উপ মহাদেশের ইতিহাস বিশাল বৈচিত্রে ভরপুর। এখানে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন জাতি গোষ্ঠি ধর্মের নানা মুখি সংঘাত ও সংমিশ্রণের ইতিহাস, একই সাথে আছে শিক্ষা সভ্যতার প্রগতি ও বিলয়ে ভরা ইতিহাস।মধ্য যুগে এই ইতিহাস রচনায় কান্ডারি ছিলেন বৌদ্ধ নৃপতি গণ। সংসার ত্যাগী বুদ্ধ মতবাদের প্রচার প্রসার ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে গিয়ে তারা রাজ্য জুড়ে স্থাপন করেছেন অসংখ্য বৌদ্ধ বিহার। এই সব বিহার থেকে কিছু কিছু বিহার পরে অবাধ জ্ঞান চর্চা করতে গিয়ে ধীরে ধীরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের খোলস ছাড়িয়ে হাজার বছর আগে খ্যাতি পেয়েছিল বিশ্ব বিদ্যালয়ে রূপে। তার মধ্যে-
বিক্রম শীলাঃ– ভারতের ভাগলপুর জেলার আন্টিচক, মাধোরামপুর, উরিয়াপ এই তিনটি গ্রাম নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল।
সোমপুরঃ– বাংলাদেশের নওগাঁয়।
ওদন্তপুরীঃ-মগধে অবস্থিত ছিল। পাটনা, গয়া আর বাংলার কিছু অঞ্চল নিয়ে মগধ রাজ্য গঠিত ছিল।
জগদ্দলঃ– বীরেন্দ্র ভূমিতে অবস্থিত ছিল। বাংলাদেশের রাজশাহী, পঞ্চগড়, ঠাকুর গাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ এবং ভারতের মালদা নিয়ে গঠিত ছিল।কোন কোন ঐতিহাসিক জগদ্দল নওগাঁয় আবার কেউ জগদ্দল কে দিনাজপুরে স্থাপিত হয়েছিল বলে মত প্রকাশ করেন, তবে যেখানেই হোক না কেন সেটা যে বাংলাদেশের ভূখন্ডেই ছিল সেটা নিশ্চিত।
তক্ষশীলাঃ-পাকিস্তানে আবস্থিত ছিল। বর্তমান ইসলামাবাদের ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ও রাওয়ালপিন্ডির কিছু উত্তরপশ্চিমে। প্রাচীন ভারতের অর্থশাস্ত্রের জনক বলে খ্যাত চাণক্য এখানেই লেখা পড়া করেন। শিক্ষা শেষে তিনি এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের আচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক দিন।
ও নালন্দার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অবকাঠামোর ভিত্তি ভূমি স্থাপন করে দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ শাসকরা আমাদের প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার যে রাস্তা তৈরী করে গিয়েছিলেন সেখানে থেকে আমরা কেন আলোর পথ পরিহার করে অন্ধকারের পথে হাটা শুরু করলাম? এই কেন প্রশ্নের উত্তর খোজা শুরু করলে সর্ব প্রথম যে সহজ সরল উত্তরটি আমাদের সামনে ভেসে আসে তা হল ধর্মীয় বিদ্বেষ ও হিংসা।বৌদ্ধ শাসন আমলে হিন্দু ব্রাহ্মন দের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় ও সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি হ্রাস পাওয়ায় তাদের মনের ভিতর যে আগুন বংশ পরম পরায় হাজার বছর ধরে গোপনে অতি কষ্টে সংরক্ষিত ছিল তার বিষ্ফোরন ঘটায় হিন্দু রাজাদের শাসনামলে এসে। সুযোগ হাতে পেয়েই তারা নিরীহ প্রগতি শীল বৌদ্ধদের নির্মম অত্যাচার, উৎপীড়ন, দমন ও হত্যা করে ভারত বর্ষ থেকে বিতাড়িত করে। রাজ আনুকুল্য বন্ধ করে ধস নামায় এই সব সার্বজনীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, উপরন্তু ব্রাহ্মন্য বাদের পূর্ণ কর্তত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জোড়ালো করেছিল দেবদাসী, সহমরণ ও তীব্র জাতি ভেদ প্রথার মত ঘৃণ্য সব প্রথার।
ব্রাহ্মন্যবাদের আলোচনা সমালোচনা করা আমার মুখ্য বিষয় নয়।প্রারম্ভিক কথাগুলো কান টানলে মাথা আসার মতই। আমার আলোচনা নালন্দার সফল অগ্রগতি ও শেষে করুণ পরিণতি নিয়ে।
পাল রাজাদের শাসন আমলে সোমপুর, বিক্রমশীলা ও নালন্দা একি প্রশাসনের অধীনে কাজ করত। প্রয়োজনে শিক্ষকরা এই তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করে উন্নত শিক্ষার মান বজায় রাখার চেষ্টা করতেন।
চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এবং ভারতীয় ইতিহাসবিদ প্রজ্ঞাবর্মণ গুপ্ত রাজা কুমারগুপ্তকে নালন্দা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বলে উল্লেখ করে গেছেন।খনন কার্যে প্রাপ্ত একটি সীলমোহর থেকেও এই দাবীর পক্ষে জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়।“নালন্দা” শব্দটি এসেছে “নালম” এবং “দা” থেকে।“নালম” শব্দের অর্থ পদ্ম ফুল যা জ্ঞানের প্রতীক রূপে প্রকাশ করা হয়েছে আর “দা” দিয়ে বুঝানো হয়েছে দান করা।তার মানে “নালন্দা” শব্দের অর্থ দাঁড়ায় “জ্ঞান দানকারী”, প্রতিষ্ঠান টি প্রায় ৮০০ বছর ধরে জ্ঞান বিতরনের মত দুরূহ কাজটি করে গেছে নিরলস ভাবে।
নালন্দা ঠিক কবে স্থাপিত হয়েছিল তা আজ সঠিক ভাবে বলা হয়তো সম্ভব নয়। কোথাও পেলাম ৪২৭ খ্রীষ্টাব্দ আবার এক জায়গায় পেলাম ৪৫০ তা যা হোক ধরে নিলাম ৪২৭ থেকে ৪৫০ খ্রীষ্টাব্দের কোন এক সময়ের মধ্যে এটি স্থাপিত হয়ে থাকবে।
এই বিশ্ব বিদ্যালয়টির অবস্থান ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা থেকে ৫৫ মাইল দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত “বড়গাঁও” গ্রামের পাশেই। পাটনার আদি নাম পাটালিপুত্র।দুই হাজার তিনশ বছর আগে মৌর্যদের রাজধানী ছিল এই পাটালিপুত্র।সম্রাট অশোক এখান থেকেই রাজ্য পরিচালনা করতেন বলে জনশ্রুতি আছে।“বিহার” শব্দের অর্থ “বিচরণ”, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যেখানে অবস্থান করেন বা বিচরণ করেন তাকে বলে “বৌদ্ধ বিহার”, প্রাচীণ বৌদ্ধ সভ্যতার স্বর্ণ যুগে এই অঞ্চলে প্রচুর বৌদ্ধ বিহারের উপস্থিতি থাকায় পরবর্তীতে ভারতের এই রা্জ্যের নাম করন হয়েছে “বিহার”, মৌর্যদের পর বিহার চলে আসে গুপ্ত রাজাদের শাসনে।পরে মোগল সম্রাট আকবর ১৫৭৪ সালে বিহার দখল করেন।মোগলদের পর বিহার হাত বদল হয়ে আসে নবাব দের দখলে।নবাব সিরাজদৌল্লাকে পরাজিত করে ইংরেজরা এর বিহার দখল নেয়। ১৯১১ সালে বাংলা থেকে বিহার ও উড়িষ্যা পৃথক হয়।
নালন্দা প্রাথমিক অবস্থায় ছিল একটি মহা বিহার।যেখানে মূলত বৌদ্ধ দর্শনের খুটি নাটি, বুদ্ধের শিক্ষা, বুদ্ধের অনুশাসন বিষয়ে পাঠ দান চলত। স্থিতিশীল রাজ্য পরিচালনা, দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বিকল্প নেই একটি সভ্য, উন্নত ও প্রগতিশীল মনন সম্পন্ন জাতির। যা তৈরী করতে শুধু ধর্মীয় শিক্ষাই যথেষ্ট নয় এসত্য সম্যক ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তৎকালীন নেতৃস্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক বৌদ্ধ শাসকরা। তাদের যৌথ আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ত্যাগ স্বীকারের বিনিময়ে বৌদ্ধ ধর্মের পাশা পাশি তৎকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার উপযোগী, সাহিত্য, সংষ্কৃতি ও আন্তর্জাতিক জ্ঞান বিজ্ঞানের আরো অনেক শাখা যুক্ত করে তারা নালন্দাকে ধর্মের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেন। সম্রাট অশোক এখানে একটি বিহার তৈরী করেন।গুপ্ত সম্রাটরাও কয়েকটি মঠ নির্মাণ করে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখেন। মূলত গুপ্ত সম্রাট কুমার গুপ্তের আমলেই এই মহা বিহারটির পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। পরবর্তীতে বৌদ্ধ সম্রাট হর্ষবর্ধন ও বাংলার পাল সম্রাট গণ পৃষ্ঠপোষকতা করে বিশ্ব বিদ্যালয়টিকে খ্যাতির চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে যান।
নালন্দাকে তাঁরা গড়ে তুলে ছিলেন তৎকালীন সময়ের বিশ্বে শ্রেষ্ঠ আবাসিক বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা হিসাবে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই নালন্দায় লেখা পড়ার সুযোগ পেত না।এর জন্য প্রয়োজন হত শিক্ষার্থীর যোগ্যতার। শিক্ষার্থী সত্যিই নালন্দায় লেখাপড়া করার যোগ্য কিনা তা প্রমানের জন্য প্রবেশ দ্বারে দিতে হত মৌখিক পরীক্ষা। সাফল্যের সাথে এই ভর্তি পরীক্ষায় উতরে গেলেই মিলত এখানে বিদ্যা লাভের নিশ্চয়তা। পরীক্ষা মোটেই সহজ ছিল না। এতটাই কঠিন ছিল প্রতি দশ জনে মাত্র তিন জন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারত। ভাবতে অবাক লাগে তৎকালীন সময়ে নালন্দায় বিদ্যা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০ তাদের শিক্ষাদান করতেন প্রায় আরো ২,০০০ শিক্ষক। গড়ে প্রতি ৫ জন ছাত্রের জন্য ১ জন শিক্ষক ।কত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলে এত বিপুল সংখ্যক ছাত্রের বিদ্যা দান সম্ভব তাও আবার থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থাসহ, ভেবে সত্যি অবাক না হয়ে উপায় নেই। এই বিশ্ব বিদ্যালয়টির বিশাল খরচ চালানোও যেন তেন বিষয় ছিল না। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় যাতে নালন্দার প্রশাসনকে কারো উপর নির্ভরশীল হতে না হয় সেদিক বিবেচনা করে ২০০ গ্রামকে শুধু মাত্র নালন্দার ব্যয় মিটানোর জন্য উৎসর্গ করেছিলেন বিদ্যা উৎসাহী বৌদ্ধ শাসকরা। এই সব গ্রাম গুলোর অবস্থান শুধু নালন্দার আশে পাশে ছিল না, ছিল সমগ্র বিহার রাজ্যের ৩০টি জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। চিনতে পারার সুবিধার্থে বিশেষ চৈত্য বা স্তূপ তৈরী করে গ্রাম গুলোকে পৃথক করে রাখা হয়েছিল অনান্য গ্রাম থেকে। এই সব গ্রামের করের টাকা থেকেই ছাত্র ও শিক্ষকদের খাদ্য দ্রব্য সহ প্রয়োজনীয় সব খরচের যোগান আসত।
বাইরের কোন প্রকার উটকো ঝামেলা যাতে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশের বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেজন্য উঁচু লাল ইটের বেষ্টনি দিয়ে ঘেরা ছিল সমগ্র বিশ্ব বিদ্যালয় চত্বর। ভিতরে ঢুকার জন্য ছিল বিশাল প্রবেশ দ্বার। বিদ্যালয় টিতে ছিল ৮ টি ভিন্ন ভিন্ন চত্বর, শ্রেণী কক্ষ, ধ্যান কক্ষ এবং দশটি মন্দির। বিদ্যালয়টির শিক্ষার প্রাকৃতিক পরিবেশ যথাসাধ্য স্নিগ্ধ ও কোমল রাখতে সমগ্র বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ জুড়ে তৈরী করা হয়েছিল বেশ কিছু সুরম্য উদ্যান যেগুলো ভরা ছিল বিচিত্র ফুল ফলের গাছ দিয়ে। গোসল ও প্রয়োজনীয় পানির সুবিধার জন্য খনন করা হয়েছিল কয়েকটি দীঘি। ছাত্রদের জন্য ছিল ছাত্রাবাস। পানির সমস্যার জন্য ছাত্রদের জ্ঞান অর্জনে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকটা মাথায় রেখে প্রতিটি ছাত্রাবাসে পানীয় জলের অসুবিধা দূর করতে তৈরী করা হয়েছিল বেশ কিছু কুয়ো। মোট কথা সমগ্র নালন্দা ছিল নিখুত পরিকল্পনায় গড়া একটি শিক্ষা স্বর্গ।
বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ও পাঠ দান কক্ষ
বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি বেধ, বিতর্ক, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ, সাহিত্য, গণিত, জ্যোতিষ বিদ্যা, শিল্প কলা, চিকিৎসাশাস্ত্র সহ তৎকালীন সর্বোচ্চ শিক্ষা ব্যাবস্থার উপযোগী আরো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নিয়মিত পাঠ দান চলত এখানে। শিক্ষকদের পাঠ দান আর ছাত্রদের পাঠ গ্রহণে সর্বদা মুখরিত থাকত এই বিদ্যাপীঠ। নালন্দার সুশিক্ষার খ্যাতির সুবাতাস এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে অনুন্নত প্রতিকুল এবরো থেবরো যোগাযোগ ব্যবস্থাও বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি সুদূর তিব্বত, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য, গ্রীস তুরষ্ক থেকে ছুটে আসা বিদ্যা অনুরাগীদের।
নালন্দার লাইব্রেরী
ছাত্রদের প্রয়োজনীয় বইয়ের অভাব দূরীকরন এবং একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন শাখার জ্ঞানের সমাবেশ ঘটাতে তৈরী করা হয়েছিল তিনটি সুবিশাল লাইব্রেরী। লাইব্রেরী ভবন গুলো পরিচিত ছিল যথাক্রমে রত্ন সাগর, রত্ন দধি ও রত্ন রঞ্জক নামে। লাইব্রেরীর নাম করণ থেকে অনুমান করা যায় নালন্দার শিক্ষকদের জ্ঞানের গভীরতা। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এর মতে এখানে যে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষার কাজে নিযুক্ত ছিলেন তাদের জ্ঞানের খ্যাতি প্রসারিত ছিল বহুদূর ব্যাপি, চারিত্রিক দিক দিয়েও তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সৎ চরিত্রের অধিকারী। র্নিলোভী এই শিক্ষকরা ভাল করেই অবগত ছিলেন বহুদূর দূরান্তের ছাত্ররা বন্ধুর পথের কষ্ট মাথায় নিয়ে তাঁদের কাছে ছুটে আসতেন বিদ্যা পিপাসায়। তাই তাঁরাও আন্তরিকতার সাথে তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলেন। লাইব্রেরীর প্রতিটি ভবনের উচ্চতা ছিল সুবিশাল প্রায় ৯ তলা বিশিষ্ট দালানের সমান। এত বিশাল ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরী বর্তমান শিক্ষা সংষ্কৃতি ও ছাপাখানা প্রযুক্তির সহজ লভ্য যুগেও সচরাচর দেখা যায় না। প্রায় ৮০০ বছর ধরে লাইব্রেরী গুলো ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়েছিল হাজার হাজার পুঁতি, ধর্মীয়, জ্ঞান বিজ্ঞানের বই, চিকিৎসা শাস্ত্র, ও নানান গবেষনা লব্ধ মূল্যবান বই দিয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় লিখিত জ্ঞান বিজ্ঞানের বই গুলো এখানে অনুদিত হত অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান গরিমায় আর পান্ডিত্যে যারা সে সময়ে উচ্চ পর্যায়ের ছিলেন তাঁরাই ভারত বর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নালন্দায় সন্মিলিত হয়েছিলেন জ্ঞান আহরন ও বিতরনের জন্য, ছাত্ররাও ছিল প্রাণবন্ত, শ্রদ্ধাবান, সুযোগ্য ও বিদ্যা উৎসাহী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সবাই এখানে সমবেত হওয়ার কারনে, ভিন্নতা ছিল তাদের ভাষায়, ভিন্নতা ছিল তাদের ধর্মে, ভিন্নতা ছিল তাদের সংষ্কৃতিতে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। এই উদ্দেশ্যই তাদের করেছিল বিনয়ী ও একতা বদ্ধ।
প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয় এক সময় এত সুবিশাল একটি বিশ্ব বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করেছিলেন বাংলাদেশের সন্তান শীল ভদ্র। যিনি ছিলেন হিউয়েন সাঙ এর গুরু।প্রায় ২২ বছর হিউয়েন সাঙ তাঁর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার চান্দিনাতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। আরো একজন বঙ্গীয় স্বনাম ধন্য পন্ডিত ব্যক্তির কথা উল্লেখ না করে উপায় নেই তিনি হলেন ঢাকার বিক্রমপুরে বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করা অতীশ দীপঙ্কর। বর্তমানে অতীশ দীপঙ্করের বাসস্থান “নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা” নামে পরিচিত। তিনি ১৫ বছর ওদন্তপুরী ও সোমপুর বিহারের শিক্ষকতা ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন বেশ সফলতার সাথে।
শত শত বছর ধরে অবদান রেখে আসা একটি সভ্য, উন্নত জাতি তৈরী ও জ্ঞান উৎপাদনকারী নিরীহ এই প্রতিষ্ঠানটি ১১৯৩ খ্রষ্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী আক্রমন করে ধ্বংস করে ফেলেন। তার আক্রমনের বর্বরতা এত ভয়াবহ আকারে ছিল এ সম্পর্কে পারস্য ইতিহাসবিদ মিনহাজ তাঁর “তাবাকাতে নাসিরি” গ্রন্থে লিখেছেন “হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুকে আগুনে পুড়িয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে সেখানে ইসলাম প্রচারের চেষ্টা করেন খিলজী” এরপর আগুন লাগিয়ে দেন লাইব্রেরীর ভবন গুলোতে। লাইব্রেরীতে বইয়ের পরিমান এত বেশী ছিল যে কয়েক মাস সময় লেগেছিল সেই মহা মূল্যবান বই গুলো পুড়ে ছাই ভষ্ম হতে(জনশ্রুতি আছে ছয় মাস) খিলজী শুধু নালন্দাকে পুড়িয়ে ছাই করেন নি, একই সাথে পুড়িয়ে ছাই করেছেন একটি জাতির সভ্যতা, ইতিহাস, প্রাচীন জ্ঞান বিজ্ঞানের অমূল্য বই যা থেকে আমরা জানতে পারতাম সে যুগের ভারত বর্ষের শিক্ষার অবকাঠামো, তৎকালীন সামাজিক-সাংষ্কৃতিক অবস্থা ও প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে। জাতি হিসাবেও হয়তো আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে সহস্র বছর। সেদিন তার ধারালো তরবারির নিষ্ঠুর আঘাতে ফিনকি দিয়ে ছোটা রক্ত বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া নিরস্ত্র মানুষের আর্ত চিৎকারে ও জীবন্ত মানুষ পোড়া গন্ধের সাথে বাতাসে ভেসে আসা বাচঁতে চাওয়া ঝলসানো সাধারণ মানুষ গুলোর করুণ আর্তনাদে স্তব্ধ হয়েছিল একটি সভ্য জাতির অগ্রযাত্রা।
খিলজীর এই পাশবিক নিষ্ঠুর বর্বরতাও পরিচিতি পায় এক শ্রেণীর ধর্মান্ধদের চোখে ধর্মীয় বিজয় হিসাবে!
এই পোড়া ভগ্ন স্তুপ থেকে নালন্দাকে আবারো মাথা তুলে দাঁড় করানোর শেষ চেষ্টা চালিয়েছিলেন মুদিত ভদ্র নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু কিন্তু এইবার পুন:রায় তাতে আগুন লাগিয়ে দেয় ঈর্ষার আগুনে জ্বলতে থাকা দুই ক্ষু্ব্ধ ধর্মান্ধ ব্রাহ্মন। এখানে আবারো ঘটে আরেক সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় বিজয়!
নালন্দায় বার বার ধর্মীয় বিজয় সফল হলেও লজ্জিত হয় মানবতা, পরাজিত হয় সভ্যতা, শৃঙ্খলিত হয় শিক্ষা।
এভাবে উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা, আক্রোশ, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে পৃথিবী থেকে বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল ধর্মান্ধরা কয়েকশ বছর ধরে মানব সভ্যতাকে আলোর পথ দেখানো মানুষ গড়া্র এই কারখানাটিকে।
তথ্য সংগ্রহঃ ইন্টারনেট
হায় ! বাংলাদেশ কি পারেনা শীল ভদ্র, অতীশ দীপঙ্করদের পুনর্জন্ম দিতে। অন্তত তাঁরদের দেখানো পথও যদি আগলে রাখতে পারতাম আমরা! 🙁
[img]http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/6a/Atisha.jpg/435px-Atisha.jpg[/img]অতীশ দীপঙ্কর
পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, হয় লাইব্রেরীতে আগুন দাও অথবা নিজের শরীরে, আমি নিজের শরীরে আগুন দেয়াই সহজ মনে করবো।
সুন্দর এবং তথ্যবহুল লেখনির জন্য অশেষ ধন্যবাদ (Y)
সুন্দর এবং তথ্যবহুল লেখাটির জন্য লেখককে আমার অন্তঃস্থল হতে ধন্যবাদ জানাই । নালন্দা ধ্বংসের জন্য শুধু বকতিয়ার কলজি এককভাবে দায়ী ছিলেন না, তৎকালীন ব্রাক্ষান্যবাদ সমাজের ও অগ্রগণ্য ভুমিকা ছিল । বকতিয়ার কলজির আগে এবং পরে মৌলবাদী ব্রাক্ষন সমাজের পটভুমি ও ছিল বিবেচ্য । নালন্দা’কে একাধিকবার তর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হারিয়ে ব্রাক্ষণদের দখলে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল । কারণ, নানল্দা হয়ে উঠেছিল ধর্মনিরপেক্ষ এক উচ্চশিক্ষা বিদ্যাপীঠে । কিন্তু বৌদ্ধের দার্শনিকদের জ্ঞানের বিচক্ষণতার কাছে বারবার হেরে যেতে হয়েছিল, তাই বকতিয়ার কলজির সময়ে উপযুক্ত সুযোগটি আসে ।
@জয়েন্টু,
ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
সঠিক বলেছেন।
ছোটবেলায় আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় ছিল সমাজ বইয়ের ইতিহাস অংশ (বিরক্তির একটা কারণ সাল মুখস্থ রাখতে হত)। আর সমাজ বইয়ে ইতিহাসগুলো এমন গৎবাঁধা করে লিখত যে পড়তে মজা লাগত না।
তবে এখন ইতিহাস আমার প্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে একটি(হুমায়ন আহমেদের ‘বাদশাহ নামদার’ পড়েছেন? ওই বইটা পড়তে দারুন লেগেছে)।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এরকম চমৎকার একটা লেখা উপহার দেবার জন্য।
আসলে হিন্দু ধর্ম বলতে কিন্তু ভারতে গড়ে ওঠা প্রায় সকল ধর্মমতকেই বোঝায়। আর এই ধর্মমতগুলোর মধ্যে নাস্তিক্য মত কিন্তু অনেকগুলো ছিল। কিন্তু সেই মতগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিই বেদ বিশ্বাস করত। একমাত্র বৌদ্ধধর্মেই বেদ অস্বীকার করা হয় আর তাই বৌদ্ধধর্ম পরবর্তীতে হিন্দুধর্ম থেকে পৃথক ধর্ম হিসেবে গণ্য হয় যদিও শঙ্করাচার্য বুদ্ধদেবকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে প্রচার করে বৌদ্ধধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্যধর্মের সংঘাত মেটানোর চেষ্টা করেন। যদিও আমরা বৌদ্ধদেরকে শান্তিপ্রিয় বলে জানি, তখন কিন্তু অনেক বৌদ্ধ পণ্ডিত ব্রাহ্মণদের সাথে তর্ক করত এই শর্তে যে তর্কে যে হারবে তাকে ফুটন্ত তেলে ডুবানো হবে(চিন্তা করা যায়, সেসময় কিন্তু শুধু রাজারাই নৃশংস ছিল না)।
যাহোক সেসময়কার সবচেয়ে উন্নত মানের নাস্তিক্য দর্শন একমাত্র বৌদ্ধদর্শনেই নিহিত ছিল এবং ইহাই সম্পূর্ণরূপে কুসংস্কারমুক্ত ছিল।
একদিকে সংস্কারমুক্ত চিন্তাধারা অন্যদিকে ত্যাগের মহান আদর্শ বৌদ্ধদর্শনকে সত্যিই এক মহিমান্বিত অবস্থানে দাড় করিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাজানুকুল্যতা হাড়িয়ে বৌদ্ধপন্ডিতদের হীনাবস্থা যেন ভারতবর্ষের মুক্তচিন্তার ধারাকে রুদ্ধ করল।
@রনবীর সরকার,
১মতঃ বুদ্ধ যখন তাঁর মতবাদ প্রচার করে তখন হিন্দু ধর্ম বলে কোন ধর্ম ছিল না। ছিল ব্রাহ্মন্যবাদ।
২য়তঃ বৌদ্ধ ধর্মের মৌলিক দর্শন শুরু থেকেই হিন্দু ধর্মের সম্পূর্ন বিপরীত তাই বৌদ্ধ ধর্ম পরবর্তীতে হিন্দু ধর্ম থেকে পৃথক হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
বৌদ্ধ ধর্মের সব চেয়ে বেশী ক্ষতি সাধন করেন শঙ্করাচার্য। তিনি বৌদ্ধদের উপর নারকিয় হত্যা যজ্ঞ চালান, বৌদ্ধদের বিতারিত করেন, হত্যার আদেশ দেন।যে বৃক্ষের নীচে বসে বুদ্ধ ধ্যান করেছিলেন সেই বোধিবৃক্ষ(অশ্বথ গাছ) সমূলে ধ্বংস করেন। বুদ্ধকে কাল্পনিক বিষ্ণুর অবতার হিসাবে প্রচার করে বৌদ্ধধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্যধর্মের সংঘাত মেটানোর চেষ্টা নয় বরং বুদ্ধের অবদানকে খাটো করে বৌদ্ধ ধর্মকে হিন্দু ধর্মের অঙ্গ ধর্ম রূপে প্রচার করার হীন চেষ্টা চালান।
এই তথ্য আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন।
@রাজেশ তালুকদার,
হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলে আমার এখানে হিন্দুধর্ম বলা উচিত হয়নি। আসলে আমি যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হল যে সেসময় ভারতে বহুদর্শন এবং ধর্মমত থাকলেও তার প্রায় সবগুলোই বেদ-ভিত্তিক ছিল, বেদের চাতুর্বর্ণ্যে বিশ্বাসী ছিল। সেদিক দিয়ে তখনকার ধর্মকে বৈদিক ধর্মও বলা চলে।
এবং সেসময়ে ধর্ম নিয়ে তর্ককে প্রশ্রয় দিলেও, বেদবাক্য ভ্রান্ত এটাকে কখনো প্রশ্রয় দিত না। তাই চার্বাক দর্শন , বৌদ্ধদর্শন বেদ স্বীকার না করায়, মূল ধারা থেকে বিতাড়িত হয়। কিন্তু বহু ভিন্নমত অদ্বৈত-মত, দ্বৈত-মত(বৈষ্ণব, শাক্ত,শৈব….) কিন্তু একই বৈদিক-ধর্মের পতাকা-তলেই ছিল।
বৌদ্ধদর্শনের সাথে বৈদিক অদ্বৈতবাদের একটাই অমিল আমি খুঁজে পেয়েছি। আর তা হল অদ্বৈতবাদে বাড়তি ব্রহ্মকে আনা হয়েছে, আর বৌদ্ধদর্শন বলছে যে এরকম বাড়তি ব্রহ্মকে আনা অর্থহীন।
এছাড়া বৌদ্ধধর্মের পুনর্জন্মে বিশ্বাস, ত্যাগের আদর্শ এগুলোর সাথে বৈদিক ধর্মের কিন্তু অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
যদিও বৌদ্ধধর্মের পুনর্জন্মের সাথে বৈদিক-ধর্মের পুনর্জন্মের কিছুটা পার্থক্য আছে। বৈদিক-ধর্ম বলছে যে আত্মার দেহান্তরের ফলে পুনর্জন্ম হয়। আর বৌদ্ধধর্ম বলছে এরকম আত্মা বলতে কিছু নেই, সংস্কারগুলোর পুনরায় অভিব্যক্তিই নবজন্মের কারণ, এখানে বাড়তি হাইপোথিসিস আত্মার কোন প্রয়োজন নেই।
এ ব্যাপারে আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণরূপে একমত।
শঙ্করাচার্য বৌদ্ধদের উপর সরাসরি নারকীয় হত্যা যজ্ঞ চালান এবং তার সরাসরি আদেশে বৌদ্ধদের হত্যা করা হয় এমন সরাসরি প্রমাণ আমি আসলে পাইনি।
রাজা শশাঙ্ক সপ্তম শতাব্দীতে বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির দখল করে বোধিবৃক্ষ ধ্বংস করেছিলেন যা চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং তার ভ্রমণ কাহিনীতে লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
তবে এটা ঠিক যে শঙ্করাচার্যের কারণে বৌদ্ধদের কোণঠাসা হতে হয় এবং বিচারে পরাস্ত করে শর্তানুযায়ী অনেক বৌদ্ধপন্ডিতকে উত্তপ্ত তৈলে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়।
@রনবীর সরকার,
তোমার কাছে reference গুলো আছে।
@Truthseeker,
আসলে বেশিরভাগ বই-ই তো লাইব্রেরীতে পড়া, তাই এই মূহুর্তে reference দিতে পারছি না। দুঃখিত।
তবে নেট ঘেটে একটা লিংক পেলাম। লিংকটা ভাল লাগল। তাই শেয়ার করছি।
http://www.shobdoneer.com/sharmabangla/11746
@রনবীর সরকার,
ওরকম লিঙ্ক নয়। Journal-এ যেমন reference থাকে তেমন। original source এর কথা বলছি।
@Truthseeker,
আরে ভাই আমি ওই লিংক দিয়েছি স্রেফ আমার কিছু কথা ওখানে গোছানো অবস্থায় পেয়েছি তাই। আমি বুঝতে পারছি যে ওটা আসলে রেফারেন্স হিসেবে দেয়া যায় না।
আর আমি এই সম্পর্কে online এ তেমন কিছু পড়িনি। তাই online এ কোন রেফারেন্স দিতে পারছি না। তবে আমি যা বলেছি এগুলো মনে হয় বেদান্তদর্শন, বৌদ্ধদর্শন সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করলেই জানার কথা। আর online একটু সার্চ দিলেই অথেন্টিক অনেক লেখাই মনে হয় পেয়ে যাবার কথা।
@রনবীর সরকার,
একমত।
এখানে বৌদ্ধ ধর্ম ভাবের ঘরে ফাঁকি দিচ্ছে। এক্ষেত্রে অদ্বৈতবাদ অন্তত consistent, বৌদ্ধ মত স্রেফ আবর্জনা। যে কারণে…
অনেক আধুনিক বৌদ্ধ এব্যাপারে আর একমত নন। কারো কারো মতে, শাক্যমুনি জন্মান্তরের কথা বলেনই নি, ওটা হিন্দু প্রভাবিত প্রক্ষেপন।
@রৌরব, বৌদ্ধ ধর্মে যদি ও পুণঃজন্মকে বুদ্ধের এক শিক্ষা হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন বৌদ্ধ দার্শনিক এই শিক্ষাকে বোল্ড করে “আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে” এমনটা বলেন নি । বৌদ্ধের অনাত্মাবাদ এবং পদিত্যুসম্মুদপাত এর মাধ্যমে খুব সতর্কতার সহীত পুণঃজন্মকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । কারণ, একটু গলে গেলে আত্মাবাদীদের কাছে ধরা খেতে হবে সেজন্য পুণঃজন্মকে প্রতিসন্ধি বিজ্ঞান এবং অনিত্য নীতির সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । এর মুল ধারাতে রয়েছে পদিত্যুসম্মুদপাত নীতি, যেটি মূলত প্রতিক্ষণে যে মানসিক পরিবর্তন এর উপর ভিত্তি করে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে অনিত্য হিসেবে দর্শন করতে বলা হয়েছে, হর্ঠাৎ সবকিছুই পরিবর্তনশীল । সেজন্য বুদ্ধের মুল কথা ছিল বর্তমানকে নিয়ে থাকতে । কারণ যা ঘটে যাই তা আর ফিরে আসে না, আর যা এখনো আসেনি তাও কিভাবে জানবো (?)। কিন্তু যদি বর্তমান ভালো হয়, অতীতকে স্মরণীয় করে রাখা যাবে, আর ভবিষ্যত ও ভালো হবে ।
@রনবীর সরকার,
এটা ঠিক না। শঙ্করের সাথে তর্কে পরাজিত হয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জলে ডুবে আত্মহত্যা করে। শঙ্কর একজন পরিব্রাজক চিলেন-তার সাথে কিছু সন্নাস্যীরাই থাকত।
শঙ্করাচার্য্যের উত্থান বৌদ্ধ ধর্মের উত্থানকে থামিয়ে দিয়েছিল। এর পেছনে কিছু কারন আছে। বৌদ্ধ ধর্ম রাজ ধর্ম হতে পারে না-কারন তাতে শোষন এবং বিভেদের ভিত্তিতে শাসন করা যায় না। তাই শোষন এবং রাজ্য চালাতে হিন্দু ধর্ম সব থেকে ভাল-যেটা ভারতের মুসলিম সুলতানরাও বুঝতেন এবং তাই হিন্দু ধর্মের ক্ষতি করেন নি।
@রাজেশ তালুকদার,
@রাজেশ তালুকদার,
রনবীর সরকারের সাথে একমত হয়ে বলছি, এই তথ্যে বিস্মিত হচ্ছি। আদি শংকরের নিজস্ব কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল বলে জানা ছিল না। বৌদ্ধ ধর্মের বিরূদ্ধে বৌদ্ধিক যুদ্ধে উনি নেতৃত্ব দেন বলে খবরে প্রকাশ, তবে সেটাও বাড়িয়ে বলা বলে সন্দেহের কারণ আছে।
@রৌরব,
আমি শঙ্করাচার্যর কথা বলেছিলাম। স্বীকার করে নিচ্ছি শঙ্করাচর্য ও আদি শংকর এক কিনা আমি জানি না। তবে মনে হয় ভিন্ন ব্যক্তি।
আমি আসলে এটা পড়েছিলাম অনেক আগে। প্রবাসে থাকি প্রয়োজনীয় রেফারেন্স বইয়ের অভাব। নীচের লিংকগুলো দেখতে পারেন। শঙ্করাচর্যের বৌদ্ধ নিধনের কথা বলা আছে যদিও এটাকে সঠিক রেফারেন্স বলে দাবী করছি না
http://www.theanuranan.com/news_detail.php?news_id=3577
http://www.somewhereinblog.net/blog/etush00/29229374
http://ittefaq.com.bd/content/2011/03/25/print0490.htm
@রাজেশ তালুকদার,
আপনার লিংকের শঙ্করাচার্য অষ্টম শতাব্দীর।
আদি শঙ্করও কিন্তু অষ্টম শতাব্দীর, তাই আমার মনে হয় ওখানে আদি শঙ্করের কথাই বলা হচ্ছে। আর যদি অন্য কোন শঙ্করাচার্য থেকেও থাকে তাহলে তা আমার ঠিক জানা নেই। আর ওই সময় ব্রাহ্মনদের এবং বৌদ্ধদের সংঘাতের ইতিহাসে আমি অন্য কোন শঙ্করাচার্যের কথা পাইনি।
আর যদি আদি শঙ্কর আর শঙ্করাচার্য একই ব্যক্তি হন, তবে শঙ্করাচার্যের দশ বছর ধরে বৌদ্ধ নিধনের কাহিনী সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট। শঙ্করাচার্যের জীবনী থেকে তা সহজেই বুঝা যায়।
@রৌরব,
শঙ্করাচার্যের নিজস্ব কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলেও তিনি কিন্তু সেসময় রাজানুকুল্য চরমভাবে পেয়েছিলেন।
শঙ্করাচার্য সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করায়, তার মার মৃত্যুর পর তিনি যখন মার শেষকৃত্য করবেন, তখন তার আত্নীয়স্বজনরা তাকে বাধা দিয়েছিলেন(কারন, সন্ন্যাসীদের সাথে তার পূর্বাশ্রমের কোন সম্পর্ক সেসময় রীতিবিরুদ্ধ ছিল) এবং তার মার শেষকৃত্যে কোন প্রকার সহযোগিতা করেননি। এতে শঙ্করাচার্য তার আত্মীয়দের প্রতি ক্রোধান্বিত হন এবং সেময়ে কেরলরাজ্যের রাজাকে বলেন যেন কাবাডি গ্রামের(এটা কেরল রাজ্যে অবস্থিত একটি গ্রাম যেখানে শঙ্করাচার্যের জন্ম হয়েছিল) কোন ব্রাহ্মন রাজানুগ্রহ না পায় এবং বিশেষ কার্যগুলোতে তাদের আমন্ত্রন জানানো না হয় এবং শঙ্করাচার্যের আদেশ রাজা শিরোধার্য করে নিয়েছিলেন।এখানে উল্লেখ্য যে তখনকার দিনে অধিকাংশ ব্রাহ্মনরাই রাজানুগ্রহেই বেচে থাকতেন এবং রাজারাও ব্রাহ্মনদের যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং তাদের ভরনপোষন করতেন।
যাহোক পরবর্তীতে কাবাডি গ্রামের এমন অবস্থা হয়েছিল যে সেখানকার লোকেরা শবদাহ করার জন্য আলাদা কোন জায়গা পায়নি। নিজেদের বাড়ির সামনে শবদাহ করেছে।
এবং শুধু এখানেই নয় ভারতবর্ষে অন্য যেখানেই শঙ্করাচার্য গিয়েছেন সেখানেই যথেষ্ট রাজানুকুল্য পেয়েছিলেন। তিনি যদি আদেশ দিতেন তবে রাজারা বৌদ্ধদেরকে হত্যা করতেন এটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়।
কিন্তু শঙ্করাচার্য এইভাবে অদ্বৈতবাদ প্রচার করবেন এটা পুরোপুরিই হাস্যকর।
@রাজেশ তালুকদার,
হিন্দু ধর্ম ছিল না ঠিকই, কিন্তু আপনার বক্তব্যে মনে হতে পারে বুদ্ধ পূর্ববর্তী ভারতীয় ধর্ম “ব্রাহ্মন্যবাদ” নামে একটি নিরেট জিনিস ছিল। তা নয়। বুদ্ধ সবচেয়ে বিখ্যাত heterodox, কিন্তু মোটেও একমাত্র নন।
বুদ্ধ তৎসময়ে প্রচলিত ৬২ প্রকার ধর্ম মতের বিরোধী ছিলেন বলে ত্রিপিটকে উল্লেখ আছে ।
@রনবীর সরকার,
নিচের লিঙ্কটা দেখতে পার।
https://docs.google.com/fileview?id=0Bxmb43ISDdJdNzczZGZkMWUtYWZmMi00ODZkLThhYzMtYjFhYTM0YzU0NGJh&hl=en
@Truthseeker,
ধন্যবাদ। দারুন একটি লিংক শেয়ার করার জন্য।
@রনবীর সরকার,
সম্পূর্ন ভুল। প্রচীন ভারতে ছ ধরনের নাস্তিক্য দর্শন ছিল। তারা আবার দুইভাগে বিভক্ত ছিল।
বেদান্ত যারা মানত-তারা ছিল অর্থডক্স নাস্তিক-এদের তিন শাখা
সাংখ্য, মিমাংসা ( এরা দ্বৈতবাদি) এবং অদ্বৈতবাদি।
বেদান্তের বিরুদ্ধে ছিল বৌদ্ধ , জৈন এবং চার্বাক।
এর মধ্যে একমাত্র চার্বাক দর্শনই সম্পূর্ন সংস্কার মুক্ত ছিল । বৌদ্ধরা পরজন্মে বিশ্বাস করত। সাংখ্যা দর্শনের প্রকৃতি এবং পুরুষ ছারা আর কিছুতে বিশ্বাস রাখত না। সেই অর্থের সাংখ্য দর্শনেও কুসংস্কার নেই -বরং বৌদ্ধ ধর্মে আছে।
আর শঙ্করের অদ্বৈতবাদ এবং বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে আদৌকোন পার্থক্য নেই শুধু-অদ্বৈতবাদ মায়াতে বিশ্বাস করে-কারন তাদের মতে দৃশ্যমান বাস্তবতা আসল বাস্তবতা না-কারন জগত অসীম-কিন্ত মানুষ সসীম। সেখানে বৌদ্ধরা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। বাকী সব একই।
সেই অর্থে প্রাচীন ভারতের নাস্তিক দর্শনগুলির মধ্যে সাংখ্য দর্শনই ন্যাচারলালিস্ট দর্শন -সুতরাং সেটিকেই আমি বিজ্ঞানের দর্শনের কাছাকাছি ধরব।
লেখাটি খুব প্রয়োজনীয়।
আপনার লিখার হাত ভাল–বেশ সাবলীল গতি। আমি খুব আস্তে আস্তে পড়ি–তথাপি আপনার লেখা একবারেই পড়ে ফেললাম।
এই বিশয়ে যব চাইতে দীর্ঘ তথ্য আমি পড়েছি এম, এ, খানের বইতে। সে জন্য আমি এই বইএর পর্যালোচনায় লিখছিলাম–প্রত্যেক বাঙালি তথা ভারতীয়ের উচিত হবে এই বইটি পড়া।
বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা।
রাজেশদাকে অনেক শুভেচ্ছা।
লেখাটি আমার খুব ভাল গেছে। এবং যারা প্রশ্ন করেছে তার উত্তর ও সুন্দর হয়েছে। তালুকদার দাদাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আরো লেখ চাই।
কোন কোন লেখা পড়ে ধাতস্থ হ’তে সময় লাগে। বলতে লজ্জা নেই, এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
বিশ্বাস থাকলে সম্প্রদায় থাকবে, সম্প্রদায় থাকলে বিভক্তির বিষ-বৃত্ত থাকবে।
টুকটাক যা পড়েছি, মনে হয়েছে, ইতিহাসকে অন্ধকারে রেখে একটা জোড়াতালি দে’য়ার চেষ্টা।
ইতিহাসকে আড়াল করে যারা সাম্প্রদায়িক ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, তারা যে ব্যর্থ, তা পান থেকে চুন খসে পড়ার ঘটনাগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই বুঝা যায়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
চমৎকার লেখা। তবে মন্তব্য গুলো পরে একটা কথা না বলে পারছি না। আমরা ইসলাম সাম্রাজ্য বা হিন্দু ধর্মের অধিপতি দের অমানবিক বর্বর বলছি, তাহলে খ্রিস্টান বা অন্য ধর্ম গুলা কি দোষ করলো। প্রতি ধর্মেই এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যায়। হাইপেশিয়ার কথাই ধরুন। আমার মনে হয় particular কোন ধর্মের কথা না বলে সামগ্রিক ভাবে ধর্মীয় আগ্রাসনের কথা বলা যেতে পারে।
@তূর্য,
পার্টিকুলার তথ্য মিলিয়ে মিলিয়েই তো সামগ্রিক চিত্রটি তৈরি হয়, সব সময় তো সবকিছু বলা সম্ভব হয় না। যেমন হাইপেশিয়ার উপর মুক্তমনায় যেসব লেখা আছে সেখানে অপ্রাসঙ্গিক বলে হিন্দু বা ইসলাম ধর্মের কথা আসেনি।
উপমহাদেশের বিশেষ প্রেক্ষাপটের কারণে অনেকেই (নাস্তিকেরাও) অবশ্য হিন্দু ধর্ম ও ইসলামের সমালোচনা একসাথে করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সেটা অন্য ব্যাপার।
হাজারো ব্যস্ততার ভীড়ে মুক্তমনায় মন্তব্যই করা হচ্ছে না। কিন্তু এই অসামান্য লেখাটায় মন্তব্য না করাটা অপরাধই হবে। অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় ইতিহাসের রুদ্ধ দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে নিপুন ছন্দে –
(Y) । নালন্দার দুঃখজনক ধবংসের কথা শুনে আমার আলেকজান্দ্রিয়া পাঠাগারের ধ্বংসের কথা মনে পড়ে গেল। হাইপেশিয়াকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি ওমরের কিছু কীর্তিকলাপ উল্লেখ করেছিলাম।
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে যে সমস্ত মুসলিম ভাইয়েরা নোয়াম চমস্কি আউরিয়ে অহর্নিশি সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকাকে উঠতে বসতে তুলোধুনা করেন, তারা আরব সাম্রাজ্যবাদকে কি হিসেবে দেখেন? খিলজীর এই বিভৎসতা – নালন্দার ধ্বংস কিংবা ওমরের আলেকজান্দ্রিয়ার ধ্বংস- এগুলো দেখলে বুঝা যায় মুসলিম শাসকেরা বরাবরই জ্ঞান বিজ্ঞানকে তাদের পরম শত্রু মনে করে এসেছে। বখতিয়ার খিলিজী তো বটেই, মুহম্মদ বিন কাসিমের ভারতবিজয়ের পর থেকে … এমনকি শান্তিপ্রিয় সুফি সাধকেরাও আসলে মুলতঃ ছিলো জিহাদী। নিজামুদ্দিন আউলিয়া, খাজা মইনুদ্দিন চিশতি, আমীর খসরু প্রমুখ সুফী সাধকেরা আধ্যাত্মিকতার নামে বহু শিংসতার চাষ করেছিলেন। এ নিয়ে কিছু ভাল আলোচনা আছে – এম এ খানের Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism, and Slavery বইয়ে। যেমন আমীর খসরুর জিহাদী কর্ম কান্ডের বর্ণনা পাওয়া যায় এরকম –
Amir Khasrau showed delights in describing the barbaric slaughter of Hindu captives by Muslim warriors. Describing Khizr Khan’s order to massacre 30,000 Hindus in the conquest of Chittor in 1303, he gloated: ‘Praise be to God! That he so ordered the massacre of all chiefs of Hind out of the pale of Islam, by his infidelsmiting swords… in the name of this Khalifa of God, that heterodoxy has no rights (in India).’cxxxi He took poetic delight in describing Malik Kafur’s destruction of a famous Hindu temple in South India and the grisly slaughter of the Hindus and their priests therein.cxxxii In describing the slaughter, he wrote, ‘…the heads of brahmans and idolaters danced from their necks and fell to the ground at their feet, and blood flowed in torrents.’
লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
বেশী জোশ একটা লেখা। আরেকটু ফাঁকা করে প্যারাগুলো দিলে পড়তে সুবিধা হত।
অনেক অনেক ধন্যবাদ চমৎকার লেখাটার জন্য।
@সাইফুল ইসলাম,
সুপরামর্শের জন্য অভিনন্দন। ঠিক করে দিলাম।
রাজেশ তালুকদার,
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার আরেক বিভৎস মহাকরুন ইতিহাসের একই রূপ ভারতবর্ষেও।আসলে যুগে যুগে সবসময়ই সত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের লড়াইকে প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধ,মূর্খরা সবসময় ধ্বংস ও পদ্দলিত করেছে।সেটা আব্রাহামিক রিলিজিয়নের হউক অথবা হিন্দু ধর্মের প্রেত্তারা হউক,সবাই এরা একসূঁতায় গাঁথা রসুনের কোয়া।
জয় হউক মানুষের বদ্ধমনের মুক্তি ও বিশ্ব-মানবতার।
@রাজেশ তালুকদার,
না খেটেই খুব বেশী তথ্য পাওয়া গেল। আমার মত আলসেদের পক্ষ থেকে রাজেশ তালুকদারকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এমনি লেখা যেন আরো পাই। পরের লেখায় কি উপমহাদেশীয় গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট গুলির একটা টাইমলাইন দেয়া যায়? :clap
চমৎকার তথ্যবহুল পোস্ট। তক্ষশীলা সম্পর্কে আমার ব্লগে সংক্ষেপে একটা পোস্ট পড়েছিলাম তবে সেটাতে আপনার নালন্দার মত এরকম বিস্তারিত তথ্য ছিলো না। আমাদের সোমপুর সম্পর্কেও জানতে আগ্রহ হচ্ছে। (Y) (Y) (Y)
@হোরাস, আমারব্লগে তো মনে হয় এ নিয়ে ব্লগার হাসান রায়হান একটা সিরিজ লিখেছিলেন(আমরাবন্ধু ব্লগ তৈরী হওয়ার আগে)। আমি গতকাল অনেক খুজেও লেখাটা পেলাম না, ওই সিরিজের লিংকটা এই পোষ্টে দিতে পারল খুব ভাল হত।
জিয়াং জাং নালন্দায় ধর্ম শিক্ষার সাথে সাথে আরও অনেক বিষয় অধ্যয়ন করেন যা রাজেশ তালুকদার বলছেন| কিন্তু হিন্দু-মুসলমান রাজা-শাসকদের হিংস্রতা আর স্বধর্ম বিস্তারে “পরধর্ম -ভিন্নমত নিধন-ও শ্রেয়” এই মহামন্ত্রের জোসন-জোলুসের জন্য এই উজ্জ্বল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিও ধ্বংস হয়ে গেছে!!!
রাজেশ তালুকদারকে ধন্যবাদ!!!
নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের ” তর্কপ্রিয় ভারতীয়” বইয়ের “চিন ও ভারত” প্রবন্ধটির অনেকখানি জুড়েই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আছে| জিয়াং জাং ( আমি অমর্ত্য সেনের মত করেই লিখ্লাম ) নালন্দায় শীলভদ্রের ছাত্র ছিলেন| ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে জিয়াং জাং চিনে ফিরে যান| তখন নালন্দার সন্নাসীরা তাকে ভারতে থেকে যেতে বলেছিলেন এই যুক্তিতে যে, “ভারত বুদ্ধের জন্মস্থান | তদুপরি চিন ম্লেচ্ছদের দেশ এবং যারা বৌদ্ধ বিশ্বাসের বিরোধী| সেখানকার আবহাওয়া শীতল ও দেশটি রুক্ষ।” কিন্তু জিয়াং জাং বৌদ্ধ ধর্ম- কে চিনে ছড়িয়ে দিতেই সেখানে ফিরে যান| চিনে তিনি অনেক সংস্কত পুথি অনুবাদ করেন | তার এক বন্ধু প্রাজ্ঞদেবের মাধ্যমে তিনি শীলভদ্রের মারা যাবার সংবাদ পান| জিয়াং জাং নাল
ঐতিহাসিক বিষয়ের ওপর লেখাটা খুব ভাল লাগল!
আচ্ছা নালন্দা ধ্বংসের ওপর বাংলায় কোন বইকি পাওয়া যাবে?
@লাইজু নাহার, তাবাকাতে নাসিরি বইটার বাংলা নেই, তবে ইংরেজী ভার্সান কিনতে পাওয়া যায়। এমনিতে বাংলা বা ইংরেজী উইকিতে এই ঘটনা দেওয়া আছে।
ইতিহাসের এই দিকটি সম্পর্কে জানা ছিল না।
চমৎকার লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইতিহাস যে এমন আকর্ষণীয় করে তুলে ধরা যায় এরই প্রমাণ এ লেখাটি। খুবই ভাল লেগেছে।
এ দেশে বখতিয়ার খিলজীর ঐতিহাসিক পুনরাবৃত্তি চেয়ে প্রতি বছরই দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার দেখি।
আশংকা করি আবার কোন নালন্দা ধ্বংস যজ্ঞে মেতে উঠবে নতুন খিলজীরা!
খিলজীর বাংলা বিজয়ের দিনটাকে আমাদের আসল “বিজয় দিবস” হিসাবে পালন করা যায় কিনা বলে কিছু মোমিনদের যেভাবে সিরিয়াস চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিলাম- ভাবলে এখনো হাসি পায়!
চমৎকার লেখা। মুক্তমনায় আমরা এমন লেখাই দেখতে চাই। (Y)
বিজ্ঞানবিরোধী, ব্যক্তি আক্রমণে ভরপুর, পাকি প্রেমপূর্ণ কোন লেখা এবং মন্তব্য যেন আর মুক্তমনায় স্থান না পায় সেই দিকে দৃষ্টি রাখার জন্যে এডমিন/মডারেটরদের বরারবর আবার আবেদন জানিয়ে গেলাম। :-[
লেখককে ধন্যবাদ লেখাটির জন্য ।
ছোটবেলায় খিলজির ১৭ সৈন্য নিয়ে বাংলা আক্রমণ আর লক্ষণ সেনের ভাগার কাহিনি পড়ে মজা পেতাম, কিশোর কন্ঠে পড়েছিলাম খিলজীর বীরত্বের কথা, তখন এসব কাহিনি কিছুই জানতামনা।
এই বর্বররা কি জানে আলেকজান্দ্রিয়া বা নালন্দা কি? জানলে ওরা মানুষই হত, অধর্মের ধার্মিক না। কষ্ট লাগে এসব কথা পড়লে। ;-(
যাহোক এরকম লেখা আরো দেখতে পেলে মন্দ হয়না, লেখককে ধন্যবাদ
এই হলো ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ইতিহাস! জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে সব্জির মতো কেটে! আর এদেরকেই ইতিহাস বলে বিজেতা!
অসাধারন লাগল। কিছু তথ্য আগেই জানতাম, তবে এত বিস্তারিত ও গোছানো আকারে পাইনি কোথাও।
তক্ষশীলা নিয়েও লেখা আশা করি, অবশ্যই আমার সোমপুর/শালবান বিহার…
স্কুলে থাকতে আমরাও ১৭ জন অশ্বারোহী নিয়ে বীর বখতিয়ায়ের বাংলা বিজয় ও হিন্দু রাজার লাঞ্চ ফেলে খিড়কী দরজা দিয়ে পলায়নের কাহিনী শুনে অসীম আনন্দ পেতাম। শুনেছিলাম দেশে নাকি নৌবাহিনীর একটি জাহাজের নামকরন করা হয়েছে এই কৃতি মুসলমান বীর বখতিয়ার খিলজীর নামে, নিশ্চিত জানি না অবশ্য।
@আদিল মাহমুদ,
সম্ভবত তথ্যটি সঠিক। আমিও এরকম শুনেছি কোথায় যেন।
এই লেখাটি পড়ার আগ পর্যন্ত খলজীর এসব কীর্তির কথা জানতাম না,তার ১৭জনের বাহিনী আর বিশাল লম্বা হাতের কাহিনী পড়েছি।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
বখতিয়ার খিলজী বাংলা দখল জ্বালাও পোড়াও চালালে হয় বীরত্ব; বুশ ইরাক দখল করলে হয় নগ্ন সাম্রাজ্যবাদ, ইসলামের ওপর হামলা।
জাহাজের খবর কনফার্ম করতে একটু সার্চ মেরেছিলাম, তেমন কিছু এখনো পাইনি।
@আদিল মাহমুদ,
সদালাপের অতীত মালিক জিয়াউ্দদিনকে একবার আমি এটাই বলেছিলাম। উনি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে চেঁচাবেন-কিন্ত ৭০০-১২০০ সাল পর্যন্ত ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ উনাদের কাছে গর্বের ব্যাপার। এটা অজ্ঞ এবং অশিক্ষিতদের দ্বিচারিতা ছারা কিই বা আর বলব।
ইতিহাস এবং দর্শন যত গভীরে ঘাঁটবেন দেখবেন কোন অশিক্ষিত লোক ছারা ধার্মিক হওয়া অসম্ভব।
@বিপ্লব পাল, 😀
অশিক্ষিত না বলে আমি বলব বিবেককে পুরো তালাচাবি বন্ধ রাখা ছাড়া।
শিক্ষিত লোকেরাই তো এ ধরনের একপেশে দৃষ্টিভংগী সবচেয়ে বেশী পোষন করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানেই শিক্ষিত এমন নাও হতে পারে।
@বিপ্লব পাল,
“ইতিহাস এবং দর্শন যত গভীরে ঘাঁটবেন দেখবেন কোন অশিক্ষিত লোক ছারা ধার্মিক হওয়া অসম্ভব।” 😀
সত্য কথা
@বিপ্লব পাল,
ইসলামের পত্তনই হয়েছে একজন অশিক্ষিত লোকের মাধ্যমে ……
@আদিল মাহমুদ,
বখতিয়ার খিলজির নামে কোনো যুদ্ধজাহাজ নেই বাংলাদেশে। খালিদ বিন ওয়ালিদের নামে একটা যুদ্ধজাহাজকে কমিশন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ, কনফার্ম জানতে চাচ্ছিলাম।
@আদিল মাহমুদ,
Very sorry for commenting in English.
BNS Khalid Bin Walid was the name given to the decommissioned ‘BNS Bangabandhu’ (which was decommissioned by the BNP government in 2001) in 2008. However, it has been named back to original ‘BNS Bangabandhu’ in 2009.
Again apologies for commenting in English.
@KRS,
হ্যা, এমন নামের রাজনীতি শুনেছিলাম বলে এখন মনে পড়ছে।
ধন্যবাদ।
উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনার শিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের করুন পরিণতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পড়ে অনেক কিছু জানা গেল। ধন্যবাদ।
বৌদ্ধ শাসন আমলে হিন্দুরা কেন বঞ্চিত ছিল জানার ইচ্ছা, যদিও ব্যাপারটি এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। বৌদ্ধদের শাসন আমলে কি অন্য ধর্মালম্বিদের অবদমিত হয়ে থাকার ইতিহাস আছে?
@ব্রাইট স্মাইল্,
মনে হয়না “হিন্দুরা” বঞ্চিত ছিল। শুধু ব্রাহ্মণদের দাপটটা কিছু কমেছিল।
@ব্রাইট স্মাইল্,
ধর্ম চর্চায় বৌদ্ধ শাসরা ছিল অনেক উদার। তারা বুদ্ধের সাম্য, মৈত্রী, করুণার বানীকে সামনে রেখেই ধর্ম চর্চা করেছিল। তারা চাইলে অস্ত্র ও ক্ষমতা বলে মধ্য প্রাচ্যের ইসলামের মত ভারত বর্ষ থেকে অনান্য ধর্ম গুলোকে(হিন্দু,জৈণ, আজীবক সহ আরো ছোট খাট ধর্ম) উচ্ছেদ করে ফেলতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে বরং এ ধর্মগুলোকে সহযোগীতা করে গেছে।
রাজ ধর্মে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রাধান্য ছিল। ভিক্ষুরাও আসত সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালী পরিরার থেকে। ফলে সাধারণ জনগন ও শাসক উভয়ের কাছে তাদের গ্রহন যোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। ভিক্ষুদের দেখা হত বেশ শ্রদ্ধার সাথে।
অপর দিকে ভোগবাদী ব্রাহ্মান গন আসত জন্ম সূত্রে।ফলে সাধারন জনগনের কাছে তাদের গ্রহণ যোগ্যতারও ঘাটতি দেখা দেয় আর রাজ ধর্ম থেকেতো তারা বঞ্চিতই ছিল।যা ঈর্ষা ও দম্ভে ভরা ব্রাহ্মন্য সমাজের পক্ষে সহজ ভাবে মেনে নেয়া কখনো সম্ভব হয়নি।
তথ্যবহুল লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। ফেসবুকে শেয়ার দিলাম।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
তোমাকে (F) শুভেচ্ছা ফেসবুকে শেয়ার করার জন্য।
চমৎকার লেখা, বিপুল পরিমাণ তথ্য পেলাম।
আবার প্রমাণিত হল, শিক্ষা ও জ্ঞানের পথকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে ধর্মের ভূমিকা অপরিসীম!
ধন্যবাদ। আরো লেখা আশা করছি।
ধ্বংসের মাঝেও আনন্দের সংবাদ হল যে, ২০০৬ সালে ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান ও অন্যান্য কয়েকটি রাষ্ট্র যৌথভাবে এই সুপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টির পুনরুজ্জীবনের প্রকল্প গ্রহণ করে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম স্থির হয়েছে নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি প্রাচীন নালন্দা মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষের নিকট নির্মিত হবে।
@শঙ্খশুভ্র,
আসলেই বড় আনন্দের সংবাদ। ফেব্রুয়ারী, ২০১১ তে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়েছেন গোপা সভরওয়াল। তিনি লেডী শ্রীরাম কলেজের সোশ্যলজী ডিপার্টমেন্টের সহকারী অধ্যাপিকা।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক কমিটির প্রধান হিসেবে আছেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। নির্মানকার্য চলছে। ২০১২ সাল থেকে দাপ্তরিকভাবে এর কাজ শুরু হওয়ার আশা আছে। এ বিষয়ে কিছু তথ্য নীচের উইকি লিঙ্কটিতে পাবেন।
http://en.wikipedia.org/wiki/Nalanda_International_University
তবে অনেক তথ্যই আপডেটেড নয়।
@শঙ্খশুভ্র,
এটা তো খুব ভাল খবর, জানা ছিল না তো। ধন্যবাদ আপনাকে।
@শঙ্খশুভ্র,
হয়ত নতুন ভবন গড়ে উঠবে, লাইব্রেরীগুলো ভরে যাবে নতুন মলাটের চোখ ধাধানো বইয়ে। কিন্তু আমরা কি ফিরে পাব পুড়ে ছাই ভষ্ম করে দেওয়া সেই অমূল্য বই গুলি?
তারপরেও ভিন দেশীরা আগ্রহ নিয়ে হত্যা করা প্রতিষ্ঠানটিকে যেভাবে পুনঃজন্ম দিয়ে নালন্দার গৌরব উজ্জ্বল অতীত ইতিহাসকে আবারো বিশ্ববাসির সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে সত্যি প্রসংশার দাবিদার।
অনেক ধন্যবাদ দাদা । ইতিহাস ভিত্তিক আরও লেখা চাই ।
@রুপম,
সাথে থাকার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। :))
দারুণ একটি লেখা। (Y)
ইতিহাসনির্ভর লেখাগুলি আমি খুব ভালো পাই।লেখককে ধন্যবাদ।
@নিটোল,
আমি নিজেও ইতিহাসের ভক্ত। ইতিহাস আমাকে টেনে নিয়ে যায় পার হয়ে আসা অতীতে।কল্পনায় আকঁতে চেষ্টা করি তাদের সংগ্রাম মুখর জীবন, কষ্ট, কিভাবে যম দূত তাদের তারা করত প্রতিটি মূহুর্ত, তাদের অসহায় চোখের সামনে বউ, বোন, কণ্যারা কিভাবে ভোগ্য পন্যে পরিনত হয়েছিল সামাজিক দস্যুদের কাছে।
লেখকের কাছে আমরা এমনই লেখা প্রত্যাশা করি।
(Y)
@আসরাফ,
প্রত্যাশা ক রার জন্য ধন্যবাদ।
সারা দুনিয়ার মধ্যে আমরাই বোধহয় সবচেয়ে হীনমন্য, আত্ম-সম্মানবিহীন জাতি । আর সে কারণেই দখলদার মুসলিম দস্যুদেরকে নিজেদের উদ্ধারকর্তা বলে মনে করি। বখতিয়ার খিলজির মত এক রক্তপিপাসু ডাকাতের বাংলা দখলকে বাংলা বিজয় বলে মহিমান্বিত করি। ভাবখানা এমন যেন বখতিয়ায়ের ঘোড়ার লেজ ধরে আমরাই বাংলা বিজয় করেছিলাম। ওই খুনে দস্যুটা যে আমাদেরই পূর্বপুরুষদের কচুকাটা করেছিল সেটা বোঝার মত ক্ষমতাটাও আমাদের নেই। এমনই এক বিভ্রান্ত আর নির্বোধ জাতি আমরা।
এই বোধবুদ্ধিহীন বিভ্রান্ত জাতির দুঃখে কাতর হয়ে অনেকদিন আগে কনফিউজড এক জাতির গল্প নামে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম। আগ্রহী হলে মুক্তমনার নতুন পাঠকেরা পড়ে দেখতেন পারেন এটি ।
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই, আপনার এই মন্তব্য পড়ে মনে পড়ে গেল আমার এক প্রিয় লেখকের কথা। আহমদ ছফার বাঙালী মুসলমানের মন বইটি আবার পড়তে বসলাম…
@ফরিদ আহমেদ,
কোথায় সেই তক্ষশীলা
আর কোথায় সেই নালন্দা,
কোথায় সুশীতল শাল বনে
ঢাকা প্রশান্তির সেই বিহার।
কোথায় সেই সারগর্ভ বাণী
আর আকাট্য জ্ঞান।
কোথায় আমাদের সেই
বিশ্ব শান্তির বাণীময় পূর্বজরা।
শুধু ভেবে এতেই পাই শান্তি যে
তাহাদের সেই লোহিত কণিকা
হায় বইছে আমাদেরই ধমনীতে,
যুগে যুগে নিস্তেজ বা নিস্প্রাণ,
জাতপাতের আঘাতে মূমূর্ষ হয়ে।
(উপরের লাইনগুলি ফরিদ আহমেদকে দিলাম)
@সেন্টু টিকাদার,
শুধু একজনকে দেয়ার জন্য (N) (W) :-[
শুধু তাই নয় কবি আল মাহমুদ একখানা জিহাদী কবিতা লিখেফেলছেন বখতিয়ারের ঘোড়া নামে।
ঘোড়া , উঠ, তলওয়ার, রক্ত আর রাজ্যবিজয়ই যাদের সকল গৌরবের উৎস তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা ঠিক হবে না।
নালন্দার লাইব্রেরী পোড়ানো ইতিহাসের অর্বনীয় ক্ষতি। বখতিয়ার খিলজি না কি বলে ছিলেন -লাইব্রেরীতে কি কোরান আছে? না থাকলে সব পুড়িয়ে দাও। কি আর করা যাবে। মুসলমানদের অধিকাংশই ভাবে কোরানে সব আছে-তাহলে আর লাইব্রেরী রেখে লাভ কি?
তুর্কীরা যে অসভ্য ছিল তা ত না। মুসলিম সভ্যতা ৭-১১ শতকেই শীর্ষে উঠেছে। কিন্ত অন্য ধর্মের ওপর অত্যাচার করে পৈশাচিক আনন্দ পাওয়াটা ইসলামের ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট। কেন জানি না। জাতিভেদে নীচু জাতিকে অত্যচার করে যেমন বর্নহিন্দুরা আনন্দ পেত-ঠিক তেমনি মুসলমানরা আনন্দ পেয়েছে অমুসলিম সভ্যতার স্তম্ভগুলি ধ্বংশ করে। এগুলো করুন ইতিহাস।
ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের ইতিহাস এত বর্বর এবং নিষ্ঠুর লোকে কি করে নিজেদের হিন্দু এবং মুসলিম বলে পরিচয় দেয় কে জানে। ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের ইতিহাসে অজ্ঞতাই হয়ত কারন।
আমাকে অনেকেই বলে তুমি কেন ফেসবুকে বা অর্কুটে নিজের ধর্মের পাশে হিন্দু ধর্ম লেখ না- আমি পরিস্কার বলেছি -আমি লজ্জা পাই নিজেকে হিন্দু ভাবতে। হিন্দু বা ইসলামের গর্বের দিক আছে-কোন সন্দেহ নেই তাতে-কিন্ত নিজেকে হিন্দু বা মুসলিম বললে, হিন্দু বা ইসলামের অমানবিক বর্বর ইতিহাসকেও গৌরবের বলে মানতে হয়।
কোন মানবিক বা সংবেদনশীল লোক নিজেকে হিন্দু বা মুসলিম বলে মানতে পারে না- গভীর লজ্জা হওয়া উচিত নিজেকে হিন্দু বা মুসলিম বলে পরিচয় দেওয়ার আগে।
@বিপ্লব পাল,
দাদা, একদম মনের কথাই বলেছেন আমার।
আপনার সাথে পূর্ণ সহমত।
@বিপ্লব পাল,
– অজ্ঞতা মনে হয় না। এর সোজা উপায় আছে। যত ভাল দিক সব ধর্মের অবদান, আর মন্দ কিছু পাওয়া গেলে তার দায় ব্যাক্তি বিশেষের এই উপায়ে সহজেই গর্ব করার কাজটা চালানো যায়।
“অল্প কিছু লোকে করেছে, তার দায় কেন ধর্মের হতে যাবে”…
@আদিল মাহমুদ,
এসব কাজ মন্দ, এধারণাও তো খুব পুরোনো নয়। জাতিভেদ ভিত্তিক রেসিজম ও পরধর্মের প্রতি ঘৃণা, এগুলি যথাক্রমে ওই দুই ধর্মের মজ্জাগত অভ্যাস, এবং মূল ভিত্তির অংশ। শ খানেক বছর আগে নির্বিবাদে এতে গর্বই বোধ করত এরা।
@রৌরব,
আসলেই তাই; এক কালে কে কত পৈশাচিকতা দেখাতে পারে তাইই ছিল কৃতিত্ব; এর মাঝে কোন বাড়াবাড়ি নেই। আওরংগজেবের ছবি আছে (মনে হয় কাল্পনিক যদিও) তার নিজের ভাই এর কাটা মাথা প্লেটে করে তাকে দেখানো হচ্ছে…সেসব যুগে এসবই ছিল স্বাভাবিক।
নালন্দার ঘটনার পেছনে ইসলামের দোষ দেওয়া যায় না, বা এ নিয়ে দীর্ঘ তার্কিক বিতর্ক হতে পারে। সেটা এড়িয়েও যেটা দৃষ্টিকটূ লাগে এক শ্রেনীর লোকে ধর্মের টানে কিভাবে এসব পৈশাচিক কাজকারবারকেও জাষ্টিফাই করতে পারে, বীরত্ব গাঁথা এ আমলে বসেও রচনা করে ফেলতে পারে।
@আদিল মাহমুদ,
না কাল্পনিক না, আওরঙ্গজেব স্যাডিস্ট ছিল। তবে ও ব্যাপারটা মোগলদের কাছে এসে থাকতে পারে তাদের মোঙ্গল উত্তরাধিকারের সূত্র ধরে।
@রৌরব,
কাল্পনিক সেই স্পেসিফিক ছবির কথা বলেছি, ঘটনা তো সত্য সেটা জানি।
এই ঘটনাও মীর মোহাম্মদ নাসির আলী (ছোটবেলার আমার একজন প্রিয় শিশু সাহিত্যিক) জাষ্টিফাই করেছেন; তার মতে ব্যাপারটা হয় মারো নয় মর। নইলে আওরংজেবের ভাইয়েরা তাকেই এই হাল করত।
আওরংজেবের সাথে আমার আমাদের জিয়াউর রহমানের বেশ মিল পাই; দুজনেই চরম নিষ্ঠূর, তবে ব্যাক্তি জীবনে সত।
@রৌরব,
শুধু যে মঙ্গলরাই এরকম ছিলো তা না, তৎকালীন আরব শাসকরাও যথেষ্ঠ নিষ্ঠুর এবং স্যাডিস্ট ছিলেন।। সম্রাট বাবর মোঘল সম্রাট হয়ে উঠবার আগে যখন উজবেক ওয়ারলর্ড শাইবানী খান কতৃক সমরখন্দ থেকে বিতারিত হয়ে (শাইবানী খান তার একমাত্র বোন খানজাদাকেও রেখে দিয়েছিলো এবং পরে বিয়ে করেছিলো) কাবুলের শাসক হিসাবে দিন কাটাচ্ছিলেন তখন ইরানের শাহ ইসমাইল শাইবানী খানকে মেরে তার মাথার চামড়া ছিলে সেটা খড় দিয়ে ভরে তুরস্কের সুলতানকে পাঠিয়েছিলেন আর মাথার খুলিটাকে সোনা দিয়ে বাধিয়ে পান পাত্র বানিয়েছিলেন। জনশ্রুতি আছে সেই পানপাত্র তিনি বাবরকে উপহার দিয়েছিলেন সমরখন্দে তার অধীনস্হ থেকে শাসন কাজ চালাবার জন্য।
@হোরাস,
শুধু মোগল, মংগল, আরবরাই নয়, ততকালীন রাজা বাদশাহ সবাইই তেমনই ছিল। বিচিত্র কায়দায় অপরিসীম নির্যাতনের মাধ্যমে মানূষ হত্যা ছিল আর্ট, সেগুলি পাবলিক ডিস্পলে করা হত; আম পাবলিকে আবার মজাও পেত।
সিংহাসন অক্ষত রাখতে নিজের ভাইদের কল্লা নেওয়া সে সময় স্বাভাবিক ভাবেই দেখা হত।
হুমায়ুন আহমেদের বাদশাহ নামদার পড়েছেন নাকি? ইতিহাস প্রিয়ড়া মজা পাবেন।
@আদিল মাহমুদ,
কথা ঠিক, কিন্তু তারপরও কোন কোন সংস্কৃতিতে রিচুয়ালিস্টিক নৃশংসতা অন্য মাত্রা পেয়েছিল। আসিরিয়রা যত নৃশংস ছিল তাদের পড়শি ব্যবলনীয়রা ততটা নয়। একই ভাবে রোমান, অ্যাজটেক, মোঙ্গল — এরা বিশেষ “মর্যাদা”-র অধিকারি।
@আদিল মাহমুদ, মংগল শব্দটার ফারসী হলো মোঘল। ভারত উপমহাদেশের মোঘল সম্রাটরা আসলে মংগলই কারণ একদিকে এরা চেংগীস খান আর অন্যদিকে তৈমুর লংয়ের বংশধর।
@হোরাস,
আরবরা নিষ্ঠুর ছিল দ্বিমত করছিনা, কিন্তু উদাহরণ গুলি যা দিলেন আরব নয় একটাও :-)। যাহোক মোগলরা সহ ওই আমলের টার্কিক রাজা-রাজড়াদের ৯০%-ই যেহেতু নিজেদের চেঙ্গিজ খানের বংশ দাবি করত, কাজেই মোঙ্গল প্রভাবও তাদের নিষ্ঠুরতার আরেকটি সোর্স, এটুকুই বলেছি। এমন না যে অমোঙ্গলরা খুব ভাল ছিল।
@রৌরব, আমার ধারণা ছিলো আরবরা পারস্য দখল করার পরে পারস্যের শাসকরা, এক্ষেত্রে শাহ ইসমাইল, আরব ছিলো। আমার ভুল হতে পারে।
@হোরাস,
যেসময়ের কথা হচ্ছে ততদিনে ফারসীরা আবার নিজেদের দেশের দখল নিয়ে নিয়েছে। শাহ ইসমাইল ইরানী।
@আদিল মাহমুদ, যারা এই ধ্বংসাত্বক কাজ করেছে ধর্মের দোহায় দিয়ে করেছে।
@বিপ্লব পাল,
(Y)
ছোট গ্যাদারিংএ অনেক সময় প্রসংগস্থলে একটা কথা বলে প্রিয়ভাজনদের কাছে বিরাগভাজন হই। আমি বলে ফেলি – হিন্দুধর্ম এবং হিন্দুরা “খাচ্চড়” (খচ্চড় থেকে “খাচ্চড়” শব্দটার উতপত্তি সম্ভবত) জিনিস।
রাজেশ তালুকদারের লেখাটি খুব ভাল লাগল। সম্রাট অশোকের কলিংগ যুদ্ধের ইতিহাস মনে পড়ল। কলিংগযুদ্ধে রক্তক্ষয় দেখে তিনি অতীব বেদনাহত হন এবং গৌতম বুদ্ধের নির্বানেই শান্তি এই মহাবাণীতে শান্তির অন্বেষন করেন।
@বিপ্লব পাল, ধরুণ আমি হিন্দু কিন্তু চার্বাক দর্শনে বিশ্বাস করি। লজ্জা পাবো বলতে?
@অনামী,
আজ পর্যন্ত কোন চার্বাক দর্শনে বিশ্বাসী হিন্দুর দেখায় পাই নি, যেদিন পাব জানাব। নাস্তিক মানেই চার্বাক না। আমি নাস্তিক কিন্ত চার্বাক দর্শনে বিশ্বাসী না। ভারতে নাস্তিক্ দর্শনের ৬ টি ধারা ছিল। চার্বাক ধারা মৃত্যু বহুদিন আগে থেকেই হয়ে গেছে।
@বিপ্লব পাল, :)) কি যে বলেন দাদা! ভারতে এত্তো লোকে ধার করে ঘী খায়। আর আপনি বলেন চার্বাক দর্শন মৃত!
@অনামী,
ভাই চার্বাক দর্শনে বিশ্বাসী হলে আমার মনে হয় লজ্জা পাওয়াই উচিত। চার্বাকরা নাস্তিক ছিল ঠিকই কিন্তু তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভোগ।
যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ।
ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পীবেৎ।।
এই ছিল চার্বাকদের মূলমন্ত্র।
কিন্তু বর্তমানে কিন্তু অধিকাংশ লোকই নাস্তিক হয় শিক্ষিত হয়েই এবং সত্যকে জানার প্রেরণা থেকেই নাস্তিক হয়। তাই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ভোগে পর্যবসিত হয় না। মহাবিশ্বের সকল রহস্য উপলব্ধি করার প্রেরণা তাদের মধ্যে সর্বদাই থাকে।
@রনবীর সরকার,
শ্লোকটি আমেরিকানদের জন্য লিখিতং।
বাড়ী গাড়ি সবই ঋণের টাকায়। প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ড এবং বাড়ি-গাড়ির ঋণ শোধ করে হিমসিম খাচ্ছে। কিন্তু রান্নার ডিমটা পর্যন্ত হাত দিয়ে ভাংবে না। তার জন্যও যন্ত্র চাই।
নমস্কার চার্বাক মহাশয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
এইরে! তাদের অনেকে যে আজও স্কুলে বিবর্তন পড়তে দেয়না 🙁
@রনবীর সরকার,
লজ্জা পাবো কেন বলুনতো? ধরুন কারো কোনো ক্ষতি না করে আমি আমার মতন ফুর্তি করছি।মনে করছি যে শরীর নশ্বর অতএব যতক্ষণ তা আছে আমি আনন্দ করব।সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থাকব কিনা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ভোগই আমার কাছে পরম সত্য। আমাকে যে অন্যরকম নীতিমালা শোনাবে তঁার সাথে clergy-র কি তফাত?
এই মহঞ্জানি মহাজনদের কথা নাই বা শু্নলাম।
@অনামী,
ভাই, অন্যের ক্ষতি না করে সবসময় ফুর্তি করা মনে হয় সম্ভব না।
বাংলাদেশে এই যে কিছুদিন পর পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তার জন্য কিন্তু আমেরিকান ভোগবাদী সমাজ অনেকাংশে দায়ী।
আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বিবর্তনের ধারাতেই আমাদের মধ্যে চলে এসেছে। একে অস্বীকার করার তো আর উপায় নেই। 🙂