ইদানিং একটা বিষয় তিক্ত বিতর্কের সৃষ্টি করছে মুক্তমনা ফোরামে। অনেক মুক্তমনা সদস্য ইসলামের সমালোচক সদস্যদের ইসলাম বিদ্বেষী, ইসলাম ব্যাশার, মুসলীম বিদ্বেষী ইত্যাদি বিশেষণে সম্বোধন করে ব্যক্তি আক্রমণাত্মক ভাষায় তিরস্কার করছেন। ব্যাশার কথাটি বহুল ব্যবহৃত। কি অর্থ এর। ইংরেজীতে ব্যাশিং শব্দের অর্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে জোরে আঘাত করা। ইসলামকে জোরে আঘাত করা মানে কি, অবশ্যই কড়া সমালোচনা করা। তাহলে ইসলাম ব্যশিং এর মানে দাঁড়ায় ইসলামের কড়া সমালোচনা। ইসলামের সমালোচনা কে মৃদু বা কড়া এই ভাবে শ্রেনীভুক্ত করাটাই অর্থহীন । ইসলামের সমালোচনা ব্যাপারটাই অনেকের কাছে কড়া জিনিষ। তথ্য যুক্তি দিয়ে ইসলামের যুক্তিনিষ্ঠ সমালোচনা করাটা নরম বা কড়া এভাবে বিভক্ত করা যায় না। যাহোক কেউ “ইসলামের কড়া সমালচনাকারী” হলেও একজন মুক্তমনাদর কাছে তা অতটা খারাপ লাগার কথা নয়। কারণ সমালোচনা কড়া হোক, নরম হোক, সমালোচনা মুক্তচিন্তা চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংগ। কিন্তু ইসলাম ব্যশিং বলে একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বা আবেগ সৃষ্টির চেষ্টা সুস্পষ্ট। আসলে “ইসলাম ব্যাশার” এই প্রকাশ ভঙ্গীতে মুসলীম ব্যাশার বা বিদ্বেষী বোঝানোর একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে। কিন্তু ইসলাম ব্যাশিং আর মুসলীম ব্যাশিং এক নয়। এর পার্থক্যটা সুস্পষ্ট, পরে আসছি এর আলোচনায়। এই ইসলাম ব্যাশিং আর মুসলীম ব্যাশিং কে প্রচ্ছন্ননভাবে সমার্থক করার চেষ্টা ইচ্ছাকৃত। কখনো তারা সরাসরিই মুসলীম বিদ্বেষী কথাটাই ব্যবহার করেন। মুসলীম ব্যাশিং কথার ব্যবহার দ্বারা মুসলীমদের ভিক্টিম হিসেবে দেখানোর ইচ্ছাটাও প্রচ্ছন্ন। একই কথা প্রযোজ্য ইসলাম বিদ্বেষ/বিদ্বেষী কথায়। সমালোচনাকে বিদ্বেষ বলে লেবেল দিলে ইসলাম সমালোচকদের ইসলাম বিদ্বেষী এবং প্রচ্ছন্নভাবে মুসলীম বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এতে মুসলীমদের ভিক্টিম হিসেবে গন্য করে তাদের সমর্থনে অবস্থান নেয়া হয়। আলোচনার সুবিধার্থে যে মুক্তমনারা ইসলাম ব্যাশিং বা মুসলীম ব্যাশিং এর ধুয়া তুলে ইসলাম ব্যশারদের ভর্ৎসনা করেন তাদের “এন্টি ইসলাম-ব্যাশার” (অর্থাৎ ইসলাম-ব্যাশারদের ব্যাশার) বলে উল্লেখ করছি। কেন এন্টি ইসলাম-ব্যাশার মুক্তমনাদের এরকম কল্পিত মুসলীম ভিক্টিমের সমর্থনে অবস্থান নেয়া, বিশেষ করে যারা নিজেদের নাস্তিক বলে দাবী করেন? যেসব এন্টি ইসলাম-ব্যাশার মুক্তমনারা মুসলীম বংশে জন্ম নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে একটা কারণ হতে পারে নাস্তিক হয়েও পরিচয় সঙ্কটের কারণে মুসলীম জাতীয়তাবোধের উপরে উঠতে পারছেন না তারা। ব্লগার সফিক তাঁর এক মন্তব্যে এরকম কথাই বলেছেন। তাই ইসলামের সমালোচনাকে, বিশেষ করে একই বাক্যে যখন অন্য ধর্মকে একই মাত্রায় ব্যাশিং করা না হয় তখন তারা এতে মুসলীম জাতির সদস্য হিসেবে (ইসলামে বিশ্বাসী হিসেবে নয়) একটা হীনমন্যতায় ভুগেন। এই হীনমন্যতাকে কাটিয়ে উঠার জন্য তারা ইসলামের সমালোচনাকেই ব্যাশিং আখ্যা দিয়ে এটাকে একটা হীন কাজ হিসেবে চিত্রিত করতে চান। আবার তারা সব ধর্মই সমান পুতিগন্ধময়, সমান বীষ্ঠাপূর্ণ এইসব বলেও এই হীনমন্যতা থেকে রেহাই পেতে চেষ্টা করেন। কারণ সব সমান খারাপ হলে তো কোন হীনমন্যতার প্রশ্ন উঠে না। এরা কিন্তু শুধু হিন্দু বা খ্রীষ্ঠান ধর্মকে টার্গেট করে সমালোচনা করায় বিচলিত হন না বা হীনমন্যতা বোধ করেন না। কিন্তু একজন প্রকৃত মুক্তমনা, নাস্তিকের জন্য ধর্মীয় জাতীয়তাবোধই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। তার কাছে একটা বেশি খারাপ, অন্যটা কম খারাপ বলায় বিচলিত হবার কিছু নেই বা এতে হীনমন্যতায় ভোগার কারণও নেই। ধর্মনিরপেক্ষ মুক্ত বিশ্বে পেশা বা সামজিক জীবনে ধর্মীয় জাতীয়তাবোধ কোন বাড়তি সুবিধা দেয়না, বা ধর্মীয় জাতীয়তাবোধের অভাব কোন অসুবিধাও সৃষ্টি করে না। এই ধর্মীয় জাতীয়তাবোধ নিজের নাড়ী বা শিকড়কে ছিঁড়ে বের হতে না পারার মানসিক একটি সীমাবদ্ধতা। মুক্তমনাদের সবাই মনে করেন ধর্ম জাতীয়তার ভিত্তি হতে পারে না। ধর্মীয় ভিত্তিতে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকেই তারা যেখানে কটাক্ষ করেন, সেখানে তাদের মুসলীম জাতীয়তাবোধ কে আলিঙ্গন করাটা কি একটা চরম স্ববিরোধিতামূলক ব্যাপার হয়ে যায় না ?

আবার যেসব এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররা মুসলীম বংশে জন্মাননি তারা স্রেফ রাজনৈতিক শুদ্ধির জন্যই ইসলাম ব্যাশিং এর বিরোধী, বা সব ধর্মই সমান খারাপ এটা বলতে খুবই আগ্রহী, নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণের চেষ্টায়।

আগেই উল্লেখ করছি যে ইসলাম ব্যাশিং আর মুসলীম ব্যাশিং এক জিনিষ নয়। ইসলাম একটা ধর্ম, মতবাদ ও আদর্শ, কোন ব্যক্তি নয়। আর মুসলীম হল যারা যারা এইধর্মে বিশ্বাস করে, তারা ব্যক্তি। এই ব্যক্তিদের মধ্য সকল চরিত্রের লোকই আছেন, নীতিবান, অহিংস, সহিংস, অসৎ সবই । কাজেই ইসলামের কড়া সমালোচনা করা মানেই মুসলীমদের নির্বিচারে ঘৃণা করা সেটা কখনই আবশ্যিক হতে পারে না। বা ইসলামকে ধর্মকে হেয় করায় মুসলীমদের হেয় করা হয় সেটা ভাবাও ঠিক না। কারণ একজন মানুষের চরিত্র ধর্মের দ্বারা সৃষ্ট হয় না। মানুষ মাত্রই ভাল মন্দ উভয়েরই প্রবণতা নিয়ে জন্মায়। কোন কোন ধর্মের খারাপ দিক তাদের প্রচ্ছন্ন মন্দ প্রবৃত্তিকে উস্কিয়ে দেয়, কোনটা দেয় না বা কম দেয়। কোন ধর্মের সমালোচনা করা হয় সেই ধর্মের খারাপ প্রবৃত্তিকে উস্কিয়ে দেয়ার ক্ষমতার জন্যই, ধর্মের অনুসারীদের হেয় করার জন্য নয়। ইসলামের অনেক কিছুই এই মন্দ প্রবৃত্তিকে উস্কিয়ে দেয়, যেমন অন্য ধর্মের/ অবিশ্বাসীদের প্রতি সহিংসতা/অসহনশীলতা, নারীদের প্রতি অসহনশীলতা বা বৈষম্য ইত্যাদি। ইসলামের কড়া সমালোচককে মুসলীম বিদ্বেষী বলাটা একটা গুরুতর অভিযোগ। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কাউকে অমুখ বিদ্বেষী তমুখ বিদ্বেষী বলাটা আইনের চোখে চরিত্রহনন হিসেবে মানহানী মামলার যোগ্য। কোন রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে এইরকম অভিযোগ তুললে লাইবেলের ল স্যুটের সম্মুখীন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

এখানে যেভাবে যথেচ্ছভাবে মুসলীম বিদ্বেষ/বিদ্বেষী শব্দের ব্যবহার হচ্ছে তাতে মুসিলীম বিদ্বেষকে পরিস্কার করে সংজ্ঞায়িত করাটা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। আমার মতে মুসলীম বিদ্বেষী সেই, যে শুধু মুসলীম পরিচয়ের জন্য কোন ব্যক্তিকে নির্বিচারে ঘৃণা করে। ঘৃণার প্রমাণ হবে অনিষ্ট করার চেষ্টা, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা, বৈষম্য করা, যেমন শুধু মুসলীম হবার জন্যই অধিকতর যোগ্যতা সত্ত্বেও সেই ব্যক্তিকে চাকরী না দিয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন অন্য ধর্মালম্বীকে চাকরি দেয়া ইত্যাদির দ্বারা। ঘৃণার অপেক্ষাকৃত কম মাত্রার প্রকাশ হল বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা, এড়িয়ে চলা , বিপদে সাহায্য না করা, নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা বা বিচার করা ইত্যাদি। ঘৃণাটা ব্যক্তির গুনাগুন বিচারের ফলে সৃষ্ট হয় না, গুণাগুণ বিচার ছাড়াই কেবল মুসলীম পরিচয়ের জন্যই নির্বিচারে সৃষ্ট হয়। এর চেয়ে অন্য কোন যুক্তিসঙ্গত সংজ্ঞা চিন্তা করতে পারছি না বিদ্বেষ বা ঘৃণার। মুসলীমদের প্রতি এরকম নির্বিচার ঘৃণা অন্যধর্মের ধর্মান্ধদের মধ্যে থাকতে পারে, যেমন কিছু উগ্র হিন্দু বা খ্রীষ্টানের মধ্যে। তারা মুসলীম নামধারী ইসলাম ব্যাশারদেরকেও তাদের ঘৃণা থেকে রেহাই দেবে না স্রেফ মুসলীম বংশে জন্মাবার কারণে। তাদেরক হয়ত তারা ব্যবহার করতে পারে নিজেদের সুবিধার্থে, যেমন ইসলাম ব্যাশারদের লেখা উদ্ধৃতি দিয়ে । কিন্তু ইসলাম ব্যাশারদের লেখা যদি তাদের সুবিধার্থে লেখা না হয় তাহলে তাদের লেখা মুসলীম বিদ্বেষীরা উদ্ধৃত করলে তার দায়িত্ব ইসলাম ব্যাশারদের উপর বর্তাতে পারে না। অনেক এন্টি ইসলাম-ব্যাশার ইসলাম ব্যাশারদেরকে মুসলীম বিদ্বেষী হিন্দু/খ্রীষ্টাহ্নকদের ভাড়া করা এজেন্ট বলতেও কুন্ঠিত হন না। প্রমাণ ছাড়া এধরনের অভিযোগ করা অন্যায় ও কুরুচিপূর্ণ। মুসলীম বংশে জন্মান ইসলাম ব্যাশাররা ইসলাম ধর্মে মোহভঙ্গের কারণেই ইসলামের সমালোচনা করেন বলা আ,মার বিশ্বাস, অমুস্লীম মুস্লীম বিদ্বেষীদের সুবিধার্থে নয়। মুস্লীম বিদ্বেষীদের সুবিধা টা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বলাই বাহুল্য উগ্র মুসলীমদের মধ্যেও হিন্দুদের প্রতি অনুরূপ নির্বিচার ঘৃণা আছে। কিন্তু ইসলামের সমালোচকের মধ্যে এরকম নির্বিচার মুসলীম ঘৃণা থাকার কোন প্রমাণ নেই। থাকতে পারে না তা বলছি না। প্রশ্ন হল ইসলামের সমালোচনা করলেই কি কাউকে আবশ্যিকভাবে নির্বিচারে মুসলীম বিদ্বেষী হতে হবে বা বলা উচিত হবে?। জোর দিয়ে বলব না, কখনই না। শুর করা যাক মুসলীম পরিবারে জন্ম নেয়া ইসলাম সমালোচকদের বাবা মা ভাই বোন দিয়ে। ইসলামের সমালোচকদের অনেকেই এটা পরিস্কার করে বলেন যে ইসলামে গভীর বিশ্বাস সত্বেও তারা তাদের বাবা মা ভাই বোন বন্ধু বান্ধবদের ঘৃণা করেন না। মুসলীম হলেই নির্বিচারে ঘৃণা করার কোন কারণই নেই, যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে। কারণ ইসলামের যে সব ক্ষতিকারক দিক নিয়ে ইসলাম ব্যাশাররা লেখালেখি করেন বেশির ভাগ মুসলীমদের জীবনে তার প্রভাব বা প্রয়োগ নেই। এটা বুঝতে হবে যে ইসলামে অনেক কিছু আছে যা ব্যক্তি পর্যায়ে সীমিত, যা অন্যের অধিকার বা ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করে না, যেমন নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হিজাব পরা ইত্যাদি । এগুলি যুক্তিহীন হলেও অন্যের জন্য ক্ষতিকারক না হওয়াতে ইসলামের সমালোচকেরা এগুলি শুধু অনুসরণ করার জন্যই কারোর প্রতি ঘৃনা পোষণ করেন না, এমনকি এগুলি অনুসরণ করার পরেও ব্যক্তি জীবনে এদের অনেককেই ইসলাম ব্যাশাররা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে । কিন্তু কাউকে ইসলামের এই আচার মেনে চলতে বাধ্য করা হলে সেটা আর নিরপরাধ বা শান্তিপ্রিয় থাকে না, সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপার হয়ে যায়। ইসলামের সমালোচকেরা এই সব ইসলামিক আচারাদির যুক্তিহীনতা নিয়েও যদি লেখালেখি করেন তাতেও এটা কখনই প্রমাণ হয় না যে তারা এই যুক্তিহীন ইসলামী আচারাদির অনুসরণকারীদের ঘৃণা বা সমালোচনা করেন। যুক্তিহীন ইসলামী আচারাদির সমালোচনা করা মানে এই যুক্তিহীন ইসলামী আচারাদির প্রবর্তক, প্রচারক বা বলপূর্বক বলবৎকারীদের সমালোচনা, অনুসরনকারীদের নয়। এটা বোঝা খুবই দরকারী। বাংলাদেশের এক বিরাট জনগোষ্ঠী যারা দিন আনে দিন খায়, দিন মজুর, কৃষক, রিক্সাচালক, এড়া সবাই ইসলামে বিশ্বাস ও ইসলামী আচারাদি ব্যক্তিজোবনে অনুসরণ করলেও এদের প্রতি ইসলাম সমালোচকেরা ঘৃণা পোষণ করেন না, বা করার প্রমাণ নেই, কারণ এরা তাদের বিশাসকে ব্যক্তি পর্যায়ে সীমিত রাখে। এদেরকে শান্তিপ্রিয় মুসলীম বলা যায়। এরা উত্তরাধিরসূত্রে এই বিশ্বাস পায়, এবং তাদের বিশ্বাসকে জায়েজ করার জন্য সরবে কোন যুক্তি তর্কের অবতারণা করে না, নীরবেই বিশ্বাসটাকে অন্তরে লালন করে। ইসলামে বিশ্বাস রেখেও একজন ভাল মনের মানুষ (নিরপেক্ষ বিচারে) হতে পারে, তাদের ঘৃণা করার কোন যৌক্তিকতা নেই । কাজেই যে যতই ইসলামের কড়া সমালোচক হন না কেন তাকে মুসলীম বিদ্বেষী বলার আগে সাক্ষ্য প্রমাণ লাগবে তার ব্যক্তিগত জীবনের কর্মকান্ডের ভিত্তিতে, কারণ ইসলাম ব্যাশার হয়েও ব্যক্তিজীবনে মুসলীম বিদ্বেষী না হওয়াও সম্ভব। মুসলীম বিদ্বেষী কাউকে খেলো ভাবে প্রয়োগ করার মত শব্দ নয়। এটা গুরুতর একটা শব্দ। সেহেতু প্রমাণ ছাড়া এটা প্রয়োগ করলে এটা বরং উলটো ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি এন্টি ইসলাম-ব্যাশারদের বিদ্বেষ বা ঘৃণা কেই প্রমাণ করবে। এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররা আবশ্যিকভাবে ইসলাম ব্যাশারদের(ব্যক্তি) ঘৃণা করে, কিন্তু ইসলাম-ব্যাশাররা ইসলামকে ব্যাশ করে,কোন মুসলীমকে নয় (নির্বিচারভাবে তো নয়ই) । এই তফাতটা মনে রাখার দরকার।

আমি গুরুত্বের সাথে একটা কথা বোঝাতে চেয়েছি যে ইসলাম ব্যাশাররা নির্বিচারে মুসলীম বিদ্বেষ পোষন করেন না, মুসলীমদের এক বিরাট জনগোষ্টীর প্রতি তাদের কোন ঘৃণা নেই। এই গোষ্ঠী ইন্টার্নেট পড়ে না বা জানেও না ইসলামের সমালোচনার কথা বা ইসলামের সমর্থনে তর্কে লিপ্ত হয় না । কিন্তু মুসলীম জনগোষ্ঠীর অপর এক অংশ আছে যারা শান্তিপূর্ণ ভাবে ব্যক্তিজীবনে ইসলামকে সীমিত রেখে সন্তুষ্ট নয়। তারা আগ্রাসীভাবে ইসলামের মাহাত্ম্য প্রচারে ব্যাস্ত, ইসলাম যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, কত বৈজ্ঞানিক, শান্তিপ্রিয়, যুক্তিপূর্ণ এটা প্রমাণ করতে একের পর এক পোস্ট দিয়ে যায় । তাদের বক্তব্যের যুক্তিপূর্ণ জবাব দিলে তারা সমালোচকদের প্রতি বিষোদ্গার করতে শুরু করে আর ব্যক্তি আক্রমণে লিপ্ত হয়। এদেরকে ইসলামিস্ট বলা হয়। তারা ইসলামের সমালোচককে শুধু ইসলাম ব্যাশারই বলে না শুধু, তাদের অনেকে ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি সহিংস আচরনকে সমর্থন করে, প্রাণ নাশের হুমকিও দেয়, ইসলামের শত্রু, ইহুদী খ্রীষ্টানদের বেতনভুগী দালাল বলে। স্বভাবতই ইসলাম ব্যাশাররও এদের পালটা সমালোচনা করেন। কিন্তু তারা ইসলামিস্টদের প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ার মত লেভেলে নামে না। এই তফাতটা লক্ষ্যণীয়। প্রায়ই দেখা যায় এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররা ইসলাম ব্যাশারদেরকে ইসলামী চরমপন্থীদের সাথে তুলনা করে। এটা দুঃখজনক, কারণ তুলনাটা খুবই অসমান। ইসলাম-ব্যাশাররা কলমেই তাদের কর্ম সীমিত রাখে। অথচ ইসলামী সন্ত্রাসীরা সহজেই সহিংসতায় লিপ্ত হতে পারে ইসলাম-ব্যাশাররদের প্রতি, যদিও ইসলাম-ব্যাশাররা তাদের বা অন্য কারও প্রতি সহিংসতায় লিপ্ত হয় নি। কখনো কখনো একটা উদ্বেগজনক ব্যাপার লক্ষণীয় সেটা হল এন্টি ইসলাম-ব্যাশার ও ইসলামিস্টদের একটা কমন স্ট্যান্ড হল যে ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি সহিংসতাটা সমর্থনযোগ্য কারণ তারা মুসলীমদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করছে, মুসলীমদের মানসিক যন্ত্রণা ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি সহিংসতাকে জাস্টিফাই করে। এই ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার বুলিটা এন্টি ইসলাম-ব্যাশার ও ইসলামিস্টদের একটা সাধারণ সুর। কিন্তু কতটা যুক্তিযুক্ত এই ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার দাবীটা। আগেই বলেছি ইসলাম ব্যাশারদের ইসলামের সমালোচনা এক বিরাট মুসিলীম জনগোষ্ঠীর প্রতি লক্ষ্য করে নয়। তারা এই ইন্টার্নেট ভিত্তিক ইসলামের সমালোচনার কথা জানেও না। তাদের আঘাত পাওয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না । বাকী থাকল ইন্টার্নেট ব্যবহারকারী ইসলামিস্টরা। তাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় এন্টি ইসলাম-ব্যাশার মুক্তমনাদের বিচলিত হওয়াটা খুবই আশ্চর্য্যের ব্যাপারই বটে। এই ইসলামিস্টরা মানসিক ভাবে খুব দুর্বল, ইনোসেন্ট বা সুকোমল চিত্তের মানুষ নয় যে তাদের প্রতি এতটা সহানুভূতিতে গলে যেতে হবে। তারা নিজেরাই অন্য বিশ্বাসীদের প্রতি নির্দয় আঘাতের জন্য সদা প্রস্তুত। সহিংসতাতেও পিছপা হয় না। তা ছাড়া ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার কথাটার মধ্যে একটা অসঙ্গতি আছে, কথাটা ধোঁয়াটেও বটে। বিশ্বাস কি এমনই একটা ঠুনকো জিনিষ যে বিশ্বাসের সমালোচনায় এতটা বিচলিত বা আঘাতপ্রাপ্ত হতে হবে। বিশ্বাসে পূর্ণ আস্থা থাকলে তো আঘাতকে আঘাত হিসেবে নয় বরং বিশ্বাসকে জোরদার করার পরীক্ষা হিসেবে দেখার কথা। বা ইসলাম ব্যাশারদের সমালোচনা ভুল মনে করলে যুক্তির সাথে সেই ভুল খন্ডন করেও তাদের বিশ্বাসকে জোরদার করতে পারে, বা যুক্তি ঠিক হলে অন্যকেও ইম্প্রেস করে বিশ্বাসের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে । আসলে ধর্মানুভূতিতে আঘাত নয়, তাদের বিশ্বাসকে প্রশ্ন করার প্রতিই তারা অসহনশীল। এই অসহনশীলতাটাই ইসলামী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এই অসহনশীলতাটা সহজেই সহিংসতার রূপ নেয়। সর্বোপরী একটা সঙ্গত অভিযোগ তোলা যায় যে, জীবনে অনেক কিছুরই তো সমালোচনা করা হয়, বিজ্ঞানের কোন তত্ত্বকে বা বিশেষ কোন সাহিত্যিককে বা সাহিত্যকর্মকে বা কোন বরেণ্য নেতাকে। কিন্তু বিজ্ঞানের সেই তত্ত্বে বিশ্বাসীদের বা সেই সাহিত্যিক/বরেন্য নেতাদের ভক্তদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কথা তো তোলা হয় না। ইসলামে বিশ্বাসীদের কি একটা বিশেষ প্রিভিলেজ আছে, বা থাকলে তার কারণ কি। ইসলামিস্টরা এই প্রাধান্যপূর্ণ মর্যাদা দাবী করলে অবাক হবার কিছু নেই, কিন্তু এন্টি ইসলাম-ব্যাশার মুক্তমনাদের মুখে এই ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার কথা শুনলে অবাকই হতে হয়। অথচ এই এন্টি ইসলাম-ব্যাশারদের কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথের কড়া সমালোচনা (ব্যক্তি সমালোচনা, সাহিত্যিক সমালোচনা নয়) করে লিখেছেনও। রবীন্দ্রভক্তরা যে এতে মনোকষ্ট পান না এটা ভাবার কোন কারণ নেই। ডবল স্ট্যান্ডার্ড অন্তত মুক্তমনাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না।

কোন কোন এন্টি ইসলাম-ব্যাশার অবশ্য এটাও বলেন যে তারা ইসলামের সমালোচনা বিরোধী নন per se . তাদের আপত্তি হল যেহেতু সব ধর্মই সমান খারাপ তাই কেন শুধু ইসলামকেই টার্গেট করা হবে? অন্য ধর্মকেও একই সুরে সমালোচনা করতে হবে, তা না হলে এটা একপেশে হয়ে যাবে। এই যুক্তির অসারতা স্পষ্ট। যদি তারা মেনেই নেন যে ইসলাম খারাপ (অন্য ধর্মও খারাপ সেটা মেনেই) , তাহলে খারাপের সমালোচনা তো শর্তহীনভাবেই যৌক্তিক হবার কথা। অন্য ধর্মকে খারাপ না বললে ইসলাম খারাপ বলাটাও অযৌক্তিক বা অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায় কি করে। কেই যদি রবীন্দ্রনাথের খারাপ দিক নিয়ে তথ্যযুক্তি দিয়ে সমালোচনামূলক লেখা লেখে তখন কি কেউ বলে (বা বলা উচিত কি?) অমুখ সাহিত্যিকেরও অনেক খারাপ দিক আছে, তাদেরও সমালোচনা না করে শুধু রবীন্দ্রনাথকে টার্গেট করাটা অযৌক্তিক বা অগ্রহণযোগ্য, ওটা টেগোর ব্যাশিং ইত্যদি। দেখা যাচ্ছে যে ইসলাম একটা বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে এই এন্টি ইসলাম-ব্যাশারদের দৃষ্টিভঙ্গীতে। লক্ষণীয় ব্যাপার হল যে খ্রীষ্ট বা হিন্দু সমাজেও তাদের নিজ নিজ ধর্মের কড়া সমালোচক আছেন। ইন্টার্নেট ফোরামেও হিন্দু বা খ্রীষ্টান ধর্মের কড়া সমালোচনা হয়েছে, মুক্তমনার কিছু সদস্যও এই কড়া সমালোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্ত এই ধর্মগুলির দেশে (ভারত, আমেরিকা…) বা ইন্টার্নেট ফোরামে অনুরূপ এন্টি হিন্দু/খ্রীষ্টান-ব্যশারের অস্তিত্বের কথা শুনা যায় না, যারা কেন শুধু হিন্দু বা খ্রীষ্ট ধর্মকেই তাক করা হচ্ছে, অন্য ধর্মকে নয় এরকম ধুয়া তুলেছেন। এটা ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররাও কিন্তু কখনও খ্রীষ্টান বা হিন্দু ব্যাশারদের প্রতি একই রকম তিক্ত মনোভাব পোষন করে অভিযোগ করেন না যে তারা শুধু খ্রীষ্টান বা হিন্দু ধর্মকেই ব্যাশ করছেন। ইসলাম বা অন্য ধর্মকে নয়। কারণ তাদের কাছে ইসলামের ব্যাশিং টাই এক বিশেষ গুরুত্ব পায়। নিজেকে সব ধর্মের উপরে উঠাতে পারলে পৃথিবীর সব সমাজের সব ধর্ম ব্যাশারদের প্রতি সমান ঘৃণা পোষন করার কথা। কিন্তু ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি তাদের এক আলাদা মনোভাব দেখা যায়। হিন্দু ব্যাশার বা খ্রীষ্টান ব্যশাররা ইসলাম ব্যাশ না করলেও এন্টি ইসলাম-ব্যাশারদের তাতে কোন সমস্যা নেই, সমস্য্যা শুধু ইসলাম ব্যাশাররা খ্রীষ্ঠান বা হিন্দু ব্যাশিং না করলে। এই পক্ষপাতিত্বের একমাত্র ব্যাখ্যা হল মুসলীম জাতীয়তাবোধের শিকড় ছিঁড়তে না পারা, যেটা আগেই উল্লেখ করেছি। হিন্দু/খ্রীষ্টান ধর্মের নাস্তিক/মুক্তমনারা তাদের স্ব স্ব ধর্মের জাতীয়তাবোধ কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন বলেই হয়ত তাদের মধ্যে এন্টি হিন্দু/খ্রীষ্টান ব্যাশার বেশী দেখা যায় না।

আরেকটা কথা হল যেসব এন্টি ইসলাম-ব্যাশার সব ধর্মই সমান খারাপ প্রচার করে শুধু ইসলামের সমালোচনার বিপক্ষে , তাদেরকে বলি, তাঁরা নিজেরাই তো অন্য ধর্মের খারাপ দিক নিয়ে লিখতে পারেন, অন্য ধর্মের খারাপ দিক নিয়ে লেখাকে তারা যদি এতই আর্জেন্ট মনে করেন। তারা যদি এতটাই নিশ্চিত যে অন্য ধর্মের খারাপ ইসলামের খারাপের সম পরিমান, তাহলে তো তাদের অন্য ধর্মের খারাপ দিক নিয়ে লেখার মত বিশদ জ্ঞান আছে নিশ্চয়। ইসলাম ব্যাশাররা অন্য ধর্মের খারাপ নিয়ে লেখেন না কেন এই অভিযোগ করার কোন কারণ দেখি না। নিজেরা যা করতে পারেন, সেটা অন্যেরা কেন করছে না তাদের মুখে এই ধরনের অভিযোগের সুর খুব ভাল শোনায় না। সব ধর্মের ব্যাশাররা মুক্তভাবে লিখুন না কেন সব ধর্মে খারাপ দিক নিয়ে। পাঠকেরাই বিচার করবে খারাপটা সমান কিনা, যুক্তি বিচার বুদ্ধি ব্যবহার করে। একটা বিশেষ ধর্ম, আইডিওলজি, মতবাদ, কে ব্যাশ করা (কড়া সমালোচনা করা) মুক্তচিন্তা/মুক্তমনের পরিপন্থী হয় কি করে কিছুতেই বুঝা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক শুদ্ধির পরিপন্থী হতে পারে। কিন্তু মুক্তমন/মুক্তচিন্তার আবশ্যিক পূর্বশর্ত তো রাজনৈতিক শুদ্ধি নয়।

আবার কোন কোন এন্টি ইসলাম-ব্যাশার ইসলামের সমালোচনা করার সময়ে কোন বিষয়ে অন্যধর্ম ইসলামের মত অত খারাপ নয় এরকম ইঙ্গিত করাতে ঘোর আপত্তি তোলেন। তাঁদের মতে সব ধর্মই সমান খারাপ। কোন বিষয়ে অন্যধর্ম ইসলামের চেয়ে কম খারাপ বলাটাকে তারা ইসলামকে হেয় করে অন্য ধর্মের জয়গান গাওয়া হিসেবে দেখেন । কিন্তু কম খারাপ বলাটা তো ভাল বলা নয় এই সহজ যুক্তি তারা কি বোঝেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অন্যধর্ম ইসলামের মত অত খারাপ নয় কথাটা ইসলাম ব্যাশাররা তোলেন এন্টি ইসলাম-ব্যাশারদের সব ধর্মই সমান খারাপ এই দাবীর জবাবে, দাবীটা যে অযৌক্তিক সেটা বোঝাবার জন্যেই তোলেন, আগ বাড়িয়ে অন্য ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য নয়। সব ধর্মই সমান খারাপ এটা একটা রাজনৈতিক শুদ্ধি জনিত অবস্থান, যুক্তি বিশ্লেষন জনিত মত নয়। আগে উল্লেখ করেছি মুসলীম জাতীয়তাবোধে বিশ্বাসী নাস্তিকরা (বা ইসলামে অবিশ্বাসীরা) হীনমন্যতা এড়াতে এরকম দাবী করেন। যেটাই হোক যদি তথ্য যুক্তির দ্বারা বস্তুনিষ্ঠভাবে ধর্মের তুলনামূলক সমালোচনা বা গুণাগুণ বিচার করা হয় হয় তাতে আপত্তির কি থাকতে পারে, সেটা তো মুক্তচিন্তার পরিপন্থী নয়। কিন্তু এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররা সব ধর্মই সমান খারাপ এই মন্ত্রটা এতই জোরেসোরে আকড়ে থাকেন যে তথ্য যুক্তির দ্বারা বস্তুনিষ্ঠভাবেও কোন ধর্মকে কম খারাপ বা বেশী খারাপ বলার যথার্থতাকে স্বীকারই করেন না। সব ধর্মই সমান খারাপ এটা তাদের একটা অলঙ্ঘনীয় ডগমা।

আরেক দল এন্টি ইসলাম-ব্যাশার বলেন যে ইসলামের সমালোচনা করা নয়, যে ভাষায় ইসলামের সমালোচনা করা হয় তাতে তাদের আপত্তি। এটা ব্যাখ্যার দাবী রাখে। রবীন্দ্রনাথকে তস্কর বলা, বা বিবেকানন্দকে ভন্ড বলা, বা গান্ধীকে শিশুকামী বলার ভাষায়ও তো তাদের ভক্তদের কাছে আপত্তিকর হতে পারে, তাদের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে। কিন্ত কোন এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররা ঐসব ক্ষেত্রে এরকম ভাষার ব্যবহারে আপত্তি তোলেন না। না তোলায় সমস্যা নেই। কিন্তু ইসলামের (মুহম্মদ অন্তর্ভুক্ত) সমালোচনার বেলায় তাদের মানদণ্ড অনেক উচু হয়ে যায় কেন সেটার ব্যাখ্যা দরকার। ডবল স্ট্যান্ডার্ড টা সমস্যা। কোন ভাষায় ইসলাম সমালোচনা করা আপত্তিকর সেটা স্পষ্ট করে তারা একটু ব্যাখ্যা করলে সুবিধা হয়। নেতিবাচক সমালোচনা শুনতেই তো খারাপ লাগবে ইসলামিস্টদের। যে ভাষাতেই তা হোক। ভাষাটা গৌণ ব্যাপার। মুহম্মদ কুরায়েশদের নিরস্ত্র বানিজ্যিক কাফেলার উপর অতর্কিতে ঝাপিয়ে পড়ে তাদের মালামাল লুট করতেন (সিরাতে রসুলে বর্ণিত) সেটা বলা আর তিনি ডাকাতি করতেন সেটা বলার মধ্যে বস্তুগত কোন পার্থক্য নেই। যারা মুহম্মদকে মহামানব মেনে অন্ধ ভক্তিতে গদগদ তাদের মানসিক আঘাত সৃষ্টিতে এই দুটোর মধ্যে কোন তফাত নেই। সমালোচনার ভাষা কারো নিরাবেগ, কারো আবেগময়, ঝাঁজালো এটা ঠিকই। এটা অনেকটা ব্যক্তিগত স্টাইলের ব্যাপার। কারো ভাষা বেশী উত্তেজক হয়ে গেলে (তথ্য বা যুক্তির ভুল না থেকে) সেটাকে পরিশীলিত করা নিয়ে পরামর্শ দেয়া যায়, ভাষাকে সংযত করার জন্য। আমি কোন বিশেষ ইসলাম ব্যাশারের সমর্থনে এসব লিখছি না। আমি নিজেও অনেক ইসলাম ব্যাশারদের ভাষাকে নিখুঁত বা ত্রুটিহীন মনে করি না। ইসলাম ব্যাশারদের ভাষাকে মারজিত করে উন্নত করার পরামর্শ দিলে তাঁরা ভাষাকে উন্নত করতে সচেষ্ট হবেন বলাই আমার ধারণা। ইসলামিক আইডিওলজীর ফলশ্রুতিতে যে মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে ও হচ্ছে তাতে ভাষায় আবেগ বা তিক্ততা সংবরণ করা কঠিন হয়ে যায় অনেকের জন্য, যদিও আইডিয়ালী এটা পরিহার করা সর্বদাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এক লাফে শুধু ভাষার জন্য সমালোচককে মুসলীম বিদ্বেষী বলার মত চরম পদক্ষেপ নেয়া কখনই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না, যতক্ষণ সমালোচনাতে ভুল যুক্তি বা তথ্য ব্যবহৃত না হচ্ছে। কেউ কেউ বাক স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছা বলার অধিকার নয় বলে মত দিয়েছেন । “যা ইচ্ছা তা ” টা কি হলে সেটা বলার অধিকার হারাবে? স্পেসিফিক ছাড়া এধরনের ধূসর অভিযোগের কোন উপযোগিতা নেই। তা ছাড়া অধিকার হারানোর মানদন্ড টা কি, কে সেই মানদন্ড নির্ধারণ করেছে। এগুলি পরিস্কার করে সংজ্ঞায়িত না করলে এ ধরনের অভিযোগ মূল্যহীন । কোন কোন ইসলাম ব্যাশারের লেখা নাকি পর্নোগ্রাফি সমতুল্য এরকম অভিযোগও উঠেছে। এতদিন তো শুনে আসছি মুক্তমনার বইএ পর্নোগ্রাফি বলে কিছু নেই, বা মুক্তচিন্তার মানদন্ডে পর্নোগ্রাফি খারাপ ভালোর ব্যাপার নয়, যার কাছে যেমন লাগে, সাব্জেক্টিভ ব্যাপার। D H Lawrence এর “What is pornography to one man is the laughter or genius to another” উল্লেখ করতে হয়। পর্নোগ্রাফি হোক বা না হোক, তথ্যগত বা যুক্তিগত ভুল আছে কিনা সেটাই কি বিবেচ্য হওয়া উচিত নয় একজন মুক্তমনার কাছে? স্বীকার করি সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে লিখলে হাল্কা চটুল ভাষা বা যৌনাঙ্গের মত বিষয় টেনে না আনাই ভাল, তথ্য যুক্তির প্রয়জন যতটুকু দরকার তার বাইরে। আমি নিজেও এটা পরিহার করার পক্ষপাতি। কিন্তু সেটা “Suggestion for Improvement” বা গঠন্মূলক সমালোচনার আওতায় পড়ে। এর জন্য আবারো এক লাফে ইসলাম ব্যাশারকে মুসলীম বিদ্বেষী বলাটা বা ব্যক্তি আক্রমণে লিপ্ত হওয়াটা বাড়াবাড়ি মনে হয়। পর্নোগ্রাফি তো কারো প্রতি ব্যক্তি আক্রমণ নয়। ব্যক্তি আক্রমণ তো সুস্পষ্টভাবে মুক্তমনা নীতিমালার বিরুদ্ধে যায়। আর ব্যক্তি আক্রমণ তো এন্টি ইসলাম ব্যাশাররাই প্রথমে আগ বেড়ে করছেন ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি, মুক্তমনার সুস্পষ্ট নীতিমালা লঙ্ঘন সত্ত্বেও।

এন্টি ইসলাম-ব্যাশারদের একটা সাধারণ অভিযোগ হল “ইসলাম ব্যাশিং” ই উগ্র ইসলামিস্টদের উস্কিয়ে দেয়। মানে ইসলামিস্টদের উগ্রতার জন্য ইসলাম-ব্যাশাররাই দায়ী এমন ইঙ্গিত করা। এটা অনেকটা মেয়েদের অশালীন পোষাক পরাকেই ধর্ষিত হবার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করার মত। উগ্র কর্মকান্ড উগ্রবাদীরা তাদে স্বাধীন ইচ্ছার দ্বারাই করে। “ইসলাম ব্যাশিং” এর কারণে নয়। তারা ভুলে যান যে ইসলামিস্টদের কারণেই ইসলাম ব্যাশারদের সৃষ্টি। এখানে নীতির (মোরালিটি অর্থে নয়, প্রিন্সিপ্‌ল্‌ অর্থে) প্রশ্ন আছে। যদি ইসলাম ব্যাশিং এর কারণে কোন উগ্র ইসলামিস্ট সহিংসতায় লিপ্ত হয় তার জন্যই কি সেই সমালোচনা বা ব্যাশিং নিন্দনীয় হয়ে যায় ?। এটা কার্যের গুনাগুন বিচার করে কারণের মন্দত্ব বিচার করা)। ইসলাম ব্যাশিং এর পরিণতিতে যদি সহিংসতার না ঘটত তাহলে কি ইসলাম ব্যাশিং কে খারাপ বলতেন তারা? এটা সুবিধাবাদী কার্য-কারণ স্থাপন করার চেষ্টা। কোন কিছুর মন্দ বিচার তার স্বকীয় গুয়াঙ্গুনের দ্বারাই বিচার করা উচিত। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ বা গান্ধীকে ব্যাশিং করলে তাদের ভক্তরা সহিংসতায় লিপ্ত হয় না, তাই তাদের ব্যাশিং দষের নয়, আর ইসলাম/মুহম্মদের ব্যাশিং করলে ইসলামিস্টরা সহিংসতায় লিপ্ত হয়, কাজেই ইসলাম ব্যাশিং খারাপ। এটা প্রপকারান্তরে ইসলামিস্ট ব্ল্যাকমেইলের প্রতি সারেন্ডার করা।

ইসলামী উগ্রবাদ আছে বলেই প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসলাম ব্যাশিং এর জন্ম। উল্টোটা নয়। ইসলামিস্টদের উস্কিয়ে দিতে হয় না। ইসলাম ধর্মই তাদের উস্কিয়ে দেয়, তাদের সৃষ্টি করেছে। এই ফোরামে ইসলাম ব্যাশারদের লেখা ইসলামী উগ্রবাদ উস্কিয়ে দিয়েছে এমন কোন আলামত দেখা যায় নি। বরং ইসলাম ব্যাশারদের লেখায় অনেকের ইসলাম নিয়ে মোহভংগ ঘটেছে এরকম উদাহরন এন্তার আছে। এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররা এই পজিটিভ দিকটা না দেখে কাল্পনিক ইসলামী উগ্রবাদ সৃষ্টির প্যরানয়্যা নিয়ে ভুগছেন।

এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে ইদানিং এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররা ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি উৎকটভাবে আগ বাড়িয়ে ব্যক্তি আক্রমণে লিপ্ত হচ্ছেন। ইসলাম ব্যাশাররা আগ বাড়িয়ে ব্যক্তি আক্রমনে লিপ্ত হন নি। তারা ইসলাম ব্যশিং এই ব্যস্ত। এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররা তাদের ইসলাম ব্যাশিং এ ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের প্রতি ব্যক্তি আক্রমণে লিপ্ত হলে তখন উভয় পক্ষ ব্যক্তি আক্রমণে লিপ্ত হয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু এর সূত্রপাত হয় এন্টি ইসলাম-ব্যাশারদের প্রতি প্রথম ব্যক্তি আক্রমণাত্মক পদক্ষেপে, আর তাদের ব্যক্তি আক্রমণের ভাষাটাও বেশি তিক্ত (বোকাচোদা, পা চাটা দালাল, চেলা ইত্যাদি) । এই ব্যক্তি আক্রমণ মুক্তমন/মুক্তচিন্তার পরিপন্থী বলেই জানি। এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররদের ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি বিজাতীয় ঘৃণা ইসলামিস্টদের প্রতি এন্টি ইসলাম-ব্যাশাররদের ঘৃণাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যি দুঃখজনক। ইসলাম-ব্যাশাররা ভুল তথ্য বা যুক্তি দিয়ে ইসলাম ব্যশিং করলে তা অবশ্যই নিন্দনীয় ও খন্ডনীয়। কিন্তু যৌক্তিকতা বিচার না করে কেবল ইসলাম-ব্যাশিং এর জন্যই ইসলাম ব্যাশারদের প্রতি বিজাতীয় ঘৃণা পোষণ করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।