কিছু বুঝে উঠবার আগেই যা ঘটে চলেছে সে কি অভাবিত নয়? আমি আমার সমস্ত অন্তর দিয়ে যা অনুভব করতাম, কি করে সম্ভব হলো এই সব ছেলেমেয়েদের অন্তরের ভাষা হয়ে, গান, কবিতা, ছড়া, স্লোগান আর অসম্ভব ক্ষোভ-ঘৃনা হয়ে আজকে প্রজন্ম-চত্ত্বরে ঝরে পরা, যারা বেড়ে উঠেছিলো সময়ের এক বৈরী পরিবেশে! সেই আমি নিজেই নিমজ্জ্বিত ছিলাম হতাশার অন্ধকারে! যেই অন্ধকার আমাকে প্রলুব্ধ করেছে দেশান্তরিত হতে। আজ আমি প্রজন্ম-চত্ত্বরে নেই, কিন্তু আমার সমস্ত সত্ত্বা আর অনুভব চত্ত্বরের শত-সহস্র বাঙ্গালীর মাঝে লীন হয়ে আছে, মিশে আছে অগনিত ছাত্র-জনতার ভীড়ে।

আমরা যা পারিনি, আমাদের উত্তর প্রজন্ম ঠিক তা পেরেছে, আজ সময় এসেছে এই বিজয়কে একান্ত নিজের করে অর্জন করার, আজ সময় এসেছে আমাদের, সামনে তাকিয়ে দেখবার। জীয়ণ কাঠির ছোঁয়ায় আজ যেনো ঘুম ভেঙ্গে উঠেছি আমরা। কিন্তু কিছু অতন্দ্র প্রহরীর মতো যারা ছিলো জেগে, আর নিরন্তর চেষ্টা করেছেন আজকের প্রজন্মকে মাথা তুলে দাঁড়াতে, তাদের বোধের জায়গা গুলোতে কুঠারাঘাত করে করে বুঝতে বাধ্য করেছেন আমাদের প্রকৃত গন্তব্য; তাঁদের, সেই সব জানা অজানা ব্লগ-লেখক, অন্তর্জালের বিপ্লবীদের প্রতি সশ্রদ্ধ প্রনাম। কে বলে বাঙ্গালি ভীতু, অকর্মন্য আর হাভাতে? আজ প্রমানীত, সময়ের সন্ধিক্ষনে বাঙ্গালী স্বমহীমায় তার চিরায়ত আত্মপরিচয় নিয়ে ঠিকই বজ্র-কঠিন হৃদয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো। সে মোকাবেলা করে যেকোন সংকট, দুর্যোগ প্রতিহত করে বেড়িয়ে আসে বিজয়মাল্য সহ। প্রনাম বাংলার অজুত-নিজুত তরুণ, তোমাদের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার আজ সমগ্র জাতিকে জানিয়ে দিয়েছে অতন্দ্র প্রহরীর মতো তোমরা রয়েছো জেগে।

৪৭ থেকে ৭১, বাঙ্গালী লড়েছে স্বাধীকারের চেতনায়। ৭১ এর বিদায় কালে সেই জয় আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম অনেক অনেক ত্যাগের বিনিময়ে। পরবর্তীতে কিছু কুলাঙ্গার আমাদের এই মহান বিজয়ে ছাই চাপা দেয়। নিজেদের অর্জিত স্বাধিকার কে সেদিন ওরা মেনে নেয়নি শুধুমাত্র ধর্মীয় কারনে। নিজের আত্মাকে বিকিয়েছিলো পাকিস্তানী প্রেতের কাছে। সেই ধারাবাহিকতাই বজায় ছিলো। ৭৫ এ এসে সেই পরাজিত শক্তি নিয়েছিলো প্রতিশোধ। নতুন ভাবে দেশকে ওরা চেয়েছিলো ঢেলে সাজাবে বলে। নব্য পাকিস্তান হবে এই বাংলা! উঠিয়েছিলো ধর্মীয় জিকির। সেকি আস্ফালন! মুক্ত বাঙ্গালী অবগুন্ঠিত হলো। হতে থাকলো। দিন যায় রজনী যায়, আবার দিন আসে, দিন যায়। সূর্যের মতো তেজোদ্দীপ্ত বাঙ্গালী হঠাৎ ঝিমিয়ে পরতে শুরুকরে ধর্মীয় আফিমের নেশায়। এই সব মুখ চেনা ঘৃন্য শ্বাপদের দল দখল করে আমাদের মিডিয়া। ওরা ওদের দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে নানান কৌশলে। ওরা রাষ্ট্র-ক্ষমতার ভাগীদার হয়। ওরা আমাদের পবিত্র পতাকা ওদের পঙ্কিলতায় পূর্ণ নষ্ট হাতের মুঠোয় ছিনিয়ে নেয়! আমাদের নবতম প্রজন্মকে নষ্ট হতে প্রলুব্ধ করে। সমাজের শেখড় থেকে তৃন অবধি অবাধ লুটতরাজ, অনিয়ম আর বিকৃত অভিরূচিই যেন সনাতন রুপ পায়। সেই ধারাবাহিকতা আজও বর্তমান। ধর্মব্যবসায়িরা জেঁকে বসে সমাজের আনাচে কানাচে। সরলপ্রাণ মানুষ এদের ঘৃন্য শিকারে পরিনত হয়। দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকেছে, আজকের নতুন প্রজন্ম উপলব্ধি করেছে, দ্বিধা-বিভক্ত জাতিকে আজ তাই ঐক্যের সুতোয় ওরা বাঁধতে চায়। যে কাদা জাতির গায়ে লেগেছে তা সময়ের আলো দিয়ে লেপে দিতে চায়।  নষ্ট সময়ের নায়কদের ওরা কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চায়। আর তাই এই জেগে উঠা। সমগ্র জাতিকে জাগিয়ে তোলা। পাপের পেয়ালা আজ কানায় কানায় পূর্ণ। প্রত্যেককে জবাব দিতে হবে। যারা নষ্ট সময়ের নায়ক ছিলো, যারা আমাদের স্বাধীন দেশে পাকিস্তানী প্রেতের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলো, যারা আমাদের গর্বের পতাকা ঐসব যুদ্ধাপরাধী পাকি-পিশাচের হাতে তুলে দিয়েছিলো, যারা তাদের অদূরদর্শীতায় এই নষ্ট সময়ের আবির্ভাবকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিলো।

হে তরুন! আজ যারা নেমেছো পথে ক্ষুধা তৃষ্ঞা ভুলে। যেনো, একাকী নও তোমরা, আমিও আছি তোমাদের পাশে কোটি মানুষের সাথে। কুযাশাচ্ছন্ন অসংখ্য অলি-গলি পথের ধাঁধা তোমাদের চারদিকে! দিকভ্রষ্ট হবেনা জানি, তাই বলে সময়ের নষ্টজনেরাও বসে নেই। মনে রেখো সমগ্র জাতি তোমাদের দিকে চেয়ে আছে। আমরা তোমাদের পেছনে আছি। দুর্বার দূর্বীনিত প্রাণ তোমাদের, ধ্রুব নক্ষত্রের মতো স্বচ্ছ তোমাদের লক্ষ্য। এগিয়ে যাও নিঃসংকোচে দ্বিধাহীন নিঃসংশয়ে। এবার বিজয়ী তোমাদের হতেই হবে।