তুমি আসা মাত্রই
সমস্ত পান্ডুর বর্ণ নিমেষেই রঙিন রূপ ধারন করল,
তুমি আসা মাত্রই
মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানালো সমস্ত শহর,
তুমি আসা মাত্রই
হাসি ফুটল কান্নারত নবজাতকের মুখে,
তুমি আসা মাত্রই
আত্নহত্যা করল ঐপনিবেশিক সৌন্দর্য,
তুমি আসা মাত্রই
কলের চাকা ঘুরতে লাগল গরগর করে
যেন থেমে যাওয়া সময়টুকু বিশ্রাম নিয়েছিল,
তুমি আসা মাত্রই
প্রবাসী পাখিরা নীড় রচনা করল প্রত্যেকটি গাছে,
কার্ণিশে দেখা গেল অতি পরিচিত বন্ধু পাখি কাক।

তুমি আসা মাত্রই
বারুদ আকাশ পরিনত হল অথৈ নীলিমায়, নিবিড়,
উড়তে থাকল ঝাঁক বেধে স্বপ্নীল বলাকা,
তুমি আসা মাত্রই
ধর্ষিতা রমণী ফিরে পেল তাঁর সতীত্ব
ছেলেহারা মা ফিরে পেল তাঁর নাড়ী ছেঁড়া ধন
পঙ্গু বাবা পেল তাঁর ব্যক্তিগত হুইলচেয়ার
বেঁচে থাকার অবলম্বন।

তোমার আলিঙ্গনে বাঁধা পড়ল সমস্ত কিছু,
শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে শহর
ক্লিষ্ট বসতবাড়ির জোৎস্না থেকে
শহুরে সভ্যতার অসহ্য রৌদ্রপ্রহর।
বদ্ধ জলাভুমি, পদ্মা থেকে মেঘনা থেকে যমুনা,
উপদ্রুত উপকূল, থেমে থাকা জনপদ,
হাড় জিরজিরে মুমূর্ষ বালক থেকে মরে যাওয়া
হলদেটে ঐ ঘাসটুকু পর্যন্ত, এমন কি
ক্ষুধার জ্বালায় দেহবিক্রি করেছে যে বনলতা,
তোমার স্নেহাদ্র আলিঙ্গন থেকে সেও বাদ পড়েনি।

তুমি আসা মাত্রই
বিষন্নতা আক্রমন চালালো সামরিক ছাউনিগুলোতে
অন্যদিকে চড়াইভাতি করল দেশের সমস্ত চড়ুইগুলো
আমন্ত্রিত হল সমগ্র পক্ষীকুল,
গুনেগুনে দুদিন সূর্যদেব করল না প্রস্থান।

তুমি আসা মাত্রই
স্বাধীনতা তুমি আসা মাত্রই
ধরিত্রী প্রসব করল তাঁর সবুজ সন্তান
বাঙলাদেশ।।