অধ্যাপক ড. মু. জাফর ইকবালের নাম দেশের প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষের মুখেই শোনা যায়। আর বাংলাভাষী এই ব্লগসাইট গুলোতে তো কথাই নাই। এখানে সবচাইতে বেশি আলোচিত দেশি ব্যাক্তিত্ব হয়তো তিনিই। তবে এক্ষেত্রে তার লেখনী বা পেশাদারীত্বের স্থলে তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়েই বেশি নাড়াচাড়া করা হয়। আমি অবশ্য সেটা সমর্থন করি না। তাছাড়া ব্যাক্তিগত ভাবে আমি তাঁকে যথেষ্ট সম্মান করি। একজন শিবির কর্মীর কাছে অবশ্য যদি তার সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হয় তখন অন্যকথা শোনা যাবে। কিন্তু আমি আগেই উল্লেখ করেছি, কারও ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে টানা-হ্যাঁচড়া করা কখনোই উচিত নয়। আজ আমি বরং তার এক ‘জনপ্রিয়’ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘অক্টোপাসের চোখ’ নিয়ে আমার অভিমত আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি।
গল্পটি আমি পড়েছি অনুপম প্রকাশনী কর্তৃক ‘অক্টোপাসের চোখ’ শীর্ষক বইটির তৃতীয় মুদ্রণ থেকে। প্রথম প্রকাশ ছিল ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ। সেই হিসেবে আমার এ আলোচনা অনেক পুরনো মনে হতে পারে। বইয়ের ৯ থেকে ১৬ পৃ. পর্যন্ত গল্পটির পরিব্যাপ্তি। গল্পে দেখা যায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান আকাদেমির মহামান্য পরিচালক কিহি তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে বিশ্বের সফলতম বিজ্ঞানীদের নিয়ে মানবসভ্যতার উন্নয়নের লক্ষ্যে এক আলোচনায় বসেন। এখানে এক পর্যায়ে তিনি বলেন
“বিশ্বব্রহ্মান্ডের সর্বর্শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ এই পর্যায়ে এসেছে বিবর্তনের ভেতর দিয়ে……দুইশ হাজার বছর আগের হোমোস্যাপিয়েন, বিবর্তনের ভেতর দিয়ে বর্তমান মানুষের পর্যায়ে এসেছে”।
এখানে বোঝা যায় গল্পের প্রেক্ষাপট এমন এক সময়ের যখন বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ঠিক দুই লক্ষ বছর আগে homo sapience এর উদয় হয়েছিল । কিন্তু কথা হল মহামান্য কিহি একবার বিবর্তনের কথা বললেন, আবার বললেন ‘বিশ্বব্রহ্মান্ডের সর্বর্শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ’; দুটি পুরোপুরি পরষ্পরবিরোধী কথা। যা হোক বিজ্ঞানীরা এবার মানবদেহের খুঁতগুলো দূর করে একটি নিখুঁত মডেলের মানবদেহ ডিজাইনের কথা ভাবতে লাগলেন। জীববিজ্ঞানী টুহাস তার পরামর্শে মানুষের চোখের ত্রুটিগুলি তুলে ধরেন। এবং অক্টোপাসের মত চোখ সংযোজনের পরামর্শ দেন। ভালো কথা।
কিন্তু এক তরুন বিজ্ঞানী ফিদা বললেন, নবজাতকের মাথার আকার বড় হওয়ায়, মায়ের সন্তান জন্মদানে অনেক কষ্ট হয়। এজন্য তিনি পরামর্শ দিলেন মানবশিশু তথা মানবজাতির মাথাই ছোট করে ফেলার। এখানে একটি কথা, তিনি কি বিষয়ক বিজ্ঞানী তা লেখক কোথাও উল্লেখ করেননি। জানিনা এর কারণ কি। অন্যান্য বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কিন্তু তিনি সেটা উল্লেখ করেছেন। তবে আশ্চর্য বিষয় হল বিজ্ঞানীরা তার পরামর্শকে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। প্রজাতির বুদ্ধিমত্তা নির্ভর করে তার শরীরের আকারের সাথে মস্তিষ্কের আকারের অনুপাতের উপর। মাথার আকার যদি বড় না হয় তাহলে তার মস্তিস্কের আকারও বড় হবে না। বাকি শরীরের সাথে মস্তিস্কের আকারের অনুপাতের কারণেই মানুষকে সবচেয়ে উন্নত প্রজাতির জীব বলা হয়। বিবর্তনের কারণে অন্যান্য এপদের যেখানে চোয়াল বড় হয়ে গেছে, সেখানে মানুষের মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানেই মানুষ এবং অন্যান্য জীবের মধ্যকার অন্যতম প্রধান পার্থক্য বিরাজ করে। এরপর আসে আরেক বিজ্ঞানী রিকির কথা। লেখক ৯ম পৃষ্ঠায় তার সম্পর্কে লিখেছেন জীববিজ্ঞানী, কিন্তু দুই পৃষ্ঠা পর তার নামের সামনে লেখা হয়েছে গণিতবিদ। কোনটি সঠিক পরিচয় কিভাবে বুঝবো? তার পরামর্শ দেখে যদি কিছু বুঝতে পারেন তবে দেখুন।
“বিবর্তনের কারণে মানুষ হঠাৎ করে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে কিন্তু হাড়ের সংযোগটা মানুষের ওজন ঠিকভাবে নিতে পারে না। দুটি না হয়ে ৪টি হলে ওজনটা ঠিকভাবে নিতে পারত”।
বাহ, বিজ্ঞানীরা কিনা আমাদের চতুষ্পদ প্রজাতিতে পরিনত করতে চাচ্ছেন। সেই Australopithecus, Ardipithecus এরও আগে মানুষকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। আর বড় কথা হল বিবর্তনের সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ায় হঠাৎ করে মানুষের দুই পায়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই।
প্রযুক্তিবিদ রিভিক অবশ্য ভালো পরামর্শ দেন। তিনি দেহের অন্যতম উটকো ঝামেলা অ্যাপেন্ডিক্সের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু আরেক জীববিজ্ঞানী সুহাস (নাকি টুহাস) কম গুরুত্বপূর্ণ বলে একে উড়িয়ে দিয়ে মানুষের জননেন্দ্রিয়ের বিপজ্জনক অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। এরপর তারা আরও দীর্ঘ আলোচনা শেষে ‘মানব জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তটি’ গ্রহণ করেন। বিজ্ঞান আকাদেমি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয় যে, মানব জাতির জিনোমে আগামি ১০০ বছরে খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা হবে যেন ১০০ বছর পরে মানবদেহে আর কোন সীমাবদ্ধতা না থাকে। বলা বাহুল্য এখানে সীমাবদ্ধতা বলতে উপরের সেই হাস্যকর আলোচনার (মাথা ছোট করে ফেলা, পায়ের সংখ্যা ৪ করে ফেলা ইত্যাদি) বিষয়বস্তুই আসে।
সেই মোতাবেক যদি আবার এই মানবদেহের উপর ইঞ্জিনিয়ারিং চালানো হয়, তবে এই অপরিকল্পিত এবং ত্রুটিপূর্ন মানবদেহের অবস্থা কি দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
এরপর মহামান্য কিহি নিজ চোখে দেখতে চাইলেন, যে তাদের এই প্রচেষ্টা কতটুকু সফল হয়, মানব জাতির কতটা উপকার সাধন করে। তাই তিনি শীতল ঘরে গিয়ে ১০০ বছরের জন্য ঘুম দিলেন। এরপর ঘুম থেকে উঠে তিনি কি দেখবেন তা জীববিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা যেকোন মানুষের পক্ষেই অনুমেয়। তবে যেটা অনুমেয় নয় তা হল, মহামান্য কিহি নিজের মনে বললেন,
“আহা এই পৃথিবীটা কি অপূর্ব। সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ধন্যবাদ আমাকে মানুষ করে পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য”।
…এর আগ পর্যন্ত তো তিনি বিবর্তনবাদী ছিলেন, এখন হঠাৎ… তিনি এমন কি ঘুম দিলেন যে এক ঘুমে একজন বিবর্তনবাদী সৃষ্টিতত্ত্ববাদী হয়ে যেতে পারেন। এরপর তিনি দেখলেন তার মানব জাতির উন্নয়ন। ছোট মস্তিষ্ক তথা কম বুদ্ধিবিশিষ্ট, চতুষ্পদ, কাপড়বিহীন, জম্বি মানুষেরা তাকে আক্রমণ করে তার কণ্ঠনালী কামড়ে ছিড়ে মেরে ফেলে। (গল্প শেষ)
ভাবতে অবাক লাগে, যিনি ‘সুহানের স্বপ্ন’, ‘ফিনিক্স’, ‘পৃ’, ‘সফদর আলীর মহা মহা আবিষ্কার’ এর মত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখতে পারেন তিনি কিভাবে এ ধরণের গল্প লিখেন। আমার কথা হল দেশের জনপ্রিয়তম সায়েন্স ফিকশন লেখকই যদি লেখায় এমন ভুল করেন, তবে অন্যদের কি দশা তা অনুমানের চেষ্টা না করাই ভাল। স্যারের উদ্দেশ্যে আমি শুধু এটাই জানাতে চাই, উনার প্রতিটি গল্প, প্রতিটি রচনা এদেশের অল্পবয়েষী পাঠকদের মধ্যে অনেক প্রভাব ফেলে। উনার লেখাকে অবশ্যই অপবিজ্ঞানের ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে হবে। নইলে দেশের তরুন প্রজন্ম এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদেশে সঠিক বিজ্ঞানচর্চার দৌড় কতটুকু তা আশা করি উনার অজানা নেই।
আমার এক বন্ধু একবার কথা প্রসঙ্গে এই ‘অক্টোপাসের চোখ’ গল্পটির কথা টেনে এনে আমাকে বলেছিল যে, এই গল্পের মাধ্যমে জাফর স্যার স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সেটাই সবচেয়ে উপযুক্ত। কোন মানুষ এটাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করলে তার পরিণাম এমনই হবে। তার কথা শুনেই আমি গল্পটাকে আরও মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর এই পোস্ট লেখার সিদ্ধান্ত নেই। সে না বললে এই পোস্ট আমার হয়তো লেখা হত না। একারনে এই লেখাটি আমি তাকেই উৎসর্গ করছি।
আসলে বিবর্তন তত্ত্ব কখনোই ইশ্বরকে অস্বীকার করে না। বরং আব্রাহামিক ধর্মগুলোর সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে।
‘অক্টোপাসের চোখ’ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের দুর্বলতম লেখাগুলোর একটি। পৃথিবীর বিজ্ঞান একাডেমির মহাপরিচালক আর এর সদস্যদের অকিঞ্চিৎকর বিজ্ঞানের জ্ঞান দেখলে সত্যিই হাসি পায়। মানবজাতি নিয়ে এত বড় একটা গবেষণা তাঁরা করে ফেললো কোনো ধরনের পূর্ব পরীক্ষণ ছাড়াই। এর সামষ্টিক এবং সুদূরপ্রসারী ফলাফল কী হবে সেটা বিচার বিবেচনা না করেই, বোকার মত তাঁরা মানবজাতির জিনোমে পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে শীতল ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। অক্টোপাসের চোখ পড়ে আমার তাঁদেরকে বিজ্ঞানী বলে মনে হয় নি, কিছু খামখেয়ালিপনাময় খেলা পাগল শিশু মনে হয়েছে। ইচ্ছা হয়েছে, কাজেই পালটে দাও মানব প্রজাতিকে। পরে কী হবে সেটা পরে দেখা যাবে। ছেলেমানুষী ছাড়া আর কিছু বলা যায় না একে।
তবে এই গল্প থেকে যদি এই সিদ্ধান্তে আসা হয় যে, তিনি অপবিজ্ঞানের প্রচার করছেন বা সৃষ্টিবাদকে সমর্থন করছেন, তবে সেটাও ছেলেমানুষী ধরনের ভুল হবে বলেই আমি মনে করি। জাফর ইকবালকে বুঝতে হলে বুঝতে হবে তাঁর প্রবন্ধ দিয়ে, বুঝতে হবে তাঁর কর্মকাণ্ড দিয়ে, বুঝতে হবে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট দিয়ে, তাঁর কল্পবিজ্ঞান দিয়ে নয়।
অসাধারণ বলেছেন। আইজ্যাক আসিমভ,জুলভার্ন, আর্থার সি ক্লার্কের লেখা পড়লে বোঝা যায় জাফর ইকবাল স্যারে বেশিরভাগ সাই-ফাই খুব উচ্চমানের নয়(তবে ফিনিক্স সহ আরে কয়েকটি বই বেশ উচ্চমানের)। স্যারের সবথেকে বড় অবদান তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করায়,স্বপ্ন দেখানোতে,৭১এর চেতনা রক্ষায়। ভয়াবহ এই দেশে তিনি,সায়ীদ স্যাররা স্বপ্ন না দেখালে আজ আমাদের মত তরুণরা আরো অনেক পিছিয়ে থাকত।
@ফরিদ আহমেদ,
কঠিন বলেছেন। তবে তিনি অপবিজ্ঞান প্রচার করছেন বলা যায় বৈকি। ওনাকে বিজ্ঞানের প্রসারে কাজ করতে কিন্তু দেখা যায় নি। বিজ্ঞানের সাথে উনি পরিচয় করিয়ে দেন নি, কিভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হয়, কিভাবে হাইপোথিসিস তৈরী করা হয়, কিভাবে পূর্বাভাস তৈরী করা হয় আর উপাত্ত দেখে তা যাচাই করা হয় আর তার উপর ভিত্তি করে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। উনি কেবল গণিত চর্চার কথা বলেছেন। এখন বিজ্ঞান নিয়ে গল্প লিখতে গিয়ে যদি মানবিক অনুভূতি আর বিজ্ঞানীর নামে অপবিজ্ঞানের কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়, অপবিজ্ঞান প্রচারের দায় তো তাকে নিতেই হবে।
@ধ্রুব,
আমি বিজ্ঞানের লোক নই। কাজেই আপনার সাথে চ্যালেঞ্জে যাচ্ছি না। নিছক কৌতুহলের কারণে জানতে চাইছি যে, আসলেই কি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্বজ্ঞানে অপবিজ্ঞান প্রচার করছেন? সবার জন্য সহজ সরল বাংলায় তিনি যে দুটো বই লিখেছেন বিজ্ঞানের উপর, থিওরি অফ রিলেটিভিটি এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স, ও দুটোতে কি অপবিজ্ঞানের কিছু আছে?
@ফরিদ আহমেদ,
নাহ চ্যালেঞ্জের কিছু নেই। আমি ওনার বিজ্ঞানের উপর লেখা বইয়ের কথা জানতাম না। আমাকে হাতে নাতে আরো কিছু উদাহরণ দিয়ে ভুল ভাঙ্গায়ে দেয়া হোক। তবে, ওনার বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে অপবিজ্ঞানকে আসতে তো দেখাই যায়। সজ্ঞানে করছেন কিনা সেটা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। এটা আসলে ওনাকে জাজ করার বিষয়ও না। ভুল করলে ভুল করেছেন বলার বিষয়।
আমার হাত দিয়ে ভুল করে বা অব-জ্ঞানে যদি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ বেরিয়ে আসে, আমাকে বাঁচানোর কিছু নেই। ভুল করলে ভুল করা ভালো। ভুল করলে মানুষ বাতিল করার দলের লোক আমি না। 🙂
@ধ্রুব,
*ভুল করলে ভুল ধরা ভালো
ভুলে ভুলে ভরারে ভাই। যাই ঘুমাতে যাই। 🙂
@ধ্রুব,
অভিজিৎ ভাই, নিজের কমেন্টে নিজে লাইক দেয়া যাচ্ছে কেন? :-/
@ফরিদ আহমেদ,
হ্যাঁ, এটা আপনি ঠিক বলেছেন। একজন লেখকের ব্যাক্তিত্ব গল্প কবিতার চেয়ে তার প্রবন্ধেই বেশি ফুটে উঠে। একারণে আমি গল্প কবিতার পড়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও আমি এই লেখাটি লিখেছি কারণ এর মাধ্যমে দেশের নতুন প্রজন্মের কাচগে একটি মিথ্যা বার্তা চলে গিয়েছে। যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি।
এখানে তো বেশ গোলমালের আভাস পাওয়া যাচ্ছে দেখি। সুত্রপাতটা মনে হয় হয়েছে এখান থেকে-
কোন্ ঈশ্বর, কার ঈশ্বর কেমন ঈশ্বর সেটা আগে জানতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগ্রন্থের আল্লাহ হলে অবশ্যই সংঘাত আছে। আর যদি বলেন আমার দুটো হাত আমার ঈশ্বর, এই বিশ্ব আমার খোদা, এই প্রকৃতি আমার আল্লাহ, প্রকৃতির নিয়ম ও শক্তি আমার প্রভু তাহলে সেই ঈশ্বরে কোন অসুবিধে নেই।
আল্লাহ কী দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এর উপাদান কোরানে বলে দিয়েছেন, আর এও বলেছেন যে পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির আগে জ্বীন বা ফেরেস্তা সৃষ্টি করেছেন আগুন বা নূর দিয়ে, তারপর গাছ-বৃক্ষ, লতা-পাতা, এরপরে পশু-পাখি এবং সব শেষে মানুষ। প্রথম পুরুষ আদম আর তার দেহের হাড় থেকে প্রথম নারী হাওয়ার জন্ম। আদম হাওয়ার বয়সটাও আমাদের জানা। এবার এককোষী জীব ও লুসি-আর্ডির কথা স্বরণে রেখে প্রাথমিক প্রাণের সৃষ্টির জন্য গডের শরণাপন্ন হলে, বিবর্তনবাদের সাথে সরাসরি সংঘাত এড়ানো যায় কী ভাবে বা বিবর্তনবাদ দিয়ে বিষয়টা ব্যাখ্যার উপায় কী?
@আকাশ মালিক,
অনেক ধন্যবাদ। এ কথাটিই আমি বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। তবে আপনার মত সরাসরি এই লাইনে আশাটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
ধণ্যবাদ চম?কার সমালচনার জন্য। :yes:
অফ টপিক-আমি মুক্তমনায় account খোলতে চাই। কি করতে হবে জানালে উপকৃত হতাম 🙂
@ভূঁইফোড়,
আপনি মুক্ত-মনায় নিয়মিত মন্তব্য করেন, আলোচনায় অংশ নেন, তবেই (বিবেচনাসাপেক্ষে) সদস্যপদ পেয়ে যাবেন। বামদিকের “পৃষ্ঠা” এর লিংক গুলো দেখুন
মুক্তমনা নীতিমালা
প্রায়শ জিজ্ঞাস্য বা সাহায্য
মুক্তমনায় প্রবন্ধ পাঠানোর নিয়ম
ঠিক বুঝি না যে কল্পকাহিনীর মাঝে নিখুত বৈজ্ঞানিক সত্য অন্বেষনের আশা কতটা করা যায়। এটা ঠিক যে যে কাহিনীই হোক তাতে নিরেট মিথ্যা বা ভুল বৈজ্ঞানিক তথ্য ভরা খুবই অন্যায়।
সে কারনেই প্রথম পয়েন্টটা ধরা (বিশ্বব্রহ্মান্ডের সর্বর্শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ) তেমন গুরুত্বপূর্ন মনে হয়নি। এটা স্রেফ ভাষার ব্যাবহারও হতে পারে।
পৃথিবীর মত আমিও বলতে চাই যে বিবর্তনে বিশ্বাসী হলেই নাস্তিক হতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই।
তবে জাফর ইকবাল সাহেব সম্পর্কে আমার ধারনাও অনেকটা হোরাসেরই মত। তিনি ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার সময় খুবই সতর্ক থাকেন, শুধু মোল্লা শ্রেনীই নয়, ধর্মপ্রমান সাধারন মানুষের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু তিনি বলতে চান না। জাফর ইকবালকে বাংলার রিচার্ড ডকিন্স ভাবাটা মারাত্মক ভুল হবে। তিনি বাংলাদেশে থাকেন, পশ্চীমে নন এটা মনে রাখতে হবে। এমনিতেই কিছু প্রায় না বলতেই তাকে নানান ঝামেলা হুজ্জত পোহাতে হয়।
@আদিল মাহমুদ,
বিবর্তনবাদীদের নিরীশ্বরবাদী হতেই হবে আমি কখনো বলি নাই। আমার পরিবারের সবাই বিবর্তনবাদী ধার্মিক। কিন্তু একই সাথে বিবর্তনবাদী ও ক্রিয়েশনিস্ট হওয়াটাকে কি যৌক্তিক বলা যায়? আস্তিক মাত্রই ক্রিয়েশনিস্ট এমনটা ভাবা ঠিক না।
@অভীক,
কতটা সঠিক জানি না। মনে হয় কিছুটা ব্যাক্তিগত বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে।
আমার মনে হয় আস্তিক মানেই গড বা কোন সুপার ন্যাচারাল ফোর্সে বিশ্বাস। আস্তিক হলেই সব কিছুর মূল স্রষ্টা গড ধরে নেওয়া মনে হয় স্বাভাবিক। তবে গডের সৃষ্টি মানেই বিবর্তনবাদের বিরোধীতা এমন নাও হতে পারে। তাই একই সাথে ক্রিয়েশনিষ্ট এবং বিবর্তনবাদ বিশ্বাসী হওয়া যেতেই পারে মনে হয়। বিবর্তনবান যতটুকু জানি যে প্রানের প্রাথমিক উতপত্তি সম্পর্কে কিছু বলে না। এই তত্ত্ব শুধু প্রজাতি থেকে প্রজাতির বিবর্তন নিয়েই বলে। কাজেই প্রাথমিক সৃষ্টির জন্য গডের শরনাপন্ন হলে এখন পর্যন্ত বিবর্তনবাদের সাথে সরাসরি সংঘাত হবে না বলেই মনে হয়।
@আদিল মাহমুদ,
ক্রিয়েশনিজম মতে একজন স্রষ্টা মানুষকে সরাসরি homo sapience করেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। homo heidelbergensis, homo erectus এসব কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। এখন কোন আস্তিক যদি মনে করেন ঈশ্বরই পৃথিবীতে একের পর এক প্রজাতির বিবর্তন ঘটিয়ে গেছেন তবে তাকে আস্তিক অবশই বলা যেতে পারে। তবে ক্রিয়েশনিস্ট নয়।
@অভীক,
আমার মনে হয় জাফর ইকবাল ব্যাক্তিগতভাবে তেমনই বিশ্বাস করেন ( homo heidelbergensis, homo erectus এসব কিছুর অস্তিত্ব ছিল বলেই মনে করেন)। সেজন্যই তিনি একই সাথে বিবর্তনবাদী ও আস্তিক হতে পারেন।
তবে ক্রিয়েশন মানেই যে স্রষ্টা কর্তৃক সরাসরি homo sapience পৃথিবীতে পাঠানো এটা তারা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন না।
আমি ক্রিয়েশনিষ্ট বলতে বুঝি যে সমগ্র বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টির জন্য একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন সেটায় বিশ্বাস করা। এরপর সেই সৃষ্টির মাঝে বিবর্তন আছে কিনা বা আনাদিকাল থেকে সব সৃষ্ট জীব একই রূপে আছে কিনা সেটা পরবর্তি ধাপ।
@আদিল মাহমুদ,
উনি ব্যাক্তিগতভাবে কি বিশ্বাস করেন না করেন তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নাই। উনার লেখনীর মাধ্যমে কি প্রকাশ পেল তা নিয়েই আপনার আলোচনা।
ক্রিয়েশন আর ক্রিয়েশনিজম এক নয়। ক্রিয়েশনিজমকে বিবর্তন বিরোধীরা বিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করে। যেমন ইন্টিলিজেণ্ট ডিজাইন ক্রিয়েশনিজমের একটি উদাহরণ।
@আদিল মাহমুদ, :yes:
মুক্তমনায় যে আলোচনাগুলো উঠে আসে সেগুলো আমি মনে করি যথেষ্ট মান সম্মত আলোচনা। এখানে ব্যক্তিকে আক্রমন না করেও লেখার ভুল ত্রুটিগুলো সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়। আমি মনে করি না একজন ব্যক্তি কখনোওই একশত ভাগ নির্ভুল হতে পারে। তাই ব্যক্তি পূঁজার বিরোধীতা করি। এ কারণে একজন মুহাম্মদ বা যীশু বা মার্ক্স এর দর্শনের যেমন কাঁটাছেড়া করা যাবে তেমনি জাফর ইকবাল স্যারের লেখাও করা যাবে। উনাকে আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা করি।
আমার অভিমত হবে আমাদের এই আলোচনা গুলোকে উনার কাছে ইমেইল করে বা ব্যক্তিগত ভাবে কেউ পৌঁছে দিতে পারেন। উনি যদি পাঠকের মতামতকে মর্যাদা দিতে ইচ্ছুক হোন তবে নিঃসন্দেহে এই আলোচনা গুলোকে উনি পজিটিভলি নিবেন। আমি মনে করে প্রতিটি ব্যক্তির দায়বদ্ধতা রয়েছে সমাজের প্রতি, বিশেষ করে লেখকদের আরো বেশি। তাই উনার কাছে আমিও আশা করবো বিজ্ঞানের নামে অপ-বিজ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার দাঁয় যেন উনাকে স্পর্শ না করেন সে ব্যাপারে উনি নিজেও সচেষ্ট থাকবেন। আমি নিজেও অনেক বছর হল উনার লেখা পড়ি নি (আসলে কল্প কাহিনি কিংবা উপন্যাস এখন আর পড়া হয় না), কিন্তু এটা জানি বাংলাদেশের বহু কিশোর, যুবক উনার লেখার ভক্ত। তাই লেখাগুলোতে সুক্ষ্ণ ভুল থাকলেও সেটা এই সব কিশোরদেরকে ভুল পথে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলিষ্ঠ মানুষটি, মৌলবাদের বিপক্ষের মানুষটি, বিজ্ঞানের পক্ষের মানুষটি, সর্বোপরি মানবতার পক্ষের মানুষটি সচেতনভাবে কিশোরদেরকে ভুল শিক্ষা দিতে পারেন না।
আলোচনায় উনার অন্যান্য বইয়ের ব্যাপারেও কারোর কিছু মতামত থাকলে এখানে জানান। এই ব্লগটি এবং পথিকের আগেরকার ব্লগ দু’টোর লিঙ্ক উনার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। উনার ব্যক্তিগত ইমেইল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। শাহজালাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের সাইটে চেষ্টা করছিলাম ইমেইলের জন্য, ভাইরাস আসে 😥 । দুঃখজনক :-X ।
“কোয়ান্টাম মেকানিক্স” বইটা জাফর ইকবাল স্যার এভাবে শুরু করেছেন। তার বই যেহেতু বাচ্চা,তরুণ,অভিভাবক সবাই পড়ে, এই প্যারাটি বিপুল সংখ্যক মানুষকে ভাবাবে। তিনি যদি নিজেকে বিতর্কিত করে ফেলতেন এত মানুষের কাছে পৌছাতে পারতেনকি? আর বিভিন্ন জায়গায় স্যার কিন্তু স্বীকার করেছেন মানুষের “ডিজাইন” পারফেক্ট না। আমার মনে হয় তিনি মানুষের হাতে বিজ্ঞানের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে চিন্হিত,তার প্রতিটি সাই-ফাইতে এটা ফুটে ওঠে। তবে এটা অস্বীকার করা যায়না যে তার লেখার মান আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে,একই কাহিনী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখছেন।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুবই স্যারকে খুব শ্রদ্ধা করি যদিও তিনি আমার প্রিয় লেখক নন,কিন্তু প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
একমত রামগড়ুড়ের ছানা। বিজ্ঞানের প্রতি মুহাম্মদ জাফর ইকবালের আনুগত্যের বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহই নেই। গল্প উপন্যাস লিখতে গেলে তার সবগুলোই এক মানের হয় না। আর মুহাম্মদ জাফর ইকবালদের মত জনপ্রিয় লেখকদের অনেক ফরমায়েসী লেখাও লিখতে হয়। সেগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
বিজ্ঞান নিয়ে তার ভালবাসার প্রমাণ রয়েছে তাঁর লেখা থিওরি অফ রিলেটিভিটি বইয়ের ভূমিকায়। একটা দেশের জন্য একজন বিজ্ঞানী কতখানি প্রয়োজনীয় সেটা বোঝাতে গিয়ে তিনি লিখেছেনঃ
‘অক্টপাসের চোখ’ পড়ে এমন হতাশ হয়েছিলাম। 🙁
অনেকদিন জাফর ইকবালের কোন লেখা পড়া হয়নি। আমার ধারণা বাংলাদেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে উনি নিজেকে মোল্লাদের কাছে বিতর্কিত করতে চান না। একারণেই হয়ত দুই দলকেই খুশী করার চেষ্টা।
পোস্টটার জন্য ধন্যবাদ।
@হোরাস,
আমার মনে হয় উনি ঠিকই করেন। ধরেন উনি যদি নিজেকে বিতর্কিত করেন তবে এক ধরনের বাবা-মা বা শিক্ষক বাচ্চাদেরকে উনার বই পড়তে নিষেধ করবে। সেক্ষেত্রে উনি একটা বড় অংশের কাছে পৌঁছাতেই পারবেন না।
@হোরাস,
মোল্লাদের খুশি করার মত কোন কাজটি তিনি করেছেন? স্বীকার করি তিনি বিতর্কিত হতে চাননা,কিছু দোষও হয়তো আছে, কিন্তু তিনি মোল্লাদের খুশি করেন এটা মানতে পারলামনা। ধর্মের গুণগান তিনি কখনোই করেননি,বরং ধর্মান্ধতার সমালোচনা করেছেন। এ কারণেই শিবির সুযোগ পেলেই তার নামে নোঙরা কথা বলে।
@হোরাস, এক্কেরে খাঁটি কথা কইছেন ভাইজান্, :coffee:
অভীককে ধন্যবাদ এই চমৎকার লেখাটির জন্য। আসলে মুক্তমনাদের উদ্দেশ্য শুধু ধার্মিকদের সাথে ঝগড়া বিবাদ হতে পারে না, বরং যারা বিজ্ঞান নিয়ে লিখছেন তারা যেনন ভুল না করেন কিংবা তাদের কোন বক্তব্যে যেন ভুল এবং অপবিজ্ঞান প্রচার হবার সুযোগ না থাকে সেটাও আমাদের দেখা উচিৎ। আমাদের তাদেরকেও সময় সময় সংশোধনের দায়িত্ব নিতে হবে। সে হিসেবে এই প্রবন্ধগুলোর গুরুত্ব অপ্রিসীম। এর আগে পথিকও জাফর ইকবালের কিছুটা সমালোচনা করে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন –
”ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন”,জাফর ইকবাল স্যার ও আমার কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা
লেখাটিকে ঘিরে ধর্মবাদীরা সোরগোল শুরু করেছিলো অন্য সাইটে। তারা বোঝেননি যে, মুক্তমনায় যীশু, মুহম্মদ, থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, রোকেয়া সবারই সমালোচনা আছে। আমাদের জ্ঞানের উত্তোরণের জন্যই সমালোচনামূলক দৃষ্টি থাকা দরকার। নাইলে জ্ঞান স্থবির হয়ে পড়ে। স্তাবকতায় অগ্রসর হওয়া যায় না।
জাফর ইকবাল আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন লেখক। আমার ধারণা এখানে অনেকেরই। তার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলো রীতিমত অবিশ্বাস্য। কপোট্রনিক সুখ দুঃখ, টাইট্রন একটি গ্রহের নাম, সফদর আলীর নানা অআবিস্কার – সবই আমি ছোটবেলা থেকেই গোগ্রাসে গিলেছি। এই আলোচিত ‘অক্টোপাসের চোখ’ বইটাও পড়েছি। এইটি মূলতঃ একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর উপর ছোটগল্পের সংকলন। অক্টোপাসের চোখ গল্পটা বই এর প্রথম গল্প ছিলো। লেখাটি এমনিতে ভালোই। মানব দেহের ব্যাড ডিজাইনের বেশ ভাল কিছু আলোচনা আছে এতে। কিন্তু শেষে গিয়ে সেই একই গন্তব্য – সুমহান স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পন! ব্যাপারগুলো কেন করেন জাফর ইকবাল বোঝা ভার, তবে একটা কারণ হতেই পারে গল্পে একটা রহস্য তৈরি করে রাখেন। সেজন্য কোন বলিষ্ঠ কোন স্ট্যণ্ড হ্য়তো তিনি নেন না।
তবে আমি লক্ষ্য করেছি বলিষ্ঠ স্ট্যণ্ড তিনি অন্য অনেক কিছুতেই নেন। তার ‘ওয়াই ক্রোমজম’ নামে একটা ছোট গল্প আছে, সেটি পড়লে বোঝা যায় তিনি মেয়েদের রাইটসকে কতটা উপরে তুলে দেখেন। তার অনেক গল্পেই এরকম মেয়েদের অধিকার এবং তাদের প্রতি সহমর্মিতার ব্যাপারটা সূক্ষভাবে উপস্থিত। যত সমস্যা তার ইণ্টেলিজেন্ট ডিজাইন, ব্যাড ডিজাইন কিংবা অপবিজ্ঞানের ব্যাপারে স্টান্ড নিতে গেলে। তিনি নাস্তিকতা প্রচার করুন সেটা আমরা দাবী করব না, অন্ততঃ বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো একটু যত্ন সহকারে পরিবেশন করবেন (যেন ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ না থাকে) – এটি তো আমরা পাঠক হিসেবে চাইতে পারি।
আমাদের দেশে একজন কৃতি বিজ্ঞানলেখক আছেন যার কথা না বললেই নয়। তিনি আবার যেনতেন লেখক নন, তার বেশিরভাগ বইয়ের পরিচ্ছদ সংখ্যা ১০০। তিনি আমাদের ভবেশ রায়।
কয়েকদিন আগে বিজ্ঞানের শত আবিষ্কারের উপর তার লেখা একটি বই হাতে পাই। স্বভাবতই, বিবর্তন তত্বের আবিষ্কার বিষয়ক পরিচ্ছদটিতে নজর বোলালাম। দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ।
লেখাটিতে তিনি উল্লেখ করেছেন,
ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বমতে মানুষের উদ্ভব হয়েছে গরিলা, শিম্পাঞ্জী, ওরাংওটাং, বানর থেকে’।।
মানুষের বিবর্তন ঘটেছে বানর থেকে, বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে এই প্রচলিত ভুল ধারণাটিকে যেখানে এখন পর্যন্ত নির্মূল করা সম্ভব হয়নি, সেখানে তিনি বানরের সাথে আবার গরিলা, শিম্পাঞ্জী, ওরাংওটাংকেও যোগ করে দিয়েছেন।সত্যিই তার অগাধ জ্ঞানের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এসে গেল।
শুধু তাই নয়, লেখার শেষদিকে এসে তিনি উল্লেখ করলেন যে, ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব নাকি ভুল প্রমাণিত হয়েছে, মানুষের পূর্বপুরুষ মানুষই।
দেশের প্রতিষ্টিত বিজ্ঞান লেখকরা যখন এভাবে বিজ্ঞানের নামে অপবিজ্ঞানের ভাইরাস ছড়ান তখন তাদের বিজ্ঞানের প্রতি দায়বদ্ধতা ও লেখনীর সততা নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে।
@সিদ্ধার্থ, :yes:
গতবার মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ভুলচুককে কেন্দ্র করে এই লেখাটি লিখেছিলাম
আগামীদিনের বাংলাভাষী বিজ্ঞানানুরাগীদের কথা ।
মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে প্রত্যক্ষবাদের (positivism) সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়। নয়তো বিবর্তন নিয়ে এরকম মশকরা করার খোরাক পেতে থাকবেন।
মশকরাটা সম্ভবত জেনেটিক্স নিয়ে করেছেন। নাকি বিবর্তন? মোদ্দা কথা, বিবর্তনের আউটকামকে উনি পবিত্র ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন হিসেবেই ট্রিট করলেন। ওতে হাত দিলে নষ্ট হয়ে যাবে। হুমায়ুন আজাদ একেই মনে হয় বলেছিলেন “বৈজ্ঞানিক ভূতের গল্প”।
জাফর ইকবাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না তাই বলতে পারছি না কিছু। তবে
জাফর ইকবালকে নিয়ে পোলাপাইনের মাতামাতি অর্থহীন লাগে। তার মধ্যে আসলে আছে কি? অদ্ভুত অদ্ভুত সব নাম দিয়ে, ওয়েস্টার্ন রাইটারদের লেখা নকল করে লিখে নাকি বেশ নাম কামিয়েছে লোকটা(( শোনা যায়, আমি শিওর না)।
ব্যক্তিগতভাবে অনেক বন্ধুর কাছে শুনেছি তিনি খুব একটা সুবিধার লোক না। এই বন্ধুরা তার বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ে। কে জানে আসলে কি কাহিনী। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
আমি বলেছি, ব্যাক্তিগত ভাবে আমি তাঁকে যথেষ্ট সম্মান করি। উনি ওয়েস্টার্ন রাইটারদের লেখা নকল করেন এমন অভিযোগ শোনা গেলেও তার চাক্ষুষ প্রমাণ দেখা যায় নাই। উনার লেখা পড়ে দেখতে পারেন।
উনার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমিও পড়ি। এক শ্রেণীর মানুষ আছে যাদের কাছে তিনি ফেরেশতা, আবার এক শ্রেণীর কাছে তিনি সাক্ষাৎ শয়তান।
:no: দিল কেন? 😥 । আমি কি হেরে খারাপ কইছি নাকি ?? 😥
@সাইফুল ইসলাম, এই অভাগাও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।তাই উনার সম্পর্কে কিছু জানি।উনি মিডিয়া পেয়ারি লোক।মিডিয়াকে উনি এতই পছন্দ করেন যে মিডিয়া ছাড়া উনি কথাও যান না,কিছু করেন না।
আর নারীদের উনি অতিপছন্দ করেন।DJ পার্টিতে হলের মেয়েদের সাথে উনি ভালই নেচেছেন যেখানে পুরুষ নিষিদ্ধ ছিল। :guli:
@afjal suzann,
আপনার কমেন্ট দেখেই বোঝা যায় আপনি কি মতলবে এসেছেন। এই পোস্টকে আর সকল জাফর ইকবাল বিরোধী পোস্টের সাথে গুলিয়ে ফেলার মত ভুল করবেন না। ব্যক্তি আক্রমণকে মুক্তমনা কখনোই প্রশ্রয় দেয় না।
:guli: এটা দেখেই বোঝা যায় গোলা গুলি ছাড়া অন্য কোন সুস্থ চিন্তা আপনাদের মাথায় আসে না।
আমি এই বিষয় নিয়ে এর আগেও বলেছি, একজন পিতা যদি তার কন্যার সাথে নাচেন তবে কিছু অতি সংকীর্ণ মনের মানুষই সেটাকে ওই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে। জাফর স্যার নিজেও ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতই মনে করেন। শাবিপ্রবির অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছাত্রীদের সাথে নাচেন। সেগুলোকে নিয়ে কিন্তু অন্যরা চেঁচামেচি করেন না। আর জাফর স্যারের ক্ষেত্রেই শুধু……
@afjal suzann,
– পুরুষ নিষিদ্ধ থাকলে সেখানে উনি করে ঢুকলেন একটু ব্যাখ্যা করবেন কি? মানে মহিলা সেজে বা বোরখার আড়ালে ঢুকে গেছিলেন (আজকাল নাকি শুনি অনেকে বোরখা পরে নানান কুকাজ করে), নাকি প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এমন ব্যাবস্থা করেছিলেন যে সেই মচ্ছবে তিনি একাই পুরুষ জাতির প্রতিনিধিত্ব করবেন? ওনার সৌভাগ্যে খুবই হিংসে হচ্ছে বি হনেষ্ট।
আপনার ব্যাখ্যার অপেক্ষায় থাকলাম। আপনি ওখানকার লোক নিশ্চয়ই ভাল জানবেন।
আমার কম্পিউটারে কেন জানি না ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে পেজে কোনো ইমেজই হাই রেজুলেশন আসসেনা। দয়া কোরে কেউকি বোলবেন কোথা থেকে হাই করা যায়!
@অচেনা অতিথি,
১। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের কোন ভারশন ব্যাবহার করছেন আপনি?
২। ইমেজ কি ছ্যাড়াভ্যাড়া ( 😀 ) হতে যাচ্ছে নাকি?
৩। সমস্যার উৎপত্তি কবে থেকে?
৪। আপনার গ্রাফিক্স কার্ডের ড্রাইভার ইন্সটাল করা আছে? না থাকলে করে নিন।
৫। এই সমস্যা কি অন্যান্য ব্রাউজারেও দিচ্ছে?
৬। কম্পিউটার একবার ভালো কোন এন্টি ভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন।
@সাইফুল ইসলাম,
১ এর জবাব- ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এইট।
২ ” ” – জবর রোসিক মানুষ আপনি। ছ্যরাব্যরা না, সুধু ওয়েব পেজে পিকচার গুলো লো-রেজুলেশন। তবে কন্ট্রল+ এফ ফাইভ চাপলে তা ফ্রেশ হয়। কিন্তু আমি চাচ্ছি অটোমেটিক হোক- ব্রাউজ করার সময়।
৩ ” ” – নতুন করে উইন্ডোজ সেট-আপ এর পর থেকে। তবে সেট-আপ ফ্রেশ ভাবেই হয়েছে।
৪ ” ” – ৪ এবং ৬ ঠিক আছে।
৫ ” ” – জি সব ব্রাউজারেই দিচ্ছে। (inter. exp. ‘8’ & mozilla firefox) চেস্টা করেছি।
(আমি মুক্ত-মনার নিয়মিত পাঠক)
আমার দু্ঃখে নজর দেয়ার জন্য আমি আপনার কাছে ক্রিতজ্ঞ।
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার কেন ব্যবহার করেন এটা আগে বলেন?
@সাইফুল: ভালো অ্যান্টিভাইরাস বলতে আসলে কিছু আছে বলে আমার জানা নেই। বাজে রকমে ট্রোজান হর্স ঠেকানো খুবই মুশকিল। আর অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি নিজেরাও ভাইরাস বানায়। ইউন্ডোজ ইন্টারনালি খুব দূর্বল একটা অপারেটিং সিস্টেম,তাই কিছুদিন পরপর একটা করে ভেজাল হয়।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
কতা হাচাই কইছ? 🙁 কিন্তু কি করমু কও, একটা ওএস বাদ দিয়া আবার আরেকটাতে যাওয়া বিরাট হ্যাপারে ভাই। এই জন্যেই লিনাক্সে যাওয়া হইতাছে না। আর আমি আবার সফটঅয়্যার ফ্রিক টাইপ। এইটাও উইন্ডোজে থাকার একটা বড় কারন। তবে সেইদিন বেশি দূরে না যেইদিন সবাই লিনাক্স ব্যবহার করব। এইটা শিওর। 🙂
@অভীক,
লেখাটি আমার ভাল লেগেছে। বিনা প্রশ্নে যে কোনো কিছু মেনে নেয়া বা বিখ্যাত-জনপ্রিয় কেউ কিছু লিখেছেন বলেই তাকে সত্য বলে মনে করা এসব প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে। বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীও কিছু বললেই তা গ্রহণযোগ্য হয় না যতক্ষণ না তা তিনি প্রমাণ করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
অভীক,
ধন্যবাদ পোষ্টটির জন্যে। জনগুরুত্ত্বপুর্ণ বিধায় মনযোগ দিয়ে পড়লাম। আমাদের দেশে সেলিব্রেটি হলেই যে আধুনিক ভাবনা সম্পন্ন হবেন এমন তো কোন কথা নেই! তবে হ্যাঁ ঐ যে বললেন, হোক সে কল্পকাহিনী, সাধারন তথ্য বিভ্রাট কিংবা সাংঘর্ষিক বিষয় গুলো পরিত্যাজ্য। বিশেষ করে যদি তা শিশু-কিশোর দের জন্যে হয়। আর আধুনিক মনষ্কতা তথা বিজ্ঞান মনষ্কতা একটি জ্ঞান এবং যুক্তি নির্ভর মানসিক অবস্থান, বিজ্ঞান এর ভিত্তি। এভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে অবিচল থাকা খুব সহজ কি? অন্ততঃ আমাদের মতো সমাজে। মোহাম্মদ জাফর ইকবাল সেই হিসেবে ঠিকই আছে, ওনার সীমায়। আজকের তরুন সমাজের উচিৎ ঐ সীমাকে অতিক্রম করা আর আগামী দিনের বিজ্ঞান নির্ভর যুক্তিবাদীতার ভিত্তিকে মজবুত করা।
@পি. পত্রপূট,
:yes: সুন্দর বলেছেন।
আসলে সমস্যাটা হলো জাফর ইকবালের মত লেখকদের উপর আমাদের নতুন প্রজন্মের অতি নির্ভরশীলতা।
কিন্তু আমাদের বাস্তবতায় তরুন সমাজের ঐ সীমাকে অতিক্রম করে যাবার ক্ষমতা ও সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ, এটাই দুশ্চিন্তার বিষয়।
@সৈকত চৌধুরী,
আমার কিন্তু অন্যরকম মনে হয়! তথ্য এবং জ্ঞান কিন্তু থেমে থাকে না। আমাদের চার পাশের জানালাটা অনেকটাই খুলেছে, আরো খুলবে; সন্দেহ নেই! আজ যারা লিখছেন, ছড়াচ্ছেন আলো, এই সব আলোচনা পর্যালোচনা ও বিতর্কে, এটাই উদ্বুব্ধ করবে সবাইকে। আমার মনে হয় আমার ছোটবেলা আর আজকে দেখা আমার ছোটবেলার মধ্যে অনেক অনেক তফাৎ! অথচ অর্ধ শতকেরও কম সময়! কিছুটা ধীর লয়ে হলেও অর্জনটা হতাশার নয়, কি বলেন? এই ব্লগেই এমন অনেক শক্তিমান লেখক আছেন যাঁদের লেখার আমি রীতিমতো পোকা। যাই হোক আমি আশাবাদী।
বিবর্তনের কথা বললেই কি নিরীশ্বরবাদী হতে হবে? ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেথ মিলার তো নিরীশ্বরবাদী না, কিন্তু তিনি তো ঠিকই আইডির বিপরীতে বিবর্তনবিদ্যাকে ডিফেন্ড করছেন। একজন রোমান ক্যাথলিক হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই “আশরাফুল মাখলুকাত” এর ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করবেন না? এই আদর্শিক স্ট্যান্ডপয়েন্টটা স্ববিরোধী হলেও অস্বাভাবিক কিছু না।
@পৃথিবী,
এই স্ববিরোধী কিন্তু অস্বাভাবিক নয় কথাটা নিয়েই কেনেথ মিলারের সাথে জেরী কোয়েনের (যার “বিবর্তন কেন সত্য” এর বাংলা অনুবাদ ইরতিশাদ এই ব্লগে করেছেন “বিবর্তনের সাক্ষ্য প্রমান” শিরোনামে) এক বিতর্ক হয়েছিল। বিতর্কের প্রাসঙ্গিক অংশটা তুলে দিচ্ছিঃ
Miller clears his throat as follows:
In one piece he [JAC] compared religious scientists who might defend evolution to “adulterers.” In another he argued that making a case for compatibility of science and faith was akin to peddling cancer by lying about the ill effects of tobacco. To Coyne, the pro-evolution arguments of religious scientists such as Francis Collins, George Coyne, or Karl Giberson are not only unwelcome, but downright dishonest. In his words, this is because “when one makes pronouncements about faith that involve assertions about science, the science always suffers.”
Right off the bat, Miller is trying to stimulate the reader’s antipathy toward me by saying that I compared religious people to “adulterers.” What a horrible guy! How could Coyne say such a thing! But let’s look at what I really said:
True, there are religious scientists and Darwinian churchgoers. But this does not mean that faith and science are compatible, except in the trivial sense that both attitudes can be simultaneously embraced by a single human mind. (It is like saying that marriage and adultery are compatible because some married people are adulterers. )
বাংলা সারমর্ম(আক্ষরিক অনুবাদ নয়) হলঃ
মিলার বলেনঃ
এক জায়গায় কোয়েন ধর্মে বিশ্বাসী যেসব বিজ্ঞানীরা বিবর্তন সমর্থন করেন তাদেরকে ব্যভিচারী বললেন আবার আরেক জায়গায় যুক্তি দিলেন যে বিজ্ঞানের সাথে বিশ্বাস সামঞ্জস্যপূর্ণ এই মতকে সমর্থন করাটা অনেকটা তামাকের কুফল সম্পর্কে মিথ্যা বলে ক্যান্সার বিস্তারে সহায়তা করার মতই।
উত্তরে কোয়েন বল্লেনঃ
মিলার আমার বিরুদ্ধে পাঠকদের মনে বিদ্বেষ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন এই বলে যে নাকি আমি ধর্মীয় বিজ্ঞানীদের ব্যভিচারী বলেছি । মিলার বোঝাতে চাইলেন কি সাংঘাতিক লোক এই কোয়েন! কি করে কোয়েন এটা বলতে পারলেন! কিন্তু আসুন দেখি আসলে আমি কি বলেছিলাম। আমি বলেছিলামঃ
আমার মন্তব্যঃ একজন বিজ্ঞানীর উদাহরণ দিয়ে কোন মত গ্রহণীয় হতে পারে না। সেটা Argument from Authority এর হেতুদোষে দুষ্ট হবে। না। মতের গ্রহণীয়তার স্বতন্ত্র মানদন্ড থাকতে হবে যুক্তির আলোকে। ধর্মে বিশ্বাস আর বিজ্ঞান পরস্পর বিরোধী, যুক্তির আলোকেই। আর যা ঘটতে দেখা যায় (স্ববিরোধীতাপূর্ণ হলেও) সেটাই স্বাভাবিক বলাটা Naturalistic Fallacy এর হেতুদোষে দুষ্ট হবে।
@অপার্থিব,
আপনার আর্গুমেন্ট ঠিকই আছে। আমার মাথায় যে দুষ্ট চিন্তা উঁকি দেয়, ধর্মে বিশ্বাস আর বিজ্ঞান necessarily পরস্পর বিরোধী না। কারণ ধর্ম বিশ্বাস অধিবিদ্যা নিয়ে ডিল করে, বিজ্ঞান করে না। তবে বিজ্ঞানের কিছু শক্তিশালী দর্শন আছে, যেগুলো অধিবিদ্যাকে নাকচ করে। ওই দর্শনের সাথে ধর্মে বিশ্বাস পরস্পর বিরোধী।
আরো যেটা মনে হয়, অনেককেই দেখি বিবর্তনে সম্পূর্ণ আস্থাশীল হওয়া সত্ত্বেও এর নিয়ামক হিসেবে এবং বিশ্বসৃষ্টির নিয়ামক হিসেবে একজন অধিকর্তাকে কল্পনা করেন। যৌক্তিকতার ভিত্তিতে তাদের এই দুই ধারণা কিন্তু স্ববিরোধী দেখায় না। যারা বিবর্তন দিয়ে বিশ্বাসকে ঘায়েল করতে চান, তাদের এটা বোঝা আমার মতে জরুরি বিবর্তন দিয়ে ধর্মের অনেক রূপকথা বাতিল করা যায় বটে, তবে মানুষের অধিকর্তায় বিশ্বাসে কিন্তু বিন্দুমাত্র আঁচড় ফেলা যায় না। Scientific deism না কিসব যেন আছে। বহুবিশ্ব তত্ত্বের ফাঁকে একজন সর্বক্ষমের ল্যাবে এই বিশ্ব সৃষ্টি হবার কল্পনা করাও আছে। কোয়ান্টাম অমরত্ব ও ইত্যাদি প্যাচাল থেকে ঘুরে ফিরে পুনর্জন্ম, আত্মা ও অধিকর্তাতে এসে ঠেকা, এগুলো সমকালীন ট্রেন্ড। এগুলোই ভবিষ্যতের বিশ্বাসীদের ধর্মের এলিমেন্ট। এগুলো বিবর্তন দিয়ে দূর হবে না। এমন কি যদি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা পর্যবেক্ষণগত সাক্ষাত উপাত্ত দিয়ে সপ্রমাণ করেন যে এসব আচরণের পেছনে বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা আছে, তারপরেও কিন্তু যৌক্তিকভাবে এটা নাকচ হয় না যে ওগুলো নেই। যদিও আমি শিওর না ওগুলো কেন নাকচ করতে হবে, তবে এগুলো নাকচ করার অ্যাপার্যাটাস ভিন্ন।
@ধ্রুব,
একমত । পৃথিবীও সেটাই বলেছিল তার প্রথম লাইনে। আমি তার উপর মন্তব্য না করে তার শেষের অংশের উপর মন্তব্য করেছিলাম। পৃথিবীর প্রথম লাইনের মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে মন্তব্যটা এখানেই করি।
যেহেতু ইশ্বরের সংজ্ঞার এক বিরাট পরিসর বা প্রসার আছে, যার কোন কোনটা বিজ্ঞানের বিরোধী নয় তাই এটা ঢালাওভাবে বলা যায় না যে বিবর্তনের কথা বললেই নিরীশ্বরবাদী হতে হবে। তবে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মসমূহের ধারণাকৃত ইশ্বর (বা ইশ্বরে বিশ্বাস) বিজ্ঞানের সঙ্গে বিরোধপূর্ণই বটে। অজানা যে কোন কিছুকেই (যেমন কোন কার্যের অজানা কারণ) ইশ্বর সংজ্ঞা দেয়া যায়। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের কোন কারণ যদি থেকে থাকে তবে সেই অজানা কারণকেও ইশ্বর বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়। আর কারণ না থাকলে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মকেই ইশ্বর বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়। কারণ পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের কারণেই বিশ্ব তথা জীবজগত সৃষ্টি হয়েছে বলে আমাদের যুক্তিপূর্ণ ধারণা এখন। আবার সনাতনী অধিবিদ্যা অনুযায়ী সমগ্র মহাবিশ্বকেই ইশ্বর বলে সংজ্ঞা দেয়া যায় (Pantheism). এই ধরণের সংজ্ঞার ইশ্বর বিজ্ঞানের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ নয়।
@পৃথিবী,
না এমন কোন কথা নেই। তবে বিবর্তনবাদ আর ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ দুটি পরষ্পর বিরোধী কথা। কারণ ‘সর্বর্শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ’ বলতে বোঝায় মানুষ এমন একটি প্রজাতি যা কেউ একজন ইচ্ছাকৃতভাবে সবার সেরা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। যা সৃষ্টিতত্ববাদের দিকে চলে যায়। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, মানুষ হল বিরাজমান প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত। তবেই আর কোন বিতর্ক থাকে না।