মার্চের এক তারিখ থেকে অপেক্ষা করতে থাকি, মন ভাঁড়াতে থাকি, আসছে… আসছে… সবে তো এগারোখানা মাস। দিন কাটেনা প্রথম প্রথম। তাই ভুলে যাবার ভান করে থাকি, তবু থিওরি অব রিলেটিভিটির খেল থেকে নিস্তার নাই, মাসগুলা বছর বছর লাগে। তারপর একদিন হঠাৎ করেই বাংলা একাডেমীর দুপাশের রাস্তায় শুকনো কতগুলো বাশ আর কাঠ দেখে মনে ফূর্তি ফূর্তি লাগে। বই মেলা!! আইসা গেছে!!! :))
এবার ৩১ শে জানুয়ারি বাংলা একাডেম্নীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মন খারাপ হয়ে গেল, কাল বইমেলা আর আমি থাকছিনা? বহু প্রতীক্ষিত প্রথম সেন্টমার্টিন টুরের উত্তেজনাও ফিকে হয়ে পড়েছিল এই দুঃখে। নীল সমুদ্রের মাঝে গাংচিলের ডানাতেও বইমেলার চিত্র ভেসে উঠেছিল থেকে থেকে। সমুদ্রের কোল থেকে ফিরে এলাম আক্ষরিক অর্থে ফিরে আসলাম নিঃস্ব হয়ে, ট্যাকা নাই পকেটে, এইবার ম্যালায় যামুনা 🙁 । তবু ৫ তারিখে দে ছুট। আচ্ছা ঢুকলাম ঠিকাছে, কিন্তু কসম বই কিনবই না, বহুত বই আছে বাসায় ভাবতে ভাবতে নতুন কেনা শেলফে গাদা করে রাখা বইগুলোর কথা ভাবতে লাগলুম। খান ব্রাদার্সে ছফা সমগ্রের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললুম আর গাইতে থাকলুম, “আমরা গরীব মানুষ… 🙁 ”, ছফার নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধের দাম দেখে সেই দীর্ঘশ্বাস আরেকটু গভীর হল। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখি বহু আকাঙ্ক্ষিত আর্কাদি গাইদারের “ইশকুল” বইখানা শুভব্রতের জন্মদিনের (কার্টেসিঃ রায়হান আবীর :)) ) মত পবিত্র দিনে বেহায়ার মত come to me… come to me… বলে ডাকাডাকি করছে। বিপন্ন দৃষ্টিতে তাকালুম মিথুনের দিকে, মনে মনে বললুম, “একবার খালি সাপোর্ট দে প্লিজ।” অতঃপর…আমি খোদার কোন কোন লানতকে অস্বীকার করব! 😛 আর কি? মানিব্যাগ খালি আর “ইশকুল” বইখানা বগলদাবা! শুদ্ধস্বরের চেহারা দেখার জন্য প্রাণটা আইঢাই করছিল। কিন্তু এক বজ্জাত বন্ধু (তার উপরে লানত, নানাবিধ কারণে 😛 ) বের করে নিয়ে গেল মেলা থেকে।
আজ ৬ই ফেব্রুয়ারি ক্লাস শেষেই ছুটলাম মেলায়, শুধু শুদ্ধস্বরের চেহারাখানা একবার দেখব বলে। গেলাম। “অবিশ্বাসের দর্শন” পেপার ব্যাক আর “শূন্য” দেখে প্রাণ নেচে উঠল। আরো অনেক বই উলটে পালটে দেখে দুঃখী দুঃখী চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, এরই মাঝে মলিয়েরের “ভদ্দরনোক” কেনা হয়ে গেল। রাদুগা প্রকাশনের আরেক ঝামেলার বস্তু “নিকোলাই গোগোলের রচনা সপ্তক” ডাকাডাকি শুরু করল আমাকে, কিছুদিন আগে ভুলে ‘তারাস বুলবা’ বইটা পড়ে ফেলেছিলাম, তারপর থেকে গোগোল লোকটা আমার মন-প্রাণ কাইড়া নিছে! কি মুশকিল! আবারো ফতুর!
সন্ধ্যায় কেন্দ্রের বন্ধু আরাফাত ভাইকে আফিস থেকে আনিয়ে একটা ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে আবারো মেলায় ঢুকলাম। তার আগে দেখি রায়হান ভাই, সামিয়া আপু, সৌরব দৃগ ভাইয়া সহ গ্যাং ফুটপাতে দাঁড়িয়ে করে সালাম্মম্মম 😛 সৌরভ ভাইয়ের হাতের পোটলাখানায় আবার “তবুও ভালবাসা চাই”, “মন ছুয়েছে তোমাকে” মার্কা কিছু বইয়ের (আমার কতিপয় চাচা প্রতি বছর যে ধরণের বই লিখে সৌজন্য সংখ্যা বিলিয়ে বেড়ায় সেইসব আর কি) প্রচ্ছদ ছাপা। সৌরভ ভাই অবশ্য আমাদের ভুল ভাঙাতে অপ্রস্তুতের মত পোটলার ভেতরের শংকু সমগ্র এবং আরো কিছু জাতের বইপত্র দেখিয়ে নিজের সম্মান বাঁচাবার ক্ষীণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু আমরা সকলেই টিনের চশমা পরে থাকায় তিনি খুব বেশি সুবিধা করতে পারলেননা! 😉
আরাফাত ভাইকে নিয়ে মজা করে মিথুন আর আমি ঘুরে বেড়ালাম মেলায়, আগামী থেকে “আমার অবিশ্বাস”, “শুভব্রত, তার সম্পর্কিত সুসমাচার” ও “সাক্ষাতকার” কিনতে প্রলুব্ধ করে ভাইয়াকে এক কিস্তি ফতুর করলাম। আর আগামীর সামনে থাকার পুরো সময়টা ভীষণভাবে হুমায়ুন আজাদ স্যারের কথা মনে করলাম। এই ফেব্রুয়ারিতেই সেই দুঃস্বপ্ন যা আজো তাড়া করে ফেরে আমাদের সকলকে, যেকথা ভাবতে চাইনা তা ভাবতে হয় বলে কেমন অসহায় লাগে…
আবার এসেছে ফেব্রুয়ারি, আবার চলে যাচ্ছে একটা ফেব্রুয়ারি। আছে শুধু বইমেলাকে ঘিরে আমাদের এক মাসের আনন্দ আর এগারো মাসের অপেক্ষা… চক্রের মত ঘুরে চলেছে… ঘুরে চলেছি…
রাশিয়ার মানুষজনের খুব প্রিয় বই এবং সিনেমাও।
ভাবতেও খারাপ লাগে আগামি ৩-৪ বছরে কখনই বইমেলা দেখা হবে না। লেখা পড়ে কলেজ জীবনের স্মৃতি মনে পরে গেল। ভাদ্দাইমার মত ঘুরতাম। কেনার পয়সা ছিল না।
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
এক কাম করন যায়। সবারই যেহেতু ফেসবুক আইডি আছে চাইলে একটা ক্লোসড গ্রুপ খোলা যায়। তাইলে পরে সবার খবরই জানা যাইব। যে যেদিন যাইব একখান পোষ্ট দিলেই সবার কাছে নোটিফিকেশন যাইব। ব্যাস, তাইলেই সমন্বয় অইয়া যাইব। কী কও?
@সাইফুল ইসলাম,
হেইডাই, মুক্তমনায় মেলার আপডেট দেয়া যায় কিন্তু ব্যক্তিগত আড্ডাতো আর দেয়া যায়না সেভাবে…ফেবু সেদিকে পেরফেক্ট 🙂
আমিও আসছি ফতুর হতে (H) আমাকে আশিববাদ কর হে দেবি :guru:
@নিলীম, হায় হায় শরম পায়া গেলাম! আসার আগে আমাকে ফেসবুকে একটা নক দিয়েন। সম্ভব হলে দেখা করা যাবে 🙂
একটানা ক্লাস, ল্যাব ও কুইজ থাকার জন্য এখনো যেতে পারিনি বইমেলায় 🙁 এই বৃহঃ, শুক্র, শনি তিনদিনই যাবো আশা রাখি।
বুঝলামনা সবাই ব্লগে লিখতেসে কিভাবে ধুমায় বইমেলায় ঘুরতেসে আর আড্ডা দিচ্ছে,কিন্তু আমি গেলে কাওকে পাইনা ক্যান??? আজকেও ৫টা ৩০ থেকে ১ ঘন্টা টোটো করে মেলায় ঘুরলাম,শুদ্ধস্বরের সামনে দিয়ে অন্তত ৪ বার গেলাম,কাওকেইতো দেখিনাই। আমার কপালে(!) মনে হয় আড্ডা নাই :(।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
রায়হান আবীর ভাই, দ্রিগ ভাই (অর্ন বর্ন রাইম নাকি যেন নিক :)) ), লীনাপু এদের কারো ফোন নাম্বার থাকলেই তো আর আড্ডার অভাব হবার কথা না… :-s
@টেকি সাফি,
আবীর ভাই আর লীনাপুর নাম্বার আছে কিন্তু এরা যে কখন কই থাকে বুঝিনা!! আরেকটা ব্যাপার হতে পারে সবাই মনে হয় সন্ধায় বেশি যায়,কিন্তু আমি বিকালে ক্লাস শেষ করে যাই,সন্ধার আগে ঘোরাঘুরি+পয়সা শেষ হয়ে যায়। সন্ধার সময় ভীড়ে বই দেখা মহা পেইন,৩-৪টার দিকে ভীড় একদম কম থাকে,আড্ডা হয়তো জমেনা,কিন্তু আসল কাজ শান্তিতে করা যায়।
@রামগড়ুড়ের ছানা, সাইফুল ভাই একটা গ্রুপ খুলছে, যাওয়ার আগের দিন ওইখানে টাইমটা পোস্টায়া গেলে ভাল হয়।ফোন দিও, কিন্তু কথা সত্য আমি কখন কই থাকি এইটা মুশকিলের ব্যাপার। কাল (৯ তারিখ) সন্ধ্যায় সাতটার পর যাওয়ার কথা আছে। গেলে ফোন দিও।
আগে ঢাকার বাইরে থাকতাম, ২০১০ এ এসএসসি ছিলো তাই যাওয়া হয়নি, গতবার একদিন গেছিলাম কিন্তু গিয়া ভীষণ লজ্জ্বা পাইসি, এত এত পছন্দের বই কিন্তু টাকা নাই পকেটে…আর এবার কোচিঙের পরীক্ষা, কলেজে মডেল টেস্ট…ভীষন খ্রাপ অবস্থা :/ তাছাড়া পকেটও বরাবরের মত ফাঁকা……ফোন বিক্রির চিন্তা-ভাবনা করছি :))
@টেকি সাফি, তোমার বয়সের যন্ত্রনা আমি বুঝি। আমি তোমার বয়সে থাকতে আমার চাচা বা ফুপাকে অনেক পটিয়ে মেলায় যেতাম আধ ঘন্টার জন্য, তারপর ১০০ টাকা হাতে করে সেবা প্রকাশনীর সামনের ভিড়ে ঢুকে পড়তাম আর ধস্তাধস্তি করে তিনটা বই নিয়ে বেরোতাম। উফফ কি দিন যে গেছে…
বই কিনতে চাইলে টাকার যোগাড় মনে হয় হয়েই যাবে। মেলায় আসলে ফোন দিও, পারলে দেখা করব। :))
(Y)
নিকোলাই গোগোল এর সমগ্রে তারাস বুলবাটাই আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো। ওখানে একটা ডায়ালগ আছে কিছুটা এরকম…”তোর ওই জ্বিব টেবে ছিঁড়ে ফেলার আগে আমাদের নেতা হয়ে যা।” হুবহু, ডায়ালগটা মনে নেই। কিন্তু, সে-সময় এটা পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। কেউ যে সন্ত্রাসী কায়দায় কাউকে নিজেদেরর মাস্টার (নেতা) হতে বলে, সে-ব্যাপারটাই ব্যতিক্রম ছিলো আমার কাছে।
নাক নিয়ে একটা রম্য জাতীয় লেখা থাকার কথা। ভালো অনুবাদক না হলে লেখাটির রম্যভাব ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না।
@মইনুল রাজু, আমার কাছেও নেতা নির্বাচনের জায়গাটা দারুণ লেগেছিল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অদ্ভুত একটা ঘোরের ভেতরে ছিলাম বইটা পড়ার সময়, সেইরকম একটা ফিল আছে তারাস বুলবায়। নাক পড়ে জানাব কেমন লাগল 🙂
@লীনা রহমান,
কোন প্রকাশনীতে পাওয়া যাবে? অনুবাদ ভালোতো?
@রামগড়ুড়ের ছানা, ”জাতীয় সাহিত্যপ্রকাশ’ বা এই ধরনের নামের একটা স্টল থেকে কেনা, ওখানে চে গুয়েভারা, প্রীতিলতাসহ বিপ্লবীদের পোস্টার ডিভিডি আছে, সেগুলো দেখেই আমি প্রতিবার দোকানটা চিনি। আর অনুবাদ ভাল হবার কথা, মস্কোর রাদুগা প্রকাশনের অনুবাদ। কিনে ফেলো। দুইটা বইই খুব ভাল আর দাম অবিশ্বাস্য রকমের কম। ইশকুল ১২০ আর গোগোলের রচনাসপ্তক ১৫০! তবে দোকানে একটা সমস্যা হল এই বইগুলো সবসময় পাওয়া যায়না, জলদি খোজ লাগালে ভাল হয়।
নিজের জন্মমাস হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছরই এই ফেব্রুয়ারি মাসটা আমার জন্য শুধু পেইনই নিয়ে আসে।
এমনই এক ডিপার্টমেন্টে পড়ি প্রত্যেক ফেব্রুয়ারি মাসেই পরীক্ষা ফেলে রাখে। কাজেই পরের বছরের ফেব্রুয়ারির জন্য তীর্থের কাকের মত পড়ে থাকতে হয়।
আশা করি এই ফেব্রুয়ারিটিও আপনাদের সবার ভাল কাটবে।
@অভীক, কি আর কমু? আশা রইল পরের বইমেলাটা ভালভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
আহ! বলতে না বলতে লিখা হাজির! এই না হইলে লীন!
মাগার খালি কথায় চিড়া ভিজব না, ছবি কই?
@অভিজিৎ, পরেরটাতে ছবি আসতাছে এনশাল্লাহ :))