এইমাত্র পড়ে শেষ করলাম ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী “কেপলার টুটুবি”। আমি যে জাফর ইকবাল স্যারের অনেক লেখা পড়েছি, বা সব বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়েছি সে দাবী করিনা, তবে উনার লেখার সাধারণ প্যাটার্ণ ধরার মত বেশ খানেক বই পড়েছি বটে। আমার কখনও বইয়ের নাম মনে থাকে না, বিখ্যাত লেখকের কোন বিখ্যাত সাহিত্য খন্ড না হলে। জাফর ইকবাল স্যার বিখ্যাত বটে, তবে উনার লেখা একেকটা কল্পকাহিনী অতটা বিখ্যাত না, যতটা বিখ্যাত “জাফর ইকবাল স্যারের লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী।” এই মানুষটার লেখা আমি পড়ি মনের মধ্যে একধরণের শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে… ছোট বেলায় “বাচ্চা ভয়ঙ্কর কাচ্চা ভয়ঙ্কর” পড়ার সময় মনের মধ্যে যেমন একটা উত্তেজনা কাজ করত, ঠিক তেমনি, এখনো যেন শিশুদের মতই তার লেখা কল্পকাহিনী পড়তে গেলে সেই উচ্ছ্বাস মনে জাগে। তিনি আমার মত আমাদের প্রজন্মের তরুণদের শৈশব কৈশোর গড়েছেন একটা ফ্যান্টাসি দিয়ে। সেই ফ্যান্টাসির জগতটা অনেকটা রূপকথার মত, সেখানে কোন অশুভ শক্তি শেষ অব্দি বিজয়ী হতে পারে না। ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা দুরন্ত চঞ্চল, তাদের চাঞ্চল্য দিয়ে সম্ভব করে ফেলছে অসাধ্যকে, মানুষ মানেই মায়া মমতা ভালোবাসার আঁধার। চরম বিপদের মুখে মানবজাতি শেষ অব্দি টিকে যায় তাদের হৃদয়ের ভালোবাসার জন্যেই, রোবটেরা বারবার মানব জাতিকে পদানত করে ফেলার চেষ্টা করে, কিন্তু বুদ্ধিমত্তা, গণিতে রোবট প্রজাতি মানুষের চেয়ে তুখোড় হলেও মানুষ ঠিকই তাদের বুদ্ধিমত্তাকে অতিক্রম করে যায়। জাফর ইকবাল স্যারের গল্পে কোয়ান্টাম কম্পিউটার আর ক্রিস্টালে রেকর্ডকৃত তথ্য থাকে। প্রাচীন পৃথিবী সম্পর্কে ভবিষ্যতের মানুষ গুলো জানতে পারে দৈবাৎ পেয়ে যাওয়া ক্রিস্টাল থেকে। সেখানে সবকিছুর শেষে মানুষের জয় হয়, ভালোবাসার জয় হয়। একটা গল্পের সামগ্রিক চিত্রটা যখন এভাবে দেখা হয়, তখন সেটাকে রূপকথা বলেই মনে হয়। আসলে তো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য শুধু একটাই, আগডুম বাগডুম দৈত্য দানো ভূত প্রেতকে স্থলাভিষিক্ত করে বৈজ্ঞানিকের কল্পনায় গড়া যন্ত্র দানবেরা, পাতাল পুরী, আকাশ পুরীর জায়গায়, ভিনগ্রহ, নক্ষত্র, মহাকাশ যান আর রাজকন্যা রাজপুত্রকে স্থলাভিষিক্ত করে মহাকাশযানের অভিযাত্রী, সাধারণ কোন মানুষ বা তারছেড়া কোন পাগলা বিজ্ঞানী। মন্দ নয়।
এগুলো উচ্চদরের সাহিত্য না হলেও ভালো মানের শিশু-খাদ্য বটে। প্রশ্ন হল ফ্যান্টাসীর জগতে ঘুরতে থাকা শিশুমন যখন জাফর ইকবাল স্যারের বইয়ের জগত থেকে বেরিয়ে অমানবিক জগতের দিকে তাকায়, বুঝতে পারে ক্রমাগত মানুষের মাঝে মানবতা বোধ কমছে, তখন একধাক্কায় মানবতা, মায়া মমতা ভালোবাসার গল্প কি শুধুই গল্প হয়ে যায় না?
বর্তমান কালের মানুষগুলো মানুষের মৃত্যুর খবরে নির্বিকার হয়ে থাকে, মুখ দিয়ে হয়তো, ছোট্ট করে বের হয়, “আহা!” আমাদের সংবাদপত্রগুলো আমাদের কাছে প্রতিদিন যে বাস্তব সংবাদ প্রচার করে, তাতে কি মনে হয় না, প্রাচীনকালের রূপকথার দৈত্যদানব, জাফর ইকবাল স্যারের কল্পকাহিনীর মায়া মমতাহীন রোবট প্রজাতিকে স্থলাভিষিক্ত করে ফেলেছে আমাদেরই মানব সম্প্রদায়। রূপকথা গুলো বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলো ক্রমেই গল্প হয়ে যাচ্ছে, কল্পনার জোরে নয়, মানবতার অবলুপ্তির ফলশ্রুতিতে!
নতুন করে আজ জীবনের অর্থ খুঁজতে বসেছি, কি চাই জীবনে, জ্ঞান, ধন, যশ? কোন পথে গেলে মনে হবে জীবনটা সার্থক? মানব সেবার কথা ভেবেছি এতোটা দিন। এখন ভাবছি, সামগ্রিক অর্থে যে মানব জাতির সেবার কথা ভেবেছি, সেই মানব জাতি আসলে কি চায়?
জীবনের অর্থই যদি হয় অমুক খ্রিষ্টাব্দ থেকে অমুক খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বেঁচে থাকা স্রেফ, তাহলে জীবনের আসলেই কোন আল্টিমেট গোল আছে? জাফর ইকবাল স্যার যেই মানবতা বোধকে উচ্চে তুলে ধরার জন্য গল্প লিখেন, এটাই কি শেখাবো আমার সন্তানকে? সেই সাথে তো তাহলে আমাকে এটাও শেখাতে হবে, এই পৃথিবীতে রোজ চলবে হানাহানি, তার মধ্যেই বেঁচে থাকতে হবে, সয়ে যেতে হবে মানুষের অমানবিক আচরণ। এইভাবে নীতিগতভাবে দ্বিচারী হতে শেখানোই কি বাঁচতে শেখানো? আপাত দৃষ্টিতে সত্য এবং মিথ্যার এমন একটা সংকটে “মানবতা” শব্দটার ভাবার্থ দাঁড়িয়ে রয়েছে, দ্বিচারীতা ছাড়া আর কি শেখাতে পারবো? সেই বা কি শেখাবে তার সন্তানকে? “বাঁচতে শেখা” মানেটা কি?
বিবর্তনীয় প্রয়োজনে একদিন সৃষ্টি হয়েছিল প্রাণী জগতের সহমর্মী সহযোগী আচরণ। আমি যে গবেষণার সাথে জড়িত, সেই গবেষণায় সফল হলে একদিন মানুষ জৈবিক অঙ্গ হারিয়ে কৃত্রিম অঙ্গকেই নিজের দেহের অংশ ভাবতে শুরু করবে, বুঝতে পারবে না, জৈবিক অঙ্গের সাথে কৃত্রিম অঙ্গের পার্থক্য কোথায়। হয়ত এটা রোবটিক্সের জগতেও এনে দেবে বিপ্লব। কি হবে আসলে সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার, কিন্তু আমি বা আমার মত অনেক বাচ্চা গবেষক যে এইভাবে ব্যয় করছে তার জীবনী শক্তি, কি তার উদ্দেশ্য? প্রয়াত বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক, যিনি একাধারে মলিকুলার বায়োলজি এবং নিউরোসায়েন্স নিয়ে কাজ করে গেছেন, শেষ অব্দি তো তিনি একটি নাম ছাড়া কিছু নন। সময়ের হিসেবে তার কর্মময় সময়ের অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছু নেই। আজ যেমন লুইগি গ্যালভানীর দৈহিক অস্তিত্ব আমি অনুভব করিনা, কিছুদিন পরে, ফ্রান্সিস ক্রিকের দৈহিক অস্তিত্ব ছিল, তাও কেউ অনুভব করবে না। তাও তো তারা নামে বেঁচে আছেন, কিভাবে বেঁচে থাকবো আমরা? মানবসেবা এবং মানবতা-বোধও জীবনের লক্ষ্য যদি না হয়ে থাকে, তবে কেন খুঁজে চলেছি জীবন বোধ? রোজ রাতে ঘুমোবার সময় এটুকু ভাবার জন্য আজকের জীবনটা সুন্দর কেটেছে, আজকের দিনটা সার্থক, আজ আমি এই কাজটি করে তৃপ্তি অনুভব করেছি?
এই আমি, মহাজাগতিক ধূলিকণা, আদি এবং অন্তহীন। আমার মস্তিষ্ক আমাকে দিচ্ছে জীবনের একধরণের অনুভূতি, যার আসলে কোন উদ্দেশ্য নেই। বাঁচো, খাও এবং মর। ছোটবেলায় যেমন বাংলা পরীক্ষায় “জীবনের লক্ষ্য” রচনা লিখতে বলা হত, আজ কেউ লিখতে বললে, দু-শব্দে লিখে দিতাম, “ইট এন্ড ডাই”।
আলবেয়ার কামু বলেছিলেন, “There is but one truly philosophical problem, and that is suicide. Whether or not the world has three dimensions or the mind nine or twelve categories comes afterward.” এই বিষয়টা নিয়ে ভবিষ্যতে একটা পোস্ট লেখার ইচ্ছা আছে। তবে লেখার আগে ব্যাপারটা নিয়ে আরেকটু পড়াশুনা করে নিতে চাই ।
আমার কাছে জীবনের কোনো অর্থ নেই। প্রতিদিন আগের দিনের পুনরাবৃত্তি করি। আপনার এই হতাশার সাথে আমার হতাশার মিল খুঁজে পাচ্ছি। কিন্তু জীবনটা আসলেই অর্থহীন। একদমই অর্থহীন মনে হয় আমার কাছে। আবার ভাবি, এখন যা করছি, তা না করে অন্য কী ই বা করতে পারতাম? হয়ত এখন যেমন আছি অন্য রকম কিছু হত, কিন্তু আল্টিমেট কোন পরিবর্তন কি আসত। সেইত বেঁচে থাকা। অর্থহীন কার্যক্রম আর অর্থহীন বেচেঁ থাকা। মাঝে মাঝে মনে হয়, এত অর্থ খুঁজেই বা কী হবে? কিছুই না।
সম্প্রতি ওনার বেশ কয়েকটা গল্পের ইবুক পেয়ে পড়ে ফেললাম। ভালই লেগেছে। তবে একটা বিশেষ ধাঁচের নিরাশাবাদী কল্পবিজ্ঞান বারবার ঘুরে আসতে দেখে শেষটায় খানিক বোরিং লাগত।
লেখাটা ভালো লাগলো। জাফর ইকবালের কিছু কল্পকথা আমারও পড়া আছে। তবে খুব বেশী নয়। “কেপলার টুটুবি” আমার পড়া হয় নাই। পিডিএফ সংগ্রহে আছে। পড়ার ইচ্ছে আছে।
আপনার লেখার এই অংশটা মনে দাগ কাটল –
সেই জায়গা থেকেই মনে হয় আমরা আবার প্রাগৈতিহাসিক স্তরে পুনশ্চ অভিজান চালানোর পর্যায়ে চলে যাচ্ছি, হয়তো… তবুও আঁকড়ে ধরে থাকি ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।’
@তাপস শর্মা,
মানুষের উপর বিশ্বাস হারাতে কি মন চাই? তাতো না ভাই… কেবল রোজকার দুনিয়া দেখে বিশ্বাসটা মাঝে মাঝে টলে ওঠে। 🙂
জীবনের কোনো লক্ষ্য নেই, তবে হাত গুটিয়ে শুয়ে থাকব না। জীবনের অনুভুতির সাথে উপভোগ করায় মজা আছে 😉
@শান্ত কৈরী, সেটাই। 🙂
ফ্যান্টাসীর জগত থেকে অমানবিক জগত পেরিয়ে দার্শনিক জিজ্ঞাসায় ,”জীবনের লক্ষ্য?”কি দারুন গোলক ধাঁধাঁ!!
@মাসুদ, 🙂
‘জীবনের গন্তব্য’ একটা কঠিন দার্শনিক জিজ্ঞাসা, যাতে তর্ক আছে কিন্ত মিমাংসা নেই। আমার মতে এই বিষয়টাকে সহজ সাধারন ভাবে নেয়াই ভাল। লেখাটা ভাল লেগেছে, ধন্যবাদ।
@শাখা নির্ভানা, ধন্যবাদ। 🙂
আমি বুঝতে পারছি আপনার হতাশা। আমারও মাঝেমাঝে মনে হয় কেউ যদি একটা গুলি করে মেরে ফেলে তাহলে বড্ড উপকার হয়, কেননা আত্নহত্যা তো করা যাবে না আবার 😀 !
আপনাকে আগে নিশ্চিত হতে হবে জীবনের উদ্দেশ্য বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন? জীবনচক্র কোন ব্যক্তিক ব্যাপার না, আমাদের জীবনচক্রের ফাঙ্কশন বা উদ্দেশ্য আমরা নির্ধারণ করার কেউ নই, বাস্তবতা সেটা আরও সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর আগেই নির্ধারণ করে বসে আছে যেটা কিনা বংশগতি পরবর্তী প্রজন্মে ঔরসজাত করা। আপনি তো নিশ্চয়ই এই উদ্দেশ্যের কথা বলছেন না।
অনেক দার্শনিককেই আপনি হয়তো দেখে থাকবেন ‘জীবনের উদ্দেশ্য কি’ এই প্রশ্ন উত্থাপন করে বিষম দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতে। অতপর সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর নানা ধরণের আলোচনা বিশ্লেষণ করে দার্শনিক উপসংহারে উপনীত হয় যে- ‘জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই’, কিন্তু নিজের উপসংহারে নিজেই সন্তুষ্ট হয়না দার্শনিক, আবারও আলোচনা বিশ্লেষণে বসে পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের জন্য এবং এইবারও উপনীত হয় একই উপসংহারে যে- জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই। অনেকে আবার আরেক কাঠি এগিয়ে গিয়ে জীবনের যে কোন উদ্দেশ্য নেই এই সত্যালোকে সকলকে আলোকিত করার মহান ব্রতকে বানিয়ে ফেলেন নিজেদের রেস্পেক্টিভ জীবনের উদ্দেশ্য।
জীবনের কাছ থেকে আপনি কি প্রত্যাশা করেন সেটা আপনি খুঁজতে পারেন বটে- তবে, জীবনের পরম অর্থ খুঁজতে যাওয়াটা বোধহয় আরও জটিল কনফিউশনে পড়ে যাওয়ারই নামান্তর। জীবনের প্রতি আরেকটু সরল ও পজিটিভিস্ট দৃষ্টিভঙ্গী ধারণ করার পক্ষপাতী আমি।
আপাতত নিজেকে উদ্দীপ্ত রাখার লক্ষ্যে ম্যারি পপিন্সের একটা গান শুনে ফেলুন 🙂
@আল্লাচালাইনা,
এ ক ম ত। (Y)
@আল্লাচালাইনা,
আমি এই দৃষ্টিভংগীটা পছন্দ করি। এই জীবনের ছোট ছোট আনন্দ আছে, এটাই আসলে একজন সাধারণ মানুষের জীবন… স্বতঃস্ফুর্ত প্রাণপূর্ণ, যে কটা মূহুর্ত বেচে আছি সেই মূহুর্তটুকু সুন্দর করে তোলা।
সেইসাথে জীবনের মহত্ত্বর কোন উদ্দেশ্য নেই, এটা মেনে নিলে যদি ক্ষতি না হয়, তবে সেটা মেনে নেয়ায় ভালো আসলে… তাহলে গির্জার পাদ্রী থেকে নেলসন মেন্ডেলা প্রমূখ হবার মহৎ ইচ্ছার হাত থেকে বাঁচা যায় ভালো করেই।
@আল্লাচালাইনা, আমি বুঝতে পারছি আপনার হতাশা। আমারও মাঝেমাঝে মনে হয় কেউ যদি একটা গুলি করে মেরে ফেলে তাহলে বড্ড উপকার হয়, কেননা আত্নহত্যা তো করা যাবে না আবার :lotpot: :lotpot: :lotpot: :guru: :guru: :guru: :guru:
তারচেয়েও গুরুত্বপুর্ণভাবে, সেবকটি বা আপনি একসময় মরে যাবেন হয়তো, তবে সেবাটি বা ওয়াশিং মেশিনটি কিন্তু টিকে থাকবে যতোদিন মানুষ টিকে আছে ঠিক ততোদিনই। আপনার চিরকাল বেঁচে থাকারও একটা বন্দোবস্থ হল।
@আল্লাচালাইনা, টেকনোলজীতে চিরকাল বলে কোন কথা নাই। আজকে একটা টেকনোলজীর ডিজাইন হচ্ছে, কদিন পরে সেটাই বাতিল হয়ে যাচ্ছে… টেকনোলজী জামা-কাপড়ের ফ্যাশনের মত। আর কথাটা হচ্ছে… চিরকাল বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে কিছু করে কেউ কোনদিন চিরকাল বেঁচে থাকে কিনা, আমার আসলেই সন্দেহ আছে। প্রত্যেকটা মানুষের কাজ তার স্পিরিটের সাথে সম্পর্কিত। স্পিরিটটা যদি হয় চিরকাল বেঁচে থাকা, তাহলে ব্যাপারটা হবে, নন্দলালের যেকোন মূল্যে চিরকাল বেঁচে থাকার মত, নইলে দেশ দশের জন্য কাজ করবে কে?
আমি একটা সময় স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন, বাঁধনে কাজ করেছি, সেখানে আমি নিজে যেমন স্পিরিটেড ছিলাম, আমার চারপাশের মানুষগুলোও আমার মতই স্পিরিটেড ছিল, ওইকাজ থেকে প্রাপ্তি ছিল একটা, আনন্দ! কারোর জন্য কিছু করতে পারার আনন্দ!
যখন পড়ি, তখন পরতে ভালোলাগে বলেই পড়ি, এটাই আমার আনন্দ… এই আনন্দের জন্য প্রত্যেকটা দিন বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু প্রত্যেকটা দিন বেঁচে থাকার চেয়ে বাড়তি কোন টার্গেট আমি এই মূহুর্তে দেখতে পাচ্ছিনা।
হেডোনিস্ট মানুষেরাও উতসব, উল্লাসের মধ্যেও –আর ভালো লাগছে না। আর কি করা যায়…
আগে ভাবতাম, পড়ব, কাজ করব… সম্ভব হলে একজন মানুষের জন্য কিছু না করে মানব জাতির জন্য কিছু করব… কিন্তু ঠিক এখন মনে হচ্ছে, আমার জীবনের আসলে কোন উদ্দেশ্য নেই। যে “মানবতা”কে একটা মহান ব্রত ভাবতাম, তার সংগাটা একটু গোলমেলে। নিখাদ অল্ট্রুইস্টিক বিহেভিয়ার বলে কিছু নেই… সেক্ষেত্রে মানবজাতির জন্য কিছু করা বলেও কিছু নেই। কারণ কনসেপ্টটাই Reciprocal Altruism.
তাই বাধ্য হয়ে দার্শনিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছি… জীবনের উদ্দেশ্য কি?
আমার সাথে যাদের সামাজিক পরিচয় হয়েছে, এবং তাদের মধ্যে যাদের কর্মস্পৃহা আছে, তাদের কর্মস্পৃহার মূল স্পিরিট হয়, যশ, নাহয় প্রতিপত্তি। – এর কারন এই দিয়ে মৃত্যুর পরও আরো কিছুদিন বেঁচে থাকা যায়। আরেক রকম মানুষ দেখেছি, যারা এদুটোর কোনটাই চায় না, কোনভাবে সুখে শান্তিতে আনন্দে জীবন পার করে দিতে পারলেই খুশি। কারোরই জীবনের কোন পরম অর্থ দেখতে পাচ্ছি না। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
আমিও একসময় আপনার প্রশ্নটি নিয়ে ভেবেছি। যেহেতু বেহেশতী মেওয়া বা হুরী লাভের কোন সম্ভাবনা নেই 🙁 , তাহলে কি আমার জীবনের উদ্দেশ্য; কিভাবে আমার জীবনকে অর্থপুর্ন করতে পারি? আমার মতে আসলে জীবনকে অর্থপুর্ন করার ফিক্সড কোন ফর্মূলা নেই। এক্ষেত্রে আমি আল্লাচালাইনার সাথে একমত—‘জীবনের উদ্দেশ্য আপনি যা সেট করবেন তাই’। ঘটনাক্রমে আমিও আপনার মতো বিজ্ঞান গবেষনার (বেসিক সায়েন্স) সাথে জড়িত। আমার জানতে ভালো লাগে; আমি আমার গবেষনার সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই। যে প্রশ্নটি আমার সামনে, ঠিক এই মুহুর্তে এটি হয়তো অন্য কারও কাছে তেমন গুরুত্বপুর্ন নয়, আমি হয়তো আমার জীবনকালে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এর প্রয়োগও দেখবো না; কিন্তু তারপরও এটি আমার প্রশ্ন; এর উত্তর পেলেই জীবন কিছুটা অর্থপুর্ন বলে মনে হবে। আমার জীবনের উদ্দেশ্য আপাতত স্বার্থপরের মতো আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা আর এর মাঝে মাঝে পছন্দের কিছু ছোট ছোট জৈবিক চাহিদার (আল্লাচালাইনার মন্তব্য দেখুন) নিবৃতি । কখনও কখনও পছন্দের কাজেও একঘেয়েমীও আসে তবে আমার ক্ষেত্রে তা সাময়িক। আশেপাশের বেশীরভাগ কর্মজীবি মানুষের মত শুধুমাত্র নিজের পছন্দের কাজগুলো করার সৌভাগ্য আমার নেই; পছন্দের কাজগুলো করার সুযোগটি ধরে রাখার জন্য কিছু অপছন্দের কাজও করতে হয় :)) । হয়তো এই অপছন্দের কাজগুলো একঘেয়েমী দূর করতে সাহায্য করে।
@মনজুর মুরশেদ, আসলে আমি আমার কাজকে ভালোই বাসি। জেনেশুনে পছন্দ করেই আমি কাজ নিয়েছি। পছন্দ এর কাজ করতে হলে কিছুটা কষ্ট তো করতেই হয়। এটা অনেক বড় একটা তৃপ্তি।
জীবনের যে আসলে কোন পরমার্থ নেই, এইটা অনুভব করার পর থেকে একধরণের ভালো লাগা কাজ করছে। একটা সময় ছিল আমি কর্মময় জীবনের প্রতি এতোটাই মোহাচ্ছন্ন ছিলাম, যারা তেমন বিশেষ কিছু না করেই কেবল দিন যাপন করে যাচ্ছে, তাদের দেখলে মনে হত, তারা তাদের জীবনের সুযোগটা নষ্ট করছে। সেই সব জীবনের প্রতি এতোখানি শ্রদ্ধা আমার ছিল না। যেই শ্রদ্ধাটা এখন খানিকটা ফিরে এসেছে। যাই হোক না কেন, সে তার জীবনটা পারই করছে,অনেকটা আমার মত করেই। তার জীবনের ফিলোসফি টা আমার মত নয়, আমি কাজ করতে ভালোবাসি বলে কাজ করছি, তাতে হয় সমাজের কিছু পরিবর্তন আসলে আসতে পারে, নাও আসতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন কাজের মাঝে আমি আমার দিনটা পার করে একধরণে জীবনের সুখ পাচ্ছি। আর যে মানুষটা করছে না, কোনমতে জীবনটা পার করে দিচ্ছে, সে সুখ পাবার জন্য কষ্ট না করে সেভাবে চলছে তাতেই সে জীবনের সুখ অনুভব করছে। সে তার ফিলোসফি অনুসরণ করেই চলছে।
পৃথিবীরে সবাই কর্মী হবে না, সবাই ভাববে না, কাজের মাঝে নিহিত তার জীবনের উদ্দেশ্য, আসল কথা হল ভালো লাগা। সেই ভালো লাগা যেভাবেই পাওয়া যাক। কেউ যদি মনে করে কোন কাজ না করে কেবল টেলিভিশন দেখেই তার ভালো লাগবে, তাহলে তাই করাই ভালো। হ্যা আমি নিজে আলোকিত সমাজের কথা চিন্তা করি, চিন্তাশীল যুবকের কথা চিন্তা কর্মী, কর্মময় জীবন দেখলে উজ্জীবিত হই, কারণ আমাদের সমাজ একটা স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে সেট করেছে, আমরা এভাবেই ভাবতে শিখেছি। আমি অন্তত এভাবে ভেবেছি। ভাবি একটা সমৃদ্ধ দেশের কথা, ফেসবুকে দুনিয়া উদ্দার না করে সত্যি কাজের মাধ্যমে দেশটাকে এগিয়ে নেবে সেইসব তরুণদের কথা। কেন ভাবি? কারণ যেদিন সত্যি এটা হবে, সেদিন আমরা অন্তত গর্ব করে বলতে পারবো, আমরাও উন্নত। সেদিন হয়ত আজকের মত দেশের যেখানে সেখানে অনাহার ক্লিশট শিশু দেখ কষ্ট পাবো না। যেদিন হানাহানি থাকবে না সেইদিন আমরা আরেকটু বেশী নিশ্চিন্তে দিন যাপন করব। আমরা আমাদের চাওয়ার দিকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই আমাদের সমাজটাকে।
এই যে মানবতা, এটাও আসলে আমাদের চাওয়াই। আমরা কিন্তু প্রাণী জগতের অন্য কোন প্রাণী নিয়ে এতটা ভাবি না। কেবল নিজেদের কথাই ভাবি।
একজন মানুষ হিসেবে চাই মানুষ আরো বেশী দিন নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি ধরে রেখে এই পৃথিবীতে টিকে থাক। এই চাওয়াটাই হয়ত ধাবিত করত আমাকে এতোদিন। এখন যে ব্যাপারটা হল, চাওয়াটা কেন, সেটা বুঝলাম, বুঝলাম এটা সকলের সম্মিলিত চাওয়া না, একজন একজন করে অধিকাংশ মানুষের চাওয়া। আমি কেবল আমার জীবনের সময়টুকুতে একটু মানসিক শান্তির জন্য এই লক্ষ্যের পিছনে ছুটব। আল্লাচালাইনার কথা মত, এইটা আমার সেট করা লক্ষ্য।
জীবনের উদ্দেশ্যের প্রশ্নটি ক্যাটেগরিকালি একটি দার্শনিক প্রশ্ন, অর্থাৎ এই প্রশ্ন উত্থাপন করে কোন উত্তরে আপনি পৌছুতে যাচ্ছেন না কোনভাবেই। আপনার জীবনের উদ্দেশ্য আপনি যা সেট করবেন তাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার জন্যই বাঁচি, প্রচন্ড প্রচন্ড হেডোনিস্টিক, ব্যাস, হেডোনিজমই আমার জীবনের উদ্দেশ্য। মদ খেতে ভাল্লাগে, ভাল্লাগে সেক্স, পোর্নোগ্রাফি এবং ক্লাস এ ব্যতীত অন্য কোন ক্লাসের মাদকদ্রব্য। আর নিজ মনের আধ্যাতিক পরিপুর্ণতার জন্য বাস্তবতাকে বোঝার চেষ্টা করি মাঝে মাঝে, এইটা আমাকে কখনই ক্লান্ত করে না। আপনি কিছু সায়েন্স ফিকশন লিখতে পারেন কিন্তু, আপনার সায়েন্স ফিকশন পড়ে দেখতে আমি খুবই আগ্রহী।
মানবসেবা করতে চাইলে আপনি একটা ওয়াশিং মেশিন উদ্ভাবন করতে পারেন। কাপড় কাচার দায়িত্ব মানুষ ঐতিহাসিকভাবেই চাপিয়ে এসেছে স্ত্রী হোক কি গৃহপরিচারিকা হোক, কোন না কোন একটি নারীর কাঁধে। অনেকক্ষেত্রে স্ত্রীটি আন্ডারট্রেইনড, গৃহপরিচারিকাটি শিশু। একটানা অনেক্ষণ বসে কাপড় কাচা খুবই খুবই বেদনাদায়ক এবং সময়নষ্টকারী। একটি ওয়াশিং মেশিন নিঃসন্দেহে অনেক মানুষের যন্ত্রনা লাঘব করবে এবং জীবনকে করবে সহজ যেটা কিনা আমার দৃষ্টিতে সত্যিকারেরই একটি মানবসেবা।। 🙂
সৈকতে পড়ে পড়ে মরতে থাকা কোটি কোটি থেকে একটি স্টারফিশকে বাঁচালে, অন্তত একটি তো বাঁচলো। এত ভাবনার কি আছে? নতুন প্রজন্মের দিকে আশায় বুক বেঁধে তাকিয়ে আমরা (C)
@কাজী রহমান,
এই কাজটা আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে। হাত বাড়ালেই করে ফেলা যায়… 🙂