পাগলা চাচার দোয়া

পাগলা “মেঘ উড়িয়ে দিলাম” বলল এক পাগল। আসলে সে সত্যিকারের পাগল কিনা জানা যায়নি। উত্তর আকাশে আলকাতরার মতো কালো মেঘ সমস্ত উত্তর পশ্চিম আকাশ জুড়ে ছেয়ে গেছে। দেখলেই মনের মধ্যে ভয় হয়। যে উত্তর আকাশে তাকাচ্ছে, সেই আঁতকে উঠছে। কেউ কেউ বলছে, এমন ঢল মারবে সমস্ত দেশ ডুবায়ে মারবে। কেউ কেউ বলছে, মেঘের ভাব দেখেছো, সারা আকাশ জুড়ে ঝড় হবে। মানে সাইক্লোন হতে পারে। দুপুরে রেডিওর খবরে বলল, কোন কোন জায়গায় বোলে ঘূর্ণিঝড় হয়ে বহু বাড়ি ঘর ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। বড় বড় গাছ পালা সব উপড়ে গেছে। লোকজন মারা গেছে। এখন মেঘের ভাব দেখে মনে হচ্ছে, আজ বুঝি আর নিস্তার নাই। আরেকজন বলল, ভাইরে কি আর বলবো- তোরা বলাবলি করছিস, আমার তো মুখে বাক্য সরছে না। বাড়ি ঘরের যা দশা। আজ পাঁচ ছয় বৎসর ঘরে খুটি দেইনি। দেব কি দিয়ে, একটা বাঁশের দাম ৮০ টাকা। চাল কেনবো নাকি বাঁশ কেনবো। কুশুরের পাতা দিয়ে ঘর ছাইয়েছিলাম, সেও তো প্রায় ৪ বৎসর হোল। সব পচে গেছে। ঢল মারলে চালে পড়ার আগেই মেঝেতে পড়ে। পোলার মায়ে তো এ নিয়ে রোজ ঝগড়া করে। ছেলেপুলে নিয়ে বাস করা কি যে কঠিন হয়েছে বলব কি? সারা দিন রিক্সা ঠেলে যা পাই তার তো ১৭ টাকা জমা দিতে হয়। যা বাঁচে চাল কিনতে সব শেষ। তরকারীর মুখ তো কোনদিন দেখি না। ঐ কলমীর শাক কচুর শাক, তাও ছোট মাইয়াডা পই পই করে সারা মাঠ ঘুরে ঐ সব নিয়ে আসে। কি যে করবো চাচা। চাচা আমার জন্য দোয়া করেন। মেঘ যেন আর না আসে।

শুনে পাগলা চাচা আকাশের দিকে মুখ তুলে চীৎকার বলল, “ও মেঘ দোহাই দোহাই দোহাই তোর নবীর দোহাই, তোর নবীর দোহাই, যে নবীর দোহাই দিয়ে আদমের পাপমুক্তি হয়েছিল। সেই নবীর দোহাই। ও মেঘ দুনিয়ার বুকে পানি হয়ে নামিস না। ডান বা দিয়া চলে যা। দেখছিস না গরীব দুঃখী মানুষেরা তোর কালো চেহারা দেখে আতংকে কাঁপছে। ওদের মুখের দিকে ওদের দুঃখী মুখের দিকে তাকিয়ে আর নামিস না। নেমে কি হবে তোর। নামলে তোরই মান ইজ্জত চলে যাবে, কত গু গবর মুত পচা সব ধুইয়ে নিয়ে তোর পানি হবে অপবিত্র। তুই তো পবিত্র পানি হয়েই নামবি এই অপবিত্র দুনিয়ায়। তোর নামার কাম নাই। কয়েক দিন আগে নেমে যে সর্বনাশটা করেছিস, পাকা গম খেসারী মশুর ছোলা সব পচাইয়া দিছিস। তাও তোর সাধ মেটে নাই। আর নামিস না। নবীর দোহাই। যদি মান্য না করিস তোর….।