প্রাচীন ভারতে বস্তুবাদী চিন্তাধারা এবং বাস্তব বিশ্ব দর্শনের মধ্যে দিয়ে ব্রাক্ষণ্য ধর্মের আচার – অনুষ্ঠান অনুশাসনের প্রতি যুক্তিবাদের এমন তীব্র ব্যঙ্গ আমাদের আধুনিক সমাজসংস্কারকেরাও করতে সাহস পান না।
সেই দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে প্রাচীন চার্বাক দর্শনের প্রতি একটা শ্রদ্ধা জাগে। চার্বাকের নীতিশাস্ত্র পরলোক, কর্ম্মফল প্রভৃতি অন্ধসংস্কারের শাসন লোপ করতে নি:সন্দেহে কার্যকরী।
চার্ব্বাক আত্মা বলতে আলাদা কিছূ বলেন নি। আত্মা বলতে বুঝানো হয়েছে চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই হল আত্মা – “চৈতন্যবিশিষ্ট দেহ এব আত্মা ।”
আত্মা দেহ হতে কোন অলৌকিক সত্ত্বা নয়। তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে চার্বাক বলেন গুড়, চাল ইত্যাদিতে পৃথক পৃথক ভাবে মাদকতা নেই, কিন্তু সেই গুলির সংযোগে যখন মদ প্রস্তুত হয় তখন মাদকতা গুন দেখা দেয়। তেমনি মাটি, জল, আগুন ও বাতাস অচেতন পদার্থ হতে এদের সংযোগে যখন দেহ গঠিত হয় তখন চৈতন্যগুনের উদ্ভব হয়।
“অত্র চত্বারি ভূতানি ভূমিবার্য্যনলানিলা ।
চতুর্ভ্য: খলুর্ভূতেভ্যশ্চৈতন্যমুপজায়তে।“
চিন্তা করে দেখুন জীব সৃষ্টির পেছনে কত বড় একটা ব্যাখ্যা চার্বাক সেই যুগেই দিয়ে গেছেন। যদিও আধুনিক বিজ্ঞানের মতো জীব সৃষ্টির জৈব-রাসায়নিক কোন উন্নত ব্যাখ্যা নেই। তবু আপনি চার্বাক ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করতে পারবেন না।
আবার পরলোক অর্থাৎ মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা বলতে বলা হয়েছে – এই চেতনা বিশিষ্ট দেহ ধ্বংস হলে তাহার আর পুনরগমন হয় না । আত্মা যখন বিদেহী অস্তিত্ব নেই, তখন স্বর্গ, মোক্ষ, পরলোক, পুনর্জন্ম, কর্মফল কিছুই নেই।
“পরলোকিনোহ ভাব-পরলোকাভাব: ।“
পুনর্জন্মকে ও যুক্তির সাথে খন্ডন করা হয়েছে যেমন পুনর্জন্ম যদি সত্য হত, তা হলে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনদের স্নেহের টানে আত্মা ফিরে আসে না কেন?
“যদি গচ্ছেৎ পরং লোকং দেহাদেষ বিনির্গত:।
কস্মাম্ভুয়ো ন চায়াতি বন্ধুস্নেহসমাকুল:।“
এই দর্শনে ইশ্বরকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। বিশ্ব জগৎ সৃষ্টি বলতে বলা হয়েছে বিশ্ব জগৎ সৃষ্টি করিবার জন্য ইশ্বর বা কোন অলৌকিক শক্তির দরকারই হয় না কারণ বিশ্বজগৎ তার নিয়মেই ভাঙ্গে গড়ে।
বৈদিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে অন্ধ ভাবে গা ভাসায় নি এই দর্শন। কঠোর যুক্তিবাদী সমালোচনাই এই দর্শনের মূল বিষয়। চার্বাক মতে একমাত্র যুক্তিযুক্ত বচনই গ্রাহ্য। “যুক্তিমদ্বচনং বচন”। যাগযজ্ঞ পালন, অগ্নিহোত্র, বেদাধ্যয়ন, দন্ডধারণ, ভষ্মলেপন এইসব ভন্ডামী এ সমস্তই বুদ্ধিহীন কাপুরুষদের উপজীবিকা। কাপুরুষ বলতে ব্রাক্ষণদের বলা হয়েছে এখানে। সেখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় ব্রাক্ষণ্যবাদের চাতুরীর উপর একটা বড় আঘাত এনেছিল এই দর্শন।
পশুবলীর মতো অমানবিক কাজের তীব্র সমালোচনা করতে গিয়ে বলা হয় মুর্খেরা বলে যে যজ্ঞে পশুবলী দিলে, সেই পশু স্বর্গে যায়। যদি মুর্খরা সত্যই ইহা বিশ্বাস করে তবে যজ্ঞে বৃদ্ধ পিতামাতাকে বলি দেয় না কেন?
শ্রাদ্ধ করলে যদি মৃতের পরিতৃপ্তি হয়। তাহলে বিদেশে যেতে মানুষ আহার সঙ্গে নিয়ে যায় কেন? বাড়ীতে তার উদ্দেশ্যে কোন ব্যাক্তিকে খাওয়ালে ত প্রবাসীর তৃপ্তি হওয়া উচিৎ। মৃত ব্যাক্তির শ্রাদ্ধকৃত্যাদির কোনো ফলই নেই, ইহা শুধু ব্রাক্ষণদের রোজগারের পথ।
“ততশ্চ জীবনোপায়ো ব্রাক্ষনৈর্বিহিতস্থিত।“
মৃতানাং প্রেতকার্য্যানি নত্বন্যদ্বিদ্যতে ক্কচিৎ।।“
চার্বাক আরও বলেছেন ভন্ড, ধুর্ত, নিশাচর তারাই বেদের কর্তা।
“ত্রয়োবেদস্য কর্ত্তারো ভন্ডধুর্ত নিশাচরা:।“
দেবতাদের বিদ্রূপ করে বলেন ইন্দ্র যদি দেবতা হয়ে শমীকাঠ ইত্যাদি ভোক্ষণ করেন, তাহলে তৃণভোজী পশুর চেয়েও তিনি অধম।
“যজ্ঞৈরনেকৈর্দেবত্ত্বমবাপ্যেন্দ্রেণ ভূজ্যতে।
শম্যাদি যদি চেৎ কাষ্ঠং তদ্বরঙ পত্রভুক্পশু:।।“
ধর্ম নামক ধুর্তামি ফাঁস প্রাচীন যুগেই হয়ে গিয়েছিল চার্বাক দর্শনের মাধ্যমে। কিন্তু এই দর্শন পরবর্তীকালে ভারতে ঘুমিয়ে যাওয়ার অনেকগুলি কারণ আমার মনে হয়েছে –
প্রথমত চার্বাক দর্শন তীব্র ভোগবাদী। সমাজ বিরোধী ভোগবাদী ব্যক্তি সর্ব্বস্ব নীতি চার্বাক দর্শনের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে নি।
পুনজন্ম না থাকলেও পরবর্তী প্রজন্ম বা সমাজের প্রতি ব্যাক্তির দায়বদ্ধতা থাকে। তাকে উপেক্ষা করা হয়েছে এই দর্শনে – “যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋনং কৃত্বা ঘৃতং পিবেত।“ অর্থাৎ যতদিন বাঁচ সুখে বাঁচ, ঋন করে হলেও ঘী খাও। এটা স্বার্থপর ব্যাক্তি ভোগবাদেরই অর্থ বহন করে।
দ্বিতীয়ত তখনকার শিক্ষা দীক্ষা ব্রাক্ষণদের হাতেই ছিল। সমাজের বেশীর ভাগ মানুষই শিক্ষার বাইরে ছিল। ব্রাক্ষণরা যা বুঝিয়েছে তাই বুঝেছে সাধারণ মানুষ। চার্বাক মতের সারমর্ম বুঝতে পারে নি।
তৃতীয়ত মনে করা হয় বৌদ্ধ ধর্ম চার্বাক দর্শনের সাহায্যে অগ্রসর হয়। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের আরেক সমস্যা ছিল অতিরিক্ত ত্যাগ। বৌদ্ধ প্রভাবের অবনতি হওয়ার ফলে হিন্দুধর্ম আবার পুন:উজ্জীবিত হয়ে উঠে। এবং পরবর্তী সময়ে শংকরবেদান্তের ভাব জোয়ার আসায় ভারতে বস্তুবাদ ঘুমিয়ে পড়ে।
তবে চার্বাক দর্শনের কিছু দোষ বাদ দিলে যুক্তিবাদীদের কাছে আজও চার্বাক দর্শন সোনার মত।
(বি:দ্র: আমি যখন নবম-দশম শ্রেণীতে পড়তাম সেইসময় জন্মদিনে ভবানী প্রসাদ সাহু আমাকে সরোজ আচার্য্যর ‘চার্ব্বাক দর্শন’ ও ‘মাক্সীয় দর্শন’ গ্রন্থ দুটি উপহার দেন। যা আমাকে যুক্তিবাদে পথে চলতে সাহায্য করে। সেই বইগুলির সাহায্য নিয়ে আমার এই লেখা। যদিও বই দুটি আমার কাছে নেই চুরি হয়ে গেছে। তাই মস্তিষ্কের বই থেকে স্মৃতিচারণ করে তথ্য দিয়েছি। কোন ভূল হলে ক্ষমা প্রার্থী। সেই সাথে কেউ ভূল ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ হব।)
চার্বাক দর্শনের উপরে আরো বিস্তারিত কোন প্রবন্ধ পড়তে আগ্রহী, কোথায় পাওয়া যাবে?
আপনার লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানলাম।অনেক ধন্যবাদ।
অনেকদিন থেকে চার্বাক দর্শনের নাম শুনছি। কিন্তু এখনো পড়া হয়নি। পড়বো পড়বো করে সময় করে উঠতে পারিনি। আপনার লেখা থেকে যা জানলাম তাতে আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো।
আশাকরি শীঘ্রই পড়তে পারবো। ধন্যবাদ…
লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগল। চার্বাক মতবাদ বিষয়ে আমার সংগ্রহে কিছু তথ্য আছে। এখানে শেয়ার করলাম : http://sumitroydipto.blogspot.com/2011/06/blog-post_03.html
:yes:
আগের লিঙ্ক দেয়াতে ভুল হয়েছিল,
http://www.carrbak.blogspot.com
@সাইফুল ইসলাম,
আপ্নের ব্লগ সাইটটি দারুণ! :rose:
কিন্তু কী কঠিন সব ইংরেজী লিখ্সেন! বাপ্রে! :deadrose:
বলেন কি ভাই? ভবানী প্রসাদ সাহু আপনাকে বই উপহার দিয়েছিলেন? আর আপনি সেই বই আবার হারিয়েও ফেলেছেন? খাইছে!!!!
চার্বাক নামে আমার একটা ব্লগ আছে। ইচ্ছে করলে ঘুরে আসতে পারেন। খারাপ লাগবে না আশা করি। 🙂
@সাইফুল ইসলাম, ভবানী প্রসাদ সাহু পেশা সুত্রে বাবার বন্ধু সেহেতু উনাকে আমি জ্যেঠু ডাকি। আর উনি ছোট থেকেই আমাকে স্নেহ করেন। আর এখনও জন্মদিনে কোন না কোন পুরস্কার পাই। আর কি করব ভাই চোরদের জ্বালায় পারি না। আমার শখের সংগ্রহ করা বইগুলি প্রায় সবই ফাঁকা করে দিয়েছে। সময় নিয়ে আপনার ব্লগে যাব। ধন্যবাদ।
@ সুমিত দেবনাথ
আমিও আপনার মত স্মৃতি থেকে একটু লিখি; কেমন হলো দেখুন তো:
চার্বাক দর্শন একটি নাস্তিক বা অনৈশ্বরিক দর্শন। অর্থাৎ জগতের কর্তা হিসেবে ঈশ্বরকে অস্বীকার করে। এরা জড়বাদী। এটা একটা লোকায়াত দর্শন, কারণ ইহলোকই সব। তারা ক্ষিতি, জল, তেজ এবং বায়ু এই চারটি মৌলিক পদার্থ স্বীকার করে। সেজন্য এদেরকে বলা হতো ভূতচতুষ্টয়বাদী। জাগতিক সুখই একমাত্র কাম্য। পার্থিব দু:খই হচ্ছে নরক। দেহের উচ্ছেদই মুক্তি। তারা মানুষের দৃষ্টি অসীম থেকে সসীমের দিকে, আধ্যাত্মিকতা থেকে বাস্তবের দিকে আকৃষ্ট করাতে চাইতো। আনন্দে জীবনটা উপভোগ করার জন্য সকলকে পরামর্শ দিত।
একটা গান আছে- “দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও দাও ফূর্তি কর।” আমরা এই গানকে চার্বাকী গান বলতাম।
কাজী নজরুল ইসলাম, নিজেকে ‘চার্বাক চ্যালা’ বলেছেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়।
@মাহফুজ,
মনে হয় “সাম্যবাদী” কবিতায়।
@শ্রাবণ আকাশ,
আপনি তো ‘মনে হয়’ লাগিয়ে নিজেই সন্দেহের মধ্যে ডুবে আছেন। ‘সঞ্চিতা’ বইটি খুলে দেখুন। আপনার ‘মনে হয়’ ধারণাটি পাল্টিয়েও ‘যেতে পারে’। যেতে পারে শব্দদ্বয়ও সন্দেহজনক।
@মাহফুজ, সুন্দর সারসংক্ষেপ করেছেন। তার জন্য এক কাপ গরম কফি :coffee: তবে এখানে মোকছেদ আলীর কোন কারসাজি নেই তো।
@সুমিত দেবনাথ,
নো, থ্যাংকস, আমি গরম কফি :coffee: খাই না, মুখ পুড়ে যাবার ভয়ে।
কারসাজি, বুজরুকি ধরিয়ে দেয়াই তো মুক্তমনার কাজ। দেখেন ধরতে পারেন কিনা? প্রবীর ঘোষ কেমন করে সব বুজরুকি ফাঁস করে দেন। আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
@মাহফুজ, কফিটা ফিরিয়ে দেওয়ার খুশি হলাম না। অন্তত ঠান্ডা করে খেতে পারতেন। যাইহোক, কারসাজি শব্দটা তত খারাপ না। তাই ফাঁস করার এমন ধান্ধা নেই, তবে বুজরুকি জিনিষটা খারাপ। যদি বুজরুকি করেন তাহলে খোপ করে ধরে ফেলব। আর আমাদের গরম ইন্সপেক্টার রামগড়ুড়ের ছানা তো আছেনই। উনার ভয়ে আমিও ভীত থাকি। 🙁
@সুমিত দেবনাথ,
আপনার লেখা থেকে জবাবটা দিলাম:
ধর্ম নামক ধুর্তামি ফাঁস প্রাচীন যুগেই হয়ে গিয়েছিল চার্বাক দর্শনের মাধ্যমে।
সুমিত দেবনাথ,
লুপ্ত দর্শন নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। :rose:
—
শিরোনাম ও লেখায়– কাণ্ডারি ও চার্বাক শব্দ দুটির বানান ত্রুটি দৃষ্টিকটু। সংশোধন করে দেওয়ার বিনীত অনুরোধ।
@বিপ্লব ভাই, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ঠিক করে দিচ্ছি কান্ডরি বানান আমার দোষে ভূল হয়েছে। আর চার্বাক বানান নিয়ে দন্ধে ছিলাম কারণ বেশ কয়েকটি বইতে পেয়েছি চার্ব্বাক। যদিও আমি জানতাম চার্বাক।
@সুমিত দেবনাথ,
অ্যাঁ!! 😕
@বিপ্লব রহমান, :laugh:
চার্বাক দর্শনের কিছু শ্লোক প্রথম পড়ি আমার এক বন্ধুর ডায়েরীতে। পরে অনন্ত বিজয়ের লেখায় চার্বাক দর্শনের অনেকগুলো শ্লোক পড়েছি সেদিন। আগ্রহীরা এখানে দেখতে পারেন।
@লীনা রহমান,
ইচ্ছা করলে লেখাটি মুক্তমনার পাতাতেও দেখা যায়। ঠিক এখানে বাণী চিরন্তনী-২
@মাহফুজ, জানি।লেখাটা মুক্তমনায় পিডিএফ এ আছে। আমার কম্পিউটারে প্রায়ই পিডিএফ এর ফন্ট লোড নিতে সমস্যা করে সেকথা ভেবেই ঐ ব্লগের লিঙ্কটা দেয়া।
@লীনা রহমান, ভাল করেছেন আমার নেট যা স্লো তাতে মুক্তমনা থেকে পড়তে গেলে আজ রাত পা হয়ে যেত। আপনার দৌলতে অনন্ত বিজয়ের লেখা পড়া হয়ে গেল। অনেক কিছু জানলাম। কফি খান ঠান্ডার মধ্যে :coffee:
ধর্মের সৃষ্টি মানবকতৃকঃ
চার্বাক বিশ্বাস করতেন যে ধর্মকে মানুষ সৃষ্টি করেছে, যাতে পবিত্র কোন দাবীদার থাকতে পারে না । বেদের তিন লেখক ছিলেন – অজ্ঞ, ধূর্ত এবং শয়তান ।
চার্বাক দর্শন ঘুমিয়ে যায় নি। একে অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করা হয়েছিল, সমূলে উৎপাটিত করা হয়েছিল। যদিও সেই কাজটা খুব সহজ ছিল না। চার্বাক দর্শনের প্রভাব এত বেশি ছিল এবং তা এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এর ধ্বংস দুঃসাধ্য ছিল। মাধবাচার্য তাঁর সর্ব্বদর্শন গ্রন্থে বলেছিলেন যে, ‘দুরুচ্ছেদং হি চার্বাকদর্শনম’। কিন্তু এই দুঃসাধ্য কাজটাই ব্রাক্ষ্মণ পণ্ডিতেরা করে ছেড়েছিলেন পরম নিষ্ঠার সাথে। তাঁরা চার্বাকদের সকল রচনাকে এক সাথে জড়ো করে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন প্রবল ঘৃণায়।
জহরলাল নেহেরু তাঁর ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া গ্রন্থে লিখেছেনঃ
‘Among the boks that have been lost is the entire literature of materialism…………… much of the literature of materialism in India was destroyed by the priests and other belivers in the orthodox religion during subsequent periods.’
@ফরিদ আহমেদ, ব্রাক্ষ্মণরা কি করে নি তা বলুন? এরা ভারতের অনেক ইতিহাসও বিকৃত করে রেখেছে। আর এখনও এরা ভারতবাসীকে টুপি পরিয়ে রেখেছে। এরা এতই চালাক সময়ের সাথে সাথে নিজেদের রূপ পরিবর্তন করে।
আজ থেকে ২-২,৫০০ বছর আগে, যখন মানুষের পরিচিত জগৎ ছিল একান্তই ছোট, প্রকৃতি ছিলো রহস্যঘেরা, ভুগোল ছিলো ঠাকুরমার ঝুলি; সেই সময়ে থেকে ভারতে চার্বাক, গ্রীসে এপিকিউরাস এর মতো দার্শনিকেরা দেবতা-দানব অস্বীকার করে যুক্তি এবং বিজ্ঞানের প্রচার করেছিলেন উন্মুক্ত ভাবে সবারমাঝে। এই পর্যায়ে যেতে যে কিপরিমানে মানসিক উত্তরনের দরকার ছিলো তা আজকে কয়েক শতক ধরে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মধ্যে বসবাস করে আমাদের পক্ষে চিন্তা করাই দূরহ।
@সফিক,
শুধু সেটাই নয় তারা তো জীবনের রিস্কও নিয়েছিল বলেই মনে হয় যা বর্তমান কালেও অনেকে নিতে সাহস পাবে না। আচ্ছা , একটা প্রশ্ন- তাদের এহেন কথা বার্তার জন্য তখন কোন হিন্দু মোল্লা তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিল ? এই যেমন মাথা দাম এত টাকা বা অন্য কিছূ? এবিষয়ে কি কিছু জানা যায় ?
@ভবঘুরে, আমার মনে হয় এরা অস্ত্র হাতে ফতোয়া জারী করে নি। অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের বিপরীত মতকে সরিয়ে দিয়েছে।
@সফিক, একদম খাটিঁ কথা বলেছেন। সেই যুগে যে সত্যের সন্ধান হয়েছিল তা ভাবতে অবাক লাগে।
“যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋনং কৃত্বা ঘৃতং পিবেত”-ওয়ালা কোন চার্বাকীর কাজ নয় তো?
@রৌরব, আমার মনে হয় আমার বই চোর সেই নীতির “চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড় ধরা।”
মুর্খ হলে ঠিকই বলি দিত। তবে এরা আসলে “মুর্খ” নয়, এরাই সমাজের “চতুর” শ্রেণী; পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে যাদের কোনো জুড়ি নেই 🙂
শ্লোকগুলোও কি স্মৃতিচারণ থেকে লিখেছেন?
@শ্রাবণ আকাশ, মুর্খ বলে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। আসলে তো এরাই নাটের গুরু।
হ্যাঁ ভাই মুখস্থ যা ছিল তাই দিয়েছি। বইটা থাকলে হয়ত আরও তথ্য সমৃদ্ধ করতে পারতাম।
চার্বা্ক দর্শন নিয়ে আলোচনা করার সব থেকে বড় সমস্যা হল-তার দর্শন সেই ভাবে কেও সংরক্ষিত করে নি-বৌদ্ধ থেকে ব্রাহ্মণ সবাই তাকে গালমন্দ করতে, সেই গালমন্দ করা থেকে ( যে চার্বাক এই বলেছেন তাই সে নিন্দার যোগ্য) , চার্বাক দর্শন উদ্ধার করা হয়। সুতরাং চার্বাক ঠিক কি বলেছেন, সেটা কোনদিনই আর জানা সম্ভব না।
@বিপ্লব পাল, তা ঠিক বলেছেন চার্বাক দর্শন তেমনভাবে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তবে যতটুকু পাওয়া যায় তা মানুষের কাছে তুলে ধরা ভাল। মানুষ যাচাই করুক, কিভাবে ধুর্তরা মানুষের মাথা হাতিয়ে এসেছে যুগের পর যুগ অত্যন্ত সুকৌশলে। মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।