এই লেখাটা কয়েকদিন আগে আমার ফেসবুকে দিয়েছিলাম। খুবই ব্যক্তিগত কিছু স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙের বেদনার কথা ছিল এতে। একজনের তেলমাখানো মাখন মাখন কথায় গলে গিয়ে সেখান থেকে তুলে এনে মুক্তমনায় পোস্ট করলাম। কলেবর আগের চেয়ে অবশ্য কিঞ্চিৎ বড় হয়েছে। কাজটা ঠিক করলাম কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ এবং দ্বিধা রয়ে গিয়েছে আমার মনে যদিও। এতখানি ব্যক্তিগত বিষয় এবং ব্যক্তিগত স্বপ্নের ক্যারিকেচার নিয়ে ব্লগ লেখা যায় কি না আমি জানি না। আশা করছি মুক্তমনার সদস্যরা আমার এই অনিশ্চিত কর্মকাণ্ডকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
কুঁজোর যেমন চিৎ হয়ে শোয়ার স্বপ্ন থাকে, বামনের থাকে চাঁদ ধরার স্বপ্ন, কিংবা রাখাল বালকের থাকে রাজকন্যার হাত ছোঁয়ার স্বপ্ন, সেরকমই আমার বুকের গহীনেও একটা স্বপ্ন ছিলো। স্বপ্ন ছিলো আমার ছেলে একদিন তার বাবার সবচেয়ে প্রিয় দল, বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলবে। লাল,সবুজের রঙ গায়ে মেখে সারা দুনিয়া কাঁপাবে।
কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করতো বড় হলে ছেলেকে কী বানাবো? উত্তর আমার ঠোঁটের ডগায় থাকতো। হাসিমুখে বলে দিতাম, ক্রিকেটার। কেউ বিশ্বাস করতো, কেউ করতো না। কেউ বা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতো আমার এরকম অদ্ভুত এবং আজব ধরণের চিন্তা দেখে। আমি তখন আসলে ওরকম করেই চিন্তা করতাম। না ডাক্তার, না এঞ্জিনিয়ার, না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কোনোটাই নয়, কোনোটাই বানাতে চাই নি তাকে আমি। আমার স্বপ্ন ছিল হাজারো মানুষের স্বপ্নকে বুকে নিয়ে ছেলে আমার বাইশ গজের ধূসর মরুতে উইলো হাতে হারিকেনের মত ঝড় তুলবে। বৃত্তাকার সবুজ গালিচায় প্রজাপতির মত নেচে নেচে বেড়াবে।
সেই স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে মাত্র হাঁটা শিখেছে এমন বয়সে কিনে দিয়েছিলাম নীল রঙের প্লাস্টিকের একটা ব্যাট। সাথে সবুজ রঙের টেনিস বল। খেলোয়াড় মাত্র দুজন। তাও আবার দুই প্রজন্মের। আমি আর আমার ছেলে। আমি বোলার, সে ব্যাটসম্যান। শুরুটা হয়েছিল ঘরের মধ্যে। ঘর বলতে টিএসসির উপরে একটা এক কক্ষের ঘরে বসবাস। ওখানেই শুরু তার হাতে খড়ি। আমি হাঁটুমুড়ে বসে একপ্রান্ত থেকে বল ছুড়ে দিতাম, সে আরেক প্রান্ত থেকে ব্যাটিং করতো। একটা কাঠের চেয়ার কাজ করতো উইকেট হিসাবে। কয়েকদিনের মধ্যেই যখন ব্যাটের আঘাতে বল আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে দেয়ালে লাগানো দেয়াল ঘড়ি, টাঙানো ছবিগুলোকে আঘাত করা শুরু করলো, তখন আন্না ঘরের মধ্যে আমাদের খেলার উপরে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিলো। ঘর থেকে তখন আমাদের আশ্রয় হলো করিডোরে। কিছুদিন পরে গলি থেকে রাজপথ। টিএসসির দোতলায় একটা বড় ব্যালকনি ছিল। সেখানে শুরু হলো খেলা। ওখানে প্রায়শই ছাত্রদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের রিহার্সেল চলতো। তখন আমরা চলে যেতাম প্রশাসন ভবনের সামনের বকুলতলার ছায়াবীথিময় সবুজ চত্বরে কিংবা শহীদ মিনারের বেদিতে। এভাবেই চলতো আমাদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।
আরেকটু বড় হতে প্লাস্টিকের ব্যাটের পরিবর্তে হাতে তুলে দিয়েছি কাঠের ব্যাট। টিএসসির এক কক্ষের বাসা ছেড়ে উঠে এসেছি শিক্ষকদের জন্য করা আবাসিক এলাকায়। বড় এপার্টমেন্ট। বড় বারান্দা। ওখানেই বুকের সবটুকু ভালোবাসা আর আদর-যত্ন দিয়ে তিলতিল করে শিখিয়েছিলাম আমার জানা ব্যাটিং এর সব ব্যাকরণ আর কলাকৌশল। কীভাবে সামাল দিতে হয় দ্রুতগতির বল, কীভাবে মোকাবেলা করতে হয় নানান ধরণের স্পিন বল, তার প্রশিক্ষণ চলতো লম্বা বারান্দায়। দীর্ঘ সময় ধরে। কতবার বল চলে গেছে বারান্দা পেরিয়ে নিচে। তিনতলার সিঁড়ি ভেঙে হাসি মুখে রাস্তা থেকে বল তুলে এনেছি ছেলের সাফল্যের গর্বে গর্বিত পিতা আমি।
ফুল লেন্থ বল পেলে ওইটুকু বাচ্চা ছেলে নিমেষে বেরিয়ে এসে সজোরে বোলারস ব্যাকড্রাইভ করতো। শর্টপিচ বল পেলে পিছনের পায়ে ভর রেখে কাট করতো। একগাল হাসি মুখে নিয়ে ওই পোজে দাঁড়িয়ে থাকতো আমার হাততালি পাবার আশায়। মাঝে মাঝে আমার লেগ স্পিনের বিপরীতে সিরিয়াস ভঙিতে হাঁটু মুড়ে বসে সুইপ করতো স্কোয়ার লেগ দিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকদের নীয়ে একটা ক্রিকেট টিম গড়ে তুলেছিলাম। আমি ছিলাম সেই দলের অধিনায়ক। প্রতি শুক্রবারে ছাত্রদের সঙ্গে বিশ ওভারের ম্যাচ খেলতাম আমরা। আজ এই হল, কাল ওই হলের বিরুদ্ধে। কোনোদিন বা কোনো ফ্যাকাল্টির কোনো ক্লাস আমাদের সাথে ম্যাচ খেলতো। এই সমস্ত খেলাগুলোতেই অর্ক আমাদের সাথে তার ছোট্ট ব্যাট নিয়ে সরবে উপস্থিত থাকতো।
সময়, পরিবেশ আর অন্যভূবনে বসবাস মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। আমার সেই ছেলে এখন আর ক্রিকেট খেলে না। ভুলে গেছে সব ক্রিকেট নৈপুণ্য। শুধু নৈপুণ্যই নয়, এই খেলাটাই এখন তার কাছে অন্য পৃথিবীর মানুষের খেলা। তার খেলা নয়। যে দেশের ক্রিকেট দলের জন্য তিলতিল করে প্রস্তুত করছিলাম তাকে একদিন গভীর স্বপ্ন নিয়ে, সেই দেশ এখন তার কাছে শুধু পিতা-মাতার দেশ মাত্র। নিজের কিছু নয়।
হায়রে প্রবাস জীবন! উত্তরপুরুষ আর পূর্বপুরুষের মাঝে আলোকবর্ষসম অজেয় সমুদ্র তৈরি করে দিতে এর কোনো জুড়ি নেই। এতে অবশ্য উত্তরপুরুষের কোনো দোষ নেই। উত্তরপুরুষের কী এমন ঠেকা পড়েছে পূর্বপুরুষের স্বপ্নের সাধ মেটানোর। সব দোষ আমাদের, এই পূর্বপুরুষদের। ওই মাটি থেকে চারাগাছ থাকা অবস্থায় নিষ্ঠুরভাবে শিকড়সুদ্ধ উপড়ে আনা হয়েছে। এখন সেই আদিভূমিতে শিকড়ের আশা করাটাইতো আসলে ঘোরতর অন্যায় একটা কাজ। অবাস্তব চিন্তার বেশি কিছু নয়।
তারপরেও এই অবাস্তব চিন্তাটা আমাকে ছেড়ে যায় না। পিছনে লেগে থাকে ছায়ার মতন। ঘিরে থাকে সারাক্ষণ, সারাবেলা।
বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের মধ্য দিয়ে কি নিজেদের অপূর্ণ ইচ্ছাই পূরণ করে নিতে চান? খুব ভালো লাগলো লেখাটি – অনেক কষ্টও।
আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি আর্মী অফিসার হবো,জীপে করে ঘুরে বেড়াব,পরনে থাকবে ইউনিফর্ম,কাধে থাকবে ব্যাজ। জানি না এখনও বাবা সেই স্বপ্নের কথা মনে করে গুমরে মরেন কিনা।
লেখাটা খুবই ভালো লাগলো। (W)
প্রবাস জীবনের এক চিরন্তন দ্বন্দ্ব! প্রবাসীদের ফার্স্ট জেনারেশন কিছুতেই ভুলতে পারে না ফেলে আসা দেশ, মাটি আর শেকড়ের টান! একটা অতৃপ্তি থেকে তারা এক টুকরো স্বদেশ তৈরি করতে চায় ঐ বিদেশ-মাটিতে দাড়িয়েই! কিন্তু সেকেন্ড জেনারেশন ঐ বিসদৃশ বিষয়টি অনেক সময়ই হজম করতে পারে না, বদহজমি রোগে মাঝে মাঝে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ পর্যন্ত রুদ্ধ হয়! কিন্তু থার্ড জেনারেশনকে সে সমস্যা আর ফেইস করতে হয় না! ফার্স্ট আর সেকেন্ড জেনারেশনের দ্বন্দ্ব-মুখর জীবনের মাঝে তৈরি ভিত্তির উপর সে শক্তভাবেই দাড়িয়ে থাকতে পারে, আপাদমস্তক মিশে যায় জীবনের স্বাভাবিক স্রোতে সাবলীলভাবে, কারণ নতুন দেশটা তখন যে তারও!
লেখাটা ফেইবুকে আগেই পড়েছিলাম। জীবনান্দের কবিতার চরণ আবারো উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে, ফরিদ ভাই!
কিছু স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। জীবনের বেশির ভাগ স্বপ্নই পূরণ হয়না। সন্তানকে নিয়ে তার বাবা স্বপ্ন দেখে এক রকম, মা স্বপ্ন দেখে অরেক রকম, সে নিজে দেখে অন্য রকম। এটা দেশে কিংবা প্রবাসে সব জায়গাতেই আছে। মনে হয় আমাদের দেশে একটু বেশি। তবে আমার মনে হয় তারা যেটা করতে চায় বা পড়তে চায় সেটা যদি ভাল হয়; বাবা-মা তদেরকে উৎসাহিত করলে তারা ভাল করতে পারে।
@তামান্না ঝুমু,
একদম একমত ঝুমু। সমস্যা হচ্ছেযে এই কথাটা প্রায় সব বাবা-মাই বোঝেন। কিন্তু কাজের সময় তারা এটা মানেন না।
আমারো আপনের ছেলের দশা। এক কালে ভয়াবহ রকমের ক্রিকেট পাগলা ছিলাম, এখনো ২০/২৫ বছর আগের বহু স্কোর কার্ড মনে হয় মুখস্ত আছে। সে আমলে একটা খেলা লাইভ দেখতে যে কত কষ্ট পাগলামি করছি তা আর কে মনে রাখে। সময়ের ফেরে এখন আর ক্রিকেটের কোন খবরই রাখি না, নেশা পুরোই কেটে গেছে। নিজের দেশ এখন কাকে কাকে হারায়, এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বের হয়…
@আদিল মাহমুদ,
আপনিতো এখন নবীর ভেক ধরছেন। এইসব কথাতো কইবেনই। আপনের ধর্মেতো মনে হয় খেলাধূলা সব হারাম। তাই না?
@ফরিদ আহমেদ,
ভেক ধরব কেন রে ভাই? আমার আগেও আরো বহু ভন্ড নবী রসূল বহু কিছুর আবির্ভাব হয়েছে।
আপনার অনুমান সঠিক, ধমাধম একমাত্র প্রেম প্রেম খেলা ছাড়া আর বাকি সব খেলাধূলাই হারাম ঘোষনা করেছে।
আপনার ধমাধম ধর্মে দীক্ষা গ্রহনের হার প্রসংশনীয়।
ফরিদ ভাই,
অর্কের জন্য সমবেদনা যে তার বাপ এত অবুঝ :)। আর দেশে থাকেলেই যে অর্ক আপ্নের মনের আশা পূরণের জন্য নিজের শখাল্লাদ সব বাদ দিত এইটাই বা আপ্নেরে কে কইলো? আমি তো আমার বাপ মায়ের কোন আশাই পূরণ করি নাই (বলেন আলহামদুলিল্লাহ), আপনেও কী করসিলেন?
@বন্যা আহমেদ,
আমার বাপের স্বপ্ন আর আমার স্বপ্ন কি এক? আমার বাপে আমারে ক্রিকেটার বানাইতে চাইলেতো আমি বর্তেই যাইতাম। এই খেলার জন্য কত পিটুনিই না হজম করছি। এই রকম বাধা না দিলে আমিই জাতীয় দলে খেলতাম, ছেলেরে নিয়া স্বপ্ন দেখা লাগতো না।
পোলা আমার এত্তো বড় একখান সুযোগরে হাতছাড়া করলো। 🙁
ক’দিন আগেই এমন একটি বিষয়ে আমার অনুজ বন্ধু আরিফের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। লিঙ্কটিও বন্ধুটি পাঠিয়েছে। ফরিদ প্রবাসজীবনের মনোযাতনাগুলোকে আরেকবার প্রবলভাবে মনে করিয়ে দিলেন, সন্দেহাতীতভাবে। যে মনোযাতনার সঙ্গে লড়াই করতে হয় আমাদের প্রতিনিয়ত। ইচ্ছেতে বা অনিচ্ছায়। তবে মন্তব্য করতে ইচ্ছে হলো ফরিদের (মানে আমাদের অনেকের) স্বপ্নের প্রকৃতি দেখে।
পিতামাতা হিসেবে আমাদের অনেকেই মনে করি আমাদের ঐশী অধিকার আছে যে আমার সন্তান আমার স্বপ্ন (বা ব্যথর্তা) পূরণ করে আমায় সর্ম্পূণ করবে। ভাবনাটি ভালবাসা উৎসারিত সন্দেহ নেই, তবে সম্ভবত অযৌক্তিক। আমার সন্তান আমি নয়। আমার সন্তান আমার সম্প্রসারণ নয়। খলিল জিবরানের কবিতাকে ভেঙ্গেচুরে অনুভূতির প্রকাশ। কিন্তু এই দৈব অধিকার ও দায়িত্বর বিষয়টি আমাদের অনেককেই বিভ্রান্ত করে। দাবি থেকেই – নিশ্চয়। কিন্তু দাবিটি করবার আগে আরেকবার ভাববো কী? আমার সন্তানটি কিন্তু নিজ ইচ্ছেতে এই ভূমে (স্ব বা পর – যেই দেশই হোক) আসেনি। এসেছে আমাদের কারণে। তাই দায়ভার একান্তই আমাদের। ওদের স্বপ্ন পূরণ করতে তৈরি করা- সহায়তা করা সামর্থের সর্বোচ্চ; আমার স্বপ্ন পূরণ কিন্তু নয়।মিলে গেলে পুলকিত হবার কারণ আছে, পথ ভিন্ন হলে দুঃখিত কেন হবো যদি আমাদের সন্তান সুখী হয়। এখানে স্বপ্ন শব্দটি পেশার সীমিত সংজ্ঞায় দেখেছি, আদর্শার্থে নয়। দ্বিতীয়টিতে আমিও অন্ধ।
@জাহিদ হাসান চৌধুরী,
ধন্যবাদ জাহিদ সাহেব এখানে এসে আপনার চমৎকার ভাবনাগুলোকে আমাদের সাথা ভাগাভাগি করার জন্য। বাবা হিসাবে আমি অনেক স্বপ্নই দেখেছি ছেলেকে নিয়ে, এখনো দেখি। কিন্তু আপনার মত আমিও মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমার ছেলে যে আমার স্বপ্নই দেখবে এমন কোনো কথাই নেই। সে তো স্বতন্ত্র একজন মানুষ। তাই না?
ভালো থাকুন, মুক্তমনায় নিয়মিত হোন। (F)
আপনার লেখার বিশেষত্বই হইল কথাগুলো কলিজায় গিয়ে লাগে… (F)
@লীনা রহমান,
ধন্যবাদ লীনা। (C)
লেখাটা পড়ার পর আপনার ছেলে কষ্ট পাবেনা বাবার স্বপ্নপূরণ করেনি ভেবে? সবারইতো অধিকার আছে নিজের পছন্দের কাজটা করার।
লেখায় প্লাস।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমাদের দোষে ও বাংলা পড়া ভুলে গেছে রামগড়ুড়ের ছানা। 🙁
প্রথমেই তেলমাখানো মাখন মাখন কথায় যে ফরিদের মন গলালো তাকে ধন্যবাদ। যাক, তেলমাখানো মাখন মাখন কথায় ফরিদ আহমেদের মনও গলে দেখে ভাল লাগছে। আর গলেছে বলে এ লেখাটি পেলাম।
লেখার বর্ণনা ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপটে শুরু হলেও বিষয়টি শুধু ব্যক্তির নয়। অনেক প্রবাসীরাই সুর মেলাবেন। আর এ শুধু প্রবাসীদের সমস্যা নয়,পূর্ব পুরুষ আর উত্তর পুরুষের চিন্তা চেতনার দ্বন্ধ্ব যা স্বদেশে প্রবাসে সবখানেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তবে প্রবাসে একটু বেশি।
অন্যদিকে,ছেলে মেয়ে বড় হয়ে কি হবে এ স্বপ্ন কিন্তু ছেলে মেয়ে ও মা বাবার উপর নির্ভর করছে না। নির্ভর করতে হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় নীতি,সমাজ, শিক্ষা কাঠামো এমন অনেক কিছুর উপর।
ছেলেটি মানুষ হোক— এ প্রত্যাশা রইল।
@গীতা দাস,
ঠিক আছে, ধন্যবাদ পৌঁছে দিলাম তাঁকে। 🙂
কী যে বলেন দিদি। তেল পেলে দেবতারাই গলে যায়, আর আমিতো সাধারণ একজন আদম। :))
দুই প্রজন্মের চিন্তার দ্বন্দ্বটা চিরন্তন। দেশ বলেন, বিদেশ বলেন, অতীত বলেন, বর্তমান বলেন, সব জায়গাতে, সব সময়ে আলাদা হতে বাধ্য।
ছবিতে গাড়ীর মডেল দেখে মনে হচ্ছে আপনি উত্তর আমেরিকার কোন দেশে থাকেন । যদি কানাডায় থাকেন তাহলে ছেলেকে আইস হকি খেলা শেখান আর যদি আমেরিকায় থাকেন তাহলে বেইস বল। দুঃখ করে লাভ নেই। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারবেন।
@পলাশ,
দুঃখ কী আর সাধে করি রে ভাই। এই সব আউটডোর গেম বাদ দিয়ে, এখন ভিডিও গেমই তার সবচেয়ে প্রিয় খেলা।
আমার মনে হয় প্রবাস জীবনের এটাই সবচেয়ে বড় স্যাক্রিফাইস, উত্তরপ্রজন্ম আর পূর্বপ্রজন্মের শেকড় আলাদা হয়ে যায়।
@পৃথ্বী,
হ্যাঁ, তবে এই সাক্রিফাইস শুধু পূর্বপ্রজন্মই করে না, উত্তরপ্রজন্মও করে। তাদেরকেও কোনো না কোনোভাবে পুর্বপ্রজন্মের সাথে সমন্বয় করতে হয়।
ব্যাপারটাকে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই।আর আমার মনে হয় না এখন শিকড় বা এইরকম কোন কিছু খুব বড়ো কোন ব্যাপার।ওর শিকড় তৈরী হয়ে গেছে পাশ্চাত্যে। অন্যদিকে আমরা যারা এখানে আছি তাদের এই শিকড়টির দরকার পড়বে খুব বেশী।অতএব, তথাস্তু!
@মাহমুদ ইমরান,
আপনার ভাবনার সাথে আমার ভাবনার চমৎকার মিল রয়েছে। জানি ওদের শিকড় এখানেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে, তবুও একটু কষ্ট থেকেই যায় মনে। ছটফটে নাতিটার সাথে বাংলায় গল্প করা যাবে না, ফুটফুটে নাতনিটার সাথে বাংলায় খুনসুটি করে প্রেম করা হবে না, এই আফসোসটাই সবচেয়ে বড় আফসোস এখন। 🙁
আর নিপুন হাতে হৃদয়চেরা লেখা লিখে মন ভার করে দিতে ফরিদ আহমেদ’এর ও জুড়ি নেই।
অর্কের জীবন খুব সুন্দর হোক। সব স্বপ্ন ছাপিয়ে অর্ক একজন হৃদয়বান ভালো মানুষ হোক। আর সে প্রক্রিয়াটির চালিকাশক্তি আন্না এবং ফরিদ, দু জনের জন্যই রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।
@কাজী রহমান,
অর্কর লেখার হাতও নাকি চমৎকার। বাবার মতনই হইব নিশ্চই।
ফরিদ ভাই,
দেখেন পাম টাম দিয়া একটা লেখা দিতে পারেন কিনা অর্কর। চরম হইত কিন্তু। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
আমরা জীবন সংগ্রামে এতো লিপ্ত ছিলাম যে, অর্ক কখন যে বাংলা পড়া ভুলে গেছে খেয়ালই করি নি। অথচ দেশ থেকে যখন এসেছে তখন খুব ভালোভাবেই বাংলা পড়তে পারতো। আমার ছোটভাইরা দেশ থেকে ওর জন্য অনেক বাংলা কার্টুনও পাঠাতো। সেগুলো নিয়মিতই পড়তো সে। তারপরে কোনফাঁকে কে জানে। এনিওয়ে, ইংরেজি আর হিন্দি এই দুটো খুব আগ্রাসি ভাষা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। এই দুই ভাষার পাল্লায় পড়লে বাচ্চাদের বাংলা ভুলে যেতে বেশি সময় লাগে না।
ওর লেখালেখি এখন সবই ইংরেজিতে। দয়া করে আমাদের সাথে যে নিয়মিত বাংলায় কথা বলে, এতেই কৃতার্থ আমরা। 🙁
@কাজী রহমান,
পাম দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারও জুড়ি মেলা ভার। শুধুমাত্র এর জন্যই হয়তো বুলবুলি ছোটাবো না আপনার পিছনে। 🙂
নবীর দোয়া কাজে লাগলে হয়। এখন পর্যন্ত যা লক্ষণ তাতে আমার মত নিষ্ঠুর এবং হৃদয়হীন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দেখছি। 🙁