(লেখাটি ঠিক কীভাবে শুরু করা উচিৎ বুঝে সারতে পারছিনা।বিষয়টা নিয়ে জানাশোনা কিঞ্চিৎ কম বৈকি। তার উপর আবার এই লেখাটা মানুষের উপর খাটিয়েই উপস্থাপন করা, যদিও মানুষের Sociobiology নিয়ে আমার পড়াশুনা নিতান্তই কম। যাহোক, লেখাটিকে পুরো ১০০% বিজ্ঞানসিদ্ধ না ধরে বিবর্তনের Selfish Gene তত্ত্বের একটি গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদানের প্রয়াস হিসেবে দেখতেই আমি পছন্দ করি। যেকারো এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে তা জানানোর বিনীত অনুরোধ রইলো। )
একটি কল্পনাচিত্র।ধরে নিন, আপনি এবং আপনার কাছাকাছি বয়সী তরুণ ভাই কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছেন। সাগরে আনন্দ করতে করতে একপর্যায়ে হঠাৎ দেখলেন আপনার ভাই দূরে সাগরে ডুবে মরতে বসেছেন। আপনি কী করবেন? “অবশ্যই গিয়ে ভাইকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ব”…আপনার উত্তরটাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণে ব্যাখ্যা করা যাক।
১) আপনার সাথে আপনার ভাইয়ের জিনগত মিল, ~৫০%, অর্থাৎ Co-efficient of Relatedness, r=0.5
২) আপনার ভাইকে আপনি বাঁচাতে পারলে পরবর্তীতে তিনি বিয়ে-শাদী করবেন এবং সাধারণ গড় অনুযায়ী ধরে নিলাম তিনি ২ সন্তানের বাবা হবেন। এক্ষেত্রে আপনি তাকে বাঁচানোর ফলে তার লাভ বা বেনেফিট ,B=2
৩) তাকে বাঁচাতে গেলে আপনাকে সাঁতার কেঁটে বেশ কিছুদুর যেতে হবে এবং তাকে বিপদমুক্ত করতে হবে। ধরে নিলাম, এই পুরো প্রক্রিয়াতে আপনার নিজের-ই সাগরের ঢেউতে ডুবে মরার সম্ভাবনা ২৫%, অর্থাৎ রিস্ক ফ্যাক্টর = 0.25. আর আপনি যদি ডুবে মরেন-ই, তবে আপনার নিজের বংশধর (গড়ে ২ জন সন্তান,ধরে নিচ্ছি আবারো) রেখে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই। তাহলে, ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আপনি মরে গেলে আপনার ক্ষতি বা Cost হতে পারে, C = 2X0.25 = 0.50
এবার নিচের গাণিতিক সম্পর্কটি দেখুনঃ
rB > C ;[এখানে, r=0.5, B=2 এবং C=0.50]
বা, 0.5 X 2 > 0.50
বা, 1 > 0.50 , যেটা বাস্তবসম্মত।
অর্থাৎ, আপনি যদি আপনার ডুবতে বসা ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে মরেও যান, তবু আপনাদের মধ্যে শেয়ারকৃ্ত ৫০% জিনের টিকে থাকার জন্য এটা কোন বিঘ্ন ঘটাবে না। তাই, আপনার শরীরের জিনগুলোই আপনাকে তাড়িত করবে দৌড়ে গিয়ে ভাইকে বাঁচাতে। যদি আপনি তাকে বাঁচাতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। আপনাদের দু’জনের মাঝেই সেই ৫০% জিনগুলো বেঁচে থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্মে (২+২ = ৪) বাহিত হবে। আর আপনি যদি মরেও যান , তেমন কোন ক্ষতি নেই, কারণ, আপনি ঐ জিনগুলোর-ই আরেকজন বাহককে বাঁচিয়ে গেলেন………এই না হলে ভ্রাতৃ্ত্ব!!!
কিন্তু এবার এক-ই অবস্থাটা কল্পনা করুন আপনার চাচাতো ভাইকে নিয়ে, যার সাথে আপনার জেনেটিক গঠনে ১২.৫% মিল রয়েছে।
আবারো ফর্মুলাটা দেখুনঃ
rB > C
এক্ষেত্রে যদিও Co-efficient of Relatedness, r=0.125
তাই rB = 0.125 X 2 = 0.25 এবং C= 0.50
কিন্তু 0.25 > 0.50 সত্য নয়, অর্থাৎ rB > C এখানে সিদ্ধ হচ্ছেনা।
তাই আপনাদের শেয়ারকৃ্ত ১২.৫% জিনের টিকে থাকার জন্যও এটা জরুরী যে আপনি আপনার কাজিনকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন মরণ-ঝুঁকিতে ফেলবেন না। তাই, ভাইকে বাঁচানোর জন্য আপনি যতটা আগ্রহী থাকবেন, চাচাতো ভাইকে বাঁচাতে হয়তো অতটা আগ্রহী হবেন না। উভয় ক্ষেত্রেই কিন্তু নেপথ্যে কাজ করছে সেই Selfish Genes. আপনি কাজ করে যাচ্ছেন শুধুই তাদের নির্দেশমত, একটি “Gene Reservoir and Survival Machine” হিসেবে।
যতই বিজ্ঞানের অগ্রগতি হচ্ছে, বেরিয়ে আসছে সামাজিকতা,পারিবারিকতা, পারস্পরিক সাহায্যের মত আপাত-জটিল বিষয়গুলোর পেছনের সরল বিজ্ঞান। মানুষের সব রকমের কর্মকাণ্ড, সব ধরণের সামাজিকতা কিংবা সহযোগীতাকেই এভাবে Selfish Gene দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখা সম্ভব বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞানীরা। আমার লেখার ইতি টানছি বিখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে,বি,এস হ্যাল্ডনের একটি উক্তি দিয়ে। তাঁকে যখন একবার জিজ্ঞেস করা হলো, “আপনার ভাইকে বাঁচাতে আপনি জীবন দিতে রাজি আছেন?” উত্তরে তিনি ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলেনঃ
“জ্বি না, এক ভাইয়ের জন্য আমি মরতে রাজি না। তবে আমার দুই ভাই কিংবা আট কাজিনের জন্য মরতে আলবত রাজি আছি।”
(উপরে বর্ণিত ফর্মুলাটি প্রদান করেছেন ডব্লিউ,ডি, হ্যামিল্টন, যিনি ছিলেন রয়েল সোসাইটির একজন বিজ্ঞানী এবং অক্সফোর্ডের একজন সম্মানিত প্রফেসর। অনেকের মতেই বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা জীববিজ্ঞানী তিনি। Sociobiology এর অন্যতম রূপকার এই মহান পণ্ডিত বিবর্তনের জিনতাত্ত্বিক ব্যাখ্যারও অন্যতম পথিকৃৎ।)
এই ধরনের বিজ্ঞান জ্ঞানের জগতে অগ্রগতি অবশ্যই-কিন্ত আমাদের মডেলিং এর সীমাবদ্ধতার জন্যে তা পঙ্গুও বটে। কমছে বাড়ছে বা বিভিন্ন চলকের মধ্যের সম্পর্কগুলি এদ্দিন অব্ধি, ভীষন ভাবে প্যারামেট্রিক মডেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ বাড়ছে মানে ক ~খ এর গুনিতক বা ফাংশন। এই ধরনের গণিতিক সীমাবদ্ধতার জন্যে স্যোশাল সায়েন্স এবং অর্থনীতির অধিকাংশ মডেল প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটা বাড়লে এটা কমে এই অব্দি ঠিক আছে-কিন্ত সেটাকে একটা ফাংশনে ফেলে ব্যখ্যা করা সীমাবদ্ধ বিজ্ঞান। কারন পুরো সিস্টেমটার মধ্যে ঐ ধরনের কিছু স্ট্রাকচার নাও থাকতে পারে। এটাত প্রকৃতিবিজ্ঞান না।
কম্পিউটারের ক্ষমতা এবং ক্লাউডের ক্ষমতার জন্যে মডেলিং এর জগতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ন অগ্রগতি ননপ্যারেমেট্রিক মডেলিং-যেখানে কোন সমীকরন বা এলজেব্রিক এক্সপ্রেশন ছারাই বিভিন্ন ভ্যারিয়েবলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় ঐতিহাসিক বা ট্রেনিং ডাটার ওপর ভিত্তি করে। এটা আমি এই জন্যে বলছি যে প্যারামেট্রিক প্যারাডিম বা যেকোন সিস্টেমকে বীজগণিতের ধাঁচে ফেলে মডেল করা হয় অধিকাংশ সমাজ বিজ্ঞানের গবেষণাতে-যা করা হয় স্যাস বা ঐজাতীয় কিছু সফটPয়ার চালিয়ে। এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেসব রেজাল্ট দেয় সেগুলি অসম্ভব ভুলে ভরা-কারন প্রকৃতি বা সিস্টেমে ওই ধরনের স্ট্রাকচার নাও থাকতে পারে। এটিও সেই ধরনের একটি কেস।
অদূর ভবিষয়তে এই ধরনের বীজগণিতিক যেসব মডেল সমাজবিজ্ঞানে এসেছে সেসব বাতিল বা ঐতিহাসিক বলেই গণ্য হবে। এরগুলির একটি ঐতিহাসিক মূল্য থাকবে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্যে -কিন্ত ভবিষয়তের সমাজ বিজ্ঞানে বা যেকোন বিজ্ঞানে যা জটিল এবং কাওটিক সিস্টেম এই ধরনের প্যারামেট্রিক মডেলগুলি অতীত হয়ে যাবে।
জালিশ, নামটায় কেমন বিচিত্র জাটকা ইলিশের গন্ধ পাচ্ছি! যাইহোক, সবই তো বুঝলাম। কিন্তু r কোয়েফিসিয়েন্টের মান চাচাতো, মামাতো, পাড়াতো ভাই আর বোনদের ক্ষেত্রে কি করে হিসাব করবো মাথায় ঢুকছে না! মাথায় আলপিন ঠুকবো না পেরেক? হিসাবটা পেলে বাংলা সিনেমার নায়কেরা বিবর্তনের পক্ষে না বিপক্ষে কাজ করছে অংক কষে বলা যেতো! হা হা হা ……….!
তবে দারুন ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়! আর এ যদি ছড়ার মতো ছোট্ট হয়ে যায়, তাহলে শুধু ফুসফুস থেকে দীর্ঘশ্বাস নয় হৃদয় থেকেও হায় হায় বেরোতে থাকে!
@কেশব অধিকারী, আপনার সাথে আপনার বাবার জেনেটিক মিল ৫০%, আপনার বাবার সাথে আপনার চাচার মিল আবার ৫০%। তাহলে, আপনার আর চাচার মিল দাঁড়ায় ২৫%, ঠিক আছে?
আবার, আপনার চাচার সাথে চাচাতো ভাইয়ের মিল ৫০%। তাহলে ঐ চাচাতো ভাইয়ের সাথে আপনার জেনেটিক মিল দাঁড়ায় ১২.৫%, ঠিক আছে? সুতরাং, ১ এর মধ্যে কো-এফিশিয়েন্টের মান দাঁড়ায় ০.১২৫। আশা করি বুঝাতে পেরেছি।
তবে আমি ঐ জাটকা ইলিশের ব্যাপারটা কিন্তু দাদা ঠিক বুঝে উঠতে পারলুমনে। আর ছড়ার মত ছোট্ট না লিখে উপায় ছিলনা, আমি যে কবি নই, অণুকবি!!!তার মধ্যে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা তো প্রথমেই স্বীকার। নিচের অন্য ইউজারদের কমেন্টের জবাবে বোধ করি আরো কিছু জিনিস বিস্তারিত ফুটে উঠেছে।
পরিচিত মানুষের লেখা দেখতে ভালই লাগে :rotfl:
(আপনারে দেখলে আমারও সব ফেলে লিখতে ইচ্ছে করে :)) । এত সব অসমাপ্ত লেখা :-Y )
@ইফতি, লেখ মিয়া। আর আমি কোন কোন জাগায় উত্তর ঠাওরাইতে পারতাছিনা, ঐ জাগায় হেল্পাও :))
কিছু দিন আগে রাস্তায় একটা ছোট বাচ্চাকে চলন্ত ট্রাকের হাত থেকে বাছানোর জন্য কয়েকজন মানুষকে বিভিন্ন দিক থেকে ছুটে আসতে দেখেছিলাম। যারা ছোট বাচ্ছাকে বাচাতে দৌড়ে এসেছিল তাদের সবার জীবন সংহার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অবশেষ ঐ বাচ্চাকে একজন ট্রাক এর সামনে থেকে তুলে নিতে পেরেছিল। এই ক্ষেত্রে কোন জিন কাজ করেছে বলতে পারবেন কি ? মানুষ অনেক সময় নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে অন্যলোকের জীবন রক্ষা করে, এই ক্ষেত্রে কোন জিন কাজ করে ?
@মিথুন দাশ, এখানে কোন জিনগত ব্যাপার থাকলেও তা আমি জানিনা। তবে মানুষ ও অন্যান্য সামাজিক প্রাণী তাদের অস্তিত্বকে (জিনের অস্তিত্ব) টিকিয়ে রাখতেই সমাজ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। সবাই সবার উপকার করলে তাদের কমন জিনগুলোর বেঁচে থাকার প্রবণতা বাড়বে, এটাই বোধ করি ব্যাখ্যা হতে পারে। তাছাড়া, এখানে কালচার, অভ্যস্ততা, সামাজিক এক্সপেক্টেশনও জড়িয়ে গেছে, এটা নিশ্চিত। এর চেয়ে খুব বেশি বলতে পারছিনা।
আমার মনে হয় এইখানে জিনের সাথে মিমকেও টেনে আনতে হবে। দুইজন একই চরিত্রসম্পন্ন এবং সমদৃষ্টিভঙ্গির বন্ধুর সম্পর্ক কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গভীর হয় এবং তারা একে অপরের জন্য প্রাণ দিতেও পারে। হয়ত এক্ষেত্রে তারা কিছু আদর্শকে বাচিয়ে রাখার জন্য একজন আরেকজনকে রক্ষা করতে চায়।
আচ্ছা পৃথিবীতে সবচেয়ে গভীরতম সম্পর্ক মা-সন্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মা সন্তানকে ভালবাসে এটা সহজেই বিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাখা করা যায়। কিন্তু সন্তান বৃদ্ধা মাকেও ভালবাসে যখন মার যৌনক্ষমতা থাকে না এবং জিনকে ছড়িয়ে দেবার সুযোগ থাকে না।
তাহলে বৃদ্ধা মাকে সন্তান ভালবাসে কেন?
আর আমার পশু-পাখিকে অনেক ভাললাগে। ছোটবেলায় আমার পালিত একটা কবুতর মারা গিয়েছিল। সেই কবুতর মারা যাবার পর অনেক কেদেছিলাম আর সেই শোক প্রায় একমাস পর্যন্ত ছিল। পশু-পাখির প্রতি এই ভালবাসা কেমন করে আসে?
@রনবীর সরকার, ২ টা পয়েন্ট মাথায় আসলোঃ
১)মা-বাবাকে যত্ন নিলেই তাঁরা ভালো থাকবেন এবং তাঁদের অফুরন্ত অবসর পুরোপুরি আমার সন্তানদের লালন-পালনে দিতে পারবেন। একটা ব্যাপার মাথায় রাখুন, তাঁরা কিন্তু আমার থেকে সন্তান প্রতিপালনে অভিজ্ঞ। তাই তাঁদের অভিজ্ঞতা আমার বংশধরদের বেড়ে উঠতে বেশ কাজে দেবে। মহিলাদের মেনোপজ (বাংলা মনে পরছে না) এর পিছনে কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই কারণ ই দাঁড় করিয়েছেন। যেহেতু তাঁদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে, তাই তারা নিজেরা (মায়েরা) আর সুস্থ-সবল সন্তান জন্ম দেবেন, এই সম্ভাবনা কম (বয়সের সাথে সাথে বিভিন্ন জ়েনেটিক রোগ বেড়ে যায়)। তাই তারা তাদের ঐ ক্ষমতা বিসর্জন দেন, যাতে তাদের-ই বংশধরদের ভালোভাবে পাল-পোষ করতে পারেন। আমরাও আমাদের বয়স্ক মা-বাবাকে যত্ন নিয়ে পরোক্ষভাবে তাঁদের (মূলতঃ মায়েদের) ঐ কাজে আরো উৎসাহী করে তুলি। ব্যাপারটাকে একটু এই আঙ্গিকে ভাবুন।
২) আমি যদি আমার মা-বাবাকে যত্ন করি, তাহলে তা আমার সন্তানদের কাছে একটি শিক্ষা। এর ফলে তারাও আমার প্রতি এক-ই আচরণ করবে। এখন, ব্যাপার হলো, যখন আমার সন্তান-সন্ততি জন্ম নেয় ও বাড়তে থাকে, তদ্দিনে আমার মা-বাবার বয়স অনেকটাই বেড়ে গেছে।
আর এর পিছনে কালচারাল কারণ তো রয়েছেই।
@জালিশ,
হ্যা. ভাল কারন বলেছেন।
মেনোপজ এর বাংলা রজোনিবৃত্তি।
তবে পশু-পাখির প্রতি ভালবাসার কারনটা এখনো বোধগম্য হল না।
@রনবীর সরকার,
৫০০০ থেকে ১০০০০ বছর পূর্বে ইউরোপে মানুষ পশুদের পোষ মানাতে শুরু করে এবং তাদের দুধ, মাংস খেতে শুরু করে। বিভিন্ন পরীক্ষায় এটা নিশ্চিত ঐ সময় দুর্ভিক্ষকালীন পরিস্থিতিতে এই দুধ-হজমকারী-জিনবাহী লোকেদের বাঁচার হার অন্যদের তুলনায় বেশি ছিল। তাই, এই বৈশিষ্ট্যটি সিলেক্টেড হয় এবং বাহিত হতে থাকে। এছাড়া এপ থেকে মানুষ হবার পেছনেও অনেক ভূমিকা এই পশুপালনের। নেকড়েকে বশ মানিয়ে মানুষ কুকুরে পরিণত করতে সাহায্য করেছে (১৪,০০০ বছর আগে কুকুরের উদ্ভব) এবং এরা মানুষকে শিকার খোঁজায় সাহায্য করে তৃণভোজী হতে মাংশাসী হতে সাহায্য করেছে, যা এপদের থেকে আমাদের বিরাটভাবে আলাদা করেছে। এছাড়া এই পালিত পশুদের তত্ত্বাবধান করতে গিয়ে যে যোগাযোগ (ও হাতিয়ার) দরকার দরকার অন্য রাখালদের সাথে, তাও আমাদের ভাষাগত বিকাশে+প্রযুক্তিগত বিকাশে বিরাট অবদান রেখেছে, দাবী বিজ্ঞানীদের। এ কারণেই আমরা পশুপালনের দিকে বিবর্তনীয় কারণেই আমরা একটু ঝোঁক অনুভব করি।
বুদ্ধি বিকাশেও পশুপালনের ভূমিকা অসীম। অধিকাংশ প্রাচীন গুহা-চিত্রতে দেখবেন আঁকা ছবিগুলো গরু, হরিণ, ছাগল এদের। তারা তাদের শিকার+তাদের পালিত পশুর ছবি আঁকার মাধ্যমে প্রথম শিল্পচর্চা শুরু করে।
আরো আছে। সুইডিশ এক গবেষণায় দাবী করা হয়েছে যে, সামাজিক বন্ধন ও যোগাযোগের সময় যে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরিত হয়, তা গৃহপালিত পশু-পাখির সাথে সময় কাটানোর ক্ষেত্রেও ঘটে। এই হরমোন বি,পি, স্ট্রেস ইত্যাদি কমায় এবং ভালোলাগার একটা অনুভূতি জোগায়।
বোধকরি আমাদের পশুপ্রেমের কারণ কিছুটা হলেও ব্যাখ্যা করা গেছে।
সব ধরণের কর্মকাণ্ড? আপনি ভ্রাতৃত্বকে ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু বন্ধুত্ব? হ্যামিল্টনের সূত্র পুরো মিলেছে ভাইয়ের ক্ষেত্রে; কিন্তু ধরুন আমার চাচাত ভাই আমার সমবয়সী এবং সবচাইতে কাছের বন্ধুর মত। তো তাকে বাঁচাতেও আমি সমপরিমাণ রিস্ক নেব, যতটা আপন ভাইয়ের ক্ষেত্রে নিয়েছিলাম। এখানে হ্যামিলটনের সূত্র কিভাবে মিলবে?
ভাই জালিস, আগেই লিখেছিলাম, মুক্তমনার একজন দুর্ধর্ষ লেখক হওয়ার সব সম্ভাবনা আছে আপনার। এই লেখাতেও সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। কঠিন বিজ্ঞানকে কি সহজ করেই না ব্যাখ্যা করতে পারেন আপনি! এবারের লেখাটিও চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে, দিয়েছে চিন্তা করার আনন্দ। আপনি আরও ঘন ঘন লেখা প্রসব করুন:-) আর মুক্তমনাকে সমৃদ্ধ করে তুলুন, এই প্রত্যাশা থাকল!
@কাজি মামুন, এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, আমরা কিন্তু সামাজিক জীব। তাই অনেকের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা, যাতে করে বিপদে কাছে পাওয়া যায়, সেটা খুব-ই উপকারী এবং অনেকটা লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট এর মত। এপদের মধ্যেও এমনটা দেখা যায়।
আরো একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন আমরা দান-খয়রাত বা অন্য কোন আপাতদৃষ্টিতে নিজের জন্য অলাভজনক কাজ করি, তখন আমাদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সেন্টার সক্রিয় হয়ে ওঠে (ঠিক যেমন দান-গ্রহীতার মস্তিষ্কে হয়), ফলে সেটা আমাদের একধরণের ভালো লাগা অনুভূতি দেয়। যাহোক, ওটা বিবর্তনীয় আলোচনার বাইরে।
আমার কাছে মোদ্দা কথা, আমি যদি কাছের বন্ধুর উপকার করি, তবে সেও পরে আমার উপকার করবে, এমন একটা ধারণা কাজ করে। এ ব্যাপারে আমার ধারণা কম, আগেই বলেছি। তবু রেফারেন্স হিসেবে Edward O. Wilson এর Sociobiology: The New Synthesis বইটির ২৭ নম্বর চাপ্টারের কথা বলবো। হয়তো উপকার পেতে পারেন।
কিন্তু এমন যদি হয় যে আমি আমার ভাই কে ছোট বেলাই হারায় ফালাইসী, এবং আমি জানি না যে আমার সামনে ডুবন্ত মানুস টা আমার ভাই তখনও কি এ সুত্র কাজ করবে? মনে হয় না।
@তান, খুব-ই ক্রিটিকাল প্রশ্ন করছেন ভাইজান। আগেই বলছি আমার ধারণা এ বিষয়ে কম। তবু, আমার মনে হয়, উত্তরটা হল “না, কাজ করবেনা।” আমি আরো কিছু জানতে পারলে আপনাকে জানাবো অবশ্যই।
অভিনন্দন। স্বাগতম (C)
সেলফিশ জিনের যা হয় হোক, হ্যামিলটন বাবাজীর অঙ্ক ফর্মুলার এত সহজ সুন্দর উপস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
অঙ্ককে আর জীবনকে পরস্পরের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত আর বিশ্লেষিত করা যায় তা অবাক হয়ে দেখলাম। এমন লেখা পেলেই না আমার মত অঙ্কভীতুরাও ওটাকে ভালোবাসবে। অবশ্য যদিও মনে হয়েছে এখানে সেলফিশ জিনের এক লাইনি সংজ্ঞা আর ওটার প্রয়োজনীয়তা/ও প্রয়জনীয়তার কথাটা থাকতে পারতো। এই রকম সহজ লেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে থাকি।
@কাজী রহমান, 🙂
হ্যামিল্টনের সূত্রটি খুবই আকর্ষনীয়। বস্তুত প্রানীজগতে পরার্থতা বা অল্ট্রুইজমের অস্তিত্বকে বিজ্ঞানী জর্জ উইলিয়ামস এবং উইলিয়াম হ্যামিলটনের কাজ এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। ডকিন্সের সেলফিশ জিন আসলে জর্জ উইলিয়ামস এবং উইলিয়াম হ্যামিলটনের কাজের উপর ভিত্তি করেই লেখা।
হ্যামিলটনের সূত্রটা আসলে খুবই সরল –
অর্থাৎ, সোজা বাংলায়,যখন কোন প্রজাতির মধ্যে সহযোগিতার উপযোগিতা তার ব্যয়কে অতিক্রম করে যায় তখনই পরার্থতা উদ্ভুত হবে। হ্যামিলটনের এই নীতিটিকেই বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী মায়নার্ড স্মিথ নামকরণ করেছিলেন স্বজাতি নির্বাচন (kin selection) হিসেবে। স্বজাতি নির্বাচনের মোদ্দা কথা হল, জিনের নৈকট্য (অর্থাৎ হ্যামিলটনের সূত্রে rএর মান) যত বেশী হবে, তত বেশি হবে পরার্থতাসূচক মনোভাব। সেজন্যই দেখা যায় সবাই নিজের সন্তান এবং পরিবারের প্রতি সবার আগে পরার্থতা প্রদর্শন করে । পরিবারের কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে চিন্তিত হয় সবচেয়ে কাছের জেনেটিক সদস্যরাই,তারপরে একটু দুরের আত্মীয় স্বজন। সেজন্যই সন্তানের প্রতি বাবা মার আত্মত্যাগের ব্যাপারটি সব সংস্কৃতিতেই পাওয়া যায়, আসলে যা কিনা জীববিজ্ঞানীদের চোখে স্বজাতি নির্বাচনের মাধ্যমে জিনপুল রক্ষার প্রয়াস। একইভাবে ছোট ভাইকে ছিনতাইকারীর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে বড়ভাইয়ের আত্মত্যাগের নানা ঘটনাও বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাগুলোতে পাওয়া যায়।
আমি এ নিয়ে দুই পর্বের একটা লেখা লিখেছিলাম ( পরে এ লেখাগুলো আমার শেষ বই ‘ভালবাসা কারে কয়’ (শুদ্ধস্বর, ২০১২)-এ একটি অধ্যায় হিসেবে সঙ্কলিত হয়)-
বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব (১ম পর্ব)
বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভব (২য় পর্ব)
হয়তো লিঙ্কদুটো আপনার আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে।
@অভিজিৎ, অনেক ধন্যবাদ লিঙ্কদুটির জন্য। পড়ে দেখবো অবশ্যই। আর হ্যাঁ, ডকিন্সের স্মিথ আর হ্যামিল্টন-প্রীতির কথা তো সেলফিস জিন পড়ুয়াদের সবার-ই জানা।