মূলঃ আলী সিনা

    তার অনুমতিক্রমেই এখানে অনুবাদিত হল।

ধর্মীয় পাগলামি বা বিরিঞ্চিগিরির(Cult) প্রভাব সাধারনত একটা ছোট্ট , নির্দিষ্ট চৌহদ্দির মধ্যেই থাকে। তাহলে, ইসলাম কিভাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মে পরিনত হল? কিভাবে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ এ জিনিসে ডুবে আছে, যাদের মধ্যে কিনা অগুনতি পরিমানে মেধাবী মানুষ রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদেরকে মিথ্যাচারের শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে। অসত্যের শক্তি সম্পর্কে একজন ওস্তাদ মিথ্যাবাদীর চেয়ে কেই বা বেশী জানে? জোসেফ গোয়েবেল, হিটলারের প্রজ্ঞাপন মন্ত্রী (Propaganda Minister ) ঠিক এমনই একজন, মিথ্যা এবং শঠতার প্রতিপালক। উনি একবার বলেছিলেনঃ “যদি বিরাট আকারের একটা মিথ্যা বারবার বল, তাহলে ওটাই সত্যে পরিনত হয়।“

একটা মিথ্যা কিভাবে পৃথিবীর প্রধানতম ধর্মে পরিনত হল সেই আলোচনায় ঢোকার আগে এই আলোচনার সাথে সম্পর্কিত যুক্তির কয়েকটি হেত্বাভাসের(Logical Fallacy) সাথে পরিচিত হয়ে নি আসুন।


এই হেত্বাভাসের প্রকৃতি হল, যেহেতু বিশ্বাসটা অনেক অনেক কাল ধরে চলে আসছে সেজন্য এটা অবশ্যই সত্য। অথবা বলা যায় “এটা এভাবেই হয়ে আসছে, সুতরাং এটা সঠিক”। এই হেত্বাভাসটা ইসলাম বাজারজাতকারীদের(Muslim Apologists) কাছে খুবই প্রিয় একটি যুক্তি। আরবীতে এটাকে বলে তাকরীর। এই হেত্বাভাস উল্লেখ করে যে, ইসলাম ১৪০০ বছর ধরে অবস্থান করছে, সুতরাং এটা সত্য হতে বাধ্য।

“হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে” এমন অনেক উদাহরন দেয়া যায় যেগুলো আখেরে ঠিকই নগ্ন হয়েছে। এমনই একটি মতবাদ ছিল ভূ-কেন্দ্রিকতা। গ্যালিলিও রংমঞ্চে আবির্ভুত হবার আগে সবার বিশ্বাস ছিল পৃথিবী বিশ্বব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে অবস্থিত। মানবসমাজের সমান বয়সী এই মতবাদ বিশ্বাস করত সূর্য, চন্দ্রসহ সমস্ত গগনপট পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। গুটিকয়েক মানুষই এই তত্ত্বের বিরোধিতা করেছে। অনাদিকালের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অভিজ্ঞ এই মতবাদও শেষ পর্যন্ত ভুল প্রমানিত হয়েছে।

আর্গুমেন্টাম অ্যাড নিউমেরাম(Argumentum ad numerum):
আরেকটি হেত্বাভাস যা মুসলমানেরা আঁকড়ে ধরে আছে তা হল, যেহেতু বিপুল সংখ্যক মানুষ ইসলামে বিশ্বাস করে তার জন্যে ইসলাম সত্য হতে বাধ্য। (অনেকটা এরকম”মাইনষয়ে খায়, আমিও খাই”।) তাদের কথা হলঃ “এতসব মানুষ কিভাবে ভুল হয়?”

আর্গুমেন্টাম অ্যাড নিউমেরাম বলে যে, যতবেশী সংখ্যক মানুষ একটি দাবী সমর্থন করবে তার সত্য হবার প্রবনতা তত প্রবল হবে।

শুধুমাত্র কেউ বিশ্বাস করে না বলেই একটা সত্য মিথ্যা হয়ে যায় না, তদ্বিপরীতভাবেও একই কথা বলা যায়। সত্যকে অধিকাংশের মতামতের কাছে বলি দেয়া যায় না। সত্য বিশ্বাসকে পরোয়া না করেই বেঁচে থাকে। আমরা ভোটাভুটি করে সত্য নিরুপন করতে পারি না। পৃথিবী কখনোই সমতল ছিল না, এমন কি যখন সবাই ওটাই বিশ্বাস করত তখনও না।

আর্গুমেন্টাম অ্যাড পপিউলাম (Argumentum ad populum):

আর্গুমেন্টাম অ্যাড পপিউলাম হল আর্গুমেন্টাম অ্যাড নিউমেরামের আরেকটি রূপ। এটা আমাদের জানায় যে, কোন একটা কিছু সত্য কারন সেটা বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে সানুনয়ী বা আবেদনসৃষ্টিকারী(Appealing)। আপনি এই হেত্বাভাস পালন করবেন যখন, আপনি কোন বিবৃতির ন্যায্যতা দাবী করবেন সেই বিবৃতি কতজন পছন্দ করে তার উপরে নির্ভর করে। আবেগপূর্ণ কথাবার্তা প্রায়শই এই ধরনের হেত্বাভাসের বড় বৈশিষ্ট। যেমনঃ ইসলাম ১৪০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে অবস্থান করছে এবং এর বিলিয়নের উপরে অনুসারী আছে। মানুষের জীবনের উপরে ইসলামের ব্যাপক প্রভাব ছিল এবং এখনও আছে। এটা পৃথিবীকে বীজগণিত এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক উপহার দিয়েছে। যখন ইউরোপ অন্ধকার যুগে আচ্ছন্ন তখন বাগদাদের রাস্তা ছিল তীব্র দ্যুতিময়। ইসলাম সবচাইতে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে এরা সবাই ভুল করেছে?

তো, কেন ইসলাম উতরে গেল? আপাতবিরোধী হলেত্ত সত্য, ইসলাম টিকে গেছে কারন এটা একটা মহামিথ্যা! এডলফ হিটলার তার মেইন ক্যাম্ফ(১৯২৫) বইতে বলেছেনঃ
“জনতার বৃহৎ অংশ একটা ছোট্ট মিথ্যার চাইতে বড় মিথ্যার শিকার হবে বেশি সহজে”। বৃহৎ মিথ্যার অন্তর্গত শক্তি এবং যতবড় মিথ্যা ততই বিশ্বাসযোগ্য শোনাবে এটা যদি কারো জানার প্রয়োজন ছিল, তো সেটা হল হিটলার। আরেকটা চমৎকার উক্তি হল
জর্জ অরওয়েলের, Politics and the English Language বইয়ের লেখক। তিনি লিখেছেনঃ
“রাজনৈতিক ভাষা…………নির্মিত হয় মিথ্যেকে সত্য হিসেবে এবং হত্যাকে সম্মানজনক হিসেবে আর হাওয়াকে কঠিন হিসেবে দেখানোর জন্য।”

বিশাল মিথ্যাগুলো কেন এত বিশ্বাসযোগ্য? এর পেছনের ব্যাখা হল, একজন সাধারন গড়পড়তা মানুষ খুব বড় ধরনের মিথ্যা বলতে সাহসই করে না। তার ভয় থাকে তাহলে তার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না আর সে সবার হাসির খোরাকে পরিণত হবে। আর সবাই যেহেতু ছোটখাট গা বাঁচানো মিথ্যা বলেছে বা শুনেছে সেজন্য মোটামুটি সবাই সেটা শোনা মাত্র ধরে ফেলে। বড়সড় এই মিথ্যা গুলো এতই অস্বাভাবিক হয় যে, শ্রোতা একরকম চমকে ওঠে। বেশীরভাগই এগুলো হজম করার জন্য প্রস্তুত থাকে না। যখন মিথ্যাটা হয় প্রকান্ড, তখন শ্রোতা বিস্ময়ে ভাবে কিভাবে একজন মানুষ এই ধরনের কথা বলার স্পর্ধা করতে পারে, ঔদ্ধত্য দেখাতে পারে। তখন আপনার হাতে থাকে দুটো মাত্র সিদ্ধান্তঃ এই কথা যে বলছে হয় সে মাথানষ্ট পাগল, বুজরুক আর নয়ত সে যা বলছে সত্যি। এখন যেকোন কারনেই হোক যদি এমন হয় যে, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার আগে থেকেই একটা সমীহভাব ছিল, তার ক্যারজম্যাটিক ব্যক্তিত্বের প্রতি অথবা কোন অঙ্গীকারবোধ থেকে, এবং যার জন্য তার পাগলামিকে আপনি প্রত্যাখ্যান করতে পারছেন না? তখন আপনি আসলে আপনাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেন যে সে যা বলছে তা সত্য, এমন কি তার দাবী অর্থহীন হলেও।

প্রকান্ড আকারের মিথ্যা আমাদের সাধারন বিচার বিবেচনাবোধকে উড়িয়ে দেয়। এটা অনেকটা কিলোগ্রাম মাপার যন্ত্র দিয়ে টন মাপার মতন। এটা আর সঠিক ওজন দেখায় না। এমন কি এটা মাঝে মাঝে কোন ওজনই দেখায় না। অতএব বলা যায়, হিটলার ঠিক ছিল। বিরাট আকারে মিথ্যা কখনও কখনও ছোট মিথ্যার চাইতেও বিশ্বাসযোগ্য হয়।

মোহাম্মদ যখন তার সাত আসমানে ঘুরে আসার কথা বলে, আবু বকর প্রথমে হতচকিত হয়ে যায়। কি করা যায় সে বুঝতে পারছিল না। কথাগুলো ছিল সম্পূর্ণই পাগলামি। তার কাছে শুধুমাত্র দুটো পথ খোলা ছিল। হয় তাকে স্বীকার করতে হবে, যে মানুষটার জন্য সে এত উপহাস সহ্য করেছে সে মাথায় ছিটগ্রস্থ, নইলে তাকে জোর করে তার সমস্ত কল্পকাহিনীতে বিশ্বাস করতে হবে। তার জন্য কোন মধ্যমপন্থা খোলা ছিল না।

ইবনে ইসহাক বলেন, যখন মোহাম্মদ তার কল্পনাগুলো সবার কাছে বলল, “তখন অনেক মুসলমান তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। কয়েকজন আবু বকরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার বন্ধু সম্পর্কে তোমার মতামত কী? সে দাবী করছে সে গতরাতে জেরুজালেমে গিয়েছিল, সেখানে নামাজ পড়েছে, আবার মক্কায় ফিরেও এসেছে!
উত্তরে আবু বকর তাদের মিথ্যাবাদী বলল। তখন তারা বলল, সে(মোহাম্মদ) তখনও মসজিদে বসে এই কথাগুলো বলছে। আবু বকর বলল, যদি সে ঐ কথা বলে থাকে তাহলে সত্যিই বলেছে। আর এ কথায় এত বিস্ময়েরই বা কি আছে? উনি তো আমাকে দিনে অথবা রাতে স্বর্গ থেকে আল্লাহর যোগাযোগের কথা বলেছেন, এবং আমি বিশ্বাসও করেছি। এটাতো তোমরা যা নিয়ে লাফালাফি করছ তার চেয়েও বেশী বিস্ময়কর!

নিখুঁত যুক্তি। বস্তুত আবু বকর আসলে যা বলেছিল তা হল, যখন আপনি আপনার যুক্তিকে শিকেয় তুলে অযৌক্তিক জিনিসে বিশ্বাস করা শুরু করেন তখন আপনি যে কোন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেন। একবার যখন আপনি নিজেকে বোকা বানিয়েছেন তখন সারাজীবন বোকা হবার জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে, কারন বোকামির শেষ নেই। এমন ক’জন আছেন যারা ৫৪ বছরের এক বুড়োর সাথে ৯ বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে শুতে দেবে? এর জন্য দরকার চুড়ান্ত গাধামী। আর এই গাধামী শুধুমাত্র অন্ধ বিশ্বাসের মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আবু বকর, ততদিনে তার প্রায় সমস্ত সম্পত্তি মোহাম্মদ আর তার পাগলামির জন্য ব্যয় করেছে। এই লোকটা অনেক ঝুকি নিয়েছে। এই পর্যায়ে এসে তার বন্ধুর কথায় চলা ছাড়া আর কোন পথ তার ছিল না। সে পরিচালিত হচ্ছিল এটা চিন্তা করাটাই ছিল বেদনাদায়ক। এটা সে তার স্ত্রীর কাছে কীভাবেই বলত? কীভাবে মক্কার জ্ঞ্যানী গুনিদের কাছে বলত, যারা কিনা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছিল, তাকে মাথামোটা বলেছিল? আবু বকরের জন্য পেছন ফেরার দরজা বন্ধ হয়ে গিয়ছিল। সে শুধু একটা কাজই করতে পারত তাহল মোহাম্মদ যা বলে তা শুধু শুনে যাওয়া। তার বিবেককে কবর দিতে হয়েছিল আর মোহাম্মদের কল্পনায় বিশ্বাস করতে হয়েছিল। যখন একজন মাত্র মানুষের উপরে আপনি আপনার সমস্ত বিশ্বাস রাখেন এবং তার জন্য বিশাল ত্যাগ স্বীকার করেন, তখন আপনি আপনার স্বাধীনতা ছুড়ে ফেলেন আর পরিণত হন তার হাতের পুতুলে। আর এই জিনিসটাই বিরিঞ্চিবাবারা তাদের অনুসারীদের কাছ থেকে চায়। শুধুমাত্র এ ধরনের একনিষ্ঠতাই পারে তাদের নার্সিসিষ্ট(এটার বাঙলা কী??) চাওয়াকে সম্পূর্ণভাবে চরিতার্থ করতে।

মোহাম্মদের ঐসব গালগপ্প আবু বকরের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু তারপরেও অবশেষে সে তাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিল একারনে যে, তাকে ত্যাগ করা মানে হল মেনে নেয়া যে সে এতদিন গাধামী করেছে আর সেটা হত একটা বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। আপনি যাকে ঈশ্বরের দূত বলে মেনে নিয়েছেন তার সমালোচনা করা বেশ কঠিন একটা কাজ। বস্তুত এটা একটা বেশ বীরত্বপূর্ণ কর্ম, যেটা দূর্বল মনের একজন বিশ্বাসীর পক্ষে অসম্ভব। যতই আপনি আপনার স্বাধীনতা ত্যাগ করছেন, যতই ঐ ব্যক্তির জন্য ত্যাগ স্বীকার করছেন, তাকে ছেড়ে যাওয়া ততই কঠিন হয়ে পড়ছে। আপনি কীভাবে আপনার বন্ধু বান্ধবদের কাছে মুখ দেখাবেন, বলবেন আপনি এতদিন প্রতারিত হয়েছেন? আপনার বিবেকের সাথেই বা কীভাবে আপোষ করবেন এতগুলো বছর, এত অর্থ নষ্ট করার জন্য?

একজন গড়পরতা সাধারন মানুষ যেটা বুঝতে পারে না তা হল, এই বিরিঞ্চিবাবারা মোটেও কোন সাধারন ব্যক্তি নয়, তারা সাইকোপ্যাথ। কিন্তু তাদেরকে ধরতে পারাটা খুব একটা সহজ নয়। এই নার্সিসিস্ট গুলো প্রায়ই যে শুধু স্মার্ট তাই নয়, প্রতিভাবানও বটে। তারা কমনীয়, হাসিখুশী, অমায়িক, বুদ্ধিমান এবং ক্যারিজম্যাটিক। বুদ্ধিমত্তার সাথে সাইকোপ্যাথলজির কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু সাইকোপ্যাথের যেটার অভাব সেটা হল বিবেক। উচ্চতর ধীশক্তি আর বিবেকহীনতা, এই দুয়ের সমাহার তাকে চরম বিপজ্জনক করে তোলে। এক্ষেত্রে হিটলার একটা যথাযথ উদাহরন। গানপয়েন্টে রেখে আপনার
যথাসর্বস্ব কেড়ে নেওয়া বেরসিক সাইকোপ্যথটার থেকে অনেক অনেক বেশী বিপজ্জনক হল ঐ চতুর সাইকোপ্যাথটা যে কিনা বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা আর মিথ্যে অঙ্গিকার দিয়ে মিলিয়ন মিলিয়িন লোককে বিপথে চালিত করে।

হিটলার, স্ট্যালিন ছাড়াও ইতিহাসের অনেক স্বৈরশাষকরাও ছিল বিকৃতমস্তিষ্কের। তবুও কয়েকজনই মাত্র তাদের পাগলামীতে সন্দেহ করেছে। স্বৈরশাষকের উন্নত ধীশক্তিই সম্রাটের অদৃশ্য ছদ্মবেশ। প্রত্যেকেই এটা দেখে এবং স্তুতি প্রকাশ করে। যারা এই পরিমন্ডলে পরে না তারাও পরবর্তিতে অন্যান্য সকলের দেখাদেখি বিশ্বাস করে ফেলে। এভাবেই মিথ্যাটা চিরস্থায়ী হয় এবং কোন প্রকার সমালোচনা সহ্য করা হয় না।

সহিংসতার ব্যাবহারঃ

সম্পূর্ণভাবে গ্রহন হবার পরেও মিথ্যাবাদী সাইকোপ্যাথ তার মিথ্যেকে বাঁচিয়ে রাখতে সহিংসতা ব্যবহার করতে প্রস্তুত থাকে। দাবী সমর্থন করতে জোর প্রয়োগ করা আরেকটি হেত্বাভাস যেটা অত্যন্ত সফলভাবে স্বৈরশাষকদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই হেত্বাভাসটার নাম আর্গুমেন্টাম অ্যাড ব্যাসিউলাম(Argumentum ad baculum)। এটা হয় যখন কেউ একজন একটি সিদ্ধান্ত অন্যদের গ্রহন করার জন্য জোর প্রয়োগ করে বা জোর করার হুমকি দেয়।

মোহাম্মদ তার বিজয়গুলোকে স্বর্গীয় সহায়তার কথা বলে মহিমান্বিত করত। সত্য হল সে জিতত,”Because he played Dirty”। আল্লাহ তার পক্ষে ছিল এই কারনে সে জেতে নাই, বরং সে জিতেছে কারন সে ছিল চতুর, নিষ্ঠুর এবং স্থিরসঙ্কল্প যেকোন ভাবে জেতার জন্য এমন কি শঠতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়ে হলেও! অপ্রস্তুত নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করতে হলে আপনার পক্ষে ঈশ্বরের থাকার কোন দরকার নেই।

আর্গুমেন্টাম অ্যাড ব্যাসিউলাম(Argumentum ad baculum)কে বলা যায় এভাবে, “শক্তিই মুক্তি”(Might is Right) হুমকিগুলো সরাসরি হতে পারে এমনঃ

* পৌত্তলিকদের যেখানেই পাও হত্যা কর। (Slay the idolaters wherever you find them. 9:5)
* আমি অবিশ্বাসীদের মনে ভয়ের সঞ্চার করবঃ অতএব ঘাড়ের ওপরে আঘাত কর আর তাদের থেকে সমস্ত প্রতঙ্গ কেটে ফেল।(I will instill terror into the hearts of the unbelievers: smite ye above their necks and smite all their finger-tips off them 8:12) ৮ঃ১২

অথবা হতে পারে একটু ঘুরিয়ে পেচিয়েঃ

* আর যারা অবিশ্বাস করে আর আমাদের নিদর্শনসমুহকে মিথ্যারোপ করে, তারা দোজখবাসী। (And as for those who disbelieve and reject Our Signs, they are the people of Hell 5:11) এটা হবে ৫ঃ১০।
* তার(অবিশ্বাসী) জন্য এই দুনিয়াতে রয়েছে লাঞ্ছনা, আর কিয়ামতের দিনে আমরা তাকে আস্বাদন করাব জ্বলা-পোড়ার শাস্তি। (For him [the disbeliever] there is disgrace in this life, and on the Day of Judgment We shall make him taste the Penalty of burning (Fire)) ২২ঃ৯।
* যারা আমাদের নির্দেশাবলীতে অবিশ্বাস করে, নিশ্চই তাদের আমরা অচিরে আগুনে প্রবেশ করাবো। যতবার তাদের চামড়া পুরোপুরি পুড়ে যাবে ততবার আমরা সেগুলো বদলে দেব তার পরবর্তে অন্য চামড়া দিয়ে যাতে তারা শাস্তি আস্বাদন করতে পারে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ হচ্ছেন মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞ্যানী। ((As for) those who disbelieve in Our communications, We shall make them enter fire; so oft as their skins are thoroughly burned, We will change them for other skins, that they may taste the chastisement; surely Allâh is Mighty, Wise. (Q. 4:56) ) ৪ঃ৪৫।

হুমকি এই প্রকান্ড মিথ্যেকে একটা নাটকীয় গুরুত্ব প্রদান করে। আঘাতটা এতই তীব্র যে একজন এ সম্পর্কে নির্বিকার থাকতে পারে না। “একজন মানুষ কীভাবে এতটা নিশ্চিত হতে পারে যে ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের শাস্তি দেবেন??” অথবা, “একজন মানুষ কীভাবে এতজনকে হত্যা করতে পারে শুধুমাত্র তাকে অবিশ্বাস করার জন্য??” আপনি তখন বিস্মিত হন এবং আরো বিশ্বাসপ্রবন হয়ে পড়েন এবং আর্গুমেন্টাম অ্যাড ব্যাসিউলাম(Argumentum ad baculum) কাজ করে। সর্বাধিক সহিংসতা সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য। উত্তর কোরিয়ানরা আক্ষরিক অর্থেই উন্মাদ কিম জাং-কে পূজো করে। এটা নিশ্চিতভাবেই এসেছে চরম সহিংসতা এবং সমালোচনার প্রতি কোন প্রকার সহনশীলতা না দেখনোর মাধ্যমে।

আউম শিনরিক্য (Aum Shinrikyo) কাল্টের গুরু শোকো আশারা(Shoko Asahara) যখন তার মুরিদগুলোকে টোকিয়োর সাবওয়েতে স্যারিন গ্যাস ছেড়ে নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করতে বলেছিল , তারা এই ন্যাক্কারজনক আদেশের বিরোধিতা করেনি। তারা তাদের বিবেককে স্তব্ধ করে রেখেছিল এবং এটাকে তাদের গুরুর উচ্চতর জ্ঞ্যানের পরিচয় ভেবেছিল। তাদের দুটো পথ খোলা ছিল সামনে। হয় তাদের স্বীকার করতে হত যে সে একজন উন্মাদ এবং তারা এতিদিন গাধামী করে এসেছে আর তাদের এত দিনের তিতিক্ষা সবই বৃথা নয়ত, বিশ্বাস করতে হত যে এই ব্যক্তির জ্ঞ্যানের গভীরতা মাপার মতন জ্ঞ্যান তাদের নেই, যার জন্য তার কাজে প্রশ্ন করা উচিত নয়। এই মানুষগুলো আশারা’র সাথে থাকার জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছিল। তাদের অতীত জীবনের সাথে সমস্ত যোগাযোগ তারা বিচ্ছিন্ন করেছিল। তারা যদি তাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করেও, তাহলেও যাওয়ার কোন জায়গা তাদের নেই। যেহেতু আশারাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা মতবিরোধ সহ্য করা হবে না সেহেতু সে যা বলে তাতে বিশ্বাস করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না। তারা সমস্ত সন্দেহ অগ্রাহ্য করে নিজেরকেই জোর করে বিশ্বাস করিয়েছিল।

ডাঃ ইকুয়ো হায়াসি(Dr. Ikuo Hayashi) ছিল একজন নামকরা ডাক্তার যে কিনা আশারার একজন একান্ত অনুসারীতে পরিণত হয়েছিল। যে পাঁচজন ব্যক্তিকে টোকিয়ো সাবওয়েতে স্যারিন গ্যাস ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল হায়াসি ছিল তাদের একজন। হায়াসি ছিল জীবন বাঁচানোর জন্য হিপোক্রেটিক শপথ নেয়া প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ফিজিশিয়ান। বিষাক্ত তরল মেশানোর একটা সময় হায়াসি তার সামনে বসা একজন মহিলার দিকে তাকিয়ে ভীত হয়ে পড়েছিল। সে জানত যে সে ঐ নারীকে হত্যা করতে চলেছে। কিন্তু পরমূহুর্তেই সে তার বিবেককে চুপ করিয়েছিল এবং নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিল একথা বলে যে “আশারাই সবচেয়ে ভালো জানে” এবং তার গুরুর জ্ঞ্যান নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়।

বিনা কারনে কাউকে হত্যার কথা সাধারন একজন মানুষ চিন্তাও করবে না। এই মানুষটা আপনাকে বিশ্বাস করিয়েছে আপনার স্বর্গ নরকে যাওয়ার চাবি তার কাছে। আপনার পরকালের ভাগ্য তার হাতে। আপনি তার উপরে আনুগত্য রেখেছেন এবং বিশ্বাস করেছেন সে যা বলেছে তাতেই আর আপনি এমনকি তার কথায় সন্দেহ করতেও ভীতিবোধ করেন। সে আপনাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে যে আপনি যদি তাকে সন্দেহ করেন তাহলে আপনি দোজখে যাবেন। আপনার হাতে দুটো পথ, উন্মাদ হিসেবে তাকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা নয়ত তার সমস্ত কিছুতেই প্রশ্ন না তুলে বিশ্বাস করা। আপনি নিজের কাছেই প্রশ্ন তুলছেন, “কী হবে লোকটা যদি সত্যি বলে?” তার অবাধ্য হলে আমাকে চিরকালের জন্য শাস্তিগ্রহন করতে হবে। এই ঝুকিটা কি নেয়া যায়? চাইলেই দেখা যাচ্ছে কতশত মানুষ তাকে গ্রহন করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা খুবই চালাক চতুর। তারা সবাই কি ভুল হতে পারে? আপনি আপনার নিজের সাথে কথা বলবেন নিজের বিবেককে চুপ করিয়ে। এখন আপনার কাছে প্রশ্ন আসবে আপনি কী করবেন? এই ধর্মটাই আপনার সবকিছু। সুতরাং আপনি আপনার বিবেক চুপ রাখেবেন, বুদ্ধিমত্তা বন্ধক রাখবেন আর মেনে নেবেন আপনাকে যা করতে বলা হবে। আপনার বাধ্যতাকে পুরস্কৃত করা হবে। আপনার সাথীরা আপনার নিষ্ঠা, ত্যাগ, বিশ্বাসের প্রশংসা করবে। আপনার কর্মকান্ড প্রথমে আপনার বিবেককে জাগ্রত করলেও এই সমস্ত প্রশংসা আপনার সান্তনা দেবে। আপনার ভেতরে ভালো লাগা তৈরী করবে। ক্রমেই আপনার কাছে খারাপকে ভালো এবং হত্যাকে স্বর্গীয় বলে মনে হবে।

সেজন্য আপনি বিশ্বাস করবেন আপনার গুরুর কথা যখন সে বলবে মানুষ হত্যা করে আপনি স্বর্গে যাবেন। যখন আপনাকে আপনার নিজের জীবন বলি দিতে বলবে, আপনি হাসিমুখে তাই করবেন। যখন আপনাকে আপনার নিজের সম্পত্তি, আপনার নিজের স্ত্রী কিংবা নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে তার সাথে শোবার জন্য চাইবে, আপনি কোন প্রকার সংকোচ ব্যাতিতই তা করবেন। আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তা, ইচ্ছাশক্তি তার কাছে বন্ধক রেখছেন। আপনার ভাবনা চিন্তা বা প্রশ্ন করার মতন কোন যৌক্তিকতাই থাকে না, শুধুমাত্র আদেশ পালন করা ছাড়া। আপনি প্রচন্ডভাবে চেষ্টা করবেন অনুগত হবার জন্য। সেবা এবং সংযমে আপনি আপনার সাথীদের ছাড়িয়ে যেতে চাইবেন। আপনাকে বলা হয়েছে, এবং আপনি বিশ্বাস করেছেন যে, যতবড় ত্যাগ ততবড় পুরষ্কার। আপনি ঐ ব্যক্তিকে সেবা করতে পেরে, তার জন্য আপনার সম্পত্তি ব্যয় করতে পেরে এবং আপনার জীবন তার এবং তার দর্শনের জন্য ত্যাগ করতে পেরে এবং তার ইচ্ছা পূরন করতে পেরে সম্মানিত বোধ করবেন।

ষোল বছরের কিশোর ওমাইয়ার মোহাম্মদের একটি যুদ্ধের সঙ্গী ছিল। মোহাম্মদ শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে এমন স্ফুরিত, প্রদীপ্ত ভাষায় বর্ননা করেছিল যে তার ধর্মান্ধতায় আগুন ধরে গিয়েছিল। খাওয়ার জন্যে মুঠোয় নেয়া খেজুর ছুঁড়ে ফেলে চিৎকার করে বলে উঠেছিল,”এগুলোই কী আমাকে জান্নাত থেকে দূরে রেখছে? নিশ্চিতভাবেই, আমি আমার প্রভুর সাথে দেখা করার আগে এর স্বাদ আর নেবো না।“ (“Is it these that hold me back from Paradise ? Verily, I will taste no more of them, until I meet my Lord!”)। এই কথাগুলো বলে সে শত্রুর শিবিরের দিকে এগিয়ে গেল এবং অতি শীঘ্রই তার আরাধ্য ভাগ্য বরন করল।

আপনি একবার বিশ্বাসী হয়ে গেলে, আপনার প্রিয় নবী মিথ্যে বলতে পারে সেই সম্ভবনাই উড়িয়ে দেবেন। সাইকোপ্যাথরা বিবেকশুন্য হয়। কোন প্রকার অনুশোচনা ছাড়াই এরা মিথ্যে বলতে পারে, মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ হত্যা করতে পারে। এটা করাকে তারা তাদের দায়িত্ব মনে করে। হিটলার বিশ্বাস করত সে ঈশ্বরের কাজ করছে। বস্তুত, তার প্রকাশিত বক্তব্যের মধ্যেই সেটা পরিষ্কার দেখা যায়। তার বই মেইন কেম্ফ-এ লিখেছেঃ
“সেজন্য আজ আমি বিশ্বাস করি, ইহুদিদের প্রতিরোধ করে আমি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করছি,, আমি পালনকর্তার জন্য যুদ্ধ করছি।“(Hence today I believe that I am acting in accordance with the will of the Almighty Creator: by defending myself against the Jew, I am fighting for the work of the Lord.)

আয়াতুল্লাহ মোনতাযেরী, খোমেইনির কৃপাদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত এবং তার সাথে মতের অমিল হবার আগ পর্যন্ত যার খোমেইনির স্থলাভিসিক্ত হবার কথা ছিল, তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, যখন খোমেইনি তিন হাজার ভিন্নমতাবলম্বী ছেলে মেয়েকে হত্যা করার হুকুম দিয়েছিল, তখন মোনতাযেরী তাতে বাধা দেন। খোমেইনি তখন বলেছিল যে, সে যেন চুপ থাকে এবং এ কাজে নাক না গলায়, এই কাজের জন্য সে(খোমেইনি) আল্লাহর কাছে জবাব দেবে।

সাইকোপ্যাথগুলোর নেতৃত্ব দেবার সহজাত ক্ষমতা থাকে। থাকে আড়ম্বরপূর্ণ ধ্যান-ধারনা আর থাকে ব্যাপক আবেদন। তাদেরকে মনে হতে পারে তারা শক্তিমত্তার স্তম্ভ এবং জন্মনেতা। এটা শুধু আপনিই না, আরো বহু “চালাক-চতুর” মানুষ একইভাবে তাদের “মাহাত্ম্য” চিনতে পারে। এই মানুষগুলোর প্রত্যকে কিভাবে ভুল হয়? আপনি বিস্মিত হবেন এবং তার উচ্চারিত কথাগুলোকে যুক্তি দিয়ে সরাসরি বাদ না দিয়ে ঐ কথাগুলোর কোন লুকায়িত এবং গূঢ় মানে খুজে বের করবেন যা ঐ কথাগুলোকে সমর্থন করতে পারে। তার কথাবার্তা যতবেশী অর্থহীন, আপনার কাছে মনে হবে ততবেশী অলৌকিক আর স্বর্গীয়।

হিটলার বিপুল জার্মানদের সমর্থন আদায় করেছে শুধুমাত্র তার মিথ্যাগুলোকে খাইয়ে। সে ছিল একজন মনোমুগ্ধকর বক্তা। যখন সে বক্তৃতা দিত, তার কন্ঠ প্রবল থেকে প্রবলতর হত এবং জার্মানীর ভেবে নেয়া শত্রুদের দিকে তার রোষ উগ্রে দিত। জার্মানদের মধ্যে সে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছিল। যতবড় মিথ্যা, ততবেশী বিশ্বাসযোগ্য, তার এই বিশ্বাস প্রমানিত হয়েছিল। তারা তাকে ভালোবাসত এবং তার অগ্নিবৎ ভাষনে কান্নাসিক্ত হত।

ইবনে সা’দ একটি হাদিসের উল্লেখ করে যেটা হিটলার আর মোহাম্মদের মধ্যে সাদৃশ প্রকাশ করেঃ ধর্মোপদেশের সময়, যখন সে গলা উচিয়ে কথা বলত তখন তার চক্ষু লাল হয়ে উঠত এবং একজন সেনাবাহিনীর অধিনায়কের মতন তার লোকেদের দিকে রাগান্বিতভাবে সতর্কবানী দিতেনঃ”পূনরুত্থান এবং আমি এই দুটো আঙুলের মতন( তার তর্জনী এবং মধ্যমা দেখিয়ে) । মোহাম্মদের পথনির্দেশনই সর্বত্তম এবং নিকৃষ্ট হল তার পরিবর্তন। আর পরিবর্তনের ফলাফল হল নরকবাস। ”

ইবনে সা’দ একই জায়গায় বলছেনঃ “ধর্মোপোদেশের সময় নবী একটা ছড়ি চালনা করতেন।”( সম্ভবত তার কর্তৃত্বের চিহ্নস্বরুপ!!)

অন্যকে শৈল্পিকভাবে, নির্লজ্জের মত নিজকার্যে নিপূণভাবে ব্যবহার করা এমন কোন কাজ নয় যেটা আপনি কিংবা আমি শিখে ফেলব, অথবা সহজে আয়ত্ব করব। আমাদের সবচেয়ে বড় “অসুবিধা” হল আমাদের “বিবেক”। বিবেকশুন্য সাইকোপ্যাথগুলোর মধ্যে ওরকম নিপুণতা প্রাকৃতিকভাবেই এসে পড়ে। হিটলার, মাও, পলপট, স্ট্যালিন এবং মোহাম্মদরা ছিল বিবেক রহিত।

কাজেই কেন ইসলাম সফল হয়েছে? এর চারটি উত্তর রয়েছেঃ
* ইসলাম বৃহত্তম মিথ্যা।
* মোহাম্মদ ছিল নিষ্ঠুর স্বেচ্ছাচারী।
* ইসলাম ভিন্নমতের বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় অসহনশীল।
* ইসলাম ক্ষমতার একটি অস্ত্র।

কেন সবাই মোহাম্মদের প্রশংসা করেছিল?
মুসলমানদের একটা প্রশ্ন খুবই বিচলিত করে তা হল, মোহাম্মদ যদি এতই খারাপ হবে তাহলে তার সাহাবীরা কেন তার এত প্রশংসা করেছিল? কেন কেউ তার নিন্দা করেনি, এমন কি সে মারা যাবার পরেও?

উত্তর হল, যে সমাজ ব্যক্তিপূজোর উপরে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে মনের কথা খুলে বলাটা সবসময় নিরাপদ নয়। সত্য কথা সমাজ থেকে আপনাকে বহিষ্কার করতে পারে, অথবা আরো খারাপ, আপনার জীবনটাই খরচ হয়ে যেতে পারে। যেসব মানুষ ভিন্নভাবে চিন্তা করতে পারে তারা মুখ ভালোভাবেই বন্ধ রাখতে জানে, জানে কিভাবে ঘাড়ের উপরে মাথাটা রাখতে হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আবি সারহ, যে কিনা মোহাম্মদের হয়ে কোরান লিখে দিচ্ছিল, সে বুঝে ফেলেছিল আসলে কোন প্রকার দৈববাণী ছিল না, মোহাম্মদই কোরান বানাচ্ছিল। তার মদীনায় পালিয়ে যেতে হয়েছিল এবং শুধুমাত্র মক্কার নিরাপদে পৌছে সে যা পেয়েছিল তা প্রকাশ করেছিল। তথাপি, মোহাম্মদ মক্কা বিজয়ের পর আবি সারহকে ততক্ষণাৎ খুজে নিয়ে এসে তাকে হত্যা নির্দেশ দেয়। তবে সে বেচে যায় ওসমান মধ্যস্থতা করায়, যে কিনা তার বৈমাত্রেয়(তারা একই সাথে প্রতিপালিত হয়েছিল) ভাই ছিল।

যেখানে সমালোচনা স্তব্ধ করে দেয়া হয়, সেখানে পরগাছা, পা-চাটারা প্রশংসা করে, মোসাহেবি করে, যা নয় তাই ফলাও করে প্রচার করে নেতার কৃপাধন্য হতে চাইবে। মোহাম্মদের মৃত্যুর পরেও, পরগাছাগুলো তাদের তোষামোদী অব্যাহত রাখে, মহিমাকীর্তন করে আকাশে তুলে ফেলে, এমন কি তার নামে অলৌকিক ঘটনার কথাও বলে এই চিন্তা থেকে যে এগুলো তাদের মর্যাদা বাড়াবে, তাদেরকে পুণ্যাত্মা হিসেবে দেখাবে। মোহাম্মদের গায়ে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর তকমা লাগানো হয়েছে, যদিও সে নিজেই কোরানে এ ব্যাপারে তার অপারগতার কথা বলেছে। (১৭ঃ৯৩)

১৪০০ বছর পরেও মুসলমানেরা একইভাবে আচরণ করে যেটা করত মক্কায় মোহাম্মদের সময়। যারা ভিন্নমত পোষণ করে তারা কথা বলতে ভয় পায়, আর যদি বলেই ফেলে তাহলে দ্রুত তাকে চুপ করিয়ে দেয়া হয়, অন্য দিকে ধামাধরা সামান্য পরগাছাগুলোকে সম্মান করা হয় মোহাম্মদ এবং তার “গুণাবলী” ধরে রাখার জন্য। এমন ভন্ডামী আর চাটুকারীতায় ভরা উৎপীড়নকারী পরিবেশে কীভাবে সত্যের জয় হবে?

এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে, মোহাম্মদ তার সমালোচনাকারীকে হত্যার নির্দেশ দিচ্ছে, আর ওমর, ছিল মোহাম্মদের ডান হাত, তলোয়ার হাতে সদাপ্রস্তুত থাকত, যারাই মোহাম্মদের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলত তাদের ঠোঁট কেটে নেয়ার হুমকি দিত। মোহাম্মদ চাটুকারীতাকে উৎসাহিত করত, আর মুক্তচিন্তা, সমালোচনাকারীদের শাস্তি দিত।

এরকম উৎপীড়নকারী পরিবেশে বসবাসকারী মানুষ একসময় সেই নেতার অতিমানবীয় গুণাবলীতে বিশ্বাস আনে এবং তাদের বিশ্বাস সত্য এবং বাস্তবে পরিণত হয়।

সম্প্রতি চক্ষুসার্জনদের একটি দল উত্তর কোরিয়াতে গিয়েছিল ছানিআক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করতে। হাজার হাজার নবীন, বৃদ্ধ লাইনে দাড়িয়েছিল এবং দৃষ্টি পুনরূদ্ধারের পরে ডাক্তারা স্তম্ভিত হয়ে দেখল তারা ডাক্তারদেরকে ধন্যবাদ না জানিয়ে প্রথমেই দেয়ালে ঝুলতে থাকা কিম ঝিং-এর প্রতিকৃতিতে প্রণত হচ্ছিল এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছিল, যেই স্বেচ্ছাচারী কিনা বছরের পর বছর তাদেরকে অন্ধ বানিয়ে রেখেছিল।

মোহাম্মদের মিশন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল অংশত কারন , সে এমন এক সময়ে, এমন এক জায়গায় দেখা দিয়েছে যেখানে সে ছিল, একদল অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন অধিকন্তু, উৎকট স্বদেশভক্ত লোকদের মাঝে। তার লুটতরাজের ধর্মকে খাড়া করাবার জন্য যেসব গুনাবলী দরকার সেগুলো আগে থেকেই তার অনুসারীদের মাঝে ছিল। তীব্র উৎকট জাতীয়তাবোধ, ধর্মান্ধতা, উদ্ধতভাব, দাম্ভিকতা, অতিআত্মম্মন্যতা(Megalomania), নির্বুদ্ধিতা, আত্মপ্রশংসা, লোভ, যৌনলালসা, জীবনের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্যভাব এবং আরোও নিকৃষ্ট চরিত্র যেগুলো ইসলামের নির্দেশক ছাপ(Hallmark), এগুলো আগে থেকেই কাঁচা-মাল(materia prima) হিসেবে আরবে উপস্থিত ছিল যেখানে মোহাম্মদ তার “প্রোফেটিক এন্টারপ্রাইজ” চালু করেছিল। এসমস্ত গুনাগুণ পরবর্তিতে ইসলামের বলি অন্যসকল জাতির উপরেও চাপানো হয়েছিল। যাদের এসব প্রাথমিক গুণাবলী যেগুলো ইসলামে পাওয়া যায় আগে থেকেই ছিল, তারা একটা সাধারন ভুমি পেল পূনর্বিন্যস্ত হতে এবং তাদের অনৈতিক, অপরাধমূলক কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে।

আগামী খন্ডে সমাপ্ত…।

    এই খন্ডের ব্যাবহৃত তথ্যসূত্রঃ

* Politics and the English Language 1946 http://www.resort.com/~prime8/Orwell/patee.html

* Sira Ibn Ishaq:P 183

* Adolf Hitler, Mein Kampf, Ralph Mannheim, ed., New York : Mariner Books, 1999, p. 65.

* Ibn Sa’d Tabaqat, page 362

* The unbelievers repeated asked Muhammad to bring a miracle so they can believe (Quram 17: 90) and Muhammad kept telling them “Glory to my Lord! Am I aught but a man,- a messenger?” (Qur’an 17: 93)