ভারতের ইস্কুলে ইস্কুলে যেভাবে পাখিপড়া করে বাবরের বাবার নাম মুখস্থ করানো হয়, ঠিক একই ভাবে বিজ্ঞানকেও গিলিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্ররা বিজ্ঞান শেখার নামে তা কেবল অস্থায়ী মুখস্থ করে, আত্মস্থ করে না। অঙ্ক-ফিজিক্স-বায়োলজির সঙ্গে তাই তাদের কোনোরকম ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে না, এসব সাবজেক্টকে কেবল ভয়ই করে তারা।
আর তাই এদের মধ্যে থেকে যারা বড় হয়ে বিজ্ঞানী হয়, তারাও বিজ্ঞানকে একটা যন্ত্রের মতই ব্যবহার করে। বিজ্ঞানচর্চা তাদের কাছে আপিসে গিয়ে দশটা-পাঁচটা চাকরি করা মাত্র, বিজ্ঞান তাদের সুখী জীবনের একটা দরকারি tool কেবল, ঠিক যেমন কোনো মেকানিক তার কারখানায় গিয়ে দশটা-পাঁচটা চাকরির সময়টা হাতুড়ি-স্ক্রুড্রাইভার খুটখাট ব্যবহার করে চলে আসে – বিজ্ঞান এদের কাছে কোনো উপলব্ধির বিষয় নয়, নয় কোনো চিন্তাধারা।
আর ভারতে বহুলপ্রচলিত হিন্দুধর্মের যে নরম বা benign রূপ, তা তৈরি হতে দেয় না আমেরিকা বা ইউরোপের মত ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের সংঘাত। পুজোআচ্চা ইত্যাদি আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়েই হিন্দুধর্ম মোটামুটি সীমিত থাকে, আর তাই কূর্মের পিঠে থালার মত চ্যাপ্টা পৃথিবী ভর দিয়ে রয়েছে এই ধরনের কাহিনীগুলোকে মিথোলজি বলে আমরা এড়িয়ে যাই, বিজ্ঞানের সঙ্গে এর দারুণ অসামঞ্জস্যগুলো খেয়াল করি না কেউ।
এই দুটো দিক মিলিয়ে ভারতে চলে বিজ্ঞান ও ধর্মের এক অদ্ভুত মাখামাখি। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, এক সময়ের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এ. পি. জে. আবদুল কালামের মত হাই-প্রোফাইল লোকজনও প্রকাশ্যে তাঁদের ধর্মানুরাগের কথা বললেও তাতে কেউ অবাক হয় না।
***************************
এপ্রিল মাসের শেষদিকে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো তাদের নতুন স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে পাঠানোর জন্য যে রকেটটি লঞ্চ করে, তার সফল যাত্রা কামনা করে ইসরোর বিজ্ঞানীরা দক্ষিণের বিখ্যাত ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়ে আসেন। স্বভাবতই, এ নিয়ে মিডিয়ায়, বিশেষত ফেসবুকের আধুনিকমনস্ক জনতার মধ্যে বেশ হইচই পড়ে যায়। এটিকে ব্যঙ্গ করে একাধিক কার্টুনও প্রকাশিত হয়।
(ভারতে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের সামনে কাঁচালঙ্কা-লেবু ঝুলিয়ে রাখা থাকে প্রায়ই, যেমনটি এই কার্টুনে দেখা যাচ্ছে ওই বিজ্ঞানীর হাতে। এতে নাকি গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট ইত্যাদি নানা অমঙ্গল থেকে নিরাপদ থাকে।)
খবরে প্রকাশ, ইসরোর বর্তমান অধিকর্তা কে. রাধাকৃষ্ণণ তাঁর অতিধার্মিকতার জন্য আগেও নিন্দিত হয়েছেন। ২০০৯ সালে, তিনি এই সর্বোচ্চ পদটিতে উন্নীত হতে পারেন এই খবর পেয়েই, তিনি আরেকটি বিখ্যাত গুরুভায়ুর মন্দিরে গিয়ে থানা গেড়ে বসে পড়েন। ওই মন্দিরেই ফ্যাক্সের মাধ্যমে তাঁর নিয়োগের খবর আসে, এবং আনন্দে তিনি সেই শিবি রাজার গল্পের মত নিজের সমান ওজনের কলা 😛 সেই মন্দিরে দান করেন।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সাফল্য কামনা করে মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার ঘটনা ভারতে মোটেই বিরল নয়, যেমন বিরল নয় তাঁদের আঙুলে মোটা মোটা মণি-ওয়ালা ‘কল্যাণের জন্য’ জ্যোতিষীপ্রদত্ত আংটিস্থাপন, এবং নিজের বা ছেলেমেয়ের বিয়ের সময় কোষ্ঠী মেলানোকে বিশাল গুরুত্ব দেওয়া, অথবা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে এইডস-ক্যান্সার সেরে যায় এইসব দাবি করা ভণ্ড বাবা রামদেবকে প্রবল ভক্তি করা। কদিন আগেই একটি পোস্টার বেশ নেটফিরি হচ্ছিল, যেখানে সম্প্রতি দেউলিয়া হয়ে যাওয়া বিজয় মাল্য’র কিংফিশার এয়ারলাইন্সের আগেকার একটি ফোটোকে ব্যঙ্গ করা হচ্ছিল, যাতে দেখা যায়, নতুন প্লেনের উদ্বোধনে পুরোহিত এনে ঘটা করে যজ্ঞ করা হচ্ছে।
***************************
সদ্য যে হিগস বোসন খুঁজে পাওয়ার সুখবর ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র, তাতে আনন্দবাজারের মত পত্রিকা যে বাঙালি সেন্টু জাগ্রত করতে উঠেপড়ে লাগবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু একে যে ‘গড পার্টিকল’ও বলা হয়ে থাকে, সেই নামের অপব্যাখ্যাতেও ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো মশগুল। একজন ফেসবুকে গুটিকয় টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানের সারসংক্ষেপ করে যা লিখেছেন, তার চটজলদি অনুবাদ:
সার্নের ঘোষণার পর আমি টিভি চালিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, কোনো চ্যানেলে এই সংক্রান্ত কোনো খবর বলছে কি না। আমি এই দেখলাম –
১. জি নিউজ: “ইনসান খুঁজে পেল ভগবান”
২. ইন্ডিয়া টিভি: স্ক্রিনের বাঁ দিকে দেবদেবীর ছবি আর ডান দিকে ওই এক্সপেরিমেন্টের একটা অ্যানিমেশন।
৩. নিউজ ২৪: বজ্রপাত, ভূমিকম্প আর দাবানলের ছবির সাথে সাথে শ্লোক আবৃত্তি।
৪. সিএনএন-আইবিএন: কয়েকটা ধর্মবাজকে ধরে এনে টকশোতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে একজন দাবী করছে যে কোনো এক দেবতার পবিত্র পাদ-ই হচ্ছে বিগ ব্যাং (পা নয়, বায়ুদূষণ), যা থেকে হিগস বোসন ছিটকে বেরিয়েছিল, এবং সেসব গুছিয়েটুছিয়েই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়। বিজেপির আরেক বক্তা সেটাকে বিস্তারিত করে বললেন, শিবের প্রলয়নাচনই হচ্ছে হিগস কণার উৎপত্তির মূল।
৫. টাইমস নাউ: লস্কর জঙ্গি আবু জুন্দলের জেরা নিয়ে খবর
৬. এনডিটিভি ২৪X৭: জাস্টিন বীবার গ্রাজুয়েশন করেছেন!
৭. স্টার অর্থাৎ এবিপি নিউজ: সচিন খেলছেন না শ্রীলঙ্কা সফরে।আমি রেগেমেগে রিমোটখানা ছুঁড়ে মারতে যাচ্ছি প্রায়, মা আমাকে বললেন, “বাবা, দেখ, এমনকি বিজ্ঞানীরাও প্রমাণ করে ফেলেছেন ভগবানের অস্তিত্ব, আর তুই এখনও ভগবানে বিশ্বাস করতে চাস না?”
আর এইধরনের আমজনতা এবং বিজ্ঞানী, দুই দলকে দেখেই আমি নিশ্চিত, যে শুধু বিবর্তন-বিগব্যাং-বিজ্ঞানশিক্ষা দিয়ে এদের চোখ খোলা যাবে না। তারা যে ধর্মটিকে নেহাতই নিরীহ এবং বিজ্ঞানবিরোধহীন বলে পালন এবং শ্রদ্ধা করে চলেন, এবং যার ফলে এইধরনের প্রবল দ্বিচারিতা কেবলই দেখতে হয় আমাদের, সেই আপদ বিদায় করতে হলে সেই ধর্মেরই জাজ্বল্যমান গাঁজাগুল তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। রণদার মনুর মহান বচন ইত্যাদি সিরিজ, এবং সব মিলিয়ে ধর্মকে ‘তোমার কাপড় কোথায়’ এই ধরনের প্রশ্ন করতে পারা ধর্মকারী জাতীয় কনটেন্ট নেহাতই দরকার।
Without superstition,science is meaningless.Today’s miracle=future science.U can understand the meaning about that if U think it scientifically.
পরবর্তীতে ইংরেজিতে করা মন্তব্য প্রকাশ করা হবে না।
-মুক্তমনা মডারেটর
কৌস্তুভ, আপ্নাকে অনেক ধন্যবাদ চমতকার একটি বিষয়ে লেখার জন্য। জাদু মন্ত্রের দেশ বিগ্যান শিখেসে বিজ্ঞান শেখেনি। Richard Dawkins এর “enemy of reason” documentary তে দেখলাম ভারতীয় রা সারা পৃথিবী জুড়ে অন্ধকারের চর্চা করছে। Genetic problem may be.
ধন্যবাদ।
যাদু মন্ত্রের দেশ এখনও তৃতীয় বিশ্বের প্রচুর দেশকেই বলা চলে। আফ্রিকা ইত্যাদি বহু জায়গাতেই ভুডু ইত্যাদি আছে, আরবে আছে জ্বীন। আর উইচক্রাফট সারা দুনিয়াতেই আছে বা ছিল। আমেরিকাতেও মাত্র তিনশ বছর আগেই ডাইনি সন্দেহে কিছু মহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। তবে ভারত রোপ ট্রিক আর স্নেক চার্মার-দের দেশ হিসাবে পাশ্চাত্যে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে বটে।
ওই ডকুটা বুকমার্ক করে রেখেছি, কিন্তু দেখা হয়নি এখনও।
অফটপিক, আপনার নিকে এতগুলো য-ফলা কেন? 😛
ধন্যবাদ! লেখাটির জন্য। তবে আপনার প্রবন্ধটিকে পড়ে আমি কয়েকটি কথা না বলে পারছি না। প্রথমত, আপনি কি নাস্তিক? যদি নাস্তিক হোন তবে আপনিও একটি বিশেষ চিন্তাধারার পথিক, ঠিক যেমন আস্তিকেরা। ওরা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। বস্থুত কেউই সমাজকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় না। শুধু একে অন্যের ঝুঁটি ধরে টানা হেঁচড়া করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি সেকুলার চিন্তাধারাই ভারতীয় সমাজের বিভিন্নতাকে একসুত্রে গেঁথে রাখতে পারে। দেখুন আমি রাজনীতি বা কম্যুনিজম নিয়ে বিশেষ জানি না। সাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে হরিয়ানায় কাজ করছি। আমার কাছে ধর্মীয় রীতিনীতি আমাদের ঐতিহ্য, কিন্তু তা বলে অন্ধভাবে সব কিছু মেনে নেব তাও হয় না। স্বাভাবিকভাবেই বলি যে ধর্ম, অধর্ম, নাস্তিকতা সবকিছুই মানুষের মনের সৃষ্টি, ভিন্ন চিন্তাধারা মাত্র।Ultimately the thing matters is a person cares for his family and cares for other people too and does not harm anyone.
এবার প্রশ্ন হল বিজ্ঞান এই সবের মধ্যে হঠাৎ করে নাস্তিক হল কেমন করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি বিজ্ঞান সেই সত্য যেটা আস্তিক ও নাস্তিক চিন্তাধারার বাইরে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টি আর পি বাড়ানোর জন্য অনেক সময়ই ভুল তথ্য পরিবেশন করে ঠিক যেমনটা করল হিগস বসোনকে নিয়ে। ওগুলিকে আমিও এভয়েড করে চলি। আপনি বললেন যে “ভারতের ইস্কুলে ইস্কুলে যেভাবে পাখিপড়া করে বাবরের বাবার নাম মুখস্থ করানো হয়, ঠিক একই ভাবে বিজ্ঞানকেও গিলিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্ররা বিজ্ঞান শেখার নামে তা কেবল অস্থায়ী মুখস্থ করে, আত্মস্থ করে না। অঙ্ক-ফিজিক্স-বায়োলজির সঙ্গে তাই তাদের কোনোরকম ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে না, এসব সাবজেক্টকে কেবল ভয়ই করে তারা।” কথাটি খুব একটা হজম করতে পারলাম না। আমি ত্রিপুরার সুদুর গ্রামের ছেলে।আজ বিজ্ঞান চর্চার ফলেই আমি নিজেকে চিনতে পারি, নিজেকে ও অপরকে জানার চেষ্টা করতে পারি।
“এই দুটো দিক মিলিয়ে ভারতে চলে বিজ্ঞান ও ধর্মের এক অদ্ভুত মাখামাখি।” হ্যাঁ, কথাটা ১০০% সত্যি আর এটা কোনও অংশে খারাপ বলে আমার মনে হয় না। নবীন ভারতীয় যুবসমাজ বিজ্ঞানকে সত্য আর ধর্মকে সামাজিকতার চোখে দেখে। আমার মা আমাকে ছোট থাকতে বলতেন “যাকে ভগবান মানে সাধারণ লোকেরা, বিজ্ঞানীরা তাকে প্রকৃতি বলেন; তুই ভগবান না মান প্রকৃতিকে মানিস।” আমি মায়ের কথামত প্রকৃতিকেই মানি, তবে ভগবান নেই বোলে ওদের বিশ্বাসে আঘাত করি না। এটাই আধুনিক ভারতীয়রা করে চলেছে আর এর জন্য যে কোনও সমালোচনা তারা সহ্য করে নিতে রাজি। কারণ ওরা শান্তিপূর্ণভাবে ট্রান্জিশন করে চলেছে পুরাতন সমাজ থেকে নবীন সমাজ গঠনের দিকে।
আরেকটি জায়গায় দেখলাম লিখা যে কম্যুনিস্টরা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী। আমাদের ত্রিপুরাতে কম্যুনিস্ট শাসন চলে কিন্তু কোনও দিনই ঈশ্বর বিরোধী একটি কথাও বলতে শুনিনি ওদের নেতাদের। অনেকের ঘরে ত ঘটা করে পূজাও হয়।
আর কম্যুনিস্টরা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী বোলে কি পশ্চিমবঙ্গ হাজার হাজার বিজ্ঞানীতে ভরে গেছে। এমনটি কিন্তু না।সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বিজ্ঞান পড়ুয়া ছাত্রের সংখ্যা এবং হার বেশি। কারন কম্যুনিস্টদের কনজারভেটিভ শাসনের ৩০ বৎসরে সাধারন মধ্যবিত্ত লোকেদের মধ্যে বিজ্ঞান তেমন ঠাই পেতে পারেনি। আর্টস আর কমার্স স্নাতকের সংখ্যাই বেশি।
আপনি বললেন “এদের মধ্যে থেকে যারা বড় হয়ে বিজ্ঞানী হয়, তারাও বিজ্ঞানকে একটা যন্ত্রের মতই ব্যবহার করে। বিজ্ঞানচর্চা তাদের কাছে আপিসে গিয়ে দশটা-পাঁচটা চাকরি করা মাত্র, বিজ্ঞান তাদের সুখী জীবনের একটা দরকারি tool কেবল, ঠিক যেমন কোনো মেকানিক তার কারখানায় গিয়ে দশটা-পাঁচটা চাকরির সময়টা হাতুড়ি-স্ক্রুড্রাইভার খুটখাট ব্যবহার করে চলে আসে – বিজ্ঞান এদের কাছে কোনো উপলব্ধির বিষয় নয়, নয় কোনো চিন্তাধারা”; চিন্তাধারা বদলাচ্ছে, আর উপলব্ধি বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝতে পারলাম না।নাসার মত সংস্থায় ৩৬% ভারতীয়।
http://spectrum.ieee.org/riskfactor/computing/it/36_of_scientists_at_nasa_are_i
ওসব বিষয় নাহয় বললামই না। আমি আমার কথাই বলি। আমি আমার কম্পানিতে একজন অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার, ইন্ডাস্ট্রিয়েল মেশিন বানানোর পরে তাকে ইন্সটল করার দায়িত্ব আমার। মেশিন থেকে বছরের পর বছর পণ্য উৎপাদন করে কোম্পানি। তাই ভারতের উন্নতিতে আমারও অবদান আছে বলে আমি মনে করি আর এটা একটা উপলব্ধি বটে। সবাই জীবনে সবকিছু করতে পারে না, তাই বিজ্ঞান তাদের সুখী জীবনের একটা দরকারি tool; তাই বোলে তাদের ধর্মীয় অথবা অধর্মীয় মনভাবের সমালোচনা করা (যতক্ষণ পর্যন্ত অহিংস) আমাদের নিজেদের কনজারভেটিভ মানসিকতাই প্রকাশ করে বলে আমি মনে করি।
@সৈ্কত পাল, মাননীয় সৈকত পাল, আপনার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ , আপনার নিজের বলা কথাটি আরো একবার চিন্তা ক’রে দেখুন । আপনি বলেছেন আস্তিক ও নাস্তিক একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ , এটা কি করে হয় ? জীবনটাকে মুদ্রা না বলে যদি ন্যুনতম সুর্য বলেও চিন্তা করি তাহলে কি বলবো সুর্যের অপর পিঠে আছে অন্ধকার ? হ্যাঁ আপনার সংগে অনেকেই একমত সেকুলারিজমই ভারত তথা সকল দেশকেই উন্নততর দেশে নিয়ে যেতে পারে , কিন্তু ধার্মিকতার চিন্তা ধারাই তো সেকুলারিজমের বিপরীত অবস্থানে থাকে আর প্রতিনিয়ত মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে । এটা শুনতে খুবই ভালো যে সব ধর্মের মূল কথা একই কিন্তু বাস্তবে তা নয় প্রত্যেকেই তার বিশ্বাস মতো ধর্মকেই সর্বোচ্চ বলে মনে করে ও প্রচার করে , গর্বের সংগেই এটা করে থাকে। তাহলে সেই প্রমাণ করে সকল ধর্ম সমান নয় । ধর্মে ধর্মে বিভেদ আছে । তাহলে কি করে তাদের কাছে আপনি ধর্ম নিরপেক্ষতা আশা করেন ? ধর্ম অধর্ম আস্তিকতা নাস্তিকতা এসব মানুষের মনের সৃষ্টি, ভিন্ন চিন্তাধারা মাত্র বলে , জীবনের সত্যান্বেষণকে এড়িয়ে চলাকে শ্রেয় বলে মনে করাকেই , মানবিক গুণ বলে ধরে নেবো কি করে ? যারা নিজেদের মানুষ বলে ভাবেন তারা এই পলায়নপর মনোবৃত্তি নিয়ে , নিজের জীবন দর্শণ না খুঁজে , এড়িয়ে চলতে পারেন কিনা ভেবে দেখতে অনুরোধ করি । বিজ্ঞান কিভাবে আস্তিকতা ও নাস্তিকতার বাইরে অবস্থান করতে পারে ? যা সত্য নয় তাই ক্ষতিকর , তাই অবিজ্ঞানতা , অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা সর্বদাই মানবিকতার পরিপন্থি , মানব সমাজকে উন্নতির গতি থেকে সর্বদাই রুদ্ধ করে রাখে ।
ভালো থাকবেন, উত্তর দেবেন ।
@সৈ্কত পাল, প্রথমেই এত দেরি করে মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আপনার অনেক লম্বা বক্তব্য, একে একে উত্তর দিই।
উত্তর লেখা পড়ে বুঝতেই পেরে গেছেন মনে হচ্ছে।
অবশ্যই। বিবর্তনবাদও একটা চিন্তাধারা, সৃষ্টিতত্ত্বও। তফাত – একটা ঠিক, আরেকটা ভুল।
নাস্তিকতা স্রেফ ঈশ্বরে বিশ্বাস না রাখা। কেউ নাস্তিক হয়েও চোরডাকাত হতে পারে। অতএব নাস্তিকতা বাই ডিফল্ট সমাজের উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে এটা দাবি করা ঠিক না হলেও, যদি সারা সমাজ নিধার্মিক হয়ে যেত তবে ধর্মভিত্তিক অনেক আপদ বিলুপ্ত হয়ে যেত তাতে সন্দেহ নেই। এই যেমন, বাধ্যতামূলক খতনা।
সেকুলার শব্দটির অর্থ: of or pertaining to worldly things or to things that are not regarded as religious, spiritual, or sacred. অতএব সেটা নিধার্মিক বইকি!
সে তো বটেই, তবে আবারো বিবর্তনবাদ আর সৃষ্টিতত্ত্বর তুলনাটাই উল্লেখ করতে হয়।
আপনি কী ‘ব্যক্তিগতভাবে’ বিশ্বাস করলেন তাতে তো কিছুই যায়-আসে না, যেটা তথ্য-যুক্তি-দ্বারা প্রমাণিত সেটাই সত্যি। আর বিজ্ঞান ধর্মকে নানা দিক থেকে ভুয়ো বলে দেখিয়ে দিয়েছে বারেবারেই।
কথাটা অবশ্যই ভারতের ১০০% ইস্কুলের জন্য সত্যি নয়, কিন্তু অধিকাংশের জন্য। আপনি ত্রিপুরায় পড়েছেন, যেটা সাম্প্রতিক কয়েক দশকে অধিকাংশ সময়েই (আপাত)ধর্মবিযুক্ত কমিউনিস্ট দল শাসিত। গো-বলয়ে এই ব্যাপারগুলো আরো বেশি।
যদি স্রেফ সামাজিকতা বলে দেখত তাহলে তো সমস্যাই ছিল না! আমাদের কাছে দুর্গাপুজো মূলত একটা কার্নিভাল, ঠিকই। কিন্তু ভারতের অধিকাংশ অংশে এই সমাজ-লোকাচার-ভিত্তিক ধর্মই মূল, এবং কখনও বিজ্ঞানের সঙ্গে বিরোধ বাধলে সেটাই মূল সত্য, অর্থাৎ ধর্মনির্ভর চিন্তা তখন বিজ্ঞাননির্ভর চিন্তাকে ওভারট্রাম্প করে।
হায়রে, কী naive আপনি এবং আপনার চোখে বাকি ভারতীয়রা! Sanal Edamaruku-র এই ঘটনাটা দেখুন। ক্যাথলিক চার্চ তাদের লীক হওয়া পাইপ থেকে দেওয়ালে আসা দাগ’কে মিরাকল-যিশু-মূর্তি দেখাচ্ছিল, উনি সেটার রহস্য ফাঁস করে দেওয়াতে ওনাকে সত্যি বলার অপরাধে, ‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য’ কোর্টে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
‘কম্যুনিস্টরা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী’ হওয়ার কথা, কারণ তাদের বইগুলিতে যুক্তিদ্বারা বোঝানো রয়েছে কেন ঈশ্বর কাল্পনিক একটা জিনিস। (খেয়াল করুন, বোঝানো হয়েছে, স্রেফ আদেশ দেওয়া হয়নি।) কিন্তু দুনিয়ার অধিকাংশ কমিউনিস্ট নামেই কমিউনিস্ট, কাজের বেলায় তারা নিজেদের ইচ্ছামত তৈরি করা একটা অবস্থান নেয়, যেটা আবার প্রয়োজনমত বদলায়। স্রেফ ভোট/অর্থের চাহিদা থেকে।
সে কথা কখনই বলিনি তো। পশ্চিমবঙ্গের/ভারতের/দুনিয়ার অধিকাংশ কমিউনিস্টরা কেবল নামেই, আসলে বাকি সবার মতই তাদের একটাই রাজনৈতিক অবস্থান – সুবিধাবাদী। আর পশ্চিমবঙ্গে তারা কেমন পরিকল্পিতভাবে, সিস্টেমেটিকালি, শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে সে দুঃখের কথা আর কী বলি।
বিজ্ঞান যে স্রেফ একটা টুল নয়, একটা ট্রুথ, এই উপলব্ধিটার কথা বলেছি। আপনার নাসার উদাহরণ দিয়েই বলি, যদি নাসার একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী নিজের মেয়ের বিয়ের সময় অন্য কাস্টে বিয়ে দিতে আপত্তি প্রকাশ করেন, সেইটাই সমস্যা। মানুষ যে আলাদা নয়, এই বিজ্ঞানের সত্যটা তারা উপলব্ধি করে না।
শেষটা আবারো আপনার পার্সোনাল রিভিলেশন, আপনি অযৌক্তিকভাবে নিজের বিশ্বাস-মানসিকতা থেকে যা মনে করছেন, করছেন, তাতে আর কী বলতে পারি।
আমাদের দেশের বিজ্ঞান চর্চার অবস্থা তো আর খারাপ অবস্থা! পুলাপাইন Engeneering নিয়া পরে কিন্তু ঈশ্বরকণা কি এটাই ধরতে পারছে না। একটা civil engeneering নিয়ে পড়া ছেলে যখন বলে ঈশ্বরকণা হল ঈশ্বর যে আছে তার আরেকটি প্রমাণ তখন ব্যাপারটা কেমন হয়!! কিন্তু এই ব্যাপারগুলাই ঘটছে! ছেলেপেলে বিজ্ঞান পরে একটা জিনিস মেরামত করতে শিখছে কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন একটা জিনিস তৈরি করতে শিখছে না।
সবাইকেই বিজ্ঞানের কিছু প্রাথমিক ধারণা দেওয়া দরকার, সে যদি কাব্য নিয়ে রিসার্চ করে তাহলেও। কালকে একটা ডকুতে দেখছিলাম, ইন্টালিজেন্ট ডিজাইন ওরফে ক্রিয়েশনিজমের দলে একজন গণিতজ্ঞ বড় বক্তা, তিনি নাকি অঙ্ক কষে দেখিয়েছেন যে দুনিয়াতে মানুষ আসার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য, অতএব মানুষ আসতে পারে না, এসেছে যে তা ইন্টেলিজেন্ট সৃষ্টিকর্তার হাত কেবল। ব্যাটা যদি একটুখানি Bayes থিওরেম আর একটুখানি বিবর্তন ঠিকমত বুঝত, তাহলে এই বলদামো করত না।
খুব ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ দাদা
কয়েক বছর আগের একটা কথা মনে পড়ছে। স্থানীয় একটি স্কুল Science Communicator’s Forum ( তখন নাম ছিলো দক্ষিণবঙ্গ বিজ্ঞান কমিটি বা ওই জাতীয় কিছু ) কে আমন্ত্রণ করে E=mc^2 নামে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। S.N.Bose National Center for Basic Science থেকে দুইজন বিজ্ঞানী এসে এক মনোজ্ঞ উপস্থাপনায় আমাদের বিমোহিত করেছিলো , কিন্তু ঝুলি থেকে বিড়াল বেরোলো শেষ দিন । আলোচনায় উন্নত মাত্রা যোগ করতে এক জন সংস্কৃতের শিক্ষকের খোঁজ করা হোলো ওই বিজ্ঞানীর জানা একটি শ্লোকের অর্থ সকলকে শোনানোর জন্য।যে শ্লোকে নাকি আছে পরমানু বোমা বিস্ফোরণের বর্ণণা । অবশেষে এক শিক্ষিকা এসে সেই শ্লোক পাঠ করলেন আর সকলে সাবাস সাবাস করতে লাগলো। আমি উদ্যোক্তাদের ডেকে বললাম ; এসব কি হচ্ছে ? তাঁরা বললেন , এতে দোষের কি আছে ? বরং অনুষ্ঠানটি তো সর্বাঙ্গসুন্দর হোলো ! আমি সেই বিজ্ঞানীকে অনুষ্ঠান শেষে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলাম “আপনি ভগবানে বিশ্বাসী ?” উনি অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন , ” এর সঙ্গে ভগবানে বিশ্বাস -অবিশ্বাসের কি সম্পর্ক ?” আমি জানিয়েছিলাম , তাহলে হঠাৎ ওই সব শ্লোকের আমদানি করলেন কেন ? উনি আমাকে বিস্মিত করেছিলেন ওঁনার পরের কথায়ঃ আসলে আমার থিসিসে অনেক সংস্কৃত শ্লোক দেওয়ায় বহু বিজ্ঞানীর সমাদর পায় । আমি আবার প্রশ্ন করেছিলাম আপনি ভগবানে বিশ্বাস করেন কি করেন না ? উনি বলেছিলেন এ বিষয়ে ভাবার আমি সময় পাইনা তবে ভগবান থাকবেননাই বা কেন ?
অর্থাৎ এই সব বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানকে তাঁদের রুটিরুজিব হিসাবেই নিয়েছেন , বিজ্ঞানমনস্ক হবার অবসরও পাননি ।
হুমম, ‘বেদের কাছে ফিরে যাও’ আন্দোলনটার একটা আবছা ছাপ এখনও রয়েই গেছে…
@কৌস্তুভ, ‘বেদের কাছে ফিরে যাও’ ব্যাপারটা আমি ঠিক জানিনা , একটু বলবেন ?
ভারতে নিও-হিন্দুইজমের প্রবক্তা বলা যায় দয়ানন্দ সরস্বতীকে। তিনি প্রচলিত, লোকাচারভিত্তিক হিন্দুধর্ম, পৌত্তলিকতা ইত্যাদির বিরোধী, আর বেদ-ভিত্তিক রিফর্মিস্ট আন্দোলনের এবং আর্য সমাজ’এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৭০-এর দিকে ওনার ‘Go back to the Vedas’ স্লোগান ওই চিন্তাধারার উপরই ভিত্তি করে। সেটা প্রভূত জনপ্রিয়তা পায়, এবং ওই আন্দোলনেরই একটা ধারা আজকের RSS বা VHP এদের মধ্যে। সেই মনোভাব থেকেই মেঘনাদ সাহার বলা ওই গল্পের ‘সবই ব্যাদে আছে’ মানসিকতা।
http://en.wikipedia.org/wiki/Dayananda_Saraswati এইটা দিতে ভুলে গেছিলাম।
ভালো লাগলো।
🙂
আসলে কিছু কিছু বিঙ্গানীদের কাছে বিঙ্গান তাদের চাকরি আর টাকা এবং সম্মান উপায়ের বিষয়বস্তু ছাড়া কিছু না।তারা নিজের কাজটা ঠিকই করে কিন্তু যখন বিঙ্গান তাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায় তখন বিঙ্গানকে ফেলে ধর্ম আর কুসংস্কারের পথে চলে।আসলে এসব লোকের ক্ষেত্রে বিঙ্গানী শব্দটা ব্যবহার করতে আমার খুব কষ্ট হয়।
হুম তাই-ই করে বটে কিছু লোক 🙁
ভালো লিখেছেন। একটানে পড়ে ফেললাম।
ধর্মের নাচানাচি এ আর নতুন কী! কিন্তু ভারতের ধর্ম বিজ্ঞান সম্পর্কটা বেশ ভিন্ন। মাখামাখি। নিশ্চিত নই কেনো। আব্রাহামীয় ধর্মগুলোর মতো লিটারালিস্টদের হাঁকডাক হিন্দুধর্মে কম বলে কি? কিন্তু লিটারিস্ট ও কিতাবকেন্দ্রিক নাস্তিক অ্যাপ্রোচ দিয়ে এই নমনীয়তাকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন? তাদেরকে বিজ্ঞান দিয়ে যে ‘হেদায়েত’ করতে পারবেন না সে তো বললেনই, কিন্তু কীভাবে অন্য অ্যাপ্রোচটা দিয়ে মোকাবিলা করবেন, সেটা কিন্তু ঠাশ করে উল্লেখ করে শেষ করে দিলেন। ওই অ্যাপ্রোচের সফলতা নিয়ে আমার নেহায়েতই সন্দেহ আছে। তবে ব্যাখ্যাও নির্ঘাত আপনি করতেই পারেন, শুনবো। এই ছিলো প্রথম প্রশ্ন।
আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে যারা দন্তনখরবিহীন, তাদের নিয়ে তাহলে আর কী সমস্যাটা বাকি থাকে, সেটা একটু স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায়? জানি একটা বড় অডিয়েন্স যেকোনো মূল্যে ধর্মের পদচিহ্ণ দূর করার ব্যাপারে নির্দ্বিধায় ও বিনা প্রশ্নে একমত। কিন্তু আমার কাছে তো আবার এটাই অন্যতম মৌলিক প্রশ্ন। দন্তনখরবিহীন ধর্ম, অর্থাৎ যা আপনাকে আমাকে কামড়ায় না, তার বিয়োগ ঠিক কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ, ভৌত কারণে প্রয়োজন?
বুঝি, আমি যদি এমন মন্ত্র পড়া বিজ্ঞানীর কলিগ হই, আমারও গা জ্বলে যাবে, সহ্য হয়তো হবে না। কিন্তু যদি সে দন্তনখরবিহীন হয়, আমার পকেটও না কাটে, আমার ঠ্যাংও না ভাঙে, ব্যাপারটা যদি এভাবে ভাবি, আমার পক্ষে কিন্তু অসম্ভব না এটা মেনে নেয়া যে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বিজ্ঞান যে সে ঠিকঠাক পারে তাতে তো সন্দেহ নেই নাকি? এখন আমার বাদবাকি যে কিঞ্চিৎ গা জ্বালাপোড়া অবশিষ্ট থাকে, সেটার বহিঃপ্রকাশটাই তখন আমার নিজের কাছে অসংবেদনশীল আচরণ লাগতে পারে। এই প্রশ্ন বা বিষয়টারও কি বৈজ্ঞানিক, কিংবা যৌক্তিক কিংবা সহজ সমাধান আছে?
হাহাহা, আমরা ১০০% শিওর ছিলাম যে এমন একটা মন্তব্য আপনি করবেনই!
যাদের আমরা দন্তনখরবিহীন বলে ভাবতে অভ্যস্ত, তারা কিন্তু আসলে তেমন নয় আদৌ। বিনাইন অর্থে তারা কেবল প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ।
এই ধরেন তাপসদার লেখাটা। প্রতি পুজোয়, এমনকি কারোর বাড়ির ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও মাইক লাগিয়ে তারস্বরে পাড়া কাঁপানোর ব্যাপারটা। অথবা সারা রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে নামাজ পড়তে বসার আবদার। এগুলো কি একেবারেই সমস্যাবিহীন?
তারপর ধরেন, আপনি যদি জ্যোতিষবিশ্বাসী হন, তার মানে, আপনি সক্রিয়ভাবে এই অপবিজ্ঞানচক্রকে ফান্ড করছেন, পৃষ্টপোষকতা করছেন, সমর্থন করছেন। কোষ্টী মেলানো কি নিরীহ ব্যাপার? কোষ্ঠী মিলছে না বলে কত ভালো সম্পর্ক ভেঙ্গে দেওয়া হয়, কতজনের প্রেম করে বিয়েতে পরিবার ব্যাগড়া দেয়। ‘মাঙ্গলিক’ এর মত হাস্যকর কনসেপ্ট নিয়ে কত ফ্যাচাং করে পরিবার, তা মুন্নাভাই সিনেমাটাতে দেখে থাকবেন, অভি-অ্যাশের বিয়েতেও দেখেছেন।
আর সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার, কেউ ধার্মিক মানে সে তার বাচ্চাকে ছোটবেলা থেকেই ইনডক্ট্রিনেট করে রাখছে, জ্যোতিষ-কুষ্ঠির মত ব্যাপারকে গিলিয়ে রাখছে, খোলামেলা চিন্তাভাবনা তৈরি হতে দিতে যথাসাধ্য বাধাদান করছে। এগুলো কি নিরীহ ধার্মিকদেরও আপত্তিকর সাইড এফেক্ট নয়?
আর জ্যোতিষে মানুষ বিশ্বাস করছে, সেটার পেছনে সময়, টাকা, আত্মবিশ্বাস অপচয় করছে বলে, সেটাকে ব্যবসা বানিয়ে যে কত কোটি টাকা রোজগার করছে এই ভণ্ডগুলো, তাদের ফ্রড হিসাবে প্রসিকিউট করা উচিত নয়?
বাস্তবিকই দন্তনখরবিহীন ব্যক্তিগত ধর্ম কেউ প্র্যাকটিস করলে সমস্যা ছিল না, কিন্তু অর্গানাইজড রিলিজিয়ন মানেই কোনো না কোনো ভাবে ঝামেলা পাকায়।
এখন আপনার পরের প্রশ্নটা হল, ভারতে এটাকে ফাইট করা যাবে কি, দ্বিতীয় পদ্ধতিতে?
ধর্মে যে নানা gaping holes আছে, সেটা উপলব্ধি করে প্রশ্ন করতে শুরু করেছে, এমন মানুষ আমারই পরিচিত আছে, এখানেও অনেকে আছেন নিশ্চিত। সে ধরনের রিসোর্স যদি কোনো সাইটে গুছিয়ে রাখা থাকে, সে তো ভালই।
আর প্রবীর ঘোষের মত লোকজনও আছেন। তাঁরা সরকারি আইন দেখিয়ে কাগজে জ্যোতিষ বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিরুদ্ধে একটা কেস জিতেছেন বলে শুনলাম সম্প্রতি। তাঁর বইগুলোও এ ধরনের ধর্মাচারের অসারতা প্রমাণ করে অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে, সে টেস্টিমোনিও পর্যাপ্ত।
@কৌস্তুভ,
আপনি যে এবার প্রস্তুত ছিলেন সেটাও বোঝা গিয়েছিলো কিন্তু। এটা ভালো লাগলো। আগের চেয়ে একটু বেশি গভীরে ঢুকেছেন, সেটা আশ্বস্তকর। এই বিষয়টাতে আপনি যেমনতরো ডিটার্মাইন্ড, সেই জায়গা থেকে বিষয়টা নিয়ে একজন স্কেপটিককে উত্তর করতে গিয়ে আগে পর্যাপ্ত যোগাযোগটা হচ্ছিলো না।
দন্তনখরযুক্ততা নিয়ে ভাবনার তফাৎ দেখতে পাচ্ছি। একটু পরিষ্কার করি। যা আপনার উপর জোর করে, আপনাকে কামড়ায়, ক্ষতি করে, তা আপনার কাছে দন্তনখরযুক্ত। দন্তনখরযুক্তের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, আইন আদালত করার ব্যক্তির অধিকার আছে বলেই তো বোধ করি। কিন্তু নিজের ক্ষতি না হলেও অন্যের ক্ষতি হবে এই ভাবনাটা জনস্বার্থ ভাবনা। এর সাথে রাজনীতি জড়িত। জরবদস্তির ভাবনা জড়িত। এই ভাবনাগুলো নাস্তিকতা উৎসারিত নয়। নাস্তিকতা আপনাকে আমাকে এটা শিখিয়েছে যে ঈশ্বর ফিশ্বর একটা ধাপ্পাবাজি, অন্যকে প্রয়োজনে জোর করে হেদায়েত করতে হবে, সেটা কিন্তু শেখায় নি। কিন্তু জনস্বার্থের নাম তুললে একটানে ধীরে ধীরে আসতে থাকে আইন কানুন, জোরজবরদস্তি করে হেদায়েত, অপশক্তিকে প্রতিহত করা, ইত্যাদি। এই দিক থেকে চিন্তা করলে দেখবেন যে, আপনার সব উদাহরণ উপরে কিন্তু দন্তনখরযুক্ত না। অনেকগুলোই জনস্বার্থ ভাবনা।
আইন-কানুন করে এই যে প্রাপ্তবয়স্ককে জনস্বার্থে শিক্ষাপ্রদানের প্রচেষ্টা, অন্যের অদৃশ্য প্রভুকে দূর করার জন্যে নিজের সরকার প্রভুর দ্বারস্থ হওয়া, এটাতে যে অনেকের বাঁধে না, সেটা একটু আশ্চর্যজনক না? জানি অনেকের কাছে না। অনেকে ঈশ্বরপ্রভু মানবেন না, কিন্তু রাষ্ট্র প্রভু মানতে সমস্যা নেই। তাকে ব্যবহার করে মানুষের উপর জোরজবরদস্তি করতেও সমস্যা নেই। কিন্তু সবার তেমন বাঁধবে না, সেটা কিন্তু ভুল ভাবনা।
অন্যের সন্তানকে কীভাবে বড় করা হবে, সে নিয়ে জনস্বার্থ ভাবনাটাও বেশ আগ্রহোদ্দীপক। সেটার দায়িত্বটা তার পিতামাতার উপর ছেড়ে দিতে এই ভাবনা নারাজ।
কোষ্ঠী না মিলায় পরিবারের অমতে গিয়ে যার বিয়ে করার সাহস নেই, রাষ্ট্র সাহস দিলে তার মেরুদণ্ড গজিয়ে যাবে? আপনি আমি নিজ মেরুদণ্ডে সমাজ প্রথা ভেঙে নাস্তিক হয়েছি। যে তার মানসিকতায় সেখানটায় নেই, তার বৌদ্ধিক মননকে ওই পর্যায়ে গঠনে রাষ্ট্রের পেশি সাহায্য করবে এই হচ্ছে ভাবনাটা? এই বোধ তো মনে করি প্রতিটা ব্যক্তির নিজস্ব অর্জনের বিষয়, সমষ্টির বা রাষ্ট্রের অর্জনের বিষয় না।
মুসলমান ধার্মিকদের মধ্যেও দুইরকম রাষ্ট্রভাবনা আছে জানেন তো। জামায়াতে ইসলামি জঙ্গি জিহাদিরা মনে করে, মানুষের ব্যক্তিগত অর্জন একটা ভ্রান্তধারমা, রাষ্ট্র একটা ফুলেল ইসলামি পরিবেশ তৈরি করবে, সেখানে মানুষ জোর করে ইসলাম গিলবে। আবার তাবলিগে জামাত টাইপগুলো ভাবে যে মানুষের পরিবর্তন না ঘটলে রাষ্ট্রের মাধ্যমে ইসলামকে জোর করে মানুষের উপর চাপানো অন্যায়। এই বিষয়টা এখানে প্রাসঙ্গিক লাগলো। একটা ভাবনায় সমষ্টি ব্যক্তি দ্বারা গঠিত, আরেকটায় ব্যক্তি সমষ্টি দ্বারা। এটা আস্তিক নাস্তিক ডাইমেনশনটার সাথে অসম্পর্কিত একটা ডাইমেনশান। এটা বোঝাটা আমাদের জরুরি।
ফ্রড প্রসঙ্গটাতেও একই ব্যাপার। মানুষ জুয়া খেলে, লটারি খেলে, ড্যান অরিয়েলি কতোভাবে দেখালেন এইসবের ক্ষতি। ওগুলোও আইন-কানুন দিয়ে বন্ধ করতে ছুটবেন? অনেকে তো ছুটছেনই। কিন্তু সিম্পল কমনসেন্সটা একবার ভাবুন। আপনি জানেন এগুলো ধাপ্পাবাজি, আপনি নিজে ওগুলো থেকে দূরে থাকুন, প্রচার করুন এসবের সমস্যা। আপনি জানেন ঈশ্বর একটা ফাঁপড়, নিজের সন্তানদের সেটা থেকে মুক্ত রাখুন। আপনি জানেন অন্যরা অপবিজ্ঞানচক্রে ফান্ড ঢালছে, আপনি বিজ্ঞানচক্রে ফান্ড ঢালুন। কিন্তু সে পথে না গিয়ে কি রাষ্ট্রপ্রভুর দ্বারস্থ হবার শর্টকার্ট নিতে চাচ্ছেন? এটা হীনতা বলেই কেবল অভিযোগ করছি না, এটা বিফল পথও। আর এই ভাবনা নাস্তিকতা উৎসারিত নয়, জোরজবরদস্তিমূলক রাজনৈতিক মানসপট উৎসারিত, এইটুকুই আমার প্রস্তাব। নাস্তিকতাকে এই জোরজবরদস্তির অপবাদ থেকে রেহাই দেওয়া আমার সংগ্রাম বলতে পারেন। 😉
শেষটায় –
হিন্দুধর্মের অনেককিছুই কিন্তু আমার বিশেষভাবে আব্রাহামীয় ধর্মের চেয়ে বেশ খানিকটা দন্তনখরহীনই লাগলো। মাঝে মাঝে আমার এক বন্ধু কোয়ান্টাম হিন্দুত্ব নিয়ে যে জ্বালায়, তাতেও একটা মৌলিক ভাবনার (বিপথগামী) প্রচেষ্টাই দেখতে পাই। কোনোদিন আমার ঠ্যাং ভাঙবে তেমন সম্ভাবনা কিন্তু আপনার চেয়ে বেশি না। :))
আপনার জন্য একটা সোজাসাপ্টা ভাবনাঃ
But it does me no injury for my neighbor to say there are twenty gods or no God. It neither picks my pocket nor breaks my leg. -Thomas Jefferson, Notes on Virginia, 1782
ভালো থাকুন।
সত্যি বলতে, এরকম কমেন্ট এলে উত্তর কী হবে তাই নিয়ে কোনো আলোচনা হয় নি কিন্তু। উত্তর দিতে দেরির কারণ কেবলই আমার ব্যস্ততা, সেজন্য দুঃখিত।
ভেঙে ভেঙে উত্তর দিই।
১. নাস্তিকতা তো ইশ্বরে বিশ্বাস না করা বই আর কিছুই নয়। সেটুকুও যে সবাইকে ‘শেখাতে’ হয়েছে তাও নয়। একজন নাস্তিক নানা বিষয়ে কী ধরনের অবস্থান নেবে সেটা নেহাতই আলাদা ব্যাপার। আর তাই হিউম্যানিস্ট, র্যাশনালিস্ট, স্কেপটিক ইত্যাদি নানা কিছু আনুষঙ্গিক বিশেষণ লাগে। কাউকে দাসব্যবসায়ী হতেও তো নাস্তিকতা ইটসেলফ বাধা দিতে পারে না।
২. আপনার পলিটিকাল স্টান্স আমার মতে লিবার্টারিয়ান বলা যায়। সেটার সঙ্গে আমি সহমত নই। তবে এটুক ভালো ব্যাপার, আপনি ধর্মচর্চার ক্ষেত্রেও সেটাই বজায় রাখেন, রিপাবলিকানদের মত না যারা নিজেদের ব্যবসার ব্যাপারে লিবার্টারিয়ান কিন্তু ধর্মের বেলায় ফাণ্ডামেন্টালিস্ট। 😛
(ডাইমেনশন বিষয়ে একটা হালকা পর্যবেক্ষণ, এই নট-টু স্কেল ছবিটায়: :)) )
[img]http://i1203.photobucket.com/albums/bb398/kaustubhad/drawing_liberal.png[/img]
আপনি বলছেন, “অন্যের সন্তানকে কীভাবে বড় করা হবে, সে নিয়ে জনস্বার্থ ভাবনাটাও বেশ আগ্রহোদ্দীপক। সেটার দায়িত্বটা তার পিতামাতার উপর ছেড়ে দিতে এই ভাবনা নারাজ।”
সন্তানের সবকিছু যে ১০০% তার পিতামাতার উপর ছেড়ে দেওয়া যায় না, তার এক্সট্রিম উদাহরণ তো অবশ্যই এই যে, পিতামাতা যদি সন্তানকে খুন করে তাহলে তাদের জেলে যেতেই হবে।
কিন্তু এর চেয়ে লঘুতর বাকি সব কিছুর মধ্যে, অনেক কিছু আছে যেগুলোও আমাদের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। ধরেন সেইসব মায়ের কাহিনী যাঁরা নিজেদের সন্তানকে ‘শয়তান ভর করেছে’ মনে করে ছ্যাঁকা দেন, বলি দেন। সেইসব পরিবার যাঁরা সন্তানের চিকিৎসা না করিয়ে স্রেফ প্রার্থনা বা পানিপড়া দিয়ে সুস্থ করে তুলতে গিয়ে চরম অসুস্থ করে ফেলেন। হয়ত বাচ্চাটি মারা না গেলে সেটা খবরে আসে না, কিন্তু তার আগেই এদের বাধা দেওয়া দরকার নয় কি? অথবা সেই বাবা-মা যাঁরা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে তান্ত্রিকের কাছে শিশুটিকে পেতে যেন যাতে তান্ত্রিক তার উপর উঠে দুপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এগুলো সবই কি পিতামাতার একচ্ছত্র অধিকার বলে ছেড়ে দেওয়া উচিত?
আমেরিকায় এক পরিবারের সঙ্গে লং ড্রাইভে গেছিলাম। কর্তাটি চেন স্মোকার, গাড়ি চালাতে চালাতে অবিরত স্মোক করছেন। আর হাইওয়ে বলে জানলা বন্ধ রাখতেই হচ্ছে। তাদের শিশুটি তো কেশে আকুল হচ্ছেই, আমারই রীতিমত কষ্ট হচ্ছিল। বাচ্চাটা যে কেন ছোট থেকেই অ্যাজমায় ভুগছে, সেটা তখনই আমার কাছে একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল। এইধরনের পেরেন্টদের তাদের বাচ্চার উপর একেবারে ফ্রি-হ্যান্ড থাকার এই ফলটা কি ভালো হচ্ছে তার বাচ্চার জন্য?
৩. জনস্বার্থ মামলা জিনিসটাকে আমি সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় বলেই মনে করি। একটা উদাহরণ দিই, যার সঙ্গে উপরের বিষয়টাও জড়িত।
যতক্ষণ না আপনি কোনো অঞ্চলের প্রতিটি বাচ্চাকে পোলিওর টীকা খাওয়াতে পারছেন, পোলিও ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এবং এতে শুধু যিনি তাঁর বাচ্চাকে খাওয়াতে অস্বীকার করছেন তাঁর সন্তানই নয়, পরবর্তীতে জন্মানো প্রতিটি বাচ্চাই রিস্কে থাকে। এবং সেইসব বাচ্চাদের জন্য অনির্দিষ্টকাল ধরে নিয়মিত পোলিও ভ্যাক্সিনেশন চালিয়ে যেতে হবে, যেটা সরকারের মানে বাকি প্রতিটি জনসাধারণের টাকার বিপুল অপচয়। এখানে আপনি ব্যক্তি(পেরেন্ট)স্বাধীনতার নামে কতটা ছাড় দিতে রাজি হবেন?
অনেক ক্ষেত্রে তো যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের প্রতিকার/প্রতিবাদ/মামলা করার ক্ষমতা থাকে না। এদের হয়ে, মানে এদের অনেকের পক্ষে একসঙ্গে যদি কেউ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও মামলা করে, তাতে সমস্যা কোথায়?
৪. “কোষ্ঠী না মিলায় পরিবারের অমতে গিয়ে যার বিয়ে করার সাহস নেই, রাষ্ট্র সাহস দিলে তার মেরুদণ্ড গজিয়ে যাবে?”
এখানে মেরুদণ্ডের প্রশ্নই আসে না অনেকের ক্ষেত্রে। ওইসব ছবিগুলো তো দেখেছেন, যেখানে বোকো হারাম জাতীয় গোষ্ঠী ছোট ছোট বাচ্চাদের কোমরে বোমা পরিয়ে আর হাতে কোরান ধরিয়ে জঙ্গি বানাচ্ছে? তারা তো ছোট থেকেই এমনভাবে ব্রেনওয়াশড হয়ে গেছে যে কোরানের অসঙ্গতি নিয়ে চিন্তা করার (মানে নাস্তিক হবার প্রথম স্টেপ) কথা তারা ভাবতেই পারে না। এখানে ‘নাস্তিক হবার মেরুদণ্ড নেই’ এর প্রশ্ন তো আসেই না। রাষ্ট্রর যেটা করা দরকার এখানে, সেটা হল কচি বাচ্চাগুলোকে এভাবে ইনডক্ট্রিনেট করে জোম্বি বানানোর থেকে রক্ষা করা, তাই না?
একটা কারখানা অন্যায়ভাবে পরিবেষদূষণ করছে, তাদের বিরোধিতা হিসাবে কারখানার বাইরে আন্দোলন করা, জনগণের মধ্যে NO2 নিয়ে লিফলেট বিলি করা, এসব তো আছেই। কিন্তু দ্রুত (অতএব পরিবেশ মোট ক্ষতি কম) এবং কার্যকর পদ্ধতি হল মামলা করা যাতে কোর্টের অর্ডার পেলে কারখানাটার উপর পরিবেশমন্ত্রক ব্যবস্থা নেয়। জ্যোতিষীদের সম্পর্কেও একই কথা। আপনি যে আমাদের ‘স্রেফ শিক্ষামূলক’ প্রচেষ্টার পাশাপাশি তাদের ফ্রড চালিয়ে যাবার জন্য প্রকারান্তরে এই ‘ফ্রি উইল’ দিচ্ছেন, সেটাই বরং ক্ষতিকর লাগছে আমার কাছে। ‘জাস্ট ফর সেক অফ নিউট্রালিটি’ ছাড়া এটার কোনো কারণ দেখছি না।
(আপনার যখনতখন দর্শন এনে শুরু করাকে ভারি ভয় পাই। এরপরেই সম্ভাবনা আছে, আপনি শুরু করবেন,
“‘অ্যাবসোলিউট গুড’ বলে কিছু আছে কি? জ্যোতিষীদের কাজকর্ম যে খারাপই, সে কথা আপনি বলার কে? যদি কেউ তাদের কাছে গিয়ে কিছু টাকা খসিয়ে মনের শান্তি নিয়ে আসে, তাহলে আপনি আপত্তি করার কে?”
প্লিজ এটা কইরেন না। আলোচনা শুরুর কমন প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ধরে নিচ্ছি যে জ্যোতিষ খারাপ এ বিষয়ে অন্তত আমরা সহমত। না হলে বাকি কথা বৃথা।)
৫. ক্ষতি মানেই যে ফিজিকাল হার্ম তা তো নয়।
“But it does me no injury for my neighbor to say there are twenty gods or no God. It neither picks my pocket nor breaks my leg. -Thomas Jefferson, Notes on Virginia, 1782”
প্রতিবেশি তার বাড়িতে সারা দিন ওই কথা আউড়ে যাক, সমস্যা নেই। কিন্তু সে যখন পালপরব এলেই মাইক লাগিয়ে ওই কথা চিৎকার করে সবাইকে শোনাতে থাকে, ধর্মপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একেওকে ইনডক্ট্রিনেট করার অপচেষ্টা চালাতে থাকে, ওই গডের নামে টাকা তুলে তুলে নিরীহ লোকেদের ফ্রড করতে থাকে, তখন আমারো ক্ষতি, বাকি নানা প্রতিবেশিরও, এবং নিজের সরাসরি ক্ষতি না হলেও মানবতা বলে যে এটার বিরোধিতা করা প্রয়োজন। নইলে রাম যখন শ্যামকে বুলি করে তখন আমরা শ্যামকে বাঁচাতে এগিয়ে আসি কেন? (লিবার্টারিয়ানরা হয়তবা আসেন না, অন্তত রিপাবলিকানরা যে কমই আসেন সে তো বটেই)
@কৌস্তুভ,
কিছু অ্যাগ্রিমেন্টের জায়গা যে পাওয়া গেছে সেটা বড় প্রাপ্তি। যেমন, বিষয়টা কেবল নাস্তিক আস্তিক ডাইমেনশানের না। আরেকটা উল্লম্ব ডাইমেনশান হলো আহ্বান বনাম জোর। এই বিষয়গুলো আসায় ভালো হলো। নয়তো খুব সহজেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়, কেউ কেউ মনে করে আমি আসলে নাস্তিকতার বিরুদ্ধে বলছি।
ছবিটা চোথা মেরেছেন নাকি :))
[img]http://i1138.photobucket.com/albums/n525/Ashique_Rupam_Mahmood/e1dc54fb-1.png[/img]
লিবার্টারিয়ানিজম সম্পর্কে হয়তো আরো জানবেন আগামিতে, এই আশা। লিবার্টারিয়ান মানে অ্যাবসলিউট গুডে বিশ্বাস না করা না, মানবতার জন্য এগিয়ে না আসা না। বরং এ সম্পর্কে তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান আছে। রাষ্ট্রের এখতিয়ার কতোটুকু সে নিয়েও তাদের অবস্থান স্পষ্ট। তারা মানবতা = রাষ্ট্র ইকোয়েট করে না তার মানে তো এই না যে তারা মানবতাবাদী না!
আর বিষয়টা কিন্তু খারাপ আর ভালোরও না। খারাপ যে জ্যোতিষশাস্ত্রের মতো জুয়া কিংবা লটারিও, তা কিন্তু আমিও আগেই বলেছি। মদেও ভালোর কী আছে বলেন? যা খারাপ তা নিয়ে আপনিও বলছেন, আমিও বলছি। খারাপকে তো ভালো তকমা দেই নি। কিন্তু কেউ মদ, জুয়া, লটারির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পেশি ব্যবহারে নিশ্চিত, আবার কেউ জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পেশি ব্যবহারে নিশ্চিত। আমি খারাপের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পেশি ব্যবহার করার নিশ্চয়তাকে প্রশ্ন করায় আপনি ভাবছেন একে আদৌ খারাপই ভাবি কিনা, সেটা কি ঠিক হয়? আর জ্যোতিষশাস্ত্র কিংবা ধর্মগুরুদের ধার্মিকদের থেকে টাকা নেওয়ার খারাপত্বের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে ডেকে আনার ব্যাপার নিয়ে আপনি যেমনটা নিশ্চিত, সেখানে আবার মদ জুয়া লটারি নিয়ে কিন্তু আপনার অবস্থানটা অনিশ্চিত রয়ে গেলো। দুটোতেই সমান যুক্তি ব্যবহার করুন। ভাইটালিজমের মতো একটাতে ধর্ম মাখানো আছে বলে আলাদাভাবে ট্রিট করবেন, তা কি আর ঠিক হয়?
যা খারাপ মনে করেন, তাই রাষ্ট্র দিয়ে বন্ধ করানো মোক্ষম, কার্যকর, এই ভাবনার ব্যাপারে ডিটার্মিনেশানটা অবাক করে। বৈজ্ঞানিক ভাবনাগুলো সুচিন্তিত, কিন্তু রাষ্ট্রসমাজব্যবস্থার বড় বড় বিষয়ে এতো মোটাদাগের অবস্থানগুলো এতো ভরসার সাথে নিতে অনেককেই প্রায়ই দেখি। চিন্তা করা কিংবা প্রশ্ন করাটাকেই দর্শন টর্শন বললে কিন্তু চিন্তা আর প্রশ্ন দৌড় দিয়ে পালাবে। যদি ভাবতে বসেন, সমাজবৈজ্ঞানিক ভাবনায় যুক্ত হন, তখন কিন্তু আবার দেখবেন যে এগুলো গভীর ভাবনার বিষয়, এবং অনেকগুলো কম্পিটিং ভাবনা আছে এইসব প্রশ্নে। এবং তাদের একটার উপর আপনি নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে আছেন। সেটাকে প্রশ্ন করা তো একেবারে উদ্ভট কিছু না। আপনি আমার ও এখানের অন্য দশজনের মতই চিন্তা করার শর্তযুক্ত কিনা তাই নির্দ্বিধায় বিষয়গুলো টানা, কোনটা দর্শন, কোনটা না সেই দুশ্চিন্তা না মাখিয়ে। সে নিয়ে অ্যালার্জিতে যাবেন মুক্তমনায়, তা কি কৌস্তুভ মানায়? 🙂 বরং অনিশ্চিত বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন চিন্তাগুলোর প্রতি যে এখানে সবাই সহনশীল ও বিবেচনার শর্তযুক্ত “এ বিষয়ে অন্তত আমরা সহমত”, তাতে কোনো সন্দেহই নেই।
@রূপম (ধ্রুব), আপনার আর কৌস্তভের এই আলোচনার মধ্যে ঢোকা ঠিক হচ্ছে কীনা জানি না, তবে এই পোষ্টে আপনার প্রথম মন্তব্যের পরেই দুইএকটা বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম সমায়াভাবে সেটা বলা হয়ে ওঠেনি। তাই, একটু দেরী হয়ে গেলেও এখন বলছিঃ)। আপনার বেশীরভাগ মন্তব্যের সাথেই একমত যে ব্যক্তিগত ধর্মানুভূতি বা ধর্ম পালনে রাষ্ট্রের কোন ভূমিকা থাকা ঠিক না, সেগুলো যদি সমাজের অন্যন্যদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে না ওঠে তাহলে তাতে কারো কিছু বলার থাকতে পারে না। আমি নিজেও কঠোরভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী একজন মানুষ (যদিও লিবার্টারিয়ানিজম নিয়ে আমার ধারণাটা বোধ হয় আপনার থেকে একটু আলাদা) , সেই হিসেবে এটা মানতেই হচ্ছে যে, একজন বিজ্ঞানী যখন নিজে ধর্ম মানেন বা হাজারো কুসংষ্কারের চর্চা করেন তাতে বলার কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু সমস্যাটা হয়ে যায় অন্য জায়গায়, ্যখন এ ধরণের কুসংষ্কারের হাত সুদুরপ্রসারী হইয়। এধরণের ক্ষেত্রে এত ‘সাদা কালো’ বা ‘সঠিক বা বেঠিক’ ধরণের উত্তর নাই থাকতে পারে। যেমন ধরুন, এই বিজ্ঞানীরাই কিন্তু শিক্ষানীতি প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত হন, তারা যখন নিজেদের ধর্ম বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে আমাদের পাঠ্যক্রম থেকে বিবর্তনের মত একটা বিষয় তুলে দেন তখন কী করে সেটাকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে? অথবা ধরুন, জ্যোতিষ শাস্ত্রকে যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে পড়ানোর প্রস্তাব ওঠে তখন রাষ্ট্রের কী কোন ভূমিকা থাকবে? বা ধরুন, এই যে আমেরিকায় ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন পড়ানো নিয়ে ব্যাপারগুলো যে আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে, সেখানে রাষ্ট্রের একটা সুনির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকলে কার সুবিধা হত? তখন কে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতো? তখন একজন লিবারটেরিয়ানের ভূমিকা কী হবে? আর বিশেষ করে আমাদের মত সমাজ ব্যবস্থায়, যেখানে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র নিজেই বিজ্ঞানমনষ্কতার(বিজ্ঞানের কোন ফিল্ডে ডিগ্রী নেওয়ার কথা বলছি না কিন্তু) বিপক্ষে দাঁড়ায় সেখানে ‘ব্যক্তিগত ব্যাপার’ বলে চুপ করে থাকাটা কী করে যুক্তিযুক্ত হতে পারে? এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং ‘সবার জন্য গনতন্ত্র টাইপের’ কথা বললে বরং প্রগতিশীলতার বিপক্ষেই দাঁড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ব্যক্তি, রাষ্ট্র এবং সমাজের মধ্যে সম্পর্ক কিন্তু বেশ জটিল, এদের মধ্যে সুক্ষ্ম এবং চক্রাকার সম্পর্ক রয়েছে, এজন্য মাঝে মাঝে মনে হয় যে সর্বক্ষেত্রে লিবার্টারিয়ানিজম দিয়ে আদর্শ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নাই হতে পারে। এদের মধ্যে মনে হয় একটা ‘ফাইন ব্যালেন্স’ খুঁজে বের করা দরকার।
(Y)
@বন্যা আহমেদ,
যখন আপনি রাষ্ট্রকে একটা নেসেসারি ফোর্সিং স্ট্রাকচার হিসেবে মেনে নিচ্ছেন, তখনই এই সমস্যাটা এরাইজ করছে। আপনি ভাবছেন, একটা অতি ক্ষমতাশীল রাষ্ট্রের জরুরত আছে, যে কিনা শিক্ষানীতি প্রণয়ন করবে, যেটাকে মেনে চলতে হবে রাষ্ট্রের সকল স্কুলের। আমার মূল তর্ক তো ওখান থেকেই শুরু। আমি তো রাষ্ট্র যে একটা সর্বপ্রযোজ্য শিক্ষানীতি প্রণয়নের অধিকারী, সেই প্রিমাইসই মানছি না।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতিষ শাস্ত্র পড়ানো হবে কি হবে না, সেটা নিয়ে আপনি আপনার সরকারের সাথে দেন দরবার করতে পারেন, কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কেউ পড়ায়, বা নিজের বাসায় ডেকে যদি পড়ায়, তখন আপনি কী করবেন? আবার হয়তো রাষ্ট্রকে ডাক পারবেন। শিক্ষানীতি চাপাবেন। প্রগতির দোহাইতে। যদি ভাবেন যে রাষ্ট্র দ্বারা চাপিয়ে বিজ্ঞান পড়ানো আর কুসংস্কার থেকে মানুষকে রক্ষা না করালে প্রগতি এগুবে না, সেটাকে বড়ো দায়িত্বহীন অলস অকর্মণ্য চিন্তা বলবো। সভ্যতার অধিকাংশ মহৎ কাজ বা আপনার প্রগতি ঘটেছে মানুষের স্বেচ্ছাকৃত যৌথ উদ্যোগে। মানুষ স্বেচ্ছাকৃত যৌথ উদ্যোগে বেশ সফলকাম। এই যেমন ধরুন গত একদশকের মুক্তমনা আন্দোলন। কিন্তু মানুষ কোনো এক অদ্ভূত কারণে তার এই অসাধারণ ক্ষমতাটার উপর যথেষ্ট আস্থাশীল না। তার চেয়ে সে মনে করে যে রাষ্ট্র দ্বারা বলপ্রয়োগ করে মঙ্গল ঘটানো বরং বেশি কার্যকর। কিন্তু ফোর্স হ্যাজ বিন এ ফেইলিওর থ্রো আউট দ্য হিস্টরি। একটা কলেজে জ্যোতিষশাস্ত্র পড়ালে আপনি সেটার ক্ষতি সম্পর্কে প্রচার করতে পারেন। ওটাতে নিজের সন্তানকে না পাঠিয়ে সচেতন মানুষ এর উত্তর দিবে। নাহ। এর বদলে আমরা বরং ভাবতে চাই যে রাষ্ট্রের চাপাচাপি ছাড়া মঙ্গল ঘটবে না। মুক্ত সমাজের বিনিময়ে কি আপনি প্রগতি চান? আমি বলবো মুক্ত সমাজের পাণে যাওয়াটাই প্রগতি। না যাওয়াটাই প্রগতির বিপক্ষে দাঁড়ানো বা প্রকৃত অন্তরায়।
“…if we wish to preserve a free society, it is essential that we recognize that the desirability of a particular object is not sufficient justification for the use of coercion.”
-Friedrich August von Hayek
হেহে, ঈমানে কই, আপনার ছবিটা আমি আগে দেখিনাই (বা দেখে থাকলেও একদমই মনে নাই)।
১. “লিবার্টারিয়ান মানে অ্যাবসলিউট গুডে বিশ্বাস না করা না, মানবতার জন্য এগিয়ে না আসা না।”
তা বলিনিতো!
২. ধরেন লটারি। জ্যোতিষের সঙ্গে লটারির প্রধান পার্থক্য হল, জ্যোতিষ ১০০% ফ্রড! লটারিতে একটা স্বচ্ছ পদ্ধতি আছে, কোনো লটারিতে হারজিতের সম্ভাবনা সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে যেতে পারেন সহজেই। (সবাই যে সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় তা নয়, অনেকে ইমপালসিভ গ্যাম্বলার আছে, বা অনেকে টাকার কথা শুনেই লোভে পড়ে বাজি লাগায়।) সেই ট্রান্সপারেন্সির জন্যই সরকারও লটারি অর্গানাইজ করতে পারে, আবার লটারি মালিক যারা ঘাপলা করে তাদের ফেয়ারনেস ভাঙার জন্য গ্রেফতারও করতে পারে। এর সঙ্গে জ্যোতিষের মত ১০০% বিশ্বাস+ফ্রড-পারপিট্রেটেড জিনিসের তুলনাই হয় না।
বা ধরেন মদ। আপনি পয়সা দিচ্ছেন, যেমন দিচ্ছেন তেমন মান ও পরিমাণের একটা ট্যাঞ্জিবল জিনিস পাচ্ছেন, সেটা গলাধঃকরণ করছেন। যদি পয়সা দেওয়ার পর ‘হাতে এই তাবিজটা বাঁধ, তাহলে আজ থেকে একমাস পরে তুমি দৈবের ফলে তিন বোতল মদ পাবে’ এরকম মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিত বারটেন্ডার, তাহলে মদকে জ্যোতিষের সঙ্গে তুলনা করতে পারতেন।
জ্যোতিষের সঙ্গে ধর্ম মাখানো আছে কি নেই, সেটা এখানে বিবেচ্যই নয়।
৩. আমার আপত্তিটা কী ধরনের ব্যাপারে, সেটা plato and platypus walk into a bar বইটার এই উদাহরণটা দিয়ে ব্যাখ্যা করি।
A woman reports her husband’s disappearance to the police.
They ask her for a description, and she says, “He’s six feet, three inches tall, well-built, with thick, curly hair.”
Her friend says, “What are you talking about? Your husband is five-feet-four, bald, and has a huge belly.”
And she says, “Who wants that one back?”
The police say, “Lady, we are asking you for a description of your husband that corresponds to your actual husband.”
The woman responds, “Correspondence, shmorrespondence!
Truth cannot be determined solely by epistemological criteria, because the adequacy of those criteria cannot be determined apart from the goals sought and values held. That is to say, in the end, truth is what satisfies, and, God knows, my husband didn’t do that.”
এখানে অপ্রয়োজনে ওই মহিলা দার্শনিক জার্গন (এখানে ট্রুথ/ভ্যালু/গোল এগুলোই জার্গন) এনে যে ঘোলাজল করে দিচ্ছেন, সেরকম কাজেকর্মেই আমার আপত্তি। আলোচনা চাইলে জার্গন না এনেও সরল রাখা যায় অনেকদূর। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় চিন্তা আর প্রশ্ন অবশ্যই করুন কিন্তু আমরা বুঝতে এবং অংশ নিতে পারি এমন ভাষায়।
@কৌস্তুভ,
আমি আমার ন্যাচারাল ভাষায় কথা বলছি রে ভাই। আপনার ভাষাটা আমার কাছে ন্যাচারাল না, তারপরেও যোগাযোগের জন্যে আমার তরফ থেকে একটা প্রচেষ্টা আমি প্রয়োগ করি আপনার কথা বোঝার, আমার মতো করে কথা বলার জন্য আপনাকে অনুরোধ করে বিব্রত না করে। আপনি আমার ক্ষেত্রে সেই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। কথা বুঝতে তো কষ্ট করতেই হয়। সেটা যদি করতে না চান, আপনার জন্যে বোধগম্য করে কথা বলার চেষ্টাও করে দেখতে আমি আপত্তি করবো না। তবে আমি যা বলছি, সেটা যেহেতু আমার জন্যে ন্যাচারাল, ফলে আমার নিজের পক্ষে নিজে নিজে বোঝাটা কষ্টকর যে কোন কোন ধরনের শব্দচয়নে আপনার আপত্তি। সেক্ষেত্রে আমার উপরের মন্তব্যগুলো থেকে যে শব্দগুলো আপনার কাছে (ট্রুথ/ভ্যালু/গোল টাইপের) জার্গন লেগেছে সেগুলো জানিয়ে বাধিত করবেন। না হলে আমার তরফ থেকে আপনার জন্যে সহজ করে কথা বলার প্রচেষ্টাটা কেবল গায়েবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
আর “আমরা বুঝতে এবং অংশ নিতে পারি” যখন বললেন, তখন আপনার একই আপত্তিটা আপনি ছাড়াও “আপনাদের” আর কার কার হচ্ছে জানালে বাধিত হতাম। অবশ্য না বললে গায়েবি “আমরা”দের নিয়ে তেমন ভাবিত হবার কারণ দেখি না।
@কৌস্তুভ,
জনস্বার্থের ভালত্বের কিংবা সন্তানের উপর পিতামাতার কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে যে উদাহরণগুলো দিলেন, ওগুলা কিন্তু আমার খুবই ভালো লাগলো, কারণ ওগুলো নিশ্চিত কেইস এবং সবগুলোই ফিজিক্যাল হার্ম সংক্রান্ত। শুধু দন্তনখরযুক্তই নয়, নিশ্চিত কেইস। আমরা তো এগুলাই সনাক্ত করতে চাই। এই নিশ্চিত বিষয়গুলোর বৈধতাকে কিন্তু আপনি অনিশ্চিত, প্রোবাবিলিস্টিক, লংটার্ম অজানা, অস্পষ্ট মেটা মানসিক ক্ষতিকারক হিসেবে অভিযুক্ত বিষয়ে এক্সটেন্ড করতে পারেন না, তাই না? ল’ এর অনেক ইম্প্লিকেশান। ল’ কাঙ্ক্ষিত নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা ছাড়াই মানুষ তার অধিকাংশ উন্নয়ন ও সহযোগিতাপূর্ণ কাজ সারে। যেটার ক্ষতি কোনোভাবেই এড়ানো যায় না, সেটার জন্যে না পারতে মানুষ ল’এর দ্বারস্থ হয়। এবং যেহেতু অন্য কোনো উপায় নিশ্চিতভাবে ছিলো না, তাই ওইসব কেইসে ল’ এর প্রয়োগ নিশ্চিতভাবেই উপকার বয়ে আনে। কিন্তু কিছু মাত্রায় প্রোবাবিলিস্টিক্যালি ক্ষতিকারক এমন অভিযোগ পাওয়া মাত্রই কোনোকিছুর বিরুদ্ধে ল’ করতে যাওয়ার মধ্যে আবার ঠিক উল্টো ভাবনাটা, অর্থাৎ ল’ কাঙ্ক্ষতি, এই ভাবনাটা কাজ করে। অন্য উপায় থাকা অবস্থায় ল’ বা জোর প্রয়োগ সহজ স্বাভাবিক উপায়কে বাধাগ্রস্ত করে, হিতে ফলে বিপরীত ঘটে। তাই মেটা ক্ষতিকারকগুলোর বিরুদ্ধে এই নিশ্চিত ল’কামী অবস্থানকে প্রশ্ন কেবল আমারই না, আপনারও করা দরকার। এবং বিকল্প উপায়গুলোর প্রতি আস্থাশীল হওয়া দরকার।
আরও কয়েকগুচ্ছ থমাস জেফারসন।
সিগারেট স্মোকিং এর প্যাসিভ ক্ষতি সম্পর্কে আমরা কিছুদিন হল নিশ্চিত হয়েছি। তার আগে পর্যন্ত কি সেই ক্ষতির ধারণাটাও ‘অনিশ্চিত, প্রোবাবিলিস্টিক, লংটার্ম অজানা’ ছিল না?
যারা বাচ্চাকে ব্রেনওয়াশ করে আত্মঘাতী বোমারু হতে শেখাচ্ছে, সেই বাচ্চাগুলোরও তো কোনো মিশনে অংশ নিয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০% নয়, অনিশ্চিত, প্রোবাবিলিস্টিক। তাই বলে সেটাকে ছেড়ে দেওয়া হবে?
প্রত্যক্ষ ফিজিকাল হার্মকে লংটার্মে, বা মানসিক হার্মে এক্সটেন্ড করে সেগুলোও ক্ষতিকর ধরতে আপনার অনীহা দেখে অবাক হচ্ছি। এই আচরণ দেখে ওই বইটা থেকেই আরেকটা ব্যাখ্যা মনে পড়ে যাচ্ছে:
A scientist and his wife are out for a drive in the country. The wife says, “Oh, look! Those sheep have been shorn.”
“Yes,” says the scientist. “On this side.”
At first blush we might think that the wife is only expressing a commonsense view, while the scientist is taking a more cautious, more scientific view, in that he refuses to go beyond the evidence of his senses. But we would be wrong. It is actually the wife who has formulated what most scientists would consider the more scientific hypothesis. The “experience” of empiricists is not restricted to direct sensory experience. Scientists use their prior experiences to calculate probabilities and to infer more general statements. What the wife is in effect saying is, “What I see are sheep that are shorn, at least on this side. From prior experience I know that farmers do not generally shear sheep only on one side and that, even if this farmer did, the probability of the sheep arranging themselves on the hillside so that only their shorn sides face the road is infinitesimal. Therefore, I feel confident saying, ‘Those sheep have been completely shorn.’
জেফারসন থেকে কতগুলো বাণী দিলেন, তাতে কী এল-গেল? ওনার প্রতিটা কথাই বেদবাক্য?
স্পষ্ট করি: কথাগুলো এক্ষেত্রে জেফারসন বলেছেন কি ওপাড়ার নশু পাগলা, তাতে কিছু এসে যায় না, কথাগুলো ঠিক কি ভুল, সেটাই আসল।
আবার, সেগুলোকে আপনি যেভাবে দেখিয়ে নিজের কথার দিকে সমর্থন হিসাবে দেখাতে চাইছেন, সেটাও অনেক ক্ষেত্রে ভুল।
২. জেফারসনরা যে ‘সেপারেশন অফ চার্চ অ্যান্ড স্টেট’ আইনটা করেছিলেন, সেটার সম্পর্কে আপনার কী মত? সেটা তুলে দিলে তো কারো প্রত্যক্ষ ফিজিকাল হার্ম হবেই এমন নিশ্চিত না। তাহলে আপনার কথামত ওইটা না এনফোর্স করাই ভালো?
আবার সেটা নিয়ে অনির্দিষ্টকাল ডেলিবারেশন বা এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগও ওঁদের ছিল না – সংবিধান লিখতে হচ্ছে, এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে ওই আইনটা রাখব কি রাখব না। লম্বা ফিলজফিকাল ডিসকোর্স যে সবসময় প্র্যাক্টিকাল নয়, এটা তারই উদাহরণ।
@কৌস্তুভ,
‘সেপারেশন অফ চার্চ অ্যান্ড স্টেট’ আইনটা দীর্ঘ ফিলসফিক্যাল ডিসকোর্স ছাড়া করা হয়েছে যদি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক-ইতিহাস সচেতন মানুষ কিন্তু কেঁদে কেটে মারা যাবে। কয়েকশত বছরের হিউম্যানিস্ট লিবারেলিস্ট আন্দোলনের ফসল এটা। এর পেছনে John Lockeদের মতো দার্শনিকেরা বহু চিন্তাক্ষয় করেছেন। উইপিডিয়ার আর্টিকেলটাই পড়ুন না!
http://en.wikipedia.org/wiki/Separation_of_church_and_state
এটা একটা দীর্ঘ ফিলসফিক্যাল ডিসকোর্সেরই ফসলরে ভাই। থমাস জেফারসনের সুচিন্তিত “দার্শনিক” লেখালেখিও সেই ডিসকোর্সগুলোর একটা। থমাস জেফারসনের যে লেখা থেকে উপরের সবগুলো উক্তি দিয়েছি, সেই লেখাটাই ওগুলোর অন্যতম। আর ‘সেপারেশন অফ চার্চ অ্যান্ড স্টেট’ কিন্তু লিবার্টারিয়ান প্রিন্সিপ্যাল সঞ্জাতই। ধর্মের উপর রাষ্ট্রের হাত থাকাটা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে বিস্তারিত করে। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে রাষ্ট্র রাজা সম্রাটরা মানুষের উপর ধর্মীয় অত্যাচার চালাতো। হেরাসিকে প্রসিকিউট করতো। সেপারেট করাটা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে সীমিত করে। মানুষ গাছকে আল্লা বলুক, মির্জা সাহেবকে শেষ নবি মানুক, রাষ্ট্রের এখানে কিছু করার নাই। সেটা ছিলো এই আইনের মূল আগ্রহ। রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের হাত থেকে ধর্মকে বাঁচানো। কেবলই ধর্মের হাত থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচানো না। আর এটা রাষ্ট্রের কোনো সম্প্রসারণমূলক বা আরোপমূলক আইন না, বরং সংকোচনমূলক। ফলে এটাকে তুলে দিলে কী হবে সেটা প্রশ্ন না, এই আইনটাই এক ধরনের রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগকে “তুলে দেওয়া।”
@কৌস্তুভ,
আরেকটা ব্যাপার
এগুলোর সাথে সহমত।
ছদ্ম বিজ্ঞানী গুলোকে অনবরত ধোলাই দেওয়ার জন্য এমনি লেখা অন্যতম উপযুক্ত অস্ত্র। ধন্যবাদ কৌস্তভ (C)
নিজেদের রিসার্চের কাজটুকু যে তাঁরা ঘাপলা করেন, তা বলছিনা কিন্তু। সে অর্থে যে ছদ্মবিজ্ঞানী বলা যায় তাও না। তবে…
পৃথিবীতে অনেক মানুষই জেনেশুনে অনেক কুরুচিপুর্ন কাজ করে শুধুই রুটি রুজির জন্য। তাই বলে এটা ভাবার কোন কারন নেই যে তারা তা রুচিকর বা ভালো কাজ মনে করে করেন। জাকির সাহেব যা বলেন, আমার ধারনা, সেগুলর আসারতা সম্পর্কে তিনিও যথেষ্ট আবগত। তাহলে তিনি তা বলেন কেন। আমার ধারনা তার এইসব গারবেজ খাওয়ার জন্য কিছু গারবেজ-ইটার যতদিন থাকবেন তিনিও ততদিন শুধুই রুটি রুজির জন্য তা ডেলীভারি দিয়ে যাবেন। বাজার অর্থনীতির আরো একটা কুফল আরকি।
হুমম, একটা থিয়োরি হচ্ছে যে এই ধরনের ধর্মব্যবসায়ীরা আসলে নাস্তিক। সেটা এদের অপছন্দ করা অনেক ‘মডারেট ধার্মিক’রাও বলে, কারণ এদের ‘সাচ্চা ধর্মাবলম্বী না’ ডিক্লেয়ার করে দিতে পারলে তাদের মনে ‘সাচ্চা ধর্ম’র যে ইমেজটা আছে সেটা শান্তিতে পোষণ করতে পারে। আমি নিশ্চিত না।
সহজ সরল কথার ব্লগ তাই ভাল লেগেছে। (Y)
অপেক্ষায় আছি “কোরানের রেফারেন্স সহ জাকির নায়েক এই বিষয়ে কি বলেন” দেখার জন্য। :))
হ্যাঁ, অন্য লোকজনও জোকার সায়েবের বাণী শুনতে উদগ্রীব। মনে হয় কোরান থেকে হিগস বোসন খুঁজে বের করতে একটু সময় লাগছে ওনার। 😛
এসব ধর্মভীরু বিজ্ঞানীরা যে আজো বহির্বিশ্বে প্রার্থনাগার তৈরি করেননি সেটাই আশ্চর্যের। দারুণ লিখেছেন কৌস্তুভ (Y)
হুম!
খুব ভালো লাগলো…
আমি নিজে Physics -র student.
goddamn থেকে god হয়ে যেতে বেশি সময় লাগেনা আসলে,
বিজ্ঞানের এরম বিকৃতি সত্যি-ই মেনে নেওয়া যায়না…
আপনার এই লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
উনি তো শুনছি গড-ই নাম দিয়েছিলেন তার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের জন্য, গডড্যাম-টা পরে মজা করে বানানো।
@কৌস্তুভ, http://www.guardian.co.uk/science/2008/jun/30/higgs.boson.cern
এখানে দেখতে পারেন…
http://en.wikipedia.org/wiki/Peter_Higgs#cite_note-30 –এর ৩১ নম্বর reference
@কৌস্তুভ,
কে জানে! এখানে দেখলাম –
লেখার নীচে তথ্যসূত্র হিসেবে আনন্দবাজারের উল্লেখ আছে।
এ বক্তব্যের সমর্থন আমি পেয়েছি জন হর্গনের সায়েন্টিফিক আমেরিকান ব্লগে –
উইকিতেও আছে লিও লেডারম্যানের ভাস্য-
the publisher wouldn’t let us call it the Goddamn Particle, though that might be a more appropriate title, given its villainous nature and the expense it is causing.
উইকির পুরো প্যারাগ্রাফটা কিন্তু বলছে,
Lederman said he gave the Higgs boson the nickname “The God Particle” because the particle is “so central to the state of physics today, so crucial to our final understanding of the structure of matter, yet so elusive,” but jokingly added that a second reason was because “the publisher wouldn’t let us call it the Goddamn Particle, though that might be a more appropriate title, given its villainous nature and the expense it is causing.”
জন হর্গনের ভাষ্য কিন্তু এই কথার বিরোধিতা করে না।
আর আবাপকে বিজ্ঞানের তথ্যসূত্র হিসাবে রেফারেন্স দিলে কিন্তু ঘুড়ায় হাসব।
@কৌস্তুভ,
🙂 । আনন্দবাজারই একমাত্র রেফারেন্স নয় অবশ্য। ব্যাপারটা আরো অনেক জায়গাতেই আছে (সেটা স্বাভাবিকই, আনন্দবাজারের মাথা থেকে এই মৌলিক জিনিস বের হলে অবাকই হতাম)। Luca Mazzucato’এর একটা লেখাতেও দেখলাম –
[img]http://scallywagandvagabond.com/wp-content/uploads/2012/07/godparticle.jpeg[/img]
@কৌস্তুভ, বিজ্ঞানীদের এসব ফাজলামি একটু বন্ধ করা দরকার! খুবি বিরক্তিকর কিন্তু। অপার্থিবের ব্লগে এ নিয়ে একটা মন্তব্য করে এসে তোমার আর অভিজিতের এই আলোচনাটা দেখলাম। প্রকাশকের ইচ্ছায়, বই বিক্রির স্ট্রাটিজি হিসেবে, নিজের ইচ্ছায় বা ফাজলামো করার জন্যও এসব বি এস করা ঠিক না।
কৌস্তুভকে অ-নে-ক টা ধন্যবাদ, এই লেখাটা ঠিক সময়ে লেখার জন্য, আর তাতে আমায় (ওর ভাষায়) ‘সাইট’ করার জন্য…
তবে… আরো একটা সাঙ্ঘাতিক কথায় ভরা লিঙ্ক দিচ্ছি… এটা নিয়ে এখন আমাদের High Energy Physics Group তোলপাড়। লেখকের পরিচয় জানলেই বুঝবেন, এই আদিখ্যেতাটা (মতান্তরে হতাশাও বলতে পারেন) কতটা গভীরে শেকড় গেড়েছে… লেখায় এই জায়গাটা দেখুন:
“ভারতীয় হিসেবে গর্ব বোধ …… প্রতি বিনম্র প্রণাম”
কথা সত্যি। ওই রবিবুড়ো আর বিদিশি ম্যাম টেরিজার নোবেল ধুয়ে কলকাতার কষ্টেসৃষ্টে চলছে আর কি। তাই সুযোগ পেলেই অমর্ত্য সেনকে বারেবারে ডেকে আনা।
হায়, গণশক্তি-র মতো একটি সংবাদপত্র কি কোনোদিন বাংলাদেশে হবে? আরো অনেক অনেক দেশে?
গণশক্তি সিপিএমের প্রোপাগাণ্ডা যন্ত্র, তাকে এত সম্মানও করার কিছু নেই। নেহাত কমিউনিস্টদের পত্রিকা বলে ঈশ্বরকে কলকে দেয় নি।
‘কৌস্তুভ’কে লেখাটির জন্য অভিনন্দন। মন্তব্য করেছেন যারা তারাও চমৎকার লিখেছেন। খুব ভালো লেগেছে পড়ে। মানুষের নির্বুদ্ধিতায় খুব বিষন্ন থাকি। এই মুক্তমনায় এলেই মনে কিছু জোর পাই। পাপিয়া-র লেখাটি উদ্ধৃত করতে ইচ্ছা হলো–
“এসব থেকে একজনের বলা একটা কথা মনে পড়ে গেল-
আব্রাহামিক ধর্মগুলো হল মশার মত, উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে রক্ত খায়, একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারা যায় মশা রক্ত খাচ্ছে, চাইলে দু’একটাকে ধরে মারাও যায়। আর হিন্দু ধর্মটি হল ছাড়পোকার মত, তক্তপোষ থেকে গভীর রাতে লুকিয়ে এসে রক্ত শুষে নেবে, তবুও টের পাওয়া যাবে না, আর টের পেলেও ছাড়পোকা নির্মূলের একটাই উপায়- তক্তপোষখানাই বাদ দিয়ে দেওয়া।
ভারতের এখন তক্তপোষের মত অবস্থা। আর তার মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, মজ্জায় মজ্জায় ছাড়পোকা। নির্মূলের উপায় দুরূহ।”
আমার অবশ্য সন্দেহ ছিল, বাংলাদেশেই গোঁড়ামি বেশি, এখন দেখছি ভারতেও কম নয়। হায়, সারা বিশ্বেই দেখছি গণ্ডারদের রাজত্ব! বাঁচবার কী উপায়?
@আশফাক,
কমই। ভারতের গোড়ামীতে ধারাল দাঁত নেই। ইসলামী গোড়ামীতে ধারাল ক্ষুর আছে। যার জন্য হুমায়ুন আজাদকে জীবন দিতে হয়েছে। ভারতে একজন নাস্তিক ঘোষণা দিয়েও জনসমক্ষে নিরাপদে ঘুরাফিরা করতে পারে। বাংলাদেশে আরিফের কার্টুনের মত তুচ্ছ কারণেও জান বাঁচাতে প্রথম আলোর সম্পাদককে নাকে ক্ষত দিয়ে মোল্লাদের কাছ ক্ষমা চাইতে হয়েছে। ভারতে এর চেয়ে ঢের বেশী অধার্মিকতা করেও কোন পুরোহিতের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে হয় না। বাংলাদেশে যদি ভারতের মত গোড়ামী হত তাহলে খুব খুশীই হতাম, কারণ ভারতের গোড়ামী সহনীয়, ব্যক্তি জীবনে নিরাপত্তাহীনতা আনে না।
ধারালো দাঁত যে একেবারে নেই তা না, তবে বাংলাদেশের তুলনায় গড়ে কম হয়ত। কিছু ঘটনা, যেমন স্টেটসম্যানের সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, মধ্যপ্রদেশের বীফ খাওয়া বিরোধী আইন, এসব নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল।
@কৌস্তুভ, ভারতীয়দের(সব ভারতীয় এরকম তা বলছিনা কিন্তু, জাতফাত তুলে গালি দিতে সাধারণত আমি তেমন পছন্দ করি না, কিন্তু আমার কাজে রাতদিন কয়েক শ’ দক্ষিণ ভারতীয়ের কান্ডকারখানা দেখে এটুকু না বললে আমি হয়তো পটকা মাছের মত ফুলেফেপে মরে যাবো, তাই লিখেই ফেললাম, মাফ করে দিও) এতটা জিহাদি জোশ হয়তো নেই, কিন্তু তার বদলে যে স্যাতস্যতা কুসংষ্কারের বন্যা বইয়ে দেয় ওরা তাতে করে মাঝে মাঝে মনে হয় বলি, বাপ, বাংলাদেশী জিহাদি ভাইদের মত তোকে আর কষ্ট করে আমার রগ কাটতে হবে না, তার চেয়ে বরং তোদের আলুমূলো কাটা ছুরিটাই দে, আমি নিজেই নিজের রগ কাটি। আজ মাটির উপরের কলাটা খাওয়া যাবে তো কাল শুধু মাটির তলার বেগুনী রঙের শেকরটা খেতে হবে, পরশু উপোষ করে চুলেমাথায় চপচপা তেল মেখে পুজো সেরে কপালে সাদা লাল কীসব উদ্ভট আকিবুকি কেটে কাজে আসতে হবে, তার পরদিন যেতে হবে সার্ট খুলে ঝাড়ু হাতে সাতাশ মিলিয়ন ডলারের মন্দিরের ফ্লোর ঝাড়ু দিতে, কই যে যাই…। মাঝে মাঝেই ভাবি এদের ভগবান বেচারার জীবনটা অন্যান্য ঈশ্বরের চেয়ে অনেক বেশী কঠিন, কী যে কষ্ট, প্রতিদিনের এই নতুন নতুন মেন্যুর কথা টুকে রেখে স্বর্গ নরকের হিসেব রাখা তো চাট্টিখানি কথা নয়। আর একবার পুত্রসন্তানটি আমেরিকায় মাটিকে চুম্মা দিতে পেরেছে তো আর যায় কই, সাথে সাথে কোমড় বেঁধে লেগে যা তার জন্য মেয়ের ওজনের সমান সোনার যৌতুক নিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করার জন্য। নাহ এবার থামি, এদের কান্ডকারখানার পুরো লিস্টি দিতে গেলে ব্লগের স্পেস নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে :-)। হিন্দুধর্মের যে ‘নরম বা benign’ রূপটার কথা বলেছ তা আসলেই যে বিজ্ঞানমনষ্কতার পথে অন্তরায় হতে পারে তা এদের চোখে সামনে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
হাহাহা, দক্ষিণী ধার্মিকদের মধ্যে এইসব আচারের পরিমাণ খুবই বেশি। হয়ত এটা কাকতালীয়ও নয় যে ইসরোর অধিকর্তা যাঁর ধর্মপালন নিয়ে এই লেখায় কথা উঠেছে, তিনি একজন দক্ষিণী। তারা বেশ কট্টর ধার্মিক, মাছখেকো বাঙ্গালিদের তারা যথেষ্ট বামুন বলে গণ্যই করে না। একটা পুরোনো বাংলা সিনেমায় এই নিয়ে বেশ ভাল দেখিয়েছিল, এখন মনে পড়ছে না নামটা।
@যাযাবর, আপনার এই কথা টি ঠিক নয় ভারতেই নাস্তিকদের অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় আসলে আস্তিকতার বিষ ভারত বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ,গোটা দুনিয়াটাতেই মুক্তমনার সংখ্যা কম , তাই আমাদের অত্যাচার সহ্য করতেই হয়
হিগস-বোসন খুঁজে পাবার খবরে উদ্বেবেলিত মডারেট ও গোড়া মুসলমানদের সম্মিলিত আক্রমনের দিশেহারা হয়ে কাল রাতে খোমাখাতায় একট স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, সেটাই তুলে দিচ্ছি…
“কোরানে টুক্রাল্লার(ইশ্বর কনিকা বা গড পার্টিকল) কথা যারা এখনো খুঁজে পান নাই তাদের জন্য…
“তোমরা কি দেখো না যে আমি (আমার অংশ) তোমাদিগের মধ্যেও দান করিয়াছি কিন্তু তোমরা তাহা (কখনোই) খুঁজিয়া পাইবে না যতোক্ষন না আমি তাহাকে (দৃশমান হইতে) বলি”!”
জোকার নায়েক ব্যাটা এখনও চুপ আছে, আপনার স্ট্যাটাসটা দেখেনি বোধ হয়! 😉
দুরন্ত! কৌস্তুভ রক্স!!
তা এভাবে ঈশ্বরের ইয়ে নিয়ে টানাটানি করলে হবে? পরকালের কথা চিন্তা করতে হবে না ভায়া?
মিডিয়ার কথা বললে মনে আসে দুই দিন অন্তর অন্তর সেই সব নিউজ এর কথা – কোন এক বালক এর মধ্যে কৃষ্ণের সন্ধান, যেখানে ঈশ্বর প্রকট হয়। তারপর অমুক বাবা তমুক মা কে বসিয়ে জাতীয় টিভির উপরে জাতিকে ভগবানের ইয়ে দেখানো… বলতে শুরু করলে মনে হয় একটা থিসিস হয়ে যাবে। বলা চলে ভারতের মূল ব্যাবসা হল – ধর্ম ব্যাবসা! আর সেই ব্যাবসাই করে খাচ্ছেন নিউজ চ্যানেলগুলি, নইলে তাদের টিআরপি’তে প্রভাব পড়বে।
বলি, এখানে তো হাসপাতাল এর উদ্বোধনেও ডাক্তার বাবাজীরা অলমোস্ট নামাবলী গায়ে দিয়ে হরে কৃষ্ণ হরে রাম বলে হোম-যজ্ঞ করে থাকেন, যাতে হাসপাতালে ওদের বাধা বিঘ্ন না ঘটে সেখানে বাবা ‘রামু’ তো কোন ছাড়! ( অন্যকথা ) হে হে, রামু আর অধুনা হাজ্রে গান্ধীর মেলবন্ধন কিন্তু রাম আর লক্ষণের মতো, তাই না? … আরেকটা খবর শুনেছ পুনম পাণ্ডেও নাকি রাম বাহিনী জয়েন করছেন। যাক সীতার অভাব পূরণ হল বলে কথা! 😛
ধর্ম ব্যবসা কোথায় বড় ব্যবসা নয়? রিপাবলিকানদের ভোট পাওয়ার একমাত্র আশাই তো ওইটা। চৌ.আজবের কুটি কুটি টাকা ফরেন মানি ইনকামের রাস্তাই ত ওটা।
আমরা বি,এস,সি-তে পড়েইবা কি শিখছি । ম্যাডাম এইডস বিষয় পড়ানোটা এড়িয়ে গেলেন । হ্যান্ডনোট দরিয়ে দিলেন । বললেন বাসায় পড়ে নিতে । ডারউইন থিওরী পড়ানই নাই । এইটা নাকি উনার বিশ্বাস হয় নাহ । প্লেটোর ভাববাদে পড়তে গিয়ে প্লেটোর অনেক ভুল ধরেছিলাম কিন্তু ম্যাডামের একটাই কথা তাদের নিয়ে কোন সমালোচনা করা যাবে নাহ । কিন্তু ম্যাডাম জ্যঁ জাঁক রুশো প্রকৃতিবাদ পড়ানোর সময় সমালোচনা ও হাসায় মেতে উঠলেন প্রয়োগবাদ পড়ানোর সময় মূল ব্যাপারগুলো এড়িয়ে গেলেন । যেমন সত্য বলতে কিছু নেই , সত্য মানুষের সৃস্টি । সত্য পরিবর্তনশীল । আমি প্রশ্ন করতেই থামিয়ে দিলেন । কিছু গুনগান করে বললেন পড়ে নিও । ম্যাডাম কেমিস্ট্রি-তে এম,এস ও শিক্ষায় এম,এড করা এবং বি,সি,এস ক্যাডার । উনার কেমিস্ট্রি ক্লাশ দেখলে যারা বুঝেন তাহারা ঘুমিয়ে পড়বেন । একটা যৌগের সমীকরন লিখতে উনার হ্যান্ডনোট বিশবার তাকান । বুঝানো পরের ব্যাপার । আমাদের এপ্লাইড সাইন্সে ৫ সেট পদার্থ ২ সেট রসায়ন প্রশ্ন আসে । কেউই রসায়ন প্রশ্ন ছুঁতে যায় নাহ । পুরো কলেজে হয়ত আমিই রসায়নের প্রতিবছর উওর দেই । ম্যাডামের একটা বাজে অভ্যাস হচ্ছে উনি আমাদের উত্তরপত্র সবসময় উনার হ্যান্ডনোট ও বইয়ের সাথে হুবহু মিলাতে যান । যার ফলে কেউ বেশী নম্বর পান নাহ । ম্যাডাম একদিন ক্লাসে বলেছিলেন উনার জীবনে এক ছাত্রকে সবচেয়ে বেশী নম্বর দিয়েছিলেন । ঐ ছাত্রের উত্তরপত্র দেখে উনি মুহিত হয়ে গিয়েছিলেন । হাতের মার্কস নাকি রাখতেই পারেন নাই । ১০০ তে ৬৫ দিয়েছিলেন । ভাগ্য ভালো যে এই বর্ষে ম্যাডামের কোন বিষয় নেয় নাই । কিন্তু উনার টাইপের আরো দু’জন ম্যাডাম আছেন । কলেজে ম্যাডামরা আমাকে সবসময়ই সতর্ক করেন । আমি নাকি কম লিখি , তাই নম্বর কম পাই । আসলে আমি ইনিয়েবিনেয় লিখে পৃস্ঠা বাড়াতে পারি নাহ । বরাবরই গাণিতিক বিষয়গুলোতে আমার রেজাল্ট ভালো আর অন্যগুলোর অবস্হা খুবই খারাপ । গতমাসে TVET ক্লাশে স্যার এসে প্রশ্ন করলো আমি দাড়ি রাখি নাই কেন । বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিতে গেলে উনি থামিয়ে দিলেন এবং আমাকে নিয়ে কিছুক্ষন হাসিঠাট্টা করলেন ।আমি আরব মরু পরিবেশ ও আমাদের নাতিশীতোষ্য পরিবেশ ব্যাখ্যা দিতে গিয়েছিলাম । উনি কিছু হাদিসও জেড়ে গেলেন । আমি শুধু জ্বী স্যার জ্বী স্যার করে গেলাম । আমাদের শিক্ষকদের নিকটে ৫০% নম্বর থাকে । উনারা প্রায়ই তাহা স্মরন করিয়ে দেয় । তাই অনেকক্ষেত্রে মনে কস্ট নিয়ে জ্বী স্যার , জ্বী ম্যাডাম . . . . . . .
হিগ্স-বোসন কণার মধ্যে মিডিয়াগুলো গডকে নিয়া মাতামাতি করতেছে কেন বুঝলfম না। এরা কি পাবলিককে সুড়সুড়ি দেবার জন্য এসব করতেছে না! ভবিষ্যতে যদি ওয়ার্ম-হোল আবিষ্কার হয়, তখন কি তারা বলবে স্বর্গে যাবার পথ আবিষ্কার হয়ে গেছে, সুতরাং গডকে পিছা মেরে বিজ্ঞানকে ধরি?
আর বিজ্ঞানীদেরও বইয়ের নাম (title of the book of Nobel physicist Leon Lederman’s The God Particle: If the Universe Is the Answer, What Is the Question? (1993)) বা এসব নিয়ে কথা বলার আগে মাথা মোটা ধার্মিকদের কথা চিন্তা করে সাবধানে কথা বলা উচিত।
কৌস্ত্তভকে (F)
আরে ধুর, প্রথমত ওয়ার্ম হোল আবিষ্কার করার ব্যবস্থাও তো করে দিয়েছেন ঈশ্বরই, ঠিক যেমন করে তিনি ফসিল সাজিয়ে রাখেন আমাদের ঈমান পরীক্ষার জন্য। আর ওয়ার্ম হোল হবে আসলে স্বর্গে যাবারই সিঁড়ি, তাঁরই স্বহস্তনির্মিত। :))
প্রথমেই লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। (Y)
ভারতীয় সংবাদপত্রের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এ ব্যাপারে বাংলাদেশী প্রচারপত্রিকাগুলো বেশ নিরপেক্ষ প্রতিবেদনই ছেপেছে( যদিও প্রথম আলো আর কালেরকন্ঠ ছাড়া বাকি কিছু এখনো দেখা হয়নি)।
ভারতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেখেছি নবরাত্রির উপবাস রাখতে, নয়দিন ধরে ফল-জল খেয়ে থাকা, আর খালি পায়ে হাঁটা। নবরাত্রির উপবাসী নিউরোসার্জন ও.টি তে ঢুকছে ছুরি-কাঁচি নিয়ে ব্রেন সার্জারি করতে( নিশ্চয় তার আগে ১০৮ বার বিপত্তারিনী-বিপদনাশিনীর নাম জপে নিয়েছিল)!
এসব থেকে একজনের বলা একটা কথা মনে পড়ে গেল-
আব্রাহামিক ধর্মগুলো হল মশার মত, উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে রক্ত খায়, একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারা যায় মশা রক্ত খাচ্ছে, চাইলে দু’একটাকে ধরে মারাও যায়। আর হিন্দু ধর্মটি হল ছাড়পোকার মত, তক্তপোষ থেকে গভীর রাতে লুকিয়ে এসে রক্ত শুষে নেবে, তবুও টের পাওয়া যাবে না, আর টের পেলেও ছাড়পোকা নির্মূলের একটাই উপায়- তক্তপোষখানাই বাদ দিয়ে দেওয়া।
ভারতের এখন তক্তপোষের মত অবস্থা। আর তার মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, মজ্জায় মজ্জায় ছাড়পোকা। নির্মূলের উপায় দুরূহ।
ভালো উপমা 😛
আমি নিজেও কোচিং-এ বিগ ব্যাং বিষয়ে পড়াতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছি । এছাড়াও বিজ্ঞানের অনেক কিছুতে আলোচনা করতে গিয়ে একরকম সমস্যায় পড়তে হয়েছে । শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় মূল্যবোধ জেগে উঠে । পরে একসময় আমার স্যারের সাথে কথা বলায় উনি সতর্ক করে দেন । তারপর থেকে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতে হয় । যেমন স্টিফেন হকিংসের মতে ইহা . . . . . . . . । এখন শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করলে কিছুটা এড়িয়ে যেতে হয় এবং বলতে হয় ইহা একটা মতবাদ । হকিংস সাহেবই ভালো জানেন । শিক্ষার্থীদের বইগুলোতেও ভাল করে এ সম্মন্ধে লেখা নেই । তাই পুরো সত্য শিক্ষার্থীদের জানানোতে ফাঁকি দেই নাহ । কিন্তু নিজের নিরাপত্তা খাতিরে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতেই হয় । এলাকায় সহপাঠীদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানের অনেক সত্য বলতে গিয়েও অনেক সমস্যায় পড়েছি । এক সহপাঠী আমাকে নাস্তিক উপাধী ধরিয়ে দিয়েছিল । আমাদের সমাজে এই টাইটেল যে কতটা কস্টদায়ক সেইটা আপনারা অনেকেই জানেন । তাই আড্ডা কমিয়ে দিয়েছি । আর দিলেও ছাইপাশ কিছু শুনলেও তা শোধরাতে যাই নাহ । আসলে এখনো দাড়াতে পারি নাই । এখনো নিজেকে প্রাইমেটই মনে করি । আমি বিশ্বাস করি জ্ঞান অর্জন শুধু অর্জনেই থেমে থাকে নাহ । তার পরিস্ফুটন সবসময় ঘটবেই । আর বেশী কিছু লিখছি নাহ । এখন বাসে যাত্রাবাড়ী ট্রাফিক জ্যামে অনেকক্ষন ধরে । পুরো লিখাটাও পড়তে পারি নাই । মোবাইলের ছোট স্ক্রিনে দেখতে কস্ট হচ্ছিল । তেমন গুছিয়ে লিখতে পারি নাই , সেই জন্য দুঃখিত ।
ব্যাপার না, মন খুলে মন্তব্য করেছেন এজন্যই ধন্যবাদ।
পশ্চিমবঙ্গে বা কেরলে নাস্তিক হওয়াটা সমস্যার কিছু না, কমিউনিস্ট মানে বাই ডিফল্ট নাস্তিক এটা লোকে ধরেই নেয়, এবং দীর্ঘকালের কমিউনিস্ট প্রভাব থাকায় অনেকেই তেমন। তবে ভারতের অন্যত্র তেমন না। তাও, ইস্কুলে বিবর্তন বা বিগব্যাং পড়াতে সমস্যা হয় না, কারণ ধর্মের প্রচলিত রূপের সঙ্গে সেটার সংঘাতটা প্রকাশ্য নয়। তবে বাইবেল-ব্যাশারদের ভারতীয় জাতভাইরাও আছেন, যাঁরা বলেন যে ইস্কুলে ওসব পড়িয়ে কী হবে, ব্যাদেই সব আছে।
অনেক আগে এনিম্যাক্স চ্যানেলের(জাপানি এনিমেশন সম্প্রচারকারী একটা চ্যানেল) ভারতীয় ফোরামে বেশ সক্রিয় ছিলাম, সাথে জাপানী এনিমেশন নিয়ে আরেকটা ভারতীয় ফোরামও ছিল। এনিমেশনের চেয়ে অবশ্য বিবিধ বিষয় নিয়েই প্রাণবন্ত আলোচনা হত। ২০-৩০ হাজারের মত সদস্য থাকা ওই ফোরামগুলোতে আলোচনার মান দেখে একটা ধারণা জন্মেছিল যে ভারতের পরবর্তী প্রজন্ম যথেষ্টই মুক্তমনা এবং বেশ শিক্ষিত। চমতকার ইংরেজি বলা এবং প্রচুর পড়াশোনা করা ওই গোষ্ঠী যে আসলে একটি খুবই ক্ষুদ্র মাইনরিটির অংশ তা বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল।
এপিজে আবুল কালাম বলে তাঁর আত্মজীবনিতে উল্লেখ করেছেন যে তিনি নাস্তিক? শাতিল আপুর কাছেই মনে হয় প্রথম শুনেছিলাম।
@পৃথ্বী,
আমার তো মনে নাই আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে কি বলছিলাম, যেটা মনে আছে, “উইংস অফ ফায়ার”-এ তিনি বলছে, তিনি তার শৈশবে একাধিক রিলিজিওনের মানুষের মাঝে বড় হয়ছে এবং উইংস অফ ফায়ারের শুরুর দিকে সে তার শিক্ষদের কথা বলে বোঝাইতে চাইছে যেটা, অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি তার রেসপেক্ট আছে, তার শৈশবের শিক্ষকরা তাকে সায়েন্সে ইনসপায়ার করছে এইরকম। আজাদের বড় হওয়ার পরিবেশটা তাকে একটা উদার মানসিকতা গড়ে দিছে।
হ্যাঁ, তিনি ওরকমই কিছু একটা বলেছিলেন। তবে তিনি যে ধার্মিক মুসলিম (হয়ত আচার পালন তেমন করেন না) সেটা অন্যত্র বলেছেন, রেফারেন্স এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
@পৃথ্বী,
কতটা মাইনরিটি সেটা স্থানভেদে। নিচের কমেন্টেই যেমন বললাম। এই ধরেন শহরে তো আধুনিক শিক্ষিত এবং আধুনিক চিন্তার ছেলেছোকরা বা লোকেদের সংখ্যা বেশি হবেই। তবে একশ কোটির হিসাবে মাইনরিটিই।
@কৌস্তুভ, ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য। এদেশে এখনো তাবিজ/মাদুলি গলায় দেয়..মাজারে মানত করা হয়..বিনিময়ে কিছু পাবার আশায়। এখনো প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকাগুলো রাশিচক্র ছাপায়..পিএইচডি পাওয়া জোতিষীর (ধান্ধাবাজ!) বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় – সেদেশে এ সমস্ত ফন্দিফিকিরের জন্য কিছু করপোরেট তো সারাদিনই ধান্ধাবাজিতে ব্যস্ত। বাণিজ্যকরণের আরেক চ্যালা – রামদেব। নিজের একটা ছোট চোখকে যোগব্যায়াম দিয়ে যে ঠিক করতে পারে না..সে কিনা গলায় ঠ্যাং তুইল্যা ক্যান্সার সারাবে ? ২০০৮ সালে কলকাতায় ”পতাঞ্জলী” নামের দোকানগুলোয় রামদেবের ছবি টাংগিয়ে যা বেচাবিক্রি দেখলাম-তাতে কপালে চোখ উঠবেই। আর ইদানিং (৪-৫ ধরে) বাংলাদেশের পত্রিকায় (এমনকি বদলে যাবার শ্লোগান দেয় যারা..তাদের পত্রিকাসহ) দেখি প্রতিদিনিই ছাপা হয় ”ইসলামের আলোকধারা “ নামের লেখা – যাতে থাকে সুন্দর সুন্দর কথার ফুলঝুড়ি! অবশ্য সব ধর্মই সুন্দর সুন্দর কথার ফুলঝুড়ি পাড়ে – যেন ছেলের হাতে মোয়া ধরিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা। কোথায় যেন পড়েছিলাম..”আমরা চকচকে কথার আড়ালে আসল উদ্দেশ্য যেন হারিয়ে ফেলি!” পরিশেষে,আমাদের যুক্তিবাদী মন আর বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা এসব উপড়ে ফেলবে শীঘ্রই —সেদিন খুব বেশি আর দুরে নয়!!! ধুতির কাছা খুলে পালাবার পথ থাকবে না …. সেদিন তাদের পিছনে সুসময়ের বিজ্ঞাপনদাতা আর টাকা যোগানদার ব্যক্তিকেও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।ধন্যবাদ।
হুম, দিনকাল খুবই খারাপ। ব্যোমকেশের কথা আজকাল আর খাটে না, পত্রিকাতে বিজ্ঞাপনে কেবল ওইসব জাঙ্ক। এখন কাগজে পড়ার মতন কেবল প্রেমালু। 😉
[img]http://i46.tinypic.com/23wa1y9.png[/img]
ফেসবুকে দেখলুম :))
সিপিএমের কাগজ গণশক্তি আবার এই হেডলাইন দিয়েছে, তাতে কিছু ধার্মিক ভায়েরা চটেছেন দেখলাম 😛
[img]https://fbcdn-sphotos-a.akamaihd.net/hphotos-ak-snc6/181390_10151009603409684_4154182_n.jpg[/img]
একদম খাঁটি কথা বলেছেন | প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের এই রকম বালসুলভ আচরণ খুবই হতাশাজনক ও নিন্দনীয় | বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা যে এদের মধ্যে নেই, সেটা বার বার প্রমানিত হয়ে গেছে | কুসংস্কার ও অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে কথা বলেছেন খুব কম সংখ্যক ভারতীয় বিজ্ঞানী – এটা খুবই লজ্জাজনক |
আমেরিকাতে এইসব অপবৈজ্ঞানিক/অবৈজ্ঞানিক ধারণা যারা পোষণ করে তারা প্রধানত মুমিন। তেমনই একজন কেরেস্তান ধর্মপ্রচারকের সঙ্গে কিছু মিষ্টালাপের গল্প একবার লিখেছিলাম। কিন্তু ভারতে অনেক বিজ্ঞানীরাও দেখি জ্যোতিষ ইত্যাদি বিষয়ে বেশ মুমিনের মতই আচরণ করেন। 🙁
লেখা টার জন্যে (F) (F) (F) (F)
আর আমার মত অশিক্ষিতের পক্ষ থেকে সেইসব শিক্ষিত জ্ঞানীদের জন্যে :-s
ধন্যবাদ 🙂
কয়েক বছর আগেও টরন্টোর কোন নিউজ পেপারে এই বিজ্ঞাপণ গুলো দেখা যেত না। কিন্তু কানাডা সরকার স্কিল্ড ইমিগ্রেশনের আন্ডারে যাবতীয় উচ্চশিক্ষিত মানুষ্কে এদেশ নিয়ে আসার পর থেকে এগুলোর দেখা পাওয়া যেতে শুরু করে। গত কয়েক বছ্রে এর প্রকোপ চখে প্রার মত। দুই পাতা জুড়ে হাত দেখা, ভাগ্য গননা, আধ্যাতিকতা ইত্যাদী বিজ্ঞাপনে ভরপুর। এদের বেশির ভাগই ভারতীয়। বাকি অল্প কিছু ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান, আফ্রকান এবং পূর্ব ইউরোপীয়ান। উচ্চ শিক্ষিত মানুষ গুলোর যদি এই অবস্থা হয় তবে অল্প শিক্ষিত-অশিক্ষিত মানুষদের কি হাল তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
আমার এক ভারতীয় কলিগ আছে যে গ্রহ-নক্ষত্রের হিসাব নিকাশ না করে কোন কাজ করে না।
[img]http://i46.tinypic.com/1z35r0x.jpg[/img]
ঠিক কথা, বিজ্ঞানে আর জ্যোতিষে কোনো বিরোধ নেই বলেই এরা মনে করে, বরং আরো এক ধাপ এগিয়ে মনে করে যে জ্যোতিষও একটা খাঁটি বিজ্ঞান :-Y
পাঠ্যপুস্তকে প্রবীর ঘোষের বইয়েরও কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে মনে হয় এই অবস্থায়।
@কৌস্তুভ, জ্যোতিষে মাস্টার্স দেবার কথা ছিল ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্সের … কোন যুগে বাস কর তুমি?
অ্যাঁ!!!
😀 😀 😀 সময় আছে এখনো, লাইনে এসে পড়ুন। 😀 না হয় রৌরবেও স্থান হবে না। 😀
আমার মত গো-বরা-ভোজী পাষণ্ডের জন্য এমনিতেই অর্ডার দিয়ে ইস্পেশাল অত্যাচারওয়ালা নরক বানাতে হবে… :))
`বিগ্যান’ – অদ্ভূত বাংলা বানান শিখলাম!
এইধরনের লোকেদের মনে বিজ্ঞানের যা অবস্থা সেইটা আসলে বিজ্ঞানের ক্যারিকেচার। তাই শব্দটাকেও বেঁকেচুরে বিগ্যান বলা। আমার আবিষ্কার নয় কিন্তু!
@কৌস্তুভ, সুন্দর লিখেছেন মশাই,পড়ে একটা কথাই মনে হল, কে যেন বলেছিল মহাবিশ্বের সীমানা আর ধার্মিকদের আহাম্মকি দুটোই সীমাহীন…কী আর করা…
@সাগর,
Only two things are infinite, the universe and human stupidity, and I’m not sure about the former. __ Albert Einstein
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন কৌস্তুভ!
জি নিউজ: “ইনসান খুঁজে পেল ভগবান”!!!! :))
(Y)
শিরোনামটায় বিগ্যান বানানটা ইনভার্টেড কমার মধ্যে দিয়া দিবেন নাকি? নাইলে আবার ছাগুরা আবার কইতে পারে বিজ্ঞান বানান আপনে জানেন না।
😛
ফের ‘আপনি’ বললে এবার রামদেবের সিডি পার্সেল করে পাঠিয়ে দেব!
(এক মামার বাড়িতে দেখেছিলুম, সে ভয়াবহ জিনিস! যোগব্যায়ামের নামে দুইহাতে ভর দিয়ে ঠ্যাং উপরে করে মাদুর’ময় ঘুরে বেড়ায়… আর তার বক্তিমের কথা তো বাদই দিলাম।)