জঙ্গিবাদকে সমর্থন করার প্রশ্ন নয়। এ সময়ে সবচেয়ে আলোচিত কাসাভের ফাঁসির বিপক্ষেও বলা হচ্ছে না। এটি নিছকই প্রসঙ্গ মাত্র, বাইলাইনে ব্লগাড্ডা। মূল প্রশ্নটি মৃত‌্যুদণ্ডের বিধানটিকে নিয়েই।

যে দেশে “অমুকের ফাঁসি চাই” শ্লোগানে পোস্টার/ব্যানার প্রকাশ করা খুব কঠিন নয়, সে দেশে এই “মৃত্যুদণ্ড” দানকে সমর্থন করাই হয়তো স্বাভাবিক। এসব ফাঁসির দাবিতে প্রকাশিত পোস্টার/ব্যানারে প্রায়ই দেখা যায় কথিত “খুনী”র ছবিতে ফাঁসির রজ্জু ঝুলিয়ে দিতে। হিংসার বদলে প্রতিহিংসার মাত্রাটি এতোই প্রবল।

বলা ভালো, আদালত কাউকে “খুনী” বলে রায় দেওয়ার আগেই, জনতাই অনেক সময় বলে দেন অমুকে “খুনী”। আদালত কাউকে “ফাঁসি” দেওয়ার আগে, জনতাই তাকে “ফাঁসি” দিতে উদ্যোত হন। পুলিশের প্ররোচনায় গণমাধ্যমগুলোও অপরাধ বিষয়ক সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রায়ই একই মাত্রাজ্ঞান এবং নৈতিকতা লঙ্খন করে; বিষয়টি অতিব নিন্দনীয়।

কাসাভকে কেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো? কারণ, সে মানুষ খুন করেছে; এটি বেআইনী। তাই তাকে রাষ্ট্রীয় আইনী খুনের শিকার–মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হলো। সেই “দাঁতের বদলে দাঁত, চোখের বদলে চোখ” এর মধ্যযুগীয় নীতি!

কিন্তু এভাবে কি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ আদৌ সম্ভব? বাংলা ভাই, শায়খের মৃত্যুদণ্ডেই কি জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব? ক্রসফায়ার/এনকাউন্টারে সন্ত্রাস দমন? সাতের দশকে আকছার নকশাল নিধনে নকশালী শেকড় কি পুরোপুরি উপড়ে ফেলা গেছে? মাওবাদ কি এখনো ভারতের শিরাপীড়ন নয়?

অর্থাৎ, সরকার বাহাদুরকে আঘাত করতে হবে জঙ্গিবাদের উৎস মুখে। মাদ্রাসা শিক্ষায় আনতে হবে আমূল পরিবর্তনও। জেহাদের অপদর্শনকে মানবিক দর্শন দিয়েই দমন করতে হবে; আইন দিয়ে তো বটেই। তবে আইনটিকে হয়ে উঠতে হবে আরো মানবিক। এমনকি জঘন্য খুনি, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ ডাকাতের ক্ষেত্রেও। মানবতাবাদীরা এখন এমনটিই ভাবছেন।

“মৃত্যুদণ্ডের” বিপরীত পাঠে বলা হচ্ছে, সবচেয়ে সৃজনশীল জীব মানুষ পুনঃনবায়নযোগ্য নয়। তাই তাকে মেরে ফেললে তার কোনো সংশোধনের সুযোগ থাকে না। অর্থাৎ “দণ্ড” হিসেবে “মৃত্যুদণ্ড” একেবারেই ব্যর্থ। এটি যে অপরাধ দমনে সহায়ক, অন্য সম্ভাব্য অপরাধীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে অপরাধ প্রবণতা থেকে দূরে রাখছে, তার-ও কোনো নিশ্চিত পরিসংখ্যান নেই।

আবার দেখুন, যে জঙ্গি জেহাদের জন্য আত্নাহুতি দিতে প্রস্তুত বা নিজেকে মানববোমায় পরিনত “শত্রু”কে উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে মেরে ফেলতে প্রস্তুত, জীবিত অবস্থায় ধরা পড়ার পর, বিচারে তার “মৃত্যুদণ্ড” প্রদান নেহাতই একটি প্রহসন। অস্ত্রের রাজনীতিতে অস্ত্রবাজের “মিশন”টিই মুখ্য, তার নিজের জীবনটি গৌন। জেহাদের শরীয়তও পাখি পড়ার মতো তাই-ই শেখায়: বাঁচলে গাজী, মরলে শহীদ; কোনোদিকেই সোয়াবে কমতি নাই!

প্রথম বিশ্বের অনেক দেশেই এখন “মৃত্যুদণ্ড” নামক শাস্তির বিধানটিই উঠে গেছে। এর বদলে রয়েছে ভয়ংকর দাগী অপরাধীদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কারাবাসের বিধান। বাস্তবতার বিচারেই এই উপমহাদেশে খুব শিগগিরই ফাঁসি/ফায়ারিং স্কোয়াড, তথা “মৃত্যুদণ্ড” রাতারাতি তুলে দেওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু ধারণা করি, একদিন নিশ্চয়ই এই উপমহাদেশের সরকারগুলোকেও কথিত দণ্ড প্রথা “মৃত্যু” নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে। তবে সে জন্য হয়তো পেরিয়ে যাবে অনেকগুলো প্রজন্ম।
____________
স্ফুলিঙ্গ
-দীপক রায়

আজমল কাসব আপনাকে…

মুক্তির গান চোরাপথে
স্বপ্ন আপনার ভুল বাকেঁ
অস্ত্র কারবারীর ক্রীড়ানক
আপনার স্ফুলিঙ্গে ধর্মের বেড়ি
আফিমের মাদকতায়
খুনীর মর্যাদায় বিবর্ণ।

সারা পৃথিবীর তেলের
একচেটিয়া মালিকানা প্রতিষ্ঠার
ছায়া যুদ্ধে ভাড়াটে পদাতিক
আপনাকে কলঙ্কের বেদিতে
ফতয়ার দড়িতে
শুধুই একটা লাশের মহিমায়
শেষ শেষ শে- শে-শেষ।

আপনার স্ফুলিঙ্গে জেগে উঠতে পারতো
আমাদের ঘুম ভাঙার গান
দেশে দেশে
মার্কিনী আগ্রাসনের মুখে
ছুঁড়ে দিতে পারতো
মোক্ষম থাপ্পর
বিপ্লবী বোহেমিয়নায় স্নাত হ’য়ে
বুকের গহীনে মুক্তির
নিভু নিভু সলতেয়
আশার আলোকশিখায়
সাহসী দৃপ্ত মিছিলে
আবার আবার আবার
পা মেলাতে পারতাম।

যে অলীক লোকের
পদযাত্রী এখন আপনি
সেথায় সে দাড়ীওয়ালা
বোহেমিয়ান বিশ্ব বিপ্লবের
ফেরিওয়ালার সাথে দেখা হলে
একটু সমাজতত্ত্বের পাঠ নিয়ে
ফিরে আসুন আবার
মিছিলে আমরা থাকবো
আপনার দীপ্ত পদক্ষেপের প্রতীক্ষায়।