১.
বাঙলাদেশের মত একটা রক্ষণশীল দেশে যেখানে সমাজ একজন ব্যক্তির জীবনে খুব গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেখানে একজন নাস্তিকের পক্ষে সমাজের বাকি দশ জনের সাথে মিলিয়ে চলা মাঝে মাঝে বেশ কষ্টকরই হয়ে পড়ে। এখানে ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তো নেইই, বরং আছে ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি অসহনীয় মানসিক নির্যাতন, কখনো কখনো যা আবার শারীরিক পর্যায় পর্যন্ত চলে যায়! নাস্তিকরা এখনো এখানে প্রকাশ্যে তাদের বিশ্বাসের কথা বলতে পারে না (ব্যতিক্রম আছে বইকি), ঈশ্বরে বিশ্বাস না করা সত্ত্বেও তাদেরকে অনেকসময় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়।
এখানেই একটা বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাদেরকে, নাস্তিকদের পক্ষে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? অথবা, যে নাস্তিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়, তাকে কি আমরা আদৌ নাস্তিক বলতে পারি?
সংকীর্ণভাবে চিন্তা করতে গেলে, যেহেতু নাস্তিকতা মানে ‘স্রষ্টায় অবিশ্বাস’, সেহেতু কোন ব্যক্তি ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠানে অংশ
নিলে তত্ত্বগতভাবেই তাকে ‘নাস্তিক’ বলা ঠিক হবে না। যে ব্যক্তি ‘স্রষ্টা’য় অবিশ্বাস করছে, সে আবার কিভাবে সেই
‘স্রষ্টা’রই আরাধনা করছে? – এই পরস্পরবিরোধীতার কারণেই আমাদের সমাজের গুটিকয়েক নাস্তিকদের এক বিশাল
অংশকেই আর ‘নাস্তিক’ বলা যাবে না।
কিন্তু, বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিলে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হয়ে যায়। আমি একটা ব্যক্তিগত উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা
পরিষ্কার করছি।
দুই বছর আগের কথা। তখন আমি পুরোদস্তুর নাস্তিক। আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও ব্যাপারটা জানা
হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা (বিশেষ করে আমার মা) ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিতে পীড়াপীড়ি করত।
আমি স্বভাবতই রাজি হতাম না, কিন্তু রাজি না হওয়ার মানে হচ্ছে একপ্রকার লঙ্কাকান্ড হয়ে যাওয়া (এ প্রসঙ্গে বলে রাখি,
আমার পরিবার বেশ রক্ষণশীল)! তাই কখনো তাদের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য, কখনো বা তাদের মনে কষ্ট না দেওয়ার
জন্য, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রায়ই অংশ নিতাম। তত্ত্বগতভাবে, তখন আমি নাস্তিক ছিলাম না!
আমি কিন্তু মনে করি তখনও আমি নাস্তিকই ছিলাম। নাস্তিকতা বলতে আমি বিশ্বাসগত ব্যাপারটাকেই (স্রষ্টায় অবিশ্বাস) বুঝি, আচরণগত ব্যাপারটাকে আমার কাছে গৌণই মনে হয়। একজন ব্যক্তিকে, আমার মতে, আমরা তখনই ‘নাস্তিক’ বলব যখন তার মধ্যে ‘স্রষ্টায় বিশ্বাস’ ব্যাপারটা অনুপস্থিত থাকবে; সে যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বা দুবেলা পূজা-আহ্নিক করে তারপরও সে বিশ্বাসী হয়ে যাবে না!
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে একজন বিশ্বাসীর সাথে একজন নাস্তিকের পার্থক্য আর থাকল কোথায়? পার্থক্য আছে ঠিকই,
তবে এই পার্থক্য তাদের আচরণে নয়, পার্থক্য তাদের আচরণের পেছনের কারণে। একজন বিশ্বাসী নামাজ পড়ে কারণ সে
বিশ্বাসকরে নামাজ পড়লে তার জান্নাতপ্রাপ্তির সম্ভাবনা বর্ধিত হবে; অন্যদিকে একজন নাস্তিক কখনোই জান্নাতপ্রাপ্তির সম্ভাবনায়
নামাজ পড়বে না, তার কারণটা হবে সামাজিক।
২.
এখন, একজন নাস্তিকের পক্ষে নামাজ পড়া অথবা পূজা দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক- এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের আলোচনাকে একটু ভিন্নদিকে সরিয়ে নিতে হবে। এখনও পর্যন্ত অন্তত বাঙলাদেশের নাস্তিকরা সমাজের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে আসছে, তাদের বেশির ভাগই নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বে হলেও ধর্মীয় কার্যকলাপে অংশ নিচ্ছে।এটা কিন্তু মোটের উপর নাস্তিকদের অবস্থার উন্নতি করছে না, বরং তাদেরকে আরো দীর্ঘকালের জন্য পর্দার আড়ালে রেখে দিতেই সাহায্য করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নাস্তিকদের উচিত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলো পুরোপুরি বর্জন করা,
সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হলেও। যেকোন নতুন ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে প্রচুর সময় নেয়, কিন্তু সেই নতুন ধারণার ধারকেরাই যদি ‘সামাজিক’ হয়ে ওঠে, তাহলে সেই ধারণা অন্তত নিকট ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠা হওয়ার সম্ভাবনা হারায়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো বর্জন করার পাশাপাশি আমাদের উচিত নিজেদের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় করা, যাতে আমরা পুরোপুরি ‘অসামাজিক’ না হয়ে উঠি!
তাহলে কি আমরা ঈদ বা পূজার মত সার্ব্বজনীন হয়ে ওঠা উৎসবগুলোকেও পুরোপুরি বর্জন করব? এখানে আবার আমি একটু দ্বিমত পোষণ করি। ঈদ-উল-ফিতর কিংবা শারদীয় দুর্গোৎসবকে আমি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবেও দেখি। ছোটবেলা থেকেই এই দুটো উৎসবেই আমি ইচ্ছেমত মজা করে এসেছি, আমি চাইনা আমি আমার আদর্শের জন্য এইসব মজা থেকে বঞ্চিত হই!
আমার বক্তব্যগুলোকে পরস্পরবিরোধী বলে মনে হতে পারে। ব্যাপারটা পরিষ্কার করছি।
আমি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের (rituals) বিরোধিতা করলেও অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ধর্মীয় উৎসবের (festivals) বিপক্ষে নই। পহেলা বৈশাখ একসময় পুরোপুরি ধর্মীয় একটা ব্যাপার ছিল, কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন এর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যাপারটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। আমরা দুই দিনে সবাইকে অবিশ্বাসী করে ফেলতে পারব না, কিন্তু চেষ্টা করলে যেকোন মানুষ কিছুদিনের মধ্যেই অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে পারে। অসাম্প্রদায়িকতা একসময় মানুষকে অবিশ্বাসের দিকেই নিয়ে যাবে, আর আমি মনে করি ঈদ-উল-ফিতর বা শারদীয় দুর্গোৎসবের মত উৎসবগুলো আমাদেরকে জাতিহিসেবে ক্রমশঃ অসাম্প্রদায়িকতার পথেই নিয়ে যাচ্ছে।
পরিশেষঃ
তবে, সব কথার শেষ কথা, নাস্তিকরা স্বাধীন। প্রত্যেক নাস্তিক, আমার বিশ্বাস, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে; তাই
নাস্তিকদেরকে কোন বাঁধা গন্ডির মধ্যে আটকে ফেলা যাবে না। আমরা বড়জোর বলতে পারি, নাস্তিকদের এটা করা
উচিত কিংবা ওটা করা উচিত না; কিন্তু কখনোই ‘তুমি নামাজ পড়, তুমি তো নাস্তিক নও’- এরকম কিছু বলতে পারি
না। নাস্তিক হতে হলে অন্য কোন যোগ্যতাই লাগে না, কেবল ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হলেই চলে।
(এই লেখাটার অনুপ্রেরণাটা এসেছে ফেইসবুকে “অ্যাথিয়েস্ট বাঙলাদেশ” গ্রুপে অন্যান্য কিছু নাস্তিকদের সাথে আলোচনার
ফলস্বরূপ।)
(অক্টোবর ষোল, ২০১০)
আতিক রাঢ়ী লিখেছেন –
“একই ব্যাক্তি যখন পুজা ও ঈদের মিষ্টান্ন ভোজে অংশ নেন তাকে আসলে মৌ্লবাদি বলা যায় কি ?”
আমি তো তেমন কথা কোত্থাও বলিনি! বরং আমি অংশ নিচ্ছি না বলে মৌলবাদীর খেতাব পেয়ে গেলাম।
আপনার পরিবারের যে কাহিনী বললেন, তা খুবই পরিচিত এবং এক্ষেত্রে আপনার এই আচরণটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ও কাঙ্ক্ষিত। আপনার জায়গায় আমি থাকলে তেমনটিই করতাম।
আমার কাছেও প্রথমে মানবিকতা। কিন্তু কিন্তু কারুর কোনো ক্ষতি না করে ধর্মীয় উৎসবে অংশ না নেওয়াটা কি অমানবিকতার পর্যায়ে পড়ে? এবং তেমন কাউকে মৌলবাদী বলা চলে?
@কৌতূহলী,
ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেয়া আর পালন করা মনে হয় এক ব্যাপার না। তবে এই ব্যাপারে নাস্তিক মহলে ভাল একটা বিতর্ক বা মতাদর্শিক সংগ্রাম হওয়া প্রয়োজন।
আমার ব্যাক্তিগত মত হচ্ছে, আমি কিছুটা কনফিউজড। আমরা যারা ধর্মীয় আনুষ্ঠানে কম-বেশী আংশ নেই, তারা সুবিধাবাদী নাকি যারা অংশ নেন না তারা মৌলবাদি। কেমন না ব্যাপারটা, হয় আপনি/আমি মৌ্লবাদি না হয় সুবিধাবাদি। বাস্তবতা যাই হোক পরস্পরের প্রতি আমাদের ধারনা এমনই।
আমরা নিজেদেরকে যদিও মোটাদাগে আদর্শ নাস্তিকই মনে করি।
এমন বিভাজন আস্তিকদের মধ্যেও আছে এবং অমিমাংশিত। দেখা যাক যুক্তি আমাদেরকে কোন সমাধানে পৌছায় কিনা ? মানে ধর্মীয় আনুষ্ঠানাদিতে আমাদের যৌক্তিক আচরন নির্ধারন করা সম্ভব কিনা ?
ধরুন আমার কাহিনী, আমার বাস্তবতা হলো আমাকে আংশ নিতে হচ্ছে। আপনিও আস্বী্কার করছেন না যে আমার আচরন যৌক্তিক। প্রত্যেকে যারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কোন না কোন ভাবে অংশ নিচ্ছেন তাদেরও কাহিনী আছে।
মানুষের জীবনে কাহিনীতো থাকবেই। কিন্তু অনমনীয় ভাবে, কোন ব্যাতিক্রম ছাড়া, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকাকে আমার কাছে মৌলবাদি আচরনই মনে হয়।
কিন্তু আপনি যেহেতু আমার কাহিনীকে যৌক্তিক ও মানবিক বলছেন, ফলে আপনাকে মৌ্লবাদি বলা যাচ্ছে না। কারন প্রয়োজনে আপনিও যৌক্তিক আচরন করবেন এটা নিশ্চই আশা করা যায়।
লেখকের সাথে একমত জ্ঞাপন করছি।
টপিকটা ভাল লেগেছে…
নাস্তিকতা আসলেই কি মানবতাবোধকে আনবে না? না কি আনবে?
আমার মতে আনবে। কারন একজন নাস্তিক হলে যে শুধু ঈশ্বরের অবিশ্বাসের পাশাপাশি যুক্তিনির্ভর হবে। তার বুদ্ধিমত্তারও বিকাশ ঘটাবে।
সাইফুল ইসলাম বলেছেন, নাস্তিকতার সংজ্ঞা হল ঈশ্বরে অবিশ্বাস করা। এর সাথে ঈদ পুজোর কোন সম্পর্ক মনে হয় নাই। এগুলো বর্জন করলে মৌলবাদীদের সাথে মনে হয় কোন পার্থক্য থাকে না।
আমার বক্তব্য –
তাই? পুজা-ঈদে অংশ নিই না, আমি তো তাহলে রীতিমতো মৌলবাদী!
এবার বলুন, ঈশ্বর নামের ধারণা না থাকলে ঈদ-পুজা থাকতো আমাদের জীবনে? থাকতো না। এর মানে, ঈশ্বর-অবিশ্বাস মানে ধর্মহীনতাও। কারণ কেউ ঈশ্বর-অবিশ্বাসী বলেই সে সঙ্গত কারণে ধর্মহীনও। অর্থাৎ ঈশ্বর-অবিশ্বাসের সঙ্গে ধর্মীয় উৎসবে অংশ না নেওয়ার সম্পর্ক আছে।
অথচ আপনি বলছেন, ধর্মীয় উৎসবে অংশ না নিলেই নাস্তিকরা (ধর্মহীনরা) মৌলবাদী বনে যায়? এই ধরনের ঢালাও মন্তব্যগুলোই বরং মৌলবাদী মনে হয়।
আমি ধর্মসংশ্লিষ্ট আচার-প্রথা-উৎসব পরিত্যাজ্য বলেই জ্ঞান করি। প্রথা মানবো না, তবে উৎসবে আছি ষোল আনা, এই রকম অবস্থানটা একটু সুবিধাবাদী বলে মনে হয় না?
না মনে হলে চলুন নাস্তিক ভাই ও বোনেরা, আসন্ন কুরবানিতে একটা করে পশু জবাই দিই, পুজা-পার্বনে পশুবলি দিই, আশুরার রক্তাক্ত উৎসবে যোগ দিই… উৎসবে অংশ নেওয়া বলে কথা!
@কৌতূহলী,
একই ব্যাক্তি যখন পুজা ও ঈদের মিষ্টান্ন ভোজে অংশ নেন তাকে আসলে মৌ্লবাদি বলা যায় কি ?
দেখুন ঈদের দিন অনেক আত্মীয়-বন্ধু বাসায় আসে। বাবা বেঁচে নেই, আমি ভাই, বোনদের মধ্য বড়। সবার নতুন জামা, ভাল খাবার এসবের আয়োজনের টাকা আমাকেই জোগাড় করতে হয়। আমি যদি বলি আমি নাস্তিক, আমি এইসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য টাকা দিতে পারবনা, এটা নাস্তিকতার বহিপ্রকাশ হতে পারে তবে মানবতা লুপ্ত হয়ে যায়।
নাস্তিকতা আর মানবতার মধ্যে কোনটা আমাদের আরাধ্য তা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। আমি দ্বিতীয়টার উপরে জোর দেই।
নাস্তিকতার সংজ্ঞা হল ঈশ্বরে অবিশ্বাস করা। এর সাথে ঈদ পুজোর কোন সম্পর্ক মনে হয় নাই। এগুলো বর্জন করলে মৌলবাদীদের সাথে মনে হয় কোন পার্থক্য থাকে না। 🙂
আমি কোনদিন পুজা করি না ্েউ আমাকে জোরও করে না। কেউ পূজায় নেমন্ত্রন করলে যাই কারণ মানুষের সঙ্গে ভাবের আদান প্রদান করতে, সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতে(আপনারা আবার পেটুক ভাববেন না আমাকে)। পুজা হল উপলক্ষ্য মাত্র আসল কথা সমাজের মানুষ একত্রিত হওয়া।তাতে নাস্তিকতা হারানোর কিছু আসে যায় না। তাতে কেউ মুর্ত্তিকে প্রণাম করার জন্য আমাকে অনুরোধ করে না । কারণ তারা জানে আমি নাস্তিক। গত দূর্গাপুজায় বের হয়েছি মাটির মুর্ত্তি দেখতে নয়। মানুষের সাথে মিলিত।
আমি ভাই হেডোনিস্ট। সবার সাথে একসাথে জুমার নামায পড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করার ব্যাপারেই আমি আগ্রহী, এতে করে আমার নাস্তিকতা চলে গেলে আমার কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজ কেন, আমেরিকার উদার সমাজেও আমি এই কাজ করব যদি সেখানে সেটার স্কোপ থাকে। নাস্তিকতা একটা দর্শন। সচেতনভাবে কেউ যদি এই দর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে, তখনই কেবল তাকে আস্তিক বলা যায়।
ঠিক।
এইটা অনেক জটিল ব্যপার। প্রথম প্রথম নাস্তিক হবার পরে, কেউ পাত্তা দিত না। নামাজ বা ঈদ উৎসব এসব পালন করার জন্য জোরাজুরি করত। ভাবত, এসব পাগলামি, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। ঈদে বন্ধুরা নতুন পাঞ্চাবি পড়তো আর আমি পুরাতন জামা পড়ে ঘুরতাম। মনে আছে, নিজেকে কেমন জানি বেকুব বেকুব লাগতো। এখন সবার সাথে মিশে যাই, কি ঈদে, কি পূজোয়, ভালই লাগে, হবার হাসি হাসি মুখ দেখতে ভালতো লাগারই কথা।
তবে, মোহাম্মদ বা গৌতম এর কথা ধরুন, মোহাম্মদ যখন থেকে নিরাকার স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়ে উঠলো তার পর থেকে সে বা তার অনুসারীরা আর প্রতিমার সামনে মাথা নত করেনি। গৌতমও তাই। তারা অনুসারী তৈ্রী করেছে, ভিন্ন সমপ্রদায় গড়েছে। আমরা যদি অনুরূপ নাস্তিক সম্প্রদায় গড়তে চাই তবে এসব ধর্মীয় আচার থেকে দূ্রে থাকতে হবে। তানা হলে অনুসারী তৈ্রী হবে না।
আমার চারপাশে অনেক ক্ষুদে নাস্তিক তৈ্রী হয়েছে। আমি তাদের আদর্শ। আমাদের সময় খারাপ যায় না। আমরা নামাজ পড়ি না, কিন্তু ভাল প্রটিনের প্রস্তাব প্রত্যাক্ষানো করি না। মানে কেউ আল্লার নামে আমাকে দাওয়াত করলে খেতে আমার কোন আসুবিধা হয়না।
আসলে আমি চাই সমমনা লোক তৈরী হোক। ফলে বিচ্ছিন্নতা কে এড়িয়ে চলি। আমি যদি না মিশি তবে আমার চিন্তা দ্বারা আমি কাউকেই প্রভাবিত করতে পারব না।
লেখাটার ভিতর আপনাকে অনেক দ্বিধায় পড়তে দেখা গেছে।
আজকে একজন কোথায় যেন লিখেছিলেনঃ
“ধর্ম হোক যার যার, উৎসব হোক সবার।”
এই “অনুষ্ঠান” ধর্মের একটি বহিরাবরন মাত্র। এই অনুষ্ঠান থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। ধর্ম গুরুরা সত্যকে সাগর মনে করেন, আর সর্ব সাধারনের জন্য সেই সাগর থেকে একটি অনুষ্ঠানের বিন্দু সর্বসাধারনের জন্য দিয়ে দেন পালন করিবার জন্য। এই অনুষ্ঠান থেকেই যুগে যুগে দুই একজন সেই সত্যের ঘ্রানে ছুটে যান। অনুষ্ঠানকে যারা আসল ধর্ম মনে করেন তারা বোকা।
এই সকল আস্তিক থেকে নাস্তিক থাকাটাই ভাল। অত্যন্ত এই অনুষ্ঠান (নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, পুজো, উপোস ইত্যাদি) এর দোহাই দিয়েত আর মানুষকে মানুষ থেকে ভাগাভাগি করেনা, হত্যা করেনা, ঘৃনা করে।
যাইহোক তবে নাস্তিক হতে সাধনার প্রয়োজন আছে, আস্তিক হতে সেই সাধনার দরকার হয়না বলে মনে হয়। শুধু মগজে ঘিলু থাকলেই আস্তিক হওয়া যায়, অনুষ্ঠান পালন করতে জ্ঞানের দরকার হয়না। তবে অনেকেই আছে যারা আজকাল দেখা যায় নিজেকে নাস্তিক বলতে খুব পছন্দ করেন, কিছু না বুঝেই, বা যুগের সাথে তাল মিলাতে অনেক সময় নিজেকে নাস্তিক বলতে খুব পছন্দ করেন, এবং বলেও বেড়ান …তাদের জন্যেও হাসি পায়, সাথে দুঃখও হয়।
লেখাটার ভিতর আপনাকে অনেক দ্বিধায় পড়তে দেখা গেছে। যাইহোক ভাল থাকবেন
ধন্যবাদ
প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব সূচনার পেছনে অবশ্যই কোন না কোন ধর্মীয় সংকীর্নতা বোধ কাজ করেছিল সে সময়, কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান সার্বজনীন উৎসবের রূপ লাভ করেছে ধর্মীয় সংখ্যাধিক্যের প্রচার প্রসারের ভিত্তিতে। সংখ্যাধিক্য কথাটা এই জন্য বললাম কেননা বৌদ্ধদের বৈশাখী পূর্ণিমা বা খ্রীষ্টানদের বড়দিন আমার মনে হয় ঈদ বা দূর্গা পূজার মত মোটেই সার্বজনীন রূপ লাভ করতে পারে নি এখনো আমাদের দেশে। এক জন ধার্মিকের উৎসব পালনের আনন্দ আর এক জন নিধার্মিকের উৎসব পালনের আনন্দে সামিল হওয়ার মধ্যে মূলত কোন পার্থক্য নেই। আনন্দ এখানে দু”জনের কাছেই সমান তবে পার্থক্য চেতনা গত।এক জন ধার্মিক ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন করে সম্পূর্ণ ধর্মীয় মূল্যবোধ সুরক্ষায় থেকে আর নিধার্মিক সেখানে সামিল হয় সামাজিক মূল্যবোধ সুরক্ষায়।
@রাজেশ তালুকদার,
এটাই আসল ব্যাপার।
😀 এইবার দেশে সকাল সকাল বকা খেয়ে ঈদ এর নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা মনে পরে গেল। খেলার মাঠে সস্তা চটে সিজদা :guru: দিয়ে ৩ দিন কপালে দাগ নিয়ে ঘুরলাম আর সবার টিটকারি শুনলাম । :-Y ।নাস্তিক হওয়ার কারনে নাকি এমন হলো আমার সাথে। :laugh:
তবে সকাল সকাল সবার সাথে সুন্দর একটা সময় কাটানোর লোভ আটকাতে পারিনি।অন্য কিছু না।
লেখাটি ভাল হয়েছে।খুব মনোকষ্ট নিয়ে লিখলেন 🙂 ।ধন্যবাদ।
@আনোয়ার রানা,
আপনাকেও ধন্যবাদ সস্তা চটে সেজদার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য :laugh:
সমাজে চলতে গেলে ভাল লাগুক আর না লাগুক অনেক কিছুই পালন করতে হয়। বিশেষ করে যা পালন না করলে বৃথা ঝামেলা বাড়ে গোয়ার্তুমি দেখিয়ে তা পালন করে ঝামেলা এড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
ঈদ, পূজা, ক্রিসমাস এগুলি ধর্মীয় সূত্রের উতসব হলেও এগুলি এখন সার্বজনীন উতসব হয়ে গেছে। এসব আনন্দে শরিক না হওয়টা বড় ধরনের বোকামির লক্ষন। এসব আনন্দে যোগ দেওয়া মানেই সেসব ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে এমন কোন কথা নেই। উতসবের একটা আমেজ থাকে যা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে আসে। যে সমাজে যে ধর্ম সংখ্যাগুরু সে সমাযে সেই ধর্মের উতসব প্রাধান্য বিস্তার করবে এটাই স্বাভাবিক। তার মানেই এই না যে অন্য ধর্মের লোকেরা সেই আনন্দের ভাগ পাবে না। ভারতে পূজো নবরাত্রির উতসব মুখর পরিবেশ নিশ্চয়ই মুসলমান বা খৃষ্টান এরাও উপভোগ করে। তেমনি বাংলাদেশের ঈদের আমেজ হিন্দুরাও উপভোগ পায়। এর মানে কি সেই ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে যাওয়া নাকি? নাস্তিকেরাই বা তাহলে বাদ থাকবে কেন? এই আনন্দ কেউ পায় না দাবী করাটা স্বাভাবিক নয়।
তবে টিপিক্যাল আস্তিক নাস্তিক বিতর্কে আস্তিকেরা একসময় নাস্তিকদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন। ধর্ম এত খারাপ লাগলে ঈদ কেন পালন কর? হুমায়ুন আজাদেরও নামাজে জানাজা পড়া হয়েছিল এসব টেনে আনেন।
@আদিল মাহমুদ,
তা তো আছেই, এর চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমার যেটা করার ইচ্ছে করবে আমি সেটাই করব, এখানে ধার্মিকরা কথা বলার কে?
ধুস। এত ভাবেন কেন? আমি কালী মন্দিরে কাল মহাষ্ঠমীতে যোগ দিয়ে আসলাম। হাজার দুই লোক ছিল। এত লোকের আনন্দের মধ্যে সামিল না হওয়াটা আরেক ধরনের নাস্তিক মৌলবাদ হত। তবে আমি পূজো দিতে বা প্রনাম করতে অবশ্যই যায় না- সবার সাথে দেখা হওয়া, আড্ডা- এক সাথে খাওয়া দাওয়া এগুলো দরকার আছে।
কোন দিদিমা বা বৌদি যদি প্রসাদ দিতে আসে-আমি বলবো আমি নাস্তিক, তাই প্রসাদ খাই না? সেটাত আরেক ধরনের ছেলে মানুষি হবে যা ক্লাস ফাইভ সিক্সে করেছি।
রাষ্ট্র এবং তার উৎপাদনশীলতা-অথবা মানবতা বিরোধি কাজ না করলে ধর্ম বা ধার্মিকদের ধর্মানুভূতিতে অহেতুক আঘাত করার কোন কারন নেই।
@বিপ্লব পাল,
একমত। ঠিক এমনই কিছু আমি গত ঈদে আমার এক আস্তিক বন্ধুকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। তার একটাই কথা- আমি যদি নাস্তিক হয়ে থাকি তাহলে আমি ওদের সাথে ঈদ উদযাপন কেনো করছি। আমি তাকে এটা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে, আমি ঈদকে সামাজিক উৎসব/ মিলনমেলা হিসেবে দেখছি;ধর্মীয় আচার হিসেবে নয়।
@নিটোল,
খৃষ্টধর্ম থেকে ইসলামের জন্মে যত বৎসরের ব্যবধান, তত বৎসর (৬১০ বৎসর) পরে বেশিরভাগ মুসলমানেরা ঈদকে সামাজিক উৎসব/ মিলনমেলা হিসেবে দেখবে; ধর্মীয় আচার হিসেবে নয়।
@আকাশ মালিক,
শর্ত প্রযোজ্যঃ তত দিনে যদি ধর্ম জিনিসটা টিকে থাকে 😀 😀
@বিপ্লব পাল,
হ্যা জীবনটাকে নির্ঝঞ্ঝাট করে আরামে আয়েশে কাটিয়ে দেবার জন্য এই সবের অবশ্যই দরকার আছে যা আমরা প্রায় সবাই প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। কিন্তু আবার এটাও ঠিক যে পৃথিবীতে কিছু লোক এই আরামকে পরিত্যাগ করে সমাজের জন্য বৃহত্তর ত্যাগ স্বীকার করেছে বিধায় পৃথিবীটা আজও বসবাস যোগ্য হয়ে আছে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
পৃথিবী বসবাসযোগ্যতর হয়েছে প্রযুক্তির উদ্ভাবনে। উন্নত মানবিক আইন ও এসেছে উন্নত প্রযুক্তির হাত ধরে-শিল্প বিপ্লব না হলে আধুনিক সমাজ আইন কিছুই আসত না। চার্চের ডানা ছাটার পেছনেও শিপ্ল বিপ্লব। এর সাথে আস্তিকতা নাস্তিকতার কি সম্পর্ক?
@বিপ্লব পাল,
// এত লোকের আনন্দের মধ্যে সামিল না হওয়াটা আরেক ধরনের নাস্তিক মৌলবাদ হত।//
এ ধরণের কিছু নাস্তিক মৌলবাদী আসলেই আছে। তাদের মতে, নাস্তিকদের কোন ধরণের ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেওয়া উচিত না! তারা সম্ভবতঃ নাস্তিকতার মূল স্পিরিটটাই ধরতে পারে নাই, যেটা হচ্ছে ‘ধর্মীয় গোড়ামি’ থেকে স্বাধীনতা।
একমত
উপসংহারে লিখলেন ,”নাস্তিক হতে হলে অন্য কোন যোগ্যতাই লাগে না, কেবল ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হলেই চলে।” তার আগে লিখেছেন , “নাস্তিকরা স্বাধীন। প্রত্যেক নাস্তিক, আমার বিশ্বাস, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে।”
এখন স্বাধীন হওয়া এবং স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারাটা কি তাহলে আপনার দৃষ্টিতে নাস্তিক হওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত নয় ? আর কোন কিছু বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করতে তো জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। একজন মূর্খ ব্যক্তিও তো যে কোন কিছু বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করতে পারে। কোন কিছু জানা এবং বিশ্বাস করার মধ্যে নিশ্চয়ই পার্থক্য আছে ।
নাস্তিক একটা সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ বেদে বিশ্বাস না করা। জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা সেই অর্থে নাস্তিক বা হেটেরোডক্স (heterodox) । আস্তিক বা অর্থোডক্স (orthodox) অর্থ বেদে বিশ্বাস করা। ঐতিহাসিকভাবেই আস্তিক বা নাস্তিক হওয়ার সাথে স্বাধীন হওয়া এবং স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারার কোন সরাসরি সম্পর্ক নেই। স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে হলে আস্তিক বা নাস্তিকের বদ্ধ গন্ডী থেকে মুক্ত হয়ে পৃথকভাবে স্বাধীন চিন্তার চর্চা করতে হবে যার জন্য জ্ঞান প্রয়োজন। শুধুমাত্র বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যথেষ্ট নয়।
@সংশপ্তক,
//প্রত্যেক নাস্তিক, আমার বিশ্বাস, স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে।//
কথাটাতে একটু অসম্পূর্ণতা রয়ে গিয়েছে। ‘প্রত্যেক’ এর পরিবর্তে ‘বেশির ভাগ’ ব্যবহার করা দরকার ছিল। স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারা অবশ্যই আস্তিকতা-নাস্তিকতার উপর নির্ভর করে না, তবে নাস্তিকেরা সাধারণতঃ স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ফলস্বরূপই নাস্তিকে পরিণত হন। প্রাচীন ভারতের দার্শনিকরা যারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করেছেন (বেদের গন্ডি থেকে বের হয়ে) তারা বেশির ভাগই কিন্তু নাস্তিক (ঈশ্বরে অবিশ্বাসী অর্থে) ছিলেন। তারপরও এটা মানছি যে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সাথে ঈশ্বরে অবিশ্বাসের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই।
ধন্যবাদ ভুল সংশোধন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। 🙂
ধর্ম কেবল বিশ্বাসের ব্যাপার নয়,ধর্মীয় বিশ্বাসকে ধর্মীয় আচরণ দিয়ে সমর্থন করতে হয়। নাস্তিকতা প্রমাণে কোন আচরণ লাগেনা। ঈশ্বরে যারা বিশ্বাস করেনা তারাই নাস্তিক। তাই কেবল ধর্মীয় আচরণ করলে যেমন কেউ ধার্মিক হয়না, তেমনি ধর্মীয় আচরণ না করলে তাকে নাস্তিক বলা যায়না।সমাজে ধর্মীয় আচরণ করেনা এমন ধার্মিকের সংখ্যা এখনো অঢেল। দীর্ঘ দিন চলতে চলতে ধর্মীয় আচরণ সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। তা পালন করে সমাজের সবার সাথে নির্মল আনন্দ পেতে কোন ক্ষতি নেই।
@মোঃ জানে আলম,
একমত।