রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অপপ্রচারের শেষ নেই। শুরুটা হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কিছু অভিযোগ এনে–তার মধ্যে প্রধান ছিল, তিনি হিন্দু। তিনি প্রজাপীড়ক জমিদার, শোষক শ্রেণীর প্রতিভু, মুসলমানবিদ্বেষী, ভাষা সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী ইত্যাদি। আবার এক শ্রেণীর অতিবামেরা করেছেন রবীন্দ্রনাথকে শ্রেণীর বিচার। ভাঙা হয়েছে রবি ঠাকুরের মূর্তি।
একাত্তরের পরে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশকালকে রুদ্ধ করার জন্য আবার এই অপপ্রচারগুলো মিথের আকার নেয়। শুরুটা করেছেন পাকিস্তান আমলে জামাতি সৈয়দ সাজ্জাদ হুসাইন, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল মনসুর আহমদ, তালিম হোসেন, ফারুখ আহমদ প্রমুখ। বাংলাদেশে আহমদ শরীফ, বদরুদ্দিন উমর, ফরহাদ মজহার, ব্রাত্য রাইসু, সাদ কামালী। এমন কি যুক্তিবাদিরাও যেমন অভিজিৎ রায় বিচার করেছেন কঠিন কঠোরভাবে রবীন্দ্রনাথকে। তাদের বিচারের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাঁরা কাটা ছেড়া করছেন তাঁর দেহ নিয়ে–আত্মার সন্ধান করতে পারেন নি। ফলে হয়ে গেছে মর্মান্তিকভাবে খণ্ডিত এবং যান্ত্রিক।
এই অপপ্রচারের মিথগুলো একটু নেড়ে চেড়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এই সিরিজ আকারে লেখা অন্য আলোয় দেখা রবীন্দ্রনাথ। একটি মিথকে ধরেই আলোচনাটি করা হয়েছে একটি পর্বে। এটি কোনো গবেষণাধর্মী লেখা নয়। নয় মৌলিক রচনাও। আর কুস্তিলড়াইয়ের আস্কারাও নয়। আমন্ত্রণ জানাচ্ছি সবাইকে এই নেড়ে চেড়ে দেখা বিষয়টিতে।
……………………………………………………………………………………………………………………………………..
জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে খুব ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী ও সরস্বতী পূজা হত। ঠাকুর পরিবারটি ছিল বৈষ্ণবভক্ত। রবীন্দ্রনাথের ঠাকুর্দা দ্বারকানাথ ঠাকুর পূর্বপৃরৃষের এই দেবদ্বিজে ভক্তিতে অটুট ছিলেন। তিনি নিজে প্রতিদিন পূজা করতেন এবং হোম দিতেন। দুজন ব্রাহ্মণ ছিল বটে—তবে তারা শুধুমাত্র পূজার ভোগ দিতেন আর আরতি দিতেন।
ইংরেজদের সঙ্গে দ্বারকানাথের যোগাযোগ ছিল। তার বাড়িতে সাহেব-মেমদের নিমন্ত্রণ হত। তিনি তাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু খেতে বসতেন না। দূরে দাঁড়িয়ে তদারকী করতেন। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে তিনি কাপড় চোপড় পাল্টে ফেলতেন। গঙ্গাজল ঢেলে শুদ্ধ হতেন।
পরে ব্যবসায়ের খাতিরে তিনি যখন আরও ঘনিষ্ট হলেন ইংরেজদের সঙ্গে তখন তিনি এই ছুৎ মার্গটি ধরে রাখতে পারলেন না। তাদের সঙ্গে খেতে বসতে হল। তখন তিনি আর মন্দিরে ঢুকতেন না। ১৮ জন ব্রাহ্মণ পূজার সব দায়িত্ব পালন করতেন। আর পূজার সময় দূর থেকে তিনি প্রণাম করতেন।
এক সময় রাজা রামমোহনের সঙ্গে তার পরিচয় হল—তখন তাঁর একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হলেন। কিন্তু বাড়িতে দীর্ঘদিনের প্রচলিত লক্ষ্মী-জনার্দন, দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, সরস্বতী ইত্যাদি পূজা ধুমধামের সঙ্গেই হত। কিন্তু নিজে পূজায় বসেন নি। তিনি গায়ত্রী মন্ত্রটি জপ করতেন। বিদেশে বসেও গায়ত্রী মন্ত্র জপ শেষ না হলে কোনো রাজপরিবারকেও দর্শন দিতেন না।
দ্বারকানাথের মা অলকানন্দা ছিলেন খুব ধর্মশীলা। তিনি ছিলেন মৃতবৎসা। দ্বারকানাথকে দত্তক নিয়েছিলেন। সন্যাসীদের প্রতিও তাঁর বিশ্বাস ছিল। দ্বারকানাথের ম্লেচ্ছ ইংরেজদের সঙ্গে ওঠা বসা অলকাসুন্দরী পছন্দ করতেন না। কিন্তু ব্যবসায়ের কারণে এই মেলামেশাকে বাঁধা দিতেন।তাদের সঙ্গে একটু আধটু মদও খেতে দ্বারকাকে অনুমতি দিতেন । কিন্তু গোমাংস খাওয়ার ব্যাপারে একেবারে না।
দ্বারকানাথের স্ত্রী দিগম্বরী দেবী ছিলেন তাঁর শ্বাশুড়ি অলকাসুন্দরীর চেয়েও কঠোর। তিনি নিজে খুব ভোরে ঊঠতেন। এক লক্ষ হরিনামের মালা ছিল তার। এটার অর্ধেক জপে খেতে বসতেন। তারপর বাকীটা শেষ করতেন। লক্ষ্মীনারায়ণের নিয়মিত সেবা করতেন। বাড়িতে ইংরেজরা আসা যাওয়া করলেও তিনি তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন নি। তাঁর স্বামী মদমাংস ও ম্লেচ্ছসঙ্গ পছন্দ আরম্ভ করলে তিনি স্বামী সঙ্গও ছেড়ে দেন। দূর থেকে তার সেবাযত্নাদির তদারকী করতেন। কখনো স্বামীর ছোঁয়া লাগলে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে নিতেন। ধর্মের কারণে দ্বারকানাথ ও তার স্ত্রী দিগম্বরীর সম্পর্ক হয়ে উঠেছিল ঝামেলাপূর্ণ।
ঠাকুরমা অলকাসুন্দরী দেবীর কাছে দ্বারকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ মানুষ। ঠাকুরমার শালগ্রাম শিলার জন্য তিনি মালা গেঁথে দিতেন। স্নান করে তার সঙ্গে ছাদে দাঁড়িয়ে সূর্যমন্ত্র জপ করতেন। কালীঘাটে পূজা দিতে যেতেন।দেবেন্দ্রনাথ লিখেছেন,“ প্রথম বয়সে উপনয়নের পর প্রতিনিয়ত যখন গৃহেতে শালগ্রাম শিলার অর্চ্চনা দেখিতাম, প্রতি বৎসরে যখন দুর্গা পূজার উৎসবে উৎসাহিত হইতাম, প্রতিদিন যখন বিদ্যালয়ে যাইবার পথে ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরীকে প্রণাম করিয়া পাঠের পরীক্ষা হইতে উত্তীর্ণ হইবার জন্য বর প্রার্থনা করিতাম, তখন মনে এই বিশ্বাস ছিল যে, ঈশ্বরই শালগ্রামশিলা, ঈশ্বরই দশভুজা দুর্গা, ঈশ্বরই চতুর্ভুজা সিদ্ধেশ্বরী।“
তিনি যুবক হলে রাজারামমোহন রায়ের সংস্পর্শ্বে এলেন। পৌত্তলিকতা ও প্রতিমা পূজার ঘোর বিরোধী হয়ে উঠলেন। তিনি সংকল্প করেছিলেন, “ কোন প্রতিমাকে পূজা করিব না, কোন প্রতিমাকে প্রণাম করিব না, কোন পৌত্তলিক পূজার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিব না।” দেবেন্দ্রেনাথ তার ভাইদের সঙ্গে নিয়ে একটি পৌত্তিলকতা বিরোধী দলও গড়লেন। তাঁদের প্রতিজ্ঞা ছিল, ‘’পূজার সময়ে আমরা দালানে কেহই যাইব না, যদি কেহ যাই, তবে প্রতিমাকে প্রণাম করিব না” ১৮৩৯ সালে অক্টোবর মাসে দেবেন্দ্রনাথের বয়স যখন বাইশ বছর তখন তাঁদের বাড়িতে দুর্গাপূজা হচ্ছিল। তিনি পূজার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। তিনি পূজার সময়ে বাড়ির অন্যপ্রান্তে পুকুরের ধারে চুপ করে বসেছিলেন। সেখানে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একশ্বরবাদি তত্ত্ববোবোধিনী সভা গড়ে তুললেন। এরপর তিনি দূর্গা পূজার সময়ে কলকাতা ছেড়ে দেশ পর্যটনে বের হয়ে যেতেন। তিনি তাঁদের বাড়ি থেকে পূর্বপুরুষের চিরকালীন পূজা ও উৎসব উঠিয়ে দিতে পারেন নি। কিন্তু শরীকদের সঙ্গে আলোচনা করে জগদ্ধাত্রী পূজা জোড়া সাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে তুলে দিতে পেরেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবর্তিত ব্রাহ্ম ধর্মাদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তার ধর্মাদর্শে মূর্তি বা প্রতিমা পূজার কোনো স্থান ছিল না। বাংলাদেশের হিন্দুদের বড় উৎসব দুর্গা পূজায় কখনো সামিল হন নি। তিনি উপনিষদের মনের মানুষের সন্ধানই করেছেন চিরকাল। তবে বাঙালীদের জীবনে দুর্গোৎসবের সামাজিকতা এবং মানবিকতার দিকটিকে তিনি প্রশংসা করেছেন। ছিন্নপত্রে তিনি লিখেছেন, (পূজা উপলক্ষ্যে) বিদেশ থেকে যে লোকটি এইমাত্র গ্রামে ফিরে এল তার মনের ভাব, তার ঘরের লোকদের মিলনের আগ্রহ, এবং শরৎকালের এই আকাশ, এই পৃথিবী, সকালবেলাকার এই ঝিরঝিরে বাতাস এবং গাছপালা তৃণগুলা নদীর তরঙ্গ সকলের ভিতরকার একটি অবিশ্রাম সঘন কম্পন, সমস্ত মিশিয়ে বাতায়নবর্তী এই একক যুবকটিকে (রবীন্দ্রনাথ) সুখে দুঃখে একরকম চরম অভিভূত করে ফেলছিল।“
১৮৯৪ সালে কলকাতায় দুর্গোৎসব হচ্ছেল। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের কোনো প্রত্যক্ষ বা সামাজিক যোগ নেই। তখন তিনি একদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র সুরেশচন্দ্র সমাজপতির বাড়িতে যেতে যেতে দেখলেন, পথের দুধারে অধিকাংশ দালানে ‘দুর্গার দশ-হাত-তোলা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে’। সেই মূর্তিকে কেন্দ্র করে ‘আশেপাশের সম্স্ত বাড়ির ছেলের দল ভারী চঞ্চল হয়ে উঠেছে।‘ তাঁর তখন মনে হয়েছে, দেশের ছেলে-বুড়ো সকলেই হঠাৎ দিন কতোকের মত ছেলে-মানুষ হয়ে উঠে, সবাই মিলে একটা বড়ো গোছের পুতুল-খেলায় মেতে উঠেছে।এই খেলাটিকে তিনি উপেক্ষা করতে পারছেন না–অবজ্ঞাও করতে পারছেন না। তিনি লিখেছেন, বাইরে থেকে দেখে মনে হয় বৃথা সময় নষ্ট। কিন্তু সমস্ত দেশের লোকে যাতে মনে করে একটা ভাবের আন্দোলন একটা বৃহৎ উচ্ছ্বাস এনে দেয় সে জিনিসটি কখনোই নিষ্ফল এবং সামান্য নয়। এই পূজা পার্বন যে মানুষকে একত্র করে মিলনে বাঁধে এইটিই তাকে টেনেছে–কোনো পূজাকে নয়।তিনি মিলনের মধ্য দিয়ে অসীমকে পাওয়া যায়। কোনো দেবতাকে নয়।
কেননা রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন–হিন্দু নয়।
সূত্র :
১) আত্মজীবনী–মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
২) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর–ছিন্নপত্রাবলী
৩) পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়–রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ
৪) সমীর সেনগুপ্ত–রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্বজন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের সব চেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁকে যারা কোনো দলে ফেলতে চায় তারা তাদের হীনমন্যতাই প্রকাশ করে, এর বেশি কিছু নয়। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন উনিশ শতকের কবি ও সাহিত্যিক, তাই হয়তো তাঁর লেখায় এই সময়ের অনেক কিছুই মিলবে না। সে জন্য তাকে দোষারোপ করা কোনো কাজের কাজ নয়। বরং, এটা বিচার করতে হবে সময় সাপেক্ষে। একজন গ্রেট লেখক, নিজের সময়কে ধারণ করতেই বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করেন বলে আমি মনে করি।
আপনার লেখা ভালো লাগলো…শুভকামনা জানবেন।।।
কুলদা রায়,
আপনার লেখা তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় এবং অন্য অনেকের মত আমি চাই আপনি নিয়মিত এখানে লেখুন। তবে আপনি সমালোচনাকে আরেকটু সহনশীল দুষ্টিতে দেখলে আমরা সাধারন পাঠকরা খুবই খুশি হব। আপনি যেভাবে পুরো মুক্তমনাকে আক্রমন করে সমালোচনা করেন তাতে আমরা যারা আপনার ভক্ত তারা খুশি হয়না। আমরা আপনাকে মুক্তমনারই একজন হিসেবে দেখতে চাই।
@হেলাল,
:yes: আমারও তাই মত, এখন ক্ষান্ত নিয়ে কুলদা রায়ের এই পনই করে ফেলা উচিত ‘টিকে থাকবো তারপরও আমি এই প্রতিকূল পরিবেশে, কমান্ডো যেমন টিকে থাকে। মডারেটর টডারেটরদের শত ঝামেলার মধ্যেও।’ 😎
পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
রবীন্দ্রনাথ নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিলেন বলে মৌলবাদী টাইপের লোকজনের রেফারেন্স প্রায়ই দেখি। আশা করি এ বিষয়টাও আসবে।
@আদিল মাহমুদ, এটা খুব মজার বিষয়। এটা নিয়ে আমরা সবাই একটি পর্বে আলাপ করতে চাই।
@কুলদা রায়,
রবীন্দ্রনাথকে অন্য আলোয় দেখা খুব দরকার। এমন কি ব্যক্তি ও লেখক রবীণ্দ্র নাথকেও। পরের পর্বের অপেক্ষায়।… :yes:
@বিপ্লব রহমান, ইচ্ছে তো ছিল সবাই মিলে অন্য আলোয় রবীন্দ্রনাথকে দেখার। কিন্তু আর কি সম্ভব হবে এখানে?
বন্যা আহমেদের পরামর্শ মোতাবেক দ্বিতীয় পর্বটি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেটা পোস্টটি সরিয়ে দেওয়া হল। একটা নীতিমালার দোহাই দিয়ে–
নীতিমালাটি লক্ষ করে দেখুন। প্রথম বাক্যেই বলা হয়েছে–নিরুৎসাহিত করা হয়। কয়েকজন মুক্তমনা পাঠক আলোচনার স্বার্থেই নোটটি রাখার পক্ষে বলেছিলেন। এডমিন সেটা করেন নি। তিনি নীতিমালাটিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করলেন।
মডারেটর ফরিদ আহমেদের হুমকিটারই বাস্তবায়ন করা হল। এভাবেই ব্যক্তিইচ্ছার কাছে মার খেল সমষ্টিউদ্যোগ। ইতিহাসটা এরকমই।
মনে পড়ে কদিন আগে এ পোস্টে উল্লিখিত নিবন্ধকার মুক্তমনার সদস্য সাদ কামালী আমার এক স্বজনকে ফোনে হুমকী দিয়ে বলেছিলেন–কুলদা নামের কুলাঙ্গারকে দেখে নেবেন এবং তাকে আমার সঙ্গে স্বজনতা ত্যাগ করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
সরল অংকটা মিলে গেল। দুবন্ধুর দায় খড়গ হয়ে পড়ল পর্বটির ঘাড়ে।
@কুলদা রায়,
আপনার ছেলেমানুষি আচরণ খুবই দুঃখজনক। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আপনি শুধু মডারেটর হিসাবে আমার সততা, আন্তরিকতা, পরিশ্রম, নৈতিকতা এবং নিরপেক্ষতাকেই অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেন নি, মুক্তমনাকেও একজন মাত্র মডারেটরের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাহক হিসাবে ট্যাগিং করে ছেড়েছেন।
মুক্তমনা একটা প্রতিষ্ঠান। এখানে কোনো একক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কিছুই ঘটে না। যা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা মুক্তমনার বৃহত্তর স্বার্থে নীতিমালা অনুযায়ী সমষ্টিগতভাবেই নেওয়া হয়। অন্য ব্লগে প্রকাশিত লেখা সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনিই প্রথম দৃষ্টান্ত নন, এরকম আরো অনেকের লেখাই প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে একই দোষে দুষ্ট হবার কারণে।
এই সরল অংকটা মিলানো আপনার প্যারানয়েড আচরণের চরম বহিঃপ্রকাশ। সাদ কামালীর নামটুকু জানা ছাড়া, আর কোনো বিষয়েই অবগত নই আমি। অথচ তাঁকে আমার বন্ধু বানিয়ে আমার হাতে খড়গ হাতে তুলে দিয়ে আপনার লেখার ঘাড়ে কোপ বসানোর দায় দিলেন আপনি। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আমি মডারেটর হিসাবে কাজ শুরু করার অনেক আগে থেকেই সাদ কামালীর সাথে মুক্তমনার কোনো সংস্রব নেই।
@কুলদা রায়,
ধন্যবাদ আপনার বিস্তারিত উত্তর এবং ব্যাখ্যার জন্য। আপনি এখানে বিবর্তনবাদের সাথে রবীন্দ্রনাথের সমালোচনাকে মিলিয়ে ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝতে পারিনি, রবীন্দ্রনাথের সাথে বিবর্তনবাদের কোন সম্পর্ক আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। সে যাক, এ নিয়ে এখন আর আলোচনায় যাচ্ছি না, পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনাকে একটা অনুরোধ করবো, আপনি যদি এই সিরিজটা চালিয়ে যেতে চান তাহলে আরেক ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো হুবুহু এখানে তুলে দেবেন না। দেখতেই পাচ্ছেন যে মুক্তমনার অনেকেই এই লেখাটা নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। তবে সব সংগঠনেরই ( এখানে ব্লগকেও আমি সংগঠন হিসেবেই ধরছি) নিজস্ব নিয়ম কানুন থাকে এবং মুক্তমনার নিয়মাবলী অনুযায়ী অন্য ব্লগে প্রকশিত একটা সিরিজকে আপনি এখানে আবার প্রকাশ করতে পারেন না। এখানে মৌলিক লেখাকে উৎসাহিত করা হয়, এটুকু না করা হলে এর স্বকীয়তা বজায় রাখা কষ্টকর হবে, পুরনো লেখার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত হতেও বেশী সময় লাগবে না। আপনি যেহেতু মুক্তমনার সদস্য হিসেবে এখানে নিয়মিত লিখছেন আশা করি আপনিও এখানকার নিয়মাবলী মেনে নিয়ে এর স্বকীয়তা রক্ষায় সচেষ্ট হবেন। এডমিনের নোটিশকে অযথাই ‘আপনার লেখাকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র’ হিসেবে না দেখে কন্সট্রাক্টিভলি দেখার চেষ্টা করবেন। আপনার এই প্রথম পর্বটাকে সরিয়ে না দিয়ে এডমিন যেমন আপনার প্রতি এবং পাঠকদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন, আপনিও ভবিষ্যতে যথাযথভাবে সেটাকে মূল্যায়ণ করে নতুন লেখা উপহার দেবেন। আপনাকে অনুরোধ করবো মুক্তমনার পাঠকদের কথা মাথায় রেখে আপনি এর পরের পর্বগুলোকে নতুন করে ঢেলে সাজাবেন এবং আমাদেরকে কিছু মৌলিক লেখা উপহার দিবেন।
@বন্যা আহমেদ,
অনেক বাংলাদেশী লেখক চান, তাদের লেখা সচল এবং মুক্তমনাতে প্রকাশ করতে। সচল মুক্তমনাতে প্রকাশিত লেখা ছাপায় না। আমি সচলের লেখক না, বাংলাদেশের আর কোন ব্লগের লেখক না-তাই আমার হয়ত সেই দায় নেই-কিন্ত আমার মনে হয় সচল এবং মুক্তমনা একটি চুক্তি করলে ভাল হয়। এট লিস্ট দুটী ব্লগের লেখা অন্যদের কাছে গ্রহণ যোগ্য।
আমার পাঠক মূলত অর্কুট আর ফেসবুকে-তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্ত আমার মনে হয় বাংলা ব্লগের স্বার্থে এই ধরনের
চুক্তির দরকার আছে।
রবীন্দ্রনাথ বাল্যবিবাহ সম্পর্কে কিছু আলোচনা পাওয়া যায়–সমুদ্রযাত্রা’য়। তিনি লিখেছেন–রীতিমত স্ত্রী শিক্ষা প্রচলিত করিতে গেলে বার্যবিবাহ তুলিয়া দিতে হয়। বার্য বিবাহ গেলে ক্রমশই স্বাদীনবিবাহ আসিয়া পড়ে। স্বাধীনবিবাহ প্রচলিত করিতে গেলে সমাজের বিস্তর রূপান্তর অবশ্যম্ভাবী হইয়া পড়ে এবং জাতিভেদের মূল ক্রমে জীর্ন হইয়া আসে।
হিন্দু বিবাহ প্রবন্ধে বলেছেন–একান্নবর্তী প্রথা না রাখিলে বার্যবিবাহ থাকিতে পারে না। যেখানে স্বতন্ত্র গ্রহ করিতে হইবে সেখানে স্বামীস্ত্রীর বয়স অল্প হইলে চলিবে না।
রবীন্দ্রনাথদের পরিবারে বিবাহ বিষয়ক আলাদা একটি পর্ব হবে।
@কুলদা রায়,
বাল্যবিবাহের প্রতি রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ তার ব্যক্তিজীবন থেকেই পাওয়া যায়। বাইশ বছরের রবীন্দ্রনাথের নয় বছর নয় মাস বয়েসী মৃণালিনীকে বিয়ে করা এবং বারো বছর বয়সেই তাঁকে গর্ভবতী করে ফেলাতে আমার অতটা বেশি আপত্তি নেই একারণে যে, এটাকে রবীন্দ্রনাথের অপরিণত বয়সের কাজ হিসাবে কিছুটা হলেও ছাড় দেওয়া যায়। কিন্তু পরিণত বয়সে সফল এবং বিখ্যাত রবীন্দ্রনাথের তাঁর মেয়েদের বাল্যবয়সে বিয়ে দেওয়াটাকে কোনোভাবেই যুক্তি দিয়ে মেনে নেওয়া যায় না। তিনি তাঁর বড় মেয়ে মাধুরীলতার বিয়ে দেন চৌদ্দ বছর বয়সে, মেজো মেয়ে রেণুকার বিয়ে দেন দশ বছর বয়সে এবং ছোট মেয়ে অতসীলতার বিয়ে দেন তেরো বছর বয়সে। একজনের ক্ষেত্রে হলে হয়তো এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মেনে নেওয়া যেতো, কিন্তু তিন মেয়েরই বাল্য বয়সে বিয়ে দেওয়া দেখে এটা নিঃসংকোচে বলে দেওয়া যায় যে তাঁর মানসিকতা ওই বাল্যবিবাহের স্বপক্ষেই ছিল।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সমস্যা’ নামক প্রবন্ধে বাল্যবিবাহ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে তিনি হয়তো বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধেই কথা বলছেন। কিন্তু একটু গভীরে ডুব দিলেই দেখা যাবে যে, আসলে তিনি সুকৌশলে এর বিরোধিতাই করছেন। বাল্য বিবাহের প্রতি মানুষের বিদ্বেষ জেগেছে দেখে এখন কী করা যায় এটা বলে এক ধরনের মশকরাও করেছেন। সেই প্রবন্ধ থেকে কিছুটা অংশ আমি এখানে তুলে দিলাম।
@ফরিদ আহমেদ, এই বিষয়টি আমাদের শক্তিমান গবেষক সাদ কামালী একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। মুক্তমনাতেও প্রবন্ধটা দেখেছি মনে পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে একটি পর্বে আলোচনা করাই সঙ্গ মনে করি। আমরা সবাই মিলে দেখব–এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের সীমাবদ্ধতা কী ছিল এবং পরিস্থিতিগুলোও আমাদের বিবেচনায় রেখে আলোচনাটি করব। আপনি সে আলোচনাটির সূত্রপাত করায় ধন্যবাদ।
@কুলদা রায়, বাল্য বিবাহ, বিবাহ, একান্নবর্তী পরিবারে এই নাবালিকা মেয়েদের অবস্থান, নারী অধিকার বা নারীদের প্রতি দৃষ্টিভংগীর ব্যপারগুলোর একে অন্যের সাথে খুব ঘনিষ্টভাবে জড়িত। হ্যা, অবশ্যই, পরিবেশ এবং সে সময়ে ভারতবর্ষসহ সারা পৃথিবীতে মেয়েদের অবস্থানের কথা মাথায় রেখেই এই আলোচনা করতে হবে। আর আপনি যেহেতু রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মা’ নিয়ে এত উদ্বিগ্ন তার ‘আত্মা’ পৃথিবী আর স্বর্গের মাঝামাঝি ঠিক কোন জায়গাটায় আটকে ছিল তা নিয়ে একটা বিস্তারিত আলোচনা আশা করছি। রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মা’ এতটা সময় ধরে এত জায়গায় ঘোরাঘুরি করেছে যে একটা একটা করে সবগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা না করলে আমরা শুধু তার ‘খন্ডিত আত্মা’রই সন্ধান পাবো। আলোচনা করতে গেলে সামগ্রিকভাবেই বোধ হয় সেটা করা উচিত। আপনার কাছ থেকে নারী, বৃটিশ উপনিবেশ, সে সময়ের রাজনীতি, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান নিয়ে লেখা আশা করছি।
ইয়ে, মুক্তমনার কাছে বিনীত অনুরোধ, এই সিরিজটা কি এখানে বিশেষ বিবেচনায় রাখা যায়? আমার তো মনে হয়, তর্কে বেশ ভালো কিছু আলোচনা উঠে আসবে, যার নজির এরই মধ্যে আমরা পেয়েছি। স্বাধীনও একই কথা বলেছেন।
সঞ্চালকদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে গেলাম।
অপপ্রচার বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট করেই লেখাটা শুরু হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করি।
রবীন্দ্রনাথের সমালোচনাই কি অপপ্রচার?
লেখকের প্রদত্ত অপপ্রচারকারীদের তালিকায় কেউ কেউ আছেন যাঁরা কিছু ব্যাপারে রবীন্দ্রকর্মের (বাস্তবে ও সাহিত্যে) সমালোচনা(ও) করেছেন। তার মানে কি কেউ রবীন্দ্রবিরোধিতা করতেই পারবেন না? প্রশ্ন তুলতে পারবেন না তাঁর কৃতকর্ম বা সাহিত্যকর্ম নিয়ে? তাঁর মতাদর্শের এবং লেখালেখির সমালোচনা শুরু হয়েছে তাঁর সাহিত্যজীবনের শুরু থেকেই। ১৮৭৯-তে প্রথম বিলাতপ্রবাস থেকে লেখা এবং ভারতীতে প্রকাশিত (পরে ‘য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র’ নামে গ্রন্থস্থ) চিঠিতে তাঁর নিজের নারীসম্বন্ধীয় কিছু তুলনামূলক মতামত তৎকালীন ভারতী সম্পাদকের সমালোচনাবাণে পড়ে। সম্ভবত, ওটাই তার লেখার প্রথম সমালোচনা। এরপর, নানান সময়ে তিনি জীবদ্দশায় তাঁর নানা কাজের কারণে নানাভাবে সমালোচিত হন। এমনকি, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর শান্তিনিকেতনে প্রথম সংবর্ধনায় তাঁর ক্ষোভ এতটাই তীব্র ছিলো যে, সে-অনুষ্ঠানে (২৩ নবেম্বর, ১৯১৩) তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি রীতিমত স্বভাবসুলভ শালীনতা লঙ্ঘন করেছিলেন।
তাম্মানে, তাঁর সমালোচনা ব্রিটিশ আমল থেকেই অব্যাহত ছিলো।
মৈত্রেয়ী দেবী তাঁর ‘স্বর্গের কাছাকাছি’ গ্রন্থে উল্লেখ করছেন তাঁর দার্শনিক পিতার চট্টগ্রামের বাসায় ক্ষিতীশচন্দ্র রায়, দেবেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখের সাথে আড্ডায় রবীন্দ্রসমালোচনায় তিক্ততাও মিশ্রিত থাকতো। এবং, “বৈঠকখানা ঘরের কোনো বিরূপ সমালোচনা শুনলে মার চোখ দিয়ে নাকি জল পড়ত।”
ওখানেও কি অপপ্রচার হতো?
তয়, জিন্নার মায়রে বাপ।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
:laugh:
@ব্লাডি সিভিলিয়ান, রবীন্দ্রনাথকে বিরোধীতার প্রশ্নটি কেন আস? তিনি তো আমাদের সর্বত্র জুড়ে আছেন। তাঁকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। তাঁকে হিংসা করে নয়। তাকে সমালোচনা করা যেতে পারে। তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে–হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু বিরোধিতা কেন করব? তিনি তো রাজনীতি করেন নি। ‘এরশাদের চামড়া–তুলে নেব আমরা’ তো তাঁর বেলা খাটবে না।
আগ্রহ নিয়ে সিরিজটি পড়ব।
রবীন্দ্রনাথের পরিবারের ধর্ম বিষয়ক যেসব তথ্য আপনি দিলেন সেগুলি সবই ঠিক, এবং রবীন্দ্রনাথকে “হিন্দু” বলাটা সমস্যাসংকুল, সেটাও সন্দেহাতীত। কিন্তু…
আপনার বিবরণ কি এই অভিযোগের জবাব হতে পারে? পাকিস্তানীরা নিঃসন্দেহে “বিধর্মী” অর্থেই রবীন্দ্রনাথকে “হিন্দু” বলেছে — তিনি ব্রাহ্ম, একেশ্বরবাদী, উপনিষদ ভক্ত, সেকুলার মানবতাবাদী, খ্রীস্টান — এসব কোন কিছু হয়েই পার পেতেন কি? গণ্ডগোলটা পাকিস্তানীদের premise-এ, তথ্যের অভাবে নয়।
@রৌরব, আপনার সঙ্গে আমি সহমত। আমার এই লেখাটি অভিযোগের পূর্ণ জবাব হতে পারে না। তবে রবীন্দ্রনাথকে যে ভাবে হিন্দু সাম্প্রদায়িক/ ব্রাহ্মণ্যবাদি বলে মুখ ব্যাদান করা হয়–সেখানে সেই মিথটাকে একটু নেড়ে চেড়ে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে। অনলাইনে দীর্ঘ প্রবন্ধ গড়ার সমস্যা অনেক। তবে কেউ করবেন এই বিশ্বাস থেকেই পর্বটি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে তো তথ্যের অভাব আছে। সে কারণে খুব সহজেই অনেক অসত্য প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা দেখা যায়।
ধন্যবাদ।
প্রিয় কুলদা রায়,
আপনার এই লেখাটি কিছুদিন আগেই অন্য একটি ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। যার লিংক নিম্নরূপঃ
http://www.sachalayatan.com/porimanob/35043
মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে অন্য ব্লগে প্রকাশিত যে কোনো লেখাকে মুক্তমনায় প্রকাশকে নিরুৎসাহিত করে। এ বিষয়ে মুক্তমনার নীতিমালার ২.১৬ থেকে উদ্ধৃত করা হচ্ছে।
এর আগেও মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ এ ধরনের লেখাকে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তবে, এই লেখাটির প্রতি মুক্তমনার পাঠকদের আগ্রহের কারণে বিশেষ বিবেচনায় প্রথম পাতায় রেখে দেওয়া হলো।
ভবিষ্যতে অন্য ব্লগে প্রকাশিত লেখা এখানে না দেওয়ার ব্যাপারে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে। আগামীতে এরকম কিছু ঘটলে নীতিমালায় প্রদর্শিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই সিরিজটি একটি বিষয়কে ভিত্তি করে লেখার ইচ্ছে। সে কারণে পাঠকদের বিষয়টির প্রতি অনুগত থেকে আলোচনা করার অনুরোধ করছি।
ভূমিকা হিসাবে যেটি দেওয়া হয়েছে–সেটা অতি সংক্ষিপ্ত, অন লাইনের জন্যই এভাবে করা। ভূমিকাতে উত্থাপিত বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে একটি পর্ব হতে পারে।
অভিজিৎ রায় যে অভিযোগটি তুলেছেন যে প্রতিক্রিয়া, অতিবাম, যুক্তিবাদিদের এক পাল্লায় মাপা হচ্ছে। যদি তাই হয়–তাহলে সেটা আমার লেখার দুর্বলতা। সেটা আমার অন্বিষ্ট নয়। এদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যই ভিন্ন। কিন্তু দেখা যায় কখনো কখনো অতিবাম এবং যুক্তিবাদিরাও প্রতিক্রিয়াশীলদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের হয়ে কথা বলেন। এটার উদাহরণ বাংলাদেশে ভুরি ভুরি। তখন হিতে বিপরীত হয়। তখন অতিবামও মিটের বাংলা মাংস বললে সে মাংসে হিন্দুয়ানী খুজে পান। খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলেন।
আরেকটি হল–দায়িত্বহীন যুক্তিবাদিতা ও তত্ত্ববাগীশিতা। এ কারণেও অনেক যুক্তিবোধও প্রতিক্রিয়াশীলতার পালে হাওয়া লাগায়।
আরেকটি হল– যুক্তিবাদি ও প্রগতিশীলতার নবিশী রোগে পড়া। ফলে অনেক কিছুই তখন যান্ত্রিকভাবে বিচার করা হয়। ফলে সেখানে দেহ পাওয়া যায়– আত্মা বা প্রাণ পাওয়া যায় না। এখানে বোধ হয় আত্মা শব্দটিতে এলার্জি আছে। এখন থেকে আমি প্রাণ শব্দটিই ব্যবহার করব।
@কুলদা রায়,
আপনি এখানে যুক্তিবাদী এবং প্রগতিশীলদের মধ্যে রবীন্দ্র-মুর্তি ভাঙ্গার যে রোগ রয়েছে তার বিভিন্ন ধরণের উপসর্গের( ৩ ধরণের কারণ দেখলাম বলে মনে হল) কথা উল্লেখ করেছেন। তাহলে এখানে কতগুলো প্রশ্ন থাকে,
১) আপনি কি মনে করেন এদের সবাই এ ধরণের কোন না কোন রোগে আক্রান্ত নাকি এদের মধ্যে কারো কারো সমালোচনাকে আপনি গ্রহনযোগ্য বলেও মনে করেন? আপনার লিষ্টে যদি রবীন্দ্র সমালোচকদের মধ্যে এমন কেউ (যাদের সমালোচনাকে আপনি সঠিক বলে মনে করেন) থেকে থাকেন তাহলে তাদের নামগুলো এবং কেন তাদের সমালোচনা গ্রহনীয় তা কি জানাবেন পরবর্তী পর্বগুলোতে?
২) যাদের সমালোচনাগুলো আপনার কাছে গ্রহনীয় নয় তারা কে কোন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ভুল বিশ্লেষণ করেছেন তা নিয়েও কি আলোচনা করবেন?
৩) সব সমালোচনার মধ্যেই কি ‘আত্মা’ বা ‘প্রাণ’ খুঁজে পেতে হবে? আর ‘প্রাণ’ বা ‘আত্মা’ আছে কি নেই তা বিচার করবে কে, তার মানদন্ডই বা কি? ধরুন কোন সমালোচনা পড়ে আপনার মনে হল লেখক রবীন্দ্রনাথের লেখার অন্তর্নিহিত ‘প্রাণ’ই খুঁজে পাননি, কিন্তু সমালোচনাটা সঠিক – এরকম কি হতে পারে? আর যদি তা হয়, তাহলে কি সমালোচনাটাকে সঠিক বলে গ্রহন করা যাবে?
৪) আপনার সিরিজের পরের পর্বগুলোতে কি রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য লেখা, কাজ এবং দৃষ্টিভঙ্গীর উপর সমালোচনাগুলো নিয়েও আলোচনা করা হবে নাকি এখানে শুধু তার হিন্দুত্ব নিয়ে মিথটাই আলোচ্য বিষয়?
@বন্যা আহমেদ, ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নে জন্য।
১) আপনি আমার মন্তব্যটা আবার পড়ে দেখুন। খুব স্পষ্টভাবেই বলেছি–প্রতিক্রিয়াশীল, অতিবাম, যুক্তিবাদীদের অবস্থানটা। আমি তাদেরকে এক পাল্লায় মাপি নি। বলেছি–কখনো কখনো তারা সজ্ঞানে/ অজ্ঞানে এক পাল্লায় নিজেরা উঠে পড়েন।
২) সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে আছে। আলোচনাতো আমি একা করব না। আলোচনার একটি ক্ষেত্র তুলেছি–এখানে আলোচনা হবে। সবাই অংশগ্রহণ করব।
ধরা যাক, অভিজিৎ রায় যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করছেন তার মধ্যে যুক্তিবাদের সরলরৈখিক পথরেখাটি অনুসরণ করা হয়েছেন। বোঝা যায়–তিনি বা আপনি বিবর্তনবাদের কাঠামোর বাইরে যাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনার একটি ভাল কাজ করছেন। আমি মনে করি–বিবর্তনবাদ নিয়ে সত্যিকারে আমাদের দেশে ভাল কাজ হয় নি। বিবর্তনবাদ নানা কারণে চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে। সেখানে আপনারা এই বিষয়টিকে মার্গ হিসাবে বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন–নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এখানে শুধু আপত্তিটা হল–এটা যেন যান্ত্রিকভাবে করা না হয়। তাহলেও সমস্যা বেড়ে যায়। মৌলবাদিতা ভর করার আশংকা থাকে। এটা যে কোন মতবাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যদি আমি নিজেও রবীন্দ্রনাথকে দেবতাজ্ঞানে বা নবীজ্ঞানে তার সীমাবদ্ধতাগুলো এড়িয়ে যাই–সেটাও আমার মৌলবাদিতা হবে। আমি এই ধরনের মিথ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে চাইছি।
সেক্ষেত্রে অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে সাদ কামালীর ব্যবধান দুস্তর। কারণ সাদ কামালী নির্মোহ নন—তিনি খুবই উদ্শ্যেপূর্ণভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই রবীন্দ্রনাথকে খারাপ মানুষ হিসাবে প্রতিপন্ন করার অপেচেষ্টা করছেন। এখানে তার অন্বিষ্ট হল–পাকিস্তানী ধারার সাম্প্রদায়িক রাজনীতিটাকে আবার উস্কে দেওয়া।
অভিজিৎ বা আপনি সেটা নন বলেই আমার ধারণা।
৩) দেহের আত্মা আর সাহিত্যের আত্মা তো এক নয়। এটাকে যদি যদি সেভাবে ধরে নিয়ে আলোচনা করা হয়–তাহলে তো আলোচনা মাঠে মারা যাবে।
৪) হিন্দুত্ব নিয়ে মিথ নিয়ে আলোচনাটি এই পর্বেই শেষ করার ইচ্ছে। পরের পর্বে অন্যান্য মিথগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে, এডমিনের যে নোটিশ দেখছি–তাতে তো প্রমাদ গুনতে হচ্ছে। আলোচনাটি চলুক তা মুক্তমনার কোনো কোনো বন্ধু চাইলেও এডমিন চাইছেন না। তিনি একটি নীতিমালার ভুত দেখিয়ে বিদায় করার কোশেস করছেন। বুঝতে পারছি না–আলোচনাটির পরের পর্বগুলো এখানে আর অনুমোদন পাবে কিনা।
ধন্যবাদ।
@কুলদা রায়,
আপনার কথা শুনে আমার আসলেই মনে হচ্ছে আপনি গোটা পৃথিবীটাকে বুশের মতো কেবল সাদা আর কালো – এই ভাবে দেখতে পছন্দ করেন। যুক্তিবাদীদের কেউ রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করলে সেটা যদি ‘প্রতিক্রিয়াশীলদের সঙ্গে হাত মিলানো’ হয় তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, সমালোচনার মর্মার্থ বোঝার মত প্রত্যয় আপনি পাননি। সারা বিশ্বেই সমালোচনামূলক, সাহিত্যের অসংখ্য উদাহরণ আছে। বড় বড় মানুষের জীবনী নিয়ে, কাজ নিয়েও বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। বলা বাহুল্য – এ সমস্ত সমালোচনা থেকেই সভ্যতা ক্রমশঃ এগিয়েছে, অন্ধ স্তাবকতা থেকে নয়। সেটা মুহম্মদ, যীশু, এরিস্টটল, প্লেটো, রাসেল কিংবা রবীন্দ্রনাথ যেই হোন না কেন।
আপনার রাগ আপনার মন্তব্য থেকেই দৃশ্যমান। ‘যুক্তিবাদি ও প্রগতিশীলতার নবিশী রোগে পড়া’ বলতে যেমন চটকদার লাগে আরেকটু ভিতরে ঢুকলে অন্তঃসারশুন্যই লাগে। আপনি যেমন চটকদার বিশেষণ ব্যবহার করেন সেরকম বিশেষণ আপনার বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা যায়। যেমন, যে কেউ বলতে পারে ‘রবীন্দ্রস্তাবকেরা নিজেদের বিশ্বাসের বাইরে তাকাতে অক্ষম ‘ । সেজন্য রবীন্দ্রনাথ প্ল্যানচেট করলেও তারা সাফাই গান (রবীন্দ্রনাথ বলে না কথা!), আবার ‘যেমন করেই দেখো প্রকৃতি বলে দিচ্ছে যে, বাইরের কাজ মেয়েরা করতে পারবে না’ কিংবা ‘প্রকৃতিই নারীকে বিশেষ কার্যভার ও তদানুরূপ প্রবৃত্তি দিয়া গৃহবাসিনী করিয়াছেন’ সেগুলো কুৎসিৎ বানীগুলোকেও ‘বাণী চিরন্তনী’ হিসেবে আমরণ রক্ষা এবং ডিফেণ্ড করেন অনেকটা ধার্মিকদের মতো করেই, তারা পাশ কাটিয়ে যেতে চান নিজের কিংবা নিজের মেয়েদের বাল্যবিবাহের প্রতি রবীন্দ্রনাথের প্রবল অনুরাগের দিকগুলোও – এগুলোও কিন্তু আমরা দেখেছি ভুরি ভুরি। আমার মাঝে মধ্যেই মনে হয় কখনো রবীন্দ্র বিষ্ঠা কুড়িয়ে পেলেও তা সুগন্ধি আতর হিসেবে তারা হয়তো জামায় লাগিয়ে রাখবেন। আফটার অল রবীন্দ্রনাথের বিষ্ঠা, যার তার মল তো নয় বাপু। 🙂
আর আপনার মতে রবীন্দ্রনাথের সমালোচকেরা কেবল ‘যান্ত্রিকভাবে সমালোচনা করেছেন কিন্তু আত্মা বা প্রাণের সন্ধান পান নি’। আবারো – কথাগুলো শুনতে চটকদার, কিন্তু ভিতরে একেবারেই অন্তঃসারশূন্য। আমি না হয় আত্মায় অবিশ্বাসী কাঠখোট্টা যান্ত্রিক মানুষ, সাহিত্যজ্ঞান শূন্য, তাই রবীন্দ্রনাথে ‘আত্মার সন্ধান’ পাইনি। কিন্তু আহমদ শরীফ কিংবা হুমায়ুন আজাদের মত সুসাহিত্যিক (শুধু সুসাহিত্যিক নন, বাংলাভাষার পণ্ডিত)ও রবীন্দ্রসাহিত্যে আত্মার সন্ধান পাননি, আর সেটা বুঝতে পেরেছেন কেবল ‘আত্নাধারী’ রবীন্দ্রস্তাবক কিছু ব্লগার, সেটা শুনতেও কেমন যেন বেখাপ্পা লাগছে না? আবারো বলি, স্তাবকদের আত্মা হয়তো আছে, শুধু আছে বললে ভুল হবে – বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচির মত বড় সড় আত্মা আছে – যা পাঁচ ফুটি দেহ ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে অহরহ, কিন্তু যুক্তিপূর্ণ সমালোচনা হৃদয়ঙ্গম করার মত শক্তির অভাবটা সেই আত্মায় খুবই প্রকট।
যদিও এই পোষ্টটি মুক্তমনার নীতিমালা
এর সাথে সাংঘর্ষিক , তবুও আমি চাইবো আলোচনার সুবিধার্থে সিরিজটি মুক্তমনায় চালু রাখা যেতে পারে। একটি জম-জমাট আলোচনার আভাস দেখতে পাচ্ছি। এই সম্পর্কে নিজের জ্ঞান কম হওয়ায় আশা করছি সুস্থ আলোচনা হতে অনেক কিছুই জানতে পারবো। আলোচনা চলুক। সিরিজ চলুক।
@স্বাধীন,
আমিও তাই দেখছি। :rotfl:
অবশ্যই এই লেখা প্রথম পেজে থাকা উচিত। নাহলে এত জমজমাট আলোচনার অনেকটাই মাঠে মারা যাবে।
মুহম্মদ আলী জিন্নাহ’র বিয়ের কেসটি কিন্তু আলাদা। তিনি রত্তন বাইয়ের পিতার বন্ধু ছিলেন। একবার গরমের সময়ে তিনি তার বন্ধু এবং এটর্নী জিন্নাহকে তাদের শৈলনিবাসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে এসে দেখলেন রুত্তন বাইকে। তখন তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্কা। চঞ্চলা–অনিন্দ্য সুন্দরী। তাকে দেখে তার প্রেম জাগল এবং তার পিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু এই পার্সিয়ান পরিবার কয়েকটি কারণে বিয়েটা অনুমোদন করেন নি। ১) প্রথমত ধর্মীয় ২) বয়সের ফারাক।
তখন জিন্নাহ সাহেব পারিবারিক অসম্মতিটাকে মেনে না নিয়ে রুত্তন বাইকে বিয়ে করার প্লান করলেন। সেজন্য রুত্তন বাইয়ের আঠার বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার ছাড়া উপায় ছিল না। মনে রাখতে হবে জিন্নাহ ছিলেন ভয়ংকর রকম জেদী মানুষ। তিনি তার জেদ পুরণের জন্য কৌশলী হবেন এটাই স্বাভাবিক। সে সময় জিন্নাহর বয়স ছিল চল্লিশোর্ধ। এইখানে অপরিণত মেয়ের সঙ্গে প্রেম নিবেদন এবং বিয়ে করতে চাওয়াটা যুক্তর নিরিখে কতটা প্রগতিশীলতা? জিন্নাহর সঙ্গে এই বিয়েটা টেকে নি। মনের মিল হয় নি। জিন্নাহর উত্তরাধিকারীরা আর কেউই জিন্নাহকে অনুসরণ করেন নি। সবাই পার্সিয়ান হয়ে গেছেন।
আর রবীন্দ্রনাথ তো বিপ্লবী ছিলেন না। তাঁর সীমাবদ্ধতা ছিল–বাবামশাইয়ের অনুগত থাকা। তাঁর বিরোধিতা না করা। সে কারণে নিজের বিয়ের বিষয়ে বাবামশাই এবং জেষ্ঠ্যগণ যা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু নিজের অপরিণত স্ত্রীকে লেখাপড়ায় শিক্ষা দীক্ষায় পরিণত করে নিয়েছেন। যেমন ধরা যাক- বাবামশাই যেভাবে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় চেয়েছিলেন–তিনি কিন্তু সেভাবে করেন নি। তিনি ধীরে ধরে তাঁর মতো করে গড়ে তুলেছেন।
@কুলদা রায়,
জিন্না যে সময় রুত্তন বাই এর প্রেমে পড়েন তখন তার বয়স ১৪। এবং তিনি নিজে যেহেতু বাল্যবিবাহ রোধে আইন আনার ব্যাপারে আন্দোলনের সাথে জরিয়ে ছিলেন, নিজে বাল্যবিবাহ করেন নি। সেকালে ৪০ বছরের ছেলেদের সাথে ১৪ বছরের মেয়েদের আকসার বিবাহ হত-ভারতে কেন সব দেশেই হত। কিন্ত বাল্যবিবাহ রোধে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা কি?
@বিপ্লব পাল, আপনার এই তথ্যটি ভ্রান্ত। জিন্নাহ নিজেই ছয় বছরের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন তার পারিবারিক বিধি মোতাবেকই। সেই বউটি বালেগ হওয়ার আগেই মারা যায়।
আরেকটি প্রশ্ন কিন্তু আপনাকে করেছিলাম–মধ্য বয়স্ক একজন লোক কি করে একজন অপরিণত বয়সের এবং বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান? এর মধ্যে প্রগতিশীলতা কোথায়?
@কুলদা রায়,
আপনার তথ্যটিও ভ্রান্ত। ১৯৯২ সালে লণ্ডনে যাবার প্রাক্কালে মায়ের চাপাচাপিতে চৌদ্দ বছরের কিশোরী এমিবাইয়ের সাথে বিয়ে হয় জিন্নাহর। এমিবাই ছিলেন জিন্নাহ-র দূর সম্পর্কের কাজিন। জিন্নাহ-র বয়স তখন ষোল। জিন্নাহ-র মায়ের আশংকা ছিল যে ছেলে বিলাতে গেলে বিলাতি মেম বিয়ে করে ফেলতে পারে। জিন্নাহ এবং এমিবাইয়ের দাম্পত্য জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। একসাথে তাঁরা খুব একটা থেকেছেন কি না সেটা নিয়েই সন্দেহ আছে। জিন্নাহ-র লণ্ডনে যাবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমিবাই মারা যান।
রুতেন বাইয়ের ক্ষেত্রে বিপ্লব যে তথ্য দিয়েছে সেটাও খুব সম্ভবত ভুল। জিন্নাহ বাল্য বিবাহের বিপক্ষে সে কারণে প্রগতিশীলতা দেখিয়ে রুতেন বাইয়ের আঠারো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন নি। রুতেন বাই ষোল বছর বয়সেই তাঁকে বিয়ে করার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন। এটা ঠেকানোর জন্যে তাঁর বাবা মেয়ে নাবালিকা এই কারণ দেখিয়ে কোর্ট থেকে রিস্ট্রেইন্ট অর্ডার বের করে এনেছিলেন। ফলে রুতেন বাইয়ের আঠারো বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া জিন্নাহ-র আর কোনো উপায় ছিল না। আঠারো বছরে রুতেন বাই সাবালিকা হন এবং তাঁর বিয়ের ক্ষেত্রে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতার অধিকারী হন।
@ফরিদ আহমেদ,
ইংল্যান্ডে যাবার আগে, জিন্না কি করেছেন সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে কি? কারন ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে বৃটিশ এনলাইটমেন্টের আগে তিনি জিন্না ছিলেন না।
কিন্ত বাল্যবিবাহ রোধের বিলটিতে জিন্নার ভূমিকা কি? উনি লেজিসলেটিভ বার কাউন্সিলের মেম্বার হিসাবে বিলটির সমর্থক ছিলেন।
@বিপ্লব পাল,
একমত। ইংল্যান্ডে যাবার অগের সময়টার আসলেই কোনো গুরুত্ব নেই। ষোল বছরের একজন কিশোর বাল্যবিবাহ করেছে কী করে নি সেটা দিয়ে তার সামগ্রিক জীবনের মূল্যায়ন করা যায় না। এই ধরনের বিয়ে যে অভিভাবকদের চাপেই হয় সেটা বলাই বাহুল্য।
@বিপ্লব পাল ও @ ফরিদ আহমেদ,
বিপ্লব পালের
আর ভবঘুরের
আমার কাছে রবীন্দ্রনাথকে মহম্মদ আলি জিন্নাহ র সাথে তুলনা যেমন অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে তেমনি জিন্নাহ পরিচয় দিতে গিয়ে তার নবী মোহাম্মদকে টানাও অহেতুক মনে হয়েছে। বিপ্লব পাল ততোধিক অযৌক্তিকভাবে বলেছেন —
নিজেরাই ইচ্ছেমত প্রসঙ্গ তুলেন ও পাল্টান। নিজেকে যুক্তিবাদী প্রমান করতে অযাচিত তর্ক বোধ হয় কারও কাছেই বাঞ্ছনীয় নয়।
তাছাড়া রবীন্ত্র বিদ্বেষ ও রবীন্দ্র বর্জন এবং রবীন্দ্র সমালোচনা এক নয়। তাহলে অভিজিৎ এর বইয়ের নাম ‘ আলো হাতে চলিয়াছি আঁধারের যাত্রী’ হত না। অন্যান্য কয়েকজন পাঠকদের কাছে প্রাসঙ্গিক মন্তব্য বাঞ্ছনীয়।
সবশেষে, কুলদা রায়কে মুক্তমনার নিয়ম মানতে অনুরোধ করছি। আপনি নতুন কোন লেখা লিখে লিংক দিয়ে দিন । যার ইচ্ছে হয় সে নিশ্চয়ই পড়বে। তাছাড়া প্রায়শঃই আপনি একই সময়ে প্রথম পাতায় দুটো পোষ্ট দিয়ে দেন। এ বিষয়টো খেয়াল রাখার অনুরোধ রইল।
@ফরিদ আহমেদ,
এখানে তারিখটা হবে ১৮৯২।
@ফরিদ আহমেদ, অনবধানবশত ১৪ বছরের বদলে ৬ বছর হয়ে গেচে। স্ক্ষেত্রে আপনার তথ্যটিই সঠিক। ধন্যবাদ।
আমি বিপ্লবের সাথে একমত এক্ষেত্রে। লেখাটি অতি সরলীকরণ দোষে দুষ্ট বলা যায়। উপরন্তু লেখাটি খুব বেশি নিজস্ব দৃষ্টিকোন থেকে বর্ণনামূলক। লেখক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অপ্রচারগুলো খণ্ডন করার মিশন হাতে নিয়ে নেমেছেন মনে হচ্ছে সিরিজটিতে। কিন্তু এ ধরনের লেখা কেবল বর্ণনামূলক হলে আর শেষ লাইনে এসে ‘রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন–হিন্দু নয়’ বলে শেষ করে দিলে সেই উদ্দেশ্য সফল হয় না।
আরো একটি ব্যাপার সম্ভবতঃ লেখক পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথকে সমালোচনা বিভিন্নজনেরা বিভিন্ন ভাবে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে করেছেন। ইসলামিস্ট মৌলবাদীরা এক উদ্দেশ্য করেছেন, বামপন্থীরা আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করেছেন, আবার নারীবাদীরা করেছেন আরেকটি দৃষ্টিকোন থেকে। কিন্তু সেই দৃষ্টিকোনগুলো নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা না করে সবাইকেই গরুর পালের মতো একই গোত্রে ফেলে দেওয়াটা সঠিক উপস্থাপনা নয় (লেখাটির ভুমিকায় সেরকমভাবেই ব্যাপারটি উপ্সথাপিত হয়েছে)। এতে সমালোচনার দীনতা প্রকাশ পায়।
একটা উদাহরণ দেই। বছর খানেক আগে বাংলাদেশে একবার যখন সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিলো তখন ইসলামিস্ট মৌলবাদীরা এই প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করেছিল। আবার প্রগতিশীল নারী সংঘও এই ব্যাপারটির বিরোধিতা করেছিলো। কিন্তু দু দলের উদ্দেশ্য ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসলামিস্ট মৌলবাদীরা প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করেছিল – কারণ ব্যাপারটি তাদের মতে শরিয়ত এবং কোরান হাদিস বিরোধী বলে। আবার অন্য দিকে প্রগতিশীল নারী সমাজ এটার বিরোধিতা করেছিলো – কারণ তাদের মতে এখানে নারীকে পন্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে। লক্ষ্য করুন – দু’দলই বিরোধিতা করছে, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এখন কোন সমালোচক যদি ব্যাপারটির গুরুত্ব বিবেচনা না করে প্রগতিশীল নারী সমাজকে ঢালাওভাবে ইসলামিস্টদের সাথে এক কাতারে ফেলে দিয়ে সমালোচনা করেন, তা কি সঠিক উপস্থাপনা হবে?
কুলদা রায় তাই করেছেন। দেখুন এই বাক্যটি –
তিনি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন যে জামাতি সৈয়দ সাজ্জাদ হুসাইন, কিংবা সৈয়দ আলী আহসান এর সমালোচনা আর আহমদ শরীফের সমালোচনার মধ্যে পার্থক্য আছে। পার্থক্য আছে সাদ কামালী আর আমার সমালোচনারও। কিন্তু সবাইকে গরুর পালের মতো এক কাতারে ফেলে একটি ‘রবীন্দ্র বিরোধী’ তালিকা খাওয়ানোর চেষ্টাটি একটু সরলই।
শুধু তাই নয়, তালিকাটি অসম্পূর্ণ। তিনি এতগুলো রবীন্দ্র সমালোচকের নাম করলেন, অথচ ইচ্ছেয় হোক অনিচ্ছায় হোক, চেপে গেছেন একজন মহারথীর নাম, যিনি তার নারী গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথকে একেবারে কচুকাটা করে খুব চাঁছাছোলাভাবেই লিখেছিলেন – ‘রবীন্দ্রনাথ, যাকে মনে করা হয় নিজের সময়ের থেকে অনেক অগ্রসর, আসলে পিছিয়ে ছিলেন নিজের সময়ের চেয়ে হাজার বছর। । তিনি অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ (দেখুন এখানে হুমায়ূন আজাদের রবীন্দ্র-সমালোচনা (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ )’ । খুব আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি কুলদার তালিকায় হুমায়ুন আজাদের নাম নেই। এমন তো নয় নারিবাদি দৃষ্টিকোন থেকে সমালোচনাগুলো তার অজানা। হুমায়ুন আজাদের কথা বাদ দেই, এমনকি অধুনা আনন্দবাজার পত্রিকাতেও মল্লিকা সেনগুপ্ত লিখেছেন রেখেছ রমনী করে। নিশ্চয় কুলদা রায় বলবেন না যে, মল্লিকা সেনগুপ্ত জামাতি সৈয়দ সাজ্জাদ হুসাইন কিংবা সৈয়দ আলী আহসানদের অনুসারী।
কুলদা রায় খুব নৈর্বক্তিকভাবে বলে দিলেন – সমালোচকেরা রবীন্দ্রনাথকে কাটা ছেড়া করছেন তাঁর দেহ নিয়ে–আত্মার সন্ধান করতে পারেন নি। তো আত্মার সন্ধান (? 😀 ) পেতে হলে কি করতে হবে? অন্ধ স্তাবকতায় গা ভাসিয়ে দিতে হবে? তা হলে নবী পয়গম্বরের অনুসারীদের সাথে আমাদের আর পার্থক্য থাকলো কোথায়?
গুরুত্বপূর্ণ সিরিজটি মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
@অভিজিৎ,
হয়ত হুমায়ুন আজাদের সমালোচনার সাথে “হিন্দু মিথ”-এর সম্পর্ক নেই বলেই
এই পর্বে সেটার উল্লেখ অবধারিত ছিল না ;)। এটাতো সবে প্রথম পর্ব। আপনার মন্তব্য মূলত লেখকের মুখবন্ধের আলোচনায় সীমাবদ্ধ থেকেছে। পরে তো লেখকের পুরো একটি থিসিস আছে রবীন্দ্রনাথের (অ)হিন্দুত্ব সম্বন্ধে। আমার তো মনে হয় মূল আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে সেই টি।
@অভিজিৎ,
একেবারে সিরিজের ১ম পর্বেই দেখি ছাই দিয়ে পাকাল মাছ ধরার তালে আছেন ভাই। লেখককে আর একটু সময় দেন দেখি কি ওনার বক্তব্য। তবে লেখার স্টাইলে ওনাকে মোটিভেটেড মনে হয়।আমি ভাই কবিতা বুঝি কম তাই কবি বা কবিতার মধ্যে নাক গলাই না।
@অভিজিৎ দা,
হুমায়ুন আজাদের নাম না দেখে খুব বিস্মিত আমিও। জানি না এখানে লেখকের উদ্দেশ্য কি? 😕
লেখাটি অতি সরলীকরন। “ব্যাক্তি” রবীন্দ্রনাথ বাস্তবে মহম্মদ আলি জিন্নাহ র থেকেও প্রগতিশীলতায় পিছিয়েছিলেন। তবে লেখক রবীন্দ্রনাথ অনেক বড় মানুষ। শান্তিনিকেতনে জাতিভেদ প্রথা উনি টিকিয়ে ছিলেন কেন? জিন্না যেখানে নিজের প্রেমিকাকে বিয়ে করার জন্যে দুবছর অপেক্ষা করেছিলেন যেহেতু তার বয়স ১৬ হয় নি এবং বাল্য বিবাহ রোধের বিলে সক্রিয় ছিলেন-সেখানে রবীন্দ্রনাথ তার সকল কন্যাকেই বাল্য বিবাহ দিয়েছেন।
এসবই ব্যাক্তি রবীন্দ্রনাথ। লেখক রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কিন্ত ল্যাবেরেটরী বা স্ত্রঈর পত্রের নারীবাদি ধর্ম বিদ্রোহী লেখনী। হিন্দু ধর্মকে অনেক লেখাতেই তিনি বিদ্ধ করেছেন-তার সৃষ্ট অনেক চরিত্রই নিধার্মিক। সেই রবীন্দ্রনাথ আলাদা। সেখানে তিনি অনন্য। তবে কবির ব্যাক্তি জীবনে না ঘাঁটলেই হবে। ব্যাক্তি রবীন্দ্রনাথকে বর্জন করাই ভাল। আমরা লেখক রবীন্দ্রনাথ নিয়েই খুশী।
@বিপ্লব পাল,
যেহেতু লেখাটি সিরিজ আকারে তাই আমার মনে হয় লেখককে আর একটু সময় দেয়া উচিত তার আসল বক্তব্য উপস্থাপনের। একেবারে সিরিজের ১ম পর্বেই সব কিছু আশা করা ঠিক না।
@বিপ্লব পাল,
“
আপনার এ বক্তব্যের সাথে আমি একমত না। বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়াকে আমি প্রগতিশীলতা মনে করি না , মনে করি আদিমতা। বন্ধুর বাসায় জিন্নাহ যখন যেত বন্ধুর অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে নিশ্চ্য়ই তাকে চাচা বা কাকা বলে ডাকত। এর পর যে লোক সেই ভাতিজা তুল্য মেয়েকে বিয়ে করতে চায় বা করে সে আর যাই হোক সুসভ্য মানুষ হতে পারে না। স্মরন রাখা উচিত , আমরা মানুষ জন্তু জানোয়ার নই যে আমাদের বাচ বিচার থাকবে না। তবে একজন মুসলমান হিসাবে জিন্নাহ তার যথার্থ পরিচয় রেখেছে যেহেতু তার নবী মোহাম্মদও তো ঠিক একই কর্মটি করেছিল।
@ভবঘুরে,
এটা সাম্প্রদায়িক উক্তি। হিন্দু কুলীনরা ৯০ বছর বয়সে ৯ বছরের কন্যা সন্তান বিয়ে করত। তার জন্যে কি গোটা হিন্দু সমাজকে গালি দেবেন?
রামকৃষন দেব ২৪ বছর বয়সে ৬ বছরের সারদা দেবীকে বিয়ে করেন-কি বলবেন, ধর্ষকাম রামকৃষ্ণ? লোকে আপনাকে উন্মাদ বলবে।
রত্নাবাই অনন্য মহিলা ছিলেন-জিন্নাকে তার ভাল লেগে ছিল। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক বাস্প ছড়ানো কথাবার্তাতে এটাই বোঝা যায়, এই ভবঘুরে সাম্প্রদায়িক মুসলিম মননের অন্য পিঠ। ইসলাম টা রোগ না, মুসলিম হওয়াটাও গুনাহ না-সমস্যা হচ্ছে তাদের অসহিসষ্ণু অবোধ যুক্তিবিহীন মন-আর সেই ভূত একজন যুক্তিবাদির মধ্যে আসলে, সেও একই রোগে আক্রান্ত।
@বিপ্লব পাল,
আপনার দৃষ্টিতে সাম্প্রদায়িক মনে হতে পারে সেটা আপনার দৃষ্টি ভঙ্গির সমস্যা। আপনি মূল বিষয়কে পাশ কাটিয়ে গেছেন। মূল বিষয় ছিল একজন পূর্ন বয়স্ক মানুষ যে আবার বিশাল নেতা সে কিভাবে তার বন্ধুর নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতে পারে। সেই মেয়ে আর তার নিজের মেয়ের মধ্যে তফাৎটা কোথায় ? বিবর্তনবাদ অনুযায়ী আমরা একপ্রকার জন্তুই কিন্তু আমরা বুদ্ধিমান ও সভ্য বলে নিজেদের দাবী করি যা আমাদের বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা এনে দিয়েছে এখন। সে ক্ষমতাই আমাদেরকে বিবেকবান করে গড়ে তুলেছে। আর আমরা সেটা অনুসরন করার চেষ্টা করি। এখন আমরা যদি বুদ্ধিমান ও সভ্য হয়েও সেই জঙ্গলাচারী মানুষের মত আচরন করি তাহলে আমরা সভ্যতার দাবীদার হই কেমনে ?
এবার আপনার মন্তব্যে বলি। জিন্নাহ যে এহেন কাজ করেছিল তার জন্য তার বিবেকে একটুও বাধেনি। কারন সে তেমন ধার্মিক মানুষ না হলেও মোহাম্মদকে সে নবী মানত ঠিকই । আর যেহেতু মোহাম্মদ এ ধরনের একটা কাজ করেছিল তাই জিন্নাহ এর কাছে তার নিজের কাজটি খারাপ মনে হয় নি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
@বিপ্লব পাল,
এটা কোন অতি অবশ্য পালনীয় বা অনুকরনীয় বিধান নয়। এসব কান্ড যারা এক সময় করত , মানুষ এখন জানে যে এসব করত অন্ধ কুসংস্কারের কারনে । তাই এ প্রথা বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। আদর্শ জীবন বিধান হিসাবে এসব বিশ্বাস করে এমন হিন্দু এখন খুজে পাওয়া দুস্কর। তাই এ ধরনের অপসৃয়মান উদাহরন দিয়ে ঠিক একই রকম একটি কু প্রথা সমর্থন করার বা পক্ষে বলার যুক্তি দেখি না। হিন্দুরা যদি এখনও কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটায় তাহলে অবশ্যই তাকে অসভ্যতা বলে গালি খেতে হবে। কিন্তু যে সমাজে এ ঘটনাকে এখনও খারাপ বলে মনে করা হয় না , তাদেরকে আমরা সভ্য বলব কেমনে ? আমাদের মহানবী জগতের শ্রেষ্ট মানুষ যে এরকম একটা ঘটনা ঘটিয়েছিল , কয়জন মুসলমানকে পাবেন যে বলবে ওটা একটা খারাপ কাজ ছিল ? সমস্যাটা সেখানেই ।
@ভবঘুরে,
দক্ষিণ ভারতের খুব একটা সাধারণ নিয়ম হচ্ছে আপন মামা এবং ভাগ্নির বিয়ে। সুদীর্ঘকাল ধরে দক্ষিণ ভারতীয়রা এর অনুশীলন করে গেছে। ইদানিং স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বাড়ার কারণে এ ধরনের বিয়ে কিছুটা কম হচ্ছে কিন্তু উঠে যায় নি একেবারেই। শুধু মামা-ভাগ্নিই নয়, আপন মাসি এবং ভাগ্নের বিয়েও সেখানে বৈধ। এখন এ সম্পর্কে আপনার একটা মতামত মুক্তমনার পাঠকেরা পাবে বলেই আশা করছি আমি।
আপনার মুসলিম বিদ্বেষটা খুব দৃষ্টিকটুভাবেই দৃশ্যমান লাগে সবসময়।
দুঃখিত যে কুলদা রায়ের বিষয়বস্তুর বাইরে চলে গিয়েছি আমি।
@ফরিদ আহমেদ,
সত্য কথা সব সময় সুন্দর হয় না। আপনার এ মন্তব্য প্রকাশ করে যে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিও নিরপেক্ষ নয়। নইলে আমার সত্য কথায় আপনার এরকম মনে হওয়ার কথা নয়। দক্ষিন ভারতে যে নিয়মের কথা বললেন- অবশ্যই সেটাও একটা অসভ্য নিয়ম। আপনিই আবার বলছেন সেটা নাকি এখন কম হয় , তার মানে তারা আস্তে আস্তে সভ্য হচ্ছে। তফাৎটা হলো – আল্লাহর নবী দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট মানুষ আর তার জীবনাদর্শ গোটা মানবজাতির জন্য অনুসরনীয়। সেই নবী যদি তার বন্ধুর শিশু কন্যাকে বিয়ে করতে পারেন(নানা ছলা কলা করে) , তাহলে অন্য যে কেউ যে নাকি তার অনুসারী সে একই কাজ করতে পারবে। আর সেটা মোটেও কোন খারাপ কাজ নয়।তাই জিন্নাহও কোন খারাপ কাজ করেনি। দক্ষিন ভারতের নিয়ম এ ধরনের কোন শ্রেষ্ট মানুষের আচরন বা প্রথা নয় যা অনুসরনীয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন সমস্যাটা কোথায়।
@ভবঘুরে,
মন্তব্যটিকে আমি সাম্প্রদায়িক মনে করি না। কারণ মুহাম্মদ নিজেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট আদর্শ বলে এবং শেষ নবী তথা কিয়ামত পর্যন্ত অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব বলে দাবী করেছেন। তাই তাঁর অনুসারীদের মধ্যে তাকে অনুসরণের প্রবণতা থাকবেই।
তবে জিন্নার ক্ষেত্রে তা কতটা খাটে আর জিন্না কতটা মুসলমান ছিলেন বা ছিলেন না বা তার অল্প বয়স্ক বা বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করাটা ইসলামকে অনুসরণ করে কিনা বা এসব কাজ তিনি আদৌ করেছেন কি না তা আমি জানি না। এর দায়িত্ব মন্তব্যকারীর।
বন্ধুর মেয়ে বিয়ে করার প্রসঙ্গে আমি বলব, যদি দুইজন মানুষ প্রাপ্ত বয়স্ক হয় আর তারা নিজেরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় যাতে কারো কোনো ক্ষতি না হয় তবে তাতে আপত্তি থাকাটা একেবারেই উচিত না — যদি কারো এটাকে আপত্তি-জনক মনে হয় তবে এটা তারই দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা, তাকেই বরং দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। এটাকে মনে রাখা আমাদের জন্য জরুরী। মুহাম্মদের কাজটাকে কেন সমর্থন যোগ্য মনে করি না তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। মুহাম্মদ যদি শিশুবিবাহ না করতেন ও বিয়ের ক্ষেত্রে ছলনার আশ্রয় না নিতেন তবে তা আপত্তিকর হত না।
মানুষকে ভালবাসি বলেই ধর্মের বিরোধিতা করি।
মুসলমানদের ভালবাসি বলেই ইসলামের বিরোধিতা করি।
@সৈকত চৌধুরী,
আমি একটি ছেলেকে চিনি, যে মনে করে বাঁকুড়াতে ওর তান্ত্রিক গুরুদেব হচ্ছে পৃথিবীর শেষ্ঠ মানুষ।
ভারতের অধিকাংশ জনগন বিবেকানন্দকে একজন শ্রেষ্ঠ জগৎপুরুষ হিসাবে মানে-তাদের কাছে মহম্মদ খুব সম্ভবত একজন নিকৃষ্ঠতম পুরুষ।
ঠিক তেমনই মুসলমানদের কাছে মহম্মদ আদর্শ শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি।
এগুলি কাল্ট প্রবণতা। এরা মানুষ দেখে না-মানুষ বোঝে না। মোহাচ্ছন্ন অন্ধ জীব। এর মধ্যে মুসলমানদের বিশেষত্ব কিছু নেই-সব ধর্মভীরুই কমবেশী এক ।
এই কাল্টিস্ট প্রবণতার বিরুদ্ধে অবশ্যই মুখর হতে হবে-কিন্ত
এখানে আলাদা করে মুসলমানদের টানার দরকার ছিল না।
@বিপ্লব পাল,
বিষয়টা হল- মুহাম্মদ নিজেই নিজেকে সর্বোত্তম আদর্শ এবং সর্বশেষ প্রেরিত পুরুষ বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং এটাকে মেনে নেয়া মুসলমান হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই সমস্যা জটিল। ইসলাম ভয়ানক সমগ্রতাবাদী ধর্ম।
@সৈকত চৌধুরী,
আসলে বিষয়টা কি জানেন , সালিশ মানি কিন্তু তালগাছটা আমার।
বর্তমানে শিশু বিবাহের সমালোচনা করব , কিন্তু দুনিয়ার শ্রেষ্ট মানুষ মহানবী যে একই কান্ডটি করে গেছেন , সে বিষয়ে চুপ করে যাব। আবার কেউ এ বিষয়ে কথা বললে অন্য নানা রকম উদাহরন তুলে ধরে আলোচনাকে জটিল করে তুলব।
আবার খেয়াল করুন , মহানবী নিজে ১৩ টা বিয়ে করলেও আল্লাহর বানীর নামে সাধারন মানুষকে মাত্র ৪ টা বিয়ের অনুমতি দিয়ে গেছেন। ঠিক একই ভাবে তিনি কিন্তু শিশু বিয়ের ব্যপারে কোন বানী হাজির করেন নি। বলেন নি যে , এটা করা যাবে না। কোন হাদিসও নেই। মানে , এটা তার কাছে খারাপ মনে হয়নি। আর তাই এটা এখনও চালু আছে ও থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। ঠিক একারনেই মনে হয় ,ইসলামিস্টরা শিশু বিবাহের সমালোচনা থেকে সতর্কভাবে দুরে থাকে, কেউ এ ব্যপারে প্রশ্ন তুললে নানা কথা বলে বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
@সৈকত চৌধুরী,
এই বিতর্ক পুরোই ভিত্তিহীন এবং অনাবশ্যক মনে হয়েছে।
জিন্নাহ কি কোথাও আত্মকথনে বলেছেন যে তার মহানবী নাবালিকা বন্ধুকন্যা বিবাহ করেছেন বলে তিনিও একই আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে এ কাজ করেছিলেন? তেমন কোন ঐতিহাসিক প্রমান কি আছে? না হলে এর মাঝে নবী মোহাম্মদ ধরে টানাটানি করার মানে কি? আপনি বিষয়টা ফোকাস করেছেন তবে তেমন জোর দেননি মনে হচ্ছে। তেমন কোন ঐতিহাসিক প্রমান থাকলে ভবঘুরের কথা মানা যায়। নয়ত নয়।
ধরা যাক কোন মুসলমান সত, ভালমানুষ। তখন কি প্রথমেই কোন যুক্তিবাদী তার সততা বা ভালমানুষির কৃতিত্ব আল আমিন নবী মোহাম্মদকে দেবেন? নাকি বলবেন যে কৃতিত্ব সেই ব্যাক্তি মুসলমানের? খারাপ কিছু দেখা গেলে কেবল তার দায় নবী মোহাম্মদের, আর ভাল কিছু হলে নিজের?
নবী মোহাম্মদ ছাড়া বাল্য বিবাহের নজির আর জগতে কেউ রেখে যান নি?
@আদিল মাহমুদ,
উফ ভাই, কি বললেন, সাধু সাধু সাধু সাধু। :guru: :guru: :guru: :guru: :guru: :guru:
মুক্তমনার কিছু সদস্যের মুসলিম বিদ্বেষ ভয়ঙ্কর।
এখন তো দেখা যাইতেছে কেউই কিছু বলতেছে না।
এই পোষ্টের প্রথম দিকে একটু পড়া হইছিল। তারপরে একটু দেরি হইয়া গেল কমন্টেস পড়তে। ইশ কি মিসই না করছি। 😥
@সাইফুল ইসলাম,
এত খুশী হবেন না, পরিস্থিতি তো মঝে মাঝে আসলেই কান্না কাটি করার মতই মনে হয়।
তবেই এই জিন্নাহের বিবাহ ঘটিত অহেতূক বিত্ক একেবারেই অনাবশ্যক ও ভিত্তিহীন ছিল।