জঙ্গিবাদকে সমর্থন করার প্রশ্ন নয়। এ সময়ে সবচেয়ে আলোচিত কাসাভের ফাঁসির বিপক্ষেও বলা হচ্ছে না। এটি নিছকই প্রসঙ্গ মাত্র, বাইলাইনে ব্লগাড্ডা। মূল প্রশ্নটি মৃত্যুদণ্ডের বিধানটিকে নিয়েই।
যে দেশে “অমুকের ফাঁসি চাই” শ্লোগানে পোস্টার/ব্যানার প্রকাশ করা খুব কঠিন নয়, সে দেশে এই “মৃত্যুদণ্ড” দানকে সমর্থন করাই হয়তো স্বাভাবিক। এসব ফাঁসির দাবিতে প্রকাশিত পোস্টার/ব্যানারে প্রায়ই দেখা যায় কথিত “খুনী”র ছবিতে ফাঁসির রজ্জু ঝুলিয়ে দিতে। হিংসার বদলে প্রতিহিংসার মাত্রাটি এতোই প্রবল।
বলা ভালো, আদালত কাউকে “খুনী” বলে রায় দেওয়ার আগেই, জনতাই অনেক সময় বলে দেন অমুকে “খুনী”। আদালত কাউকে “ফাঁসি” দেওয়ার আগে, জনতাই তাকে “ফাঁসি” দিতে উদ্যোত হন। পুলিশের প্ররোচনায় গণমাধ্যমগুলোও অপরাধ বিষয়ক সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রায়ই একই মাত্রাজ্ঞান এবং নৈতিকতা লঙ্খন করে; বিষয়টি অতিব নিন্দনীয়।
কাসাভকে কেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো? কারণ, সে মানুষ খুন করেছে; এটি বেআইনী। তাই তাকে রাষ্ট্রীয় আইনী খুনের শিকার–মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হলো। সেই “দাঁতের বদলে দাঁত, চোখের বদলে চোখ” এর মধ্যযুগীয় নীতি!
কিন্তু এভাবে কি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ আদৌ সম্ভব? বাংলা ভাই, শায়খের মৃত্যুদণ্ডেই কি জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব? ক্রসফায়ার/এনকাউন্টারে সন্ত্রাস দমন? সাতের দশকে আকছার নকশাল নিধনে নকশালী শেকড় কি পুরোপুরি উপড়ে ফেলা গেছে? মাওবাদ কি এখনো ভারতের শিরাপীড়ন নয়?
অর্থাৎ, সরকার বাহাদুরকে আঘাত করতে হবে জঙ্গিবাদের উৎস মুখে। মাদ্রাসা শিক্ষায় আনতে হবে আমূল পরিবর্তনও। জেহাদের অপদর্শনকে মানবিক দর্শন দিয়েই দমন করতে হবে; আইন দিয়ে তো বটেই। তবে আইনটিকে হয়ে উঠতে হবে আরো মানবিক। এমনকি জঘন্য খুনি, ধর্ষক, দুর্ধর্ষ ডাকাতের ক্ষেত্রেও। মানবতাবাদীরা এখন এমনটিই ভাবছেন।
“মৃত্যুদণ্ডের” বিপরীত পাঠে বলা হচ্ছে, সবচেয়ে সৃজনশীল জীব মানুষ পুনঃনবায়নযোগ্য নয়। তাই তাকে মেরে ফেললে তার কোনো সংশোধনের সুযোগ থাকে না। অর্থাৎ “দণ্ড” হিসেবে “মৃত্যুদণ্ড” একেবারেই ব্যর্থ। এটি যে অপরাধ দমনে সহায়ক, অন্য সম্ভাব্য অপরাধীদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে অপরাধ প্রবণতা থেকে দূরে রাখছে, তার-ও কোনো নিশ্চিত পরিসংখ্যান নেই।
আবার দেখুন, যে জঙ্গি জেহাদের জন্য আত্নাহুতি দিতে প্রস্তুত বা নিজেকে মানববোমায় পরিনত “শত্রু”কে উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে মেরে ফেলতে প্রস্তুত, জীবিত অবস্থায় ধরা পড়ার পর, বিচারে তার “মৃত্যুদণ্ড” প্রদান নেহাতই একটি প্রহসন। অস্ত্রের রাজনীতিতে অস্ত্রবাজের “মিশন”টিই মুখ্য, তার নিজের জীবনটি গৌন। জেহাদের শরীয়তও পাখি পড়ার মতো তাই-ই শেখায়: বাঁচলে গাজী, মরলে শহীদ; কোনোদিকেই সোয়াবে কমতি নাই!
প্রথম বিশ্বের অনেক দেশেই এখন “মৃত্যুদণ্ড” নামক শাস্তির বিধানটিই উঠে গেছে। এর বদলে রয়েছে ভয়ংকর দাগী অপরাধীদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী কারাবাসের বিধান। বাস্তবতার বিচারেই এই উপমহাদেশে খুব শিগগিরই ফাঁসি/ফায়ারিং স্কোয়াড, তথা “মৃত্যুদণ্ড” রাতারাতি তুলে দেওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু ধারণা করি, একদিন নিশ্চয়ই এই উপমহাদেশের সরকারগুলোকেও কথিত দণ্ড প্রথা “মৃত্যু” নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে। তবে সে জন্য হয়তো পেরিয়ে যাবে অনেকগুলো প্রজন্ম।
____________
স্ফুলিঙ্গ
-দীপক রায়
আজমল কাসব আপনাকে…
মুক্তির গান চোরাপথে
স্বপ্ন আপনার ভুল বাকেঁ
অস্ত্র কারবারীর ক্রীড়ানক
আপনার স্ফুলিঙ্গে ধর্মের বেড়ি
আফিমের মাদকতায়
খুনীর মর্যাদায় বিবর্ণ।
সারা পৃথিবীর তেলের
একচেটিয়া মালিকানা প্রতিষ্ঠার
ছায়া যুদ্ধে ভাড়াটে পদাতিক
আপনাকে কলঙ্কের বেদিতে
ফতয়ার দড়িতে
শুধুই একটা লাশের মহিমায়
শেষ শেষ শে- শে-শেষ।
আপনার স্ফুলিঙ্গে জেগে উঠতে পারতো
আমাদের ঘুম ভাঙার গান
দেশে দেশে
মার্কিনী আগ্রাসনের মুখে
ছুঁড়ে দিতে পারতো
মোক্ষম থাপ্পর
বিপ্লবী বোহেমিয়নায় স্নাত হ’য়ে
বুকের গহীনে মুক্তির
নিভু নিভু সলতেয়
আশার আলোকশিখায়
সাহসী দৃপ্ত মিছিলে
আবার আবার আবার
পা মেলাতে পারতাম।
যে অলীক লোকের
পদযাত্রী এখন আপনি
সেথায় সে দাড়ীওয়ালা
বোহেমিয়ান বিশ্ব বিপ্লবের
ফেরিওয়ালার সাথে দেখা হলে
একটু সমাজতত্ত্বের পাঠ নিয়ে
ফিরে আসুন আবার
মিছিলে আমরা থাকবো
আপনার দীপ্ত পদক্ষেপের প্রতীক্ষায়।
কবিতাটি আলাদা করে জুড়ে দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ। ন্ইলে হয়ত পড়া হত না কোনোদিন।
পশ্চীম ইউরোপের সুসভ্য দেশগুলো মৃত্যুদন্ড রহিত করেছে পঞ্চাশ ষাটের দশকেই বড়োজোর সত্তরের দশকের মধ্যেই। প্রায় সভ্য দেশগুলোর মধ্যে মৃত্যুদন্ড প্রচলিত রয়েছে এখনও আমেরিকা ও জাপানে। পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতেও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার হার খুবই খুবই কম, বাংলাদেশে আমাদের স্মরণকালে কয়টি মৃত্যুদন্ড কার্যকর হতে দেখেছি আমরা, সারাজীবনে? কিংবা ভারত বা এশিয়ার অন্য কোন দেশে? তবে বেশ কিছু রিটার্ডেড রাষ্ট্র এখনও গনহারে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে থাকে, উদাহারণ বলাই বাহুল্য চায়না এবং উগ্র ইস্লামিজমের ট্রাশক্যান সৌদিআরব ও ইরান।
আমি মনে করি একজন মানুষকে মৃত্যুর মুখোমুখী ঠেলে দেওয়া যেতে পারে কেবলমাত্র যখন কিনা সে অন্য কোন নির্দোষ ব্যক্তির জীবনের উপর থ্রেট। মাঝেমাঝেই সংবাদপত্রে দেখা যায় যে কোন লোক অবৈধ ফায়ারআর্মস (রেঞ্জবিহীন অস্ত্র যেমন তলোয়ার টলোয়ার নয় বরং সত্যিকারের বন্দুক) প্রকাশ্যে প্রদর্শন করলে পরে পুলিশ এদেরকে দেখামাত্রই শুট করছে এবং শুট করছে হত্যা করার উদ্দেশ্য- এইটাতে আমি কোন সমস্যা দেখি না। কিংবা সমস্যা দেখিনা আমেরিকার ড্রোন চালিয়ে মুক্ত টেরোরিস্ট রিংলিডারদের হত্যা করার মধ্যেও, যদিও এই হামলা হরহামেশাই জড়িত করে নির্দোষ সিভিলিয়ানের মৃত্যু যেটা কিনা দুঃখজনক এবং সিভিলিয়ানের মৃত্যু সর্বনিন্ম রাখার প্রচেষ্টাটাই অভিযান পরিচালনাকারি হতে কাম্য। কিংবা আমি অসমর্থন করি না ওসামা বিন লাদেন বা এই প্রকারের খুবই খুবই ভয়ঙ্কর কোন লোককে দেখামাত্র গুলি করায় প্রোভাডেড দ্যাট এরা মুক্ত অবস্থায় রয়েছে, হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় নেই এদের হাত যেই হাতটি দিয়ে কিনা মুহুর্তের মধ্যে একটি কোন সুইচ টিপে দিয়ে কোন ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে সে।
তবে একজন গ্রেফতারকৃত অপরাধীকে, হোক সে যতোবড় ক্রিমিনালই, রাষ্ট্রকর্তৃক মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়াটা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় মৃত্যুদন্ড বা বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড বা অন্য যে কোন নামধারী লঙ্কাকান্ডর মধ্য দিয়ে। যেই ব্যক্তিটি ইতিমধ্যেই ধৃত এবং নিউট্রালাইসড, সর্বপ্রকার ক্ষতিসাধন করার ক্ষমতা যার নির্মুল করা সম্ভব হয়েছে তার মৃত্যু না ঘটিয়েই, পরবর্তী একটি সময়ে ঠান্ডা মাথায় একে আবার মৃত্যুর মুখে তুলে দেওয়া কিভাবে সম্ভব এইটা আমি মডেল করতে পারিনা। কি ধরণের যুক্তিবোধ কাজে লাগিয়ে মানুষ এই উপসংহারে উপনীত হয়েছে সেইটাও মডেল করতে পারি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনই মৃত্যুদন্ড সমর্থন করিনা, কোন অবস্থাতেই না। আমার কাছে এই সংবাদটি এবং ধারণাটি মনে হয় প্রচন্ড প্রচন্ড ডিস্টার্বিং এবং অগ্রহনযোগ্য। আমি টিভিতে দেখেছি নুরেমবার্গ ট্রায়ালে শাস্তিপ্রাপ্ত নাতসী কালপ্রিটদের ফাঁসিতে ঝোলানো, বলাই বাহুল্য এদের প্রত্যেকেই মোটামুটি একেকটা নরপশু হাতে যাদের লেগে রয়েছে কিনা শত শত নয় হাজার হাজারও নয় বরং মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের রক্ত। একফোঁটাও সহানুভুতি হয়তো বোধ করা সম্ভব নয় এবং উচিত নয় এদের প্রতি। তথাপিও হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে এদেরকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সিড়ি বেয়ে তোলা হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চে, মাথায় পড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যমটুপি আর প্রশাসনের হর্তাকর্তারা ভাবলেশহীন মুখে সেটা দেখছে- এই দৃশ্যগুলি খুবই ব্যথিত বোধ করায়। প্রশ্নাধীন কনভিক্টটি হয়তো কয়েকদিন আগেই ছিলো এক দুর্ধর্ষ খুনী, তথাপিও মৃত্যুর পুর্বমুহুর্তে এদের চোখে ও মুখমন্ডলে যেই অভিব্যক্তিটি থাকে সেইখানে কোন নির্দয়তা ও নির্মমতা থাকে না বরং থাকে ভিতী এবং আত্নসমর্পন, তাদের চোখের অভিব্যক্তি হয় যেকোন অনপরাধী মৃত্যুপথযাত্রীর চোখের অভিব্যক্তির মতোই। অন্য কোন মুহুর্তের কথা জানিনা, তবে সেই সুনির্দিষ্ট মুহুর্তে তাদের দিকে তাকিয়ে সহানুভুতি বোধ না করাটাই আমি মনে করি অগ্রহনযোগ্য। এছাড়াও মনে আছে বাংলা ভাই গং-এর ফাঁসির সংবাদ, যদিও এদের স্বত্বা এবং কর্মকান্ডকে আমি অন্তর থেকে ডিস্পাইস করি, তথাপিও এদের মৃত্যুদন্ডের সংবাদ শুনে মোটামুটি নৈশব্দে পার করেছিলাম একটি দিন; বিশেষ করে একটা ছেলে মনে আছে ছিলো খুবই খুবই রিমোর্সফুল, মৃত্যুদন্ডের দিনও সে বারবার কান্নাকাটি করে ক্ষমা চেয়েছিলো আর মৃত্যুর পুর্বমুহুর্তে বলেছিলো ‘আর এই দুনিয়া দেখা হলো না’ 🙁 । আমি মনে করি সুসভ্য-অসভ্য, এগিয়ে থাকা-পিছিয়ে থাকা নির্বিশেষে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রেরই মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ করা উচিত। সাদ্দামের মৃত্যুদন্ডের সময়, যখন সে হেঁটে যাচ্চিলো ফাঁসিকাঠের দিকে তখনও একে মানুষ ভার্বালি এবিউস করছিলো; শেখ মুজিবের ঘাতকদের মৃত্যুর পর তাদের মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি থামিয়ে নাকি মানুষ মৃতদেহের মুখে থুতু ছিটিয়েছে এবং সতকারকর্মে বাধা দিয়েছে- আমি মনে করি চাপকিয়ে এইসকল জানোয়ারদের পাছার চামড়া তুলে নিয়ে সেই চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজিয়ে চকবাজারে বিক্কিরি করা উচিত।।
বিঃদ্র- অনেকে বলে যে তোমার মাকে ভাই কে কেউ খুন করলে তাকে কি তুমি প্রাণভিক্ষা দিবে না তার মৃত্যু দেখতে চাবে? এই প্রশ্নটার উত্তর করাটাও কি আসলে জরুরী নির্বোধ? অবশ্যই তার মৃত্যু দেখতে চাবো না প্রোভাইডেড দ্যাট সে ধরা পড়েছে এবং ট্রাইড হয়েছে বিচারের কাঠগড়ায়।
@আল্লাচালাইনা, “পশ্চীম ইউরোপের সুসভ্য দেশগুলো” :rotfl:
ঐ সুসভ্য দেশের একটি আয়ারল্যান্ডে কিছুদিন আগে এক ভদ্র মহিলার মৃত্যু হয়েছে…… (লিংক) ডাক্তারের বক্ত্যব্য ছিল “এটা ক্যাথলিক দেশ, এবোরশন করা যাবেনা!!!!” যদিও ভদ্র মহিলার পেটের বাচ্চা ততক্ষনে আর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিলনা। কিন্তু ডাক্তারের নির্লিপ্ততায় ভদ্রমহিলারও মৃত্যু হয়।
এই আধুনিক বিশ্বে “সভ্য” কিংবা “সুসভ্য” শব্দগুলো চয়ন করার আগে আরও ভাবা উচিৎ। আমার মনে হয় এখন সব দেশই সভ্য…… এবং সব দেশেই মাঝে মাঝে অনেক ক্ষেত্রে অনেক অসভ্যর মত কাজ হয়।
ভারতে মৃত্যুদন্ড কলমে থাকলেও কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ খুবই সীমিত। ৯৫ থেকে এই কাসাব’কে নিয়ে মোটে ৩ বার প্রয়োগ ক’রা হ’ল। ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট সেই ৮৩ সালেই মৃত্যুদন্ড খুব’ই বিরল ক্ষেত্রের জন্য’ই সীমাব’দ্ধ ক’রে দিয়েছে।
নানান ষ্টাডি ব’লে যে শাস্তির ভয়াব’তা ক্রাইম ক’মায় এম’ন প্রচলিত ধার’নার ভিত্তি নে’ই, ত’বে সুষ্ঠু বিচার হয়ে শাস্তি হ’বে সেটা ক্রাইম ক’মাতে সাহায্য ক’রে।
এটা নিয়ে বিতর্কের প্রয়োজন। মৃত্যুদন্ড হবেনা জেনে পশ্চিমা অনেক দেশে খুনের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে, এমন সর্বশেষটি হল ২০১১ সালে নরওয়েতে এন্ডার্স ব্রেইভিক কর্তৃক ৭৭ জন মানুষ হত্যা। সে জানে কোন এক সময় হয়ত সে জেল হতে বের হতে পারবে, নিদেনপক্ষে বেঁচে থাকবে।
আবার
২০০৮ সালে, কাসাব এবং তার সঙ্গীরা (মোট ১১ জন) ভারতে যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে যেখানে ১৫৬ জন মৃত্যুবরণ করেছে , ওটা সম্পুর্ন একটি আত্মঘাতী হামলা, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই তারা হামলা চালিয়েছে।
এখন ব্যাপারটা হল, ভিক্টিমের পরিবার ব্যাপারটা কিভাবে দেখে তার উপর; যার সন্তান, বাবা-মা কিংবা ভাই-বোন অপাঘাতে নির্দয় ভাবে মারা যায় ব্যপারটা সেই বোঝে। অনেকেই এটা নিয়ে বিতর্ক করতে পারে।
দূরে যাবার প্রয়োজন নেই, আমাদের দেশে প্রমানিত খুনিদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যেভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা দেওয়া হয়, ভিক্টিমের পরিবারের সম্মতি ব্যাতিত!!!! এর থেকে বেআইনি কাজ বোধয় আর হতে পারেনা। ন্যায় বিচারের প্রহসন। আবার অন্যান্য ফৌজদারি মামলার আসামীরা যেভাবে বীরদর্পে লোকালয়ে ঘুরে বেড়ায়!!!!! “মৃত্যু দন্ড থাকা উচিৎ কি উচিৎ না” এই উচ্চমার্গীয় বিতর্ক করার যোগ্যতাই আমরা এখন অর্জন করিনি। আগে ওটা করতে হবে।
@সংবাদিকা,
মৃত্যুদন্ড নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। মৃত্যুদন্ড বজায় রাখার ওপর অপরাধ বাড়ে কমে এমন কথা নেই। আমেরিকা কানাডার মধ্যে তূলনা করলে পরিষ্কার দেখা যায় যে কানাডায় মৃত্যুদন্ড নেই, কিন্তু ভায়োলেন্ট ক্রাইমের হার আমেরিকা থেকে অনেক কম। আরো মজার ব্যাপার হল যে ‘৭৬ সাল থেকে কানাডাতেই মৃত্যুদন্ড তুলে দেওয়ার পর দেখা গেছে যে ক্রাইম রেট কমে গেছে। আমেরিকার সব ষ্টেটে মৃত্যুদন্ড নেই, যেসব ষ্টেটে মৃত্যুদন্ড নেই সেসব ষ্টেটে অপরাধ মৃত্যুদন্ড ওয়ালা ষ্টেটের চেয়ে কম।
মৃত্যুদন্ড ওয়ালা দেশ যেমন আরব, ইরান, ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া এসব দেশের থেকে মৃত্যুদন্ড বিহীন বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশে খুনাখুনীর হার কম।
ব্রেইভিক এর কেস ব্যাতিক্রম। ব্রেইভিক, মোহাম্মদ আতা এরা দেশে মৃত্যুদন্ড আছে কিনা সে দিয়ে পাত্তা দেয় না, সুইসাইড আততায়ীর কাছে মৃত্যুদন্ডের গুরুত্ব থাকে না।
আসলে ষ্টাডিতে দেখা যায় যে মৃত্যুদন্ড বড় কথা নয়, সুষ্ঠু বিচার অপরাধের হার কমাতে সহায়তা করে অনেক বেশী।
এ নিয়ে কিছুটা ধার’না পেতে পারেন এখানেঃ
http://www.amarblog.com/adilmahmood/posts/138326
– এটাও এক এক স’মাজের প্রচলিত মূল্যবোধের ওপ’র নি’র্ভ’র ক’রে। আমাদের স’মাজে ভিক্টিমের প’রিবার অপ’রাধীকে মৃত্যুদন্ড ক্ষ’মা ক’রে দেবে সে স’ম্ভাব’না খুব ক’ম। ত’বে প’শ্চীমে অনেক নৃশংশভাবে খুন হ’ওয়া লোকের প’রিবার’ও ক্ষ’মা ক’রে দিয়েছে এবং মৃত্যুদন্ড বাতিলের প’ক্ষে ম’ত দিয়েছে। ল’ম্বা তালিকা দেওয়া যায়।
আমাদের দেশের রাষ্ট্রপ’তি কোন ষ্টাডির উদাহ’রন হ’তে পারে না।
@আদিল মাহমুদ, “আমাদের সমাজ” এর আগে “আমি” চিন্তা করেন। আপনি নিজে কি করবেন? কেউ যদি অন্যায়ভাবে আপনার বাবা-মা, সন্তান, স্ত্রী কিংবা ভাই-বোন কে হত্যা করে তাহলে আপনার রায় কি হবে???? এভাবে চিন্তা করেন। যদি এক্ষেত্রে পার হতে পারেন, প্রথম ধাপ পার হওয়া হবে…… তাহলে দ্বিতীয় ধাপ সমাজ নিয়ে চিন্তা করাটা অনেক সোজা হবে।
এই মতটির সাথে একেবারে দ্বিমত। রাষ্ট্রপতির কেস যেকোন থিসিস পেপারে সবার আগে আসবে।
ধন্যবাদ।
@সংবাদিকা,
আমি নিজে মৃত্যুদন্ড সমর্থন করি না, মৃত্যুদন্ড বাতিল করার পক্ষে মত দেব আর নিজের পরিবারের বেলায় উলটো কথা বলব এমন ষ্ট্যান্ড হবে বড় ধরনের হিপোক্রেসি। আশা করি আমার রায় বুঝতে পেরেছেন।
দ্বিতীয় ধাপ সমাজ বলতে ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন বুঝলাম না।
ামাদের রাষ্ট্রপতিদের খুনীদের ক্ষমা করার মহানুভবতা রিসার্চ পেপারে আসতে পারে ঠিক, তবে তার বিষয় হবে ভিন্ন। সেটা হবে কিভাবে আইনের ফাঁক গলিয়ে নীচু শ্রেনীর রাজনীতিক দলীয় শিখন্ডীর ভূমিকা পালন করতে পারে, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক বা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী জনপ্রিয় নেতা যিনি বৃদ্ধ বয়সে জংগী হামলায় স্ত্রী হারিয়েছেন তাদেরও নৈতিক স্খলন কতটা হতে পারে তার মনস্তত্ব গবেষনার কাজে।
আপনি রাষ্ট্রপতিদের কথা যে প্রসংগে বলেছিলেন তা আসলে তেমন কিছু অর্থবহ নয়।
– আমাদের দেশে আরব দেশের মত আইন নেই যেখানে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিতে ভিক্টিমের পরিবারের সম্মতি লাগে। রাষ্ট্রপতির বাই ল সে ক্ষমতা আছে, ভিক্টিম পরিবারের সম্মতি লাগে না। এমন ক্ষমতা আমেরিকার যেসব ষ্টেট এ মৃত্যুদন্ড আছে সেসব ষ্টেটের গভর্নরদেরও থাকে। সমস্যা হল আমেরিকায় এর অপব্যাবহার হয় অনেক অনেক কম, আমাদের এখানে এখন হয়ে দাঁড়াচ্ছে আরেকটি বাজে কালচার, আমরা হয়ত সব ক্ষেত্রেই ইউনিক এটা প্রমান করতেই হবে। আইন আদালত যত শক্ত করা হোক না কেন; চুড়ান্ত বিচারে মানুষের রায়েই ফয়সালা হয়। সেখানে ফাঁক থাকতে বাধ্য, যে সমাজ যত সভ্য তারা সেই ফাঁকের অপব্যাবহার তত কম করে।
আমাদের মত সমাজে মৃত্যুদন্ড তুলে দেওয়াই বরং মংগলজনক হবে। বেছে বেছে কেউ ফাঁসীতে ঝুলবে আর কেউ গলা কাটা কামাল বা তাহের পুত্র বলে রেহাই পাবে তার চেয়ে কেউ না ঝুলুক সেটাই ভাল মনে
@আদিল মাহমুদ,
সাংবাদিকা’র সঙ্গে বিতর্কটি সত্যিই খুব উপভোগ্য। এখান থেকেও অনেক বিষয় খোলসা হচ্ছে; ভাবনাগুলো ঝালাই করার সুযোগ মিলছে। আপনার দেওয়া আমারব্লগের লিংক-পোস্টটি আগে পড়িনি, এখন পড়ে ভাবনাটুকু আরো সমৃদ্ধ করার আরো সুযোগ মিলেছে।
আপনাদের বিতর্ক চলুক। (Y)
@সংবাদিকা,
বিতর্কের জন্য ধন্যবাদ। পোস্টের ক্যাটাগরিতেও “বিতর্ক” কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আপনার কথিত “উচ্চমার্গীয় বিতর্ক করার যোগ্যতাই আমরা এখন অর্জন করিনি” এই কথাটি একদম বুঝিনি; আপনার পরের মন্তব্যগুলোতেও বিষয়টি পরিস্কার নয়। অনুগ্রহ করে এ সম্পর্কে আরেকটু বলবেন? 😕
@বিপ্লব রহমান, আমাদের দেশে এখনো শোনা যায়…… “____ আইন ১৮_ _” সেই উনবিংশ শতাব্দীর আইনি আমরা এখনো যুগোপযোগী করতে পারিনি!!!!!! সেই সঙ্গে আমাদের দেশে আইনের শাসন এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যার পর্যাপ্ত টাকা কিংবা জানাশোনা আছে সে সহজে সব সিস্টেমে ম্যানেজ করে আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে, নূন্যতম সাজাও ভোগ করছে না।
এজন্য আমাদের আগে এসব ঠিক করে পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়া উচিৎ।
ধন্যবাদ।
কোন দেশে দুই ভাবে আইন শৃঙখলা রক্ষা করা যায় এর প্রথমটি হচ্ছে – দু এক জন আপরাধীকে ধরে কঠিন শাস্তি দেওয়া আর্থাৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাতে অন্য কেও অপরাধ করতে সাহস না পায়। এটি হচ্ছে আইন শৃঙখলা রক্ষায় গৃহীত আদি এবং সহজ পদ্ধতি।
আর দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, আইন লঙঙ্ঘনকারী অধিকাংশ ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা এবং যু্ক্তি যুক্ত সাজা প্রদান করা। আসলে এ পদ্ধতিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হলে দেশকে সভ্য এবং সু শৃঙ্খল দেশ হতে হয়।
দাঁতের বদলে দাঁত চোখের বদলে চোখ হল, একটি আদিম পদ্ধতি।
শাস্তির কতগুলো মতবাদ আছে যেমন-
1. Theory of Expiation.
2. Theory of Retribution.
3. Theory of deterrence.
4. Theory of Prevention.
and
5. Theory of Reformation.
“দাঁতের বদলে দাঁত চোখের বদলে চোখ হল” হল “Theory of Retribution.” বা প্রতিশোধ মূলক শাস্তির মতবাদ। তবে বর্তমান আধুনিক এবং সভ্য রাষ্ট্রে শাস্তির এ মতবাদকে সুদৃষ্টিতে দেখা হয় না। বর্তমানে অপরাধীকে মানসিক রুগি হিসাবে গণ্য করা হয়, এ কারণেই আধুনিক এবং সভ্য রাষ্ট্রে আইন শৃঙখলা রক্ষায় “Theory of Reformation” বা সংস্কারমূলক মতবাদকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়,
এবং এটি হচ্ছে সর্বাধিক মানবিক মতবাদ।
@বিষন্নতা,
সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আমরা সর্বাধিক মানবিক মতবাদ প্রতিষ্ঠার পক্ষেই বলছি। 🙂
সর্বোচ্চ অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু শুধু মাত্র মৃত্যুদণ্ড দিয়ে অথবা এনকাউন্টার করে কখনও অপরাধের দমন সম্ভব না। অপরাধ নির্মূল করতে অপরাধীকে শুধরাতে হবে। একজন আজ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে মারা যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু সে রেখে যাচ্ছে তার বেশ কিছু অনুসারী। তার মৃত্যু উৎসাহিত করে ওই সব অনুসারীদের আরও বেশি করে ভুল পথে চলতে প্রতিশোধপরায়ণ করে দিয়ে। জঙ্গিবাদ বা সাধারন খুন যেটাই হোক অপরাধ, এই ধরনের অপরাধ ততদিন চলবে যতদিন মৃত্যুর বিনময়ে মৃত্যু চলবে। তবে আশা করতে দোষ নেই। আশা করলাম, কোন একদিন এই প্রথা বন্দ হবেই।
@রাজিউল হাসান রাজু,
বাকের ভাইয়ের জন্যে রাজপথে মিছিল মনে আছে? আমাদের রাজনীতিবিদরা মনে করেন এটা দেশ নয় একটা তামাসা, নাটক। মৃত্যুদন্ড দেয়ার সব চেয়ে মারাত্বক দিকটা হলো, যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি আসলেই খুনি না হয়ে থাকে? ১৮ বছর পরে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নির্দোষ হয় এরও তো প্রমাণ আছে।
@আকাশ মালিক,
ঠিক বলেছেন। সারা বিশ্বের দণ্ডদাতাদের নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। (Y)
@রাজিউল হাসান রাজু,
লক্ষ্য যেহেতু শুধু শাস্তি প্রদান নয়, অপরাধ দমনও সেহেতু একদিন এই প্রাচীন জিঘাংসার দণ্ড বন্ধ হতেই হবে। আপনাকে ধন্যবাদ। (Y)