(আগের পর্বের পর…)
…
২.০ : ভারতীয় দর্শন-সূত্র
…
যদিও ‘Philosophy’ শব্দটিই ভারতবর্ষে দর্শন নামে পরিচিত, তবু এই Philosophy এবং দর্শন- শব্দ দুটি ভারতীয় দর্শনের ক্ষেত্রে সমার্থবোধক নয় এবং এদের উৎসও এক নয়। Philosophy শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হলো জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ (Love of wisdom), আর ভারতীয় দর্শনের বিষয় বা উদ্দেশ্য হলো সত্য বা তত্ত্বোপলব্ধি। ‘দর্শন’ কথাটার সাধারণ অর্থ হলো দেখা বা প্রত্যক্ষ করা। কিন্তু যে-কোন প্রকার দেখাকেই ‘দর্শন’ নামে অভিহিত করা যায় না। ভারতীয় মতে ‘দর্শন’ বলতে বোঝায় আত্মদর্শন, অর্থাৎ আত্মাকে দেখা বা জানা। এর অর্থ আত্মাকে উপলব্ধি করা। অতএব, দর্শন হলো সত্য বা তত্ত্বকে দেখা এবং তার স্বরূপ উপলব্ধি করা অর্থাৎ সত্যের সাক্ষাৎ উপলব্ধি। আর যিনি সত্য বা তত্ত্বকে জীবনে উপলব্ধি করেছেন তিনিই সত্যদ্রষ্টা বা তত্ত্বজ্ঞানী দার্শনিক। এই হলো ভারতীয় দর্শনের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি।
.
তবে সত্য উপলব্ধির দার্শনিক প্রপঞ্চে ভারতীয় দর্শন-চিন্তার ক্রমবিকাশে প্রধানত দুটি পরস্পর বিপরীত ধারা লক্ষ্য করা যায়। একটি হলো আস্তিক ধারা, অন্যটি নাস্তিকপন্থি। বর্তমান প্রচলিত অর্থে যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাঁদেরকে আস্তিক এবং যাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না তাঁদেরকে নাস্তিক বলা হলেও প্রাচীন ভারতীয় দর্শনে আস্তিক ও নাস্তিক শব্দদুটি বর্তমান অর্থে নয়, বরং এক বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
.
এক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয় ব্যাকরণের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’র সংশ্লিষ্ট ব্যাকরণসূত্র উল্লেখ করা যেতে পারে। পাণিনির প্রাচীনত্ব নিয়ে দ্বিমত না-থাকলেও তার আনুমানিক সময়কাল ধরা হয় খ্রীস্টপূর্ব ৬০০-৪০০ এর মধ্যে। পাণিনি তাঁর ব্যাকরণসূত্রে ‘অস্তি নাস্তি দ্বিষ্টং মতিঃ’-এর মাধ্যমে দুটি বিপরীত মত-গোষ্ঠির উদ্ধৃতি টেনেছেন। এই সূত্রানুসারে ‘দ্বিষ্টং পরলোকো অস্তি’ অর্থাৎ পরলোক আছে এরূপ বুদ্ধি বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আস্তিক এবং ‘দ্বিষ্টং পরলোকো নাস্তি’ অর্থাৎ পরলোক নাই এরূপ বুদ্ধি বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নাস্তিক বলা হয়েছে।
.
পাণিনি সূত্রের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ব্যাকরণকার পতঞ্জলি (অন্যুন খ্রীস্টপূর্ব ১৫০) তাঁর ‘মহাভাষ্য’ গ্রন্থে ‘আস্তিক’ ও ‘নাস্তিক’ শব্দের সংজ্ঞা সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করেছেন। পতঞ্জলির মতে ‘অস্তি’ বা ‘আছে’ এই ধারণার বশবর্তী লোকেরা আস্তিক এবং এর বিপরীত ‘ন অস্তি’ এই ধারণায় প্রভাবিত লোকেরা নাস্তিক পদের দ্বারা অভিধেয় (মহাভাষ্য ৪/৪/১)। অর্থাৎ আস্তিকেরা যে বিশেষ বস্তু বা ধারণার অস্তিত্ব স্বীকার করেন, সেগুলিকে স্বীকৃতি না-দেয়ার জন্য নাস্তিকেরা স্বতন্ত্র এক গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্যে’ এসবের বিস্তৃত বিবরণ না থাকলেও অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থে নাস্তিক শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আরো কিছু আভাস পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মহাভারত থেকে উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মহাভারতের বিভিন্ন স্থানে (১২/১২/৫, ১২/২৬৯/৬৭, ১২/২৭০/৬৭) নাস্তিকদের দ্বারা অস্বীকৃত বিভিন্ন ধারণার সঙ্গে বৈদিক সমর্থনকে যুক্ত করার প্রয়াস দেখা যায়। যেমন-
বেদবাদাপবিদ্ধাংস্তু তান্ বিদ্ধি ভূশনাস্তিকান্।
ন হি বেদোক্তমুৎসৃজ্য বিপ্রঃ সর্ব্বেষু কর্ম্মসু।। (মহাভারত : ১২/১২/৫)
দেবযানেন নাকস্য পৃষ্ঠমাপ্নোতি ভারত!।
অত্যাশ্রমানয়ং সর্ব্বানিত্যাহুর্বেদনিশ্চয়াঃ।। (মহাভারত : ১২/১২/৬)
ব্রাহ্মণাঃ শ্রুতিসম্পন্নাস্তান্নিবোধ নরাধিপ!।
বিত্তানি ধর্ম্মলব্ধানি ক্রতুমুখ্যেষ্ববাসৃজন্।। (মহাভারত :১২/১২/৭)।
.
অর্থাৎ : সম্ভব থাকিলেও যাহারা কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাস অবলম্বন করে, আপনি তাহাদিগকে বেদবাক্য পরিত্যাগী অত্যন্ত নাস্তিক বলিয়া অবগত হউন। ৫।
ভরতনন্দন! বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ সমস্ত কর্ম্মের মধ্যে বেদোক্ত কর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া দেবযানে স্বর্গে যাইতে পারেন না। বিশেষতঃ বেদবিশ্বাসী লোকেরা এই গৃহস্থাশ্রমকে সমস্ত আশ্রমের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলিয়া থাকেন। ৬।
নরনাথ! যে সকল ব্রাহ্মণ বেদজ্ঞানসম্পন্ন, আপনি তাঁহাদিগকে জানিয়া রাখুন। যাঁহারা ন্যায়ার্জিত ধর্ম উত্তম যজ্ঞে বিতরণ করিয়াছেন, তাঁহারাই বেদজ্ঞঅন-সম্পন্ন। ৭।
.
এবং-
‘নাস্তিক্যমন্যথা চ বেদানাং পৃষ্ঠতঃ ক্রিয়া।’ (মহাভারত : ১২/২৬৯/৬৭)। ইত্যাদি।
.
এছাড়া প্রাচীন গ্রন্থ মনুস্মৃতিও প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যায়, মনুর মতে বেদনিন্দুকেরাই ‘নাস্তিক’ আখ্যায় অভিহিত হওয়ার যোগ্য-
যোহবমন্যেত তে মূলে হেতুশাস্ত্রাশ্রয়াদ্ দ্বিজঃ।
স সাধুভি র্বহিষ্কার্যো নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ।। ২ / ১১।। (মনুসংহিতা)।
অর্থাৎ : যে দ্বিজ হেতুশাস্ত্র অর্থাৎ অসৎ-তর্ককে অবলম্বন ক’রে ধর্মের মূলস্বরূপ এই শাস্ত্রদ্বয়ের (শ্রুতি ও স্মৃতির) প্রাধান্য অস্বীকার করে (বা অনাদর করে), সাধু ব্যক্তিদের কর্তব্য হবে- তাকে সকল কর্তব্য কর্ম এবং সমাজ থেকে বহিষ্কৃত করা (অর্থাৎ অপাংক্তেয় ক’রে রাখা)। কারণ, সেই ব্যক্তি বেদের নিন্দাকারী, অতএব নাস্তিক।
.
বেদবিরোধী নাস্তিকদের কার্যকলাপে বৈদিক ঐতিহ্যের ধারক বাহক মনুর সমর্থন না থাকাই যে স্বাভাবিক তা মনুসংহিতার বিভিন্ন স্থানে নাস্তিকদের নির্দ্বিধ নিন্দা করার মধ্যেই পরিস্ফুট হয়। যেমন-
অনপেক্ষিতমর্যাদং নাস্তিকং বিপ্রলুম্পকম্ ।
অরক্ষিতারমত্তারং নৃপং বিদ্যাদধোগতিম্ ।। ৮/৩০৯।। (মনুসংহিতা)।
অর্থাৎ : যে রাজা শাস্ত্রবিধি ও শিষ্টাচারের উপর প্রতিষ্ঠিত ধর্মব্যবস্থা রক্ষা করেন না, কিন্তু নাস্তিক এবং অযথা অন্যায় অর্থদণ্ডাদির দ্বারা যিনি প্রজাবর্গের ধন হরণ করেন, যিনি প্রজাগণকে রক্ষা করেন না, অথচ যিনি সেই প্রজাদের দ্রব্য সমূহের অত্তা অর্থাৎ ভোগকারী, এইরকম রাজা নরকে পতিত হয়েছেন বলে বুঝতে হবে।
.
উল্লেখ্য, মনুসংহিতার টীকাকার মেধাতিথি উপরিউক্ত শ্লোকে উল্লিখিত ‘নাস্তিক’ শব্দটির ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে-
‘নাস্তি পরলোকা নাস্তি দত্তং নাস্তি হুতমিতি নাস্তিকঃ।’ (মনুসংহিতা)।
অর্থাৎ : পরলোক বলে কিছু নেই, যাগ-দান-হোম এগুলিও কিছু নয়- এইরকম কথা যিনি বলেন এবং এই বিশ্বাসে যিনি চলেন তিনি নাস্তিক।
.
অতএব, দেখা যাচ্ছে, বৈদিক ঐতিহ্যের প্রভাবপুষ্ট সকলের কাছে ‘নাস্তিক’ সংজ্ঞাটি আসলে বৈদিক প্রাধান্যের বিরোধীদের অর্থেই ব্যবহার্য। ভারতীয় দর্শনগুলিকে ‘আস্তিক’ ও ‘নাস্তিক’ এই দুটি সুনির্দিষ্ট বিভাগে চিহ্নিত করার মূলেও রয়েছে এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রেরণা। অর্থাৎ যাঁরা বেদের সিদ্ধান্ত প্রমাণরূপে গ্রহণ করেন তাঁদেরকে আস্তিক এবং যাঁরা বেদের সিদ্ধান্তকে অভ্রান্তরূপে গ্রহণ করেন না তাঁদেরকে নাস্তিক সম্প্রদায় বলা হয়। তাই বৌদ্ধ ও জৈনগণ পরলোক স্বীকার করলেও বেদনিন্দা করে নাস্তিক আখ্যায় অভিহিত হয়েছে। আর চার্বাকরা বেদ ও পরলোক উভয়ই অস্বীকার করে একেবারে নাস্তিক শিরোমণি আখ্যায় ভূষিত হয়েছে। তাই হয়তো মাধবাচার্য্য (চতুর্দশ শতক) তাঁর ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেন- ‘নাস্তিকশিরোমণিনা চার্বাকেণ’। অপরদিকে বেদ এবং উপনিষদানুসারী ষড়দর্শন যথা- সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত হলো সম্পূর্ণই বেদবিহিত আস্তিক দর্শন।
.
আবার অষ্টম শতকের জৈন দার্শনিক হরিভদ্র সূরী তাঁর ‘ষড়্দর্শনসমুচ্চয়’ গ্রন্থে ‘আস্তিকবাদিনাম্’ বা আস্তিকবাদ হিসেবে যখন বৌদ্ধ ও জৈন মতের উল্লেখ করেন, তখন এটাই প্রতীয়মান হয় যে আস্তিক সংজ্ঞাটা এখানে পরিবর্তিত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। এক্ষেত্রে টীকাকার সোমতিলক সূরীর মতে উক্ত গ্রন্থের অন্তর্গত এই ‘আস্তিকবাদিনাম্’ পদটির অর্থ হচ্ছে-
‘পরলোকগতিপুণ্যপাপাস্তিক্যবাদিনাম্’, অর্থাৎ আস্তিকবাদী বলতে তাঁদেরকেই বোঝায় যাঁদের পরলোক, পুণ্য, পাপ ইত্যাদিতে আস্থা আছে।
.
হরিভদ্র সূরীর এই পরিবর্তিত অর্থেও দেখা যাচ্ছে চার্বাকরা নাস্তিকগোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একইভাবে অষ্টম শতকেরই বৌদ্ধ আচার্য শান্তরক্ষিতের ‘তত্ত্বসংগ্রহ’ গ্রন্থে পরলোকের অস্তিত্ব অস্বীকার করার কারণে লোকায়ত মতকে ‘পরানাস্তিকতা’ আখ্যায় অভিহিত করা হয়েছে। এখানে চার্বাক মতেরই অন্যতম প্রাচীন নাম লোকায়ত দর্শন।
.
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, প্রাচীন ভারতীয় দর্শন জগতের অপরাপর সবগুলো দর্শনেই চার্বাক মতকে যার যার মতো করে নিজেদের বিপরীত অবস্থানে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও বেদের প্রাধান্যকে স্বীকার না করার জন্য ব্রাহ্মণ্য-সংস্কৃতির সমর্থকগোষ্ঠি জৈন ও বৌদ্ধ মতকে আস্তিক্যের মর্যাদা দিতে চাননি, তবু ভারতের ঐতিহ্যগত সাধারণ মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের সাপেক্ষে বৌদ্ধ ও জৈনরা যে স্বাভাবিকভাবে নাস্তিক্য প্রভাবের বাইরে, তারই ইঙ্গিত হয়তো এটা। তা থেকে একটা বিষয়ে একমত হওয়া যায় যে, ‘নাস্তিক’ সংজ্ঞার মধ্যে প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের ইঙ্গিতই লুকিয়ে আছে। আর এই বিদ্রোহী মনোভাবের মূর্ত প্রতীক আসলে চার্বাকই। কেননা এই নাস্তিক দৃষ্টিভঙ্গিটাকে যদি জড়বাদী ধারণা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়, তাহলেই এ পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে যায় আমাদের কাছে। প্রাচীন ভারতীয় অপরাপর সমস্ত ভাববাদী দর্শনের বিপরীতে একমাত্র জড়বাদী দর্শনই হলো চার্বাক দর্শন। মূলত এজন্যেই মাধবাচার্য তাঁর ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’ গ্রন্থে চার্বাকদেরকে ‘নাস্তিকশিরোমণি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
.
চার্বাক দর্শনের মূল কথাগুলো হচ্ছে- প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ; পৃথিবী (মাটি), জল, তেজ (আগুন) ও বায়ু- এই চারটি হচ্ছে তত্ত্ব; অর্থ ও কাম- দু’টি পুরুষার্থ; জীবনে ভোগ ত্যাজ্য নয় গ্রাহ্য। ভূতচতুষ্টয় হতে চৈতন্যের উৎপত্তি, পুনর্জন্ম বা পরলোক নেই, মৃত্যুই মোক্ষ। ভূতচতুষ্টয়ের মিলনে উৎপন্ন চৈতন্যবিশিষ্ট এই দেহ হতে বিচ্ছিন্ন পৃথক জীব নেই; ঈশ্বর বা আত্মা বলেও কিছু নেই। অগ্নিহোত্র, ত্রয়ী বেদ, ত্রিদণ্ড ও ভস্মগুণ্ঠন হচ্ছে প্রজ্ঞাপৌরুষহীন ব্যক্তিগণের জীবিকামাত্র। ত্রয়ী ধূর্ত্তগণের প্রলাপ ও বেদের বিধানের মধ্যে কোন তফাৎ নেই, উভয়ই বঞ্চনামূলক ও মিথ্যা। দণ্ডনীতিই একমাত্র বিদ্যা, বার্ত্তা (কৃষি ইত্যাদি অর্থনীতিসংক্রান্ত বিদ্যা) দণ্ডনীতির অন্তর্ভুক্ত। সত্যান্বেষণে প্রয়োজন অনুভব ও বুদ্ধিকে পথপ্রদর্শক করা, ইত্যাদি।
…
(চলবে…)
…
[আগের পর্ব: ভূমিকা] [*] [পরের পর্ব: ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়]
…
আপনার বইটি পাঠকের মনে তৃপ্তি আনবে,প্রশ্ন জাগাবে।বইটি ভারতে পাওয়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।
বেদান্ত দর্শনের অন্যান্য সম্প্রদায়ের আলোচনা করলে আলোচনা পূর্ণ হত।
রনদীপম বসু, আপনা কে অনেক ধন্যবাদ
অনেক কিছু জানতে পারলাম।
চর্বাক সম্পর্কে তো কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি তবে বেদ,মহাভারত,রামায়ণ, বৌদ্ব গন্তে কিছু কিছু জাগায় পাওয়া যায়।
তবে এনিয়ে ঐতিহাসিক এর মধ্যে মতবেদ রয়েছে।
অনেক ঐতিহাসিক বলেন,চর্বাক নামে একজন ঝষি ছিলেন তিনি এ দর্শন প্রতিষ্টা করেন। তার নাম হয় এ দর্শন।
আবার অনেক বলেন চর্বণ থেকে আসছে চর্বাক। চবর্ণ অর্থ খাওয়া।তারা খায়া দাওয়া কে জীবন বলত
আগে বলতে গেলে কিছুই জানতাম না চার্বাক সম্পর্কে। দর্শনের মূল কথাগুলো পড়ে আগ্রহ আরো বেড়ে যাচ্ছে দাদা। পরের পর্ব “ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়” এর অপেক্ষায় থাকলাম। 🙂
@জাফর সাদিক চৌধুরী, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। খুব শীঘ্রই পরের পোস্টটি দিয়ে দেবো আশা করি। ভালো থাকবেন।
দুটো ব্যাপারের সাথে একমত না। এটা ঠিক আদি ভারতে নাস্তিক শব্দের অর্থ ছিল, যারা বেদ মানে না।
কিন্ত নাস্তিক্য মানে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হলে-যে সংজ্ঞাটা আমরা ব্যবহার করছি-
ভারতীয় দর্শনে দুই ধরনে নাস্তিক্য ছিল- যারা বেদকে মেনে নাস্তিক [ অর্থডক্স], আর যারা না মেনে নাস্তিক ( চার্বাক, জৈন এবং বৌদ্ধ)। বেদ মেনে নাস্তিক্য দর্শণ [ সাংখ্য, ন্যায় এবং আদি মীমাংসা]।
বেদে বিশ্বাস মানেই ঈশ্বরে বিশ্বাস এমন না। সাংখ্য বা ন্যায় দর্শনে ঈশ্বর নেই-কিন্ত তারা অর্থডক্স দর্শন।
চার্বাক দর্শন কি ছিল-সেটা কেও ঠিক করে জানে না। কারন চার্বাকের বাণীগুলি আলাদা ভাবে টেকে নি-টিকেছে শত্রুদের গালাগালের মধ্যে। তারা কি আর চার্বাকে বাণীগুলি ঠিক করে সংকলিত করেছে? সদালাপ থেকে কেও যদি অভিজিত রায় কে ছিল বার করে যায় তাহলে যে অবস্থা হবে, চার্বাক দর্শনের ও ঠিক এই হাল। শত্রুর মুখের কথাতে বিশ্বাস করেই জানতে হয় চার্বাক দর্শন কি ছিল। সেটা বোধ হয় অনেকটাই বিকৃত।
@বিপ্লব পাল, ধন্যবাদ বিপ্লব দা।
বর্তমান সাংখ্য দর্শন কিন্তু আস্তিক্য প্রলেপে মোড়ানো। তবে আদি সাংখ্য যে নিরীশ্বরবাদী ছিলো তাতে সন্দেহ নেই। আদি সাংখ্যের পুরুষ নামের ক্লীব সত্তাকে পরবর্তীকালের সাংখ্য দর্শনে ব্রহ্মবাদী রূপ দেয়া হয়েছে। আদি সাংখ্যের সাথে লোকায়ত দর্শনের সম্পর্ক নিয়ে দেবীপ্রসাদ তো বিরাট গবেষণাই করেছেন !
অন্যদিকে ন্যায় দর্শন শুরুতে প্রমাণশাস্ত্র হিসেবে আবির্ভুত হলেও এখানে কিন্তু প্রমাণের সংখ্যা চারটি হওয়ায় এটাকে আসলে নাস্তিক দর্শন বলার জো নেই। আদি মীমাংসাকে তো ভাষ্যকার কুমারিল আর প্রভাকর ভট্টরা এতো জটিল করে ফেলেছেন যে সবকিছু কেমন হাওয়াই হাওয়াই মনে হয়, হা হা হ !
তবে হাঁ, চার্বাক মতকে আমরা বিরুদ্ধপক্ষের উপস্থাপনা থেকেই যেটুকু পাই। নিশ্চয়ই তারা তাদের সুবিধাজনক মতো করেই উপস্থাপন করেছেন। ফলে সেখান থেকে অবিকৃত চার্বাক পাওয়ার আশা করা যায় না। তাই বার্হস্পত্য সূত্র, চার্বাক ষষ্ঠী ইত্যাদিকে অবিকল চার্বাক উক্তি ভাবা ঠিক নয়। তবে সেগুলো থেকে এবং প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে চার্বাক মত পুনর্গঠন করা মেধাবী গবেষক বিদ্বানদের জন্যে নিশ্চয়ই অসম্ভব হবে না। নিদেন পক্ষে আমরা একটা ধারণা অন্তত নিতে পারি। এই যা। আমি আমার অসংখ্য সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়েও ব্যক্তিগতভাবে সেই সামান্য ধারণাটাই নিতে চাচ্ছি।
আবারো ধন্যবাদ বিপ্লব দা।
@রণদীপম বসু,
রণদা, আপনার লেখা মানেই অনেক খেটে লেখা।
আপনার লেখা পড়ে কম সময়ে জ্ঞানী হবার কৌশল নেয়া যায়।আমরা আছি পাঠক হিসেবে। কাজেই পর্বের পর পর্ব চলুক।
@গীতা দাস, বলেন কী দিদি !! আমি তো জানি যে, আমার মূর্খতাগুলোই প্রকাশ করছি এখানে !!
@রণদীপম বসু,
আপনার এই লেখাটার প্রথম পর্ব আমি মন দিয়ে পড়েছিলাম। এরপর গরমে আমি অসুস্থ ছিলাম জ্বর সেই সাথে নানান উপসর্গ নিয়ে বেতাল ছিলাম শারিরীক ভাবে।
তবে এইবার কিছু বলার লোভ ছাড়তে পারছিনা, যেমন
এই ব্যপারটা অবাক করার মত :-s সত্যি।
এমন গম্ভীর বিষয় নিয়ে আপনার লেখার দক্ষতা সত্যি পাঠক’কে বিস্মিত করে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
@আফরোজা আলম, আহারে আপা ! এখানে আমার কৃতিত্ব কোথায় !! আমি তো কেবল ধার করা জ্ঞান বিলি করছি !! এদিক-সেদিক আরো কতকিছু যে বাকি রয়ে যাচ্ছে তা কি করে বলি !!
@রণদীপম বসু,
দাদা , আপনার বিনয় ব্যবহার আপনার চরিত্রের অলঙ্কার- 🙂 (F)
@আফরোজা আলম, আপু, আপনি যতই লজ্জা দেয়ার চেষ্টা করেন না কেন, আমি কিন্তু বেলাজ গোত্রের প্রাণী ! হা হা হা !!
বৌদ্ধ এবং জৈনরা পরলোক বা জন্মান্তর স্বীকার করে কিনা এই বিষয় নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। জাতকের গল্পগুলিতে জন্মান্তরের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় কিন্তু এগুলি ত্রিপিটকের অংশ নয় আবার রাহুল সাংকৃত্যায়ন,প্রবীর ঘোষের লেখায় দেখি উলটো কথা। তাদের মতে এগুলি বৈদিক সংমিশ্রণ। বুদ্ধ নিজে পরলোক বা জন্মান্তর সম্পর্কে কিছু বলেছেন কিনা তাও জানিনা আর জৈনদের সম্পর্কে আরও অন্ধকারে আছি। পরবর্তীতে যদি বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন সম্পর্কে লিখেন তবে খুব ভালো হয় দাদা। আর আস্তিক নাস্তিক ব্যাপারটা পরিষ্কার করার জন্য ধন্যবাদ কারণ ভারতীয় দর্শনে এই জিনিসটা সেমেটিক বা পাশ্চাত্য মতবাদ থেকে অনেকটাই আলাদা। লেখা ভালো লেগেছে। চালিয়ে যান।
@আলোকের অভিযাত্রী,
ধর্মপাদে অজস্র জায়গায় জন্মান্তরের রেফারেন্স পাবে। পড়ে নাওঃ
http://www.accesstoinsight.org/tipitaka/kn/dhp/dhp.01.budd.html
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ দাদা। ত্রিপিটক পড়ার ইচ্ছে ছিল বহুদিনের। এবার হয়ত পড়ে ফেলা যাবে। যতটুকু পড়লাম তাতে জন্মান্তর সম্পর্কে রেফারেন্স পেলাম না তবে বুদ্ধ দেখছি দেবতাদের কথা বহুবার বলছেন। মার,ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতাদের কথা বারবার আসছে। জন্মান্তরও হয়ত পেয়ে যাবো সামনে। আর রনদীপমদার সাথে একমত যে বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন বেদবিরোধী হলেও শেষ পর্যন্ত ভাববাদী। বস্তুবাদী দর্শন একমাত্র চার্বাক দর্শন।
@আলোকের অভিযাত্রী, ধন্যবাদ আপনাকে।
বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন নিয়ে প্রাথমিক কিছু কাজ করে রেখেছি। তবে এবার এই চার্বাক আলোচনার সুবিধার্থেই সেগুলিকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এক সময় সেগুলো নিয়েও ভিন্নভাবে লিখার ইচ্ছে ভেতরে জমিয়ে রাখলাম।
নাস্তিক্য দর্শন বলতে তিনটি দর্শন চার্বাক, জৈন ও বৌদ্ধ বুঝালেও জৈন ও বৌদ্ধ দর্শন কিন্তু সম্পূর্ণ ভাববাদী দর্শন এটা মনে রাখতে হবে। একমাত্র জড়বাদী দর্শন চার্বাকই।
হায় আল্লা! চার্বাক বাবু কী মুক্তমনা বানাইছে? কেম্নে কী? :lotpot:
@বিপ্লব রহমান, আহারে দাদাবাবু ! এ ব্যাপারে কোনো কি সন্দেহ আছে আপনার !?! হা হা হা !!
বুঝতে পারছি এত জটিল বিষয় একবারে বুঝতে পারবোনা , তাই ধীরে ধীরে সব হজম করি পরে আবার চাবানো যাবে।
@ছেঁড়াপাতা, আমিও ভাই আপনার সাথে সহমত পোষণ করি। একটু একটু করে চিবিয়ে খেলে বেশি খাওয়া যাবে, কী বলেন ? হা হা হা !!
সংশপ্তকের প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ। কারন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আর প্রত্যক্ষ দুটো জিনিস যেহেতু আলাদা, এখানে একটি ঝামেলা থেকে যাচ্ছে।
ফাঁকিবাজি চালাচ্ছেন কিন্তু রণদীপম দা। লেখা আরো বড় চাই। :))
@সাইফুল ইসলাম, প্রাচীন দর্শনপাঠে প্রথম যে সমস্যাটা তৈরি হয় তা হলো, দার্শনিক সিদ্ধান্ত বা বিবেচনাপূর্ণ শব্দগুলোকে দার্শনিক পরিভাষার সুনির্দিষ্ট অর্থে না নিয়ে প্রচলিত অর্থে ব্যাখ্যার প্রবণতা। এখানে অক্ষির সম্মুখে যা তাকে এককথায় প্রকাশ করে প্রত্যক্ষ অর্থ করতে গেলে দর্শনপাঠ ক্ষুণ্ন হতে বাধ্য। এবং শেষতক তা গোলমেলে হয়ে যাওয়াটাই অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। ভারতীয় দর্শনের পরিভাষায় প্রত্যক্ষ বলতে পঞ্চ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হিসেবেই বুঝতে হবে। এখানে কোন ঝামেলার অবকাশই নেই। বাতাস দেখা যায় না, কিন্তু তা ত্বক বা স্পর্শেন্দ্রিয়গ্রাহ্য বলে তাও প্রত্যক্ষের অন্তর্ভুক্ত, এরকম। যাক্, এ আলোচনাটা যখন আমরা চার্বাক সিদ্ধান্তের পর্যালোচনায় যাবো তখনই বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যার অবকাশ থাকবে।
আর সাইফুল, আমরা কিন্তু একটা লম্বা দৌড়ে অংশ নিতে যাচ্ছি। দম নিয়ে দম নিয়ে প্রতিটা পদক্ষেপ মেপে মেপে এগুতে হবে। এখানে স্প্রিন্টারের মতো জোরসে কষে একটা দৌড়ের সুযোগ নেই কিন্তু ! এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, আমরা একটা দীর্ঘ প্রবন্ধ নয়, বরং একটা স্বাস্থ্যবান গ্রন্থ ভ্রমণ শুরু করেছি। তাই একেকটা আইটেম হিসেবে আলোচনা করতে হবে। অন্য যেকোন দর্শন থেকে চার্বাক দর্শনের আলোচনার পার্থক্য এখানেই যে, আমাদেরকে আইটেম ভিত্তিক আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সংশ্লিষ্ট আইটেমটির আলোচনা যেটুকু স্থান দাবি করে সেটুকুই বরাদ্দ রাখছি। ফলে কোথাও কোথাও পোস্ট ধৈর্যচ্যুতি ঘটানোর মতো দীর্ঘও হতে পারে। কেননা একেকটা আইটেমের টোন ধরে রাখতে একই পোস্টে সেটা আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এই আর কি !! তাই এখন ফাঁকিবাজি মনে হলেও পরে আবার হাঁসফাঁস করবেন না যেন, হা হা হা !
তবে ফাঁকিবাজি একটা হয়েছে বৈ কি ! পোস্টের শিরোনামে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন যে, এই পোস্টটাও ভূমিকারই অংশ। এরকম আরো দুটো পোস্ট আসবে ভূমিকার অংশ হয়ে। কেননা তাতেও সেই আইটেমগত জটিলতাই, হা হা হা !!
এখানে কি ‘প্রত্যক্ষ বলতে ‘perceptual reality’ বোঝাচ্ছেন ? চার্বাকের উপর বাংলা ভাষায় কোন লেখা পড়ার সূযোগ আমার হয় নি এবং চার্বাক দর্শনে ইংরেজীতে সবখানে perception (উপলব্ধি) – কে সকল জ্ঞানের উৎস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন প্রত্যক্ষ এবং উপলব্ধি যেহেতু এক জিনিস নয়, বাকী মন্তব্য করার আগে এ ব্যপারে আপনার কাছ থেকে নিশ্চিত হতে চাই।
@সংশপ্তক, ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
এখানে প্রত্যক্ষ বলতে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বোঝানো হয়েছে। কেননা ইন্দ্রিয়াতীত কোন সত্তায় চার্বাকেরা বিশ্বাসী নন।
@রণদীপম বসু,
তাহলে নিচের অংশ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি ?
@সংশপ্তক, চার্বাক সাহিত্য নিয়ে আলোচনার শেষ পর্যায়ে চার্বাক দর্শনের শ্রেণীগত ভেদ নিয়ে আলোচনায় এ বিষয়টাকে আনা হবে। তবুও প্রাথমিক ধারণায় এটা বলে রাখা ভালো যে, প্রচলিত চার্বাক মতে তাঁদেরকে প্রত্যক্ষপ্রমাণবাদী চার্বাক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ প্রমাণের ক্ষেত্রে চার্বাকরা প্রত্যক্ষের উপর বিকল্পহীনভাবে জোর দেয়ার কারণ হলো, আধ্যাত্মবাদীরা মূলত অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তাঁদের সর্বক্ষমতা প্রয়োগ করেছিলেন এজন্যেই যে, অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা গেলে তখন ইন্দ্রিয়াতীত সত্তার অস্তিত্বকেও প্রতিষ্ঠা করা যায়। ফলে ঈশ্বর, আত্মা, পরলোক ইত্যাদি ইন্দ্রিয়াতীত বিষয়কে অনুমানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা সহজ হয়। তাই চার্বাকরা এদিকে খুবই সতর্ক ছিলেন বলেই এক্ষেত্রে এরা কোন ছাড় দিতে নারাজ।
তবে লোকসমাজে সাধারণ দৃষ্টিতে কিছু অনুমানকে বিবেচনায় না নিলে জীবন-বাস্তবতায় বহু সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। এজন্যেই চার্বাকদের আরেকটি সম্প্রদায় বিশেষ বিবেচনায় কিছু কিছু অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে মানলেও অলৌকিক কোন বিষয়ে অনুমানকে স্বীকৃতি দেন নি। এই যে কিছু কিছু বিষয়ে অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে মানার যুক্তি দেখানোর প্রবণতা, সেটাই দেবীপ্রসাদ উত্থাপন করেছেন। আকাশে মেঘ দেখে বৃষ্টির অনুমান, গর্ভ উঁচু দেখে পূর্বে সঙ্গমের অনুমান ইত্যাদি বিষয় যার পেছনেও পরোক্ষভাবে হলেও প্রত্যক্ষের ছোঁয়া রয়েছে সেসব অনুমানকে প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য করতে চেয়েছেন। এজন্যেই দেবীপ্রসাদ চার্বাকদর্শনের একটি সিদ্ধান্ত প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণকে ঘুরিয়ে বলতে চেয়েছেন যে, প্রত্যক্ষই প্রমাণ শ্রেষ্ঠ। তবে এটা কিন্তু ন্যায়শাস্ত্রেরও সিদ্ধান্ত। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা না-হলে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আশা করি যথাস্থানে তা আলোচনা করা যাবে।
আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি চমৎকার বিষয়টি আলোচনায় আনার জন্য।
@রণদীপম বসু,
দুটো প্রশ্ন
১। প্রত্যক্ষ ব্যাপারটাকে কি বস্তুনিষ্ঠ বলা যায়?
২। পঞ্চেন্দ্রিয় সংযোগের ফলে বা মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা হয় সেগুলো কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ?
@কাজী রহমান, চার্বাক মতে প্রত্যক্ষ হলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা। অতএব বস্তুনিষ্ঠ বলা যেতেই পারে ! আর পঞ্চেন্দ্রিয়ের বাইরের কোন অভিজ্ঞতা মানেই তো কাল্পনিক। তাই চার্বাকেরা ইন্দ্রিয়াতীত কোন প্রমাণে স্বীকৃতি দেন না। এজন্যেই তো এটা ভারতীয় চিন্তাজগতে একমাত্র বস্তুবাদী দর্শন।
@সংশপ্তক, এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটা পর্ব পেরিয়ে যখন চার্বাক সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করা হবে তখনই এ বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনায় আসবে। এখন কেবলই ভূমিকা পর্বের বিস্তৃতি চলছে। হা হা হা !
ভারতীয় দর্শন+চার্বাক দর্শনের প্রতি আগ্রহ ছিল অনেক আগে থেকেই, একটু আধটু পড়াও ছিল। খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানতে পারছি। লেখা খুবই ভাল লাগছে। ধন্যবাদ, লেখার জন্য এরকম একটা টপিক বাছাই করার জন্য। আশা করছি চালিয়ে যাওয়ার ধৈর্য থাকবে। (Y)
@ভুঁইফোড়, পাঠক যতক্ষণ ধৈর্য দেখাবেন, লেখক হিসেবে তাকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা তো থাকবেই। আশা করছি লেখক হিসেবে সে চেষ্টা বহাল থাকবে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি প্রতিটি পর্ব পড়ে যাচ্ছি। বেশ ভালো লাগছে।
অনেক নতুন জানছি। পুরোনো কিছু জানা আবার ঝালিয়ে নিতে পারছি।
@বিপ্লব দাস, ধন্যবাদ বিপ্লব দা। সাথে আছেন জেনে আরো প্রাণিত হচ্ছি !
ভালোই চলছে। আশা করি খুব শীঘ্রই পরের পর্ব পাবো।
@মাসুদ রানা, ধন্যবাদ।
লেখার শুরুতেই ফিলোসোফি ও ভারতীয় দর্শনের মধ্যে পার্থক্যের কথা বলে আগ্রহ জাগিয়ে তুললেন। কিন্তু পার্থক্যটা তো পরিস্কার হল না, রনদীপমদা! ভারতীয় দর্শনের অর্থ বুঝলেও কেন তা ফিলসফি থেকে পৃথক, তা বুঝতে পারিনি।
বৌদ্ধগন পরলোক স্বীকার করেন? এখানে পরলোক বলতে কি বুঝাচ্ছে আসলে? বাইবেলিয় ধর্মগুলোর ব্যাখ্যা থেকে নিশ্চয়ই আলাদা!
ভূতচতুষ্টয় বলতে কি চার তত্ত্বকে নির্দেশ করা হচ্ছে?
@কাজি মামুন, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আসলে ভারতীয় দর্শনের স্বাতন্ত্র্যই হচ্ছে, আত্ম তত্ত্বোপলব্ধির বিষয়। এখানে ‘আত্মা’ নামের একটি অজর অমর সত্তাকে স্বীকার করেই ভারতীয় দর্শনের তাত্ত্বিক ভিত্তি রচিত হয়েছে, যা পাশ্চাত্য দর্শনে এরকম নয়। তাই ফিলোসফি যে অর্থে পাশ্চাত্য দর্শনে সংজ্ঞায়িত করা হয়, ভারতীয় দর্শনে তা ভিন্নভাবে উপলব্ধ হয়। এ বিষয়টা পরবর্তী পর্বগুলোতে অধিকতর আলোচনায় আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আশা করি।
বৌদ্ধ দর্শনে সরাসরি আত্মা স্বীকৃত নয়। তবে জন্মান্তর স্বীকার করা হয়। ফলে সংগত কারণেই পরলোকের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না। তবে এই ব্যাখ্যাগুলো একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপিত। বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্যসত্যের দ্বিতীয় আর্যসত্যে প্রতীত্য-সমুৎপাদ নামে একটা তত্ত্ব আছে। সেটা বুঝলেই আসলে বৌদ্ধ দর্শনের মূল দৃষ্টিভঙ্গিটা বুঝে ফেলা যায়। পরবর্তীতে বৌদ্ধ দর্শন নিয়ে সিরিজ করলে এ বিষয়গুলো আলোচনা করা যাবে।
ভূত চতুষ্টয় মানে চারটি তত্ত্বই। মাটি, জল, আগুন ও বায়ু এই চারটিই তত্ত্ব বলে স্বীকার করা হয়। এই জগত আসলে এই চারটি তত্ত্বের বাইরে নয় বলেই চার্বাকীয় মত।
যাক্, ক্রমে ক্রমে এসব বিষয়ের পর্যালোচনা আসবে যথাসময়ে। কিন্তু সেসব গুরুপাক খাবার গ্রহণের আগে লঘুপাক খাবার দিয়ে ধীরে ধীরে আমাদের পরিপাকতন্ত্রটাকে প্রস্তুত করতে শুরু করে দেই, কী বলেন ? হা হা হা !!