লিখেছেনঃ মুরশেদ

ছাগলের পিঠে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা, দিনের পর দিন। কম কষ্টের ব্যাপার না। কতদিন এভাবে বসে আছি জানি না। দিন নাকি রাত তাও জানি না। কিছু জিগালে ছাগল কোন উত্তর দেয় না। শুধু ম্যা ম্যা করে। যতসব রাবিশ ক্রিয়েচার!

অথচ কি খোশ মেজাজেই না ছিলাম মধ্যরাতে। আকাশে চাঁদ ছিল না। তাতে কোন দুঃখ নেই। চাঁদ ছিল আমার বাহুতলে। তাঁর নাম মধুমালা। মধুমালা! মধুমালা!! তাকে বললামঃ

-মধু, পটুয়া কামরুল না, এস এম সুলাতান না, কে এমন নিখুত শিল্প সৃষ্টি করেছে?

-তোমার ভাল লেগেছে?

-আমি তৃপ্ত। জীবনে প্রথম জানলাম উদ্গত যৌবনের গোপন কামনা মুহূর্তগুলির মধ্য দিয়ে ঘটায় অনন্তের বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রিয়তমা- কটি মাত্র ক্ষণ? এক প্রহর? কিম্বা তাঁর চাইতেও কম? অথচ মনে হয় আমার রক্তে, আমার শিরায় ধমনীতে যুগ যুগ ধরে বয়ে চলেছে বঙ্গোপসাগরের উষ্ণ স্রোত!

-এমন সুন্দর করে কিভাবে কথা বল তুমি? মুহূর্তের মধ্যে ঘটে অনন্তের বিস্ফোরণ?

তাঁর পরে ঘটল ঘটনাটা। মধুর ঘরের ছাদ নিমেষে দুভাগ হয়ে গ্যালো। সেই পরিচিত স্বর্গদূত আমাকে তুলে নিয়ে গেলেন সংসদ ভবনের পিছনে চন্দ্রিমা উদ্যানে। একটা গাছতলায় বসালেন। সেখানে কয়েকটা সস্তা পতিতা আর কিছু হিজড়া খদ্দের মনে করে এগিয়ে আসতেই স্বর্গদ্যুত তাদের লাঠি দিয়ে তাড়া করলেন। মেয়েগুলি হতচকিয়ে অন্যদিকে সরে গেল।

এরপর যা হল তা ভাবলেও আমার রক্ত হিম হয়ে যায়। একটা বোচা চাকু দিয়ে আমার বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত চিড়ে ফেলা হল। ভাবলাম আমার কিডনি বুঝি একটা গায়েব করে দেয়া হবে। অনেক ক্লিনিকেই কিডনির ভাল রেট দেয়। যকৃতের বাজারও খারাপ না। বললামঃ

-ভাই, কিডনি একটা নিয়েন। যকৃতে হাত দিয়েন না। এমনিতেই আমার হজমে বেজায় গণ্ডগোল।

-যম মার্কা স্বর্গদূত সাহেব বেজায় হাসলেন। “কোন চিন্তা নেই। কি খাইছেন মশাই। ভিতরে এমন ময়লা আবর্জনা কেন?”

-সদ্য স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। তাই দোকানের খাবারটা একটু বেশী পেটে গেছে।

-তাই বলেন। শুধু সস্তা কেমিক্যাল আর কৃত্রিম রঙ। ভাল করে ধুতে হবে। বুড়িগঙ্গার জল এনেছি। সব সাফ করে দেব।

মনে মনে বললাম- সাফ করেন। সমস্যা নাই। তবে সাফা করে দিয়েন না। বড় সাধের কিডনি, যকৃৎ !

তারপর হঠৎ করেই বলল- এই জন্তুটার উপর চড়েন। তাকিয়ে দেখি একটা ছাগল। দুপাশে বিশাল দুই ডানা। একটু কাছে গেলাম। নাতো! ছাগল না! ভাল করে চোখ রগড়ে দেখলাম। বডিটা ছাগলের। তবে মুখশ্রী ট! অবিকল মধুমালা। আমার মধু! আমার হানি! আমার রক্তের অনন্ত দুলিনী! সাত পাচ না ভেবে উঠে পড়লাম মধু ছাগীর পিঠে। তাঁর পর থেকেই চলছি।

ভুতেশ্বরের সাক্ষাৎ লাভের জন্যে এই লম্বা পথ পারি দিতে হবে। আকাশ পথে। তাও আবার একটা উড়ন্ত ছাগলের পিঠে চড়ে! কি কুক্ষনেই যে ভুতেশ্ব্বরের শিস্য হতে গেছিলাম! যত সব ভুতুরে ব্যাপার স্যাপার। কদিন ধরে শুধু চলছি আর চলছি। ছাগীটাও যে খুব একটা চোখে দেখে এমন তো মনে হয় না। আর একটু হলেই তো একটা ধোলাইখাল মেড বাংলা সাটেলাইটের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম আর কি।

তবে আকাশে উড়ার অনুভূতিটাও মন্দ না। আর কত কিছুই না জানলাম। দুনিয়ার তাবড় তাবড় বিজ্ঞনীগন মানুষরে কি আহম্মকই না বানিয়ে রেখেছে! মহাকাশে নাকি বাতাস নাই! আকাশ নাই! এসব আবাল বিজ্ঞনীদের নরকেও যায়গা হবে না। বাতাশ না থাকলে এই ছাগীযান ডানা মেলে উড়ে কি করে? আর আকাশ তো দেখাই যায়। কি সুন্দর তারকা খচিত নীল আকাশ। কোথায় কোন ছেড়া ফাটা নাই। ভুতেশ্বরের সৃষ্টিতে এক বিন্দু ফাক নাই।আকাশটা বিনা খুঁটীতে ছাদের মত বিছিয়ে দিয়েছেন পরম ক্ষমতাবান ও দয়ালু ভুতেশ্বর। নানা রঙের অসংখ্য তারা আকাশের গায়ে এমন ভাবে স্বর্গীয় গ্লু দ্বারা লাগানো হয়েছে মহাপ্রলয়য়ের আগে কিছুতেই তা খুলে পড়বে না।কেবল মাত্র মহাপ্রলয়য়ের দিনে আকাশটাকে যখন বিদীর্ণ করা হবে, তারা গুলো ঝুর ঝুর করে খুলে পড়বে। ভুতেশ্বরের সৃষ্টির মাহাত্ন দেখে ভক্তিতে উবুর হতে ইচ্ছে করল। তৎক্ষণাৎ ছাগীটার ম্যা ম্যা চিৎকার কানে এলো। বিদ্যুৎ বেগে দেবদূত ছুটে এসে আমাকে বাচালেন। আর একটু হলে ছাগীর পিঠ থেকে সোজা ভুপাতিত হতে বসেছিলাম। দেবদূতের চক্ষের দিকে তাকাতেও ভয় হয়ঃ

-আমার চাকরিটা খাবেন নাকি মশাই?

– সরি, একটু অন্য মনস্ক হয়ে গেছিলাম। ভুতেশ্বরের সৃষ্টি আকাশের কোথাও কোন ফুটা ফাটা পর্যন্ত নাই। কী অপূর্ব!

– হাসালেন মশাই। বাইরে থেকে যত নিখুত দেখেন, ভিতরে ম্যালা গ্যাঞ্জাম আছে। আকাশ গুলান নিয়ে ভুতেশ্বর খুব টেনশনে থাকেন।

-কিসের টেনশন?

-কেউ যদি এগুলি ভেদ করে উপরে উঠে যায় আর তাঁর রাজত্ব দখল করে ফেলে?

-তাই নাকি? বিশ্বাস হয় না। উনি কাউকে ভয় পান নাকি?

– দেখেন না, উনি আকাশে আকশে দরজা লাগিয়েছে। তাতে পাহারা বসিয়েছেন। পাহারাদারগন কনফার্ম না হয়ে একটা পিপড়াকেও দরজা দিয়ে ঢুকতে দেবে না। কড়া নির্দেশ।

দেব দ্যূতের সাথে কথা বলতে বলতে প্রথম আকাশের দরজার গোড়ায় পৌছালাম। খূব খিদে পেয়েছিল। ছাগীটাও বেশ টায়ার্ড। একটু বিশ্রাম দরকার।

দ্যুত কিছু শুকনো চিড়া খেতে দিল। ছাগিটার জন্যে স্বর্গীয় কাঁঠাল পাতা। চিড়া চিবাতে চিবাতে বললামঃ আপনিও খান।

– না। আমরা আগুনের খাবার খাই। আমাদের খাওয়া আপনারা দেখতে পান না, কিন্তু আপনাদের খাওয়া, হাগা মুতা সব আমরা দেখতে পাই। এ জন্যেই আপনারা শ্রেষ্ঠ জীব।

-দ্যুতের কথা শুনে প্রশান্তি অনুভব করলাম। আলস্যে ছাগীটার পিঠে হাত বুলতে লাগলাম। মধুমালার মুখটা মনের মাঝে ভেসে উঠল। ভুতেশ্বরের কি অপার মহিমা। আমার মধুমালার রূপে স্বর্গ ছাগল তৈরি করেছেন। কি সৌন্দর্য ! ভুতেশ্বর এক অবিশ্বাসী নারী মাঝে কি রূপ ই না লুকিয়ে রেখেছেন!

– মহাশয়, একটা কথা বলব? স্বর্গ দ্যুত একটু লাজুক ভঙ্গিতে মিটি মিটি হাসছে।

-বলেন।

– আপনার অন্তরে ভুতেশ্বরের যায়গায় দেখি মধুমালা নামক এক পরস্ত্রীর নাম জপ চলছে। এতো মহাপাপ!

-তাইতো, কি করা যায়?

-ব্রহ্মপুত্রের পবিত্র জল আর খানিকটা আছে। আপাততঃ খেয়ে নিন। বুক কাটা ছেড়া করার সময় নাই। প্রহরী এসে পড়বে।

-সে গেছে কোথায়?

– জানিনা। সম্ভবতঃ বাশীওয়ালার সাথে ১৬ গুটি খেলছে।

-বাশীওয়ালা কে?

– সেও এক স্বর্গ দ্যুত। কাম কাজ নাই। শুধু বাশী বগলে নিয়ে বসে থাকে।

– কেন, বাজায় না?

-না। ভুতেশ্বর কবে বলবে, তারপর বাজাবে। সেদিন মহা প্রলয় হবে।

– ও । বুঝলাম।

-অবশ্য বাশী বাজবে কিনা তাঁর ঠিক নাই। কখনও টেস্ট করা হয়নি।

-ভুতেশ্বরের বানানো বাশী। টেস্টের দরকার কি? বাজবে। বাজী ধরে বলতে পারি।

– রাখেন আপনার বাজী। কত মনুষ্য সন্তান দিনে রাতে পৃথিবীতে পাঠানো হচ্ছে। সব গুলি কি লাস্টিং করছে? মাতৃ গর্ভেই কতগুলি মারা পরছে। কতগুলি বিকলাঙ্গ হচ্ছে। স্বর্গে এসব নিয়ে কানাঘুশা কম হয় না। ভুতেশ্বর বলছে এসব অপদার্থ আত্নাদ্যুতের কাজ। আত্নাদ্যুতের আবার অভিযোগের শেষ নেই। বাশীদ্যুত সারাদিন ঝিমায়। কোন কাম কাজ নেই। পাহারাদারগুলার সাথে ১৬ গুটি খেলে। অন্যদিকে তাবৎ জাহানের সব জীবের জন্ম মৃত্যু তাকে একা হাতে সামলাতে হয়। স্বর্গে চলেন, আরও কত কিছু দেখবেন!