আগেই জানিয়ে দেই, এটা কোন প্রবন্ধ নয়; একেবারেই ব্লগাড্ডার চানাচুর টাইপের লেখা। তাই পড়লে নিজ দায়িত্ব পড়ুন।  :))

হুমম …এবারের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোন লেখা মুক্তমনায় এলো না দেখে আমি খুবই অবাক। কি ব্যাপার?  দুনিয়ার এত বড় সার্কাস অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, আর এ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই? আমি অবশ্য নির্বাচনের পর পরই একটা লেখা লিখেছিলাম,  ইংরেজিতে এখানে।   এখন ফিরে গিয়ে পড়তে গিয়ে বুঝলাম অনাবশ্যক আবেগের মাত্রা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। সদ্য ঘটা কোন ঘটনার তাৎক্ষণিক ধাক্কা থেকে কোন কিছু লিখলে যা হয় আরকি। এখন লিখলে আরেকটু সীমিত আবেগে লেখা যেত হয়তো। তারপরেও ভাবলাম, প্রতিটি লেখাই হয়তো স্বীয় সময়ের একটা প্রতিনিধিত্ব করে। তাই লেখাটা রদবদল না করে সেভাবেই রেখে দিয়েছি।

তবে, এবারে বাংলায় না লিখে ইংরেজিতে লেখার কারণ হল – ইংরেজি সাইটটা অনেকদিন ধরেই এতিম ছেলের মত অনাথাশ্রমে পড়ে আছে। ভাবলাম সেদিকে একটু নজর দেয়া দরকার। আর তাছাড়া মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলটা যতটা না আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক, তার চেয়েও বেশি আন্তর্জাতিক। তাই ইংরেজিই সই এবারে (তবে আমার ইংরেজির যে অবস্থা, ভরসার চেয়ে ভয়ই বেশি করে)!

কিন্তু যা বলছিলাম – আমেরিকার নির্বাচন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সার্কাস, ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’।  গত মাস খানেক ধরে অফিস থেকে এসে এই টিভি বিমুখ আমি প্রতিদিনই টিভি খুলে বসে যেতাম সার্কাসের সর্বশেষ সংবাদ জানার প্রত্যাশায়। তো এই ব্যয়বহুল সার্কাস দেখে যা বুঝলাম – সার্কাস দেখার আনন্দ যেমন আছে, তেমনি উপরিপাওনা হিসেবে আবার আছে কিছু মুখচেনা ক্লাউনের ভাঁড়ামি।  এমনি এক ক্লাউন ডিক মরিস, ফক্স নিউজ চ্যানেল খুললেই  রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে যাকে মুখ বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে অর্থহীন প্রলাপ বকতে দেখা যায়, তিনি মার্কিন নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে রীতিমত ওহী নাজিল করতে শুরু করলেন, নির্বাচনে নাকি ওবামার ভরাডুবি হবে, আর ‘ল্যান্ড স্লাইড’ জয় হবে রমনির।  কিন্তু নির্বাচনের দিন ফলাফল যা বেরিয়ে এলো তা ডিক বাবাজির ঠিক উল্টো।  ওবামা ৩৩২ টা ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে (ফ্লোরিডা সহ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, আর রমনি পেলেন সর্বসাকুল্যে ২০৬। ডিক মরিসের রমনি-ল্যান্ড স্লাইডের কি নিদারুণ গতি!

আরেক বড় ক্লাউনের সার্কাস দেখলাম নির্বাচনের দিন ফক্স নিউজে।  যখন নির্বাচন প্রায় শেষ, এমনকি রমনির শেষ আশ্রয়স্থল ওহায়ো স্টেস্টেও,  প্রতিটি নেটওয়ার্ক চ্যানেল ওবামাকে বিজয়ী ঘোষণা করে দিল, তখনো রিপাব্লিকান পান্ডা কার্ল রোভ শেষ খরকুটোর মত ওহায়োর শেষ দেখবেন বলে গোঁ ধরে বসে থাকলেন। তিনি ওবামাকে বিজয়ী বলে স্বীকার করলেন না। এই টানা হ্যাচড়ার কারণে রমনির হার স্বীকার একটু বিলম্বিতই হল, এইটুকুই যা!

ডিক মরিস, কার্ল রোভ আর রাশ লিম্বোরা যখন রমনির ল্যান্ড স্লাইডের স্বপ্নে বিভোর হয় নানা পদের ত্যানা পেঁচিয়ে চলেছিলেন, গলার আর মুখের তুবড়িতে ওবামাকে গদিচ্যুত করেই ফেলেছিলেন প্রায়,  এদিকে  তখন নেট সিলভার নামে এক গোবেচারা পরিসংখ্যানবিদ তার পরিসংখ্যান এবং গণিতের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বহু আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে ওবামা জয়ী হবে। শুধু তাই না, কোন স্টেট-ভিত্তিক ফলাফলও আগেই বলে দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনের ফলাফল আসার পর দেখা গেল সবকিছু নেট সিলভারের কথামতই হয়েছে। একটি রাজ্যের ফলাফলও গড়বড় হয়নি। নেট সিলভার রিপাবলিকান বিশেষজ্ঞদের ‘ফিলিংস’ এর উপর ভর করে কিছু বলেননি, বরং তিনি প্রয়োগ করেছিলেন পরিসংখ্যান এবং গণিতের আধুনিক জ্ঞান।  এই নির্বাচন ওবামার বিজয়ের পাশাপাশি গণিতেরও বিজয়, বলাই বাহুল্য।

তবে এখানেই শেষ নয়, নির্বাচন শেষ হবার পর পরই আমেরিকার ‘পয়লা নম্বর ক্লাউন’  ডোনাল্ড ট্রাম্প যা করলেন তা রূপকথাকেও যেন হার মানায়। তিনি ‘revolution in this country’  বলে টুইটারে টুইট করে বিপ্লবের ডাক দিয়ে  সবাইকে লং-মার্চ করে ওয়াশিংটন অভিমুখে যেতে বললেন , নির্বাচনের ফলাফল ঠেকাতে (তার বিখ্যাত টুইটগুলো এখানে)।  অবশ্য ট্রাম্প সাহেবের ক্লাউনগিরি নতুন নয়। ওবামার বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে ভরংবাজি তিনি আগেও করেছেন।  এই নির্বাচনের কিছুদিন আগেও ওবামাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন ৫ মিলিয়ন ডলারের চ্যারিটি করার কথা বলে যদি ওবামা তার কলেজের ট্রান্সক্রিপ্ট দেখাতে পারে।  আমেরিকার নির্বাচন যদি ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হয়, তবে ডোনালড বাবাজির ‘ক্লাউন দি গ্রেট’ খেতাব কেউই কেড়ে নিতে পারবে না। বিল মার কি সাধে একে ‘লেজিটিমেট এপ’ (রেপ নয়, এপ … খুব খিয়াল কৈরা) হিসেবে সাব্যস্ত করেছে!

যা হোক, এই নির্বাচন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত মোটামাথাদের যেমন পরাজয় ডেকে এনেছে, সেই সাথে পরাজয় এনেছে কিছু দেশি নিওকন ক্লাউনদেরও।  আর রিপাব্লিকান পার্টির গন-ধর্ষণদলের কথা না হয় নাই বা বললাম।   যাহোক, বিস্তারিত আর এখানে না বলে  গোটা প্রবন্ধটির লিঙ্কই দিয়ে দিচ্ছি –

 Obama’s Victory: A Hard Lesson for the Right Wing Extremists and Neocons

আমি জানি – মুক্তমনার লেখকদের অনেকেই ইংরেজিতে লেখালিখিতেও দক্ষ। আসলে একটা সময় মুক্তমনার যাত্রা শুরুই হয়েছিল ইংরেজিতে  ইয়াহুগ্রুপ্স-এ লেখালিখির মাধ্যমে।  কিন্তু পরবর্তীতে বর্ণসফট এবং শেষ পর্যন্ত ইউনিকোডভিত্তিক অভ্র ম্যাজিক রাজত্ব শুরু করায় ইংরেজিতে লেখালিখির জগৎটা একেবারে শীর্ণকায় হয়ে গেছে। ভাবছি, এ ব্যাপারটা একটু বদল করা দরকার। যারা বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও লিখতে ইচ্ছুক, তারা ইংরেজি সাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন।  সাইটের ডানপাশে ছোট করে রেজিস্ট্রেশনের লিঙ্ক আছে। সীমিত সময়ের জন্য পরীক্ষামূলক-ভাবে খুলে দেয়া হয়েছে। বন্ধ হবার আগেই রেজিস্ট্রেশনটা সেরে ফেলুন। হয়তো কোনদিন ইচ্ছে হলে ইংরেজিতে লিখেও ফেলতে পারেন আমার মতো!