লিখেছেনঃ কিশোর বিশ্বাস
[মুখবন্ধ: প্রবন্ধের নামটায় আপত্তির একটু গন্ধ রয়েই গেলো। হয়তবা এমন করে উস্কে দিতেই সন্দিহান নাসিকায় কিছু একটা ধরা পড়বে। তবুও আমার মনে হয়েছে আলোচ্য প্রবন্ধের বিষয়বস্তুর সাথে এই নামকরণই সবচেয়ে মানানসই। পুরো ব্যাপারটার উপর পাঠককুলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে যা বোধগম্য কারণে অনুমেয়। বস্তুত আধুনিক বাংলা ভাষায় “মাল” শব্দটির বিচিত্র, বহুবিধ অর্থ, ব্যবহার আর প্রাসঙ্গিক কিছু কথা নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে পাঠকদের মাঝে একটু অন্যরকম রসমালাই বিলনোর কিঞ্চিত দুষ্ট অভিপ্রায় থেকে এই রচনার বুৎপত্তি। আশা করব সবাই কৌতুক-ছলে হেসে খেলে লেখাটা পাঠ করার চেষ্টা করবেন। আর পাঠ অন্তে কারো কাছে তা সুখপাঠ্য বিবেচিত হলে কিংবা নিদেনপক্ষে লেখককেই একখান মাল বলে বিশেষায়িত না করলে লেখাটি সার্থক হলেও হতে পারে বলে ধরে নেব।]
সংস্কৃত “মল” ধাতুর সাথে ‘অ’ প্রত্যয় যোগে “মাল” শব্দটির আবির্ভাব যার একাধিক আভিধানিক অর্থ রয়েছে । যেমন: পণ্যদ্রব্য, ধনসম্পদ, কুস্তিগির, সাপের ওঝা, মদ-সুরা, খাজনা, মালা ইত্যাদি [১,২] । সঙ্গীতে “মালকোষ” নামে একটি রাগ-ও পাওয়া যাবে। তবে অধুনা কথ্য বাংলা ভাষায় “মাল” একটি চমকপ্রদ শব্দ যার অর্থ ও প্রয়োগ ততোধিক ব্যাপক। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে “মাল” হতে পারে অর্থ-সম্পদ, জিনিস-পত্র, মদ-মাদক, বিতর্কিত/অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব (আজব চিজ বা আজীব), আবেদনীয় নারী/পুরুষ এবং আপত্তিকর কিছু অর্থ! শব্দটা নর-নারীর বিশেষণ হিসেবে অবমাননাকর হলেও দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহার আমরা অহরহই দেখি। উল্লেখ্য, এখানে কোন লিঙ্গের প্রতি তাচ্ছিল্য করার অভিপ্রায় আমার একেবারেই শূন্য। তবে প্রসঙ্গক্রমে নানাভাবে শব্দটির ব্যবহার, বিশ্লেষণ চলে আসবে যা ভালো, মন্দ নির্বিশেষে বস্তুনিষ্ঠ বিবরণের অংশ-মাত্র । এ লেখায় “মাল কাহাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কী কী? “–তা উদাহরণ সহকারে পুরোপুরি বুঝিয়ে দিতে না পারলেও চেষ্টা থাকবে বিভিন্ন বাস্তব ঘটনা থেকে পাঠককে এই বৈচিত্র্যময় মালের মাল্য-গাঁথা উপহার দিতে । আজকের পর্বে আলোকপাত করব মদ (Alcoholic drink) নামক মালটি নিয়ে।
ঘটনাটার উদ্ভব একটা অঘটন থেকে। আমাদের অঘটন-ঘটন পটীয়সী এক “ঘটক- ভাই” প্রবাসে এক সৌজন্য-ভোজে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ছিলেন তার সহপাঠী, সহকর্মী নানা দেশী-বিদেশী। তো, ভোজ শুরুর আগে স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী সবাই সবার মদের পেয়ালা উঁচু করে “ভোজ সম্ভাষণ” (toast) জানিয়ে যাচ্ছে। কথা হল, সবাইকে নিজের ভাষায় তা বলতে হবে। ইংরেজিতে “cheers” বা “bottom’s up” , তা তো সবারই জানা। চীনারা বলল “কান পেই”, জাপানিজরা বলে “খোং পে”, কোরিয়ানরা “গোম বে” ইত্যাদি [৩] । এবার আমাদের বঙ্গ-পুঙ্গব ঘটক ভাইয়ের পালা। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তার কুঞ্চিত ভ্রু দিয়ে মস্তিষ্কের সব বাংলা অভিধান হাতড়িয়েও তিনি “cheers” শব্দটির যুতসই কোন বাংলা বুলি খুঁজে পেলেন না। উনি মদ-মোদী লোক সমুখে কি করে বলেন যে আমাদের মদ-অচ্ছুৎ সমাজে এসব শব্দের কোন বালাই নেই। শব্দহীনতার এই লজ্জা নিঃশব্দে তিনি কিভাবে মাথা পেতে নেন? তাই তিনি ভাবলেন, যে ক্রিয়াটি তারা করছেন তার মূলে রয়েছে মদ তথা “মাল”। আর তাকেই পেয়ালায় পুরে বাড়ি দিয়ে যত বাড়াবাড়ি। অতএব তিনি ঘোষণা দিলেন, “Cheers” কে বাংলায় আমরা বলি “মালে বাড়ি”। বাংলাভাষায় এই অভিনব শব্দটি আবিষ্কার করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, অনেক বিদেশিকেও শব্দটি শিখিয়ে ছেড়েছেন। এই তিনিই আমাদেরকে সময় সুযোগ পেলে উপরোক্ত মাল সম্পর্কিত জ্ঞান দান করতেন।
সেই ছেলেবেলা থেকে মদকে শুধু মানবকুলের ষড়রিপুর (কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য) অন্যতম হিসাবে জেনে এসেছি । তবে আমাদের সমাজে মদ কেন যে এত ঘৃণ্য বস্তু তা নিয়ে কৌতূহলের কমতি ছিল না আমার কখনো । “মদ পান করলেই মদ্যপ টাল-মাতাল হয় আর অবধারিত ভাবেই সে অসামাজিক কাজ করে”—মূলত এই বদ্ধমূল ধারনা থেকে আলোচ্য মালের প্রতি এহেন নিষেধাজ্ঞা । এক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসনও একটি বড় ব্যাপার। তাছাড়া এ নিয়ে একটা চীনা কথা প্রচলিত আছে যা উপরিউক্ত ধারণার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। তা হল “চিও হোও লোয়ান সিং” (酒后乱性 / jiǔ hòu luàn xìng)-অর্থাৎ মদের পর অবাধ কাম। আমাদের দেশ ছাড়াও পৃথিবী জুড়ে বেশ কয়টি দেশে/অঞ্চলে সরকারীভাবে মদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তার মধ্যে আফগানিস্তান, ব্রুনেই, ভারতের গুজরাট, নাগা-ল্যান্ড, মিজোরাম, ইরান, কুয়েত, লিবিয়া, সৌদি আরব, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সারজা, ইয়েমেন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য [৪, ৫]। এমনকি “মদুন্নত” দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও ১৯১৯ সাল থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত মদ নিষিদ্ধ ছিল। আবার এই মাল-নিষিদ্ধকরণের ঘটনা ইতিহাসে প্রথম ঘটে মালের বর্তমান স্বর্গরাজ্য চীনে, সিয়া রাজবংশের আমলে [৫] (Xia Dynasty, খৃষ্টপূর্ব ২০৭০-খৃষ্টপূর্ব ১৬০০) ।তবে আমাদের অভিজ্ঞতায় যা বলে তা হল, যে মাল যত বেশি নিষিদ্ধ তার উপর তত বেশি আকর্ষণ । কৌতূহল মেটাতে সুযোগ সন্ধানী মন তাই কখনো-সখনো কি একটু বেপরোয়াও হয় না? হয় হয়ত। কিন্তু কী এমন আছে এই দুর্নিবার গন্দমে? কী-ই বা তার রহস্য?
ঐতিহাসিক দলিল থেকে জানা যায়, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মদের ইতিহাস মানব সভ্যতার কৃষি-শিল্পের মতই কয়েক হাজার বছরের পুরানো। খৃস্টপূর্ব ৮০০০ সাল থেকে ৬০০০ সাল সময়টাতে প্রাচীন জর্জিয়া, ইরান, আর্মেনিয়া অঞ্চলে প্রথম মদ উৎপাদনের প্রমাণ মেলে [৬]। আদি গ্রীস(ম্যাসিডোনিয়া), মিশর এবং চীন দেশেও এই মাল বেশ শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে। তখন মদ ছিল মূলত দ্রাক্ষারস বা প্রক্রিয়াজাত আঙ্গুর ফলের নির্যাস। এখনও, আঙ্গুর সহ অন্যান্য ফল, চাল, গম, ভুট্টা, দুধ, মধু, বিভিন্ন গাছ-গাছড়া প্রভৃতির ভিতর শর্করা বা চিনির যে অংশ থাকে তাকে “ঈস্ট” (Yeast, একধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুঁইফোড় ছত্রাক) দিয়ে চোলাই করে বা গেঁজিয়ে এলকোহলে রূপান্তর করাই মদ-উৎপাদনের মূলনীতি [৭]। যেমন: আঙ্গুর ফলের ৮০% ভাগ জল আর ২০% চিনি যা ঐ ভুঁইফোড় ঈস্ট লেলিয়ে “সাইজ” করলে জল, এলকো ও আঙ্গুরের একধরনের সুগন্ধদ্রব্যে সংশ্লেষিত হয়। এরসাথে আরও কিছু উপাদান বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে তৈরি হয় নানা কিসিমের মাল। এক-গ্লাস ৪ ওজনের সাধারণ মদে (a glass of 4oz wine) যেসব উপাদান থাকে তা মোটামুটিভাবে এরকম [৭] – ১) জল ২৫০ গ্রাম, ২) ইথাইল এলকোহল ২৫ গ্রাম, ৩) গ্লিসারিন ৩ গ্রাম, ৪) পেকটিন ১ গ্রাম, ৫) এসিড ১ গ্রাম, ৬) পলি-ফেনল ৫০০ গ্রাম এবং অন্যান্য সুগন্ধ দ্রব্য। দুনিয়া-ভর ছড়িয়ে আছে হাজার রকমের মাল যাদের সুনির্দিষ্ট শ্রেণীবিন্যাস বা রকমভেদ করা একটু কষ্টকর। তবে মদে এলকোর মাত্রানুযায়ী মাল সমাজকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায় [৮]। নিম্ন মাত্রার (মোটামুটি ভাবে ২০ থেকে ৩৮ মাত্রার), মধ্য মাত্রার (৪১ থেকে ৫০ মাত্রার) ও উচ্চ মাত্রার (৫৪ থেকে ৬৫ মাত্রার) মাল। এছাড়া ২০ মাত্রার নিচে অনেক এলকো-পানিয় আছে , প্রকৃষ্ট মাল-খোরদের কাছে যা নাকি মাল নামের কলঙ্ক বা “মাল স্কয়ার” {মাল২ = মালদের* মাল (MAL*= Most Attractive Lady, যা নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হতে পারে)} । মাল-মাত্রার এই হিসাবটা হল: ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০০ মিলিলিটার মালে ৫০ মিলি এলকোহল থাকলে তাকে বলে ৫০ মাত্রার মাল। তবে মালের ধর্ম বা গুনাগুণের উপর ভিত্তি করে পণ্ডিতেরা মূল শ্রেণীবিন্যাসটা করে থাকেন যা-ও আবার তিনভাগে বিভক্ত: ১) গাঁজানো মদ (Fermented Liquors)- যেমন: দ্রাক্ষা মদ (Grape Wine), বিয়ার (Beer), তাড়ি, পান্তা মদ (Rice Wine, গ্রামবাংলায় অনেকেই পান্তা ভাত বেশ কিছুদিনের বাসি করে বা পচিয়ে খেতে পছন্দ করেন), আপেল মদ (Cider Wine/Applejack) ইত্যাদি; ২) পাতিত মদ (Spirituous Liquors/Distilled Liquors)- যেমন: হুইস্কি (Whisky), ব্রান্ডি (Brandy), ভদকা (Vodka), রাম (Rum), টাকিলা (Tequila), চীনা সাদা মদ (White Wine) ইত্যাদি; ৩) পরিশোধিত মিশ্র মদ (Refined & comprehensive drinks)-যেমন: জিন (Gin), লিকার (liqueur), ভেরমাউথ( Vermouth), বিটার (Bitter) প্রভৃতি। এখানে বিভিন্ন গোত্রের সুপরিচিত কিছু মদের প্রচলিত ইংরেজি নাম ও তাদের সম্ভাব্য বাংলা অনুবাদের একটি ছোট্ট তালিকা (১ নং ছক দ্রষ্টব্য) [৯,১০] এবং মদ-বোতলের একটি আলোকচিত্র দেওয়া হল [৯] (১ নং ছবি দ্রষ্টব্য) ।
মালের এই কাঠখোট্টা প্রকারভেদের পর আসা যাক মাল-সংস্কৃতিতে। আমাদের কাছে অসভ্য এই মদ নিয়ে চীনা, ফরাসী, আমেরিকান, ও ইউরোপীয় অন্যান্য সভ্যতায় অনেক আদিখ্যেতা রয়েছে। চীনা সমাজে নিয়মিত মদ্যপান এবং অন্যকে মদ্যপানে উস্কানি দেওয়ার রেওয়াজ তো বড়ই অতুলনীয়। এরা নৈশভোজে মদ খায়; হালখাতা, পার্বণে, সময়ে-অসময়ে, সুখে,দুখে যেকোনো অজুহাতে ব্যাপক মদ গেলে। বাঙ্গালীরা যেমন খুশির খবরে, আনন্দঘন উপলক্ষে মিষ্টি বিলোয়, চীনারা তেমন বইয়ে দেয় মদের বন্যা। এখানে কে কত মদ গিলতে পারে অর্থাৎ গিলিত মালের পরিমাণের উপরও একধরনের প্রশংসা প্রকাশ করা হয়। অনেকটা আমরা যখন কাউকে উস্কানি দিয়ে বলি, “কিরে, দেখি তোর গায়ে জোর কত?”, কিংবা ” ওই ব্যাটা তুই কয় ক্যালাচ পর্যন্ত পড়ছোচ?” সেরকম চীনারা বলে, “কি মশাই, তোমার মাল টানার ক্ষ্যামতা ক্যামুন?” ইত্যাদি। বিশেষ উপলক্ষে, অতিথি আপ্যায়নে বা স্রেফ মজা করার জন্য চীনারা বাড়ির বাইরে কোন রেস্তোরাঁয় একসাথে খেতে পছন্দ করে। সেখানে সাধারণত একটা ঘূর্ণন-যোগ্য গোলটেবিলে দশ-বারোজন গোল হয়ে বসে নানা পদের হরেক রকমের “ছাই” (菜 cai == তরকারি, পদ) খায়। অনেকের জন্যে ছোট্ট এক বাটি, আধা বাটি ভাত বা একটুকরো করে রুটির অর্ডার দেওয়া হয় । ছাই খেয়ে পরে পেট না ভরলে তাই দিয়ে উদরপূর্তি করবে বলে। নিঃসন্দেহে এদেরকে আমার মতো “ভেতো বাঙ্গাল” বা “ভাতুড়ে” না বলে বলতে হবে “মদুড়ে” বা “মদু”। যাহোক, আহারের শুরুতেই সেখানে বোতল খুলে ছোট বড় পেয়ালায় ঢালা হয় মদ। এই মদ যত কড়া হয় পেয়ালার আকৃতি হয় তত ছোট । যেমন: বিয়ারের আধার হয় সবচেয়ে বড় যেমনটা হয় জলের পেয়ালা। রেড ওয়াইন বা লাল মদের পাত্র হয় একটু ছোট; মূলত একটা কাঁচ-দণ্ডের উপর বসানো অঞ্জলি আকৃতির বা উপবৃত্তাকার কাঁচ-পাত্রে ঢালা হয় হাল ফ্যাশনের লাল মদ গোত্রীয় মালগুলো। এরপর সবচেয়ে কড়া ৫৬ ডিগ্রি চাইনিজ পাই চিও বা সাদা মদের গ্লাস হয় এতটুকুন-অনেকটা আমরা ছোটবেলায় মিত্তি মিত্তি রান্না-বাটী খেলার সময় যে ধরনের ছোট ছোট মাটির গ্লাস ব্যাবহার করি সেরকম ক্ষুদ্রাকৃতির।
পেয়ালার আকার-প্রকৃতি যাই হোক না কেন মালটা শেষমেশ উদর-থলিতেই জমা হয়। তবে সেখানে তা জমা করার আগে পেয়ালায় পেয়ালায় বাড়ি দিয়ে টুং-টাং, খুট-খাট, ধ্রিম-ধ্রাম শব্দ করায় এবং গাদা-খানেক প্রশংসা মূলক, শুভেচ্ছা জ্ঞাপক বাণী ঢেলে অন্যকে ধরে-বেঁধে মদ গিলানোর মৌখিক শিল্পে চীনাদের জুড়ি মেলা ভার। ফরাসিরাও নাকি জলের মতো খাবার টেবিলে মদ খায়। আমাদের দেশে লঞ্চ, ফেরিঘাটে ভাতের হোটেলে যেমন ভাত ফ্রি দেওয়া হয় (সাথে নদীর ফিল্টার পানি), শুনেছি ফ্রান্সের সাধারণ রেস্তরা গুলোতে মধ্যাহ্ন ও নৈশভোজে নাকি নানা রকম আঙ্গুর মদ মাঙনা পাওয়া যায়। তবে ওরা এমন চিজ যে মালটাকে চিজ (cheese) দিয়ে মাখিয়ে খায় [১১]।
তো, মদ-সভ্যতা তা যেখানকারই হোক না কেন, একটা জিনিস প্রায় সব মদ-অনুমোদিত সমাজে ধ্রুব, তা হল মদ খেয়ে মাতাল হলে তার “সাতখুন” মাফ (মদ খেয়ে গাড়ি চালনা এর ব্যতিক্রম)। অর্থাৎ, যে কাজগুলো মদ না খেয়ে করলে আশেপাশের লোকজন তাকে এক বা একাধিক বৃহদাকার চড়-থাবড়া মেরে দাঁতের পাটী ঝুলিয়ে দিত, মাতাল হবার পর ঐ একই কাজে সবাই কেমন জানি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ে। আর অনেক দুষ্ট লোকে নানা সময় বিভিন্নভাবে এই সুযোগটি কাজে লাগাতে তৎপর হয়। ব্যক্তিগতভাবে মদ খেয়ে মাতাল হবার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য কখনো আমার হয়নি। হাতে গোনা যে দুই একবার “সহমোদীদের” জোরাজুরি আর স্থানীয় ভদ্রতার খাতিরে অনন্যোপায় পেটে মালটা একটু বেশি (আমার এই “বেশি” আবার জাত মাল-খোরদের কাছে নাকি নস্যি) পড়েছে তাতে উপসর্গ হিসাবে মাথাধরা আর কিঞ্চিত তন্দ্রাভাব অনুভব করেছি। সিনেমা, নাটকের মতো নিজের ব্যক্তিত্ব ভুলে আচানক লম্ফ-ঝম্পে তুলকালাম লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে, হৈ হৈ রৈ রৈ, হারে রে রে রবে “ভাঙ্গ গাড়ি” যোশ-উত্থিত রাজাধিরাজ ভাব নিয়ে, বমির বন্যায় গালির পাল তুলে তাণ্ডব নৃত্য কিংবা অন্ততপক্ষে রূপকথার রূপবানের মতন কোমর দুলাইয়া খ্যামটা নাচন নাচতে অথবা কাম-রিপুর প্রচণ্ড কামড়ে কামাতুর হয়ে নিজেকে শূন্যে উড়ে বেড়ানো স্বর্গীয় অপ্সরাদের মাঝে “আজিজ মোহাম্মদ ভাই” ভাবতে পারিনি। কারণ, প্রতিবারই হয়ত দেহ-মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগেই নিজের ওজন বুঝে সংযত থাকতে পেরেছিলাম। যাহোক, অন্যের কাছ থেকে শুনে ও পাণ্ডুলিপি পড়ে মাতলামির কারণটা যতদূর বোধগম্য হয় তাহলো: আলোচ্য পাগলা পানি বা মালের মধ্যে যে ইথাইল এলকোহল (ethyl alcohol/ethanol: CH3CH2OH) থাকে তা আমাদের দেহের পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র দ্বারা শোষিত হয়ে পৌঁছে যায় যকৃতে। সেখান থেকে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, পেশী, কলা সহ সারা দেহে [১২,১৩]। এই প্রক্রিয়াটা খুব দ্রুত ঘটে যায় এবং এটাই দেহে অনেক সময় উত্তেজনা বা সুখানুভূতির জন্ম দেয়। পূর্ণ-পাকস্থলী বা ভরা পেটে মাল গ্রহণে অবশ্য এলকোহল শোষণ হয় অপেক্ষাকৃত ধীরে। সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ার পর দেহের উপর এলকোহলের ক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় প্রতিক্রিয়া। আমাদের দেহে যেহেতু এলকোহল সঞ্চয় করার উপায় নেই দেহ মহাদেব তাই এই মাল গুলোকে প্রক্রিয়াজাত করতে এবং কিছুটা দেহ হতে বিতাড়িত করতে উঠে পড়ে লাগে। বৃক্ক বাবু বা কিডনি আর ফুসফুস মিলে দেহের প্রায় ১০% এলকো-মামাকে মূত্র ও প্রশ্বাসের মাধ্যমে ঝেটিয়ে বিদেয় করে। (এই কারণেই মাল-খোর গাড়ী-চালক ধরতে প্রশ্বাস-বিশ্লেষক যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে এলকোর পরিমাপ করা হয়) । আর যকৃত গোঁসাই বাকি ৯০% কারারুদ্ধ এলকো-ডাকুর হাড়-গোড় ভেঙ্গে, বিশ্লেষণ করে তৈরি করে এসিটেট (acetate, CH3CO2−)। আর এই পুরো প্রক্রিয়ার ফলে মানব শরীর ও মনে নানা ধরনের প্রভাব পড়ে। যেমন: ঠিকমতো কথা বলতে না পারা, অকারণে হাসা, একটা খুশি খুশি মেজাজে থাকা, ঠিকমতো হাঁটতে না পারা, বমি করা, মাথা ধরা, অপেক্ষাকৃত বেশি কামাতুর হওয়া, স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া ইত্যাদি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এর মানে এই নয় যে, কেউ মাল মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই উপরিউক্ত উপসর্গে আক্রান্ত হবে। কতখানি মালাসক্ত হয়ে কে কোন ধরনের আচরণ করবে তা নির্ভর করে, ঐ ব্যক্তির মাল-টানার অভ্যাস, বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক অবস্থা ও বিশেষ করে মালের পরিমাণের উপর। তবে কার জন্য কতটুকু মাল প্রযোজ্য তা বলা কষ্ট এবং তা পরীক্ষা নিরীক্ষা সাপেক্ষ। এজন্য দরকার হতে পারে ছোট-ক্লাসের বিজ্ঞান বইয়ের মতো অনুসন্ধান: “এসো নিজে করি- মাল পয়েন্ট এক” । এক্ষেত্রে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: “মাল খেয়ে টাল হলে নিজ দায়িত্বে পকেট এবং দেহ সাবধান”।
সামগ্রিক বিচারে মাল খাওয়ায় উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি। সীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত মদপান করলে যকৃত, অগ্ন্যাশয়, মস্তিষ্ক সহ অন্যান্য প্রত্যঙ্গে নানাবিধ ব্যাধি হতে পারে । তবে ধারণা করা হয়, সীমিত পরিমাণে (১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের জন্য সপ্তাহে দুই এক গ্লাস থেকে প্রতিদিন এক গ্লাস পর্যন্ত) নিয়ন্ত্রিত কিছু মদ্যপানে (যেমন: লাল মদ) হৃদপিণ্ড, মূত্রাশয়ের কাজ ভাল চলে এবং দেহে তাৎক্ষনিক শক্তি সঞ্চার হয় [১৪,১৫]। যে কারণে শীত প্রধান অঞ্চলে উচ্চ মাত্রার মদ পান একটি নৈমিত্তিক অভ্যাস যা সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে একজন যোগ্য চিকিৎসকই পারে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে।
তবে এত কিছুর পরেও কেন জানি প্রাচীন চীনা কবিগুরু লি পাই (李白/ lǐ bái ৭০১-৭৬২)এর ছিয়াং চিন চিও (将进酒qiang jìn jiǔ=এসো মাতাল হই)কবিতাটির কথা মনে পড়ে গেল। মদ-কাতর কবির কাছে মাতাল হয়ে ধুম মেরে থাকাই যেন জন্ম-জন্মান্তরের তপস্যা। তিনি কিছুতেই মাতলামির ঘোর থেকে পঙ্কিল বাস্তব জীবনের রূঢ়তায় জেগে উঠতে চাইতেন না। কবিতা লেখা আর মাল টানাই ছিল তার ধ্যান জ্ঞান। ভাবখানা অনেকটা এরকম:
“কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর?
মালেরই মাঝে স্বর্গ নরক, মালেতেই সুরাসুর।”
শুনুন তার “ছিয়াং চিন চিও” কবিতার দুটি লাইন [১৬] –
人生得意须尽欢,莫使金樽空对月。
(rén shēng dé yì xū jìn huān, mò shǐ jīn zūn kòng duì yuè
রেন সং দো ঈ শুই চিন হুয়ান, মো স্রি চিন চোন খুং তোয়ে ইউয়ে। )
(人生/ rén shēng/রেন সং==মানব জীবন; 得意/ dé yì/ দো ঈ==বড় গর্বের; 须尽欢/ xū jìn huān/ শুই চিন হুয়ান==যত পার মজা কর; 莫使/ mò shǐ/ মো স্রি==রেখো না; 金樽/ jīn zūn/চিন চোন==স্বর্ণ খচিত মদের পেয়ালা/ সাধের মদ পাত্র; 空对月/kòng duì yuè/খুং তোয়ে ইউয়ে==চাঁদ মুখো খালি করে/ উপরের দিক মুখ করা অবস্থায় মদ পাত্র খালি থাকতে দিও না। শুধুমাত্র নিচের দিকে মুখ করার সময়, মানে মাল মুখে ঢালার সময়ই মদ পাত্র খালি রাখতে পারবে।)
অর্থাৎ কবির কথাগুলোকে সোজা বাংলায় একটু গুছিয়ে লিখলে যা হয় তা হল:
” মানব জীবন মধুর জীবন, মজা লোট যখন তখন।
মদ পাত্র পূর্ণ রেখ, খালি হবে গিলবে যখন। ”
সবাইকে সুস্বাস্থ্য কামনায় এই পর্বের ইতি টানছি।
(চললেও চলতে পারে…)
তথ্যসূত্র:
[১] সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান; আহমদ শরীফ; পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ; বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯৯
[২] সংসদ বাংলা অভিধান; শৈলেন্দ্র বিশ্বাস; পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত পঞ্চম সংস্করণ; সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০০
[৩] http://matadornetwork.com/nights/how-to-say-cheers-in-50-languages/
[৪] http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_countries_with_alcohol_prohibition
[৫] http://en.wikipedia.org/wiki/Prohibition
[৬] http://en.wikipedia.org/wiki/History_of_wine
[৭] http://wineintro.com/basics/health/chemistry.html
[৮] http://zhidao.baidu.com/question/3839501.html
[৯] http://www.thevirtualbar.com/Entertain/BrandNames.html
[১০] http://www.alcoholbars.com/alcohol-brands
[১১] http://www.2020site.org/fun-facts/Fun-Facts-About-France.html
[১২] http://www.drinkingandyou.com/site/uk/health/male%20body.htm
[১৩] http://science.howstuffworks.com/environmental/life/human-biology/alcoholism3.htm
[১৪] http://www.alcoholdrinkers.com/articles/134/1/Health-benefits-and-disadvantages-of-alcohol.html
[১৫] http://www.livestrong.com/article/517854-the-advantages-disadvantages-of-drinking-alcoholic-beverages/
[১৬] http://baike.baidu.com/view/31478.htm
খুবই তথ্যপূর্ণ অথচ ভীষণ মজার লেখা। ধর্মের নামেও ‘মাল’ চলে প্রচুর। বাংলার সাধক তো বাংলা খেয়ে গান ধরে “সুরা পান করি না আমি/ সুধা খাই জয় কালী বলে”। চালিয়ে যান।
পরের পর্ব কখন পাচ্ছি? আদৌ পাবো তো ?
লেখাটা খুব ভালো লেগেছে। এরকম একটা মজার লেখায় এত রেফারেন্স আগে দেখিনি। (B)
আমিও কয়েকটা নজরুলের ভাজা খৈয়ামের খৈ দিলাম(অভিদার মত)
“শরাব ভীষণ খারাপ জিনিশ মদ্যপায়ীর নেইকো ত্রান।”
ডাইনে বাঁইয়ে দোষদর্শী সমালোচক ভয় দেখান-
সত্য কথাই! যে আঙুরে নষ্ট করে ধর্মমত,
সবার উচিত- নিঙড়ে ওরে করে উহার রক্ত পান।
—–
শুক্রবার আজ, বলে সবাই পবিত্র নাম জুম্মা যার,
হাত যেন ভাই খালি না যায়, শরাব চলুক আজ দেদার।
এক পেয়ালি শরাব যদি পান করো ভাই অন্যদিন,
দু’পেয়ালি পান করো আজ বারের বাদশা জুম্মা বার
—–
দোষ দিও না মদ্যপায়ীর তোমরা, যারা খাও না মদ,
ভালো করার থাকলে কিছু, মদ খাওয়া মোর হ’ত রদ্।
মদ না-পিয়েও, হে নীতিবিদ, তোমরা যে-সব কর পাপ,
তাহার কাছে আমরাও শিশু, হই না যতই মাতাল-বদ্।
—–
যদিও মদ নিষিদ্ধ ভাই, যত পার মদ চালাও,
তিনটি কথা স্মরন রেখে; কাহার সাথে মদ্য খাও?
মদ-পানের কি যোগ্য তুমি? কি মদই বা করছ পান?-
জ্ঞান পেকে না ঝুনো হ’লে মদ খেয়ো না এক ফোঁটাও।
—–
পৌঁছে দিও হজরতেরে খৈয়ামের হাজার সালাম,
শ্রদ্ধাভরে জিজ্ঞাসিও তাঁরে লয়ে আমার নাম-
“বাদশানবী! কাঁজি খেতে নাই ত নিষেধ শরিয়তে,
কি দোষ করল আঙুর পানি? করলে কেন তায় হারাম?”
——
তত্ত্ব-গুরু খৈয়ামেরে পৌঁছে দিও মোর আশিস
ওর মত লোক বুঝলো কিনা উলটো ক’রে মোর হাদিস !
কোথায় আমি বলেছি যে, সবার তরেই মদ হারাম?
জ্ঞানীর তরে অমৃত এ, বোকার তরে উহাই বিষ।
বি.দ্র: আমিও নিজের জ্ঞানী 😛 মনে করি মালে বাড়ি দেয়ার সময়।
—–
আমায় সৃজন করার দিনে জানত খোদা বেশ করেই,
ভাবীকালের কর্ম আমার, বলতে পারত মুহূর্তেই।
আমি যে সব পাপ করি- তা ললাট-লেখা, তাঁর নির্দেশ,
সেই সে পাপের শাস্তি নরক- কে বলবে ন্যায় বিচার এই।
@সংশয়,
ধন্যবাদ, আমি সৈকত চৌধুরী, অভিজিৎ রায় আর আপনার দেয়া কবিতাগুচ্ছ সংগ্রহে রেখে দিলাম। 🙂
দূর্দান্ত লেখা ! পড়ে মজা আর জ্ঞান দু’টাই পেলাম !
বাংলার হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিচ্ছি আপাততঃ (অর্থাৎ কিনা এখনো মাল চাখা হয়নি; বন্ধুরা অবশ্য থার্টি-ফার্স্ট নাইটে জমিয়ে কষে পরে এসে গল্প করেছে, আমি অগত্যা ভাল ছেলের আত্মতৃপ্তি পেয়েই শান্ত থেকেছি 🙂 )
ধন্যবাদ, কিশোর বিশ্বাস ! রসালো লেখার জন্যে, আপনার পরিশ্রম সার্থক !
@আলকেমিস্ট,
মন্তব্যে সত্যি আনন্দিত হলাম। আপনাকেও ধন্যবাদ। 🙂
মালে মালময় লেখার জন্যি লেখকরে এক পেগ ফিনল্যন্ডিয়া। চমেৎকার মাল দিলেন একখানা। আপনেতো ভাই একখান মাল!
ভালো জিনিসের স্বাদ ভালো থাহে না। সুতরাং চালাইয়া যান, একদিন আসল মজা পাইবেন। :))
আহা মাল। আহা মাল।
তয় আফনেরে কই, শাল্টুর ব্যাপক মালময় প্রেক্ষাপট কি এইহানে আনন যায়? (H)
@সাইফুল ইসলাম,
ধন্যবাদ। তবে ভাই যে ভয়টা পাচ্ছিলুম! শেষমেশ আমারেই মাল ডাইকা বইলেন? 😛 তাইলে দেহি আরও মাল-উদ্গিরন করন লাগে। :))
@কিশোর,
আফনেত ভাই মালই। মাল না অইলে এমন মাল ছাড়োন যায়? :))
@সাইফুল ইসলাম,
😉
ক্লাস সিক্সে(!!) থাকতে একবার বন্ধুর বাসায় তার বাবার লুকিয়ে রাখা হুইস্কি এক চুমুক খেয়েছিলাম,সোজা বেসিনে গিয়ে কুলি করে আসতে হইসে 🙁 ।
লেখায় প্লাস।
আহারে বেচারা! স্মৃতি বড় বেদনা। দুঃসহ স্মৃতি আরো খারাপ। প্রলাপগাথা প্রসব করে।
আপনাকে এখন স্রেফ করুণা করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না আমি।
@ফরিদ আহমেদ,
কাউকে নির্দিষ্টভাবে উদ্দেশ্য করে বলিনি, কোন স্মৃতি বেদনার তাড়নায়ও নয়। আমার পেছনে অযথা সময় নষ্ট করে লাভ নাই ফরিদ ভাই। আপনি একজন শিক্ষক, উম্মুক্ত ফোরামে মানুষ হাসানোর মধ্যে ফোরামের কোন কল্যাণ নেই তা আমার চেয়ে আপনিই ভাল জানার কথা। মুক্তমনাকে তার আদর্শ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, পাঠকদের জন্যে সুষ্ট পরিবেশ রক্ষার্থে, প্রয়োজন মনে করলে আকাশ মালিকের সদস্যপদ বাতিল করে দিন।
যে কথা বলার আগে মন্তব্য বোটনে ক্লিক করে ফেলেছি তা হলো- আবার অনেকেই মদ পান করাকে এলিট, সুশীলতা, ভদ্রতা, শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদন্ড মনে করেন। তাদের লেখায় অকারণেই কোন না কোন ভাবে তিনি যে মদ পান করতে পারেন তা উল্লেখ করবেনই।
@আকাশ মালিক,
কাউকে নির্দিষ্ট করে বলেন নি, কিন্তু আমার কথাটাকেই কোট করেছেন বোল্ড করে। প্রলাপ বকা কমান দাদা।
অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য। অহেতুক সহানুভূতি টানার প্রচেষ্টা। আমি মন্তব্য করি নিজের নামে, মডারেটর হিসাবে নয়। ওই পরিচয়টা ভুলে যান আমার, দেখবেন সব ঠিক আছে।
@আকাশ মালিক,
কে লোক হাসাচ্ছে, তার বিচার আপনি না করে, পাঠককে করতে দিন। আমি আপনার কোনো বক্তব্যের লেজ ধরে সেটাকে বোল্ড করে ঘুরে বেড়াচ্ছি না।
আকাশ মালিক এবং ফরিদ ভাই,
হ এখন দুই জনেই একটু ক্ষ্যামা দেন।
শান্তিমত মালে বাড়ি দেয়ার সময় এইগুলা কি জ্বালা!
আনন্দটাই মাটি করবেন দেখতাছি। 🙂
@অভিজিৎ,
যাও দিলাম ক্ষান্ত। নেশার লাটিমে ঝিম ধরাও। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
চমৎকার উপমা: clap
‘মালে বাড়ি’ টাইপ লেখা!
আমি অবশ্য ফরিদ ভাইয়ের মত মুক্তমনা না যে, ‘এই জিনিস কখনও চেখে দেখা হয় নি আমার’ বলে আবার লেখার চরিত্রে সেটা নিয়ে আসব। আমার মনে হয় মুক্তমনার মডারেটর হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে মাল টাল চাখার অভিজ্ঞতা একটা ক্রাইটেরিয়া হিসেব থাকা উচিৎ, কি বলেন? 🙂
যাকগে, আপনার এই লেখাটা পড়ে অনেক দিন পর আয়েশ করে সুরা-পাত্র আর ওমর খৈয়াম নিয়ে বসার প্রস্তুতি নিলাম –
তবে এটাই সেরা –
[img]http://www.evolvefish.com/fish/media/MilitantIslamChristAtheist.gif[/img]
হে শহরের মুফতি! তুমি বিপথ-গামী কম তো নও,
পানোন্মত্ত আমার চেয়ে তুমিই বেশী বেহুঁশ হও।
মানব-রক্ত শোষ তুমি, আমি শুষি আঙুর-খুন,
রক্ত-পিপাসু কে বেশী এই দু-জনের তুমিই কও।”
উল্লাস (cheers), থুড়ি মালে বাড়ি (D)
@অভিজিৎ,
এই জিনিস কখনও চেখে দেখা হয় নি আমার লেখকদের লেখার কোন এক ফাঁকে এই লাইনটা ব্যক্ত করার মাঝে নিজেকে পাপমুক্ত ও ঐ জিনিসটার প্রতি পরোক্ষভাবে এক প্রকার ঘৃণা প্রকাশ করা হয়। যেমন বেশ্যাকে ঘৃণা করিনা তারপর অকারণে বলা হয় তবে বেশ্যালয়ে আমি কোনদিন যাইনি।
অভিজিৎ দা, আপনার উল্লেখিত কবিতার বঙ্গানুবাদ কে করেছিলেন, জানতে পারি কি?
@অভিজিৎ,
হা হা হা। ভোলো নি দেখছি। মাল চেখে না দেখার অভিজ্ঞতার কারণে ভালোই কেচে গিয়েছিলাম আমি ওইখানে।
এই জিনিস চেখে না দেখার পিছনের ইতিহাস ভিন্ন। ইউনিভার্সিটিতে আমার বন্ধু-বান্ধবরা সব বিশাল চিজ ছিলো। আন্না এখনও সেগুলো স্মরণ করিয়ে দেয় আমাকে। আমি নিজেই একটা বখাটে, সেই কারণে আমার বন্ধুবান্ধবও নাকি সব বখাটে ছিলো। একদিন এক বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছি যে ও খুব আমুদে আর উদার মনের ছেলে। পরের দিনই পত্রিকার প্রথম পাতায় তার ছবি। কোটি টাকার হিরোইনসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বেচারা। এর পর থেকে কাউকে ভালো সার্টিফাই করলেই ও বলে যে, ওই যে জ (পুরো নাম দেওয়া যাবে না) এর মত ভালো।
তো আমার এই সব বন্ধুবান্ধবই ছিলো মালবাজ (কিশোর বিশ্বাসের ভাষায়)। সূর্যসেন হলে বসতো মালের আড্ডা। কিন্তু, আমার সমস্যা হলো গন্ধে। সংস্কৃতে আছে গন্ধনং অর্ধনং ভোজনং। কিন্তু গন্ধনং অর্ধনং পানং বলে কথা নেই। অথচ ওই গন্ধেই আমার অর্ধনং পানং হয়ে যেতো। নাড়িভূড়ি সব উপড়ে আসতে চাইতো। নাক চেপে ধরে বাথরুমে ছুটতাম পেটের সব জিনিস উগড়ে দেবার উদ্দেশ্যে। বমি শুধু আমিই করতাম না। বন্ধুরাও করতো। দুই ঢোক পেটে পড়তেই তারাও আমার মতই পেটের সবকিছু উগড়ে দিতো উজাড় করে। বেচারারা। এতো সাধ করে অমূল্য জিনিস খেতো। কিন্তু দুদণ্ডও তা পেটে রাখতে পারতো না। এই উজাড় করে উগরে দেবার ভয়েই আর এই জিনিস চেখে দেখা হয় নি কখনো।
আমার এক বন্ধু দীর্ঘদিন পানাহার করে নি। একদিন গিয়েছে ডাক্তারের চেম্বারে। অপেক্ষমান রুমে সময় কাটানোর জন্য ম্যাগাজিন টেনে নিয়ে পড়ছে। একটা আর্টিকেলে দেখে যে, পরিমিত পরিমাণে এলকোহল সেবনের বৈজ্ঞানিক গুণাগুণ ব্যক্ত করা হয়েছে। পরিমিত পরিমাণে এলকোহল পান করলে হার্টের রোগসহ অনেক রোগই কম হয়, ফলে মানুষ দীর্ঘজীবি হয়।
এই দীর্ঘজীবি হবার লোভে পড়েই সে ওয়াইন খাওয়া শুরু করে। একা খেলে ঠিক জোশ আসে না বলে বউকেও পটিয়ে ফেলে সে। তারপর দুজনে মিলে শুরু হয় দীর্ঘজীবি হবার কঠিন সাধনা। এই সাধনায় কোন ব্রাণ্ডের ওয়াইন সাহায্য করবে, সেটা জানার জন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া শুরু করে সে বিভিন্ন অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী একদিন এই ব্রান্ড, আরেকদিন অন্য ব্রান্ড, এভাবেই চলতে থাকে বেশ কিছুদিন। তারপর একদিন দেখি ক্ষান্ত দেয়। জিজ্ঞেস করি হঠাৎ দীর্ঘজীবন সাধনায় বিচ্ছেদ পড়লো কেনো। বলে যে, বহুলোকের বহু পরামর্শ মত বহু নামিদামী মালইতো খেলাম। কিন্তু সবগুলারই গন্ধ একই রকম লাগে। বললাম কী রকম গন্ধ। বলে যে, ছোটোবেলায় খাওয়া বিস্বাদ ওষুদের গন্ধ। তো কতদিন আর জোর করে এই ওষুধ খাওয়া যায়। তাই একদিন দূর ছাই বলে ক্ষান্ত দিয়েছে সে।
@ফরিদ আহমেদ,
নাবালক 🙂 । শোনেন অতি সত্ত্বর আটলান্টায় ঘুইরা যান। একটা খালি ককটেল বানায়া খাওয়ামু, নাম আমেরিকান সুন্দরী! ড্রাইজিনের সাথে লাইম জুশ সহকারে অপূর্ব পানীয় (সাথে ২/৩ টা রাসবেরি আর মিন্টের পাতা দেওন লাগে)! আপনের মত কত ‘নাঁক সিটকানো’ আর বাথ্রুমে বমি করা পাবলিক এক চুমুক খাইয়া আর গ্লাস ছাড়নের নাম করে নাই!
এই তো সেদিন ব্রাজিলিয়ান এক বন্ধু আসছিলো আমাদের বাসায় অনেকটা আপনের লাহানই। মদের গন্ধ শুইকা নাকি বমি আসে। পরে আমেরিকান বিউটি বানায় খাওয়াইলাম। এক গ্লাস খাইয়া কয় আরো দাও। সেইটা শেষ কইরা আবার চায়, তারপর আবার… এমনে কইরা ৫/৭ গ্লাস খাইয়া ফালাইলো। আর উঠনের নাম নাই …
@অভিজিৎ,
হ, মায়ামিতে আমার এক আর্জেন্টাইন বন্ধুও তোমার মতই মার্গারিটা নামের আরেক সুন্দরীর নাম শোনাইয়া পটাইতে চাইছিল আমারে। সেই সুন্দরীও গোসল-টোসলের ধার ধারে না, গায়ে সেন্ট-টেন্ট মাখে না। কাছে যাইতেই বমি আসছিলো আমার। 🙂
@অভিজিৎ,
‘এক হাতে মোর তসবি খোদার, আর হাতে মোর লাল গেলাস,
অর্ধেক মোর পুণ্য-স্নাত, অর্ধেক পাপে করল গ্রাস।
পুরোপুরি কাফের নহি, নহি খাঁটি মুসলিমও-
করুণ চোখে হেরে আমায় তাই ফিরোজা নীল আকাশ।”
😕 বিদেশে এসে প্রথম কিছুদিন এক জায়গায় কাজ করেছিলাম,সুপারভাইজার ছিল বাঙ্গালী নোয়াখাইল্লা ( আমিও নোয়াখাইল্লা তাই কাজটা পাইছিলাম),রোজার দিন, সুপারভাইজার জিগাইল ,ভাই রোজা রাইখছেন নি?।উত্তর না দিয়ে কাজের গতি বাড়িয়ে দিলাম।বেটা বুঝে গেলো রোজা রাখি নাই। নসিহত দিল, ভাইজান ইসলামে রোজা রাখন শক্ত করি কওয়া হইছে,বুইজ্জেন নি?,মাফ দিত ন,আই আর কিছু ন কইল্লেও রোজা রাখি ফালাই।আল্লাহ সব মাফ কইরব রোজা মাফ কইত্ত ন। ইফতারের সময় বিয়ার দী রোজা ভাঙ্গি!!।রোজা ভাঙ্গি গেলে বিয়ারের গুনা হইব।রোজার সয়াব এর থুন বিয়ার এর গুনা মাইনাস কইল্লে অনেক ফয়েন্ট থাকে… ঘটনা কিন্তু সত্যি চাপা র মত মনে হয়।
@সপ্তক,
হাহাহা, জব্বর কাহিনী তো! ভাই আমার নোয়াখাইল্লা/চাঁটগাইয়া বুলি শেখার ইচ্ছা ছিল। আপনি কি কোন অনলাইন উৎসের খোঁজ জানেন যেখানে উচ্চারণ সহকারে এই ভাষা শেখা যায়?
@অভিজিৎ,
যারা মাল চাইখ্যা দেহে নাই হেগোরে মুক্তমনার মডারেটর পদ থিকা বহিস্কারের দাবী জানাই। সাহস না পাইলে একটু মাল খাইয়া লন অভিদা। আমেরিকান সুন্দরী। :))
@অভিজিৎ,
ওমর খইয়্যামের কবিতার বঙ্গানুবাদ কোথায় পান, বললেন না তো। আজ ২৫শে ডিসেম্বর। মুক্তমনার সকল পাঠক-লেখকদের জন্যে রইলো বড়দিনের শুভেচ্ছা-
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/merry-christmas-images-1.gif[/img]
আর আপনার জন্যে একটি খৃষ্টমাস ডিজার্ট-
[img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/untitled-1.jpg[/img]
পিওর রাজশাহীর ফজলি আমের তৈরী। এর উপর ওয়ান সিক্সত অফ এ জিল টিয়া মারিয়া, এক স্কোপ আইসক্রীম, আর সামান্য ডাবল ক্রীম ঢালতে হবে। কসম আল্লাহর, স্বর্গীয় ডিজার্টের স্বাদ আপনি এখানে পেয়ে যাবেন।
@আকাশ মালিক,
স্পেসিফিক কোন সাইট থেকে নয়; আমার কাছে রুবাইয়ের অনুবাদ আছে বিভিন্নজনের করা। কান্তিচন্দ্র ঘোষ (উনি বাংলায় প্রথম রুবাইয়াত অনুবাদ করেন), নরেন্দ্রদেব, কাজী নজরুল ইসলাম, শ্যামাপদ ভট্টাচার্য, শফিকুর রহমান…
‘হে শহরের মুফতি! তুমি বিপথ-গামী কম তো নও’,… এটা সম্ভবতঃ নজরুলের অনুবাদ।
আপনাকেও খ্রিস্টমাস এবং ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা।
@অভিজিৎ,
আমাদের মুক্তমনার তানভীরুল ইসলামের ফেইসবুক থেকে চুরি করে নিয়ে এলাম-
হে শহরের মুফতি! তুমি বিপথ-গামী কম তো নও,
পানোন্মত্ত আমার চেয়ে তুমিই বেশী বেহুঁশ হও।
মানব-রক্ত শোষ তুমি, আমি শুষি আঙুর-খুন,
রক্ত-পিপাসু কে বেশী এই দু-জনের তুমিই কও।”
– অনুবাদ কাজী নজরুল
@কিশোর
ভাই’ মাঝেমধ্যে আমরা বন্ধুরা মিলে লাল মাল[Red Wine] খেয়ে থাকি, সেখানে আমরা মালের পাত্র ঠুকাঠুকি করে বলতাম, একসাথে ‘মালেঠুকাঠুকি’ এখন থেকে না হয় বলব মালে বাড়ি।ধন্যবাদ, এক পেক লাল মালের সুভেচ্ছা র্ইল।
@আহমেদ সায়েম,
হাহাহা, ধন্যবাদ। হুম “মালে ঠুকাঠুকি”, না? বেশ বেশ । আসুন আমরা সবাই মিলে বাংলাকে আরও সমৃদ্ধ আরও শক্তিশালী, আধুনিকতর পর্যায়ে নিয়ে যাই।
মদের প্রচলিত ইংরেজি নাম ও তাদের সম্ভাব্য বাংলা অনুবাদের তালিকাটি চমৎকার। লেখাটি বেশ তথ্যপুর্ন এবং হাস্যরস সৃষ্টিকারী। ধন্যবাদ এরকম একটি লেখার জন্য।
সীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ভাত খেলেও নানাবিধ রোগ যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে। সীমা লঙ্ঘনের নেতিবাচক প্রভাব যে কোন জিনিষের বেলায়ই প্রযোজ্য। 🙂
@ব্রাইট স্মাইল্,
(Y)
@ব্রাইট স্মাইল্,
যাক শেষমেশ একজনের কাছে হলেও তালিকাটি ভালো লেগেছে।:razz: প্রশংসার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
একেবারে সত্যি কথা। :clap
লেখাটা পড়ার পর মাল চেখে দেখার ইচ্ছে অনুভব করছি! 😛
বাংলায় এমন একটা লেখা পাওয়া দুস্কর। কারন প্রিন্টিং মিডিয়া ছাপবে না।রীতিমত গবেষণা করে লিখেছেন লেখক। এতকিছু থাকতে ইসলাম ধর্মে যে কেন মদ নিষিদ্ধ করা হোল বুঝা মুশকিল।ততকালীন আরব এ যার বাসায় যত পুরনো মদ থাকত সে তত বেশী অভিজাত বলে গণ্য হত( মনে হয় নবীজির জিনিস টা সহ্য হত না) । বাংলাদেশে মদ বৈধ করলে ইয়াবা সহ অনেক মাদক দ্রব্যের ব্যবহার কমে যেত।মদ শরীরের জন্য ভাল জিনিস না , তারপরেও ড্রাগ এর চেয়ে ভাল।ছাড়া অনেক সহজ। আমেরিকাতেও একবার গত শতাব্দির গোঁড়ার দিকে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল,এতে করে চোরাই মদের ব্যবহার বেড়ে যাওয়াতে আবার বৈধ করা হয়। মানুষ এর জীবনে কম বেশী বড় আঘাত আসে, সবাই সমান ভাবে সাম্লাতে পারে না,সাময়িকভাবে মদ রিলিফ দিতে পারে,কথাটা শুনতে কাপুরুষের মত শুনালেও এর ফলে আত্মহত্যা কিন্তু কমতে পারে।কারন সময় সব ঠিক করে দেয়।মাঝে মাঝে এই সময়টা পার করা ই মুশকিল হয়।যাই হোক মদ কে প্রমট করা আমার উদ্দেশ্য না।ভাল একটা লেখার জন্য লেখক কে ধন্যবাদ।
@সপ্তক,
অনেকটাই সহমত।
লেখাটা পাঠের এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। 🙂
@সপ্তক,
ও কথা বলতে নেই ভাই, সামনে খৃষ্টমাস, ওমর খইয়্যাম শুনলে বেজার হবেন। সেই কবে মুহাম্মদ মদ্যপান নিষেধ করেছিলেন আর কবি মদকে মানুষের উপযোগী বলেছিলেন, আজ বিজ্ঞান সন্ধান পেয়েছে যে, ওমর খইয়্যাম সঠিক ছিলেন, মদ পান করলে হায়াত বাড়ে, সুবহানাল্লাহ!
@আকাশ মালিক,
:rotfl:
অনেক আগে মাল প্রস্তুতি নিয়ে একটা লেখা লিখেচিলাম, এখানে দেখতে পারেন,
ঘরে বসে তৈরি করুন মদ
আমার মনে হয়, বাংলায় মাল নিয়ে এত গবেষণা এর আগে কেউ করে নি। যাই হোক চালিয়ে যান, দেখি কোথায় গিয়ে মাল খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পরেন। আপনার জন্যে ” মালে বারি ” (D) (B)
@কামরুল আলম,
অসংখ্য ধন্যবাদ। মাল লেখাটা চালিয়ে যাবার ইচ্ছে ছিল। আপনাদের উৎসাহে তাকে বাস্তবে রূপ না দিয়ে হয়ত পারব না। তবে “মাল” শেষমেশ কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বলা মুশকিল। আপাতত আসুন, দিই “মালে বাড়ি”। আপনার মাল উৎপাদনের টিপসটা পড়ে ভাল লাগল 🙂
এই জিনিস কখনও চেখে দেখা হয় নি আমার। সেজন্য মনের মধ্যে একটু খুঁতখুঁতানি ছিলো। হাজার হলেও স্বর্গীয় পানীয়। কেমন স্বাদ তাই জানলাম না। এখন আর সেই খুঁতখুঁতানিটা রইলো না। 🙂
আপনার রসবোধ অসাধারণ। নিয়মিত লিখে আমাদের বিনোদন দিলে খুশি হবো। মুক্তমনায় একই সময়ে দু’ দুটো অত্যন্ত উঁচু মানের রম্য (অন্যটি সাদা চোখের) এর আগে কখনই একই সাথে প্রথম পাতায় দেখেছি বলে মনে পড়ে না আমার।
@ফরিদ আহমেদ,
চেখে দেখা না হলেও আপসোসের কিছু নেই। কোন মালই আমার কাছে কোকাকোলা, আখের রস, বেলের সরবত বা অন্যান্য কোমল পানীয়র মত প্রথম আস্বাদনেই সুস্বাদু মনে হয় নি। সত্যি বলতে কি অধিকাংশ মালের স্বাদটা একটু ঝাঁজালো কটুই। তবে অভিজ্ঞ মাল-জ্ঞানীরা বলে থাকেন “আগে চোখ বুজে মাল গেলা অভ্যেস কর, একদিন ঠিকই ভালো লেগে যাবে”। আপনার এই অভ্যেস করাটা নাহয় নাই হল। হাহাহ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। সাদাচোখের লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আর আপনার এই প্রশংসার লোভেই হয়ত এবার আমার লেখালেখি করার অলসতা কিছুটা কমলেও কমতে পারে।
(D) উল্লাস !!! (যারা Cheers এর লাগসই বাংলা খুঁজছেন তাদের জন্য ৷)
আসলেই দারুন একটা লেখা হয়েছে। পড়তে গিয়ে দারুন মজা পেয়েছি, কিঞ্চিৎ জ্ঞান অর্জনও করেছি। যেমন মালের শ্রেনী প্রকরণ এর ব্যপারে। আগে এটা ভালমতো জানতাম না আগে।
জব্বর কবিতা আসলে।
তবে একটা বিষয় ঠিক মাথায় ঢোকে না। কোরানে বলা আছে ইহজগতে মাল খাওয়া হারাম, অথচ বেহেস্ত মালের নহর প্রবাহিত হচ্ছে- এটা কেমন? তা ছাড়া কোরানে আরও বলা আছে সে মাল পান করলে নাকি কেউ মাতাল হবে না। যতদুর জানি মানুষ মাল খায় হালকা পাতলা মাতাল হওয়ার জন্য, যা পান করলে মাতাল হবে না তা মানুষ খাবে কেন ? তাকে মালই বা বলা যাবে কিভাবে?
@ভবঘুরে,
আপনাদের সবার এই উচ্চকিত প্রশংসায় আমি যার পর নাই আহ্লাদিত :)) ধন্যবাদ আপনাকে। তবে প্রথম কবিতাটা (কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর?
মালেরই মাঝে স্বর্গ নরক, মালেতেই সুরাসুর) আমার কাচা হাতের প্যারোডী মাত্র। মূল কবিতাটি (দুটি কবিতা?) কি কামিনী রায়ের লেখা? আমার ঠিক মনে পড়ছে না।
বরাবরের মতই আপনার আরেকটি অতি উত্তম প্রশ্ন! :clap
@ এডমিন
এই লেখার সাথে একটি ছক ও দুটো ছবি ছিল যেগুলো এখানে দেখা যাচ্ছে না। আশা করি সমস্যাটির সমাধান পাব। ধন্যবাদ।
@কিশোর,
মজিলা ও ক্রোম উভয় ব্রাউজারেই দেখলাম ভালভাবে ছবিগুলো আসছে। আপনি যদি চীনে অথবা অন্য কোনো ‘নিষিদ্ধের দেশে’ থাকেন তবে প্রক্সি ব্যবহারে ফল পাবেন। 🙂
আপাতত দেখেন, এই লিংকে গিয়ে ‘click here to start’ এ ক্লিক দিলে যে ঘরটা আসবে তাতে লেখাটার লিংক দিয়ে Go তে ক্লিক দিয়ে দেখেন। এটি একটি ফ্রি প্রক্সি সাইটের লিংক। Google এ খুঁজলে ফ্রি প্রক্সি সাইটের অভাব হয় না। এখানে একটি তালিকা পাবেন। এগুলো সহ আরো কিছু সাইট ব্যবহার করে দুনিয়ার তাবত নিষিদ্ধ সাইটগুলো ব্যবহার করতে পারেন। ইউটিউভ থেকে সবই ডাউনলোড করে ফেলতে পারবেন এটি ও আরো কিছু সাইট কাজে লাগিয়ে। 🙂
তো হয়েছে কিনা শীঘ্রই জানাবেন। অন্য কারো এমন সমস্যা হচ্ছে কি?
@সৈকত চৌধুরী,
হাহা “নিষিদ্ধের দেশ”–বড়ই মজা পেলাম। তবে এখানে “নিষিদ্ধ শহর (Forbidden City)” নামে একটা দর্শনীয় রাজপ্রাসাদ (প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটা ছোট খাট শহরের মতই) আছে যা সবার জন্যই প্রায়-উন্মুক্ত। যাহোক, আমি IE ব্যাবহার করে প্রথমদিকে এই সমস্যায় পড়েছিলাম, কিন্তু মন্তব্য করার একটু পরেই তা ঠিক হয়ে গেছে। হয়ত আমার ব্রাউজারে লোড হতে দেরি হচ্ছিল। প্রক্সির লিংক এর জন্য ধন্যবাদ। আমি youtube বা facebook এর জন্য Freegate (http://dongtaiwang.com/loc/phome.php?v=7.18&l=804) ব্যাবহার করতাম। এখন কাছে আরও কিছু অস্ত্র এলো।
@কিশোর,
এখন দেখা যাচ্ছে, তাই না?
(প্রক্সি লাগবে না।)
@সৈকত চৌধুরী,
হ্যাঁ, ধন্যবাদ 🙂
আরে শাবাশ, হেব্বি একখান লেখা দিছেন, গুল্লি।
দুইটা কথা, না বলে থাকা গেলো না,
হা হাহ হা হা হা, আপনি ওই দৃশ্যে থেকেছেন, কাছ থেকে দেখেছেন আর
ঠিক হজম হোল না।
যাই হোক এতে কিন্তু আপনার দারুণ মাজাদার লেখার মান খুব একটা কিছু ক্ষুন্ন হয়নি।
মুক্তমনায় স্বাগতম (D)
@কাজী রহমান,
ধন্যবাদ, আমি মাতাল না হলেও প্রচলিত মালগুলোর একাংশ চেখে দিয়েছি। আর ঐ যে দৃশ্যের কথা বললেন না? আসলে ব্যক্তিগত জীবনে আমি কাছ থেকে অনেক মাল-খোরকে এই দৃশ্যে ইচ্ছাকৃত/ অনিচ্ছাকৃত-ভাবে অভিনয় করতে দেখেছি। নিজেই অংশ নেবার হিম্মত গজিয়ে উঠতে পারে নি এখনো। 🙁
(D) (D) (D) মালে বাড়ি।
@তামান্না ঝুমু,
মালে বাড়ি। :))
পড়ার মজাটাই মাটি করে দিলেন, তবুও লেখাটি প্রচুর লাইকাইলাম- (F) (D)
@আকাশ মালিক,
হাহাহা, “লাইকাইলাম”? বহুত আচ্ছা এবং ধন্যবাদ। তবে একটু বলে রাখি, ইচ্ছা আছে প্রায়দূর ভবিষ্যতে কোন এক দিনক্ষন ঠিক করে ভেতর থেকে ছিটকিনি বদ্ধ ঘরে একেলা প্রচুর মাল খেয়ে ফেলব। দেখি কি হয়! :lotpot:
@আকাশ মালিক,
মাটি খাটিতে পরিণত হতে পারে এই লিংকে গেলে- http://www.dharmaleaks.org/2011/05/16/380
@মাহফুজ,
:lotpot:
(D) (D) (D)
বেশ চমৎকার। অত্যন্ত উপভোগ্য একটা লেখা।
হাঃ হাঃ হয় নি। জাপানিজরা বলে ‘ কান পাই’। সেই যে জাপানি বন্ধুর কাছ থেকে শিখেছিলাম, সহজে কি ভুলতে পারি!! 🙂 চীনারা বলে ‘গান বা’ আর কোরিয়ানরা বলে ‘গান বে’, তাই না? বাকি দুইটা আপনার দেয়া লিংকে পেলাম। আচ্ছা, চীনেরটা ভুলে গেলেন কিভাবে? নাকি ভুল হয় নি? 🙂
এ লাইনটা কোথায় পাব খুঁজছিলাম। 🙂
পরবর্তী পর্বটা ইয়ে মানে একটু কৌশলী যেন হয় যাতে তা প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার মুখে না পড়ে, নইলে কিন্তু বেশ দুঃখ পাব। 🙂
‘মদ’ নিয়ে দারুন সব কবিতা লেখেছেন ‘ওমর খৈয়াম’ , একটি কবিতা
স্বর্গের মুখে ঝেড়ে চলে যাও
আপন পায়ের ধূলো;
পান ক’রে নাও সুরা-সমুদ্রে,
ভেসে যাক পুঁথিগুলো!
চলে যায় যারা ফেরে না ত গেলে প্রাণ,
ধ্যান-উপাসনা এখানে চলে না,
পৃথিবী সে নয় স্থান!
আরেকটি বিষয় আমাকে অনন্দিত করেছে। সেটা তথ্যসূত্র। অনেক মূল্যবান লেখা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে তথ্যসূত্রের অভাবে। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায়। (Y)
(D) (D) (D)
@সৈকত চৌধুরী,
প্রথমেই ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটি ধৈর্য সহকারে পড়ার এবং উচ্চারণগত একটি ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। জাপানি ভাষায় “cheers” কে বলে ” খান ফাই/ খান পাই” (乾杯 == かんぱい == kan pai )। বাকি দুটো — চীনা ভাষার “কান পেই” (干杯 == gan bei) এবং কোরিয়ান ভাষার “খোম বে/ গোম বে” (건배 == Gun bae) ঠিক আছে।
এখানে উল্লেখ্য যে চীনা, জাপানিজ, কোরিয়ান ভাষার ইংরেজি হরফে লেখা রোমানাইজেশন থেকে বাংলা উচ্চারণ করতে গেলে ভাষাগুলোর মূল উচ্চারণ থেকে তা অনেক সময় অন্যরকম হয়ে যায়। যেমন: ইংরেজি “P” কে চীন ভাষায় অনেকটা “ফ” এর মতন (উচ্চারণের সময় মুখের জোড়া করা ঠোঁট হঠাৎ করে খুলে গিয়ে সম্মুখ পানে একগাদা বাতাস বের করে দেবে), “B” কে “প” এর মতো উচ্চারণ করে ইত্যাদি। চীনাদের মতো করে “Beijing”, “Mao ze dong”, “Hu Jin Tao” এর বাংলা উচ্চারণ হবে যথাক্রমে “পেইচিং”, “মাও যে তোং ” এবং “হু চিন থাও” ।
কেন ভাই? আমি যে প্রকৃষ্ট মালখোর না- তা আগেই বুঝেতে পেরেছিলেন? নাকি আমার বোঝার ভুল? হাহহা।
হাহাহা, আমিও ভাবছি কি ধরনের কলা করলে কেউই দুঃখ না পায়। 😛
আবারও অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।