ধরো যদি হারাই কোন দিন, স্মৃতিগুলো জড়াই পায়ে পায়ে
ধরো যদি পালাই কোন ছলনায়, খেয়ালি মেঘের মত নামহীন ঠিকানায়।
তুমি কি ডাকবে পিছু আমায়?!?
তুমি কি অভিশাপ দেবে?
আমার খুব প্রিয় একটা গানের প্রথম কয়েকটা লাইন। এই একটা মাত্র অ্যালবাম করার পর এই গানের ব্যন্ড K-OZ এক প্রকার হারিয়েই যায়। ওদের আর কোন গান বের হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এমনকি এই অ্যালবামটার নাম পর্যন্ত আমার জানা না নেই। সম্ভবত ব্যন্ডের নামেই অ্যালবামের নাম।
না, এ পোস্ট গানের জন্য নয়। এ পোস্ট আমার নিজের বর্তমান মানসিক অবস্থার পোস্ট। সিদ্ধান্তহীনতার পোস্ট। পালিয়ে বাঁচতে চাওয়ার পোস্ট। আবার ঘুরে দাড়াতে চাওয়ার পোস্ট ও বটে। সবার সামনে আমি সিদ্ধান্তের আশায় আমার সিদ্ধান্তহীন দুর্দশাগুলোর কথা তুলে দিচ্ছি।
কেন এই পোস্ট? কি দরকার ছিল নিজের সিদ্ধান্তহীনতার কথাগুলো সবার সামনে নগ্ন করার? যত কিছুই হোক, নিজের সিদ্ধান্তটাতো শেষ পর্যন্ত নিজেকেই নিতে হয়, নাকি!! আসলে এই পোস্ট অনেকটা আমার স্বীকারোক্তি, আমার জবানবন্দীও বটে। কি করছি, কি করতে চাচ্ছি, কি করতে পারতাম এবং আরো কি কি করার আছে। নাকি পালানো ছাড়া কোন পথ নেই!?
এবার আসুন হাবুডুবু খাওয়া সিদ্ধান্তহীনতার পানাপুকুরে আপনাদের নিয়ে যাই।
প্রথমে আমার বর্তমান অবস্থায় আসা যাক। আমি বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের প্রথম বর্ষের (লেভেল ১ টার্ম ২) একজন ছাত্র। আমার স্কুল ও কলেজ লেভেলের ইচ্ছা, লক্ষ্য আকাঙ্খা যা-ই বলিনা কেন তার সবটুকুই ছিল এই স্থাপত্য বিভাগকে নিয়ে (কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়, ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত আমার ইচ্ছা ছিল চারুকলার ছাত্র হবার। কিন্তু চট্টগ্রামে আমার পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যপারটা এত সহজ ছিল না। এই জন্য লক্ষ্যটা পরিবর্তন করে এই স্থাপত্য বিভাগের দিকে নির্দিষ্ট করে নেই। যা হোক, এর পরে লক্ষ্য্ নিয়ে আর কোন সমস্যা বা মানসিক হতাশা টাইপও কিছু ছিল না)। সেই হিসাবে, আমার লক্ষ্যে আমি খুব সহজেই পৌছতে পেরেছি। কিন্তু এর পরে সমস্যার শুরু। আমাদের এই স্থাপত্য বিভাগ প্রচন্ড জটিল একটা বিভাগ!(খুব বেশি ভালো অর্থে ‘ডিজুস বাংলায়’ জটিল বলছি না কিন্তু! জটিলতা বোঝাতেই জটিল লিখেছি।) এখানে শেখার প্রয়োজনে, কাজের প্রয়োজনে এবং বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র জুনিয়র এবং ক্লাসের ক্লাসমেটদের মধ্যে প্রচন্ড মিথস্ক্রিয়া জনিত আন্তঃসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আসলে প্রচন্ড কাজের চাপে যখন একগাদা সম মনা মানুষ এক জায়গায় কম্প্যাক্ট হয়ে পড়ে তখন আন্তঃসম্পর্ক, মিতস্ক্রিয়া, অন্তঃদন্দ্ব সবই অন্য সাধারনের তুলনায় অনেক বেশি হয়। এটাই নিয়ম। আমাদের ডিপার্টমেন্টে ক্লাসচলাকালীন সময়ে কি প্রচন্ড চাপের উপর দিয়ে যেতে হয় তা আসলে পরিস্থিতিতে না পড়লে বলে বোঝানো সম্ভব না। বাইরে থেকে কেউ বোঝে না। এমনকি ভর্তির আগে আমরাও বুঝিনি। অন্য ডিপার্টমেন্টগুলো যখন পরীক্ষার সময় প্রচন্ড চাপে থাকে, আর তখন আমরা পরীক্ষার সময় প্রজেক্টের কাজের চাপ না থাকার কারনে খুশিতে ঢ্যং ঢ্যং করি এবং অনেকেই পরীক্ষায় আশাতীত খারাপ ফলাফল করে!! তো এসব মিলিয়েই বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ। স্থাপত্য বিভাগটাকে আমার ভালো লেগে গেলেও, স্থাপত্য বিষয়টার সাথে আমি এখনো পুরোপুরি একাত্ম হতে পারি নি। কোথায় যেন একটা ফাঁকাস্থান রয়ে গেছে। এখনো মেলাতে পারছিনা। এটা হয়তো সময়ের সাথে জোড়া লেগে যাবে। তবুও, এটা এখন আমার সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তহীনতা।
এখন আমার নিজের ব্যপারে কিছু বলি। আমি চুপচাপ, শান্ত স্বভাবের একজন ছেলে। ব্লগে আমি যেরকম বাচালের মত আজগুবি ভাষায় উদ্ভট উদ্ভট সব কথাবার্তা লিখে ভরিয়ে রাখি, বাস্তবে আমি তার ধারেকাছেও নেই। আমি কাজ না থাকলে একা একা নিজের মত করে সময় পার করতেই বেশি ভালোবাসি। আড্ডা খুব একটা দেই না। আড্ডায় গেলেও বলার মত খুব বেশি কথা খুঁজে পাই না। বন্ধু খুব বেশি নেই। কিন্তু যে কয়জন আছে তারাই অনেক কাছের।
এবার ধীরে ধীরে অন্য ব্যপারগুলোতে হাত দেই। আমি পড়তে ভালোবাসি। অর্থ করে বললে আউট বই পড়তে খুব ভালোবাসি। বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমার কোন বাছবিচার নেই। গল্প,কবিতা, উপন্যাস,অন্যান্য সাহিত্য,দর্শন,বিজ্ঞান,মুক্তিযুদ্ধ, মানবতা – সব স-অব পড়ি। এই এতসব পড়াই আমার মত অতি সাধারন একটা ছেলের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে। আমি সবসময় কোন না কোন কাজে জড়িত থাকতে ভালোবাসি। প্রাইমারী স্কুলে খেলাধুলাসহ ক্লাসের যাবতিয় কাজে আমি থাকতাম। হাই স্কুলে স্কাউটিঙের সাথে খুব সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলাম। কলেজ লাইফ যদিও বইয়ের দোকানেই পেরুলো। ভার্সিটিতে এসে গত ছয় মাস ক্লাসের সাথে পাগলের মত জড়িয়ে ছিলাম। যদিও উপরে বর্নিত আমার স্বভাবের সাথে এত সক্রিয়তা যায় না, তবুও ব্যপারটা সত্যি। হাতে কোন কাজ না থাকলে আমি চুপ চাপ, কিন্তু কাজ পেলে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়ে দৌড়তে পছন্দ করি। আমার ক্লাসে আমার মতামত থাকবে না এটা আমি হজম করতে পারি না। তাই অনেকে কাজ থেকে বাঁচার জন্য সব মতামত দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখলেও আমি সেটা পারি না। এজন্য অনেকের বিরাগভাজন ও হতে হয়। যা হোক, এগুলো ব্যপার না। এখানে মূল পয়েন্ট হচ্ছে যে পুরো ক্লাসের দায়িত্ব নিতে গেলে মূলত অনেক ঝামেলা ঘাড়ে এসে ভর করে, যে কারনে অন্য দিকে ব্যয় করার মত সময় অনেক খানি কমে যায়।
এবার আসি আসল কথায়। এত সব কথা বলার কি দরকার ছিল? আমিতো এমন কোন কেউকেটা নই যে আমার জীবন বৃত্তান্ত ও দৈনিক কাজ কর্ম ব্লগে তুলে দিতে হবে! তাহলে ঝামেলা কোথায়?
ঝামেলাটা হচ্ছে আমি ছোট নদী থেকে ছোট একটা ভেলা নিয়ে ভাসতে ভাসতে এখন প্রায় এক উত্তাল সাগরে এসে পড়েছি। ফলাফল যা হবার তা-ই ! আপাতত আমি দিক্ভ্রান্ত নাবিকের মত চারিদিকে তাকাচ্ছি, কিন্তু কোন দিশে পাচ্ছি না!
চট্টগ্রাম একটা ছোট শহর। মানুষজন খুব বেশি নয়, কিন্তু কমও নয়। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে যে শহরের মানুষরা এত বেশি প্রাণবন্ত না। হবেই বা কি করে? শহরের প্রাণ হবার কথা যাদের তারাই তো শহর থেকে অনেক দূরে! চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দুটোই হচ্ছে শহরের বাইরে এবং দুটোই দুপ্রান্তে। দুটোর সাথেতো শহরের কোন যোগাযোগ নেইই এমনকি দুটোর মধ্যেও কোন যোগাযোগের কোন সুযোগ নেই। আছে বলতে এক মেডিকেল কলেজ। ওরাও সর্বদা প্রচন্ড চাপের উপরেই থাকে, আর একা একা কিছু করার মত সুযোগও নেই। যার ফলাফল এই যে, শহরে চিন্তা ভাবনার ও কাজের বৈচিত্র খুবই কম। কেউ যদি ভালো মন্দ কিছু চিন্তাও করে তাও পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে অংকুরেই বিনাশ ঘটে। চট্টগ্রামের এত কথা বলার কারন একটাই, চট্টগ্রাম আমার শহর। আমিও এই শহরেরই ছেলে। এখানে নতুনভাবে কিছু চিন্তা করলে কারো সাথে সেগুলো বলতে পারতাম না। বললেও খুব লাভ হত না।
তো এই চট্টগ্রাম থেকে যখন ঢাকায় আসলাম তখন দেখতে পেলাম আমি একা না। আমার চারপাশে অনেকেই আমার মত চিন্তা করে। কথা বার্তা আদান প্রদান করা অনেক সহজ। আসলে পরিবেশটা যে কত বড় প্রভাবক! চট্টগ্রামেরও অনেক ছেলে হয়তো আমার মতই চিন্তা ভাবনা করত! কিন্তু পরিবেশগত কারনে সে হয়ত আমাকে বলার সাহস করেনি আর আমিও তাকে বলে উঠতে পারি নি! ঢাকায় এসে এ ব্যপার অনেকের সাথেই ঘটেছে।
যা হোক, সব কিছুই যখন খোলা মেলা ভাবে ঘটেছে তখন আমার চারিদিকে অনেক রাস্তা খুলে গেছে। ফলাফল এই, আমি এখন রাস্তা খুঁজে নিতে পারছি না। শুধুমাত্র কোন এক দিকে মনোনিবেশ করতে পারছি না। সব মাথার মধ্যে ঘোট পাকাচ্ছে। কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারছি না। এবার রাস্তাগুলো নিয়ে পয়েন্ট করে লিখে দেই। তাহলে ব্যপারটা সবার কাছে আরো কিছুটা পরিস্কার হবে।
১- আমি ক্লাসের সব ধরনের কাজ এবং সিদ্ধান্তে নিজেকে জড়িত রাখতে চাই। ক্লাসে আমার একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে, আমি সেটা হারাতেও চাইনা কিন্তু আবার না ছাড়লেও অন্য দিকে সময় বের করতে পারছি না।
২- ক্লাসের বাইরে আমার অনেক কিছুই করার ইচ্ছে। কিন্তু সেখান থেকে যেকোন একটা বেছে নিতে হবে।
ক- বিজ্ঞানঃ বিজ্ঞান নিয়ে আমার অনেক আগ্রহ রয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞান, বিবর্তনবাদ আর মনোবিজ্ঞান নিয়ে আমার যথেষ্ট আগ্রহ আছে। এসব নিয়ে আমি আরো অনেক পড়তে চাই, ব্লগে লিখতে চাই সবার সাথে তর্কবিতর্কও করতে চাই।
খ- মুক্তিযুদ্ধঃ আসলে মুক্তিযুদ্ধের অবস্থানটা বিজ্ঞানের আগে হবে। মুক্তিযুদ্ধ ও এর বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে আমার পড়াশোনা করার অনেক ইচ্ছা। এর মধ্যে সরাসরি জড়িত হওয়া যায় এরকম কিছু কাজের চিন্তাভাবনাও ছিল। আশেপাশের পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বসে তাদের কাহিনী সংগ্রহ করা, সেগুলো সুন্দর ভাবে লিখে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে জমা দেয়া। স্কুলের বাচ্চাদের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে কাহিনী বলা। সচলায়তনের মুক্তিযুদ্ধ প্রজেক্টে যোগ দেয়া। এবং বন্ধুদের সাথে নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাঠচক্র বসানো। (আমি চাপা স্বভাবের হওয়ার কারনে শেষের দুইটার কোন প্রকার অগ্রগতি হয় নাই।) আরো আরো অনেক অনেক চিন্তা ভাবনা আছে আমার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। কিন্তু সবার আগে নিজের জানার ভান্ডারটা বাড়াতে হবে। সেজন্যও অনেক দৌড়াদৌড়ির প্রয়োজন আছে।
গ- মানবতাবাদঃ ধর্মের উর্ধে মানবতাবাদের স্লোগান কিভাবে সবার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া যায়, এবং কিভাবে মানুষকে মানবতা বাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা যায় সেগুলো নিয়েও আমার কাজ করার ইচ্ছা। মুক্তমনাতেই এ নিয়ে অনেক কথাবার্তা আছে। আমি শুধু সক্রিয় ভাবে মাঠে কাজ করতে চাই।
ঘ- সেবামুলক সংগঠনঃ আমার ইচ্ছা এই যে, আমার ক্লাস বা আমার ব্যাচএর সঙ্গীসাথিদের নিয়ে আমরা সক্রিয় ভাবে একটা সেবামুলক সংগঠন করব। এবং সাথে সাথে অন্য যেকোন সেবামুলক সংগঠনে নিজেকে জড়িত রাখব। ক্লাসের ব্যপারটা কিছু কিছু শুরু করেছি। কিন্তু গোছানো নয়।
ঙ- উইকিপিডিয়াঃ বাংলা উইকিপিডিয়াকে সমৃদ্ধ করতে এবং ইংরেজি উইকিতে বাংলাদেশ নিয়ে লেখা বাড়ানোর প্রতি আমার যথেষ্ট আগ্রহ আছে। বাংলা এবং ইংলিশ উইকির মুক্তিযুদ্ধ অংশটুকু অনেক দুর্বল। আমি এ নিয়ে আমার সাধ্যমত কাজ করতে চাই। শুরুও করেছিলাম। কিন্তু ক্লাস শুরুর পরে গ্যাপ পড়ে যায়। আবার শুরু করার প্রবল ইচ্ছা আছে।
চ- টিউশনি করানোঃ ইয়ে! মানে! টাকা পয়সার প্রবল টানাটানি! দু একটা টিউশনী করাতে পারলে খারাপ হয় না! কিন্তু ক্লাস টাইমে যে চাপে থাকতে হয়! টিউশনীতে ফাঁকিবাজি ছাড়া উপায় নাই!
এগুলো বড়সড় ব্যপার। এছাড়াও ছোটখাট অনেক ব্যপার প্রতিনিয়ত মাথায় আসা যাওয়া করছে।
৩- বন্ধু, পরিবার, আত্মীয়ঃ কি আর লিখব! ঢাকায় যাওয়ার পর বেদিশে হয়ে গোছাতে গোছাতেই এখনো দিন যাচ্ছে! ঢাকায় থাকতে পরিবারকে সময় দেই না। ঢাকায়ও আত্মীয় স্বজন আছে, তাদের বাসায় ও যাই না। আর চট্টগ্রাম আসলেও ইকটু একাকিত্বের আশায় বন্ধুদের ঠিকভাবে সময় দেয়া হয় না! সব প্যচায়ে ফেলতেসি!! 🙁
এই-ই হল আমার বর্তমান অবস্থা। বিশাল ফাঁড়ার উপর আছি। ঢাকায় যাওয়ার আগে থেকেই উইকি,মুক্তমনা আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার সিদ্ধান্তহীনতার শুরু। যার ফলাফল ঢাকা যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগেই একই সাথে উইকিতে লেখা এবং মুক্তমনাতে সময় দেয়া দুটোই বন্ধ হয়ে যায় এবং সাথে সাথে বিবর্তন আর্কাইভ করার সময় আমার উপর বর্তানো দায়িত্ব পালনে চরম ব্যার্থতা!! (এখনো বিবর্তন আর্কাইভে সম্পাদকদের তালিকায় নিজের নাম দেখলে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করে!! ওখান থেকে আমার নামটা সরিয়ে নিলেই আসলে আমায় যথাযোগ্য সম্মান করা হবে। আমি ঐ আর্কাইভের জন্য একটা লাইনও দেইনি, তাই আমার অনুরোধ আমার নামটা সরিয়ে নেয়া হোক।) ঢাকা যাবার পর আমি পুরোই শেষ!
এত কিছু লেখার একটাই কারন। আমি সিদ্ধান্তে পৌছুতে চাই। সিদ্ধান্তহীনতা বড়ই খারাপ ব্যপার। এখনো যখন মামুন ভাই ফোনে ডাক দেন তখন মুক্তমনার কথা ভাবি, যখন আবার মেজর কামরুল হাসান স্যারের চেহারা দেখি তখন মুক্তিযুদ্ধ মাথায় ঘোরে, আবার যখন উইকি সদস্য হবার কারনে উইকি মিট আপ এর মেইল সহ উইকির বিভিন্ন অগ্রগতির মেইল আমার আইডিতে আসে তখন উইকির চিন্তা মাথায় ঘোরে!! এ এক আজব সমস্যা! আমি মুক্তি চাই! নাহলে হারানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না! সব কিছু থেকে হারাবো তখন! পালিয়ে যাবো!!
আর সিদ্ধান্তের ব্যপারে আপনাদেরও মতামত চাই। অন্তত তাতে যদি কিছু উপকার হয়।
আর সবশেষে আমার কষ্টকর ক্লাস প্রজেক্ট গুলোর একটার ছবি দেই। সবচেয়ে বেশি কষ্টকর প্রজেক্টগুলোর মধ্যে এটা একটা। এটার চেহারা দেখলে আর বর্ননা পড়লে অন্তত কিছু ধারনা হবে যে আমি কি রকম ফাঁড়ার উপ্রে আছি!! 🙁
এই প্রজেক্টের নাম tones and texture ..এই প্রজেক্টে আমাকে আধা ইঞ্চি মোটা এবং ৬০০x৬০০ মিমি (২x২ ফিট) সাইজের প্লাই উডে গ্রিড করে গ্রিডের উপর ড্রিল মেশিন দিয়ে বিভিন্ন ব্যসের প্রায় ৩৬০০ ফুটো করতে হয়েছে এবং সেই সব ফুটোয় ২.৫ সেমি সাইজের বিভিন্ন ব্যসের বেতের টুকরো বসিয়ে একটা texture সৃষ্টি করতে হয়েছে। এটা ছিল এই প্রজেক্টের ফাইনাল জমার ছবি (ইনকমপ্লিট প্রজেক্ট এবং সে কারনে ফেল গ্রেড প্রাপ্ত!!) এর আগে প্রিলিমিনারি মডেল হিসাবে একই ম্যটেরিয়ালে ৪০০x৪০০মিমি সাইজের বোর্ডে ১৪০০ ফুটো করতে হয়েছে। এবং প্রিলি সহ পুরো প্রজেক্টের জন্য সময় ছিল মাত্র দুসপ্তাহ। ( দুসপ্তাহ শুনতে অনেক মনে হতে পারে। কিন্তু প্রথমে স্কেচ করে ডিজাইন রেডি করা, সে ডিজাইন অ্যাপ্রুভ করানো, তারপর প্রত্যেকের নিজ নিজ ম্যটেরিয়াল সিলেকশন, সিলেকশন স্যার দের পছন্দ না হলে আবার দৌড়ানো, তারপর প্রিলি করা, তারপর ফাইনাল মডেল!!) এর পরের প্রজেক্টগুলো আরো দির্ঘদিন ব্যপ্তির এবং আরো কঠিন হয়েছে!!
(ছবিটা আপলোডের ব্যপারে সাহায্য করার জন্য সৈকত ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ! নাহলে আমার যন্ত্রণাটুকু বোঝানো যেত না!! আর সবশেষে আবার আরেকটি বিরক্তিকর পোস্টের অবতারনা ঘটানোর জন্য বিশেষভাবে ক্ষমাপ্রার্থী!)
বুয়েটে পড়াশোনা করা আর নরকে বাস করা মনে হয় একই।
১৯৭০ সনে বুয়েট থেকে বের হয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম দুই তিন বছর কোন বই পড়ব না এবং সংবাদপত্রও নয়। আরো প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বুয়েটের কোন মাস্টার বা অধ্যাপকের সাথে কোনদিন দেখা করব না বা রাস্তায় দেখা হলেও সালাম জানাব না। এমনি নিষ্টুর এবং কড়া ছিলেন বুয়েটের শিক্ষকেরা।
কিন্তু, আজ প্রায় চল্লিশ বছর পর বুঝতে পারছি বুয়েট আমাকে কতই না দিয়েছে। আজ আমার জীবনের যত সাফল্য সব বুয়েটেরই প্রাপ্য। আজ কেন জানিনা সেই সব জাঁদরেল বুয়েটের শিক্ষকদের পায়ে ধরে সালাম করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ধরে থাকুন বুয়েট—একদিন জানবেন বুয়েট আপনার জন্যে কী করেছে।
বুয়েটের স্থাপত্যে ভর্তি হয়েছেন, একটু ঘাম না ঝড়ালে কি চলবে! আমার চাচাতো বোন তো এক প্রোজেক্টে কাজ করতে গিয়ে কব্জি কেটে রক্ত ঝরিয়েছে, পুরো এক সপ্তাহ তাকে ভাত অন্যের হাতে খেতে হয়েছে! আমার আব্বু আশির দশকে পাশ করেছিল। আব্বুদের সময়ও সিনারিও মোটামুটি একরকম ছিল। আব্বুদের সময়ে যারা ফেল করত, তারাই পরে বড় কিছু হতে পেরেছিল। বুয়েটের স্থাপত্যবিভাগ একারণেই অন্য সব বিভাগ থেকে আলাদা, এখানে ফেল করাটাই norm। আমার ওই বোন তো প্রথম দিকে সমানে বাশ খেয়ে একদম ভেঙ্গে পড়েছিল, খুব কান্নাকাটি করত, এখন মনে হয় অভিযোজন করতে পেরেছে।
কতজনকে দেখলাম বুয়েটে আর্কি পড়তে চেয়েও পারলনা, অন্য কোন ইউনিতে ভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে। আব্বুদের সময়ে বলে লোকজন স্কুল লাইফ থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করত। আপনি যে এখন বুয়েটের চাপে অতিষ্ঠ বোধ করছেন, এটাও ওই অপ্রাপ্তির বিষাদে ভোগা গোষ্ঠীর কাছে বিলাসিতা মনে হবে। এই দেশে যে আপনি দেশের এক নম্বর বিদ্যাপীঠে নিজের পছন্দের বিষয় অধ্যয়ন করার সুযোগ পেয়েছেন, এখান থেকে আপনি সান্ত্বনা খুজে নিতে পারেন।
@পৃথিবী,
কথাটা খুবই সত্যি।
সময় পাল্টাচ্ছেরে, এখন আরো একগাদা ভার্সিটির সাথে বুয়েটকে মোটামুটি ভালই কম্পিটিশন দিতে হচ্ছে। বুয়েট এমনিতেই সরকারি আর সেশন জটের কারনে অনেক অনেক পিছায়ে।(আমি এ বছরের ভর্তি পরিক্ষার সময় যে সব চ্যংরা পুলাপানরে এক মাসের জন্য আর্কি কোচিং করালাম, তারাই এখন প্রাইভেট ভার্সিটীতে ভর্তি হবার পর এক সেমিস্টার শ্যাষ করে ফেলসে!! আর আমরাও এইতো গত মাসে মাত্র পরীক্ষা শেষ করে প্রথম সেমিস্টার শেষ করলাম!!! আমাদের আগেই ওদের রেজাল্টও দিয়ে দিবে।)তাই এখন ফেল করা মানেই পিছায়ে পরা। যদিও ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক, তবুও আগে আগে কর্মক্ষেত্রে যেতে পারাটা জরুরি। আর ফেল করলে উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার রাস্তা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।
৩ নম্বরটাকে বিসর্জন দিন। শুনতে কেমন যেন শোনালেও আপনার উচ্চাশার প্রেক্ষিতে এছাড়া কোন উপায় নেই। ১ নম্বরটা ছাড়বার প্রশ্নই ওঠেনা। ২ নম্বরের ব্যাপারে আপনার যেটা করতে হবে সেটা হল কয়েকটা জিনিসকে মার্জ করতে হবে। আপনি লেখাতেই যেমন বোঝা যায় উইকিপিডিয়া আর মুক্তিযুদ্ধকে আলাদা ভাবে ভাবার দরকার নিই। নিজেকে আপনি উকিপিডিয়ার মুক্তিযুদ্ধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলুন। গ এবং ঘ কে চেষ্টা করলে সমন্বিত করতে পারবেন। আর, পদার্থবিদ্যা আপনাদের ক্লাসে শেখায় না? অন্তত ধ্রুপদী মেকানিক্স তো শেখানো উচিত। মনোবিজ্ঞানকে স্থাপত্যের মাধ্যমে approach করুন। Rudolf Arnheim তো পড়ায়ই, নাকি?
@রৌরব,
হা হা! সহজ সমাধান। উপদেশগুলো পছন্দ হয়েছে। আসলেই সমন্বয় করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখি না। কিন্তু তাহলে হবে এই যে কোনটাতেই আসলে মনমত সময় দিতে পারবো কিনা সন্দেহ থেকে যায়।
তবে চেষ্টা করতে তো দোষ নেই! আমি সর্ব প্রথমেই আপনার উপদেশ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে দেখব।
@রৌরব,
ও আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। মেকানিক্স ২য়-৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত টানা পড়তে হয়। তবে মর্ডান ফিজিক্স আর এ্যস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে আগ্রহ বেশি, এগুলার ক্ষেত্রে কোন গতি নাই।
আর মনোবিজ্ঞান যা পড়ায়, তা আসলে দায়সারা টাইপ। মনোবিজ্ঞান আমাদের ক্ষেত্রে অনেক জরুরি একটা বিষয়। এছাড়াও অনেক ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়। এজন্যই আগ্রহটা বেশি।
@তানভী,
আপনার “মর্ডান ফিজিক্স আর এ্যস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে আগ্রহ” টার প্রকৃতি কি? তথ্য গুলি জানতে চান নাকি বিষয়গুলি আসলে বুঝতে চান?
@রৌরব,
যত দূর সম্ভব জানার পরিধি বিস্তৃত করতে চাই।
আপাতত অঞ্জন দত্তের গাওয়া আমার একটা প্রিয় গান শেয়ার করে পালাই। গানটা অঞ্জন দত্ত অভিনিত কলকাতার সিনেমা “ম্যাডলি বাঙালি” তে অঞ্জন দত্তেরই গাওয়া। মূল মিউজিক ভিডিওটা পেলাম না। তাই এই স্টিল পিকচার স্লাইডের ভিডিওটা তুলে দিলাম।
httpv://www.youtube.com/watch?v=LwkG5w4fpqQ&feature=related
গানটার সাথে পোস্টটার মিলে যায়! পোস্টটা দেয়ার পরেই গানটার কথা খেয়াল হলো।
আমার বর্তমান অবস্থার সাথে অনেকটা মিল খুঁজে পাচ্ছি। 🙁
আপনার জন্য সহমর্মিতা। (F)
আজব… এই ছেলে বলে কী!? :lotpot: এখনি বেছে নিতে চাও একটা কিছু?! কী দরকার!!! (H) ফার্স্ট ইয়ার, ডোন্ট কেয়ার… :rotfl: এখনো অনেক কিছুই দেখা বাকী হয়ে আছে। দেইখা শুইনা তারপর বাছ বিছারে যাইয়ো… আর আর্কি’র মজা কী এখনো পাও নাই নাকি?! 😉 আমার কলেজ ছিলো বুয়েট কলেজ (এই নামেই লোকে বেশি চিনে, যদিও আসল নাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়!)। :-[ বুয়েটের এমন কোনো ঘুপচি নাই যেখানে আড্ডা দিয়ে কাটাই নাই। 😛 ক্যাফেটেরিয়ার পেছনে আমগাছটার নিচে আর আর্কির লনে কতদিন যে কতসময় কাটিয়েছি, তার তো ইয়ত্তা নেই। আমাদের অত্যাচারে শেষমেশে বুয়েটের কর্তৃপক্ষ ক্যাফে এর পেছনে যাওয়ার রাস্তাটাই বন্ধ করে দিলেন। :guli: :guli: :guli: যা হোক , এখনি এত টেন্সিত হওয়ার কিছু নেই। চালায়া যাও… (Y) বইমেলায় যে কোনো দেখা হবে তোমার সাথে… (*) চেহারা তো চেনাই, আশা করি খুঁজে নিতে পারবো… 🙂
@নিঃসঙ্গ বায়স,
এক্লা কাউয়া ভাই/ বোন,
আবারো গেরিলা কায়দায় উঁকি-ঝুঁকি মারনের খায়েশ? আপ্নের পুরা মাইনাস! কৈষা চায়নিজ মাইনাস! :-[
—
আপ্নের ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ কিচ্ছা-কাহিনী পর্তে মন্চায়! (I)
@বিপ্লব রহমান,
ভাই, আপনার চায়না প্রীতি অসাধারণ। (Y)
আর স্মৃতিকাতর হওয়ার কী দরকার বলেন!!! মাঝে মাঝে ভুলে ভালে হইয়া যাই, :-Y কিন্তু হইবার ইচ্ছা করে না। তাই স্মৃতিকথা লিখি না আমি। :))
আইজকা তো একুশে ফেব্রুয়ারি, ঢাবি আইবেন কী? আমি এখনো ঢাবি তে আছি, আগামীকাল পর্যন্ত থাকবো পুরা সময়। আমার মেইল অ্যাড্রেস দিচ্ছি, একটু কষ্ট কইরা মোবাইল নাম্বারটা জানাইলে হয়তো দেখা হইতে পারে বলে আশা রাখি। (H) আর গেরিলা বাহিনীর উত্তরসূরী তো, তাই একটু গেরিলা গেরিলা ভাব লই!!! :rotfl: :rotfl: :rotfl:
[email protected]
ভাইয়া তোমার লেখাটা পড়লাম। আসলে এই সমস্যা শুধু তোমার না, মনে হয় সবাই-ই কম বেশি একই সমস্যায় পড়ে। আমি এমন একটা সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স পড়লাম যেটা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবি নি। সেই সাবজেক্ট নিয়া ঠেলতে ঠেলতে আমার অবস্থা খারাপ। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেল শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে।
যাই হোক, মূল বিষয় হল, আমরা বাংলাদেশের মত একটা দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পৃথিবী আমাদের জন্য ফুল-সজ্জা নয়। তোমি যে সুযোগ পেয়েছ, যেখানে পড়ছ বা যে বিষয় নিয়ে পড়ছ সে সুযোগ কতজন পেয়েছে? ক্যালকুলেটর নিয়ে একটা হিসেব করে দেখ। এখন দেখ যারা সে সুযোগ পায় নি তারা ও তো অন্য কোথাও পড়ছে তাই না?
প্রথম অবস্থায় ভার্সিটিতে ম্যাচ করতে তোমার মত সমস্যা হওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক না। এটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে আসে।
আরেকটি কথা, তোমি হয়ত অনেক কিছু একসাথে করার চেষ্টা করছ, কিন্তু তোমাকে এর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু করার সুযোগ দেয়া হয়েছে- পৃথিবীটা এভাবেই চলছে। সবাই তার চাওয়া মত সব কিছু করে ফেলতে পারবে না। একটা উদাহরণ দেই- তোমার কাছে ১০০ টাকা আছে, কিন্তু তোমি কলম, খাতা, বই, পেন্সিল এগুলো কিনতে চাও যার মূল্য ২০০ টাকা। এখন তোমাকে এগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে নিতে হবে কতগুলো, সব কেনা সম্ভব না।
চুপচাপ স্বভাবের যারা তারা মানসিক চাপে বেশি ভোগে। সবার সাথে একটু বেশি করে মেশা উচিত।
বাইরে থেকে ঢাকায় গেলে মনে হয় গতি ২০ থেকে ১০০ তে পৌছে গেল। এছাড়া দূষিত বাতাস আর শব্দ-দূষণ ..।
তোমার পরীক্ষার ফল, অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা এগুলোই বড় কথা। ক্লাসের বন্ধুদের কাছে তোমার যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবস্থান থাকে তবে সেগুলো বাস্তব জীবনে কতটা কাজে লাগবে ভেবে দেখ।
ক্লাসের বাইরে কিছু করার খুব দরকার না হলে নাও করতে পার। কারণ তোমি যা করার কথা ভাবছ তা হয়ত ২/৩ বছর পরেও করতে পার।
বিভিন্ন বিষয় পড়া ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার কথা বলছি- পড়ার ফাঁকে সময় পেলে তা করতে পার আর সময় না পেলে আপাতত থাক। কারণ তোমার বয়স ৬০/৭০ হয়ে যায় নি। সারা জীবন আছে এসব কাজ করার। ক, খ, গ, ঘ সম্পর্ক একই কথা।
তোমার দৈহিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করছে। কোনো মতে স্বছন্দে চালিয়ে যেতে পারলে আমার পরামর্শ না করার আর করলেও সর্বোচ্চ একটা। কারণ তা কম-বেশি তোমাকে চাপে ফেলবে।
আগে যেটা বলেছি সেটা আর কি। আমরা এই বয়সে নিজেকে খুব বেশি বয়স্ক হয়ে গেছি ভাবতে থাকি আর ভাবি এই বুঝি সুযোগ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু সারা জীবন যে সে সুযোগ আছে তা ভুলে যাই। যাই হোক, তোমার আগ্রহ দেখে অত্যন্ত খুশি হলাম। নিজের উপর বেশি প্রেসার নিও না। ধীরে ধীরে লেখাপড়ার বাইরের কাজ গুলো সময় সুযোগ মত করতে পার, প্রয়োজনে কিছু সময়ের জন্য বাদও দিতে পার। এখন, এই লেখাপড়ার উপরই নির্ভর করে হয়ত আমাদেরকে সারা জীবনই চলতে হবে। তাই ওটাতে অবহেলা করলে বা পিছিয়ে পড়লে কোনো কিছু করতে পারা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তাই সর্বোচ্চ মনযোগ এটার দিকে।
পরিশেষে, নিজের যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার মত বোধ-বুদ্ধি তোমার আছে- কথাটি মাথায় রেখো। তাই আমি যা বললাম বা অন্যরা যা বলল তা তোমি অবশ্য নিজ বিবেচনায় গ্রহণ করবে।
@সৈকত চৌধুরী,
আসলে আপনার এই মন্তব্যের পর আমার আর কিছু বলার নাই। আমার পোস্টটা যে কারনে দেয়া, তার প্রায় পুরোটাই আপনার মন্তব্যে এসে গেছে।
অনেক অনেক অনেক থ্যাঙ্কস! (F)
এই বইমেলায় আপনার দেখা পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম!
তানভী, ওয়েলকাম টু দ্যা এ্যডাল্ট ওয়ার্ল্ড!! পুরো ব্লগটাকে এক কথায় সারাংশিত ( 😀 ) করলে বলতে হবে, ‘প্রাপ্তবয়ষ্ক জীবনের ডিলেমা’। আর কোন গ্যারান্টি দিতে না পারলেও এটুকু বলতে পারি যে, এতো মোটে শুরু, বাকি জীবনটা এভাবেই চলবে এখন থেকে, দুঃখ না করে বরং তার জন্য প্রস্তুতি নাও। আমাদের আশেপাশে বেশীরভাগ মানুষই চাকরি, ঘরবাড়ি সংসার করা, বাচ্চা মানুষ করা, উইকেন্ডে একটু মুভি দেখা, এর ওর বাড়ি যাওয়ার মধ্যেই জীবনের শান্তি খুঁজে পান। আমরা যারা পাইনা তারা ঠিক তোমার মত একই সমস্যাতে ভুগি সারা জীবন। আমি ইদানীং সপ্তাহের প্রথমে একটা লিস্ট করি, কি কি করবো তার লিস্টি। প্রত্যেক সপ্তাহে তার ৩০%ও করতে পারিনা। এক সপ্তাহ থেকে আরেক সপ্তাহে লিস্টটা গড়াতে গড়াতে একসময় ওটা এত বড় হয়ে যায় যে ওটা ফেলে দিয়ে আবার শুরু করি। ডারউইন দিবস নিয়ে একটা লেখা লিখতে শুরু করেছিলাম দুই সপ্তাহ আগে, এমনিতেই আমার লিখতে কষ্ট হয়, তারপর আবার গ্যাপ পড়ে গেলে তো আর কথাই নেই, সেই লেখাটা আর পছন্দ হয় না, নতুন আরেকটা বই পড়তে শুরু করি, লেখাটাই বাতিল হয়ে যায়। ডারউইন ডের ব্যানার করতে গিয়ে আর লেখাটা শেষ করার সময় পেলাম না। লেখাটা ল্যাপটপে নিয়ে এবং আর ব্যাগে একটা প্রিন্ট আউট নিয়ে একবার কাজে যাই, আবার বাসায় আসি, এখন পর্যন্ত দুই চার ঘন্টা সময়ই বের করতে পারলাম না যে ওটা শেষ করবো। আজকে উইকেন্ডে সকাল থেকে বসবো ভেবেছিলাম, এখন প্রায় বিকেল ৪ টা বাজে, এখনো বসার সময় পাইনি।
এই না করতে পারা নিয়ে আগে দুঃখ হত, এখন আর হয় না, এখন মনে হয় এই করতে না পারা আর অন্তহীন চাওয়ার মধ্যেই বোধ হয় বেঁচে থাকার আনন্দটা লুকিয়ে আছে, না হলে সকালে উঠে দৌড়ানোর ইচ্ছেটাই হয়তো চলে যেত। আমি যাই এখন, তোমাকে এত বড় উত্তরটা দিতে যে সময়টা ব্যয় করলাম সেটা কোথা থেকে মেক আপ করবো সেটার চিন্তা করি গিয়া এখন :)) । তুমি ভালো থেকো, মাথাটা ঠান্ডা কর। এত দুঃখ করার কিছু নেই, লিস্টের সবগুলোর মধ্যে তোমার কাছে যেগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো কর, বাকিগুলোকে স্লাইড করতে দিলে অসুবিধা নেই, বাকী জীবনটাই পড়ে আছে তার জন্য।
@বন্যা দি,
আহা, কী পুলারে বাঘে খাইলো! (W)
—
@ তানভী,
ফেলটুশ পুলাপানরে আমি খুবই ভালা পাই। আপ্নেরে বিশাল অভিনন্দন!… ইয়ে… আপ্নের প্রজেক্টটা আম্রারে গিফট কর্বেন? সেদিন বউ কৈছিলো, বাসায় এক্টা ময়দা ছাঁকার চালুনি দর্কার! (F)
@বিপ্লব রহমান,
আপনি কইরা ডাকলে বিয়াপক লজ্জা পাই!! আমি ছোট, আমাকে লজ্জা দিবেন না!
ময়দার সাথে প্লাইয়ের গুড়া আর দুই চার খান পুকা পরলে কিন্তু আমার দুষ নাই!
এর চেয়ে ভালো আপনি আমার আরেক ফ্রেন্ডের করা ১৪৪০০ ফুটার প্রজেক্টটা লয়া যান! ভাইরাস সহ আটকায়ে যাবে!! ( আমাদের গ্রীড ছিল হয় ১সেমি দূরে দূরে, নাইলে আরো ছোট। এখন এই গাধা পুলাডা হাফ ইঞ্চি দূরে দূরে ফুটা করতে গিয়া দেখে যে ১৪৪০০ ফুটা করা লাগতেসে!! :-Y )
@বন্যা আহমেদ,
আসলে এত সুন্দর করে না লিখলেও পারতেন!
যা হোক, আপনার মন্তব্য পড়েই আমার মন ভালো হয়ে গেছে।
আসলেই তাই! কিন্তু এখন গুরুত্বপূর্নগুলো বাছাই করাই গুরুত্বপুর্ন কাজ হিসাবে দাড়ায়ে যাচ্ছে!
ও আচ্ছা! প্রজেক্টার ব্যপারে আরেকটা কথা লিখতে ভুলে গেছি। এটা ইনকমপ্লিট এবং এফ গ্রেড প্রাপ্ত প্রজেক্ট হওয়া সত্বেও সব প্রজেক্ট করানো শেষে আবার সব গুলো প্রজেক্টের ছবি আর তথ্য একত্র করে পোর্টফোলিও তৈরি করার প্রজেক্ট থাকায় আবার আমাকে এই আধা খ্যাচড়া ফেল করা প্রজেক্ট পুরোটুকু কমপ্লিট করতে হয়েছে!! ;-(