যেকোনো গণআন্দোলনের ক্ষতি করার সহজ উপায় কি? উত্তর খুব সহজ। আন্দোলনে বিভেদ সৃষ্টি করা। এটা কোন নতুন কিছু নয়। আমরা যখন অতীতে ব্রিটিশ প্রভুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গেছি, তখন ও এই ‘divide and conquer’ নীতি অবলম্বন করে হিন্দু আর মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ তৈরি করা হইছে। যাদের একসাথে হয়ে একই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, তারা শুরু করল নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা-হানাহানি। আমরা তখন একবার আমাদের সত্যিকারের শত্রুর পাতা ফাঁদে পা দিছি। আমরা কি আবার দিবো?
‘থাবা বাবা’ নামক একজন্ ব্লগারকে নৃশংস ভাবে খুন করা হইছে। উনি নাস্তিক ছিলেন। আমি নিশ্চিত, জামাত শিবিরের কুত্তার বাচ্চারা পরিকল্পনা করে এই কাজ করছে। তারা ভেবে চিন্তে এই চালটা দিছে। এই সুযোগে তারা আবার তাদের কে ইসলামের পক্ষে আর আন্দোলনকে ইসলামের বিপক্ষে হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করবে।
আমি শুধু এইটা মনে করিয়ে দেবার জন্য লিখতেছি যে, ১৯৭১এ এই লোকগুলা ইসলামের নাম দিয়ে আমাদের ভাইদের হত্যা করছে, চোখ উপড়ে নিছে, হৃদপিণ্ড,হাত,মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রেখে আসছে বধ্যভূমিতে। গনিমতের মাল বলে আমাদের বোনদেরকে তুলে দিছে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে, অবিরাম ধর্ষণ করেছে, যোনিপথ খুঁচিয়েছে বেয়নেট দিয়ে, বিবস্ত্র করে ফেলে রেখেছে যেন আত্মহত্যা না করতে পারে গলায় ফাঁস দিয়ে । এবং এই পুরা ব্যাপারটা ইসলামসম্মত বলে দাবী করেছে। আমি জানি না ইসলামের এর থেকে বড় অবমাননা কি হতে পারে? আমার তো কল্পনায় আসে না। আজ যদি এরা এসে আপনাদের কারো কাছে ইসলামের অবমাননা শিখাতে চায়, মুখের উপর বলে দেবেন “ তুই রাজাকার”। ইসলামের নামে এই দলটি অন্যায় কম করছে? শুধু বাংলাদেশ না বিশ্বে ইসলামের একটা উগ্র, ভীতিকর ভাবমূর্তি তৈরি হইছে এই সব কুলাঙ্গারগুলার জন্যে।
এখন এরা আসছে ইসলাম অবমাননা শিখাইতে। এদের চেয়ে বড় ধর্মের অবমাননাকারী আর কে আছে? এরা বাবরী মসজিদের ঘটনা নিয়ে দেশে দাঙ্গা তৈরি করছে। এরা ২০০১ এ ক্ষমতায় এসে ভয়াবহ সংখ্যালঘু নির্যাতন করছে। আমরা কি ভুইলা গেছি ‘তোমরা একজন একজন করে আসো ’ বলে সেই মায়ের আহাজারি। একবার ভাবেন সেই মায়ের মতো অসংখ্য মানুষের কাছে ইসলামের ভাবমূর্তিটা কেমন তৈরি হইছে।
আমার দেশের বেশিরভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয়। তাদেরকে দীর্ঘদিন এই দলটা ইসলামের নাম নিয়ে প্রতারণা করছে। ইসলামের নামে সংঘটিত করছে নারকীয় সব গণহত্যা। আজ যখন মানুষ তাদের প্রতারণা বুঝতে পারছে তখন তারা খুব সূক্ষ্ম একটা চাল দিছে। আন্দোলনে বিভেদ সৃষ্টির জন্য, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিছে তারা। যেই ব্লগারকে মারা হইছে উনি নতুন লেখক না। অনেক দিন ধরেই আছেন। মারলে আগেই মারতে পারতো। হঠাৎ করে এই সময় কেন মারা হল এটা সহজেই বুঝা যায়। এতে মানুষের মনোযোগ সরে যাবে। আন্দোলনের মধ্যে ধর্মের নামে বিভেদ তৈরি হবে। এই হল তাদের উদ্দেশ্য।
কুরানে বলে যে একজন মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার শামিল। এই কুত্তার বাচ্চাগুলা সেইটা মানে না। তাদের কাজ কর্ম দেখে তো এটা বুঝাই যায়। নিজেরা একের পর মানুষকে মেরে ইসলামের দোহাই দেয়ার মতো নির্লজ্জতা আর কে দেখাবে এরা ছাড়া?
আজ থেকে অনেক আগে ব্রিটিশরা আমাদের মধ্যে এই ধর্মের নাম দিয়ে দেয়াল তুলে দিয়েছিল। আমরা আমদের আসল শত্রুকে ভুলে নিজেরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছিলাম। আমাদের জাতীয় কবি তখন বলেছিলেন
“অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!”
আমি খুব আশা করি যে আমরা একই ভুল বার বার করবো না। এইবার আর জামাত-শিবিরের নরপিশাচগুলা আমাদেরকে ধোঁকা দিতে পারবে না। আমাদের আন্দোলন আর ও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের সর্ব স্তরের মানুষ সমস্বরে জানিয়ে দেবে
জামাত শিবির রাজাকার
এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।
লেখকঃ সাকীব হাসান
জামাত শিবির নিষিদ্ধ করতে সরকার তালবাহানা করছে।
তাদের এই মাসের মধ্যেই নিষিদ্ধ করতে সরকারকে চাপ দিতে হবে।