জাকির কিছুদিন হল নামায শুরু করেছে! সামনাসামনি বাহবার থুবড়ি ছোটালেও সবার মনেই বিরাট প্রশ্ন: ‘’কি হয়েছে জাকিরের? এমন কিছু ঘটেছে, যেটা আমরা জানি না?’’ সবাই যে যার মত এর উত্তর সন্ধানে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়লেও, জাকিরের কলিগরা জানে আসল ব্যাপারখানা! জাকিরকে প্রমোশনের জন্য ডেকেছে; আর সপ্তাহ বাদেই সে মাহেন্দ্রক্ষণ। এই প্রমোশনটা জাকিরের জন্য মহাগুরূত্বপূর্ণ- হয়ে গেলেই বাড়ি-গাড়ির এলাউন্স! বিশেষ করে ঝকঝকে-তকতকে একখানা গাড়ি- ভাবতেই জাকিরের শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ে! ছোটবেলায় গাড়ি নিয়ে সে কত খেলেছে আর ভেবেছে একদিন তার সত্যি সত্যি গাড়ি হবে! বার বার হাতছানি দেয়া সেই স্বপ্ন যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়, সে জন্য জাকির স্রষ্টাকে দুহাত তুলে আকুলভাবে ডাকতে থাকে! সবচেয়ে কষ্ট হয় ফজরের সময়! কি যে অসহ্য যন্ত্রণা! তবু প্রাণপণ চেষ্টা করে ফজরের নামাযটা যথাসময়ে আদায় করার জন্য! তবে শুধু নামায পড়েই দায়িত্ব শেষ করে না জাকির; নিয়ম করে বিভিন্ন সংখ্যায় বিভিন্ন সুরা-কেরাত-দোয়া পড়ে। আর যখন মোনাজাত ধরে, তার ঐ হাত যে কখন নামবে কারো পক্ষেই তা ঠাহর করা সম্ভব হয় না!
পুরো অফিসেই জাকিরের কদর বেড়ে গেছে বহুগুণ! অফিসের সবাই যেন আগের চেয়ে একটু বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জাকিরকে! যদিও কাদের নামে সম বয়সী ও সম পদমর্যাদার এক কলিগ এর ব্যতিক্রম। জাকিরের কানে এসেছে, কাদের নাকি অন্যদের বলেছে, ‘’প্রমোশন সামনে রেখে জাকিরের এই নামায আল্লাহর কাছে আদায় হবে না!’’ ‘আল্লাহর কাছে কি আদায় হবে আর হবে না, তা তুই বলার কে ? তুই কি আল্লাহর দূত ?’-জাকির মনে মনে রাগে গর্জাতে থাকে। তবে ওর নামায শুরুতে কাদেরের এই শ্লাঘার কারণ উপলব্ধি করতে পারে জাকির! কাদের হচ্ছে এই অফিসের সবচেয়ে রেগুলার নামাযী। কেউই এখন পর্যন্ত কাদেরকে নামায ছাড়তে দেখেনি। তাছাড়া, কাদের খুব ভদ্র ও শান্ত গোছের। কারো সাথে বিবাদে জড়ায় না। এজন্য পুরো অফিস জুড়েই কাদেরের একটি ‘ভাল-মানুষ’-সুলভ ইমেজ রয়েছে! কাদের হয়ত ভাবছে জাকির তার এই ইউনিক ইমেজে ভাগ বসাবে! তবে সুখের কথা হল, কাদেরের বিষোদগার অফিসের কারো সমর্থন পায়নি। বরং সবাই এখন কাদেরকে আগের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছে।
যাইহোক, অফিসের সবার এই অতিরিক্ত মনোযোগে খুশিতে গদ গদ হয় জাকিরের উৎসাহ বেড়ে যায় বহুগুণ। তার ঘড়ি যেন ওঁত পেতেই থাকে নামাযের সময়কে ধরার জন্য! সময় হলেই সে গুরুত্বপূর্ণ-গুরুত্বহীন সব কাজ ফেলে পড়িমরি করে ছুটে ওযুর উদ্দেশ্যে। ওযু করে ফিরতে ফিরতে সবাইকে নামাযের আহবান করতে থাকে (সে জানে দাওয়াতের এই কাজটি তার ইবাদতকে আরো বেশী ফলদায়ক করবে স্রষ্টার কাছে!)। কিন্তু দেখে, অনেকেই ‘হ্যাঁ’, ‘হু’ করে সাড়া দিলেও নামাযে আসছে না! জাকির এক নতুন ফন্দি আঁটে। অফিসে যদি জামাতের আয়োজন করা যায়, তা হলে সবাই বাধ্য হবে আসতে! বসের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে।
নামায পরার সিদ্ধান্তটা যে কতটা ইফেক্টিভ হয়েছে, তা আজ বুঝতে পারে জাকির। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই বসের প্রশংসা পায়। জাকিরের বস সিদ্দিক সাহেব পঞ্চাশোর্ধ শক্ত-সমর্থ লোক। সারা জীবন স্ত্রীর সকল সুমন্ত্রনা-সদুপদেশ উপেক্ষা করে চললেও, গত দু’বছর হল সে স্ত্রীর অনুরোধে নামাজ ধরেছে। ঘনিষ্ঠ বন্ধু সালামের ক্যান্সারে মৃত্যু যেন তার চোখ খুলে দিয়েছে! অনেক তো হল, এইবার শুরু করা উচিত। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন সে পুরোই রেগুলার। যাই হোক, নিজের চেম্বারে জাকিরকে দেখতে পেয়েই সিদ্দিক সাহেব বলতে থাকে, “জাকির, আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। দেখে নিও, নামায তোমার জীবনে স্থিরতা আনবে। এখন হচ্ছে তোমার সাধনার সময়। যদি লেগে থাক, অধ্যবসায় কর, তাহলে অনেক উপরে উঠবে। তোমার মত বয়সে আমরা তো শুধু আনন্দ-ফুর্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। সব সময় তক্কে তক্কে থাকতাম অফিস থেকে বেরুনোর। অফিস থেকে সরাসরি বন্ধুদের আড্ডায় চলে যেতাম। অনেক সময় কাটিয়েছি বারে। কোনদিন গভীর রাতের আগে বাড়ি ফিরতে পারতাম না। কিন্তু ঐসব করে জীবনটাকে ধ্বংস ফেলেছি। আজ আমার কোন কর্পোরেট হাউসের সিইউ থাকার কথা; অথচ দেখ, সামান্য ম্যানেজারের লেবেল লাগিয়েই চাকরি ছাড়তে হবে!’’ সিদ্দিক সাহবের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। একসময় মওকা বুঝে জাকির বসকে জামাতে নামায আয়োজনের কথাটা পাড়ে। বস অসম্ভব খুশি হয়, ‘’খুব ভাল প্রস্তাব। এতে অফিসের সবার ভিতর বন্ডেজ বাড়বে। ফলে টিম ওয়ার্কের মোটিভেশনও বাড়বে। তুমি ব্যবস্থা কর। আমি আছি তোমার সাথে।“
পরেরদিন সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে জাকির। জামাতের আয়োজন করতে গিয়ে অন্যান্য সব গৌণ কাজের ফাইলগুলো সরিয়ে রাখতে হয় ওকে। অফিস নোট করে সবাইকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেয় জাকির। এখন থেকে অফিসের কোন মেইল সদস্য যোহর আর আসর নামাযের সময় ডেস্কে থাকবে না। সবাই দল বেঁধে নামায পড়বে। তবে সমস্যা দেখা দিল, জামাতের সময় যদি কোন গেস্ট আসে, তখন তাদের কে এটেন্ড করবে তা নিয়ে। তবে সমাধানও বেরুল জাকিরের মাথা থেকে; সিদ্ধান্ত হল, মহিলা কলিগরা জামাতের সময় অফিসে আসা গেষ্টদের এটেন্ড করবে। আরো বড় সমস্যা দেখা দিল নামাযের জায়গা নিয়ে। জামাতে নামাযের জন্য বড় পরিসরের কোন জায়গা খুঁজে পাওয়া গেল না অফিসে। তখন জাকিরের মাথা থেকে আবার আইডিয়া বেরুল। গেষ্টদের বসার সোফাগুলো সাময়িকভাবে সরানোর সিদ্ধান্ত হল। জামাত তো মাত্র কয়েক মিনিট হবে। ঐ সময়টুকু গেষ্টরা না হয় দাঁড়িয়েই থাকবে! যোহরের সময় পুরো জায়গাটা জুড়ে বিছিয়ে দেয়া হল চটের জায়নামাজ।
যথাসময়ে নামাযের স্থলে গিয়ে জাকিরের চোখ তো ছানাবড়া। অন্যদিন হাজার ডেকেও যাদের আনা যায় না, আজ তারা এমনকি জাকিরের আগেই এসে হাজির! সব অফিস নোটের ডাইরেক্ট অ্যাকশান। বসের ব্যাড বুকে কেউ থাকতে চায় না- মনে মনে হাসে জাকির। কাদেরকেও দেখতে পায় কিছু দূরে। মুখ কাঁচুমাচু করে রেখেছে। কারণটা সহজেই অনুমেয়। কাদেরের এই মুখভঙ্গি দারুণভাবে উপভোগ করে জাকির। কিছুক্ষণ বাদেই সিদ্দিক সাহেব এসে হাজির হয়। জাকিরকে দেখতে পেয়েই মুখমণ্ডল প্রসারিত হয় তার, “সত্যি, জাকির তোমার ভিতরে স্ট্রং লিডারশীপ কোয়ালিটি রয়েছে! তুমি অনেক উপরে উঠবে!’’ জাকির বলে, ‘’স্যার, আপনি ইমামের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ান। নামাযের সময় প্রায় হয়ে এসেছে।‘’ সিদ্দিক সাহেব জিহবায় কামড় দেয়, ‘’মাত্র দু’বছর হল নামায ধরেছি। সারা জীবন যে কত পাপ করেছি, তার কোন ঠিক নেই। তুমি বরং ইমামতিত্ব কর; আজকের জামাতের কৃতিত্ব তো তোমারই!’’ অগত্যা জাকিরকে ইমাম হতে হয়; মুখে মৃদু বিব্রত হওয়ার ভান করলেও জাকির খুশিতে ডগমগ হয়। বসকে পিছনে রেখে পুরো অফিসের সবার ইমামতিত্ব করছে সে; যতবারই ভাবছে বিগলিত হচ্ছে মন, সাথে সাথে কণ্ঠও। সুরার সুর হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকের যে ধীর এবং ভাঙ্গা-ভাঙ্গা। জাকির প্রাণপণ চেষ্টা করেও সুরের বিকৃতি রোধ করতে পারছে না।
পরেরদিন সকালে জাকির অফিসে বসে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর চর্বিত-চর্বণ করছিল। অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে মন, গাড়ির স্বপ্নকে এখন আর দূরবর্তী বলে মনে হচ্ছে না। সিদ্দিক স্যার ওকে হাইয়েস্ট মার্কস দেবেন নিশ্চিত! সুখানুভূতিতে নয়নটা প্রায় মুদে আসছিল, এমন সময় ডাক পড়ে বসের। রুমে যেয়ে দেখে আরও কিছু সিনিয়র কলিগ সেখানে অবস্থান করছে। জাকিরকে দেখতে পেয়েই সিদ্দিক সাহেব খুশী হল, “শোন, তোমাকে একটা কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামীকাল এমডি স্যার আসছেন। এমনিতে উনাকে কয়েকবার আসতে বলেছি। কিন্তু ব্যস্ত থাকার কারণে আসতে পারেন না। আগামীকাল শুক্রবার উনি আমাদের অফিসের সামনে দিয়ে যাবেন একটা প্রোগ্রাম এটেন্ড করতে! তো স্যার বলেছেন, তিনি আমাদের অফিসটা একবার ঘুরে যাবেন। তোমার লিডারশীপ স্কিল বিবেচনা করে স্যারকে এসকোর্ট করার মূল দায়িত্ব তোমাকেই দেয়া হচ্ছে!’’ জাকির মুখে সিরিয়াস হওয়ার ভান করলেও ভিতরে ভিতরে উল্লাসে ফেটে পড়ছে! ছুটির দিনটা মাটি হবে, এটা ঠিক। কিন্তু এমডি স্যারকে কাছে পাওয়া বা তাকে সামলানোর মূল দায়িত্ব হাতে পাওয়া- এ তো মেঘ না চাইতে শুধু জল নয়, বরং বৃষ্টির অবিরাম ধারায় সিক্ত হতে চলেছে সে!
শুক্রবার সকাল। ফিটফাট কেতা দুরস্ত পোষাকে জাকিরকে পুরো সাহেব সাহেব লাগছে। অন্য সবাইও মোটামুটি ফরমাল ড্রেসে এসেছে। শুধু কাদের নীল কাজ করা ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরে এসেছে। এ ধরনের পোশাকে আসার জন্য বসের কাছে ইতিমধ্যে বকুনিও খেয়েছে। কাদের অবশ্য মৃদু প্রতিবাদ জানিয়েছিল, ‘ছুটির দিনে ইনফর্মাল পোশাক পড়লে কি এমন ক্ষতি?’ কিন্তু স্যারের তোপের মুখে তা ধোপে টিকেনি। যা হোক, যথাসময়ে এমডি স্যার এসে হাজির হলেন। গাড়ি থেকে নামতেই জাকির লম্বা সালাম দিয়ে লম্বা দেহটাকে নিয়ে এমডি স্যারের দিকে অনেকখানি ঝুঁকে পড়ে। এরপর করমর্দন পর্ব চলে। দারোয়ানকে গেট থেক আগেই সরিয়ে দিয়েছে। জাকিরকে আজ পার্টটাইম দারোয়ানের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু দারোয়ানের কাজে অনভ্যস্ত টেনশান করতে থাকে কিভাবে স্যারকে সর্বোচ্চ সন্মান দিয়ে গেট দিয়ে ঢুকানো যায়! স্যার যেহেতু হাঁটতে পারে, সেহেতু স্যারকে তো ধরে উঠানোর কোন সুযোগ নেই। তাই আর কোন উপায় না দেখে স্যারের হাত থেকে ছোট ডায়েরিটা অনেকটা জোর করেই ছিনিয়ে নেয়। জাকির থাকতে স্যারকে ডায়েরি বহন করতে দেয়ার মানেই হয় না! এরপর আশে-পাশের কলিগদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে স্যারকে নিয়ে সে উপরে উঠতে থাকে। এ সময় স্যার জাকিরকে টুকটাক প্রশ্ন করে। যেমন, নাম কি, কি কাজ কর ইত্যাদি। জাকির জানে, সময় বার বার আসে না। নিজের সম্পর্কে যতটা বাড়িয়ে বলা যায় বলতে থাকে। ওকে ছাড়া যে এই অফিস মুহূর্তেই অচল হয়ে যাবে, তা জানাতে ভুলে না সে। কত কিছু যে তাকে এক হাতে সামলাতে হয়, তার ছোট্র একটি ফিরিস্তি (যা আগেই যত্ন করে বানিয়ে রেখেছিল এবং কয়েকবার রিহার্সেলও করেছিল) দিয়ে দেয় ঐ সময়ের মধ্যেই। এরপর স্যারকে সিদ্দিক সাহেবের রুমে নিয়ে যায়।
সিদ্দিক সাহেব আর স্যারের কথার ফাঁকে স্যারদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জাকির! স্যারদের চা-নাস্তা সে নিজেই বহন করবে। এমডির সামনে টি বয়দের অন্তত নেয়া যায় না! এসময় হঠাৎ কাদের এসে বলে, ‘জাকির ভাই, জুমার নামাযের সময় হয়ে গেছে। নামায পড়তে যাবেন না?‘ ভুত দেখার ভঙ্গিতে জাকির উত্তর দেয়, ‘’স্যার যে কথাটা বলে, ঠিকই বলে, আপনার কমন সেন্স বলে আসলেই কিছু নেই! স্যারদের ফেলে রেখে আমরা যাব নামায পড়তে?” কাদের স্তম্ভিত হয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে! সর্বশেষ কবে জুমার নামায মিস হয়েছে, তা মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হ্য় সে! প্রাণটা ফেটে যায়, তবু কোন প্রতিবাদ করে না। ‘খোদাই বিচার করবে!’ এই ভেবে সে নিশ্চুপ হয়ে যায়! ওদিকে জাকির ট্রে নিয়ে স্যারদের রুমে ঢুকে। স্যারদের জন্য কাপে চা ঢালতে থাকে! এরপর অনেকটা রুকু করার ভঙ্গিতে শরীরটাকে সামনের দিকে অনেকখানি নুইয়ে এমডি স্যারের হাতে কাপটি তুলে দেয়! এরপর স্যারদের সামনে পরবর্তী নির্দেশের জন্য দুহাত বেধে অতিশয় ভক্তিভরে দাঁড়িয়ে থাকে। স্যারদের মধ্যে অফিসের নানা ভাল-মন্দ নিয়ে কথা চলতে থাকে। অফিসের টার্গেট মনে করিয়ে দিয়ে এক সময় এমডি স্যার বিদায় নেয়ার কথা বলেন। উনাকে একটা বিয়ের প্রোগ্রাম এটেন্ড করতে হবে। এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে। স্যারের বিদায় পর্ব সাফল্যের সাথে সমাধা করার জন্য ব্যগ্র হয়ে পড়ে জাকির। সবশেষে, যখন স্যারকে গাড়িতে উঠিয়ে দিতে যাবে, তখন হঠাৎ করেই স্যারের পায়ের ধুলো নেয়ার ঝোক মাথায় চেপে বসে জাকিরের। এ বিষয়টা ওর মাথায় ছিল না। তাই রিহার্সেলও করেনি। কিন্তু সময় বার বার আসে না। তাই ইচ্ছেকে অপূর্ণ রাখে না সে। পদধুলি নেয়ার সময় জাকিরের সারা শরীরটা অনেকটা সিজদার মতই এমডির পায়ের উপর লুটিয়ে পড়ে!
ঘড়িতে তখন দুটো বেজে তিরিশ মিনিট। এমডি স্যারের গাড়ির চাকা চলতে শুরু করেছে। ওদিকে নামাযের অন্তিম লগ্ন চলছে! কিন্তু জাকিরের সেদিকে খেয়াল নেই। ধ্যানমগ্ন নামাজির কিবলা দর্শনের মতই একদৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে সে পথের দিকে যে পথ দিয়ে এমডি স্যারের গাড়ি আস্তে আস্তে বিলীন হচ্ছে বিশ্বরোডের বিশাল যানসমুদ্রে!
সুন্দর বক্তব্যধর্মী গল্প।
আপনার কাহিনী টা তো বেশ ভালই লাগল।
ধন্যবাদ।
আমি কিছু ভিন্ন বিষয় যোগ করতে চাচ্ছি।
ঈশ্বরের (সৃষ্টিকর্তা/আল্লাহ) কাছে বিপদে সাহায্য চাইলে ঈশ্বর/আল্লাহ সাড়া দিয়া থাকেন।
আজ সকাল ৭:৩০ বিবিসি বাংলার প্রত্যুষার অনুষ্ঠানটি আন্তরজালে এখনি যে কেহ শুনিয়া দেখিতে পারেন। ঘটনাটি মোয়াজ্জেম হোসেনের বর্নণায় নিম্নরুপ।
“প্রায় ৫ মাস পূর্বে নরওয়ের অটোয়া দ্বীপে এনেস বেরিং রেবিক নামে এক তরুন অস্ত্রের দ্বারা হামলা চালিয়ে প্রায় ৭০ জন লোককে নিহত করেন। এই বিপদ সংকুল অবস্থায় মারথা এলিয়াছ নামক এক তরুনী অন্যান্যদের মতই নিকটবর্তী পানির মধ্যে দৌড়িয়া গেলেন । সেখানে তার উপরে একটি গাছের ডাল দেখতে পেলেন। তিনি ঈশ্বর ও যিশুর নিকট তার প্রান রক্ষার জন্য আবেদন করিতে থাকিলেন।
হঠাৎ তাহার মনে হইল গাছের ডালটি একটা হৃদপিন্ডের আকৃতি ধারন করিয়া তাকে বলিল ভয় করিওনা। সে রক্ষা পেয়ে গিয়েছিল।
বেরিক লিছবেক নামে এক মহিলার ১৮ বছর বয়সের একটি মেয়ে এই আক্রমনে মারা যায়। এতে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত ও হতাসা গ্রস্থ হইয়া তার এপারটমেন্টে নিঃসংগ দুঃখের জীবন যাপন করতেছিলেন।
তিনি নাস্তিক ছিলেন। সমাজে কেহই তাহাকে সামান্যম সান্তনা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে নাই।
কিন্তু এ সময় একমাত্র চার্চের লোকেরাই তাকে সান্তনা দিতে এগিয়ে আসে।
এরপর থেকে তিনি নিয়মিত চার্চে যাতায়াত করতেছেন এবং অজস্র লোকের ভীড়ের ভিতরে অত্যন্ত শান্তি অনুভব করিতেছেন।“ (উদ্ধৃতি শেষ)।
ধর্ম এভাবে মানুষকে সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করায়ও। আর বসবাস করার জন্য একটা সমাজেরও তো দরকার হয়।
ধন্যবাদ
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান মতামতের জন্য! তবে এ গল্পে ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলা হয়েছে কি?
আবারও ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন!
আমার দেখা কয়েকটি অফিসের বৈশিষ্ট্যই মনে করিয়ে দিল। যেমনঃ মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে সিভিল সার্জন তার বসার রুমটি এখন নামাজের ঘর। উনি দোতালায় আরেকটা ঘর দখল করেছিলেন ২০০৫ সালে। পরে গাজীপুরে বদলি হয়ে গিয়ে মিটিং রুমটিকে বানিয়েছিলেন নামাজ ঘর। দুটো জেলায়ই অফিসের অন্যান্য স্টাফদের বসার জায়গার সমস্যা নিয়ে উনি মাথা ঘামাননি।
নারীরা এ বন্ডেজের বাইরে।
বিভিন্ন অফিসে নারী স্টাফ বাবহারের নমুনা।
আর প্রমোসন হয় জাকিরদের নয় কাদেরদের। নামাজের সাথে সম্পর্কিতদের।
বাস্তবতার প্রতিফলন গল্পটি ভাল লেগেছে।
@গীতা দাস,
আরো অনেক নমুনা রয়েছে। আসল উপাস্য দেবতাদের স্বরূপ সন্ধানে তাই এদিকে খুব বেশী অগ্রসর হইনি। সামনে ইচ্ছে রয়েছে!
গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!
গল্পটা ভালই লাগলো। অনেক অভিজ্ঞতার মতো নামাযের অভিজ্ঞতাও আমার হয়েছে। নামাযের বাস্তবতা ঠিক এমনি যে নামায পড়বো শুধু বস দের কাছে ভাল থাকার জন্য যা আমি আমার অফিসেই আমি টের পাই। ভাবতে অবাক লাগে। আসলে আমাদের দেশে কি মুসলিম কেউ আছে??? সবই তো ভন্ডদের মধ্যেই পড়ে।
@রঞ্জন বর্মন,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে! আমাদের অনেক সামাজিক কর্মকান্ডে অনেক সময়ই ধরা যায় না, আসল ঈশ্বর কে? এরই একটা চিত্র দেখানোর চেষ্টা আছে গল্পটিতে!
@কাজি মামুন,
আসল কথাটা হচ্ছে প্রকৃত ঈশ্বরকে, তাকে ঈশ্বর ভক্তরা ঠিকই বুঝেন। কিন্তু লাভ নেই তাদের এই ভন্ডামিতে। বরং তারা নিজের সাথে সকলের ক্ষতি করতেছে উপরে একটা লেবাস পড়ে।
@রঞ্জন বর্মন,
আদৌ বোঝেন? নাকি সংশয়ে ভোগেন? আর নিজেদের দোদূল্যমনতার কারণে পুরো সংসারেই অস্থিরতার ছাপ রেখে যান না কি?
@কাজি মামুন,
প্রতারকের কাছে ঈশ্বর অস্ত্র, দুর্বলদের কাছে প্রভু।
দারুন লেখা। তবে কিছু টাইপো আছে। সেগুলো ঠিক করে নিলে ভালো হয়। যেমনঃ
পরেরদিন সকালে জাকির অফিসে বসে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর চর্বিত-চর্বণ করছিল
এই লাইনে শুরু করা প্যারাটি দু’বার চলে এসেছে। এছাড়া ভুত দেখার ভঙ্গিতে কাদের উত্তর দেয় এখানে কাদেরের জায়গায় জাকির হবে।
@অ বিষ শ্বাসী,
তাড়াহুড়ো করে লিখতে যেয়ে এমন অনেক ভুল হয়েছে। সামান্য ঠিক করার চেষ্টা করেছি!
মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য, ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য এবং উৎসাহ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞ!
খুব ভালো হয়েছে লেখাটা।
এই ছবিটা কি ভাবে অনেক মানুষের সাথে শেয়ার করা যায় সেই পদ্ধতিটা বের করতে হবে, কি বলেন? :-s
@কাজী রহমান,
অনেক ধন্যবাদ! আপনাদের উৎসাহ পেলে সামনে আরও ভাল লিখতে পারব বলে আশা করি!
এ কথার মানে বুঝলাম না!
@কাজি মামুন,
ছবিটা মানে লেখাটা কিভাবে অনেকের সাথে শেয়ার করা যায় তাই বলেছি। সাধারন পাঠকদের জন্য লেখার ধরনটা বেশ পছন্দ হয়েছে। এতে বেশ একটা পদ্ধতিগত প্রয়োগের ব্যাপার রয়েছে। এটার গভীরে যেতে পাঠকরা আগ্রহী হবে বলে মনে হয় এবং ভন্ডামির পুরো ছবিটাও অনায়াসে দেখতে পাবে বলে আমার ধারণা।
মানুষের কাছে তাদের মনে কার্যকর ভাবে আলো পৌঁছানোটাই বড় কথা। তা না হলে কঠিন সব যুক্তি প্রমান দিয়ে কি হবে?
ভালো লিখেছেন। (Y)
@কাজী রহমান,
সেক্ষেত্রে ভন্ড উপাসক ও উপাস্য- উভয়ের হাতে মার খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা!
বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন!
“প্রমোশন হয়েছে তবে জাকিরের না কাদের না। ”
প্রমোশন হয়েছে তবে জাকিরের না, কাদের এর। ” – হবে
গল্পের যে অংশ ভুল-বশ্ত ছাপা হয়নিঃ
দুদিন বাদেই অফিসে এসে জাকির যা শুনল নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পাড়ল না। প্রমোশন হয়েছে তবে জাকিরের না কাদের না। কাদের এর এটা স্পেশাল প্রমোশন,ওর প্রমোশন এখনো ডিউ ই হয়নি তাও হয়েছে। বস এর রুমে কাজের অজুহাতে গিয়ে কিছু বলেন কিনা বোঝার চেষ্টা করলো জাকির ,বসের গম্ভির মুখ দেখে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেল না।পরে অফিসের কানা-ঘুসায় যা বুঝল তাঁর সারমর্ম এই যে, শুক্রবারে এম,ডি সাহেব কাদের এর পাঞ্জাবী পড়া নুরানী চেহারা দেখে যারপর নাই খুশী হয়েছেন। দিবস অনুযায়ি পোশাক পড়াটা আজকাল তরুন্দের মাঝে নেই বললেই চলে তাও জা তা নয় শুক্রবার বলে কথা। নামাজ না পড়লেও নামাজির সাথে চললে সউয়াব হয়, আর প্রমোশন দিলে কি হবে তা মাপ জখ করা ই অসম্ভব । পায়ের ধুলা র চেয়েও পাঞ্জাবীর কদর বেশী এটা ত কোন মুরুব্বি কখনো বলেছে বলে জাকির এর মনে পড়ল না। এরপর জাকির প্রতি শুক্রবার পাঞ্জাবীর সাথে মাথায় পাগড়ী বাধাও শুরু করলো , বলা বাহুল্য থুঁতনিতে এক গুচ্ছ দাড়ি সহ।
@সপ্তক,
হাঃ হাঃ… গল্পটা যেমন মজার, কমেন্টটাও তেমন মজার!
@নির্মিতব্য,
অনেক ধন্যবাদ!
গল্প ও কমেন্ট- দুটোই যেহেতু মজার লেগেছে, তাই তার পেছনে নিশ্চয়ই মজার কোন কারণ আছে; যদি শেয়ার করতেন, খুব ভাল লাগত!
@কাজি মামুন,
না, সেরকম কিছু আমার এক্ষুণি মনে পরছে না। কিন্তু একটা জিনিস খুব মজার লাগে, এই যেমন ধরুন ফেসবুকে কিছু মানুষ আছে যারা দিনে অন্তত একবার কোরানের আয়াত, হাদিস, ধর্মিয় উপদেশ না দিয়ে বেহেস্ত নিশ্চিত করতে পারেন না, তাদের ফেসবুক স্টেটাস দেখলেই আমি আমার বন্ধুদের বলি, এরা দিনে ৬ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে; ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও “আস্সালাতুন ফেসবুকুন।”
@সপ্তক,
হঠাৎ করে নামাজি বনে যাওয়া জাকির শুক্রবারের গুরুত্বপূর্ণ নামায মিস করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি সে নামায মিস করে? অন্তত জাকির যে নামায পড়ে, তা কি মিস হয়েছে? নামাযের যেমন শ্রেনীভাগ রয়েছে, তেমনি রয়েছে উপাস্য দেবতাদেরও। আশা করি, বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলতে চেয়েছি!
কষ্ট করে গল্পটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ! আর আপনার জুড়ে দেয়া অবশিষ্টাংশটুকু আমার কিন্তু ভালই লেগেছে, যদিও তা আর এক গল্প!
@কাজি মামুন,
“হঠাৎ করে নামাজি বনে যাওয়া জাকির শুক্রবারের গুরুত্বপূর্ণ নামায মিস করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি সে নামায মিস করে?”
না আসলেই নামাজ মিস করে না। নামাজ এর প্রতি যদি তাঁর দরদ থাকত তাহলে কদমবুসির বদলে নামাজ ই পড়তে যেত। আসলে ধর্মীও রীতিগুলো শুধু কিছু প্রাপ্তির আশায় তা নয় লোক দেখানোটাও একটা ব্যপার। পাঞ্জাবী/দাড়ি/টুপি/পাগড়ী এগুলো দিয়ে আমরা প্রমান করতে চাই আমি সৎ , আমি ভাল , যদিও আমি ব্যক্তিজীবনে অনেক দেখেছি অফিসে জোহর এর নামাজ পড়ার জন্য হুড়াহুড়ি পড়ে যায়,আবার নামাজ শেষে ঘুষ নেয়ার জন্যেও হুড়াহুড়ি পড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে শুধু নামাজ এ মোকা না মিললে মানুষ রোজা রাখে,হজ করে…এখানে আমি জাকির কে পাগড়ি পড়ানর চেষ্টা করেছি আপনার অনুমতি না নিয়েই।মন্তব্য বলে কথা… অনধিকার চর্চা আর কি 🙂
@সপ্তক,
এটাতো পাঠকদের সার্বজনীন অধিকার যে তারা নিজের মত করে একটা উপসংহার দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে! আর আগেও বলেছি, আপনার উপসংহারটি খারাপ লাগেনি যদিও তা আরেক গল্প!
@সপ্তক,
পরে এম. ডি চিন্তা করলেন যে ছেলেটা ভাল, প্রভুভক্ত, একেই প্রমশান দেওয়া যায়, তারপর থেকে জাকির কে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এভাবেই সে বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে ক্রমশ পদন্নতি পেতে থাকল। কাদের বেচারা ধর্মটাকে ব্যবহার করতে পারে নাই। মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া বিশ্বাসটাকে লালন করে আর ” আল্লা বিচার করবে ” এই আশাই কয়েক বছর পার করানর পর এক সময় আবিস্কার করল জাকির তার বস এবং সে জাকিরের হুকুম পালনে ব্যাস্ত।
@কামরুল আলম,
দারুন! (Y)