সুযোগ পেলেই আমি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ শার্ট কিনি। আমেরিকার বড় বড় দোকানগুলোতে বাংলাদেশে তৈরি জামাকাপড় দেখলে গর্বে বুকটা ভরে যায়। মেড ইন ইন্ডিয়া, মেড ইন পাকিস্তান, মেড ইন থাইল্যান্ড, এমন আরো আরো সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে। আশ্বস্ত হই। আমরা পিছিয়ে নেই। দেশপ্রেমের ঢেউ জাগে মনে।
কিনে মনে হয় বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের উপকার করছি। আমরা কিনি বলেইতো ওদের রোজগারের ব্যবস্থা হচ্ছে । এরকম অগভীর একটা যুক্তিতে মনটাকে আচ্ছন্ন করে রাখি ।
আজ আমার প্রিয় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ শার্টটা পরতে ইচ্ছে হলো না । আগের যুক্তিটা যে শুধু অগভীর নয়, কপটতায় ভরা, এই সত্যটা নতুন করে উপলদ্ধি করলাম। ‘বেশ্যাবাড়ি না গেলে বেশ্যারাওতো বেকার হয়ে যাবে’ – এমনই অশ্লীল মনে হলো যুক্তিটাকে।
গার্মেন্টস শ্রমিকরা মার খাচ্ছে। মার খেতে খেতে মরে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে মরেছে, ঢাকায় মরেছে। শুধু যে গত ক’দিনেই মরেছে তা নয়, অনেকদিন থেকেই মরছে।
আগুনে পুড়ে মরছে, গুলি খেয়ে মরছে।
এ আর নতুন কি? শ্রমিকদের শোষন না করে কোন মালিক কবে বড়লোক হয়েছে? বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতাইতো অর্থনীতির চালিকা শক্তি! তাইতো দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র সবসময় বড়লোকদের রক্ষার মহান দায়িত্বে নিয়োজিত!
আরে বাবা, এই বড়লোক মালিকরা আছে বলেই তো কিছু করে খেতে পাচ্ছ, এরা না থাকলে তো না খেয়ে মরতে!
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানীখাত গার্মেন্টস সেক্টর। অর্থনীতিতে গার্মেন্টস সেক্টরের অবদান তর্কাতীত। মোট রপ্তানীর শতকরা আশি ভাগ আসে এই সেক্টর থেকে। জিডিপির প্রায় শতকরা চোদ্দ ভাগ। (২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট আয় ডলারের হিসেবে প্রায় তেরো বিলিয়ন ডলার।)(১)
এই অবদানের পেছনে আছে শ্রমিকের ঘাম, অশ্রু আর রক্ত । বিনিময়ে শ্রমিক কী পায়? সামান্য কয়েকটা টাকা, মাসে তিনহাজারের (চল্লিশ মার্কিন ডলারের সমমান) মতো। গত চার বছর ধরে ছিল আরো কম, মাত্র ষোলশ বাষট্টি টাকা। এই বছর আন্দোলনের মুখে সরকার তিনহাজার নির্ধারণ করে দেয়।
এত কম মাইনেতে চলে কি করে? বাঁচে কি করে?
চলে না, বাঁচেও না। আগুন না লাগলেও তারা ধুঁকে ধুঁকে মরে। গুলি না খেলেও তারা কঁকিয়ে কঁকিয়ে মরে। কুকুরের মতো, বেড়ালের মতো। আমরা দেখি না, আমরা শুনি না।
শুধু শুনি যখন আগুন লাগে, যখন তিরিশ-চল্লিশ জন বা তারও বেশি একসাথে মরে। শুধু খবরে আসে যখন রাস্তায় র্যাব নামে, পুলিশ নামে, গুলি চালায়, রক্ত ঝরে, হঠাত করে যখন একসাথে অনেকগুলো মরে।
শুনি না, দেখি না, জানি না – তাদের অশ্রু ঝরে, মাথার ঘাম পায়ে পড়ে, অমানুষিক পরিশ্রমে তাদের রক্ত জল হয়। তারা কাজ করতে করতে মরে, মরতে মরতে কাজ করে।
আজ ষোলই ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী দেশে আজ বিজয় দিবস।
কার মুক্তি? কার বিজয়?
নিশ্চয়ই গার্মেন্ট শ্রমিকদের নয়।
_________________________________
(১) M. Mizanur Rahman and Hammunul Islam, “When Workers are Enraged,” The Daily Star, Dec. 16, 2010, Dhaka. http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=166192
ইরতিশাদ আহমেদ, অনেক ধন্যবাদ আপনার লেখাটার জন্য। পড়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
:yes:
:coffee:
আজ ১৯ ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের উদ্যোগে গারমেন্টস আন্দোলনের নেত্রী মোশরেফা মিশুর রিমান্ড প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে সমাবেশ ও মিছিল রয়েছে। আন্দোলন চলছে, চলবে… হয়তো অনেক কিন্তু রয়ে যাবে, তবুও…
@নিঃসঙ্গ বায়স,
এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
নিঃসঙ্গ বায়স, বিপ্লব রহমান, আল্লাচালাইনা, আসরাফ, ফারুক, স্বাধীন –
সবাইকে ধন্যবাদ লেখায় মন্তব্য করার জন্য।
শোষিত মানুষের অংগঠিত বিক্ষোভ জানিয়ে দেয়, এখনো স্পার্টাগাসের মুক্তি হয়নি। :deadrose:
আপনার লেখাটা হৃদয় ছুঁইয়ে গেলো। সবসময়ই নির্যাতিত মানুষের প্রতিবাদকে সমর্থন করি।
একটা মজার কথা বলি, কেউ কিছু মনে করবেন না আশা করি? এই ব্লগে আমি অনেক চিন্তাশীল, মুক্তমনা মানুষ দেখেছি, আবার চিন্তার সীমাবদ্ধতাও দেখেছি কারো কারো মধ্যে। কিন্তু দুঃখজনক, মুক্তমনাদের অধিকাংশই বিদেশে, আর দেশে যারা, তাদের প্রায় অধিকাংশকেই অতখানি প্রতিবাদী চরিত্রের বলে মনে হয় না। আমি নিজে একটা বাম ঘরানার ছাত্র সংগঠনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। আমি আজ পর্যন্ত অনেক প্রগতিশীল চিন্তার ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছি, যারা মনে করে বর্তমানের বামপন্থী ধারার সংগঠন/ দলসমূহের কাজকে/ কাজের প্রক্রিয়াকে যদি তাদের কাছে ভূল বলে মনেই হয়, তবে তারা কেনো নিজেরা স্বতন্ত্রভাবে স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম করে প্রচলিত অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় না? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর আজো কারো কাছে পাই নি! কেনো যারা প্রতিবাদী হওয়ার কথা বলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা বোঝে, তাদের বড় অংশের মধ্যে এতখানি নিঃস্পৃহতা?! আমি অস্বীকার করিনা যে প্রচলিত বাম সংগঠনসমূহের সকল কাজ/ পরিকল্পনাই সঠিক না। আমি ভিতরে থেকেই জানি, অনেক ক্ষেত্রে এই সকল সংগঠনের অনেক কর্মীদের ভিতরও মুক্তবুদ্ধি চর্চার অভাব রয়েছে। কিন্তু যারা তাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে, তারা কেনো বিকল্প উদ্যোগ গ্রহন করবে না? তাহলে কী এই সমাজ স্থবির হয়ে গিয়েছে অনেক খানি? আজ জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবীর আন্দোলনে সংগঠন বহির্ভূত খুব কম ছাত্রকেই এক্ত্রিত হতে দেখি। মাঝে মাঝে তাই হতাশ হই।
এবার একটু আশার খবর দেই আপনাদের। গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোট শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ করে। এছাড়াও রাজপথে ও বিভিন্ন ব্লগে প্রতিবাদ ক্ষোভ প্রকাশ অব্যাহত ছিলো।
http://www.unmochon.com/?q=node/274
http://www.somewhereinblog.net/blog/dinmojurblog/29288589
http://www.somewhereinblog.net/blog/dinmojurblog/29291096
http://www.somewhereinblog.net/blog/dinmojurblog/29289841
http://www.choturmatrik.com/blogs/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%AE-%E0%A6%9A%E0%A7%8C%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%80/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%95-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%95-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87-
এছাড়াও যতদূর জানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ তারিখে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুবাইয়্যাত ফেরদৌস, অর্থনীতি বিভাগের ডঃ এম.এম.আকাশ স্যারের উদ্যোগে শ্রমিক অসন্তোষ আর এর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয় যেখানে সরকার, বি.জি.ই.এম.এ আর গার্মেন্টস মালিকদের বর্তমান ভূমিকার সমালোচনা করা হয় এবং এই নিয়ে সরকারকে বুদ্ধিজীবি মহল থেকে চাপ দেওয়ার কথাও বলা হয়। আর বিজয় দিবসে এই মূল পোস্টের সমভাবের মত স্ট্যাটাস অনেকেই দিয়েছিলো। আবার এদের অনেককে কট্টরপন্থী আওয়ামীলীগের ব্যক্তিদের থেকে অনেক কটাক্ষও শুনতে হয়েছে।
সবমিলিয়ে বলা যায়, এখনো আশার আলো নিভে যায়নি, সবখান থেকে প্রতিবাদের কন্ঠস্বর থেমে যায় নি, বরং বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে ধীরে ধীরে আবারো জেগে উঠতে শুরু করেছে। বিশ্ব মানবের বিবেক জাগবেই। এটা সময়েরই দাবী। মানবতার জয় অনিবার্য।
@নিঃসঙ্গ বায়স, :yes:
সত্যিই তো , কিসের বিজয়? আপনার পোস্ট পড়ে আমারো গা জ্বলে যাচ্ছে। মনে হয় , গার্মেন্ট মালিকদের কেন রিমান্ডে নেয় না? ওদেরকে কেন ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে গুলি করে না? তাহলেই বোধ হয় বিজয় আসবে। কিন্তু…..
জ্বালাও পোড়াও কি সব সমস্যার সমাধান? আসলেই কি বিজয় আসবে? কেউ কি একটু আশার কথা শোনাতে পারেন , কিভাবে বিজয় আসবে?
ইরতিশাদ ভাই আমার কষ্ট লাঘব করলেন। আমি এই ব্লগে ৪ দিন আগেই লিখেছিলাম মধ্যবিত্ত বাংলাদেশীদের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে, শ্রমিকদের খুন করা হচ্ছে, তাদের নেতারা জেলে, লকআপে আটকে ফ্যাক্টরির মধ্যে শ্রমিকরা পুড়ছে-অথচ সবাই নীরব। সদালাপের মত ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল সাইটে আবার বামপন্থী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নতুন থিসিস বাহির হইতেছে যখন এই হতভাগা শ্রমিকদের সাথে থাকা ছিল সব থেকে বেশী দরকার। আমি আসলে ক্ষোভে এবং দুঃখে এদিকে আসা কমিয়ে দিলাম।
মানুষকে ভালো না বেসে যারা দেশ বা আদর্শ বা ধর্মকে ভালোবাসে তাদেরকে আমি কোনদিনই পছন্দ করি না। করার প্রয়োজন ও দেখি না।
@বিপ্লব পাল,
অনেক ধন্যবাদ বিপ্লব। আপনার “প্রশ্ন” পড়েই আমার মনেও অনেক প্রশ্ন জেগেছিল। এই লেখার পেছনে সেটাও একটা কারণ। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
@বিপ্লব পাল,
দুঃখ জনক হলেও এটাই সত্য যে মানুষের লাশ বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে সহজলভ্য বস্তু। তাই কিছুদিন পর পর আগুনে পুরে, লঞ্চ ডুবে, ট্রেন দুর্ঘটনায়, বাড়ী/পাহাড় ধ্বসে, শ্রমিক আন্দোলনে মানুষের মৃত্যু হচ্ছেই, কিন্তু কোন পরিবর্তন নেই। তারচেয়েও চরম হতাশা হচ্ছে পরিবর্তন যে প্রয়োজন এটাই অধিকাংশে অনুধাবন করে না। আবার পরিবর্তনের প্রয়োজন দু’একজন অনুধাবন করলেও তারা ভাবে অন্য কেউ এসে তাঁদের জন্য পরিবর্তন করে দিবে। নিজে কিছু করবেন না।
আপনি অবাক হয়েছেন যে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমিক আন্দোলন। আসলে সেটা ঠিক নয়। আমাদের দেশে এর চেয়েও বড় আন্দোলন হয়েছে, আরো বেশি শ্রমিক মারা গিয়েছে, কোন পরিবর্তনই হয়নি। হতাশার কথা স্বীকার করি। এ কারনেই মানুষ বোধহীন হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিনই যখন নুতন নুতন খবর আসে তখন কে আর পুরোনো খবর নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই দেখুন না শ্রমিক আন্দোলনের খবর শেষ হতে না হতেই আরো শ্রমিকের মৃত্যু।
এখন আপনার মত আমারো প্রশ্ন হচ্ছে এই মৃত্যু গুলো তো সমস্যার উপসর্গ মাত্র। মূল সমস্যাকে সমাধান না করলেতো এই উপসর্গ দেখা দিবেই কিছু দিন পর পর। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই তো মধ্যবিত্তের নীচেই। তাহলে তাঁদেরকে সংগঠিত করা সম্ভব কেন হচ্ছে না। আমাদের বাম নেত্রীত্ব তো পূঁজিবাদকে গালি দেওয়া ছাড়া, পাশ্চাত্যকে গালি দেওয়া ছাড়া, লেনিন/মাওএর আদর্শের বাহিরে যেতে পারছে না। যেতে যে হবে সেটাই তো অনুধাবন করতে পারে না। তাহলে এই শ্রমিক বলেন আর নিম্নবিত্ত বলেন এদেরকে কে সংগঠিত করবে? এরা নিজেরা তো সংগঠিত হয়ে যাবে না আপনা আপনি।
বিনপি/আওয়ামীলিগ/এরশাদের মত দল দিয়ে যে নিম্নবিত্তের উন্নতি হবে না সেটা সবাই বুঝলেও যে নুতন একটি দল নিয়ে সামনে আসবে সেরকম কোন যোগ্য নেতৃত্ব নেই। আজ ব্লগে ব্লগেই যদি একটি তৃতীয় শক্তির রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা করেন কাউকেই পাশে পাবেন না। রাজনীতি নষ্ট, তাই কেউ আসবে না। কিন্তু এই নষ্ট রাজনীতি কিভাবে পরিষ্কার হবে যদি সবাই দূরে থাকি সেটা কেউ বলে না। যতদিন মানুষ এটা না বুঝতে পারবে, এভাবেই চলতে থাকবে। দেখা যাক কত মৃত্যুর পর মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে।
বিপ্লব পাল একটি কমেন্ট করবেন। প্রত্যাশায় আছি।
উপরন্তু ১৪ ডিসেম্বর রাত ১;১৫ মিনিটে কলা বাগানের বাসা থেকে বারজন গোয়েন্দা পুলিশ গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গার্মেন্টস ওয়ার্কার ইউনিটি ফোরাম এর প্রেসিডেন্ট মোশরেফা মিশুকে বেআইনীভাবে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে কোন ওয়ারেন্ট দেখাতে পারেনি এবং তাকে তার প্রয়োজনীয় হাঁপানির ঔষধ পর্যন্ত নেওয়ার সময় দেয়নি।
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে মিশুর গ্রেফতার আর বিজয় দিবসে সাকা চৌধুরীর গ্রেফতারের পার্থক্য করি কীভাবে? :-X
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ মোশারেফা মিশুর গ্রেফতারের খবরটা দেয়ার জন্য। তাঁর মুক্তির জন্য আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। মিশুর জন্য রইলো শুভকামনা আর স্যালুট।
বাংলানিউজ২৪ – এ মিশুর গ্রেফতার হওয়ার খবর।
@গীতা দাস,
পার্থক্যতো আছেই। সাকার গ্রেফতারের খবরের আড়ালে কেমন সুন্দরভাবে মিশুর গ্রেফতারের খবরটা চাপা পড়ে গেল, দেখলেন না?
লেখককে ধন্যবাদ গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে সময়পোযোগী লেখাটার জন্য। বিজয় দিবসের আনন্দ আবেগে মনে হয় শ্রমিকদের আগুনে পুড়ে মরার নিদারুন বিষয়টি চাপা পরে যাচ্ছে। আমরা সবাই এই ব্যাপারে কেমন যেন নির্বিকার।
স্বপন মাঝির কথায় বলতে হয়
এরকম লেখা আরও চাই। :yes:
@ব্রাইট স্মাইল্,
পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
:yes: :yes: :yes:
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ সৈকত।
কি বলব বুঝতে পারছিনা।আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে এসব।কিন্তু এই শোষণ, এই মানবেতর জীবনযাপনের ব্যাপারটা দেখে আমরা এতই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে সবসময় চোখেও পড়েনা। কখনো চোখে পড়ে, তা নিয়ে আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করে যাই, দুঃখ প্রকাশ করে যাই, বেদনার্ত হই- কিন্তু কিছুই বদলায়না। 😥
@লীনা রহমান,
কিছুই বদলাবে না। আমরা (অসংগঠিত) কথা বলছি, সংগঠিত শক্তির বিরুদ্ধে। আর এই সংগঠিত শক্তির সর্বোচ্চ প্রকাশ রাষ্ট্র। লেখকের মন্তব্যঃ
আপনারা কেঊ কি কখনো শুনেছেন, পুলিশ শ্রমিকের বেতন না দেবার অভিযোগে মালিককে ধরে লাঠি-পেটা করছে, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
শ্রমিক খুন হ’লে পরে মালিক জামিন পায় কিন্তু মালিক খুন হ’লে? আর সুশীল সমাজ? প্রচার মাধ্যম?
আগে আমাদের মত ক’জনার কথা বলবার জায়গাটুকুও ছিল না। এখন সে জায়গাটুকু তৈরী হয়েছে। আমরা আর কিছু না পারি, একটা জনমত তো তৈরী করতে পারি।
@লীনা রহমান,
ধন্যবাদ, লীনা। বদলানোর আকাংখাটাই কিন্তু বদলানোর পূর্বশর্ত।
@লীনা রহমান,
ক্ষোভটা জায়গায় গিয়ে প্রকাশ করলে নিশ্চই কিছু না কিছু হবে। এভাবে ভীতু কাপুরূষের মত ব্লগে ব্লগর ব্লগর করে কিছুই হবে কি শ্রমিকদের? দুঃখ প্রকাশ করলে শ্রমিকদের পাশে দাড়িয়েই করুন,দূরে নয়। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনি সেখানে আছেন সেই যায়গাটা অনেক শক্তিশালী, ছাত্রদের মাঝে শ্রমিক অধিকার, বৈষম্য বিষয়ে আন্দোলন তৈরী করুন, একমাত্র তারূণ্যের শক্তির কাছেই সকল শক্তি মাথা নত করতে পারে। সরকারের কাছে এই ছাত্র আন্দোলন অনেক গুরুত্ববহ হয়। এভাবে নাঁকি কান্নার মত না কেঁদে বাস্তব চিন্তা মাথায় নিয়ে কিছু করুন। আমি আপনি সারা জীবন এখানে অসহায় ব্লগর ব্লগর করে গেলে শ্রমিকদের কোনই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
ধন্যবাদ।
@মুহাইমীন, আপনার পরামর্শ সাদরে গৃহীত হল।কিন্তু পরামর্শটা মনে হয় সকলের জন্যই প্রযোজ্য।আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছেনা দেখে যে নিজের হতাশা ও দুঃখ প্রকাশ করা যাবেনা এমন তো কোন কথা নেই, তাইনা?
:yes:
@লীনা রহমান,
অন্তরে কোন কিছু করার আকাঙ্খাটা জিইয়ে রেখে থাকলে কোন না কোন সময় ঐ অথর্ব ভয় ভেঙ্গে ভেতরের পৌরুষ অবশ্যই জেগে উঠবে যদি হৃদয়কে কলুষমুক্ত রাখা যায়। কারণ, হৃদয় কলুষিত হয়ে গেলে মানুষের জন্য দায়বদ্ধতা, মমত্ববোধ উঠে যায়। আশা করি আমরা সকলে মিলে অবশ্যই সমাজের মঙ্গলকর কিছু করব।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইরতিশাদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির জন্য। ঠিকি বলেছেন – কার মুক্তি? কার বিজয়? নিশ্চয়ই গার্মেন্ট শ্রমিকদের নয়।
@অভিজিৎ,
অনেক ধন্যবাদ, অভিজিৎ, সহমর্মিতার জন্য।
@ইরতিশাদ, 🙁
সব কথার শেষ কথাটা এই। এইটুকু আমরা য্তদিন উপলব্ধি করতে না পারবো, ততদিন রঙিন পতাকা হাতে মধ্যবিত্ত বাতাসে ভেসে বেড়াব। আর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ দেবে করতালি।
@স্বপন মাঝি,
:yes:
@স্বপন মাঝি,
ধন্যবাদ পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য।
ইরতিশাদ ভাই, অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। আজকের এই বিশেষ দিনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের কথাগুলো আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া খুব জরুরী ছিল। জানি এখানে বসে ‘মধ্যবিত্তীয়’ কুমীরের কান্না জাতীয় দুচারটা কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবো না, তারপরও ……
পুঁজিবাদের এই অমোঘ বানীগুলো শুনতে শুনতে আমরা এমনি অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে এগুলোকে আর প্রশ্নও করি না।
@ ইরতিশাদ আহমেদ,
খুব ভাল লিখেছেন। :yes:
শুধু গার্মেন্ট শ্রমিক নয়, আমাদের দেশের সব শ্রমজীবী মানুষকেই মানবেতর অবস্থায় জীবন কাটাতে হয় আর কোন সময় দুর্ঘটনা কিংবা গুলিতে বেঘোরে মরতে হয়। কিছুদিন আগে পড়লাম বাড়ী তৈরীর কাজ করতে গিয়ে এক শ্রমিক মই থেকে পড়ে মারা গেছে।
কোন সময় এর চাইতে ভাল অবস্থা ছিল তাও মনে হয়না। পাশ্চাত্যের দেশগুলুতে মৌলিক মানবাধিকার ও পেশাগত নিরাপত্তার আইনী নিশ্চয়তা আছে, এবং সাধারন জনসংস্কৃতিতে মানুষের মৌলিক সম্ভ্রমের স্বীকৃতি আছে। আমাদের মত দেশে সেসবের কোন বালাই নেই। আমাদের দেশে যেটা আছে সেটা পুঁজিবাদ নয়, প্রাক-পুঁজিবাদ কিংবা পুঁজিবাদের বর্বর সংস্করন। শ্রমিকদেরকে শুধু অর্থনৈতিকভাবে শোষন করা হয়না, নিপীড়ন আর নির্যাতনও করা হয়।
এই অমর বানীর কোন তুলনা হয়না। এদেশে এই কথাটা খুব শোনা যায়। এই তিন দিন আগেই টেলিভিশনে শুনলাম, “Rich people create jobs. A poor person never created a job.” বুঝুন ঠেলা! :-Y
তখন আমার বলতে ইচ্ছে করে, “Poor people do all the work. A rich person never did any work “
@মোঃ হারুন উজ জামান,
ভাল বলেছেন। অফিস থেকে ফেরার পথে রেডিও টক শো শোনা হয় মাঝে সাঝে। সেখানেই গতকাল শুনলাম শন হ্যানিটি গলা কাঁপিয়ে একজনকে জ্ঞান দিচ্ছেন – “Rich people create jobs. A poor person never created a job.”
ইচ্ছে হচ্ছিলো ফোন করে বলি, ‘পুয়োর পিপল এন্ড মিডেল ক্লাস আর দ্যা ব্যাকবোন অফ ইয়োর সশাল স্ট্রাকচার, বাই ইউসিং দেম রিচ পিপল গেটস মানি, ইউ পিগ!’
এত নির্লজ্জ ভাবে ধনবানদের সাফাই গাইছে আজকের আমেরিকান কনজারভেটিভ রিপাবলিকানরা যে অবাকই হতে হয়। কোথাও কোন ব্যালেন্স নেই।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
কথাটার মধ্যে কিছুটা সত্য অবশ্যই আছে যে পুজি ছারা চাকরী সৃষ্টি করা যায় না। কিছু মাত্র লোক উদ্যোগী হয়-সেটাও ঠিক আছে। কিন্ত যেটা এরা ভুল করছে সেটা হচ্ছে চাকরী সৃষ্টির পুজিটা কেন ব্যাক্তিগত উদ্যোগ থেকে আসবে?
এরকম এরা ভাবাতে বাধ্য করছে, কারন সমাজতান্ত্রিক চাকরি, অর্থাৎ রাষ্ট্রের পুজিতে চাকরি তৈরীতে সবাই ব্যার্থ।
তাহলে কি ব্যাক্তিগত পুজিই ভবিষ্যত?
আর কি কোন ব্যাতিক্রম আমরা পারি না?
একটা ভাল ব্যাতিক্রম হচ্ছে সমষ্টি মালিকানা বা কোওপারেটিভ পুজি-যা রাষ্ট্র একটি গ্রুপকে দিতে পারে। এক্ষেত্রে পুজি ব্যাক্তিগত মালিকানার মতন দক্ষ বা সচল না হলেও কাজের হবে।
আমি ত সেই জন্যেই বহুদিন থেকে বলে আসছি যেকোন কোম্পানীর ৫০% যদি শ্রমিকদের মালিকানা থাকে আর বাকী ৫০% থাকে ইনভেস্টরদের কাছে, সেই কোম্পানী অনেক ভাল চলবে।
@বিপ্লব পাল,
এরকম পার্সেন্টেজ না, পার্সেন্টেজটা হবে ঝুলন্তঃ পরীশ্রমের ভিত্তিতে, যে যত পরিশ্রম করবে তাকে সেই পার্সেন্টেজে লভ্যাংশ দেওয়া হবে। তাহলেই সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।
@মুহাইমীন,
আর ক্ষতি হলে?
@রৌরব,
ক্ষতির জন্য যে পলিসি দায়ী সেই পলিসি মেকার ক্ষতির ভাগ বহন করবে।সকলেই তার পরিশ্রম অনুযায়ী এই ক্ষতির ভাগ নেবে তবে ক্ষতির জন্য বেশী দায়ী ব্যক্তি বেশী দায়ভার নিতে বাধ্য তা না হলে ন্যায়সঙ্গত বিচার হল না।( আমি এখনও ব্যবসায়ে নামিনি তাই এই বিষয়ে ভাসা ভাসা কথা বলা ছাড়া বাস্তব ভিত্তিক সমাধান আমি ঠিক বলতে পারব না বলে দুঃখিত)। তবে প্রত্যেকের একটি নূন্যতম মজুরী থাকবে বলে আমার ধারণা, কারণ, লাভ হোক আর ক্ষতি হোক প্রত্যেকে একটি নূন্যতম পরিশ্রম করে।
@বিপ্লব পাল,
এরকম তো আছে। যেমন অনেক আইনী ফার্মের আইনজীবিরাই যৌথ মালিক। অবশ্য আইনজীবিরা পরিচিত অর্থে শ্রমজীবি নন, কিন্তু মূল কথা হল কর্মী মালিকানায় প্রতিষ্ঠান নেই তা নয়। আমাদের দেশের শ্রমিকদের একেবারেই পুঁজি নেই, কাজেই সে কথা অবশ্য আলাদা।
@বিপ্লব পাল,
“Rich people create jobs. A poor person never created a job.”
না, এই কথাটার মধ্যে তেমন কোন সত্য নেই। কেন নেই সেটা নীচে আলোচনা করছি।
এই কথাটা অবশ্যই সত্যি। কিন্তু সেই পুঁজি বড়লোকদের ব্যাক্তিগত পকেট থেকে আসেনা।
কোন নুতন ব্যাবসা যখন শুরু হয়, তখন ব্যাবসায়ী নিজের পকেট থেকে পুরো টাকা দিয়ে সেটা শুরু করেননা। তিনি নিজের পকেট থেকে সামান্য টাকা দেন; বিনিয়োগের টাকার সিংহভাগ আসে ব্যাংকের লোন অথবা ভ্যান্চার কেপিটালিস্টদের কাছ থেকে। ব্যাবসায়ের এই উদ্যোক্তা বা এন্টারপ্রেনার, যিনি নুতন কিছু চাকরি সৃষ্টি করবেন, তিনি নিজে তখন মোটেই বড়লোক নন (ভবিষ্যতে হয়ত বড়লোক হবেন)। তিনি তখন একজন মধ্যবিত্ত।
পরে যখন ব্যাবসা দাড়িয়ে গেল, করপোরেশন হয়ে গেল, তখন ব্যবসা বাড়ানোর জন্য যে অতিরিক্ত পুঁজি লাগে, সেটা জোগাড় হয় বাজারে স্টক ছেড়ে। সেই পুঁজির মালিক স্টকহোল্ডাররা অধিকাংশই বড়লোক নন; তারা অধিকাংশই মধ্যবিত্ব চাকুরীজীবী। আমাদের সেই ব্যাবসায়ী ভাই (অথবা বোন) ততদিনে বেশ বড়লোক; কিন্তু তার ব্যাক্তিগত পকেট থেকে ব্যাবসায়ে টাকা বিনিয়োগ করছেননা। আমি যে ব্যাবসায়ের জীবন চক্র (life cycle) বর্ননা করলাম, সেখানে ভ্যান্চার কেপিটালিস্টরাই একমাত্র বড়লোক এবং চাকরী সৃষ্টিতে তাদের ভূমিকা সেই মধ্যবিত্ত এন্টারপ্রেনারের নীচে।আর পুঁজির সিংহভাগত আসছে মধ্যবিত্তের কাছ থেকেই। তাহলে একমাত্র বড়লোকরাই চাকরী সৃষ্টি করছে, সেই কথাটা হয় বিশাল মূর্খতা নাহয় আপনার ভাষায় “ঢ্যামনামো।”
আর একটা কথা। পুঁজি আর শ্রমের মধ্যে একটা সিমবায়টিক সম্পর্ক আছে। পুঁজি যেমন শ্রম সৃষ্টি করছে, তেমনি শ্রম নুতন মুল্য সৃষ্টি করে পুঁজি তৈরী করছে। রক্ষণশীলরা মতাদর্শগত অন্ধত্বের জন্য এই কথাটা বোঝেননা।
আপনার এই ধারনাটা ভাল। এটা বহুলপরিচিত নয়; কিন্তু একদম নুতনও নয়। যারা ফ্লোরিডাতে থাকেন, তারা যেই দোকান থেকে সাধারনত গ্রোসারী কিনেন সেই Publix হল একটা worker-owned corporation. Black & Veatch, যারা যন্ত্রপাতি তৈরী করে, তারাও শ্রমিক মালিকানাধীন করপোরেশন। তাছাড়া এদেশের ক্রেডিট ইউনিয়নগুলো, ড: ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংকের বিজনেস মডেল একই এপ্রোচের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মডেলটার আরো প্রসার দরকার আছে। সেটা কি প্রক্রিয়ায় করা যাবে সেটা নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনার দরকার আছে। তবে এটা ঠিক সরকার এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিলে, বিশেষ করে এই দেশে, তাতে হীতে বিপরীত হবে। যাই হোক, এই বিষয়ে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রবন্ধ লেখার আশা রাখি।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
সেজন্যই বোধহয় “কথাটার মধ্যে কিছুটা সত্য অবশ্যই আছে” বলা হয়েছিল।
কিন্তু ব্যাঙ্ক আবার লোন দিতে চায় তাদেরই যাদের লোন ফেরত দেবার ক্ষমতা আছে (অর্থাৎ বিত্তবান)। এ জন্যই তো ক্ষুদ্র ঋণের ধারণার জন্ম। এটা ক্যাচ ২২ এর ব্যাপার। বাংলাদেশে এর আর এক দিক আছে। এখানে বিত্তবান না হয়েও যাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক যোগসূত্র আছে তারাও ঋণ পেতে পারে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, আর এরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঋণখেলাপী হয়ে বড়লোক হয়ে যায়। একজন মধ্যবিত্ত যার কোন রাজকনৈতিক প্রভাব নেই সে নিয়ম মাফিক খেলে কখনও শিল্পের মালিক হতে পারবে বলে মনে হয় না, যদি না তার কোন বড়লোক আত্মীয় বা বন্ধু ঝুকি নিয়ে তাকে টাকা ধার দেয় বা লোনের গ্যারান্টর হয়। আর বাংলাদেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টএর ধারণ নেই বলে মনে হয়। এখানে কাল টাকা বানাবার লোভ আর রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ইত্যাদি কারণে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিজম ওম্ভব নয় বলেই আমার মনে হয়।
@অপার্থিব,
“বিনিয়োগের টাকার সিংহভাগ আসে ব্যাংকের লোন অথবা ভ্যান্চার কেপিটালিস্টদের কাছ থেকে।”
কিন্তু এই বিনিয়োগের টাকাটা সরাসরি অর্থে চাকরী “সৃষ্টি” করেনা, ব্যাবসাটাকে সাপোর্ট করে অথবা বলা যায় ব্যাবসাটার জন্য একটা প্রয়োজনীয় উপাদান। চাকরী সৃষ্টির প্রত্যক্ষ কারণ হলেন উদ্যোক্তা, যিনি তার ব্যাবসা জীবনের প্রথম দিকে বড়লোক নন। তিনি বড়লোক নন বলেই তাকে (১) ব্যাংক, ভ্যান্চার কেপিটালিস্ট, এন্জেল ইনভেস্টারের কাছ থেকে কিংবা (২) আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবের হাতে পায়ে ধরে অথবা নীজের সমস্ত সন্চয়, সহায় সম্পত্তি উজাড় করে দিয়ে গলদঘর্ম হয়ে প্রাথমিক পুঁজিটা যোগাড় করতে হয় (আমার জানামতে অধিকাংশ নুতন ব্যাবসা দ্বিতীয় পদ্ধতিতেই শুরু হয়)।
আমার মনে হয় পুঁজির উৎস = বড়লোক = উদ্যোক্তা, এই ভুল সমীকরনটাই “বড়লোকরাই চাকরী সৃষ্টি করে,” এই ভুল ধারনাটার পিছনে কাজ করছে।
এটা সত্যি। সেজন্য অধিকাংশ নুতন ব্যাবসা ব্যাঙ্কের লোন ছাড়াই শুরু হয়, কারন উদ্যোক্তারা তখন বিত্তবান নন। এদের মধ্যে যারা লোন পান, তাদেরকে ঠিক বিত্তবান বলা যায় কিনা সেটাও তর্কসাপেক্ষ; এদেরকে উচ্চ মধ্যবিত্তও বলা যেতে পারে।
একমত। বাংলাদেশ এটা প্রাক আধুনিক, প্রাক গণতান্ত্রিক, প্রাক পুঁজিবাদী দেশ। আমরা যেসব বিশ্লেষণ করলাম, সেগুলোর কোনটাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খাটবেনা।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
আপনার এই ধারনাটা বই পড়া। সত্য না। ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের কাছ টেকে টাকা পাওয়া এঞ্জেল ইনভেস্টমেন্টের পরে। এঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট যেকোন উদ্যোগপতির পকেট থেকেই যায়। যার ব্যাঙ্ক থেকে নিতে গেলে কোল্যাটেরাল দিতে হয়। যাইহোক না কেন, পকেটের জোর না থাকলে ব্যাবসা এখানেও শুরু করা যায় না। ব্যাঙ্ক কোল্যাটেলার ছাড়া লোন দেবে না।
এঞ্জেলে ইনভেস্টমেন্টের পড়েও, যে ভেঞ্চার ফান্ড আসবে তার মানে নেই। আমি জীবনে একবার এঞ্জেল ফান্ডিং থেকে স্টার্টাপ করেছি, ভেঞ্চার ফান্ড আসে নি। ফলে সেই ব্যাবসা হয় নি। বর্তমানে নিজেই ফান্ডিং করে স্টার্টআপ চালাচ্ছি। প্রায় একবছর লাগলো ব্রেইক ইভেন করতে।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
ভাল লাগল Publix এর কথাটা পড়ে। কম পুঁজির মানুষের সমন্বয়ে এরকম আরো উদ্যোগ গড়ে উঠতে পারে। Publix এর সূত্রে উইকিপিডায়ায় আরো এরকম প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা খুঁজে পেলাম।
@মোঃ হারুন উজ জামান, আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@বন্যা আহমেদ,
আপনার কথা Poor people do all the work. A rich person never did any work “
একদম ঠিক :yes:
@বন্যা আহমেদ,
বন্যা, ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
তবুও প্রশ্ন করার দরকার আছে, ইস্যুগুলো পুরোনো হলেও সামনে নিয়ে আসার প্রয়োজন আছে। কঠিন সত্য অনেক সময় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়।
দফায় দফায় সরকারি চাকুরিজীবিদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে, আর শ্রমিকদের মাসিক বেতন তিন হাজার টাকা। :clap2: :clap2:
বিভিন্ন ফোরামে যেতেই আজ দেখি শুধু বিজয় দিবসের শুভেচ্ছার বন্যায় ফোরামগুলো ধূয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে এটাই প্রথম, মানে এই যে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছার ব্যাপার-স্যাপার। এর আগে কেউ বলেছে বলে মনে পড়ে না। দেশে থাকতে আওয়াজটা ভেসে আসত রাজনৈতিক দলের মিছিল থেকে।
তো সবার শুভেচ্ছার জবাবে ঐ একই কথা আমিও বলেছি- কিসের বিজয় বলেন তো?
উত্তর নাই!