ঠাকুরদার সারাদিনের খরচ ছিল এক টাকা। সকালে এক কাপ চা—বিকালে আরেক কাপ চা। হনু ময়রায় দোকান থেকে কিনতেন একটি সন্দেশ। একটুকরো ভেঙে আমার মুখে দিতেন। বলতেন, কেমন লাগছে? অমৃত সমান।
চৌরঙ্গীতেই মন্টুদের বাসা। ওদের উঠোনে মন্টু দাঁড়িয়ে থাকত। ওর হাতে এক টুকরো। শব্দ শুনে রূপকুমার এসে গেছে। ওর জন্যও এক টুকরো। ওর ছোট বোনটি কেবলই হাঁটতে শিখেছে। মায়ের কোল থেকে বলে উঠেছে—আমালে দাও। আমালে দাও। ওকে সন্দেশ না দিয়ে পারা যায়?
আমাদের বাড়ি যেতে তিনটে গলি। সন্দেশ বিলিয়ে যেতে যেতে সন্ধ্যে ঘুরে যেত। আমার ঠাকুরদার সন্দেশ তখনো ফুরোয় নি। এক টুকরো আমার পাগলী ঠাকুরমাও পেত। সে তখন পিঁপড়ের আহার। আহা, তবু তো অমৃত।
ঠাকুরদা মারা যাওয়ার পরে এক আত্মীয় আমাদেরকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিল। সেদিন জানা গেল—ঠাকুরদা ছিলেন নিঃস্ব। নিঃস্ব মানুষ ছাড়া অমৃত বিতরণ করতে পারে আর কে?
২.
অমৃত পাঠ আমার প্রিয়। অমৃত পাঠে আমার চোখে আরাম আসে। আনন্দ জাগে মনে। আত্মার শান্তি হয়। এই অমৃত একা খেতে নেই। মনে হয় পিঁপড়ের আহারের মত দেই না বিলিয়ে অমৃত পাঠ—পথে যেতে যেতে সন্ধ্যে ফুরোবার আগেই।
৩.
অমৃত পাঠের মত কবিতা পাঠও আমার প্রিয়। কোনো ভাল লেখা পেলে সবাইকে পড়াতে ইচ্ছে করে। এইভাবে অনেক কবিতা ভাগ করে পড়েছি। এখনো মাঝে মাঝে পড়ি। এক্ষেত্রে কবিদের কাছ থেকে অনুমতি নেই নি। নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি নি। শুধু একজন আপত্তি তুলেছিলেন।
এভাবে অনেক কবিতার সঙ্গে জানাশোনা হয়েছে। কবি সৌনক দত্তের কবিতার পোস্ট দিতে পারি নি। ওর ভাল কবিতার জন্য ওৎ পেতে আছি। পাব।
৪.
যিনি কবিতা পোস্ট দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি তুলেছিলেন—রীতিমত ধমক দিয়েছিলেন, তিনি কবি সোহেল হাসান গালিব। একটি মতাদর্শিক কারণে উনি গালিটি দিয়েছিলেন পরে বুঝেছি। এ বিষয়ে কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ ব্যতিক্রম। তাঁর সঙ্গে অনেক বাহাস হয়েছে ঠিকই—কিন্তু কবিতা প্রদানের ব্যাপারে উনি ব্যক্তিগত ক্ষোভ পুষে রাখেন নি। এজন্য সুব্রতকে প্রকৃত কবি বলেই মনে হয়েছে।
৫.
এই কবিতা পোস্ট দেওয়ার বিষয়ে দুজন কবি শ্লেষ বর্ষণ করেছেন। একজন কবি গালিব। তিনি বলেছিলেন—কুলদা বৃষ্টির মত কবিতার পোস্ট দেন। আশেপাশের বাক্যে শ্লেষটি প্রকট হয়েছিল। আরেকজন নিউ ইয়র্কের কবি—হাসানাল আব্দুল্লাহ। তার কবিতায় কবিতা আছে কিনা একজন পাঠক হিসাবে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম—তারপর উনি সস্ত্রীক গালিগালাজের বর্ষণ ঝরিয়ে আমাকে রিমুভ করেছেন সখাতালিকা থেকে। তিনিও আমার কবিতা পোস্ট দেওয়াটাকে খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন।
এবং কবি তুষার গায়েন আগে এত কবিতার পোস্ট দেওয়াটাকে ভাল সম্পদক হওয়ার অন্তরায় বলে মনে করতেন। বলেছেন একজন কবির কবিতা পোস্ট দেওয়ার পরে বেশ কিছুটা সময় দেওয়া দরকার। পাঠকদের জন্য। না হলে পাঠক মনোযোগ হারাবেন। হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। যখন যা পাই তাই ভাগ করে নেই। তার অসময় অসময় বলে আমার কাছে কোনো বিধি নেই। আমার মতটি মানতে হবে এর কোনো কথা নেই। আর আমি তো কবিতার সম্পাদক নই। হওয়ার ইচ্ছেও নেই।
কবিতা যখন অমৃত পাঠ—তখন কবিতার জন্য কোনো ঘেরাবেড়ার দরকার নেই। নদীর হাওয়ার জন্য কি পুলিশি আইন করার উপায় আছে?
৬.
আমার প্রয়াত পিসির একটি ছবি পেয়েছিলাম আমার এলবাম খুঁজে। আমার বাবার শ্রাদ্ধের দিনে পিসি বসে আছেন মন্দিরের সামনে।মাথার উপরে একটি চেরি ফুল গাছ। তিনি নেই। অনেক শোকের মধ্যে ছবিটি তুলেছিলাম। বাবা পিসিরা হারিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ছবিও থাকছে না। এটার জন্য মনে খেদ থেকে যায়। তাঁর ছেলে মেয়েরা অনেক কৃতি। তাঁদেরকে মনে করে আমাদের বাড়ির লোকজন বড় হয়।
এই পিসির ছবিটি আমি একদিন বোনটির ওয়ালে দিয়েছিলাম। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু ছবিটিকে তাঁদের কাছে পৌঁছানো।

পিসি ছিলেন দেবী মুর্তির মত। আমি তো তাই-ই মনে করেছি চিরকাল। তাঁর সঙ্গে বুদ্ধদেব বসুর গল্প নিয়ে আলোচনা হত। বিভূতি ভূষণকে আমরা দুজনেই ভালবাসতাম। কিন্তু ছবিটা দেখে এক ভাই মন্তব্য করলেন—মায়ের মত এমন পবিত্র ছবিটিকে কেন আপনি পোস্ট দিলেন?
–আমার অপরাধ কি?
–আপনার মত বিতর্কিত লোক এভাবে পবিত্র ছবি দিলে সমস্যা হয়।
ঠিকই তো। পবিত্রতাকে প্রকাশের জন্য পবিত্রতা অর্জন পূর্ব শর্ত। অমৃতকে প্রকাশের জন্য অমৃতপাঠের অধিকারী হওয়া পূর্বশর্ত। অনধিকারীর কানে শিসে ঢেলে দাও।