১৮ অক্টোবর আমার এক ফেসবুক বন্ধু রবিউল মানিক নিম্নোক্ত চিঠিটি পাঠান:
হাসানআল ভাই শুভেচ্ছা জানবেন।একজনের বাসায় জনৈক ইমরান মাহমুদ বি.কম.বি. পি. এড সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশ সমগ্র কৌতূহল বশতঃ নাড়াচাড়া করতে গিয়ে ভূমিকা পড়ে জোর একটা ধাক্কা খেলাম সম্পাদকের চৌর্যবৃত্তি লক্ষ্য করে। লেখক বিন্দুমাত্র পরিশ্রম না করে আপনার লিখিত ‘জীবনানন্দের রঙতুলি’ প্রবন্ধের সারোৎসারটুকু তুলে ধরেছেন(আপনাকে জানানো কর্তব্য বলে মনে করলাম)। বইটার প্রকাশনীর কোন ফোন নাম্বার আমি পেলাম না। আপনার জন্যে আমি ভূমিকাটুকু হুবহু তুলে ধরলাম (ভুল বানানসহ)।
ভূমিকা ।। জীবনানন্দ দাশ(১৮৯৯-১৯৫৪) আধুনিক কবিতার সার্থক রুপকার।জীবনানন্দ দাশের কবিতা মানুষের মন ও মননের কথা বলে।তাঁর কবিতা আমাদের জীবন-জটিলতাকে তিনিই প্রথম কবিতায় গভীর উপলব্ধিসহ প্রকাশ করেন। বাংলার জল,মাটি ও মানুষের কবি তিনি।জীবনানন্দ আলোছায়া,নির্জনতা ও শিল্পবোধ জারিত বিবেক ও বিবেকহীনতার কবি।তাইত তিনি বিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ কবি।মানুষ ডুব দেয় তাঁর অতীন্দ্রিয় উর্বর শতকে।
তাঁর কবিতা আমাদের সমাজ,সভ্যতা ও চৈতন্যকে সচেতন করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ,এলিয়ট,পাবলো,নেরুদা,এজরা পাউন্ড,অকটাভিও পাজ প্রমূখ কথা স্বরণ করেই তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনটি পাকাভাবে ছেড়ে দেয়া যায়। ”হাজার বছর ধরে” কবিতার পথে তাঁর বিচরণ_”বিম্বিসার ধূসর জগত হয়ে তিনি পৃথিবী প্রদক্ষিন করেন নিজস্ব সৌন্দর্যের মাঝে।তিনি হয়ে ওঠেন সম্পূর্ণ আলাদা-একক সৃজনশীলতার নিমগ্ন সত্তা শব্দ ব্যবহার আর বাংলার রুপ নির্ণয়ে।তিনি বলেন “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি।তাই আমি পৃথিবীর রুপ/খুঁজিতে চাই না আর।
কবিতার পরতে পরতে তিনি চিত্রের পর চিত্র সাজিয়ে গেছেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতাকে বলা হয়েছে চিত্র রূপময়। এ চিত্র কখনো সহজ সরল বাংলার মুখ ও অনাদিকালের চির চেনা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে নিজস্ব ভাষা ও আঙ্গিকের স্বচ্ছতায়।আবার কখনো ইতিহাসের করাল বলয়ে হয়েছে সিক্ত। একই সাথে সমাজের রন্ধে ঢুকে খুঁযে এনেছে সম্ভাব্য শুদ্ধি্র ঢেউ।ইতিহাস ও ঐতিহ্যের হাত ধরে বাংলাদেশের পথ থেকে তিনি আমাদের নিয়ে গেছেন পৃথিবীর পথে।বছরের পর বছর ধরে জানতে চেষ্টা করেছেন একজন দার্শনিক কবিকে-যার ফসল “এ পোয়েট এপার্ট” গ্রন্থ। জীবনানন্দ দাশকে জানার, বুঝার ও দেখার জন্যে এ গ্রন্থ পূর্ব ও পশ্চিমের সিঁড়ি।
জীবনানন্দ দাশ নিজেকে শুধু কবিতার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। প্রবন্ধ,গল্প,উপন্যাসের এক বিপুল সম্ভারও তিনি উপহার দিয়েছেন। তাঁর গদ্যের যে খনির সন্ধান আমরা পেয়েছি পরিমানে তা কবিতার থেকে কোনো অবস্থাতেই কম হবে না।তাঁর কবিতা বিষয়ক চিন্তাশীল প্রবনধ ও বেশ ক’টি উপন্যাস সৃষ্টির জৌলুসে সময়ের গন্ডি পেরিয়ে যায়। এক কথায় বলা যায় যে, জীবনানন্দ দাশের তুলনা হয় না।
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলি একত্রিত করে প্রকাশক ”জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতাসমগ্র” প্রকাশের এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।
নিবেদক-ইমরান মাহমুদ বি.কম.বি. পি. এড প্রকাশকঃ অক্ষর, ৩৮ বাংলাবাজার, ঢাক১১০০।
—————————————————————–
জীবনানন্দের রঙতুলি প্রবন্ধটি আমার ‘কবিতার জন্মদাগ’ (মাওলা, ২০০৮) গ্রন্থে সংযোজিত। অবশ্য প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ‘অমিত্রাক্ষর’ পত্রিকায়।
শিক্ষিত সমাজে যেভাবে চোরের উৎপাত শুরু হয়েছে, তাতে ভালো শিক্ষিত মানুষেরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তা সত্যিই ভাববার বিষয়। :-/
এমন ঘৃণ্য মনোবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিকে মন থেকে ধিক্কার জানাই।
@মাহফুজ,
গ্রহণ করাটা কখনোই খারাপ কিছু নয়; তবে উপযুক্ত উদ্ধৃতি ব্যবহারের দরকার পড়ে। তাছাড়া এভাবে যদি সম্পূর্ণটা নিতে হয়, তবে লেখকের অনুমতি নিয়ে ওই লেখাকেই ভূমিকা হিসেবে ব্যবহারও করা যেতে পারে। কিন্তু, মাহফুজ, আমাদের সমস্যা হলো আমরা অন্যের কষ্টার্জিত সম্পদকে নিজের করে চালিয়ে দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। চর দখল, জমি দখল, ঘর দখল, দেশ দখলের কাছে জানি সাহিত্যের এই ধরনের দখলদারিত্ব হার মানায়, তথাপি বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে কপিরাইট আইন শক্ত ভাবে যতো দিন কার্যকর না হবে ততোদিন এমনটি চলতেই থাকবে।
জীবনানন্দ দাশ আর পাবলো নেরুদা তুলানামুলক আলোচনা চাই প্লিজ!
হাসান ভাইকে যে ভাবে চুরি করা শুরু হয়েছে, তাতে করে জীবিত থেকেই হাসান ভাই একদিন নেই হয়ে যাবে ! anyway, আবারো কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
হাসান ভাইয়ের লেখা এই নিয়ে দুই বার চুরি হল। আমি বুঝি না আসলে এই লেখকগুলো মানুষ, নাকি? আজিব লাগে। :-X :-X
@সাইফুল ইসলাম,
দুই বার নয়, বড়ো আকারে তিন বার। বাংলাদেশের এক দৈনিকে শহীদ কাদরীকে নিয়ে লেখা আমার বই থেকে আমাদের এক বন্ধু সমস্ত তথ্য এবং পঞ্চাশের চার কবির উপর আমার মূল্যায়ন হুবহু নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। এটাও এক ধরনের চুরি হলেও, তথ্য সূত্রে বইটির উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছিলো।…কিন্তু এখানে মানে এই ভূমিকায় যা ঘটেছে তা একেবারেই ঠিক নয়। …বাংলাদেশের প্রকাশনার জগত এতোটা নিচে নেমে গেলো কেনো বুঝতে পারছি না।
একি কান্ড হাসান ভাই 😉 ,
আপনার এই লেখাকে চৌর্যবৃত্তি করার কারণে প্রতিবাদ করে উচিত না? জবাবের অপেক্ষায় আছি।
কি আশ্চর্য! এমন হলে কে কাকে বিশ্বাস করবে? এমন কি চলতেই থাকবে? ক’দিন আগেই মুক্তমনায় পড়লাম “এই লেখার কাহিনী কি?” আবার এই একই ব্যপার পুনরাবৃত্তি।
@আফরোজা আলম,
অবশ্যই প্রতিবাদ করা উচিৎ। এবং রবিউল মানিকের এই চিঠিও একটি প্রতিবাদ। তবে, প্রকাশকের পক্ষ থেকে দেখি কিছু করতে পারেন কি না।