লেবু বেশী কচলালে তেতো হয় কিন্তু বিজ্ঞানের লেবু মুহূর্তে মুহূর্তে না কচলালে বাসী হয়ে যায়। বিবর্তন শব্দটা শিরোনামে দেখে অনেকে হয়ত এখন বলছেন ” ……..এই আবার …”। ব্লগ পড়তে এসে ‘বালিশ ছিদ্র করা আঁতলামী’ ( কপিরাইট : রেজা শাহ ফাহামী ) দেখতে কারও ভালো লাগার কথা নয়। ব্লগে সেক্স , ড্রাগ আর রক এন রোল না থাকুক, সমানে চাপা মারার জায়গা করে না দিলে পাবলিকের গালি খাওয়ারই কথা। বহু বাঙালীর প্রান প্রিয় রসদ রাজনীতি , পরবস্ত্রনীতি আর (গুপ্ত) সাহিত্য ছাড়া কিছু লেখাটা একইসাথে আঁতলামি এবং দিওয়ানী দন্ডবিধির ৪২০ নম্বর ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সর্বোচচ সাজা ‘প্রকাশ্যে’ ১০০ দিস্তা চটিবই ক্রয় , অনাদায়ে পাঁচদিনের পুরোনো পোড়া ভাত ভক্ষণ । কিন্তু উপায় নেই গুলাম হুসেন ! বিজ্ঞানের বস্ত্র হরণ করে কানামাছি খেলতে দেখলে লেবুটা আবার কচলাতে হবে বৈকি ! কয়েকদিন আগে এই মুক্তমনায় ‘কৃত্রিম ডিএনএতে বিবর্তন পর্যবেক্ষণ: বিবর্তন প্রতিষ্ঠায় আরো একধাপ’ নামে একটা লেখা প্রকাশিত হয় যা আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছেন কিংবা আপনাদের কারও কারও মাথার উপর দিয়ে ‘সৌভাগ্যক্রমে’ চলে গেছে। সেই লেখাটা লেখা হয়েছিল যে সূত্র ধরে সেটা ছিল জীবের বংশগতি এবং বিবর্তনের উপর পরীক্ষাগারে সংশ্লেষিত জেনেটিক পলিমারের কিছু সক্ষমতা নিয়ে একটা গবেষণা Synthetic Genetic Polymers Capable of Heredity and Evolution। যারা এইমাত্র আবার ভিনদেশী ভাষার অযাচিত সূত্রপাত দেখছেন , তাদের কাছে হাতজোর করে ক্ষমা চাইছি । উপায় নেই গুলাম হুসেন ! টাইম মেশিনে চড়ে বরং এই ফাঁকে বরফ যুগে মঙ্গল গ্রহে গিয়ে মামা হালিম খেয়ে আসুন ! আমি সেই সুযোগে লেবুটা আরেকটু কচলিয়ে নিই।
ভিক্টর পিনেরো (খাঁটি পর্তুগীজ নাম ) এবং ফিলিপ হলিগারের নেতৃত্বে একদল গবেষক তাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে (Synthetic Genetic Polymers Capable of Heredity and Evolution) গত ২০ শে এপ্রিল ঘোষণা দেন যে :
Thus, heredity and evolution, two hallmarks of life, are not limited
to DNA and RNA but are likely to be emergent properties of polymers capable of information storage.
অর্থ্যাৎ, জীবের বংশগতি এবং বিবর্তন শুধুমাত্র দুই স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট ডি এন এ এবং আর এন এ – তে সীমিত নয় বরং এসব পলিমারের সম্ভাব্য কিছু বৈশিষ্ট তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম। এখানে তারা প্রাকৃতিকভাবে লভ্য কোন অনুর কথা বলছেন না। আমরা জানি যে, জীবের বিবর্তনে সরাসরি অংশগ্রহন করে এমন অনু আছে মাত্র দুইটি – ডি এন এ এবং আর এন এ , যেগুলো জেনেটিক অনু বলে পরিচিত। ভিক্টর পিনেরোর দল এই ধারনা বদলে দিয়ে , পরীক্ষাগারে সংশ্লেষিত আরও ছয়টি বিকল্প পলিমার উপস্থাপন করেছেন যেগুলো ব্যবহার করে জীবতথ্য সংরক্ষণ ও বিস্তার করা যায়। এই অনু গুলিকে নাম দেয়া হয়েছে এক্স এন এ। এনএ বলতে বোঝায় নিউক্লিয়িক এসিড এবং এক্স বলতে বোঝায় প্রতিস্থাপিত চিনি বা তার বিকল্প। এই সব চিনি বা চিনি জাত যৌগ উপদান জৈব নিউক্লিয়িক এসিডের সমতূল্য হলেও, এগুলো আর এন এ এবং ডি এন এ তে যে রাইবোজ ও ডিঅক্সিরাইবোজ পাওয়া যায় সেগুল নয়। রাইবোজ এবং ডিঅক্সিরাইবোজ কে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে পাঁচ কার্বনের চিনি আরাবিনোজ (এএনএ ) ; ২’- ফ্লরোআরাবিনোজ (এফএএনএ) , চার কার্বনের চিনি থ্রিওজ (টিএনএ) , ‘লকড রাইবোজ (এলএনএ) , ছয় রিংয়ের কাঠামোর সাইক্লোহেক্সিন (সিএএনএ) এবং আনহাইড্রোহেক্সিটোল (এইচএনএ) দিয়ে।
এক্স এন এ নিয়ে গবেষণাটি শুরু হয় একটি প্রশ্ন সামনে রেখে – পৃথিবীর প্রথম জৈব পলিমার কি ছিল ? হতে পারে আরএনএ কিংবা আরও সরল কাঠামো যাতে করে জৈবপূর্ব পরিবেশে সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া আরো সহজে সংঘটিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত করছিল। এ প্রসঙ্গে টিএনএ এবং গ্লাইসল নিউক্লিয়িক এসিড(জিএনএ) – এই দুই সম্ভাব্য অনুর কথা উল্লেখ করা যায়। এছাড়া এক্স এন এ কে দিয়ে আরএনএ কার্যক্রম চালানো যায় কিনা সেটা যাচাই করা এই গবেষণাকে যথেষ্ট উদ্দীপনা যুগিয়েছে। ছয়টি এক্স এন এ-র সবকটিতে জৈব নিউক্লিসঘটিত ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা লক্ষ্য করা গেছে।
গবেষণার চুড়ান্ত লক্ষ্য বলে যা ধারণা করা হয় , তা হচ্ছে সংশ্লেষিত রসায়ণ নির্ভর জেনেটিক ব্যবস্থা তৈরী করা যাতে নতুন ধরনের জীবের সংশ্লেষণ সম্ভব হয়। এ উদ্দেশ্য সফল হওয়ার অন্যতম শর্ত হল , এক্স এন এ কে অন্য কোন প্রাকৃতিক জৈব অনুর সাহায্য ছাড়াই নিজ গুনে তার নিজের প্রতিলিপির অনুঘটনার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে যাকে পুরোদস্তুর বিবর্তন প্রক্রিয়া বলা যায়।
এই গবেষণায় দেখা যায় যে, এক্স এন এ সংশ্লেষিত জেনেটিক পলিমারের ভূমিকায় কাজ করছে কিন্তু গবেষকদল এখনও একটা সংশ্লেষিত জেনেটিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি। গবেষকদের তৈরী ব্যবস্হায় এক্স এন এর প্রতিলিপি তৈরী করা হয় ডি এন এ তে রিভার্স ট্রান্সক্রাইব করে ডিএনএ কে এ্যাম্প্লিফাই করা হয় পিসিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করে । এরপরে সেই ডি এন এ কে আবার এক্স এন এ তে ফরওয়ার্ড ট্রান্সক্রাইব করা হয়। প্রতিটি স্তরে পলিমার ব্যবহৃত হয় এবং এ্যামপ্লিফিকেশনে ব্যবহার করা হয় ডি এন এ। এক্স এন এ সংশ্লেষণে সক্ষম পলিমারিস নির্বাচনে উদ্ভাবন করা হয়েছে সিএসটি ( compartmentalized self-tagging) নির্বাচন কৌশল।
উল্লেখ্য , এক্ষেত্রে TgoT লাইব্রেরীতে সিএসটি নির্বাচন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। সংশ্লেষন এবং এবং রিভার্স ট্টান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া বংশগতি প্রতিষ্টা করে এবং ছয়টি এক্স এন এ-র সব কটিই এ উদ্দেশ্যে সফল। এর পরেই আসে বিবর্তনের প্রশ্ন। এক্ষেত্রে এইচ এন এ পলিমার পরীক্ষাগারে বিবর্তিত হয়ে কার্যক্ষম অনু এ্যাপ্টামারে পরিনত হয় যা নির্দিষ্ট প্রোটিন টার্গেটের সাথে শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অর্থাৎ ছয়টির মধ্যে অন্তত একটি এক্স এন এ – বিবর্তন প্রক্রিয়া সংশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে ‘এক্সএনএজাইম’ তৈরীর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে যা সাধারণ প্রোটিন কিংবা নিউক্লিয়িক এসিডের পরিবর্তে এক্সএনএ ভিত্তিক হবে। এই গবেষণা আমাদের জন্য অনেক সম্ভাবনাময় সংশ্লেষিত জেনেটিক বিজ্ঞানের এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে, সংশ্লেষিত জেনেটিক অনু সমূহ যেন আমাদের প্রাকৃতিক জেনেটিক পরিমণ্ডলকে দুষিত কিংবা পরিবর্তিত করে নতুন বিপদের সূচনা না করতে পারে।
বিঃদ্রঃ অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে কি লিখবেন সেটা বুঝে উঠতে পারেন না। সেক্ষেত্রে একটা সূত্র হয়তো কিছুটা সাহায্য করবে। ধরুন , লেখা হচ্ছে ব্যসদেবকে নিয়ে এবং আপনি জানেন না ব্যসদেব কে ছিলেন। সেক্ষেত্রে কি লিখবেন মন্তব্যে ? আপনি লিখবেন :
” আরে ব্যসদেব তো একজন মানুষ ছিলেন ! মানুষ হয়েও কিন্তু তিনি মানুষ নন ! যেহেতু ব্যসদেব আজ আমাদের মাঝে নেই , কিন্তু ব্যসদেব যে ব্যসদেবই সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ! ”
তথ্যসূত্র : “Synthetic Genetic Polymers Capable of Heredity and Evolution”
Vitor B. Pinheiro et al . April, 2012
চমৎকার উপস্থাপনা!! সেই সাথে প্রাকৃতিক জৈব অনুর সাহায্য ছাড়াই যদি অনুলিপন ঘটানোর এই ক্রিয়া সত্য হয়, তাহলে আরো অনেক প্রশ্নেরই জবাব পাওয়া সম্ভব!!
বুঝতে পারলামনা, নিজ অনুলিপি তৈরি করতে পারাকেই “পুরোদস্তুর বিবর্তন” বলার ন্যাখ্যাটা কী?
আর ছবিগুলোর অনেকগুলোই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে (ব্যাক্তিগত মত)।
@জালিশ,
স্বয়ংসম্পূর্নভাবে নিজ প্রতিলিপিকে নিজস্ব এনজাইম দিয়ে ক্যাটালাইজ করতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষায় পিসিআর এমপ্লিফিকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে এইচ এন এর প্রতিলিপি তৈরী করা হয়েছে প্রাকৃতিক ডিএনএ প্রাইমার ব্যবহার করে। ফলে ডিএনএ টেমপ্লেটের সাথে 72 hNTPs যুক্ত করে গবেষকেরা পেলেন 37,215 ডাল্টনের একটা হাইব্রীড অনু (প্রথম ছবি)। পুরোদস্তর সিন্থেটিক অনু এখানে আমরা পাচ্ছি না। সেটা করতে হলে সিন্থেটিক ক্যাটালিস্ট (অনুঘটক) এনজাইম দরকার যা এখনও নেই , প্রতিলিপি করতে এখনও ডিএনএ প্রাইমার লাগছে।
@সংশপ্তক,
ও হ্যা , এই হাইব্রীড অনুর 37,215 ডাল্টনের মধ্যে সংশ্লেষিত HNA অনুর মাস 37,190 ডাল্টন।
@সংশপ্তক,
?????কিসের জন্য গুরুত্বপুর্ণ?
এই কথাটাকে বোঝাতে চাচ্ছেন কী?
অর্থাৎ RNA এর যেমন auto-catalysis এর ক্ষমতা আছে, সেরকম হতে হবে, নইলে পুরোদস্তুর বিবর্তন বলা যাবেনা? :-X
@জালিশ,
আমরা এখানে সিন্থেটিক জেনেটিক সিস্টেমের কথা বলছি। সেরকম হতে হলে অনেকটা RNA -র মতই হতে হবে বৈকি। দেখুন প্রবন্ধে আমি বলেছি :
এখানে বিবর্তন বলতে একটা বিবর্তিত সিন্থেটিক জেনেটিক সিস্টেমের বোঝানো হয়েছে – ডিএনএ/ আরএনএ- র বিপরীতে এবং এদের সাহায্য ছাড়াই যে অন্য একটা অনুও জেনেটিক সিস্টেমে বিবর্তিত হতে পারে। জৈব বিবর্তন সিমিউলেট করা এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য নয়। পরবর্তী স্তর সিনথেটিক জিন ।
@সংশপ্তক, আমি দুঃখিত, হয় আমি আপনার উত্তর বুঝতে পারতেছিনা, নইলে আপনি আমার প্রশ্ন বুঝতেছেন না। “নিজস্ব প্রতিলিপিকে” সংশ্লেষ করতে যে “নিজস্ব এনজাইম” বলতেছেন, এই নিজস্ব এনজাইমটা কী? আর বিবর্তনে এর আবশ্যিকতা-ই বা কোথায়? ডি, এন, এ’র তো নিজস্ব এনজাইমেটিক ক্ষমতা নাই। তার বিবর্তন তো কেউ ঠেকাচ্ছে না। আশা করি ধরতে পারতেছেন আমার প্রশ্নটা।
@জালিশ,
ডি এন এ পলিমারিজ এনজাইম আছে বলেই , এটা ডিঅক্সিরাইবোনিক্লিউটাইডকে একটা ডিএনএ অনুতে পলিমারাইজ করছে এবং টেমপ্লেট অনুযায়ী অনুলিপি তৈরী করতে ক্যাটালিস্ট হিসেবে সাহায্য করছে। এক্স এন এ সংশ্লেষণের সময় আনহাইড্রোহেক্সিটোল নিউক্লিউটাইডকে ডি এন এ পলিমারিজের সাহায্য নিতে হচ্ছে পিসিআর এমপ্লিফিকেশনে। এটা গবেষণার জন্য ঠিক হলেও আসল প্রশ্নের সমাধান দেয় না । কেন ? ধরা যাক পৃথিবীর প্রথম পলিমার টি এন এ বা জি এন এ । সেখানে কোথায় ডি এন এ পলিমার পাওয়া যাবে যেখানে ডি এন এ-র আবির্ভাবই তখনও হয় নি ? এই গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য ডি এন এ , আর এন এ পূর্ব পরিবেশে বিকল্প অনুর মধ্যে বিবর্তন পর্যবেক্ষন করা।
@সংশপ্তক, আপনার কথা বুঝতে পারলাম। তবে এই লাইনে আমার আপত্তি তাহকবেই।
ডি,এন,এ’র নিজস্ব কোন ক্ষমতা নাই পলিমারাইজ করার। ডি,এন,এ পলিমারেজ এই কাজ করে। সেই সাপেক্ষেই আমি বলছি যে, ডি,এন,এ নিজে যেখানে অন্যের সাহায্য ছাড়া পারছে না, সেখানে এক্স,এন,এ
সেটা করতে পারবে এটা দাবী করা ঠিক হচ্ছেনা। আমি ১০০% নিশ্চিত আপনি এভাবে বোঝাতে চাননি, কিন্তু আমি দুঃখিত যে, আপনার ঐ এক লাইনের ভাষাটি বারবার-ই আমাকে এক-ই দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যাক, এখানেই শেষ করি। এক-ই ত্যানা বারবার প্যাচায়ে লাভ নাই, যেখানে আমি আপনার লেখার মূল অর্থের সাথে আমার কোন আপত্তি-ই নেই।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। অবশ্যই বেশ উপকারী।
ব্যাসদেব একজন লুল ব্যক্তি ছিলেন। নিশ্চয়ই তাঁর জীবকোষে এক্সএনএ ছিলো, ডিএনএ নয় ! ডিএনএ-র তো তবুও একটা চরিত্র আছে, এই এক্সএনএ-র চবিত্রটাই তো জটিল দেখছি !!
জটিল জিনিস নিয়ে সহজ-সরল মানুষদের মন্তব্য করতে নেই। তাই আমিও কোন মন্তব্য করলাম না ! হা হা হা !!
@রণদীপম বসু,
ব্যসদেবকে ( এবং আরো লুল(া) দের নিয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করার ইচ্ছে আছে। মানুষ কেন নিজেকে কিংবা অন্যকে সরল এবং জটিল বলে মনে করে- এটার বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা অবশ্যই আছে যেখানে পাওয়া যাবে কিছু জীন এবং এবং কিছু নিউরোনের বৈচিত্রময় কর্মকৌশল। আপনারা সাথে থাকলে এই মুক্তমনাতেই পড়তে পারবেন। আপনার মন্তব্য আমার পছন্দ হয়েছে। 🙂
লেখককে ধন্যবাদ এক্স এন এ এর উচ্ছাসে তিনি প্রাকৃতিক জেনেটিক পরিমণ্ডলের কথা ভুলে জাননি কিন্তু পাঠককে ছোট করে দেখার জন্য মুরদাবাদ ।
@মাসুদ,
প্রস্তরযুগে মঙ্গলগ্রহে দুই গ্লাস ‘শ্রেনী সংগ্রামের’ সরবৎ পান করে যারা ব্লগে ডায়নোসোরীয় ঢেকুর তুলতে চান , তাদেরকে অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখার যে উপায় নেই ! :))
@সংশপ্তক, বিজ্ঞানের ভাতে পাকস্হলী পূর্ণ হলেও অনেক জ্ঞানীই সমতাপূর্ণ ও ইতিবাচক আবেগ প্রদর্শনে দরিদ্র ।আপনাকে সেই দলভুক্ত করতে আমাদের কষ্ট হবে ।শ্রেনী সংগ্রামীদের এতো ছোট করে দেখটা উচৎ না, হতে পারে তারা অনেকেই প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত না বা কম জানে এবং তাদের কাজের কৌশল ও ভুলছিল তাই বলে তাদের মহৎ ইচ্ছাকে সন্মান জানাবো না ?আপনারা যারা আমাদের চেয়ে চিন্তায় এগিয়ে আছেন,তারই আমাদের আদশ,আমরা আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকি সঠিক শিক্ষার আশায়!?!
@মাসুদ, :))
সরল থেকে জটিল , বিবর্তনের এই নিয়ম অনুযায়ী ৫ কার্বনের রাইবোজ ও ডিঅক্সিরাইবোজের বদলে ৪ কার্বনের থ্রিওজের (টিএনএ) প্রাকৃতিক অনু হওয়াটা বেশি যুক্তিযুক্ত ছিল না ? সেটা কেন হয় নি?
Sorry , ৩ কার্বনের ট্রিওজ বা ৪ কার্বনের আরাবিনোজ হবে , ৪ কার্বনের থ্রিওজের স্থলে।
@ফারুক,
সরল থেকে জটিল – এটা কোন বিবর্তনতত্ত্ব ? তত্ত্বটার নাম বললে আলোচনা করা যাবে ।
@সংশপ্তক, আমি তো জানতাম , বিবর্তনবাদীদের বিশ্বাস অনুযায়ী প্রাণ সৃষ্ট (created) হয়নি, প্রাণের উৎপত্তি (originated) হয়েছে (সুত্র – অভিজিৎ),অর্থাৎ প্রথমে যেনতেন প্রকারে সরল জৈব অনূর উৎপত্তি হয়েছে তারপরে ঐ একিভাবে ধাপে ধাপে এমাইনো এসিড , প্রটিন (বিখ্যাত মিলার পরীক্ষা দ্রষ্টব্য) , অতঃপর কেমনে জানি এককোষী প্রাণী এবং এরপরে তো খুবি সহজ ভাবে বহুকোষী এবং ধাপে ধাপে বিবর্তনের নিয়ম মেনে বর্তমানের সবচেয়ে জটিল প্রাণী মানুষের উৎপত্তি হয়েছে। এটাকেই আমি বিবর্তন তত্ব বলে জানি। ভুল হয়ে থাকলে শুধরে দিন।
@ফারুক,
একমত।
বিবর্তনে সরল – জটিল এমন কোন সরল রেখা নেই। বিবর্তনটাকে বরং ‘পারাবোলিক’ বলা যায় যদি সাধারণ ভাষাতত্ত্ব ব্যবহারে সচেষ্ট হন। বিবর্তনের রেখা যে কোন সময় যে কোন দিকে মোড় নিতে পারে।
মানুষ কি করে সবচেয়ে জটিল জৈব হয় ? জৈব এককের জটিলতা নির্ণয়ের মাপকাঠি কি ? সবচেয়ে সুবিধাবাদী ব্যক্তিত্ব যারা কি না ঘন ঘন মতাদর্শগত ডিগবাজী দেয়ায় পারদর্শী , তারা পর্যন্ত তো জটিলতায় এবং ভোল পাল্টানোয় ক্ষূদ্র এইচ আাই ভি (HIV) ভাইরাসের কাছে নস্যিতূল্য ! এফ বি আই পরোয়ানা দিয়ে দুর দুরান্তের মানুষকে পাকড়াও করে জেলে পুরা যায় কিন্তু নিজ দেহে বসবাসকারী (HIV) ভাইরাসকি কিছুই করা যায় না । এজন্য জটিলতার সংজ্ঞা আসলে সংজ্ঞাদানকারীর সামর্থ্যের সমানুপাতিক।
@সংশপ্তক,
একমত যে হবেন সেটা আগেই জানতাম। যেহেতু এটা বিশ্বাসের বিষয় , পর্যবেক্ষনের বিষয় নয় , সেকারনে নিশ্চিন্তে একমত হওয়া যায়। 🙂
কিছুটা একমত। বিবর্তনের রেখা যে কোন সময় যে কোন দিকে মোড় নিতে পারে ঠিকই , তবে ultimately অধিকতর জটিল ও অধিকতর টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় সক্ষমতার দিকে মোড় নেয়। বলতে পারেন স্প্রিঙয়ের মতো ঘুরে ঘুরে উপরের দিকেই যায়। তাই একে প্যারাবোলিক না বলে স্প্রিঙ বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত।
কে বল্লো কিছু করা যায় না? আমাদের শরীরই তো এন্টিবডি তৈরি করে অহরহ যুদ্ধ করে যাচ্ছে (কেউ কেউ ইন্ফেক্টেড হওয়ার পরেও ২০-২৫ বছর বেচে আছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়) এবং অনেক অনেক এন্টিভাইরাল ঔষধ বাজারে এসেছে।
@ফারুক,
এবার বলুন এটা কোন বিবর্তন তত্ত্ব ?
@সংশপ্তক,এটা সেটাই , যেটার কথা উপরে বলেছি-
@ফারুক,
বিবর্তন তত্ত্বটার (কিংবা মডেল) নাম বলুন ।
@সংশপ্তক,খাইছে আমারে , এইবার ধরা খাইছি। আমি তো জানতাম , এটাই বিবর্তন তত্ব। নাম বলেন আর মডেল বলেন , এই একটাই জানি। আরো নাম কিংবা মডেল আছে নাকি?
প্রাকৃতিক ডিএনএ আরএনএ যেভাবে কাজ করে ঠিক সেভাবেই কি নতুন এক্সএনএগুলো কাজ করতে পারছে?
ডিএনএ আরএনএ আসলে কোন সুবিধার জন্য প্রকৃতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল যেটা এক্সএনএ করতে পারল না?
@সাইফুল ইসলাম,
বংশগতি বিস্তার এবং বিবর্তিত হতে পারছে, কিন্তু স্বতন্ত্র জেনেটিক ব্যবস্হা গঠন করতে পারেনি।
ডিএনএ আরএনএ প্রাকৃতিক অনু যার বয়স কয়েক বিলিয়ন বছর, অন্যদিকে এক্স এন এ-র জন্ম ল্যাবে মাত্র কয়েকদিন আগে।
@সংশপ্তক,
আমার মনে হয় সাইফুল ইসলাম যা জানতে চেয়েছেন তা আপনি বুঝতে পারেননি, অবশ্য যদি আমি তা বুঝে থাকি। অর্থাৎ, এক্স এন এ এইমাত্র ল্যাবে প্রস্তুত হলেও বিলিয়ন বছর আগে প্রকৃতিতে এ ছিলো না তার কিন্তু কোন নিশ্চয়তা নেই। সেই ক্ষেত্রে এর টিকে না থাকার অবশ্যই কোন যৌক্তিক কারণ আছে, যা এখনো গবেষনার পর্যায়ে। এর উত্তর আপনার প্রবন্ধে ছুঁয়ে যাবার মতো রয়েছে বটে তবে রসায়ন বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে সম্পর্কীতরাই তা অনুধাবন করতে পারবেন। একেবারেই স্থূল ভাবে বললে, এক্স এন এ-র এক্স যেহেতু রাইবোজ অংশ বা চিনিজাত অংশ, সুতরাং পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে, যৌগের স্থিতিশীলতার সম্পর্ক, স্টেরিও কেমিস্ট্রি, ফিজিকোক্যমিক্যাল ধর্মাবলীর একটা সম্পর্ক বিদ্যমান। তারও পরে যখন কোন সুপ্রামলিকিউলের কাঠামোর মধ্যে (এখানে প্রথমিক কোষ বা সদৃশ্য অবকাঠামোকে কলাপনা করা যেতে পারে) আবদ্ধ হয়ে পরে, যেখানে প্রাণরাসায়নিক কার্যক্রম অনুমিত হয় বা পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তখন যৌগের সবচাইতে স্থিতিশীল অবকাঠামোটাই টিকে থাকে তাপগতিবিজ্ঞানের তত্ত্বানুযায়ী। যা আজকের ডি এন এ বা আর এন এ অনুর উদ্ভবের বা টিকে থাকার কারণ (সম্ভবতঃ)।
@কেশব অধিকারী,
সূন্দর প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। প্রাক-জৈবিক পরিবেশে কি ধরনের রাসায়নিক পরিবেশে একটা যৌগ নিজ প্রতিলিপি তৈরী করে একটা কার্যকরী জেনেটিক ব্যবস্হায় বিবর্তিত হতে পারে সেটা সামনে রেখেই এই গবেষণাটি শুরু হয়। এখন সে রাসায়নিক পরিবেশটা কি রকম ছিল সেটা নিয়ে অনেক অনুকল্প থাকলেও সেগুলোকে তাত্ত্বিক ভিত্তি দেয়ার অবস্হা এখনও তৈরী হয়নি। এক্স এন এ ল্যাবে সংশ্লেষণ করা গেলেও প্রাকৃতিকভাবে এরকম অনুর সংশ্লেষণ ব্যাখ্যা করা প্রথমে প্রয়োজন। আমরা এখনও নিশ্চিতভাবে ডিএনএ এবং আর এন এ- র প্রাকৃতিক আবির্ভাব ব্যাখ্যা করতে পারছি না । টি এন এ কিংবা জি এন এ ভিত্তিক অনুকল্প আছে ঠিকই কিন্তু সেসব অনুরও প্রাকৃতিক সংশ্লেষণের ব্যাখ্যা নেই। এক্স এন এ -র মত অনু প্রাকৃতিকভাবে সংশ্লেষিত হতে পারে কি না এটার উত্তর নিশ্চিত করার পরই প্রশ্ন করা যায় এর তুলনামূলক বিবর্তনীয় অবস্থান।
লেখাটা পড়ে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন (এখানে বঙ্গীয় বৃদ্ধাঙ্গুলী না হয়ে, হবে আমেরিকান) আর ছবিগুলো দেখে তুমুল করতালি ( জাতীয়তাবাদি নয়, এটা হবে আন্তর্জাতিক)।
আমি কিছুই না বুঝে, যদি এটুকু বুঝি; একজন বিজ্ঞানী যখন কোন কিছু নিয়ে গবেষণা করেন, সেটা কি নিছক জানার আনন্দ নাকি তাতে কিছু দায়বদ্ধতাও থাকে?
কাজী রহমানের এক প্রশ্নের উত্তরে আপনি বললেনঃ
কিছু মানুষ নাকি মানুষের চালকের আসনে যারা বসে আছেন, তারা। আমরা তো ভাই ভেড়ার পাল। এই যেমন আপনি যা বললেন, আমাদের মত পাঠকদের মনে হবে, তা ঠিক। ক যা বলবে, তাও ঠিক। খ যা তাও ঠিক। না জানলে ( না-জানা আমার মত মানুষেরাই পৃথিবীতে বেশি, এ কথা শুনে আপনি আবার গর্ববোধ করবেন না।)সব কিছুই ঠিক। কিন্তু
রাজনীতি, সাহিত্য, ধর্মের ঠিক-বেঠিক মানুষ তার অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারে।
এতটা মূর্খ মনে করবেন না, আমাদের। ব্যসদেবকে আমি চিনি। ৪৭ এ হের দাদা আর ‘৭১ এ ব্যসদেব লাপাত্তা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, বিবর্তনবাদের মত একটা কঠিন লেখায় আমাগো ব্যসদেবরে ভুইল্যা যান নাই।
@স্বপন মাঝি,
ধৈর্য নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। (D)
কে বা কারা সংশ্লেষিত জেনেটিক অনু বিপদ (যদি ঘটে) থেকে বাচাবে? নিয়ন্ত্রন হওয়া সম্ভব তো?
@কাজী রহমান,
আইনী বিধি নিষেধ এবং নৈতিক দায়িত্বশীলতা দিয়ে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। শুধু আইন করে কিছু হবে না কারণ কিছু মানুষ সব সময়ই আইন ভঙ্গ করতে চাইবে। ধন্যবাদ।
গুরুত্বপূর্ণ এ গবেষণাটি নিয়ে যত লেখা আসে ততই আমাদের জন্য ভাল। আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ নিয়ে সংক্ষেপে গুছিয়ে লেখার জন্য।
আপনার এ বক্তব্যগুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ –
এতদিন আমাদের ধারনা ছিলো যে অজৈব থেকে জৈব পলিমার তৈরি হওয়ার তথা প্রথম প্রাণের বিকাশের ক্ষেত্রে আর এন এ বা ডিএনএ’র সাহায্য ছাড়া আর কোনভাবে সম্ভব ছিলো না। হয়তো সত্যই প্রথম প্রাণের বিকাশ সেভাবেই হয়েছিলো, কিন্তু এক্স এন এ’ এর এ পরীক্ষা অন্তত একটি মিথকে খণ্ডন করতে পেরেছে যে, সেরকম হওয়া অত্যাবশকীয় কিছু নাও হতে পারে। দেখা যাচ্ছে এক্স এন এ দিয়ে আরএনএ’এর কাজ চালানো যাচ্ছে, অবশ্য ভবিষ্যতের পরীক্ষার ফলাফলের জন্য আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে।
আরেকটি যে কারনে আপনার লেখাটা ভাল লেগেছে তা হল, আগেকার লেখাটিতে এক্সএনএর সাথে বিবর্তনের সম্পর্কটুকু ঠিকভাবে বঝা যায়নি। এক ভদ্রলোক এসে বোধ হয় প্রশ্নও করেছিলেন, সত্যই ল্যাবে করা পরীক্ষার সাথে ডারউইনীয় বিবর্তনের কোন সম্পর্ক আছে কীনা। আপনার নীচের বক্তব্য থেকে এবার কিন্তু অনেকটাই পরিষ্কার হল বিষয়টা –
(Y)
চমৎকার এ লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
প্রাকৃতিক প্রোটিন টার্গেটের সাথে বন্ধনের চাইতেও আগ্রহোদ্দীপক বিষয় এই যে, এইচ এন এ কে সত্যি সত্যি সিলেকশন প্রেশারের মধ্য দিয়ে গিয়ে এ্যাপ্টামারে বিবর্তিত হতে হয়েছে । সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সংশপ্তক, এই জটিল বিষয়টাকে এত কম কথায় টেকনিকালি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। এখানে এইচএনএর বিবর্তনের ব্যপারটা বেশ ইন্টেরেস্টিং। কিছুদিন আগে কোথায় যেন একইভাবে টিএনএএর ইন ভিট্রো বিবর্তিত হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে একটা গবেষণার কথা পড়েছিলাম। সেটাও কী একই ধরণেরই ব্যাপার ছিল?
@বন্যা আহমেদ,
হ্যা , সেখানেও ডিএনএ এ্যামপ্লিফাই করে টিএনএ -র প্রতিলিপি তৈরী করা হয় । গবেষণাটির রেফারেন্স নীচে দিলাম :
“Darwinian evolution of an alternative genetic system provides support for TNA as an RNA progenitor,” H. Yu, S. Zhang, and J.C. Chaput, Nature Chemistry 4 183-187 (2012)