সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সম্মানিত চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এর ব্যক্তিগত স্কাইপ কথোপকথন এবং ইমেইল হ্যাকিংকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাপ্রবাহ তার সাথে বাংলাদেশের অনেকেই ইতোমধ্যে বোধ করি অবগত হয়েছেন। গত কয়েকদিনে ইকনমিস্টসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে আমার সাথে এবং আইসিটির বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করার জন্য আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের অনেকের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি ট্রাইবুনালের বিচারাধীন থাকায়, এবং এ বিষয়ে ট্রাইবুনালের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকায় আমরা সচেতনভাবেই কোনো মন্তব্য দেয়া থেকে বিরত ছিলাম। এখনও আমরা এই বিচারাধীন বিষয়ের কনটেন্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। কিন্তু গত কয়েক দিনের পত্রপত্রিকায় এবং সংবাদ মাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিমূলক কথা আমাদের গোচরে এসেছে।
“আমার দেশ” নামের চিহ্নিত পত্রিকাটি আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশের লঙ্ঘন করে, সমস্ত ধরণের শিষ্টাচার ও সভ্যতার নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই অপরাধের মাধ্যমে গৃহীত তথ্যসমূহ অনেক রঙ চড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে থাকে। তার সাথে যোগ দেয় অনলাইন প্লাটফর্মের চিহ্নিত কিছু জামাতপন্থী গ্রুপ। এমনই কিছু বিভ্রান্তির ওপর আলোকপাত করতেই আমার আজকের এই লেখাটি।
বিচারপতি নিজামুল হক এর সাথে আমার কথিত কথোপকথন এবং ইমেইল হ্যাকিং এর ঘটনাটি আমি প্রথম জানতে পারি “ইকনমিস্ট” এর একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে, যখন তিনি এই বিষয়ে আমার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন। এই কথিত কথোপকথনে আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের আরও কয়েকজনের সাথেও যে ইকনমিস্ট পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে, তাও জানতে পারি। এর পরের ঘটনা সবার জানা। ইকনমিস্ট এর সাংবাদিক যখন বিচারপতির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন, তার পরের দিন, অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে একটি আদেশ জারী করা হয় ইকনমিস্ট পত্রিকার বিরুদ্ধে। সেখানে উম্মুক্ত আদালতে ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে বিচারপতি হক স্পষ্টভাবে তার আদেশে উল্লেখ করেন যে – হ্যাকিং এর মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত ইমেইলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা হয়েছে। অবৈধভাব তার ব্যক্তিগত কথোপকথন রেকর্ডিং এর কথাও তিনি সে আদেশে দেশবাসীকে অবগত করেন। সাথে তিনি উম্মুক্ত আদালতে এটাও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন কেন, কী পরিস্থিতিতে, এবং কী প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে ট্রাইবুনাল বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিষয়ে আমিসহ অন্যান্যদের পরামর্শ ও গবেষণা সহায়তা গ্রহণ করেছেন। আমার সাথে বিচারপতির খোলামেলা আলোচনায় আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন নিয়ামক, এই জাতীয় বিচারের রায়ের আান্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত কাঠামো/ বিন্যাসসহ ব্যক্তিগত নানান কথাও উঠে আসতো মাঝে মধ্যে। আমাদের কথোপকথনে আমি সবসময়ই দেখেছি বিচারপতি হক তাঁর নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, বিচারের গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলোর ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকতেন। তাতে তাঁর প্রতি আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়েছে বই কমেনি। আমার সৌভাগ্য যে বিচারপতি হক এর মতো একজন নির্ভীক এবং সৎ মানুষের সাহচর্যে আসতে পেরেছি। এই বিচারটিকে বিশ্বের দরবারে কিভাবে আরও গ্রহণযোগ্য করা যায়, কিভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে সব ধরণের চাপের উর্ধ্বে রাখা যায় – সে বিষয়ে বিচারপতি হকের সবসময়ই খুব সজাগ দৃষ্টি ছিল।
আজকে এই বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার চক্রটির পক্ষ থেকে করা একটি দাবী আমার চোখে পড়েছে যা এক কথায় হাস্যকর। বলা হচ্ছে যে – এই মামলার চূড়ান্ত রায় (conviction and sentencing) নাকি আগেই লেখা হয়ে আছে, আর আমিই নাকি সেটা লিখে দিয়েছি। রায় যদি লেখা হয়ে গিয়েই থাকে তাহলে সে রায় এতদিনে দিয়ে দেয়া হয়ে যেতো নিশ্চয়ই। আর সে রকম কোনো রায়ের কপি যদি থেকেই থাকতো, তাহলে ট্রাইবুনালের তথাকথিত গোপন দলিলের তথাকথিত “লিক”(leak)-কারীরা নিশ্চয়ই বিশ্ববাসীর কাছে তা তুলে ধরতো। তারা যেহেতু তুলে ধরতে পারেনি, তাতে এও প্রমাণিত হয় যে যে চক্রটি দাবী করছে যে রায় ইতোমধ্যেই লেখা হয়ে গেছে – সেটি কতখানি অসার এবং ভিত্তিহীন!
আমি বিচারকের হয়ে রায় লিখে দেবো – এমন হাস্যকর কৃতিত্ব আমি দাবী করি না। যদি সত্যিই লিখে দিতাম, তাহলে নিশ্চয়ই এই কৃতিত্বের ভাগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার কোনো কারণ ছিল না। আমি এবং আরও যারা শুরু থেকেই এই বিচার প্রক্রিয়াকে জরুরী সাহায্যটুকু করবার চেষ্টা করে এসেছি ট্রাইবুনালেরই অনুরোধে – আমাদের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই একটি বিষয় স্পষ্ট করেছিলাম। সেটি হলো – এই সহযোগিতা আমরা করবো সম্পূর্ণ pro bono ভিত্তিতে, অর্থাৎ কোনো ধরণের পদ বা সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে না। আমরা যারা এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরো প্রক্রিয়াটিকে দেখেছি, তারা জানি কী পরিমাণ কষ্ট এবং ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশটি স্বাধীন হয়েছে। সেই দেশের মানুষের বহু প্রতীক্ষিত বিচারের প্রক্রিয়ায় যদি সামান্যতম সাহায্যও করতে পেরে থাকি, তবে তাকে আমরা নিজেদের সৌভাগ্য বলেই গণ্য করি।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যেখানেই এ ধরণের অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানেই বিচারকদের গবেষণা এবং ড্রাফটিংসহ অন্যান্য বিষয়ে সাহায্য করার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। উদাহরণ হিসেবে হেগ এর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), রুয়ান্ডা ট্রাইবুনাল, ইউগোশ্লাভিয়া ট্রাইবুনাল এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। আমাদের দেশ গরীব দেশ, সাধ্য এবং সামর্থ্য দু’টোই অত্যন্ত সীমিত। তাই সরকারের ইচ্ছে থাকলেও, জনগণ এবং নাগরিক সমাজের নানান আকাঙ্খা ও আশাবাদ থাকলেও বাস্তবতা অনেক সময়ই তাতে বাধ সেধেছে। অথচ আমাদের ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রে আইনটি যেমন নতুন, প্রক্রিয়াটিও তেমনি একেবারেই নতুন, এমনকি বিচারকদের জন্যও – সুতরাং সাহায্য গ্রহণের বাস্তব পরিস্থিতিটুকু সবসময়ই বিদ্যমান ছিল। একথাগুলো বিচারপতি হকের আদেশেও স্পষ্ট হয়েছে।
ট্রাইবুনালের ওপর ইতিহাসের সব চাইতে গুরু দায়িত্বটি ন্যস্ত। ১৯৭১ সালে সংঘটিত সমসাময়িক বিশ্ব ইতিহাসের তুলনাহীন আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার, চার দশকের বিচারহীনতার সংস্কৃতির নিরসন, লক্ষ লক্ষ ভিকটিমসহ দেশবাসীর দীর্ঘদিনের বিচারের প্রত্যাশা পূরণ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা এই গুরু দায়িত্বের অংশ। অন্যদিকে, তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র রাষ্ট্রের নানান ধরণের সীমাবদ্ধতাকে মাথায় নিয়ে এই ট্রাইবুনালকে কাজ করতে হচ্ছে প্রতিদিন। তেমনই এক পরিস্থিতিতে ট্রাইবুনালের পাশে দাঁড়িয়ে যতটুকু সম্ভব অভাব পূরণে এগিয়ে আসা আমাদের সবারই নৈতিক দায়িত্ব ছিলো বলে আমি মনে করি। এর ফলে কোনো আইন ভঙ্গ হয়নি, যা এমনকি ইকনমিস্টও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। ইকনমিস্টের গত ১২ ডিসেম্বর তারিখের বিশদ প্রতিবেদনের শেষাংশে এসে স্পষ্টই বলা হয়েছে – “We do not believe he (Ahmed Ziauddin) has broken any laws and cannot be held responsible for the actions of others” কোনো নৈতিকতার মানদণ্ডেরও লঙ্ঘন হয়নি, বরং নৈতিক দায়িত্ব পালিত হয়েছে।
এখন বিচারপতি হক এর স্বেচ্ছা পদত্যাগ এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহের ধুয়া তুলে যারা দাবী করছেন আবার গোড়া থেকে বিচার শুরু করতে হবে, তারা একেবারেই সঠিক বলছেন না। ১৯৭৩ সালের আইটির ধারা ৬(৬)-তে স্পষ্ট বলা আছে যে – “যে কোনো কারণে” ট্রাইবুনালের কোনো বিচারপতির পরিবর্তন হলেও ট্রাইবুনাল পুনরায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য গোড়া থেকে শুনতে বাধ্য নয়। বরং আইনে বলা রয়েছে – ইতোমধ্যেই মামলাগুলো সাক্ষ্যগ্রহণের যে পর্যায়ে রয়েছে ঠিক তার পর থেকেই বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে কোনো ধরণের ছেদ ছাড়াই। এই প্রকাশে সম্প্রতি দৈনিক সমকাল পত্রিকায় আইন কমিশনের মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শাহ আলম এর বিশ্লেষণটি আমার কাছে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত এবং সঠিক মনে হয়েছে।
নানা জনে নানান কথা বলেছেন। এদের মধ্যে কিছু কথা বলেছেন এমন কিছু মানুষ যারা শুরু থেকেই এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজে সচেষ্ট ছিলেন। তাদের কথার জবাব দেয়া সময়ের অপচয়মাত্র। কিন্তু আমি খুব দুঃখ নিয়ে লক্ষ্য করছি যে কিছু বিভ্রান্তি বিচারের পক্ষের মানুষদের অনেকের মধ্যেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। গত ১৫ ডিসেম্বর বিডিনিউজ২৪ডটকমের মতামত-বিশ্লেষণ শাখায় প্রকাশিত শ্রদ্ধাভাজন শাহরিয়ার কবিরের একটি মন্তব্য আমাকে খুবই ব্যাথিত করেছে। তিনি লিখেছেন: “আমি মনে করি, এখানে জিয়াউদ্দিন নামের যে-বিচারক ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনি আইন জেনে-বুঝে আমাদের ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। এই জিয়াউদ্দিন সাহেব নিজেকে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের ধারক বলে দাবি করেন। কিন্তু কোন সাহসে তিনি আমাদের বিচারপতির সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেন? আমি বলব, এ নিয়ে জোর তদন্ত হওয়া উচিত।”
তিনি আমার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার প্রয়োজন অনুভব করছি না। কোথা থেকে আমি এমন “সাহস” পেয়েছি, তিনি তেমন প্রশ্নও করেছেন। আমার বিনীত মতামত – বিষয়টি “সাহস” এর নয়, বিষয়টি সদিচ্ছার এবং সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি দায়িত্ববোধের। আমার সে দায়িত্ববোধ বা সাহায্য করার অধিকারের উৎস কী, তা বিচারপতি হক এর ৬ ডিসেম্বর দেয়া আদেশে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। শাহরিয়ার কবির আরও বলেছেন, এর মাধ্যমে নাকি জামাত-শিবির চক্রের হাতে “একটি সুযোগ তুলে দেয়া হল”। অন্য সমস্ত কিছু বাদ দিলেও, শুধুমাত্র কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করে আশা করি এতটুকু যে কারও পক্ষে অন্তত অনুধাবন করা সম্ভব যে নিজেদের ব্যক্তিগত সুনাম এবং পারিবারিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে, নিজেদেরকে এভাবে জড়িয়ে – আমি বা বিচারপতি হক নিশ্চয়ই সেটা করবো না। এক অদ্ভুত উটের পিঠে সওয়ার হয়ে যার বাড়িতে চুরি হয়েছে, তাকেই পাল্টা দোষী সাব্যস্ত করার নামান্তর এটি! আমি আরও আশ্চর্য্য হয়ে খেয়াল করেছি যে তার এই দীর্ঘ লেখাটির কোথাও তিনি হ্যাকিং অপরাধের নিন্দা জানিয়ে একটি শব্দও লেখেননি!
‘ইকনমিস্ট” পত্রিকার হঠাৎ (!) অবস্থান পাল্টানোর বিষয়ে প্রশ্ন তুলে শাহরিয়ার কবির লিখেছেন অতীতেও যুদ্ধাপরাধ বিষয় নিয়ে নাকি তারা প্রতিবেদন করেছে, তিনি নিজেও নাকি সে সবে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সে সব প্রতিবেদন নাকি এমন সমালোচনামূলক ছিল না। আমি জানি না তিনি সাম্প্রতিককালে ইকনমিস্ট পত্রিকাটি নিয়মিত পড়ছেন কি না। তবে তাদের সাম্প্রতিক কালের প্রায় প্রতিটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকার এবং যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে সমালোচনামুখর। জামাতের যে লবিইং প্রতিষ্ঠান ক্যাসিডি এন্ড এসোসিয়েটসের কথা তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, তাঁর হয়তো জানা নেই ওয়াশিংটনের বহু লবিইং ফার্মের কাছেই এখন ইকনমিস্ট পত্রিকাটিই লবিইং উদ্ভুত তথাকথিত সাংবাদিকতার একটি পছন্দের ভেন্যু, যা আমরা অতীতে ব্যারী শুমাখ্যার এর বক্তব্যেও জানতে পেরেছি। তবে শাহরিয়ার কবিরের সাথে যদি ইকনমিস্ট পত্রিকার ভালো যোগাযোগ থেকে থাকে আমি অনুরোধ করবো তিনি যেন অবশ্যই তাদের সাথে যোগাযোগ করে এই ইমেইল হ্যাকিং এবং তথ্য ফাঁসের উৎসের ব্যাপারে খোঁজ নেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি অনেক বেশী সাহায্যে আসবে মনে করি।
শ্রদ্ধেয় শাহরিয়ার কবির দীর্ঘদিন ধরে এই বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সময় সময় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর উদ্বেগ বা সমালোচনাগুলো বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে। কিছু সমালোচনা করা হয়ে থাকে একটি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, আবার কিছু সমালোচনা হল “একজন সুহৃদের সমালোচনা”। শাহরিয়ার কবিরের সমালোচনাগুলো আমি শেষোক্ত ধারার বলেই ধরে নিতে চাই। বিচারকদের একান্ত গোপনীয় বিষয়গুলো অবৈধভাবে যখন কোনো মতলবী মহল সংগ্রহ করে প্রচার করে, সেটা সকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের জন্যই নিঃসন্দেহে খুব হতাশার বিষয়। বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে এমন প্রতিবন্ধকতা তৈরির অপচেষ্টা সবার কাছেই নিশ্চয়ই উদ্বেগের। আর আমাদের কারও কারও জন্য, যাদের নাম ধাম উঠে এসেছে ইতোমধ্যে, তাদের জন্য সেটা নিছক হতাশার চাইতেও আরও বেশী কিছু। কারণ, ইতোমধ্যেই ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কারও কারও কাছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কাছ থেকে মৃত্যু-হুমকি পাঠানো হয়েছে, অত্যন্ত মানহানিকর প্রচারণাও চলছে পাশাপাশি। আর এর থেকে আমাদের পরিবারের সদস্যদেরও বাদ দেয়া হয়নি। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং সামাজিক মিডিয়ায় তাদেরও ছবি তুলে দেয়া হয়েছে। সে সব বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমরা ইতোমধ্যেই অবগত করেছি।
এই কথাগুলো উল্লেখ করলাম কয়েকটি কারণে। মূল কারণটি হল, আমরা মনে করি এখানেই এর শেষ নয়। বিচারকের একান্ত ব্যক্তিগত আলাপচারিতা এবং পত্র বিনিময়ের তথ্যাদি যখন বিচার প্রক্রিয়ার সাথেই জড়িত একটি বিশেষ মহলের হস্তগত হয়, তখন তা আমাদের ব্যক্তিগত হতাশা, কিংবা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং প্রাইভেসির বাইরেও আরও বড় ক্ষতির ইঙ্গিত বহন করে। যেমন: (১) লিক করা ফাইল থেকে এটা খুবই স্পষ্ট যে শুধু বিচারপতি হকের ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্যাদিই হ্যাকারদের হাতে পড়েনি, তার সাথে অন্যান্য বিচারকদের যোগাযোগের সমস্ত গোপনীয় তথ্যও যে এখন হ্যাকারদের হাতে তার আলামত স্পষ্ট; (২) বিচারকগণ সাক্ষী সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার কাস্টডিয়ান, এক পক্ষের সাক্ষীদের তথ্যাদি তারা অন্য পক্ষের কাছ থেকে গোপন রাখেন। বিচারকের নিজের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হওয়ার মাধ্যমে সাক্ষীদের সুরক্ষা সংক্রান্ত সকল গোপনীয়তাই এখন হুমকীর সম্মূখীন; (৩) শুধু যে বিচারকের কম্পিউটারেই হ্যাকিং বা আড়িপাতা হয়েছে, সেটা মনে করলেও কিন্তু ভুল হবে। ট্রাইবুনালের বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই যে এমনটি অতীতে করা হয়নি বা এখনও করা হচ্ছে না সেটার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। হঠাৎ করে একের পর এক সাক্ষীরা (যারা ছিলেন অত্যন্ত গোপনীয় সাক্ষী সুরক্ষা-ব্যবস্থার আওতায়) কেন ট্রাইবুনালের সামনে সাক্ষ্য দিতে হঠাৎ এতো ভীত হয়ে পড়লো বা সাক্ষ্য প্রদানে অসম্মত হল, বা হঠাৎ আসামী পক্ষের হয়ে সাফাই দেয়া শুরু করলো – সে বিষয়গুলোর প্রতিটিরই এখন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কারণ, গোপনীয়তা ভঙ্গের, এবং আড়িপাতার এই চর্চার মূল যে আসলে কতখানি গভীর এবং কতখানি বিস্তৃত তা জানাটা এই বিচারের স্বার্থেই জরুরী। এখনই সে ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উম্মোচন না করতে পারলে আগামীতে আরও বড় ধরণের ষড়যন্ত্রের পথ বিস্তৃত হবে।
২০০৯ থেকে দেশ এবং প্রবাসের একদল নিবেদিত প্রাণ ছেলেমেয়ে মিলে আইসিএসএফ (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম) নামের একটি নেটওয়ার্ক বা কোয়ালিশন শুরু করে। খুব দ্রুতই বিশ্বের প্রায় ৩৮ শহরের তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংগ্রামী কিছু তরুণ-তরুনীদের মধ্যে এই সংগঠনটি ছড়িয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গড়ে তোলা এই সংগঠনটিতে কোনো তথাকথিত স্তরবিন্যাস নেই। রাজনৈতিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতাহীন এই সংগঠনটিতে একে একে জড়ো হয়েছে ১৩টি সংগঠন, যার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নেতৃত্ব দেয়া সবচেয়ে প্রভাবশালী বাংলা ব্লগগুলোও। ব্যক্তি হিসেবে এসে এখানে যুক্ত হয়েছেন অক্সফোর্ড-কেমব্রীজ-হার্ভার্ডসহ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রখর মেধাবী দেশপ্রেমিক ছেলেমেয়েরা। ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও রয়েছেন দেশ-বিদেশের নাম করা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, রয়েছেন আইনজীবি, সাংবাদিক এবং নানা পেশাজীবিরা, রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এদের সবাই সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর রাতে বাড়ি ফিরে যে সময়টুকু পান তা ব্যয় করেন আইসিএসএফ এর সামষ্টিক কর্মযজ্ঞে। বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস করে এই ছেলেমেয়েদের বুকের ভেতর। এই নেটওয়ার্কের ভেতর কাজের সংস্কৃতিটিই একেবারে আলাদা, যা আমি আমার অভিজ্ঞতায় কখনো আর কোথাও দেখিনি। এরা কেউ নিজের ব্যক্তিগত নাম বা যশের জন্য কাজ করেন না। প্রচলিত ধারার কমিটি, সাব-কমিটি নির্ভর বিবৃতি সেমিনার এবং প্রচারনির্ভর কর্মকাণ্ডের বাইরে গিয়ে ওরা নিভৃতে গড়ে তুলেছে একের পর এক আর্কাইভ যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা ও গবেষণায় বর্তমান এবং আগামীর জন্য অমূল্য সম্পদ হতে পারে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সব ধরণের অপ-প্রচার এবং ষড়যন্ত্র এই নেটওয়ার্কের সদস্যরা মোকাবিলা করে আসছে সবল হাতে। দরকারের সময় এরাই টোবি ক্যাডম্যান, স্টিফেন র্যাপ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, বা গ্রেগ হার্টলিদের নানা বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতি এবং রিপোর্টগুলোর সমুচিত জবাব দিয়ে এসেছে। যে কারণে আসামী পক্ষের বিদেশী আইনজীবি এবং লবিইস্টদের বিষোদগারের শিকারও হতে হয়েছে আইসিএসএফ এর সদস্যদের বহুবার। নিরবে নিভৃতে এই সংগঠনটি বিচারের পক্ষে যে কী পরিমাণ প্রয়োজনীয় কাজ করেছে তা তাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করলেই যে কোনো সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হবে।
গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার ভয়াবহ লঙ্ঘন হয়েছে এখানে, সেটা যেন আমরা ভুলে না যাই। পরিতাপের বিষয় হলো, ইমেইল এবং স্কাইপ কথোপকথনগুলো ফাঁস হওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত ছিলো পুরো বিষয়ের যথাযথ তদন্ত, কারণ অন্য সব অপরাধের মতো সাইবার-অপরাধের আলামতও সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায়। এই অবস্থায় এটি নিশ্চিত যে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সবিস্তার পরিকল্পনার পর এই আক্রমণে হাত দেয়। আমি এবং বিচারক হক এই আক্রমণের ভুক্তভোগী। শুধু আমরা নই, হয়তো আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাও এই ধরনের আক্রমণের শিকার হয়ে থাকতে পারেন, যা উপরেই উল্লেখ করেছি। কিছুটা দেরীতে হলেও এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ এসেছে ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে। এই উদ্যোগকে আমরা আন্তরিক সাধুবাদ জানাই।
প্রাসঙ্গিক ডিজিটাল তথ্যগুলো যথাযথ প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ইতোমধ্যেই যাচাই করানো হয়েছে, এবং আমাদের প্রাপ্ত সমুদয় তথ্য খুব সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ইমেইল হ্যাকিং বা অডিও-রেকর্ডিং আসলে কোথা থেকে হয়েছে। এ বিষয়ে ঘটনার শুরু থেকেই যারা এমনকি আমার দেশ বা ইকনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশের আগে থেকেই বিভিন্ন ইন্টারনেট প্লাটফর্মে কথিত আলোচনার অংশবিশেষ নিয়ে মন্তব্য করেছে বা প্রকাশ করার হুমকি দিয়েছে, আমাদের কাছে সে সবেরও তথ্যপ্রমাণ এবং তালিকা রয়েছে। আমরা মনে করি সে সব বিশ্লেষণ করলে কারা এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত রয়েছেন সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যাবে। আমরা আমাদের প্রাপ্ত সব তথ্য এবং বিশ্লেষণ তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছি। আশা করি দ্রুতই এই বিষয়ে সবাই একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয়ে আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দু’জন মানুষের আলোচনার রেকর্ডকে নানাভাবে বিকৃত করা যায়। কোনো আলোচনাকে নিজের সুবিধার্থে পরিপ্রেক্ষিত বহির্ভূতভাবে উদ্ধৃত করে, কথার অংশবিশেষকে আগুপিছু জোড়া লাগিয়ে, কিছু প্রয়োজনীয় অংশকে সুপরিকল্পতভাবে বাদ দিয়ে ইচ্ছেমতো সাজিয়ে উপস্থাপন করা যায়। আইসিএসএফ এর তদন্তে অডিও-ফাইলগুলোর ওপর কারিগরি সম্পাদনা বা কাটাছেঁড়া করার সুস্পষ্ট আলামত খুঁজে পাওয়া গেছে। আর প্রকাশিত তথাকথিত ইমেইলগুলোর ক্ষেত্রে সে কথা তো আরও বেশী প্রযোজ্য। কারণ, আগুপিছু আলোচনার বা পরিপ্রেক্ষিত সম্বন্ধে কিছু না উল্লেখ করে মাঝখান থেকে বিচ্ছিন্নভাবে একটি ইমেইলের স্ক্রিনশট তুলে ধরা হলে তা তো বিভ্রান্তি তৈরি করবেই। এ কারণে বিশ্বব্যাপী সর্বত্র এভাবে অবৈধভাবে যখন কিছু সংগৃহীত হয়, এবং তা অসম্পূর্ণভাবে প্রচারের জন্য তুলে ধরা হয় – তার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে বিশেষ সন্দেহ পোষণ করেন সবাই। এবং এ জাতীয় তৎপরতাকে উন্নত বিশ্ব এবং বাংলাদেশেও গুরুতর অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হয়। এ ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত পত্রিকাগুলোকে চরম মূল্য দিতে হয়, যেমনটি আমরা দেখেছি ব্রিটেনের ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্লড’ এর ক্ষেত্রে। সাম্প্রতিক “লেভিসন তদন্তের” পর এই বিষয়ে সংশয়ের আর কোনো অবকাশই নেই।
আমি বা আমরা কোনো আইন ভঙ্গ করিনি, কোনো অন্যায় করিনি। বরং প্রয়োজনে আমাদের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়াকে যতভাবে সম্ভব সহায়তা দানের চেষ্টাই করে গেছি এবং যাবো। এই সময়ে সবার কাছে আমার একটি মাত্র বিনীত অনুরোধ থাকবে। এই বিচারের দিকে পুরো দেশ এবং নতুন প্রজন্ম অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, ১৯৭১ সালের ভিকটিম এবং তাদের পরিবারেরাও তাকিয়ে আছেন। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রগতির শিবিরে যদি কোনো বিভেদ বা ব্যক্তিগত মনোমালিন্য থেকেও থাকে তা যেন আজকের এই নতুন প্রজন্মের আশাটিকে পদদলিত না করে; আমরা যেন ওদের কাছে নিজেদের বিভেদ দিয়ে নিজেদের আর ছোটো না করি। এই বিচারটি শুরু করতে এমনিতেই ৪১ বছর দেরী হয়ে গেছে, সেটি আমাদের প্রজন্মেরই ব্যার্থতা, আমরা যেন সেটা ভুলে না যাই।
বিঃ দ্রঃ লেখাটি লিখেছেন বেলজিয়াম প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিন যিনি একজন আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্রেটিজিক ফোরাম ( আইসিএসএফ) এর সদস্য। উল্লেখ্য যে লেখাটি বিডিনিউজওপিনিয়নে প্রকাশিত এবং মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য অনুমোদিত।
বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয় এমন কোন আলোচনা হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়নি|এই স্কাইপের ঘটনাটা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে শাপেবর হিসেবেও দেখা যেতে পারে|ভবিষ্যতের বড় ধরণের ত্রুটিবিচ্যুতি থেকে সতর্ক হওয়া উচিত এখন থেকে|সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আর বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে জনগুরুত্ব বিষয় অবৈধ অনুপ্রবেশ করে দখলে নিয়ে প্রকাশ করা এক নয়| হ্যাকার ধরার দায়িত্ব সরকারের| সরকার যদি এ দায়িত্ব দায়সারা গোছের ভাবে পালন করে বিপদ সেখানেই|
বাংলাদেশ নামক দেশটা জন্মের পর থেকেই নানান ষড়যন্ত্রে ও চাপে এগুতে পারেনি। সেই ষড়যন্ত্র ও চাপের জাল এখনো কতটা ক্রিয়াশীল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত হাল-আমলের ঘটনাগুলো তার উদাহরণ।
বিচারটা ৭২/৭৩ হতে পারতো, হয়নি। ভারত চায়নি। আমেরিকাও চায়নি। রাশিয়া নামক সমাজন্ত্রের নামধারী দেশও চায়নি। বলা হয়, ঐ, অতগুলো শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিচার করা সম্ভব হতো না। এখন বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিচারের পক্ষে বাতাস কিছুটা অনুকূলে, কিন্তু সে কূলে তরী ভিড়ার আগেই মধ্যপ্রাচ্যের ঘোড়া যে এখনো দাপিয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা রাখে, তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
এখন আমরা ঘরে বসে আঙ্গুল না চুষে, ঘর থেকে বেড়িয়ে আসি, রাজপথের দখল আমরাও নিতে পারি, দেখানো নয়, করা দরকার। যে বিচারের দাবি করে ‘৯১ (সম্ভবত) এর গণ-আদালত স্থাপন করে আহমদ শরীফ, জাহানারা ইমাম সহ দেশের অগ্রসর চিন্তকরা হয়েছিলেন দেশাদ্রোহী, আসুন আমরা সবাই বিচারের দাবিতে দেশাদ্রোহী হয়ে উঠি।
লেখাটি প্রকাশ করে মুক্ত-মনা একটি চমৎকার দায়িত্ব পালন করল। অভিজিৎ রায় আর সংসপ্তকের কথোপকথনও বিশ্লেষণাত্মক যা বিষয়টির কিছু জটিল দিক বুঝতে সহায়তা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে মুক্ত-মনার অবস্থান আরও সুদৃঢ় হোক— এ প্রত্যাশা রইল।
প্রথমত, একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে একজন বিচারক কোনো ফোরামেই কথা বলতে পারেন না। স্কাইপি সংলাপে তিনি বিচারকের শপথ ভঙ্গ করেছন। এ জন্য শুধু পদত্যাগই যথেষ্ট নয়, আইন অনুয়ায়ী তার বিচার হওয়া উচিৎ।
দ্বিতীয়ত, বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত আলাপ-চারিতা ফাঁস করে ‘ইকনোমিস্ট’ ও ‘আমার দেশ’ সাংবাদিকতার নীতিমালা ভঙ্গ করেছে। তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ।
তৃতীয়ত, স্কাইপি হ্যাকিং-এর সংবাদমূল্য যা-ই হোক না কোনো, এর মোটিভ হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করা। এ দিক থেকে বিচার করলে নিঃসন্দেহে এটি গভীরতম অন্তর্ঘাত।
চতুর্থত, লেখকের মূল সুরের সঙ্গে একমত। ঘটনা যেদিকেই গড়াক না কেনো– যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরি।
জয় বাংলা!
@বিপ্লব রহমান,
এমন কোন আইন নেই যার কারণে বলা যায় যে বিচারকের সঙ্গে আইন বিশেষজ্ঞ বিচার সংক্রান্ত কথা বললে কোন আইনের কোন ধারা ভঙ্গ হয়। উনি কোন ওপেন ফোরামে কথা বলেননি। উনি একজন আইনজ্ঞের সাথেই ব্যক্তিগতভাবে কথোপকথন করেছিলেন। ফোনের বদলে ব্যবহার করেছিলেন আধুনিক টেকনোলজি। আমি কোন সমস্যা দেখি না এতে। এমনকি জিয়াউদ্দিন তার লেখায় লিখেছেন – ইকনমিস্টও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে – “We do not believe he (Ahmed Ziauddin) has broken any laws and cannot be held responsible for the actions of others”।
আপনার বাকী মন্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করছি। বস্তুত হ্যাকিং এর সুস্পষ্ট শাস্তির উল্লেখ আছে আমাদের আইনে –
আর বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত আলাপ-চারিতা ফাঁস করে ‘ইকনোমিস্ট’ ও ‘আমার দেশ’ সাংবাদিকতার নীতিমালা ভঙ্গ করেছে – এটা ঠিকই বলেছেন।
@অভিজিৎদা,
ভ্রান্তিটুকু ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আহমেদ জিয়াউদ্দীনকে স্কাইপি সংলাপ বিষয়ক অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য সাধুবাদ জানাই।
বাংলাদেশের গুরুত্বপদে আসীন ব্যক্তিবর্গের জন্য স্কাইপি সংলাপ কেলেঙ্কারি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। (Y)
কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন অফিসিয়াল কিংবা অফ দ্যা রেকর্ড কাজ কিংবা কথা বলতে হয়। এটা সবারই জানা। কাজের স্বার্থেই এমন করতে হয়। এটা গ্রামের চৌকিদার কিংবা ছোট প্রান্তিক ব্যবসায়ী-দোকানী যেমন করেন তেমনি করেন দেশের রাষ্ট্র-সরকার প্রধান কিংবা বিলিয়নেয়ার ব্যবসায়ী-শিল্পপতি। সমস্যা হল প্রকাশ হয়ে পড়লেই দূষণীয়। এক্ষেত্রে তাই হয়েছে। এখন কিছুই করার নেই। প্রকাশ হয়েছে এটাই “ফ্যাক্ট”। বিচারপতি অন্তত পদত্যাগ করেছেন; বাংলাদেশের কতক পলিটিশিয়ানদের মত “ঘ্যাঁট” ধরে পদ ধরে রাখেননি।
NSA কিংবা সমমানের প্রতিষ্ঠান ছাড়া এত জটিল কোড ভাঙ্গাটা একটু কঠিনই হবে। আর কম্পিউটার হ্যাকিং কিংবা এসব বিষয় হবেই; পশ্চিমা দেশেই হয় আর বাংলাদেশে তো……। কিভাবে হল কেন হল এটার পেছনে গবেষণা করা বৃথা কেননা সবই আয়নার মতই পরিষ্কার। যারা বিরোধী তারা তা করতেই চেষ্টা করবে। এজন্য সবারই সতর্ক থাকা উচিৎ। ভবিষ্যতের জন্য সাবধান থাকা উচিৎ, যেন সবাই প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্ক থাকেন।
বিচার বিভাগেরও মনে রাখা উচিৎ এটা হিজ/হার ম্যাজেস্টিস কোর্ট অথবা রয়্যাল কোর্ট না কিংবা ল-লর্ড এর ব্যপার স্যাপার নেই এখানে। আমাদের দেশের মত গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রে বিচার বিভাগ হল পিপলস কোর্ট। বিচারপতিগণ আইন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তবে অন্যান্য বিষয়ে নিশ্চয়ই নন। এজন্য তাঁদের জন্য পরামর্শ দাতা/এডভাইজার নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এখন যুদ্ধ অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াটা যেন গ্রহণযোগ্য ভাবে শেষ হয় সেদিকে আমাদের সবার লক্ষ্য রাখা দরকার।
কেনো জানি মনে হচ্ছে যে প্রোপাগান্ডার ক্ষেত্রে ধর্মান্ধ জামাতীদের চেয়ে আওয়ামী লীগ তো বটেই, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধপক্ষও অনেক পিছিয়ে।
এই সময়ে কে হ্যাক করলো, কিভাবে করলো এটা প্রকাশ করার চাইতে জরুরী দরকার যে বিচারকের কথোপকথনে সামগ্রিক বিচার প্রক্রিয়াটির কোনো ব্যপক পরিবর্তন হয় নি এটা এস্টাবলিশ করা। দেশের সাধারন মানুষ একটা মোটামুটি স্বচ্ছ বিচার চায়। বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা আনাই সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ন। আর বাংলাদেশের তদন্ত এবং মানুষের কাছে এসবের গ্রহন যোগ্যতা নিয়ে অতীতের রেকর্ড বলে যে কে হ্যাকিং করলো এটা দ্রুত বের হওয়ার আশা কম এবং কোনো তদন্তের কোনো ফল বের হলেও সেটাকে অস্বীকার করার মতো বিপুল জন গোষ্ঠীর অভাব হবে না।
জামাত যে বিচার বানচালে সর্বশক্তি দিয়ে ষড়যন্ত্র করবে এটাই স্বাভাবিক। কেউ কি এর অন্যথা আশা করেছিলো?
@সফিক,
কে হ্যাক করলো, কিভাবে করলো আমি মনে করি এটা জানা খুবই জরুরী। কে হ্যাক করলো জানতে পারলে এর মোটিভ বা উদ্দেশ্য সহ সবকিছু বেরিয়ে আসবে এবং অপরাধী চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া যাবে। কিভাবে করলো জানতে পারলে সতর্ক হওয়া যাবে, সে অনুযায়ী সেইফটি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। বিচারকের কথোপকথনে সামগ্রিক বিচার প্রক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন হবেনা, অন্তত অবস্তাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে।
বিচারক তৃতীয় পক্ষের সাথে কথা বলে কি কোনো আইন ভংগ করেছেন?
আমি একটা জিনিষ বুঝতে পারলাম না যে আহমেদ জিয়াউদ্দীন অফিশিয়াল ক্যাপাসিটিতেই বিচারক প্যানেলের পরামর্শক হতে কি অসুবিধা ছিলো? বিশষ করে তিনি যখন এই পরামর্শের কাজটা প্রো-বনো (বিনে পয়সায়) করছিলেন। এই ধরনের পরামর্শক নিয়োগে কি কোনো আইন গত বাধা ছিলো?
@সফিক,
আরেক প্রকার মৌলবাদী আছে, জানেন শফিক ভাই? এরা হলেন চোখ খোলা মৌলবাদী। নিজের দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ‘প্রতিপক্ষের তুলে দেয়া সুযোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও এদের কোন অনুভূতি হয় না, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত বিচারপতির কথোপকথন হ্যাক হলেও এদের কোন চিন্তা হয় না, সেই সাইবার চোর (হ্যাকার নয়, ক্র্যাকার)- দের যখন অবিস্মরণীয় বীরের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়, তখনো তারা কোন সমস্যা দেখেন না, তথ্য চুরি করে সেই চুরির দায়ে গৃহকর্তা (যার বাড়িতে চুরি হয়েছে)- কেই যখন অভিযুক্ত করা হয় বা পুরো বিচার-প্রক্রিয়া আবার প্রথম থেকে শুরুর দাবী জানানো হয়, তখনো এরা থাকেন আশ্চর্য রকম নরম, নীরব আর নিরুত্তেজ। কিন্তু যখন খালেদার ভারত সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, বা বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জামাতি সংযোগের ভিন্ন ব্যাখ্যার কথা বলা হয় (মূল ছাত্রলীগের কর্মীদের দোষ স্বীকার করে নিয়েই), তখনই এরা তেড়ে আসে নীরবতা ভেঙ্গে, ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে পড়ে, একজন সাধারণ মন্তব্য-কারীকেই হত্যাকারী সাব্যস্ত করতে তারা পিছপা হয় না। বলছিলাম কি, এই দ্বিতীয় শ্রেণীর চোখ-খোলা মৌলবাদীদেরও চিনে রাখা জরুরি, সফিক ভাই।
আবার দরকার ছিল না। আগেই বলেছিলাম, জ্ঞান হারাচ্ছি! আপনিও জানেন, অন্ধ মৌলবাদীদের দিয়ে কিছু হয় না। বরং, চক্ষু-জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়েই হয়। এখন সর্বত্র তাদেরই দাপট। টিভি খুললেই পিয়াস করিম, আসিফ নজরুলরা ভেসে উঠেন। পিয়াস করিম বলছিলেন যে, উনি কয়েক দশক ধরে ওয়ার ক্রিমিনাল ট্রায়াল স্টাডি করছেন, আর সেই জ্ঞান থেকে তার মনে প্রতীতি জন্মেছে যে, বর্তমান বিচার কার্য সঠিকভাবে হচ্ছে না (যদিও এই ট্রাইব্যুনালে এমনকি আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে, যা অনেক বিচার-প্রার্থীরই মনো-পুত হয়নি, কারণ তা বিশ্বে আর কোন ওয়ার ট্রাইব্যুনালে রাখা হয়নি)। পিয়াস করিম আরও বলেন, মাহমুদুর রহমানের উপর অত্যাচার (তার ভাষায়) করে আমরা নাকি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকেই কলঙ্কিত করছি। কারণ তার কাছে, পাইক্কা-রাজাকার কর্তৃক বুদ্ধিজীবী নির্যাতন-হত্যা আর বর্তমান সরকার কর্তৃক আমার দেশ সম্পাদকের উপর নির্যাতন (মানে, হ্যাকিংয়ের কারণে মামলা দায়ের) একই ঘটনা। তাই বলছিলাম, আমাদের দিয়ে হবে না। পিয়াস করিমের মত চক্ষু জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়েই হবে। এখন তাদেরই যুগ। সময়।
বড়দিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা, শফিক ভাই!
আমি সাধুবাদ জানাই আহমেদ জিয়াউদ্দিনকে এবং সেই সাথে আইসিএসএসএফ এর স্বাপ্নিক তরুণদের, যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগতভাবে জিয়াউদ্দিন সাহেবের সাথে আমার পরিচয় নেই, কিন্তু আমি জানি তিনি বাংলাদেশে গণহত্যার উপর একজন বিশেষজ্ঞ। বহুদিন ধরেই তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার যেন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, তার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন। কেউ কোন সহায়তা চাইলে নিঃস্বার্থভাবে সহায়তা করছিলেন। বিচারপতি নিজামুল হক যদি তার সাথে কথা বলে কোন কিছু পরিষ্কার করে নিতে চান, তবে এত সমস্যা কেন হল বুঝলাম না। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গণহত্যার মত বিচারের কাজ কিভাবে করতে হয়, এ সম্পর্কে কারোই সঠিক ধারণা নেই, এমনকি বিচারকদেরও না। আমাদের সবার জন্যই প্রক্রিয়াটি একটি নতুন পরীক্ষা। এমতাবস্থায় জিয়াউদ্দিন সাহেব যদি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কোন সহায়তা করে থাকেন, তাতে আমাদের খুশিই হওয়া উচিৎ। নিঃস্বার্থভাবে যে কাজের জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিৎ, তার বদলে তাদের করা হয়েছে আসামী। বিচারপতি নিজামুল হককে তো পদত্যাগই করতে হল। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগা দেশ।
যারাই স্কাইপের কথোপকথন শুনেছেন তারাই দেখেছেন কী গভীর মমতা তারা ধারণ করেন দেশের জন্য। তারা বিচার নিয়ে কথা বলেছেন, দেশ নিয়ে কথা বলেছেন, সেই সাথে কিছু হাল্কা কথাও বলেছেন, যা আমরা সাবাই বলি সাধারণ আড্ডায়। অথচ সেই কথাগুলোকে কেন্দ্র করে কত জল ঘোলা করা হল, দেখুন!
নিজামুল হক কথায় কথায় বলেছিলেন ‘গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া। তারা একটা রায় চায়।’ যেন কত বড় ভুল করে ফেলেছেন এটা বলে! এ ধরনের কথা তো আমরা আড্ডায় সচরাচর বলিই, সমস্যা কি? অথচ ইকোনমিক্স এবং আমার দেশ বানিয়ে দিল – সরকার থেকে নাকি চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
যাহোক এই লেখার মাধ্যমে অনেক কিছুই পরিষ্কার হল। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ আবারো।
একটা সরাসরি প্রশ্ন করি । অপরাধ ট্রাইবুনালের সম্মানিত চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে আপনার কথোপকথন এবং ই-মেইল য়োগাযোগ কোন অবৈধ উপায়ে কোন তৃতীয় পক্ষ হস্তগত করেছে না আপনাদের দুজনার কেউ সেটা তৃতীয় পক্ষের কাছে ফাঁস করেছেন ?
@সংশপ্তক,
এটা পড়েন।
@অভিজিৎ,
২৫৬ বিটের AES এনক্রিপশনের স্কাইপ কথোপকথন হ্যাক করা বাস্তবে অসম্ভব না হলেও এটার জন্য যে অবকাঠোমো দরকার তা ‘সরকারী সংস্থা’ ছাড়া সাধারণ এমনকি প্রতিভাবান হ্যাকারদের পক্ষে খুবই কঠিন। আমি আমার স্কাইপ একাউন্ট হ্যাক করার মুক্ত চ্যালেন্জ দিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। পারলে ভাল পুরস্কার দেব ইউরোতে । সিরিয়াস কেউ চ্যালেন্জ নিক , টাকা আমি আপনার হাতে আগাম তুলে দেব কেউ যদি নিশ্চয়তা চায়।
@সংশপ্তক,
স্কাইপ হ্যাক করা হয়নি। হ্যাক সম্ভবতঃ করা হয়েছে নিজামুল হকের কম্পিউটারই। স্কাইপ যেভাবে কাজ করে তাতে করে শুধু স্কাইপের পাসওয়ার্ড চুরি হলে অন্যত্র বসে কেউ স্কাইপের কথাবার্তা চুরি করতে পারবেনা, বড়জোর স্কাইপের কনটাক্ট লিস্ট ফিস্ট এই জাতীয় কিছু পেতে পারে, পেতে পারে কিংবা পেতে পারে অফলাইনে পাঠানো টেক্সট চ্যাট মেসেজ এর নোটিফিকেশন । কাজেই ধারণা করা যেতে পারে, বিচারপতি নিজামুল হকের কম্পিউটারে স্পাইওয়ার বসানো হয়েছে, যা ওখান থেকে অডিও রেকর্ড করেছে, করার পরে ফাইলগুলা ট্রান্সফার করেছে হ্যাকারের কাছে, এবং এর পাশাপাশি কিস্ট্রোক লগিং করে উনার সব পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়েছে, এভাবে হয়তো কপি করে নেওয়া হয়েছে কম্পিউটারে থাকা সব ফাইল। শুধু স্কাইপ নয় বিচারপতির ইমেল সহ অনেক কিছুই হ্যাক করা হয়েছে, তার ইমেইলের কপি কোন সাইটে যেন প্রকাশও করা হয়েছে। আপনি ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই পাবেন। স্কাইপ হ্যাক করে তো আর জিমেইলের মেল চালাচালি পাওয়া যায় না। এটা কেবল পাওয়া যায়, কারো কম্পিউটার পুরোপুরি হ্যাক হলেই। কেমন করে হ্যাক করা হল? এটা একটা উন্মুক্ত প্রশ্ন। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। হ্যা, স্পাইওয়ার দিয়ে সহজেই এটা করা সম্ভব, যেটা উপরে বলা হয়েছে। এটা বলছি কারণ, যারা কম্পিউটার সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নন, এরকম বয়স্ক ব্যক্তিদের দেখেছি ‘আপনাকে গিফট কার্ড পাঠানো হয়েছে’ – এমন সব স্প্যাম লিঙ্কে ক্লিক করে বসে, আর সুট্ করে স্পাইওয়্যার নেমে যায় পিসিতে। কিংবা এমনো হতে পারে, যারা হক সাহেবের বাসায় বা অফিসে কম্পিঊতার বা ইন্টারনেট বসানোর কাজ করেছেন, তাদের কেউ কাজটা করেছেন। বাংলাদেশের আইএসপি প্রোভাইডারদের অনেকেই জামাতি সেটা যেন ভুলে না যাই, এমনকি মুক্তমনাকেও ব্ল্যাকলিস্ট করে রেখেছে অনেক আইএসপি। কিংবা হতে পারে MBI Munshiর মতো কোন সুপ্রিমকোর্টে ঘাপটি মেরে বসে থাকা জামাতী ছাগু টাইপ তার সাব-অর্ডিনেট, স্যারের অবর্তমানে পিসিতে বসে পড়ে ফাইলপত্র হাতিয়ে নিয়েছেন, কে জানে!
যেই কাজটা করুক, সে সমস্ত পাবলিশ করা স্ক্রিনশট থেকে দেখা যায়, বিচারপতি হকের জিমেইল একাউন্টের সবকিছু প্রকাশ পেয়েছে। কাজেই এখানে স্কাইপ হ্যাক করা হয়নি, পাসওয়ার্ডও রিসেট করা হয়নি (সেটা করলে ৬ মাস ধরে গোপনে রেকর্ডিং চালাতে পারতোনা চোরের দল)। আপনি উইকি এবং সিকিউরিটির এক্সপার্ট রাগিব সাহেবের এই ফেসবুক নোটটাও দেখতে পারেন।
এখন কথা হচ্ছে হ্যাক যে জিয়াউদ্দিন সাহেবের কম্পিউটার থেকে হয়নি তার নিশ্চয়তা কি? সেজন্যই আপনাকে লিঙ্কটা দিলাম। আপনি সম্ভবতঃ পড়ে দেখেননি। লেখাটি পড়ুন এবং নিজেই যাচাই করুন, ইউটিউব থেকে –
@অভিজিৎ,
সচলের লেখাটা পড়েছি। কিন্তু এইসব হ্যাকিং হাইপোথিসিসের চাইতে নিজেই টেপ করা এবং অন্যের হাতে সেটা তুলে দেয়াটা কি সহজ না বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে যেখানে জামাতের হাজার কোটি টাকার বাজেট আছে ট্টাইবুনালকে সাবোটাজ করার জন্য। এই দুজনের কোন একজনকে সারা জীবন বসে খাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়ার মত সামর্থ জামাতের আছে নিজামী গোলাম আজম গংয়ের ফাঁসি ঠেকাতে । এই দুজনের তো হারানোর তেমন কিছুই নেই যদি তুলনা করা যায়।
@সংশপ্তক,
হাঃ হাঃ সেটা আমি বলতে পারব না। হক সাহেব কেমন জানি না, তবে জিয়াউদ্দিন সাহেবের কাজের সাথে আমার যতটুকু পরিচয় হয়েছে তাতে উনাকে সৎ এবং গণহত্যার বিচারের ব্যাপারে আত্মনিবেদিতই মনে হয়েছে।
এখন টাকা খেয়েছে কিনা – এই হাপোথিসিস প্রমাণের দায়ভার তার উপরেই যিনি এটা দাবী করবেন। ছাগুরা তো এটাও দাবী করে মুক্তমনা যারা করে তারা নাকি ইহুদী-নাসারাদের পয়সা খায়। চিন্তা করে দেখেন ইহুদীদের পয়সাও তো মাশাল্লাহ কম না। 🙂 আমিও সারা জীবন বসে খেতে পারতাম, যদি হতচ্ছাড়া আদিল মাহমুদ যদি ধোঁকা দিয়ে সমস্তা টাকাগুলা নিয়ে না যেত। :))
@অভিজিৎ,
একই কথা তো হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য , প্রমান কই ? হ্যাকার কে কি ধরা গেছে ? এদেরকে ফেইস ভ্যালুতে নেয়ার আগে অনেকবার ভাবা দরকার। কেউ ঘুষ খায়না এটার চাইতেও নড় প্রশ্ন কতটুকু খায় না ?
@সংশপ্তক,
ওয়েল হ্যাকিং এর ক্ষেত্রে এটুকু বলা যায় হক সাহেবের পিসির অনেক কিছুই (স্কাইপের কথোপকথোন, জিমেইলের কপি ইত্যাদি) বেহাত হয়েছে। এমনকি সম্ভাব্য হ্যাকারের পরিচয় সংক্রান্ত একটা লেখা পত্রিকাতেও এসেছিল । তবে জামাতের থেকে টাকা খাওয়ার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। এ ব্যাপারে কোন কিছু আমার জানা নেই। তাই মন্তব্য করছি না।
@অভিজিৎ,
নন লিনিয়ার অডিও এডিটরে এডিট করে এটা বানানো যায় মাত্র কয়েক মিনিটে ।
@সংশপ্তক,
সেটা যায়। কিন্তু করা হয়েছে কিনা সেটা প্রশ্ন। ওরা যখন স্কাইপের কথোপকথন হাতে পেয়েছিল, তারা ভেবেছিল এটা সোনার খনি। আনকাট অবস্থাতেই প্রকাশ করেছে। এমনকি আমার দেশে প্রকাশিত কথোপকথনও এক বর্ণ রদবদল করেনি। কারণ এভাবে প্রকাশ করলেই বোমা ফাটিয়ে দেয়া যাবে বলে ভেবছিল। সেটাই করেছে ইউটিউবে তোলার সময়েও। কিন্তু এটা করেই কুড়াল মেরেছে তারা নিজেদেরই পায়ে। সরাসরি মাইকে ধারণকৃত বিচারকের কথা স্পষ্ট কথা থেকেই অনুমান জোরালো হয় যে, তার পিসিতেই কিছু একটা বসানো হয়েছিল। পরে তো দেখা গেল শুধু স্কাইপ-এর কথা নয়, তার ইমেইল সহ অনেক কিছু তারা হাতাতে পেরেছে।
যাহক, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। …
@অভিজিৎ,
যে কোন তদন্তের ভিত্তি ফিজিক্যাল এভিডেন্স এবং এক্ষেত্রে হক সাহেব এবং জিয়া সাহেবের পিসি ফরেনসিক তদন্তের জন্য জব্দ করা হয় নি। হ্যাকিংয়ের দাবী কারা করছে ? এর সমর্থনে উনাদের পিসি থেকে এমন কোন ফিজিক্যাল প্রমান পাওয়া গেছে ? তারা কি কেবল স্কাইপেই কথা বলতেন না ফোনও ব্যবহার করেছেন ? ফোনে আড়ি পাতার কথাও উড়িয়ে দেয়া কি যায় ? কিন্তু ক্ষতিকর তথ্য ফাঁস হওয়ার দায় দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে এই দুই ব্যাক্তিরই । তাদের কি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়েছে ? কেন হয়নি ? পদত্যাগ করলেই কি হক সাহেব তার দায়িত্ব এড়াতে পারবেন ? অফিসিয়াল সিক্রেসী এ্যাক্ট মেনে কি উনি উনার দায়িত্ব পালন করেছেন সেটাও দেখতে হবে।
জামাতীদের এসব করে যদিও কোন লাভ হবে না শেষ পর্যন্ত । এখন তারা শোনা যায় কিছু বামপন্হীদের দিয়ে মৃত্যদন্ড প্রথা রহিতকরণ আন্দোলন করার চেষ্টা করছে । এরা বহু মানবাধিকার এনজিওকে মোটা টাকা ডোনেশন দেয় যাদের মধ্যে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক বড় একটি সংস্হা আছে এবং লন্ডনেও এদের লবী খুবই শক্ত। সরকারের উচিৎ এসব গায়ে না মেখে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা।
@সংশপ্তক,
এটা করা উচিৎ ছিল, এবং সেটা সাথে সাথেই। এটা যত দেরী হবে তদন্ত তত বিলম্বিত হবে। বাংলাদেশে সম্ভবতঃ পারষ্পরিক দোষারোপে যে সময় ব্যয় করা হয়, তার সিকিভাগের একভাগও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ব্যয় করা হয় না। তারপরেও তার কম্পিউটার যে পরীক্ষা করা হয়নি, তা কিন্তু নয়। মুশকিল হল, বহু ডামাডোলের ভীরে এই ছোট নিউজটা হয়তো অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে –
এ ব্যাপারটা সত্য হলে হ্যাকিং এর ব্যাপারটা যে নিজামুলের দিক থেকেই হয়েছে, জিয়াউদ্দিনের দিক থেকে নয়, আমার আগে বলা এ সংক্রান্ত অনুমান জোরালো হয়। অডিও রেকর্ডিং এ নিজামুলের কথা স্পষ্ট শোনা যাওয়া, জিয়াউদ্দিনের কথা কাটা কাটা, নিজামুলের জিমেইলের কপি বিভিন্ন সাইটে প্রকাশ সবকিছুই কিন্তু অভিন্ন উৎসের দিকে নির্দেশ করে।
শুধু কম্পিউটার জব্দ বা জিজ্ঞাসাবাদই না, কিভাবে এবং কোন সুত্র ধরে সেগুলো আমার দেশ এবং ইকোনমিক্সে গেছে সেটা জানাও জরুরী। আমি ফেসবুকে দেখেছি আমার ব্লগে ব্যাপারটা প্রকাশের আগে থেকেই এক ফেসবুক ইউজার হম্বিতবি করে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন – আগামীকাল আমারদেশ একতা বোমা ফাটাতে যাচ্ছে – এই বলে। দড়ি ধরে সবাইকে জব্দ করা উচিৎ ছিল।
বাংলাদেশে এরচেয়েও বড় বড় ‘অপরাধ’, যেমন – খুন রাহাজানি, অগ্নিকান্ডে গার্মেন্টস শ্রমিকের অসহায় মৃত্যুর পরেও কোন মন্ত্রী দায় দায়িত্ব নেয় না। বলে, ‘আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়া গেছে’ টাইপ কথা। সেখানে হক সাহেব পদত্যাগ করেছেন যাতে বিচার নিয়ে কেউ জল ঘোলা করতে না পারে। কম্পিউটার এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তার অদক্ষতা ছিল, তার মাশুল তিনি পদত্যাগ করেই দিয়েছেন, কিন্তু নাসিম সাহেবের চরিত্র যে আসলে ‘জামাতীদের কাছ থেকে টাকা খাওয়ার মত’ খারাপ নয়, সেটা তার কাছের লোকজন জানেন (দেখুন এখানে)। আমার মনে হয় উনাদের নিয়ে এখন আমরা না পড়ে আসুন বিচার প্রক্রিয়া যাতে আবারো সুষ্টু পথে যেতে পারে, সেদিকে মনোযোগী হই।
(Y) একদম ঠিক কথা।
@সংশপ্তক,
(Y)
আর আপনার গোয়েন্দা মন থেকে উগড়ে আসা রিলেটেড আর রিলেটিভ সন্দেহগুলো আলোচনাকে আকর্ষণীয় আর শক্তিশালী করেছে, মুক্তমনার সাথে যা খুব সুন্দর যায়। তবে অবাক হয়েছি, শ্রদ্ধেয় শফিক ভাইয়ের আপত্তি না দেখে। বিশ্বজিৎয়ের একটি ছবিতে এক শিবির কর্মীর ছবি রণদীপমদার সূত্রে পেয়েছিলাম এবং লিংকটি ঐ সংক্রান্ত আলোচনায় দিয়েছিলাম, ভিন্নভাবেও যাতে দেখা যায় একটি ঘটনাকে সেই আশায়। কিন্তু উনি প্রচলিত ঘটনার কোন ভিন্নধর্মী ব্যাখ্যাই সহ্য করতে পারেন না, যেমনটা পারেন নি, মালালা’র ক্ষেত্রে, তেমনটি বিশ্বজিৎয়ের ক্ষেত্রেও। সেই হেতু ধরে নিয়েছিলাম, যেহেতু সবার কাছে এখন দুই বিচারক বা বিচার বিশেষজ্ঞ ইতিবাচক ভাবমূর্তিতে গড়া রয়েছেন, তখন আপনার সন্দেহ-পূর্ণ প্রশ্নগুলো শ্রদ্ধেয় শফিক ভাইকে ফের উত্তেজিত করে ফেলে কিনা! কিন্তু দেখলাম, এবার উনি আশ্চর্যজনক-রকম নীরব। বিষয়টি বুঝতে পারছি না। আপনার ডিটেকটিভ জ্ঞান কি বলে, সংশপ্তক ভাই?
@কাজি মামুন,
ধরুণ , এক ব্যাংকের শাখায় হটাৎ ১০ লাখ টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না , লাপাত্তা । এক্ষেত্রে ঐ শাখার দায়িত্বশীল ব্যাংক ম্যানেজারের কি করণীয় আছে ? উনার সামনে আপাতত তিনটি পথ খোলা আছে।
ক) ব্যাংক ডাকাতির রিপোর্ট করবেন পুলিশের কাছে এবং এক্ষেত্রে ডাকাতি যে হয়েছে তার প্রমাণ লাগবে। চুরির রিপোর্ট করলে কিভাবে চুরি হয়েছে সেটার প্রমাণ দেখাতে হবে। ভূত টাকা নিয়ে গেছে এটা রিপোর্ট করলে ব্যাংক ম্যানেজারকে ভূত ছাড়ানোর জন্য রিমান্ডে নেয়া হবে।
খ) রিপোর্ট করবেন যে , বাইরের অডিটর আনা হয়েছে এবং তাদের কেউ কিছু করেছে হিসাবের খাতায়। এক্ষেত্রে অডিটর আনার আগাম অনুমতিপত্র দেখাতে হবে এবং অডিটর রেজিস্ট্রিকৃত কি না সেটাও দেখাতে হবে। রেজিস্ট্রহীন অডিটরকে ব্যাংকে প্রবেশ করতে দিলে অধিকতর তদন্তের জন্য ব্যাংক ম্যানেজারকে রিমান্ডে নেয়া হবে।
গ) পরদিন সূর্যোদয়ের আগেই প্রয়োজনে শ্বশুরবাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা আনিয়ে ব্যাংকের হিসাব মেলাবেন। :))
@কাজি মামুন,আপনার লজিক্যাল সেন্স সত্যিই প্রশংসার। যেখানে প্রকাশ্যে সবাই দেখেছে যে ছাত্রলীগের ছেলেরা একজনকে কুপিয়ে মারছে সেখানে একটা আনরিলেটেড ছবির সুত্র ধরে জল ঘোলা করার চেষ্টা আর অমীমাংসীত একটা সাইবার ক্রাইমের ঘটনা যেখানে সরকার তড়িঘড়ি করে নিজেই আলোচনা-সমালোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে সেটা নিয়ে স্পেকুলেশনকে এক করা দেখা সুন্দর এনালজি স্কিল প্রদর্শন করছে।
আপনাকে দিয়ে হবে।
@সফিক,
এ কথাটি এখন পর্যন্ত কেউ বলেনি। সুতরাং, বুঝুন আমার অবস্থা! মুহুর্মুহু জ্ঞান হারাচ্ছি, শফিক ভাই! 🙂
সরকার কেন তড়িঘড়ি করল, এ বিষয়টি নিয়ে এখন অব্দি কোন প্রশ্ন করতে দেখা যায়নি আপ্নায়, আর তাই তো অবাক হয়েছিলুম! আসিফ নজরুল তো বলেছেন, সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে ‘আমার দেশ’ সম্পাদক বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাদে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবেন! আর যে সাংবাদিকরা ঐ ‘সাহসী’ সম্পাদকের উপর পরিচালিত সরকারী নির্যাতনের (তার ভাষায়) প্রতিবাদ করবে না, তাদের খুব যৌক্তিকভাবেই পরবর্তী সরকার (মানে, বিএনপি-জামাতের সরকার) কর্তৃক ভয়াবহভাবে নির্যাতিত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। আসিফ নজরুলের এই ‘তড়িঘড়ি সার্টিফিকেট’ আর ‘ তড়িঘড়ি হুমকি’ প্রদানের কারণ কি??? আপনার লজিক্যাল সেন্স (যার উপর আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে) কি বলে, শফিক ভাই?
তাছাড়া, মওদুদ আহমেদ গংরা যে তড়িঘড়ি করেই নিজাম উদ্দীনের পদত্যাগ দাবী করলেন, এবং বিচার একেবারে প্রথম থেকে শুরু করার জোরাল আর ‘তড়িঘড়ি দাবী’ তুললেন, সে ব্যাপারেই বা আপনার লজিক্যাল সেন্স কি বলে, জানতে মঞ্চায়, শফিক ভাই! বড় মঞ্চায়!!
@কাজি মামুন,বিশ্বাস অন্ধ মৌলবাদীদের একটা ক্লাসিক লক্ষন হলো তর্ক বিতর্কে তারা কখনোই একটা পয়েন্টে স্টিক করে না। কোনো একটা কথায় প্রতিউত্তর আসলেই প্রসংগ থেকে প্রসংগান্তরে যেয়ে বিভিন্নভাবে যেভাবে হোক একটা আঘাত হানার চেষ্টা করে। এর সরাসরি কারন হলো যে প্রসংগে থাকলেই নিজের যৌক্তিক কাঠামোর দূর্বলতাগুলো প্রকাশ হয়ে পড়ে।
এজন্যেই বলেছিলাম আপনাকে দিয়ে হবে।