মম শূন্য মন-মস্তিষ্ক কি-করে পূর্ণ?
শূন্য-মনের পূর্ণবৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর-
দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নেই, আকার-আয়তন নেই,
আছে অস্তিত্ব, আছে শুধুই অবস্থান!
মম শূন্য মস্তিষ্কের শূন্যতাই কি আদি-উৎপত্তিস্থান?
কবির ভাষায়,
“যথা শূন্য তথাই পূণ্য,
তথায় দেবতাও নগন্য।
আকাশ পাতাল সব জঘন্য জঘন্য-
স্বাধীনতা করে তাঁরা ক্ষুন্ন”।
আমি কি? আমি কি নই!
আমি কে? আমি কে নয়!
আমি কোথায়? আমি কোথায় নই!
আমি-বস্তু; আমি-ভাব,
আমি-ভাবে; আমি-বস্তুতে,
নাই মোর ভাবের অভাব,
বিচিত্র মোর ধর্ম-কর্ম-বৈশিষ্ট্য,
গতি-প্রকৃতি-স্বভাব।
আমি এক মহা-ভৌতিক, কল্পনায়-কাল্পনিক,
বাস্তবে বাস্তবিক, আন্তর্জাতিক, মহা-জাগতিক।
আমি মহাবিশ্ব-মহাকাল, মহাধর্ম-মহাবিজ্ঞান
উন্নতর জীবনদর্শন-শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম-ভাষাসাহিত্য।
আমি বিশ্বপরিবার, বিশ্বপরিবেশ-প্রকৃতি
বিশ্বসমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি।
যেদিকে তাকাই, সেদিকেই আমি;
সবই আমি আর আমি, শুধুই আমি।
আমি এক-একক-অদ্বৈত
আমি চির বর্তমান-অনাদি-অনন্ত
আমি অতিক্ষুদ্র-বৃহৎ, অনু সদৃস।
আমি অতি নীচ-দুর্বল, ভাল-মন্দ, অতি নগণ্য।
আমি অখণ্ড-অভিন্ন, আমি ভিন্ন কিছুই নাহি।
আমি আমায় সৃজন করি।
আমি ঋণাত্মক-ধনাত্মক-নিরপেক্ষ,
আমি পুরুষ-প্রকৃতি-নির্বিকার।
নানা রূপে-সাজে-রঙ্গে-গন্ধে-স্পর্শে-স্বাদে-বর্ণে একাকার।
মম শূন্য মন-মস্তিস্ক, মোর আদি রূপকার
আমি আকার-সাকার-নিরাকার-সর্বাকার!
মোর চরম-পরম মহাশুন্যের বা আমিত্বের
একাকীত্বের শুন্যতা অনুভবের,
মোর শূন্যমনের পূর্ণবৃত্তের কেন্দ্র বিন্দুর বিস্ফোরন ঘটে
অদ্ভুত এক প্রচণ্ড খালাকায় বা বিবর্তনমূলক রূপান্তরে-
যেন সৃষ্টির-ভূমিকম্পন বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যূৎপাতে।
যেন মোর মন-মস্তিস্কে প্রেমে-কামাবেগে
মোহানন্দে সৃষ্টি-সুখের উত্তেজনায়
উত্তেজিত দেহমনে কম্পন জাগায়।
আপাদমস্তক শিরা-উপশিরায়, রক্তকণিকায়;
তীব্রবেগে উগ্রমন-মস্তিষ্ক ধেয়ে চলে
নিন্মাঙ্গে নির্গমনে যৌন-মিলনে
ধাবিত হয় সৃষ্টির-আগমনদ্বারে।
উচ্ছ্বসিত দুর্গন্ধযুক্ত প্রবাহিত ঘোলাপানিতে;
যেন সমুদ্রের নোনা বিন্দুর জলে
বান-তুফান ঢেউ উঠেছে!
যেন সমুদ্র-সফেন-শেওলা হতে,
উদ্ভিদ জগত-কীটপতঙ্গ জগত-প্রানি জগত বা জীব-জগত
যেন ঘুরে এলাম বিবর্তনের পথ ধরে।
অনন্তকাল ধরে ভ্রমন করিতেছি আপন দেহমনে-
কত প্রকৃতির জৈবিক সম্মিলনে, শুক্রানু-ডিম্বাণুর মধ্যে
কিংবা কোন মিলন ছাড়াই প্রজননে-
এবং
আমায় করি প্রলম্বিত সপ্তইন্দ্রিয়ে
দৃশ্য-শব্দ-গন্ধ-স্পর্শ-স্বাদ-ভাব-অনুভূতির সপ্তজগতে
আমি-আমার-আমিত্ব, আমাতে নারীত্ব-পশুত্ব-দাসত্ব!
নজরুলের ‘আমিত্বের’ সঙ্গে আপনার ‘আমিত্বের’ পার্থক্য এ ধরণের লাইনগুলিতে ফুটে উঠেছে, যেখানে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রেক্ষাপটে ‘আমিত্বের’ উপর আস্থা রাখা হয়েছে। তবে মূল সুর কিন্তু একই- বাঁধা-বন্ধনহীন মুক্তমনের জয়গান যেমন নজরুলে, তেমনি আপনার কবিতায়ও।
কবিতার ভিতর কোটেশনের এমন সরাসরি ব্যবহার আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তবে ব্যাপারটি যে অভিনব, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর এইরকম প্রয়োগ আগে হ্য়নি বলে যে এখনো হতে পারবে না, তা কিন্তু নয়।
ভাল লেগেছে, বিশেষ করে শেষের পর্বটি।
@কাজি মামুন, আপনার বিশ্লেষণ ধর্মী পাঠ-প্রতিক্রিয়া আমার লেখার প্রচেষ্টাকে সার্থক সুন্দর বেগমান করে তোলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এবং ভাল লাগার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বাহ প্রতিটি লাইনই চমৎকার (F) (F)
@তামান্না ঝুমু, আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য (Y)
কবিতার ভাষায় নিজেকে খোজার চেষ্টা—— ভালো লাগলো। :clap
কিন্তু কবিতার ভিতর অন্য কবিতার উদ্ধৃতি দেওয়া যায় কি???
@জিল্লুর রহমান, সেটা জানিনা, তবে গদ্যে পারলে, পদ্যে পারবেনা কেন?
এটা ভাই আপনার বাড়াবাড়ি, সে-ই যোগ্যতা আমার নেই।
তবে নজরুল প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের “লোকোত্তর দর্শন ও পুরুষোত্তম”(শুনেছি বইটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল) বইটির কথা মনে হল যে-ই বইটি আমার তরুন বয়সে প্রথাগত প্রচলিত ইসলাম’ হতে বের হয়ে মুক্তচিন্তা করতে সাহায্য করেছিল অনেকাংশে।এ বইটির মন্তব্য প্রকাশে সদর উদ্দিন আহমদ চিশতি বলেছেন, “নজরুলকে জাতীয় কবি বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতিপক্ষে নজরুল কোন দেশ, জাতি বা সম্প্রদায়ের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না, বরং তিনি ছিলেন সমগ্র মানব জাতির কবি। নজরুল ছিলেন সকল গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার বহু উরদ্ধে। এই মহাপুরুষ ছিলেন মহাসত্য দ্রষ্টা আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন, তাই তার লেখা ও চিন্তা ধারায় মহাসত্য জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সুতারাং নজরুলকে সম্যকরূপে উপলব্ধি করার প্রয়াস থাকা সকল দেশ ও জাতির জন্য অবশ্য কর্তব্য। বিশ্ববাসি এই কর্তব্য মুক্তমন লইয়া যতই করিতেই পারিবেন ততই মঙ্গল।
আমি এই ‘লোকোত্তর দর্শন ও পুরুষোত্তম’ পুস্তকখানা পাঠ করিয়া বড়ই খুশী হলাম এই পুস্তকটিতে নজরুলের লোকোত্তর দর্শনের কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে যা আজ পর্যন্ত আমাদের দেশবাসী বিশেষতঃ মোল্লা সমাজ গ্রহণ করতে পারে নাই, বরং চরম উপেক্ষা ও অবহেলা করে চলেছে। শুধু তাই নয়, কেহ কেহ এই মহাপুরুষকে কাফের বলিয়া ফতোয়া দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। সত্যের বানী যাদের মুখ হইতে আসে তাদেরকে লোকেরা সর্বযুগেই কাফের বলিয়া আসিতেছে।”
@শামিম মিঠু,
নজরুল ইসলাম শেষ জীবনে কালি পুজা করতেন।
আসুন আমরা তার রচিত একটি শ্যামা সঙ্গীগ শুনিঃ পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কন্ঠ –
http://search.yahoo.com/search;_ylt=A0oG7kNhVHVPCzkA2vRXNyoA?p=youtube%20shyama%20namey%20laglo%20agun%20ajoy%20chakrabarty&fr2=sb-top&fr=yfp-t-701
@স্বপন মাঝি,
httpv://search.yahoo.com/search;_ylt=A0oG7kNhVHVPCzkA2vRXNyoA?p=youtube%20shyama%20namey%20laglo%20agun%20ajoy%20chakrabarty&fr2=sb-top&fr=yfp-t-701
@স্বপন মাঝি, ভাই, বেশ অনেক দিন পর শ্যামা সঙ্গীত শুনলাম, মন্দ লাগেনি!
মানব মস্তিষ্ক অসংখ্য মূর্তির সমাহার! সপ্তইন্দ্রিয়দ্বার দ্বারা মানব মস্তিষ্কে প্রবেশকৃত অসংখ্য শব্দ-গন্ধ-দৃশ্য-স্পর্শ-স্বাদ-ভাব-অনুভুতি সমূহ ধর্ম বা মূর্তি তৈরি করে। এ মূর্তি তাড়িত হয়ে বা সন্তুষ্টির লাভে কিংবা মোহের কবলে পরে মানব কর্ম সম্প্রদানই মূর্তি পূজার শামিল।
বাপ্রে বাপ, আমি কবিতা বুঝিনা, কিন্তু এটা পড়ে রীতিমত ডরাইলাম, কেমন যেন নজরুল-নজরুল গন্ধ পেলাম…
@বন্যা আহমেদ, নজরুল গন্ধ যে পাবেন না আপা, সে-তো নজরুলের-ই একজন খাস ভক্ত যা আমরা ইতিপূর্বে তার এই লেখাতেই জেনেছি http://blog.mukto-mona.com/?p=23812 এবার সে নজরুলের বিদ্রোহী ভাবটা নিজের কবিতায় প্রয়োগ করেছেন মাত্র :))
বন্যাদি, আমি নিজেও কবিতা ভাল বুঝিনা। আপনার মত দৃঢ় চিত্তের মুক্তমনার মুখে, ‘ডর-ভয়’ শুনলে সত্যিই সত্যিই হাঁসি পায়। সে হাঁসি দাঁতের নয়, বরং মনের…
আপনি সদা ভাল থাকুন, আপনার জন্য রইল মোর শুভ কামনা……