আজকাল “সন্ত্রাসবাদ”—শব্দটির সাথে দুগ্ধপোষ্য শিশুরাও পরিচিত । আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল থেকে শুরু করে আমাদের পাড়ার কেল্টোর চায়ের দোকানের বৈঠকি আড্ডা সর্বত্রই শুনতে পাই । সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ তো প্রাতঃকর্মের মতো রোজের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । আজ এখানে বিস্ফোরণে এতজন মরেছে তো কাল ওখানে আত্মঘাতী হানায় এতজন । শুনতে পাই ঠিকই , কিন্তু বিশ্বজুড়ে এর কোনও সমাধান না থাকায় ব্যাপারটা গা’সওয়া করে নেওয়া ছাড়া আমাদের উপায়ও নেই ।
সন্ত্রাসবাদ শব্দ টির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল “terrorism”। অক্সফোর্ড ডিকশনারি তে ‘terrorism’ এর অর্থ করা হয়েছে— ‘the use of violent action in order to achieve political aims or to force a government to act’। অর্থাৎ কোনও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন বা সরকার কে কাজ করার জন্য হিংসাত্মক কাজের দ্বারা বলপ্রয়োগ করা । আভিধানিক ভাবে বিচার করলে বলা যায় , যে উদ্দেশ্য তারা পূরণ করতে চায় সেটির জন্য হিংসাত্মক কাজের দ্বারা সরকার ও জনগণের মধ্যে তারা ভয় বা ত্রাসের সৃষ্টি কে তারা উপায় হিসাবে গ্রহন করে । কিন্তু উদ্দেশ্যটি সৎ না অসৎ, তা পরিষ্কার নয় । অর্থাৎ, উভয়ই হতে পারে ।
একটু খেয়াল করলে দেখা যায় , সন্ত্রাসবাদের আভিধানিক অর্থ মেনে নিলে, পৃথিবীর অনেক মহান বিপ্লবীকেও সন্ত্রাসবাদী বলতে হয় । কেননা তারাও সরকার পরিবর্তনের জন্য হিংসার আশ্রয় নিতেন । কিন্তু বর্তমান কালে সন্ত্রাসবাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিত আলাদা । মানুষ সন্ত্রাসবাদী ও বিপ্লবী দের প্রতি সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে । তাদের এক ক্যাটাগরি তে ফেলতে চায় না । তারা জানে যে সন্ত্রাসবাদ অসৎ উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয় । সমাজ দার্শনিক গন মনে করেন , বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদী দের মূল পার্থক্য হল –একজন ন্যায়ের জন্য অস্ত্র ধারণ করে অন্যজন অন্যায় দাবী আদায়ের জন্য অস্ত্র ধারণ করে । বিপ্লবীরা কখনোই নির্দোষ মানুষকে হত্যা করতে চান না । কিন্তু সন্ত্রাসবাদীরা নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেই কাজ হাসিল করতে চায় । কমরেড মুজফফর আহমেদ তাঁর ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ গ্রন্থে বিপ্লবী কাজকর্মের বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর ও সুস্পষ্ট ভাবে দেখিয়েছেন । তিনি বলেছেন , “ যারা কোনও শোষিত শ্রেণীর পক্ষ থেকে পুরনো শোষক সমাজ কে ভেঙ্গে দিয়ে তাঁর জায়গায় সুন্দরতর , উন্নততর ও জটিলতর সমাজের প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করেন তারাই বিপ্লবী। এই বিপ্লবের দ্বারা স্থাপিত সমাজে জনগণ ক্ষমতার অধিকারী হবেন । অতএব শোষণ থাকবে না । সামাজিক পরিবর্তন কিছু হল না অথচ কিছু সংখ্যক লোকের জায়গায় অন্য কিছু সংখ্যক লোক এসে বসলো , এটা বিপ্লব নয়।” অর্থাৎ, বিপ্লবী দের মধ্যে থাকে বৃহত্তর কল্যাণ সাধনের আদর্শ,আর সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে থাকে অন্ধবিশ্বাস । তাই ইউনাইটেড নেশনস ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে সন্ত্রাসবাদের এর একটি সংজ্ঞা প্রদান করে , তাতে বলা হয় –“ যে কাজ সাধারণ ও অসামরিক নাগরিক দের মৃত্যু ঘটানোর জন্য বা গুরুতর ভাবে আহত করার জন্য ব্যবহার করা হয় , তাই সন্ত্রাসবাদ । এর উদ্দেশ্য হল কোনও একটি জনগোষ্ঠী কে বা সরকার কে বা কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা কে কিছু করতে বাধ্য করা বা কিছু করা থেকে বিরত হতে বাধ্য করা ।”
তবে এই আপাত সংজ্ঞায় যাই বলা হোক না কেন, সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত সংজ্ঞা নির্ধারণ করা এখনও সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি । কেন না , সন্ত্রাসবাদ শব্দ টি বিভিন্ন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন ভিন্ন ব্যঞ্জনা পেয়েছে । শুধু তাই নয় । রোজদিন সন্ত্রাসবাদের নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েই চলেছে । সাইবার সন্ত্রাস,যৌন সন্ত্রাস ইত্যাদির মতো নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে সন্ত্রাসবাদ শব্দটি আরও বেশি জটিল হয়ে উঠছে । ফলে হয়তো ভবিষ্যতেও এর সঠিক সংজ্ঞা নির্ণয় সম্ভব হবে না ।
এতে যে বিশেষ কোনও অসুবিধার সৃষ্টি হয় বা হবে, তাও কিন্তু না । কারণ আমরা সকলেই সন্ত্রাসবাদ শব্দটির বহুমাত্রিকতা কে জানি। প্রসঙ্গক্রমে তাঁর অর্থ নির্ণয়েও আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কোনও সমস্যা হয় না। সাধারণ মানুষের কাছে সন্ত্রাসবাদের বিশেষ কতকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে —
১) সন্ত্রাসবাদ সাধারণ মানুষ ও সরকারের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ।
২) আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয় হিংসাত্মক বা নাশকতা মূলক ক্রিয়াকলাপের দ্বারা ।
৩) আতঙ্ক বা সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয় কোন সু সংগঠিত দল বা জনগোষ্ঠী দ্বারা ।
৪) আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা সেই জনগোষ্ঠী কে বা সরকার কে কোনও কাজ করতে বা কোনও কাজ না করতে বাধ্য করে বা বাধ্য করার চেষ্টা করে ।
৫) তাদের কার্যকলাপের মূলে থাকে অন্ধবিশ্বাস । এই অন্ধবিশ্বাস যে, একমাত্র তাদের পথেই মানুষের তথা সমাজের মঙ্গল সম্ভব।
৬) তাদের অন্ধবিশ্বাসের বাস্তব রূপদানের জন্য তারা সব কিছু করতে পারে। এমন কি নিজেদের মৃত্যু ঘটাতেও এরা পিছপা হয় না ।
সন্ত্রাসবাদ অনেক প্রকারের হতে পারে । তবে মুলতঃ সন্ত্রাসবাদ কে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে ।
ক) রাজনৈতিক
খ) সামাজিক
গ) ধর্মীয় ও
ঘ) মনস্তাত্ত্বিক ।
তবে বর্তমান সময়ে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদই সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে পরিচিত ও আলোচিত রূপ ।
এখন প্রশ্ন, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ কি ? উত্তর হল , ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ বলতে আমরা সেই সন্ত্রাসবাদ কে বুঝি ,যে সন্ত্রাসবাদের উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় ধর্মীয় । অর্থাৎ ধর্মীয় উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় চরিতার্থ করার জন্য হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো এবং সাধারণ নাগরিক ও সরকারের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা । কিন্তু সমস্ত ধর্মপ্রভাবিত সন্ত্রাসবাদকেই ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ বলা যায় না। যেমন শিখ সন্ত্রাসবাদের মধ্যে ধর্মের প্রচুর প্রভাব থাকলেও তাকে জাতিসত্তার সন্ত্রাসবাদ বলেই মনে করা হয় । আসলে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ শব্দটি ব্যাবহার হতে শুরু করেছে ও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে মুসলিম মৌলবাদীদের দ্বারা কৃত সন্ত্রাসবাদকে কেন্দ্র করে । এদের উদ্দেশ্য হল ইসলাম ধর্মকে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করা, যা ‘pan Islamism’ নামে সুপ্রসিদ্ধ। তবে তারাও জানে যে ইসলাম কে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। কেননা, পৃথিবীর সর্বত্র ইসলাম একরকম নয় । ইন্দোনেশিয়া , বাংলাদেশ ,ইরান ও সৌদি আরব—এদের প্রত্যেকের ইসলাম আলাদা । এদের একটি রাষ্ট্রে বা বিশ্বরাষ্ট্রে এদের একত্রীকরণ করা হলেও এরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কেননা, সংস্কৃতি গত দিক থেকে এদের মধ্যে বিস্তর ফারাক । তাই তাদের উদ্দেশ্য ইসলামের বদলে শরিয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করা । তাই ভিতরে ভিতরে সমস্ত ইসলামী রাষ্ট্রের (যেমন- মালয়েশিয়া , ইন্দোনেশিয়া) শরিয়াকরন করে সকলকে এক ছাতার তলায় আনতে চায় ।
প্রশ্ন উঠতে পারে, বর্তমানে বিশ্ব বিজ্ঞানে এত উন্নতি করেছে যে বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের এক পা ও চলা সম্ভব নয় । তবু অপ্রত্যাশিত ভাবে তীব্র গতিতে বেড়ে চলেছে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ । কিন্তু কেন ? উত্তরে মোটামুটি ভাবে বলা যায় যে , প্রশ্ন টির মধ্যেই উত্তর টি নিহিত । বর্তমান বিশ্ব এমনই দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে যে কালকের মনন,মানসিকতা আজ পালটে যাচ্ছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এত উন্নত হচ্ছে যে এদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না সহস্রাব্দ কাল প্রাচীন অ-পরিবর্তনযোগ্য ধর্ম গুলো । একই ভাবে ডারউইনীয় নীতি মেনে কিছু মানুষও তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তারা আশ্রয় নিচ্ছে তাদেরই মতো পিছিয়ে পড়ে থাকা ধর্মের কোলে । তারা বুঝতে পারছে যে , এটাই তাদের শেষ আশ্রয় । তাই তারা এটাকে আঁকড়ে ধরে আছে । এই আশ্রয়টাকে তারা হারাতে চায় না । বাঁচিয়ে রাখতে চায় যে কোনও মূল্যে । যখন যুক্তি, নীতি ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে তারা হেরে যায় , তখন তারা সম্বল করে সেই সহস্রাব্দ প্রাচীন হিংসা কে । প্রাচীনকালের হিংসা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মোড়কে ঢেলে আতঙ্ক তৈরি করে সেইসব সাধারণ মানুষের মনে, যারা খাওয়া-পড়া-বাঁচা-বাড়ার জীবনসংগ্রামের বাইরে আর কিছুই বিচার্যের মধ্যে ফেলে না । উদ্দেশ্য একটাই — এখনকার সমাজকে আগেকার ধর্মীয় সমাজের রূপদান করা । নিজে এগিয়ে যেতে না পেরে এরা চায় সমাজকেই পিছিয়ে দিতে । এবং সমাজের একটা অংশের অকুণ্ঠ সমর্থনও পায় এরা । এখন আমরা সমাজের এই বিশেষ অংশের আপাত নিরীহ মানুষদের নিয়ে আলোচনা করবো, যারা হিংসক সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করে । আলোচনা করবো,তারা কিভাবে সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করে ও কিভাবে সন্ত্রাসী দের উদ্দেশ্যের বাস্তব রূপদানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে —
আমরা আমাদের আসেপাসে চিরপরিচিত অনেক মানুষ দেখি যারা ধর্ম নিয়ে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে । সুযোগ পেলেই যে কোনও বিষয়ে আমাদের একটু ধর্মীয় জ্ঞান দিতে চায় , সুযোগ পেলেই কোরআন হাদিসের বাণী শোনায় । যে কোনও সমস্যার প্রকৃত ইসলামী সমাধান টি আমাদের আগ বাড়িয়ে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরা সর্বত্র মানুষকে ভালো মুসলিম হওয়ার পরামর্শ দেয় । পরিবারে যদি কেউ ধর্মের প্রতি গুরুত্ব না দেয় , তাদের দেখতে পারে না । তাদেরকে যথা সম্ভব অন্যদের চোখে খারাপ করে দিতে চায় । কথায় কথায় কোরআন হাদিস আওড়ায় । উদ্দেশ্য, অন্যের মনে সর্বক্ষণের জন্য আল্লাহ-র ভয় স্থাপন করে দেওয়া । সাধারণ মানুষ কে সর্বত্র আল্লাহ-র ভয়ে সন্ত্রস্ত করে রাখা। নিজের স্ত্রী সন্তানই হয় এদের প্রথম শিকার । কেননা , তারাই এদের সবচেয়ে কাছে থাকে। সর্বদা শোনে নামাজ আদায় না করলে এই হবে, রোজ কোরআন না পাঠ করলে ওই হবে। বার বার শুনতে শুনতে তারা বিশ্বাস ও করতে শুরু করে। আর স্ত্রী বিশ্বাস না করলে তাকে অবাধ্যতা ভেবে নিয়ে কোরআনে বৈধ স্ত্রী প্রহারের আয়াত কার্যকরী করেন , তালাকের ও ভয় দেখান । সন্তান রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না করলে কত বছর বয়সে কি কি শাস্তির বিধান আছে , সেই অনুযায়ী প্রথমে হুমকি দেন । তার পর সন্তানকেও পেটান । এসব ইসলামী সমাজে চলে আসছে দিনের পর দিন । এমন কি বুজুর্গ দেরও অধার্মিকতা দেখলে তাদের ভর্তসনা করতেও ছাড়েন না। এরা স্কুল কলেজ অফিস আদালতে কর্মরত থাকলেও সর্বত্রই নিজেদের সত্যিকার ধার্মিক হিসাবে দেখেন ও দেখাতে চান । অন্য ধর্মের লোক দের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন না । কিন্তু কেউ অন্য ধর্ম সম্প্রদায় ভুক্ত দের খারাপ প্রতিপন্ন করতে চাইলে তাদের বিরোধিতা তো করেন ই না । উল্টে তাদের কথায় ছোট ছোট বুদ্ধিদীপ্ত সমর্থন নীতিবাক্য আওড়ে তাদের উস্কানি দেন । তাদের প্রশংসা করেন বলেন, কোরআনে তো এমনই বলা আছে । পাড়ার চায়ের দোকানে থেকে শুরু করে ধর্মীয় জলসায় লাদেন , মোল্লা ওমর দের প্রসঙ্গ উঠলে তারা প্রসঙ্গ পাল্টাতে বিজ্ঞের মতো সন্ত্রাসবাদের উৎস সন্ধানে লেগে পড়েন । তাতে আমেরিকার দোষ খোঁজেন, ইসলামের অস্তিত্বের সঙ্কটের জন্য পাশ্চাত্যকে দায়ী করেন । কিন্তু কখনোই তাদের দোষারোপ করেন না । সরাসরি প্রশ্ন করা হলে অস্বস্তি ভরে এড়িয়ে যান । কিন্তু সন্ত্রাসবাদী দের কর্মকাণ্ডের খবরে মুসলিম হিসাবে গর্বে বুক ভরে ওঠে ।
এরকম মানুষ আমরা সকলেই দেখেছি। এরা আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষ । কোনভাবেই এদের ক্রিমিনাল মনে করা যায় না । এদের আমরা ‘একটু বেশিই ধার্মিক’ ভেবে থাকি এবং এরা সর্বত্রই একটু বেশি সমীহ পেয়ে থাকেন । অন্যকে ধার্মিক বানাতে এরা থাকে সদা তৎপর । এদের ক্রিয়াকলাপ কে আমরা কখনোই সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়া হিসাবে দেখি না । কিন্তু একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখলেই বোঝা যায় যে, বিষয়টি টি আপাত ভাবে দেখলে সন্ত্রাসবাদ থেকে আলাদা মনে হয় । কিন্তু মোটেও আলাদা নয় । বরং বলা যায় একেবারে ‘আণবিক স্তরের ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ’ । হয়তো বলবেন ,আমিই বাড়াবাড়ি করছি । কিন্তু একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখলে বুঝতে পারবেন । আচ্ছা আমিই বোঝানোর চেষ্টা করছি —
আমরা যারা সমাজবিজ্ঞান বা সমাজদর্শনের ছাত্রছাত্রী তারা সকলেই জানি যে, মানুষ সমাজবদ্ধ জীব । এবং সেই হিসাবে অনেকে একসাথে কাজ করি বা কাজ করতে বাধ্য হই। একে যৌথ কার্য ( corporate action) বলে । যৌথ কার্য এর ফলেই সমাজ তার রূপ পায় । সমাজ বলতে আমরা বুঝি মূলত ছয় প্রকার প্রতিষ্ঠান (institution) —
১) পরিবার , যেখানে শিশু জন্মলাভ করে তার সভ্যভুক্ত হয় ও যত্ন সহকারে প্রতিপালিত হয় ।
২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , যার সভ্যভুক্ত হয়ে সে জীবনের জন্য প্রস্তুত হয় ও যথাযথ শিক্ষা লাভ করে ।
৩) কর্ম প্রতিষ্ঠান , যার সভ্যভুক্ত হয়ে সে কর্ম করে ও জীবিকা অর্জন করে ।
৪) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান , যার সভ্যভুক্ত হয় সে জন্ম থেকেই ,এবং যার অধীনে ও পরিচালনায় সে নিজের জীবনকালে সমস্ত কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করে ।
৫) সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান , যার সভ্যভুক্ত হয়ে সে নিজের জীবন কে সুন্দর ও মহৎ করতে চেষ্টা করে ।
৬) ধর্ম প্রতিষ্ঠান , যার সভ্যভুক্ত হয়ে সে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবন যাপন করে ।
প্রতি টি প্রতিষ্ঠানে মানুষ যৌথ ভাবে ক্রিয়া করে । একক ভাবে নয় । যৌথ কার্য সৃষ্টি করে সাধারণের ইচ্ছা (general will) এর । এই সাধারণের ইচ্ছাই সকল প্রতিষ্ঠানের চালিকা শক্তি ।
আমি চাই ঠিক এইজায়গায় , অর্থাৎ একেবারে মূলে এসে সন্ত্রাসকে অনুসন্ধান করতে । আমার মতে, আতঙ্ক বা ত্রাস দুই ভাবে তৈরি করা যেতে পারে –
১)কোনও প্রতিষ্ঠানে এই সাধারণের ইচ্ছা কে গুরুত্ব না দিয়ে যদি বিশেষ কারো ইচ্ছা কে বাস্তবায়িত করার জন্য বলপ্রয়োগ করলে ।
২) একটি প্রতিষ্ঠানের বাঁধাধরা রীতি নীতি অন্য প্রতিষ্ঠান গুলিতেও বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য বলপ্রয়োগ করলে ।
রাষ্ট্রই একমাত্র ইন্সটিটিউশন নয় । পরিবার , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , কর্ম প্রতিষ্ঠান –সবগুলিই ইন্সটিটিউশন । সুতরাং রাষ্ট্রের মতো এই সব প্রতিষ্ঠানেও আতঙ্ক তৈরি করা যেতে পারে । এবং এই বলপ্রয়োগকারীই হল সন্ত্রাসবাদী । কেউ ভাবতে পারেন, “তাহলে তো পরিবারের মধ্যে পিতা যদি সন্তানকে কোনও খারাপ কাজ করতে বাধা দেওয়ার জন্য বকে বা মেরে তার মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করেন, তাকে কি সন্ত্রাস বলা যায় ?” উত্তর হবে, “না” । কেননা ,পরিবারের ‘সাধারণ ইচ্ছা’ এই থাকে যে, সন্তানটি বড় হয়ে সুনাগরিক হয়ে উঠুক এবং পরিবারের সম্মান বজায় রাখুক । সেক্ষেত্রে একে কার্যকর করে পিতা , এটি সাধারণের ইচ্ছার ই প্রকাশ ।
এখন প্রশ্ন, তাহলে কিভাবে চিনবো যে কারা আণবিক স্তরের সন্ত্রাসবাদী ? প্রশ্নটি নিঃসন্দেহে প্রাসঙ্গিক এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ । তাই আমরা এখন আণবিক স্তরের সন্ত্রাসবাদী দের বৈশিষ্ট্য গুলি জেনে নেবো । অন্যান্য প্রকারের আণবিক স্তরের সন্ত্রাসবাদী দের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যগুলো প্রায় একরকম হলেও এখন যেহেতু আমাদের আলোচনার বিষয় কেবলমাত্র ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ, তাই আমরা কোনও প্রতিষ্ঠানে আণবিক স্তরের ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীদের বৈশিষ্ট্য গুলো দেখে নেবো যাতে করে আমরা তাদের অনায়াসে সনাক্ত করতে পারি । সেগুলি হল—
১) নিজের multidimensional identity-র বিস্মরণ ।
২) অন্যান্য identity গৌণ করণ ।
৩) কেবল ধর্মীয় আইডেন্টিটি কে মানুষের একমাত্র identity হিসাবে প্রতিষ্ঠা দান ।
৪) ‘ভালো মানুষ হওয়ার একমাত্র অর্থ ভালো ধার্মিক হওয়া’—এই মিথ্যা বিশ্বাসের ( false belief) প্রতিপালন ।
একটু বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন — আমরা তো মানুষ । আমাদের act এবং behaviour বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। এবং আমাদের এই act এবং behaviour আমাদের আইডেন্টিটি নির্ধারণ করে । যেমন আমি লাইব্রেরী তে গেলে আগে দর্শনের বই বের করে পড়ি , সেখানে আমার identity তৈরি হয় যে আমি দর্শনে আগ্রহী । আমার মহল্লায় আমি একজন মুসলিম বংশজাত , শিক্ষাক্ষেত্রে আমি ডাবল এম এ ডিগ্রী ধারী । ফেসবুকে আমি নাস্তিক ব্লগার । আমি শখের ফটোগ্রাফারও । এগুলো সব আমার এক একটা identity । এদের একসাথে একটা মানুষের মধ্যে থাকতে কোনও বাধা তো নেই-ই বরং একসাথে অনেক identity থাকাই স্বাভাবিক। আর তা থাকেও । এই জন্য নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে, প্রতিটি মানুষের identity multi- dimensional ।
কিন্তু এই ধরনের মানুষ গুলো নিজেরা multi-dimensional act ও behaviour করলেও নিজের multi dimensional identity গোপন করেন, অপরের এবং নিজের কাছেও । নিজের উপর মিথ্যা বিশ্বাস আরোপ করেন , নিজের কাছে দেখানোর চেষ্টা করেন যে তিনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি , ধর্মীয় পরিচিতি ই যার একমাত্র পরিচিতি , এছাড়া তার অন্য কোনও পরিচিতি নেই । আর অন্যের কাছ থেকে ও আশা করেন যে অন্যেরা যেন তার ধর্মীয় identity দ্বারাই তাকে চেনে । শুধু এইটুকু করলে তেমন কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু তারা অন্যান্য মানুষের identity -র বাকি সকল dimension গুলির উপর গুরুত্ব না দিয়ে কেবল মাত্র ধর্মীয় আইডেন্টিটি দ্বারাই মানুষের মূল্যায়ন করেন যে, মানুষটি ভালো না খারাপ । এবং ধর্মীয় identity কেই মানুষের একমাত্র আইডেন্টিটি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধ পরিকর হয়ে ওঠেন । আর এখান থেকেই শুরু হয় যত সমস্যার । এদের মতে ভাল মানুষ হওয়ার একমাত্র শর্ত হল ভাল ধার্মিক হওয়া । ফলে তারা প্রাচীনকালে ধর্মীয় পদ্ধতিতে বিশ্বাস রেখে বলপ্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেন ।
পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের মানুষদের মধ্যে এই ধরনের লোক বর্তমানে প্রায় নেই বললেই চলে । যদি ও বা দুই একটা আছে তবু প্রতিকূল পরিবেশে তারা অন্যের উপর বলপ্রয়োগ বা চাপ সৃষ্টি করতে সাহস পায় না । এরা তেমন গুরুত্ব ও পায় না সেই সমাজে । তাছাড়া কোনও ধর্ম যদি যুগে যুগে নিজেকে পরিবর্তন করে , যুগোপযোগী করে, তাহলে এই সমস্যা আসার সম্ভাবনা কমে যায় । বর্তমানে প্রায় সব ধর্মই নিজেকে পালটে ফেলেছে । কিন্তু আজ ও পৃথিবী তে ইসলাম ধর্ম তাদের দেড় হাজার বছরের পুরনো বিশ্বাসে rigid । তাই মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে আণবিক স্তরে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ দেখা যায় না । কেবলমাত্র পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তের মুসলিম দের মধ্যেই এই ধরনের মানুষের প্রাচুর্য দেখতে পাওয়া যায় । যার অনিবার্য ফল হল মূল ধারার সন্ত্রাসবাদ এর ভিত মজবুত করা ।
এরা কিভাবে সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ? এই প্রশ্নটি তো অবশ্যম্ভাবী ভাবেই চলে আসে । যদিও এতক্ষণে সকলেই হয়তো আন্দাজ করতে পারছেন আমার সিদ্ধান্ত টি , তা সত্ত্বেও বলে নিতে চাই । আসলে এইসব মানুষেরা নিজের পরিচিত গণ্ডি বিশেষত পরিবারে ধর্মীয় পরিস্থিতি কায়েম করতে খালি বলপ্রয়োগ নয় , ছল এবং কৌশলেরও সমান ভাবে প্রয়োগ করেন । ফলে, সেই সব পরিবারের মানুষজন নিজেকে আতঙ্কের মধ্যে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে । ফলে এই আতঙ্কের পরিবেশ তাদের কাছে নতুন কোনও প্রতিকূলতার সৃষ্টি করে না , যে জন্য তারা প্রতিবাদে নামবেন । দ্বিতীয়ত , ওই মানুষ গুলোকে সমাজে একটু বেশি সমীহ পেতে দেখে তার পরিবারের সদস্যরা মনে করে যে ওই ব্যক্তিই ঠিক । তাছাড়া নিয়মিত পবিত্র হয়ে ধর্মগ্রন্থ পড়ার ফলে একটি বিশেষ মানসিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যাকে ‘গুণের স্থানান্তরণ’ বলতে পারি ( যেমন শুনতে পাই—‘নিজে ভালো, তো জগত ভালো’ এই খেত্রেও একই ঘটনা ঘটে)। ফলে মনে হয় গ্রন্থটি সত্যিই পবিত্র । ফলে পাঠকেরা সিদ্ধান্ত করে বসে যে গ্রন্থটি সত্যিই স্রস্টার কাছ থেকে এসেছে , এবং সেইজন্য তা অভ্রান্ত । এই অভ্রান্ততায় বিশ্বাস , যার প্রকৃত কারণ আসলে বলপ্রয়োগ । আণবিক স্তরের সন্ত্রাসবাদীদের বলপ্রয়োগ ।ফলে এইসব পরিবারের মানুষজনও নিজের অজান্তেই অতি ধীর ও নিঃশব্দ গতিতে আণবিক স্তরের সন্ত্রাসবাদী তে পরিণত হয় । এরাও একসময় ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থক হয়ে ওঠেন । হয়ে ওঠেন প্রশ্রয়দাতা । শুধু তা-ই নয় , সামান্য প্রশিক্ষণে এবং মস্তিষ্ক প্রক্ষালনে এরা হাতে অস্ত্র তুলে নিতেও দ্বিধা করেন না ।
এই পরিস্থিতিই ইসলামে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে দিন দিন প্রসারিত করে চলেছে । আধুনিক পৃথিবীর কাছে যা হয়ে উঠছে সাক্ষাৎ ভীতিস্বরূপ। যেদিন আমরা নিজেদের পরিবার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে আণবিক স্তরের সন্ত্রাসবাদীদের সনাক্ত করতে পারবো, তাদের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের আসল চেহারা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে পারবো , জনমত গড়ে তুলতে পারবো এদের বিরুদ্ধে , সেদিন ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীরা জনসমর্থন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে । আর জনসমর্থন ছাড়া যেহেতু কোনও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন বেশিদিন চলতে পারে না , তাই সেদিন থেকে অনিবার্য ভাবেই ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদও আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে ।
এই থ্রেডে মন্তব্যকারীদের বিশেষণ প্রয়োগ ছাড়া মন্তব্য করতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। একটি ভাল আলোচনা কেবল বিশেষণ প্রয়োগের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মন্তব্যকারীদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এ পোস্টে মন্তব্য করার অপশন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকবে।
আরে বাদ দেন না ভাই, মানুষে মানুষে তো ঝগড়া লাগবেই, এইখানে আবার এডমিনকে ডাকাডাকি করে তাকে বিব্রত করা কেনো খামোখাই? কোন্দল অল্পেই শেষ করে ফেলা ভালো না, এটাকে শুধু শুধু বাড়ানোর বদলে? সকলেই সকল বিষয়ে ১০০% একমত হতে যাচ্ছে না এবং সকলেরই একটা আকাঙ্ক্ষা আছে একটা সভা কিংবা সংগঠন কিভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত সেই বিষয়ে, আপনার আকাঙ্ক্ষা আর আরেকজনের আকাঙ্ক্ষায় কনফ্লিক্ট থাকবেই, এটা আপনি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হবেন না কোনভাবেই। আমি আপনার জাগায় থাকলে বরং পরিকল্পনা করতাম এইধরণের আক্রমনের মুখোমুখী হয়ে কিভাবে নিজের অবস্থান প্রতিরক্ষা করতে যাচ্ছি আমি সেই বিষয়ে, সর্বোপরি একজন ভালো ফোরামলেখক হতে এইটুকু প্রতিরক্ষাবোধ থাকতে হয়। কিংবা প্রতিরক্ষা করতে না চাইলে শান্তি বিঘ্নিত না করে সেটাকে এড়িয়েও যাওয়া যেতো। এইটা ইজি টেইক করেন, মুসল্মানদের সমালোচনাকে অনেকেই সহজভাবে নেয় না- না নিতেই পারে। অভিযোগ না করে প্রতিরক্ষা করলেই বরং এই ক্ষেত্রে আপনার অবস্থানের দৃড়তা প্রকাশ পায় এই ক্ষেত্রে। ইসলাম যে একটি বিষফোঁড়া আপনার এই অবস্থানের পক্ষই হয়তো বা অবলম্বন করবে বেশীরভাগ স্বাভাবিক মানুষ, আপনার দুঃখিত হবার কিছু নেই। আপনার জন্য একটি কৌতুক উপহার আমার পক্ষ থেকে-
ব্রাইভিক যখন নরওয়েতে বোমা ফুটিয়েছিলো আনন্দে অনেক রাজনৈতিক মতাদর্শধারী তখন শ্যাম্পেইনের বোতল ফুটিয়ে বলেছিলো যে- “see see বোমা খালি মুসল্মানরাই ফাটায় না”! :-O
@আল্লাচালাইনা, মন টা ব্যাজার হয়ে ছিল । আপনার কৌতুকে মেঘ কেটে গেছে । আমার বিরক্তি ছিল না বুঝে পড়েই মন্তব্য করে দিল । আণবিক অস্ত্রের সন্ত্রাসবাদের কথা আমি কথাও বলি নি । কি বলেছি তাও স্পষ্ট করে দিয়েছি । তবু কমেন্ট কারী রা না পড়েই কমেন্ট দিল !
@এডমিন , মুক্তমনা আমাকে কথা বলার ভাষা দিয়েছে । জায়গা দিয়েছে । আমার জীবনের শেষ অবধি আমি মুক্তমনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব । তাই মুক্তমনার বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার থাকতে পারে না । এবার আমি এডমিনের একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই ।
সাইফুল ইসলামের এই বক্তব্যটি দেখেন ।
এবার মনে করেন দেখি , কিছুদিন আগে আমার একটি পোস্টের কমেন্টে আমি স্বভাব বশত সিক্ শব্দ টি প্রয়োগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কি হয়েছিল । সেটা অনিচ্ছাকৃত ছিল । আমি ক্ষমাও চেয়েছিলাম । এবং কথা দিয়েছি আর কখনো এমন হবে না । তবু যদি ধরেও নিই যে সেটা সচেতন ভাবেও ছিল । তবু আমি অসুস্থ বলেছিলাম । তার থেকে কি এই শব্দ টি সম্মানজনক ?
আমি জানি আমাকে সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা রাখতে হবে । আমাকে যদি শুয়োরের বাচ্চা জাতীয় গালাগালি করা হতো , আমি কিছু বলতাম না । কিন্তু আমার কথা শেয়ার করার জন্য অজথা কয়েকজন কে যদি গালাগালি সহ্য করতে হয় , তবে তার দায় সম্পুরনভাবে আমার উপর এসে পড়ে । আর এটা আমার কাছে অসম্মানজনক শুধু নয় । অসহনীয় ও । এডমিন কে ব্যবস্থা নিতে অনুরধ করবো । আর যেখানে এডমিন এত দায়িত্বশীল সেখানে কিভাবে এই সব চোখ এড়িয়ে যেতে পারে , তাও বুঝলাম না ।
খুব ভাল লিখেছ…
Identity and Violence: The Illusion of Destiny. Amartya Sen
এই বইটা হয়ত পড়েছ…না পড়ে থাকলে পড়ে নিও…Identity নিয়ে অনেক কিছু পাবে
আমি অনেক জায়গায় লিখেছি, যে কোন দেশেই, ক্ষমতাধরেরা একটা লাইসেন্স পান সব কিছু করার । যা ইচ্ছে তাই করবেন, নারীরা কিছু বলতে পারবেন না ।
বাংলাদেশের আমার অনেক মহিলা বন্ধু দেখেছি প্রচণ্ড ভয়ে থাকেন । ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়, তবে- কে না জানে, ব্যতিক্রমই বিধির নিয়ামক । মহসিনাকে আমি ব্যতিক্রম হিসেবেই দেখছি এবং তার জন্য আমার টুপি বিয়োজন।
মহসিনার এই লেখাটা ভীষণ ভাবে তাৎপর্য্যপূর্ণ । ভারতের বা বাংলাদেশে- স্বাধীনতার সময়ে যে সব সংগ্রামী মানুষেরা তথাকথিত “ সন্ত্রাস” করেছিলেন, তাঁরা কি “ সন্ত্রাসবাদী”? এই পুরানো প্রশ্নটার উত্তর দেবার যথাযত চেষ্টা করেছে মহসিনা ।
ধার্মিক বস্তাপচা ধারণার বশবর্তী হয়ে ধর্মনির্বিষেষে অনেকেই প্রতিবাদ করেন না! তাদের এবার এগিয়ে আসতে হবে । জোট বেঁধে আন্দোলন হলে- অশুভ, শুভর কাছে হার মানবেই মানবে ।
আর, কাকাবাবুর কথা এদেশের কমিউনিষ্টরা মানছেন না । বামপন্থার পথের সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে রাষ্ট্র চরিত্রের প্রশ্নটি। এগুলো আর মানছেন না এখানকার কমিউনিষ্টরা।
৪০ দশকের অশান্ত পরিস্থিতিকে বৈপ্লবিক মোড় দিতে পার্টির অনীহাকে নেতৃত্বের শ্রেণীপরিচয়ের আতশ কাঁচ দিয়ে চিনে নেওয়ার দরকার আছে।। ঐতিহাসিক সুমিত সরকার ৪০ দশক, স্বাধীনতা ও দেশভাগ পর্যায়কে সনাক্ত করেছেন সেসময়ের কংগ্রেস নেতৃত্বের সুবিধাবাদের পরিচয় হিসেবে। উত্তাল পরিবর্তনকামী জনগণকে যদি ধার্মিক সংকীর্ণতার বাইরে নিয়ে গিয়ে ভাতকাপড়ের প্রশ্নে রাজনীতিকরণ করা যেত হয়তো মুসলিম বা হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে এতটা ছাড় দেওয়ার দরকার পড়ত না। শোষিত উপনিবেশের সব মানুষ এক দেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করত। কিন্তু কংগ্রেসি রাজনীতির সে সময় প্রধান লক্ষ্য দেশভাগ আটকানো বা অর্থনৈতিক অধিকারের লড়াই নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাধীন দেশের ক্ষমতা দখল। দেশভাগ-স্বাধীনতাকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা যায়।
এই সময়ে, শেকড় থেকে উঠে আসা আগুনের দরকার ছিল। আগুনের তদারকি করার জন্য দরকার ছিল কয়েকজন । কিন্তু তাঁরা ( আমায় ক্ষমা করবেন) দুপুর দুপুর মাছভাত সাবড়ে ভাতঘুম দেওয়ার আগে সিগারেটে আগুন ধরিয়ে সুখটান দিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তাত্ত্বিক কচকচানি নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য, তাঁরা ভারতবর্ষের/বাংলাদেশের আবহমান কাল ধরে চলে আসা –জাত- পাত, ছোটো জাত, নীচু জাত, বর্ণ নিয়ে মাথাই ঘামালেন না।
দলের মধ্যবিত্ত নেতৃত্বের কথা যদি মনে করার চেষ্টা করি তাহলে এটা বোঝা দুষ্কর নয় যে -আন্দোলন যখন দলের শ্রেণীস্বার্থকে বিঘ্নিত করেছে আন্দোলন পিছু হটেছে। দলের দক্ষিণপন্থী বিচ্যুতি চেনার এই তো কষ্ঠিপাথর। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনকে যখন পার্টি পেছন থেকে টেনে ধরতে চায়-এটাও একধরণের “ সন্ত্রাসবাদ” । এই “ সন্ত্রাসবাদ”এর জন্যই পরিবর্তনের নাম করে যে সরকার এখন এসেছে, তাদেরও অন্যতম কাজ হল- “ সন্ত্রাসবাদ”। কোনো নীতি নেই । আছে, সস্তা রাজনীতির চটকদারীতা । এটাও সন্ত্রাস বাদ ।
পরিশেষে বলি:-
মানবতার জয় হবেই হবে ।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা. লেখককে ধন্যবাদ.
প্রথমেই আপনার বিরাট গবেষনার জন্য অভিনন্দন, যদিও কুন্ঠার সাথে বলতেই হচ্ছে আমি নতুন কিছুই দেখলাম না। আমি আপনাকে কয়েকটা পরিসংখ্যান দেই,
১.
বিবিসির এই সংবাদ মতে ২০১০ এর ১১ অক্টবরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে ১ বিলিয়নের উপরে মানুষ অপুষ্টিতে আক্রান্ত।
২. সিএনএন বান কি মুনের বরাত দিয়ে বলছেঃ
প্রতি ৬ সেকেন্ডে একটি করে শিশু মারা যাচ্ছে ক্ষুধায়। দৈনিক যার সংখ্যা ১৭ হাজার। যদিও পৃথিবীতে সবাইকে খাওয়ানোর মতন যথেষ্ট খাবার রয়েছে।
৩.
একটা মিসাইলের দামে একটা স্কুলের সমস্ত সোনামনিদের ৫ বছর টানা দুপুরের খাবার সরবরাহ করা সম্ভব।
৪.
ইউনিসেফ বলছেঃ
৫.
তিন বিলিয়ন মানুষ প্রত্যেকদিন ২ ডলারে কোনমতে বেঁচেবর্তে আছে।
৬.
বিশ্বের পয়নিষ্কাশন আর খাবারের সমস্যা মেটাতে মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন যেটা আমেরিকা আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মানুষেরা প্রত্যেক বছর পারফিউমের পেছোনেই খরচ করে।
এখানে গেলে একেবারে লাইভ অবস্থা দেখতে পারবেন।
আপনি বলছেন ইসলাম নামক একটা ধর্মের কথা যেখানে কিনা আনবিক না পারমানবিক সন্ত্রাসের কথা আছে। আমি বলছি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া সহ অন্যান্য দেশের কথা যাদের সংগ্রহে থাকা আনবিক বোমার সাহায্যে কয়েক’শ বার এই দুনিয়াই আপনি নাই করে দিতে পারবেন। এখন আমাকে বলেন আপনার কোনটাকে সন্ত্রাস বলে মনে হয়।
প্রত্যেকটি সুস্থ মানুষের উন্নত পুঁজিবাদী দেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত। আমি অবশ্যই সাধারন জনগনের ক্ষতি করার কথা বলছি না। কারন ওরা নিজেরাও ভিক্টিম। কিন্তু আপনাকে মানুষের সাধারন সাইকোলজি বুঝতে হবে। আমেরিকা মধ্য প্রাচ্যসহ দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গাতে যা করেছে সেটা আপনার মতন ইসলামের গবেষনায় রত কিছু গবেষক না বুঝলেও সেসব দেশের জনগন ঠিকই বুঝতে পারে, যার জন্যই আমেরিকার মতন দেশের বিরুদ্ধে করা তথাকথিত সন্ত্রাসী হামলায় তারা সেসমস্ত দেশের মানুষের আকুন্ঠ সমর্থন পায়।
আজকে ইসরায়েলের উপরে হামাস বা অন্য যেকোন সংগঠন কোন হামলা চালালে আপনারা কয়েকজন সখের ইসলাম গবেষক মানবতার ঝান্ডা তুলে রব তুলবেন “এই যে, এই যে, বলেছিলাম না, ইসলামিস্ট মানেই সন্ত্রাসী, ইসলামিস্ট মানেই মানবতার বিরোধী”। কিন্তু এই আপনারাই যখন ইসরায়েল ফিলিস্তিন অযৌক্তিকভাবে দখল করে নেয়, যখন সেখানে নিরীহ মানুষের প্রান কেড়ে নেয়, যখন খাবার আর পানির সাপ্লাই বন্ধ কর দেয় তখন মুখে কুলুপ এটে বসে থাকেন। আমাকে বলেন সন্ত্রাসী কাকে বলে, কী করলে সন্ত্রাস হয়?
উদাহরন দিতে থাকলে কয়েকটা পোষ্ট শুধু উদাহরনই দিতে পারব যার জন্য খুবই অল্প কথায় বললাম। আমি আপনাদের ব্যাপারটা বুঝি, অল্প কথায় সারতে পারলে কেন শুধুশুধু ভারী আলোচনায় যাবেন! তার থেকে ইসলামের উপরে বোঝাটা চাপিয়ে দেয়া খুবই সহজ। আমি ইসলামকে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা বলছি না, আবার বর্তমান সময়ে ঘটমান ঘটনার সমস্ত দায় ইসলামের উপরেও চালাচ্ছি না। আপনাকে অনেকগুলো দিক থেকে দেখতে হবে না হলে ইসলামের “আনবিক-পারমানবিক-কোয়ার্কীয়-হিগস-বোসনীয়” অনেক সন্ত্রাসের নমুয়া নিয়ে কিছু গার্বেজ প্রসব করে ব্লগে হিট খেতে পারবেন এবং বহু গর্ধবদের দ্বারা “শেয়ারীয়” হতে থাকবেন, কিন্তু যারা না খেয়ে মরছে তারা মরতেই থাকবে আর যারা না খাইয়ে মারচ্ছে তারাও মেরেই থাকবে। মাঝ খান থেকে লস হবে শুধু মুক্তমনার ব্যন্ডউইডথ আর স্পেসের। লাভের তেমন কোন আশা দেখছি না।
@সাইফুল ইসলাম,
না বুঝে লাফানো ঠিক নয় । আগে পুরোটা ভালো করে পড়ে দেখেন । ইস্রায়েলি দের এই সন্ত্রাসবাদ ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ নয় । জাতি সত্তার সন্ত্রাসবাদ । এরা নিজ জাতির জন্য আলাদা দেশ চায় । এই নয় যে পুরো পৃথিবী কে নিজ ধর্মীয় করে নেওয়ার জন্য চালান সন্ত্রাসবাদ ।
আর একটা কথা , বুঝে পড়েন , নতুন জিনিস পাবেন । খুব সরল লেখা তো , তাই নতুনত্ব ধরতে পারছেন না । কিন্তু ওখানে যেসব দার্শনিক শব্দ গুলো ব্যাবহার করা আছে অগুলর মানে বুঝে পড়েন দেখি ।
@সাইফুল ইসলাম,
আপনার মন্তব্য পড়লাম, মন্তব্য না বলে, কলাম বলা যায়। অল্প কথায় অনেক কথা বলে ফেলেছেন। যে কথাগুলো আমরা শুনতে চাই না, বুঝতেও চাই না। কেউ বুঝাতে চাইলে, যেহেতু তক্ক করতে জানি, তক্ক করি। তক্কের সাথে বোধের মিলন না হলে, যা হবার তাই হয়ে চলেছে বলে, আমরা এখনো অন্ধকারে।
ধন্যবাদ, আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।
@স্বপন মাঝি, সাইফুল ইসলাম কে আপনার প্রসংসার অর্থ টা কি আমি বুঝলাম না । আমার মনে হল আমার লেখা আর উনার কমেন্ট আপনি কোনটাই অনুধাবন করতে পারেন নি । বা করতে চান নি । খালি কমেন্ট করতে হবে বলেই করেছেন । কেন না–
১) উনি খেতে না পাওয়া মানুষের কথা বলেছেন কিন্তু খাদ্যাভাব বা আরথিক সামর্থ্যের অভাব কে ধর্মীয় সন্ত্রাসের কারণ বলা হলে লাদেন মুল্লাওমর আরও অনেক উদাহরন দেওয়া যায় যাদের সন্ত্রাসবাদী দের আখ্যা দেওয়া যাবে না । উনার এই কমেন্টের কারণ টা প্রবন্ধেই পরিষ্কার করা আছে ।
২) উনার কমেন্টের এই অংশ টা খেয়াল করেন ।
এখানে খেয়াল করেন দেখি । আমি কখন বললাম যে ইসলামে আণবিক সন্ত্রাসের কথা লেখা আছে ? একটু পড়ে দেখেন দেখি । আণবিক স্তরের সন্ত্রাসবাদ শব্দ টা আমার দেওয়া । কিন্তু এটার অর্থ কিন্তু ওখানে পরিষ্কার করা আছে । খালি চোখ না বুলিয়ে পড়লে অনেক জানা যাবে ।
৩)
এই অংশ টা খেয়াল করেন । আমার লেখার টাইটেল দেখলেই বোঝা যায় যে আমি কোনও রাষ্ট্র কর্তৃক সন্ত্রাসবাদের কথা বলি নি । সেই ভাগ টা প্রবন্ধে করেও সরে এসেছি আমার মুল বক্তব্যে ফোকাস করার জন্য । আপনি বলেন দেখি … আমেরিকার সন্ত্রাসবাদ কে কি ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ বলা যায় ? আপনি প্রমান করে দিলে আমি পোস্ট তুলে নেবো ।
৪)
আপনি আমায় বলেন দেখি ইরান মধ্যপ্রাচ্য খেতে পাওয়া দেশ না কি না খেতে পাওয়া ? তারপর বলেন , ওই দেশ গুলতে কি সাম্য আছে ? মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলো কি সাম্যবাদী না পুজিবাদী ? যদিও এটা আমার আলোচনা বহিরভুক্ত তবু করলাম ।
৫) আমার লেখা টা কষ্ট করে হলেও , খারাপ লাগলেও কমেন্ট যখন করেছেন , তখন মন দিয়ে একবার পড়তে বলার অধিকার আমার আছে । একবার পড়ে দেখুন ।
আমার লেখায় আমি এই ধরণের কথা ঘোরানো লোকেদের কথা বলেছি কিনা একটু দেখবেন প্লিজ । আমার লেখার নিচেই আপনার এরকম কমেন্ট হতাশাজনক ।
আরেক টা সমালোচনা আমি পরের কমেন্টে করলাম । যদিও বেশি কমেন্ট করার অভ্যাস আমার নেই । তবু আমি একটা কমেন্ট করলেও ভালো করে পড়ার পর করি । না বুঝে কমেন্ট করি না । আশা করি অভ্যাস টা ছাড়বেন ।
আশা করি উত্তর দিয়ে আমাকে বাধিত করবেন
@মহসিনা খাতুন, আপনি বললেন যে ইসরাইলের সন্ত্রাস ধর্মীয় সন্ত্রাস না, এটা তো ইহুদীবাদী সন্ত্রাস। বিশ্বের বিভিন্য স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন জাতের ইহুদীরা শুধু ধর্মকে পুজি করে একটি জায়গা জবরদখল করলো। এটা কি ধর্মীয় সন্ত্রাস না ?
@সাইফুল ইসলাম, আপনার কথা যুক্তিযুক্ত , কিন্তু কিছু নব্য নাস্তিক যাদের মুসলিম-বিদ্বেষ প্রবল যাদের জ্ঞান কিছু গুগল সার্চ আর নাস্তিকদের স্টাটাস পর্যন্ত তারা কিন্তু এসব শুনতে চাইবে না ….বর্তমানে মুসলিমদের সন্ত্রাসী বলছে এরা কারণ ২০০১ পরবর্তী ঘটনাগুলোর জন্য তালিবান আর আল-কাইদার জন্য কিন্তু তালিবান আর আল-কাইদা কিন্তু আমেরিকার তৈরী .. ‘’ব্রিটিশ ও তাদের বংশধর আমেরিকানদের অন্যতম বড় সার্থকতা হলো মুসলিমদের সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারা, এর জন্য কিছু অশিক্ষিত মৌলবাদী মুসলিম দায়ী তবে এগুলোর জন্য মূল দায়ী কিন্তু ওই সাম্রাজ্যবাদীরা… উল্লেখ্য মুসলিমদের হাতে যত মানুষ মরেছে খ্রিস্টানদের হাতে তার চেয়ে কয়েকগুন মানুষ মরেছে, আমেরিকানদের হাতে কোটি কোটি রেড ইন্ডিয়ান মরেছে … মুসলিম সন্ত্রাস উল্লেখযোগ্য শুরু মূলত ২০০১ সাল থেকে , কিভাবে শুরু, এর আগে কেন তেমন ছিল না …ব্রিটিশরা আমাদের মতো বোকাচোদা জাতি নয়… তারা মধ্যযুগে সারা পৃথিবী লুটপাট করে নিজেদের সম্পদ গড়েছে…আর শোষণ শেষে কলহ লাগানোর ফন্দি করে দিয়ে গেছে … মুসলিমপ্রধান কাশ্মীরকে ভারতে দিয়ে গেছে যেনো এদের মাঝে শত্রুভাব বজায় থাকে… আফগানিস্তানের একটা অংশও পাকিস্তানকে দিছে যাতে এদেরও দ্বন্দ্ব লাগে…ব্রিটিশদের পর মোরলগিরি নিজের হাতে তুলে নেয় তাদের বংশধর আমেরিকা ….মধ্যপ্রাচ্যে তেল ব্যবসার খাতিরে কিছু সৈরাচার সৃষ্টি করে দিছে তবে এদের কেউ যদি আবার তাদের পা না চাটে সেখানে আবার গণতন্ত্রের নামে রক্তপাত ঘটায় (যেমন ইরাকে মিথ্যা অজুহাতে যুদ্ধ , এখানে ১০ লক্ষ্য মানুষ মারে বুশ আর শিয়া -সুন্নি বিভেদ তৈরী করে এবং এটা যুদ্ধজয়ে সাহায্য করে; আবার অনেক আরব রাষ্ট্রে সৈরাচার থাকার পরেও শুধুমাত্র বাসার আর গাদ্দাফি আমেরিকার পা না চাটায় আরব বসন্তের সুযোগে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে কিছু বিদ্রোহী তৈরী করে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আবার রক্তপাত ঘটায় , আসলে এটা আরব বসন্ত না যেখানে জনগণ বিপ্লবকে সাপোর্ট করে না বরং গাদ্দাফির আমলে লিবিয়ার অনেক উন্নতি হয়েছিল ,আরব বসন্ত ছিল তিউনিসিয়া আর মিসরে যেখানে জনগণ রাস্তায় নেমে বিপ্লব করে সরকারের পতন ঘটায়)
ব্রিটিশরা মধ্যপ্রাচ্যে অবৈধভাবে একটা ইসরাইল প্রতিষ্ঠার কাজে নামে পরবর্তীতে আমেরিকার সহায়তায় একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল তৈরী হয়(অনেক অজ্ঞ ভাবে মুসলিমরা হাজার বছর আগে ইহুদীদেরকে জেরুজালেম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো তারাই আবার বর্তমানে পুনর্দখল করেছে , এটা ভুল ধারণা মুসলিমরা যখন জেরুজালেম দখল করে তখন সেখানে ছিল খ্রিস্টানরা আর ধারণার ২য অংশ ‘তারাই আবার বর্তমানে পুনর্দখল করেছে’ এটাও ভুল কারণ বহু আগে খ্রিস্টানদের জেরুজালেম দখলের আগে যে ইহুদীরা জেরুজালেমে থাকতো তাদের বংশধর বর্তমান ইসরাইলিরা নয়… এরা সত্যিকার অর্থেই উড়ে এসে জুরে বসা , এদের মিল শুধু ধর্মে জাতিগত কোনো মিল নাই,পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জাতের ইহুদীরা এসে জবরদখল করে বসেছে এবং এখনো অবৈধ ইহুদী বস্তি স্থাপন করেই চলেছে ”’১৯৮২ সালে ইসরাঈল লেবাননে আগ্রাসন চালিয়ে ১৭ হাযার ৫০০ মানুষকে হত্যা করে। এদের বেশীর ভাগই ছিল নিরীহ জনসাধারণ। ঐ একই বছর লেবাননের শাবরা-শাতিলা গণহত্যায় ১ হাযার ৭শ নিরীহ মানুষ নিহত হয়। লেবাননে ইসরাঈলের উপর্যুপরি আক্রমণে ইয়াসির আরাফাত তাঁর পিএলও-এর ঘাটি বৈরুত থেকে তিউনিশিয়ার রাজধানী তিউনিসে সরিয়ে আনেন। তাতেও রক্ষা হয়নি। তিউনিসেও ১৯৮৬ সালে হামলা চালিয়ে বহু লোককে হত্যা করে ইসরাঈল।এরপর ১৯৯৬ সালে কানা গণহত্যায় নিহত হয় ১০৬ সাধারণ লেবাননী জনগণ। এরা ছিল জাতিসংঘ আশ্রিত এবং নিহতদের অনেকেই ছিল শিশু। ২০০৬ সালে তারা লেবাননের মারওয়াহিন গ্রামের অধিবাসীদের ঘরবাড়ী ছেড়ে চলে যেতে বলে। সবাই তা মেনে নিয়ে রাস্তায় নামতেই হেলিকপ্টার থেকে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয় (রবার্ট ফিস্ক, ‘কেন পশ্চিমা বিশ্বকে তারা ঘৃণা করে’) ১৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে ইসরাঈল-হামাস ৬ মাসের যুদ্ধ বিরতির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২৭ ডিসেম্বর যুদ্ধ বিরতি ভঙ্গকারী ইসরাঈল গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। বিনা উসকানীতে ঠান্ডা মাথায় গাজার ঘুমন্ত, নিরীহ মানব সমাজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরাঈল। ইসরাঈলী জঙ্গী বিমানগুলো আকাশ পথে, যুদ্ধ জাহাজগুলো নৌপথে এবং ট্যাংক বহরের দুর্ভেদ্য নিরাপত্তাবূহ্য নিয়ে ইসরাঈলী পদাতিক বাহিনী প্রায় ২২ দিন যাবত মানবতার বিরুদ্ধে সভ্য দুনিয়ার এক নজীরবিহীন নৃশংস তান্ডব চালায়। নবাবিষ্কৃত ফসফরাস বোমায় মানবহত্যার নিষ্ঠুর পরীক্ষা চালায়। এমনিতেই দীর্ঘ অবরোধের কারণে গাজাবাসী নিঃস্ব, অসহায় ও সম্বলহারা। নেই তাদের পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয়। তার উপর নিষ্ঠুর ইসরাঈল বাহিনীর বর্বর আক্রমণে গাজাবাসী অসহায় হয়ে পড়ে। টানা ২২ দিনের মর্মন্তুদ হত্যাকান্ডে গাজা পরিণত হয় সাক্ষাৎ বধ্যভূমিতে। ফিলিস্তীনের সরকারী পরিসংখ্যান মতে এই হামলায় ৪১০ শিশু ও ১০০ নারী সহ ১৩০০ শ’রও বেশী লোক নিহত হয়, আহত হয় ৫ হাযার ৩শ’ লোক। ৪ হাযার ১শ’ বাড়ীঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। অন্যদিকে ইসরাঈলী সেনা মারা যায় মাত্র ১৩ জন।”’ )
তো বলছিলাম ব্রিটিশরা পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চায় , তো একসময় আফগানিস্তানে আমেরিকার শত্রু সোভিয়েতের বড় প্রভাব ছিল তখন আমেরিকানরা পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে কিছু জঙ্গী তৈরী করে ,তারা সোভিয়েতের বিরুধ্যে আফগান জনগনকে খেপিয়ে তুলছিলো আর আমেরিকা চাচ্ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের পাতা ফাদে পা ফেলে যুদ্ধ শুরু করুক সেটাই হলো আর তখন আমেরিকানদের পৃষ্ঠপোষকতায় শুধু তালেবান নয় লাদেনও এগিয়ে আসলেন… আজকের সন্ত্রাসী তালেবান আর আল কায়েদাকে তৈরী করে দিয়েছিলো আমেরিকাই , কিন্তু পরে যখন লাদেন দেখলেন যে আমেরিকা মুসলিমদের বিশেষত ফিলিস্তিনিদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে তখন তিনি ফ্রাংকেনসতাইন হয়ে উঠলেন অর্থাত নিজের প্রভুর উপর নিজেই আক্রমন চালালেন তাদেরই সরবরাহকৃত অস্ত্র দিয়ে (সম্ভবত ৯৮ সালে), ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর আমেরিকা তাদেরই তৈরী তালেবান আর আল কায়েদার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলো (যদিও এটা নিশ্চিত না যে ৯/১১ এ লাদেনই দায়ী কারণ হয়তোবা মুসলিম দেশে হামলা চালানোর বৈধতা অর্জনের জন্য মোসাদ আর সিআইএ এটা ঘটিয়েসে আর একটা ভুয়া ভিডিও বানিয়ে বাজারে ছেড়েছে যাতে নাকি লাদেন হামলার কথা সীকার করেছে কিন্তু এরকম ভিডিও তৈরী করা কি ওদের পক্ষে কোনো ব্যাপার , হলিউডে তো দেখা যায় কয়েক যুগ আগে মারা যাওয়া প্রেসিডেন্ট টম হ্যাংকের সাথে আলাপ করতে কিন্তু সেটা কি সত্য ? আর ধরলাম ভিডিওটা সত্যি কিন্তু লাদেন হামলা না করলেও যে তিনি সীকার করে এর কৃতিত্ব নিতে চাইবেন এটা বুঝতে তো আইনস্টাইন হওয়া লাগে না … আর তাছারা অবটাবাদে লাদেনকে এরেস্ট না করে কাউকে মৃতদেহ না দেখিয়ে তাকে সাগরে ফেলে দেওয়া হলো কেন? তাকে আটক করে তার বিচার করা কি বেটার ছিল না তাতে তারা আল কায়েদার কলাকৌশল, তথ্য জানতে পারতো ; কিন্তু তারা কিসের ভয়ে এটা করে নি , এর কারণ কি এটাই যে তার বিচার করতে গেলে সত্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে ) তো এই মার খাওয়া তালেবান বা ইরাকের ৪০ লাখ এতিম (৯/১১-এ মাত্র ৩০০০ মানুষ মরেছে আর বুশ তার চেয়ে কয়েকশো গুন বেশী মানুষ মেরেছে)বা সিরিয়ায় বাসার আর আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহী এরাই কিন্তু এই সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে, তো আরো তো অন্তত ১৮- ১৯ তা আরব রাষ্ট্র আছে ওগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে না কেন … যদি খেয়াল করে দেখেন দেখবেন আজকের পৃথিবীর প্রায় সব অশান্তির মূলেই রয়েছে এই সাম্রাজ্যবাদীরা আর মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে কিন্তু এসব সন্ত্রাসের জন্য মূল দায়ী কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ইঙ্গ –মার্কিনরাই এবং এরাই সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী এবং এদের হাতে অনেক অনেক বেশী নিরীহ মানুষ মারা গেছে ..
@সাইফুল ইসলাম, লেখাটি সাইকো এনালাইসিস তাই সহয সরল তবে চমতকার কিন্তু আপ্নারা আবার বেশি বুঝেন কিনা তাই আপনার কথার কিছু উত্তর দিচ্ছি…আমেরিকা বা রাশিয়া কোন ধর্মীয় কারনে তাদের পারমানবিক বোমা তৈরী করেনি যুগের প্রয়োজনে বা সময়ের দাবি ছিল তাই দুটি বিশ্ব যুদ্ধের পর তারা অনেক বেশি সতর্ক হতে চেয়েছিল , নিজেদের অস্তিত কে নিরাপদ করাই ছিল তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। এটাকে কিভাবে সন্ত্রাসের অংশ বলি?উত্তর দেবেন আশা করি।আর আপনাদের বদনা একটা যুক্তি শুনে গা জ্বলে তা হল আমেরিকা মুস্লিম দেশ গুলোর এই করেছে ,সেই করেছে,বোমা মারে মানুশ মারে…এটা আমেরিকার পলিটিকাল এজেন্ডা…মনে রাখুন আমেরিকা ভিয়েত্নাম যুদ্ধ করেছিল শুধু তার এই এজেন্ডার জন্য…মধ্য আমেরিকার ক্রিস্টান দেশ গুলোতে চালিয়েছিলো ধংশযজ্ঞ,হত্যাকান্ড…নিজের এজেন্ডা পুরনে আমেরিকা ক্রিস্টান মুস্লিম দেখেনা…মুস্লিম কসোভোকে বাচাতে এই আমেরিকা ন্যাটো পাঠিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে স্বাধীন করেছে ভুলে যান নি নিশ্চয়…তাই আতলামি একটু কম করলে ভাল হয়। ইসরাইল কে বাচানো আমেরিকার পলিটিক্যাল আজেন্ডা কারন আমেরিকার শক্তিশালী aipc যারা খুবি এবং ভয়ংকরভাবে ইহুদিপন্থী। মধ্যপ্রাচ্যে তারা ইস্রাইল্কে নিরাপদ দেখতে চায়। আর এর অনেকটা দোষ আপনাদের বদনা ধর্ম ইস্লামের কারনে।যাদের ধর্মে ইহুদীদের অভিশপ্ত বলা হয়েছে তাদের সাথে ইস রাইল প্রেম প্রিতীর সম্পর্ক যে করবে না তা তো জানা কথা।নিরাপরাধ মানুষের উপর অত্যাচার হলে আমরা কেউ তা সমর্থন করিনা, বেশ কিছু কথা অনেক বাড়িয়ে বলেছেন।ইস রাইল অন্যায় করলে সেটা সমালোচনা না করার তো কিছু নেই।আশা করি বুঝেছেন। লেখাটার শিরোনাম টা পড়ে আবার পড়ুন আশা করি এবার বুঝবেন।
খুব ভাল একটা লিখা… ভাল বিশ্লেষন!