(মানুষের ধন আল্লাহর ধন, রসূলের ধন) লিঙ্কঃ সূরা মোখতাসার ১,, সূরা মোখতাসার ২, সূরা মোখতাসার ৩, সূরা মোখতাসার ৪

গোলমালটা কোথায় হইল বুঝা যাইতেছে না। ঘণ্টাধ্বনি শুনিতেছি তবে তাহা স্ট্যাটিকময়। আবছা। কেবলই খ্যাড় খ্যাড় শব্দ হয়। বানীপথে অন্তরায় সৃষ্টি হইতেছে এটুকুই বুঝি। কে যেনো কহে ওহে পইদ্দো স্হগিত রাখিয়া গইদ্দো লিখো। কারন জিজ্ঞাসিতে না পারিলেও কি ভাবে যেনো বুঝিয়া লইতেছি যে এ মুহূর্তে আদেশ সেই রকমই। ইহাদের মাঝে কেহ কেহ কহিতেছে ৪ বিসর্গ ৩৪ ধরনের কোরানিক তথ্যসূত্রসমূহ তাহাদের নিকট জটিল গাণিতিক সমীকরনসম মনে হয়। কি করিয়া বুঝাই ইহার মানে কোরানের ৪ নম্বর সূরার ৩৪ তম আয়াত। তাহারা পারা বুঝে কিন্তু ইহাতে যে ১১৪ খানি সূরা রহিয়াছে এবং সেই সব সূরায় নানান সংখ্যক আয়াত রহিয়াছে তাহা বুঝিতে চাহে না। ওই বিসর্গ নিসর্গ সমূহই বড় হইয়া দাঁড়ায়। আমি তাহাদের দোষ দেখি না। তাহাদের ঈমান অতিশয় শক্ত। প্যাঁক কিতাব খুলিয়া যাঁচাইবার প্রয়োজন বোধ করে না। হাপকাঠমোল্লা টাইপ পাব্লিকের বয়ান শুনিয়াই কাজ হইয়া যায়। বাংলা ইংরেজী অনুবাদ দেখিয়া কেনই বা বৃথা কালক্ষেপন, ইহা অপেক্ষা পরকীয়া যুক্ত একখানি বাংলিশ টিভি নাটককেই তাহারা উত্তম মনে করে। উহারা এক্সট্রা ক্রেডিট এক্সট্রা সওয়াবেরে গুল্লিও মারে না।

যাহাই হউক চন্দ্রাহত হইয়া পশ্চাৎ গৃহাঙ্গিনায় উড়ালপাটির উপর বসিয়া রহিয়াছি। মনে আশা আলাদীনের মত উড়াল দিব, ইহাতে চড়িয়াই হয়ত মেরাজে যাইবো। এক দূর দ্বীপবাসিনীকেও সংগে লইবার গোপন আশা। তাহার আবার ডিজিটাল ক্যামেরা আর রেকর্ডার সংগে রাখিবার বেজায় শখ। প্রমানপত্র ছাড়া তাহার চলেই না। উড়ালপাটি হয়ত একটু ভারী হইয়া যাইবে, কিন্তু কি আর করা, কিছু বলিলে সে আবার ভাগিয়া যাইতে পারে। ভ্রমণও নিরানন্দ হইয়া যাইতে পারে। রিস্ক ফ্রী থাকাই উত্তম।

ঝিম মারিয়া বসিয়া আছি। ঝিম ঝিম ভাব প্রকট হইতে প্রকটতর হইতেছে, আলো নাকি আঁধার ঠিকমত ঠাহর হইতেছে না। ঝিম ঝিম দোল দোল ভাব, এমনি সময় হঠাৎ করিয়া বিকট শব্দ হইয়া উঠিল। থরহরি কম্পে অবলোকন করিলাম এক খানি নূরানী চক্রযান হইতে মালাকুল মূত হুজুর নামিয়া আসিতেছে। তিনি তর্জনী উঁচাইয়া মাটি কাঁপাইয়া পাঙ্খা ঝাপ্টাইয়া হুঙ্কার দিয়া কহিলেনঃ

-আজ আপনার খবর করিয়া দিব।

ভয়ে আমি ফাটা বাঙ্গিসম হইয়া গেলাম। করজোড়ে কাঁপিয়া কাঁপিয়া কহিলাম,

-কি হইয়াছে, কি আমার অপরাধ?

তিনি কহিলেন,

-আপনি পাব্লিকেরে এইসব সূরা মোখতাসার ফোখতাসার করিয়া কি সব গিলাইতেছেন। ব্যাবসার লালবাত্তি জালাইবার ধান্দা ফাঁদিয়াছেন নাকি। প্যাঁক কিতাবের বানী সহজবোধ্য করিয়া আপনার কি লাভ? রহস্য ভাঙিতেছেন। রহস্য না থাকিলে খাইবেন কি? ভোগ্লামি না করিলে কেহই কিছু মানিবে না। ধর্ম নামক এত বিশ্ববিশাল লাভজনক ব্যাবসা চালাইবেন কি করিয়া? আপনাকে লইয়া মাস্টার প্ল্যান ভেস্তিয়া যাইবে। মহিলাদের মহা বাড় বাড়িবে, কিছু নপুংসকও চান্স লইতে পারে।

-আমি কহিলাম কলাটা মুলাটা নিয়া তো ভালোই আছি, ভেট নিতান্ত কম পাইতেছি না। কিঞ্চিৎ ওবিস হইয়াছি বটে কিন্তু তাহাতে বিছানায় ব্যাতিত অন্য কোথাও খুব একটা অসুবিধা হইতেছে না।

মালাকুল মূত হুজুর রাগে কাঁপিতে লাগিলেন। জ্যোৎস্না রাস্তায় হিমুর কুকুরের মত রক্ত হীম করা গম্ভীর ঘরর ঘরর শব্দ করিতে লাগিলেন। ঘরর গম্ভীর শব্দাপেক্ষা আরো গম্ভীর স্বরশব্দে কহিলেনঃ

-বেকুবের মত কথা কহিবেন না। অন্য কেহ ব্যাপক লুটপাট শুরু করিবার পূর্বেই আপনাকে প্রমান করিতে হইবে আপনিই লোপাটশ্রেষ্ঠ। অন্যের ধন আল্লাহর ধন, রসূলের ধন ইত্যাদি কহিয়া মাল বানাইতে না পারিলে এইবার আপনি অণ্ডকোষ হারাইবেন। আমার পারমিট থাকিলে এখনই তাহা ব্যাবচ্ছেদ করিয়া ফেলিয়া দিতাম, অন্য কাহাকেও ভাগিনা ডাকিতাম; কিন্তু আজিকে আমাকে সেই অথরিটি দেওয়া হয় নাই। যাহাই হউক, ধোড় পাব্লিকেরে হাম্বাক বানাইয়া যথেচ্ছ লুটিবার জন্য আপনাকে কোরানের ৯ নম্বর সূরা, এত-তাওবা’র ৩৪, ৩৫ ও ১১১ নম্বর আয়াত মনে করাইয়া দিতেছিঃ

“………. আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।”

“সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার”।

“আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে………………” ।

ফেরেশ্তা হুজুর অতঃপর আরো কহিলেন,

-মুমিনের মালামাল লুটিবার আরো বহু তরিকা আছে। উহারা পটল তুলিবার আগেই মাল হাতাইয়া নিতে হইবে; বাৎলাইয়া দিতেছি আরো ক’খানা লুটপাটের সুরা ও আয়াত। ‘সূরা মুনাফেকুন’ কোরানের ৬৩ নম্বর সূরা। ইহার ১০ নম্বর আয়াতে আছে:

“আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম”।

-উহারা স্ত্রী সন্তানদের দোহাই পাড়িলে পাল্টা ওই মুনাফাকুন সূরার ৯ নম্বর আয়াত ঝাড়িবেন। এখানে লেখা আছে,

“মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত”।

হুজুরে মূত সাব আরো কহিলেন,

-হুইন্না মুসলমান যাহারা তাহাদেরকে উত্তেজিত করাইয়া অস্ত্রপাতি সহ ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ করিয়া দিতে হইবে। জিহাদ মিহাদ জাতীয় ভূজুং দিয়া একটা কিছু করাইয়া লইতে হইবে; যাহাতে গনীমতের মাল পাওয়া যায়। লুটকৃত ধন-সম্পদ, সোনা-দানা, টাকা-পয়সা, মাল-কড়ি, পূরুষ-নারী সকলই আমাদিগের। মন চাহিলে নিজেরটা রাখিয়া কিঞ্চিৎ ভাগ দিবেন আমসেনাদিগকে, মন না চাহিলে দিবেন না। তবে সহবৎ ও বেচিবার উদ্দেশ্যে খাস চ্যালাদের নারী ভাগ ও হাল্কার মধ্যে মালভাগ দিলেই উহারা ঠাণ্ডা হইয়া যাইবে। সহবৎ পদ্ধতি নিয়া আযল কাজল বেশিকিছু কহিবেন না, উহারা উহাদের পছন্দ পদ্ধতি ব্যাবহার করুক। বেশি উৎপাত করিলে কোরানের ৮ নম্বর সূরা ‘আনফাল’ এর ১ নম্বর আয়াত ধরাইয়া দিবেন, যাহাতে বলা আছে,

“আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক”।

একটানা এতক্ষন এত বানী ঝাড়িয়া অবশেষে ফেরেশ্তা হূজুর সামান্য দম লইবার অবকাশ পাইলেন।

হূজুরের ব্যাপক ডেলিভারির এই পর্যায়ে আমার কিছু কথা কহিবার সাধ জাগিলো, সাহস সঞ্চিয়া কহিলাম,

-হূজুর ইহা তো পুকুর চুরি, আর পাব্লিকই বা ইহা খাইবে কেন। তাহারা তো মুহাম্মদকেই শেষ নবী হিসাবে জানে।

-আরে রাখেন আপনার শেষ নবী, এই যে জ্ঞানবৃক্ষের ফল ভক্ষণকারী মুক্তমনা কিছু পাব্লিক মুহাম্মদের চরিত্র আর ফুলের মত পবিত্র রাখে নাই। আমাদের ব্যাবসার চোদ্দটা বাজাইয়া দিতেছে। উহারা থর জুজু জিউস জেরোয়েস্টার ভগ-বান বুদ্ধ রা ইব্রাহীম মূসা ইসা মুহাম্মদ রবীন্দ্র হুমায়ুন সহ সকল নবীর ধুতি পাজামা গাজামা জাঙ্গিয়া খুলিয়া লইয়াছে। মহিলা নবী নামাইবার ধান্দা করিতেছে। লেস-হিজড়া নবীও নামিতে পারে। সময় থাকিতে থাকিতে আপনি সাহস সঞ্চয় করুন। নতুন উদ্যমে ঝাঁপাইয়া পড়ুন। ফায়দা লুটুন, এই নিন বানী, তাহাদের কোরানের ৪ নম্বর সূরার ৮০ নম্বর আয়াত কহিবেন,

“যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি”।

-এক্ষেত্রে মহাম্মদের পরিবর্তে খালি আপনার নাম পড়িলেই চলিবে।

আমি কহিলাম,

-সূরা তো পাল্টাইয়া গেল। কোরানের বানী একটু ফানি হইয়া গেল না?

তিনি কহিলেন

-ধূরো মিয়াঁ, আপনাকে নিয়া মহা মুশকিল। আপনার ঘিলুর জায়গায় শুধুই গোমাতার বর্জ্য। এই নিন কোরানের ১৬ নম্বর সূরা না’হল এর বাণী, আয়াত নম্বর ১০১,

“যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না”।

বুঝলেন তো যে সূরা বদলানো যায়? এখন আপনি আপনার সুবিধা মত আয়াত বিমূর্ত কোবতেকারে যোগভাগ করিয়া নিন, ছন্দ মিলাইয়াতে অসূবিধা হইলে কবি হুসেন মুহাম্মদ হেরশাদের নিকট যান। তবে সাবধান, সংগে কোন বিবি লইবেন না।

আমি অতিশয় বিগলিত হইলাম। মাষ্টার প্লান অতি ভালো লাগিতে লাগিলো। ক্রমশঃ সাহস বাড়িল, ফেরেশ্তা মালাকুল মূতকে জিজ্ঞাসিলাম,

-হূজুর, এত দিন তো গ্যাব্রিয়েল হূজুর আমাকে বালাৎকার করিয়াছে, আজ আপনি কেন? একথা শুনিয়া মালাকুল মূত হূজুর বিমর্ষ হইলেন। তিনি একযোগে উষ্মা ও ঈর্ষা প্রকাশিয়া কহিলেন,

-গ্যাব্রিয়েল ব্যাটা বড় চালাক, তেলঘুষ দানে আমাদের ভাত মারিতেছে। আমার নাম বিকৃত করিয়া আজ্রাইল বানাইয়াছে। তাই আমি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়া চাপ্লিসে কিছু কাজ দেখাইতেছি। আপনাকে দিয়া সেই কাজ উদ্ধার করিব। উহাকে শিক্ষা দিয়া ছাড়িব। সে একাই নাকি বিশ্বস্ত ফেরেশ্তা। বিশ্বাস না হইলে কোরানের ২৬ নম্বর সূরা আশ শো’আরা’র ১৯২, ১৯৩, ১৯৮ নম্বর আয়াত

“এই কোরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে। আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হন”।

 

অকস্মাৎ ঝনাৎ ঝনাৎ ঠং করিয়া কোথা হইতে যেন বেকায়দা শব্দ উঠিল। আমিও কেরেক্ কেরে করিয়া কাৎরাইয়া উঠিলাম। দিবানিদ্রা ত্যাজিয়া গ্যালন খানিক মূত্ত্যাজিতে ছুটিলাম।

(জিজ্ঞাসাঃ মূ-ত্ত্যাজিয়া আরো গইদ্দো লিখিবো নাকি ঢিলা কুলূখ লইয়া পইদ্দে আসীন হইবো?)