(স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের মুখ আমাদের স্মৃতিতে অম্লান।হারিয়ে যাওয়া সেইসব স্বজনদের স্মরণে প্রতি বছরের মত এবারও বিজয় দিবসের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ১০ ডিসেম্বর ২০১১ নিবেদন করেছিল নারীপক্ষ’র (নারীপক্ষ বাংলাদেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠন) শ্রদ্ধাঞ্জলি “আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার”। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর একটি বিশেষ বিষয়কে প্রতিপাদ্য করে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে নারীপক্ষ। এবারের বিষয় ছিল “৭১ – এর যে নারীদের আমরা ভুলেছি”। সে অনুষ্ঠানের ঘোষণাপত্রটি একটু সংক্ষেপ করে মুক্ত-মনার পাঠকদের জন্য)
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে যোগ করেছে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা।সেখানে মুক্তির আনন্দ এবং বীরগাঁথা যেমন রয়েছে তেমনই আছে অপরিসীম দুঃখ-যন্ত্রণা,অত্যাচার-নির্যাতন, লাঞ্ছনা,আছে আপনজন হারানোর বেদনা,শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে বাঁচে থাকার বিড়ম্বনা। ঐ যুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু নারী।স্বাধীনতার পরও তাদের সইতে হয়েছে বাড়তি অপমান এবং সামাজিক – পারিবারিক তাচ্ছিল্য,বিদ্রুপ ও অবহেলা।রাষ্ট্রীয় অবহেলায়, রাজনৈতিক দলও সুধী সমাজের মনোযোগের বাইরে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পরিবার ও আপনজনদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে এক কোণে পড়ে থাকতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হওয়ার কারণে যাঁদের গর্ভে সন্তান এসেছিল গর্ভপাত ছাড়া আর কোন উপায় বা সুযোগ তাঁদের সামনে তুলে ধরা হয়নি।যে যুদ্ধশিশুরা জন্মগ্রহন করেছিল তাদেরকেও আমরা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারিনি।
মুক্তিযুদ্ধে যে নারীরা ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাঁদেরকে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান “বীরাঙ্গনা” উপাধি দিয়েছিলেন।শাব্দিক অর্থে বীরাঙ্গনা হচ্ছে বীর যোদ্ধা, বীর নারী, বীর্যবতী বা সাহসী নারী, অর্থাৎ অসীম সাহসী নারী যাঁরা দেশের জন্য প্রাণাপাত করে লড়াই করেন। কিন্তু যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ ও ব্যবহার সম্পূর্ণ বিপরীত।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। স্বাধীনতার পর পরিবার তাঁদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করলে তাঁরা আত্ম পরিচয় আর আশ্রয় আবাসনের সংকটে পড়েন।। উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, শঙ্কা, আশ্রয় ও নিরাপত্তাহীনতা এবং অন্ন-বস্ত্র, চিকিৎসা ও মর্যাদার সংকট সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে তাঁদের দিন কাটে।
বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ, ধারণা ও ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য না রেখেই বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হয়।এর ফলে তাঁরা মূলধারা হতে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হওঁয়ে পড়েন।বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী সে সময়ে তাঁদের সম্মানীত করার জন্য প্রস্তুত ছিলনা”। বরং এই উপাধির কারণে তাঁরা হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। এই উপাধি তাঁদের জন্য অসম্মান,অপমান,অপবাদ এবং লাঞ্ছনারকারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।স্বাধীনতার পরবর্তীচল্লিশ বচরে তাঁরা সেই বীরের সম্মান,মর্যাদা এবং জীবন যাপনের ন্যায সুযোগ-সুবিধাটুকু পায়নি, এমনকি তাঁদের ওপরে সংঘটিত অপরাধের বিচারও তাঁরা পায়নি।
আমাদের সমাজ সংস্কৃতির চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গি হলো, ধর্ষণ বা যে কোন ধরণের যৌন নির্যাতন নারীর ইজ্জত বা সম্ভ্রমহানি ঘটায়।পরিবার ও সমাজ নির্যাতনের শিকার নারীকেই অপমান ও অপদস্থ করে এবং তাকেই অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে।’ ৭১ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ প্রতিহত করতে তাঁদেরকে প্রকাশ্যে সম্মান প্রদানের কোনও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।আমাদের আজও শুনতে হয় ‘দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে…।” ইজ্জত ও সম্ভ্রম কোনভাবেই শরীর কেন্দ্রীক নয়, তাই ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীদের ইজ্জত ও সম্ভ্রমের প্রশ্ন তোলা তাঁদের মর্যাদা ও সম্মান ক্ষুণ্ন করার সামিল। যারা বীরাঙ্গনা, তাদের ইজ্জত যায়নি,সম্ভ্রমহানি হয়নি, তাঁরা যুদ্ধপরাধের শিকার, সুতরাং এই ধরণের উক্তি আমরা আর শুনতে চাই না।
চল্লিশ বছর বীরাঙ্গনাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালনে সবাই ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার গ্লানি আমাদের ব্যথিত করে, লজ্জিত করে।আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।আমরা চাই, রাষ্ট্র বীরাঙ্গনা সম্বোধনের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে।
মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার অনেক বীরাঙ্গনা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে আজ বেঁচে নেই,যাঁরা বেঁচে আছেন, আমরা চাই তাঁরা যেন আর্থিক স্বচ্ছলতায় ও সম্মানের সাথে জীবন যাপন করতে পারেন, সকল আড়াল ভেঙ্গে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র, সর্বত্র সমান ও মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।
আমাদের দাবিঃ
• ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে নারীর ওপরে সংঘটিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন কোন সাধারণ অপরাধ নয়, তা যুদ্ধপরাধ। এই অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিচার করতে হবে।
• বীরাঙ্গনাদের প্রতি সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ে লিখনে, বলনে বা ভাষণে শব্দ ও ভাষা ব্যবহারে ধর্ষিতা, ইজ্জতহানি,সম্ভ্রমহানি, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।সকল রাষ্ট্রীয় দলিল ও কার্যক্রম থেকে ‘দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে …” বা “‘দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি…” ধরণের কথা বাতিল করে সে স্থান সরাসরি “ ১৯৭১- এর মুক্তিযুদ্ধে ‘দুই লাখ নারী ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন” এই বাক্য ব্যবহার করতে হবে।
• ’ ৭১-এর বীরাঙ্গনাদের জন্য সরকারী সহায়তা, যথা সকল সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা এবং ভাতা প্রদান যাতে তাঁরা স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন, সম্মান ও মর্যাদার সাথে তাঁদের পছন্দমতো স্থানে বসবাস করতে পারেন।
মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে আজ আমরা মোমবাতির যে আলো জ্বেলেছি তা সকল অন্যায়- অবিচারের অন্ধকারকে দূর করে দেশের প্রতিটি মানুষের ন্যায অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়ে সমুজ্জ্বল হোক।এই আলো এনে দিক ’৭১-এর ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের জীবনে প্রশান্তি, এই আলো ফিরিয়ে দিক “বীরঙ্গনা” সম্বোধনে সম্মান ও মর্যাদা।
আপনার লেখাতে আপনি বীরাঙ্গনা শব্দটির বিরোধিতা ককরেেছন কিন্তু এই শব্দের পরিবতের্ কী বলবে নতা উল্লেখ করেননি। আপনিোো বার বার তাদেরকে বীরাঙ্গনা বলেছেন। লেখার মাঝে একবারো দাবি করেননি তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বলা হোক। লেখাতে আরো জোর দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বলা উচিত ছিল। শুধু কাধে বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করলেই মুক্দিযোদ্ধা হয় না।
লেখকের সাথে একমত পোষণ করে বলছি, আমাদের দেশের বীরাঙ্গনার সম্মান আজো যথাযত ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যম্পন্ন করার সাথে সাথে এ দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। এটা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছি।
যুদ্ধাপরাধী নিপাত যাক
বীর বীরাঙ্গনার স্বপ্ন সফল হোক…
@মাহমুদ মিটুল,
সাথে আছেন এবং থাকবেন আশা করছি।
@গীতা দাস,
আপনার লেখা বেশ উপভোগ করলাম।
@আফরোজা আলম,
ধন্যবাদ।
আমি মাসুদ রানার সাথে একমত। মেয়েদের সাথে জোরপুর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার শব্দটিকে মেয়েদের বেলায় আলাদা নাম দেয়ার কারনটা উদ্দেশ্যমুলক। মেয়েরা এই পরিস্থিতির শিকার হলেই সমাজ উদ্দেশ্যমুলকভাবে তার গায়ে একটা তকমা এঁটে দেয় যাতে ভবিষ্যতে তার সাথে সম্পর্ক করতে গেলে এই তকমাটি কাজে লাগে। ধর্ষন, ধর্ষিতা শব্দের উৎপত্তি এই বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই। এর ফলে মেয়েটি শুধু একটি সাধারন মেয়ে হয়ে থাকেনা, সে হয়ে পরে লেভেল পরিহিত বিশেষ শ্রেনীভুক্ত একটি মেয়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হয়।
একটি ছেলেও কিন্তু একইভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে, কই তার বেলায়তো একটি বিশেষ শব্দ প্রয়োগ করে তাকে শ্রেনীভুক্ত করা হয়না, তাই তার বেলায় মেয়েদের মতো মানসিক ভারসাম্যহীনতার প্রশ্নও আসেনা বা সেরকম কিছু ঘটবে বলে সমাজ চিন্তিতও নয়। যৌন নির্যাতন ছাড়া অন্য কোন নির্যাতনকে কি ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে আলাদা করে চিহ্নিত বা শব্দ প্রয়োগ করা হয়? শুধু যৌন নির্যাতনের বেলায় তার ব্যতিক্রম কেন?
আমি গীতা দাসের দাবিগুলোর সাথে সম্পুর্ন একমত পোষন করছি, শুধু প্রথম দাবিটিতে ধর্ষন শব্দটি ব্যবহার না করে। ধর্ষন শব্দটি অভিধান থেকে উঠিয়ে দেয়া উচিৎ।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আপনার কথাটাকে আরেকটু টানা যায়, একটা ছেলে একটা ছেলে দ্বারা(খুব একটা বিরল ব্যাপার না), বা একটি মেয়ে একটি মেয়ে দ্বারা(এটা বিরল হলেও ০% না) ধর্ষিত হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই তো ধর্ষণ-ই হচ্ছে।একটি ছেলে, মেয়ে দ্বারা ধর্ষিত হলে মানসিক ভাবে বিদ্ধস্থ হবে না এটা কেন ভাবে সমাজ। সবগুলো ক্ষেত্রেই মানসিক ভাবে আঘাত আসতে পারে, কিন্তু মানসিক ভারসাম্য হারাবে কেন! কেউ যদি ভারসাম্য হারাই এই ব্যাপারে তাহলে বুঝতে হবে হয় এই মানুষটা নিজে একজন দূর্বল মানুষ, অথবা তাকে ব্যক্তিগতভাবে সঙ্গ দেবার কেউ নেই, অথবা তার সাথে শুধু ধর্ষণ হয় নি, অত্যাচার বা গ্যাং রেপ ও হয়েছে। সমাজকে বুঝতে হবে পুরো ব্যাপারটার গুরুত্ব। আপনি আমি বুঝাবো। এতোদিন শুধু নীলিমা ইব্রাহীম, প্রিয়ভাষিনী, “নারীপক্ষ” কথা বলতো, এখন আপনি আমি আমরা বলি। এখন সমাজকে বোঝাতে আপনি আমূল একটা শব্দ উঠায় দিবেন!
@নির্মিতব্য,
এইসব বিরল ব্যাপারগুলো্র সাথে আমাদের সমাজ এখনও পরিচিত নয়। আর পরিচিত হওয়ার পরও সমাজ যদি বর্তমান ধারাবাহিকতায় চলতে থাকে আমি নিশ্চিত যে সে ক্ষেত্রে নির্যাতিত ছেলেটিকে ধর্ষিত না বলে নির্যাতিত মেয়েটিকে ধর্ষিত হিসাবে চিহ্নিত করা হবে।
একটি ছেলে মেয়ে দ্বারা ধর্ষিত হলে (আমাদের সমাজে বিরল) ছেলেটিকে সমাজই প্রোটেকশন দিয়ে চলবে, ভাবখানা এই হবে যে এটা ছেলেটির ক্ষেত্রে কোন ব্যাপারই নয়, উল্টো যে মেয়েটি ধর্ষন করলো তার সাজাতো হবেই তার সাথে সাথে তাকে সমাজে ঘৃনিত হিসাবে চিহ্নিত করে অচ্ছুৎ হিসাবে বয়কট করা হবে। কিন্তু তার বিপরীতে সমাজে যৌন নির্যাতনের শিকার ছেলেটিকে কি ধর্ষিত বলে চিহ্নিত বা আখ্যা দেয়া হবে?
পক্ষান্তরে মেয়েটি একটি ছেলে দ্বারা ধর্ষিত (আমাদের সমাজে বিরল নয়) হলে সমাজ মেয়েটিকে ধর্ষিতা আখ্যা দিয়ে তাকে একটি বিশেষ গোত্রভুক্ত করে, তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে মানষিক ভাবে বিপর্য্যস্ত করে তোলে, কিন্তু যে ছেলেটি ধর্ষন করলো তার কতগুলো ক্ষেত্রে সাজা হয় বলে আপনার মনে হয় বা সমাজে তাকে কি ঘৃনিত হিসাবে চিহ্নিত করে অচ্ছুৎ হিসাবে বয়কট করা হয়?
মেয়েদেরকে ছোটবেলার থেকেই বাড়তে দেয়া হয় দূর্বল মানুষ হিসাবে, তার উপরে সমাজ যদি তার প্রতি বিরুপ হয়ে তাকে ধর্ষিতা বলে অগ্রহনযোগ্য হিসাবে ঘোষনা দেয় তাহলে এটা কি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো নয়? তাই একই নির্যাতনের শিকারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই বেশী ভারসাম্যহীন হয়ে পরে।
না, কোন শব্দের প্রতি আমার ক্ষোভ বা বিতৃষ্ণা নেই, আছে শব্দটির বৈষম্যমুলক প্রয়োগের প্রতি। আমাদের সমাজে মেয়েদের ক্ষেত্রে ধর্ষন শব্দটিকে ব্যবহার করে মেয়েদেরকে মানষিকভাবে নির্যাতিত হওয়ার পথ সুগম করে দেওয়া হয় বলেই আমার মনে হয়। আর এখানেই আমার আপত্তি।
‘নারীপক্ষে’র দাবীর সাথে সহমত। আমাদের চেতনা জাগ্রত করার জন্য এ’ধরনের লেখার খুবই প্রয়োজন।
@ইরতিশাদ,
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
গীতাদি,
প্রথমেই আপনার দাবীর প্রতি একাত্মতা জানাচ্ছি!
অথচ শর্মিলা বসু (ভারতীয় লেখক) নাকি ধর্যনের তেমন কোন প্রমাণ পাননি। উনি নাকি গোটা পঞ্চাশেক নারীর উপর সার্ভে করেছিলেন, যারা তাকে জানিয়েছেন যে, তারা নিজেরা ধর্ষিতা হওয়া তো দূরের কথা, এমনকি আশে-পাশে কোথাও ধর্ষণের কোন খবরও শোনেননি! যাই হোক, আপনার সংগঠন উনার কাছে কিছু প্রমাণ তুলে ধরতে পারে মনে হয়!
উপাধির উদ্দেশ্যটা ছিল মহৎ, কিন্তু আইডিয়াটা ছিল অগভীর চিন্তা-প্রসূত এবং ধ্বংসাত্মক! সমাজের উপর একটি উপাধি চাপিয়ে দিলেই হয় না, তার আগে সমাজের মনস্তত্ত্ব ভাল করে বুঝতে হয়!
@কাজি মামুন,
বীরাঙ্গনা শব্দের মাহাত্ম্যকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে হবে। যা নারীপক্ষ শুরু করেছে।
ধর্ষণ শব্দটাকে আমরা ঋণাত্মক অর্থে ব্যবহার না করলেও পারিনা কি? ধর্ষণ অর্থ আমরা যা বুঝি তা হল কোন নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তার সাথে যৌনমিলনে রত হওয়া।। অথচ এই কাজ টি যদি সেই নারীর স্বামী অথবা তার ছেলে বন্ধু তার ইচ্ছায় করে তাহলে নারী ও পুরুষ উভয়েই চরম সুখ লাভ করে। এবং দৈনন্দিন খাবারের মত এই কাজটিও প্রতিটি জীবের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। একদিন খাবার না খেলে যেমন মানুষের শারীরিক ভারসাম্য ঠিক থাকেনা তদ্রুপ একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর যৌনকার্য না করলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অথবা নারীর শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য ঠিক থাকেনা। এখন আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি আমাকে কেউ জোর করে ভাত খাওয়ে দেয় তাহলে আমি কি নিজে কে খুব পরাজিত , অপমানিত, বিপর্যস্ত ভাববো ? নিশ্চয়ই না ? যে আমাকে জোর করে ভাত খাওয়া লো হতে পারে এটা তার শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিন্তু আমকে জোর করে ভাত খাওয়ানোর কারণে আমার আহামরি এমন কোন ক্ষতি হবে না যার জন্য আমার জীবন প্রবাহে শ্লথ গতি আসতে পারে। এটা সাময়িক একটু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী ও অপূরণীয় নয়। ঠিক জোর করে ভাত গেলানোর মতই কোন নারীর সাথে কেউ জোর করে যৌনকর্মে রত হলে সেই নারীটির আহামরি এমন কোন ক্ষতি হয় না যা অপূরণীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী। অথচ সামান্য এই ঘটনা টা কে আমরা অনেক বিশাল করে গ্রহন করি। নাম দিয়ে দিই ধর্ষণ। আমাদের এই ধরনের মানসিকতার কারণে ভুক্তভোগী নারীটিও নিজেকে ছোট, অপমানিত, অসহায় ও নির্যাতিত ভাবতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে অনেক আত্মহত্যার মত ঘটনা আমাদের দেশে ঘটতে দেখা যায় যা অপ্রত্যাশিত , অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিত । আমার লেখা দ্বারা আমি বুঝাতে চাচ্ছিনা যে ধর্ষণ করা মৃদু অপরাধ। অবশ্যই আমি মনে করে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং অপরাধীকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় এনে বিচার করতে হবে। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি যে ধর্ষণ কে আমরা যতটা ঋণাত্মক ভাবে গ্রহন করব ভুক্তভোগী নারীটির ঠিক ততটায় ক্ষতি হবে যা ধর্ষণের ফলেও ক্ষতি হয় নি। ধর্ষণের ঘটনা টা যদি আমরা স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করি, যদি ধর্ষিতাকে আর দশটা নারীর মত স্বাভাবিক দৃষ্টি দিয়ে দেখি তাহলে ধর্ষিতা ,তার পরিবার সহ আমাদের সকলের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা সকলেই জানি যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজে বিধবাদের প্রতি স্বাভাবিক মর্যাদা দানের জন্য নিজের অবিবাহিত ছেলের সাথে এক বিধবার বিয়ে দিয়েছিলেন। কারন তৎকালীন সমাজে বিধবাদের অচ্ছুৎ ,নিকৃষ্ট ভাবা হত যেমনটা আজকের সমাজে কোন ধর্ষিতার প্রতি মনোভাব দেখান হয়। তাই আমি মনে করি ধর্ষণ, ইজ্জতহানি, সম্ভ্রমহানি ইত্যাদি শব্দগুলো আমাদের ভাষার অভিধান থেকে ও সমাজ থেকে তুলে দেওয়া উচিত। যেমনটি বর্তমানে দেশের সরকারী সকল ক্ষেত্রে যুবক – যুবতী শব্দের পরিবর্তে যুবক ও যুব মহিলা শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই আমি মনে করি “ধর্ষণ” ও “ধর্ষিতা”শব্দের পরিবর্তে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস” ও ” সহবাসিতা” শব্দের প্রচলন করা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
আর ,
এই প্রবন্ধের লেখিকার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। স্বাধীনতার যুদ্ধে যে সমস্ত নারী তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাসিতা হয়েছিলেন তাদের বিরঙ্গনা বলেই আমাদের সম্বোধন করতে হবে। তাই ৭১ এর যুদ্ধে
“যারা বীরাঙ্গনা, তাদের ইজ্জত যায়নি,সম্ভ্রমহানি হয়নি, তাঁরা যুদ্ধপরাধের শিকার, সুতরাং এই ধরণের উক্তি আমরা আর শুনতে চাই না।”
লেখিকার এই মতামতের সাথে আমি পুরো একমত । দুই লাখ নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয় নি। দুই লাখ নারীর যন্ত্রণা কষ্টের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এটাই আমাদের বলা ও প্রচলন করা জরুরী।
@মাসুদ রানা,
“কিন্তু আমকে জোর করে ভাত খাওয়ানোর কারণে আমার আহামরি এমন কোন ক্ষতি হবে না যার জন্য আমার জীবন প্রবাহে শ্লথ গতি আসতে পারে। এটা সাময়িক একটু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী ও অপূরণীয় নয়। ঠিক জোর করে ভাত গেলানোর মতই কোন নারীর সাথে কেউ জোর করে যৌনকর্মে রত হলে সেই নারীটির আহামরি এমন কোন ক্ষতি হয় না যা অপূরণীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী। ”
ভাই রে ব্যপারটা এত সরল না । ভাত খাওয়ার সাথে সম্পর্ক যতটা না মানসিক তাঁর চেয়েও বেশী শারীরিক প্রয়োজন। যৌনতার ক্ষেত্রে অন্তত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর মানসিক দিকটা ই আসল। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে , তাই ধর্ষণ এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে , যদি নারীর অনিচ্ছায় পুরুষের যৌনাঙ্গ নারীর যৌনাঙ্গে স্পর্শ করে তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে ( যদি এক্ষেত্রে স্বামী হয় তাও- সুইডেন এ )। কেন?, কারন বিবরতনীয় কারনেই হোক আর নারীর মনযগতিয় কারনেই হোক ,নারী তাঁর ইছছার বিরুদ্ধে যৌন কর্মের দরুন মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারে। এমনকি পশ্চিমে আমেরিকা,কানাডা তে ধর্ষণ এর স্বীকার নারীদের রীতিমত পুনর্বাসন এর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। ধর্ষণের পর যে মেয়েরা ট্রমায় ভুগে তা ভয়াবহ। আপনি সরল ভাবে চিন্তা করেছেন । বিষয়টি এত সরল না ভাই।
@সপ্তক, “মানসিক ভারসাম্য” হারানো অথবা “ট্টমা” দুটোই কিন্তু রেয়ার কেস। যা সচরাচর ঘটেনা। তাছাড়া এটা বয়সের ক্ষেত্রেও নির্ভর করে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী, যাদের যৌনতা নিয়ে কোন ধারনাই নেই তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। সবচাইতে আসল কথা হচ্ছে আপনি যেমন বলেছেন ধর্ষণের ফলে মানসিক ভারসাম্য হারানো অথবা ট্টমায় ভুগতে পারে এটা কেন হয় সেটা আমাদের জানতে হবে। আমি মনে করি আমরা ধর্ষণের ঘটনা টা কে সরল ভাবে গ্রহণ করি না বলেই নারীরা মানসিক ভারসাম্য অথবা ট্টমায় ভুগে। যদি আমরা ঘটনা টা স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করি তাহলে দেখবেন মানসিক ভারসাম্য হারানো, ট্টমায় ভোগা, আত্মহত্যা করা ইত্যাদি ঘটনা কমে যাবে। উদাহরন হিসেবে বলা যায় নিউওরকের সেই হোটেল পরিচারিকার কথা। ধর্ষণের শিকার হবার পরেও যার দুর্দমনীয় সাহসিকতার কারণে আই এম এফ প্রধান দমিনিক স্ত্রস কান কে নাজেহাল হতে হয়েছে।প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। আমাদের দেশের কোন মেয়ে হলে হয়ত ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কিছু না করতে পেরে অথবা সামজিক লজ্জায়, সম্মানহানির ভয়ে আপনার ধারণা মত মানসিক ভারসাম্য হারাত অথবা ট্টমায় ভুগত। তাই ধর্ষণ কে আমরা কিভাবে গ্রহণ করলাম তার উপরেই নির্ভর করে ধর্ষণ পরবর্তী ধর্ষিতার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা। যেমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জটিল রোগে আক্রান্ত হবার পরেও ঔষধের পাশাপাশি ডাক্তারের আশ্বাস বানী ঔষধের মত কাজ করে রোগী দ্রুত সেরে উঠে।
@মাসুদ রানা,
আসলে ধর্ষণের স্বীকার হলে যে তকমা লাগে নাম পরিবর্তনে তা পরিবর্তন হবে?। এটা আমি শিওর না। নীচে ব্রাইট স্মাইলও বলেছেন,ছেলেরা যদি এমন অবস্থার স্বীকার হয় তখন ত তা হয় না। এখানেই ত আমার ভিন্ন মত। যৌনতার মানসিক দিক নারী পুরুষের একরকম না। এখানে আমাদের একটু সতর্ক কিন্তু হতে হবে। রাজীব যেভাবে প্রভার ভিডিও ছেড়েছে ,প্রভা কখনো তা ছাড়ত না। কিন্তু তারপরও বলা যেতে পারে যৌনতার ক্ষেত্রে এ পার্থক্য মানুষেরই সৃষ্টি বা পুরুষ এর চাপিয়ে দেয়া। হতে পারে,কিন্তু নারীর যৌন তাড়না পুরুষের মত বহির্মুখী না। নারী মানসিক ভাবে প্রস্তুতি ছাড়া যৌন কর্মে লিপ্ত হয় না, হতে পারে তা টাকার জন্য কিন্তু সেখানেও তাঁর একটা মানসিক প্রস্তুতি থাকে।নাড়ির স্বাভাবিক যৌন তাড়না আবেগ,ভালবাসা র মাধমেই প্রকাশ পায় সাধারণত। সে কারনেই নারীর পতিতাবৃত্তির তুলনায় পুরুষের পতিতাবৃত্তি নগনয়,কারন পুরুষের মত নারীর যৌন তৃপ্তি যেন তেন ভাবে আসে না। আমরা ত এ কথা জানি যে নারীর এক বিরাট অংশ যৌন অতৃপ্তিতে ভোগে। এখন যদি নাম পরিবর্তন করা হয় তাহলে কি হবে?। যদি ধর্ষণ এর এস্থলে জোর-সহবাস বলা হয় , তাহলে কাজটির ভয়াবহতা কমে তা ধর্ষকের অনুকুলে যাবে,কিন্তু বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থায় নারীর যন্ত্রনা যা ছিল তাই ত থাকবে। অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও বলি, আজকাল একদল রাজাকার বলা শুরু করেছেন,৭১ এ ৩০ লক্ষ নয় ৩ লক্ষ মানুষ খুন হয়েছিল। এখানে আমরা জানি সঙ্খকা টা গবেসনার জন্য জরুরী হলেও আমাদের কাছে জরুরী না কারন আমাদের কাছে ৩ বা ৩০ এর শাস্তি এক ই। কিন্তু রাজাকারদের উদ্দেশ্য ভিন্ন, তারা চায় সুঙ্খ্যাটার দিকে দিকনিরদেশ করে যুদ্ধের ভয়াবহতা কমান,অরথাত ৭১ এ তেমন কিছু হয়নি,সামান্য গৃহযুদ্ধ হয়েছিল যাতে মাত্র ৩ লক্ষ মানুষ মারা গ্যেছিল এবং তাঁর মধ্যে আবার অরধেক ই পাকিস্তানী। কাজেই বর্তমান বাস্তবতায় ধর্ষণ এর ভয়াবহতা বিবেচনায় নাম পরিবর্তনের যুক্তি দেখি না। আর যেওসব নারীর কথা আপনি বলেছেন তারাই সঙ্খ্যায় নগন্য , মানসিক ভারসাম্য হারানো নারীর সঙ্ক্যাই বেশি।সঠিক পরিসঙ্খান প্রকাশ পাওয়াই ত মুশকিল,কারন এ ধরনের ঘটনা নারীর আত্মমরযাদাকে ভুলুন্ঠন করে,নারি নিজেকে মানুষ ভাবতে ঘৃণা করে। এ শুধু ত লজ্জা বা সমাজ এর প্রস্ন না এটা আমি মানুষ এই ভাবনাকেই ব্যাহত করে।তাই নারী নির্যাতন এর শাস্তি সবসময় ক্যাপিটাল পানিশ্মেন্ট।
@সপ্তক, নাম পরিবর্তন করে আমি ধর্ষণের শাস্তি কে কমাবার কথা বলিনি । ধর্ষণের শাস্তি হবে কি না টা নির্ভর করে দেশে আইনের শাসন আছে কি না তার উপর। নাম পরিবর্তন করে আমি পুরুষদের দায়মুক্তিও দিতে চাইনি। ধর্ষণ যতটা ঘৃণ্য অপরাধ নাম পরিবর্তন করে ” জোর সহবাস” করলে অপরাধের গভীরতা কোন ক্রমেই কমবেনা, কিন্তু ধর্ষিতার প্রতি আমাদের ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। নাম পরিবর্তনের ফলে ধর্ষণের ঘটনা কমবে না। নাম পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে ধর্ষিতাকে অচ্ছুৎ, নিকৃষ্ট ভাবা না হয়। কোন নারী ধর্ষণের শিকার হলে যাতে আমরা তাকে বাঁকা চোখে না দেখি। আর এজন্য আমরা ধর্ষণের ঘটনাটা কিভাবে গ্রহণ করলাম তার উপরেই নির্ভর করবে ধর্ষিতার পরবর্তী মানসিক অবস্থা। ধর্ষণের শিকার হবার পর একজন নারী নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে পারবে কি না, তার আত্মমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে কি না তাও নির্ভর করে ধর্ষণ নিয়ে আমাদের মন মানসিকতার উপর। কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে যদি আমরা ভাবি কি না কি কিয়ামত হয়ে গেল !! , ধর্ষিতাকে পদে পদে আর দশটা মেয়ের মত স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধা দিই, তার গায়ে ধর্ষিতার লেবেল এঁটে দিয়ে তাকে সকল প্রকার সামাজিকতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখি তাহলে একজন ধর্ষিতা মানসিক ভারসাম্য হারাবে, নিজেকে একজন মানুষ ভাবতে পারবেনা, তার আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে। তাই ধর্ষিতার প্রতি আমাদের মনোভাব ইতিবাচক করতে হলে অনেক পদক্ষেপের মধ্যে প্রথম ও অন্যতম হচ্ছে নাম পরিবর্তন। ।নাম পরিবর্তন করে অনেক নেতিবাচক ব্যাপার গুলোকে ইতিবাচকে রুপান্তর করা যায়। উদাহরন স্বরূপ বলা যায় “যুবতী” শব্দের পরিবর্তে “যুব মহিলা” শব্দের প্রচলন, “পরিবার পরিকল্পনা” মন্ত্রণালয় কে ” পরিবার কল্যাণ ” শব্দে রূপান্তর ইত্যাদি। রাজিব প্রভার ঘটনার উল্লেখ আপনি করেছেন আমি মনে করি এই ঘটনায় অধিকাংশ মানুষ প্রভাকেই অচ্ছুৎ, নিকৃষ্ট ভাবে যেন রাজিব দুধে ধোয়া তুলসীপাতা। কিছুদিন আগেও শুনেছিলাম চৈতীকে কোন এক টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হয় ভিডিও কেলেঙ্কারির কথা বলে। এগুলো আসলে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক হীনমন্যতার ফলাফল। ঠিক একই কারনেই আমরা ধর্ষিতার প্রতি বাজে মনোভাব পোষণ করি। তাই আমাদের মনোভাব পরিবর্তনের স্বার্থেই নাম পরিবর্তন আমার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে।
@মাসুদ রানা,
আপনার মূল অনুভুতির সাথে অমত করার কিছু নেই। নাম পরিবর্তন এ যদি দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন আসে তাহলে ভাল। ধর্ষিতা নারীকে বুঝানো এটা একটা দুর্ঘটনা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া , হলে ত খুব ভাল। কিন্তু বরতমান আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে সেটা কতটুকু সম্ভব সেটাই আলচ্য। সময় এ হয়ত হবে। তবে আমার ধারনা নাম পরিবর্তনের পরিবর্তে অপরাধীর সঠিক শাস্তি হওয়া টা জরুরী। আমার আশঙ্কা নাম পরিবর্তনে এ ম্যাসেজ যেতে পারে এটা একটা লঘু অপরাধ। এখানেই আমার ভয় এবং তা ধর্ষক এর পক্ষে যেতে পারে। ইতিমধ্যে ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, একে যেন আমরা নিজেদের ভুলে লঘু অপরাধ এ পরিনত না করি। আমার মতে ধর্ষণের বিচার এবং শাস্তি এমন দ্রুত হওয়া উচিত যেন আমরা ” ধর্ষণ” শব্দটি অভিধান থেকে বিতাড়িত করতে পারি, নাম পরিবতন নয়।
@সপ্তক, ok ok. আমি বুঝতে পেরেছি আপনার ধারণা পজিটিভ
@সপ্তক,
আপনার কথায় মেয়েদের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ শব্দ ‘ধর্ষন’ বা ‘ধর্ষিতা’ প্রয়োগ করে বর্তমান সমাজে এটা একটা গুরুতর অপরাধ হিসাবে গন্য হচ্ছে, কিন্তু সেটার প্রতিফলন কি বর্তমান সমাজে পরিলক্ষিত হচ্ছে? গুরুতর অপরাধ বিবেচিত হয়ে লাভ কি যদি না সমাজে তার কার্য্যকর উপস্থিতি বা বাস্তব প্রয়োগ দেখা না যায়।
কথা হচ্ছে নাম পরিবর্তনটা এখানে মুখ্য নয়। চুরির নাম আপনি যা কিছুই দেন না কেন চুরির যে শাস্তি রাষ্ট্র কতৃক ধার্য্য করা আছে সেটা সবার বেলায়ই প্রযোজ্য হবে। যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রে আইনের বা শাস্তির বিধান ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু যৌন নির্যাতনের শিকার একটি মেয়েকে একটি বিশেষ বিশেষনে আখ্যায়িত করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার সামাজিক প্রচেষ্টাটা অন্যায় এবং উদ্দেশ্যমুলক। এটার সাথে যৌন নির্যাতনের শাস্তির গুরু বা লঘুতর হওয়ার কোন সম্পর্ক নাই।
@ব্রাইট স্মাইল্,
“ইতিমধ্যে ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, একে যেন আমরা নিজেদের ভুলে লঘু অপরাধ এ পরিনত না করি। আমার মতে ধর্ষণের বিচার এবং শাস্তি এমন দ্রুত হওয়া উচিত যেন আমরা ” ধর্ষণ” শব্দটি অভিধান থেকে বিতাড়িত করতে পারি, নাম পরিবতন নয়।”
আমি কিন্তু এখানে তা বলেছি।
@সপ্তক,
সহমত।
@মাসুদ রানা,
আপনার মূল বক্তব্য আমি বুঝতে পারছি যে ধর্ষিত নারীকে আলাদা করে না দেখা উচিৎ, যাতে সে হীনমন্যতায় না ভুগে, আর সমাজো তাকে যাতে নিচু দৃষ্টিতে না দেখে। অবশ্যই আমাদের একজন ধর্ষিতা সম্পর্কে তাই মনোভাব নেওয়া উচিৎ। কিন্তু ধর্ষণ কে যেভাবে সরল ভাবে নিতে বলছেন, তা নিশ্চয়ই সামাজিক ভাবে আপনি বড় আকারে প্রকাশ করতে পারবেন না। আমার যদি কাছের কেউ এহেন পরিস্থিতির শিকার হন, আপনি যেভাবে বলছেন আমি সেভাবেই তাকে বুঝিয়ে বলব, যে ধর্ষণ এমন কিছু ক্ষতি তার করে নি। সমাজকেও তাই বোঝানোর চেষ্টা করবো। কিন্তু আপনি ধর্ষণকে কি করে সমাজের সামনে হাল্কা অপরাধ হিসেবে দেখাবেন। সমাজে ভয়ংকর মানুসিকতার মানুষদের এই অপরাধ করা থেকে বিরত রাখবেন কি করে? বরং “ধর্ষিতা” শব্দকে ঋণাত্মক ভাবে না নেওয়া হোক।
ধর্ষণ, ইজ্জতহানি, সম্ভ্রমহানি… এর পরিবর্তে সহবাস? আমি ধর্ষণের শাব্দিক অর্থ জানি না। দুঃক্ষিত। ইজ্জতহানি, সম্ভ্রমহানি আপনি বলার পর মনে হলো আসলেও সঠিক শব্দ নয়। কিন্তু rape এর বাংলা সহবাস হয় কি করে!! সহবাস মানে live together নয় কি?
@নির্মিতব্য, আমি rape এর বাংলা সহবাস বলিনি। বলেছি ” ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস”। “সহবাস” ও ” ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস” কখনই এক রকম শব্দ হতে পারে না ।
@মাসুদ রানা,
ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলে তো তাহলে আর সহ হয় না।
@গীতা দাস, কেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয়ে কত নারীই না স্বামীর দ্বারা প্রতিনিয়ত সহবাসিত হচ্ছে তার কোন পরিসংখ্যান আছে আপনার কাছে?
@মাসুদ রানা,
না, নেই।ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয়ে বা ইচ্ছায় বিয়ে হয়েও কত নারীই স্বামীর দ্বারা প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বলেই তো marrital rape শব্দের উৎপত্তি।
@গীতা দাস, আপনি হয়ত বিবাহ পরবর্তী জোর সহবাস কে ধর্ষণ বলে গণ্য করেন কিন্তু আমাদের সমাজে ব্যাপার টাকে কিভাবে নেয়া হয় তাও মাথায় রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় যে বিচারক ধর্ষণের বিচার করেন অথবা যেই সমস্ত গণ্যমান্য বাক্তিবর্গ ধর্ষণের বিরুদ্ধে গলা ফাটান তারাই আবার বাড়ি গিয়ে নিজ স্ত্রী কে সহবাসে বাধ্য করেন। তাদের কাছে কিন্তু এটা ধর্ষণ নয়। তাই সব ধরনের ধর্ষণ কে যখন একটা কমন নাম ” ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস” বলে প্রচলিত হবে তখন সম্মানিত বিবাহিত গনও স্ত্রীর সাথে জোর সহবাস কে অপরাধ ভেবে পিছু হটবে । তাই স্বামী কর্তৃক অথবা স্বামী ছাড়া সব ধরনের ধর্ষণ কেই একই দৃষ্টিতে দেখে তার প্রতিরোধ করতে হবে। আর এজন্যই দুটোর নাম একই হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। rape ও marrital rape নাম দিয়ে পার্থক্য সৃষ্টি করে অপরাধ লঘুকরন কেন?
@মাসুদ রানা,
আপনার কোন কথার সাথেই একমত হতে পারলাম না।
@আকাশ মালিক, একমত না হওয়া টাই স্বাভাবিক। কারন আপনার আমার ডী এন এ তো আর মিল হতে পারে না
আপনাদের সংগঠনের সকল দাবীর সাথে একাত্ম ঘোষনা করছি।
যেখানেই ‘দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে …” বা “‘দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি…” ধরণের কথা শুনবো সেখানে “ ১৯৭১- এর মুক্তিযুদ্ধে ‘দুই লাখ নারী ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন” এই বাক্য ব্যবহার করতে বলবো।
@নির্মিতব্য,
সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
স্বাধীনতার পর যারা ইজ্জত বা সম্ভ্রমহানি যুক্ত করেছেন, তাদের এবং এর পর যারা এর অনুকরণে এগিয়ে এসেছেন, সেই আমাদেরকে ধিক, শত ধিক্। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা, দাবি জানাবার পরও মিলবে কি-না জানি না, তবে
দুই লাখ নারী ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন” এর জন্য সরকারকে কোন পয়সা খরচ করতে হবে না।
দেখা যাক মানুষ হয়ে ওঠার পথে কে কতটা এগোয়।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, জ্নমত তৈরি হোক, আপাতত, এই।
@স্বপন মাঝি,
জনমত তৈরির জন্যইতো এ লেখাটা মুক্ত-মনায় দেওয়া। আার তাদের জন্য নারীপক্ষ অর্থের ব্যবস্থা করতে অভিযানে নামবে। তখন সাথে থাকার অনুরোধ রইল।
অন্যদিকে তোমার সংগৃহীত ৪৫০০০ টাকা তালেব ভাই রামগড়ুড়ের ছানাকে সেতুর চিকিৎসার জন্য হস্তান্তর করেছে গত ২৪ ডিসেম্বর নারীপক্ষ অফিসে বসে আমার সামনে। সাথে আমি
যৎসামাণ্য টাকা দিয়েছি।
@গীতা দাস,
গীতা দি, আমি দেখেছি অনেক শিক্ষিত সুশীল নামের কুত্তার বাচ্চাদের, যারা বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থই বোঝেনা। ডিসেম্বর আসলে মাইক ফাটিয়ে ভাষণ দেয়-‘দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে …” ‘দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি…” আর আমি যখন বীরাঙ্গনাদের কথা তুলি তখন নাক সিটকায়। গত সপ্তাহে সিলেটের সুনামগঞ্জ এলাকার একজন বীরাঙ্গনার ইন্টারভিউ পড়লাম, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরে তিনি মুখ খোলার সাহস পেলেন। এটা আমাদের লজ্জা যে, আজও নিজের দেশে নিজেরই সরকারের কাছে এসব দাবী জানাতে হচ্ছে আর জীবিত ঘাতক-ধর্ষকরা তা দেখে বিদ্রুপের হাসি হাসছে।
নীলিমা ইব্রাহিমের কোন এক লেখায় যেন পড়েছিলাম, ইচ্ছে করেই বীরাঙ্গনাদের প্রাণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদেরকে সামনে নিয়ে আসা হয়না বা অনেক তথ্য গোপন রাখা হয়। আপনি তো এই এলাকায় বিচরণ করেন, বিগত ৪০ বছরে বীরাঙ্গনাদের সাক্ষাৎকার বা সাক্ষীর উপর ভিত্তি করে কতোজন ধর্ষকের বা অত্যাচারীর শাস্তি হয়েছে, তার কি কোন লিখিত পরিসংখ্যান আছে? শুনা যায় অনেক ক্ষেত্রেই নাকি অত্যাচারিত-ধর্ষিতা নারীগণ তাদের অত্যাচারীকে সনাক্ত করতে পারেন নি?
@আকাশ মালিক,
বীরাঙ্গনাদের নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সায়মা খাতুন গবেষণা করছেন।নারীপক্ষও এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ফলাফলের অপেক্ষায় আছি।
এক্ষুনি তা দেওয়া হোক। এক্ষুনি।
বিচার ও অন্যান্য দাবী এক্ষুনির ঠিক পরপরই বাস্তবায়ন করা হোক।
ততক্ষণ হে নির্লজ্জ অকৃতজ্ঞ বেহায়া নির্বিকার নির্বোধ অসভ্য বর্বর জাতি, ধিক, ধিক, ধিক।
@কাজী রহমান,
বীরাঙ্গনাদের দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণার জন্য ধন্যবাদ।
তখন অনেক ছোট, মনে হয় ক্লাস ফাইভ সিক্সে পড়ি, আমাদের সহপাঠে একটা গল্প ছিল “বীরাঙ্গনা সখিনা”, এই সখিনা পুরুষ সেজে অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে। কিন্তু পড়ার পরেই একদিন কেউ একজনের মুখে শুনলাম খুবই তাচ্ছিল্যের সাথে বলছে “খালেদা তো বীরাঙ্গনা ছিল, ছি ছি ও আবার মাইনষের সামনে আসে কেম্নে?” আমি বুঝিনাই কেউ বীরাঙ্গনা হলে তাকে ছি ছি করার কি আছে। বড় হয়ে জানলাম আমাদের দেশে মানুষ কাদেরকে কি সেন্সে বীরাঙ্গনা বলে…খুব দুঃখ পাই সামাজিকভাবে চিন্তার দীনতা দেখে।
@লীনা রহমান,
ভাবলে অবাক হতে হয় সরকারী দল এবার সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে বীরাঙ্গনা বলে গালি দিয়েছে। আর বিরোধী দলীয় নেত্রী ( তিনি বীরাঙ্গনা ছিলেন কিনা এর কোন সত্যাতা আমার কাছে নেই) যদি বীরাঙ্গনা হয়েই থাকেন তবে তা নিয়ে তো অহংকার করার কথা।
@গীতা দাস,
খালেদা জিয়া বীরাঙ্গনা নন। বীরাঙ্গনা হচ্ছেন সেইসব নারীরা যারা একাত্তরে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষিতা হয়েছেন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বা তাদের সহযোগী রাজাকার আলবদরদের হাতে।
খালেদা জিয়ার একাত্তরের ভূমিকা অস্পষ্ট এবং বিতর্কিত। তিনি পাকিস্তান আর্মির সেনাছাউনিতে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়ই। বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধরত প্রায় সব সামরিক অফিসারের স্ত্রীরাই কোনো না কোনোভাবে সেনাছাউনি ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন বা লুকিয়ে পড়েছিলেন। ক্রাক-প্লাটুনের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম যুদ্ধের পরে জানান যে একদল মুক্তিযোদ্ধা সেনাছাউনিতে গিয়েছিলো আরো কয়েকজন সামরিক অফিসারের স্ত্রীসহ খালেদা জিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য। খালেদা তাঁদের সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানান। বলেন যে, এখানেই ভালো আছি। এর কারণে যুদ্ধের পরে জিয়াউর রহমানের সাথে খালেদার সম্পর্কে ফাঁটল তৈরি হয়। তাঁদের সম্পর্ক পূনঃস্থাপনের জন্য শেখ মুজিবকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হয়। তিনি জিয়াকে বলেন যে, তুমিই যদি তোমার স্ত্রীকে ঘরে নিতে অস্বীকার করো, তবে আমি কীভাবে আমার দুলক্ষ ধর্ষিতা মা-বোনকে তাঁদের স্বামী বা পরিবারের হাতে তুলে দেবো?
খালেদা যদি কিছু করেও থাকেন পাকিস্তান আর্মির সাথে, তবে সেটা স্বেচ্ছাতেই করেছেন, অনিচ্ছায় নয়। কাজেই, বীরাঙ্গনা উপাধি তাঁর প্রাপ্য নয়।
আওয়ামী লীগের কিছু কিছু গর্ধভ সদস্য খালেদাকে অপমান করতে গিয়ে অপমান করে বসে থাকেন অসংখ্য বীরাঙ্গনা নারীদের। জাতীয় সংসদে যেমন আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন যে, খালেদা জিয়া বীরাঙ্গনা ভাতা পান কিনা? স্পিকার আব্দুল হামিদ এডভোকেট এই ছাগলের ছাগলামি প্রশ্নে তাঁর বিরক্তি ঢেকে রাখতে পারেন নি। তিনি পরিষ্কার করে বলেন যে, এই প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে হবে বলে আমি মনে করছি না।
@ফরিদ আহমেদ,
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া boloboloবললো, আর তার উপর নির্ভর করে আপনি এই সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলেন? etএতটুকু সুনিশ্চিত হন কি করে?
অন্তত, শুদ্ধ করেতো ‘গর্দভ’ বলবেন।
@মইনুল রাজু,
সুনিশ্চিতটা কী রাজু? তিনি ধর্ষিতা হয়েছেন? খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টে পুরোটা সময় ছিলেন স্বেচ্ছায়, এটা শুধু মায়ার জবানীতেই পাওয়া যায় নি। আরো অনেক তথ্যসূত্রই আছে এর স্বপক্ষে। সেনা অফিসারদের পরিবারের সদস্যদের ঢাকা থেকে বের করে নিয়ে যাবার জন্য যে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট্ট একটা দল ঢাকায় এসেছিলো, এ বিষয়েও কোনো অনিশ্চয়তা নেই। তাঁকে যদি জোর করে আটকে রাখা হতো তবে তিনি নিশ্চিতভাবেই ওই মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে পালিয়ে আসতেন। সেটা তিনি করেন নি।
এখন ক্যান্টনমেন্টে তিনি কার সাথে কী করেছেন বা করেন নি, এটি তাঁর এবং তাঁর স্বামীর পুরোপুরি ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি নিজে যেখানে ধর্ষিতা হয়েছেন বলে কোথাও বলেন নি, সেখানে আমাদের জোর করে তাঁকে ধর্ষিতা বানানোর কোনো যুক্তি আমি খুঁজে পাই না। নোংরামি মনে হয় আমার কাছে।
গালির আবার শুদ্ধ, অশুদ্ধ কী রাজু মিয়া? গালিতো গালিই। দ দিলেও বুঝবে, ধ দিলেও বুঝবে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই, আপনার পয়েন্ট আমি বুঝতে পারছি। তবে, আমার আপত্তি আপনার ‘স্বেচ্ছায় করেছেন, অনিচ্ছায় নয়’ কথাটাতে। উনি কারো সাথে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চলে যান নাই, এটার মানেতো এই নয় যে উনি কিছু একটা স্বেচ্ছায় করেছেন। আমার মনে হয় না, আপনি নিশ্চিত করে এই উপসংহারে আসতে পারেন।
অশুদ্ধ হলে তীব্রতাটা একটু কমে যায় কি-না, সে জন্য বললাম আর কি। :))
@মইনুল রাজু,
এই পয়েন্টে শুধু আমি নই। কেউ-ই নিশ্চিত নয়। এ বিষয়টা আশা করি আমার দ্বিতীয় মন্তব্যে বোঝাতে পেরেছি। যে সমস্ত আর্মি অফিসারের সাথে তাঁর খাতির ছিলো তাঁরা হয়তো স্রেফ তাঁর পারিবারিক বন্ধুই ছিলো, আর কিছু নয়। তারা হয়তো তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছিলো। অনিশ্চিত একটা বিষয় নিয়ে একজন ভদ্রমহিলাকে অপবাদ দেওয়ার আমূল অপক্ষপাতী আমি।
তারপরেও আমার কথা হচ্ছে যে, তাঁর যদি কোনো গোপন প্রেমিক থেকেও থাকে, সেটা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা বড়জোর আপত্তি জানাতে পারি এই জায়গাটাতে যে, যেখানে দেশের মানুষ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করছে, সেখানে অবিবেচক এবং অসংবেদনশীল খালেদা জিয়া তাদের সাথে দোস্তি করে বেড়াচ্ছেন, মৌজ করে বেড়াচ্ছেন।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনি মুখে বলেন, একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু ‘গোপন প্রেমিক’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে- যতই তার আগে ‘যদি’/’সম্ভবত’/’মোটামুটি’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করেন না কেন- আপনি তার ব্যক্তিগত জীবনে অযাচিত শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন।
সম্পূর্ণ নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন, যেটা একদমই আলাদা একটা টপিক। এখন কেউ যদি বলে, আপনার দৃষ্টিতে ‘অবিবেচক এবং অসংবেদনশীল’ একটা মহিলার প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, তাহলে সেটা অযৌক্তিক কিছু নয়।
@মইনুল রাজু,
তোমার যদি কোনো গোপন প্রেমিকা থাকে, তাহলে সেটাকে আমি কীভাবে ব্যক্ত করবো তোমার ব্যক্তিগত জীবনে অযাচিত শব্দের অনুপ্রবেশ না ঘটিয়ে?
সম্পূর্ণ নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন এই শব্দবন্ধেও আমি বলতে পারি যে রাজু আমার প্রতি তার ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে আমাকে বিতর্ক জন্ম দেবার অহেতুক অভিযোগ করে।
নাহ, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলি নি আমি। আমি একটা সিচুয়েশন ব্যাখ্যা করেছি। একাত্তর সালে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে কোনো বাঙালি নারীর যদি পাকিস্তানি প্রেমিক থাকে তবে সে একজন অবিবেচক এবং অসংবেদনশীল মানুষ। এখানে খালেদা জিয়া আমার মূল লক্ষ্যবস্তু নন।
আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেই সেটা অযৌক্তিক হতে হবে, এই ধারণাটাই অযৌক্তিক। এতে করে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, কোনো ব্যক্তিরই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত নয়।
@ফরিদ আহমেদ,
রাজুর সাথে যৌক্তিক প্রতিত্তোর করার জন্য ধন্যবাদ।
@ফরিদ আহমেদ,
এই ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারছিনা, কারো যদি কোনো গোপন প্রেমিকা থাকে তা প্রকাশ করার জন্যতো অবশ্যই কিছু শব্দ প্রয়োগ করতে হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, কিন্তু যদি না থাকে তাহলে প্রকাশটা করবেন কি আর সেখানে শব্দের প্রয়োগটাই বা ঘটবে কি করে? আসলে আমি বলতে চাচ্ছি যে, কারো গোপন প্রেমিকা বা প্রেমিকের ব্যাপারটিতে নিশ্চিত হওয়ার পরেইতো তার ব্যক্তিগত জীবনে ঐসব অযাচিত শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তা প্রকাশ করা সম্ভব।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আপনার সাথে একমত। আমি ব্যাপারটা অন্যভাবে একটু ঘুরিয়ে বলি। গোপন প্রেমিক/প্রেমিকা বা গোপন কোনো ঘটনাকে তখনই গোপন বলা হবে, যখন ঘটনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সেটাকে প্রাইভেট রাখতে চাচ্ছেন। অতএব, আমার বা কারো গোপন ব্যাপারকে ব্যক্ত করার চেষ্টা করাটাই তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে অযাচিত অনুপ্রবেশ।
তোমার গোপন প্রেমিকা আছে, তুমি সেটাকে প্রাইভেট রাখতে চাচ্ছো। এটা তোমার ব্যক্তিগত বিষয়। তুমি চাও না সেখানে কোনো অযাচিত অনুপ্রবেশ। ভালো। এবার আসো আমার ক্ষেত্রে। আমি জানি তোমার গোপন প্রেমিকা আছে। আমি সেটা ব্যক্ত করতে উৎস্যুক। এটা আমার বাক- স্বাধীনতা। এখন এ দুটোকে তুমি সমন্বয় করবা কীভাবে?
@ব্রাইট স্মাইল্,
সেটাই। খালেদা জিয়ার বিষয়ে নিশ্চিত নই দেখেইতো যদি নামের এই অনিশ্চিত শব্দটিকে ব্যবহার করেছি আমি। যদিও রাজুর সেটাতেও প্রবল আপত্তি রয়েছে দেখছি।
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই, আপনার করা পরের মন্তব্যে উত্তর দেয়া যাচ্ছে না। মন্তব্য করার লিঙ্কটা কেন জানি নেই। তাই এখানে লিখছি।
খুব সুন্দরভাবে সমন্বয় করা যাবে এটা-” একজনমানুষ একটা জিনিস গোপন রাখতে চাচ্ছে, কিন্তু আপনার উৎসাহের কারণে আরেকজনের চাওয়াকে, ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে আপনি সেটা প্রকাশ করে দিলেন। উল্লেখ্য, প্রকাশ করে দেবার স্বাধীনতা আপনার আছে। ”
জিনিসটা এখানে যতটুকু না স্বাধীনতা কিংবা অধিকারের, তার চেয়েও বেশি হচ্ছে অন্যের মনোভাব বা অন্যের ফিলিংস্কে বা ব্যক্তিগত বিষয়কে রেস্পেক্ট করার। কিন্তু, আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি সেটাকে রেসপেক্ট করবেন না; তাহলে সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর সেটা যেহেতু আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, সেহেতু আমার দেয়া যুক্তি অনুযায়ীই আমার তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়, এবং নেইও।
@মইনুল রাজু,
ধরো, এরশাদ তাঁর সমস্ত চুরি-চোট্টামি, লুচ্চামি, সমস্ত গুপ্ত প্রেমিকার নাম-ধাম সব গোপন রাখতে ইচ্ছুক। এখন আমার কি এরশাদের এই মনোভাবের বা ফিলিং এর বা তার ব্যক্তিগত বিষয়কে রেসপেক্ট করা উচিত? উচিত না হলে, কেনো নয়?
একাত্তরে খালেদার বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ক ফালুর সাথের সম্পর্কের মতো নিরীহ নয়। তিনি আমাদের জাতির বিরুদ্ধে গণহত্যাকারী খুনি সেনাদের সাথে মাখামাখি করেছেন, তাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থেকেছেন। তাঁর নিজের স্বামী যাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, সুযোগ থাকার পরেও তাদের সান্নিধ্য ছেড়ে তিনি স্বামীর কাছে যান নি।
@ফরিদ আহমেদ,
এখানে ব্যক্তিগত জিনিস গোপন রাখার বিষয় নয়, এখানে নৈতিক স্খলনকে ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে চালিয়ে দেয়ার ভাণ করাকে প্রতিহত করার বিষয়।
আবারো বলছি, আপনার এ অভিযোগ ব্যক্তিগতভাবে আমি গ্রহণ করছি না। কিন্তু, যদি গ্রহণ করিও, সেটাও উনার ব্যাক্তিগত বিষয় নয়, বরং ব্যক্তিগত বিষয়ের নামে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মত অপরাধ করার বিষয়।
উপরের উভয় ক্ষেত্রে, ব্যাপারটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে, আমিও একটুও সেখানে আপত্তি জানাবো না। কিন্তু, অন্য যে দু’টি বিষয় তার সাথে জড়িত, সেগুলোর ব্যাপারে অবস্থান আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
**আপনার উত্তরে প্রতিউত্তর করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অন্য মন্তব্যে গিয়ে লিখছি।
@মইনুল রাজু,
গোপন প্রেমিক বা প্রেমিকা বিষয়টা কী নৈতিক স্খলনের মধ্যে পড়ে না? মনে রেখো আমরা কিন্তু এই বিতর্ক শুরু করেছিলাম খালেদা জিয়াকে দিয়ে। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জননী ছিলেন তখন।
কেনো করছো না? পাকিস্তানি সেনাদের সাথে খালেদার দহরম-মহরমকে অস্বীকার করার পিছনে তোমার যুক্তিটা কী?
তো, সেভাবেই নাও না কেনো? খামোখা একে ব্যক্তিগত বিষয়ের মোড়কে ঢুকিয়ে সুরক্ষা দেবার প্রয়োজনটা কী?
তুমি না জানালেও, আমি আপত্তি জানাবো। জাতিগত যুদ্ধের সময় আসলে ব্যক্তিগত বিষয়ের সীমারেখা অনেক ছোটো হয়ে যায়। একজন বাঙালি রমণী সুদর্শন বা হৃদয়বান কোনো পাকিস্তানি যুবকের প্রেমে পড়তেই পারে। এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের কচুকাটা করছে, তখন কোনো বাঙালি নারীর এই অধিকার আর থাকে না। সে যদি এই কাজ করে তবে সেটা তখন ব্যক্তিগত বিষয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে সামগ্রিকভাবে বাঙালি জাতির জন্য অবমাননাকর হয়ে পড়ে।
@ফরিদ আহমেদ,
না, ক্ষেত্রবিশেষে পড়ে না। গোপন প্রেমিক/প্রেমিকা পরিবার বা সমাজের ভয়েও তৈরী হতে পারে। গোপন প্রেমিক শুধু বিবাহিত নারী-পুরুষের থাকবে এমন কোনো কথা নেই। অবিবাহিতদেরও থাকতে পারে।
আর যার কথা আপনি বলছেন, তার বিষয়ে সেটা বিচার করতেই যাবো না, কারণ তার বিরুদ্ধে আপনার উল্লেখ করা অভিযোগ আমি আমলের মধ্যেই নিচ্ছি না। কেন নিচ্ছি না সেটা একটু পরেই বলছি।
সুরক্ষার কথাটা আসছেই না। কারণ, সুরক্ষা করার প্রয়োজন পড়েনি এখনো, আপনার অভিযোগ ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হয়নি, যে সেটা ডিফেন্ড করতে হবে। প্রশ্ন হতে পারে প্রথম অংশটা, ‘সেভাবেই নিই না কেন?’ সেভাবেই নিই না কারণ, খুব শক্ত ও সুদৃঢ় কোনো প্রমাণ ছাড়া একজন ভদ্রমহিলার বিরুদ্ধে এই ধরণের একটা গুরুতর অভিযোগ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
আপনার মতে এখানেও দোষের কিছু আছে, কারণ আপনি বিবাহিতা এবং দুই সন্তানের জননীর কথা বলছেন, সাধারণ বাঙালি রমণীর কথা বলছেন না। অতএব, এখানে সাধারণ বাঙালি রমনীর কথা নিয়ে আসবেন না, তাহলে বিতর্কের প্রেক্ষাপটই ভিন্ন হয়ে যাবে।
জ্বী, আমার কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন। আমিও সেটাই বলছি। কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে অযাচিতভাবে অনুপ্রবেশ না করার পক্ষেই মত দিয়েছি আমি। কিন্তু সেটা যখন ব্যক্তিগত বিষয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে যায় অর্থাৎ সেটা যখন আর ব্যক্তিগত বিষয় থাকে না, তখন অনুপ্রবেশ কিংবা সেই ব্যাপারে কথা বলার ব্যাপারে আমি আপত্তি জানায়নি।
আপনার সাথে আমার দ্বিমত হলো, আপনি যে ভদ্রমহিলার ব্যাপারে বলছেন, পাকিস্তানি যুবকের প্রেমে পড়ছেন, আমি শুধু সেটাকে আমলেই নিচ্ছি না। কারণ আগেই বলেছি, শক্ত কোনো প্রমাণ ছাড়া এই ধরণের গুরুতর অভিযোগ আমলে নেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
ওয়েল, আপনি যদি মনে করেন, শক্ত প্রমাণ আপনার কাছে আছে, আপনি কনভিন্সড্। তাহলে আপনি সেই অভিযোগ মেনে নিতেই পারেন। কিন্তু, আমি মনে করি না শক্ত কোনো প্রমান আছে, আমি কনভিনসড্ না। তাই বলে কি, আমার মেনে না নেওয়াটা ‘খামোখা’ হয়ে যায় ফরিদ ভাই? জিনিসটা কি দাঁড়ালো- আপনি যা বলবেন তা খুব যৌক্তিক হলো, আর অন্যেরটা ‘খামোখা’ হয়ে গেলো?
@মইনুল রাজু,
আমার ধারণা ছিলো যে, আমরা এই বিতর্ক শুরু করেছিলাম খালেদা জিয়াকে নিয়ে। তারপর উদাহরণ হিসাবে নিয়ে এসেছি তোমাকে। শুরু থেকেই বিবাহিত নর-নারীর ভিত্তিতে আমি গোপন প্রেমিক বা প্রেমিকার কথা বলেছি। এখন দেখছি যে, এ বিষয়ে তুমি ভিন্ন একটা ধারণায় ছিলে। এবার আসো, পরিষ্কার করে দেই। আমি গোপন প্রেমিক বা প্রেমিকার কথা বলছি শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই যাদের স্বামী, স্ত্রী বা ইতোমধ্যেই একজন প্রেমিক বা প্রেমিকা রয়েছে। অবিবাহিত, ছাড়াছাড়ি হওয়া, বিপত্নীক বা তালাকপ্রাপ্তদের এই আলোচনার সীমারেখার বাইরে থাকবে।
তুমি বললেইতো আর হবে না। তোমার কর্মকাণ্ড কিন্তু সেটা প্রমাণ করে না। বরং তুমি যে আমার অভিযোগকে গুরুত্বের সাথেই নিয়েছো এবং সেটাকে ডিফেন্ড করছো, সেতো তোমার মন্তব্যসমূহ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। আমল না দিলে আমাদের এই বিতর্কের থ্রেড এতো লম্বা হতো না। সূতো ছিড়ে যাবার পরেও, নতুন নতুন সূতো তৈরি করে জবাব দিচ্ছো তুমি।
বিতর্কের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে যাবে কেনো? এই সাধারণ মোড়কে কি খালেদা জিয়াকে ঢোকানো যাবে না। তাঁর জন্য কি আমাকে প্রতিটা ক্ষেত্রেই স্পেসিফিক শব্দচয়ন করতে হবে? সেটা যদি চাও, তাও করতে পারি। আসলেও করেওছিলাম আগের কোনো এক মন্তব্যে। আসো রিফ্রেজ করি। বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জননী স্বামীকে রেখে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার প্রেমে পড়তে পারে, এতে কোনো দোষ দেখি না আমি। কিন্তু যুদ্ধচলাকালীন সময়ে এই কাজটা তার জাতির জন্য অবমাননাকর।
সমস্যা হচ্ছে কী রাজু জানো। এখানে প্রমাণ, অপ্রমাণ কোনো বিষয় নয়। বিষয়টা হচ্ছে পুর্বনির্ধারিত বিশ্বাস। এটা যখন কারো মধ্যে থাকে তখন কোনো প্রমাণই আসলে শক্ত প্রমাণ হিসাবে দাঁড়ায় না। যে কারণে ঈশ্বর আছে কী নেই, এই বিতর্কের কোনোদিন সমাধান আসবে না কোনো। প্রমাণের কথার দোহাই দিয়ে এরশাদভক্ত যে কেউ-ই এখানে আমাকে চ্যালেঞ্জ করে বসতে পারে তাকে লম্পট বলায়। কারণ এরশাদের বিরুদ্ধেও শক্ত প্রমাণ নেই, প্রভাও দাবী করে বসতে পারে যে, ওই ভিডিও আমার নয়, এডিটিং করে অন্য কারো শরীরে আমার মাথা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তোমার জন্য ছোট্ট একটা তথ্য দেই। এর গভীরে ঢোকা না ঢোকা তোমার বিবেচনা। খালেদা জিয়া তাঁর প্রধানমন্ত্রীতের প্রথম সময়কালে পাকিস্তানি একজন জেনারেলের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রটোকল ভঙ্গ করে শোকবার্তা পাঠান। এই জেনারেল জানজুয়া আইএসআই এর বস ছিলেন। তবে এটাই তাঁর আসল পরিচয় নয়। তিনি ১৯৭১ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবীতে বাংলাদেশে পোস্টেড ছিলেন। সেই সময় তিনি জাতিগত নিধন এবং বাঙালি রমণী ধর্ষণে নিয়োজিত ছিলেন। ডাঃ এম এ হাসান তাঁর পাকিস্তানি যুদ্ধপরাধী ১৯১ জন এ জানজুয়া খানের নামকে তালিকাভূক্ত করেছেন।
এটা আসলে বিতর্কের কফিনে শেষ পেরেক। কারণ, তুমি কনভিন্সড নও। তোমাকে কনভিন্স করানোর মতো শক্ত প্রমাণ আমার পক্ষে দেওয়াও সম্ভব নয়। এখনকার মত গোপন ক্যামেরা তখন ছিলো না যে কেউ ছবিটবি তুলে ইউটিউবে পোস্ট করে দেবে। তখনকার অনেক কিছুই আমাদের ঘটনা পরম্পরায় বুঝতে হয়। তবে, তোমার কনভিন্সড না হওয়াতে আমার কোনো আপত্তিই নেই। এ তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতা। আপত্তিটা ওখানেই যখন খালেদা সম্পর্কে আমি বা আমরা কিছু বলি তখন তুমি সেটাকে ডিফেন্ড করতে আসো। এবং সেই ডিফেন্ডটা যখন ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বা না করার মত আধুনিক ধারণার মোড়কে আসে, তখনই সেটা খামোখা হয়ে যায়।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার নিজের অবস্থান কিংবা মনোভাব পরিষ্কার করাটা জরুরী। ভিন্ন সময় আপনি ভিন্ন ধরণের কথা বলছনে।
আপনি বললেইতো হয়ে গেলো না।
খালেদা-হাসিনা কেন? করিমন-নসিমনকে নিয়ে বলতে গেলেও আমি ডিফেন্ড করতাম। তবে সেটা খালদা-হাসিনা বা করিমন-নসিমনকে ডিফেন্ড করা নয়, তাদের কথা বলতে গিয়ে আপনি ব্যক্তি-স্বাধীনতার যে ভুল ব্যাখ্যা মনের ভিতর পোষণ করে আছেন সেটাকে ডিফেন্ড করা। খামোখা যুক্তি দেখিয়ে সেটাকে আড়াল করার চেষ্টা আপনি করতেই পারেন, কারণ সেটা করার স্বাধীনতা আপনার আছে।
@মইনুল রাজু,
আমার নিজের অবস্থান পরিষ্কার। আমি যেটুকু রিফ্রেজিং করেছি সেটা তোমার কারণে। কারণ, আমি যখন এরশাদের প্রসঙ্গ তুলেছিলাম তখন তুমি নৈতিক স্খলনের বিষয়টাকে নিয়ে এসেছিলে। দুই সন্তানের জননী হলেই কেউ স্বামী ছেড়ে অন্য কারো প্রেমে পড়তে পারবে না বা পড়লেই সেটা নৈতিক স্খলন হবে এমনতর আমি মনে করি না। যতক্ষণ না সেই তিনি দুটো সম্পর্ককেই সমান্তরালে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। খালেদার বিষয়ে আমার আপত্তির জায়গাটা ভিন্নতর।
ঠিক আছে, তবে তুমিই বলো। বলো, এরশাদের লুচ্চামির পক্ষে কী কী শক্ত প্রমাণ আছে তোমার কাছে?
এই বক্তব্যের স্বপক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো শক্ত প্রমাণ দেখতে পাই নি। কাজেই আমি কনভিন্সড নই।
আমি যখন এরশাদকে লুচ্চা বলেছি, তখন শক্ত কোনো প্রমাণ না থাকার পরেও ওটাকে তুমি মেনে নিয়েছো। প্রতিবাদ করো নি, যেভাবে করছো খালেদাকে নিয়ে।
সেটাকে এতো কষ্ট করে ডিফেন্ড না করে সহজ সরলভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতার সঠিক ব্যাখ্যাটা দাও। তোমার সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে আমার মনের ভিতরে পোষণ করা ভুল ব্যাখ্যাটাকে হটিয়ে দেবো।
আমি খামোখা যুক্তি দেখিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতার ভুল ব্যাখ্যা পোষণের চেষ্টাকে আড়াল করছি, খামোখাই এই অযৌক্তিক এবং ভ্রান্ত বক্তব্য দেবার স্বাধীনতাও তোমার রয়েছে।
@মইনুল রাজু,
গালির অশুদ্ধ বানান নিয়ে তোমার মন্তব্যটি বড্ড উপভোগ্য।:))
@ফরিদ আহমেদ,
সিরিয়াস আলোচনায় এ মন্তব্য পড়ে তো ভালই হাসতে হল।
@মইনুল রাজু,
জিয়া এবং খালেদা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থেকেও সেই ভূমিকা স্পষ্ট করতে পারেনি। এটুকুই যথেষ্ট।
@কাজী রহমান,
আপনার কি ধারণা, জিয়া ক্ষমতায় এসে সংবাদ সন্মেলন করে সবাইকে জানাবেন, উনার বউ কি কি করেছেন আর কি কি করেন নাই। আপনি আর আমিই এগুলো নিয়ে লাফালাফি করি, তাদের করার মত আরো অনেক কাজ আছে।
@মইনুল রাজু,
জিয়ার বউ যদি দেশের জন্য ধর্ষিতা হয়ে থাকে তা বলতে আপত্তি থাকবে কেন? আপনি কি আশা করেন এই কথাটা কানে কানে ফিস ফিস করে বলতে হবে? বেশ বেশ। আপনি তো দেখি মুক্তিযোদ্ধা আর ধর্ষিতা নারী ব্যাপারটার ভেতরেই নাই।
@লীনা রহমান,
আপনার এই বীরাঙ্গনা নিয়ে তাচ্ছিল্য করার শুনে আমারো খুব ছোটবেলার একটা স্মৃতি মনে আসলো। যতদূর মনে পড়ে, আমার মা কে, টিভিতে বীরাঙ্গনা শব্দটি শুনে, আমিও তাকে বীরাঙ্গনা বলে ডাকতে থাকি। আমি তখন ভেবেছি বীরাঙ্গনা মানে হলো যে বীর সন্তানের জন্ম দেয়েছে। এইজন্য আমার আরেক আত্নীয়া খুব বকতে লাগলো আমাকে। ছোট্ট আমায় মা সরিয়ে নিয়ে বললো, এটা কাউকে বলে ডেকো না। আমি তখন ক্লাস ৩ তে পড়ি। তাই তখন হয়তো কেউ বুঝিয়ে দেয় নি শব্দটির মানে।
পরে আপনার মত আমিও যখন ক্লাস ৬ এ পড়ি, সেই বছর দেশ এ ইলেকশন হলো। ক্লাসে একদিন এক শিক্ষার্থী ইলেকশনের সময় একটা লিফটলেট নিয়ে এলো। ওখানে খালেদা পাকিস্তান সেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার কিছু বানোয়াট ছবি ছিল। আমার কিছু সহপাঠী তা দেখে হাসছিল। ঐ দিন ক্লাসে ওটাই হয়তো ছিল আমার প্রথম রাজনৈতিক বিষয়ে তর্ক।
আরেক আলীফজানের কথা জেনে চোখ ভিজে আসে। (U)
অনেক ধন্যবাদ গীতা দি।
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ আলীফজানের কথা জানানোর জন্য। এবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে ১০ ডিসেম্বর ২০১১ নারীপক্ষ সিরাজগঞ্জ থেকে বীরাঙ্গনা রাজু বালাকে এনেছিল। তিনি ঐ অনুষ্ঠানে ৭১ এর অভিজ্ঞতা বলেছেন। পরে মুন্নী সাহা এ টি এন নিউজ রাত সাড়ে দশটায় রাজুবালা ও নারীপক্ষ’র সভানেত্রী সহ Live প্রোগ্রাম করেছে।