ধর্মের ইতিহাসে সর্বাধিক বিতর্কিত ধর্মীয় বাণী সম্ভবত আল কোরআন এর সুরা নিশা-র তৃতীয় আয়াত । “… বিবাহ করবে স্বাধীনা রমণী দের মধ্যে যাকে তোমার ভাল লাগে ,দুই তিন অথবা চার।” ছোটবেলা থেকে অনেকগুলো কোরআন পরেছি । প্রায় প্রতি টি ব্যাখ্যাকার এর ব্যাখ্যায় দেখেছি বলা হয়েছে যে , এই আয়াতটির দ্বারা প্রাক ইসলামী যুগের অসংখ্য বিবাহের রীতির বিলুপ্তি ঘটিয়ে বিবাহের সংখ্যা চার টির মধ্যে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে কোরআনে । যদিও এই কথার অসত্যতা নিয়ে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই । কিন্তু আজ আমার অলোচনার বিষয় অন্য । প্রথম প্রথম কোরআন পড়তাম খুব ভক্তি ভরে । পরে দর্শন নিয়ে অনার্স পরতে গিয়ে বুঝলাম , দর্শনে আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়েছে সংশয় থেকে । সত্যে পৌঁছানোর উপায় হিসাবে সংশয় অপরিহার্য । তাই আমিও ধর্মগ্রন্থ পড়ার সময় সংশয়বাদী হয়ে পড়লাম । প্রথম প্রথম মনে প্রশ্ন আসতো , আল্লাহ যদি কোরআনে চার টি পর্যন্ত বিবাহের কথাই বলে থাকেন , তবে নবী কেন নিজে সেটা মানেন নি ? কেন নিজে ১০ এর অধিক বিবাহ করলেন ? বহু দিন কাউ কে প্রশ্ন টা করতে পারি নি , আজ থেকে বছর ৬ আগে একদিন আব্বু কে প্রশ্ন টা করেই ফেললাম । আব্বু উত্তরে বলেছিল ,নবী রসুল তো আর সাধারণ মুসলমান নন , তিনি আল্লাহ-র বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত । আল্লাহ ইসলাম প্রচারের মহৎ দায়িত্ব প্রদানের সাথে সাথে তাকে কিছু বিশেষ সুবিধাও দিয়েছিলেন ,যার মধ্যে এটাও একটা । আমি পাল্টা জবাব দিয়েছিলাম , তাহলে তো নবীর জীবনী মুসলিম দের অনুসরণ করা উচিত নয় — কেন না তিনি তো বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত ! আব্বু কোনও উত্তর না দিয়ে খুব বকাঝকা করেছিলেন মনে আছে ।
সে যাই হোক , এখন আমার মনে যে প্রশ্ন টি আসে , তা হল , কোরআন নিশ্চয়ই আল্লাহ-র বাণী নয় । কেন না , কোরআন যদি আল্লাহ-র বাণী হতো তাহলে কি নবী সেটা না মেনে পারতেন ? নিশ্চয়ই না । কিন্তু তিনি তা করেছেন , অর্থাৎ কোরআনের নির্দেশ তিনি মানেন নি । এ থেকেই বোঝা যায় ,যে নবী কোরআন কে কত টা গুরুত্ব দিতেন । অবশ্য তার প্রিয়তমা পত্নী আয়েশা ও জানতেন কোরআনের মর্ম । এই বিষয়ে তিনি সূক্ষ্ম ব্যঙ্গোক্তিও করেছেন।

ইসলামী ব্যাখ্যাকার রা কিভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে সত্য গোপন করে , মিথ্যা প্রকাশ করে আমাদের পথভ্রষ্ট করছেন । ইসলামের মাহাত্ম্য প্রচার করতে গিয়ে তারা এতটা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন ,যে আমরা মনে করছি ইসলাম সত্যিই স্রস্টার মনোনীত ধর্ম । আমরা ওই বড় বড় সম্মানিত মুখ গুলোর আড়ালের মানুষ কে চিনতে পারছি না । সনাক্ত করতে পারছি না তাদের তাদের সব জেনেশুনে করা মিথ্যাচার কে । আজ তাই এরকম একটি মিথ্যা কথনের মুখোশ খোলার জন্য আমা এই লেখা । আমি এই লেখা শুরু করতে চাই এরকমই একজন খ্যাতনামা বাঙালি ইসলাম প্রচারক এর একটি নবী জীবনী র একটি অংশ তুলে ধরে ।

মহানবী হজরত মহম্মদের বিবাহ সম্পর্কে বহু ইসলামী ব্যাখ্যাকার রা বলে থাকেন , মহানবী যখন এত গুলো বিবাহ করেছিলেন তখন কোরআনে বিবাহ ও বিবাহের সংখ্যা সম্পর্কিত কোনও আয়াত নাযিল হয়নি । তাই নবীর ৪ এর অধিক বিবাহ ইসলাম ও কোরআনের বিরোধী বা গোনাহ রূপে গণ্য হতে পারে না । এই প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান , পি এইচ ডি , ডি লিট ইত্যাদি ডিগ্রী ধারী জনাব ডঃ ওসমান গনী সাহেব তার ‘মহানবী’ নামক হজরত মহম্মদের জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন—“ ৫১ বছর বয়স পর্যন্ত হজরতের মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন । পরবর্তী ৭ বছরে তিনি বাকি সকল কে বিবাহ করেন । এই বিবাহ গুলো সম্পন্ন হয় শুধু মাত্র ইসলাম প্রচারের সহায়ক হিসাবে । অষ্টম হিজরি তে , যখন তার বয়স ৬০ তখন বিবাহ সম্পর্কে আল্লাহ-র নির্দেশ এলো ।’’ এবং এই নির্দেশ টি হল কোরআনের ৪; ৩ । এবং কোরআন তাকেও নির্দেশ দিয়ে দিল , “ এরপর তোমার জন্য কোনও নারী বৈধ নয় । যদিও তাদের সৌন্দর্য তোমাকে মোহিত করে । তবে তোমার অধিকার ভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য নয় । {৩৩;৫২}” বিষয় টি কে আর একটু পরিষ্কার করতে গিয়ে গনি সাহেব আরও বলেন , “ হজরত যে সময় পর্যন্ত এত গুলো বিবাহ করেছিলেন{৬০ বছর পর্যন্ত , অষ্টম হিজরি } সেই সময় পর্যন্ত বিবাহের সংখ্যা সম্পর্কে কোনও নীতি কোরআন কর্তৃক নির্ধারিত হয়নি । সুতরাং , ততদিন পর্যন্ত সকলে যা খুশি তাই করেছে । যখনই কোরআন বিবাহের সংখ্যা নির্ধারিত করে দিল , তখন থেকেই হজরত স্বয়ং তার বিবাহ সম্পর্কে কোনও পরিবর্ধন তো দুরের কথা , পরিবর্তন ও করেন নি ।” {মহানবী ৪১৮-৪১৯ পৃষ্ঠা}
এই ধরনের ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যায় সাধারণ মানুষ সন্দেহ করে না । কিছুটা এই ধরনের ব্যক্তির পদমর্যাদা ও সামাজিক উচ্চ অবস্থানের জন্য ও কিছু টা ইসলাম কোরআন ও নবীর প্রতি অন্ধ ভক্তির কারণে । কিন্তু ব্যাখ্যা টি প্রকৃতপক্ষে চূড়ান্ত মিথ্যাচারের নিদর্শন । নবীর কোরআন লঙ্ঘন করার বিষয় টি কে আড়াল করার জন্য দেওয়া এই ব্যাখ্যা আসলে পচা পাউরুটি তে মাখন লাগিয়ে বিক্রি করা । আমার এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য দুই টি—
১) দেখানো যে নবী নিজেও কোরআনের নির্দেশ পালন করতেন না।
২) দেখানো যে এই সব ব্যাখ্যাকার রা কিভাবে ইসলাম কোরআন ও নবী কে নির্দোষ ও মহান প্রতিপন্ন করতে কিভাবে প্রতিনিয়ত মিথ্যা প্রচার করছেন ।
আর তা করতে গেলে আমাদের শুধু বিশ্বাসের উপর আস্থা না রেখে তথ্য গুলিকে ঠিক ঠাক কাল পরম্পরায় সাজাতে হবে । তাহলে শুরু করা যাক—
ডঃ ওসমান গনী সাহেবের মিথ্যা খুব সহজেই ধরা পরে যায়। ওসমান গনী বলছেন যে ওই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল অষ্টম হিজরি তে । কিন্তু সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) এর তরজমা এ কুরআন মাজিদ অবলম্বনে সম্পাদিত ইসলামী প্রকাশনী ট্রাস্ট এর পবিত্র কুরআন বই তে সুরা নিসা(৪) অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে , “ তৃতীয় হিজরি সনের শেষ ভাগ হতে শুরু করে চতুর্থ হিজরি –র শেষ কিম্বা পঞ্চম হিজরির প্রথম ভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রচিত হয়েছে ।’’ আরও নির্দিষ্ট করে যদি সুরা নিসার ৩ নং আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় নির্ণয় করা যায় , তাহলে দেখা যাবে টা ওহোদের যুদ্ধের ঠিক পরেই রচিত । অর্থাৎ তৃতীয় হিজরি সনের রমযান মাসের ঠিক পরেই । কেন না , অনাথ দের সমস্যা নাকি তখনই হয়েছিল । সৈয়দ আব্দুল হালিম এর ‘ইসলাম ও তার রুপায়ন’ নামক গ্রন্থেও আমরা এই কথার সমর্থন পাই । এখন প্রশ্ন, এই আয়াত যখন অবতীর্ণ হয়েছিল , তখন অর্থাৎ হিজরি ৩ এর রমযান মাসের ঠিক পরে নবীর বৈবাহিক স্থিতি ঠিক কি ছিল ?
এর উত্তর জানতে গেলে শুরু থেকে শুরু করা প্রয়োজন । আমরা জানি মহম্মদের জন্ম ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে । তিনি যখন ২৫ বছরের যুবক ,তখন তিনি প্রচুর সম্পত্তির মালিক খাদিজা নামক এক ৪০ বছর বয়স্কা মহিলা কে বিবাহ করেন (৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দ) । খাদিজার যৌবনে তখন ভাঁটার টান । তাই এই বৈবাহিক সম্পর্কে তিনি খুব একটা সন্তুষ্টি পান নি । তবু খাদিজার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর বিবাহ করেন নি । এই ঘটনা কে যতই নবীর সংযমের দৃষ্টান্ত হিসাবে দেখানো হোক না কেন , আসল কারণ ছিল প্রয়োজন । অর্থাৎ প্রথমত , শূন্য মহম্মদ খাদিজার মত প্রবল ব্যক্তিত্বময়ী নারী র আশ্রয়ে ছিলেন । দ্বিতীয়ত , খাদিজার বিপুল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে হতো যদি তিনি খাদিজা কে তালাক দিতেন । কিন্তু খাদিজা মারা যাওয়ার পর তিনি আস্তে আস্তে নিজের মুখোশ করতে শুরু করলেন ।
খাদিজা মারা যাওয়ার(৬২০ খ্রিষ্টাব্দে) পর পরই তিনি বিবাহ করলেন ৫০ এর অধিক বয়সী সউদা কে( ৬২১) । অজুহাত ছিল খাদিজার রেখে যাওয়া সন্তান দের দেখাশুনা । কিন্তু সউদা কে বিবাহ করার কারণ যে শুধুই তাই , তা কিন্তু নয় । (কেননা , পরবর্তী কালে আমরা দেখতে পাই তালাক থেকে বাঁচতে তার নিজের পালার রাত টি ও তিনি নবীর প্রিয়তমা আয়েশা কে দিয়ে দেন কাঁদতে কাঁদতে । ) শারীরিক কারণ ও ছিল অবশ্যম্ভাবী রূপেই । কিন্তু সেই শারীরিক সুখ তিনি সউদার কাছ থেকে পান নি । তাই তিনি আরও একটি বিবাহের কথা ভাবছিলেন । তিনি তার ভুল শুধরাতে চাইলেন একটি কুমারী মেয়ে কে বিবাহ করে । (প্রৌঢ় লোকেদের অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছোট মেয়েদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করতে। মহম্মদের এই অবচেতন মনের আকর্ষণ তার স্বপ্নে প্রকাশিত হয় ।…আয়েশা হতে বর্ণিত- আল্লাহ-র নবী বললেন, তোমাকে বিয়ে করার আগে আমি তোমাকে স্বপ্নে তোমাকে দুইবার দেখেছি। এক ফেরেস্তা সিল্কে মোড়ানো একটা বস্তু এনে আমাকে বলল- এটা খুলুন অগ্রহন করুন, এটা আপনার জন্য । আমি মনে মনে বললাম- যদি এটা আল্লাহ-র ইচ্ছা হয় , এটা অবশ্যই ঘটবে । তখন আমি সিল্কের আবরণ উন্মোচন করলাম ও তোমাকে তার ভিতর দেখলাম । আমি আবার বললাম, এটা আল্লাহ-র ইচ্ছা হয় , এটা অবশ্যই ঘটবে । সহীহ বুখারী, ভলুম-০৯ , বই ৮৭ , হাদিস নং- ১৪০ ।) কিন্তু হাতের কাছে তো আর কেউ ছিল না তার প্রাণের বন্ধু আবুবকরের ৬ বছরের কন্যা আয়েশা ছাড়া । তাই তিনি আবুবকর কে প্রস্তাব দিলেন । আবুবকর চমকে উঠেছিলেন । কিন্তু হয় তিনি বন্ধুর অনুরোধ ঠেলতে পারেন নি , নয়তো কাল্পনিক আল্লাহ-র আদেশের সামনে মাথা নিচু করেছিলেন । আয়েশার বয়স তখন মাত্র ৬ । এখনকার হিসাবে ক্লাস ওয়ান স্ট্যান্ডার্ড এর ছাত্রী । আর ওই বয়স বিবাহ বা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে নিতান্তই অনুপযুক্ত । সুতরাং উপযুক্ত করে তলার জন্য মহম্মদ কে কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হতো । তাই তিনি এই সময়ে অপেক্ষা করার মনস্থির করলেন । কিন্তু দ্বিতীয় হিজরি তে বদরের যুদ্ধে ওমরের কন্যা হাফসা (যার বয়স তখন ১৮ থেকে২২ এর মধ্যে )-এর পতি মারা গেলে তিনি আবুবকর ও ওসমান কে প্রস্তাব দিলেন হাফসা কে বিবাহের জন্য । কিন্তু তারা বিবাহ করতে না চাইলে মহম্মদের হাতে চলে আসে সুবর্ণ সুযোগ । তিনি নিজেই বিবাহ করেন হাফসা কে । এটি হিজরি ৩ এর প্রথম দিকের ঘটনা ।

লক্ষণীয় , এখনো পর্যন্ত মহম্মদের বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনা হয়নি । কেননা , ১ম পত্নী বিগতা , ২য় পত্নী বিগত যৌবনা এবং প্রথম পত্নীর সন্তানদের প্রতিপালিকা মাতা , তৃতীয় পত্নী নেহাতই শিশু এবং পিতার গৃহেই অবস্থান রতা । এবং ৪র্থ বিবাহের ক্ষেত্রেও তাকে সমালোচনার মুখে পরে হয় নি , কেননা তিনি অন্যদের বলেছিলেন বিবাহ করতে বিধবা হাফসা কে , কিন্তু তারা করেন নি । তাই মহম্মদের এই বিবাহ সমালোচনার মুখে না পরে বরং প্রশংসিত হয়েছিল।

এরপর পঞ্চম বিবাহের সময় তাকে প্রথম সমালোচনার মুখে পরতে হয় । ৩য় হিজরি তে জয়নব বিনতে খোজাইমা-র স্বামী ওহোদের যুদ্ধে মারাত্মক ভাবে জখম হন এবং নিহত হন । এর পর কিন্তু মহম্মদ আর কাউ কে জয়নব বিনতে খোজাইমা কে বিবাহ করার প্রস্তাব না দিয়ে নিজেই বিবাহ করে নিলেন । মুসলিম রা আগেও এইরকম বিবাহ দেখেছিল । কিন্তু জয়নব বিনতে খোজাইমা –র ক্ষেত্রে মেনে নিতে তাদের কষ্ট হচ্ছিল । হওয়াটাই স্বাভাবিক । কেন না , যে ব্যক্তি যুদ্ধে মারা যাবেন , তাদের পত্নী কেই নবী বিবাহ করবেন—এই যুক্তি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না । নবী ও বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি নিন্দিত হচ্ছেন ।

ঠিক এই সময়েই অবতীর্ণ হল সুরা নিসা-র ৩য় আয়াত । এই আয়াত দ্বারা মহম্মদের আল্লাহ (না কি মহম্মদ নিজেই!) মহম্মদ কেও সমালোচনার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেন ৪ টি বিবাহের অনুমোদন দিয়ে । অন্যদিকে তিনি বাকি মুসলিমদের ও ৪টি বিবাহ করার অনুমতি দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করতে চাইলেন । এতে কিছুটা কাজ তো অবশ্যই হয়েছিল । কিন্তু সমালোচনা থিতিয়ে দিয়েছিল অন্য একটি ঘটনা । কয়েকদিনের মধ্যেই জয়নব বিনতে খোজাইমা-র মৃত্যু হয়। কিন্তু মহম্মদ এখানেই থেমে থাকলেন না ।
জয়নব বিনতে খোজাইমা-র মৃত্যুর পর মহম্মদের জীবিত পত্নীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ এ । সুতরাং আল্লাহ-র নির্দেশ মত তিনি এখনো একটি বিবাহের অধিকারী । সুতরাং , তিনি সুযোগ হাতছাড়া করবেন কেন ? কয়েক মাসের ব্যবধানেই হিজরি ৪ এ বিবাহ করে ফেললেন আরেক জন বিধবা নারী, উম্মে সালমা কে । যার পতি আবু সালমা ওহোদের যুদ্ধে আহত হন এবং এক বছরের মধ্যেই হিজরি ৪ এ মারা যান । যেহেতু আল্লাহ আগেই চার টি পর্যন্ত বিবাহের অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন তাই এবারেও তিনি সমালোচনার মুখে পরলেন না ।
কিন্তু কতদিন ? প্রবল সমালোচনা ও নিন্দা শুরু হল পরের বছর । ৫ম হিজরি সনে, যখন তিনি সম্পর্কে তার বোন এবং অন্যদিকে তার পোষ্যপুত্রের তালাক প্রাপ্তা পূর্ণ যুবতী স্ত্রী জয়নব বিনতে জাহাস কে বিবাহ করলেন , তখন তাকে তার ই অনুগামী দের দ্বারা যে অভূতপূর্ব সমালোচনা ও নিন্দার মুখে পড়তে হয়েছিল , তা হয়তো অন্য কোনও ভাবে জানার উপায় নেই । কিন্তু সেই নিন্দা ও সমালোচনা থামাতে নবী এবং তার আল্লাহ কে যে কম কসরত করতে হয়নি , তা বোঝা যায় ,কোরআন এর ৩৩ নং সুরা আহ-যাব পরলে । কিন্তু তার আগে সুরা আহ-যাব অবতীর্ণ হওয়ার সময় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া একান্ত আবশ্যক –নয়তো এই লেখা অর্থহীন হয়ে পড়বে –
পূর্বে উক্ত গ্রন্থে সুরা আহ-যাব এর অবতীর্ণ হওয়ার সময়কাল সম্পর্কে বলা হয়েছে , “এই সুরায় তিন টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে । প্রথমত , পঞ্চম হিজরির শওয়াল মাসে অনুষ্ঠিত আহ-যাব যুদ্ধ ; দ্বিতীয়ত , পঞ্চম হিজরির জিলক্কাদ মাসে অনুষ্ঠিত বনু কুরাইযার যুদ্ধ ; ও তৃতীয়ত , পঞ্চম হিজরির জিলক্কাদ মাসে অনুষ্ঠিত জয়নবের সাথে নবীর বিবাহ । এই ঐতিহাসিক ঘটনা সমূহের ভিত্তি তে এই সুরা নাযিল হওয়ার সময়কাল (৫ম হিজরি) সঠিক ভাবে নির্ধারিত হয়ে যায় ।”
সুতরাং এই বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই যে সুরা আহ-যাব এর অবতীর্ণ হওয়ার সময়কাল ৫ম হিজরি । এবার আমরা প্রসঙ্গে আসি । এই সুরা টি ভাল করে পরলেই বোঝা যাবে সমালোচনা ও নিন্দা বাদ থেকে মহম্মদ কে বাঁচাতে আল্লাহ-র কি আপ্রাণ চেষ্টা !
প্রথম প্রচেষ্টা :- আয়াত ৪০ –“মহম্মদ তোমাদের পুরুষ দের মধ্যে কারো পিতা নয় । সে আল্লাহ-র প্রেরিত ও বারতা বাহকদের শেষ জন ।” সেই সময় পোষ্যপুত্র ও নিজ পুত্র কে আলাদা করে দেখা হতো না । পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী কে বিবাহের নিন্দা যারা করছিল , তাদের এই আয়াতের দ্বারা বোঝানো হল যে ,তিনি জায়েদের পিতা নন , সুতরাং তার তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী এ বিবাহ করতেই পারেন ।
দ্বিতীয় প্রচেষ্টা :- আয়াত ৫০—“ হে নবী ! তোমার জন্য সকল স্ত্রীগন কে বৈধ করেছি ,জাদের তুমি দেনমোহর প্রদান করেছ । এবং বৈধ করেছি তোমার অধিকারভুক্ত দাসিগন কে ,যাদের আমি প্রদান করেছি । এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচাতো , ফুফাতো মামাতো ও খালাতো বোন—জারা তোমার সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছে ।” সেই সময় নিজের নিকটস্থ আত্মীয় দের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা কে ভাল চোখে দেখা হতো না । তাই ফুফাতো বোন জয়নব কে বিবাহ করার নিন্দা যারা করছিল , এই আয়াতের দ্বারা তাদের নির্দেশ দেওয়া হুল যে ,জয়নব মহম্মদের ফুফাতো বোন হলেও , মহম্মদের বিবাহের জন্য বৈধ । যেহেতু আল্লাহ টা অনুমোদন করেছেন ,তাই এই নিয়ে কারো কিছু বলার থাকতে পারে না ।
তৃতীয় প্রচেষ্টা :- এত বলেও যখন সমালোচনা থামানো গেল না , তখন আল্লাহ নবী কে নির্দেশ দিলেন , যা আমাদের আলোচনায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ । আয়াত ৫২ :- “এরপর তোমার জন্য কোনও নারী বৈধ নয় । তমার স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য স্ত্রীও নয় , যদিও তাদের সৌন্দর্য তমায় মোহিত করে । তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসী দের ব্যাপারে এটা প্রযোজ্য নয় ।” নবী কে নিজ দাসী ছাড়া আর অন্য কাউ কে বিবাহ করতে আল্লাহ নিষেধ করলেন । এবং তা ৮ম হিজরি ( অধিকাংশ ইসলামী ব্যাখ্যাকার দের এবং আমাদের অতি কাছের জনাব ডঃ ওসমান গনী-র মত) -তে নয় ,৫ম হিজরি তে । কিন্তু তা তিনি পালন করেন নি । এর পর ও তিনি একাধিক নারী কে বিবাহ করেছেন ,যারা তার দাসী নয় । সুতরাং , স্পষ্টতই আল্লাহ তথা কোরআনের নির্দেশ তিনি নিজেই মানেন নি ।
সে যাই হোক ,এর পর ও কিন্তু নিন্দা-মন্দ থামেনি । তাই মহম্মদের আল্লাহ নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করতে হুমকি দিতেও পিছ পা হননি । আহ-যাব সুরার ৫৭ , ৬০ ,৬১ নং আয়াত গুলি তে , প্রথমে আল্লাহ-র শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন , তার পর তাদের নগর ছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন ,ও তাতেও না থামলে হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করেছেন ।

তবে আমার প্রশ্ন হল , যে আল্লাহ ও কোরআন নবী কে বাঁচাতে এত কিছু করলো, সেই আল্লাহ ও কোরআনের নির্দেশ নবী মহম্মদ মানেন নি কেন ? তাহলে কি তিনি জানতেন ,যে কোরআন আল্লাহ-র বাণী নয় ?

এইবার আসি সেইসব নির্লজ্জ ,মিথ্যাবাদী ব্যাখ্যাকার দের প্রসঙ্গে । আমার প্রশ্ন হল আর কতদিন এমন টা চলবে ? কতদিন আমরা সাধারন মানুষ এইসব মিথ্যা কে ‘চক্ষু কর্ণ মুদিয়া’ বিশ্বাস করে যাব ?