লিখেছেনঃ মুরশেদ

পর্ব – ৩ ও ৪

দ্বিতীয় আকাশে যে ভদ্রলোকের সাথে দেখা হল তাকে ঠিক ভদ্র লোক বলব নাকি ভদ্রভুত বলব বুঝতে পারলাম না। সুন্দর চেহারা। চোখে মুখে আলোর উদ্ভাস। কাজী নজরুলের মত ঝাঁকড়া চুল। একটু মেয়েলি ঢঙ্গে কথা বলে। কথা বলার ফাকে ফাকে ধীরে ধীরে বাবরি দোলায় আর মাঝে মাঝে উপরে আকাশের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। সে সময়টায় সে যেন কিছুই বুঝতে পারে না। চাহনি কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। আমাকে দেখে মনে হয় অবাক হলঃ
-প্রথম বাঙালী শিষ্য, আপনাকে সু স্বাগতম!
– ধন্যবাদ।
-শেষ পর্যন্ত ভুতেশ্বরের বাঙলা বিজয়! দারুন ঘটনা! জলজ্যন্ত বাঙ্গালী শিষ্য অবশেষে মিলল। হে মনুষ্য সন্তান, ভুতের শুভেচ্ছা নাও।
– বুঝলাম না। আমাকে বলছেন মনুষ্য সন্তান। আর আপনি কি? আপনি কি ভুত?
-না ঠিক ভুত না। আবার মানুষও না।
-মানুষ আর ভুত ছাড়া এ জগতে আর কিছু নাই। চাপা মারবেন না।
– না চাপা না। ফলের কাহিনীটাকি আপনার জানা আছে?
-কোন ফল? জ্ঞান ফল? আদিমের বউ চুরি করে খেয়েছিল? ভুতেশ্বর পায়নি? এইসব?
-হ্যা। এইসব। এই সবই সত্যি। সব চেয়ে সত্যি ফলটা ভুতেশ্বর পায়নি। তাই তাঁর কামভাব জাগ্রত হয়না। তিনি কামশুন্য। তবে কী, একদিন তাঁর কামভাব জাগ্রত হয়েছিল।
-তাই নাকি? কিভাবে?
-সেদিন ছিল শুক্লা পক্ষের শেষ তিথি। তিনি মর্ত্যে গেছিলেন। এই তিথিতে চন্দ্র তাঁর সমস্ত মায়া জগতের অন্ধকারের মাঝে ঢেলে দেয়। জগতে তখন বিরাজ করে অপার মায়ার আধার। সে মায়ায় তাঁর কাম উদ্ভব হয়েছিল। তা নিবৃত্তির জন্যে তিনি হন্যে হয়ে সঙ্গী খুজছিলেন। অবশেষে পেলেন এক কুমারী নারীকে। তাতে তিনি তাঁর কাম নিবৃত করলেন। তিনি তৃপ্ত হলেন।
– ও আচ্ছা! তারপর?
-তাঁর সে কামের ফসল হলাম আমি। অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক ভুত। আপনারা যাকে সংকর বলেন। বলতে পারেন আমি ভুত সংকর।
-“তাঁর মানে আপনিই সে ভুতেশ্বরের পুত্র যাকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়েছিল ?” তিনি মাথা ঝুকালেন। বললাম- মর্ত্য বাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আপনাকে হত্যা করা ঠিক হয়নি।
দেখলাম তাঁর চোখ ছল ছল করে উঠল। তাড়াতাড়ি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললাম- আপনি কত বড় একজন ডাক্তার ছিলেন! কত অন্ধের চোখ ভাল করে দিলেন, কুষ্ঠ রোগীর কুষ্ঠ দূর করলেন। এমনকি মৃত ব্যক্তিকেও জীবিত করলেন। কোন টেস্ট ফেস্ট দরকার নাই। শুধু হাত দিয়ে একটু ছুঁয়ে দিলেই সব রোগ সেরে যেত। এমন ভাল ডাক্তার আজকাল দেখা যায় না। স্বর্গে আপনার কেমন পসার হয়েছে?
– নারে ভাই। এখানে কেউ আমারে পোঁছে না। রুগি পাব কই যে ডাক্তারি ফলাব। সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। স্বয়ং ভুতবাবাই আমাকে দিনে রাতে গালাগালি করে।
-কেন?
-তিনি আশা করেছিলেন আমার মাধ্যমে জগতে তাঁর বংশ বৃদ্ধি করবেন। কিন্তু কিছুই তো করতে পারলাম না। তাঁর আগেই জগতের মানুষ ধরে আমারে স্বর্গে পাঁঠিয়ে দিল। তাঁর বংশ বিস্তারের ইচ্ছায় গুড়ে বালি।
-আপনি তো আবার যাবেন! এমন কথাই তো শোনা যায়। তখন না হয়…….!
-আবার! আবার মর্ত্যে যাব! আমারে কি পাগলে কামড়েছে?
-কেন অসুবিধা কি?
-এখন যদি মর্ত্য গিয়ে কেউ ঘোষণা দেয় ভুতেশ্বর তাকে পাঠিয়েছে, অবিশ্বাসীর দরকার পড়বে না, বিশ্বাসীরাই তাকে খুন করবে।
-আপনি মোজেজা দেখাবেন। মোজেজা দেখালে সকলে বিশ্বাস করবে।
ভুতপুত্র হাসতে লাগল। কিছুক্ষন মাথা নীচু করে থাকলেন। তারপর একটু নীচু স্বরে বললন- দেখুন মোজেজা জিনিসটা কেউ দেখায় না। তবে বিশ্বাসীরা দেখে।
-কেমন?
-ধুরুন আমি আপনাকে বললাম, আমি আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদকে দুভাগ করে ফেলতে পারি। আপনি তা বিশ্বাস করলেন। এখন আপনি অন্য বিশ্বাসীদের বলবেন ভুতপুত্র আঙুলের ইশারায় চাঁদকে দুভাগ করে ফেলতে পারে। তারাও তা বিশ্বাস করবে। কেননা বিশ্বাসীরা মোজেজা শুনতে পছন্দ করে। আমার মৃত্যুর পরে লোকে জানবে আমি আঙুলের ইশারায় চাঁদকে দুভাগ করেছিলাম। মদন তাঁর সাক্ষী!
-কিন্তু প্রথমে যাকে গুলটা মারা হয়, সেই বা বিশ্বাস করে কেন?
– বলতে পারেন সেটাই একটা মোজেজা । এমন ঘটনা দেখানোর জন্যে প্রয়োজন অতি অনুগত ও স্টুপিড টাইপের একজন অনুসারী। তাকে স্বর্গের সুসংবাদ দেবেন। প্রয়োজনে তাকে ‘সত্যের সাক্ষ্যদাতা’ উপাধি দেবেন।
-তাহলে তো এমন মোজেজা এখনো দেখানো যায়।
– এখন সেরকম স্টুপিড অনুসারী কোথায় পাবেন? নাস্তিক আর যুক্তিবাদিতে জগত সয়লাব হয়ে গেছে। স্বয়ং বাবা ভুতেশ্বরও এখন মর্ত্যে যেতে ভয় পান।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। মর্ত্যের কি বেহাল দশা। মানুষ শুন্যে গমনের জন্যে এখন আর গাধা, ঘোড়া, পঙ্কীরাজ, সর্প বা উটের খোজ করেনা। তারা উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার বা রকেটে আরোহণ করে। এমনকি বিশ্বাসীরা তীর্থেও যায় উড়োজাহাজে চড়ে! সূর্য অস্ত যায় এক পঙ্কিল জলাশয়ে- এই মহান সত্যটাও আজকাল কেউ জানেনা। ছোট ছোট বাচ্চাদের মাথা নষ্ট করে শেখান হচ্ছে- সূর্য নাকি অস্তই যায়না। অথচ আমি নিজ চোখে দেখে এলাম অস্ত যাওয়া সূর্যটাকে। পুকুর থেকে তুলে এনে প্রথম আকাশের উপরে একটা খোটার মাথায় শুকাতে দেয়া হয়েছে। এই মদন সাক্ষী- সূর্য পুকুরেই অস্ত যায়। অথচ কেউ তা মানেনা। ঘোর অন্ধকার জামানা!

ভুতপত্র তাঁর মায়ের কথা জানতে চাইলেন। তাঁর সমাধি কোথায় হয়েছে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি ঠিক বলতে পারলাম না। বললাম- খুব দুঃখের বিষয় তাঁর সমাধি কিম্বা তাঁর সম্পর্কে কোন কিছুই মূর্খ ঐতিহাসিকগন লিখে রাখেননি। আরও দুঃখের বিষয় আপনার সম্পর্কেও কোনো ঐতিহাসিক দলিল পাওয়া যায় না। যেটুকু জানা যায় তা হল পবিত্র গ্রন্থ সমূহে। তবে মন্দিরে মন্দিরে আপনার আর আপনার মায়ের প্রতিমা বানিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে সপ্তায় সপ্তায় মন্ত্র পাঠ চলছে। চলছে বিরাট বাণিজ্য। জগতে আপনার অনুসারীরাই সংখ্যায় বেশী। তাই বাণিজ্যও রমরমা।
তিনি বললেন- তাই হয়রে ভাই! বিশ্বাসীগন ব্যবসাটা খুব ভাল বোঝে।
সময় বয়ে যাচ্ছিল। তাঁর কাছ থেকে লাল মদ আর এক টুকরো রুটি খেয়ে বিদায় নিলাম।
তারপর আবার ছাগীর পিঠে চেপে বসলাম। বললাম- যাবেন নাকি আমার সাথে? বাবার সাথে দেখা করে আসবেন!
– না আপনি যান। আমারে দেখলে তাঁর মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায়। তিনি আমারে ত্যাজ পুত্র করেছেন।
-কেন?
-আমারে বলেন নপুংশক। আমার পরের জন মহাউন্মাদ না কি যেন নাম সে নাকি কাম লীলায় বিপ্লব করে ফেলেছেন। সে শিষ্য সমাজের শ্রেষ্ঠ কাম পুরুষ। অথচ আমি কয়েকজনের সাথে পায়ু লীলা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। আফসোস!
-আপনার মন্দিরের পুরোহিতেরা এখন পায়ুলীলা আর শিশু লীলায় বিশ্ব বিখ্যাত!
ভুতপুত্র মাথা নীচু করে থাকলেন। কোনো কথা বলছেন না দেখে বললাম- এবার যাই। আপনি তো আর মর্ত্যও ফিরবেন না।
-না ফিরব না। এখন ফিরলে আমারই পুরোহিতেরা আমার উপর উপগত হবে।
-কিন্তু মর্ত্যবাসীরা আপনার প্রতীক্ষায় আছেন? সে প্রতীক্ষা কি শেষ হবে না?
– হবে। তাঁর জন্যে আমার যাওয়া দরকার হবেনা। একদিন দেখবেন একদল সাধু নতুন একটা গ্রন্থ লিখে প্রচার করবে আমার পুনরাবির্ভাব আর পুনঃ অন্তর্ধানের অতি প্রমান্য ঘটনা সমুহ। নতুন আরেক দল বিশ্বাসী তৈরি হবে। আসলে প্রতিটা বিশ্বাসীই ভুতেশ্বরের এক একটা অনন্য মোজেজা।

এতগুলি আকাশ বানানোর মানেটা যে কী বুঝি না। কোথাও কিছু নেই। ফাকা খটখটে সব আকাশ। প্রথম আকাশের উপর তাও সূর্যের দেখা পেলাম। অন্য আকাশগুলোতে কোনো কিছুই নেই। আকাশ বলতে শুধু আকাশই। দূতকে বললাম সূর্য নাই, চন্দ্র নাই, কোনো তারা পর্যন্ত নাই। এ সমস্ত এলাকায় দিনরাত কিভাবে হয়?
বার্তা দূত কোনো কোথা বলল না। কেমন যেন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। তাঁর চোখে মুখে কৌতুকের ছাপ বেশ স্পষ্ট। বললাম- কি, ভুল বললাম ? ছাগীটা ম্যা ম্যা করে কেমন বিদঘুটে হাসি দিল। বুঝলাম খুব মূর্খের মত প্রশ্নটা করে ফেলছি।
-‘দিন বা রাতের সাথে তো সূর্য চন্দ্রের কোন সম্পর্ক নাই’। দুত বিষয়টা ক্লিয়ার করল। বলল- ভুতেশ্বর বলেন-‘দিবস কখনও ধরতে পারবে না রাত্রী কে, রাত্রী কখনও দিবসকে’। এ এক পরম বাণী ও পরম বিজ্ঞান। এর মধ্যে আছে চিন্তাশীলদের জন্যে মহা নিদর্শন। সূর্য দিনের বেলায় আকাশ দিয়ে সন্তরণ করে চলে, কিন্তু রাতে বসে বসে ঝিমায় আর ভুতের নাম জপ করে। মহাউন্মাদ ব্যাপারটা বলে যায়নি?
বললাম- বলেছে। কিন্তু মর্ত্যের উন্মাদ ব্যাবসায়ীরা এখন তাঁর কথাকেও শুদ্ধ আর আশুদ্ধ দুই ভাগে ভাগ করেছে। যখন যেটার দরকার সেটাকে শুদ্ধ ঘোষণা দিচ্ছে, আবার ঝামেলা হলে অশুদ্ধ বলে বাতিল করে দিচ্ছে। তাঁর কোন কথাটা যে সত্য, কোনটা মিথ্যে, কোনটা মানতে হবে, কোনটা হবেনা, কোনটা শুধু তাঁর নিজের জন্য, কোনটা অন্যদের জন্যে এসব এখন আর বোঝার কোনো উপায় নেই।
– তাহলে লোকেরা কিভাবে তাঁর পথ অনুসরন করছে?
– সেটাই তো মজা। অসংখ্য দল হয়েছে। অসংখ্য মতবাদ। অসংখ্য বক্তা। যে যার মত বলছে। যত মত তত পথ। যত পথ তত বাণিজ্য।
কথা বলতে বলতে আরও একটা আকাশ ভেদ করে গেলাম। সেই একই টাইপের প্রহরী, একই প্রশ্ন, তাঁর একই উত্তর। সব কিছু কেমন গতানুগতিক। খুব বিরক্ত লাগছিল। বললাম- এতগুলি সাদামাটা আকাশ বানানোর মানেটা কি? তারা-ফারা দিয়ে একটু ডেকোরেট করে তো রাখা যেত। দেখতে ভাল লাগত। ভুতেশ্বরের কি তারা শর্ট পরেছিল?
– আসলে টাইম পাওয়া যায়নি। মাত্র ছয় দিনে পুরা প্রজেক্ট শেষ করতে হয়েছিল। খুব তাড়াহুড়া করে বানানো। অনেক গ্যাপ থেকে গেছে।
– ছয় দিনে কেন? আরও দুচারদিন বেশী হলে ক্ষতি কি ছিল?
– অসুবিধা ছিল। সাত দিনে তো সপ্তাহ। সপ্তম দিনে উনি উনার চেয়ারে বসেছেন। তাঁর আগেই সাত সাতটা নিশ্ছিদ্র আকাশ বানাতে হয়েছে। শুধু আকাশ বানিয়েই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। না জানি কে কি করে ফেলে। তারপরে ঝোলান হয়েছে ৭০টি আগুন্দের পর্দা। তারপরে ওনার আসন। আসন বানানো মাত্র উনি টুপ করে বসে পড়েছেন। উনি আসলে কোনো রিস্ক নেননি। বেশী দেরী করলে অন্য কেউ যদি বসে পড়ে!
– ও আচ্ছা। প্রসঙ্গ পালতে জিজ্ঞেস করলাম- ভুতেশ্বরের সব হিসাব নিকাশ শুধু তিন, পাঁচ, সাত, সত্তর, বাহাত্তর কিম্বা আর দুএকটি সংখ্যা দিয়েই করা হয়। বড় সংখ্যা হলেও তা হয় ৭০ হাজার, ৭০ লক্ষ ইত্যাদি। অন্য সংখ্যগুলি তিনি কি ব্যবহার করেননা? যেমন উনিশ, কুড়ি, একুশ কিম্বা পঁচানব্বই, নিরানব্বই এইসব?
– ‘এগুলি আপনি কোথা থেকে শিখেছেন?’ দূত খুব অবাক হলেন।
-কেন ধারাপাত পড়ে?
-‘তাই বলেন! ভুতেশ্বর এসব সংখ্যা শিখবেন কোথা থেকে? স্বর্গে তো ধারাপাত পাওয়া যায় না’। তিনি একটু দীর্ঘশ্বাসের মত ছেড়ে বললেন- মর্ত্যের মানুষেরা কত কিছু আবিষ্কার করেছে! কিন্তু স্বর্গে কোন আবিষ্কার নেই। সব কিছু সেই পুরনো সিস্টেমেই চলছে। সে একই পুরনো মন্ত্র। ভুতেশ্বর বলেন ‘হও’। আর তা হয়ে যায়।
ছাগীটা আবার ম্যা ম্যা করে হেসে উঠল। আবার সেই বিচ্ছিরি বিদঘুটে হাসিটা। পিত্তি জ্বলে গেল। দূতকে বললাম- ওর আবার হাসির কি হোল?
-ঐ যে বললাম- ভুতেশ্বর হও বললেই হয়ে যায়। সেই কথাতেই হাসছে। সে আসলে এই হও মন্ত্রে বিশ্বাস করে না। বেটা লালন ফকীরের ভক্ত হয়েছে!
– সে কেন ‘হও’ মন্ত্র বিশ্বাস করেনা?
– তাঁর ধারণা ভুতেশ্বর যখন দেখেন কোন কিছু হচ্ছে- তিনি তাড়াহুড়ো করে হও বলে দেন। দুনিয়া জুড়ে যখন ঝড়, তুফান, ভুমিকম্প কিম্বা মহাপ্লাবন হতে থাকে, উনি উনার আসনে বসে শুধু ‘হও’ ‘হও’ বলতে থাকেন। একবারও ‘থামো’ বলেননা। ছাগী মনে করে তিনি আসলে কিছুই পারেননা, খালি ক্রেডিট নেন।
– ছাগী মানুষ! তাঁর বুদ্ধি শুদ্ধি তো কম হবেই। দূত কে সান্ত্বনা দিলাম। ছাগীর গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম- আমার মধুছাগী, আমার মধু-তুমি ভুতেশ্বরের ক্ষমতায় অবিশ্বাস করোনা লক্ষীসোনা।
আরও কয়েকটা আকাশ পাড়ি দিলাম। আরও কয়েকজন শিষ্যের সাথেই দেখা হল। একটা বিষয় বেশ লক্ষ্য করলাম ভুতেশ্বরের ব্যাপারে কারও তেমন একটা উচ্ছ্বাস নেই। তাঁর কথা জিজ্ঞেস করলে বিরক্ত হয়। কেউ বা এড়িয়ে যায়। তাকে মানতে হয় তাই মানা, না মানলেই যেন ভাল ছিল! ব্যাপারটা ভাল ঠেকল না। স্বয়ং ভুতেশ্বরকে নিয়ে এমন উদাসীনতা! এ যে ঘোর পাপ! বার্তা দূতকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এটা সেটা বলে এড়িয়ে যায়। আর ছাগী তো শুধু ম্যা ম্যা করে। মনের ভিতরটা কেমন খচ খচ করছে।
সপ্তম আকাশটা পার হয়ে খুব বৃদ্ধ ধরনের এক শিষ্য পেলাম। অতি বৃদ্ধ, চুলদাড়ি সব সাদা। একটা মন্দিরে উপুড় হয়ে ভুতেশ্বরের প্রার্থনা করছে। বার্তাদূত বললেন- এই সেই মন্দির। এখানে সব স্বর্গ দুতেরা ভুতেশ্বরের প্রার্থনা করে। দেখেছেন –কি বিশাল মন্দির!
-হ্য বড়ই তো।
-প্রতি প্রহরে ৪০ হাজার দূত প্রার্থনা করে। একবার যে প্রার্থনা করে, প্রলয়দিবস পর্যন্ত তাঁর আর দ্বিতীয় বার প্রার্থনার সুযোগ হয়না।
-কেন?
– এত দুত! কিভবে হবে?
– তো এরকম কয়েক লক্ষ মন্দির বানিয়ে ফেল্লেই তো হয়। এত আকাশ খালি পড়ে আছে। তাছাড়া মন্দির বানালে জায়গার দখলটা ভাল থাকে। কোন রকমে একটা ভিত বসাতে পারলেই হল, জায়গা নিয়ে আর ক্যচাল করতে কেউ আসবে না। সঙ্গে যদি মন্দির কাম ভজন শিক্ষালয় তৈরি করা যায় তো কথাই নেই। হাজার হাজার ধর্ম সেনা তৈরি হয়ে যাবে। তখন আপনি যারে খুশী তারে ফুটাইয়া দিতে পারবেন।

ইতিমধ্যেই বৃদ্ধের প্রার্থনা শেষ হল। তিনি এগিয়ে এলেন। বার্তা দুত পরিচয় করিয়ে দিলেন।
-ইনি হলেন, তোমাদের সকলের ধর্মবাবা শিষ্য। তিনি মহান ও বিজ্ঞ। কেননা তিনি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে আপন পুত্রকে বধ করেছিলেন।
– ‘না না ঠিক আপন পুত্রকে না’- তিনি সংশোধন করে দিলেন। ‘বান্দীর গর্ভজাত আপন পুত্রকে। তাছাড়া বধ করি নাই। বধ করার ভান করেছিলাম। বউ আর বান্দী নিয়ে সংসার! দুটোকে একসাথে ম্যানেজ করা কি চাট্টিখানি কথা! অনেক রকম ভং চং করতে হয়’।