আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দেশ মাতাকে আর আমার বাংলা ভাষাকে আজ অনেক অনেক শ্রদ্ধা জানাই। ফেসবুক ভরে দিয়েছি আমার ভালবাসা দিয়ে। আজ পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও জুড়ে কত আয়োজন একুশ কে স্মরণ করব বলে। বিশেষ সংখ্যা, বিশেষ অনুষ্ঠান, আবৃত্তি-ভাষণ এ জাতীয় কত শত কর্মসূচী! রফিক, জব্বার, সালাম বরকতকে আজ শ্রদ্ধা, শ্রদ্ধা দেশমাতাকে, শ্রদ্ধা তার দেয়া বুলিকে, আমার বাংলা ভাষাকে। আমরা এমনকি গণস্বাক্ষরও করছি বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহন করার জন্য। তো আসুন দেখে নেই আমাদের আশেপাশে কিভাবে পালিত হল এই মহান দিনটি ।
১. আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ ছুটির দিন। তাই ছুটির আমেজকে আরেকটু বাড়িয়ে তোলবার জন্য চাই গান। শুনলাম পাশের বাড়িতে কম্পিউটারে গান ছাড়া হয়েছে… “মুন্নি বদনাম হুয়ি”… “শিলা কি জাওয়ানি”… ইত্যাদি।
সে বাসার জনৈক দেশ ও ভাষা প্রেমিকের বোধহয় মনে পড়ে গেল আজ একুশে ফেব্রুয়ারি! তাই হঠাৎ আগের গান বদলে বাজতে শুরু করল, “আমি বাংলার গান গাই…
তা সেই প্রাক্তন সঙ্গীত শ্রবণকারীর এটা সহ্য হলনা, তাই আবার গান বদল। এবার “শিলা কি জাওয়ানি…”
আবার গান বদল। শেষ পর্যন্ত যে শব্দাবলি কর্ণগোচর হল তা ছিল এরকম, “আমি বাংলায় গান গাই, মাই নেম ইস শিলা, আমি বাংলার গান গাই, শিলা কি জাওয়ানি…”
২. আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। একদল বাঙালির জন্য খুব গর্বের ও আনন্দের দিন। কারণটা আপনারা সবাই জানেন। সেটা হল, আজ তারা বহু প্রতীক্ষার পর সদ্য কেনা কালো বা সাদা শাড়ি এবং পাঞ্জাবি-ফতুয়া পরতে পেরেছেন। গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত শাড়ির সাথে মিলিয়ে যে গয়নাগুলি কিনেছেন তা পরতে পারবেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি বলে একটা ব্যাপার আছেনা? শুধু পাঞ্জাবি পরলে কেমন যেন সাদামাটা লাগে। তাই কালকের কেনা সাদাকালো ওড়না আজ গায়ে জড়িয়েছেন এইসব বাঙালিরা। কালো জিপসি ড্রেসের সাথে একুশের কালো ব্যাজও মানায় বেশ। একুশ আমাদের অহংকার, আমাদের দেশ ও ভাষা সবই আমাদের অহঙ্কার। তাই তো আজ শোকের রঙ্গে ছোপান কালো শাড়ি, পাঞ্জাবি,ফতুয়া, জামা কনেছি অনেক ফ্যাশন হাউজ ঘুরে ঘুরে।
কিছু বর্বরেরা বাঙালিদের নামে মিথ্যে কলঙ্ক ছড়ায়। বলে কিনা আমরা নাকি উৎসব করতে জানিনা, আমাদের নাকি স্বদেশ প্রেম নেই। দেখুননা আমরা আজ গায়ে পরে ঘুরছি অ, আ, ক, খ লেখা সাদা বা কালো শাড়ি বা পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে? মাটির গয়না পরে? (তা আমাদের মোবাইলের কলার টিউন যতই হিন্দি গান থাকুক না কেন।) কেমন একটা উৎসবের দিন বানিয়ে ফেলেছি একুশে ফেব্রুয়ারিকে! এই দিন মানে আমাদের নতুন কাপড় পরে বাইরে বেরিয়ে হইচই করার দিন, হাসতে হাসতে বইমেলায় যাওয়ার দিন(বই কিনি আর না কিনি) একুশে ফেব্রুয়ারি কত জোসভাবে পালন করলাম সে স্ট্যাটাস কি যাবেনা ফেসবুকে?(তা নাই বা জানলাম এই দিনে ভাষা শহীদেরা এজন্য প্রাণ দেননি যাতে আমরা এ দিন উপলক্ষ্যে নতুন ফ্যাশনের কাপড় পরতে পারি)কারণ আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস! বাঙালি কি এই দিনে কম ঘটা করতে জানে?
৩. আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশে বইমেলায় তো যেতেই হবে। কারণ আজ যদি হূমায়ুন আহমেদ আসেন মেলায়? আচ্ছা উনি আজ আসবেন তো? “অন্যপ্রকাশ” থেকে বই কিনতে হবে কিছু। হূমায়ুন আহমেদের অটোগ্রাফ নেয়া যাবে তাহলে! আজ মেলা প্রাঙ্গন ভরে যাবে শাড়িপরা ললনায়। নিজের মানুষ যিনি তার সাথে হেঁটেও সুখ, আর নিজের কেউ না থাকলে অন্যদের দেখেও সুখ। অন্যদিন তো মেলা ভরে থাকে বেশির ভাগই অসুন্দর কিছু মানুষের ভিড়ে! আজ মেলায় যাওয়াটাও মজা। অনেক ছবি তোলা যায় রফিক চত্বর, সালাম চত্বর এগুলোর সামনে, বইমেলার সামনে। হাতে মুখে আজ বাংলাদেশের পতাকা, শহীদ মিনার এঁকে ঘোরার মজাই আলাদা। ফেসবুকে ছবি দেয়া যায়, ফেসবুকে লেখা যায় “aj amar ekusha boi malay giachilam, joss lagse melay ghurta, tsc ta ghurta,aj amar favourit writer er autograph nilam, dujona mila sharadin ghurlam…ekush tomay salam, rofik jabbar salam barkat der salam…ekush amar ahankar” ইত্যাদি ইত্যাদি।
শুধু এত কাজের মাঝে, এত ভিড়ের মাঝে বইটা কেনাই একটু ঝামেলার হয়ে যায় এই আর কি।
(লেখার প্রথমে যাদের কথা বললাম তারা হচ্ছে আমাদের ডিজুস প্রজন্ম যারা একুশ আসছে এটা জানতে পারে পত্রিকায় ফ্যাশন হাউজগুলোর বিজ্ঞাপন দেখে! এরা প্রতিনিয়ত অশুদ্ধ বাংলা তো বলে ও লেখে এবং সবচেয়ে দুঃখজনক হল ওরা ব্যাপারটি অনুভবই করেনা যে এটা সংশোধন করা দরকার।
অবশ্য তারা একুশে ফেব্রুয়ারিতে এটা উপলব্ধি করে “ভাষা শহীদদেড় কনট্রিবিউশন যে আমাদেড় লাইফ এ কতটা তা চিন্তারও বাইরে। তারা না থাকলে আমাদেড় নিজেদেড় মায়ের ভাষায় কথা বলা ইম্পসিবল হত। উই আর প্রাউড অফ দেম।”
আরো দুঃখজনক হল এরা নিজেদেরকে স্মার্ট প্রমাণ করতে বাংলিশ কথা বলে কিন্তু ইংরেজিটাও শুদ্ধভাবে বলতে পারেনা। তাদের অনেকের “ইস্মাট” কথাবার্তা শুধুমাত্র “ইয়া ইয়া, ইয়াপ, নোপ, লোলজ, গ্রেইট, ইয়ো ম্যান ” এর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে! ওরা না বাংলা বলতে ও লিখতে পারে ঠিকভাবে, না পারে ইংরেজিতে কথা বলতে। অবশ্য হিন্দিটা বেশ ভালই বোঝে তারা।
এদের অনেকেই রবীন্দ্র সঙ্গীতকে ঘুমপাড়ানি গান মনে করে। এবং এটা মনে করে কোন রবীন্দ্র সঙ্গীত না শুনেই। এরা জানেনা হূমায়ুন আহমেদ ছাড়াও যে আরো লেখক আছেন। এরা জানেনা বইমেলায় যাওয়া মানে কিছু প্রচলিত জনপ্রিয় লেখকদের বই খুঁজে খুঁজে কেনা নয়, বরং বিভিন্ন প্রকাশনীর বিভিন্ন লেখকদের বইয়ের ফ্ল্যাপ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া সেখানে আগ্রহের কিছু আছে নাকি। আমি বলছিনা প্রচলিত লেখকদের বই কিনবেননা, হূমায়ুন আহমেদ ভক্তরা হয়ত আমার উপর ক্ষেপে যাবেন এতবার তার নাম নেয়ার জন্য, কিন্তু দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন আমি উনার লেখা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইছিনা, শুধু ডিজুস প্রজন্মের বইমেলার ও একুশে ফেব্রুয়ারির আসল চেতনা ধরতে না পারার ও উদ্ভট আচরণের সমালোচনা করছি। ওরা ৫০০ টাকার ফাস্টফুড খাবে তবু ১০০ টাকার বই কিনবেনা, বইমেলায় যাবে ঘুরতে(!)
সেদিন একজন জিজ্ঞাসা করেছিল আমি কার কার বই কিনলাম, তখন বললাম আহমদ ছফা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, রাহুল সাংকৃত্যায়ন প্রমুখদের বইয়ের কথা। উত্তর আসলঃ কিরে তুই তো দেখি সব অজানা অচেনা লেখকদের বই কিনলি! এই হল অবস্থা। ওরা যদি না জানে আমাদের এত ভাল ভাল লেখকদের কথা, শিল্প সাহিত্যে চলচ্চিত্রে নাটকে আমাদের ভাল কাজগুলোর কথা তাহলে কি করে হবে। কেউ আবু সায়ীদের “অপেক্ষা” চলচ্চিত্রের কথা না জানলেও “থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার” ঠিকই দেখে ৩/৪ বার! অনেকেই জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসানের নাম জানে শুনে শুনে কিন্তু অনেকেই হয়ত এস. এম সুলতানের নাম জানেনা। মানিক, রবীন্দ্রনাথ, হূমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফা আহমদ শরীফ অনেকেই পড়েনি অথচ অনেকে শুধুমাত্র অন্যপ্রকাশের সব বই পড়েছে!
এরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় শাহরুখ খানকে দেখতে না পারার দুঃখে কেঁদে কেটে বা হাজার হাজার টাকার টিকেট কেটে শাহরুখ খানকে সামনে দেখে মূর্ছিতপ্রায় হয়ে। শাহরুখ খান তার ক্রিকেট টিমের জন্য কারো পেটের বাচ্চাকেও বুকিং দিয়ে রাখলে এরা হিন্দিতেই কৃতজ্ঞতা জানায়, গর্বিত বোধ করে শাহরুখের লাত্থি খায়ে, তার সাথে নেচে এবং হিন্দিতে কথা বলে।
বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের পাঠচক্রে নির্বাচনের সাক্ষাতকারে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে দেখে গদগদ হয়ে অনেকে বলে পাঠচক্রে আসার জন্য সে কত উৎসাহী অথচ নির্বাচিত হবার পর অবলীলায় প্রশ্ন করতে পারে “এখানে আসলে কি হবে?”
এরা আসলে ধরার জন্য সবসময় পা খোঁজে, অটোগ্রাফের খাতা ভরাতে কলম ধরা এক বিখ্যাত হাত খোঁজে, খোঁজেনা কাজকে, দর্শন বা ধারণাকে।
এদের নিয়ে এত কিছু লিখছি কারণ এরা কিন্তু কোনখানেরই হতে পারেনা।আমি শুধু ভাবি এই সঙ্কর প্রজাতির প্রাণীরা নিজেদেরকে কোথাকার বলে পরিচয় দেবে? এরা যেমন এদেশের শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র-দর্শন সম্পর্কে জানেনা, তেমনি বিশ্বসাহিত্য-শিল্প-চলচ্চিত্র-দর্শনও জানেনা। আর নিজের দেশের কথা, অন্তত নিজের কথা নিজের প্রকৃতি জানার চেষ্টা না করলে বিশ্বকে কি করে চেনা যায়? তাই এরা শুধু জানে আমরা জওয়ান আমরা বাঙালি। তাই তাদের আচরণ এমন “মাই নেম ইজ বাংলা…বাংলা কি জাওয়ানি…”
একটা প্রজন্মের বড় একটি অংশ এমন অন্তঃসারশূন্য ব্যর্থ জীবন কাটিয়ে দিলে তাদের সম্পর্কে হতাশ না হয়ে উপায় আছে?
একুশকে সবসময় যারা আমাদের আমাদের ভাষাগত অস্তিত্বের রক্তাক্ত প্রসবের দিন হিসেবে দেখেছেন, শ্রদ্ধা করেছেন, বুঝেছেন আসলে একুশ আমাদের কি দিয়ে গেছে এবং ভাষাশহীদদের সামনে দাড়াবার জন্য প্রতিনিয়ত অন্তত নিজে বাংলা ভাষাকে শুদ্ধভাবে বলা লেখা ও এর চর্চা করে চলেছেন এবং অন্যদের মধ্যে এ ব্যাপারটি ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছেন তাদেরকে জানাই শুভেচ্ছা।
শেষে শুধু একটা কথাই বলতে চাই, (কার কথা জানিনা, ব্লাডি সিভিলিয়ানের এই লেখা থেকে নেওয়া)
“ছিঃ ছিঃ ছিঃ একুশ কি পত্রিকা বাহির করিবার জন্য জন্মিয়াছিল? ছড়া, কবিতা, গল্প লিখিবার জন্য? আপনাদের কি একটু লজ্জা নাই, মৃতের প্রতি কৃতজ্ঞতা নাই, সম্ভ্রমবোধ নাই?…না পারিলে [থাকিলে], আর কিছু নয়-এই খেলা-খেলা একুশে ফেব্রুয়ারি বন্ধ করুন। সুবোধ বালকের মতো ঘরে বসিয়া থাকুন, পান চিবাইতে-চিবাইতে অফিস করুন, প্রেমিকাকে লইয়া টি-এস-সির চত্বর মধুময় করিয়া তুলুন। কিন্তু, খবরদার, সালাম বরকত জব্বারদের নাম মুখে আনিবেন না।”
)
*সবশেষে একটা অনুরোধঃ দয়া করে আদিখ্যেতা করে বইমেলায় ঘুরতে আসবেননা যদি বই না কেনার ইচ্ছে থাকে। সারা বাংলাদেশ পড়ে রয়েছে আপনাদের জন্য। শুধু ফেব্রুয়ারির ২৮ টি দিন (লিপ ইয়ারের সময় ২৯ দিন) আমাদের তীর্থে আমাদের বইয়ের জগতে অবাঞ্ছিতের মত এসে ঝামেলা করবেননা। একুশে বইমেলার অপমান হয় যখন আপনারা ফ্যান্টাসি কিংডমের সাথে এই মেলাকে নামিয়ে ফেলেন ঘোরার জায়গা হিসেবে(অবশ্য ফ্যান্টাসি কিংডমে আপনারা রাইড কেনেন, কিন্তু এই মেলায় অনেকেই বই কেনেননা)। আজ আমি দেখলাম মেলায় উপচে পড়া ভিড়। অথচ যারা বেরিয়ে আসছে তাদের মাঝে ৯৫% এর হাতে কোন বই নেই! প্লিজ আমাদেরকে ঝামেলায় ফেলবেননা, এ মেলাকেও অপমান করবেননা। এমনিতেই অপমান করে চলেছেন প্রতিদিন দেশকে, ভাষাকে, সংস্কৃতিকে, মানুষকে, এমনকি ইংরেজি ভাষাটাকেও যেটা অশুদ্ধ করে হলেও বলেন “ইস্মাট ও মডান” হতে।
আপনার লেখা পড়লাম ।এ কথাগুলো বেশ ক’বছর থেকেই পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে ,আমরা কী দেখলাম…….. !!!!!!!!!! একটা দেশের বাজার ঘুরে দেখলেই বুঝা যায় , সে দেশের অর্থনীতি কেমন । আর আমাদের দেশের আনাচে কানাচে ছড়ানো , ছিটানো সাইনবোর্ড দেখলেই বুঝা যায় বাঙলা
ভাষার কী অবস্থা………! এ সব দেখে কাজী নজরুলের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে………. দে , গরুর গা ধূইয়ে ! ! ! :-Y :-Y :-Y
“দয়া করে আদিখ্যেতা করে বইমেলায় ঘুরতে আসবেননা যদি বই না কেনার ইচ্ছে থাকে।”
গরুর হাটে গেলে গরু কিনতেই হবে? শাড়ি কেনার ইচ্ছে না থাকলে শাড়ির মার্কেটে যাওয়া যাবে না? অদ্ভুত আব্দার তো! বলতে চাইছি যে, মেলা একটি গণতান্ত্রিক স্থান ও পরিবেশ। সেখানে যে কেউ যাবার অধিকার রাখে। এমনকি তার যদি কোন কিছু কেনার ইচ্ছে নাও থাকে। সে কারণে আপনার এই পুলিশী ধাঁচের সতর্কতাবাণী কানে বাজল খুব।
ধরুন, বই কেনার ইচ্ছে আমার ষোলআনা, কিন্তু সামর্থ্য নেই। তেমন তো হতেই পারে, পারে না? তবে খুব ইচ্ছে করে নতুন বইয়ের ঝকমকে মলাটের দিকে তাকিয়ে থাকতে, নতুন বই হাতে নিয়ে গন্ধ শুঁকতে, প্রিয় লেখককে একটু দূর থেকে হলেও দেখতে, তবু আমি যেতে পারব না? ক্ষুধার্ত বালক হ্যাংলার মতো খাবারের দোকানের সামনে দিয়ে চক্কর দেয়ার অধিকারও হারাবে?
আপনার বাক্যটি তাই বড়ই নির্মম মনে হল।
“আমাদের তীর্থে আমাদের বইয়ের জগতে অবাঞ্ছিতের মত এসে ঝামেলা করবেননা।”
আপনাদের তীর্থে? কবে থেকে তা শুধু আপনাদের হল? বইমেলায় আপনারা বাদে সবাই অবাঞ্ছিত? কী ফাঁপা আত্মগর্বে মাখা কথা!
আমি যে বইগুলো পড়ি, সেগুলো ছাড়া বাকি সবকিছু অপাঠ্য, কুরুচিপূর্ণ এবং তেমন বই যারা পড়ে, তারা করুণার পাত্র – এমন অলীক গর্ব ও তাচ্ছিল্য আপনার লেখায় এত বেশি প্রকট! বলতে চাইছিলাম, বই পড়ার বা বইমেলার দর্শক নির্বাচনপদ্ধতির ক্ষেত্রে একেবারেই অন্যায়ভাবে নিজেদেরকে উচ্চতর শ্রেণী ভাবার এই প্রবণতা মুক্তমনা কারো থাকা কি উচিত? একটু জাতে উঠেছি ভেবে নিয়ে বাকিদের নিম্নবর্ণের লোক জ্ঞান করে এমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করার প্রবণতা মানবিকতার পরিচয় দেয় না।
আপনার লেখার হাতটি ভাল। আমার উল্লেখিত কথাগুলো হিসেবে না এনে বলতে পারি, লেখাটা খারাপ লাগেনি।
@রা নাহি দেয় রাধা, “দয়া করে” কথাটা লেখার পরও কথাটা আপনার কাছে পুলিশি ধাচের লেগেছে ভেবে অবাক লাগল। আর যারা বই ভালবাসে অথচ সামর্থ্যের অভাবে বই কিনতে পারেনা তাদেরকে কিন্তু আমি অবাঞ্ছিতের দলে ফেলিনা, কারণ আমি যে অনুরাগ দেখতে চাই বইয়ের প্রতি তা কিন্তু তাদের মধ্যে আছে। এ ব্যাপারটা মনে হচ্ছে লেখার মাঝে ক্লিয়ার হয়ে গেলে ভাল হত। অনেকের মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে অনেক কনফিউশনের সুযোগ রেখে দিয়েছি লেখাটায়।
এখানে আমাদের তীর্থ বলতে আমি বইপ্রেমীদের তীর্থ বুঝিয়েছি। ডি.জে পার্টিতে যেমন আমি নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করি সেই সেন্সে এই কথা বলা। এই লাইনে যে কনফিউশন তৈরি হতে পারে ভাবতেই পারিনি।
অবাঞ্ছিতদের নিয়ে আমার এত ক্ষোভের কারণ, একজন নারী হসেবে নিজের এবং বোন বা বান্ধবীর কাছ থেকে আমার কিছু অভিজ্ঞতা নেয়া হয়েছে যে মেলাতে একদল লোক আসেই মেয়েদেরকে বাজেভাবে স্পর্শ করতে। হয়ত অনেকদিনের অভিজ্ঞতা হবার কারণেই এখন সে ধরণের লোকদের অনেককেই চেহারা দেখেই চিনে ফেলতে পারি যে এই লোকটি শুধু ঐ বাজে কাজটি করতে এসেছে, এবং মেলায় গিয়ে যদি সেই লোকের দেখা পাওয়া যায়,দেখা যায় সে আসলেই সেই কাজই করছে! ভিড়ের সুযোগ নিতে অনেকেই আসে বিশেষ দিনগুলোতে,ব্যাপারটা এত বাজে লাগে যে মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনা সে ধরণের মানুষজন দেখলে
@লীনা রহমান,
শুধু তা-ই নয়। বই চুরি করতেও আসে কেউ কেউ। গতকাল যখন বইমেলায় গেলাম। হঠাৎ ভীড় দেখলাম এক জায়গায়। অনন্ত ভাই বললেন, দ্যাখেন দ্যাখেন বই নিয়ে পালাচ্ছিল। ভদ্র গোছের এক যুবক স্টল থেকে বই চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিল। যুবকটিকে প্রশ্ন করা হলো- মেমো দেখান। কিন্তু সে ব্যর্থ হলো। আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই সন্নাসীর ক্যামেরা চুরি হয়েছিল মেলা থেকেই।
নিচের ছবি দেখুন: (সকলের চোখ যার দিকে, তাকে পাকড়াও করা হয়েছে, বই চুরির দায়ে)
[img]http://farm6.static.flickr.com/5211/5479683194_575eff21b6_m.jpg[/img]
@মাহফুজ, 😀
চরম বাঁশ দিয়েছেন! (Y)
দেরী করে ফেললাম পড়তে। 🙁
@শ্রাবণ আকাশ, যাক দেরিতে হলেও পদধূলি থুক্কু আঁখিধূলি পড়ল।
লীনা @ আপনি আমাদের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। সত্যিই আপনার লেখা পড়ে অভিভূত না হয়ে পারলাম না। এই সাইটে ও আজ প্রথম বারের মত প্রবেশ করলাম। আপনার লিখা পড়ে মন্তব্য না দিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। আমি নিজেই দেখলাম যে, এইবার একুশে ফেব্রুয়ারীতে আমার এক বন্ধু সকালবেলা শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেছে আর ফুল দেওয়ার পর বন্ধুদের নিয়ে সাগর পাড়ে বেড়াতে গেছে। সত্যিই আমরা জানিনা আমাদের গন্তব্য কোথায়……..। 🙂 🙂
@আপসেট,
এতে সমস্যা কোথায়?বুঝিনি। আর আপনাএর ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল 🙂
@লীনা রহমান, নরমালি সাগর পাড়ে বেড়াতে গেলে তো কোন প্রবলেম নাই । কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারীতে ট্রাকে করে সবাই মিলে হৈ চৈ করে নাচানাচি করে পিকনিক এর মত সাগর পাড়ে বেড়াতে যাওয়া টা কি ভালো ?
@আপসেট, এইবার বুঝসি :))
বিপ্লব পাল এর “আতেল” উচ্চারণে লীনা রহমান বেদম ক্ষ্যাপা ক্ষেপেছেন বোঝা গেল, কিন্তু ওর কথার মুল ব্যাপারটাতে তো সত্যির দিক নির্দেশনা রয়েছে। এখানে গঠনমূলক সমালোচনা করলে মনে হচ্ছে পরবর্তী পর্যায়ে প্রশ্নোত্তরেই প্রচুর সময় ব্যায় করতে হবে। বিপ্লব এই ব্লগে অনেক অভিজ্ঞ মানুষ বলেই হয়তো এখনো উত্তর দিচ্ছে না। যাই হোক, বকে মেরে নতুন প্রজন্মকে বাংলা গেলানো আমার কাছেও হাস্যকর মনে হয়। সংস্কৃতি কেউ কারো উপর জোর করে চাপাতে যেমন পারবে না ঠিক তেমনি ওকে অপসংস্কৃতি কপ করে গিলে হজমও করে ফেলতে পারবে না। বাঙ্গালির সংস্কৃতি এমন দুর্বল নয় যে কটা বড় শহর কেন্দ্রিক বাংলিশ তা ঘাস মনে করে তার ভাষা সুদ্ধ তাকে খেয়ে ফেলবে। ঐ ঘাস খাইয়েদের হাম্বা হাম্বা শুনলে খাঁটি বাঙালি মাত্রই রাগে গর গর করে, আমিও করি। কিন্তু নতুনদের শেখানোর দায়িত্ব কি বকা ঝকা করেই পালন করা যাবে নাকি তা উচিত? হাততালি যদি উদ্দেশ্য হয় তা হলে অবশ্য কোন কথা নেই; ওটা পাওয়া খুব একটা কঠিন নয়। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি আমরা বাংলাকে লালন, পালন, যত্ন আর চর্চা করে বহুদুর নিয়ে যেতে সাহায্য করতে চাই, তা হলে, আমার মনে হয়; আমাদের নিজেদের কাছে নিজেকে জবাবদিহি করতে হবে, নতুন নতুন আরও গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি খুজে বার করতে হবে। সেটা সুপরিকল্পিত ভাবে নতুনদের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
শুভেচ্ছা।
@কাজী রহমান,
রূপম, রৌরব, নিটোল উনারা তাদের মত করে আমার কথার সাথে ঐক্যমত ও অনৈক্য জানিয়েছেন। অন্যরাও দিয়েছেন তাদের মতামত। তারা কাউকেই তো আমার পোস্টের উত্তর দেবার জন্য সারাদিন ব্যয় করে ফেলতে হয়নি।
আমি নিজের বক্তব্য মনে হচ্ছে ঠিকভাবে বোঝাতে পারিনি। এই পোস্টের বিষয়বস্তু এই প্রজন্মকে বকে মেরে বাংলা গেলানো নয়, হিন্দিভাষার প্রতি বিদ্বেষ উগরানোও নয়, তাদের একটা অংশের সুন্দর ও শুদ্ধতাবিমুখতার এবং এদেশ ও বিদেশের সবচেয়ে নিকৃষ্ট সংস্কৃতিগুলো(যেমনঃ হিন্দি সিরিয়াল শুধু আমাদের জন্য নয় বরং ভারতের জন্যও একটা বিশ্রি ব্যাপার বলেই আমি মনে করি। আশা করি এ ব্যাপারে এদেশ এবং ওদেশের সেন্সিবল মানুষগুলো একমত হবেন) নিয়ে মাতামাতির সমালোচনা করা।
যে অনাচার চলছে তার সমালোচনা করা যাবেনা, এমন কোন কথা আছে?
এই পোস্টে আমার ভাষা অনেক ক্ষুদ্ধ ছিল কিন্তু এই পোস্টের আগে বা পরে যে এই ব্যাপারে কোন কাজ করার জন্য আমার অন্য কোন চেষ্টা ছিলনা বা থাকবেনা এমন কথা মনে করাটা কি উচিত হল?
কেউ হাততালি দিলেও শুনতে পাইনি, যাহ মিস হয়ে গেল! :-Y
(Y)
বিঃদ্রঃ এটাই আমার শেষ পোস্ট নয়, বেঁচে থাকলে হয়ত এ বিষয়ে আরো কিছু ভাবনা আসতে পারে ভবিষ্যতে। আশা করছি কিছু কাজ করার চেষ্টা করব।
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
আমাদের জাতীয় দিনগুলো এখন অনেকের কাছে বাহ্যিক স্টাইলে পরিণত হয়েছে।বিদেশী সংস্কৃতির আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব গৌরবময় সংস্কৃতি।
@তামান্না ঝুমু, আমার আসলে মনে হয় ওরা বিদেশি যে জিনিসগুলো নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করে সেগুলো সেদেশের জন্যও অপসংস্কৃতি, সংস্কৃতি নয়। যেমনঃ হিন্দি সিরিয়াল, বা আইটম সং সর্বস্ব কাহিনি ও ধারণাবিহীন চলচ্চিত্র ইত্যাদি।
এক কথায় অসাধারণ। :clap :clap
এই হুমায়ুন আহমেদ, আনিসুল হক, জাফর ইকবালদের ফ্যান গ্রুপ পুরো বইপড়া সংস্কৃতির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। হিমু, মিসির আলীদের মতো বাস্তবতা বিবর্জিত চরিত্রদের নিয়ে অনর্থক মাতামাতি চলে, মানুষ এখনও সায়েন্স ফিকশনকেই বিজ্ঞানের বই বলে মনে করে।
লীনা, আপনি যদি কলম দিয়ে লিখতেন – তাহলে আপনার কলমটা একটু ছুঁয়ে দেখতে চাইতাম – এত ভাল কীভাবে লেখে মানুষ! খুবই ভালো লাগলো আপনার অনুভূতি এবং তার প্রকাশ।
@প্রদীপ দেব, লজ্জা পাচ্ছি
লেখাটি ব্যাপক পছন্দ হয়েছে। বইমেলাকে যারা রমনা পার্ক বানায় তাদের ঘাড় ধরে বের করে দিতে ইচ্ছা করে।
আর এই “শিলা”র কথা আর কি বলব। আমি আসল গানটা শুনিনি,বন্ধু-বান্ধবদের মুখে এই গানের কথা শুনে আর মাতামাতি দেখে মনে হয় “এরকম অরুচিকর মানুষের সাথে কেমনে একই সাথে পড়ালেখা করছি?”। নিজের রুচি খুব উন্নত সেরকম দাবি করবনা,কিন্তু অনন্ত এরকম জিনিস নিয়ে মাতামাতি করার মত নিচু না এটুকু বলতে পারি।
@রামগড়ুড়ের ছানা, আমাকে গানটা শুনতে হয়েছে, কারণ আমার বড় বোন সকালে উঠেই চোখ খোলার আগে রিমোট দিয়ে এম টি ভি ছাড়ে হিন্দি গান শুনতে। আমার ৪ বছরের চাচাত বোন নাজিহা ভালই নাচে এই গানে।
নাজিহার একটা মজার ব্যাপার আছে। সে ওয়াকা ওয়াকাও পারে, “কটন আই জো” পারে, শীলা, মুন্নিও পারে, আবার “আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা”ও পারে। কোনগুলো আমি শিখিয়েছি বুঝেছ তো?
@লীনা রহমান,
শুধু শুধু ছোট বাচ্চাটাকে শীলা,মুন্নি শিখালেন কেনো??
@রামগড়ুড়ের ছানা,
:lotpot: :lotpot: :lotpot:
@রামগড়ুড়ের ছানা, তুমি তো দেখি বুঝোনাই, কটন আই জো, রবীন্দ্র সঙ্গীত, ওয়াকা ওয়াকা, আরো বিভিন্ন গান এগুলো আমি ও আমার ভাইরা শেখাই আর ওই কিন্দি আইটম সংগুলো আমার বোন শেখায়, পিচ্চিরে নাচতে দেখলে কার না মজা লাগে… ওর জন্য এখন শিলা, বাংলাদেশের ওয়ার্ল্ডকাপ নিয়ে গানগুলো ডেস্কটপে রাখতে হয়, ও এসে একটা বাজিয়ে গান গাওয়া আর নাচা শুরু করে
অ.ট.ঃ এই সমস্যাটা আগেও বলেছিলাম। মোবাইল দিয়ে মুক্তমনায় ঢুকলে ওখানে একাধিক পেইজে আসে পুরো লেখা ও কমেন্ট আসে, কিন্তু সরাসরি কমেন্টে বা সরাসরি লাস্ট পেইজে যাওয়া যায় না চাইলেই। ১ম, ২য় এভাবে করে যেতে হয়। অনেক টাকা আর সময়ের ব্যাপার। সরাসরি কমেন্ট বা লাস্ট পেইজে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখলে হয়না? সামুতে পুরো লেখা এক পেইজে আসে, ওরকম করা যায়না?
@লীনা রহমান,
অভিজিতদাকে ধরেন, আমার মোবাইলে ব্যালেন্সই থাকেনা যে চেক করব :-Y :-Y । যারা যারা ভালো একটি মোবাইল সাইট পেতে চান তারা আমার নম্বরে বেশি করে ফ্লেক্সিলোড করুন।
@রামগড়ুড়ের ছানা, মোবাইল ভার্সনের জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের অনেক প্লাগইন আছে। একটা লাগিয়ে দিলেই হয় কিন্তু।
@শ্রাবণ আকাশ,
জানি। এরকম একটি প্লাগইনই বর্তমানে চালু আছে।
@লীনা রহমান,
ঠিক আছে – এটা নিয়ে কাজ করব। আপনার এটা আর ধ্রুব প্রভাত ফন্টের ব্যাপারে একটা অনুরোধ করেছিলেন। এদুটো নিয়ে কাজ করব। তবে কবের মধ্যে করে দিতে পারব – এ নিয়ে কোন কথা দিতে পারছি না আপাতত। 🙂
@রামগড়ুড়ের ছানা, :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: :hahahee: ভাই বেশি মজা পাইলাম । হা হা হা হা হা
লেখা জীবন থেকে নেওয়া, আমার নিজের লেখার মতোই।
আর, উদ্ধৃতিটা হায়াৎ মামুদের একটা লেখা থেকে নেওয়া। তিনি লেখাটা লিখেছিলেন ১৯৮৮ সালে, মানে প্রায় ২২ বছর আগে! ওটা থেকে আরও কিছু লাইন তুলে দেই:
“সালাম, বরকত, জব্বার, সালাউদ্দিন, রফিক, শফিউর-এখন কোথায়? অনন্ত ভবিষ্যতের লক্ষ কোটি একুশে ফেব্রুয়ারিও কি তাহাদের এক জনকেও ফিরাইয়া আনিতে পারিবে? আমার মাথা তাহাদের পদতলে প্রণত হইয়া পড়িতেছে। এই ভীরু মিথ্যাচারী নির্লজ্জ খোসামুদে জাতিকে তাহারা অন্তত এই কথা বলিয়া গেল: তোমরা কী আমরা জানি, আমাদের তোমরা মনে রাখিবে না ইহাও জানি, তবু আমরা মরিলাম শুধু এই কথা বোঝাইবার জন্য যে আমরা তোমাদেরই সন্তান, ‘মানুষ’ বলিয়াই মরিলাম; দেখ তোমরাও মানুষ হইতে পার কি না।
হইতে যে পারি নাই, তাহা তো দেখিতেই পাইতেছি। প্রতি মুহূর্তে মিছিলে আন্দোলন করিয়া গলা ভাঙিতেছি-‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। পরক্ষণেই ভুলিয়া গিয়া সিগারেট ফুঁকিতে ফুঁকিতে আড্ডা মারিতেছি। হৃদয়ে জ্বালা নাই, চক্ষে আগুন নাই, বুকে সাহস নাই।
……
আর আপনাকে সাবধান করিয়া দিতেছি, ভবিষ্যতে কখনো একুশেকে লইয়া কিছু লিখিতে আমাকে বাধ্য করিবেন না। আমার মাথায় আগুন জ্বলিতে থাকে, কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখিতে পারি না।”
@ব্লাডি সিভিলিয়ান, কথাগুলো আঘাত করে একেবারে…
দেখুন সেখানেও ইংরেজীর ব্যবহার।
[img]http://img716.imageshack.us/img716/935/dsc04004h.jpg[/img]
@মাহফুজ, আসলে সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন ব্যাপারটা আমার কাছে কখনোই গ্রহনযোগ্য মনে হয়না। আমি এটা একেবারেই সমর্থন করিনা। কারণ আমাদেরকে বাঙালি হবার সাথে সাথে এই পৃথিবীর মানুষও তো হতে হবে। তাই অন্য ভাষার প্রতি আমার কোন বিদ্বেষ নেই। উচ্চশিক্ষা বলুন, বিশ্বের শিল্প সাহিত্য, রাজনীতি অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে অন্য ভাষার দারস্থ না হলে তো চলেনা। এ ব্যাপারে একটা পোস্ট দেব ভাবছি। সময় পেলেই হয়। সময়ের অভাবে এখন আর মন্তব্য বড় করতে পারছিনা।
আমিও কয়েকদিন আগে মেলা থেকে ঘুরে আসলাম।আমি ঢাকায় থাকি না।চট্টগ্রামে থাকি।ঢাকা যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো-বইমেলা।দুইদিন ঘুরলাম বইমেলায়,তারপরও মন ভরেনি।অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে আসলাম।
মেলায় যাওয়ার আগের ও পরের দু’একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি।বইমেলা যাব-এ কথা শুনে আমার ছোট ভাই বলল তার জন্য টি-শার্ট নিয়ে আসতে!টি-শার্টে ‘২১’ লেখা থাকতে হবে!!আমি বললাম-কোনো বই লাগবে না?সে বলল-এতো বই পড়ে কী হবে?(!)
বই কেনার পর বইয়ের সেই স্তুপ নিয়ে উঠলাম এক বন্ধুর বাসায়।বন্ধুর রুমমেটরা আসলেন আমার কেনা বইগুলো দেখার জন্য।সব বই দেখার পর তাদের মন্তব্য হল- এখানে কোনো ইন্টারেস্টিং বই নেই।সব আঁতেল-মার্কা বই!আমি বললাম-ইন্টারেস্টিং বই কোনগুলো?তারা বললেন-হুমায়ুন আহমেদ,আনিসুল হক,এমদাদুল হক মিলন-এদের বই!
আপু(আপনার চেয়ে বয়সে ছোটই হব,তাই আপু ডাকলাম।আশা করি কিছু মনে করবেন না), আপনার এই কথাটার সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারলাম না।হ্যাঁ, এটা ঠিক বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরই জীবন অন্তঃসারশুন্য।কিন্তু অনেক ছেলেমেয়েই আছে যাদেরকে দূর থেকে দেখলে অন্তঃসারশুন্য মনে হবে,অথচ তারা জীবনে অনেক বড় লক্ষ্য সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।একেবারে তাজা একটি উদাহরণ দিতে পারি। আমার যে বন্ধুর সাথে আমি বইমেলায় ঘুরলাম সে কিন্তু একটি বইও কেনেনি। আমি নিশ্চিত সে আরো কয়েকবার বইমেলায় যাবে কিন্তু বই খুব একটা কিনবে না। তাকে দেখে মনে হবে অনঃসারশুন্য।কিন্তু আমি জানি, সে তা নয়।সে খুবই ভালো গান করে, তার নেশা/লক্ষ্য-যাই বলি না কেন তা হলো- মিউজিক। ডিজুস প্রজন্মের রুচি নয়, বরং অনেক উন্নত রুচির গান নিয়ে ভাবনা আছে তার। পাশাপাশি সে ছবি আঁকে চমৎকার। হয়ত কয়েক বছর পর একটা এক্সিবিশনও করে ফেলবে।সাথে আবৃত্তিও করে। এতো কথা লিখে ফেললাম-তার একটা কারণ, আমি বলতে চাচ্ছি- কারো অন্তঃসারশুন্যতার পরিমাপ আমরা এভাবে করতে পারব না, করলে সেটা একটু স্থুল হয়ে পড়ে-আমার মতে। বইমেলায় ঘুরে কেও বই না কিনে চলে গেলে সে অন্তঃসারশুন্য- এই জায়গাতে আমার কিছুটা আপত্তি আছে। তবে সামষ্টিকভাবে এ প্রজন্মের কথা বললে আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ খুব কম- এটা আমি মেনে নিচ্ছি।
পুনশচঃ আপনার লেখার হাত খুবই ভালো।আরো নিয়মিত লিখবেন-আশা করি।ভালো থাকুন। (F)
@নিটোল, তোমার সাথে আমি পুরো একমত যে অন্তঃসারশূন্যতার পরিমাপ এভাবে করা যায়না। আমি আসলে তাদেরকেই অন্তঃসারশূণ্য বলেছি যারা আমার বলা বৈশিষ্ট্যের সবগুলো কোয়ালিফাই করে। কেউ সফল জীবনের অধিকারী হতে হলে যে শুধু বইই পড়তে হবে এমন কোন কথা নাই। অনেক দারুণ বোধ ও সৌন্দর্য রয়েছে সঙ্গীতে, বাদ্যে, চলচ্চিত্রে, নাটকে, চিত্রকলা ইত্যাদিতে।
আমি শুধু সমালোচনা করছি হিন্দি সিরিয়াল ও সস্তা মুভি থেকে এবং আমাদের দেশের সবচেয়ে বালখিল্য বই, নাটক, সিনেমা থেকে আসা সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাপারের অনুকরণ করার।
আর বাঙালি হিসেবে সফল হতে হলে যে সারাদিন শুধু বাংলাতেই কথা বলতে হবে, অন্য দেশের বা ভাষার বা সংস্কৃতির কিছুই নেয়া যাবেনা এমন কোন কথা নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে রবীন্দ্র সঙ্গীতের যেমন ভক্ত তেমনই ভক্ত মেটালিকার বা অনেক হিন্দি গানের, আমি হিন্দি ইংরেজি বাংলা যাই হোক না কেন যেকোন ভাল মুভি পছন্দ করি, উর্দু লেখক বলে কৃষণ চন্দরকে ঝেড়ে ফেলে দিইনা।
আসলে আমার ধারণা কোথাও belong করা জরুরি। এবং এটা প্রথমে হতে হবে নিজের দেশে, তারপর সারা বিশ্বে। আর আমরা বই-চলচ্চিত্র-শিল্প-সংস্কৃতি ছাড়া নিজের দেশের বা বিশ্বের নাগরিক হতে পারিনা। আর আমার কাছে জীবনটাকে খুব দারুণ একটা ব্যাপার মনে হয়, তাই একে যথাযোগ্য সম্মান দিতে ইচ্ছে করে এগুলর চর্চা করার চেষ্টার মাধ্যমে।
আমি যাদেরকে অন্তঃসারশূন্য বলেছি তা থেকে তোমার বন্ধুর মত মানুষেরা যে বাদ বুঝেছ? আর আমাকে আপু বললে আমার কি মনে করার আছে?
আমার মনে হয় না খুব সহজে বলা যায় যে কেউ “অন্তঃসারশূন্য ব্যর্থ জীবন কাটিয়ে” দেয়। যেসব বাঙালি হিন্দি গান শোনে আর একুশ তারিখ ঘটা করে সেজেগুজে বইমেলায় ‘ঘুরতে’ যায়, তাদের যে আনন্দ অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, সেটা একান্তই তাদের নিজস্ব। সেটা অর্জন যে করল, সে ব্যর্থ কেন হবে? বরং আমরা সেই অনুভূতি অর্জনে ব্যর্থ। কিন্তু আমরা মনে করি না আমরা সেটা অর্জনে ব্যর্থ কারণ আমরা সেই অনুভূতি কামনা করি না। তেমনি তারাও আমাদের নির্ণীত সারবত্তা সফল জীবনের অভিজ্ঞতাকে থোড়াই কেয়ার করে। মানে এগুলো সবই ব্যক্তিক অনুভূতি। ভালো খারাপ নেই।
আর বইমেলা প্রাঙ্গনও নিশ্চয়ই সব অনুভূতির জন্যেই উদার। আমাদের নির্ণীত বিশুদ্ধ ‘ভাষাভালোবাসা’র প্রতি কেবল উদার হলে তো সমস্যা। ভাষার স্বাধীনতাই যদি চাইব, প্রত্যেকের নিজস্ব অনুভূতিগুলোর প্রতি দরজা বন্ধ করে রাখলে কিভাবে চলবে? সবাই আসুক। নিজের দৃষ্টিতে, নিজের অনুভূতিতে বইমেলা, ভাষাদিবস, মাতৃভাষা-দিবসকে পালন করে যাক।
@রূপম (ধ্রুব), এখন উপলব্ধি করছি কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই “অন্তঃসারশূন্য ব্যর্থ জীবন” মন্তব্যটা ঢালাওভাবে করা উচিত হয়নি। আসলে এই সঙ্কর প্রজন্ম, যারা কোন দিকেরই হতে পারেনা, এবং এ বিষয়ে কোন চিন্তাও নেই তাদের প্রতি আমার কেমন যেন বিতৃষ্ণা আছে। তাই ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও মত দিয়ে খুব বেশি প্রভাবিত হয়ে গেছে লাইনটা।
@লীনা রহমান,
এক্কেবারে আমার মনের কথাগুলো লিখেছেন।
অনেকদিন বই মেলায় গেলাম, কিন্তু মন ভরে বই দেখতে পারলাম না। কি যে সমস্যায় আছি। প্রথমদিন মেয়েকে দিয়ে বিভিন্ন বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহ করেছি। পরে স্টলে গিয়ে বইগুলো দেখে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। যে কয়দিন গেছি সন্ধ্যা সাতটার পর ভীড় কমলে কিছু বগল দাবা করে ফিরেছি।তা ও বই দেখে নয়। ক্যাটালগ দেখে আগে ঠিক করা।অথবা ইন্টারনেটে ও পত্রিকার আলোচনা বিবেচনা করে যে তালিকা বানিয়েছি তা থেকে।
২১ ফেব্রুয়ারির দিন তো কাহাতক অবস্থা।আপনিও বোধ হয় খেয়াল করেছেন। লিটল ম্যাগাজিনের চত্ত্বেরের বাঁশের বেঞ্চ দখল করে চলেছিল সিগারেট খাওয়ার ধুম। এক মহিলা সেজেগুজে বসেছিলেন। তার সাথে কথা বলে বুঝলাম, সে হুমায়ূন আহমেদের নামও জানেন না। বেড়াতে এসেছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে নিয়ে। আর আমাদেরকে তাদের জন্য চারুকলা ইন্সিটিটিউট থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। ছেলেটিও গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল। আর মা খাচ্ছিল পোড়া ভুট্টা।
রাত আটটার পর ভীড় কমলে মোজাফরকে বললাম কথা সাহিত্যের কয়েকটা বইয়ের নাম সুপারিশ করতে।তার তো সমকালীন আধুনিক গদ্য নিয়ে দেখছি সবই জানা। আসার আগে তার পরামর্শ মত ঝটপট মামুন হুসাইন, রায়হান রাইন আর আহমাদ মোস্তফা কামালের কয়েকটা বই কিনে ফিরেছি।
যাক, কাল আবার যাচ্ছি।
@গীতা দাস,
[img]http://globalvoicesonline.org/wp-content/uploads/2011/02/IMLD-poster-2011.jpg[/img]
শেয়ার করে দিলাম।
@লীনা রহমান, এটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ইউনেস্কোর করা এ বছরের পোস্টার।
@লীনা রহমান,
এই না মেইল করলে parchina বলে?
ছবিটি পোষ্ট করার কৌশল শেখার জন্য কয়েকজনকে ফোন করে ব্যর্থ হয়ে লীনার স্মরণাপন্ন। তাকে ফোন করে মেইলে পোস্টারটি পাঠিয়ে কতক্ষণের মধ্যেই উত্তর পেলাম parchina
একটু পরেই মুক্ত-মনা থেকে স্বয়ংক্রিয় মেইল।
ধন্যবাদ। এ প্রজন্মের জয় হোক।
তবে শীঘ্রই শিখে নেব মন্তব্যে ছবি পেস্ট করা।
@গীতা দাস, আমি এখনো জানিনা পি.সি থেকে কিভাবে ছবি আপলোড দেয়া যায় কমেন্টে। আপনাকে মেইল করার পর নেটে সার্চ দিয়ে ছবিটা বের করলাম আর এখানে দিলাম।
পি.সি থেকে কিভাবে কমেন্টে ছবি পেস্ট করা যায় এ ব্যাপারে টেকিদের সাহায্য চাইছি
@লীনা রহমান,
ঠিক বুঝলাম না, পি.সি. থেকে ছবি (লোকাল ড্রাইভে থাকা) মুক্তমনায় দিতে চাচ্ছেন নাকি পি.সি. ব্যবহার করে ছবি (পি.সি. ব্রাউজার দিয়ে) দিতে চাচ্ছেন? দু’টোই বলছি,
স্মাইলীর নিচে এধরনের একটা লাইন দেখা যাচ্ছে খেয়াল করুন।
[img]http://yfrog.com/gzr22p[/img] ওখানে ক্লিক করলে প্রম্পট বক্স আসবে এবং ছবির URL চাইবে, ওখানে ছবির URL বসিয়ে দিন।
আর ছবিটি যদি আপনার কম্পিউটারের লোকাল ড্রাইভের হয় তাহলে কোনো ইমেজ হোস্টিং সাইটে আপলোড করে নিন, যেমন আমি করেছি, yfrog.com এ (টুইটারের একটি জনপ্রিয় ইমেজ শেয়ারিং পোর্টাল) তারপর আপনার আপলোড করা ইমেজটার URL কপি করে এখানে পেস্ট করুন।
@টেকি সওদাগর,
yfrog.com মনে হচ্ছে কাজ করছে না । :-Y অন্য কোনো সাইট ব্যবহার করুন, যেমন flickr.com
যারা নেশা করে জীবন ধ্বংস করছে তারাও কিন্তু ভাবে যারা নেশার মজা বুঝে না তাদের জীবন ব্যর্থ। যার যার কাছে যার যার অভ্যাস ভাল লাগতেই পারে তাই বলে আদর্শ ভাল অভ্যাস বলতে কিছু থাকবে না তাত হয়না। নতুন প্রজন্মের (যদিও আমি এ প্রজন্মেরই ) মধ্যে এমন একটা বিশাল শ্রেণী গড়ে উঠছে যারা বই বলতে হুমায়ুন আহমেদ,নাটক বলতে ফারুকীর দল, গান বলতে হিন্দি এবং খেলা বলতে ক্রিকেট। এর বাইরে যারা আছে তাদের কে তারা ক্ষেতই মনে করে। আমার ধারণা হিন্দির প্রতি মোহগ্রস্তের কারণে এরা না দক্ষ বাংলায়, না দক্ষ ইংরেজিতে। হিন্দির প্রতি আসক্ত মানে যদি এমন হত যে তারা হিন্দি সাহিত্য চর্চা করে তবে এত শঙ্কার কারণ ছিল না। তাই এদের দিয়ে কবি , সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, সৎ আমলা, সৎ ব্যবসায়ী আশা করা একটু কঠিনই বটে। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ তথা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায়না।
@হেলাল,
একমত।
:-Y
আপনার লেখার হাত ভাল। আগামী মেলায় একটা বই বের করে ফেলুন 🙂
লেখাটিতে কয়েকটি বিষয় এসেছে। শিক্ষার ক্রমনিম্নমান, বাঙালীর সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, বাঙালী সংস্কৃতির ধ্রুপদী ঐতিহ্যের সংকট, আমাদের বিদঘুটে inferiority complex ইত্যাদি। সবগুলি ব্যাপারে বোধহয় আপনার সাথে একমত হব না। তবে শিক্ষার জঘণ্য অবস্থার ব্যাপারে একমত হব 🙂
@রৌরব, গতকাল সারাদিনে যা কিছু দেখেছি তাই এখানে উঠে এসেছে। হয়ত একদিনে এত বেশি বিরক্তিকর ব্যাপার দেখার কারণে এত তীব্ররভাবে উঠে এসেছে অনেক ব্যাপার সেই সাথে আমার ব্যক্তিগত অনেক মত ও ক্ষোভ।
আর এখনো আমার মএন হয় আমি শুধু ব্লগার হতে পেরেছি যা অনেকেই পারে, তবে লেখক হবার যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি। দেখা যাক সামনে কি হয় 🙂
তারা আপনার মতন বাঁচতে চাইছে না, তাই তাদের জীবন অন্তঃসারশূন্য ব্যর্থ ?
মানে জ্ঞান চর্চা ছাড়া জীবন অন্তঃসারশূন্য ব্যর্থ ?
যাদের উদ্দেশ্যে বললেন, তারাও ভাবতেই পারে আপনার বইএর প্রদীপের তলায় নিবেদিত জীবন ব্যার্থ-কারন আপনি “শীলা কি জওয়ানী্র উত্তাপ বঞ্ছিত শুষ্ককাঠ প্রাণ”। আর এত আঁতেল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গ এই উপমহাদেশে সব থেকে পশ্চাদপর দুই জনগোষ্ঠি।
মোল্লারা যেমন মনে করে, ইসলাম যারা মানে না, তাদের জীবন ব্যার্থ।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে জীবনের পরম কোন উদ্দেশ্য নেই। তাই অন্যের জীবন অন্তসারশুন্য ব্যার্থ এই ধরনের কথাবার্তা আরেক ধরনের বালখিল্যতা। বরং বলুন ” আমার দৃষ্টিতে তা অন্তসারশুন্য”-তাহলে ঠিক হবে। দ্বিমত হবে না।
@বিপ্লব পাল, সত্যি কৃতার্থ বোধ করছি আপনার মন্তব্য পেয়ে। আমার পুরো লেখার মাঝে আপনি একটা জিনিস খুঁজে পেলেন যা আমি “মিন” ই করতে চাইনি। তা হল “আঁতলামি”। কি করে পারেন এভাবে কোন কিছুর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য খুজে বের করতে?? আমি মুগ্ধ হয়ে যাই :guru:
@বিপ্লব পাল, হা হা হা হা হা, ইউ আর ব্যাক। তোমাকে গত এক মাস মুক্তমনায় না দেখে আমরা সবাই ব্লগিং ই বন্ধ করে দেব কিনা ভাবছিলাম। যাক এখন আর চিন্তা নেই। তবে একটা কাজ কর না, ‘আতলামি কাহাকে বলে’, বা ‘আতলামি নিপাত যাক’ বা ‘আতেল লীনার ফাঁসি চাই’ টপিক নিয়ে দুই একটা ব্লগ লিখে ফেল, যাতে ভবিষ্যতে সবাই লীনার মত ‘আতলামি’ করার আগে একটু ভেবে নেয় :hahahee:
@বন্যা আহমেদ, :hahahee: :hahahee: :hahahee:
আরেকটা কথা, জীবনের নরম গরম পরম চরম কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলার কোন ইচ্ছা আমার নাই, ঈমানে কইতাছি। সকলের উদ্দেশ্যে ডিক্লেয়ার দিলাম 😉
@বিপ্লব পাল, আপনার সাথে একমত। শুধু আঁতেল অংশটা বাদে। এটা একটু গায়ে পরে ব্যাক্তি আক্রমন হয়ে গেল।:)
আপনার লেখার শিরোণাম দেখেই ভড়কে গিয়েছিলাম।
যাদের উদ্দেশে বলেছেন তারা মুক্তমনার নামই কোনদিন শোনেনি। জীবন পার হয়ে গেলেও শুনবে না। এ প্রজন্ম কোথায় যাচ্ছে জানি না। শিক্ষাব্যবস্থার বিধ্বংসী পরিবর্তন ছাড়া এদের ফেরানোর কোন উপায় নেই।
অ.ট: শিলা কি জওয়ানী সম্পর্কে কিছু না বলে পারছি না। বাসায় টিভিতে নিউজ, স্পোর্টস ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ছাড়া ছেলে কিছু দেখে না, আমি নিজে টিভিই চালাই না। ছেলে যখন চালায় তখন দেখি। ব্লগে এই শীলা শীলা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। শীলাটা যে একটা গান তা বুঝতে পারলাম, কিন্তু দেখা হয়নি। সেদিন নিজের উপর খানিকটা রাগ করেই ইউটিউব থেকে গানটা ডাউনলোড করলাম এবং দেখে ধন্য হলাম 😀
@সন্ন্যাসী, যাক আপনার জীবন ধন্য হল। আমাদের জীবন তো পথে-ঘাটে সবখানে এই গান শুনতে শুনতে এতই ধন্য মাঝে মাঝে নিজের অনিচ্ছায়ই এই গান মুখে চলে আসে!
আসলে সমস্যা হল এই কথাগুলো যদি বলতে যাই তাহলে আঁতলামি মনে হবে বন্ধুদের কাছে। আর অনেকেই আছেন নিজে কথা বলার সময় বোঝেন আসলে আমাদের কি করতে হবে, আমরা যে আমাদের ভাষাকে বা বিদেশি ভাষাকে আমাদের বিকৃত ও অশুদ্ধভাবে বলে, লিখে, ব্যবহার করে বলাৎকার করতে পারিনা, আবার অন্য একটি দেশের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মাধ্যমের নিকৃষ্টতম প্রচারগুলো থেকে প্রতিফলিত সংস্কৃতিকে অন্ধ অণুকরণ করে নিজেদের ব্যক্তিগত সত্ত্বাকে ধর্ষণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারিনা। কিন্তু কাজের বেলায় তার চর্চা কতটুকু হয়? আমি আজ এই লেখাটা লেখার সাহস পেয়েছি এবং এই কথাগুলো মানুষের কাছে বলার শক্তি পাই এবং এই ব্যাপারগুলোতে বিরক্ত হবার শক্তি পাই কারণ আমি ঠিক যে ব্যাপারগুলোর সমালোচনা করেছি তার থেকে অনেকাংশে আমি মুক্ত এবং প্রতিনিয়ত নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শুধু দিবসগুলোতে কর্মসূচী না নিয়ে বছরের সব সময় যদি এই ব্যাপারগুলো নিয়ে লেখা যায়, কথা বলা যায় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে, প্রচার করা যায় বিষয়গুলো তাহলে আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে পারে।
@লীনা রহমান,
নাম শুনেই ভিরমি খাবার যোগাড় :hahahee:
যা কইসো এক্কেবারে ১০০/২০০ সত্য কথা। :))
শামসুর রহমানের মত বলতে ইচ্ছা করে, বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা। তোমায় ঘিরে চলছে খেড়রের নোংরামি।