এখন থেকে চল্লিশ বছর আগে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটেছিল এই ধরণীতে। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ নামের এক উপেক্ষিত জনপদের সহজ সরল মানুষগুলো হঠাৎ করেই মুক্তির জন্য ক্ষেপে উঠেছিল। মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে সমস্বরে তারা জানিয়েছিল তাদের স্বাধীনতার অদম্য দাবী। কিন্তু চাইলেইতো আর স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। একে অর্জন করে নিতে হয়। দিতে হয় রক্তস্রোত, লড়াই করতে হয় আমরণ, বিপন্ন আর বিপর্যস্ত করতে হয় প্রাণ। তবেই না আসে স্বাধীনতা, শোনা যায় মুক্তির সুমধুর জয়গান।
এই স্বাধীনতার জন্যে, এই মুক্তির গানের জন্যেই বজ্রকঠিন শপথ নিয়েছিল একাত্তরের বিস্ময়কর এক প্রজন্ম। এই প্রজন্ম তাদের প্রথম তারুণ্যে ভালবাসার রমণীর হাত ধরার আগেই হাতে তুলে নিয়েছিল মারণাস্ত্র। এই প্রজন্মের অসংখ্য তরুণ কোনোদিন জানতেই পারে নি যে, কেমন লাগে ভালবাসার মানুষের চোখে চোখ রাখতে, কী রকম অনুভূতি হয় নিজের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরতে, কী ধরনের আনন্দে মানুষ ভেসে যায় নাতি নাতনির হাত ধরে হাঁটার সময়। তার আগেই দেশ আর দেশের মানুষের জন্য সব ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল তারা অচিন কোনো না ফেরার দেশে।
একটি দেশকে জন্ম দিতে গিয়ে একাত্তরে কত কত অসংখ্য তরুণ প্রাণ হারিয়েছে এ দেশের কত কত অজানা অচেনা জায়গায়। দেশকে ভালবেসে লোকচক্ষুর অন্তরালে হারিয়ে গিয়েছে কত শত তাজা প্রাণ। তাঁদের শরীরের রক্ত নির্যাস দিয়েই শ্যামল থেকে শ্যামলতর হয়েছে এই সবুজ ভূখণ্ড। এদের রক্ত ঋণে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছি আমরা চিরতরে। এই ঋণ বড় শক্ত ঋণ। আমাদের জন্যে ভালবাসার একটি নিজস্ব ভূখণ্ড দিয়ে গিয়েছে তারা, দিয়ে গিয়েছে গায়ে জড়ানোর জন্য লাল-সবুজ রঙের অসাধারণ একটুকরো মায়ামাখানো বস্ত্রখণ্ড।
মাত্র একটা প্রজন্ম আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে সীমাহীন সাহস দেখিয়েছে, শৌর্যবীর্য দেখিয়েছে, যে দৃশ্যমান দেশপ্রেম দেখিয়েছেন তার তুলনা মেলা ভার। মৃত্যুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে, তার কোলে মাথা রেখে তারা অনবরত জীবনের গল্প লিখে গিয়েছে আমাদের জন্যে।
চাপিয়ে দেওয়া একটি অসম যুদ্ধে যে বিপুল বিক্রম নিয়ে তারা লড়েছে তার তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এই সমস্ত অসমসাহসিক বীরদের কথা আমরা প্রায় সময় বলি ঠিকই, কিন্তু কখনোই হয়তো উপলব্ধি করি না যে, ঠিক কীসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাদেরকে, ঠিক কতখানি কষ্টসাধ্য ছিল তাদের যুদ্ধকালীন সময়গুলো, কতখানি জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছিল তাদেরকে বারুদ গন্ধমাখা সময়ে।
আমাদের পূর্বপুরুষ এই সমস্ত বীরপ্রাণদের জন্যে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের মানুষদের বুকের সবটুকু ভালবাসা ঢেলে দিলেও শোধ হবে না তাঁদের রক্তের ঋণ।
আজকের এই বিজয়ের দিনে তারা নিশ্চয় চুপি চুপি আসবে তাদের প্রিয়তম জন্মভূমির টানে। দেখতে চাইবে কেমন আছে তাদের প্রিয়তম দেশ, কেমন আছে তাদের স্বপ্নের উত্তর পুরুষেরা। গভীর ভালবাসা নিয়ে উঁকি দিয়ে দিয়ে তারা দেখবে প্রতিটি ঘর, প্রতিটি বসত, প্রতিটি মানুষের মুখ।
কোনো বিষাদ, কোনো কান্না দেখে যেন কষ্ট না পায় তারা। তাদের প্রতি ভালবাসায় চোখের কোণে যে অশ্রুটুকু জমা হয়েছে, সেটুকু্কেও আলতো ছোঁয়ায় মুছে নিয়ে হাসিমুখে তাদেরকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানাতে হবে যে। বুক ভরা ভালবাসায় বলতে হবে যে, আমরা তোমাদের কোনোদিন ভুলবো না, ভুলতে পারবো না কখনই।
httpv://www.youtube.com/watch?v=TumNK7QgYYU&feature=related
httpv://www.youtube.com/watch?v=_brRL0omYiQ&feature=related
:yes: :yes:
:coffee:
ফরিদকে ধন্যবাদ বিজয় দিবসের আবেগঘন লেখাটার জন্য, এবং অবশ্যই হৃদয়ছোঁয়া গানদুটোর জন্য।
মৃত্যুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে…জীবনের গল্প আজো লিখে চলেছেন বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষেরা। কাঙ্খিত মুক্তি যদিও আসে নি। দেশপ্রেম মানে দেশের মানুষের জন্য প্রেম, যেন ভুলে না যাই।
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
আজকের বাংলাদেশ দেখে তারা কষ্ট পাবে না এটা কি সম্ভব ফরিদ ভাই? ৭১ সালে দাঁড়িয়ে তাদেরকে চার দশক পরের বাংলাদেশের কথা বললে তারা তখন কী বলতেন? একটা নতুন দেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জগুলো যে এতদিন পরেও আমাদেরকে এভাবে তাড়া করে ফিরবে সেটা কী তারা জানতেন?
দুঃখিত ফরিদ ভাই, বিজয় দিবসে এই কথাগুলো না বললেই হয়তো ভালো হত, কিন্তু তারপরও না বলে পারলাম না।
[ স্বপন মাঝির সাথে একমত, আমরা ৭১ এ হঠাৎ করে ক্ষেপে উঠিনি (হয়তো আপনি সাহিত্য করে বলেছেন), সেই ৫২ থেকেই বোধ হয় এর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম]
@বন্যা আহমেদ,
এখানে আমি ইতিহাস লিখি নি। বিজয় দিবসে শুধু আবেগটুকু প্রকাশই মূখ্য ছিল। সেটা করতে গিয়ে স্বপন মাঝি যেভাবে ইতিহাসের জ্ঞান দিল তা দেখে মোটামুটি টাশকি খেয়ে গেছি।
@ফরিদ আহমেদ, :laugh:
ফরিদ,
বলেছেন তো ঠিক, ‘চোখ থেকে মুছে ফেলো অশ্রুটুকু’ কিন্তু পারলাম কই? বারেবারে চোখের পাতা ভিজে উঠে। হাত অবশ হয়ে আসে লিখতে পারিনা। এ মাসটায় খুব ব্যস্ত থাকি। আমি জানি আমার এলাকায় আমি না করলে কেউ বিজয় দিবস, শহিদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস পালন করবেনা। যে দুটো গান দিয়েছেন আমার খুবই পছন্দের। আমার সব অনুষ্ঠান এই দুটো গান দিয়ে শুরু করি। আরো একটি গান আমাকে খুব কাঁদায়। আমি ওদের সাথে মিশে যেতে চাই, পারিনা। ওরা চলে গেছে গর্বিত বুকে স্বাধীনতার গান গেয়ে, আমি পেছনে পড়ে আছি, আমি ভীরু-কাপুরুষ, আমি স্বার্থের বেড়াজালে বন্দি। জানি আমার চোখের সকল জল দিয়ে তাদের ঋণ শোধ হবেনা, তবু এ জলটুকু ছাড়া আমার দেবার আর কী’বা আছে? নিন, শুনুন আমার দেশের স্বাধীনচেতা বীরসেনানী সাগর পাড়ের মাঝির গান-
httpv://www.youtube.com/watch?v=SXDGWN_YJEg&feature=related
চমৎকার এই লেখাটির সূত্রে বিজয় দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি :rose2:
কি ভাবে আবেগকে এভাবে লেখনির মধ্যে তুলে আনা যায়?
গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ নামের এক উপেক্ষিত জনপদের সহজ সরল মানুষগুলো হঠাৎ করেই মুক্তির জন্য ক্ষেপে উঠেছিল।
হঠাৎ করে কেউ ক্ষেপে ওঠে না। তার পেছনে অনেক ইতিহাস থাকে
কোনো বিষাদ, কোনো কান্না দেখে যেন কষ্ট না পায় তারা।
আগে চড়-থাপ্পড় দিত বিদেশীরা, এখন দিচ্ছে দেশী ভাইয়েরা, আগে শোষণ করতো বিদেশীরা, এখন করছে দেশী ভাইয়েরা, এদের ক্ষমা করে দিয়ে, হাসি মুখে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানাতে বলছেন?
এতগুলো রূঢ় কথা বলেও, আমিও আপনার মত মনে মনে বলিঃ
@স্বপন মাঝি,
হঠাৎ করে কেউ ক্ষেপে উঠে না সেটা জানি। পিছনের ইতিহাসটাও জানি। এটা কোনো ইতিহাসবিষয়ক প্রবন্ধ নয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে একজন সামান্য মানুষের নিজস্ব আবেগের বহিঃপ্রকাশমাত্র। দেশের জন্য যারা অকালে প্রাণ দিয়েছেন সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনই এখানে মূল বিষয়। অন্য কিছু নয়।
বিজয়ের শুভেচ্ছা হাসিমুখে দেবেন না মুখ কালো করে দেবেন সেটা আপনার বিষয়। এরকম কোনো কিছুর জন্য কোনো সুপারিশ আমি করি নি। যদিও আমার শুভেচ্ছা আমি হাসিমুখেই দিতে চাই। আপনি যেটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটা হচ্ছে যে, এটা একটা শ্রদ্ধাঞ্জলিমাত্র, কোনো রাজনৈতিক প্রবন্ধ নয়। কোথাকার কোন দেশি না বিদেশি শোষক দেশের মানুষকে শুষে খাচ্ছে বলে দেশের মানুষকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানাবো না, এরকম কোনো কিছুর সাথে আমি একমত নই।
অসুবিধে নেই কোনো। রূঢ় কথা শুনতে শুনতে প্রতিরোধক ঢাল জন্মে গেছে চামড়ায়। এখন আর গায়ে লাগে না কিছু।
@ফরিদ আহমেদ,
সালাম, সালাম, হাজার সালাম, সকল শহীদ স্মরণে… :rose: