প্রতিবছর ডিসেম্বরের ১০ তারিখ আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অনুষ্ঠিত হয় নোবেল পুরষ্কার প্রদানের মহোৎসব। সুইডেনের রাজার কাছ থেকে নোবেল পদক ও সনদ গ্রহণ করেন পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীরা। (একই দিনে নরওয়ের অস্লোয় অনুষ্ঠিত হয় নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠান।) অনুষ্ঠানে পুরুষরা পরেন বিশেষ ডিজাইনের কালো স্যুটের সাথে সাদা বো-টাই, আর মহিলারা পরেন আনুষ্ঠানিক সান্ধ্যকালীন পোশাক। নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে যাঁরা সাধারণত আটপৌরে পোশাক পছন্দ করেন, তাঁরাও এ’দিনে এই বিশেষ নোবেল-পোশাক পরেই পুরষ্কার নিতে যান। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরষ্কারের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটলো। মঞ্চে বসা নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে দেখা গেলো একজনের পোশাক সম্পূর্ণ অন্যরকম। কালো লম্বা গলাবদ্ধ কোটের সাথে সাদা সালোয়ার পরনে, পায়ে জরির নাগরা জুতো, আর মাথায় সাদা পাগড়ি। হলভর্তি অতিথিদের সবার চোখ এই অন্যরকম পোশাকের অন্যরকম মানুষটির দিকে- যাঁর নাম আবদুস সালাম, নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর আবদুস সালাম।
পদার্থবিজ্ঞানের জগতে প্রফেসর আবদুস সালামের সত্যিকারের বিচরণ শুরু হয়েছে ১৯৪৭ সাল থেকে যখন তিনি কেমব্রিজে পড়তে আসেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৯- এই বত্রিশ বছর ধরে যাঁরা চেনেন তাঁকে, পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর নোবেল প্রাপ্তিতে তাঁরা মোটেও অবাক হননি। কিন্তু সবাই খুব অবাক হয়েছেন নোবেল পুরষ্কারের অনুষ্ঠানে তাঁর পোশাক দেখে। কারণ শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই প্রফেসর আবদুস সালাম দামী থ্রি-পিস স্যুট পরতে অভ্যস্ত। তাই বিশেষ দিনে বিশেষ পোশাকের পেছনে এই বিজ্ঞানীর নিশ্চয়ই বড় কোন যুক্তি আছে।
প্রফেসর আবদুস সালাম জানেন তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কাছে নোবেল পুরষ্কারের মূল্য কতখানি। তিনি দেখেছেন পৃথিবীতে উন্নত-বিশ্ব ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মাঝে সম্পদের বিশাল ব্যবধানের কারণে উন্নয়নশীল বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীও উন্নত-বিশ্বের মেধাহীনদের চেয়েও পিছিয়ে পড়ে। তাই তিনি এই অনুষ্ঠানে উন্নত বিশ্বের কাছে নিজের দেশের পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছেন পোশাকের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়- দু’দিন আগে দেয়া তাঁর নোবেল বক্তৃতাতেও তিনি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছেন ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইসলামী পন্ডিতদের অবদানের কথা। নোবেল ভোজ-সভার বক্তৃতাতেও তিনি কোরানের আয়াত উদ্ধৃত করেছেন, তাঁর গবেষণার সাথে তাঁর গভীর ধর্মীয় বিশ্বাসের কথাও উল্লেখ করেছেন, বলেছেন পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে তাঁর গর্বের কথা।
পোশাকের নাটকীয়তার গুরুত্ব ঠিক কতটুকু তা জানার উপায় নেই। তবে এই নাটকীয়তার উপাদান জোগাড় করার জন্য তাঁকে বেশ কিছু কষ্ট করতে হয়েছে। সেই চৌদ্দ বছর বয়সে পাগড়ি পরেছিলেন- তাও অন্যের সাহায্যে। এত বছর পর পাগড়ি পরতে গিয়ে দেখা গেলো- পাগড়ি কীভাবে পরতে হয় তা তিনি জানেনই না। সুইডেনের পাকিস্তান দূতাবাসে খোঁজ নেয়া হলো। সেখানেও অফিসারদের কেউই স্বদেশী পোশাক পরেন না। সুতরাং পাগড়ি কীভাবে পরতে হয় জানার প্রশ্নই ওঠে না। খুঁজতে খুঁজতে দূতাবাসের রাঁধুনিদের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেল যে পাগড়ি পরতে জানে। তাকে নিয়ে আসা হলো প্রফেসর আবদুস সালামের পাগড়ি বেঁধে দেয়ার জন্য। তার পরানোর ধরণ দেখে প্রফেসর সালাম বুঝতে পারলেন- রাঁধুনিটি এসেছে পাকিস্তানের অন্য একটা প্রদেশ থেকে- যে প্রদেশের পাগড়ির প্যাঁচের সাথে তাঁর নিজের প্রদেশের পাগড়ির প্যাঁচের মিল নেই। কিন্তু কী আর করা যাবে। ভুল-পাগড়ি মাথায় নিয়েই হাজির হলেন নোবেল-অনুষ্ঠানে।
বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সাফল্যের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি হলো নোবেল পুরষ্কার। এই পুরষ্কার পাবার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান মানুষ- বিশেষ করে সেই মানুষ যদি হন পাকিস্তানের মত অনুন্নত দেশ থেকে উঠে আসা কেউ। কিন্তু এই খ্যাতি লাভের পেছনে যে কী পরিমাণ সংগ্রাম জড়িত তা মানুষটির ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে ওঠার দিকে একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়।
তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি মফঃস্বল শহর ঝাং। আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই এই শহরের কেবল হির-রান্ঝার প্রেম-কাহিনিটা ছাড়া। ঝাং এর বাসিন্দারা মনে করেন হির-রান্ঝার ঘটনা সত্যি এবং তাদের এলাকাতেই ঘটেছিল। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কৃষক, লেখাপড়া বিশেষ কেউ করেন নি। পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না সেখানে। মাঝে মধ্যে শহর থেকে কেউ এলে সাথে হয়তো সংবাদ-পত্র আসে। যারা সামান্য পড়তে জানেন তারা সেই পুরনো সংবাদ-পত্রই পড়ে শোনান অন্যদের। গ্রামের সামান্য যে ক’টা পরিবারে শিক্ষার আলো প্রবেশ করেছিল- চৌধুরি পরিবার তাদের অন্যতম। সচ্ছলতা তাদের খুব একটা ছিল না, তবে লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ ছিল খুব।
কথিত আছে চৌধুরিদের পূর্ব-পুরুষ সৈয়দ বুধান ছিলেন রাজপুতনার হিন্দু। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তিনি চলে এসেছিলেন পাঞ্জাবে। তারপর কেটে গেছে কয়েক শতাব্দী। বর্তমান চৌধুরি গুল মুহাম্মদ গ্রাম্য ডাক্তার। ভেষজ চিকিৎসক হিসেবে তাঁর নাম-ডাক আছে। তাঁর বড় ছেলে চৌধুরি গোলাম হোসেইন ১৮৯৯ সালে খ্রিস্টান কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে প্রাদেশিক সরকারের জেলা স্কুল পরিদর্শক হয়েছেন। ছোট ছেলে চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইন গোলাম হোসেইনের চেয়ে চৌদ্দ বছরের ছোট। মোহাম্মদ হোসেইন স্কুল পাস করে লাহোরের ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সঙ্গতির অভাবে লেখাপড়া শেষ না করেই গ্রামে ফিরে আসেন। কাজের সন্ধানে এখানে ওখানে ঘুরে স্থানীয় ঝাং স্কুলে মাসে উনিশ রুপি বেতনে অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন। দু’বছর পর স্কুলে তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। তিনি ইংরেজি ও অংক পড়ান। পাশাপাশি বাবার ডাক্তারি-বিদ্যাও কিছুটা শিখে নিয়েছেন। বাড়িতে ছোট একটা ভেষজ ঔষধালয়ও আছে।
১৯২২ সালে বিয়ে করেন চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইন। বছর খানেকের মধ্যেই কন্যা সন্তানের বাবা হলেন তিনি। মেয়ের নাম রাখলেন মাসুদা বেগম। কিন্তু মেয়ের জন্মের দেড় মাসের মাথায় তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। মহা সমস্যায় পড়লেন চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইন। দেড় মাসের শিশুর দেখাশোনা করা, ঘর-সংসার সামলানো, তদুপরি মাত্র একত্রিশ বছরে বিপত্নিক হওয়া। সুতরাং আবার বিয়ে। ১৯২৫ সালের মে মাসে চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইন বিয়ে করলেন সরকারি ট্যাক্স অফিসার হাফিজ নবী বক্শ’র কন্যা হাজিরা বেগমকে। ঝাং থেকে ষাট মাইল দক্ষিণে শাহিওয়াল জেলার হাফিজ নবী বক্শের পরিবারের সবাই খুব ধার্মিক। হাজিরা বেগমের ভাই বিশ বছর ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন পশ্চিম আফ্রিকায়। ধর্মীয় প্রভাব চৌধুরি পরিবারে আগে থেকেই ছিল। হাজিরা বেগমের সাথে বিয়ের পর সে প্রভাব আরো বাড়লো।
সামাজিক প্রথা অনুযায়ী প্রথম সন্তানের জন্মের আগে শাহিওয়ালে বাপের বাড়িতে চলে এলেন হাজিরা বেগম। ১৯২৬ সালের ২৯ জানুয়ারি এখানেই জন্ম হলো চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইনের দ্বিতীয় এবং হাজিরা বেগমের প্রথম সন্তান আবদুস সালামের। চল্লিশ দিন পর ছেলেকে নিয়ে ঝাং-এর বাড়িতে ফিরলেন হাজিরা বেগম। মা-বাবার চোখের মণি আবদুস সালাম। দু’বছর বয়স হতে না হতেই বাবা মোহাম্মদ হোসেইন ছেলেকে সাইকেলের সামনে বসিয়ে নিজের সাথে নিয়ে যান। ইতোমধ্যে সংসারে আরেকটা সন্তান এসে গেছে- আবদুস সালামের ছোটবোন হামিদা বেগম। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই হাজিরা বেগমের আরো ছয়টি ছেলে-মেয়ের জন্ম হয়। নয়জন ছেলে-মেয়ে ও নিজেদের নিয়ে এগারো জনের বিরাট সংসারে খরচ বেড়েছে অনেক, কিন্তু আয় এখনো মাসে মাত্র উনিশ রুপি। পরিবারের বড় ছেলে হবার কারণে হোক- বা লেখাপড়ায় খুব ভাল হবার কারণে হোক- আবদুস সালাম তার অন্য-ভাইবোনদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে শুরু থেকেই। ছোটবোন হামিদা বেগমের ওপর দায়িত্ব পড়লো আবদুস সালামের যখন যা দরকার তা জোগানোর। জামা-কাপড় ধোয়া, বিছানা-করা থেকে শুরু করে সবকিছু গুছিয়ে রাখা। সন্ধ্যায় পড়তে বসার আগেই আবদুস সালামের হারিকেনের চিমনি পরিষ্কার করে হারিকেন জ্বালিয়ে টেবিলে রেখে দেয় তার ভাই-বোনেরা।
বাড়ি থেকে মাত্র আধ-কিলোমিটার দূরে ঝাং স্কুলেই আবদুস সালামের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু। সাধারণত ছ’বছর বয়সে ছেলেরা স্কুলে যেতে শুরু করে। (ঝাং অঞ্চলে মেয়েদের লেখাপড়া করার প্রয়োজনীয়তার কথা তখনো ভাবেনি কেউ। আবদুস সালামের বোনেরাও লেখাপড়া করেনি।) কিন্তু আবদুস সালামের বাবা ছেলের তিন বছর বয়স থেকেই বাড়িতে লেখাপড়া শেখানো শুরু করে দিয়েছেন। ফলে ১৯৩২ সালে ছয় বছর বয়সে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হবার বদলে আবদুস সালাম সোজা ক্লাস থ্রিতে গিয়ে ভর্তি হলো। আবদুস সালামের লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ যত্নশীল তার বাবা মোহাম্মদ হোসেইন। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পর তার বাবা স্কুলে কী কী পড়া হয়েছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করতেন। আর দারুণ উৎসাহ দিতেন তার মামা যিনি পশ্চিম আফ্রিকায় এক সময় ইসলাম ধর্ম প্রচারক ছিলেন। ইংরেজি আর অংকের পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষাও চললো সমান তালে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে শুনতে শুনতে ছোটবেলাতেই কোরান পড়তে শিখে গেলেন আবদুস সালাম।
স্কুলের সব পরীক্ষায় চমৎকার ফলাফল করে সব শিক্ষকের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠল আবদুস সালাম। কিন্তু তার বাবা জানতেন ঝাং স্কুলে উঁচু ক্লাসে পড়ানোর উপযুক্ত ভালো ইংরেজি শিক্ষক নেই। ভালো ইংরেজি না জানলে জীবনে বেশিদূর যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি ঠিক করলেন ক্লাস নাইন থেকে ছেলেকে লাহোরের সেন্ট্রাল মুসলিম মডেল স্কুলে ভর্তি করে দেবেন। ছেলের রেজাল্ট ভালো। সুতরাং ভর্তি হতে কোন সমস্যা হবার কথা নয়। ১৯৩৮ সালে চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইন ছেলেকে নিয়ে গেলেন মডেল স্কুলের হেডমাস্টারের কাছে। হেডমাস্টার ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন আবদুস সালামের দিকে। তার মাথায় লাল রুমি টুপি দেখে চিন্তিত হয়ে উঠলেন তিনি। যতই ভালো ছাত্র হোক এরকম অচল পোশাকের আন-স্মার্ট ছেলে তাঁর ‘মডার্ন’ স্কুলে বড়ই বেমানান। মডার্ন স্কুলে ভর্তি হওয়া হলো না আবদুস সালামের। চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইন ছেলেকে নিয়ে গেলেন ঝাং সরকারি উচ্চ-মাধ্যমিক কলেজের স্কুল শাখায়। এখানে বেশির ভাগ ছাত্র হিন্দু।
নতুন স্কুলের প্রথম পরীক্ষাতেই আবদুস সালাম প্রথম হলো। মোট ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৫৯১ নম্বর পেয়ে মাসে ছয় রুপি বৃত্তি ও দুই রুপি বুক-প্রাইজ পেলো। তাদের সংসারে এই ছয় রুপিও অনেক। অচিরেই স্কুলের শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠলো আবদুস সালাম। এখানেই বিজ্ঞানের ক্লাসে বসে আবদুস সালাম প্রথম শোনে মৌলিক বলের কথা। তবে একটু অন্যভাবে। তাদের বিজ্ঞান শিক্ষক শুরুতে বললেন মহাকর্ষ বলের কথা। নিউটনের তত্ত্ব ততদিনে ঝাং এর মত মফস্বল শহরেও ঢুকে পড়েছে। মহাকর্ষ বল ব্যাখ্যা করার পর শিক্ষক বললেন চুম্বকত্ব সম্পর্কে। একটা চুম্বক দেখিয়ে তার লোহাকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা দেখালেন, উত্তর-দক্ষিণ মেরুর দিকে তার অবস্থানের কথা বললেন, সমমেরুতে বিকর্ষণ আর বিপরীত মেরুতে আকর্ষণের কথাও বাদ গেলো না। বিদ্যুৎ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বললেন, “বিদ্যুৎ! আহা!! বিদ্যুৎ এমন একটা বস্তু যা ঝাং শহরে থাকে না। এটা থাকে এই প্রদেশের রাজধানীতে। এখান থেকে একশ’ মাইল পূর্বে- লাহোরে”। আসলে মাস্টার সাহেব ঠিকই বলেছিলেন। ঝাং শহরে বিদ্যুৎ এসেছিল আরো চার বছর পর, আবদুস সালামের বয়স তখন ষোল। নিউক্লিয়ার বল সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিজ্ঞানের মাস্টার বলেছিলেন, “নিউক্লিয়ার বল এমন এক ধরনের বল যা শুধু ইউরোপে আছে। ইন্ডিয়ায় তা থাকে না। সুতরাং নিউক্লিয়ার বল নিয়ে চিন্তা করার কোন দরকার নেই আমাদের”। সেদিন যে শিক্ষক নিউক্লিয়ার বল সম্পর্কে ভাবতে মানা করেছিলেন তিনি কি জানতেন যে পরবর্তীতে তাঁরই ছাত্র আবদুস সালাম নিউক্লিয়ার বল সম্পর্কিত অনেক তত্ত্বের মৌলিক ধারণা বদলে দেবেন?
১৯৪০ সালে আবদুস সালামের মেট্রিক পরীক্ষা। এ নিয়ে বাবা মোহাম্মদ হোসেইনের চিন্তার শেষ নেই। ছেলে যাতে পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করতে পারে তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন। ছেলের হাতের লেখা তেমন সুন্দর নয়- তাই ছেলেকে বাধ্য করলেন দিন রাত লেখা অনুশীলন করতে। ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও জ্যামিতিতেও কিছুটা দুর্বল আবদুস সালাম। একজন শিখ শিক্ষক আবদুস সালামকে বিনা পারিশ্রমিকে প্রাইভেট পড়ালেন পরীক্ষার আগে। পরীক্ষা বেশ ভালোই হলো। রেজাল্টের দিন বাবার স্কুলের অফিসে বসে অপেক্ষা করছিলো আবদুস সালাম। লাহোর থেকে পরীক্ষার ফলাফলের সংবাদ-পত্র এলো দুপুরের ট্রেনে। কিন্তু তার আগেই অভিনন্দন বার্তা সহ টেলিগ্রাম পৌঁছে গেলো স্কুলে। আবদুস সালাম ফার্স্ট স্ট্যান্ড করেছে- প্রথম হয়েছে সারা লাহোরের মধ্যে। সাইকেলে চেপে বাড়ি ফেরার পথে পুরো ঝাং শহর অভিনন্দন জানালো তাদের কৃতি ছাত্রকে। পরদিন সংবাদপত্রে ছবি বেরোল চৌদ্দ বছর বয়সী কিশোর আবদুস সালামের- চোখে চশমা, মাথায় পাগড়ি। বহুবছর পর নোবেল পুরষ্কার নেবার সময় এরকম পাগড়ির কথাই তাঁর মনে হয়েছিল।
মেট্রিকে প্রথম হয়ে আবদুস সালাম সরকারি বৃত্তি পেলো মাসিক বিশ রুপি। আর আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পেলো মাসিক তিরিশ রুপি বৃত্তি।
আবদুস সালামের পরিবারের আহমদিয়া হবার ইতিহাস খুব সাধারণ। আবদুস সালামের জ্যাঠা চৌধুরি গোলাম হোসেইন সর্বপ্রথম আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী হন। পরে ১৯১৪ সালে চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইন যখন লাহোরের ইসলামিয়া কলেজে পড়তেন- তখন ক্লাসের বন্ধুরা তাঁকে আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য বলেন। নিজের বড় ভাই আহমদিয়া হলেও মোহাম্মদ হোসেইন তখনো আহমদিয়াদের অনুসারী হন নি। তা’বলে ব্যক্তিগত ভাবে আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে কোন মতামতও তাঁর ছিল না। কিন্তু একটা আন্দোলন হচ্ছে দেখে তাঁর কৌতূহল হল আহমদিয়াদের সম্পর্কে জানার। নিজের চোখে সব দেখার জন্য তিনি চলে গেলেন কাদিয়ান- যেখান থেকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি। তিনি যখন কাদিয়ানে পৌঁছলেন তখন মসজিদে ধর্ম-বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আহমদিয়াদের খলিফা মির্জা নুরুদ্দিন। চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইন আহমদিয়াদের ‘নিজের মনের শয়তানের বিরুদ্ধে মানসিক জিহাদ-ই আসল জিহাদ’ জাতীয় আদর্শে মুগ্ধ হয়ে আহমদিয়াদের অনুসারী হয়ে গেলেন। আবদুস সালাম চৌধুরি মোহাম্মদ হোসেইনের ছেলে হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রেই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
মেট্রিক পাসের পর আবদুস সালাম গণিত ও বিজ্ঞানের লাইনে যাবে নাকি ভাষা ও সাহিত্যের দিকে যাবে তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন মোহাম্মদ হোসেইন। ছেলে তাঁর সব বিষয়েই ভাল। কিছু ভবিষ্যতের কথা তো চিন্তা করতে হবে। ভবিষ্যত মানে একটা ভালো চাকরি। কোন্ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিলে ভালো চাকরি পেতে সুবিধা হবে সেটাই বিবেচ্য। অনেকের কাছ থেকে পরামর্শও নিলেন এ ব্যাপারে। ঠিক হলো আবদুস সালাম গণিত ও বিজ্ঞানের লাইনেই এগোবে। ঝাং সরকারি কলেজে আরো দু’বছর কাটলো। ১৯৪২ সালের এফ-এ পরীক্ষায় ৬৫০ নম্বরের মধ্যে ৫৫৫ নম্বর পেয়ে সমগ্র পাঞ্জাবের মধ্যে প্রথম হলো আবদুস সালাম। মাসিক বৃত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ালো সরকার থেকে তিরিশ রুপি, আর আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পয়ঁতাল্লিশ রুপি।
এই সময় মোহাম্মদ হোসেইনের চাকরিতে বিরাট পদোন্নতি হয়। তিনি পাঞ্জাব সরকারের শিক্ষা দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। ঝাং থেকে একশ’ মাইল দূরে মুলতানে তাঁর নতুন কর্মস্থল। মাসিক বেতন বেড়ে দাঁড়ালো ২৫০ রুপি। আবদুস সালামের মা-বাবা ভাই-বোন সবাই মুলতানে চলে গেলেন। আবদুস সালাম ভর্তি হলেন লাহোর সরকারি কলেজে বি-এ ক্লাসে। প্রথমবারের মত বাড়ির বাইরে হোস্টেলে থাকতে এসে বুঝলেন যে এতদিন বাড়িতে ছোট ভাই-বোনেরা সব কিছু হাতের কাজে এগিয়ে দিতো- এখন থেকে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে। তবে কিছুটা স্বাধীনতার স্বাদও পেলেন। দাবা খেলা শিখে ফেললেন। হোস্টেলের অন্য ছেলেদের দাবায় হারানোর জন্য দাবার পেছনে অনেক সময় দিতে শুরু করলেন। কথাটা কীভাবে যেন বাবার কানে পৌঁছে গেল। তিনি কড়া ধমক দিয়ে চিঠি লিখলেন- ‘এরকম সময় নষ্ট করে ভবিষ্যৎ নষ্ট করো না’।
লাহোর সরকারি কলেজে গণিতের প্রফেসর সর্বদমন চাওলার সংস্পর্শে এসে গণিতের প্রতি গভীর ভালোবাসা জন্মালো আবদুস সালামের। প্রফেসর চাওলা কেমব্রিজের বিখ্যাত গণিতবিদ প্রফেসর জন লিটলউড ও প্রফেসর গডফ্রে হার্ডির অধীনে পি-এইচ-ডি করেছেন। এই প্রফেসর হার্ডি-ই গণিতের কিংবদন্তী রামানুজনকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন। প্রফেসর চাওলা গণিতের ক্লাসে রামানুজনের গাণিতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন। ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করতেন সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতে। আবদুস সালাম সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেন এই গণিত-চক্রে। অনেক নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করে গণিতে তাঁর পারদর্শিতার প্রমাণ রাখলেন।
গণিতের পাশাপাশি উর্দু আর ইংরেজি সাহিত্যের প্রতিও তাঁর ভালবাসা। এসময় সাহিত্য চর্চার দিকেও ঝোঁক গেলো তাঁর। গালিবের উপর তাঁর লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলো ‘আব্দি দুনিয়া’য়। ইংরেজিতে অস্কার ওয়াইল্ড, টি ই লরেন্স-ও পড়ছেন। সতেরো বছরের তরুণ হৃদয়ে প্রেমের দোলা লাগলো এ-সময়। কলেজের প্রিন্সিপাল জি-ডি-সন্ধি’র দুই মেয়ে উর্মিলা আর সনু’র রূপে তখন সারা কলেজ মুগ্ধ। আবদুস সালাম উর্মিলার প্রেমে পড়ে গেলেন। অবশ্য এক তরফা। মনে মনে ঠিক করে ফেলেছেন- উর্মিলা ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করবেন না। তারুণ্যের উচ্ছাস যেরকম হয় আর কি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেলো উর্মিলার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন এমন তরুণের সংখ্যা অনেক। ছাত্রদের পাশাপাশি কিছু তরুণ শিক্ষকও রয়েছেন প্রেমিকের দলে- প্রফেসর সিরাজুদ্দিন এগিয়ে আছেন সে ক্ষেত্রে। কাজের অজুহাতে যখন তখন প্রিন্সিপালের বাসায় যাতায়াত করছেন প্রফেসর সিরাজুদ্দিন। আবদুস সালাম দেখলেন উর্মিলার নাগাল পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় কিছুতেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পড়াশোনায় মন দিলেন।
১৯৪৪ সালের বি-এ পরীক্ষার ফলাফলে পাঞ্জাবে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে প্রথম হলেন আবদুস সালাম। বি-এ পরীক্ষার বিষয়গুলোর পাশাপাশি অতিরিক্ত ইংরেজি বিষয়ে অনার্সের পরীক্ষাও দিয়েছিলেন আবদুস সালাম। রেকর্ড মার্ক পেয়ে ইংরেজিতে অনার্স পেলেন তিনি। সরকারি ও আহমদিয়া একাডেমি মিলিয়ে মাসিক বৃত্তির পরিমাণ দাঁড়ালো ১২০ রুপি। এবার আবদুস সালাম ইংরেজি বা গণিত যে কোন বিষয়ে মাস্টার্স করতে পারেন। কিন্তু বুঝতে পারছেন না ঠিক কোন্ লাইনে যাওয়া উচিত। আবদুস সালামের বাবার প্রচন্ড ইচ্ছে ছেলে আই-সি-এস অফিসার হবে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে পুরোদমে। ভারতের স্বাধীনতা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অখন্ড স্বাধীন ভারত হোক, কিংবা আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্র হোক, ইংরেজ বিদায় নিলেই প্রশাসন চালানোর জন্য যথেষ্ঠ ভারতীয় বা পাকিস্তানী অফিসার লাগবে। আই-সি-এস পাস করতে পারলে আর পেছনে তাকাতে হবে না। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার কারণে আই-সি-এস পরীক্ষা বন্ধ হয়ে আছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। আবদুস সালাম ভেবে দেখলেন আই-সি-এস পরীক্ষার জন্য যে সব বিষয় পড়তে হবে তা তিনি পরীক্ষার আগে নিজে নিজে পড়ে নিতে পারবেন। আপাতত গণিত নিয়ে মাস্টার্স পড়া যাক। প্রফেসর চাওলার তত্ত্বাবধানে শুরু হলো শুরু হলো আবদুস সালামের গণিতে মাস্টার্সের পাঠ।
এর মধ্যে সাংগঠনিক কাজেও দারুণ দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছেন আবদুস সালাম। পরবর্তী জীবনে তাঁর বিশ্ব-মানের সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় আমরা পেয়েছি। আবদুস সালাম লাহোর কলেজ ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। কলেজ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদকের কাজও করলেন। ১৯৪৫ সালে তাঁর ইংরেজি ছোটগল্প ‘হোয়াইট আর্ম’ প্রকাশিত হলো এই কলেজ ম্যাগাজিনে। ১৯৪৬ সালের এম-এ পরীক্ষায় ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৭৩ নম্বর পেয়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেললেন আবদুস সালাম।
এত ভালো রেজাল্ট করার কারণে ইন্ডিয়ান রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে চাকরির অফার পেলেন আবদুস সালাম। কিন্তু রেলওয়ের চাকরির সামাজিক মর্যাদা আই-সি-এসের ধারে-কাছেও নয়। আবদুস সালামের বাবা শুনেই নাকচ করে দিলেন। তাছাড়া আবদুস সালামের চোখে ইতোমধ্যেই পুরু লেন্সের চশমা উঠে গেছে। রেলওয়ের চাকরিতে এরকম চোখ নিয়ে কাজ করা যায় না।
এসময় কিছু ব্যাপার ঘটলো যা আবদুস সালামের ভাষায় ‘দৈবঘটন’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন ইন্ডিয়ান কংগ্রেস পার্টির পাঞ্জাব প্রতিনিধি খাইজার হায়াত তিওয়ানা। প্রায় দেড় লাখ রুপি সংগৃহিত হয় ঐ তহবিলে। যুদ্ধ শেষ হবার পরে দেখা গেলো তহবিলে বেশ কিছু টাকা রয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত হলো ঐ টাকা দিয়ে পাঞ্জাবের দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেধাবী ছেলেদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঁচটি বৃত্তি দেয়া হবে। মেধার প্রতিযোগিতায় আবদুস সালাম অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু বৃত্তির শর্ত যে পূরণ হচ্ছে না। দরিদ্র কৃষকের ছেলেকে বৃত্তি দেয়া হবে। আবদুস সালামের বাবা তো শিক্ষা অফিসার, কৃষক নন। কী করা যায়! এগিয়ে এলেন আবদুস সালামের জ্যেঠা চৌধুরি গোলাম হোসেইন। নিজের কিছু জমি ছোট ভাইকে দিলেন। আবদুস সালামের বাবা কয়েকটা গরু ছাগল কিনে এবং ঐ জমিতে দ্রুত চাষ করে কৃষক আইনত কৃষক হয়ে গেলেন। বৃত্তি পেতে আর সমস্যা হবার কথা নয়।
ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করলেন আবদুস সালাম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবেমাত্র শেষ হয়েছে। ব্রিটেনে নতুন লেবার সরকার এসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে ইন্ডিয়া থেকে তারা প্রশাসন গুটিয়ে নিয়ে ভারতকে স্বাধীনতা দিয়ে দেবে। এ অবস্থায় হাই-কমিশনে সাংঘাতিক কাজের ভীড়। আবদুস সালামের কেমব্রিজে ভর্তির দরখাস্তে সুপারিশ করেছেন প্রফেসর চাওলা ও ডক্টর আবদুল হামিদ। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির কলেজগুলোতে কতজন ভারতীয় ছাত্র নেয়া হবে তার কোটা আছে- যা ইতোমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে। ভর্তির জন্য আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু হঠাৎ জানা গেলো সেন্ট জন্স কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে ডক্টরেট করার জন্য নির্বাচিত একজন ভারতীয় ছাত্র অনিবার্য্য কারণে যেতে পারছেন না। এই খালি সিটে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলেন আবদুস সালাম। কিন্তু সেন্ট জন্স কলেজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েটের বদলে তারা আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট ছাত্র নেবে। আবদুস সালাম ইতোমধ্যেই বি-এ অনার্স ও এম-এ পাস করে ফেলেছেন। কেমব্রিজে গিয়ে আবার বি-এ ক্লাসে ভর্তি হবেন? আবদুস সালামের বাবা এখনো আশা ছাড়েন নি যে ছেলে আই-সি-এস অফিসার হবে। অনেকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত দিলেন যে আবদুস সালাম কেমব্রিজে গিয়ে আবার বি-এ পড়ুক। আই-সি-এস পরীক্ষার ঘোষণা দিলে ওখান থেকেই পরীক্ষায় বসতে সুবিধে হবে। আই-সি-এস এর বয়স সীমা ২৫, আবদুস সালামের বয়স এখনো ২০। বিজ্ঞানের গবেষণার প্রতি তখনো কোন আগ্রহ জন্মায়নি আবদুস সালামের। ১৯৪৬ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির কনফার্মেশান টেলিগ্রাম এসে পৌঁছালো আবদুস সালামের হাতে। এবার বৃত্তি কনফার্ম করতে হবে।
সেই রাতের ট্রেনেই মুলতান থেকে লাহোরে চলে গেলেন তিনি। পরের দিন সকালে স্টেশন থেকে ছুটতে ছুটতে পাঞ্জাব শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে শোনেন যে অত্যধিক গরমের কারণে শিক্ষা অফিস সরিয়ে নেয়া হয়েছে আড়াইশ’ কিলোমিটার দূরে সিমলায়। আবার ছুটে গিয়ে সিমলা গামী ট্রেন ধরলেন। সিমলায় পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর দুটো। গিয়ে দেখলেন তাঁর জন্য একটা সুখবর অপেক্ষা করছে। আরো চারজন পাঞ্জাবী ছেলের সাথে তাঁকেও উচ্চশিক্ষা বৃত্তি দেয়া হয়েছে। বছরে ৩৬৫ ব্রিটিশ পাউন্ড হিসেবে তিন বছর। বৃত্তির শর্ত এই যে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। আবদুস সালামের ভর্তির টেলিগ্রাম পকেটেই ছিল। এটাকেই আবদুস সালাম পরবর্তীতে ‘দৈবঘটন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত বাকি চারজনকে পরের বছরে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু পরের বছর ১৯৪৭ ভারত স্বাধীন আর পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে গেলো। বৃত্তির টাকা অন্যান্য খাতে অবলুপ্ত হয়ে গেল। বাকি চারজনের আর বিদেশ যাওয়া হয়নি।
বৃত্তি হলো, কেমব্রিজে ভর্তি নিশ্চিত হলো। পরের মাস থেকেই ক্লাস শুরু। জাহাজে চেপে ব্রিটেনে পৌঁছাতে লেগে যাবে কয়েক সপ্তাহ। হাতে একদম সময় নেই। ভারত থেকে সব ব্রিটিশ সৈন্য আর কর্মকর্তারা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। লাহোর থেকে জানা গেছে জাহাজের কোন টিকেট নেই, ডিসেম্বরের আগে টিকেট পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
আবদুস সালাম চলে গেলেন দিল্লি। শনিবারের বিকেলে গিয়ে পৌঁছলেন শিপিং কোম্পানির অফিসে। অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। অফিসের পিয়ন কাম কেরানিকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে একটা অপেক্ষ-মান টিকেট সংগ্রহ করলেন আবদুস সালাম। রাতের ট্রেনেই ফিরে গেলেন মুলতান।
তখন ভারত জুড়ে অস্থিরতা। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। আবদুস সালাম যখন মুলতানে পৌঁছলেন তাঁর বাবা অপেক্ষা করছিলেন ট্রেন স্টেশনে। দাঙ্গার কারণে সান্ধ্যকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। মোহাম্মদ হোসেইন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে স্টেশনে এসেছেন। এই উত্তাল সময়ে তিনি মনে-প্রাণে কামনা করছেন তাঁর ছেলে যেন ভালোয় ভালোয় কেমব্রিজে গিয়ে পৌঁছতে পারে। একদিকে ইংরেজ তাড়ানোর যুদ্ধ, আবার অন্যদিকে ইংরেজদের দেশে যাবার প্রাণপন চেষ্টা। পরের কয়েকদিন জিনিস-পত্র গোছানো চললো। স্থানীয় বড়লোক মালিক উমর আলির ছেলেদের কিছুদিন প্রাইভেট পড়িয়েছিলেন আবদুস সালাম। তিনি আবদুস সালামের বিদেশ যাবার ভ্রমণ-খরচ দিলেন কিছু।
১৯৪৬ এর সেপ্টেম্বরের সাত তারিখ সকালে চল্লিশ কেজি ওজনের ট্রাংক সাথে নিয়ে বোম্বে-গামী ট্রেনে উঠে বসলেন আবদুস সালাম। মুলতান থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে বোম্বাই। সেখান থেকে লিভারপুল-গামী জাহাজে উঠবেন যেদিন সিট পাওয়া যায়। দু’দিন পর যখন বোম্বে পৌঁছলেন তখন শহরজুড়ে কারফিউ চলছে। স্টেশনের কাছে একটি সস্তা হোটেলে গিয়ে উঠলেন আবদুস সালাম। পরের দিন সকালে বোম্বে ডকে গিয়ে দেখলেন ব্রিটিশ সৈন্যে গিজগিজ করছে ডক। সবাই বসতি গুটিয়ে ফিরে যাচ্ছে ব্রিটেনে। একেক জনের দশ-বারোটা করে সুটকেস, সাথে অন্যান্য জিনিস তো আছেই। এসব ডিঙিয়ে জাহাজে ওঠা সহজ কাজ নয়। ভারী সুটকেস সামলাতে সামলাতে প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে জাহাজে উঠলেন আবদুস সালাম। আরেকজন ভারতীয়ের সাথে শেয়ারে একটা বার্থ পাওয়া গেল। ছয়শ’ ব্রিটিশ সৈনিক পরিবার, ছয়শ’ ইতালিয়ান যারা বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন- এখন বন্দী-বিনিময়ের আওতায় মুক্ত, আর সাথে আবদুস সালামের মত কিছু সাধারণ নাগরিককে নিয়ে বোম্বে ডক থেকে ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ব্রিটিশ জাহাজ ফ্রাংকোনিয়া।
বিশ বছরের তরুণ আবদুস সালাম একুশ দিনের জাহাজ-যাত্রার পুরোটাই বেশ উপভোগ করলেন। এডেন বন্দরে জাহাজ ভিড়লে একটা হাতঘড়ি কিনলেন- তাঁর জীবনের প্রথম হাত ঘড়ি। সুয়েজ খাল অতিক্রম করে জাহাজ ভিড়লো ইতালির নেপল্স-এ। আবদুস সালাম পা রাখলেন ইতালির মাটিতে। সেদিন কারও ধারণা ছিল না যে একদিন এই ইতালিতেই তিনি গড়ে তুলবেন আন্তর্জাতিক তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে লিভারপুলে পৌঁছলো ফ্রাংকোনিয়া। এরকম শীত আগে কখনো দেখেননি আবদুস সালাম। জাহাজ থেকে নেমে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না আবদুস সালাম। ভারত তখনো ব্রিটিশের অধীন। ভারতীয়রা সামর্থ্য থাকলে ব্রিটেনের যে কোন জায়গায় যেতে পারেন। লিভারপুল ডকেও কিছু কিছু ভারতীয় দেখা যাচ্ছে। আবদুস সালামের সাথে দেখা হয়ে গেলো একজন বিশিষ্ট ভারতীয় ব্যক্তির সাথে। স্যার মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান- আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বড় নেতা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক। আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পথে ব্রিটেনে কিছুদিনের যাত্রাবিরতি করছিলেন জাফরুল্লাহ খান। সেদিন লিভারপুল ডকে এসেছিলেন তাঁর এক ভাইপোকে নিতে। তিনি দেখলেন বিশাল এক ট্রাংক সাথে নিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডায় হু হু করে কাঁপছে একজন ভারতীয় তরুণ। তিনি এগিয়ে গিয়ে নিজের ভারী ওভারকোটটা খুলে জড়িয়ে দিলেন তরুণটির গায়ে।
আবদুস সালামের পরিচয় পেয়ে আর কেমব্রিজে পড়তে এসেছেন শুনে তাঁকে সাথে করে লন্ডনে নিয়ে এলেন জাফরুল্লাহ খান। রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন সাউথফিল্ডের আহমদিয়া মসজিদে। পরদিন সকালে ট্রেন ধরে কেমব্রিজ। স্টেশন থেকে ট্রেক্সিতে সোজা সেন্ট জন্স কলেজ। ভারী ট্রাংকটি নামিয়ে দিয়ে টেক্সিড্রাইভার চলে গেলো। আবদুস সালাম এদিক ওদিক তাকালেন যদি কোন কুলি পান। কলেজের একজন গার্ডকে দেখে সাহায্য করার জন্য বললে গার্ড আঙুল তুলে একটা ট্রলি দেখিয়ে দিলেন। সাংস্কৃতিক ধাক্কা শুরু হলো আবদুস সালামের। ভারতে পয়সা দিলেই কুলি পাওয়া যায়। আর ব্রিটেনে কোন কুলি নেই- নিজের বোঝা নিজেই সামলাও। মিশ্র অনুভূতি নিয়ে সেন্ট জন্স কলেজের হোস্টেলে ঢুকলেন আবদুস সালাম।
এই সেই পৃথিবী বিখ্যাত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে রয়েছেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যতম স্থপতি পল ডিরাক, তত্ত্বীয় পদার্থবিদ হার্মান বন্ডি। এখানকার বিখ্যাত ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবে কাজ করেছেন প্রথম বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী জগদীশ বসু। আবদুস সালামের মন ভরে গেলো এখানে এসে। সেন্ট জন্স কলেজের ফুলের বাগানের সৌন্দর্য আবদুস সালামকে মুগ্ধ করে ফেলেছে। বলা হয়ে থাকে এই ফুলের বাগানের জন্যই আবদুস সালাম পরবর্তীতে ট্রিনিটি কলেজের ফেলোশিপ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যদিও ট্রিনিটিকেই ব্রিটেনের সবচেয়ে ভালো কলেজ বলা হয়।
কেমব্রিজে আবদুস সালাম গণিত ট্রাইপ্সের দ্বিতীয় অংশ এবং পদার্থবিজ্ঞানের দ্বিতীয় অংশ নিয়েছিলেন। পরীক্ষায় দুই বিষয়েই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। গণিতে প্রথম শ্রেণী অর্জন করার জন্য তিনি হলেন রেংলার। পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণী পাওয়ার ফলে কেমব্রিজের রীতি অনুযায়ী তিনি পরীক্ষণ পদার্থবিদ্যায় গবেষণার উপযুক্ততা অর্জন করেন। সেন্ট জন্স কলেজে আবদুস সালামের টিউটর ছিলেন বিশিষ্ট জ্যোতির্পদার্থবিদ ফ্রেড হয়েল। তিনি বলতেন পদার্থবিজ্ঞানে তত্ত্বীয় জ্ঞানের পাশাপাশি পরীক্ষণের জ্ঞান থাকাও দরকার। আবদুস সালাম ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবে কিছুদিন কাজও করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ভাষায় “পরীক্ষণের কাজে যে সব গুণ থাকা প্রয়োজন তা আমার মোটেও ছিল না। ধৈর্য ধরে যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করা- আমি বুঝেছিলাম যে আমার দ্বারা হবে না”। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানই হয়ে উঠলো আবদুস সালামের প্রধান ভালবাসা।
নিকোলাস কেমার তখন সবল ও দুর্বল পারমাণবিক বলের পারস্পরিক ক্রিয়ায় পায়নের ভূমিকা আবিষ্কার করে খ্যাতি লাভ করেছেন। কেমারের প্রিয় ছাত্র পল ম্যাথিউজ। আবদুস সালাম পারমাণবিক বলের তত্ত্বের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে গেলেন নিকোলাস কেমারের কাছে। কেমার তাঁকে পাঠালেন পল ম্যাথিউজের কাছে। ম্যাথিউজ বললেন বড় ধীরে ধীরে এগোচ্ছে এ-সংক্রান্ত গবেষণা। বললেন- ফ্রিম্যান ডাইসনের গবেষণা-পত্রগুলো পড়া থাকলে সুবিধে হবে। পড়তে শুরু করলেন আবদুস সালাম। পড়তে পড়তে অনেক জায়গায় খটকা লাগতে শুরু করলো। ভাবলেন এ ব্যাপারে সরাসরি ফ্রিম্যান ডাইসনের সাথে কথা বলা যাক। একদিন চলে গেলেন বার্মিং-হামে প্রফেসর ডাইসনের কাছে। ডাইসন বললেন- হাতে হাতে প্রমাণ চাইলে তো দেখাতে পারবো না। সব তত্ত্বের তো পরীক্ষামূলক প্রমাণ সম্ভব হয় না।
১৯৪৭ সালে যখন আবদুস সালাম কেমব্রিজের বিজ্ঞানীদের মাঝে নিজের জায়গা করে নিচ্ছিলেন তখন ব্রিটিশরা তাদের ভারত সাম্রাজ্যের অবসান ঘটায়। স্বাধীন ভারতের সাথে সাথে নতুন মুসলমান রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়। পাঞ্জাব দু’ভাগ হয়ে যায়। আবদুস সালামরা এখন পাকিস্তানী। ১৯৪৯ সালে প্রথম বারের মত স্বাধীন পাকিস্তানে নিজেদের বাড়িতে ফিরলেন আবদুস সালাম। সেখানে একটা আনন্দের আয়োজন অপেক্ষা করছিল আবদুস সালামের জন্য। তাঁর জ্যেঠা চৌধুরি গোলাম হোসেইনের দ্বিতীয় কন্যা আমতুল হাফিজ বেগমের সাথে আবদুস সালামের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন তাদের বাবা-মা। ১৯৪৯ সালের ১৯শে আগস্ট বেশ ধুম ধাম করে বিয়ে হলো আবদুস সালাম ও আমতুল হাফিজ বেগমের।
সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানে প্রথম শ্রেণীর কেমব্রিজ ডিগ্রি নিয়ে ফেরা আবদুস সালাম চাইলেই যে কোন সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারেন। কিন্তু তাঁর মাথায় ঢুকে গেছে কেমব্রিজে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা চালিয়ে যাবার স্বপ্ন। তিনি চেষ্টা করলেন যদি তাঁর শিক্ষাবৃত্তিটার মেয়াদ আরো কয়েক বছর বাড়ানো যায়। বৃত্তি আর সেন্ট জন্সের স্টুডেন্টশিপ নিয়ে বেশ আরামেই চলে যাবে তাঁর। বৃত্তির মেয়াদ বাড়লো আরো দু’বছর, কিন্তু হিসেব করে দেখা গেলো বৃত্তির টাকায় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কেমব্রিজে থাকা সম্ভব নয়। ছয় সপ্তাহ পর আবদুস সালাম ফিরে এলেন কেমব্রিজে একা। তাঁর স্ত্রী রয়ে গেলেন মা-বাবার সাথে মুলতানে।
পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য পাঠ্যাবস্থায় ১৯৫০ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় আবদুস সালামকে স্মিথ পুরষ্কারে ভূষিত করে। মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে এই বিরল সম্মান পাওয়া সহজ নয়। পরের বছর ১৯৫১ সালে তিনি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি লাভ করেন। তাঁর দুটো গবেষণা-পত্র প্রকাশিত হয় বিখ্যাত ফিজিক্স জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউ-তে। এসময় তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিমন্ত্রণ পেলেন। আইনস্টাইন তখন প্রিন্সটনে কর্মরত। প্রচন্ড খুশি আবদুস সালাম। কিন্তু যাওয়া হলো না তাঁর। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা আটকে দিলো। স্কলারশিপের মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে এলেন আবদুস সালাম।
দেশে ফিরে যোগ দিলেন লাহোর সরকারি কলেজে। পরে ১৯৫২ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। কিন্তু নামেই অধ্যাপক। কেমব্রিজের পড়াশোনা, গবেষণা কোন কাজেই লাগলো না লাহোরে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান তাঁকে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন যে এতদিন যা গবেষণা করেছেন তা তিনি ভুলে যেতে পারেন, কেননা এখানে গবেষণার কোন প্রয়োজন নেই। এ সময় বছরে সাতশ’ পাউন্ড বেতনে তাঁর কাজ হিসেবে ‘ছাত্রদের বৃত্তি পরিচালক’, ‘ছাত্রাবাসের ওয়ার্ডেন’ বা ফুটবল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট- এই তিনটি থেকে যে কোন একটিকে বেছে নিতে বলা হলো। আবদুস সালাম ফুটবল ক্লাবকেই বেছে নিলেন। যদিও তিনি নিজেকে একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড় মনে করতেন না।
১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি বুদ্ধিবৃত্তির জগতে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। লাহোরের কর্মজীবনের পরিবেশে চরম হতাশাবোধ তাঁকে ইংল্যান্ডে ফিরে আসতে বাধ্য করে। তাঁর ভাষায় তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ‘মগজ পাচারের’ শিকার হলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীরা কী চিন্তা করছেন তা আপনাকে জানতে হবে এবং তাদের সঙ্গে আপনাকে কথা বলতে হবে। আমার ভয় হয়েছিল যে আমি যদি লাহোরে থাকি, তবে আমার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারপর আমার দেশের কোন্ কাজে লাগবো আমি? কেমব্রিজে প্রভাষক হওয়া লাহোরে অধ্যাপক হওয়ার চেয়ে অনেক ভালো”। তাছাড়া পাকিস্তানের নতুন সরকার মৌলিক দেশের মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে না পেরে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়ে জনগণের মনযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে। এবার পাকিস্তানের মধ্যেই আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়ছে। আহমদিয়াদের উৎসস্থল কাদিয়ান এখন ভারতীয় ভূ-খন্ডের অন্তর্ভুক্ত। আহমদিয়াদের নতুন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে রাবওয়াতে। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর যখন তখন শারীরিক আক্রমণ হচ্ছে। বলা হচ্ছে আহমদিয়ারা মুসলমান নন। আবদুস সালাম নিজে এ জাতীয় বিতর্ক থেকে সব সময় দূরে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু নিজে দূরে থাকলেই কি নিরাপদে থাকা যায়? আবদুস সালামের ওপর শারীরিক আক্রমণ হবার সম্ভাবনা দেখা দিলো। নিজেকে ভীষণ অপমানিত মনে করলেন আবদুস সালাম। নিজের দেশে নিজের প্রতিবেশীর কাছ থেকে এরকম ব্যবহার তিনি আশা করেন নি। ১৯৫৪ সালে স্ত্রী আর কন্যাকে নিয়ে চলে এলেন কেমব্রিজে।
প্রফেসর কেমারের প্রিয় ছাত্র আবদুস সালাম। কেমার এডিনবরায় চলে যাচ্ছেন ম্যাক্স বর্ন অধ্যাপক পদে। কেমব্রিজে কেমারের জায়গায় ‘স্টোক্স প্রফেসর’ পদে যোগ দিলেন ডক্টর আবদুস সালাম। এর তিন বছর পর ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে ফুল প্রফেসর পদে যোগ দিলেন প্রফেসর আবদুস সালাম।
১৬৮০ সালে স্যার আইজাক নিউটন যখন মহাকর্ষ বলের সূত্র দিলেন- বলা যায় তখন থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে সমন্বয় খোঁজার চেষ্টা শুরু হয়ে যায়। প্রকৃতিতে বিদ্যমান বলগুলোর পারস্পরিক ঐক্যের সন্ধানে অবিরত কাজ করতে থাকেন অনেক বিজ্ঞানী। ১৮৩০ সালে অ্যাম্পিয়ার ও মাইকেল ফ্যারাডে বিদ্যুৎ ও চৌম্বক শক্তিকে একত্রিত করে ‘তড়িৎচৌম্বক’ এর ধারণা দেন। এরপর ১৮৭৮ সালে ম্যাক্সওয়েল প্রতিষ্ঠা করলেন ‘তড়িৎ-চৌম্বক বল’ এর সূত্রাবলী। মাইকেল ফ্যারাডেই প্রথম চেষ্টা করেছিলেন মহাকর্ষ বল ও তড়িৎচৌম্বক বলের মধ্যে সমন্বয় সাধনের। কিন্তু তিনি সফল হননি। ১৯১৭ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন চেষ্টা করেছিলেন মহাকর্ষ বলের সাথে অন্যান্য বলগুলোর ঐক্য খুঁজতে। তিনিও সফল হননি। ১৯৩০ সালে এনরিকো ফার্মি যখন চেষ্টা করেন দুর্বল পারমাণবিক বল ও তড়িৎচৌম্বক বলের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে- তখন আবদুস সালামের বয়স মাত্র চার বছর। এখন আবদুস সালাম কেমব্রিজে এসে মৌলিক বলগুলোকে একীভূত করার একটি দুরুহ ধাপ অতিক্রম করতে সচেষ্ট হলেন।
লন্ডনে ফিরে এসে কাজ শুরু করার সাথে সাথে সাফল্যের মুখ দেখলেন আবদুস সালাম। ১৯৫৫ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক আহূত শান্তির জন্য পরমাণু সম্মেলনের তিনি বৈজ্ঞানিক সচিব নিযুক্ত হলেন। ভারতের বিজ্ঞানী ডক্টর হোমি ভাবা হলেন সভাপতি। ঐ বিখ্যাত সম্মেলনে আবদুস সালাম অভিভূত হয়ে অনুভব করলেন বিশ্বমানবতায় বিশ্ব-বিজ্ঞানের অবদানের ক্ষমতা অসীম। পদার্থবিজ্ঞানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা এখান থেকেই তাঁর মনে আসে। তিনি বুঝতে পারেন- ‘তৃতীয় বিশ্বে সুযোগ এত কম আসে যে সবচেয়ে ভালো ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষেও কোন সুযোগ পাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে’। তৃতীয় বিশ্বের ভালোদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে। কারণ তিনি জানতেন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান অল্প কয়েকটি বিষয়ের একটি যে বিজ্ঞানে খুব অল্প ঐতিহ্য সম্বল করেও বেশ ভালো বিজ্ঞানী তৈরি করা যায়। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থায় তিনি এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপন করার প্রস্তাব করেন।
১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মিঞা ইফতেখার উদ্দিন লন্ডনে এসে পাকিস্তানের সন্তান প্রফেসর আবদুস সালামের নাম-ডাক শুনে দেশে ফিরে গিয়ে সাংবাদিকদের বললেন আবদুস সালাম সম্পর্কে। ‘পাকিস্তান টাইমস’-এ প্রতিবেদন বেরোল আবদুস সালামের কৃতিত্বের বিষয়ে। সে বছরই পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় আবদুস সালামকে সম্মান-সূচক ডি-এসসি ডিগ্রি প্রদান করলো। ১৯৫৯ সালে আবদুস সালামকে সিতারা-ই-পাকিস্তান খেতাব দেয়া হয়। আইয়ুব খান তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। তিনি প্রফেসর আবদুস সালামকে পাকিস্তানের জাতীয় বিজ্ঞান কমিশনের সদস্য ও শিক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা নিয়োগ করলেন। প্রফেসর আবদুস সালাম মহা উৎসাহে নিজের দেশের কাজে লেগে গেলেন। আন্তর্জাতিক তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কাজ অনেক দূর এগিয়ে রেখেছেন আবদুস সালাম। পাকিস্তানের মাটিতে যদি এই গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা যায় বিজ্ঞান গবেষণায় অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে তৃতীয় বিশ্বের এই দেশটি। বিজ্ঞান কমিশনের সভায় তিনি এই প্রস্তাব পাঠালেন। বিজ্ঞান কমিশনে পাশ হয়ে প্রস্তাবের ফাইল গেলো অর্থমন্ত্রীর টেবিলে। পাকিস্তানের বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবনার ফাইলে নোট লিখলেন- ‘পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক কেন্দ্র করার উদ্দেশ্য হচ্ছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক ধরণের আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। এদেশে এরকম কোন কেন্দ্রের দরকার নেই। তারচেয়ে ওই টাকায় একটা পাঁচ-তারা হোটেল হোক। বড় বড় বিজ্ঞানীদের ডেকে এনে আমরা যত্ন করে রাখবো ওই হোটেলে’। পরে ১৯৬৪ সালে এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ইতালিতে।
১৯৬১ সালে প্রফেসর আবদুস সালামের নেতৃত্বে পাকিস্তানের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রও স্থাপিত হয় প্রফেসর আবদুস সালামের নেতৃত্বে। ১৯৭২ সালে জুলফিকার আলি ভুট্টোর উদ্যোগে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি প্রকল্প গ্রহণ করে। মূল উদ্দেশ্য ভারতের পারমাণবিক প্রকল্পের জবাব দেয়া। ভুট্টোর উদ্যোগে প্রফেসর আবদুস সালামকে এই প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। পাকিস্তানের আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মুনির আহমদ খান ও প্রফেসর আবদুস সালাম মিলে গঠন করলেন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান গ্রুপ- যাদের কাজ হলো পারমাণবিক অস্ত্রের তত্ত্বীয় অংশ ডিজাইন করা। ১৯৭৭ সালে এ ডিজাইন সম্পন্ন হয়।
কেমব্রিজে আবদুস সালামের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজ ছিল তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একটা অসঙ্গতি দূর করা। এ পর্যন্ত তত্ত্বে এমন কিছু ছিল না যা দিয়ে ইলেকট্রনের গণনাকৃত অসীম ভর এবং অসীম বৈদ্যুতিক আধানকে সসীম করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানী জুলিয়ান সুইঙ্গার, রিচার্ড ফাইনম্যান ও সিনিট্রো টেমোনাগা তড়িৎচুম্বক তত্ত্বকে কীভাবে পরিমার্জিত করা যায় তা দেখিয়েছিলেন এবং নিউক্লিয়ার বলের মেসন তত্ত্বের ব্যাপারে একই কাজ করেছিলেন আবদুস সালাম। মেসন ফিল্ড থিওরিতে যে অসীম রাশির উদ্ভব হয় তা দূর করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন আবদুস সালাম। এই পদ্ধতিকে বলা হয় সালামের পুনঃসাধারণীকরণ। পদার্থবিজ্ঞানে এই উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় আবদুস সালামকে হপ্কিন্স পুরষ্কার দেয় ১৯৫৮ সালে।
আবদুস সালামের দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য অবদান হলো মৌলিক কণাগুলোর শ্রেণীকরণের জন্য গণিতের গ্রুপ থিওরির ব্যবহার। ১৯৬০ সালে জাপানের কয়েকজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম প্রস্তাব করেছিলেন যে পরিচিত মৌলিক কণাগুলো (ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন) আরো তিনটি মৌলিকতর কণা দিয়ে তৈরি, পরে যাদের নাম দেয়া হয়েছে কোয়ার্ক। আবদুস সালামই প্রথম অ-জাপানী বিজ্ঞানী যিনি এই ধারণা গ্রহণ করেছিলেন। বস্তুকণার কোয়ার্ক-তত্ত্ব এখন প্রতিষ্ঠিত। আবদুস সালামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান অবশ্যই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স ও দুর্বল নিউক্লিয়ার ফোর্সের একত্রীকরণ তত্ত্ব। যার জন্য ১৯৭৯ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। আবদুস সালাম হলেন প্রথম মুসলমান নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী।
কণা পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন অংশে আবদুস সালাম তাঁর প্রতিভার কালজয়ী স্বাক্ষর রেখেছেন প্রায় পঞ্চাশ বছরের নিরলস গবেষণার মাধ্যমে। তাঁর গবেষণার স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন। ফিজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের ম্যাক্সওয়েল পুরষ্কার (১৯৬১)। ১৯৬৪ সালে পেয়েছেন রয়েল সোসাইটি অব লন্ডনের হিউজ পুরষ্কার। ১৯৬৮ সালে পেয়েছেন এটম্স ফর পিস মেডেল। ১৯৭১ সালে রবার্ট ওপেনহেইমার মেমোরিয়্যাল মেডেল, ১৯৭৭ সালে লন্ডন ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্সের গাথিরি মেডেল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী স্বর্ণপদক, ১৯৭৮ সালে রোমের মেট্রেউটিক মেডেল ও রয়েল সোসাইটি অব লন্ডনের রয়েল মেডেল। ১৯৭৯ সালের নোবেল পুরষ্কার, ইউনেস্কোর আইনস্টাইন পদক। নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির পর স্বাভাবিক ভাবেই পুরষ্কার ও পদকের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। অসংখ্য পুরষ্কারের পাশাপাশি বিশ্বের পয়ঁত্রিশটিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর আবদুস সালামকে সম্মানসূচক ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে।
তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানীরা প্রফেসর আবদুস সালামের কাছে অবশ্যই কৃতজ্ঞ তাঁর ট্রিয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স সেন্টার (আই-সি-টি-পি)’র জন্য। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত অক্লান্তভাবে লবি করেছেন এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য। প্রথমদিকে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, এমনকি ভারতও এই কেন্দ্রের ব্যাপারে উৎসাহী ছিল না। কোন কোন দেশ সক্রিয়ভাবে এর বিরোধিতাও করেছে। যদিও পরবর্তীকালে এসব দেশই এই কেন্দ্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে সবচেয়ে বেশি। ১৯৬৪ সালে আই-সি-টি-পি স্থাপন করেন ইতালির ট্রিয়েস্টে এড্রিয়াটিক সমুদ্রের ধারে, পাহাড়ের উপর। যার পেছনে সক্রিয় ছিল তার ইটালিয়ান বন্ধু পাউলো বুডিনির কর্মপ্রেরণা এবং ইটালিয়ান সরকারের মহানুভবতা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত প্রফেসর আবদুস সালাম এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন।
তাঁর আই-সি-টি-পি’র অফিসের দেয়ালে একটি ষোড়শ শতাব্দীর পারসিক প্রার্থনার লিপি ঝোলানো আছেঃ “তিনি চিৎকার করে বললেন, ঈশ্বর, একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা সংঘটিত করুন”। আবদুস সালামের শক্তি এই যে তিনি বিশ্বাস করতেন আশ্চর্যজনক ঘটনা সম্ভব যদি আমরা এগিয়ে গিয়ে ঘটতে সাহায্য করি। তিনি তা বিশ্বাস করতেন বলেই সারাজীবন বিজ্ঞানের মাধ্যমে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়েছেন। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন “আজ থেকে বিশ বছর পরেও স্বল্পোন্নত দেশগুলো আজকের মতোই ক্ষুধার্ত, আপেক্ষিকভাবে অনুন্নত এবং হতাশাজনকভাবে দরিদ্র থাকবে”। তাই তিনি সারাজীবন কাজ করে গেছেন তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানের উন্নয়নের জন্য। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স’। এই একাডেমির স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় পৃথিবীর অনেক দরিদ্র দেশের অনেক বিজ্ঞানী গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানীদের অনেকেই প্রফেসর আবদুস সালামের সংস্পর্শে এসেছিলেন। প্রফেসর আবদুস সালাম বেশ কয়েক বার বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন।
প্রফেসর আবদুস সালাম বিজ্ঞানকে পেশা হিসেবে কখনই দেখতে চাননি। সারাদেশের জীবনযাত্রার মান দ্রুত উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাই তিনি সারাজীবন বলেছেন। তাঁর ভাষায় ‘আমাদের মানবিক ও বস্তুগত যে সম্পদ রয়েছে তারই সবচেয়ে ভাল প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবহারের চিন্তাশীল হিসাব নিকাশই হল বিজ্ঞান’। পৃথিবীর অনুন্নত অংশ যে ভীতিপ্রদ সংকটের সম্মুখীন তা নিয়ে বিভিন্ন দেশে যেসব অগণিত মানুষ চিন্তাভাবনা করেন তাঁর মধ্যে অল্প কয়েকজন আছেন যাঁরা শুধু কথা বলেন না, কাজও করেন। প্রফেসর আবদুস সালাম শেষের দলে। কাজ করতে করতে ছুটে গেছেন পৃথিবীর এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে।
ব্যক্তিগত জীবনে এই কাজ-পাগল বিজ্ঞানী ছিলেন অনেকটাই একা। খুব কাছের বন্ধু- যাদের কাছে মন খোলা যায়- তেমন একটা ছিল না। তাই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো খুব একটা জানাও যায় না। ১৯৪৯ সালে আমতুল হাফিজ বেগমের সাথে বিয়ের পর ১৯৬০ সালের মধ্যে তাঁদের চারটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আবদুস সালাম থাকতেন লন্ডনের পুটনিতে। সুখের সংসারই বলা চলে। কিন্তু মনে হয় লেখাপড়া না জানা আমতুল হাফিজ বেগম স্বামীর বৈজ্ঞানিক মননের সঙ্গী হতে পারেন নি। তাই আমরা দেখি স্ত্রী বর্তমান থাকা সত্ত্বেও আরেকটা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রফেসর আবদুস সালাম। ১৯৬২ সালে আবদুস সালামের সাথে পরিচয় হয় অক্সফোর্ডের ছাত্রী লুইস জন্সনের। আবদুস সালাম তখন ইম্পেরিয়াল কলেজের বিখ্যাত প্রফেসর। লুইস জীববিজ্ঞানের ছাত্রী। আবদুস সালাম আর লুইসের ঘন ঘন দেখা হতে লাগলো। জটিল গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানীর মুখে ইংরেজি সাহিত্য আর কবিতা নিয়ে আলোচনা শুনে মুগ্ধ লুইস। ছয় বছর ধরে চললো তাঁদের গোপন প্রেম। ১৯৬৮ সালে আবদুস সালাম লুইস জনসনকে বিয়ে করেন। লুইস তখন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মলিকিউলার বায়োলজির প্রফেসর। লাইসোজমের রাসায়নিক গঠন আবিষ্কারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন লুইস জনসন। এক স্ত্রী বর্তমান থাকতে আরেকজনকে বিয়ে করা ব্রিটিশ আইনে অপরাধ। কিন্তু আবদুস সালাম পাকিস্তানী নাগরিক। তাছাড়া রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করার সময় তিনি সম্ভবত প্রথম স্ত্রীর কথা তিনি গোপন করেছিলেন। একই শহরে মাত্র এক কিলোমিটার ব্যবধানে পাশাপাশি দুটো সংসার আলাদা আলাদা ভাবে চালিয়ে নিয়ে গেছেন আবদুস সালাম। ১৯৭৪ সালে আবদুস সালাম ও লুইস দম্পতির একটা পুত্র-সন্তান হয়। তারপর সব জানাজানি হয়ে যায়। নীরবে সব কিছু মেনে নেন আমতুল হাফিজ।
১৯৭৯ সালে নোবেল পুরষ্কার গ্রহণ করার জন্য স্টকহোমে যাবার সময় প্রফেসর আবদুস সালাম তাঁর দু’জন স্ত্রীকেই সাথে নিয়ে যান। এরকম পরিস্থিতি আগে কখনো দেখেননি নোবেল ফাউন্ডেশানের কর্মকর্তারা। নোবেল বিজয়ীর স্ত্রীকে যথাযোগ্য প্রটোকল দিতে হয়। ভোজের টেবিলে রাজার পাশে আসন দেয়া হয় নোবেল বিজয়ীর স্ত্রীকে, আর রাণীর পাশে বসেন নোবেল বিজয়ী। এখন নোবেল বিজয়ীর দু’জন স্ত্রী উপস্থিত। কাকে কোথায় বসাবেন- সমস্যায় পড়ে গেলেন কর্মকর্তারা। কিন্তু লুইস জনসন ইংরেজ মহিলা। আবদুস সালামের যোগ্য স্ত্রীর সম্মান তাঁকেই দেয়া হলো।
তাঁর নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর আবদুস সালামের নিজের দেশ পাকিস্তানে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া হলো। যখন বলা হলো আবদুস সালাম প্রথম মুসলিম নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী, অস্বস্তিতে পড়লেন জেনারেল জিয়াউল হকের সরকার। কোনরকমে একটা সংবর্ধনার আয়োজন করলেন আবদুস সালামের জন্য। রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ দেয়া হয় আবদুস সালামকে। অনেক সংবাদপত্রে লেখা হলো আবদুস সালামের মত একজন আহমদিয়াকে নোবেল পুরষ্কার দেয়াটা পশ্চিমাদের ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র। সরকার অবশ্য বাধ্য হয়ে তাঁর নামে একটা ডাক-টিকেট ইস্যু করে।
অনেকেই মনে করেন আবদুস সালাম – তৃতীয় বিশ্বের সাথে প্রথম বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সুযোগের বৈষম্যের প্রতি রেগে ওঠা মানুষ। সাংস্কৃতিক বৈষম্যের কারণেও তিনি মাঝে মাঝে রেগে যেতেন। তাঁকে ফর্মালি ‘প্রফেসর সালাম’ বলে ডাকবেন, নাকি ইনফর্মালি ‘আবদুস’ বলে ডাকবেন তা নিয়ে সমস্যায় পড়তেন তাঁর পশ্চিমা সহকর্মীরা। তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করাতে তিনি কিছুটা রেগে গিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন “আমার নাম আবদুস সালাম। মানে আল্লাহ্র চাকর। এখন তুমিই ঠিক করো আমাকে ‘সালাম’ মানে ‘আল্লাহ’ বলে ডাকবে, নাকি ‘আবদুস’ মানে ‘চাকর’ বলে ডাকবে”।
জীবনের শেষের দিকে পার্কিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন আবদুস সালাম। ১৯৯৬ সালের ২১ নভেম্বর অক্সফোর্ডের বাড়ীতে মারা যান আবদুস সালাম। মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ নিজের দেশের মাটিতে দাফন করার জন্য পাকিস্তানে নিয়ে আসা হয়। কারণ তিনি নিজেই তা চেয়েছিলেন। তিনি অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন নি। করলে পাকিস্তানি নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হতো। তাঁকে দাফন করা হয় রাবওয়াতে। আহমদিয়াদের নিজেদের শহর- রাবওয়া। কিন্তু রাব-ওয়া নামটাও গ্রহণযোগ্য নয় সেখানে। রাবওয়া নাম বদলে রাষ্ট্রীয় হুকুমে নাম রাখা হয়েছে- চেনাব নগর। ঝাং – নিজের গ্রাম- সেখানে কবর দেয়া যায়নি তাঁকে। কাছেই রাব-ওয়া। তেমন কোন রাষ্ট্রীয় সম্মান দেখানো হয়নি পাকিস্তানের একমাত্র নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীকে। তাঁর নিজের গ্রামের মানুষ, যাদের স্কুল ও কলেজের জন্য আবদুস সালাম তাঁর নোবেল পুরষ্কারের পুরো টাকাই দিয়ে দিয়েছেন- সেই আইন মেনে চলা মানুষ, ধর্ম মেনে চলা মানুষ দেখতে যান দাফনের সবকিছু আইনমত হয়েছে কিনা ধর্ম-মত হয়েছে কি না। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা রাষ্ট্রীয় আইন আছে পাকিস্তানে। কী আইন? পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধন করে বলা হয়েছে- আহমদিয়ারা মুসলমান নন। ্তাঁরা কোন অবস্থাতেই নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করতে পারবেন না, কলমা পড়তে পারবেন না। ইসলামের কোন চিহ্নই তারা ব্যবহার করতে পারবেন না। মসজিদে নামাজ পড়তে পারবেন না। সংবিধানের এই সংশোধনী পাস করেছিলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো- যিনি লিবারেল সোশাল ডেমোক্রেট বলে খ্যাত, যিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ডেকে এনেছিলেন প্রফেসর আবদুস সালামকে ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে পারমাণবিক প্রকল্প তৈরির কাজে। ভুট্টোর পরে জেনারেল জিয়াউল হক আরো সব কঠিন আইন পাস করেন আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে।
চেনাব নগরে আবদুস সালামের সমাধি-ফলকে লেখা ছিলঃ “Abdus Salam the First Muslim Nobel Laureate”। সমাধি-ফলক স্থাপনের পর পুলিস সাথে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট এসে মুসলিম শব্দটা মুছে দেন। তাতে লাইনটি দাঁড়ালো “Abdus Salam the First Nobel Laureate”। এর যে কোন অর্থ হয় না তাতে কিছু আসে যায় না আইনের ও ধর্মের অনুসারীদের।
১৯৯৭ সালের নভেম্বর মাসে আবদুস সালামের স্মরণ সভা হয় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স- ট্রিয়েস্টে। সেই সভায় এই কেন্দ্রের নামের সাথে আবদুস সালামের নাম যোগ করা হয়। ১৯৮১ সালের ২ জুলাই ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর আবদুস সালামকে সম্মানসূচক ডিএসসি প্রদান অনুষ্ঠানে রয়েল সোসাইটির ফেলো প্রফেসর জন হাইম্যান বলেছিলেন ‘আবদুস সালাম একজন একব্যক্তির বহুজাতিক কর্পোরেশন যিনি মেধাভিত্তিক প্রকৌশল পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলোতে ব্যস্ততার সাথে সরবরাহ করছেন’। এই ‘এক-ব্যক্তির বহুজাতিক কর্পোরেশনের’ কাছে তৃতীয় বিশ্বের পদার্থবিজ্ঞান চিরঋণী হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্রঃ
1. Gordon Fraser, Cosmic Anger Abdus Salam- the first Muslim Nobel Scientist, Oxford University Press, New York, 2008.
2. Jagjit Singh, Abdus Salam A biography, Penguin Books, Calcutta, 1992.
3. Abdus Salam, Ideals and Realities, World Scientific, Edited by Z Hassan & C. H. Lai, Singapore, 1984.
[…] ইসলাম- মুনতাসির মামুন (দৈনিক জনকণ্ঠ) ৩.আবদুস সালাম- প্রথম মুসলমান (?) নোবেল বিজ…-প্রদীপ দেব ৪.জামায়াতে ইসলামীর […]
একজন মানুষ সবচেয়ে ভুল জায়গায়!
হুম।
@ নির্ঝর
এই ব্লগে যারা লেখেন তারা সাম্প্রদায়িক চিন্তা ভাবনা লালন করেন না। এখানে মুক্ত চিন্তার চর্চা করা হয়। মুক্ত চিন্তা আর সাম্প্রদায়িক চিন্তার পার্থক্য করতে না পারলে সেটা দুঃখজনক।
@নির্ঝর,
ধর্মের গাঁজায় টান দিয়ে commemt লিখতে বসলে কমেন্ট biased হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।আপনার অবগতির জন্য জানাই যে ১৯৯৯ এ Ahmed Zewail নামে এক মিশরীয় ভদ্রলোক রসায়নে নোবেল প্রাইজ লাভ করেন ultrafast chemical dynamics এ গবেষনার জন্য যিনি ধর্মে মুসলিম।সুতরাং নোবেল প্রাইজের দাবিদার হওয়ার জন্য অমুসলিম হতে হবে আপনার মনগড়া এই হাস্যকর criteria ধোপে টেকে না।বঞ্চনার মায়া কান্না কেঁদে আর কতদিন চালাবেন?তার চেয়ে বরং আপনার বঞ্চিত (আপনার মতে) কম্যুনিটিকে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করতে বলুন।অবশ্য তারা আপনার এই সদুপদেশ শুনবে কিনা এটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। কারন, তারা তো স্যুইসাইড বম্ব বেঁধে বিধর্মী নিধনে মহাব্যস্ত থাকায় বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় বেশি সময়ই দিতে পারবে না।
@নির্ঝর
অহমিকার মাত্রাটা অনুমান করা গেল।
জগতের মানুষের প্রতি এই ঘৃণা, এই বিদ্বেষ, এই সামপ্রদায়ীক মনোভাব, মিথ্যা অহংকার, সুন্নী মুসলমানদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ। কথায় কথায় ষঢ়যন্ত্র খোঁজা ত্যাগ করুন। মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধা পেতে হলে আগে মানুষকে ভালবাসতে শ্রদ্ধা করতে শিখুন।
@নির্ঝর,
মনে হয় আপনার বক্তব্যটা সবাই পরিস্কারভাবে বুঝতে পারেনি বা আপনি বোঝাতে পারেননি। আপনি সালামের নোবেল পাওয়ার উপযুক্ততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেননা। আপনি মনে হয় বলতে চেয়েছেন এত বড় মাপের পদার্থবিদ হওয়া সত্বেও যদি উনি মূলধারার মুসলমান হতেন তাহলে নোবেল পুরস্কার পেতেননা।
আমার মনে হয় আপনার এই বক্তব্যটা সম্পূর্ন ভূল। আমার জানামতে তিনটা বিষয়ের নোবেল পুরস্কার রাজনৈতিক বায়াস দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে। এগুলো হল শান্তি, সাহিত্য আর অর্থনীতি। কারন এই তিনটা বিষয়ের সাথে রাজনীতির সমপৃক্ততা আছে। বিজ্ঞানের যে তিনটা বিষয়ে নোবেল দেওয়া হয় – পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞান, এগুলোতে রাজনৈতিক বায়াস কাজ করার কোন কারন নেই। আপনার বায়াস আর্গুমেন্টটা সালামের জন্য খাটেনা।
আপনি যেসব “থার্ড রেট ফলিত গণিতবিদ” দের কথা বলছেন তাদের নাম জানালে বাধিত হব। কারন যেসব গণিতবিদ বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পেয়েছেন তাদের সম্বন্ধে আমার কিছুটা ধারনা আছে। পেশাগতভাবে আমাকে পদার্থবিজ্ঞান আর অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। গাণিতিক মডেলিং এর কাজ। আর গণিতবিদরা এই দুটো বিষয়ে এবং রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আপনি জানালে এনিয়ে কিছু যৌক্তিক আলোচনা করতে পারি।
আব্দুস সালাম যদি কাদিয়ানী না হতেন তাহলে তিনি জীবনেও নোবেল পেতেন না। এর চাইতে বেশী কি আর বলব।
@নির্ঝর,
আপনি কি লেখাটা পড়েছেন, নাকি নাম দেখেই মন্তব্য করলেন? মুক্তমনার মডারেটরদের কাছে অনুরোধ জানাই, এধরনের সাম্প্রদায়িক, বর্ণবাদী মন্তব্যের অনুমোদন না দেওয়ার জন্যে।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
ডাকটিকিট প্রকাশ করা পর্যন্ত পড়েছি। আপনি মুক্তমনার মডারেটরদের কাছে তাদের নামের প্রতি বে-ইনসাফী করতে বলছেন কেন?
@নির্ঝর,
ভাই আপনি মনে হয় খামোখাই কথা বাড়াচ্ছেন। যুক্তির বিচারে সালাম সাহেবকে যোগ্যতা নয়, কাদিয়ানী হিসেবেই পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে – এই সম্ভাবনা শুনতে আজগুবী বা সাম্প্রদায়িক হলেও আমি একেবারে উড়িয়ে দিতে পারি না।
তবে তা শুধুই আপনার বা কারো ব্যাক্তিগত ধারনা হলে তার কোন মূল্য নেই। তেমন কোন সম্ভাবনা আসলেই থাকলে রেফারেন্স দেন।
@নির্ঝর,
আপনার এই মূল্যায়নের কারন একটু ব্যাখ্যা করবেন? নোবেল প্রাইজ নিয়ে কিছু পক্ষপাতিত্বের কথা মাঝে মাঝে শোনা যায়।
আমি ফিজিক্সের লোক নই; সালাম সাহেবের গবেষনার মান আসলে নোবেল পাওয়ার ধারে কাছেও না?
@আদিল মাহমুদ,
আমি পদার্থবিজ্ঞানের লোক নই। আমার এক সমঝদার বন্ধুর কাছ থেকে জেনেছি আব্দুস সালাম নোবেল পাওয়ারই মত লোক। সে দিকটায় আমার আপত্তি নাই। আমার আপত্তি হচ্ছে তাঁর মত বা তার চাইতে বেশি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মুসলিমরা কদাচিৎ নোবেল পেয়ে থাকে।
এই লোকের ব্যাপারটা দেখবেন?
“থার্ড রেটেড অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিশিয়ানদের ডেকে ডেকে নোবেল দেওয়ার”* চাইতে নিশ্চয়ি এই লোকের নোবেল পাওয়ার বেশি হকদার।
*এই মন্তব্যটা আমার হার্ভাড পিএইচডি প্রফেসরের।
@নির্ঝর,
আপনার এই লোকের ‘ব্যাপারটা’ অধ্যাপক আব্দুস সালামের নোবেল না পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন রেফারেন্স হল না।
@অভিজিৎ,
হ্যঁ কারণ ওটা একজন মুসলিমের রেফারেন্স ছিল যিনি থার্ড রেটেড আপ্লায়েড ম্যাথমেটিশিয়ান যাদের ডেকে অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হচ্ছে তাদের মত কাজ করেন না এমন এক এমআটি প্রফেসরের রেফারেন্স। সালাম সাহেবের ব্যাপারে নতুন তথ্য দেওয়ার জন্য যে এই রেফারেন্স দেইনাই সেটাতো কমেন্ট পরেই বোঝা যাচ্ছে, লিঙ্কে ঢোকার তো কোন প্রয়োজন পরে না।
@নির্ঝর,
দেখুন, নোবেল পুরষ্কার নিয়ে কিছু ভিন্নমত হতেই পারে। পৃথিবীতে আজকাল এক সংগে এত ভাল মানের গবেষনা হয় যে কাকে ফেলে কাকে দেওয়া হবে এ বিতর্ক হতেই পারে। কে প্রকৃত হকদার আর কে হকদার না তা আমি আপনি এখানে বিতর্ক করে (বিশেষ করে শূন্য জ্ঞান নিয়ে) ঠিক করতে পারব না। বিশেষ করে শান্তি পুরষ্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ শোনা যায়। আমাদের ইউনুস সাহেব পর্যন্ত নিজ দেশের লোকের থেকেই নানান কথা শুনেছেন। যত কথা বা অসন্তুষ্টিই থাক; নোবেল পুরষ্কার এখনো বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানের পুরুষ্কার।
আপনার রেফারেন্সে সালাম সাহেব সম্পর্কিত কিছুই দেখছি না।
@আদিল মাহমুদ,
আমি এই কথাটাই বলতে চাচ্ছি, সালাম সাহেবের কীর্তি নিয়ে আমার কোনও আলাপ নাই। তিনি নিজের যোগ্যতায়ই পেয়ে থাকবেন (আমার “সমঝদার” বন্ধুর কাছ থেকে যতটুকু বুঝেছি)। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব থেকে যতই অবদান রাখুন না কেন নোবেল দেওয়ার সময় কমিটি হয় শিরিন এবাদি, নয় পামুক, নয় তো অমুসলিম সালাম, নয়তো সুদখোর ইউনুস (এটাকে কেউ গালি হিসেবে গন্য না করলেই ধন্য হব, মাইক্রোফিন্যান্সের তাত্ত্বিক আলাপ অনুযায়ী এই তকমায় ইউনুস সাহেব আনন্দিত) ছাড়া কাউকে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পায়না।
@নির্ঝর,
আপনি হুদাই ক্যাচাল করতেছেন। সালাম যে বিষয়ে কাজ করেছিলেন তা শুধু নোবেল নয় এর চাইতেও বড় কোন পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল। তাত্ত্বিক পদার্থ বিদ্যা সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে তা আপনার বোঝা উচিত। আর নোবেল নিয়ে রাজনীতি হয় না তা নয়। তবে তা সব সময় নয়। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন যে কারনে সবচাইতে বেশী বিখ্যাত সেই আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়নি। দেয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত গৌন আবিস্কার ফটো ইলেক্ট্রিক তত্ত্বের জন্য। এর মানে নোবেল কমিটির লোকজন আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের গুরুত্বই ধরতে পারেনি। অথচ এ আপেক্ষিক তত্ত্ব নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের চাইতে অনেক বেশী জটিল তত্ত্ব। আমার কাছে তো মনে হয়- নিউটন মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিষ্কার না করলে সেই সময়েই ডজনখানেক বিজ্ঞানী ছিলেন যারা তা আবিষ্কার করতে পারতেন। কিন্তু আইনষ্টাইনের আপেক্ষিত তত্ত্ব অত সহজে কেউ আবিষ্কার করতে পারত না। মনে করা হয় অরিঁ পয়েনকেয়ার ও এক ধরনের আপেক্ষিত তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন কিন্তু তা আইনস্টাইনের মত এত ব্যপক কোন কিছু ছিল না। যাহোক, সালাম তার যোগ্যতার কারনেই নোবেল পেয়েছিলেন, কাদিয়ানী হওয়ার জন্য নয় আর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র হবে এটা আশা করা ঠিক নয়।
@নির্ঝর,
🙂
মনে হয় শিরিন এবাদি, ইউনুস সাহেবকে পুরষ্কার না দিলে আপনার বক্তব্য দিতে আরো সুবিধে হত।
ভাই, একটু মাথা ঠাণ্ডা করে শোনেন। আমেরিকা কানাডা ইউকের মত দেশ প্রতি বছর কত হাজার মুসলমানকে তাদের দেশে থাকার স্থায়ী ব্যাবস্থা দেয় জানেন তো? মনে করার কোন প্রয়োযন নেই যে এইসব মুসলমান সবাই অতি জিনিয়াস যাদের ছাড়া এদের চলছিল না। আমার আশে পাশে অসংখ্য বাংগালী, পাকিস্তানী, মুসলমান পরিবার আছে কোন কাজই করে না; বছরের পর বছর সরকারের সোশালের টাকায় খাচ্ছে (শুধু মুসলমানরাই এই দলে তা বলছি না)। পশ্চীমারা এত মুসলমান বিদ্বেষী হলে এদের ইমিগ্রেশন দিত আদৌ? নাকি বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতো? কানাডার ইমিগ্রেশন নেবার লোক বিশ্বে আরো অনেক আছে, মুসলমান বাদ দেওয়াটা সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া হিসেবে করা এদের জন্য কোন ব্যাপার নয়।
আমেরিকার এত মুসলমান বিদ্বেষী নাম, সেই আমেরিকা থেকে আইনী কাগজ ওয়ালা কতজন মুসলমানকে শুনেছেন থাকলাম না আমেরিকায় ঘোষনা দিয়ে নিজ মুসলমান দেশে ফেরত যেতে? আমেরিকান সরকার চাইলে অন্তত এদের একটা বিরাট অংশ লোককে যে কোন ছূতায় দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারে, এমন কোন ব্যাপার নয়।
এত ষড়যন্ত্র থিয়োরী মাথায় রাখলে এগুনো যায় না। রজ্জুতে কেবল সর্পভ্রম হয়।
@আদিল মাহমুদ,
:lotpot:
@নির্ঝর,
আপনার বক্তব্যটা ঠিক পরিষ্কার হল না। উনি কিসে নোবেল পাওয়ার দাবিদার, পদার্থবিজ্ঞানে নাকি? কারা এসব থার্ড রেট ফলিত গণিতবিদ? এদের সাথে সালামের সম্পর্ক কি? নোবেল পুরস্কার যদি বিতর্কিত হয়েও থাকে, তাহলে কি তার কারণ ধর্ম না সাধারণ academic রাজনীতি? একটু ঝেড়ে কাশুন।
@রৌরব,
উনি অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার দাবিদার। থার্ড রেটেড অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিশিয়ান হচ্ছে একটা জারগোন আকারে বলেছেন আমার সেই হার্ভার্ড ফেরত স্যার। মানে এদের চাইতে এই ব্যক্তি অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার বেশী হকদার। নোবেল পুরস্কার নানা কারনেই বিতর্কিত। শুধু এ্যাকাডেমিক রাজনীতি না বিশ্ব রাজনীতিও আছেরে ভাই। উপরের কমেন্টে কিছু টা বলেছি।
@নির্ঝর,
দেখুন, আদিল মাহমুদের সাথে আমিও একমত যে বিভিন্ন ধরণের রাজনীতি (ধর্মীয় সহ) এসব ব্যাপারে থাকতে পারে। কিন্তু আপনার “প্রমাণ” গুলি সবই আপনার নিজেরই বিভিন্ন ব্যক্তিগত correspondence। আশা করি বুঝতে পারছেন কেন এগুলি গ্রহণ করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
ওই ভদ্রলোক সম্বন্ধে দু-একটি প্রশ্ন।
প্রথমত, ভদ্রলোক কি মুসলিম? আর্মেনিয়ান-রা সাধারণত খ্রীস্টান হয় তো, তাই জিগাইতেসি। উনার ধর্ম নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আমি মোটেই কেয়ার করি না, কিন্তু যেহেতু এই ব্যাপারটাই এখানে প্রধান ইস্যু তাই পরিষ্কার করে বুঝতে চাইছি।
দ্বিতীয়ত, ভদ্রলোক তো অনেক সম্মান এই ৪২ বছর বয়সেই পেয়েছেন দেখছি পশ্চিমা বিশ্বের অতুলনীয় মুসলিম বিদ্বেষ সত্বেও। ঘটনা কি? নাকি ব্যাপারটা খালি নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? ভদ্রলোকের বয়স কম বলে বুড়া-হাবড়ারা তাকে এখনও গোয়ার্তুমি করে প্রাইজ দিতেছেনা, এই সাধারণ ব্যাখ্যা কি আপনি উড়িয়ে দিতে পারেন?
@নির্ঝর,
আব্দুস সালাম তড়িচ্চুম্বকীয় বল আর দুর্বল নিউক্লিয় বলকে একীভূত করায় নিঃসন্দেহে মৌলিক অবদান রেখেছিলেন। ষাটের দশকে দুনিয়া জোড়া বড় বড় তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরাই এ নিয়ে কাজ করেছিলেন। এমনকি আইনস্টাইনও এ ব্যাপারে তার জীবদ্দশায় অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হন নি। সালাম, ওয়েইনবার্গ আর গ্লাসোরে কাজ সে সময় গ্র্যাণ্ড ইউনিফাইড তত্ত্বের (GUT) জন্য বিরাট অগ্রগতি ছিলো। কারো কাজ সম্বন্ধে না জেনে মন্তব্য করা ঠিক নয়।
সালাম সাহেব কাদিয়ানী ছিলেন কি ছিলেন না তার উপর নির্ভর করে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়নি। ‘যদি কাদিয়ানী না হতেন তাহলে তিনি জীবনেও নোবেল পেতেন না’ – এধরণের মন্তব্য মুক্তমনায় অনভিপ্রেত – উপরে পাঠকদের রিয়েকশন দেখে বুঝতে পারছেন বোধ করি।
@অভিজিৎ,
ব্লাডি সিভিলিয়ানের প্রতি নির্ঝরের দ্বিতীয় মন্তব্যে শাসানি নিশ্চয়ই পড়েছেন।
আমার শব্দের পরিবর্তে বোধ হয় তাদের লিখে ফেলেছেন।
যাহোক, এরপর এ নিয়ে চলবে অহেতুক বিতর্ক ও দীর্ঘ মন্তব্যের পালা। নির্ঝরের মন্তব্য মডারেটরের আওতায় এনে এ বিতর্কের অবসান করার প্রস্তাব করছি।
আর তার সাম্প্রদায়িক মন্তব্য মুছে ফেলার জন্য অনুরোধ করছি। নিজেই বলেছেন ডাকটিকেট পর্যন্ত পড়েছেন। অর্থাৎ ইচ্ছে করেই আবদুস সালামের সমাধি ফলক পড়েননি। নির্ঝররা তা কোনদিনই পড়ে না। ওখানে গিয়ে তারা নিরক্ষর হয়ে যায়।
@গীতা দাস,
এই ব্লগের নাম টা যেন কী?
সমাধি ফলক পড়ার আগেই কারেন্ট চলে গিয়েছিল। পরে পড়া হয়নাই। জবাব দেওয়ার উত্তেজনায়। আপনার কমেন্ট পরে আবার গিয়ে পড়ে আসলাম।
ধরুন একটা আদর্শিক সমাজ তাদের সমাজে সদস্য হওয়ার জন্য কিছু dos’ and don’t s’
নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এবং সেই সমাজের সুনির্দিষ্ট অথরিটি আছে সদস্যপদ নির্ধারনের জন্য। এখন আপনি যদি সেই সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হন আর কোন যোগ্যতায় অনুত্তীর্ণ ব্যক্তি এসে সদস্যপদ দাবী করে তাহলে আপনি কী করবেন?
আর সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করছেন তা তো আসলে মজলুমের বিরুদ্ধে জুলুমের অভিযোগ। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা মুসলিম হওয়ার কারণে উৎকট সাম্প্রদায়িকতার স্বীকার হয়ে নোবেল পায়না, খান হওয়ার কারনে “মডারেট মুসলিম” এর তকমায় ও লাভ হয়না। এয়ারপোর্টে হেনস্তা হয়। সামির হওয়ার কারণে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে যায়
, রোজা রেখে গাড়ি চালানোর অপরাধে (!?!) গলায় ছুড়ি খায়, হিজাব পরে পার্কে আসায় খুন হয় এদের ব্যপারে আপনার সাম্প্রদায়িকতার বয়ান টা আরেকবার পরিস্কার করেন তারপর অন্য আলাপ।
@নির্ঝর,
আপনার রসবোধতো খুব প্রখর!!
উত্তেজনাটা একটু কমালেই ভালো করবেন মনে হয়। পুরোটা পড়ে মন্তব্য করলে সবার জন্যই মঙ্গল।
ব্ললিউডের সিনেমা একটু কম দেখেন। সিনেমা দেখেই ধরে নিলেন যে, আমেরিকায় রোজা রেখে গাড়ি চালালে লোকে গলায় ছুরি খায়, বা হিজাব পরে পার্কে এলেই মানুষ খুন হয়। বলিহারি চিন্তা আপনার!!
@ফরিদ আহমেদ,
দুঃখে আমার কান্না আসছে এই জন্য যে আমার লিঙ্ক দেওয়াটা অন্তত আপনার জন্য বাজে খরচের খাতায় চলে গেছে
১। ট্যাক্সি ড্রাইভারের ব্যাপারটা
http://english.aljazeera.net/news/americas/2010/08/2010825193458467881.html
http://www.newsweek.com/blogs/the-gaggle/2010/08/25/muslim-cab-driver-stabbed-in-n-y-bias-attack.html?from=rss
২। পার্কে হিজাব পরায় খুন
http://www.guardian.co.uk/world/2009/jul/07/german-trial-hijab-murder-egypt
http://www.facebook.com/photo.php?pid=31695960&id=1227074044&ref=notif¬if_t=like#!/group.php?gid=121622715743&v=info&ref=ts
ঠান্ডায় চোখের মনি জমে গিয়ে থাকলে হাতের তালু দিয়ে ডলা দিয়ে নেন।
@নির্ঝর,
দুঃখে কান্না আসছে আপনার আর ঠাণ্ডায় চোখের পানি জমবে আমার। বেশ মজারতো!!
@ফরিদ আহমেদ,
পানি না পানি না, ঠান্ডায় চোখের মনি জমে গিয়ে থাকলে হাতের তালু দিয়ে ডলা দিয়ে নেন।
@নির্ঝর,
প্রথমে লিংক দেবেন বলিউডের সিনেমার, সেই লিংক এর উপরে মন্তব্য করার পরে এসে আসল লিংকগুলো দেবেন, তারপরে অন্যকে বলবেন যে চোখে ডলা দেন। তাইলে ক্যামনে হয়? আমিতো ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নই। আপনি বরং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে একখান ভালো স্নান (বা গোসল) করে ফেলুন। মাথাটা মনে হয় একটু বেশিই গরম হয়ে গেছে আপনার। 🙂
@নির্ঝর,
পার্কে হিজাব পরা কোন মহিলা খুন হওয়া আর কেউ হিজাব পরলেই আমেরিকায় খুন হয়ে যাওয়া – এ দুটোর পার্থক্য নিশ্চয় আপনি বুঝবেন। বাংলাদেশের কোন পত্রিকায় যদি নিউজ বেরোয় যে এক ডাক্তার তার সেক্রেটারীকে খু্ন করেছেন, তার মানে নিশ্চয় কেউ ধরে নেবেন না যে ডাক্তারমাত্রই বাংলাদেশে সেক্রেটারিকে খুন করে চলেছেন।
মডারেটরদের কাছে অনুরোধ – বক্তব্যের সারবত্তা না থাকলে নির্ঝর সাহেবের মন্তব্য ব্লগে প্রকাশ করার দরকার নেই।
মাঝে মাঝে বিনোদনেরও প্রয়োজন আছে। মডুরা মনে হয় ওই কারণেই ছাড়তেছে। বিনোদনের আজকাল যা আকাল পড়ছে। 🙂
@ফরিদ আহমেদ, :yes: :rotfl:
@নির্ঝর,
এটা খুব ভয়ংকর একটা রোগ-স্যার কার্ল পপার বলেছেন পৃথিবীতে স্বর্গ স্থাপনের উদ্দেশ্যে সব থেকে বেশী নরাধাম কাজ হয়েছে-যার সাক্ষী নাজি, ফাসিস্ট, কমিনিউস্ট এবং ইসলামের ইতিহাস।
আদর্শ সমাজের অস্তিত্ব সোনার পাথর বাটি এবং রাজনৈতিক সুবিধাবাধিদের হাত শক্ত করার লাঠি। পৃথিবীটে প্রতিটা পরিস্থিতিই আলাদা-তাই ঐ ধরনের কিছুর কল্পনা যা কমিনিউস্ট, ইসলামিস্ট, হিন্দুইস্টরা করে থাকে, তা এক ভয়ংকর মানসিক রোগ।
@গীতা দাস,
এক বিশেষ চরিত্রের অনেক প্রতিনিধির এক সাধারণ রূপ এই নির্ঝর।আমিও তার বর্ণবাদী মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাই।আশা করি মুক্ত-মনা কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা দেখবেন।
@দেবাশিস্ মুখার্জি,
*সাম্প্রদায়িক এবং বর্ণবাদী মন্তব্য
@অভিজিৎ,
আদিল মাহমুদ এর জবাবে আমি বলেছি এই বিজ্ঞানী নোবেল পাওয়ায় আমার অনাপত্তির কথা (যদিও বিশ্বসংসারে এতে কিছু এসে যায় না)।
@নির্ঝর,
আপনি আসলেই তেমন কিছু বলতে পারেননি, এবং অনাবশ্যক কেওয়াস তৈরি করেছেন উত্তেজক মন্তব্যের মাধ্যমে।
সালাম তড়িচ্চুম্বকীয় বল আর দুর্বল নিউক্লিয় বলকে একীভূত করায় নিঃসন্দেহে মৌলিক অবদান রেখেছিলেন। এ জন্যই তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য।
এছাড়াও আরো দুটি মেজর কন্ট্রিবিউশন প্রদীপ তার লেখায় উল্লেখ করেছেন –
* নিউক্লিয়ার বলের মেসন তত্ত্বের ব্যাপারে উপর কাজ এবং অসীম রাশির উদ্ভব হয় তা দূর করার পদ্ধতি ।
* গণিতের গ্রুপ থিওরির ব্যবহরের মাধ্যমে কোয়ার্ক-তত্ত্ব-এর উপর তাত্ত্বিক কাজ।
আপনি যদি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের কাজ না বুঝে থাকেন, তা হলে উত্তেজক কমেন্ট না করাই শ্রেয় হবে।
@অভিজিৎ,
আপনার কথার সরল তরজমা হচ্ছে যারা তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার কাজ বুঝে না তারা যেন এখানে কমেন্ট না করে!!!
তাহলে খটমট বিজ্ঞান না কপচিয়ে লেখক কেন খামোখা রোমান্স,সাস্পেন্স, ধর্মীয় আবেগ, রাজনীতি, সমাজ এসব দিয়ে সুখপাঠ্য এই লেখাটা লেখলেন? উপরে এটা অন্তত বলে দিতে পারতেন “ছায়েন্স না-লায়েক দের প্রবেশ যারপর নাই তিরস্কৃত”
@নির্ঝর,
না আমার কথা খুব সিম্পল। মন্তব্যের ব্যাপারে সেন্সিবল হোন। আমি সালামের মেজর কন্ট্রিবিউশন উল্লেখ করেছি। কোনটাই আপনি খণ্ডন করতে পারেননি, কেবল আশেপাশের ঝোপঝার পিটিয়ে চলেছেন। আপনাকে মন্তব্য করতে বাধা দেয়া হয়নি, কেবল ‘সালাম যদি কাদিয়ানী না হতেন তাহলে তিনি জীবনেও নোবেল পেতেন না’ টাইপের মন্তব্যের ব্যাপারে সতর্ক হতে বলেছি। এ ধরনের মন্তব্য করে সেটা ব্যাক করতে না পারার চেয়ে এধরনের মন্তব্য না করাই সমীচীন।
@অভিজিৎ,
আমার ব্যাকিংটা (আগেও বলেছি) তিনি কিছুই করেন নাই শুধু শুধু নোবেল পেয়েগেছেন এই কথা তো আমি বলিনাই। আমি বলেছি তিনি যদি কাদিয়ানী না হয়ে মুসলিম হতেন তাহলে কি একইভাবে এই পুরস্কার পেতেন? নজির হিশাবে একজন এমআইটি প্রফেসরকে হাজির করলাম। আমার মনে হয় নজীরের অভাব হবেনা। সালাম সাহেব যেভাবে আরো দ’জনের সাথে নোবেল পেয়েছিলেন সেই একই ভাবে অন্যদের কাজ মেনে নিয়ে মুসলিম হওয়ার অপরাধে স্বীকৃতি না পাওয়ার ঘটনা এই নিও-লিবারেলিজমের দুনিয়ায় নেহায়েৎ কম হবেনা বলেই এই “ছায়েন্স না-লায়েকের” ধারনা (ধারনা ভূল হোক)
@নির্ঝর,
ভাই হাইপোথিটিকাল সিনারিও হাজির করে তর্ক করলে তো হবে না। সালাম সাহেব পদার্থবিজ্ঞানে খুব মৌলিক কিছু কাজ করেছেন। সেজন্যই তিনি নোবেল পেয়েছেন। তিনি তিনি যদি কাদিয়ানী না হয়ে মুসলিম হতেন তাহলেও কি একইভাবে এই পুরস্কার পেতেন কিনা – এটা একটা হাইপোথিটিকাল সিনারিও। এর উত্তর হ্যা হবে নাকি না হবে – সেটা কি হলফ করে বলা সম্ভব নাকি? দেখুন জোসলিন বেল – পালসার আবিস্কার করেও নোবেল পাননি। তিনি তো কাদিয়ানী ছিলেন না। ছিলেন না মুসলিমও। আমি যদি বলি তিনি খ্রিষ্টান না হয়ে মুসলিম হতেন – তাহলে নোবেল পেতেন – এটা কি হাস্যাস্পদ হতো না? মেঘনাদ সাহা কিংবা সত্যেন বোস পদার্থবিজ্ঞানে নবেল পাননি। সেটা পাননি কি তারা হিন্দু বলে? প্রাপ্তিযোগ্য বিভিন্ন কারণ থাকা সত্ত্বেও বহু বিখ্যাত পদার্থবিদেরা নোবেল পাননি, এর মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পুরুষ , নারী সবাই আছে। কেউ পায়নি বলেই, যিনি পেয়েছেন তার অবদান তো মিথ্যে হয়ে যায় না। কাদিয়ানী বলেই সালামের প্রতি আপনার ঘৃণাটা সত্যই বেদনাদায়ক।
@নির্ঝর,
পাকিস্তান ঘোষনা দিল আবদুস সালাম মুসলিম নন আর ওটাই দুনিয়াসুদ্ধ লোক মেনে নিল। নোবেল কমিটি অমনি সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলল যে উনি যেহেতু মুসলমান নন আর যোগ্য লোক তো ওনাকে নোবেল প্রাইজ দেয়া যেতে পারে। এই ধরনের চিন্তা করার পিছনে কোন যুক্তি থাকতে পারেনা।
পাকিস্তানের মতো একটা সাম্প্রদায়িক দেশ যতই কাদিয়ানদের অমুসলীম হিসাবে ঘোষনা দেক, কাদিয়ানরা যদি নিজেদের মুসলমান মনে করে তবে পৃথিবীর লোকজন তাদেরকে সে হিসাবেই জানে।
@নির্ঝর,
আহা রে… খালি মুসলমান নিয়েই চিন্তা করেন … অবশ্য করাই উচিৎ , “মুসলমান বলে কথা !”
সত্যেন বোস এর নাম শুনেছেন ? ওনার থীয়োরীর ওপর কাজ করে অনেকেই নোবেল পেয়েছেন , কিন্তু উনি পান নি… এখন সব বোস দের কি বলা উচিৎ উনি বোস ছিলেন বলেই পান নি… খোরানা হলে পেতেন অথবা সেন হলে পেতেন … ??
@নির্ঝর,
আপনি তো ভাল একটা সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হলেন। আপনার মন্তব্যটি হয়েছে গোঁড়া মুসলমান-সুলভ যারা নাকি সব কিছুতে ইহুদি-খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্র দেখতে পায়। আপনি যে বললেন বিজ্ঞানী সালাম কাদিয়ানি না হলে নোবেল পেতেন না তা কিসের ভিত্তিতে বলেছেন? এ ধরণের কথা বলার আগে তো তাঁর অবদান সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। আব্দুস সালাম এমন কিছু অবদান রেখেছেন যে তাঁর নোবেল না পাওয়াটা হত অতি-অস্বাভাবিক।
আপনাকে আমি এখনই থামার জন্য অনুরোধ করব। কারণ আপনার মন্তব্য হতে এটা ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে যে সালামের অবদানের বিষয়ে আপনাকে কিছু বললেও তা বুঝার কোনো প্রকার যোগ্যতা আপনার মাঝে নেই। আমি আবেগের বশে তা বলছি না- নিজেই বিষয়টি নিয়ে একটু ভেবে নিন।
পদার্থ বিজ্ঞান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে এরকম কারো কাছ থেকে এ সম্পর্কে জেনে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
আপনি হচ্ছেন পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠির লোক যারা এই লোককে তাড়িয়ে দিয়ে নিজেরা পিছনে পরে গেছেন আর নিজেদের মধ্যে এখনো মারামারি ভন্ডমি চালিয়ে যাচ্ছেন। পাকিস্তানের সাধারণ জনগন আজ সেই ভুলের মাসুল গুনছে।
স্বদেশে ডঃ সালাম কী রকম হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, সম্প্রতি একটা পোস্ট দেয়ার সময়ে সেটা জেনেছিলাম। উইকিপিডিয়াতে ও অন্যত্র পাকিস্তানীরা এখনো এই ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে , সালামকে কীভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা চলে।
—
ডঃ সালামের সব কাজের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও দুটি কাজের জন্য সেই শ্রদ্ধায় চিড় ধরেছে কিছুটা। প্রথমতঃ – পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা বানাবার প্রকল্পে তাঁর ভূমিকা। আর দ্বিতীয়তঃ – যেটা আপনার পোস্টে জানলাম, সালামের দ্বিতীয় বিয়ে।
হতে পারে, তিনি পাকিস্তানের সংস্কৃতি মেনে চলে এরকম করেছেন, কিন্তু ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন (যা বাংলাদেশেও চালু) অনুসারে ২য় বিয়েতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগে। সালাম সেটা নিয়েছিলেন কি না কে জানে, আর অনুমতি দিলেও তা আদৌ স্বেচ্ছায় দেয়া কি না সন্দেহ। নিরক্ষর একজন মহিলা বিদেশ বিভুঁই এ কতটুকুই আর প্রতিবাদ করতে পারেন!! সালামের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে তাঁর বিজ্ঞানী জীবনের সম্পর্ক নেই, কিন্তু মানুষ হিসাবে তাঁর প্রতি যে শ্রদ্ধা আমার ছিল, তা কিছুটা হলেও কমে গেছে, সালামের দ্বিতীয় বিয়ে, আর নোবেল জয়ের অনুষ্ঠানে নিজের বহু বছরের স্ত্রীকে “খ্যাত” হিসাবে আড়ালে ঠেলে দেবার কাজটা দেখে।
অনেকেই আবদুস সালামের ধর্মপ্রীতি নিয়ে কটাক্ষ করছেন। ব্যাপারটা দুঃখজনক। একজন বিজ্ঞানীর ধর্মপ্রীতি কেন খারাপ হতে যাবে যদি তিনি অপবিজ্ঞানের চর্চা না করেন? আবদুস সালাম কিন্ত কোরানে যারা বিজ্ঞান খুঁজে পায় তাদের ধমক দিয়েছিলেন এই ভাবে ” বিজ্ঞানের সত্য কালকে যদি ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত কথা লেখে, তাহলে কি কোরান ভুল হয়ে যাবে?” একজন বিজ্ঞানী যতক্ষন না পর্যন্ত কোরান বা ধর্ম গ্রন্থে বিজ্ঞান পাওয়ার মতন অপচর্চা না করছেন, ধর্ম চিন্তা তার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তাছারা সালামের সামাজিক চেতনার অনেকটাই ইসলাম দ্বারা অনুপ্রাণিত-সুতরাং সালাম ধার্মিক ছিলেন তাই বিজ্ঞানী হিসাবে জাত খুইয়েছেন-এধরনের অবিবেচক মন্তব্য ঠিক না।
সালামের ভুল একটাই ছিল। খুব সজ্ঞানে উনি ইসলামিক বিশ্বের হিরো হতে চেয়েছিলেন-যার কারনে পৃথিবীর যাবতীয় মুসলিম দেশগুলি থেকে তাকে সন্মানিক ডি এস সি দেওয়া হয়েছে এবং তিনি তা গ্রহন করেছেন। একজন নোবেল লরিয়েটের এসব কি দরকার ছিল? তাও তিনি এসব করেছেন কারন ভদ্রলোক হয়ত চাইতেন ইসলামি বিশ্বে ছেলে মেয়েরা বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত হোক। ইসলামি দেশগুলিতে সত্যিকারের বিজ্ঞান চর্চার চেয়ে কোরানে বিজ্ঞান খোঁজার অপচর্চা বেশী হয়-সালাম কিন্ত কোরানে বিশ্বাস রেখেও শেষের ট্রেন্ডটা থামাতে চেয়েছিলেন।
@বিপ্লব পাল,
আসলেই কি তাই ? কোরানে বিজ্ঞান খোজার আপচর্চা কি এতো পুরনো ? আমার ধারনা এই ট্রেন্ডটা আরো পরে আরম্ভ হয়েছে। আর ইতিহাসে আরো অনেক আগে থেকেই দেখা যায় যে মুসলিম সমাজে বিজ্ঞান চর্চা হয়েছে কিন্তু এর সাথে কোরানিক সম্পর্ক কখনো খেয়াল করি নি। আর কোরানে বিশ্বাস রেখে কিভাবে সঠীক বিজ্ঞান চর্চা করা যায় / অথবা সঠিক বিজ্ঞান চর্চা করে কিভাবে কোরানে বিশ্বাস রাখা যায় এইটা আমি বুঝলাম না… একজন মানুষ নিজেকে জেনেশুনে কেন ধোকা দেবে ?
@অনন্ত নির্বাণ,
সালামের কোরানে বিশ্বাস ছিল এবং তিনি একজন প্রথম শ্রেনীর বিজ্ঞানী। তবে তিনি কোরানে বিজ্ঞান খুঁজে বেড়ান নি এবং যার এই কাজটি করেন তাদের বকেও দিয়েছেন।
ঈশ্বরের বিশ্বাস না বিশ্বাস করাতে ব্যাক্তির পার্থক্য হয় না। পার্থক্য হয় যখন সে বিশ্বাস করতে শুরু করে জাগতিক সব কিছু এমন কি কোরানে লেখা নির্দেশগুলিও ঈশ্বর বা আল্লার সৃষ্টি। এই পর্যন্ত ও খুব বেশী সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় এই বিশ্বাসটা আরেকটু উঠলে-অর্থাৎ যখন একজন মুসলমান বিশ্বাস করা শুরু করে কোরান যেহেতু আল্লার বানী-গোটা পৃথিবীকে তা মানতে হবে। শেষের ধারনাতেই যত নষ্টের শুরু। যত ক্ষন এটা তার নিজের বিশ্বাস থাকে-সেখানে সমস্যা নেই। যেই সে এই বিশ্বাসটাকে অন্যের ওপর চাপাতে যায় বা প্রচার করা শুরু করে-তখন দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়। সালাম কিন্ত সেটা করে নি।
বেশ লম্বা, বিচ্ছিন্ন ভাবে পড়লাম 😛 । ভাল লাগল।
আব্দুস সালামের জন্য দুঃখ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ধর্ম বিশ্বাস তাঁর মত একজন বিজ্ঞানীকেও কিরুপ বিভ্রান্ত করতে পারে তার জ্বলন্ত নমুনা তিনি।
যাই হোক, তাঁকে অপমান করায় পাকিস্তানী মানসিকতা নিয়ে আমরা সবাই খুব প্রশ্ন তুলেছি। আসলে তিনি যদি এমনকি আমাদের দেশের নাগরিক হতেন তবে তার একই ভাগ্য হত না এর গ্যারান্টি কোথায়? কেন মনে নেই, আহমদিয়াদের মসজিদে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হল আহমদীয়া নাকি কাদিয়ানী উপাসনালয় লেখে। আর আহমদীয়াদের প্রকাশনী গত সরকারের আমলে যে নিষিদ্ধ হল তা কি স্মরণ নেই?
আমাদের দেশে এই শান্তিপ্রিয় মানুষদের প্রতি যে জুলুম করা হয় তার খবর কে রাখে?
আমাদের ভাবা উচিত, আসলেই পাকিস্তানীদের থেকে আমরা কতটা এগুতে পেরেছি।
@সৈকত চৌধুরী,
সহমত
:yes: :yes: :yes:
@সিদ্ধার্থ,
পাকিস্তানের চাইতে অনেকটাই এগিয়েছি বলে আমার মনে হয়। পাকিস্তানের যদি একটু ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব না থাকত, তাহলে আমেরিকা তাকে নিয়ে এত মাতামাতি করত না, এত অর্থ সাহায্য দিত না, পাকিস্তান তাহলে আফগানিস্তানের চাইতেও একটা অরাজক আর অসভ্য দেশ হিসেবে দুনিয়াতে পরিচিতি পেত। আর এত কিছুর পরেও কিন্তু তার পরিচিতি বর্তমানে প্রায় ওরকমই।
@ভবঘুরে,
:yes: :yes: :yes:
@সৈকত চৌধুরী, :yes:
@সৈকত চৌধুরী,
আমি অনেকটা নিশ্চিত যে আমাদের দেশে একই ব্যাপার হয়ত হত, তবে কাজটা হত সম্ভবত গোপনে। রাতের আধারে কোন দুষ্কৃতকারী চক্র… সরকারী ভাবে মনে হয় অন্তত হত না এই আশা করতে পারি যদি না বিএনপি জামাত ক্ষমতায় না থাকে।
@আদিল মাহমুদ, বিএনপি না বলেন বিএনপি-জামায়েত জোট সরকার। 😀
প্রদীপ দেবের লেখা মানেই অসাধারণ কিছু। এ লেখাটিও তার ব্যতিক্রম নয়। আব্দুস সালামের অনেক সূক্ষদিক লেখাটিতে উঠে এসেছে।
এ লেখাটির জন্য ড. প্রদীপ দেবকে ধন্যবাদ ।
এত কিছুর পরও তিনি পাকিস্তানের মায়া কাটাতে পারলেন না,তাদের হয়ে পারমানবিক অস্ত্রের ডিজাইন করলেন। বলতেই হচ্ছে,তার বিজ্ঞানে জ্ঞান অপরিসীম হলেও বাস্তববোধ ছিল না। থাকলে তিনি এই কাজ করতেন না।পাকিস্তান তার উপযুক্ত মর্যাদাই দিয়েছে।
@রুশদি, :yes:
@রুশদি,
আইনষ্টাইনকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন তাহলে? সে আমলে বিখ্যাত পরমানু বিজ্ঞানীরা সবাই এটম বোমা প্রকল্পে কাজ করেছেন।
@আদিল মাহমুদ, আইনস্টাইনকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করতাম যদি তিনি জার্মানদের হয়ে কাজটি করতেন। আর তখন পরমানু প্রকল্প ছিল জার্মানির পাগলামি থেকে বাঁচার হাতিয়ার। হিটলার যদি আমেরিকার আগেই পরমানুঅস্ত্র পেয়ে যেত, ইংল্যান্ড বলে ভূখন্ড থাকত কি? রাশিয়াও মনে হয় বিলুপ্ত হত।
@রুশদি,
মূল কথা আমেরিকা যেমন আইনষ্টাইনের দেশ, তেমনি পাকিস্তানও সালামের দেশ। আজকের আমেরিকাতেও বহু বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আরো ভয়াবহ বোমা গবেষনার সাথে জড়িত আছেন, যাতে অন্য দেশের হামলার হুমকির কোন ভয় নেই।
হা হা হা হা………
ভাল লেগেছে।
আব্দুস সালাম সম্পর্কে এত বিস্তারিত লেখা এই প্রথম পড়লাম। ৩য় বিশ্বের প্রতি তার দায়বদ্ধতা তাকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সেই সাথে পাকিস্থান সরকারের কৌ্তুকটি ফ্রি পেলাম। প্রদীপ দেব কে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি তথ্যবহুল ও সুখ পাঠ্য লেখা উপহার দেয়ার জন্য।
নোবেল বিজয়ী প্রফেসর আব্দুস সালাম সম্পর্কে খুব একটা জানতাম না।পড়ে খুবই ভালো লাগছে।সাথে পাকিস্তানিদের মানসিকতা সম্পর্কে খারাপ ধারণাটা আরও গাঢ় হয়ে গেল।
এপিটাফ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি মুছে দিয়ে পাকি সরকার তাদের মানসিকতাটাকে আরও পরিস্কার করে দিয়েছে।
@দেবাশিস্ মুখার্জি,
“মুসলিম” শব্দ তুলে দিয়ে পাকিস্তান বরং তাঁকে পৃথিবীর নাগরিকের মর্যাদা দিয়েছে, যদিও পাকিস্তান সে উদ্দেশ্য নিয়ে করেনি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
অসাধারন একটি মন্তব্য করে ফেললেন দেখি। এভাবে ব্যাপারটা ভাবিনি।
@আদিল মাহমুদ ও @নৃপেন্দ্র সরকার ,
একমত নই। তা প্রদীপ দেবের লেখায়ই স্পষ্ট।
কাজেই মুসলিম শব্দটি তুলে দিয়ে যে অর্থহীন বাক্য তৈরি করা হয়েছে তা ও খেয়াল করা প্রয়োজন। পাকিস্তানী সরকার অন্যান্য এমন অনেক অর্থহীন কাজ করে থাকে। যেমন এক্ষেত্রে করেছে।
@গীতা দাস,
পাকিস্তান সরকার ঠান্ডা মাথায়ই এই অর্থহীন কাজ করেছে। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নোবেল প্রাইজ বিজয়ী একজন লোককে মৃত্যুর পরেও নন-মুসলিম হিসাবে ঘোষনা দিয়ে সে আবারও প্রমান করতে চাইল যে উনি মুসলমান নন। পাকিস্তানের ধর্মান্ধ জনগনের কাছে এটা প্রমান দেয়ার জন্য এমন সব অর্থহীন কাজ করতে পাকিস্তান সরকারের কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
কিন্তু তাই বলে মুসলমানরা কিন্তু এখনও হাক ডাক সহকারে সালামকে একজন নোবেলজয়ী মুসলিম বিজ্ঞানী হিসাবে প্রচার করে। এটা একটা হীনমন্যতা বোধের পরিচায়ক বলে আমি মনে করি।
@ভবঘুরে,
অমত করার মত কারণ দেখিনা। আব্দুস সালাম মুসলমান, মনে হয় সে জন্যই তাঁকে বাংলাদেশ সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং সাংবাদিকরা পুলকিত হতে চেয়েছিলেন – প্রফেসর সালাম বলবেন তাঁর প্রথম পরিচয় মুসলমান। প্রফেসর সালামের পরিবর্তে পাশের দেশ মিয়ান মার থেকে কেউ এই পুরস্কার পেলে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হত কিনা, আমার সন্দেহ আছে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
বাংলাদেশ সরকার অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভারতীয় নাগরিক অমর্ত্য সেনকে ১৯৯৯ সালে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করেছে। অমর্ত্য সেন একজনম আত্মঘোষিত নাস্তিক, যদিও রাজনৈতিক পরিচয়ে তিনি হিন্দুত্বের সাথেই সম্পর্কযুক্ত হতে বেশি পছন্দ করেন।
প্রফেসর আব্দুস সালামের সাথে ঢাকার একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল। বেশ কয়েকবার ঢাকায় এসেছেন তিনি। সত্যেন বসুর ভক্ত ছিলেন। শুধু একারনেই ১৯৬৭ সালে লো এনার্জি ফিজিক্সের উপর একটা কনফারেন্স আয়োজন করেছিলেন ঢাকাতে।
@ফরিদ আহমেদ,
এইটার কোনো রেফারেন্স দিতে পারেন? আমার ধারণা ছিল অমর্ত্য সেন উদার বামপন্থি(Left Liberal)।বিভিন্ন সময়ে তাঁর লেখা পড়েও তাই মনে হয়েছে।ভারতে হিন্দুত্ববাদী দক্ষিণপন্থীদের সমালোচনাও করেছেন।পশ্চিমবঙ্গেও বামপন্থীদের মাঝে উনি জনপ্রিয়।
এই লেখাটা দেখতে পারেন।
এছাড়া উইকিতে লেখা আছে,
Sen is a self-proclaimed agnostic and holds that this can be associated with Hinduism as a political entity.
এই প্রবন্ধেও স্পষ্ট করে বিষয়টার উল্লেখ আছে। সাথে এটাও দেখতে পারেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দারুণ বলেছেন।
হ্যালো প্রদীপ দেব।
আপনার লিখাটি পড়ে দারুন উপকৃত হয়েছি। পাকিস্তানীদের প্রতি সব সময়েই আমার এড়িয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। তাতে বুঝতেই পারছেন। কিন্তু আপনার এ তথ্যবহুল লিখাটির জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ মৃতু্ তারিখ শুদ্ধ করার জন্য। একজন বন্ধু বেশ উদগ্রীব হয়ে গেছেন আপনার ইমেইল সংগ্রহ করার জন্য। আপনার লিখাটি উনার অনলাইন বাংলা পত্রিকায় ছাপাতে চান। দয়া করে কি অনুমতি দেবেন। উনার ইমেইল হচ্ছে
[email protected]
অথবা আপনার ইমেইলটি আমাকে দিতে পারেন।
ভাল থাকুন।
@উত্তরপুরুষ, আমার ইমেইল [email protected]. মুক্তমনায় প্রকাশিত আমার লেখা অন্য জায়গায় প্রকাশ করতে হলে- আমি মনে করি মুক্তমনা এডমিনের কাছ থেকে অনুমোদন নিলেই চলবে। অনেক ধন্যবাদ।
বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। প্রদীপ দেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটার জন্য, বিজ্ঞানী আব্দুস সালামের সাথে সাথে ব্যক্তি আব্দুস সালামকেও কিছুটা জানা হলো।
জেনে যদিও খুব একটা চমৎকৃত হতে পারলাম না। এমন অসাধারণ মেধার আর জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ধর্মীয় ধারণার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন নি। অথচ, সালাম সাহেব দর্শন/সাহিত্য নিয়ে একেবারেই চিন্তাভাবনা করতেন না, তাও মনে হয় না। তিনি যে খুব একটা স্বাধীনচেতা ছিলেন না, তাও ভাবা যাচ্ছেনা। নিজের ইচ্ছাতেই এক ব্রিটিশ মহিলার সাথে পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন। পাকিস্তানী নাগরিকত্বের সুবিধা নিয়ে তাঁকে বিয়েও করেছিলেন।
(তাই আমার কাছে অতি সাধারণ স্বশিক্ষিত আরজ আলী মাতুব্বর অনেক বেশি শ্রদ্ধার পাত্র।)
তাঁর ব্যক্তিত্বের আরো একটা প্রশ্নবোধক দিকের পরিচয় পেলাম প্রদীপের লেখায়। তিনি কেন দুই স্ত্রীকে সাথে নিয়ে নোবেল প্রাইজ আনতে গিয়েছিলেন?
কর্মকর্তারা কেন সমস্যায় পড়লেন? সমস্যায় পড়ার কথা তো সালাম সাহেবের। লুইস ইংরেজ মহিলা বলেই যোগ্য স্ত্রীর সম্মান পেলেন? না কি সালাম সাহেব তাই চেয়েছিলেন বলে? প্রদীপের লেখা থেকে এমন ধারণা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে যে, সালাম সাহেব নন, কর্মকর্তারাই লুইসকে যোগ্য স্ত্রীর সম্মান দিলেন। যদি তাই হয়, তাহলে তাঁরা বর্ণবাদী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। অবশ্যই সালাম সাহেবের সম্মতিতে। তাঁর প্রথম স্ত্রীকে এভাবে সম্মান থেকে বঞ্চিত করার বা অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে অসম্মানিত করার কি প্রয়োজন ছিল? না, এই নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ভদ্রলোককে আমি খুব একটা শ্রদ্ধার আসনে বসাতে পারলাম না। যদিও সংখ্যালঘু হিসাবে পাকিস্তানী শাসকশ্রেণীর কাছ থেকে তিনি ও তাঁর সম্প্রদায় যে অমানবিক ব্যবহার পেয়েছেন, তার জন্য আমি সহানুভূতিশীল।
আর একটা ব্যাপার –
এই কথাগুলো প্রদীপ অসতর্কতার সাথে লিখেছেন, মনে হয়। নোবেল বিজয়ী মহিলাও হতে পারেন, তাই কথাগুলোর সংশোধন দরকার।
প্রদীপকে আবারো ধন্যবাদ, সালাম সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
@ইরতিশাদ,
আমারো মনে হয়েছে যে পুরষ্কার অনুষ্ঠানে বর্নবাদের কেমন একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সালাম সাহেব নিঃসন্দেহে খুবই অন্যায় কাজ করেছিলেন এক সংগে দুই স্ত্রী পরিগ্রহ করে, আরো অন্যায় করেছেন নোবেল পুরুষ্কার নেবার মত একটি অনুষ্ঠানে একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যস্মিন দেশে যদাচার নীতি তিনি মানেননি। অনুষ্ঠানটি পাকিস্তানে নয়, পশ্চীমা দেশে এটি তো তিনি জানতেন।
আমেরিকায় কি কোন নন-আমেরিকান এক সংগে একাধিক স্ত্রী আইনত রাখতে পারে? আমি নিশ্চিত নই। ইউটাহর মর্মনরা পারে শুনেছি। ব্রিটিশ আইন অবশ্য ভিন্ন হতে পারে।
@আদিল মাহমুদ,
পারে-যদি প্রথম বৌ আপত্তি না করে। আমার এক প্রাত্ত্ন প্যালেস্টাইন কলিগের দুই বিবি ছিল। দ্বিতীয়জন তার বৌদি ছিল-দাদার মৃত্যুর কারনে দ্বায়িত্ব নিয়েছিল।
যেকোন দেশের বহুগামী আইনটাই ওই রকম। প্রথম স্ত্রী কমপ্লেইন না করলে, কিস্যু হয় না।
@বিপ্লব পাল,
এটা কি শুধুই নন-আমেরিকানদের জন্য? নাকি আমেরিকানরাও পারে?
আমেরিকায় তো পলিগ্যামী জিনিসটাই নিষিদ্ধ জানি। ঠিক বুঝি না যে শুধু জাতীয়তার ভিত্তিতে একই দেশে দু ধরনের আইন কেন থাকবে। শুধু অন্য কালচারের প্রতি সম্মান? তাহলে ডুয়েল সিটিজেনদেরও এই প্রিভিলেজ আমেরিকান নাগরিক হলেও থেকে যাবে?
@আদিল মাহমুদ,
এটা সবার জন্যে। বহুগামিতাতে স্বামীর অপরাধ প্রথম স্ত্রীর প্রতি-তিনি যদি সেটাকে অপরাধ বলে না করেন-তাহলে আইন কিছু করতে পারে না।
@বিপ্লব পাল,
বলেন কি? তাহলে তো বাংলাদেশ বা ইসলামী আইনেও তেমনই আছে। ইসলামী আইনেও তো একাধিক বিবাহে আগের স্ত্রীদের অনুমতি নেবার ব্যাপার আছে।
@আদিল মাহমুদ,
একাধিক বিবাহ মার্কিন ফেডারেল দণ্ডবিধি মডেল পেনাল কোডের ২৩০.১ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাজা হিসেবে জরিমানা , কারাদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।
@আদিল মাহমুদ, কিন্তু আইনগত ভাবে একজন আমেরিকান একজন স্ত্রী থাকা অবস্থায় ডিভোর্স না করা পর্য্যন্ত অন্য একজনকে অফিসিয়ালি রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করার পারমিশনই পাবেনা। করতে চাইলে তথ্য গোপন করে হবে।
@ব্রাইট স্মাইল্/সংশপ্তক,
বেশ বিভ্রান্ত হলাম দেখছি। বিপ্লব জানাচ্ছেন যে প্রথম স্ত্রী বাদ না সাধলে কোন সমস্যা নেই, আমেরিকান আইন বহু বিবাহে বাধা দিতে পারে না; আপনারা জানাচ্ছেন আরেক রকম। তবে আমার জানা মতে আপনাদের ধারনাই সঠিক বলে জানতাম।
দেখি বিপ্লব আর কিছু বলেন কিনা।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি আইনের বাইরে “বিয়ে” করলে কেউ আটকাতে পারছেনা, এই আরকি। বাড়িতে দুই বউ রাখা আর দুই গার্ল ফ্রেন্ড রাখার মধ্যে পার্থক্য তো আইন ধরতে পারছেনা, যদি না সেই বউদের কেউ গিয়ে আপত্তি তোলে। কিন্তু জিনিসটা নিষিদ্ধ। মমর্নদেরটাও নিষিদ্ধ, যদিও তারাও আইনের ফাঁকটা পুরোদস্তুর ব্যবহার করে।
@রৌরব,
মর্মনদের জন্যও নিষিদ্ধ জানতাম না। আমার ধারনা ছিল যে ইউটাহ মর্মনদের ষ্টেট হওয়ায় সেখানে বহুবিবাহ পুরোপুরি লিগ্যাল, এমনকি মদ্যপানও নিষিদ্ধ।
@আদিল মাহমুদ,
http://en.wikipedia.org/wiki/Polygamy_in_the_United_States
উটাহ-তে এটা fellony। ওই প্রবন্ধেই লিখছে দেখুন যে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়না অনেক সময়, বা অনেক কারণে। তবে সেটা ভিন্ন প্রসংগ।
অ্যালকোহলের ব্যাপারটা জানতাম না তো! উটাহ-তে বহুবিবাহ বৈধ হতে পারে এই আশায় ওখানে যদি বা যাওয়া যেত, উহা অ্যালকোহল বিহীন মরুভূমি শুনে আবার হতাশ হয়ে পড়ছি। ওয়েবে ঘেঁটে অবশ্য মনে হচ্ছে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ নয়, তবে ভীষণ ভাবে নিয়ন্ত্রিত।
@আদিল মাহমুদ,
মর্মনদের মধ্যে এটা চালু ছিল ১৮৯০ এর দশক অবধি। ইউটাকে স্টেইট হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছিলোনা, তার একটা বড় কারণ ছিল এটা। সেসময় মর্মনদের প্রফেট রাতারাতি “স্বপ্নে আদেশ” পেলেন বহুবিবাহ বন্ধ করার। এই শর্ত মানার পরে ইউটা একটি স্টেইট হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
তবে মর্মনদের কিছু গ্রুপ এটা মানেনি, সেসব মৌলবাদী মর্মনেরা ইউটা বা আরিজোনাতে আলাদা কমিউনিটি করে বাস করে। ভেতরের খবর প্রায়ই বেরিয়ে আসে, তারা এখনো তাদের সমাজে বহুবিবাহ টিকিয়ে রেখেছে। আইনত সেটা দণ্ডনীয়।
—
বিপ্লবদার কথার সুবাদে বলি, দুই বিয়ে করা মার্কিন আইনে অবশ্যই দণ্ডনীয়, সেটা প্রথম স্ত্রী মানুক বা না মানুক। (কয়েক বছর আগে একটা খবর দেখেছিলাম টিভিতে, এক গোঁড়া মর্মন বহুবিবাহের দায়ে অভিযুক্ত। আদালত থেকে সে বেরুচ্ছে, আর তার পেছন পেছন মাথা নিচু করে বেরুচ্ছে তার চার “বউ”।) তবে যারা চায়, তারা দ্বিতীয়জনকে সরকারী খাতায় বিয়ে না করে হয়তো এক সাথে দুইজনকে নিয়ে থাকে।
@আদিল মাহমুদ,
মডেল পেনাল কোডের ২৩০.১ ধারায় ব্যতিক্রম গুলোর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ওখানে বলা হয়েছে:
আরও ব্যাখ্যার জন্য একজন আইনজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ।
না ভাই, আমার আর তেমন ব্যাখ্যার প্রয়োযন আপাতত নেই 🙂 । স্কুল পালালেই রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না, কাজেই……
@ইরতিশাদ ভাই,
ধন্যবাদ ব্যাপারটা নজরে আনার জন্য। নোবেল বিজয়ী যদি মহিলা হন, তখন ব্যাপারটা হয় উলটো, তখন তিনি বসেন রাজার পাশে, তাঁর স্বামী বসেন রাণীর পাশে। যেমন ১৯৬৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন মারিয়া মেয়ার। তিনি রাজার পাশে বসেছিলেন। তাঁর স্বামীর আসন পড়েছিল রাণীর পাশে। এই নিয়ম গুলো কিন্তু একদম স্বতঃসিদ্ধ নয়। কারণ একই অনুষ্ঠানে একজন রাজা ও একজন রাণী, কিন্তু অনেক বিজয়ী। রাজা ও রাণী সবার সাথেই কিছুক্ষণ সময় কাটান এবং প্রেস-ফটো তোলেন। আসলে প্রসঙ্গটা এসেছে ১৯৭৯ সালের অন্যষ্ঠানে আবদুস সালাম সম্পর্কে।
@প্রদীপ দেব,
ধন্যবাদ, প্রদীপ। এখন মনে হচ্ছে, আমিই লেখাটা অসতর্কতার সাথে পড়েছি। প্রসঙ্গটার প্রেক্ষাপট মনে রাখলে কথাটা ঠিকই আছে।
মানুষের মেধা, মনন,দেশ প্রেম, সৃষ্টি, আবিষ্কার সব কিছুই তুচ্ছ মানব বিভাজনের সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাস্পে পূর্ণ কল্পিত ধর্ম গুলোর কাছে।
তা আবার ও নগ্ন ভাবে প্রমাণ করেছে তার কবর থেকে মুসলিম শব্দটি মুছে ফেলে।
প্রদীপ দেব,
চমৎকারভাবে সাবলীল ভাষায় জানিয়ে দিলেন নোবেল বিজ্ঞানী আবদুস সালাম সম্পর্কে। সেজন্য কৃতজ্ঞতা রইল।
আবদুস সালাম নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বাংলাদেশেও কয়েকটি মত দেখেছি। একটা গোষ্ঠী উনি মুসলিম বলে উল্লসিত। আরেকটা গোষ্ঠি উনাকে অমুসলিম বানিয়ে পাকিস্তানের অনেক সংবাদপত্রের মতই মতামত ছিল —–
আরেকটা দল তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে এ উপমহাদেশের একজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বলে মহা খুশি। এ দল এখনও গণনা করেন আমাদের মানে এ উপমহাদেশের মোট কতজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছে।
এখনও বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের অনেক মন্ত্রী ও রাজিনীতিবিদরা পাকিস্তানেরওই অর্থমন্ত্রীর মানসিকতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
@গীতা দাস,
২০০৩ সালে মনে হয় একজন ইরানী মহিলা সাহিত্যে নোবেল পান। সেসময়ও আশে পাশে বলাবলি হতে শুনেছি যে ইসলাম সমালোচনা করে লিখলেই পশ্চীম ওয়ালারা মহা খুশী। পরে জেনেছি যে ঐ মহিলাকে ইরানে খুবই বিপদের মাঝে থাকতে হয়।
@আদিল মাহমুদ, শিরিন এবাদি নাকি? তিনি মনে হয় শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন,মানবাধিকারকর্মী হিসেবে।
একটা জিনিস দেখেন, মুসলিম জনগন পশ্চিমকে ত্যাগ করতে পারছে না,আবার মিশতেও পারছে না।এরুপ ঘটনায় মজাটা ফ্রি পাওয়া যায়।
@রুশদি,
বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের মৌলিক সমস্যাগুলির অন্যতম বাস্তবতাবোধ বিবর্জিত আচার আচরন। একদিকে অমুসলিম কাম পশ্চীমা বিশ্বের প্রতি ধর্মের উপজাত ঘৃণা বিদ্বেষ, অপরদিকে আবার তাদের জীবন ধারার আকর্ষন এই দুয়ের টানাপোড়েনে একটা হযবরল অবস্থায় পড়ে আছে।
@গীতা দাস,
পশ্চিম-বিরোধিতা করা একটি 0bsession. শুধু বাংলাদেশ – পাকিস্তানী মন্ত্রী-রাজনীতিবিদ নয়। আমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষেদেরও এই বলয়ে আবদ্ধ দেখতে পাই।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
এর মূল কারন মনে হয় শুধু ধর্মই নয়। শ্রেনীগত ভাগ থাকলে নীচে অবস্থানকারীদের একটি প্রবনতাই থাকে উপরের শ্রেনীর লোকদের শত্রু ঠাউড়ে নেবার। বিশেষ করে সেই নীচের শ্রেনী যদি নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন মনে করে তবে এই প্রবনতা রূপ নেয় মারাত্মক আকারে।
৯১১ এর আগে আমি আমাদের কম্যুনিটিতে অভিযোগ শুনতাম সব বর্নবাদ সংক্রান্ত। সাদারা কালো বলে আমাদের হেয় করার নানান কাহিনী। ৯১১ এর পর এটা বর্নবাদ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ধর্মবাদ হয়ে গেল। মুসলমান বলেই হেয় করে, কালো বলে হেয় করছে বা কোন সমস্যা হয়েছে এই অভিযোগ মনে হয় ৯১১ এর পর থেকে একবারও শুনেছি বলে। তবে ভারতীয়দের থেকে বর্নবাদের অভিযোগ এখনো শুনি।
@আদিল মাহমুদ,
বর্ণবাদের স্বীকার কম বেশী উভয়দিকেই হয়।
বর্তমানে আপনাদের টরন্টোতে বাস করেন আমার জানা একজন। তিনি এক রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন কলেজ স্টেশনে। তিনি নিজে কী ভাবে এক সাদা ছেলেকে বিপাকে ফেলে চাকুরীচুত করেছিলেন।
মুসলমানদের মত হিন্দু, বৌদ্ধরা এদেশে এবং ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াতে সংখ্যা লঘু। আমার ত মনে এরা ধর্ম বাদের স্বীকার হচ্ছে না। মুসলমানদের নিজেদের ভেবে দেখা দরকার আছে। সারা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন। অনেক মুসলমান চোখ খুলে ভেবে দেখে না। আমার মনে হয় আপনি দেখেন। নিশ্চয় দেখতে পাবেনএবং বুঝতে পারবেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
টরন্টোতে এ ধরনের ঘটনা খুব অবাক হবার মত কিছু না। কানাডা অভিজ্ঞতা আমাকে তথা কথিত মাল্টি-কালচারের মধুর মধুর কথাগুলির বিপরীতে অন্য কিছু বিষয়ও শিখিয়েছে। কানাডায় রেসিজম হয়ত কালো-সাদা এভাবে নেই যা নিয়ে দেশটি খুব গর্ব করে। তবে কমিউনিটি বেজড পক্ষপাতিত্ব বেশ ভালই আছে বলে অনুভব করা যায়। আসলে নানান দেশী ইমিগ্র্যান্ট খুব বেশী মাত্রায় আসায় চাকুরি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হয়েছে প্রচন্ড। চীনা চায় চিনাকে চাকরি দিতে, ভারতীয় চায় ভারতীয়কে…সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়েছে দেশটির দূর্বল কালচারাল আইডেন্টিটির কারনে। বস্তুত কানাডিয়দের নিজেরা কিভাবে আমেরিকান না এই প্রশ্নের জবাব দিতে গদলঘর্ম হতে হয়। তারা প্রানপ্নে চেষ্টা করে আমেরিকান থেকে নিজেদের ভিন্ন দেখাতে, তবে তেমন সফল হয় না। আমেরিকান ভুত আছর করেই থাকে। এর জন্য পুরো দেশটির মাঝেই ন্যাশিওনালিজমের প্রকৃত গন্ধ বেশ কম।
মুসলমানদের ভীতি বা কম্পলেক্স ভোগা অনেকটাই মানসিক। এর কারন আমরা সবাই জানি। অনেক বছর ধরে শিক্ষা দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া বড় কারন। নিজেরা পড়ছে পিছিয়ে, কিন্তু আজন্ম লালিত বিশ্বাস বলে উলটো, আমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি বা জীবন ধারারা ধারক বাহক, এবং প্রচারক। এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া সম্ভব হয় না। তখন যারা উন্নতি করছে তাদের মনে হয় শত্রু। ডূয়েল আইডেন্টিটিতে ভোগা হল আর একটি বড় কারন। আমেরিকায় জন্ম হওয়া মুসলমানও এই জন্য অনেক সময় মধ্যপ্রাচ্যে কোনদিন না গেলেও সে দেশ বা দেশের সংস্কৃতির প্রতিই বেশী টান অনুভব করে। এই সমস্যা অন্য ধর্মের লোকদের তেমন নেই। ইহুদীদের আছে, তবে তারা চেইনের অনেক উপরে বলে সেভাবে প্রকাশ ঘটে না।
@আদিল মাহমুদ,
আমার মনে হয় সমস্যাটা ভালভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। বৃটিশ ভারতেও তাই হয়েছে। যখন হিন্দুরা ইংরেজী শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে গেছে, মুসলমানরা না, ইংরেজী শিখব না বলে পিছিয়ে থেকেছে। স্যার সৈয়দ আহমেদ সেটা বুঝতে পেরেছিলেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দেখেন না ষড়যন্ত্রের মহিমা; বিশ্বের সেরা পুরষ্কার পেলে তার মাঝেও শত্রুতা পাওয়া যাচ্ছে। পাগলামি ছাগলামিরও সীমা থাকা দরকার।
এই ষড়যন্ত্র ভীতিতে ভোগা মারাত্মক রোগ নিয়ে লেখালেখি দরকার।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
নীতিগতভাবে সহমত। :yes:
তবে পুরোটাই বোধহয় 0bsession না। তৃতীয় বিশ্বে পাশ্চাত্যবৈরীতার পেছনে এক ধরনের victimhood কমপ্লেক্স কাজ করে। সেটার অনেক বৈধ কারন যেমন আছে তেমনি আছে অনেক ভূল ধারনা, পূ্র্ববিশ্বাস আর যুক্তিহীন দেশাত্ববোধ।
@মোঃ হারুন উজ জামান ও নৃপেন্দ্র সরকার,
0bsession, নাকি
Obsession?
হা হা হা 😀
@মোঃ হারুন উজ জামান, :yes:
সালাম সাহেব সম্পর্কে এত বিস্তারিত জানতাম না। খুবই সুখ পাঠ্য লেখা।
একটি ছোট ত্রুটি দেখতে পাচ্ছিঃ
মৃত্যু মাস বাদ পড়ে গেছে।
তার কবরের ফলক থেকে আইনী উপায়ে মুসলমান কাটা যাওয়ার ঘটনা জানতাম। ধন্য পাকিস্তানী ধর্মপ্রেম।
এত বড় বৈজ্ঞানিক, মহত লোকের ব্যাক্তি জীবনে এক সাথে দুই স্ত্রীর সংসার বেশ কালিমাময় ঘটনা বলতেই হবে।
সালাম সাহেব মনে হয় কোরানে বিজ্ঞান আবিষ্কারের বিপদজঙ্ক প্রবনতা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।
@আদিল মাহমুদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ। তিনি মারা গিয়েছেন ২১ নভেম্বর। ‘নভেম্বর’ বাদ পড়ে গিয়েছিল, ঠিক করে দিয়েছি।
@প্রদীপ দেব,
প্রফেসর সালামের উপর বিস্তৃত একটি লেখা এবারই পড়লাম। ধন্যবাদ প্রদীপ দেবকে।
নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার প্রফেসর সালামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। মনে পড়ছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন – আপনার প্রথম পরিচয় কি একজন মুসলমান নাকি একজন পদার্থবিজ্ঞানী?
প্রফেসর সালাম এরকম প্রশ্ন আশা করেননি। সারা পৃথিবীতে মাত্র এক মিলিয়ন লোক অথচ এক তৃতীয়াংশ নোবেল পুরস্কারের অধিকারী ইহূদিরা, উত্তরে এই কথাটি উল্লেখ করেছিলেন।