সেভেন এইটের সময়, আস্তে আস্তে লাটিম মারবেল ছেড়ে টেনিস বলের দিকে দখল নিচ্ছিলাম। আমরা আবার টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতাম। প্রতিদিন ভোরে বিছানায় থেকে সাদা কাপড়ে মা’কে দেখতাম পাটিপাতার বিছানায়। আঙ্গুলের করে সৃষ্টিকর্তার পুঁথিপাঠ করেন। ওই সময় মা’কে নিস্ক্রিয় এক অকার্যকর প্রাণীর মতো লাগতো। আমার অসহায় মা তখন শক্তি অর্জনের জন্য সাধনা করতেন। মা’কে খুব পরপর মনে হতো। বাবা আর মা একসাথে শক্তি অর্জনের সাধনা করতেন না। মা আমার রুমে এসে এ কাজটি করতেন। শুয়ে শুয়ে মা’র দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর এক ভয়ংকর স্বার্থপর রমনীকে দেখতাম।
সন্ধ্যা হলে ভাইবোনগুলো দলবেঁধে পুকুর ঘাটে পা ধু’তে যেতাম। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো। কারণ তারপরই সবাই গোল হয়ে বসে জিকির করতে হতো। “আল্লায় যদি দিতো পাখি বানায়া//উড়ে উড়ে যাইতাম আমি মদীনায়//মদিনাতে যাইয়ারে সেলাম জানাইতাম…..।” এসব বুঝতাম। কিন্তু “হাঁসকি রাব্বি সল্লাল্লাহ”, “মাফি কলমি গাইরুল্লাহ”- এসবের অর্থ বুঝতাম না। তবুও মা’ শিখিয়ে দিতেন বলে বকে যেতাম। মা মানেতো “মা”। ঈশ্বরের কাছাকাছি। আর এ কাছাকাছি থাকার উদ্দেশ্য ভয়াবহ খারাপ। মা’কে ঈশ্বরের কাছাকাছি রেখে ঈশ্বর একটা মই বানিয়ে নিলেন আসলে। বাংলা ভাষায় জিকির করতে কবিতার মতো ছন্দ পেতাম। এক ধরনের মেলোডি খুঁজে পেতাম। তাই ভালোও লাগতো। কিন্তু আরবী নাকি ফার্সি ভাষায় যেটা পড়তে বলতেন সেটা ভালো লাগতো না। চিরতার মতো তিতা লাগতো। মাঝে মাঝে আইষ্টার গন্ধ পেতাম।
ভাইবোনদের কথা বলতে পারবো না। আমি এসবে ফাঁকি দিতে চাইতাম। অল্প কিছুক্ষণ বকাবকি করে প্রিয় “পরিবেশ পরিচিতি সমাজ” বইটা নিয়ে বসে পড়তাম। মা বলতেন “বাংলা পড়লে চলবে? আরবী না পড়লে আগুনে জ্বালাবে, রাসুলের জিকির না করলে তিনি সুপারিশ করবেন না, ইত্যাদি ইত্যাদি।” আমি তখন বড়জোর পরের দিনের পাশের গ্রামের সাথে ক্রিকেট ম্যাচ নিয়েই বেশি চিন্তা করতাম। মা’র কথায় কান দেয়ার মতো টাইম ছিলো না।
গ্রামে হিন্দু ধর্মালম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমাদের বাড়ি আর তার সামনের বাড়িতে বেশ ঘনবসতি। এ দু’বাড়ির পুরুষেরা ছিলো উগ্র এবং কালা বধির মুসলমান। হিন্দু পাড়ার মানুষগুলো আমাদের বাড়ি ক্রস করে বাজারে যেতো। যাওয়ার পথে তাদেরকে নানা ধরনের উস্কানীমূলক কথা বলতো। হিন্দুদেরকে ব্যঙ্গ করে “ডান্ডি” “ড্যাঁডা” ইত্যাদি শব্দে ডাকতো। “ড্যাঁডারা-হ্যাঁডারা”-এ অপমানজনক কথাটি হিন্দুদেরকে দেখলেই মুসলমানরা চিৎকার করে উচ্চারণ করতো। এমনকি বাপ পোলা একসাথেও বলতে দেখেছি। হয়তো এক ভাই আরেক ভাইকে “শালারপুত” বলে গালি দিলেই সমস্যা হতো। কিন্তু বাপ পোলা মিলে অন্য ধর্মের মানুষকে এতো বিশ্রি গালি দেয়াও জায়েজ ছিলো।
পাশের পাড়া হিন্দু অধ্যুষিত বলে মুসলমানদের অঞ্চলে গালগল্পের বেশিরভাগ জুড়েই ছিলো হিন্দুদের বেহেশতে না যাওয়া নিয়ে। মুসলমানদের মধ্যে যারা কোন হিন্দুকে পছন্দ করতো, সুযোগ পেলেই তাকে ধর্মান্তরিত হওয়ার সুপারিশ করতো। না পারলে যেনো অন্তত মরার সময় কালেমা পড়ে মরে। … এ বিষয়টি আমার মাথায় ইট ভাটা বসিয়েছিলো। কেন হিন্দুরা বেহেশতে যাবে না? তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে? তাদের হায়াত মওত রিজিক এসবের ব্যবস্থাপনায় কে আছেন? হিন্দুরা তাদের মূল উপাস্যকে বলেন “ভগবান”। ভগবানের অর্থ খুঁজতে গিয়ে পেলাম “যৌনাঙ্গে সমৃদ্ধ”! মানে তাদের উপাসকের অনেকগুলো যৌনাঙ্গ আছে! মুসলমানরা বলেন “আল্লাহ”। এটার আবার ৯৯টা গুনবাচক মানে আছে। তার মানে হিন্দুদেরকে অধিক যৌনাঙ্গ সমৃদ্ধ একজন আর মুসলমানকে মাত্র ৯৯ গুনের অধিকারী একজন নিয়ন্ত্রন করেন। এভাবে করে অন্যান্য ধর্মেরও একজন করে আছেন।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলাম আর ইহুদী ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম সম্পর্কে জানতাম না। ভাবতাম মোট পাঁচজন মহাপরাক্রমশালী মানুষ আছেন যারা এ পৃথিবী দখল করেছেন। বাংলাদেশ দখল করেছেন আল্লাহ। তাই এখানে মুসলমান থাকেন। তাহলে অন্য ধর্মালম্বীদেরকে তাদের উপাসক কিভাবে নিয়ন্ত্রন করতেন? মসজিদের ইমাম আর পুরোহিতের মাঝে যে বাজে সম্পর্ক! নিশ্চয় উপাসকদের মাঝেও এমন সম্পর্ক। হিসেব মিলতো না।
একবার খরায় হিন্দুদের নামযজ্ঞের মঞ্চে ব্যাপক আরাধনার ব্যবস্থা করা হয় বৃষ্টি নামানোর জন্য। পরদিনই বৃষ্টি হলো। গ্রামের মুসলমানরা তখন ঠিকমতো বাজারে উঠতো না। তাদেরকে লজ্জা পেয়ে বসলো। তবে ধর্মান্তরিত হওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। পরের বছর হিন্দুদের পূঁজার পাশাপাশি মুসলমানদের মুনাজাতও অনুষ্ঠিত হয়। এমন আরাধনার ১ মাসের মধ্যেও বৃষ্টি না হওয়ায় হিন্দুরা মুসলমানদেরকে দোষারোপ করা শুরু করে। … পুরো বিশ্ব নিয়ে ভাবতে পারতাম না। ভাবতাম আমাদের বাড়িতে বৃষ্টি হলেও বড়বোনের জামাইর বাড়িতে বৃষ্টি হয়নি। বিটিভির খবরে দেখতাম কতগুলো জেলায় বৃষ্টি হবে আর কতগুলো জেলায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। বৃষ্টিপাতের জন্য স্থানগুলো কিভাবে নির্বাচিত করা হতো? কখন এ কাজ করতো? কই, কাউকেতো ফিতা দিয়ে আমীনশীপের কাজ করতে দেখিনা! আর বৃষ্টিপাত বা ভূমিকম্প সহ অন্যান্য কিছু কিভাবে ঘটতো? এটা কি ওই পাঁচ মহাপরাক্রমশালীর মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে ঘটতো? আবার ভাবতাম- না, তাহলেতো পৃথিবী পুরো ধ্বংস হয়ে যেতো। হিসাব মেলাতে পারতাম না।
সূর্যটা যেভাবে উদিত হয় :
আমার চোখে খড়ের টুকরো পড়ে। অনেক চেষ্টা করেও কুঁটোখানা বের করতে পারেনি। বড়বোন চোখে পানি দেয়ার জন্য নিয়ে যাবার সময় আমার কুরআনের হাফেজ ফুফা “পাকাশাফনা আন্কাগিতাকা ফাবাশ্বারুকাল ইয়াহুমা হাদীদুন” পড়ে চোখের পাতা উল্টিয়ে ফুঁ দিতে থাকলেন। তার মুখের গন্ধ নাকে এসে লাগতে বমি করে দিই। তারপর বমির জন্য কোন দোয়া পড়লেন কি না আর জানি না।
ঘুমের মাঝে খালি ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতাম। মা ঘুমানোর সময় “আল্লাহুমা বিহিসমেকা আহমুতোয়াহা” পড়ার জন্য শিখিয়ে দিলেন। এতোদিন দেখতাম কেউ একজন আমার কল্লা কেটে নেয়ার জন্য দৌড়াচ্ছে। দোয়া পড়ার রাতে দেখি কল্লা কেটেই নিয়ে গেছে। তখন বুঝিনি- বাড়ির পাশে কালভার্ট বানানোর সময় কল্লা লাগবে বলে একটা গুজব উঠেছিলো। সে ভয় থেকেই স্বপ্নের উৎপত্তি। যাহোক, পরে আয়াতুল কুরসী সুরাও এমন স্বপ্ন থেকে আমাকে বাঁচায়নি। উল্টো স্বপ্ন নিয়ে পানিপড়া আর তাবিজ আনার জন্য মায়ের উৎকন্ঠা আমাকে আরো ভীত বানিয়েছিলো।
অমৃত লাল ঘোষ নামে আমার একজন প্রিয় স্যার ছিলেন। তার সুনাম করতে গেলেই মা বলতেন- ভালো হলে কি হবে? উনিতো বেহেশতে যাবেন না! – এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি বেশিরভাগ সময় আল্লাহকে খুঁজতাম। কিন্তু পেতাম না।
কোরআন শরীফের শক্তি নিয়ে কথা উঠলেই শুনতাম- অমুক বাড়িতে আগুন লাগার পর সবাই কোরআন শরীফ খুঁজতেছে। আগুন নিভে গেলে কোরআন শরীফকে নারিকেল গাছের আগায় খুঁজে পায়। কোথাওবা পেয়ারা গাছের ডালে। একবার আমাদের পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে লোহার রেলের উপর ভস্মীভূত কোরআন দেখতে পাই।
জন্মের সময় নাকি হায়াত মওত লেখা হয়ে গেছে। তবুও আবার চিকিৎসার জন্য কোরআনের আয়াত বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। এটা খুবই বিস্ময়কর। এরকম ভাবনা পেয়েছিলো ক্লাস নাইনে উঠার পর।
একবার বলে আমাকে বিবেক বুদ্ধি সব দেয়া আছে। আবার বলে আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা ধূলির কণাও নড়ে না! আল্লাহর মা বাপ তুলে গালি দিলে সেটার দায়ভার আল্লাহ নেয় না কেন?
কোরআনের আয়াত দিয়ে নাকি আরোগ্যলাভ করা সম্ভব। কিন্তু পাঠের পর আরোগ্যলাভ না হলে তখন বলে- আমল না থাকলে এসবে হবে না। হায় হায়! তাহলে অসুস্থ থেকে নিজেকে শুধরানোর উপায় কি?
কোন এক ব্যক্তি নাকি কেয়ামতের দিন বেহেশতের টিকিট পেলেন। কিন্তু সে ইহলোকে খুবই বদ ছিলো। পরে সে আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহ নাকি বলেন- তুমি একদিন শীতের রাতে একটি বিড়ালকে কম্বলের নীচে আশ্রয় দিয়েছিলে, তাই তোমার জন্য এ পুরস্কার! – ভাবলাম, কেয়ামতই এখনো হয়নি, লোকটা বেহেশতের চাবি পেলো কিভাবে?
এক বর্ষায় শুনলাম আমাদের ইউনিয়নের ৩ ইউনিয়ন পরের ইউনিয়নের এক গ্রামে মা’কে লাত্থি দেয়ার কারণে সাথে সাথে ছেলে পঙ্গু হয়ে গেছে! মা’কে লাত্থি দেয়ার বিষয়টিতে খুব ঘেন্না লেগেছে। কিন্তু মা’র অভিশাপে সাথে সাথে পঙ্গু হবার বিষয়টি মেনে নিতে পারিনি। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। পথে বৃষ্টি ধরলেও থামিনি। ভিজতে ভিজতে ওই গ্রামে পৌঁছে গেলাম। মসজিদের ইমামের কাছে গিয়ে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন উনাদের ইউনিয়নে নয়, এটা আসলে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার (পাশের উপজেলা) এক গ্রামে ঘটেছে। কিন্তু উনি দেখেননি, শুনেছেন। বললাম চলেন আমার সাথে। ভদ্রলোক কিছুতেই রাজি নয়।
আমি আসলে অন্তত একটি সত্য নিদর্শনের অপেক্ষায় ছিলাম। এভাবে বেশ কিছুদিন অলৌকিক গজব কিংবা রহমতের খবর পেলেই ছুটে যেতাম। কিন্তু রেফারেন্সের পর রেফারেন্স পাড়ি দিয়েও গজব উল্লা আর রহমত মিয়ার একটা কেশের সন্ধানও পাই নাই।
(চলবে)
এই যে গুছিয়ে বলার ভঙ্গি, চমৎকার লেগেছে।
খুবই ভালো লাগলো লেখাটা… (Y) (Y)
ধন্যবাদ, আমি তোমাদেরই লোক। (D)
তথাকথিত ধর্ম গুলির তুলনায় বৌদ্ধ দর্শন বা ধর্ম অনেক অাধুনিক, যেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়না। নারী-পুরুষের অধিকারের তুলনায় দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায় প্রাধান্য পায়। লোভ-লালসা ও বাসনা সব দুঃখের মূল বলে ব্যক্ত করা হয়। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। ব্যক্তিগত জীবনে শান্তির জন্য বৌদ্ধদর্শন বাস্তবসন্মত। অহিংস জীবনযাপন ও অাগ্রাসনহীনতা অন্যতম উপদেশ যা অনান্য ধর্ম গুলির তুলনায় বাস্তবসন্মত। ধর্মযুদ্ধ ছাড়াই গৌতম বুদ্ধ সবাইকে তাঁর দিকে অাকর্ষণ করতে পারেন।
@অলোক,
কিন্তু প্রসংগ হচ্ছে আসলেই কি ধর্মাশ্রয়ী হবার মাঝে কোন বিশেষ কৃতিত্ব আছে?
আজ এই ঘটনা ঘটলে রেললাইন উপড়ে ফেলা হবে। রেলগাড়ি আগুনে জ্বলবে, হয়ত রেলের কর্মচারীদের গলা কেটে হত্যা করা হবে।
@আবুল কাশেম,
শুভসকাল। একটু ভুল হচ্ছে। “লোহার রেল” মানে “র্যাল”, র্যাল মানে “কোরআনদানি” অথবা কোরআন রাখার স্ট্যান্ড!
কোরআনের পাশাপাশি রেল শব্দটি উচ্চারিত হতে ভাবছিলাম পাঠক বুঝে ফেলবে। কিন্তু হলো না! 🙂
@সবাক, আমি ঠিকই বুঝেছিলাম। 🙂
লেখাটা পড়ে আমার শৈশব মনে পড়ে গেল।ধর্মের নিষ্ঠুর শোষনের নাগপাশে বন্দী ছিল আমার জীবনের বিরাট একটি অংশ।
@তামান্না ঝুমু,
সবারই একই অবস্থা। 🙁
ধর্ম নিয়ে অত্যধিক লেবু কচলানি সম্ভবত মানুষের মনে অবিশ্বাসের সূচনা করে। দেশের অধিকাংশ অবিশ্বাসীদের শুরুটা মনে হয় এভাবেই হয়। সাধারন স্কুল শিক্ষায় ধর্ম শিক্ষা নামক অবান্তর একটা বিষয় যোগ করে স্বাক্ষর মানুষদের চোখ মুখ বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। তা না হলে এই দেশে অবিশ্বাসীদের মিছিলে আরও অনেক লম্বা হত।
লেখারটির জন্য ধন্যবাদ।
@সাদাচোখ,
সেটাই। খেতে ধর্ম, বসতে ধর্ম, কর্মে ধর্ম…………. এসব অত্যাচার থেকেই ধর্মের অভাবগ্রস্থ অসহায়ত্ব ধরা পড়ে। আর স্বভাবতই মানুষ দুর্বল কিছুর প্রতি নির্ভরশীল থাকতে চায় না। একজন মানুষ ধর্মের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেন, তখন তিনি নিজের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে উঠেন।
দারুন হয়েছে সবাক। মুগ্ধতা নিয়ে পড়ে গেলাম। আমার নিজের সাথে বেশ মিল আছে মনে হচ্ছে। আমার জীবনের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সময়টা ইসলাম ধর্ম গ্রাস করে ফেলেছে। আমার কোনো শৈশব, কৈশোর ছিল না- সবই ধর্মের গ্রাসে চলে গিয়েছিল। এখন ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গেলে যখন অনেক তথাকথিত দরদি এসে উপদেশ দেন ধর্মের এভাবে সমালোচনা না করতে তখন মেজাজটা যে কি পরিমাণ খারাপ হয় তা বলে শেষ করা যাবে না। আর ধর্মানুনুভূতির দোহাই তো আছেই।
ধর্ম মানুষের মনের মধ্যে বিষ ঢেলে দেয়। একজন ধর্মবিশ্বাসী পৃথিবীর দিকে চেয়ে যখন দেখে সর্বত্রই তার বিশ্বাসের বিরোধি লোক তখন তার প্রতিক্রিয়া হয় জঘন্য। আমি ছোটবেলায় মানচিত্রের দিকে তাকাতাম আর ভাবতাম, হায় পৃথিবীতে কেন এত্ত মালাউন!!
ধর্ম না ছাড়লে সকল মানুষকে আপন করে নিতে পারা মোটামুটি অসম্ভব। একজন যখন বিশ্বাস করবেন অন্য আরেকটি লোক অপবিত্র, ও দোজখে যাবে, ও বেদ্বীন তখন তার প্রতি এর মনোভাব কি হবে বলাই বাহুল্য।
মানুষের সাথে আবহমান কাল থেকে চলে আসা ধর্ম নামক প্রতারণার সাথে কোনো ধরণের আপস অসম্ভব। এর কবর রচনাই একজন মানবতাবাদির লক্ষ্য হওয়া উচিত।
দোয়াটি হল- আল্লাহুম্মা বিসমিকা, আমুতু ওয়া আহইয়া। এখনো মনে আছে 🙂
আমি শুনেছিলাম কোরানকে লাথি মারলে নাকি মানুষ বানর হয়ে যায়। তো আমি যে পরীক্ষা চালানো উচিত সেটাই চালিয়ে দেখেছিলাম। 🙂
@সৈকত চৌধুরী,
আল্লাহর হুকুমেই লাত্থি মারলেন আবার আল্লাহর রহমতে আপনি বানর হন্নাই 😉 এইতো একটা সুখবর।
দ্বাদশ শ্রেণীতে থাকাকালীন সময়ে এক বন্ধু বলেছিলো কোরআনের কোন লাইন বাদ দেয়া বা যুক্ত করা যাবে না।
জিজ্ঞাসা করলাম কেন যাবে না?
বললো, সাথে সাথে গজব পড়বে।
পৃষ্ঠার অর্ধেক ছিঁড়ে মুড়ে ফেলে দিই (অবশ্য তখন একটু ভয়েই ছিলাম)। ঘন্টাখানেক দু’বন্ধু থম ধরে বসেছিলাম। এরপর সাহস করে ভাঙা ভাঙা গলায় বলি “কিরে তোর আল্লাহ কি ঘুমায়! গজব কই?” সে তখন জোরে জোরে বলতেছে, “তোর উপর আল্লার গজব পড়ুক” 😀 😀
ধুর শালা! তোর গজবে লাত্থি মারি!
@সৈকত চৌধুরী, পাশের পাড়ার সামিনের মা প্যারালাইজ্ড হয়ে পড়ে আছেন ক’বছর যাবৎ, আমার আম্মা জানে এবং মহল্লার সবাই জানে সামিনের মা সামিনের মাথায় কোরান রেখে কিরা(দিব্যি/কসম) করেছিল, সামিন মহল্লার একটা মেয়েকে বিয়ে করেছিল গোপনে, তার মা তাকে স্বীকার করানোর জন্য এটা করেছিল, আর সামিন যথারীতি কোরান মাথায় নিয়েও অস্বীকার করেছিল তা, যার গজবস্বরূপ সামিনের মা প্যারালাইজ্ড!
আম্মার এই ভয়ঙ্কর কথাটি শোনার পর আমি বল্লাম, আম্মা, আমার বন্ধু অনিরূদ্ধ মায়ের সাথে তর্ক করে কোরানকে লাথি মেরেছিল কষে এবং রীতিমত ফুটবল খেলেছিল আজ হতে দশ বছর আগে, কিন্তু এখনো ওর পা প্যারালাইজ্ড হওয়া তো দূরে থাক, কোনরকম ব্যাথা বা ঘাঁও হলো না আজ পর্যন্ত। তাহলে আল্লা অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর হয়ে গেলেন!
খুব দারুণ ভাবে শুরু করেছেন, পড়তে বেশ লাগছে। চালিয়ে যান।
এর কি কোন অর্থ আছে?
😀 মনে করিয়ে দিলেন সেসব গল্প অনেক দিন পরে। ও, “উপাস্য” বলতে চেয়েছিলেন বোধহয়।
@রৌরব,
ডান্ডি, ড্যাঁডা এসব “পুরুষাঙ্গ” অর্থে উচ্চারিত হতো। তবে কিঞ্চিত বিকৃতার্থে, অর্থাত খৎনাহীন পুরুষাঙ্গ।
উপাস্য হবে, কিন্তু এখন এডিট করতে গিয়ে ভালোই ক্যাচালে পড়েছিলাম। 🙂
এই কাহিনিই হয় সবসময়। আমার মা প্রায়ই গল্প করেন, পাশের বাড়ির এক মামার মনে হয় ১ বছর বয়সের শিশুকন্যা মারা গেলে তাকে কবর দেবার পরদিন ভোরে নাকি তারা দেখতে পায় মেয়েটির লাশ তুলে দরজার সামনে দিয়ে গেছে কেউ।সবাই ভীত হয়ে হুজুরের কাছে গেলে সে বলে নিশ্চয় বাচ্চাটিকে ভাল করে গোসল দেয়া হয়নি, কারণ এতটুকু বাচ্চার তো আর কোন পাপ থাকতে পারেনা।তখন মেয়েটিকে গোসল করিয়ে আবারো কবর দেয়া হলে পরদিনও দেখা যায় একই কাহিনি। এরপর হুজুর ভালমত দেখে আবিষ্কার কর
@লীনা রহমান,
এখনতো টাকা দিয়ে এসব গুজব বিক্রি হয়। পথে-ঘাটে খুব বেশি বেশি দেখা যায় ৫টা ১০টাকার দামের এসব গুজবের বেচাকেনা। ক্রেতার সংখ্যা মহামারি আকারের।
আমি এই গলপের যে সংসকরণ শুনেছি, তাতে লোকটা রাসতায় পড়ে থাকা কোরানের একটা পাতা কাছাকাছি একটি বাড়িতে গুছিয়ে রেখেছিল, একারণে এই দুনিয়ায় তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছিল!
@পৃথিবী,
গল্পটি আরো কয়েকভাবে প্রচলিত আছে। পতিতা কর্তৃক কুকুরকে পানি খাওয়ানো, ডাকাত কর্তৃক সত্য কথা বলার কারণে।…..
এসব ছিলো চতুর মোহাম্মদ কর্তৃক তখনকার মানুষদের জন্য প্রলোভন। কিন্তু কেউ ভাবলো না যে, কেয়ামত হবার আগে কিভাবে বেশ্ত দোযখ বরাদ্ধ হয়!!
এখন অবশ্য কিছু মোল্লা বলে থাকেন যে
@সবাক,
ঘুমের দোয়া-
“ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ ইয়া”
অর্থ- আমরা আল্লাহর নামেই মরি আবার আল্লাহর নামে-ই জীবিত হই-
@আকাশ মালিক,
আমি যেভাবে পড়তাম, ঠিক সেভাবেই লিখেছি। যার সাথে আরো একটি মেসেজও যাচ্ছে – “গ্রামের মক্তবে ভুল আরবি শেখানো হচ্ছে। আসলে তাদের শুদ্ধ অশুদ্ধের বালাই নাই। প্রতিযোগিতা কেবল বেহেশতে যাওয়া নিয়ে!”
শুদ্ধটা কখনো যাচাই করিনি। 🙁 ধরিয়ে দেয়ার জন্য (F)