৬/১৭/১২
-বিপ্লব পাল
কয়েকদিন আগে বোনের সাথে কথা হচ্ছিল ব্যাঙ্গালোরের স্কুল নিয়ে। সেখানে এখন ব্যাঙের ছাতার মতন ইন্টারন্যাশানাল স্কুল। কিন্ত সব স্কুলের স্টান্ডার্ড তথৈবচ। স্কুলের ব্যবসায়ী মানে সব পকেটমারের দল। ব্যাঙ্গালোরে এখনো ভাল স্কুল বলতে হ্যাল বা মিলিটারীর হাতে থাকা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলো। বাকী নামকরা প্রাইভেট স্কুলগুলোতে বার্ষিক ২-৫ লাখ টাকা টিঊশন ফি দিয়েও কোন ভাল শিক্ষক পাওয়া যায় না। যাওয়ার কথাও না। কারন প্রাইভেট স্কুলগুলিতে শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন সরকারী স্কুলের ২৫%।
বাকি শহরগুলিতেও এক অবস্থা। সমস্ত সরকারি স্কুলগুলিকে ধ্বংশ করা হচ্ছে। ব্যাঙের ছাতার মতন গজাচ্ছে বেসরকারী স্কুল।
প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবস্থা আরো বাজে। সেখানেও শুনেছি ইউ জি সি স্কেলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধ্যাপকদের হাতে অনেক কমটাকা ধরানো হয় অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই। ল্যাব নেই অধিকাংশ কলেজে। ফল এই যে সব পঙ্গু ইঞ্জিনিয়ার বেড়োচ্ছে, তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং এর জ্ঞান শুন্যের কোঠায়। এগুলো অনুমান না। আমি আমাদের কোলকাতা অফিসের জন্যে এই সব প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলি থেকেই ছেলে নিতে বাধ্য হই। কারন সরকারি কলেজের ভাল ছাত্ররা আমাদের মতন অনামী কোম্পানীতে আসবে না। ফলে এদের নিয়েই কাজ চালাতে হয়। কাজ চলে না। এদের দিয়ে আদৌ কি কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ করানো সম্ভব? সেটা আমার মনে হচ্ছে না। চার বছর ধরে কোন পড়াশোনা এই সব কলেজগুলোতে হয় বলে মনে হয় না। এগুলো শুধু ডিগ্রি দেওয়ার আখড়া। এমন বাজে অবস্থা যে ইলেক্ট্রনিক্সে বিটেক করা ছেলে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড বা পি সিবির নাম শোনে নি। এদের ডিগ্রী থাকা না থাকা সমান।
বেসরকারি শিক্ষা পৃথিবীর কোথাও সফল হয় নি। আমেরিকাতেও না। এখানেও ভাল স্কুলিং সম্পূর্ন ভাবেই সরকারি। চীনেও সরকারি শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই শক্তিশালী মানব সম্পদ তৈরী করেছে। ব্যবসার জন্যে আমাকে চীনাদের সাথে কাজ ও করতে হয়, প্রতিদ্বন্দিতাও করতে হয়। নতুন প্রজন্মের চীনা ছেলে মেয়েরা আমাদের ছেলে মেয়েদের থেকে অনেক বেশী শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এর মূল কারন ওদের শক্তশালী সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা। ইনফোসিস, টিসিএস করে খাচ্ছে শ্রেফ এই জন্যে যে চীনারা এখনো ইংরেজি রপ্ত করতে পারে নি। যেদিন ওরা সেটাও পারবে, ভারতে এই যে অর্ধশিক্ষিতের দল টিসিএস আর ইনফোসিসের গোয়াল ভর্তি করছে-সেসব মায়া হয়ে যাবে।
ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার বেসরকারীকরনের রমরমায় আমি আতঙ্কিত। এদেরকে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে চিনের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করে খেতে হবে। না পারলে, হারিয়ে যাবে। শিক্ষায় বেসরকারি করন এবং সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় টিউশনির রমরমা, ভারতীয় ছাত্রদের শিঁড়দাঁড়া ভেঙে দিচ্ছে। ভারতের যেসব ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদয়ের আমি প্রতিদিন দেখছি, তাদের অঙ্ক, ভাষা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞানে আমি রীতিমত আতঙ্কিত যে এখনি কিছু না করলে, দেশ হিসবে ভারত অনেক পিছিয়ে যাবে।
বেসরকারি শিক্ষা-বিশেষত মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে পৃথিবীতে কোথাও সফল হয় নি। এগুলো জ্ঞাত তথ্য। সুতরাং চোখ কান বন্ধ করে শিক্ষা বাজেট আরো বাড়ানো হোক। বন্ধ হোক ডিফেন্সের পেছনে ফালতু খরচ। চীনারা যদি শিক্ষার বাজিমাত করে বিশ্বের বাজার দখল করে, কি হবে নিধিরাম সর্দার সেজে কুড়ি বছরের পুরানো প্রযুক্তির কামান নিয়ে অরুনাচলে বসে থেকে? স্কুল লেভেলে এবং আন্ডারগ্রাজুয়েশনে সম্পূর্ন বন্ধ হোক বেসরকারি স্কুল কলেজ গুলি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চশিক্ষাতে যেখানে মার্কেটের সাথে যোগ আছে সেখানে বেসরকারিকরন চলতে পারে-কারন এসব ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি নিজের প্রয়োজন মেটাতে নিজেরাই উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে। সরকারি কলেজগুলিকে যেভাবে টাকার অভাব দেখিয়ে পঙ্গু করা হচ্ছে, তাও বন্ধ করা দরকার। এগুলো জাতির লাইফ লাইন। এইভাবে ব্যবসায়ীদের হাতে আগামী প্রজন্মকে ধ্বংশ হতে দেওয়া যায় না।
শিক্ষার বেসরকারীকরনের মূল কারন সব দেশেই, সব রাজ্যেই এক। রাজস্ব ঘাটতি। দেখা যাচ্ছে সব দেশে একই ট্রেন্ড। ডিফেন্সের ফালতু খরচে হাত দেওয়া যাবে না-তাই শিক্ষক ছাঁটাই কর। স্কুল তৈরী করা বন্ধ কর। এই ব্যাপারে আমেরিকা-ভারত-বাংলাদেশ সব সমান। ঘাটতি বাজেট থাকলে লোক্যাল ট্যাক্স বসিয়ে স্কুল চালানোর পয়সা জোটানো হোক। যেটা আমেরিকাতে অনেক কাউন্টি করে। ২-৩% অতিরিক্ত লোকাল শিক্ষা ট্যাক্স বসালে, তাতে সবার লাভ। কারন ভাল স্কুলের জন্যে বাড়ির দাম ও বাড়ে। এর জন্যে শিক্ষার মধ্যে বাণিজ্য আনা অনুচিত। শিক্ষায় বেসরকারীকরন কোন বিকল্প হতে পারে না।
চীনাদের বিষয়ে যা বলেছেন তা সঠিক। কারন চীন ও তাওয়ানীজদের সাথে কাজ করা হচ্ছে গত তিন বৎসর যাবৎ।
বিপ্লব দা এর আর্টিকেল আমার সব সময়ই মুক্তমনা তে সবথেকে ভালো লাগে।আর তার আর্টিকেল গুলো পড়ার চেষ্টাও করি আমি প্রায়ই। তবে আজকের আর্টিকেলটা নিয়ে আমি কিছু ক্ষেত্রে তাঁর সাথে একমত আবার কিছু ক্ষেত্রে না। একমত এইদিক থেকে যে ব্যাঙ্গালুরু তে এখন আর সব প্রতিষ্ঠান মানসম্মত শিক্ষা দেয় না। কিছুদিন আগে আমার আব্বার সাথে এই নিয়ে কথা হল। তার অফিসেই একজন ব্যাঙ্গালুরু থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার আছেন তার সহকর্মী আর টেকনিশিয়ান হিসেবে, তবে তার দক্ষতা ওয়ার্ডপ্রেস শ্রেণীর। এটা আমাকে বেশ অবাক করেছিল তো তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে জানলাম যে লন্ডনে যেমন এক জাতের কলেজ আছে ভিসা কলেজ ঠিক সেভাবেই এখানেও ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে একের পর এক ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট। এদের মধ্যে ৮০% এরই তেমন কোন মান নেই। হ্যাঁ এখনো NIIT অনেক ভালো একটা প্রতিষ্ঠান এখানে । আর সরকার এর একার প্রচেষ্টার সাথে সাথে মানসম্মত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সমুহকেও এগিয়ে আসতে হবে এই ক্ষেত্রে শিক্ষা শুধুই সরকারি না থাক কিন্তু তার উদ্দেশ্য থাকুক অলাভজনক।
তবে একটা ক্ষেত্র একটু আলাদা মনে হয়েছে আমার আর সেটা হচ্ছে
আচ্ছা এখানে কি বেসরকারি হবে নাকি বাণিজ্যিক? বেসরকারি শিক্ষা অনেক দেশেই বেশ উন্নত স্থানে আছে এমনকি আমার জানামতে পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানপীঠ গোয়াটিংগেন ছিল বেসরকারি। তো এখানে অলাভজনক শিক্ষা এর ক্ষেত্র বিবেচনা না করে শুধু শুধু বেসরকারি করন এর দিকে চলে গেলে কি সঠিক পন্থা হবে বা হতে পারে? শিক্ষা এর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার এর বিরুদ্ধে অনেক কথা থাকলেও বেসরকারি করনের ক্ষেত্রে এটার তেমন কোন কুফল আছে বলে দেখা তো যায় না । তো এখানে শিক্ষার বানিজ্যিকরন নামটা দিলে বোধহয় বেশী সঠিক হত তবে ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়কে সামনে নিয়ে আসার জন্য 🙂 (Y) (Y) :-s
বিপ্লব পালের লেখাখানি পড়লাম এবং বেশ আনন্দ পেলাম। তথ্যানুসন্ধানের স্বল্প প্রয়াস নিয়ে কত ভারী কথা বলে যাওয়া যায়। তথ্যের সূত্র তার বোনের সঙ্গে আলোচনা, কর্মসূত্রে কয়েকজন কর্মচারীর সাথে পরিচয়। তাই দিয়ে গোটা ভারতবর্ষের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা, ভবিষ্যৎ, চিনের সাথে প্রতিযোগিতা ইত্যাদি কত মূল্যবান উপসংহারে পৌঁছে গেছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক মন্তব্যটি হলো- “ইনফোসিস, টিসিএস করে খাচ্ছে শ্রেফ এই জন্যে যে চীনারা এখনো ইংরেজি রপ্ত করতে পারে নি। যেদিন ওরা সেটাও পারবে, ভারতে এই যে অর্ধশিক্ষিতের দল টিসিএস আর ইনফোসিসের গোয়াল ভর্তি করছে-সেসব মায়া হয়ে যাবে।” মুক্তমনা-র মতো ওয়েবসাইটে তৃতীয় শ্রেণীর সাংবাদিকের পৃষ্ঠাপূরণের জন্য চটজলদি লেখার মতো এই রকম অযৌক্তিক লেখা যদি প্রকাশ করা হয়, তবে এই ওয়েবসাইট নিয়ে এতো বাগাড়ম্বর না করাই ভালো। সমাজবিজ্ঞানের কোন গবেষণাগার নেই, সেইকারণে বিপ্লব পালের মনে হয়েছে তার মনে যা এসেছে সেটাই বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত। কষ্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের কোন অধ্যাপকের সাথে দেখা করে মেথডলজির একটা পাঠ নিলে সম্ভবতঃ ভালো করবেন। একটু যাচাই করলে পাঠকেরা বুঝতে পারবেন যে শুধুমাত্র ইংরাজি জানে বলে ইনফোসিস আজকে নিউই্য়র্ক ষ্টক এক্সচেঞ্জে কেনাবেচার মতো জায়গায় চলে গেছে, এ ধরনের মন্তব্যের মধ্যে সারবত্তা কতটুকু। সম্পূর্ণ লেখাটি এ্তটাই ট্যাশ যে এ সম্পর্কে মন্তব্য না করলেও চলত। কিন্তু শিক্ষার বেসরকারীকরণের সত্যি বিরোধিতা করা প্রয়োজন। তবে পাল্বাবু যে কারণে ষিক্ষার বেসরকারীকরণের বিরোধিতার কথা বলছেন সে কারণে নয়। পালবাবুর বক্তব্য শুনলে মনে হয়, বেসরকারী স্কুলে ভালো পড়াশুনো হচ্ছে না বলে তার আপত্তি। যদি পড়াশুনো হতো, তিনি কম পয়সায় তার কোলকাতা অফিসের জন্য অত্যন্ত কম পয়সায় ভালো ইঞ্জিনিয়ার পেতেন – যেমন গার্মেন্টস-এ পাওয়া যায় দক্ষ কারিগর, তাহলে তার বেসরকারী শিক্ষায় আপত্তি নেই। যুক্তি বলছে তা হলেও বেসরকারীকরণ মানা যাবে না। কেন না এর দ্বারা যাদের পয়সা নেই তাদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে। বেসরকারীকরণের ঠেলায় সরকারী স্কুলগুলো প্রায় উঠে যাবে, গরীব মানুষের ছেলে মেয়েরা যাবে কোথায়।কেন বেসরকারীকরণের বিরোধিতা, কেনই বা বেসরকারী পুঁজি আজ শিক্ষা কাতে আসতে চায় সেসব দীর্ঘ আলোচনা এখন এখানে সম্ভব নয়। ভারতবর্ষে (প্রায় ১৫টি) আই-আই-টি, (গোটা ৪০) এন-আই-টি এব্ং প্রতি রাজ্যে (গড়ে প্রায় ১০/১৫ টি করে) সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আছে, যেগুলোর মান খুবই ভালো। বিপ্লববাবুর জানা আছে কিনা জানি না, এইগুলোর অনেকগুলোতেই তৃতীয়বর্ষে ক্যাম্পাসেই বহুজাতিক সংস্থাগুলো কে আগে সুযোগ পাবে ক্যাম্পাসিং-এ তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। তবু, এমন অনেক বেসরকারী কলেজ আছে যেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলে এগুলোর অনেকগুলোতে ছাত্ররা ভর্তি না হয়ে সেই বেসরকারী কলেজে ভর্তি হতে চাইবে। জানা না থাকলেও তার তো বোন আছে মনে হচ্ছে, জেনে নেবেন। তবে এই ধরণের তথ্য-উপাত্ত ছাড়া মনগড়া কতগুলো ধারনা থেকে লেখাকে যুক্তিবাদীদের কাগজে ভবিষ্যতে দেবেন না, সেই আশা করি। আই-আই-টি, এন-আই-টি বা সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সঙ্খ্যা অনুমানভিত্তিক বলে বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া হয়েছে।)
@দৃশ্য বাঙলা,
বেনামে গালাগাল যখন করছেন তখন বলার কিছু নেই-কিন্ত এটা জেনে রাখা ভাল, আমি লেখাটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপলদ্ধি থেকে লিখছি। আপনি যে এম্পিরিসিস্ট সমাজ বিজ্ঞানের কথা বলছেন, সেটাই ঠিক আর উপলদ্ধি ভুল এমন হলে-সমাজবিজ্ঞানে ক্রিটিক্যাল রিয়ালিজম বলে একটা সাবজেক্ট আছে-সেটা উঠে যাবে। রিয়ালিজম এবং এম্পিরিসিজম দর্শনের এই দুই ধারা কেন এল, এটা জানলে আপনি বুঝতে পারতেন-তথ্য এবং উপলদ্ধির পারস্পারিক সম্পর্ক।
তবুও আমি তথ্যের বাইরে কিছুই বলিনি-শুধু তথ্যগুলি দিই নি।দিচ্ছি- তাহলেই পরিস্কার হবে।
[১] চীনের সাথে ভারতের শিক্ষার তুলনাঃ
Chinese higher education institutions are three times ahead of their Indian counterparts in research performance, a new comparative study has shown, exposing the deep chasm between the centres of higher learning in two Asian giants.
চীন উচ্চশিক্ষায় ভারতের থেকে তিনগুন এগিয়ে! এর পর ?
সোর্স
১|
http://www.deccanherald.com/content/236970/indian-universities-trail-chinese-research.html
২।
http://articles.timesofindia.indiatimes.com/2011-01-21/india/28369036_1_graduate-management-admission-council-quantitative-section-math
অনেকের কাছেই এটা জানতে তথ্যের দরকার হতে পারে। আমার কাছে লাগে নি। কারন আমি ভারতীয় এবং চৈনিক নতুন প্রজন্মের ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতিদিন ডিল করছি। একজন পেশাদার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে, কাদের কি অবস্থা সেটা বুঝতে আমার সমাজবিজ্ঞানের সার্টিফিকেট লাগবে না। ওটা আপনাদের মতন লোকেদের জন্যে তুলে রাখলাম। গুগল করলেই দুটো দেশে শিক্ষার অবস্থা নিয়ে অনেক তথ্যবহুল লেখা পাবেন।
[২] ইনফি, টিসিএসের মাঝারি মেধায় ভর্তি ছেলে মেয়েদের অবস্থা কি হবে, চীন আই টি তে এসে গেলে-এটা নিয়ে আমি কেন, উইপোর কর্নাধারই বেশ কবার বক্তব্য রেখেছেন এবং ভারতের শিক্ষাকে উন্নত করার জন্যে এরা টাকা খরচ করতেও রাজী আছেন। ইনফির প্রাত্তন প্রেসিডেন্ট নায়ারনমূর্তি প্রাইভেট কলেজ ত দূরের কথা জানিয়ছেন ২০% আই আই টিয়ান বাদে বাকীদের সবার মধ্যেই শিক্ষার ঘাটতি আছে। এটা উনি আমাদের প্যান আই আই টি মিটে বলেছিলেন-এবং আমি নিজেই রেকর্ড করেছি উনার ভিডিও-উনার এই বক্তব্য নিয়ে ভারতে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। ইনফি যিনি তৈরী করেছেন, তার বেদনাটার জন্যেও কি আপনার সমাজবিজ্ঞানীদের “নিয়োগ” করা চোতা দেখাতে হবে?
httpভ://www.youtube.com/watch?v=xOBzBK-vkF8
নায়ারান মূর্তির ভিডিওটা-এটা আমারই তোলাঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=xOBzBK-vkF8
@বিপ্লব পাল,
আপনার বক্তব্য আংশিক ঠিক আবার আংশিক ঠিক নয়। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখুন সমস্ত সরকারি ইউনিভেরসিটির টিচাররাই বেসরকারি ইউনিভেরসিটিতে বেশীর ভাগ সময় কাটান(ক্লাস নেন)
সরকার বিশেষ করে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিতে পারছে না বিধায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঢালাও ভাবে খারাপ এ কথার সাথে আমি বা অনেকেই সহমত হবেন বলে মনে হয়না। কেননা বেশীর ভাগ শিক্ষকেরা তো সেই শিক্ষকই যারা নিজ (সরকারি) প্রতিষ্ঠান কে ফাঁকি দিয়ে
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সময় দেন বেশী। আমি অবশ্য এ ক্ষেত্রে ইউনিভারসিটি গুলোর কথা বলছি।
আর নটরডেম কলেজ ও ভিখারুন্নিসা স্কুলের ধারে পাশেও এখন পর্যন্ত অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যেতে পারছে না। তার মূল কারণ, হচ্ছে
রাজনীতি-
ছাত্ররা রাজনীতিতে এতোটাই জড়িয়ে পড়ছে যে সময় মত পাঠ সমাপ্ত করতে পারছে না। মূল রাজনৈ্তিক
নেতারা ছাত্রদের এই ভাবে ব্যবহার করছেন।
কিন্তু, সে ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই সুযোগ নেই।
তার মানে আমি এটাও বলছিনা, যে এমন ঢালাও ভাবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভালো। আবার এই কথাও ঠিক অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাইতে মান সম্মত।
তবে সরকারের অবশ্যই এ দিকে নজর দেয়া উচিত। কিন্তু তারা দেবেন কেনো। তারা নিজেরাই তো পরোক্ষ ভাবে জড়িত এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে।আশা করি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লববাবুর জবাব পড়ে খুশি হলাম। জানলাম তিনি ভারতীয়। আর বুঝলাম তিনি critical realist, অতএব তার উপলদ্ধিজাত নানা জ্ঞান থেকে ভবিষ্যতে আমরা বঞ্চিত হবো না। আর সেইসব জ্ঞান মিলিয়ে নেওয়ার দায় যে জ্ঞান দেন এবং যিনি বিশ্বাস করেন, কারোর নেই – – এই কারণে এই পথে জ্ঞানান্বেষণের রাস্তা কিঞ্চিত পিচ্ছিল, হড়হড়িয়ে immanentist হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। শুনেছি ভারতবর্ষে সাধু-সন্তদের দেশ, ভারতবর্ষ আরো এক ক্যাথলিক বিপ্লববাবার জন্য তৈরী হোক, আমরা বরং তার উত্তরটা একটু খতিয়ে দেখি।
(১) প্রবন্ধের বিষয় ছিল বেসরকারীকরণ। বেসরকারী স্কুল ভালো করল, না খারাপ করল সেই বিচারে বেসরকারীকরণের সমর্থন বা বিরোধীতার প্রশ্নটি বিবেচিত হতে পারে না। তার লেখায় (বা বলা ভালো তার critical realist উপলদ্ধিতে) বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খারাপ করছে বলে বেসরকারীকরণ খারাপ – এইটি ছিল মূল সুর। এই যুক্তির অন্যতম দূর্বলতা হলো যে বেসরকারীকরণের প্রবক্তারা (যেমন critical realist বিপ্লববাবুর দেশে বিবেক দেবরাজের মতো অর্থনীতিবিদেরা) বলবেন যে বেসরকারী ব্যবস্থা বাজারের প্রতিযোগিতার দ্বারা পরিচালিত। অতএব, যদি ভূষিমাল থাকে, বাজারই তাকে সরিয়ে দেবে। বাইরের কোন হস্তক্ষেপ দরকার নেই, বিপ্লববাবুরও চিন্তার কোন কারণ নেই। অন্যদিকে বেসরকারীকরণের বিরোধিতা অন্যতম যুক্তি হলো শিক্ষা কখনো পণ্য নয়, অতএব এই ক্ষেত্রে মুনাফা করতে দেওয়া যায় না। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও তাই। বিপ্লববাবু এই প্রশ্নে তার উত্তরেও নীরব রয়েছেন। অর্থাৎ critical realist উপলদ্ধিতে (radar) গরীব মানুষকে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার যে নীল নকশা সেটা ধরা পড়ছে না।
(২) এই বিষয়টি ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এইটি না মানলে কি হয় তা বিপ্লববাবুর critical realist উপলদ্ধির মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রতিভাত। তিনি সওয়াল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারী হউক। অর্থাৎ তিনি বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে নন। শুধু স্কুল এবং আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কলেজগুলো সরকারী হোক, কেননা এখানে শিক্ষার মান খারাপ। অথচ, যুক্তি দিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে, অন্তত ভারতে তো বটেই, স্কুলস্তরে বেসরকারী স্কুলগুলো এতো ভালো করছে যে সরকারী স্কুলে ছাত্র হচ্ছে না। বিপ্লববাবু খোঁজ করলে দেখবেন, কোলকাতা সহ মফস্বলের বহু জায়গায় এটা ঘটেছে, এবং সেখানকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে তার প্রতিকার চেয়েছেন এমন প্রতিবেদন আমার কাছেই আছে। ছাত্রের অভাবে পশ্চিমবঙ্গে কোলকাতার অনেক প্রাথমিক স্কুল বামফ্রন্ট সরকার তুলে দিয়েছেন এবং সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। আমাদের দেশ থেকে যে এত ছেলে ভারতে স্কুল শিক্ষার জন্য যায় তারা তো অধিকাংশই বেসরকারী স্কুলেই যায়। এরা সবাই বোধ হয় empiricist, । যাই হোক, এই বাস্তবতায় স্কুলস্তরে বেসরকারীকরণের বিরোধীতা করার বিপ্লববাবুর যুক্তির কাঠামোটা আর থাকে না, বালখিল্যের আব্দারে পরিণত হয়।
(৩) হঠাৎ করে বিপ্লববাবু চিন কতো ভালো করছে তার এত তথ্য কেন দিতে গেলেন জানা নেই। আমার লেখায় চিন এগিয়ে নেই এই কথা তো কোথাও বলি নি, কারণ চিন যে খুব ভালো করছে এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত। দ্বিতীয়তঃ নারায়ন মূর্ত্তির “ভিডিওটা আমার তোলা” বললে অহমিকা ব্যতিরেকে অধিকতর কি তথ্য সংযোজিত হয় বুঝলাম না। পৃথিবীর সর্বত্র যুক্তিবাদী আন্দোলনে অহমিকা যুক্তিকে আচ্ছন্ন করে এবং সত্যিকে চিনতে দেয় না – এই কথা স্বীকৃত। যাই হোক, আমার মনে হয় ওই ভিডিওটা আপনার একবার ভালো করে শোনা প্রয়োজন, আর এটা মাথায় রাখা দরকার যে বিশ্বে ভারতকে চিন্তার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার আপেক্ষিকে কথাগুলো বলা। তিনি আই-আই-টিগুলো বিশ্বে যে একটা ব্র্যান্ড নেইম তৈরী করতে পেরেছে সেটা উল্লেখ করেছেন শুনেছেন তো? সেটা সম্ভব হয়েছে সব ভূষি মাল দিয়ে, এটা আপনার যুক্তি তো? তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অন্ততঃ পাঁচটা আই-আই-টি-কে বিশ্বের প্রথম ১০টা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে। সেটা ভূষি মাল দিয়েই হয়ে যাবে তো? কি বলে আপনার critical realism? আপনি যখন নিজে উপস্থিত থেকে এই ভিডিও করেছেন, আপনার আর কোন সমাজবিজ্ঞানীর চোতা লাগবে না, তবে একটা জিনিস লাগবে- তা হলো মক্তমনা হওয়া আর সামান্য অহমিকাহীন, সব্জান্তাভাদরহিত সুস্থবোধ। আপনাকে স্ম্রণ করিয়ে দেই যে আমার লেখায় এটাও কোথাও বলি নি যে ভারতবর্ষে বহু বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়াশুনোর মান অত্যন্ত খারাপ নয়। বলেছি, ভালো বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও কিছু আছে, যেখানে ছাত্ররা কোন কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ ছেড়েও যেতে চাইবে। এটা বলার কারণ এই নয় যে আমি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে, বরং বিপক্ষে বলেই উল্লেখ করতে চেয়েছি। কারণ আপনার বেসরকারীকরণের যুক্তি দাঁড়িয়ে আছে ঐ অসার তত্ত্বোপলদ্ধির উপরে। ভারতব্ররষের শিক্ষার কিছু পরিসংখ্যান গুগুলে পাওয়া যায় আপনি জানিয়েছেন, তারজন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশের মতো পিছিয়ে পড়া দেশে থাকি, এ রকম data না থাকলে শুধুমাত্র critical realism থেকে সব কিছু জানতে পারি না।
@দৃশ্য বাঙলা,
চীন বা ভূতপূর্ব সোভিয়েতে কমিনিউস্টরা যতই ক্ষতিই করুক, শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন গরীব মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্ছিত হয়েছে বলে জানা নেই। ভারতের নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেনী, যাদের সন্তানেরা আজ প্রাইভেট স্কুলে যাচ্ছে, তাদের সময়ে যদি কোন ভাল পাবলিক স্কুল না থাকত, তাদের কি হত, সেটা তারা ভেবে দেখেন না।
আদর্শ ধণতন্ত্র বলে কিছু নেই। বাজার ভূষিমাল সরাতে পারলে, আমেরিকাতে বাজারকে নিয়ন্ত্রন করার জন্যে প্রায় দুলাখ দশ হাজার আইন আনতে হত না। বাজার ভূষিমাল সরাতে পারে, এটা ভ্রান্ত ধারনা।
[২] লেখকের ধারনা বেসরকারি স্কুলগুলি ভাল করছে। না করছে না। সেখানেই সমস্যা।
ব্যাঙের ছাতার মতন গজাচ্ছে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল। তবুও অভিভাবকরা সরকারি স্কুলে পাঠাচ্ছেন না ছেলে মেয়েদের। কারন সরকারি স্কুলে শিক্ষকরা স্কুলে পড়ানো ছেরে প্রাইভেট টিউশন করছেন। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারি মদতে ধ্বংশ করা হচ্ছে। যাতে শিক্ষা ব্যবসা আরো জমিয়ে করা যায়। আমি ত সেই সমস্যার কথা লিখলাম। সেটা যদি কেও না বোঝে কিছু করার নেই। প্রাইভেট টিউশন এবং ছত্রাকের মতন গজানো ইংলিশ মিডিয়াম, দেশের মেরুদন্ডকে ধ্বংশ করছে এবং করবে।
দেখুন আমি যা দেখছি, তার ভিত্তিতেই লিখছি। ফেসবুকে আমার এই লেখার ওপর ভারতের কমগুলিতে কিছু অধ্যাপকের কমেন্ট দেখুন-তারাও আমার বক্তব্যকে সমর্থন করছে-কারন আমার উপলদ্ধি, তাদের উপলদ্ধির সাথেও মিলে যাচ্ছে।
ভারতের অনেক বড় বড় শিক্ষা ব্যবসায়ি আমার বন্ধু-সুতরাং এই ব্যবসাটা কি করে হয় তা ভাল করেই জানি। আর জানি বলেই লিখতে হচ্ছে।
বেসরকারিকরন এবং সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস যেভাবে চলছে, তাতে লুকানোর কোন জায়গা নেই। ভারত বাংলাদেশে ব্যাবসায়িরা খুব সাধু বা সমাজের জন্যে চিন্তা করেন বলে আপনার মনে হয়? না তার জন্যেও আপনার সমাজবিজ্ঞানের পেপার দরকার?
একদম উচ্চ কারিগড়ি শিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারিকরনের কথা লিখেছিলাম তার কারন এই ধরনের শিক্ষার জন্যে টাক্স পেয়ারের টাকায় কিছু করা উচিত না-এখানে ব্যাবসার জন্যে শিক্ষা, তাই ব্যাবসা চলতেই পারে। কিন্ত প্রাথমিক,মাধ্যমিক বা কলেজ লেভেলে ঢালাও বেসরকারি করন কিছু ভাল কিছু দিতে পেরেছে কি?
@বিপ্লব পাল,
আমি বাজার অর্থনীতির সমর্থক নই।
– এটা বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসীরা বলে এবং বাজার অর্থব্যবস্থা থাকলে, রাষ্ট্র বা সরকার সংরক্ষণের বিশেষ কোন ব্যবস্থা না নিলে তাই হওয়ার কথা।ইচ্ছা করে কিনা জানি না, মনে হচ্ছে সহজ কথাটা গুলিয়ে দিতে চান।চিন বা রাশিয়ার মতো সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে ভারতের মতো একটা ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদী দেশের সরকারী শিক্ষাকে এক করে দেখছেন, যেখানে পাশাপাশি বেসরকারী শিক্ষা চালু রয়েছে। একটু কান্ডজ্ঞানের অভাব হয়ে যাচ্ছে না কি? কার সঙ্গে কার তুলনা করছেন। গরু দুধ দেয় বলে আপনি তো সকালে উঠে বালতি নিয়ে দুধ দোয়ানোর জন্য বাড়ির কুকুরটার পেছনে ছুটছেন দেখি, যেহেতু দুটোই চারপেয়ে মশাই। শিক্ষা পণ্য নয়, তাই একে নিয়ে ব্যবসা করতে দেওয়া যাবে না, এই কথা মানতে আপনার আপত্তি আছে? এই সোজা প্রশ্নের উউর না দিয়ে ভ্যাজর ভ্যাজরের মানে কি?
আপনি বোধকরি ফেসবুকে শুধু লেখেন, উত্তরগুলো পড়েন না। আমি বলছি যে আমরা বেসরকারীকরণের বিপক্ষে এবং সেটা বেসকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করছে না খারাপ করছে তার দ্বারা নির্ধারিত নয়। আপনার যুক্তির সঙ্গে এই যুক্তির পার্থক্য বোঝার মতো জ্ঞান আপনার নেই তা আমার মনে হয় না। আপনি আমাকে আবার প্রশ্ন করছেন ঃ
ধরুন পেরেছে অথবা পারে নি, এই প্রশ্নের সাথে বেসরকারীকরণ সমর্থন করব কি করব না তা যুক্ত নয়। এত গোদা বাংলায় বলার পরও প্রথম থেকে আপনার মাথায় এটা ঢুকছে না, সেটা আশ্চর্য্য বটে। আর উচ্চ কারিগরি শিক্ষা মানে ব্যবসা, সেখানে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা চলতে পারে, শিক্ষা সম্পর্কে এই যার জ্ঞানগম্যির বহর তার সাথে আর বেশি আলোচনা না করাই ভালো। আর ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকদের যে আপনি ব্যবসায় নিযুক্ত করেন বলেছেন, সেটা ট্যাক্স-এর পয়সায় সরকারের পরিচালনায় হোক, কারণ আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বোধহয় বিনামূল্যে বিতরণের জন্য গান্ধী আশ্রমের কম্বল তৈরী হয়?
দাদা, এ বিতর্ক এখানেই সমাপ্তি। ভালো থাকবেন।
@দৃশ্য বাঙলা,
সমস্যা হচ্ছে আপনার বেসিক জ্ঞানের বিরাট অভাব। ভারত স্বাধীনতার পরে, সোভিয়েতের আদলেই পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষা নিয়ে এগোচ্ছিল। ১৯৮০ সালে ভারতে কোন প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল না। সেই সময়টাতে শিক্ষা বলতে লোকে বেসরকারি শিক্ষা বোঝে নি। গত ৩০ বছরে, সেটার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রাথমিক আর মাধ্যমিক শিক্ষা বলতে সব বেসরকারি শিক্ষাই বোঝায়।
@বিপ্লব পাল,
আপনাকে আর জবাব দেওয়ার কিছু নেই। আপনার শিশুসুলভ উত্তর শুনে হাসব না কাঁদব সেটাই ভাবছি। আপনি হয়ত ধরে নিয়েছেন বাংলাদেশের কেউ ‘সোভিয়েত আদলের ভারত’ আর ‘সমাজতান্ত্রিক দেশ ‘ এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য বুঝবে না। কি বলছেন স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮০ সাল, আপনার দেশের সংবিধানে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৭ সালে এপ্রিল মাসে সংশোধন করে “socialist secular” এই বাক্যবন্ধটি অন্তর্ভূক্ত করেন। তার আগে এটা ছিল না। এখন আছে কিনা জানি না। তা হলে কি দাঁড়াল? ১৯৭৭ সালের আগে সমাজতন্ত্র ছিল বলবেন, নাকি ১৯৭৭ সাল থেকে দেশটা সমাজতান্ত্রিক হয়ে গেল? আপনার বোধের অগম্য যে এটা সংবিধানে এ রকম ঢোকালেই সমাজতন্ত্র হয় না। আপনার দেশ কি ১৯৮০ সালের আগে সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল নাকি? যেহেতু সোভিয়েত রাশিয়ায় planning ছিল, তাই যে দেশেই planning থাকুক, সেটাই সমাজতান্ত্রিক বলে মনে হচ্ছে নাকি? planning তো আমদের দেশেও আছে। তা হলে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক না কি? আমার মনে হচ্ছে আমি বাংলাদেশে থেকে এসব বিষয়ে ভারতবর্ষ সম্পর্কে যেটুকূ খবর রাখি, আপনি হয় তা রাখেন না, নতুবা জেনেশুনে মিথ্যা কথা বলেন। আপনাকে বলি অধ্যাপক সুখময় চক্রবর্তীর (নাম শুনেছেন কি?) লেখা Development planning: the Indian Experience এই বইটা পড়ে নিন। এই বইটা আমরা পড়ি, তবে বাংলাদেশিরা পড়ে বলে অবজ্ঞা করবেন না। বিদেশীরাও পড়েন ইউরোপ- আমেরিকায়। খুব ভালো বই, সমাজবিজ্ঞানের চোতা আর কি। একটু কষ্ট করে নয় পড়ুন। এই বইটা আপনাকে এসব বিষয় বুঝতে সাহায্য করবে। বাইরে ভারতীয়দের intellectual standard and ability নিয়ে সুনাম আছে, আমাদের দেশে তো আছেই। আপনার মতো আর কয়েকজন এরকম এঁড়ে তর্ক কিছুদিন ফেসবুকে চালালে ওপর চালাকিটা ধরে ফেলবে সবাই।
একটা কথা বলার আগে জেনে নিয়ে বলা ভালো critical realism দিয়ে সব কিছু করতে যাবেন না। ১৯৮০ সালের আগে আপনার দেশে কোন প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল না? আমি এক্টার নাম বলে দিচ্ছি বাকিগুলো আপনার দেশওয়ালীদের থেকে জেনে নিন। মনিপালের manipal institute of technology ১৯৫০ সাল থেকে আছে। যান, বাকীগুলো জেনে নিয়ে ফটফট করবেন।
@দৃশ্য বাঙলা,
মনিপাল, বিটস এমন অনেক পুরানো বেসরকারি কলেজ স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই ছিল। সেগুলোর জন্যে আজকের দূরাবস্থা না। মূলত নব্বই দশকের লিবারালাইজেশন থেকেই আজকের ইঞ্জিনিয়ারং বেসরকারি কলেজের রমরমা শুরু। এগুলো আপনার জানার কথা না। কারন এগুলো আপনার চোখের সামনে হয় নি। শুধু গুগুল করে আগডুম বকার কোন মানে নেই।
আর নেহেরুর সময় থেকে সোভিয়েত মডেলকেই ভারত উন্নয়নের আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে। শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষাতে সোভিয়েতের মডেলেই সাজানোর ইচ্ছা ছিল নেহেরুর-কিন্ত করে যেতে পারেন নি।
@বিপ্লব পাল,
আবার অনৃতভাষণ। মনিপাল স্বাধীনতার পরে ১৯৫৭ সালে। কেন অপ্রয়োজনে এত মিছেকথা বলেন? বিটস পিলানি ছাড়া অন্যগুলো, যেমন মেসরা ইত্যাদি স্বাধীনতার পরে। আর সামান্য পরিশ্রম করলে আরো এমন পাবেন। critical realism অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের চোতা না পড়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনার অর্থ মিথ্যাকথা বলা নয়।
যা হোক ১৯৮০ সালের আগে কোন বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল না বলে যা বলেছিলেন সেটা তাহলে হয় না জেনে ওপরচালাকি করেছিলেন অথবা জেনেশুনে মিথ্যেকথা বলেছিলেন। যুক্তিবাদী হলে আপনার এই মিথ্যা কথাটা স্বীকার করবেন নিশ্চয়ই।
এইটির সমর্থনে নেহেরুর কোন লেখার সূত্র দয়া করে জানাবেন। দয়া করে মনগড়া কথা বলবেন না, সারস্বত সমাজে মিথ্যে ও মনগড়া কথা বললে কেউ মানবে না।
গুগুল তো সবাই ঘাটে, আপনিওও ঘাটুন না। কেউ বারণ করে নি তো। গুগুল ঘেটেও যদি সত্যটা জানেন, তাহলে ভালো। শুধু cross check করে নেবেন, গুগুলে তো তথ্যের জঙ্গল- সব কিন্তু নির্ভরযোগ্য নয়। তবে গুগুল ঘাটার আগে নিচের সমাজবিজ্ঞানের চোতাটা পড়ে নিন, এট ভারতীয়দের তৈরী নয়ঃ
A Profile of the Indian education System (A paper Prepared for the New
Commission on the Skills of the American Workforce)
By Gretchen Rihnes Cheney, Betssi Brown Ruzzy &
Karthik_Murlidharanby (Nov-2005), NCEE, 2006
এটা গুগুলে ঘেটে পেয়ে যাবেন। শুধুমাত্র ‘আমি ভারতবর্ষে থাকি’, ‘আমার সমাজবিজ্ঞানের চোতা দরকার হয় না’, ‘আমার অনেক শিক্ষার সংগে যুক্ত মানুষের সংগে পরিচয় আছে, আমি তাই জানি’ – এমন্ত কথা যুক্তিবাদীরা কদাচ উচ্চারণ করে না, এ সব মুক্তমনার পরিপন্থী। পরিহার করে চলা ভালো।
@দৃশ্য বাঙলা,
কেও যদি ভাষা না বোঝে, তাকে বোঝান খুব মুশকিল। ১৯৮০ সালের আগে ভারতে যে কটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল, কেন ছিল-তারপরে রাজীব গান্ধী এবং মনমহনের উদার নীতির জন্যে সেটা কিভাবে এক্সপ্লোড করল-এগুলো না জেনে শুধু গুগল করে ভাট বকার কোন মানে হয় না। শুধু দুটী উদাহরন যথেষ্টঃ
পশ্চিম বঙ্গে ১৯৯৪ এর আগে কোন প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিংকলেজ ছিল না-এখন আছে ৫৭ টি।
মহারাষ্ট্রএ ভারতের সব থেকে বেশী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আছে। ১৬৮ টি। এর মধ্যে দুটি বাদে বাকি সব বেসরকারি কলেজগুলি ১৯৮০ এর পরে, অর্ধেকের বেশী কলেজ ১৯৯০ এর পরে তৈরী।
আর নেহেরু এবং সোভিয়েত?
নেহেরু প্রথম সোভিয়েতে যান ১৯২৭ সালে। এবং সেখান থেকে ফেরার পর, মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন সোভিয়েত মডেলেই ভারতে শিক্ষা, শিল্প এবং কৃষি গড়তে হবে। সেইল থেকে ভারতের আই আই টি সিস্টেম সব কিছুতেই সোভিয়েতের ছাপ এবং ছায়া ছিল। আই আই টি খরগপুরের ওয়ার্কশপ এবং অনেক কিছুতেই সোভিয়েত অবদান ছিল। সেইলের বেশ কিছু প্লয়ান্ট সোভিয়েত কাড়িগরি সহযোগিতায় তৈরী।
এগুলো জানার জন্যে কেও যদি ডকুমেন্ট বা প্রমান যায়, আমি তাকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষানবীশ হিসাবেই ধরব।
মূর্খ যদি চালাক সাজার চেষ্টা করে তাহলে সকলের যা বিপত্তি হয় আপনাকে নিয়েও সেই অবস্থা। “ছাপ”, “ছায়া”, “সমাজতন্ত্র”,” সোভিয়েট” ইত্যাদি কোন কিছুর অর্থ বোঝেন না। বিতর্ক ছিল বেসরকারীকরণের বিরোধীতা করার যুক্তিটা কি সেটা নিয়ে। তাতে ১৯৯১ আগে কয়টা, পরে কয়টা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল এবং সেগুলো ভালো ছিল না, খারাপ ছিল- এগুলো কে আপনার কাছে জানতে চেয়েছে? তার সাথে সম্পর্কই বা কি? আপনি ভাবছেন আমি তো বাংলাদেশী। ভারত আর তার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে জ্ঞানকান্ড গুগুলের বাইরে কি আর হবে। ভারতের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে, সবিনয়ে এইটুকু জানিয়ে রাখি।
সুখময় চক্রবর্তীর বইটা পড়ুন, ভারতের পরিকল্পিত অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। নিজেকে defend করার জন্য এত মিথ্যে কথা, না জেনে না বুঝেও পন্ডিতের ভাব করার কি প্রয়োজন?
হাহা ভাই । উনার কথার মূল্য আমি বুঝি । জালে পরোছি যে।
আমার ধারনা ছিল বাংলাদেশেওই একমাত্র দেশ এই ব্যাপারটার জন্য! কিন্তু ভারতেও একই অবস্থা ধারনা ছিল না!
@থাবা,
পৃথিবীর সর্বত্র এক হাল। শিক্ষার জন্যে সরকারের টাকা নেই। টাকা আছে মিলিটারি, বুরোক্রাসি ইত্যাদির জন্যে। জনগণ গর্জে না ঊঠলে-আগামিতে সর্বনাশ।
@বিপ্লব পাল, ঠিক বলেছেন… বাংলাদেশে নাকি শিক্ষার বাজেট সর্বোচ্চ, কিন্তু এটা থেকে কটো ভাগ আর্মির শিক্ষায় ঢুকে যায় কেউ জানে না!
ফোর্বস ম্যাগাজিনের America’s Best Private Colleges লিস্টে দেয়া সেরা ১০০’র (ওভারঅল) প্রথম ৫০টির মধ্যে শুধু ১, ৭, ৩০, ৪৮ হল সরকারি। বাকী ৪৬টিই প্রাইভেট কলেজ।
@হোরাস,
প্রিন্সটন, হার্ভাড এগুলো বেসরকারি ঠিকই-কিন্ত এগুলোর মালিক কোন ব্যক্তি না-ট্রাস্ট হচ্ছে মালিক। সেই অর্থে এগুলোও কম্যুনিটি ওনড এবং ফর প্রফিট না। সুতরাং এগুলোর সাথে বেনিয়াদের স্কুল কলেজের তুলনা অর্থহীন।
ভারতেও ক্যাথোলিক এবং রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলগুলি অনেক ভাল সরকারি স্কুলের থেকে। কিন্ত এগুলি সরকারি অনুদানে চলে এবং ম্যানেজমেন্টে কোন বেনিয়া নেই যে টাকা তোলার জন্যে বসে আছে।
আমার মনে হয়, এগুলো গুলিয়ে ফেললে লোকের কাছে এই সংবাদ যাবে যে বাংলাদেশে যে সব ব্যবসায়িরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করছে, তারা ডাবির থেকে ভাল বিশ্ববিদ্যালয় বানাবে।
@বিপ্লব পাল, ঢাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববদ্যালয় গজাচ্ছে, কিছু কিছুর মান হয়তো ভালই, কিন্তু ঢাবি বা বুয়েটের সাথে তুলনার যোগ্যতার ধারেকাছেও নেই কেউ। বেনিয়া যদি শিক্ষা কুক্ষিগত করে, সেখানে বিদ্যা ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যায়!
অতি প্রয়োজনীয়, সংক্ষিপ্ত অথচ অসাধারন একটা লেখা বিপ্লবদার, অনেক দিন পর!
আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থাও এমনি মনে হয়!
হয়েছে বিপ্লবদা, বাংলাদেশেই হয়েছে। বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিই মাঠ কাপাচ্ছে! আইডিয়াল স্কুল, ভিকারুন্নেসা স্কুল, নটরডেম কলেজ প্রভৃতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ধারে-কাছে ঘেষতে পারছে না সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি! তুলনায় বেসরকারী উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ফেইল করছে!
বাংলাদেশেও একই চিত্র!
তাহলে আর কি হবে, পাকিস্তান, আর উত্তর কোরিয়া তৈরি হবে!
যুক্তিটা খুব মনে ধরেছে, বিপ্লবদা! ব্যবসায়ীরা নিজেদের প্রয়োজনেই তৈরি করে নেবে ইঞ্চিনিয়ার, বিজনেস এক্সিকিউটিভ!
ব্যবসায়ীদের হাতে ধ্বংস হবে কেন, বিপ্লবদা? ব্যবসায়ীরা বরং সফল পেশাজীবী তৈরিতে শিক্ষা ব্যবস্থার সহায়ক শক্তিরূপে আবির্ভূত হতে পারে, আপনিই তো বললেন এবং আমার মতে সঠিকভাবেই বললেন!
@কাজি মামুন,
এগুলোর মালিক কি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান না সোসাইটি?
যেমন ভারতেও ক্যাথোলিক স্কুলগুলি, রামকৃষ্ণ মিশন ভাল-যেগুলিতে মাইনা দেয় সরকার-কিন্ত চালায় সন্নাসীরা। এগুলো সেই অর্থে বেসরকারি হলেও,সরকারি হিসাবেই ধরব।
এই বিদ্যায়াতনগুলি ফর প্রফিট না নন প্রফিট? এই মোটিভটাই আসল শিক্ষার ক্ষেত্রে।
বিপ্লব, ‘ধ্বংশ’ এবং ‘পক্রিয়া’ বানান দুটো একটু ঠিক করে দাও। বানান নিয়ে তুমি ব্যক্তিগতভাবে কেয়ার না করলেও লেখার টাইটেলে এ ধরণের ভুলগুলো সাইটের জন্য একটু অস্বস্তিকর।