১ ফেব্রুয়ারী
(আমি এই পর্যন্ত বইমেলা নিয়ে মন্তব্য করেছি। লেখা হয়ে ওঠেনি। অনেকেই লিখেছেন তাই আলাদা কি লিখবো। তাই ঠিক করেছিলাম একবারে শেষে গিয়ে লিখব। তাই কিছু প্রচেষ্টা)
জীবনে এইবার প্রথম দিনেই ‘ বই মেলায়’ গেলাম। প্রথমে আমি আর মামুন ডাস এ দেখা হল। পায়ে পায়ে টিসসি চত্তর পার হলাম অনেক কসরত করে কেননা মেলায় উদ্বোধনি পর্ব চলছে।
এর পরে শুরু হল দুরুহ অপেক্ষার পালা,কেননা প্রধান মন্তী সহ তাঁর যত আমলা’রা আছেন মানে উপমন্ত্রী কত কিসিমের মন্ত্রীদের আগমন।
অপেক্ষার ঘন্টাখানেক চলাকালীন এক সময় আমার যথারীতি কোমরে ব্যাথা শুরু হয়। চাপচাপ হজম করে ফেলি তবু। এরমাঝে পুলিশ রাস্তা পরিস্কারে ব্যস্ত হওয়ায় আমাদের কেও পরিষ্কার হতে বলে দিল। অগত্যা আমি আর মামুন ভাই রাস্তার ওপারে চলে যাই। আর গীতাদি’র জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।
আমি নিজ মনেই বলছিলাম,
-আরে বাপু ক্রিকেট খেলা নাকী ?এই কোন যন্ত্রনায় পড়লাম। এক তরুন পুলিশ চোখ গোল-গোল করে জিজ্ঞেস করে,
-ম্যাডাম কি ক্রিকেট খেলা দেখেন? এইবার কাকে সাপোর্ট করবেন?
এর চোখে মুখে চকচকে এক আগ্রহ স্পষ্ট দেখতে পেলাম। কষ্ট লাগল এই ছোট তরুন পুলিশ ছেলেমানুষি যায়নি। না হলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের সাথে তাদেরও ইচ্ছে করে মনের উচ্ছাস, মনের খুশিতে অংশিদার হবার। জবাব দিলাম,
– আগে বাংলাদেশ।
-তারপরে? পুলিশের প্রশ্ন।
রোদের জন্য মাথা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করে জবাব দিলাম,
-তারপরে যে জিতবে তার পেছনে যাব।
-এরপর? পুলিশ প্রশ্ন করে। মনে মনে বলি ভালো– হ্যাপায় পড়লাম বাপু।
-এরপরে যে জিতবে তার পেছনেই দৌড়াতে থাকব।
একটা গুঞ্জন উঠল,
-আইসে রে দ্যাখ, দিপুমনি আইসে।
সত্যি তাকিয়ে দেখলাম মন্ত্রী মহাশয় আর তাঁর সঙ্গিসাথীরা গম্ভীর মুখে হেঁটে যাচ্ছেন। একবারো এইদিকে তাকালেন না। পেছনে কি মানুষ নাকী কুকুর ছাগল দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো এইটাই নিয়ম। এমনই হতে হয়। মানুষ যতো উপরে ওঠে নিচের দিকে তাকালে সব কিছুই ছোট তুচ্ছ আর অনাবশ্যক মনে হয়।
এইটাই স্বাভাবিক। আবার ভোটের সময় এলে আমরাও একদিনের রাজা(?) হবো।
আবার শুনলাম প্রধানমন্ত্রী এখনও রয়ে গিয়েছেন। সর্বনাশ আর কাকে বলে। ভাবছি আমার কী হবে?
কী কু-ক্ষনেই না এলাম আজ। যদিও মামুন ভাই সবসময় আমার খোঁজ রাখছিলেন। কেননা আমিও যে একই পথের পথিক তা সে জানে।
-পেছনে হটেন পেছনে হটেন।
মাছির মত তাড়াতে লাগল কিছু পুলিশ। ওদিকে সেই তরুন পুলিশ উধাও।
-আর যাবো কোথায়? বিরক্ত চরমে।
-আপনি বলুন। জায়গা কোথায়?
আমার বিধস্ত চেহারা দেখে পুলিশের মায়া হল হয়তো। বুদ্ধি দিলো,
– পেছনে স্টল আছে ম্যাডাম ওদিকে বসার যায়গাও পাবেন। যেই বলা সেই কাজ।
পেছনে এক স্টলে (সাজানো হয়নি তখনও) স্তুপ বই। চেয়ার, টুলগুলো সারিবন্দি করে গুচ্ছ করে রেখে তার উপরে দাঁড়িয়ে আছে এক ভদ্রলোক। অনুমান করলাম দোকানের কেউ হবে।
কাছে এগিয়ে গেলাম।
-ভাই কি দেখেন এমন উঁচু হয়ে?
-আরে দেহেন আপা কি দারুণ দেখা যাইতাসে। সব মন্ত্রীদের। গলাটা আবার সে জিরাফের মতন লম্বা করে দেখতে লাগল।
– শুনুন,
সে লোক বলে , -আমাকে কিছু কন?
-হ্যাঁ আপনাকেই। একটু কষ্ট করে নামুনতো নিচে।
সে অবাক বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। এমন কথা জীবনেও শোনেনি। তারই দোকানে তারই টুলে দাঁড়িয়ে আর আমি হুকুম করছি। তার মানে? মনে মনে ভাবছে আমার মাথায় ছিট আছে। ইতস্তত শুরু করল। আমি হেসে বললাম ,
-ঠিক আছে নামবেন নাতো? চিন্তা নাই। কিন্তু কিছু পরে আপনারাই আমাকে ঢাকা মেডিকেলে দিয়ে আসবেন। কেননা আপনার স্টলের সামনে একজন ফিট হয়ে পড়ে গেলে দোষ কিছুটা আপানাদেরও আসবে। কেননা আপনারা ব্যবস্থা নিলেন না। আর ধরুন স্ট্রোক এর মত কিছু ঘটলে বিপদে কি আরো পড়বেন না?
ভদ্রলোক তড়াক করে লাফিয়ে নেমে গেল।
-আরে কি যে বলেন আমরা থাকতে আপনি ম্যাডাম কষ্ট করবে তাই কি হয়?
টুল টানাটানি করে ঝেড়েমুছে আমাকে বসতে দিলো। আমিও হৃষ্ট চিত্তে বসলাম।
-আপনি প্রধানমন্ত্রীরে দেখবেন না? দোকানির কৌতূহলি প্রশ্ন। জবাব দিলাম,
-আপনি দেখতে থাকুন চোখ দিয়ে আর বলুন কী কী দেখছেন বলতে থাকুন আমি কান দিয়ে শুনতে থাকি।

অসহ্য লাগছিল এর মাঝেই গীতাদি চলে এলেন। কিছুটা স্বস্তি, পরিচয়ের প্রথম আনন্দ। খুব ভালো লাগছিল। মনে হল আমার ব্যথা বেদনা উবে গেল। মুহূর্তে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশ গড়ে উঠল।
অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হল। প্রধানমন্ত্রী বিদায় হলে আমরা মানে আমি মামুন ভাই, গীতাদি হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লাম মেলা প্রাঙ্গনে। বেশ ফাঁকা লাগছিল। খুঁজতে শুরু করলাম “শুদ্ধস্বর’ স্টল। লিটিল ম্যাগাজিন চত্তরে দেখি শুদ্ধস্বর নামে এক স্টল। হতাস হয়ে গেলাম দোকানের অবস্থা দেখে। আমি বসে পড়লাম বাঁশে তৈরি খান কতক বেঞ্চ আছে তাতে। পরে শুনি নাহ স্টল এইটা নয়। আর একটা দৌড়ালাম সেখানে।
ওখানে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। দূর্দান্ত স্টল। খুব মন কেড়ে নেয়া স্টল। ভালো লাগলো। দেখলাম কী কী বই এসেছে। বেচারারা মাত্র সাজাচ্ছে তখন। তার মাঝেই আমি প্রথমেই কিনে নিলাম অভিজিতের’ ‘সমকামিতা” বইখানা। এই বই কেনার আগ্রহ আমার আগে থেকেই ছিল। পরে কিনলাম গীতাদির ‘তখন ও এখন” বইটা। দুঃখ অভিজিত নেই। থাকলে হাতের লেখাটা পেতাম।
যাই হোক, এখনও সব স্টল গুছান হয়নি। তবু ‘শুদ্ধস্বর” এ বেশ ক’কজন হাল্কা,পাতলা আড্ডা মেরে কিনলাম
সবশেষে বাড়ি থেকে তাড়া এল, আমার কত্তা মশাই অসুস্থ। চলে এলাম। আসার সময় মামুন আমাকে টিএসসি গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। প্রথম দিনের অপেক্ষার পালা ছাড়া বাদবাকী খুব –খুব উপভোগ্য। গীতা’দির আর মামুন ভাইয়ের মধুর ব্যবহারে মনে হয়েছিল আমরা সবাই সবাইকে অনেকদিন ধরে চিনি জানি।
একসময় বিদায় নিলাম আমরা। বইগুলো বগলদাবা নাহ ব্যাগ দাবা করে যার যার বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। এমন করেই শুরু হয় আমাদের বইমেলার প্রথম দিন।

৫ ফেব্রুয়ারী – বই মেলার যাবার দ্বিতীয় দিন। আজ শনিবার। শীত যাই যাই করছে। মাঝে মাঝে বাতাসের দোলায় জানান দিয়ে যাচ্ছে সামনেই ফাল্গুন আসছে।
পাতাঝরার দিন। বই মেলা আমার প্রিয় বই মেলা। সারা বছর যার ডাক শুনি। আমায় হাতছানি দেয়।
এবারের বই মেলা অন্যবারের মত নয়। এই মেলা যেন অন্য এক নতুন দিগন্তের সুচনা করে দিল।
নতুন সুচনার অনেকটা জুড়ে আছে মুক্তমনা পরিবারের সাথে মুখোমুখি দেখা হওয়া। এক পরিবারের একত্রিকরনের মধ্য দিয়ে এই আনন্দ।
যথারীতি টিএসসি চত্তর পেরিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাটা ধরলাম। চারদিন তাকাতে তাকাতে যাচ্ছি। নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে প্রধান গেট দিয়ে ঢুকে বিভিন্ন স্টল দেখতে দেখতে ‘শুদ্ধস্বর” স্টল গিয়ে দাড়ালাম। দেখা পেলাম হাস্যময়ী গীতা’দিকে দেখা পেলাম মামুন ভাইকে। এর পর একে একে পরিচয় হল লীনা, রায়হান আবীর, এবং আরো অনেকের সাথে। স্টলের সামনে দাড়িয়েই গল্প শুরু। মাঝে মধ্যে ফটো তোলার পালা। সর্ব শেষে চটপটি আর কফি দিয়ে আড্ডা শেষ হল।
১২ ফেবরুয়ারী তৃতীয় দিন।
যথারীতি বাংলা একাডেমী প্রবেশ করলাম। এই দিন বেশ কিছু বই কিনলাম। আসলে রোজই কিছু কিছু বই কিনছি। এক সাথে অনেক বই নেয়া সমস্যা তাই অল্প স্বল্প করে কেনা।
সারা বইমেলা প্রাঙ্গনজুড়ে ধূলো কমানোর জন্য পানি ছিটানর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘শুদ্ধস্বর” স্টলের সামনে কথা বলতে বলতে পিছু হটতে গিয়ে পা কাদায় ডুবে গেল। গীতাদি টিস্যু দিলেন। কাদা পরিষ্কার করে আবার হাটা শুরু করলাম।
আমার শারিরীক সমস্যার কারনে একটানা বেশীক্ষণ হাটতে পারছিনা। থেকে থেকে বিশ্রাম নিচ্ছি আবার হাটা শুরু করছি।
অংকুর প্রকাশনী গেলাম। বই ঘাটা ঘাটির এক পর্যায়ে জানলাম আমার প্রিয় আকিমুন আপা আসছেন।
দেরী দেখে ফোন করলাম। আপা জানালেন তিনি পথে।
ক্লান্ত হয়ে একাডেমী ক্যান্টিনে বসে কফি আর চটপটি খাচ্ছি সাথে সবার সাথেই গল্প গুজব। পাশে গীতাদি, মামুন ভাই আরো অনেকেই আছেন।
এমন সময় ফোনে জানতে পারলাম আমার এক ছোট্ট বোন ইন্ডিয়াতে থাকে তার বই বের হয়েছে।নাম সায়ন্তনী।
দৌড়ালাম ‘ঝিঙ্গেফুল” প্রকাশনীতে। খুব ভালো লাগলো বইটা দেখে।নাম ‘ত্রি-মূর্তি যখন ভয়ঙ্কর”।
দোকানে যিনি ছিলেন তখন আলাপ করার ফাঁকে দেখা হয়ে গেল তপন বাগচীর সাথে। ওখানেই গল্প শুরু। তাঁর আমন্ত্রনে একাডেমীর দোতালায় তার অফিস কক্ষে গেলাম। তপন দা জানালেন ডঃ অজয় রায় এইখানেই বসেন। অর্থাৎ তাঁর পাশের টেবিলেই।
এর মাঝে ফোন এলো আকিমুন রহমানের। তপন বাগচী টিএনটিতে কিছুক্ষণ রসিকতা করলেন আকিমুন আপুর সাথে।
অত্যান্ত সদালাপী আর নিরহংকার এক ব্যতিত্ত্ব।
বলা বাহুল্য বাংলা একাডেমী আমার তীর্থ স্থান। এহেন যায়গায় তাঁর সান্নিধ্য আমাকে আরো ধন্য করে দিলো।
গেলাম অংকুর প্রকাশণীতে। ফোনে সবাইকে এখানে আসতে জানালাম। আমরা মুক্তমনা সদস্যরা সবাই আকিমুন রহমান সহ ছবি তুললাম। একসময় দেখি রাত হয়ে গেছে। বিদায় নিয়ে চলে এলাম সেদিনের মত।
১৪- ফেব্রুয়ারী।
নিজেদের মাঝে এক ঘরোয়া মিটিঙ্গের জন্য টিএসসি গেলাম। আমি, গীতাদি, মামুন ভাই, আরো অনেকে।
সেদিন ছিলো “ভালোবাসা” দিবস। মনেই ছিলনা। টিএসসিতে কেমন অস্বস্তি লাগায় আমরা হাঁটা দিলাম বইমেলায়। ওখানে অপেক্ষাকৃত ঝামেলা কম মনে হল। মানে হৈ চৈ কম।
বেশ বই কেনাকাটা করি। সৈ্যদ শামসুল হক ওদিন ‘ শুধস্বর” স্টলে বসেছিলেন। অটোগ্রাফ নিলাম বই কিনে।
ইমদাদুল হকের’ ‘নূরজাহান” ১ খন্ড কিনলাম। তিনি থাকায় ওখানেও ওটোগ্রাফ পেলাম। দেখা পেলাম আমি গীতাদি মুনতাসির মামুনের। যাঁর ছবি গীতাদি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। আমি কোনো ক্যামেরা নেইনি। তাই ছবি যা আছে তা কুড়িয়ে পাওয়া বা এর ওর ক্যামেরা থেকে নেয়া।
নানা ঘটনার মাঝে একসময় বিদায় নিয়ে নিলাম সেদিনের মত। মামুন ভাই এগিয়ে দিলেন আমাকে টিএসসি চত্তর পর্যন্ত।
১৫- ফেব্রুয়ারী
গীতাদির বাসায় গেলাম। মনে হল না নতুন এলাম। সোজা রান্না ঘরে ঢুকে দেখি গীতাদি চা বানাচ্ছেন। এরপরে
আমরা মুক্তমনা সদস্যরা অজয় স্যর এর সাথে মিলিত হলাম। দেখে বাবাকে মনে পড়ে গেল। অনেক কথা বার্তা হল। প্রথম দেখায় পা ছুঁলাম। এমন এক দেবতুল্য মানুষকে পেয়ে নিজকে ধন্য মনে করলাম।
নানান কথা শেষে বিদায় নিলাম।
১৮ ফেব্রুয়ারী-
সেদিন ছিল শুক্রবার। অসম্ভব ভিড়ের মাঝে পড়লাম। বই মেলা ছাড়া আমি জীবনেও এই ভিড়ে যেতাম না।
ওদিন মাহফুজের সাথে দেখা হল। নাহ। ভুল বলছি। তার আগের দিন মানে ১৫ ফেব্রুয়ারী মাহফুজের সাথে দেখা হল অজয় স্যর এর সাথে দেখা করার সময়। দুজন হল এই নিয়ে যারা বাইরে থেকে এতো কষ্ট করে এসেছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি মামুন ভাই আসেনি। কোথায় যেন তাই খালি খালি লাগছিল।
১ মামুন ভাই। ২ মাহফুজ ভাই।
যাই হোক। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে সেদিন কি যেন অনুষ্ঠান চলছিল। এইবার রবীন্দ্রনাথ কে নিয়েই মূলত সব আলোচনা নৃত্য নাট্য এই সব চলছে।
বই কিনলাম যথারীতি। আমি প্রায়ই টুক-টাক কিনে ফেলছি বই। কেননা একসাথে বই কিনে বহন করা আমার দুঃসাধ্য।
এমন করেই দিন গুলো চলতে লাগলো। প্রায়শ মেলায় যাচ্ছি। আসছি। কেমন এক নেশার মত পেয়ে বসেছে।
একুশ বাইশ তেইশ
পর পর তিন দিন মেলায় যাবার একটা উল্ল্যেযোগ্য কারন সুদূর রাজশাহী থেকে মুজাফফর এসেছে। আর এসেছে তার সহযোগী বন্ধু রাতুল।
মুজাফফর এর কান্ড কর্ম দেখলে বোঝা যায় যে আগামী ভবিষ্যতে একজন কিছু হবে। এ আমি নিশ্চিত বলতে পারি।সেই সাথে তার সহযোগী রাতুল পাল। এক কথায় অনবদ্য।
অসম্ভব অমায়িক এবং গুরু লঘু সবার সাথে মিলে মিশে যাবার অসম্ভব ক্ষমতাধর একজন মেধাবী আর বিনয়ী প্রতিভা। আমার মনে হয় গীতাদি আমার সাথে একমত হবেন। ওর প্রচন্ড খিদে দেখে আমাদের দুজন(আমি গীতাদি) ছুটো ছুটি করলাম বটে। কিন্তু কেবল কেক ছাড়া আর কিছু পেলাম না। পেতাম নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে গেলে। আমি যেতে চেয়েছিলাম, গীতাদি হাত চেপে বললেন সহযে আর ফিরে আসতে পারবোনা। কি করা অগত্যা কেক কিনে আনলো গীতাদি। আস্ত কেক। পুরোটা খেলে যদি পেট ভরে।
মুজাফফর আবদার করল নুডুলস রান্না খাবে।
পরের দিন বাইশ তারিখ-
নুডুলস রান্না করে আনলাম। সেই সাথে মোয়া। ছোলা। বাদাম নানান কিছু।
অনেক মিস করলাম গীতাদিকে কেননা ওদিন গীতাদির মিটিং ছিল যার কারনে আসতে পারেননি।
দেখা হল সেদিন আমার আর এক স্বপ্নের লেখক কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক এর সাথে। জানতাম তার আসল দেশ বর্ধমান। কিন্তু আমার এতো কাছের তা অজানা ছিল।
অনেক্ষণ দুজনা গল্প করছি। এর মাঝে অনেকে আসছে- স্যর বইটা ছুঁয়ে দেন। কী এক অদম্য মনের মানুষ না দেখা পেলেও জানতাম। এতোটা জানতাম না। আমার মামাদের খোঁজ নিলেন। বড় মামার মৃত্যুর খবর জানতেন। তবু অনেক আফসোস করছিলেন। বর্ধমানে তার গ্রামের নাম ‘যবগ্রাম” আমার নানার গ্রামের নাম “মাড়গ্রাম”।
আলাপচারিতার এক ফাঁকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল এক নতুন বইএর মোড়ক উন্মোচন করতে। একেই কি বলে মাটির টান?
তেইশে ফেব্রুয়ারী-
আজ কেন জানিনা মনে হচ্ছিল এই বুঝি শেষ যাওয়া। ওদিনও কিছু কিছু খাবার নিয়ে গেলাম। গীতাদি সহ অনেক ঘুরে বেড়ালাম। এর মাঝে উল্ল্যেখ করার মতো ঘটনা ঘটে গেলো।
নিঃসঙ্গ ব্যায়াস আমাদের নাকি রোজ দেখে ধরা দেয়না। আমি ২৩ তারিখ যদ্দুর মনে হয় মুক্তমনায় লিখেছিলাম। “আজ যাচ্ছি যদি দেখা না দাও খবর আছে”।
সেই নিঃসঙ্গ বায়স ধরা দিলো। ওমা কি মিষ্টি এক ছোট্ট ছেলে গো?
দেখলেই আদর করতে ইছে করে। নিজ সন্তানের বয়সি। খুব হাসা হাসি হল। সাথে আনা খাবার খেলাম। এক ফাঁকে তপন বাগচী (বাংলা একাডেমীর পরিচালক) কে পেলাম। যদিও প্রতিদিন দেখা হয়। সেদিন তাঁর কাছ থেকে বই নিলাম একটা। যে অটোগ্রাফ দিলেন। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেল। আমাকে এতো সম্মান দিলেন। আসলে কি আমি তার যোগ্য?
মামুন ভাই আজ চলে যাবেন। মনটা বেশ খারাপ লাগছে আমাদের সবার। সত্যি আবেগ কি জিনিস।
মুজাফফর, রাতুল সবার কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়ে নিলাম। মন কেমন করে উঠল।
নাহ এতো আর আবেগী হওয়া যাবেনা। রাত আট’টার দিকে আমি আর গীতাদি বিদায়ের জন্য রওয়ানা দেই। টিএসসি এর সামনে দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরলে মাহফুজের ক্যামেরা ক্লিক করে উঠে।
আমার বই মেলা যাওয়া শেষ। তাই আমার জন্য মেলাও শেষ। এমন দিন আর কবে আসবে। আবার আগামী ফেব্রুয়ারিতে কি আমরা এমন ভাবে মিলতে পারবো? কি জানি —–।