সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্টমন্ত্রী দীপু মনি সদ্য বলেছেন,
রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিতে বাধ্য নয়। কারণ, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শরণার্থী-বিষয়ক কোনো আইন বা কনভেনশনে অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র নয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো দায়বদ্ধতাও নেই।
সমুদ্রজয়ী মন্ত্রী দীপু মনি যখন খুব জোরালোভাবে বলেন যে বাংলাদেশ শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করা কোন দেশ নয় এবং সে জন্যই বাংলাদেশের কোন দায় নেই, তখন কিছুটা লজ্জা পেতে হয় বৈকি! আর অবধারিতভাবে একটি প্রশ্নটি উঠে আসে, তা হল, মানবিক আহবানে সাড়া দেয়ার জন্য কি কোন আইনে স্বাক্ষর করার দরকার পড়ে? মানবিক দায় মানবিক বোধ থেকেই উৎসারিত নয় কি? ভারত কি শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করা দেশ ছিল ১৯৭১ এ? তো ভারত যদি বলত, তাদের কোন দায় নেই, তা হলে বাংলাদেশী শরণার্থীদের কি অবস্থা হত, তা ভেবে দেখেছেন কি আমাদের অপেক্ষাকৃত তরুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী?
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, আমাদের পুশব্যাকের দায়বদ্ধতা আছে বোধহয়! এবং বিশ্বাস করুন, পররাষ্টমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে সমর্থন করার মত লোকেরও অভাব নেই বাংলাদেশে! এমনিতে বাংলাদেশের মানুষ খুব বেশী প্রতিবাদ-মুখর; কাশ্মির, ইরাক, আফগানিস্তান, বসনিয়া, চেচনিয়া, কসোভো প্রভৃতি দেশের মুসলিম ভাইদের উপর বিধর্মীদের অত্যাচারের কারণে তারা গগনবিদারী ক্ষোভে ফেটে পড়েন! ইমাম সাহেবদের (যাদের অনেকের প্রশিক্ষণ আবার শুধু গুটিকয়েক মুসলিম অঞ্চলের নামেই সীমাবদ্ধ) জ্বালাময়ী ভাষণে অনেক সময় এদেশের সমব্যথী ও সচেতন মুসলিম সমাজ কাতারে কাতারে মাঠে নেমে পড়েন, ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলেন শ্লোগানে-প্ল্যাকার্ডে! কিন্তু মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপারে এদের মনোভাব সম্পূর্ণই ভিন্ন। এখানে ধর্মীয় ঐক্যকে ছাপিয়ে উঠে রোহিঙ্গাদের দুশ্চরিত্র, নষ্টামি, অভব্যতা-অসভ্যতা ইত্যাদি। কিন্তু সামান্য চিন্তা করলেই উপলব্ধি করা এমন কঠিন কিছু নয় যে, ধর্মীয় ঐক্যকে আসলে ছাপিয়ে যায় রোহিঙ্গা চরিত্র নয়, বরং স্বার্থের দ্বন্দ্ব। কাশ্মিরের মুসলমানদের জন্য রাস্তায় নেমে কিছু স্লোগান-আস্ফালন করলেই চলে এবং বেশ বাহবাও কুড়ানো যায় বটে; কিন্তু রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হলে তাদের যে জন্য সামান্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে, ঘরে এনে বসাতে হবে; সেই দায় নেয়ার মত গাধামো করার মানে হয়!
মাননীয় পররাষ্টমন্ত্রী আরও বলেছেন,
আমাদের নিজেদেরই সমস্যা অনেক। নতুন করে সমস্যা তৈরি করতে চাই না। আমাদের প্রতি আপনাদের অনুরোধ সংগত নয়। আমরাও সীমান্ত খুলে দিতে বাধ্য নই। কিছুতেই আমরা জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেব না।
অনেক দিন আগে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক ভারতীয় পত্রিকার কলাম পড়েছিলাম। কলামটির বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা নিয়ে। কলামটিতে তীব্র ভাষায় ভারত সরকারের সমালোচনা করা হয়েছিল এই যুক্তি দেখিয়ে যে, ভারত সরকার পাকিস্তানের কৌশলের কাছে পুরো মার খেয়েছে। পাকিস্তান কৌশলে পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত একটি বিরাট জনগোষ্ঠী, বিশেষত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভারতের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে ভারতের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার নীল নকশা সাফল্যে সাথে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। কলামটির মূল বক্তব্য ছিল, পাকিস্তানের অত্যাচারে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে যাচ্ছে তা নয়, বরং পাকিস্তানের কৌশলের ফাঁদে পড়ে তারা ভারত যাচ্ছে। পররাষ্টমন্ত্রী দীপু মনির বক্তব্য পড়ে এই কলামটির কথা মনে পড়ে গেল। কলামটিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর কথা বলা হয়েছিল এবং শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর আহবান জানানো হয়েছিল।
কিন্তু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই আহবানে সাড়া দেননি। বরং তিনি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তার সামরিক বাহিনীকে বাঙালি শরণার্থীদের জন্য বর্ডার খুলে দিতে বলেন। প্রায় এক কোটির উপর বাংলাদেশী শরণার্থীকে তিনি বোঝা বা ভারতের অর্থনীতির উপর চাপ মনে করেননি।
কিন্তু কথা হচ্ছে, এ কথা কি মিথ্যা যে, বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যার উপর একটা চাপ সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গারা? মানছি, এ কথায় কোন অসত্যতা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন, উনি অধিক জনসংখ্যাকে কোন সমস্যা মনে করেন না। তাহলে উনার পররাষ্টমন্ত্রীর ভিন্নমতের ব্যাখ্যা কি? তাছাড়া, রোহিঙ্গা জনসংখ্যাজনিত এই চাপের হার কতটুকু? বাংলাদেশ কি ইতিমধ্যেই জনসংখ্যার চাপে ন্যুজ নয়? এমন অনেক সময় দেখেছি, মানুষের ভীড়ে গাদাগাদি একটি বাসে, অতিরিক্ত দুজন লোককে উঠিয়ে নেয়ার জন্য প্যাসেঞ্জাররাই আহবান জানাচ্ছে বাসের ড্রাইভারকে, যখন বাইরে বিশাল ঝড় বইছে। রোহিঙ্গাদের জীবনে দশ নম্বর মহাবিপদসংকেত, ধেয়ে আসছে মহাসাইক্লোন, সামান্য কস্ট করে হলেও কি আমরা তাদের আশ্রয় দেব না? আমাদের ঘরদোর হয়ত কিঞ্চিৎ নস্ট হবে, ভীড় বাড়বে, কিন্তু ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এগিয়ে আসবো না? হাত গুটিয়ে রাখব যখন তারা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের দিকে অথৈ নদী পার হবে বলে?
গভীর সমুদ্র বিজয়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন,
বাংলাদেশে অবস্থানরত কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠনকে সশস্ত্র-ভাবে মদদ জোগাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারা মিয়ানমারের সাম্প্রতিক জাতিগত দাঙ্গাকে উসকে দিচ্ছে।মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে এ অভিযোগ করেছে।
বাংলাদেশের একটি মৌলবাদী দলের উস্কানি যে থাকতে পারে না, তা নয়। কিন্তু পররাষ্টমন্ত্রীর উপরিউক্ত বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের সমস্যাকে অগভীর দৃষ্টিতে দেখার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত নেই কি? রোহিঙ্গাদের জাতিগত সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে প্রথিত, যা বাংলাদেশের একটি মাঝারি দলের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা চিন্তা করাটাই একটা মারাত্মক ভ্রম নয়কি?
নবম শতকে যে মুসলিম জনগোষ্ঠী বার্মার উত্তর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত আরাকানে বসতি গড়ে, পরে তারাই রোহিঙ্গা নামে পরিচিত হয়। কিন্তু বহু জাতিগোষ্ঠীতে ( বর্মী, চীন, কাচিন, লোলোমুশো, আরাকানী, থাই, মন-খেমার, ইন্দো-বর্মী ইত্যাদি) বিভক্ত হলেও বর্মী বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের সহ্য করতে পারত না। আরাকানীদের মুল জনগোষ্ঠি সর্বদাই মধ্য-বার্মা ও আরাকান উপকূলভাগে পার্বত্য অঞ্চলের দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল মূল বার্মা থেকে। তাছাড়া, ১৭৮৪ সালে বার্মার রাজা বোদপেয়া কনবাউং আরাকান দখল করার পরে বর্মী কর্তৃপক্ষের নির্যাতনে হাজার হাজার আরাকানী শরণার্থী আরাকান থেকে চট্টগ্রাম ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূখণ্ডে আশ্রয় গ্রহণ করে। বর্মীদের আরাকান দখল, পূর্ব বাংলার উপর তাদের দাবী প্রতিষ্ঠা, বা ইংরেজদের দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রতিপক্ষ হিসাবে গণ্য করার কারণে প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে ১৮২৪-২৬ সালে যা ব্রিটিশরা জয় করে নেয় এবং অজেয় বর্মী রাজ্যের ধারনা মুছে যায়। বৃটিশ উপনিবেশকারীদের প্রতি স্বভাবতই অনুগত রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর উপর বার্মিজ জাতির অত্যাচারের মাত্রা আগের চেয়ে বেড়ে যায় এবং হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয় ১৯৪৮ সালে বৃটিশ বিতাড়নের অব্যবহিত আগে এবং পরে। অসংখ্য রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস হয়। পরে স্বাধীন বার্মায় ১৯৮২ সনে একটা আইন করা হয় যে, সংখ্যালঘুদের সরকারী স্বীকৃতি পেতে হলে তাদের অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে তারা ১৮২৪-২৬ সনের আগে থেকেই মায়ানমারে বসবাস করত, যখন প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যদিও রোহিঙ্গারা বলছে, তারা ১৮২৪ নয়, বরং তারও অনেক আগে থেকেই বার্মায় বসবাস করত এবং কালা-দান নদীর পূর্ব তীরে তারাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ; কিন্তু মায়ানমার সরকার উপরিউক্ত আইনকে ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের পরিণত করে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে। শুধু তাই নয়, তাদেরকে দমানোর জন্য দুই সন্তান বাধ্যতামূলক আইন করা হয়েছে। ভাষা-গত ও ধর্মগত মিল থাকার কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী হিসাবে দেখার প্রবণতাও রয়েছে।
এই যখন প্রেক্ষাপট , যখন সর্বত্র বারুদের স্তূপ, তখন একটি সামান্য ম্যাচের কাঠিই জ্বালিয়ে দিতে পারে পুরো জনপদ, উস্কানি দিতে পারে জাতিগত দাঙ্গায় (সাম্প্রতিক সময়ে কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম কর্তৃক এক বর্মী মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে যার সূত্রপাত), সেখানে উস্কানি-দাতার ভূমিকাকেই বড় করে দেখেছেন আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অথচ কি সীমাহীন অত্যাচার আর গুলির মুখে পড়ে বিক্ষুব্ধ বিপদসংকুল নাফ নদী পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গাদের আসতে হয় বাংলাদেশে, তা বোধহয় তিনি ভেবে দেখার সময় পাননি!
বছর দুয়েক আগে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে দেখেছি কি অবর্ণনীয় জীবন যাপন করছে রোহিঙ্গারা। প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ ও ১৯৯১-৯২ সনে প্রায় পাঁচ-লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সত্যিকার অর্থেই পোকামাকড়ের ঘনবসতি তাদের। দেখেছি হাড়জিরজিরে শিশু ও মা। স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করতেই বেরিয়ে এলো দুনিয়া জোড়া বদনামভরা কাহিনী। রোহিঙ্গারা নাকি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের এ জেলাটিকে দুষিত করে ফেলছে। চুরি, চোরাচালান, মাদক, যৌন-বৃত্তি – কি নেই যে এরা করে না! বেশ বোঝা গেল, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশেও বন্ধুহীন।
এটা সত্যি যে রোহিঙ্গারা অনেক অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত, এবং অনেক প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু পেছনের কারণটি খুঁজে বের করা দরকার নেইকি? রোহিঙ্গারা যে পরিবেশে বসবাস করছে, সেখান থেকে এমন পেটি-অপরাধগুলো করিয়ে নেয়া সমাজের সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর পক্ষে একান্তই অসম্ভব? ঢাকার বস্তিগুলোকে বলা হয় অপরাধের স্বর্গরাজ্য! কিন্তু বস্তিবাসী এই লোকগুলো কি সমাজের উচ্চবিত্তদের সহজ প্রলোভনের শিকার নয়? ঢাকার বস্তিবাসী বা রোহিঙ্গারা কি স্বপ্রনোদিত অপরাধ করে, নাকি এদের দিয়ে মর্জিমাফিক অপরাধ করিয়ে নেয় সমাজের তথাকথিত উঁচুতলার ভদ্রজনেরা?
রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে নৌকায় চড়ে আর বিপদসংকুল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ পুশ ব্যাক করাতে, এখন তারা আরো বিপদসংকুল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড বা মালয়শিয়ায় পাড়ি জমাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানার নৌকর্মকর্তারা নাকি অসহায় লোকগুলিকে মাঝপথেই ফিরিয়ে দেয়। কখনো কখনো সমুদ্রেই ছিটকে পড়ে তাদের দেহ ও নৌকা!
আমাদের পররাষ্টমন্ত্রীর বক্তব্যে তারা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ থেকেও এখন এভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে! কিন্তু রোহিঙ্গারা যাবে কোথায়? মায়ানমারে? কিন্তু সেখানেও তো সরকারী ছত্রছায়ায় অহিংস নীতির ধ্বজাধারী বর্মিজ বৌদ্ধরা অস্ত্র তাক করে রয়েছে তাদের দিকে! তাহলে? একটা উপায় অবশ্য আছে, যার ইঙ্গিত আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাতেই আছেঃ
বাংলাদেশ কখনোই তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করেনি এবং করবে না। জলপথে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে তাদের খাবার, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় জ্বালানি বিজিবি সরবরাহ করছে।
রোহিঙ্গারা এখন মাঝ সমুদ্রে অবস্থান করলেই পারে! তাদের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ সরকার, বিজিবি, মানবাধিকার সংস্থা, ইউএনএইচসিআর! তারা মাঝ সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বোটে তুলে দেবে খাবার, ঔষধ আর প্রয়োজনীয় জ্বালানি! যেখানে রোহিঙ্গাদের কোন বন্ধু নেই, রাষ্ট্র নেই, ভূখণ্ড নেই, সেখানে সমুদ্রই তো তাদের ঠিকানা হওয়া উচিত! সুতরাং, সমুদ্র বিজয়ী মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সামান্য কিছু সমুদ্র জল ছাড় দিতে হবে কেবল, যাতে অন্তত রোহিঙ্গাদের নৌকাগুলো ভেসে থাকতে পারে!
সত্যি বলতে কি, আমরা পুশে বিশ্বাসী, পুলে নই। আমরা ১৯৭১ এ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের মুখে নিজেদের পুশ করে দিয়েছি ভারতে, স্বাধীন দেশে পেটের দায়ে সশরীরে পুশড হয়েছি মিডল ইস্টে লাখে লাখে, নিজেদের অমূল্য জমিন বাঁচাতে এখন আবার রোহিঙ্গাদের পুশ ব্যাক করে ঠেলে-ফেলে দিচ্ছি মাঝ সমুদ্রে। আমাদের পুশের ব্যাপক ক্ষমতা ও দক্ষতা থাকলেও পুলের যেন একদমই নেই! কারণ অন্যদের কাছে টানার জন্য যে উদারতা দরকার, তা হয়ত আমাদের সত্তায় নেই! পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে অন্তত তাই মনে হয়!
সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই রাজনৈতিক বাংলাদেশ সরকার এই রেপিস্ট, ভুমিদূসস্য দের এখানে স্থান দিতে পারে না। মায়ান্মারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনও ভাবেই ৭১ এর পুরব পাকিস্তান ও ভারতের মত নয়। আর জাতিগত ভাবে বরতমানে এই রোহিংগ্যারা আমাদের দেশে কক্সবাজারে স্থানীয় নারী ধর্ষণ, ভুমি দখল, চুরি, চোরাচালান, ডাকাতি অ আমাদের বাংলাদেশের লকদের উপরেই চোটপাট করে বেরাছে, আমাদের পাসপোর্ট ব্যাবহার করে অন্ন্য দেশে গিয়ে বদনাম করছে, আমরা কনভাবেই তাদের আশ্রয় দিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনতে পারিনা
@রন্নিন,
আপনার ভিন্নমত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ! আপনার উথাপিত বিষয়গুলো উপরে আলোচিত হয়েছি বলে আর তুলছি না সেগুলো! তবে একটা কথা, ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বলেই, আপনাকে আমি নির্বোধ ভাবি না! আপনারও মত দেয়ার অধিকার রয়েছে এবং আপনার যুক্তি প্রদানকে আমি শ্রদ্ধা করি! ভাল থাকবেন!
@কাজি মামুন,
১। “কিন্তু মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপারে এদের মনোভাব সম্পূর্ণই ভিন্ন। এখানে ধর্মীয় ঐক্যকে ছাপিয়ে উঠে রোহিঙ্গাদের দুশ্চরিত্র, নষ্টামি, অভব্যতা-অসভ্যতা ইত্যাদি।”
সদ্য প্রসূত বাচ্চা এবং তার মাকেও পুশ ব্যাক করছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। গত বৃহষ্পতিবার সেন্ট মার্টিনের কাছে একটা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ভর্তি একটা নৌকাকে আটক করে বাংলাদেশে একটা পেট্রোল বোট। ওই নৌকাকে পুশ ব্যাক করা সম্ভব হয় নি ইঞ্জিন কাজ না করার কারণে। কোস্ট গার্ডের কাছে আটক ছিল নৌকা এবং তার আরোহীরা। ওই সময়ই গর্ভবতী এক মহিলা সন্তান প্রসব করে। এই সদ্যপ্রসূত সন্তানসহই ওই নৌকাকে আবার ঠেলে দেওয়া হয় মিয়ানমারের জলসীমায়। এই বাচ্চা ওই বৈরী পরিবেশে কয় দিন বাঁচবে কে জানে?
এই সদ্যপ্রসূত বাচ্চার চেয়ে আরেক বাচ্চা কিছুটা ভাগ্যবান। এর বয়স মাত্র দেড় মাস। কন্যা শিশু। বিজিবি-র রিভার পেট্রোল দল বাংলাদেশের সীমানায় একটা নৌকা খুঁজে পায় মাঝ রাতে। ওটা সার্চ করে কোনো আরোহীকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। শুধু পাওয়া যায় মরণাপন্ন এই দুধের শিশুকে। এর আরোহীরা হয়তো তাকে ফেলে রেখেই নিজেরা লাফঝাপ করে নেমে গেছে বাংলাদেশের মাটিতে। অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে আছে বাচ্চাটি। বাংলাদেশের এক দম্পতি নিজেদের আগ্রহেই এই পরিত্যাক্ত বাচ্চাকে নিজেদের সন্তান হিসাবে নিয়ে নিয়েছে তাদের কাছে।
বাংলাদেশের এই নাম না জানা গ্রামের দম্পতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছে অচেনা বাচ্চাটিরর প্রতি, তার কণাভাগও দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি। আমাদের বোঝা উচিত যে, কেউ সুখে থাকলে এরকম মরিয়া হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে না। নিশ্চয়ই ওপারের পরিস্থিতি নরকের রূপ নিয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য, আকাশ ভেঙে পড়েছে তাদের মাথার উপরে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি যে খবরটি দিয়ে শুরু করলেন, ঠিক সে ধরনের খবরই ফলাও করে প্রচার করছে অনেক ব্লগার, সাফল্যের নমুনা হিসেবে! সবচেয়ে দুঃখজনক, এদের ভিতর এমন ব্লগারও রয়েছেন, যাদের ভেবেছিলাম সত্য, সুন্দর ও মানবতার ধ্বজাধারী!
আপনি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার কথা বললেন; কিন্তু একজন স্বনামধন্য ব্লগার আমাকে বলে দিয়েছেন, রাষ্ট্রের ব্যর্থতা তুলে ধরার আগে আমার উচিত আমার বাসায় ঐ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া, উচিত কক্সবাজারের রাতের ঘুম হারমা হওয়া স্থানীয় মানুষের কাঁধে রোহিঙ্গাদের পর্বতসম ভার না চাপানো!
কি বলছেন, ফরিদ ভাই? আপনি সব প্রেক্ষিত জানেন তো? এরা আসছে বাংলাদেশ দখল করবে বলে! ওদের উদ্দেশ্য যদি এতই মহৎ হত, তাহলে ওরা ফিরে যায় না কেন? আর ব্যাটারা লড়াই করার মত সাহস রাখে না! ওদের বাংলাদেশে অবস্থানের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, ওদেরকে থাকতে দিলে সেই চক্রান্তকেই সাপোর্ট করা হবে শুধু!
আপনি এত মানবতা দেখাতে যাবেন না ফরিদ ভাই, তাহলে ‘বদমাইশের দলে’ পড়ে যাবেন নিশ্চিত!
যেখানে চতুর্দিকে হিসাব-নিকাশ, কনটেক্সট, প্রেক্ষিত শোনা যাচ্ছে, তখন এই খবরটি মন ভরিয়ে দিয়েছে, ফরিদ ভাই! বাংলাদেশের ঐ দম্পতিকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা!
UNHCR এর হিসেবমতে এই মুহুর্তে পৃথিবীতে এক কোটিরও বেশী লোক নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে রিফিউজি হিসেবে আছে। শুধু ২০১১ তেই সাড়ে আট লাখ লোক অন্যদেশে রিফিউজি হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুহারা হয়েছে আরও ৩৫ লাখ।
http://www.huffingtonpost.com/2012/06/18/refugee-crisis-worsens_n_1604603.html
এই রিফিউজী সমস্যার কয়েকটা দিক উল্লেখ্য। প্রথমত অধিকাংশ রিফিউজীই বিদেশে দীর্ঘ সময় থেকে যেতে বাধ্য হয়। বর্তমান এক কোটি রিফিউজীর ৭০ শতাংশই ৫ বছরের বেশী সময় ধরে দেশ ছাড়া। দ্বীতিয়ত, রিফিউজীকে আশ্রয়দানকারী দেশগুলি অধিকাংশ আমাদের মতোই গরীব, স্বল্পোন্নত। ৪ ভাগের ৩ ভাগ রিফিউজিই আশ্রয় নেয় স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে। সংখ্যা অনু্যায়ী বিদেশী রিফিউজীকে দীর্ঘ সময় আশ্রয়দানকারী দেশগুলো হলো,
Pakistan 1,900,621
Iran 1,073,366
Syria 1,005,472
Germany 594,269
Jordan 450,915
Kenya 402,905
Chad 347,939
China 300,986
United States 264,574
United Kingdom 238,150
Bangladesh 229,253
France 200,687
India 184,821
Canada 165,549
Sudan 178,308
Congo, Dem Rep 166,336
Ethiopia 154,295
Uganda 135,801
Congo 133,112
Cameroon 104,275
http://www.guardian.co.uk/news/datablog/2011/jun/20/refugee-statistics-unhcr-data
@সফিক,
ভাই, আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব, বুঝতে পারছি না! অসম্ভব জরুরী তথ্য দিয়েছেন, আপনি! অন্যত্র অন্য একটি লেখায় একজন ব্লগার রোহিঙ্গা রিফিউজিদের প্রতি মায়া অনুভব করেন না কেন, তার যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন যে, রোহিঙ্গারা এদেশে দীর্ঘদিন অবস্থান করছে এবং ফিরে যেতে চায় না। বস্তুত এসব কারণে রোহিঙ্গাদের শরনার্থী স্ট্যাটাসকেই উনি প্রশ্নবিদ্ধ করছিলেন! মানে, প্রকৃত শরনার্থী নয়! তাছাড়া উনার প্রশ্ন ছিল, আমাদের মত ‘না খেতে পারা মানুষের দেশে’ কেন রোহিঙ্গারা আশ্রয় পাবে (উনার লক্ষ্য ইন্ডিয়ার দিকে, মানে, কেন ইন্ডিয়া দায় নিচ্ছে না); কিন্তু আপনার তথ্যগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আমাদের চেয়েও গরীব দেশে শরনার্থীরা আশ্রয় পাচ্ছে এবং দীর্ঘ ৫ বছরের বেশী সময় থাকার পরও এদের শরনার্থী স্ট্যাটাস নষ্ট হয়ে যায়নি, বা সন্দেহের চোখে দেখা হয়নি!
আবারো ধন্যবাদ, তথ্যগুলো শেয়ার করার জন্য!
অসহায় যারা কষ্টের সময় তাদের পাশে না দাঁড়াবার অজুহাত খোঁজা, নষ্টামি; মানবতার সাথে প্রতারণা। জনমত তৈরীতে অসহায় মানুষদের নিয়ে লিখবার জন্য, মামুন ভাই; ধন্যবাদ।
@কাজী রহমান,
এই অজুহাত নিয়েই একটা ব্লগে মন্তব্য করেছিলাম। অজুহাতগুলো দেখুনঃ
(১)রোহিঙ্গারা বার্মার অফুরন্ত ওয়াইড-ওপেন পাহাড়ে-জঙ্গলে যায় না কেন? যেন শরনার্থীদের স্থাল-কাল প্রেফার করার অপরচুনিটি দিয়ে রাখা হয়েছিল!
(২)বাংলাদেশে ৫ লাখ আছে, তারপরও আরো আসবে কেন? তারা বার্মার অন্য প্রদেশ, ইন্ডিয়া বা অন্য দেশে যেতে পারে না? যেন শরনার্থীদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কোটার লিস্ট ধরানো ছিল, যে তারা বুঝতে পারবে বাংলাদেশে তাদের কোটা শেষ হয়ে গেছে!
(৩)রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করে! যেনবা এই ষড়যন্ত্রের দায় মেটানোর দায়িত্ব এই উদ্বাস্তু মানুষগুলোর!
(৪)আমার ঘরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিয়ে আমি কেন ‘গোল গোল মানবিকতার কথা’ বলছি, যা আমার অবস্থান থেকে বলা সুবিধাজনক, কিন্তু টেকনাফের স্থানীয় বাংলাদেশিদের পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব!
রহমান ভাই, আপনি খেয়াল করে দেখেছেন, ‘ফেলানি’ ইস্যুতে চেচিয়ে গলার রক্ত বের করে ফেলা এক শ্রেণীর মানুষ ‘সৌদি কর্তৃক আট বাংলাদেশীর শিরোচ্ছেদ’ নিয়ে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ছিল, কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছিল, দুটো বিষয়ের কনটেক্সট ভিন্ন! তাই আমার মনে হয়েছিল, আসলে কনটেক্সটই কি সব? কিছুদিন আগে এক স্বনামধন্য ব্লগাধিরাজ সগৌরবে ঘোষনা দিয়েছিল, কনটেক্সটই আসল কথা! কনটেক্সট আছে বলে ইন্ডিয়া আমাদের জন্য বর্ডার খুলে দিয়েছিল, আর আমাদের কনটেক্সট নেই বলে রোহিঙ্গাদের যমের হাতে ফিরিয়ে দেব? আমি তখন তাকে শুধিয়েছিলাম, তাহলে মানবিকতারও কনটেক্সট থাকে, লিমিট থাকে, কোটা থাকে? জবাবে ছাপার অক্ষরে অযোগ্য কিছু শব্দ ছাপার অক্ষরেই ঝিকমিক করছিল আমার জন্য!
আলোচনার জন্য ধন্যবাদ! (F)
কাজি মামুন তার ক্ষুরধার লেখার মাধ্যমে ধীরে ধীরে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠছে, এই লেখাটাই তার প্রমাণ।
তার প্রতিটি অভিমতের সাথে আমি একমত। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের মানবতা জাগ্রত হোক, এই কামনাই করি।
@অভিজিৎদা,
আমার লেখা ক্ষুরধার হয়নি, তুলনায় সাইফুল ভাইয়ের লেখা অনেক বেশী তথ্যপূর্ণ আর ধারালো হয়েছে! তবু আপনার এই মুক্তহস্ত উৎসাহ আমার জন্য পরম প্রাপ্তি! আমি যদি আগের চেয়ে কিছুটা হলেও ভাল লিখে থাকি, তাহলে তার সবটুকু কৃতিত্ব আপনার, ফরিদ ভাইয়ের এবং মুক্তমনার সকলের! আমার মত একটা অর্বাচীনকে আপনারাই এখানে লেখার সুযোগ করে দিয়েছেন!
রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ছবি দেখে খুব কস্ট হচ্ছিল, চোখ ভিজে উঠছিল। পরে পররাষ্টমন্ত্রীর বক্তব্য পড়ে তীব্র দহন হতে থাকে মনের ভিতর! আমি সাধারণত গল্প লেখার চেষ্টা করি! তাই রোহিঙ্গাদের নিয়ে লেখার কথা প্রথমে মাথায় আসেনি। কিন্তু পররাষ্টমন্ত্রীর বক্তব্য পড়ার পর হঠাৎই মনে হল, আমাকে একটা ফোরাম দেয়া হয়েছে, আমার প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ আছে, তাহলে কেন আমি লিখব না? হয়ত লেখার মান কাঁচা হবে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিয়ে লিখতেই হবে! আর যদি না পারি, তবে ফোরামের অ্যাকসেস ধরে রাখাটা নিতান্তই অনৈতিক হবে! সেই ভেবেই লিখে ফেলা! তবে সামনে চেষ্টা থাকবে, লেখার মান আরও উন্নত করা!
ভাল থাকবেন, অভিজিৎদা!
সমুদ্রে কেমন করে বেঁচে থাকবে মানুষ। ওরা কি জলজ প্রাণী নাকি?
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি লেখা লিখেছেন মামুন ভাই। (F) (Y)
@তামান্না ঝুমু,
এ প্রশ্ন তো আমারও! আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলছেন যে, তাদের ঔষুধ দেয়া হচ্ছে, খাবার দেয়া হচ্ছে! কিন্তু যে মানুষগুলো খড়কুটো ধরে বাঁচতে চাইছে, তাদের ঔষুধ দেয়ার কথা কেমন শোনায় না! অন্য একজন স্বনামধন্য ব্লগারও একথা বলেছেন। তার মতে, মানবিকতা বলতে কি শুধু আশ্রয় দেয়া বোঝায়? তার মতে, শরনার্থীদের নৌকায় ঔষুধ দেয়া, খাবার দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মানবিকতার দায় পূর্ণভাবে মেটাচ্ছে! কিন্ত যমের হাত থেকে পালিয়ে আসা মানুষকে আবার যমের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার মধ্যে কেমনতর মানবিকতা লুকানো রয়েছে, সে প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি, বরং কঠোর গালি-গালাজের বন্যায় আমাকে ভাসিয়ে দিয়েছেন!
আলোচনার জন্য ধন্যবাদ, আপু! (F)
স্বাক্ষর করুন। আমি এ লিংকটা সাইফুলের লেখায়ও দেব। যে যেটা পড়ে
@গীতা দাস,
গীতা দি, আপনার দেয়া লিংকটি আসেনি এখানে আবার দিলাম।
petition/Open_borders_to_Myanmar_Refugees
@আকাশ মালিক,
ধন্যবাদ আকাশ মালিক ভাই, তাহলে সাইফুল ইসলামের লেখাটায়ও দিয়ে দিন। বেশি মানুষের কাছে পৌঁছা নিয়ে কথা।
আমি আবারও প্রযুক্তিতে আমার দুর্বলতার প্রমাণ পেলাম। অবশ্য আমি আমার মেইল থেকে ঐলিংকে গিয়ে স্বাক্ষর করতে পেরেছিলাম।
ভাল থাকুন।
অনেকদিন পর আপনার সাথে যোগাযোগ হল।
ভারতের উদাহরণ যদি দিলেন তো ভারত কেন এখন সীমান্তে পাখীর মত গুলি করে মারে বাংলাদেশীদের ? ভারত আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়েছিলো ।তবে কেন এখন গুলি করে লাশ কাঁটাতারে বিধিয়ে রাখে? আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ভারতের এই হিংস্র আচরণ দেখে কীভাবে বিশ্বাস করবে এই ভারত ১৯৭১ এ আমাদের প্রতি সহুনুভুতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো, আশ্রয় দিয়েছিলো এক কোটি বাংলাদেশিকে ? সেইদিক দিয়ে বিবেচনা করলে আমাদের বি জি বি রোহিঙ্গাদের সসম্মানে ফিরিয়ে দিচ্ছে এর চাইতে আর কত মানবিক হওয়া সম্ভব আমাদের মত দরিদ্র একটি দেশের জন্য।আমার ঘরে খাবার না থাকলে কীভাবে ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক কে খাবার দেব? তার খাবার দিতে না পারলেও সরি বলে ফিরিয়ে দেব, গুলি করে হত্যা করবনা। যেটি ভারত করছে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের প্রতি। প্রধানমন্ত্রী অধিক জনসংখ্যাকে সমস্যা মনে করেন না তাই বলে তার কথা কে আদর্শ হিসেবে আপনি ধরে নিতে পারেন না । কারন যারা লোডশেডিং কোনদিন অনুভব করেনি, যারা এসি ঘরে থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা কল্পনা করেনি, দ্রব্যমূল্যর আকাশছোঁয়া দামে যাদের জীবনে কোন প্রভাব পড়েনা, যারা প্রতিদিন বিষ মুক্ত স্পেসাল সবজি ও ফল ভক্ষন করে তাদের কাছে অধিক জনসংখ্যা কোন বাপারই না। আর তার কথায় আপনি বলছেন যে রোহিঙ্গাদের আনলে দেশের কোন সমস্যা হবেনা। আমার মনে হয় পাগল ছাড়া রাজনীতিবিদদের কথা কেউ সিরিয়াস্লি নেয় না। তাই আমি মনে করি মানবিক দৃষ্টিকোণ হতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া উচিত। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়ের ভারতের রেফারেন্স দিয়ে অথবা প্রধানমন্ত্রীর ইল্লজিকাল কথায় নয়। আমি এও মনে করি রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দেয়া হবে কি না তার জন্য দেশের মানুষের মধ্যে যেহেতু বিভক্তি আছে তাই এই নিয়ে গণভোট করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
@মাসুদ রানা,
আপনি দেখছি ভারত ফোবিয়ায় আক্রান্ত! দুনিয়ার তাবৎ বিষয় ভারতের আচরণ দিয়ে মাপছেন! যদি স্ট্রেইট ভাবতেন, তাহলে দেখতে পেতেন যে, ভারতের বিএসএফ এখন সীমান্তে পাখীর মত গুলি করে বাংলাদেশী মারছে বলেই স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ভারতের আশ্রয়দান মিথ্যা হয়ে যায় না! আমরা ভারতের বর্তমান হিংস্র আচরনের নিন্দা অবশ্যই করব, কিন্তু একই সাথে মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের অবদানের কথাও স্বীকার করব কৃতজ্ঞচিত্তে। এমন কোন ঈশ্বর বা মানবরচিত আইনের কথা শুনিনি যে, দুই ভিন্ন সময়ের আচরনের জন্য কৃতজ্ঞতা ও নিন্দা করা যাবে না!
ভারতের বিএসএফ সীমান্তে কি করছে, সেটা হবে আমাদের বিজিবির স্ট্যান্ডার্ড? আর ‘সসন্মানে ফিরিয়ে দিচ্ছে’ বলতে যেয়ে আপনার বুক সামান্য কেঁপে উঠলো না? একটি মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে প্রান বাঁচাতে আপনার দোরে হাজির হয়েছেন, আর আপনি তাকে ‘সসন্মানে ফিরিয়ে দিচ্ছে’ন যমের হাতে? আশ্চর্য! আশ্চর্য!
একজন ভিক্ষুককে ‘মাপ করো’ বলে ফিরিয়ে দেয়া আর রোহিঙ্গাদের পুশ ব্যাক এক জিনিস নয়; একটু চিন্তা করুন, বুঝতে পারবেন!
এ কথা মানবিকবোধসম্পন্নরা বলে না; তারা বলে, আমি না খেয়ে হলেও একজন অসহায় মানুষকে খাওয়াব, দরকার হলে তার জন্য খাবার যোগাড় করব! রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কিন্তু কম বিদেশী ফান্ড পায় না, যা আবার জামাত নাড়া-চড়া করে বলে কথিত আছে; আর সেজন্যই নাকি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে জামাতের এত দৌড়ঝাপ!মানবিকতা মুখ্য নয়, রাজনীতি ও অর্থনীতিই মুখ্য জামাতের রোহিঙ্গা সমর্থনের পেছনে!
তো আপনার মনে হয়েছে, আমি প্রধানমন্ত্রীর কথাকে বেদবাক্য হিসাবে নিয়েছি আর এই যুক্তিতেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়দানের কথা বলেছি! আপনার প্রখর বোধগম্যতার প্রতি আমার কুটি কুটি সালাম! যদিও জানি আপনার প্রখর বোধগম্যতার পক্ষে হয়ত আবারো আমার কথাকে ছাপিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবু সেই রিস্ক নিয়েই বলছিঃ আমি বলতে চেয়েছিলাম, যে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে বলেন যে, তারা অধিক জনসংখ্যাকে চাপ মনে করেন না, সেক্ষেত্রে তারই বিদেশমন্ত্রী কি করে ‘অধিক জনসংখ্যার চাপ’কে রোহিঙ্গা পুশব্যাকের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন? সরকারের দ্বৈত বা সুবিধাবাদী নীতির ইঙ্গিত করা হয়েছিল মনে হয় এখানে!
@কাজি মামুন, প্রধানমন্ত্রীর কথাকে বেদবাক্য হিসেবে নেন নাই মেনে নিলাম। কিন্তু এটাও আমাদের সবার জানা যে সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্যদের কথার মিল থাকে না। একজন পূর্বে যান তো অন্যজন পশ্চিমে । প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশ মন্ত্রীর কথায়ও তার বাতিক্রম হয় নি। তাই এটা সরকারের দ্বৈত নীতি নয় বরং সমন্বয়হীনতা। আর তাদের সমন্বয়হীনতাকে পূঁজি করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কে জায়েজ করতে পারি না।
@মাসুদ রানা,
বাহ! বেশ! তাহলে এখন আপ্নার মনে হচ্ছে, পুরো লেখাটিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকে জায়েজ করতে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, সরকারের সমন্বয়হীনতাকে? মানে, সরকার সমন্বয়হীন না থাকলে, অর্থাৎ, প্রধানমন্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সুরে কথা বললে, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকে তখন নাজায়েজই মনে হতো? আর এই হচ্ছে, লেখাটির মূল বক্তব্য! সত্যি, আমার আর বলার কিছু নেই! শুধু, একটি শব্দই মাথায় আসছে! খাসা! খাসা!
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মুসলমানদের উপর লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের
খন্ডচিত্র
এ পর্যন্ত জালেম বৌদ্ধরা আরাকানে প্রায় ৬০০০ মুসলমান নারী-পুরুষ ও
শিশুদেরকে হত্যা করেছে বলে স্থানীয় সুত্র নিশ্চিত করেছে।
অসংখ্য মুসলমান নারীদেরকে তারা ধর্ষণ করে হত্যা করেছে ও
পরবর্তীতে লাশ গুম করেছে।
তারা তাবলীগ জামায়াতের ১০ জন সাথীকে জবাই করার মাধ্যমে এই
হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এ পর্যন্ত তারা ৩০ টির উপর মসজিদ এবং অনেক
মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং ইমামদেরকে জবাই করেছে।
আগুন দিয়ে তারা মুসলমানদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে।
আগুন নিভানোর নাম করে তারা পানির বদলে তেল ঢালছে। কোন মুসলমান
আগুন নিভাতে বেরিয়ে আসলে তাকে গুলি করে হত্যা করছে।
বাড়ী-ঘর থেকে বিতাড়িত মুসলমানরা যখন প্রাণ
নিয়ে ট্রলারে করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছিলো, তখন এদেশের
জালেম সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদেরকে জোর করে ফিরিয়ে দেয়
এবং কয়েক শত অসহায়-অভুক্ত মুসলমানসহ ৩ টি ট্রলারকে বৌদ্ধ
নাসাকা বাহিনী তাদেরকে সাগরে ডুবিয়ে দেয়! ২ টি ট্রলার আশ্রয়ের
সন্ধানে ভেসে চলতে থাকে অজানার উদ্দেশ্যে। এছাড়াও বর্তমানে ২০
টি ট্রলার শত শত
মুসলমানদেরকে নিয়ে সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে আশ্রয়ের সন্ধানে। ঐ
ট্রলারগুলোতে খাবার-পানীয়ের অভাবে ইতোমধ্যে অনেকে মারা গেছে।
এছাড়াও কৌশল হিসেবে তারা মুসলমানদের
মৃতদেহকে মাথা ন্যাড়া করে ও বৌদ্ধদের পোশাক
পরিয়ে বৌদ্ধরা মারা গিয়েছে বলে অপপ্রচার করেছে।
সেখানকার অসহায় নর-নারীরা এই বলে কান্নাকাটি করছে যে,
‘পুরো বাংলাদেশে আমাদেরকে সাহায্য করার মতো কোন মুসলমান
কি নেই’? (source :al jajiara
এ যেন সেই আহবান যার কথা আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তোমাদের কি হল
যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না অসহায়-দুর্বল সেই পুরুষ,
নারী ও শিশুদের পক্ষে যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা!
আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে,
অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য ওলী (বন্ধু) নির্ধারণ
করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য
সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও”। [সুরা নিসাঃ ৭৫]
@বেয়াদপ পোলা,
আর কতো জায়গায় কতো নামে একই ওয়াজ করবেন? করুন, শ্রোতা আছে বলেই তো করতে পারছেন, কোরান থেকে জিহাদী আয়াত দিয়ে প্রেরণা যোগাচ্ছেন? চালিয়ে যান জিহাদী দু একজন মিলতেও পারে। আপনারা নাকি প্লান করেছেন বাংলাদেশের বৌদ্ধদেরকে বার্মায় তাড়িয়ে দিয়ে তাদের জায়গা জমি রোহিঙ্গাদের বিলিয়ে দিবেন? এই নাফরমান সরকারের আমলে তা বোধ হয় সম্ভব হবেনা, আরো কিছুটা দিন সবুর করতে হবে। তখন মিয়ানমারের সকল মুসলমানদেরকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে আর কোন অসুবিধে থাকবেনা। হিন্দুরা তো আর কোন ফ্যাক্টরইনা, বাকী রইলো কিছু বৌদ্ধ আর পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী উপজাতিগুলো। ওদেরকে সাইজ করতে আপনাদের খুব একটা বেগ পেতে হবেনা একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। প্রফেসার জাফর ইকবাল সাহেবের লেখাটা না কি প্রমাণ করে আল্লাহর ঢোল ফেরেস্তায় বাজায়?
দেখেন জিহাদের ওয়ার্ম-আপ হিসেবে ফটোগুলো এখানে দিতে পারেন কি না, যদিও অন্যান্য ব্লগে আপনার দেয়া কোন ছবিই আমার অদেখা নয়। আর হ্যাঁ বাংলাদেশের মাটিতে রোহিঙ্গাদের ট্রেইনিং ক্যাম্পগুলোর কিছু ছবি দিতেও ভুলবেন না। আমি একটা দিলাম।
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/keda20keda.jpg[/img]
আফটার অল সারা বাংলাদেশই তো মুসলমানের ট্রেইনিং ক্যাম্প হবে, তাই না?
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/img_0003x.jpg[/img]
@আকাশ মালিক,
সবাইরে নিজের মতো ভাবেন নাকি, আপনার মতো লুকানো স্বভাব আমার নাই, প্রথমে কমেন্ট এ তো বিরোধিতা শুরু করেছিলেন, পরে ছুপছে গেলেন কেন, সব আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করছে তাই? মানবতার ভিতরে যারা রাজনীতি খুজে পাই তাদের সাথে কথা বলতেই রুচিতে বাধে, কথাই আছে না মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, আপনার দেখি সেই অবস্থা। সারাদিন তো চিল্লাতে দেখতাম মানবতা পরম ধর্ম, এখন আসল মুখোশ উন্মোচিত,
@বেয়াদপ পোলা, আপনার কাছে রোহিঙ্গাদের কোন পরিচয়টা গুরুত্বপুর্ন? মুসলমান না মানুষ? আরেকটা প্রশ্ন করছি, দয়া করে জবাব দিবেন, রোহিঙ্গারা যদি হিন্দু হত তাহলেও তাদের জন্য দরদ দেখাতেন কি?
@শাফী মাহমুদ, মানুষ এবং হা দরদ দেখাতাম,
@শাফী মাহমুদ, একদম খাঁটি কথা।
এটা বলা অনেক কঠিন যে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে কি হবেনা!!! বাংলাদেশ গরিব দেশ নিজেরাই খাবার পাইনা অন্যেরে কি খাওয়াবে,আমাদের জনসংখ্যা মাত্রাতিরক্ত বেশি,ভালো নিরপরাধ রোহিঙ্গাদের সাথে উচ্ছৃঙ্খল রোহিঙ্গারা দেশে প্রবেশ করলে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে। আবার অসহায় মানুষজন সামনে এসে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ।
এটা একটা উভয় সংকটের মত যেটার সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ কঠিন।একজন মানুষকে বাঁচানোর জন্য বাসচালক যদি পুরো বাসযাত্রী নিয়ে খাঁদে গড়ায় তাহলে ক্ষতি কিন্তু বেশি সংখ্যাক মানুষের ই হবে।বাংলাদেশের অবস্থা যদি বাসচালকের মত হয় তাহলে বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্রতর ভাল কাজ পরিত্যাগ করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা উচিৎ।তবে এটা বিবেচনা এবং আরও অনেক যাচাই বাছাই এর ব্যাপার।তবে মিয়ানমার সরকারের উচিৎ ছিল এ সমস্যা নিরসনে পুরো পদক্ষেপ নেওয়া।
জামাত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ঘটনাকে ব্যাবহার করতে চাচ্ছে।তারা সরকারকে সমালোচনা করার জন্য মূলত এটা করতে চাচ্ছে।এছাড়াও রোহিঙ্গাদের প্রবেশের মাধ্যমে তাদেরকে যদি এদেশে স্থায়ীরূপে থাকার ব্যাবস্থা করে দিতে পারলে ধর্মীয় মূল্যবোধ ব্যাবহার করে ভোটের পাল্লা ভারি করা যাবে।নিজেদের দল ভারি করার উত্তম কৌশলও হতে পারে।
সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারকে তীব্র নিন্দা জানায়।যা হবে তা যেন আইনকানুনের মাধ্যমে হয়।সংখ্যালঘু অমুসলিমদের উপর অত্যাচার করলে জামাতিরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাইত। আজ মুসলিমদের উপর আঘাত পড়েছে বলে তাদের সাম্প্রদায়ীক দন্ড খাড়া হয়ে যাচ্ছে।তাদেরকাছে মুসলিম গুরুত্বপূর্ন কিন্তু মানুষ গুরুত্বপূর্ন নয়।অদ্ভূত! রোহিঙ্গাদের মাঝে সন্ত্রাসী আছে সত্য।কিন্তু সকল রোহিঙ্গারা কি সন্ত্রাসী??? যদি না হয়ে থাকে তাহলে ঢালাওভাবে কেন সবার উপর অত্যাচার করা হবে??যারা অপরাধের সাথে জড়িত কেবলমাত্র তাদেরকে আইনগতভাবে শাস্তি দেওয়া উচিৎ।কিন্তু যারা নিরপরাধ তারা কেন শাস্তি ভোগ করবে??
মিয়ানমার সরকারের উচিৎ ছিল নিরপরাধ রোহিঙ্গাদের অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তির ব্যাবস্থা করা।কিন্তু সেটা তারা করতে ব্যার্থ।
@সত্যের সাধক,
আসলেই এটা একটা উভয় সংকট! আর এজন্যই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের স্কোপ রয়েছে, প্রত্যেকের হাতেই যুক্তি রয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ এমন ভাবছেন যে, বিষয়টি যেকোন বিতর্কের উর্দ্ধে আর আপনি যদি পুশব্যাকের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেন, তাহলে আপনি ‘বাংলাদেশ’এর বিরুদ্ধেই অবস্থান গ্রহন করলেন আর শাস্তি হিসাবে ভয়ানক কিছু গালি আপনার পাওনা!
জামাত অর্থনৈতিক (শরনার্থী ফান্ড) ও রাজনৈতিক (ভোট ও ক্যাডারশক্তি) কারনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে, যার দায় ঐ গরীব মানুষগুলোর কাঁধে বর্তায় না! তবে এখানে আরেকটা ব্যাপার লক্ষনীয়। তা হল, দেশের ইমাম সমাজের ভূমিকা! যে ইমাম সমাজ কাশ্মির, প্যালেস্টাইন, বসনিয়া ইস্যুতে অগ্নিগর্ভ ভাষন দিয়ে মুসল্লিদের রাস্তায় নামতে বলেন, তারা কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ! একইভাবে নিশ্চুপ, মুসল্লিরা যার অন্য জায়গায় মুসলিম নিধনে ঢাকার রাজপথ কাঁপান! গলার রক্ত বের করে ফেলেন! প্রশ্ন হল, ইনারা নিশ্চুপ কেন? ইনারা কাশ্মির ইস্যুতে লড়লেও তার জন্য বড় স্যাক্রিফাইস করতে হয় না, বরং বীরত্বের মর্যাদা মেলে; আর রোহিঙ্গাদের যে ঘরের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়, তাই তারা মুস্লিম হওয়া স্বত্বেও সেই এটেনশান বা আদর পায় না!
সবশেষে আলোচনার জন্য অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া!
মিয়ানমারে নির্বিচারে চলছে মুসলিম নিধন, আওয়াজ তুলুন●●
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অহিংসতার কথা বলে! তাদের তো এরকম করার কথা না?
’৯০ এর দশকের শুরুতেই সেখানে মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু হলে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
রয়টার্স জানায়, ২৯শে মে রাখাইন প্রদেশের তাংগোকে শহরে বৌদ্ধদের হামলায় ১০ মুসলিম নিহত হয়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর দোয়া মহফিলে আরও এক মুসলমানকে গুলি করে হত্যার পর এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বলে সূত্র দাবি করেছে। বৌদ্ধরা মুসলমানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালালে আগুন দেয়া হচ্ছে। এতে মৃতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত হতে পারে তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেনি সূত্রটি। আকিয়াবের রাসেদং নামের এক গ্রামের ৪৭ পরিবারে সদস্যদের মেরে ফেলা হয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্র দাবি করেছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক লোক মারা গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আহতের সংখ্যা কয়েকশ’ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে মংডু, নয়াপাড়া , বুছিদং এলাকায় কারফিউ জারি করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপরও বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির মতো গোলাগুলি হয়েছে বলে খবর এসেছে।
ইসলাম আর মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে সকল কাফির মুশরিক ই একই হিংস্র চেতনা লালন করে, তার প্রমান দিচ্ছে রাখাইন-মগ বৌদ্ধরা! কোথায় জনাবা সূচী? তার শান্তির বাণী? – এই দাঙ্গা বন্ধ করুন!
মুসলমান ভাই-মা-বোন আর নিষ্পাপ শিশুদের রক্তে আপনার মিয়ানমার ভিজে গেছে। বন্ধ করুন এই হত্যাযজ্ঞ!! আপনাদের বৌদ্ধদের অহিংসা নীতির আড়ালে লুকিয়ে থাকা হিংস্রতার দাঁতাল ভয়াল রূপটি বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়ে গেছে! – বাংলাদেশের মুসলিমগন! যে যেখানে আছেন, বার্মাবাসী রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের পাশে দাড়ান! আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের প্রতিটি সেক্টরে মিয়ানমারে মুসলিম হত্যাযজ্ঞের ঘটনাগুলো তুলে ধরুন!
বেশ কিছু পক্ষ বিপক্ষ মন্তব্য পাওয়া গেল। কোথাও মানুষ বিপন্ন হলে তাদেরকে সাহায্য করাই মানুষের কাজ। কিন্তু তার আগে জানা দরকার মানুষ বিপন্ন হলো কেন ? কোন একটা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক লোক পালিয়ে আসা কোন সাধারণ ঘটনা নয়। এর পিছনে বহু কারন বিদ্যমান। যতদুর জানি, মায়ানমারের আরাকান প্রদেশে বাস করা রোহিঙ্গারা খুবই অনগ্রসর এক জাতিগোষ্ঠি। তারা শিক্ষা গ্রহনে অনীহ, প্রচন্ড কুসংস্কারাচ্ছন্ন, প্রতিটি পরিবারে বহু বাচ্চা কাচ্চা জন্ম নেয়। এমনকি দেখা গেছে – বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে শিক্ষা প্রদানের কর্মসূচী হাতে নিলেও সেখানে তারা শিক্ষা গ্রহনে একেবারেই আগ্রহী নয়।শিক্ষাদীক্ষাহীন অথচ দ্রুত বর্ধনশীল যে কোন গোষ্ঠি যে কোন দেশের একটা বোঝা হতে বাধ্য। মায়ানমার সরকার সেকারনেই এ গোষ্টিটাকে কুনজরে দেখে ও ফাক পেলেই এদেরকে বিতাড়ন করার পায়তারা আটে। কেউ যদি এখনো কক্সবাজারের কোন রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি দেখতে পাবেন, ঐসব ক্যম্পেও প্রতিটি পরিবারে ৭/৮ টা করে বাচ্চা কাচ্চা ও সেসব বাচ্চা কাচ্চাদের শিক্ষা গ্রহনের ব্যপারে তার পিতা মাতা খুব কমই আগ্রহী ও তারা নিজেরাও প্রায় সবাই নিরক্ষর। আধুনিক বিশ্বে এটা এখন অমার্জনীয় অপরাধ। রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্যই এ ধরনের মন মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তাহলে মায়ানমার সরকার তাদেরকে কুনজরে দেখবে না বরং সম্পদ হিসাবে মনে করবে।
মায়ানমারের রোহিঙ্গাদেরকে কেউ এখন বিতাড়ন করছে না , জাতিগত দাঙ্গার কারনে নিজেরাই অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। যে কোন দেশেই সংখ্যা লঘুরা মানসিকভাবে দুর্বল থাকে, তারা সুযোগ সুবিধাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কম পায়। উদাহরণ স্বরূপ বাংলাদেশের কথা ধরা যায়। এদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা শিক্ষা দীক্ষার ব্যপারে প্রচন্ড আগ্রহী ও অগ্রগামী, তার কারন তারা জানে টিকে থাকতে হলে এর বিকল্প নেই। যে কারনেই দেখা যায় সরকারী বেসরকারী বহু ক্ষেত্রে হিন্দুরা জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশের সংখ্যা গুরু মুসলমান বা সরকার কেউ তাদেরকে বোঝা মনে করে না, বরং সম্পদ হিসাবে গণ্য করে। রোহিঙ্গারা নিজেদেরকে উন্নত করবে না , বরং নিরক্ষর জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে মায়ানমারের বোঝা হিসাবে গণ্য হবে, এটা থেকে ওরা যত দিন বের হতে না পারবে , ওদের কপালে এরকম ঘটতেই থাকবে। তাই তাদের উচিত – নিজেদেরকে উন্নত করা , মন মানসিকতার পরিবর্তন করা।
বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই ওদের বোঝা বইতে আর সক্ষম নয়। শেখ হাসিনা যাই বলুক, দেশে জন বিস্ফোরন ইতোমধ্যে ঘটে গেছে। এ দেশ অতিরিক্ত জনসংখ্যা গ্রহণ বা ধারনে সক্ষম নয়। তারপরেও রোহিঙ্গারা এদেশে ঢুকলে আর ফেরত যেতে চাইবে না , যা অতীতে দেখা গেছে। যে যাই বলুক, কক্সবাজার অঞ্চলে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৫/৬ লাখের কম হবে না যারা এদেশি মানুষের সাথে মিশে গেছে। মানবিক কারনে ওদেরকে আশ্রয় দেয়া উচিত তবে সেটা আমাদের নিজেদের জন্য একদিন অমানবিক হয়ে দাড়াতে পারে। আপন ভাল পাগলেও বোঝে। তাই সরকারের উচিত বিষয়টি অতি সত্ত্বর আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির দৃষ্টি গোচর করানো ও যাতে মায়ান সরকারই বাধ্য হয় ব্যবস্থা নিতে যাতে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ না করে।
দেশে এক সন্তান নীতি কেন হচ্ছে না ? দু:খজনক ভাবে এখানে ধর্মীয় সংস্কারের কথা অবধারিত ভাবেই চলে আসে। আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি- মুখ দিয়াছেন যিনি আহার দিবেন তিনি। আরও বিশ্বাস করি , জন্ম মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। এমত অবস্থায় এখানে এক সন্তান নীতি কিভাবে চালু হতে পারে তা বোধ গম্য নয়। কোন সরকার সেটা করতে গেলে পরদিনই দেশের সিংহভাগ মানুষই সে সরকারকে ইসলাম বিরোধী আখ্যা দিয়ে তার পতনে আন্দোলন শুরু করবে। ইসলাম ধর্ম যে আমাদের দেশের উন্নতির জন্য একটা বড় অন্তরায় এটা তার একটা নমুনা। অনেকে চীনের এক সন্তান নীতির কথা বলেন। মনে রাখতে হবে চীনের মানুষ বলতে গেলে কোন ধর্ম অনুসরণ করে না, বিরোধী কোন দলও নেই। তাই সেখানে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেয়, তা জনগনকে কঠোর ভাবে পালন করতে হয়। সে দেশে ধর্মীয় কুসংস্কারে ব্যপক প্রভাব থাকলে এমন কি সেদেশের কমুনিষ্ট সরকারও এ ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করার সাহস পেত না। তাই চীনের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করা যায় না যদিও অনেকে না বুঝে সেটাই করে থাকে।
@ভবঘুরে,
রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে যে অমুল্য তথ্যগুলো দিলেন সেগুলোর তথ্যসুত্রটা একটু যদি দিতেন তাহলে আপনি যে মুসলিমবিদ্বেষে জর্জরিত না হয়ে বিস্ময়করভাবে সঠিক কথা বলছেন সেটা আমরা বুঝতে পারতাম।
@ভবঘুরে,
ভাইয়া, অনেক দেরি করে আপনার মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছি বলে দুঃখিত! নানা কারণে তীব্র মনঃকষ্টে ছিলাম। গীতাদির মন্তব্যের জবাবে তা লিখেছিও! প্রথমেই বলে নেই আপনার ভিন্ন মতের প্রতি আমার সন্মান রয়েছে। আপনার কথাগুলো মেনে নিতে পারছি না বলে কখনো আপনাকে নিয়ে উপহাস, প্রকাশ্যে অপদস্থ করার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবি না! শুধু এইটুকুই ভাবি, আপনারও নিশ্চয়ই কিছু যুক্তি আছে, আর এই নিয়েই তো বিতর্কটা!
এরকমটা হয়ে থাকে, বাংলাদেশীরাও এমন ছিল, কিন্তু আমরা পরিবর্তন করেছি, পরিবর্তিত হয়েছি! যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, নিপীড়িত, সভ্যতার আলো থেকে বঞ্চিত একটা জাতির কাছে আলোর প্রদীপ নিয়ে দাঁড়ালে, তারা ভয় পেয়ে পালাবেই; তাদের কিছু সময় তো দিতে হবে! প্রশ্ন উঠতে পারে, অন্ধকারাচ্ছন্ন রোহিঙ্গা জাতিকে আলোর পথ দেখানোর দায় কি বাংলাদেশের? তাহলে পাল্টা প্রশ্ন উঠবে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দানের আলোচনায় আমরা তাদের সামাজিক অনগ্রসরতার বিষয়গুলো আনছি কেন? মূল প্রশ্নটা তো, দায় গ্রহণের!
বিশ্বাস করুন, ভাইয়া, আপনার এ কথাটা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গেছি! মায়ানমার সরকার শুধু এই কারণেই তাদের বিতাড়ন করে? রোহিঙ্গাদের উপর দীর্ঘ অত্যাচার-নির্যাতনের ইতিহাস আপনি পুরো বিস্মৃত হলেন?
একটু আগেই তো বললেন, সরকার বিতাড়ন করছে। আবার এখানে বলছেন, কেউ বিতাড়ন করছে না। এখন তাহলে কোনটা নেব? আর আপনি কোনটা বিশ্বাস করেন? আর একটা কথা, মানুষ শুধু মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই বিতাড়িত হয়? এছাড়া হয় না? জাতিগত দাঙ্গা মানুষকে উদ্বাস্তু বানাতে পারে না?
ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার পরও আমাদের দেশে মিউজিক হয়, চলচ্চিত্র দেখে মানুষ, সুদের ব্যাংক চলছে, নাচা-গানা-বাজনা কোনটাই তো থেমে নেই। সেগুলো আপনার বোধগম্য হয়েছেতো?
চীন আমাদের একটি প্রতিবেশী দেশ, চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে, তো চীনের উন্নয়ন মডেল থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারব না? কোন দেশই অন্য দেশের সাকসেস স্টোরি পুরো ফলো করতে পারে না, এডাপ্ট করতে হয়, কারণ রাজনৈতিক, নৃতাত্বিতক ও আর্থ-সামাজিক ভিন্নতা থাকে!
সবশেষে, আপনার আলোচনার জন্য ধন্যবাদ! অথচ এই আলোচনার জন্যই অন্য একটি ব্লগে আমাকে ‘কাঠ বলদ’, ‘বাল-ছাল’, ‘অভদ্র’, ‘একদিনের মানবিকতাবাদী’-সহ আরো ছাপার অযোগ্য গালি ছাপার অক্ষরেই দেখতে হয়েছে!
ধন্যবাদ কাজী মামুনকে এরকম সংবেদনশীল একটি বিষয় উপস্থাপন করার জন্য। আমি এ নিয়ে সংশয়ে আছি। আর এতে আমার উপর যে কটূ বাক্য বর্ষিত হবে তা মেনে নেয়ার মানসিকতা নিয়েই আমি সাহস করে আমার সংশয়ের কথাটি বললাম। মানবতাবোধে সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্বরা চোখ বুঝে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়ার পক্ষে বলবেন। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। চাকরিসূত্রে এখনও আমি এর পক্ষে তো বটেই, এর জন্য আমার জোর লবি করা, এ্যাডভোকেসি করার দায়িত্ব।
অন্যদিকে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে কথা বলে রোহিঙ্গা কর্তৃক স্থানীয় জন জীবন বিপর্যস্থ করার অবস্থাও অস্বীকার করার উপায় নেই।অবশ্য এজন্য শুধু রোহিঙ্গারা দায়ী নয়। আমাদের প্রশাসনের শিথিল ব্যবস্থাও দায়ী।
যাহোক, আমি রাখাইন প্রদেশের বর্তমান ঘটনাকে মুক্তি যুদ্ধের সময়ের সাথে নয়, ঐ প্রেক্ষাপটের সাথে না মিলিয়ে চিন্তা করছি বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সাম্পদায়িক দাঙ্গার সাথে। বাংলাদেশে সাম্পদায়িক দাঙ্গা হলে হিন্দুরা দল বেঁধে ভারতে পাড়ি জমায়। যা আমি সমর্থন করি না।
আমাকে, হিন্দু জনগোষ্ঠিকে বাংলাদেশে বসবাস করার অধিকার নিশ্চিত করাই হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিসহ মানবিক সংগঠনসমুহের কাজ।তেমনটি কি রোহিঙ্গাদের বেলায়ও প্রযোজ্য নয়?
আমি আনিসল হকের ‘না মা্নুষি জমিন’ শেষ করে স্বকৃত নোমানের ‘বেগানা’ পড়া শুরু করতেই এ রোহিঙ্গা সমস্যা। কাজেই রিফুজি, মানবিকতা, নাগরিক অধিকার,পুশইন,পুশব্যাক নিয়ে মানসিক জটিলতায় ও সংশয়ে দুলছি। এ নিয়ে আরও পড়ে মানসিকভাবে সমাধানে আসার পথ খুঁজছি।
মুক্ত-মনায় বিভিন্ন বক্তব্য ও মন্তব্য আমাকে পথ দেখাবে বলেই আমার বিশ্বাস ও আস্থা।
@গীতা দাস,
নিঃসন্দেহে রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে অবস্থানের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের সরকারের, তাদের মানবাধিকার কর্মীদের বা আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোর। তারা করবে, এটা ভেবে কি আমাদের মানবিক দায় শেষ হয়ে যায়? কি হবে ওদের, কেউ যদি না করে? ডেফিনিটলি সাহায্য করার দায় বাংলাদেশের একার না, কিন্তু মানবতার দায় প্রত্যেকটা মানুষের। আর কেউ না করলে আমার দায় মিটে যায় না।
আমার ছাত্র শুভ্র অষ্টম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় বলেছিল বড় হয়ে ও বাবা মা নিয়ে ভারতে চলে যাবে, এদেশে হিন্দুদের মূল্য নেই। ওকে বলেছিলাম, এটা তোমার দেশ, ভারত তো তোমার দেশ না। ঐখানে তুমি তো কেউ না। ও বড় হয়েছে, একটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজে পড়ছে, বুঝতেও শিখেছে নিজের দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে ওদের অবস্থা আরো করুণই হবে, এখানে ওদের পরিচয় আছে, শিক্ষা, কর্ম সবকিছুতে ওদের নাগরিক অধিকার আছে, যেটা ভারতে গেলে থাকবে না। এখন অবস্থাটা যদি হত শুভ্র এর মত, না বুঝে বলছে, বা অবস্থা তেমন খারাপ নয়, দূর্বল মানসিকতার জন্য কেউ কেউ চলে যাচ্ছে, এক কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অবস্থা তো তেমন নয়। তারা সত্যি অনিশ্চিতের উদ্দেশ্য বেরিয়েছে… অবস্থা যদি করুণ না হত, তাহলে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারলে তো মায়ানমারের দিকে ফেরত যেতো, আবার সমুদ্রে ভাসতে হত না। একটি স্থল থেকে আরেকটি স্থলে যাওয়াও এক কথা, কিন্তু তারা তো সেটুকুও পাচ্ছে না।
কিছু হলেই যেসব হিন্দু দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার কথা চিন্তা করে, তাদের সমর্থন না করা, আর এইরকম অবস্থায়, কিছু জলে ভাসমান মানুষকে আশ্রয় না দেয়া এক কথা নয়।
শেষ কথাটা আরো করুণ, মানবতাবাদী হই আর যাই হই, আমাদের এসব অভিমতে কি বর্ডার খুলবে? খুলবে না। আজকের ফেসবুক, অন্যান্য ব্লগের দিকে চোখ বুলালেই বুঝে যাবেন, সবার কাছে তাদের আশ্রয় না দেয়ার স্বপক্ষে অজুহাত আছে। জাফর ইকবাল স্যারের আজকের কলামে যারা স্যারকে মাথায় করে নাচে, তারা ক্ষেপে গেছে… জিজ্ঞেস করতেছে, সাতক্ষীরার ঘটনার সময় কই ছিলেন আপনি? কলাম লিখেন নাই কেন? জানতে ইচ্ছা করতেছে, তাদের অপরাধ কি তাদের আশ্রয় দিয়ে বাঙ্গালীর কোন ফায়দা হবে না সেটা?
@গীতা দাস,
বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তার অবকাশ আছে! দ্বিমত আছে! বিতর্ক আছে! বিতর্ককারীদের পক্ষে যুক্তি আছে! আমি একটি পক্ষ নিলেও মনে করার কারণ নেই, অন্য পক্ষের সবাই ‘কাঠ-বলদ’ বা ‘বদমাইশের দল’।
দিদি, আমিও ভয়ানক মানসিক অশান্তিতে আছি! আমিও মানসিকভাবে সমাধানে আসার পথ খুঁজছি! রোহিঙ্গাদের ছবি দেখে চোখ ভিজে উঠেছিল; আবার রোহিঙ্গাদের কারণে অশান্তিতে থাকা কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষেরও বোধ করি অনেক যন্ত্রণা রয়েছে! কিন্তু তাই বলে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাকের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না? বললে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, কাঠবলদামী, বদমাইশি বা একদিনের লোকদেখানো মানবতাবাদের দায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে?
দিদি, বুঝতে পারছি না! ভয়ানক মনোকস্টে আছি! কাজে মন দিতে পারছি না! ঘুমুতে পারছি না! বুকের ভিতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে!
মানুষ কখন তাঁর ভিটামাটি ছেড়ে সুমদ্রে পাড়ি দেওয়ার চিন্তা মাথায় আনে , যখন সে আর কিছু করতে পারে নাহ । অবস্থার বিপরীতে দাঁড়াতে অক্ষম । এমন একটা সময় আমরাও অতিবাহিত করেছিলাম । দিপু মনি ম্যাডাম বরাবরই তাঁর দ্বারা বজায় রেখেছেন । লিবিয়াতে যখন সংঘাত শুরু হয়েছিল তখনকার দৃশ্যপট মনে আছে অনেকেরই হয়তো । বাঙ্গালিদের লিবিয়া থেকে সরিয়েছিলেন সবার পরে । যা ছিল অতান্ত অমানবিক । আমরা ব্লগে ব্লগে বহু লেখা লিখেছি , পত্রিকায় ছাপাও কম হয়নাই । কিন্তু দিপু মনি ম্যাডামের দৃষ্টিতে কেউ আনতে পারে নাই । বুঝের পাবলিককে যেমন বুঝানো মুশকিল , দেখে না দেখার ভান ও ঠিক তাই । তাঁর সাথে রয়েছে অসংখ্য মুরিদ্দান , যাহারা নম নম করাতেই ব্যস্ত । তাহারা আবার ইহাকে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত করায় মহৎ অবদান রেখেই চলছেন । মানবিক দিক , মানবতাবোধ আমাদের রাজনৈতিক বাক্তিদের মাঝে উদয় হোক সেই কামনাই থাকল ।
@শাহজালাল,
(Y)
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
দ্বিতীয়ত, আমাদের নিজেদের থাকার-খাবার উপায় নেই, তাদেরকে এনে আমরা কিভাবে সামাল দেব? তাছাড়া, সামাজিক রাজনৈতিক অনেক ধরণের সমস্যা আছে আরো। কেন আমরা সেই দায় নিজের কাঁধে নেব? কিন্তু, দ্বিতীয়ত’র সামনে যে প্রথমত রয়ে গেছে। আগেতো তাদের আশ্রয় দেই। ভয়ার্ত চোখে যে-শিশু নৌকা করে পালিয়ে আসে, আর এসে দেখে রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পোশাকীবাহিনী, এই পৃথিবী সে-শিশুর কাছে মুখ দেখাবে কি করে?
সময়োপযোগী লেখার জন্য ধন্যবাদ। (Y)
@মইনুল রাজু,
(Y) সত্যি বলতে কি, পৃথিবীর মুখ দেখানোর মত বিষয়গুলো কতিপয় মানুষের কাছে বড় উচ্চমার্গের বিষয়! বরং নিজের মুখের ষোলআনা সুরক্ষা নিশ্চিতকরনেই এদের ধ্যান, এদের মান!
আলোচনার জন্য ধন্যবাদ, মইনুল ভাই!
রোহিঙ্গা কথাটি এসেছে রহম থেকে । অষ্টম শতাব্দীতে প্রথম রামরী উপদ্বীপে প্রথম মুসলমানরা আসে তখন আরাকান রাজা তাদের হত্যা করার নির্দেশ দেন । মুসলমানরা তখন রহম বলে চিৎকার করে উঠে । সেই থেকে তাদের নাম রোহিঙ্গা। আবার অনেকে মনে করে রোহিঙ্গারা “থাম্বু খ্যা” নামে একটি গোষ্ঠীর মানুষ ,যারা জাহাজে করে আরাকানে এসেছিল। আর রোহিঙ্গা কথাটি তাদের মধ্যে থেকে এসেছে। আবার অনেকে মনে করে তারা আফগানিস্তানের রুহার বংশধর ।তাই তাদের নাম রোহিঙ্গা। আবার অনেকে মনে করেন ম্রহাং থেকে রহাং কথাটি এসেছে। ম্রহাং হচ্ছে আরাকানের আদি নাম । আর রোহিঙ্গা কথাটি এসেছে এই রহাং থেকে। তবে সবচেয়ে বড় প্রচলিত কথা হচ্ছে বার্মার ইতিহাসে ১৯৫০ এর আগ পর্যন্ত আদমশুমারিতে রোহিঙ্গা নামে কোন শব্দ নেই । অনেকে মনে করে আসলে তারা বাঙালি-চট্টাগ্রাম বংশোদ্ভূত । যারা ব্রিটিশ আমল বা তার পরবর্তীতে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বার্মা গিয়েছিল । কিন্তু আর দেশে ফেরত আসে নি। কারণ সে যুগে বার্মা ছিল অর্থনৈতিক অনেক কিছুর প্রানকেন্দ্র। রোহিঙ্গাদের ভাষার নাম রোহিঙ্গা ভাষা যা আরবি,উর্দু ও হানাফি হরফে লেখা হয়। আধুনিক ইতিহাসবিদেরা মনে করেন রোহিঙ্গাদের সংস্কৃতির সাথে চট্টাগ্রামের লোকদের সংস্কৃতির প্রায় মিল আছে। তাই তাদের বেশিরভাগই আসলে চট্টগ্রামী বাঙালি। ১৯৪২ সালের ৮ই মার্চ আরাকানিদের সাথে রোহিঙ্গাদের দাঙ্গাতে ৫০০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়। এই হত্যার বদলা নিতে রোহিঙ্গারা উত্তর আরাকানের ২০০০০ আরাকানিকে হত্যা করে , যেখানে উ খায়ে নিহত হন। উ খায়ে রোহিঙ্গা ও আরাকানিদের মধ্যে শান্তি আলোচনার চেষ্টা করছিলেন । এর পরে বার্মাতে জাপানি আগ্রাসনের সময় অনেক রোহিঙ্গা ধর্ষিত ও নিহত হয় । এরপর জান্তা সরকার ঘোষণা দেই তারা জাতিশুদ্ধি অভিযানে নামবে ।তারা রোহিঙ্গাদের কখনও বার্মার নাগরিক মনে করে না । তাই রোহিঙ্গাদের উপর নেমে আসে জান্তা সরকারের চরম নির্যাতন । অবশেষে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড পালাই। থাইল্যান্ডও আমাদের মত চরম রোহিঙ্গা সমস্যাতে ভুগছে। রোহিঙ্গাদের উপর চট্টগ্রামের লোকদের দৃষ্টিভঙ্গি ভালো না ।এর অনেক শক্ত কারণ রয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে
১. রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা বেশি । হয়ত চরম দারিদ্রই এর কারণ । কক্সবাজার , টেকনাফে আইন-পরিস্থিতির অবনতির জন্য এরাই মুলত দায়ি।
২.স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পরা ।
৩ .বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের মূল কাজটা রোহিঙ্গা মহিলারা করে থাকেন।
৪. রোহিঙ্গারা স্থানিয় শ্রম বাজার দখল করে নিয়েছে । যে কাজ বাঙ্গালিরা ৩০০ টাকার নিচে করবে না , সেখানে তারা তা ১০০ টাঁকা দিয়ে করে দিচ্ছে। এতে বাঙালিরা কাজ পাচ্ছে না। আর রোহিঙ্গাদেরও মেনে নিতে পাড়ছে না।
৫. রোহিঙ্গারা ভুয়া পাসপোর্টে মধ্যপ্রাচ্যে যায়। সেখানে তারা মাদক পাচার থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে। আর ধরা পরলে পাসপোর্টের কারনে নামটা আসে বাংলাদেশের। এই কারনে প্রবাসী চট্টগ্রামীরা তাদের উপর ক্ষুদ্ধ।
৬. অনেক রোহিঙ্গা স্থানীয়দের ভুমি দখল করছে , এতে স্থানীয়দের সাথে সংঘাত বাড়ছে।
৭. রোহিঙ্গাদের অনেকে বনজ সম্পদের অবৈধ আহরনে ব্যাস্ত , যা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।
আমি রোহিঙ্গাদের বিরোধিতা করে এই পোস্ট লেখিনি । আমার লক্ষ্য ছিল নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ।
বার্মাতে এই দাঙ্গা দুঃখজনক । তবে আমাদেরকেও সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে । আমি রোহিঙ্গাদেরকে ঢালাও ভাবে অবস্থান দেবার বিপক্ষে। তবে আপদকালিন সময়ে তাদেরকে সেন্টমাটিন বা অন্যকোন দ্বীপে আশ্রয় দেওয়া যাই ,যাতে অবস্থা উন্নতি হালে তাদেরকে আবার বার্মাতে পাঠান যাই
@মিথুন দাশ,
পোস্টের শুরুতে এমনটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত পড়ে যা পেলাম, তাকে আর যাই হোক নিরপেক্ষ বিশ্লেষন বলা যায় না! বলতে কি, একপেশে বিশ্লেষণের এক আদর্শ দৃষ্টান্ত হিসাবে উপস্থাপন করা সম্ভব আপনার এই পোস্টকে!
মনে হয় না এভাবে রোহিঙ্গা নামের উৎপত্তি হয়েছিল! বরং, আপনার কথিত ‘ম্রহাং থেকে রহাং’ তত্বটিই কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে আমার কাছে!
এই আধুনিক ইতিহাসবিদদের নাম বলে দিলে ভাল হত! আমরাও না হয় কিছু পাঠ করতে পারতাম! আর একটা কথা, চট্রগ্রামের বাঙ্গালিদের সাথে মিল থাকা তো স্বাভাবিক, যেহেতু আরাকান রাজ্য ব্রিটিশ দখলে ছিল বহুদিন এবং চট্রগ্রামের কাছেই এর অবস্থান! কিন্তু তাই বলে ‘..তাদের বেশিরভাগই আসলে চট্টগ্রামী বাঙালি।‘- এই তত্ত্ব আপনি কই পেলেন? আপনার কথিত ঐতিহাসিকদের বইতে? সামান্য নৃতাত্তিক মিলের সূত্র ধরেই তারা রায় ঘোষনা করে দিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই আসলে চট্রগ্রামী বাঙালি এবং এই যুক্তিতে মিয়ানমারের দৃষ্টিতে বহিরাগত হওয়া যুক্তিযুক্ত?
আপনার ‘নিরপেক্ষ বিশ্লেষন’ এখানে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে, এত বড় অনিরেপেক্ষ ফুটো তৈরি করেছে, তা বোধ করি কারো চোখ এড়িয়ে যাওয়াই সম্ভব নয়! রোহিঙ্গা নিহত ৫০০০, আর আরাকানি (মানে মায়ানমারের অরিজিনাল) ২০,০০০? এই সংখ্যাগুলোও নিশ্চয় আপনার উপরোল্লিখিত বইগুলোতে ধ্রুবতারার মত জ্বলজ্বল করছে!
আপনি যে শক্ত কারনগুলি উপস্থাপন করলেন, তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এবং আমলে নেয়ার যোগ্য! কিন্তু কথা হচ্ছে, আপনার উল্লিখিত শক্ত কারণগুলোর প্রতিটি আবার চট্রগ্রামের লোকদের (কতিপয়) জন্যও প্রযোজ্য, সমভাবে, গুনে-মানে-সংখ্যায়! তো, এখন কেউ যদি উপসংহার টেনে বাংলাদেশের মূল স্রোতে চাটগাইয়াদের ঢালাও অবস্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাকে কি কোন দোষ দেয়া যাবে?
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান নিয়ে আপনার ভিন্ন মত থাকতেই পারে; কিন্তু নিরপেক্ষতার কথা বলে যেভাবে একদেশদর্শী বিশ্লেষন করে গেলেন, তাতে সামান্য আশাহত হয়েছি! তবু আপনার বিস্তারিত আলোচনার জন্য ধন্যবাদ!
যে পরিমান মানবতা নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাঙ্গলাদেশে আশ্রয়ের জন্য চিৎকার করা হচ্ছে, সেই পরিমান মানবতা দিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকের উপর চাপ সৃষ্টি করা হোক, হিসাব নিকাশ না করেই যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের পক্ষে বলছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন,
১। ঠিক কী পরিমান রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দেব ? একটি অংশ নাকি সবটাকেই ? আশ্রয় দেয়া শুরু করলে মিয়ানমার থেকে খেদানোর পরিমান যদি বেড়ে যায় তাহলে বাংলাদেশ সরকারের করনীয় কী হবে ?
২। রোহিঙ্গাদের কতকাল ধরে আশ্রয় দিতে হবে ? দাঙ্গা এর আগেও হয়েছে এবং আশ্রয়ের ব্যাপারটাও চলেছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি, বরং আশ্রিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ক্ষতি করেছে বিভিন্নভাবে, তাহলে নতুন করে ঝামেলা বাড়ানোর পেছনে আসলে যুক্তিটা কী ?
৩। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরৎ নেয়না এবং নেবেওনা, তা হলে আগত জনগোষ্ঠির ভাবি ভরণপোষণ ও জীবন যাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কী কী ব্যাবস্থা নিতে পারে ? যদি কোন সময় রোহিঙ্গাদের সাথে বাঙ্গালীদের দাঙ্গা হয় তখন কোন পক্ষের মানবতা কীভাবে রক্ষিত হবে তা জানতে মুঞ্চায়।
এই মানুষগুলোকে আশ্রয় না দেই তাহলে পৃথিবীর মানবতার ইতিহাস কখনোই আমাদের ক্ষমা করবে না। আমরা কখনোই আমাদের বিবেকবোধের কাছ থেকে রক্ষা পাবো না। তাই সব পরিচয় ভুলে গিয়ে আমাদের এখন এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাড়ানো উচিত। সেটি করতে না পারলে আমরা যারা নিজেকে মানুষ বলে দাবি করি তারা আর মানুষ থাকবো না।. সবার আগে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নেয় আর নাস্তিকেরা তো মুখ দিয়ে ফেনা তুলে ফেলায় বলে বলে তাদের ধর্ম মানব ধর্ম (যদিও ও মিথ্যা) , এখন দেখতেছি সব চুপ……… আমি অনেক আগেই এই ধরনের লেখা রোহিঙ্গা দের নিয়ে আশা করেছিলাম , কিন্তু অনেক দেরিতে পেলাম যা প্রত্যাশার বাইরে , আর আকাশ মালিক কিছুদিন আগে তো দেখলাম বেশ লাফালাফি করে সাতক্ষীরার একটি ঘটনা এর উপর লিখছিলেন… কেনও ওটা মুসলিম দারা হিন্দু নির্যাতিত ছিল তাই? আর এটা মুসলিম নির্যাতিত তাই চুপ আর দ্বিমত পোষণ? ভালই পারেন আপনি ……
১৯৭১ সালে ২ কোটি বাঙালি সীমান্ত পাড়ি দেয় , তখন ইন্ডিয়া মানবতার দায়িত্ব পালনে কুণ্ঠা করে নি , প্রায় ২ কোটি মানুষের ভরণ পোষণের এই অসম্ভব কাজটি তারা করেছিল তাদের মানবিক দায়িত্ব থেকেই,
বেয়নেট আর বুলেটে রক্তাক্ত মায়ানমার । রোহিঙ্গারা মরছে অকাতরে । ওদের মারা হচ্ছে নির্বিচারে । এই ‘ওদের’ মাঝে আছে শিশুরা,মেয়েরা, বৃদ্ধা মায়েরা । ওরা মৃত্যুভয়ে ছুটে আসছে বাংলাদেশের সীমানায় । একটুখানি আশ্রয়ের আশায় । ওদের পেছন পেছন ধারালো বেয়নেট আর বুলেট ভর্তি রাইফেল নিয়ে তাড়া করছে কিছু অমানুষ – আর ওদের সামনে সবুজ বাংলাদেশ । অথচ কতটা অমানুষ হতে পেরেছি আমরা মাত্র এই ৪০ বছরে । ওরা যখন ওদের জীবনটুকু বাচাবার এক প্রচন্ড আকুতি নিয়ে আমাদের কাছে আসছে, তখন আমরা বুট-জুতো পড়ে , হাতে রাইফেল উচিয়ে জানোয়ারে মত ওদেরকে ওই মৃতুকূপে ফেরত পাঠাচ্ছি ………।।
মুসলিম রোহিঙ্গা দের করুন অবস্থা সত্যি অকল্পনীয়, কিছু ছবি এখানে দেখাতে চাই, তাহলে একটু হলে ও অনুমান যোগ্য হবে কি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে, কিন্তু কিভাবে আপলোড করতে হয় কেও যদি বলতেন ?
@বেয়াদপ পোলা,
যতবারই বিষয়টি চিন্তা করি, চিরচেনা আবাস ছেড়ে প্রান বাচাতে পালিয়ে আসা এক দল নিপীড়িত মানুষকে আমরা আবার ফেরত পাঠাচ্ছি অকুল দরিয়ায়, ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে! অসহায় মানুষগুলোর ছবি দেখলে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে উঠে!
আমরা পুশ করানোয় সিদ্ধহস্ত; পুলের অভ্যাস তেমন নেই, মানবিক ডাকে সাড়া দিয়ে কাছে টেনে নিতে পারি না আমরা!
আমি নিশ্চিত নই, তবে মন্তব্যের ‘ছবি’ বাটনটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন!
@বেয়াদপ পোলা,
ভাবছিলাম আপনার সাথে কোনদিন তর্কের প্রয়োজন পড়বেনা। আরে ভাই সাতক্ষীতারায় আগুন কেন লেখাটা আপনার জন্যে দুঃসপ্ন হয়ে দেখা দিল নাকি। সাতিক্ষীরা দেখেছেন দিগন্ত বড়ুয়ার পার্বত্য চট্টগ্রাম তো দেখেন নি। জিহাদের জন্যে মানুষকে অনুপ্রাণীত করতে কোরানের আয়াত দিয়ে মুক্তমনা ভরে ফেলুন আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু আমার দেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনদিন কটাক্ষ করে একটা কথাও বলবেন না। এটা আমার অনুরুধ নয় ওয়ার্নিং।
মুক্তমনায় এসে এতোবড় স্পর্ধা দেখাতে পারলি? রাজাকার বেয়াদপ কোথাকার। পারলে তোমার মন্তব্যগুলো এখানে দাও, দেখো আমিও জিভ ধরে টান দিতে জানি।
ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি নিয়ে লেখার জন্য।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া। মনে পড়ছে নজরুলের চিরন্তন লাইনঃ
বাংলাদেশ সরকার যে অবস্থান নিয়েছে এটা পুরোপুরি একটা অমানবিক এবং চরম ভুল সিদ্ধান্ত। কোন অবস্থায় মানুষ নিজ দেশের ভিটেমাটি ছেড়ে সাগরে তরী ভাসায় আরেক দেশে যাওয়ার জন্য সেটা আমাদের চেয়ে ভালোতো আর কোনো দেশের জানার কথা নয়। অথচ, সেই আমরাই বিপদাপন্ন নিরীহ মানুষগুলোকে আশ্রয় না দিয়ে গায়ের জোরে মাঝ নদীতে বা মাঝ সাগরে আটকে দিচ্ছি আজগুবি সব অজুহাত দিয়ে।
দুর্ধর্ষ একটা লেখা হয়েছে মামুন। (F)
@ফরিদ আহমেদ,
রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ছবি দেখে চোখ ভিজে উঠেছিল! পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পড়ে ভিতরে তীব্র দহন হতে থাকে! তখুনি লেখার সিদ্ধান্ত নেই!
অনেক অনেক ধন্যবাদ, ফরিদ ভাই!
১) ইতিমধ্যেই আমরা পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা এবং ছয় লাখ বিহারীদের সমস্যায় জর্জরিত। এক সময় ভারতের মিজোরাও ছিল আমাদের সাহায্যপ্রার্থীদের তালিকায়। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া এই সমস্যার সমাধান তো নয়, বরঞ্চ তা আগুনে ঘি ঢালারই সামিল। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেওয়া শুরু করলে মায়ানমার সরকার বরঞ্চ ভবিষ্যতে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদেরও অত্যাচার-নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের নিজ ভূ-খণ্ড থেকে সোৎসাহে বিতাড়ন শুরু করতে পারে, কারণ তারা রোহিঙ্গাকে বাঙালি হিসেবেই দেখে, মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে নয়। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপই হতে পারে এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পদক্ষেপ।
(১৯৭১ সালে বিহারীরা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল)
২) একদল মানুষ ধর্ম ধর্ম করে রোহিঙ্গাদের প্রানের ভাই বানিয়ে নিয়েছেন। তাই তাদের অত্যাচারের প্রতিউত্তর দিতে সীমান্ত খুলে দেয়া হোক। বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচে ঘনবহুল দেশ। এই দেশে অতিথি এনে লঙ্গরখানা খুলে খাওয়ালে আমাদের দেশের আধাপেটা মানুষের কাছে আমরা কি জবাব দেব? এই সকল রোহিঙ্গাকে দাঙ্গার পর মায়ানমার সরকার ফেরত নেবে তার নিশ্চয়তা কি? আমি হলফ কেটে বলি এক জনকেও ফেরত নেবে না,পেটের জ্বালায় সততা জানালা দিয়ে পালায়,কিছু দিন পরই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা,দলের বাজুকা,রামদা,চাপাতি হিসেবে রোহিঙ্গাদের দেখতে পাওয়া শুধুই সময়ের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। কবি বলেছেন-
“আমার জলেই টলমল করে আঁখি
তোমার চোখের অশ্রু কোথায় রাখি”
৩) ৯ লাখ বর্গ মাইলের দেশে ৫ কোটি লোক মিলেমিশে বাস না করতে পারলে সেই দায় আমরা কেন দেব? ইতোমধ্যে তো অনেক নিয়েছি। কিছু ঘটনা বাদ দিলে আমরা তো ১৭ কোটি লোক নিয়ে ভালোভাবেই বাস করছি। সৌহার্দ,বন্ধুত্তের সাথে।
শুনেছি একদল রোহিঙ্গা এক বৌদ্ধ মেয়েকে গ্যাং রেপ করে ঘটনার সুত্রপাত করেছে। বিদেশী পত্রিকা তাই রেপের রগরগে বর্ননা পাইনি। কি নিশ্চয়তা এই আশ্রয় নিতে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরেকদল রেপারু বাহিনী নেই? জাতের মানুষে জাতের ছাপ পড়ে। যে গ্রাম গুলোতে আশ্রয় দেয়া হবে,তারপর কি সেই গ্রামের নারীদের পালা শুরু হবে?
তবে বলতে বাধা নাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই,বহু নারী,শিশু,সাধারন নির্দোষ মানুষ প্রচণ্ড কষ্ট করছেন,মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভিক্টিমের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আর সহানুভূতি ছিল,আছে এবং থাকবে। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই,প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু আমাদেরও তো হাত পা বাধা। আমাদের মানুষ মরছে না খেয়ে,আমাদের মানুষই তো মানবেতর জীবন যাপন করছে এর মধ্যে আমরা আবার কাকে আশ্রয় দেব? সামলে উঠতে পারবো কি আমরা সেই ধাক্কা? আহসান হাবীব বলেছেন ” এক ফোটা শিশিরেই বন্যা হতে পারে,যদি গর্তটা হয় পিঁপড়ার।”
আমাদের নিজেদের গর্তেরই তো ঠিক নাই,জীবনের নিরাপত্তা নাই,মুখের খাবার নাই,এর মধ্যে আবার আরও কত মুখ আনবো ভাগ বসাতে?
মানবিক সকল সাহায্য সরকার করুক,শুনেছি সেখানকার এলাকার লোকজনও সাহায্য করছেন খাবার,কাপড় দিয়ে। কল্যাণ হোক। মানবতার জয় হোক। কিন্তু আমাদের নিজেদের মানবতা বিপন্ন করিয়া নহে।
নিন্দা জানাই,ঘৃণা জানাই,কিন্তু সীমান্ত খুলে দেবার বিরুদ্ধে অবস্থান সঙ্গত কারনেই।
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
আপনাকে সমস্যাটির প্রকৃতি বুঝতে হবে, ভাইয়া! রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের কেউ নিমন্ত্রন করে ডেকে আনছে না! তারা ঢুকে পড়ছে প্রান বাঁচাতে বসত-ভিটা ছেড়ে! আমরাও যেমনি গিয়েছিলাম ভারতে ১৯৭১ এ। তখন ভারতের অনেকেই সন্দেহ করত, পাকিস্তান কৌশল করেই ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংসের জন্য পূর্বপাকিস্তানবাসীকে ভারতে পাঠাচ্ছে এবং ভারতের উচিত তাদের গ্রহন না করা। এখন ভেবে দেখুন, ইন্দিরা গান্ধী যদি তাদের আহবানে সাড়া দিতেন, তা হলে কি অবস্থা দাঁড়াত!
রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দেয়া যে সমস্যার সমাধান নয়, তা সকলেই জানে এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপই একমাত্র উপায়, তা নিয়েও কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু সেই আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তো এই অসহায় মানুষগুলোকে থাকতে দিতে হবে, আমরা পারি না পুশ ব্যাক করে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিতে।
শুধু বিহারীরা? ভুলে গেলেন আপনার স্বগোত্রীয় বাঙালি ভাইয়েরাও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল? তো সেই অপরাধে সমস্ত বাঙালির সাথে সম্পর্ক ছেদ করেননিতো?
চীনের মত সমৃদ্ধ দেশ ‘ওয়ান চাইল্ড’ পলিছি এডোপ্ট করেছে বহু আগেই। তবু আমরা করছি না? আমরা কি জবাব দেব? আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীই বা কি জবাব দেবেন, যেহেতু উনি নিজেই বলেছেন যে, অধিক জনসংখ্যাকে উনি কোন দায় মনে করেন না।
মায়ানমার (অনেকটা ইসরায়েলের মত করেই) রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে, আবার পাঠাচ্ছে- এমন ছলচাতুরির দিন মনে হয় শেষ হতে চলেছে। মায়ানমার এখন পরিবর্তিত হয়েছে এবং আশা করা যায় একটা বাস্তবসম্মত সমাধান বেরিয়ে আসবে, যাতে করে নিয়মিত ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে।
লেখাতেই উল্লেখ করেছি, গুটিকয়েক রোহিঙ্গা মুসলিমের রেপ থেকেই সমস্যার সুত্রপাত। কিন্তু তারপরও আপনার এ যুক্তিটি মোটেই গ্রহনযোগ্য মনে হল না, ভাইয়া! আপনি আপনার দেশের রেপারু বাহিনীর কথা ভুলে গেছেন বোধ হয়! প্রতিদিন আপনার দেশে কি পরিমাণ রেপ হয় আপনারই স্বজাতির পালোয়ানদের দ্বারা, তার হিসাব নিয়েছেন? তো এখন, আপনাকে-আমাকে কেউ যদি এ পয়েন্টে রেপারু বানিয়ে দেয় বা সন্দেহ করে, কি করবেন? আসলেই তো কোন নিশ্চয়তা নেই, কোন কিছুরই! রোহিঙ্গা মুসলিম বলেন, আর বাঙালি মুসলিম বলেন!
সত্যি? অনেক অনেক তর্কসাপেক্ষ!
এই সহানুভূতি মাঝ দরিয়ায় অসহায় মানুষগুলোকে ঔষধ, জ্বালানি আর খাদ্যদানের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকবে, বোধহয়? যখন মানুষ ডুবছে, আপনি তাদের খড়কুটো না দিয়ে ঔষুধ দিতে চাইছেন কি?
আলোচনার জন্য ধন্যবাদ!
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
রোহিঙ্গাদের সমালোচনা করে অনেকগুলো কথাই লিখলেন, যে কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুপ্রবেশের বিপক্ষে আপনার অবস্থান। কয়েকজন দুষ্কৃতিকারীর অপরাধে সবকজন রোহিঙ্গাকে শাস্তি দেবেন? রেপারু বাহিনীর কথা বললেন, তাই না? কদিন আগে আদালত প্রাঙ্গন থেকে তুলে নিয়ে পুলিশ রেপ করেছে বাবার সাথে আসা কন্যাকে। বাংলাদেশে অজস্র মেয়ে রেপড হচ্ছে, যা লোকের সম্মুখেও আসছে না। রেপারুরা বাংলাদেশে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায়, শাস্তি হয় বড়জোর চাকুরী থেকে বদলী বা সল্প সময়ের জন্য স্থগিত বা সামান্য অর্থদন্ড। বাঁচাতে পারছেন আপনি আপনার মা বোনদের? দেশের ভেতরে বসে থাকা রেপারুদের আদর দিয়ে প্রতিপালন করে শরণার্থীদের, যারা প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় চাইছে, তাদের মাঝে রেপারু আছে সন্দেহে তাদের সবাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন? রেপের রগরগে কাহিনী পড়তে হলে আপনার বিদেশী পত্রিকায় বর্মে মেয়ের কাহিনী কেন পড়তে হবে, দেশে আপনার পত্রিকার অভাব আছে? রোজ সেখানে রগরগে কাহিনী পড়তে পারবেন।
সুরঞ্জিতের টাকা কাহিনী, আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থার দুর্নীতির অভিযোগে সাহায্য স্থগিত, শেয়ারবাজারে স্বর্বশান্ত হওয়া লোকের গল্প, এইসব অনিয়মের দেশে আপনি বলছেন কি জবাব দেবেন আমাদের দেশের মানুষের কাছে? এখন কি জবাব দিচ্ছেন যারা না খেয়ে আছে তাদের কাছে? কোনদিন না খেয়ে থাকা মানুষের কাছে জবাব দেবার কথা তো কোন সরকার রাজনীতিবিদ বা ফেসবুকের গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসা তরুণদের কাছে শুনিনি। আজ কেন জবাবের অজুহাত দিচ্ছেন?
বাংলাদেশ বড় নিয়মতান্ত্রিক দেশ মনে হচ্ছে আজ, মন্ত্রীরা দুর্নীতি করেনা, এই দেশে এর আগে কোন মেয়ে রেপড হয়নি, হলেও যেন বিচার হয়েছে, দেশের সবাই নীতিবান, দুর্নীতি হয়না, কেউ না খেয়ে থাকে না, রোহিঙ্গারা আসলে যেন আমাদের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে সব খেয়ে ফেলবে… চমৎকার! টিআইবির রিপোর্টে শীর্ষে থাকা একটা দেশের মানুষ যখন গণহারে এইসব খোড়া যুক্তি দিয়ে মানুষকে মরার জন্য সাগরে ফেরত পাঠায় তখন তাদের বাহবা জানাতেই কেবল ইচ্ছা হয়। আশা করি না হোক কোনদিন, আবার কখনও বাঙ্গালীকে কোনদিন শরণার্থী হতে হলে কোন মুখে সাহায্য চাইবে? “Tit for tat” – একটা অপটিমাম বিহেভিওরাল স্ট্রাটেজী। আমরা সুবিধা নিয়েছি, সুবিধা দেইনি, সুতরাং এরপর প্রাকৃতিক, গাণিতিক নিয়ম অনুসারে আমরা আশ্রয় পাবো না। সমস্যা হচ্ছে, হয়ত আমাদের ভুগতে হবে না, হয়ত হবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে।
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
আপনার মানবতার পক্ষে শোগানটা আমার মন ভরিয়ে দিয়েছে। এই যে দেখুন কেঁদে ফেলেছি।
আজীবন অসহায় উৎপিড়ীত কিছু রোহিঙ্গাদের বাঙলাদেশে আসতে দিতে যদি আপনার হাত বাধা থাকে তাহলে ওরকম নপুংশক মানবিক ডান্ডার ঝান্ডা না উড়িয়ে কাঁঠাল কোন লিঙ্গের এটা নিয়ে গবেষনা করতে পারেন। সহ ব্লগার হিসেবে আপনাকে একটা ক্লু দিতে পারি। কাঁঠালের বিচি আছে। এবার ভেবে বের করুন। আর কোন ক্লু দিবো না কিন্তু!
@সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড,
আপনার সাথে একমত। ১৯৭১ এ ভারত শরণাথী আশ্রয় দিয়েছিল যতটা না মানবিক কারনে তার চাইতে বেশী ছিল রাজনৈতিক কারন। ইন্দিরার সেই বিখ্যাত উক্তি ” হাজার সাল কা বদলা লিয়া” তারপরে ও আমি বলব সময়ের প্রয়োজনে ভারত আমাদের জন্য অনেক করেছে। কিন্তু রহিঙ্গা সমস্যাটা ভিন্ন।সারা বিশ্বে এন্টি মুসলিম রাজনীতি এখন প্রকট। গত বছর জাপান মুসলিম অভিবাসী, ছাত্র, গবেষকদের ভিসা নবায়নে গরিমসি করেছিল। পৃথিবির অন্যান্য দেশেও এই সমস্যা বিদ্যমান। গণতন্ত্রের মানস কন্যা সুচির কাছ থেকে আমরা এখনও কোন আশার বাণী শুনিনি। তারমানে দাঁড়ায় নেতৃেত্বর পরিবতন হলেও মিয়ানমারের পূববর্তি সাম রিক সরকারের নীতির পরিবতন হয়নি।
@পলাশ,
এ কথাটা বিএনপি-জামাত ঘরানার রাজনৈতিক নেতা-কর্মিদের একটা প্রিয় বুলি এবং এ কথা বলে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে প্রচ্ছন্ন আঘাত করি। প্রথমত, আমরা আশ্রয় পেয়েছি, এটাই বড় কথা; কে কি কারনে আশ্রয় দিয়েছিল, তা বিশ্লেষন করবে আশ্রয়দানের বিরোধীরা, মানে রাজাকার-পাক হানাদার বাহিনী, আমরা কেন? দ্বিতীয়ত, ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়দান ছাড়া কি আমরা মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হতে পারতাম না? অবশ্যই পারতাম। কারন বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ততদিনে ‘আমরা মরতে শিখেছি’, তাই ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে’ পারত না!
এন্টি মুসলিম রাজনীতি বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন, দয়া করে ব্যাখ্যা করুন! ওসামা বিন লাদেনরা কিন্তু একটি অ্যান্টি-মুসলিম রাজনীতির কথা বলে এবং সেই দর্শন থেকে হাজার হাজার আল-কয়েদি রিক্রুট করে! আপনার ব্যাখ্যাটা তেমন নয়তো? আমি এন্টি-মুসলিম রাজনীতির কথা জানি না! আমি জানি আগের মতই এখনো ‘শোষক ও শোষিত’ দুটি ভাগ আছে; অনেক মুসলিম শোষক দেশ যেমন আছে, তেমনি মুসলিম শোষিত দেশ আছে! অন্যান্য ধর্মের শোষক ও শোষিত রাষ্ট্রও সমানভাবে বিদ্যমান! জানতে চান, কোন মুসলিম রাষ্ট্রগুলো শোষক? আচ্ছা, তা না হয়, পরে বলা যাবে!
সুচি কি মায়ানমারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে গেছেন?
@কাজি মামুন,
বুশের একটা কথা মনে পড়ে গেল – হয় তুমি আমাদের সাথে নতুবা তুমি আমাদের শ্ত্রু । এই ধরনের উক্তি শুধু মাত্র নির্বোধ, অসহিষ্ণুদের দ্বারাই সম্ভব। কেউ উপকার করলে সারা জীবন তার উপকার করতে প্রস্তুত আছি কিন্তু তার কোনও অন্যায় আবদার কখন ই মেনে নেবো না। কাজের মেয়েকে খুন্তির ছ্যাকা দিয়ে মানবতার কথা বলার লোকের অভাব নেই এই দেশে। বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট আর নির্বোধের জন্য পাতা ভরে লিখেও লাভ নেই, অযথা তর্ক করে যাবেই।
@পলাশ,
ভাই পলাশ, আপনি তো আর নির্বোধ নন, বরং পলাশদীপ্ত বুদ্ধির ঝিলিক আপনার ভেতর, সহিষ্ণুতার মূর্ত প্রতীক! তাই বলছিলাম, আপনি না হয় আমার কথাগুলোকে বধ করার সামান্য চেষ্টা করতেন! অথচ আপনি সেদিকে গেলেনই না! বরং, অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করে সুন্দর-স্বচ্ছল গতিতে মূল আলোচনাকে এড়িয়ে গেলেন! মানছি, এভাবে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়াটাও এক প্রকার বুদ্ধিমত্তা!
আমি ক্রমাগত ফেসবুকে, ব্লগে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে বিভিন্ন জনের করা মন্তব্যে অবাক হয়ে যাচ্ছি। এরা না সো কলড মানবতাবাদী! যেকোন ইস্যুতে অন্যরা চুপ কেন বলে গলা ফাটায়! তারাই এখন বলছে, জঞ্জাল কাঁধে নিও না, ওষুধ, জ্বালানী দিয়ে সমুদ্রে ফিরিয়ে দাও! শরণার্থীদের আশ্রয়দানের কথা বললে জামাতের গন্ধ পাচ্ছে। জাফর ইকবাল স্যার তার সাদাসিধে কথায় একটা দ্বায়িত্বহীন কলাম নাকি লিখে ফেলেছেন, তো তিনি কেন সাতক্ষীরার ঘটনায় চুপ ছিলেন? রাতারাতি অনেক মানবতাবাদী গজিয়ে গেছে, তারা এতোকাল কোথায় ছিল? এতকাল তো আমরাই মানবতার ঝান্ডা ধরে রাখলাম, এইসব হচ্ছে তাদের কথার মূল স্বর!
মানুষ মরছে! মানুষ! আর কিছু নয়। জাতীয় স্বার্থ নিয়ে যারা চিল্লাচ্ছে, তাদের একবার জিজ্ঞেস করি, বাংলাদেশ নামের ভূখন্ডটা না থাকলে ইন্টারনেটে বসে দেশ উদ্ধারের ফুসরত কোথায় পেতে! জাতীয় স্বার্থ বিশারদ হয়ে গেছে সবাই মানবতা জলাঞ্জলি দিয়ে! চোখের সামনে সব ছদ্মবেশী মানবতাবাদীগুলো সব ন্যাংটো হয়ে গেল।
ব্লগে ধর্ম নিয়ে লিখলে হিট পড়ে ভালো। মন্তব্য পাওয়া যায় বেশী, নাম ডাক হয়। ধর্ম-এর বিরুদ্ধে লিখে লিখে ব্লগ পচিয়ে যারা এতোদিন মানবতা প্রতিষ্ঠা করত… তারা আজকে মানবতা ভুলে গেল!
বাঙ্গালী হিসেবে আমার যত অহংকার ছিল… তা দিনে দিনে মাটিতে মিশে যাবার উপক্রম হয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন শরণার্থী হব, তখন কেউ সাহায্য না করলে তারা অমানুষ হবে, ৭১ এ কে কে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল দেয়নি, তার হিসাব কষে ব্লগের পাতা ভরিয়ে ফেলে, কিন্তু নিজেদের যখন অন্যকে আশ্রয় দেবার কথা আসবে তখন কিনা জাতীয় স্বার্থ নষ্ট হচ্ছে! বাংলাদেশ শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করা কোন দেশ নয়, আমাদের দায় নেই– এইসব বলব। বাঙ্গালী পাহাড়িদের সাথে যা করে, এখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিয়ে যা করছে, এসবের পরও মানবতা নিয়ে আর একটা কথা বলার মুখ কি রাখছে?
@নীল রোদ্দুর,
আমার অভিজ্ঞতাও তদ্রুপ। লেখাতেও আছে, কাশ্মির, চেচনিয়া, গজনি, বসনিয়া, কসোভো, ইরাক, আফগানিস্তান,অথবা প্যালেস্টাইনের মুসলিমদের সমব্যথী মুসলিম ভাই বাংলাদেশে কাতারে কাতারে পাওয়া যাবে এবং ইমাম সাহেবদের জ্বালাময়ী ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে, তারা বীরদর্পে রাস্তায় নেমে পড়ে, বিশ্বমুসলিমের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেন! কিন্তু দেখেন, সেই মানুষগুলো, এমনকি ইমাম সাহেবরা পর্যন্ত রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপারে আশ্চর্জজনকভাবে নীরব। কারণটাও লেখাতেই উল্লেখ করেছি! চিৎকার করে সমবেদনা জানাতে কোন খরচা নেই, কিন্তু আশ্রয় দিয়ে সমবেদনা জানাতে গেলেই খরচা, স্বার্থ, চাপের অর্থনীতি ভর করে আমাদের মাথায়! মানবতা তখন দৌড়ে পালায়!
লক্ষ্য করলে দেখবেন, সমুদ্র বিজয়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বেশ জোরালো ভাষায় যে কথাগুলো বলেছেন, তাতে আমার-আপনার মানবতা লজ্জিত হতে পারে, কিন্তু উনি ব্যাপক জনসমর্থন পাবেন। চাই কি, নানা কারনে চাপের মুখে পড়া মহাজোট সরকার কিছু রাজনৈতিক স্কোরও করবে এই ইস্যুতে!
একটা আশ্চর্য সমস্যা দাঁড়িয়েছে আজকের বাংলাদেশে! কেউ কেউ তো ১৯৭১ কে মানতে চায় না! আবার কেউ কেউ ১৯৭১ কে রেখে দিতে চায় যাদুঘরে, ভাবখানা এমন, এ এমন জিনিস, যা ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না, শুধু যাদুঘরে গিয়ে দর্শন করে অতীত গৌরবে পুলকিত হতে হবে। কিন্তু আমার মতে, ১৯৭১ যাদুঘরে রাখার জিনিস নয়, এটা অবশ্যই গৌরবচিহ্ন, তবে তা অবশ্যই বুকে ধারন করতে হবে সার্বক্ষনিক ব্যাজ হিসাবে! ১৯৭১ থেকে অনুপ্রেরনা নিতে হবে আমাদের যেকোন জাতীয় ইস্যুতে, অন্য দেশের শরনার্থীদের প্রতি সেই আচরন করতে হবে, যে আচরন আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম ১৯৭১ এ। গনতান্ত্রিক আন্দোলন, টিপাইমুখের অধিকার আদায়, পার্বত্যচট্রগ্রামের বিভিন্ন জাতিসত্তার অধিকার আদায়- সবকিছুতেই আমরা ১৯৭১ এর মহানুভবতার পাঠ নেব, অনুপ্রানিত হব!
আমি যখন শরনার্থীদের ছবিগুলো দেখছিলাম, আমার চোখ ভিজে উঠেছিল। পরক্ষনেই গভীর সমুদ্র জয়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাগুলো শেলের মত বিঁধছিল। তাই রাত জেগে মনের কথাগুলো লিখে ফেললাম।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, নীল রোদ্দুর আপু।
একটা বিষয় বোধগোম্য নয়। প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলো অথবা জাতিসংঘ কর্তারা নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টা না তুলে কেবল বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ কেন করছে ? মায়ানমারে সে রকম অবস্থা বিরাজ করলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে কথা হয় না কেন ? শরনার্থী যাতে প্রথমেই তৈরী না হতে পারে সেদিকেই তো আগে মনযোগ দেয়ার কথা।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শরণার্থী-বিষয়ক কোনো আইন বা কনভেনশনে অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র নয় – এটা ঠিক , তবে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহিত যে কোন প্রস্তাব মানতে বাধ্য, কেননা বাংলাদেশ জাতিসংঘ সনদে সাক্ষরদানকারী দেশগুলির একটি।
@সংশপ্তক,
মায়ানমারের উপর চাপ নেই এমনটা কেন মনে হল? আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই মায়ানমারে অনেক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে বিড়ালটা ইদূর খেলার মতই হয়ে দাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি ইসরায়েলেও বিরাজ করছে।
কথা তো হয়; কিন্তু আপনি মনে হয়, কসোভা/ বসনিয়া টাইপ হস্তক্ষেপ কামনা করছেন নিরাপত্তা পরিষদের, মানে শক্তি প্রয়োগ! কিন্তু শক্তি প্রয়োগ করতে গেলেও সে দেশটির উপর কিছু নিয়ন্ত্রন লাগে! কিন্তু গত কয়েক দশক ধরেও মায়ানমার আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন; কথিত আছে, মায়ানমারকে হাত বাড়িয়ে দিয়েও সাহায্য করা যায় না! তাছাড়া, চীন রয়েছে, যে মায়ানমারের উপর কোন সামরিক হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না! এছাড়া, মায়ানমারের নেত্রী সুকিও যেকোন সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী, শান্তিপূর্ন পন্থায় সমস্যা সমাধানে আগ্রহী।
এভাবে বলে কয়ে তো শরনার্থী তৈরী হয় না। শরনার্থীরা তো আচমকা তৈরি হয়, রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস বা প্রতিপক্ষের আক্রমনের মুখে ঘর-বাড়ি-বসতভিটা ছেড়ে দিয়ে সীমান্তের দিকে দৌড়াতে হয় তাদের! তারা কাউকে বলে কয়ে বা প্রস্তুতি নিয়ে তো দেশের বাইরে যেতে পারে না।
এক মত।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, সংশপ্তক ভাইয়া!
ঠিক একই রকম চিন্তা আমার মাথাতেও এসেছিল পত্রপত্রিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেখে, লেখাটি দেখে তাই ভাল লাগলো। সংবাদপত্রের কল্যাণে মায়ানমারে রাখাইন-রোহিঙ্গা দাঙ্গার কথা আমাদের জানা, যদিও আসল অবস্থা কীরকম তা আন্দাজ করা আমার সীমার বাইরে। তবে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেখানে বাংলাদেশকে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার চাপ দিয়ে যাচ্ছে, ধারণা করি – অবস্থা খুব সাংঘাতিক। আর শরণার্থী আশ্রয়ের কথা আসলে একাত্তরের প্রসঙ্গ আসা খুব স্বাভাবিক। আসলে, মূল প্রশ্ন মানবিকতার। একই রকম মানবিক সাহায্য গ্রহণের ইতিহাস যেখানে আমাদের আছে, সেখানে প্রতিবেশীকে একই রকম সাহায্য প্রদানের অনীহাকে এক প্রকারের হীনমন্যতাই মনে হয়।
@প্রতিফলন,
তাদের অবস্থা সত্যি অকল্পনীয়! জাতিসংঘের হিসাব মতেই, রোহিঙ্গারা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নীপিড়িত একটি জাতিগোষ্ঠি! এখন তাদেরকে বাংলাদেশের জামাত নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে বলেই, তাদের নীপিড়িত জীবন, দুঃখ-দুর্দশা মিথ্যা হয়ে যায় না!
আপনার মন্তব্যে আপনার চিন্তার স্বচ্ছতাই প্রতিফলিত হয়েছে! আসলেই প্রশ্নটা মানবিকতার! ওরা চুরি করে, চোরাচালানি করে, যৌণবৃত্তি করে, জামাতের এজেন্ট হয়ে কাজ করে, আমাদের অর্থনীতির উপর চাপ বাড়াচ্ছে- সব মেনেও এ কথা বলা যায়, অসহায় এই মানুষগুলোকে আমরা পুশব্যাক করে মাঝ-সমুদ্রে ঠেলে-ফেলে দিতে পারি না; এখানে মানবিকতার চুড়ান্ত পরাজয় ঘটে!
আপনার সহজ-সরল বিজ্ঞান লেখার আমি মহাভক্ত। আজ আপনার অসাধারণ স্বচ্ছ চিন্তা-ভাবনার পরিচয় পেলাম। ভাল থাকবেন, ভাইয়া!
এমন একটি লেখা আপনার কাছ থেকে আসবে আশা করিনি। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাথে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অবস্থার তুলনামূলক কথাগুলোয় বড় হতাশ হয়েছি।
তো এখন আরো কিছু বোঝা মাথায় নিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে?
এ সব কী বলছেন আপনি? আপনার লেখাটি পড়ে জামাতের রোহিঙ্গা পীরিতির কথা মনে পড়ে গেল।
@আকাশ মালিক,
কেন হতাশ হয়েছেন, তা বললে ভাল হত! মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ বাংলাদেশীরা পাকিস্তানের অত্যাচারের মুখে শরনার্থী ছিল, রোহিঙ্গাদেরও তাদের ভূমি থেকে অত্যাচারের মুখে চলে আসতে হচ্ছে শরনার্থী হয়ে! তো এই তুলনা টানা আপনার কাছে বিসদৃশ মনে হল? আমরা মুক্তিযুদ্ধে শরনার্থী হয়েছিলাম বলেই তো পৃথিবীর যেকোন শরনার্থীদের প্রতি আমাদের দরদই থাকবে সবচেয়ে বেশী, তাই না? নাকি অন্য শরনার্থীদের দুঃখ দেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন শরনার্থী জীবনের কথা মনে করলে মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা হবে?
আমার মনে হয় না, আরো কিছু বোঝা মাথায় নিলেই মাটিতেই শুয়ে পড়তে হবে বাংলাদেশকে! যদি তাই হত, তাহলে এখনো ‘ওয়ান চাইল্ড পলিসি’ করা হয়নি কেন বাংলাদেশে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কি সংসদে বলেননি যে, উনি অধিক জনসংখ্যাকে কোন দায় মনে করেন না? আর সবচেয়ে বড় কথা, মানবতার জন্য দরকার হলে আরও কিছু বোঝা মাথায় নিয়ে দরকার হলে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে বৈকি! চিরন্তন মানবতার দাবী কিন্তু এমনটাই ইঙ্গিত দেয়!
বাসের যে উদাহরণ দিলাম, তাতে মানবতাবাদের আকুতিই তুলে ধরা হয়েছে মাত্র! এটি আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, প্যাসেঞ্জারের ঠাসাঠাসি ভিড় থাকার পরও ঐ প্যাসেঞ্জাররাই কিন্তু দুজন লোককে বাসে উঠানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল ড্রাইভারকে, কারণ তখন বাইরে প্রবল বেগে ঝড় বইছিল! ঐ দুজনকে উঠানোও হয়েছিল, এর ফলেও যদিও বাসের ভীড় আরও বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু সেই ঝুঁকি, চাপ সবকিছু ধুয়ে-মুছে ছাফ হয়ে গিয়েছিল মানবতার গৌরবে!
এরকম যুক্তি আমি আপনার কাছে আশা করিনি! জামাত নিজেদের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে বলে (যা লেখাতে বলেছিও), রোহিঙ্গাদের মানবিক প্রয়োজন নিয়ে আর কেউ কথা বলতে পারবে না? বললেই তাকে জামাতের লেবাস পরিয়ে দিতে হবে? সত্যি, আকাশ মালিক ভাই, আমি স্তম্ভিত আপনার এহেন তুলনাকরনের ক্ষমতায়!
লেখাটিতে বাংলাদেশের মৌলবাদীদেরও সমালোচনা রয়েছে! কিন্তু সেগুলো আপনার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে! আপনি শুধু জামাতের গন্ধ শুকে বেড়াচ্ছেন! আর তাই যেকোন মানবিক আহবানও আপনার কাছে গৌণ হয়ে গেছে! লেখাতেই উল্লেখ করেছি, জামাত এদের ব্যবহার করছে, এরা চুরি-চোরাচালান-মাদক-যৌনবৃত্তিতে নিমগ্ন রয়েছে, আমাদের জনসংখ্যার উপর চাপ সৃষ্টি করছে- এ সবই সত্য! কিন্তু তারপরও মানবতার একটি চিরন্তন আহবান রয়েছে! আমরা এই অসহায় মানুষগুলোকে পুশ ব্যাক করে মাঝ-সমুদ্রে ফেলে দিতে পারি না!
@কাজি মামুন,
মন্তব্যের ফ্লো দেখে অনুমান করলাম সুষ্ট নিরপেক্ষ আলোচনা সম্ভব নয়। স্পষ্ট ব্যক্তি বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে সহ ব্লগারদের মন্তব্যে, বিশেষ করে সাইফুল ভাই ও নীল রোদ্দুরের কিছু কথায়। উদাহরণ স্বরূপ-
ধর্ম-বিরুদ্ধ লেখায় এতোদিন যাবত আপনার চোখের সামনে ব্লগটা পচে গেল, তো আপনি আওয়াজ দিলেন না কেন? অনেক কিছুই বলা যেতো, তা করার আর ইচ্ছে বা মানসিকতা কোনটাই নেই।
এটা সাইফুল ভাইয়ের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী। বিষয়টা নিয়ে গত একমাসে এতোশত তথ্যবহুল লেখা পত্র-পত্রিকায় ও ব্লগে ফেইসবুকে এসেছে যে আরাকানে আদমশুমারি তথ্যটা আর কারো অজানা থাকার কথা নয়।
এটাও তার নিজের আবিষ্কার, কারণ কেউ কোথাও কোনদিন এমন পরামর্শ দেয়নি বা এমন মন্তব্য করেনি।
এবার নিজের অজান্তেই বোধ হয় হিজরাদের প্রতি তার মনোভাবটা প্রকাশ করে দিলেন। তার মন্তব্যটা যে অশালীন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেদিন বন্যাদূর্গত পাকিস্তানী মানুষের সাহায্যে যেমন রাস্তায় নামতে দ্বিধাবোধ করিনি, আজও রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্যে হিজরা হতে আমার কোন আপত্তি থাকবেনা যদি সে রকম কোন সুযোগ আসে।
আপনার লেখা দেখে যে ইসলামি প্রপাগান্ডা ছড়ানোর জন্যে কিছু মানুষের আগমন ঘটবে তা অনুমান করে জামাতীদের রোহিঙ্গা পিরিতি লিঙ্কটা দিয়েছিলাম, জামাতীদের লেখার সাথে তুলনা করার উদ্দেশ্যে নয়। সাতক্ষীরা নিয়ে লেখলাম কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে কেন লিখলাম না এটাও নাকি মুসলিম বিদ্বেষ বা ইসলাম বিদ্বেষের প্রমাণ। আপনার লেখার আগেই কিছুটা লিখেছিলাম কিন্তু মাঝ পথে বাদ দিয়েছি। ধর্মের সাথে সম্পর্কহীন একটা ইস্যুকে নিয়ে কিছু মুসলমান এতো প্রপাগান্ডা মিথ্যাচার কুতর্ক অন্যান্য ব্লগে করেছেন যে এ নিয়ে লেখার মুড আর ছিলনা। তবে লেখাটা কেমন হতো তার দুটো নমুনা নিচে দিচ্ছি।
৭১ এ ভারতে ৯ মাসের জন্যে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী শরণার্থী আর তিরিশ বছর যাবত ক্রমাগত বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের উদ্দেশ্য ও এর প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন। একটা জাতিগত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর একটা মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার সসস্ত্র সংগ্রাম সমান হতে পারেনা। একদল মুক্ত স্বাধীন স্বদেশে ফিরে যেতে চায় আরেক দলের কোন দেশই নাই। এখন সময় এসেছে এই দেশহীন মানুষদের, বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল রোহিঙ্গা শরণার্থী সহ মিয়ানমারের সকল রোহিংঙ্গাদের আগামী আদম শুমারীতে তালিকাভুক্ত করে তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্যে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা ও একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্যে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার।
কমপিউটারের কী-বোর্ড চেপে উদারতা মানবতা দেখানো যতো সহজ বাস্তবটা ততো সহজ নয়। আমরা না হয় একটুকরো কাপড় দুভাগ করে পরলাম, না হয় এক বেলা কম খেলাম, না হয় এক টুকরো জায়গা ছেড়ে দিলাম, কথাগুলো শুনতে ভাল শুনায় কিন্তু বাস্তব বিবর্জিত। এমন জটিল একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জাতি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে এখানে কারো মন্তব্যকে বেইস করে অপ্রাসঙ্গীকভাবে অহেতুক খোঁচখুঁচি করা ঠিক নয়। নিচের লেখা দুটো পড়ুন আরো কিছু বিষয় জানতে পারবেন।
মিয়ানমারে আদমশুমারি ও বাংলাদেশের জন্য শঙ্কা-
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান-
@আকাশ মালিক,
কথাটা ঠিক মিলল না, মালিক ভাই! যেমন, কথাটা হতে পারত, ‘একদল মুক্ত স্বাধীন স্বদেশে ফিরে যেতে চায়, আরেক দল চায় না।’ বোধ করি আপনি তাই লিখতে চেয়েছিলেন, পরে এডিট করেছেন, মানে মাঝপথে বাদ দিয়েছেন আর কি! কিন্তু সেখানেই বিপত্তি! জোর করে তো কিছু মিলানো যায় না! মনের কথাটা অকুন্ঠ চিত্তে প্রকাশ করার মত সাহসই আপনার কাছে প্রত্যাশিত ছিল, মালিক ভাই!
উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট যে ভিন্ন, তা মনে হয় এখানকার আলোচকরা জানেন! এইটুকু বিশ্বাস রাখা কি যেত না আপনার সহব্লগারদের উপর? আপনাকে এও বলে দিতে হবে যে, একটা জাতিগত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর অন্যটা মুক্তিকামী মানুষের সশস্ত্র সংগ্রাম? তবে উদ্দেশ্য আর বিধেয়ের ভিন্নতায় কি এসে যায়, আকাশ ভাই? আজকের রোহিঙ্গা আর সেদিনের বাঙ্গালি-দুজনেই যে শরনার্থী, দুজনেরই যে আশ্রয় দরকার বাঁচার জন্য, দুজনেই প্রতিবেশীর দোরে হাজির হয়েছে—এই মিলগুলো আপনার চোখে পড়ল না? শুধু পার্থক্যগুলোই আপনার চোখ ধাধিয়ে দিল? নাকি তিরিশ বছর ধরে আসতে থাকলে তাদের শরনার্থীত্ব হালকা হয়ে যায়, মানবতার দাবী হয়ে যায় দুর্বল? শরনার্থী শব্দের কোন সংজ্ঞা আছে আপনার কাছে? থাকলে যদি জানান, দয়া করে!
খুবই মূল্যবান কথা! যুক্তিপূর্ন কথা! কিন্তু শেষ কথাটি কি? মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে সীমাহীন ব্যর্থতার দায়ভার নিজেদের স্কন্ধে নিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে হবে অকুল দরিয়ায়, বিক্ষুদ্ধ সমুদ্রে, যমের দুয়ারে?
মানলাম, এমন পরামর্শ দেননি, বা এমন মন্তব্য করেননি! কিন্ত আপনার সত্যিকারের পরামর্শটা দিন না দয়া করে! জানতে পারুক ব্লগবাসী! জনমত বা চাপতো পরের কথা, দয়া করে বলুন এই মুহুর্তে বাংলাদেশের দোরে দাঁড়ানো রোহিঙ্গাদের নিয়ে আপনি কি করবেন? তাদের ঘরে ঢুকতে দেবেন, বাইরে দাড় করিয়ে রাখবেন নাকি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দেবেন? কি করবেন, বলুন দয়া করে! কুতর্ক, খোচাখুচি, বাস্তবতাবর্জিত, মুড নেই–এসব বলে এড়িয়ে যাবেন না দয়া করে!
@আকাশ মালিক,
আপনার মন্তব্যের জবাব কাজি মামুন নিজেই দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই আমার। তবে এই মন্তব্য করা কেবলই এটা বলতে যে, আপনার মন্তব্য ভাল লাগেনি, বিশেষ করে মানবতার গান গাওয়া লেখাটির সাথে জামাতের রোহিঙ্গা প্রীতির তুলনার অংশটুকু! শরণার্থী আশ্রয় দেয়া- না দেয়ার ব্যাপারে আপনার ভিন্ন মত থাকতেই পারে, ভিন্ন মতকে স্বাগতও জানাই, কিন্তু তাই বলে যথার্থ কারণ ছাড়া কোন লেখাকে কোন জঙ্গীবাদী দলের সাথে তুলনার মতো যা খুশি বলাকে সমর্থন করা যায় না।
[নিতান্তই গুরুত্বহীন, তবুও নোট করছি, “জামাতের রোহিঙ্গা পীরিতি”-র কথা বলে যে লিংক দিয়েছেন, সেটা যত না লেখাটির লিংক, তার চেয়েও বেশি আপনার নিজের মন্তব্যের লিংক। একটু কেমন না??]
@আকাশ মালিক,
জামায়াতের ওরা যেভাবে হাগে আপনিও কি ঐভাবেই হাগেন নাকি আপনি আলাদা কোন উপায় অবলম্বন করেন? জামায়াতের বিরুদ্ধে আপনার প্রখর অবস্থান দেখে আমার জিজ্ঞেস করতেই হল জিনিসটা। প্লিজ এখানে এডমিন বা কেউ এসে বলবেন না, আমার প্রশ্নটা অশালীন হয়েছে। আকাশ মালিক ভাইকে উত্তরটা দিতে দিন।
আমার মনে আছে আপনি কোন এক মন্তব্যে কবে কোন পাইক্কারা বন্যা না ভুমিকম্পে মরেছিল তাদের নাকি টাকা পয়সা তুলে সাহায্য করেছিলেন। সেদিনের আপনার মানবতার ধোয়া তুলে নাঙ্গা হয়ে দাঙ্গা করাটা বেশ দেখার মতন হয়েছিল। অনেকটা বাঙলাদেশে হিজরারা যেটা করে না, ঐযে “ট্যাকা দে ট্যাকা দে, নাইলে রঙ্গিলা টিবি দেইহাইয়া দিমু” বলে যে শাড়ি উচিয়ে তার সম্পদ দেখায় সেরকম। আপনিও সেদিন আপনার মানবতার সম্পদ দেখিয়েছিলেন। আজকে হঠাৎ কী হল মালিক ভাই?
আর কাজি মামুন আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছে, ভারতের বাঙলাদেশী শরনার্থিদের গ্রহন করার সাথে বর্তমানের রোহিঙ্গাদের কেন মেলানো যাবে না। উত্তরটা দেন। হতাশ হলে চলবে না। হতাশ হয়ে আবোল তাবোল বকবেন তাতো আর হয় না তাই না!
@আকাশ মালিক,
সত্যকে সত্য বলে মেনে নেয়াটাই প্রকৃত মানবতা। অনেকেই বলছে যে ১৯৭১ সালে বাঙালীরা ভারতে কোন সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল না তাই ভারত আমাদের জায়গা দিয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে সন্ত্রাসী কাজে জড়িত আছে তাই তাদের প্রতি মানবিকতা দেখাবার প্রয়োজন আমাদের নাই। এটা ভূললে চলবে না যে, ভারতের বেলায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন ভারতের রাজনীতিক ও জনগনের একটি সর্বসম্মতিক্রমে ঐকমত রাজনৈতিক বিষয় ছিল ফলে তারা আমাদের শরনার্থীদের প্রয়োজনীয় সুবিধা দিয়েছে উদ্দেশ্য একটাই বাংলাদেশকে স্বাধীন করানো, কারন তাতে তারা (ভারতকে) ৩টি ফ্রন্টের পরিবর্তে ২টি ফ্রন্টে পাকিস্থানের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। এটা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের শরনার্থীদের প্রতি মানবিক উদ্দেশ্য ছিল বলে অনেকই মনে করেন না (বিশেষ করে যারা সে সময় শরনার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন)। মেয়ানমারের রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বেলায় আমাদের এ ধরনের কোন উদ্দেশ্য নাই বা থাকার কথাও না। ভারতের নাগরিক বা রাজনৈতিকরা ১৯৭১ সালে সে দেশে অবস্থানরত বাঙালী শরনার্থীদেরকে তাদের আভ্যন্তরিন রাজনৈতিক বিরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেনি। তাই বাঙালীরা সে দেশে সন্ত্রাসী তো দূরের কথা এমনটা ভাবার সুযোগই পায়নি। যারা একটু এদিক ওদিক করার চেষ্টা করেছিল তাদের অনেকের খবর আমরা এখনও জানি না। অন্যদিকে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী রাজনীতিক ও তাদের অনুসারী কিছু আমজনতা এই সব রোহিঙ্গাকে সরকারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং করছে যার কারনে রোহিঙ্গারা এদেশে শরনার্থী হয়েও সন্ত্রাসী কাজে সাহস পাচ্ছে। কাজেই ভারতের বাঙালী শরনার্থী আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরনার্থীর বিষয় এককরে দেখে মানবিকতার বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করা সমীচীন নয়। মানবিকতা এক বিষয় আর রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অন্য বিষয়। দুটি কে দুইভাবে দেখে সরকারের উচিৎ সঠিক উপযোগী সিদ্ধান্তে আসা। রাজনৈতিক দল রাজনীতির স্বার্থে অনেক কথাই বলতে পারে কিন্তু সরকারকে বহিবিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতে হয় পাশাপাশি নিজের রাজনৈতিক দলের দায়িত্বও পালন করতে হয়। কাজেই কোনটাই হেলায় এড়িয়ে যাওয়া সমীচীন নয়। দেশের উপযুক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রতি মানবিক দায়িত্ব পালন করাই সরকারের উচিৎ বলে সচেতন মহল মনে করে। এখানে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মানবিক সহযোগিতা দেয়ার বিষয়টি জামাতের রাজনীতির সাথে খিচুরী বানাবার চেষ্টা করা আর বানরের পিঠা ভাগ করা একই নীতি বলে মনে হয়। সরকার ইচ্ছা করলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে জামাতের রাজনীতির বলয় থেকে মুক্ত রেখে মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করতে পারে তাতে দেশের ভাবমূর্তীও বাড়ে, দেশের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয় এবং মানবিক বিষয়টির প্রতিও সরকার ও জনগনের দায়িত্ববোধ প্রকাশ পায়।
@করতোয়া,
ভারত যদি বাংলাদেশ কে সেই সময় সাহায্য না করতো তবে আগামী ১০০ বছরেও বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারতো কিনা সন্দেহ।
বাংলাদেশ হয়ে যেতো আর একটা ভিয়েতনাম।
@আফরোজা আলম,
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশী শরনার্থীদের প্রতি ভারতের সাহায্যের প্রতি আমার সামান্যতম অকৃতজ্ঞতা নাই বরং তাদের প্রতি আমি ১০০% কৃতজ্ঞ। আমাদের আলোচনা ভারতের সাহায্যের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা আছে বা নাই তা নিয়ে নয় বরং রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সাহায্যে আমাদের বাংলাদেশ সরকার বা জনগন এর রাজনৈতিক বাহাস করাটা সমীচীন কিনা তা নিয়ে।