ঘোষ গত শনিবার রাতে এ প্রতিনিধিকে জানান বিএনপির স্থানীয় ২০/২৫ জন সশস্ত্র যুবক গত ২ অক্টোবর সকালে মিছিল নিয়ে গিয়ে তার বাড়িতে চড়াও হয়। পরদিন সন্ত্রাসীরা বাড়ইপটল বাজারের রিন্টু ঠাকুর ও লিচু মিয়ার দুটি কাপড়ের দোকান ও মোতালেবের মনোহারী দোকানে ভাঙচুর লুটপাট করে। বাড়ইপটল এলাকায় ২২৫ জন সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। সন্ত্রাসীরা তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আতঙ্গে অনেকে গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিচ্ছে।

৯ অক্টোবর ২০০১ মঙ্গবার প্রথম আলো
আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুরা অসহায়
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় নির্যাতিন অব্যাহত, প্রশাসন নীরব

তৌফিক মারুফ, বরিশাল: বরিশাল জেলাসহ বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ভোটের পরদিন থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী, সমর্থকদের উপর একের পর এক হামলা, বাড়িঘর দোকারপাট ভাঙচুর লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এসব সহিংসতা বন্ধে প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরিশালের উজিরপুরে শুধু আওয়ামী লীগই নয় ওয়ার্কাস পার্টি, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপরও চলছে নির্যাতন। কেবল হামলা, ভাঙচুর, লুট বা হুমকিই নয়, নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে গেছে ভোটের দিন থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা।

১০ অক্টোবর ২০০১ প্রথম আলো
লুটপাটের পর বাড়ির সামনে ‘বিক্রি হবে’ সাইনবোর্ড!

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিনে স্থানীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও লুটপাটের কারণে তারা প্রাণ বাঁচাতে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সদর উপজেলার চরাঞ্চল নলবিনিয়াকান্দিতে বিএনপি সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সংখ্যালঘুদের গরু-ছাগল ও নৌকাসহ সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়।

১২ অক্টোবর ২০০১ আজকের কাগজ
গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনী বিজয়ের পাশবিক উল্লাস, প্রশাসন নীরব

কাগজ প্রতিনিধি: অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগেই গৌরনদী আগৈলঝাড়ায় যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্ম ও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও সন্ত্রাস শুরু হয়েছে, নির্বাচনের পর তা আরো বেড়ে গেছে। সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেত-কর্মীরা কেউ কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে আবার কেউ কেউ নির্যাতনের আশঙ্কায় ভীত সন্ত্রাস্তভাবে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। গৌরনদী-আগৈলঝাড়া থানার বিভিন্ন গ্রামে লুট-পাট, অগ্নিসংযোগ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায় গৌরনদী থানায় বিএনপির কতিপয় নেতা-কর্মী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা পার্টির জিয়া গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা রেজাউল করিম, সেকান্দার মৃধা, জাহাঙ্গির মৃধা ও জাহাঙ্গির গোমস্তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার নিপীড়ন চালাচ্ছে, এরা চাঁদাবাজি লুটপাট, ধর্ষণসহ গরুছাগল পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।


১২ অক্টোবর ২০০১ প্রথম আলো
বরিশালের হিজলায় বিএনপি ক্যাডারদের দাপট
গ্রামছাড়া নিতাই মায়ের মৃত্যুর খরব পেয়েও ঘরে ফিরতে পারেননি।

বরিশাল অফিস: বরিশালের হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জ বাজারের ক্ষুদ্র সেলুন ব্যবসায়ী নিতাই শীল বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে শেষ দেখাও করতে পারেননি। ধর্মীয় বিধান অনুসারে মায়ের মৃত্যুর পর শেষ কৃত্যানুষ্ঠানেও যোগ দিতে পারেন নি তিনি। বিএনপির সন্ত্রাসীরা তাকে গ্রাম ছাড়া করেই ক্ষান্ত হয় নি, উপরন্ত মায়ের মৃত্যুর পর নিতাইকে নিজ গ্রামে ঢুকতে দেয়নি।

২০ অক্টোবর ২০০১ জনকণ্ঠ
নির্বাচনের পর নির্যাতন। পার্বতীপুর নৌকার সমর্থকরা হাটে যেতে না পেরে বসিয়েচে আলাদা বাজার

পার্বতীপুর, ১৯ অক্টোবর, সংবাদদাতা: নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় পার্বতীপুরের পরিস্থিতি এখনও অশান্ত ও উত্তপ্ত। আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। সুযোগ পেলেই নৌকার সমর্থক বলে তাদের মারধর করা হচ্ছে। এই অত্যাচারে শেষ পর্যন্ত বাজার-হাট করার জন্য আলাদাভাবে বাজার বসানো হয়েছে।

৭ নভেম্বর ২০০১ আজকের কাগজ
মীরসরাই দাশপাড়ায় মধ্যরাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব। নিহত ১ আহত ৩০

চট্টগ্রাম অফিস: মীরসরাই উপজেলার মিঠানালার দাশপাড়ায় সোমবার মধ্যরাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী সুনিল দাস সাধু (২৮) নিহত এবং প্রায় ৩০ জন নারী ও শিশু আহত হয়েছে। জানা গেছে হামলা ও লুটপাটে ৫১টি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।


১৭ নভেম্বর ২০০১ যুগান্তর
চট্টগ্রামে নিজ বাসভবনে অধ্যক্ষ গোপাল মুহুরীকে গুলি করে হত্যা
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামাত-শিবির ক্যাডাররা জড়িত, পুলিশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টায় নগরীর কেন্দ্রস্থল জামাতখান রোডে নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছে হাটহাজারী উপজেলা নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরী (৫৮)। সস্ত্রাসীরা সকালে তার বাসায় ঢুকে মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে গুলি করে তাকে তাকে হত্যা করার পর বেবিট্যাক্সি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।


১২ ডিসেম্বর ২০০১ জনকণ্ঠ
সাকা ক্যাডাররা পাঁচ লাখ টাকা না পেয়ে অপহরণ করেছে নলিনী মাস্টারকে

স্টাফ রির্পোটার, চট্টগ্রাম অফিস: রাউজানে নলিনী মাস্টার বলে পরিচিত এক ব্যক্তিতে সা’কার ক্যাডাররা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় রাউজানের ডাবুয়া এলাকার জগন্নাথহাট হতে ক্যাডাররা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

উপরের ঘটনাগুলো ২০০১ সালের সামগ্রিক ঘটনার ক্ষুদ্র অংশ। শুধু ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তীতেই নয় এমন হামলা হচ্ছে অহরহ। এদেশে অন্যধর্মালম্বীদের মারার জন্য কোন অজুহাতের দরকার হয় না তাই দেখা যাচ্ছে বারে বারে। দলী সংঘাত হোক আর আদর্শে সংঘাত হোক বা ক্ষমতার দ্বন্ধ হোক ঝড় যায় অন্যধর্মালম্বিদের উপরই। সামনে আবারো নির্বাচন আসছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী সহ রামুর মতন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এসব হামলার কোন বিচার হয় নি এবং হয় না। এটাই যেন আমাদের সমাজের নির্মম বাস্তবতা। ৭১-এ চেতনায় আবারো জেগে উঠে সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ নির্মূল করতে হবে। এছাড়া বাঙলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করা কখনো সম্ভব নয়।