[এ লেখাটা পিয়ালের জন্য। তিনি মুক্তমনায় লিখেন না, মাঝে সাঝে হয়তো দু’ একটি মন্তব্য করেছেন এখানে ওখানে।  এইটুকুই। আমার সাথে তার পরিচয় নেই সামনাসামনি,  কিন্তু তার পরিচয় অন্যত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমরা যেটাকে বুঝি সেটা আক্ষরিক অর্থেই সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার সংকল্প নিয়েছেন তিনি।  অস্ত্র তার ইন্টারনেট। নিজের তারুণ্যের শক্তি আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে যেন আক্ষরিক অর্থেই কবর থেকেই উঠিয়ে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধের এমন সব বিরল দলিল দস্তাবেজ যা  আগে কোথাওই প্রকাশিত হয়নি।  সে সব দলিলের পেছনে তার নিয়মনিষ্ঠ পরিশ্রমের ছাপ, দৌড়াদৌড়ির ছাপ, আর পাশাপাশি মেধা আর প্রাজ্ঞতা তো আছেই।

তার সর্বশেষ কাজটি নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় দু জন বিদেশী ব্যক্তি আমাদের স্বাধীনতার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। একজন ফরাসী যুবক জাঁ ক্যুয়ে, অন্যজন বেলজিয়ামের মারিও রয়ম্যান্স । জা কুয়ে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর প্যারিসে পিআইএর একটি ফ্লাইট হাইজ্যাক করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য সাহায্য চেয়ে। আর মারিও রয়ম্যান্স বেলজিয়ামের এক যুবক যিনি চুরি করেছিলেন ভারমিয়ারের পেইন্টিং- ‘দ্য লাভ লেটার’। ওই একই উদ্দেশ্যে। এদের সম্পর্কে আমরা জানতামই না, পিয়ালের লেখার আগে। এর জন্য তার ফরাসী আর্কাইভ খুঁজতে হয়েছে, ফরাসী পত্রিকা থেকে বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে অনুবাদ করতে হয়েছে বাংলায়।  পিয়াল নিজেই বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য অবদান রাখা এই দুই বিদেশীকে প্রকাশ্যে আনাটা আমার জীবনের সেরা কাজগুলোর মধ্যে পড়ে”। অথচ তারা সারা জীবনের সেরা কাজ বেহাত হয়ে যেতে দেখলেন তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই। গত ২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর সাময়িকী অন্য আলোয় প্রচ্ছদ কাহিনী করা হলো ওরাও পাশে ছিলো নামে একটি লেখা। পুরোটাই অমি রহমান পিয়ালের ব্লগ আর্টিকেলের উপর ভিত্তি করে, কেবল সযত্নে পিয়ালের নামটি বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথম আলোর লেখাটির নীচে পাঠকের মন্তব্যগুলো পড়লেই বিষয়টা বোঝা যায়। এর পর কালের কণ্ঠে  আরেকটি লেখা বেরোয় মানবতার জন্য ‘অপরাধ’নামে , পরে ইত্তেফাকে।  সবগুলো লেখাই পিয়ালের পরিশ্রমলব্ধ লেখাগুলোর উপর ভিত্তি করে লেখা, কেবল  মুল লেখকের কোন নামগন্ধ নেই।  কৃতিত্ব দেয়া হয়েছে কোথাকার কোন পুলিশ বিভাগের এএসপি নাজিমুল হককে আর ‘এক ঝাঁক উজ্জ্বল তরুণ’কে। কোন এক চিপা দিয়ে পিয়ালের নাম এসেছে বটে, তবে উনাকে পরিচিত করা হয়েছে  কোন এক ‘প্রবাসী ব্লগার’ হিসেবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর কন্ট্রিবিউটিং এডিটর একটি সম্পাদকীয় লিখেছেন তার পত্রিকায় – শেষাবধি গবেষণাও ছিনতাই! নামে।  পিয়ালও  থাকতে না পেরে একটি শ্লেষাত্মক লেখা লিখেছেন ‘পুলিশের বিশেষ বিভাগের এএসপি ও একঝাক উজ্জ্বল তরুণকে আমার শুভেচ্ছা’ শিরোনামে। এর মধ্যে প্রথম আলো অবশ্য ক্ষমা চেয়েছে অপকর্মটির জন্য। কিন্তু কালের কণ্ঠ আর ইত্তেফাক এখনো নীরব!

পিয়াল ফেসবুকে আমার বন্ধু লিস্টে ছিলেন, কিন্তু কখনোই যেচে আলাপ করা হয়নি। আমার আর তার লেখালিখির ক্ষেত্রটি কিছুটা ভিন্ন বলেই হয়তো। কিন্তু মেধাসত্ত্ব চুরির ক্রমাগত হামলার পর আমি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম, জাঁ ক্যুয়ে, এবং মারিও রয়ম্যান্স যথার্থ স্বীকৃতি পেলে সেটার পূর্নাঙ্গ অবদান যে অমি রহমান পিয়ালেরই জন্যই হবে সেটা ‘*লের কণ্ঠ’ আর আলু পত্রিকা গোপন করার যত চেষ্টাই করুক না কেন, ফেসবুক আর ব্লগের কল্যাণে আমরা সবাই তা জেনে গেছি। অপদার্থ সাংবাদিক আর মেধাসত্ত্ব চোরদের দিন আর বেশিদিনের নয়। আপনার প্রতি আমার পরিপূর্ণ সমর্থন আর সহানুভূতি রইলো, পিয়াল।

পিয়াল নামের সুপরিচিত সাইবার সৈনিকটির প্রতি উৎসর্গীকৃত আজকের এই প্রবন্ধটি। আমার নিজের লেখাই চুরি গেছে অনেক। অনেকে আবার বইও লিখে ফেলেছেন আমার লেখার নানা সরঞ্জামকে পুঁজি করে; কিছু যে করতে পেরেছি তা নয়। কিন্তু আমার মূল্যহীন এলেবেলে লেখাগুলোর চেয়ে আপনার লেখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, অনেক দামী। আপনার জন্য কিছু না করতে পারলেও অন্ততঃ পাশে আছি। ]

:line:

জোয়ান বায়েজের প্রতি ভালবাসা আমার খুব ছোটবেলা থেকে। ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি। আমাদের বাসায় একটা গ্রামোফোনের লং প্লে রেকর্ড ছিলো, সেখানে একটা গান ছিল  ব্যাঙ্কস অব দ্য ওহাইও (Banks Of The Ohio) নামে।  গান টান যে তখন খুব একটা ভাল বুঝতাম তা নয়। ইংরেজি গান তো আরো নয়। কিন্তু তার মধ্যেও এই ব্যাঙ্কস অব দ্য ওহাইও গানটা যখনই বাসায় বাজতো তন্ময় হয়ে শুনতাম, হয়তো কান্ট্রি টিউনটার জন্য, আর হয়তো গানের কথাগুলোর জন্য –

httpv://www.youtube.com/watch?v=2uL4SVdN9Pw

সেই থেকে শুরু।    আমি যেখানে বড় হয়েছি – সেটা  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড এলাকা।  আমাদের সময় আমাদের বন্ধুদের একটা বাতিক ছিলো রাস্তায় আড্ডা মারার ফাঁকে ফাঁকে গিটার বাজানো।  কত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে উদয়নের সামনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের রাস্তায় আমার বন্ধুদের গীটার শুনে কাটিয়েছি, আর রাত করে বাড়ি ফিরে মা বাবার বকা খেয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই।  রাস্তার ধারে গীটার বাজানো বন্ধুদের অনেকেই এখন, মাইলস, ফিডব্যাক, ফিলিংস, এলারবি, আর্ক, অর্থহীন ব্যান্ডে গিটার বাজায়, কেউ কেউ সোলো আর্টিস্ট হিসেবেও অনেক নাম করেছে। কেউ বা আবার পরবর্তী জীবনে গিটার টিটার ফেলে অন্য পেশায় চলে গেছে।  একটা বন্ধু ছিলো প্রতীক নামে, খুব সম্ভাবনাময় গিটারিস্ট ছিলো।  পরে আর গান বাজনার সাথে জড়িত না থেকে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলো পদার্থবিদ্যা পড়তে।  তার বাসায় ছিলো যত রাজ্যের ‘পুরোনো দিনের’ ইংরেজি গানের সংগ্রহ। তার কাছেই জোয়ান বায়েজের  ‘ডোনা ডোনা’ নামের এই  অপূর্ব গানটা শুনি । গানের থিমটা অসাধারণ – জবাই হয়ে যাবার আগে একটি  হতভাগ্য বাছুরের মনের  ভাবনা নিয়ে গান এটি।

httpv://www.youtube.com/watch?v=o5nzFgvvMi0

Calves are easily bound and slaughtered
Never knowing the reason why.
But whoever treasures freedom,
Like the swallow has learned to fly.

এই শিল্পীকে নিয়ে জানার আগ্রহ আমার বেড়ে চললো। জানলাম জোয়ান সেই ষাট-সত্তুর দশকের শিল্পী। অ্যাকোস্টিক গীটার হাতে নিয়ে গান গাইতেন তিনি। গাইতেন মানবতার গান, দিন বদলের গান।  অনেকটা আজ যেমন বাংলায় গান করেন আমাদের সায়ান, লোপামুদ্রা  কিংবা মৌসুমি ভৌমিকেরা। চোখ মুদে রোমান্টিক গান-শোনা আর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ‘সখি, ভাবনা কাহারে বলে’ টাইপের ন্যাকা ন্যাকা গানের ভুবন থেকে যেমন টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে এসেছেন সুমন চট্টোপাধ্যায় (কবীর সুমন), নচিকেতা, অঞ্জন, মৌসুমি ভৌমিকেরা গত নব্বইয়ের দশকের শুরুতে, সূচনা করেছিলেন জীবনমুখী গানের ধারা – ঠিক সেই ব্যাপারটাই করেছিলেন জোয়ান বায়েজ আর বব ডিলান পশ্চিমা জগতে, তবে বহু আগে – সেই ষাট সত্তুরের দশকেই।


বব ডিলানের সাথে জোয়ান বায়েজ (১৯৬৩)

বব ডিলানের কথা বললাম কারণ সত্তুরের দশকের ব্যতিক্রমী শিল্পী বব ডিলানকে কমবেশি আমরা অনেকেই চিনি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানি না যে অখ্যাত বব ডিলানকে মূলতঃ পরিচিত করে তুলেছিলেন জোয়ান বায়েজই। বায়াজের তখন প্রথম এলবাম বেরিয়ে গেছে, সঙ্গীত জগতে মোটামুটি পরিচিত হয়ে উঠেছেন, ঠিক এসময় নিউইয়র্ক সিটির গ্রিনউইচ গ্রামে ডিলানের সাথে পরিচয় হয় বায়েজের। গড়ে উঠে তাঁদের মধ্যে সখ্যতা, আর কিছুটা অন্তরঙ্গতাও। তারা দুজনে  যাট এবং সত্তুরের দশকে বহু জায়গায় একসাথে কনসার্ট করেছেন, দেশ ভ্রমণ করেছন, গেয়েছেন ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ কিংবা ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’-এর মতো চির-সবুজ জনপ্রিয় গানগুলো।  আমার নিজের  বব ডিলানের ভার্শনটির চেয়ে বেশি ভাল লাগে জোয়ান বায়েজের একক কণ্ঠে গাওয়া গানটিই –

httpv://www.youtube.com/watch?v=Oe9Q4Ecy8xI

কিন্তু আমি যেটা  তখনো জানতাম না সেটা হল, বাংলাদেশের সাথে এই শিল্পীর আত্মিক যোগাযোগের ব্যাপারটা।  জানলাম হঠাৎ করেই তার বিখ্যাত ‘সং অব বাংলাদেশ’ গানটি শোনার পর।  সেটা আবার প্রথম শুনি আমি আমার বন্ধু নাসেরের বাসায়। এ গানটিই আমার আজকের প্রবন্ধের  আলেখ্য। তবে গানটি নিয়ে কোন ধরণের আলোচনায় যাবার আগে, কিংবা গানটির  গভীরে যাওয়ার আগে অবশ্যই আগে শুনে নেয়া দরকার। একবার নয়, কয়েকবার করে –

httpv://www.youtube.com/watch?v=3JM_Tq5LGgc
জোয়ান বায়াজের সেই বিখ্যাত ‘সং অব বাংলাদেশ’ , যে গানটি গেয়ে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন আমাদের পাশে এসে।

১৯৭১ সালে জোয়ান বায়েজের  বয়স সবে ত্রিশ ছুঁয়েছে। গীটার বাজিয়ে নানা জায়গায় গান করছেন তিনি। ঠিক সে সময় আরেক গোলার্ধে  বাংলাদেশ (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) নামের ছোট একটি দেশে ঘটে চলেছে শতাব্দীর বড় গণহত্যা।  ২৫ শে মার্চের সেই ভয়াল গণহত্যার খবর  জোয়ানের কানে কোনভাবে পৌঁছেছে।  ব্যথিত হয় উঠলো এই শিল্পীর মন।  তিনি বাঁধলেন তার অবিস্মরণীয় গানটি, কথায় আর সুরে এখনো আমার শোনা অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি গান।

জোয়ানের গানটি শুরুই হয়েছে এভাবে –

Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh …

২৫ শে মার্চের রাতে ইকবাল হলের ছাত্ররা প্রতিদিনের কাজ কর্ম সেরে নিজেদের রুমে ঘুমাচ্ছে, কেউ বা করছিলো ঘুমানোর পায়তারা, ঠিক তখনই ‘সুসভ্য’ পাকিস্তান বাহিনী  আমেরিকার সাহায্যপুষ্ট এম-২৪ ওয়ার্ল্ড ওয়ার ট্যাঙ্ক, কামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো ঘুমন্ত ছাত্রদের উপর। শুরু হল ইতিহাসের করুণ-তম অধ্যায়, রচিত হল বাংলাদেশের রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচ্ছদপট।  জোয়ান লিখলেন –

“..And the students at the university
Asleep at night quite peacefully
The soldiers came and shot them in their beds
And terror took the dorm awakening shrieks of dread
And silent frozen forms and pillows drenched in red…”

রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হল হনন-উদ্যত পাকিস্তান  সেনাবাহিনী। ছড়িয়ে পড়লো শহরময়, বিশেষতঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠলো রাইফেল, মেশিন গান আর মর্টার। পাকিস্তানী বাহিনী সে রাতে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি অধিকার করে সেটাকে ইকবাল হল আর জগন্নাথ হলের  দিকে গোলা নিক্ষেপের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিলো।  এর কারণ আছে। একাত্তুরের মার্চ মাসের উত্তাল সময়গুলোতে  ইকবাল হল ছিলো স্বাধীন বাংলা ছাত্রসমাজের মুল চারণভূমি।  ছাত্রদের গণআন্দোলনের দিক নির্দেশনা আর স্ট্র্যাটিজি আসতো এই হলের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতাদের কাছ থেকেই। কাজেই পাক-বাহিনীর মূল আক্রোশই ছিলো এই হলটিকে ঘিরে।  মধ্যরাতের আগেই অতর্কিত নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো পাকসেনারা। গোলার আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন করে দিলো ছাত্রাবাসের দেয়াল। চললো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডব। হতচকিত ছাত্ররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে। ব্রিটিশ কাউন্সিল এলাকার রাজপথ, অলিগলি, ফুটপাত, খেলার মাঠ,  ক্যাম্পাস সর্বত্রই মৃত্যুর করাল গ্রাস। অসহায় মানুষের কান্নায়, চিৎকারে, হাহাকারের শব্দে ভারী হয়ে এলো শহরের আকাশ। সেই কান্না ছাপিয়ে তখন আকাশে কেবলই মুহুমুর্হু আগুনের লেলিহান শিখা, শেল আর বারুদের তাজা গন্ধ। মধ্যরাতের ঢাকা হয়ে উঠলো যেন লাশের শহর। জোয়ান বায়েজ তার গানে লিখলেন –

The story of Bangladesh
Is an ancient one again made fresh
By blind men who carry out commands
Which flow out of the laws upon which nation stands
Which is to sacrifice a people for a land …

পাক-বাহিনীর ঘন্টাখানেকের তাণ্ডবেই ইকবাল হলের প্রায় দুইশ জন ছাত্র মারা যায়। সে রাতের ভয়াবহতা যে ঠিক কত বেশি ছিলো তা কিছুটা হলেও বোঝা যায় এর পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের একটি সাক্ষ্য পড়লেই –

“ইকবাল হলের সামনে কী যে হয়েছিলো তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। রাস্তা ঘাটে চারিদিকে হত্যাযজ্ঞের ছাপ, বস্তিতে আগুন জ্বলছে।  বাড়ির সামনে পার্ক করা গাড়িতে আগুন।  স্তূপ করা লাশ নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে নীলক্ষেতের রেল গেট পেট্রোল-পাম্পের সামনে। গোলা বারুদ, ধোঁয়া আর  আগুনের লেলিহান শিখা আক্ষরিক অর্থেই পুরো এলাকাটাকে  নরককুণ্ডে পরিণত করে ফেলেছিল যেন। কিছু দূর পর পরই বিল্ডিং এর দেয়ালে গোলাগুলির চিহ্ন। এই সব ভয়াবহতার মধ্যে আমরা আমাদের পরিবার আর হলের ছাত্ররা জীবনের আশা একেবারে ছেড়েই দিয়েছিলাম, কেবল মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করা ছাড়া আমাদের সামনে কোন পথই খোলা ছিলো না”।

এমন কী  ঘটনার দুই দিন পরেও  সারি সারি লাশ রাস্তায়  পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দেখা গেছে লাশ ময়লা পানিতে ভাসতে। লাশের সারি, রক্তাক্ত করিডোর, গলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন  দেয়াল, রক্তাক্ত রাস্তা ঘাট, গুমোট গন্ধ দেখে যে কেউই বুঝবে কী ধকল সহ্য করেছে ২৫ শে মার্চের কাল রাত্রিতে ঢাকাবাসীরা।  আমাদের মুক্তমনা সদস্য আবুল কাশেম সে সময় বুয়েটের (তখনকার EPUET)তরুণ ছাত্র। থাকতেন শেরে বাংলা হলে।  তাঁর স্মৃতিচারণা মূলক একটি লেখায় ফুটে উঠেছে এর পরদিনের ঢাকা শহরে জমে থাকা ভয়াবহতার  নগ্ন-রূপ –

… The scene I saw in Iqbal Hall was beyond any description. The whole area was like a battlefield. I knew that DUCSU VP Tofail Ahmed used to live there. There were holes on the walls created by mortar shells. Those holes were visible from afar. When I arrived at the playground of the hall, I saw about 30 dead bodies all lined up for display to the public. Many of the dead bodies were beyond any recognition due to innumerable bullet holes on their faces. That was a gruesome sight. Many people started crying. My friend Jafar used to live in Iqbal hall. I did not see his dead body. Later, I learnt that his dead body was found in his bed. Needless to say, the displayed corpses were merely a small fraction of the students when Pak army had murdered in Iqbal Hall on that dreadful night.”

গণহত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাকিস্তানী বাহিনী, গণহত্যার পর দিন থেকেই পাকবাহিনী চেয়েছে গণহত্যার  সমস্ত চিহ্নগুলো বহির্বিশ্ব থেকে গোপন করতে। তারা বলেছে, পাকিস্তানী বাহিনী ‘সুসভ্য’ বাহিনী, তারা কখনোই এভাবে গণহত্যা করে না। অথচ, ঢাকা শহরের রাস্তায়, আকাশে, বাতাসে ক্রন্দন আর হাহাকারের ছাপ, ছিন্ন ভিন্ন চারিদিক, সব জায়গায় গণহত্যার সুস্পষ্ট নিদর্শন।  এই ধ্বংসযজ্ঞ আর রক্তের দাগগুলো কীসের আলামত তাহলে? এগুলো নাকি কিছু বোকা গাধা ছাত্রদের স্বেচ্ছায় ঢেলে দেয়া রুধির ! জোয়ানের গানে তারই রূপকাশ্রিত বর্ণনা –

Did you read about the army officer’s plea
For donor’s blood? It was given willingly
By boys who took the needles in their veins
And from their bodies every drop of blood was drained
No time to comprehend and there was little pain …

দিন দুনিয়ার হাল হকিকত জানা জোয়ান তখনই জানতেন যে একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধ কেবল যুদ্ধের ময়দানেই হচ্ছে না,  সরাসরি যুদ্ধের পাশাপাশি এসেছে সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী, নারী, কিংবা মায়েদের সর্বাত্মক আত্মত্যাগ।  এর মাঝে মিলে মিশে আছে বীরাঙ্গনাদের উদাস দৃষ্টিও।  তার গানে এভাবেই উঠে আসে যেন যুদ্ধের বাস্তব এক চলচ্চিত্র –

Once again we stand aside
And watch the families crucified
See a teenage mother’s vacant eyes
As she watches her feeble baby try
To fight the monsoon rains…

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের আপামর জনগণ যখন দেশের জন্য যুদ্ধ করছে, লড়ছে না-পাক বাহিনীর হাত থেকে প্রিয় দেশ-মাতৃকাকে মুক্ত করতে,  সে সময় ত্রিশ বছর বয়সী এক নারী শিল্পী বেছে নিয়েছিলেন যুদ্ধের এক অভিনব মাধ্যম, নিজের মতো করে। গিটার হাতে বাংলাদেশের মানুষদের উপর গণহত্যার প্রতিবাদ জানালেন তিনি। রচনা করলেন এক অমর সঙ্গীতের – SONG OF BANGLADESH।  যে সঙ্গীতের চরণে চরণে মূর্ত হয়ে উঠেছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের  অব্যক্ত বেদনা। ছাত্রদের উপর গণহত্যা, সেনাবাহিনীর তাণ্ডব, মানুষের হাহাকার, কুমারী মায়ের অসহায় দৃষ্টি, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, প্রতিরোধ সব কিছুই যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে গানটিতে –জোয়ান বায়েজের কথা আর সুরের এক স্বপ্নিল যাদুস্পর্শে । পুরো গানটিতে ২২ বার তিনি ‘বাংলাদেশ’ –এর নাম উচ্চারণ করে যুদ্ধরত একটি জাতির স্বীকৃতি দিলেন বিশ্বের দরবারে, স্বীকৃতি দিলেন মুক্তিকামী একটি জাতির, অর্ধ গোলার্ধ দূরের অচেনা অজানা একটি ছোট্ট দেশের, নাম বাংলাদেশ।

বিদেশ বিভূঁইয়ের এক শিল্পীর বাংলাদেশের প্রতি দরদের ব্যাপারটা হয়তো আমাদের জন্য অদ্ভুত মনে হবে, কিন্তু জোয়ানের জন্য তা ছিলো না কখনোই। তিনি সব সময়ই ছিলেন সংগ্রামী। সংগ্রামের প্রেরণা পেয়েছিলেন সেই ছোটবেলাতেই, তার পরিবারের কাছ থেকে।  তার বাবা আলবার্ট বায়েজ ছিলেন খুব বিখ্যাত পদার্থবিদ, এমআইটির অধ্যাপক ছিলেন অনেকদিন। তাঁর আবিষ্কৃত এক্স রে ডিফ্রেকশন মাইক্রোস্কোপ এখনো মেডিকেলের জগতে ব্যবহৃত হয়।    অথচ যখন এই বিখ্যাত পদার্থবিদকে ম্যানহ্যাটন প্রোজেক্টে কাজ  কাজ করার জন্য তাকে অনুরোধ করা হয়েছিলো তিনি পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। এমন কি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া প্রতিরক্ষা প্রকল্পের লোভনীয় চাকুরী কিংবা পুরস্কারকেও হেলায়  প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি তখন। বাবার এই আত্মত্যাগ, ঋজু মনোভাব খুব নাড়া দিয়েছিলো ছোট্ট জোয়ানের মনে। বড় হয়ে তিনিও তাই দাঁড়াতে পেরেছিলেন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। তিনি গান গাওয়ার পাশাপাশি ক্রমশ: বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়ে উঠেন। ষাটের দশকে মার্টিন লুথার কিং এর সাথে মিলে ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’এর সাথে জড়িত হন, জড়িত হন ‘ফ্রি-স্পিচ মুভমেন্টের’ সাথেও। সেখানেই তিনি পরিবেশন করেন তার বিখ্যাত গান ‘উই শ্যাল ওভারকাম সাম ডে’ বা ‘আমরা করব জয়, একদিন’ গানটি –

httpv://www.youtube.com/watch?v=RkNsEH1GD7Q

জোয়ান আজীবন যুদ্ধবিরোধী শান্তিকামী সৈনিক।  আজও তিনি ইরাকের উপর মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একই ভাবে সোচ্চার। ২০০৩ সালে ৬২ বছর বয়সে সানফ্রান্সিস্কোতে কনসার্ট করেছিলেন  ইরাক যুদ্ধের অবসান চেয়ে।  বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, শান্তি ও মানবাধিকারের স্বপক্ষে আজও তিনি এক জোরালো কণ্ঠস্বর। তিনি সমকামী, রূপান্তরকামী সংখ্যালঘু মানুষদের অধিকারের ব্যাপারেও গান গেয়েছেন অনেক, এমনকি তার ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গানটি একটু পরিবর্তন করে সংখ্যালঘুদের অধিকারের  দাবীতে পোস্ট করেছেন ইউটিউবে ২০০৯ সালে।  তবে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহ ছিলো সবচেয়ে প্রকট।  যুদ্ধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই দুইবার গ্রেফতার হন ১৯৬৭ সালে।  তিনি এসময় মার্কিন সরকারকে ট্যাক্স দিতেও অস্বীকার করেন। তিনি রেভেনিউ সার্ভিসের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে বলেন  –

“I do not believe in war. I do not believe in the weapons of war … and I am not going to volunteer 60% of my year’s income tax that goes to armaments.”

তিনি বাংলাদেশের গণহত্যার খবরে বিচলিত হবেন না তো কে হবেন? জোয়ান হয়েছিলেন। সুদূর আমেরিকায় বসে ভেবেছিলেন আমাদের কথা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির কথা। লিখেছিলেন একটি অসাধারণ গান, যেটি প্রস্তুত করা হয়েছিলো ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ১৯৭১ সালের অগাস্ট মাসে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর জন্য। যদিও ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া বাংলাদেশ গানটির কথা অনেকেই জানেন,  কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে জোয়ান বায়েজের গানটি সেভাবে পরিচিতি পায়নি। জর্জ হ্যারিসনের গানটির কথা  মাথায় রেখেও আমার কাছে জোয়ান বায়েজের এই বিষাদময় সুরেলো গানটিই বেশি প্রিয় ছিলো সবসময়ই। আজো – প্রতিবার যখনই গানটি শুনি  চোখ ভিজে উঠতে চায়, বুকের গহীন কোনে কোথায় যেন বেজে উঠে রিনি রিনি এক ব্যথার সুর। ঠিক যেমন প্রতিবছর একুশের সকালে ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো’ গানটা শুনলেও যে অনুভূতি হয় মনে!

জোয়ানের পুরো গানটি এখানে –

SONG OF BANGLADESH
-Joan Baez.

Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh

The story of Bangladesh
Is an ancient one again made fresh
By blind men who carry out commands
Which flow out of the laws upon which nation stands
Which is to sacrifice a people for a land

Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh

Once again we stand aside
And watch the families crucified
See a teenage mother’s vacant eyes
As she watches her feeble baby try
To fight the monsoon rains and the cholera flies

And the students at the university
Asleep at night quite peacefully
The soldiers came and shot them in their beds
And terror took the dorm awakening shrieks of dread
And silent frozen forms and pillows drenched in red

Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh

Did you read about the army officer’s plea
For donor’s blood? It was given willingly
By boys who took the needles in their veins
And from their bodies every drop of blood was drained
No time to comprehend and there was little pain

And so the story of Bangladesh
Is an ancient one again made fresh
By all who carry out commands
Which flow out of the laws upon which nations stand
Which say to sacrifice a people for a land

Bangladesh, Bangladesh
Bangladesh, Bangladesh
When the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী বাবু জোয়ান বায়েজের এ বিখ্যাত গানটি বাংলায় রূপান্তর করেছেন, এবং গেয়েছেন।  বাবুর গাওয়া গানের কথাগুলো এরকমের –

বাংলাদেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ
অস্তাচলে যেখানে দিন শেষ,
লাখো প্রাণের রক্তে রাঙা দেশ

নতুন ইতিহাসে পুরানো সেই গল্প ফিরে আসে;
অন্ধ যারা তাদের হাতে ভার, দেশের সব বিধান বাঁচাবার,
মারছে তাই মানুষ বেশুমার।
বাংলাদেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ।।

বাংলাদেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ
অস্তাচলে যেখানে দিন শেষ,
লাখো প্রাণের রক্তে রাঙা দেশ

সবাই এসো দাঁড়াও হাতে হাত, মরছে দেখো মানুষ দিনরাত
কিশোরী মা দুচোখ ভেসে যায়, শিশুটি তার ধুকছে অসহায়-
বৃষ্টি আর ভীষণ কলেরায়।

রাতে যখন ঘুমের অবকাশ, পাকসেনারা ছাত্রাবাসে ত্রাস,
ছড়িয়ে পড়ে ভয়ের জটাজাল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায় মহাকাল,
শরীর হিম, বালিশ লালে লাল।
বাংলাদেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ।।

রক্ত চাই রক্তদাতা চাই,
বেরাতে এই আর্তি শুনো নাই
তরুণ যারা রক্ত দিতে হয়
বেদনাহীন সহজ নির্ভয়
দেশ ছাপিয়ে রক্ত নদী বয়।

বাংলা নামের দেশের ইতিহাসে পুরানো সেই গল্প ফিরে আসে
অন্ধ যারা তাদের হাতে ভার, দেশের সব বিধান বাঁচাবার,
মারছে তাই মানুষ বেশুমার।
বাংলাদেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ।।

বাবুর গানটি ইউটিউবে দেখা যাবে এখান থেকে –

httpv://www.youtube.com/watch?v=Rj6V1PBC41Q

২০০৪ সালে আমি জোয়ান বায়েজের  উপর ইংরেজিতে একটি লেখা লিখি, ‘Joan Baez and our Liberation War’ শিরোনামে।  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ব্যাপারে জোয়ানের অবদান উল্লেখ করে একমাত্র লেখা ছিলো সেটি তখন ইন্টারনেটে। পরে সেটাকেই আরেকটু পরিবর্তিত করে প্রকাশ করি মুক্তমনায় ২০০৬ সালে, লেখাটি দেখা যাবে এখানে। আমার গর্ব হয় এই দেখে যে,   ‘Joan Baez Bangladesh’ সার্চ দিলে লেখাটা সব সময়ই গুগলের প্রথম দিকেই থাকে। আমি আনন্দিত যে, আমার লেখাটি প্রকাশের পর অনেকেই জোয়ানের ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন, কেউ কেউ আমার লেখাটিকে রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে ব্লগও লিখেছেন (যেমন, যূঁথীর একটি ব্লগ আছে এখানে)। দৈনিক সংবাদপত্রেও জোয়ানকে নিয়ে খবর আসছে ( যেমন দৈনিক সমকালের একটি লেখা এখানে ) । এগুলো দেখলে আমি উচ্ছ্বসিত হই, বাঙালি তবে বিস্মৃতি-পরায়ণ অকৃতজ্ঞ জাতি নয়। উপকারের মর্যাদা দিতে জানে। তারপরেও মনের গহীনে একটু খচখচানি তো ছিলোই – ব্লগে কিংবা বাংলা সংবাদে জোয়ান এসেছেন বটে,  সরকারীভাবে জোয়ানকে তো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।   ২০০৬ সালের লেখাটি আমি তাই শেষ করেছিলাম এই বলে –

প্রিয় পাঠক, একটি বার চিন্তা করুন তো – কত বছর আমাদের লেগেছে  বীর প্রতীক সিতারা বেগম, বীর প্রতীক তারামন বিবি  আর বীর প্রতীক ওডারল্যাণ্ডকে খুঁজে পেতে।  সময় পেরিয়ে যাবার আগেই কি জোয়ান বায়েজকে আমাদের  রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা জানানো উচিৎ নয়?

আমার এই ছোট্ট চাওয়াটি বোধ হয় অবশেষে সফল হতে চলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর। বিডি নিউজের গত ১২ ডিসেম্বরের খবরে দেখলাম, সরকারীভাবে ১২৭ জন বিদেশীকে সম্মাননা দেবার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে আমার প্রিয় শিল্পী জোয়ান বায়েজের নামও।  খবরে প্রকাশ –

মুক্তিযুদ্ধে অবদান: সম্মাননা পাবেন ১২৭ বিদেশি

Mon, Dec 12th, 2011

ঢাকা, ডিসেম্বর ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মাননা দিতে বিভিন্ন দেশের ১২৭ জন নাগরিকের নাম চূড়ান্ত করেছে সরকার।

সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে এ নামগুলো চূড়ান্ত হয়। আগামী বছরের শুরুতেই এই সম্মাননা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম।

সম্মাননা জানানোর তালিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী, কবি অ্যালেন গিনসবার্গ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, সঙ্গীতশিল্পী জর্জ হ্যারিসন, জোয়ান বায়েজের নাম রয়েছে।

এ আমার জন্য এক বিশাল পাওয়া। মনে হচ্ছে অনেকদিন পরে যেন আমার ভাল ঘুম হবে, আনন্দে কাটবে এবারের বিজয় দিবসটি।  এই বিজয়ের মাসেই তাকে সম্মাননা দেয়ার কথা; তবে শোনা যাচ্ছে প্রস্তুতির অভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশীদের সম্মাননা নাকি নাও দেয়া হতে পারে এই ডিসেম্বরে। এবার যদি তাঁকে সম্মাননা নাও দেয়া হয়, নিশ্চয় দেয়া হবে সামনে কোন সময়। রাষ্ট্রীয়ভাবে যখন উদ্যোগ নেয়া হয়েই গেছে, তখন আমি খুবই আশাবাদী। খুবই প্রয়োজন ছিলো এই  মহতী উদ্যোগের, আমরা তো জানিই – ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’।

সত্তুর বছরের চির সবুজ এ শিল্পীকে জানাই আমার অভিনন্দন, আর যারা যারা তাকে সম্মানিত করার জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন, সরকারী কিংবা বেসরকারীভাবে, সবাইকে আমার এবং মুক্তমনার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা! (F)