ভূমিকা: সেই যে কবে ফরাসী ডাক্তার মরিস বুকাইলি একখানা বই লিখে বেশ কিছু পাগলের সাঁকো নাড়িয়ে দিয়েছেন; তার পর থেকে আজ অবধি সেই সাঁকো নাড়া নাড়ি থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ই-মেইল, ফেসবুক, ব্লগ, কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় এসন শুনতে শুনতে, পড়তে পড়তে কান, চোখ সব পচে গেছে। এরকমই একজন সাঁকো নাড়ানো ব্লগার ইদানীং সামহয়্যারইন ব্লগে তার মনের মাধুরী মেশানো অখাদ্য একের একের পর এক উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। তাকে বলেছিলাম যে আপনার পোস্টে ভুল তথ্য আছে। উনি আমাকে বললেন পারলে যেন সেগুলো নিয়ে লিখি। তরাই ফলশ্রুতিতে আমার এই পোস্টের অবতারনা। লেখাটি আগে সামহয়্যারইন এবং আমারব্লগে প্রকাশিত। তবে বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য মূল বক্তব্য ঠিক রেখে কিছুটা সংশোধন করে লেখাটি মুক্তমনায় প্রকাশ করলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

মূল লেখা:

যে লেখাটির পরিপ্রেক্ষিতে আমার এই লেখা সেটি হলো: মহাজাগতিক বিস্ময়গুলো সম্পর্কে আল-কোরআনের নির্ভুল তথ্যগুলো সত্যিই বিস্ময়কর!

লেখাটির মূল বিষয়বস্তু হলো আজ থেকে ৫ বিলিয়ন বছর পরে সূর্য্য শ্বেত বামন তারকায় পরিণত হবে এবং সেটা কোরানে সূরা আত্-তাকভীর- (81.At-Takwir // The Overthrowing) -আয়াত নং-০১ ও ০২ এবং সূরা মুরসালাত -(77.Al-Mursalat // The Emissaries)-সূরা নং-৭৭, আয়াত নং-৮ এ সুনির্দিষ্ট ভাবে বর্ননা করা আছে । কোরান এবং বিজ্ঞান উভয় বিষয়েই কিঞ্চিত ধারণা থাকার কারণে তার দেয়া ব্যাখ্যা পড়ে আমার আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেছে। কিছু কিছু যায়গায় তিনি কোরানের ব্যাপারে একান্তই নিজস্ব মতামত জোর করেই চাপিয়ে দিয়েছেন এবং বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য চেপে গিয়েছেন তা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয় না।

আলোচনার সুবিধার্থে মূল লেখাটির সমালোচনা করে লেখা আমার এই পোস্টটাকে আমি দুভাগে ভাগ করেছি। প্রথম ভাগে সূ্র্য্য সম্পর্কে কোরানের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত। আর দ্বিতীয় ভাগে বিজ্ঞানের ব্যাখা সম্পর্কিত। ধৈর্য্য ধরে যদি পুরোটা পড়েন তাহলে তার দেয়া ফাঁকিগুলি ধরতে কোন অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ক ফাঁকিগুলি।

প্রথম ভাগ:: কোরান বিকৃতি
লেখকের উদ্ধৃত আয়াতগুলি দেখার আগে চলুন দেখে আসি সেই সময়ের মানুষের সূ্র্য্য সম্পর্কে কি ধারণা ছিলো, যা কোরনেও স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে।

সূরা নূহ (৭১), আয়াত ১৬

Ibn Kathir: And has made the moon a light therein, and made the sun a lamp

Muhsin Khan: And has made the moon a light therein, and made the sun a lamp?

Yusuf Ali: “‘And made the moon a light in their midst, and made the sun as a (Glorious) Lamp?

কুরানশরীফডটঅর্গ: এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরুপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরুপে।

এছাড়াও Sahih International, Pickthall, Shakir, ডাঃ জহুরুল হক, আশরাফ আলী খান তানভী সহ প্রত্যেকেই সূর্যকে একটি ল্যাম্প বা প্রদীপরুপে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

এই সূরায় নূহ তার সময়কার লোকজনকে আল্লাহ কিভাবে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তার বর্ননা দিতে গিয়ে সূর্য্য এবং চাঁদকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এখানে পরিষ্কার ভাবেই দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকেই একটি ব্যাপারে একমত আর সেটি হলো সূর্যকে আল্লাহ একটি বাতি হিসাবে সৃ্স্টি করেছেন। দ্বিমতের কোন অবকাশ নাই। এখন যে কোন বাতির একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটা জ্বলতে জ্বলতে এক সময় নিভে যাবে। দুনিয়াতে কোন কালেই মানুষ এমন কোন বাতি দেখেনি যার জ্বালানী শেষ হয়ে গেলে নিভে যায় না। এর মধ্যে মিরাকুলাস কোন ব্যাপার স্যাপার নাই।

এখন আসি ঐ লেখকের উদ্ধৃত আয়াতগুলি ব্যাপারে।

(৮১ : ০১) অর্থ- যখন সূর্য জ্যোতিহীন বা নিষ্প্রভ হবে;
(81 : 1)= When the sun will be lusterless or dim,

(৮১:২) অর্থ:- যখন নক্ষত্ররাজি স্তিমিত হবে বা [su]অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে বৃহদাকৃতির ঢেলায় পরিণত হবে।[/su]

(৭৭:৮) অর্থ:- যখন নক্ষত্ররাজি নিভে যাবে বা আলোবিহীন হবে।
(77 : 8)= So when the stars will be extinguished.

উপরের আমার দেয়া আয়াতের সংজ্ঞার সাথে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ন। তেল ফুরিয়ে গেলে বাতির আলো যেমন আস্তে আস্তে জ্যোতিহীন বা নিষ্প্রভ হয়ে যায় সূর্যটাও তেমনি একদিন জ্যোতিহীন বা নিষপ্রভ হয়ে যাবে। এখানে পাঠককে দুটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে বলব যা বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। বিষয়দুটো হলো সূরা ৮১:২ এ নক্ষত্ররাজি (সূর্য নয়, বরঞ্চ মহাবিশ্বের সমগ্র নক্ষত্ররাজি) আর “বৃহদাকৃতির ঢেলায় পরিণত হবে” এ কথা দুটি। এখানে উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন “বৃহদাকৃতির ঢেলায় পরিণত হবে।” কথাটি লেখকের নিজস্ব সংযোজন যা উপরেল্লিখিত ৮ জন অনুবাদক সহ আর কারও অনুবাদে নেই। এটি তিনি সংযোজন করেছেন মুনির উদ্দীন আহমদের ‘কোরআনের অভিধান’ (অনুবাদ নয়) এর উপর ভিত্তি করে। ধরেই নেয়া যায় এটি তিনি করেছেন এই বিশেষ অর্থটি তার বিশেষ উদ্দেশ্যকে সাপোর্ট করবে বলেই। তবে এটি যে শেষ পর্যন্ত কোন কাজের উদাহরণ না সেটা আমরা বিজ্ঞান পর্বের আলোচনায় দেখব।

উনি বলছেন, “তাছাড়া ধীরে ধীরে যে আকাশে নক্ষত্রগুলো স্তিমিত হবে ও নিভে যেতে থাকবে অর্থাৎ অসংখ্য শ্বেত-বামন ও নিউট্রন-তারকার সন্ধান পাওয়া যাবে তা আল-কোরআনে প্রদত্ত নিচের আয়াত দুটি থেকে বুঝে নেয়া যায়-”

…. “তারকাগুলোর জ্বালানী যে ধীরেধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং আলোবিহীন হয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে অর্থাৎ অবশেষে শ্বেবতবামন অথবা নিউট্রন তারকায় পরিনত হচ্ছে, সেই ইংগিতটিই এখানে ফুটে উঠেছে। আবার (৮১:০২) নং আয়াতে ব্যবহৃত ‘ইনকাদারাত’-এর আরেকটি অর্থ ‘যা ময়লা যুক্ত’ এমন কিছু এবং ‘কাদারাতুন’-এর অর্থ ‘বৃহদাকৃতির ঢেলা’-এর মত কোন বস্তুপিন্ডকে বোঝান হয়েছে।

আলো নিভে যাওয়া পর্যন্ত ঠিক আছে। সূর্য্যের আলো একদিন নিভে যাবে কিন্তু এ থেকে অসংখ্য শ্বেত-বামন ও নিউট্রন-তারকার সন্ধান পাওয়া যাবে কিভাবে বোঝা গেল? এ দুটো শব্দ হঠাৎ করে তার ব্যাখ্যার মধ্যে আমদানী করার কারণ কি? কারণ আর কিছুই না পাঠকদের মনে একটি কনফিডেন্স সৃষ্টি করা। অনেকটা বর্তমান সময়ের বিজ্ঞাপনদাতারা যেমন তাদের পণ্যের জন্য একটি Catch Phrase তৈরী করে ক্রেতাদের মনে আস্হা তৈরীর চেষ্টা করে অনেকটা সেরকম। যেমন একটা উদাহরণ দেয়া যাক, ইদানীং হরলিক্সের বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে “হরলিক্স মনযোগ শক্তি বাড়ায় আর বাচ্চাদের করে তোলে আরও বেশি বুদ্ধিমান।” যেকোন সচেতন মানুষই জানে যে এটা একটা ‘বাখোয়াজ’ কথা। কিন্তু সাধারণ মানুষ কিন্তু এটা নিয়ে ভাবে না। তাদের অবচেতন মনকে এই দুটি কথা আকৃষ্ট করে এবং তারা হরলিক্স কেনেও। আমাদের আলোচ্য শ্বেত বামন বা নিউট্রন তারার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। আপনি যদি বলেন সূর্য্য এবং সব তারাগুলো একদিন নিভে যাবে তবে সেটা কারও মনে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ এটা সবাই জানে, সব বাতিরই ক্ষেত্রেই এটা ঘটে। আর আপনি যদি বলেন কোরানে আছে সূর্য্য একদিন শ্বেত বামনে পরিনত হবে তাহলে তো কোন কথাই নাই। আপনি অবশ্যই কোরানের বৈজ্ঞানিকতায় বিশ্বাস করবেন। তার প্রমাণ আলোচ্য পোস্টে ৪২টি প্লাস। আরও একটি ঘটনা প্রমাণ হবে এটা দ্বারা। সেটা হলো নিরক্ষর কোন মানুষের পক্ষে যে এই কথা বলা সম্ভব না সেটা প্রমানিত হবে।

লেখক আরেকটি কাজ খুবই চতুরতার সাথে করেছেন। সেটি হলো প্রথমে তিনি মাটির ঢেলাকে কোরানের আয়াতের অর্থ বানিয়েছেন আর তারপর শ্বেত বামন বা নিউট্রন তারাগুলোকে মাটির ঢেলার সাথে তুলনা করেছেন। আর পায় কে!! শ্বেত বামন বা নিউট্রন তারাগুলো আদতেই মাটির ঢেলার মত কিনা সেটা যাচাই করতে তো আর কেউ যাচ্ছে না।

দ্বিতীয় ভাগ:: বিজ্ঞানের ধর্ষণ

লেখক আরও বলছেন: “(৮১:০১), (৮১:০২) ও (৭৭:০৮) নং আয়াতে ব্যবহৃত ‘যখন’ শব্দটি দ্বারা কিয়ামতের বেশ কিছু সময় পূর্বের কথা বোঝান হয়েছে। কারণ এই আয়াতগুলোর আগে ও পরে প্রতিশ্রুত বিচার দিবস ও কিয়ামতের বিষয়ে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। আবার (৮১:০১) নং আয়াতে সূর্য জ্যোতিহীন বা নিষ্প্রভ হয়ে যাবে বলে ইংগিত দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ তখন সূর্যের আলোর প্রচন্ডতা বর্তমানের তুলনায় অনেক কমে যাবে, তবে একেবারে নিভে যাবে না।” ………

“বিজ্ঞানের বর্ণনায় আমরা দেখেছি যে, জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে তারকাগুলো শীতল ও সংকুচিত হয়ে ঘন ‘বস্তু-পিন্ডের’ আকার ধারণ করে এবং শ্বেতবামন ও নিউট্রন তারকায় পরিণত হয়। সুতরাং এ থেকে বুঝে নেয়া যায় যে, জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে যেমন ছাই বা ভস্ম তৈরি হয়, তেমনি তারকাগুলোর জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে যে ভস্ম বা ময়লা অবশিষ্ট থাকে তা উত্তাপহীন বা শীতল হয়ে মহাকর্ষীয় চাপে সংকুচিত অবস্থায় স্থিতি লাভ করে এবং ‘ঘন বস্তু-পিন্ড’ অর্থাৎ ‘কাদারাতুন বা বৃহদাকৃতির ঢেলায়’ (শ্বেতবামন অথবা নিউট্রন তারকায়) পরিনত হয়।”

এখান থেকে আমরা যে কয়েকটি তথ্য পাই তা হলো:

১) সূর্য্য এবং মহাবিশ্বের অন্যান্য সব তারাগুলো যখন শ্বেত বামন বা নিউট্রন তারায় পরিনত হবে সে সময়টা হলো কিয়ামতের বেশ কিছু আগে।
২) সকল তারাগুলো শ্বেত বামন বা নিউট্রন তারায় পরিনত হবে।
৩) শ্বেত বামনের আলোর প্রচন্ডতা সূর্যের আলোর চেয়ে কম হবে তবে একেবারে নিভে যাবে না।
৪) শ্বেতবামন অথবা নিউট্রন তারকাগুলো আসলে বৃহদাকৃতির ঢেলার সাথে তুলনীয়
৫) যে কথা নেইকো বলা আল-কোরানে। কি এই পয়েন্টটা দেখে অবাক হচ্ছেন? অবাক হবেন না। সাথে থাকুন সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আসুন আমরা পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আলোচনা করি:

১) আসলেই কি সূর্য্যটা যখন শ্বেত বামনে পরিনত হবে তার কিছুদিন পর কিয়ামত হবে? উত্তর হলো … আর ইউ ক্রেজী? শ্বেত বামনে পরিনত হওয়ার বহু শত মিলিয়ন বছর পূর্বেই পৃথিবী নামক গ্রহটার কোন অস্তিত্বই থাকবে না। লেখক তার লেখায় যেটা বলেনি সেটা হলো শ্বেত বামনে পরিনত হওয়ার কয়েকশ মিলিয়ন বছর পূর্বেই বর্তমানের মেইন সিকোয়েন্স স্টার সূর্য্যটা লাল দানব বা রেড জায়ান্টে পরিনত হবে। হাইড্রোজেন শেষ হতে থাকায় সূর্যের সারফেস তাপমাত্রা কমতে থাকবে এবং সূর্য্যের “আউটার এটমস্ফিয়ার” সম্প্রসারিত হতে থাকবে। কিন্তু ইনার কোর হবে প্রচন্ড উত্তপ্ত। সূর্য্যের সারফেস তাপমাত্রা কমে গেলেও সেটা স্ফীত হয়ে পৃথিবীর দিকে ধাবিত হতে থাকায় তাপমাত্রা আরও বেশী অনুভূত হবে, উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে বহু বহু গুন বেশী। এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কিছু পরেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ধ্বংস হয়ে যাবে। বায়ু মন্ডলের ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে সূর্য্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মির কারণে জীবন্ত সবকিছু পোড়া কয়লা হতে সময় নেবে কয়েক মিনিট। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে জীবন্ত সব কিছু। পৃথিবীর বুকে প্রাণ বলে কিছু থাকবে না। আর সুর্য্যটা যখন পুরোপুরি রেড জায়ান্টে পরিণত হবে তখন বুধ, শুক্র এবং পৃথিবীকে গ্রাস করে নেবে তার সম্প্রসারিত গ্যাসীয় এটমস্ফিয়ার। এমনকি মঙ্গল গ্রহও সূর্য্যের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে পারে। রেড জায়ান্ট হিসাবে কয়েকশ মিলিয়ন বছর থাকার পর একদিন সুর্য্যের আউটার এটমস্ফিয়ারে একটি নোভা বিস্ফোরণ ঘটবে যার ফলে আউটার এটমস্ফিয়ারের সমস্ত গ্যাসীয় পদার্থগুলো ছিটকে পরবে মহাশূণ্যে। যাকে বলা হয় প্লানেটারী নেবুলা। রয়ে যাবে সূর্য্যের মূল কেন্দ্রটা যা কিনা আয়তনে এখনকার পৃথিবীর কাছাকাছি আয়তনের হবে। তৈরী হবে সূর্য্য নামক শ্বেত দানবের। আপনি কি এখনও কিয়ামতের আশায় বসে আছেন? লেখকের কথা অনুযায়ী আমরা কিন্তু এখনও সেই সময়ে পৌছাইনি।

নিচের ভিডিওটিতে সূর্য্যের লাল দানবে পরিণত হওয়ার পথে পৃথিবীর পরিণতি কি হবে সেটা দেখানো হয়েছে।

Red Giant and Earth

২) লেখক ৮১:২ এবং ৭৭:৮ আয়াতের উপর ভিত্তি করে বলছেন সকল তারাগুলি শ্বেত দানব কিংবা নিউট্রন তারায় পরিনত হবে। তিনি বলেননি যে সূর্য্যের চেয়ে আকারে অনেক অনেক বড় তারারা সুপার নোভা এক্সপ্লোশনের পর হয় নিউট্রন তারা কিংবা ব্লাকহোলে পরিনত হয়। তারাটার সাইজ এবং ভরের উপর ডিপেন্ড করে সেটা কি নিউট্রন তারা হবে নাকি ব্লাক হোল হবে। তবে আমাদের ডাক্তার সাহেব কেন ব্লাকহোলের কথা বললেন না? কারণ একটাই আর তা হলো কোনভাবে শ্বেত বামন কিংবা নিউট্রেন তারার সাথে মাটির ঢেলার মিল গোজামিল দিয়ে দেখাতে পারলেও ব্লাক হোলকে আপনি মাটির ধেলার সাথে তুলনা করতে পারবেন না। যদিও ব্লাক হোলের নামের মধ্যেই কালো শব্দটা আছে তবে তুলনা করতে গেলে সাধু সাবধান। আর লেখক জাতে মাতাল হইলেও তালে ঠিক আছেন। আমি এই লেখাটা শেষ করার আগেই উনি আরেকটি লেখা পোস্ট করেছেন।
“ব্ল্যাকহোল” সম্পর্কে নিখুঁত তথ্যগুলো আল-কোরআনে কিভাবে এলো?- তা সত্যিই ভাবায় কিন্তু আশ্চর্য্যের ব্যাপর হলো তিনি কোরান থেকে অনেকগুলো আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েছেন তবে তাতে ৮১:২ কিংবা ৭৭:৮ এর কোন উল্লেখ নাই। কি তাজ্জব কথা!!!!

starlife

৩) শ্বেত বামনের আলোর তেজ কি সূর্য্যের আলোর চেয়ে কম? কখনই না বরং আরও বেশী। মেইন সিকোয়েন্স স্টার থাকার সময় সূর্য্যের হাইড্রোজেন যখন শেষের অবস্হায় তখন সূর্য্যের কেন্দ্র কলাপস করবে এবং আউটার এটমস্ফিয়ার এক্সপ্যান্ড করবে। তবে শ্বেত বামন হওয়া মূল কেন্দ্রের তাপমাত্রা সুর্য্যের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে এবং বিলিয়ন বিলয়ন বছর শ্বেত বামন হিসাবে থাকার পর সূর্য্যের তাপমাত্রা কমতে থাকবে।[sb] তবে মনে রাখবেন মাহফুজ সাহেবের কথামত কোরান কিন্তু শ্বেত বামন হওয়ার সময়কার কথা বলছে। তার বিলিয়ন বছরে পরের কথা নয়। [/sb] নিচে The Hertzsprung-Russell ডায়াগ্রাম থেকে আমরা দেখতে পাই সব শ্বেত বামনদের তাপমাত্রাই সূর্য্যের বা একই সাইজের মেইন সিকোয়েন্স তারাগুলোর চেয়ে থেকে বেশী হয়। The Hertzsprung-Russell ডায়াগ্রাম মহাবিশ্বের সব তারাদের উজ্জ্বলতা, আলোর তরঙ্গের স্পেকট্রাম, এবং তাপমাত্রার মধ্যকার তুলনামূলক সম্পর্ক দেখায়।

HR diagram

৪) শ্বেত বামন তারাগুলো মাটির ঢেলার সাথে তুলনীয়। আমি বাক রহিত। শ্বেত বামন তারার সারফেস টেম্পারেচার গড়ে ১০০০০ থেকে ৩০০০০ ডিগ্রী হয় যেখানে সূর্য্যের সারফেস টেম্পারেচার ৬০০০ ডিগ্রী। আর নিচের শ্বেত বামনটার ছবি দেখে কি আপনার কাছে ময়লা অন্ধকার মাটির ঢেলার মত লাগছে? যেহেতু সূর্য্যের শ্বেত বামন সূর্য্যের আয়তনের থেকে অনেক অনেক গুন ছোট হবে তবে তাই তার উজ্জ্বলতা কমে যাবে। মানে তখন আকারে ছোট হয়ে যাওয়ায় অনেক কম উজ্জ্বল মনে হবে। তবে সেটা দেখার জন্য পৃথিবীতে কেউ কি থাকবে? পৃথিবী নামক গ্রহটাইতো তখন থাকবে না।

white dwarf

৫) লেখক যে জিনিষটা কোরান থেকে বের করতে পারেননি তা হলো ২.২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্হিত এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি ঘন্টায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার বেগে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির দিকে ছুটে আসছে। আজ থেকে ৩ বিলিয়ন বছর পরে সেটা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির উপর এসে পরবে। আমাদের মিল্কিওয়েটা ১ লক্ষ আলোক বর্ষ ব্যাপী বিস্তৃত। আর এতে আছে প্রায় ৪ বিলিয়ন নক্ষত্র। আর এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের থেকে দ্বিগুন বড়। সেই সময় সূর্য্যের মিল্কিওয়ের অরবিটের সম্ভাব্য অবস্হানের উপর ভিত্তি দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। এক সূর্য্যটা ছিটকে লক্ষ আলোক বর্ষ দূরে মহাশূণ্যের অন্য কোন এক অবস্হানে গিয়ে পরতে পারে অথবা দুই গ্যালাক্সির মিলিত কেন্দ্রে যেখানে চলতে থাকবে মূল পার্টিটা ঠিক তার মাঝখানে গিয়ে পরতে পারে। তবে ঘটনা যাই ঘটুক পরিণতিটা যে খুব একটা সুখকর হবে না সেটা মনে হয় বলে দিতে হবে না। এর চেয়ে বেশী বর্ননা করে পাঠকদের ধৈর্য্যচ্যুতি করতে চাই না। তবে আসলে কি ঘটবে সেটা যদি লেখক আমদেরকে কোরান ঘেটে বলে দিতেন তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম। আর এরও ২ বিলিয়ন বছর পরে সূর্য্যের শ্বেত বামন হওয়ার পর কিয়ামতের অপেক্ষায় বসে না থাকাটাই যে শ্রেয় হবে সেটা মনে হয় বলে দিতে হবে না।

milkyway-andromeda

যাই হোক, লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল। আশা করি পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি। তবে শেষ করার আগে আরেকটি কথা বলতে চাই। আমার উল্লেখকরা পয়েন্টগুলা ছাড়াও আরও বেশ কিছু ভুল তথ্য আছে তার পোস্টে। একটা উদাহরণ দেই। উনি বলেছেন, “সূর্যের চেয়ে অনেক বেশী ভরসম্পন্ন বড় বড় তারকাগুলো ইতিমধ্যে তাদের জ্বালানী জ্বালীয়ে শেষ করেছে।” কথাটা যে কতটা ভুল তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। আমাদের মিল্কিওয়েতেই আছে ৪ বিলিয়ন নক্ষত্র। এর বেশির ভাগই সূর্য্যের চেয়ে অনেক অনেক বড়। আর বাকি মহাবিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সির শত কোটি বিলিয়ন নক্ষত্রের কথা নাইবা বললাম। সব নিয়ে লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। তার নতুন পোস্টটিতেও এরকম অনেক ভুল এবং গোঁজামিল দেয়া উদাহরণ আছে। তবে সেগুলো নিয়ে লেখার প্রয়োজন হবে বলে মনে করিনা। আর আশা করব আজকের পর কোরানকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করার জন্য বিজ্ঞানের ধর্ষন বন্ধ হবে এবং সুস্হ্য বিজ্ঞান চর্চার জয় হবে। সবাই ভালো থাকবেন।